Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প160 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১১. ফিরে আসা

    ফিরে আসা

    সুমি টুম্পার হাত ধরে বসেছিল। দুজনে বারান্দায় বসেছে কারো মুখে কোনো কথা নেই। বাইরে অন্ধকারে নেমেছে, ওরা তবু কোনো আলো জ্বালায় নি। সুমি নরম গলায় বলল, টুম্পা আপু তুমি মন খারাপ করো ন। তোমাকে মন খারাপ করতে দেখলে আমার অসম্ভব খারাপ লাগে।

    শোন সুমি, এরকম একটা কিছু হলে যেটুকু মন খারাপ হবার কথা তার থেকে আমি একটুও বেশি মন খারাপ করছি না।

    টুম্পা আপু– সুমি নিচু গলায় বলল, ঐ লোকটা তোমাকে যে খারাপ খারাপ কথা বলেছে, তুমি সেটা নিয়ে মন খারাপ করো না।

    টুম্পা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, লোকটা আসলে খারাপ খারাপ কথা বলে নাই। সত্য কথা বলেছে। কথাগুলো শুনতে খারাপ লেগেছে কিন্তু প্রত্যেকটা কথা সত্যি।

    সুমি মাথা নাড়ল, বলল, না সত্যি না।

    সত্যি। টুম্পা বলল, আমি এখানে থাকব না, এসেছি মাত্র কয়েকদিনের জন্যে আমার উচিত হয় নি আব্বুর সাথে এইভাবে জড়িয়ে পড়া। কিন্তু কিন্তু–তুইই বল, আমি যদি জানি আমার আব্বু এভাবে আছেন আমি তাহলে তার সাথে দেখা না করে থাকতে পারতাম? আর দেখা হলে তার সাথে না মিশে পারতাম?

    না, পারতে না।

    কিন্তু পারা উচিত ছিল। আব্বু তো আর অন্য দশটা মানুষের মতো না। আব্বু স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগী। আব্বুকে এভবে ঘর থেকে বের করে আনা ঠিক হয় নাই। আমি একবারও বুঝতে পারি নাই এই রকম কিছু হবে। সুমি তুমি বিশ্বাস কর যখন আমি দেখলাম আব্বুর মাথায় একটা রিভলবার ধরেছে, আমার যা ভয় লেগেছিল—

    সুমি টুম্পার হাত ধরে বলল, কেন ওই কথাগুলোর কথা মনে করছ? ভুলে যাও টুম্পা আপু।

    যদি ভুলে যাওয়ার একটা সুইচ থাকতো তাহলে আমি টুক করে সেই সুইচটা অফ করে দিয়ে সব কিছু ভুলে যেতাম।

    সুমি কোনো কথা বলল না, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে টুম্পা বলল, আমাদের সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার রাঙামাটি এসব জায়গায় যাবার কথা ছিল, মনে আছে? কতোদিন থেকে যেতে চেষ্টা করছি, যেতে পারছি না। এখন যেতে পারব।

    সুমি কোনো কথা বলল না, টুম্পা বলল, দোকানের সামনে ছোট বাচ্চাগুলোর ছবি তুলেছিলাম মনে আছে? তাদের ছবিগুলোও প্রিন্ট করে দিতে হবে, কতোদিন থেকে বাচ্চাগুলি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে আছে।

    সুমি এবারেও কোনো কথা বলল না। টুম্পা বলল, সবাই মিলে একটা বাংলা নাটক দেখার কথা ছিল, মনে আছে? আর একটা বাংলা সিনেমা? এখন আমরা সেটাও দেখতে পারব। বাংলাদেশে এসে আসলে এখনো তো কিছুই করি নাই।

    সুমি এবারেও কোনো কথা বলল না, দুইজন চুপচাপ অন্ধকারে বসে রইল। রাত্রে খাবার টেবিলে আজকে কেউ বেশি কথা বলল না। কথাবার্তায় কেউ একটিবারও সুমির আব্বুর কথা তুলল না। কথা যেটুকু সেটা ছিল ছোট খালার রান্না, ছোট খালুর অফিসের একজন বোকা অফিসার আর সুমির স্কুলের একজন রাজাকার টাইপ টিচারকে নিয়ে। খাওয়া শেষ করে আজকে অন্যদিনের মতো সবাই বসে গল্প গুজব করল না, যে যার মতোন শুয়ে পড়ল।

    টুম্পা বিছানায় অনেক রাত পর্যন্ত নিঃশব্দে শুয়ে রইল তার চোখে ঘুম আসছিল না। গভীর রাতে তার ঘরের দরজা খুলে ছোট খালা এসে ঢুকলেন, নিচু গলায় খালায় বললেন, টুম্পা, মা ঘুমিয়ে গেছিস?

    না, ছোট খালা।

    ছোট খালা মশারির ভেতর ঢুকে টুম্পার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, আমি খোঁজ নেওয়ার জন্যে হাসপাতালে ফোন করেছিলাম। তোর আব্বু ভালোই আছেন। কাল সকালে রিলিজ করে দেবে।

    থ্যাংক ইউ ছোট খালা।

    তুই কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করিস না।

    আমি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছি না, ছোট খালা। তুমি ঘুমাতে যাও।

    ছোট খালা টুম্পার মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন, ঘুমাতে গেলেন না।

    .

    রাঙ্গামাটি এবং কক্সবাজার যাবার কথা অনেকদিন থেকে বলা হচ্ছিল কিন্তু পরের দিন ঘুম থেকে উঠে সবাইকে নিয়ে ছোট খালু একটা চা বাগানে রওনা দিলেন। ঢাকা শহর থেকে বের হতেই তাদের দেড় ঘণ্টা লেগে গেল। রাস্তায় যা ভীড় সেটা আর বলার মতো নয়, ভীড় ব্যাপারটা টুম্পার অবশ্যি খারাপ লাগে না– গাড়ির ভেতরে বসে বসে রাস্তার মানুষগুলো দেখা খুব মজার একটা ব্যাপার। একেকজন মানুষের মুখের ভঙ্গী একেক রকম, কেউ গম্ভীর কেউ খুশি, কেউ রাগ, কেউ বিরক্ত কেউ কেউ একেবারে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এক জায়গায় দেখা গেল দুইজন হাতাহাতি করছে, অন্য মানুষেরা গোল হয়ে দেখছে, মনে হয় ব্যাপারটা বেশ উপভোগই করছে!

    গাড়ি একটু যায় তারপর থেমে যায় তারপর আবার একটু যায়, ঘণ্টা খানেক এরকম হবার পর রুমি হড় হড় করে বমি করে দিলো। ভাগ্যিস বমি করার আগে রুমি একটা ওয়ার্নিং দিয়েছিল তাই ছোট খালার কোলের উপর বমি না করে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাইরে বমি করতে পারল। সকালে রুমি এমন কিছু খায় নি কিন্তু বমি করলো অনেক কিছু কোথা থেকে সেগুলো পেটে এসেছে কে জানে!

    শেষ পর্যন্ত ভীড় পার হয়ে তারা হাইওয়েতে উঠে গেল, তখন রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। ফাঁকা রাস্তায় এসে টুম্পার মনে হলো ভীড়টাই বুঝি ভালো ছিল, কারণ গাড়ির ড্রাইভার ফাঁকা রাস্তায় যেভাবে গাড়ি চালাতে লাগলো যে মনে হতে লাগলো এটা গাড়ি নয়, এটা বুঝি একটা প্লেন–এটা বুঝি এক্ষুণি রাস্তা ছেড়ে আকাশে উড়ে যাবে। সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে উল্টোদিক থেকে আসা দৈত্যের মতো বাস আর ট্রাকগুলো। ড্রাইভারেরা একেবারে সোজাসুজি একজন আরেকজনের দিকে এগুতে থাক, অনেকটা যেন কার নার্ভ কতো শক্ত তার একটা পরীক্ষা, একেবারে শেষ মুহূর্তে দুটি গাড়ি একটু সরে একজন আরেকজনকে জায়গা করে দেয়। টুম্পার প্রত্যেকবারই মনে হয় এক্ষুণি বুঝি একটা একসিডেন্ট হয়ে সবাই ছাতু হয়ে যাবে, কিন্তু একসিডেন্ট হয় না। টুম্পা অবাক হয়ে দেখলো তাদের ড্রাইভার এরকম পাগলের মতো গাড়ি চালাচ্ছে কিন্তু ছোট খালা, ছোট খালু বা অন্য কেউই সেটা নিয়ে একটুও অস্থির হচ্ছে না। টুম্পা একটু পরে বুঝতে পারল এই দেশে সবাই এভাবেই গাড়ি চালায়। আমেরিকার একজন কল্পনাও করতে পারবে না যে কেউ এভাবে গাড়ি চালাতে পারে। টুম্পা নিঃশ্বাস বন্ধ করে রইল, মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকলো যেন কোনোভাবে কোনো একসিডেন্ট না করে চা বাগানে পৌঁছাতে পারে। যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছে তাতে যদি একসিডেন্ট হয় তাহলে আর কাউকে বেঁচে থাকতে হবে না!

    শেষ পর্যন্ত যখন চা বাগানে পৌঁছালো তখন চা বাগান দেখে টুম্পার যত আনন্দ হলো তার থেকে অনেক বেশি আনন্দ হলো গাড়ি থেকে নামতে পেরে।

    গাড়িটা একটা গেস্ট হাউজের সামনে থেমেছে, গেস্ট হাউজটা একটা টিলার উপরে, এখানে দাঁড়িয়ে বহু দূর পর্যন্ত দেখা যায়। যতদূর চোখ যায় শুধু চা বাগান। টুম্পার চা খেতে খুব ভালো লাগে কিন্তু আগে কখনোই চিন্তা করে নি। চা আসে কোথা থেকে। টিলার ওপরে দাঁড়িয়ে চা বাগানটা দেখতে দেখতে টুম্পা অবাক হয়ে বলল, কী আশ্চর্য!

    সুমি জিজ্ঞেস করল, কোনটা কী আশ্চর্য?

    এই চা বাগান। আমি কখনোই ভাবি নি চা বাগান এরকম হয়।

    তুমি কী ভেবেছিলে?

    আমি জানি না কী ভেবেছিলাম। মনে হয় ভেবেছিলাম বড় বড় গাছ থেকে টি ব্যাগ ঝুলছে!

    সুমি হি হি করে হেসে বলল, ভালোই বলেছ টুম্পা আপু। গেস্ট হাউজে বেশ কয়েকটা ঘর, একটাতে ঢুকলো টুম্পা আর সুমি অন্যটাতে ছোট খালা, ছোট খালু আর রুমি। রুমি অবশ্যি ঘণ্টাখানেক পরেই নিজের বিছানা বালিশ নিয়ে টুম্পাদের রুমে চলে এল।

    গেস্ট হাউজে পৌঁছানোর সাথে সাথেই টেবিলে খাবার দিয়ে দেয়া হয়েছে, অনেক বেলা হয়ে গেছে বলে সবার পেটেই খুব খিদে সে জন্যেই হোক আর ভাল রান্নার জন্যেই হোক সবাই খুব মজা করে খেলো। ছোট খালু বললেন তিনি একটু শুয়ে নেবেন। ছোট খালা বললেন, সে কী, বেড়াতে এসে ঘুমাবে মানে? ঘুমাতে পারবে না– চল বের হই। এক্ষুণি বের হই। কতো কী আছে দেখার। কতো সুন্দর চা বাগান–

    একটু পর দেখা গেল ছোট খালাই শুয়ে ঘুমিয়ে একেবারে কাদা হয়ে গেছেন, ছোট খালু এপাশ ও পাশ করছেন, তার চোখে ঘুম আসছে না। টুম্পা সুমি আর রুমি তাদের জন্যে অপেক্ষা না করে বের হয়ে গেল। চা বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে টুম্পা অবাক হয়ে দেখে চা বাগানের মেয়ে শ্রমিকেরা সারি বেধে চা তুলতে যাচ্ছে। মেয়ে গুলো শুকনো, তাদের মাথায় বড় বড় ঝুড়ি। চা বাগানের মাঝে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে এতো তাড়াতাড়ি চা পাতা ছিড়ছে যে তারা দেখে অবাক হয়ে যায়। সুমি ফিস ফিস করে বলল, টুম্পা আপু।

    কী?

    চায়ের বিজ্ঞাপনে এই চা বাগানের ছবি থাকে। সেখানে যে মেয়েরা চায়ের পাতা তুলে তারা হয় নাদুস নুদুস মোটা সোটা। আর এই মেয়েগুলি দেখো কী শুকনা।

    টুম্পা বলল, এই মেয়েগুলি কাজ করে, যারা কাজ করে তারা কোনোদিন মোটা হতে পারে না। যারা ঘরে বসে বসে খায় তারা মোটা হয়।

    তা ঠিক।

    টুম্পা, রুমি আর সুমি চা বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গেল। এক জায়গায় একটা টিলা শেষ হয়ে গেছে– নিচে একটা শুকনো খাল, খালের ভেতর দিয়ে টলটলে পরিষ্কার পানি তির তির করে বয়ে যাচ্ছে। টুম্পা সুমি আর রুমি খালের পাড়ে একটা গাছের গুড়িতে বসে রইলো। রুমি জিজ্ঞেস করল, টুম্পা আপু, আমেরিকাতে চা বাগান আছে?

    উহুঁ। কিন্তু আমেরিকা তো অনেক বড় দেশ সেইখানে পাহাড় আছে, মরুভুমি আছে, সাগর আছে, নদী আছে, জঙ্গল আছে–

    সুমি তার ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে বলল, তুমি কখনো মরুভূমিতে গেছো?

    টুম্পা একটু অবাক হয়ে সুমির দিকে তাকালো। এই প্রশ্নটাতে অবাক হবার কী আছে সুমি বুঝতে পারল না, আবার জিজ্ঞাস করলো, গিয়েছ টুম্পা আপু?

    টুম্পা চোখ বড় বড় করে বলল, তোমার ঘাড়ে ঐটা কী?

    সুমি ঘাড়ে হাত দেয়, যেখানে চুলকাচ্ছিল সেখানে পিছলে পিছলে এক ধরনের অনুভূতি, মাথা ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু এমন জায়গায় চুলকাচ্ছে সেটা দেখা যাচ্ছে না। ভয় পাওয়া গলায় বলল, কী?

    রুমি চিৎকার করে বলল, নড়ছে! এইটা নড়ছে!

    সুমি তখন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে দাপাদাপি করতে লাগলো। কাছাকাছি কয়েকটা মেয়ে চায়ের পাতা তুলছিল, চিৎকার শুনে তাদের কয়েকজন ছুটে আসে। বলে, কী হইছে গো?

    সুমি তখন কোনো কথা বলতে পারছে না, সারা শরীর শক্ত করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। টুম্পা বলল, ঘাড়ের মাঝে কী যেন হয়েছে।

    কালো মতোন একটা মেয়ে এগিয়ে এসে এক নজর দেখে হি হি করে হেসে বলল, জোঁকে ধরিছে!

    জোক! জোক! বলে সুমি এবারে এমন চিৎকার শুরু করে দেয় যে তাকে দেখে মনে হতে থাকে সে বুঝি হার্টফেল করে মরে যাবে।

    কালো মতন মেয়েটি হাসতে হাসতে বলে, এতো ভয় পাও কেন? জোকরে ভয় পায় নাকী? তুমি লাফ দিও না আমি জোঁক তুলে দেই–

    সুমি বলল, প্লিজ-প্লিজ প্লিজ–

    মেয়েটি ঘাড়ে হাত দিয়ে কীভাবে জানি জোকটাকে ধরে টেনে খোলার চেষ্টা করল, এমন ভাবে কামড়ে ধরেছে যে টানার সাথে সাথে ইলাস্টিকের মতো লম্বা হতে থাকে কিন্তু ছুটে আসে না! ছেড়ে দিয়ে আবার টেনে ধরতেই এবারে ছুটে এল। জোঁকটাকে নিচে ফেলে পা দিয়ে ডলে পিশে ফেলতেই রক্ত দিয়ে জায়গাটা একটু লাল হয়ে যায়। কালো মতন মেয়েটা বলল, কতো রক্ত খাইছে দেখো।

    সুমী এতোক্ষণ ভয়ে কাবু হয়েছিল, এইবারে ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে শুরু করে দিলো। মেয়েটা বলল, কান্দনের কিছু নাই। জেঁকে কামড়ালে কিছু হয় না। আমাদের প্রত্যেক রোজ চাইরটা পাঁচটা কামড়ায়। রক্ত খাইয়া ঢোল হইয়া গড়াইয়া পড়ে আমরা টের পর্যন্ত পাই না।

    এটা শুনেও সুমি খুব ভরসা পেল না, ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতেই লাগলো। টুম্পা বলল, এখন আর কাঁদছ কেন, জোঁক তো সরিয়েই ফেলেছে!

    তোমাকে ধরলে তুমিও কাঁদতে।

    টুম্পা বলল, সেটা মিথ্যা বল নাই! কিন্তু এখন কান্না থামিয়ে এই মেয়েটাকে থ্যাংকস দাও।

    সুমি ফোঁস ফোঁস করে কঁদতে কাঁদতে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কী আপু?

    নাম? আমার?

    হ্যাঁ?

    কমলা।

    কমলা আপু তোমাকে থ্যাংকস। অনেক থ্যাংকস। তার মানে অনেক ধন্যবাদ। তুমি আজকে আমাকে না বাঁচালে আজকে এই জেঁক আমাকে খেয়ে ফেলতো!

    কমলা নামের মেয়েটা হিহি করে হাসতে হাসতে বলল, কী কথা বলে এইটাতো একটা জেঁক! এইটাতো বাঘ না! ভালুক না।

    সুমি বলল, বাঘ ভাল্লুক আমি ভয় পাই না। কিন্তু জোঁক? ও মাগো!

    .

    সবাই চা বাগান থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় রওনা দিল পরদিন দুপুর বেলা। এর মাঝে তারা অনেক কিছু করেছে, চা বাগান ঘুরে দেখেছে, চায়ের পাত তুলে আনার পর ধাপে ধাপে সেটা দিয়ে কী ভাবে চা বানানো হয় সেটা দেখছে, কীভাবে প্যাকেট করে বাক্সে ভরা হয় সেটা দেখেছে। চা শ্রমিকেরা কোথায় থাকে কীভাবে থাকে সেটা দেখেছে, তাদের একটা মন্দির দেখেছে এমন কী শুশানে একজনকে পুড়তেও দেখেছে–কিন্তু তারপরেও সারাক্ষণই তাদের কথাবার্তা হলো জোককে ঘিরে। সারাক্ষণই সুমি তটস্থ হয়ে ছিল, একটু পরে পরে শরীরের এখানে সেখানে হাত দিয়ে চমকে চমকে উঠছিল। বাসায় ফিরে আসার জন্যে গাড়িতে ওঠার পর শেষ পর্যন্ত তার ভয়টা একটু কমলো।

    তারা যখন গাড়ি করে রওনা দিয়েছে তখন অসম্ভব গরম। টুম্পার এরকম গরম দেখে অভ্যাস নেই সে দরদর করে ঘামছে, ছোট খালা এবং ছোট খালুও খবরের কাগজ দিয়ে নিজেদের বাতাস করতে করতে বলছেন, ইশরে! এ দেখি মানুষ মারা গরম!

    গাড়ি যখন ঘণ্টা খানেক গিয়েছে তখন টুম্পা একটু অবাক হয়ে দেখলো হঠাৎ করে আকাশে মেঘ জমা হতে শুরু করেছে। একটু আগেই আকাশে মেঘের কোনো চিহ্ন ছিল না, এতো তাড়াতাড়ি কেমন করে এরকম মেঘ এসে হাজির হয়েছে কে জানে! দেখতে দেখতে মেঘে আকাশ ঢেকে গেল–কি মিশমিশে কালো মেঘ! টুম্পা অবাক হয়ে দেখে মেঘগুলো জীবন্ত প্রাণীর মতো আকাশে নড়ছে। টুম্পা তার জীবনে এরকম কালো মেঘ দেখে নি! আকাশ চিরে হঠাৎ বিদ্যুতের ঝলক নিচে নেমে এল আর সেই বিদ্যুতের আলোতে পুরো এলাকাটা যেন ঝলসে উঠলো। একটু পর বজ্রপাতের গুরুগম্ভীর আওয়াজ গুম গুম করে দূর থেকে ভেসে আসে– সেই শব্দটি পুরো মাঠ ঘাট ক্ষেত নদীর ওপর দিয়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ভেসে যায়।

    টুম্পা বলল, ও মাই গড! কী দৃশ্য! কী অসাধারণ দৃশ্য!

    ছোট খালু বললেন, এখন এক পশলা বৃষ্টি হবে, দেখবে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে পৃথিবীটা।

    ছোট খালু গাড়িটা একটু থামাতে বলো না, একটু ভালো করে দেখি!

    সুমি আর রুমি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হ্যাঁ আব্বু হ্যাঁ। থামাও না।

    ছোট খালু ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললেন, ড্রাইভার সাথে সাথে রাস্তার পাশে গাড়ি থামালো। ছোট খালু গাড়ির দরজা খুলে দিতেই সবাই দুদ্দাড় করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। আকাশের কালো মেঘ আরো মিশমিশে কালো হয়েছে, দিনের বেলাতেই মনে হচ্ছে বুঝি অন্ধকার নেমে এসেছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে সাথে সাথে মেঘের গর্জন। সামনে বিস্তীর্ণ মাঠ তার পাশে একটা ছোট নদী। নদীতে একটা ছোট মেয়ে একটা নৌকাকে লগি দিয়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে বিচিত্র একটা থমথমে পরিবেশ, মনে হতে থাকে বুঝি ভয়ানক কিছু ঘটবে। হঠাৎ করে একটা দমকা বাতাস ছুটে এল, শুকনো খড়কুটো পাতা ধূলো বালি উড়তে থাকে। কিছু পাখি তারস্বরে চিৎকার করতে করতে মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল।

    টুম্পা এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে। তার মাঝে হঠাৎ বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। ছোট খালা চিৎকার করে বললেন, গাড়িতে! গাড়িতে!

    সুমি বলল, আম্মু বৃষ্টিতে ভিজি?

    রুমি বলল, হ্যাঁ আম্মু। প্লিজ?

    টুম্পা অবাক হয়ে ভাবল, মানুষ আবার বৃষ্টিতে কেমন করে ভেজে? ছোট খালা নিশ্চয়ই এরকম পাগলামো করতে দেবেন না, কিন্তু টুম্পা অবাক হয়ে দেখলো ছোট খালা বললেন, ভিজবি? যা!

    সুমি আর রুমি টুম্পার হাত ধরে আনন্দে চিৎকার করে বলল, চল টুম্পা আপু! চল!

    সুমি আর রুমির হাত ধরে টুম্পা যখন খোলা মাঠের দিকে ছুটে যেতে লাগলো তখন সে হঠাৎ করে বুঝতে পারলো কেন বৃষ্টিতে ভেজা এতো আনন্দের। সারা জীবন সে দেখে এসেছে বৃষ্টি মানেই টিপটিপে ঠাণ্ডা মন খারাপ করা স্যাঁতস্যাঁতে একটা ব্যাপার। অথচ এই বৃষ্টিটি একেবারে উদ্দাম, প্রবল, তীব্র আর সবচেয়ে বড় কথা মোটেও ঠাণ্ডা নয়। বৃষ্টির প্রথম ঝাঁপটাটা কেটে যাবার পরই পুম্পা অবাক হয়ে দেখলো এটা খুব মজার এক ধরণের বৃষ্টি। ঝমঝমে বৃষ্টি তাদের শরীর ভেসে যাচ্ছে অথচ তাদের ঠাণ্ডা লাগছে না– এটা কী বিচিত্র অনুভূতি!

    রুমি আর সুমি নিশ্চয়ই বৃষ্টিতে ভিজে অভ্যস্ত–তারা মাঠে নাচানাচি করে ছুটতে লাগলো, চিৎকার করে গাইত লাগলো আয় বৃষ্টি ঝেপে ধান দেব মেপে…, টুম্পা প্রথমবার বুঝতে পারলো কেন এই দেশের মানুষ বৃষ্টিকে এতো ভালোবাসে! যে বৃষ্টি এতো সুন্দর তাকে কী ভালো না বেসে পারা যায়?

    সুমি টুম্পাকে ডাকলো, আস টুম্পা আপু! আস এখানে নাচি!

    টুম্পার প্রথম প্রথম একটু লজ্জা করছিল কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই লজ্জা ভেঙ্গে সেও ছোটাচ্চুটি করতে লাগলো। চিৎকার করে গান গাইতে লাগলো। টুম্পা অবাক হয়ে দেখলো বৃষ্টির মাঝে ছুটে যেতে যেতে অনেক গুলো বাচ্চা দাঁড়িয়ে গেছে। কয়েকজন বেশ ছোট, গায়ে একটা সূতাও নেই, রুমি সুমি আর টুম্পাকে নাচানাচি করতে দেখে তারা কিছুক্ষণ দাঁত বের করে হাসলো তারপর তারাও নাচানাচিতে যোগ দিয়ে দিলো।

    নাচানাচি করতে করতে তারা অনেকদূর চলে গিয়েছিল। হঠাৎ করে শুনতে পেলো তাদের গাড়ির হর্ণ বাজছে– ছোট খালা আর ছোট খালু নিশ্চয়ই ফিরে যেতে ইঙ্গিত করছে!

    সুমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, চল! আম্মু ডাকছে!

    রুমি বলল, অরও একটু থাকি! এরকম ফাটাফাটি বৃষ্টি বেশি হয় না।

    সুমি বলল, ঠিকই হয়। আমরা বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকি তো, তাই টের পাই না।

    টুম্পা বলল, অনেক মজা হয়েছে। আমি চিন্তাও করি নাই এরকম বৃষ্টির মাঝে ভেজা যায়। আমেরিকায় বৃষ্টিগুলা প্যাঁচপ্যাঁচ ঠাণ্ডা– পিট পিট করে পড়ে। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও খালি নাকের ডগাটা ভিজবে। আর এটা কী চমৎকার বৃষ্টি! সারা শরীর পানিতে ভেসে যাচ্ছে।

    আবার হর্ণের শব্দ হলো, তার সাথে এবার ছোট খালার গলা শোনা গেল, চিৎকার করে ডাকছেন।

    টুম্পা বলল, চল যাই।

    সবাই ভিজতে ভিজতে গাড়ির কাছে ফিরে এল, ছোট খালু বললেন, ভেজা হলো?

    টুম্পা বলল, জী ছোট খালু এতো মজা জীবনে হয় নাই।

    ছোট খালা বললেন, এখন ঝটপট মাথা মুছে শুকনো কাপড় পরে নাও, গাড়ির ভেতরে কাপড় বদলাতে পারবে তো?

    টুম্পা বলল, পারব ছোট খালা।

    কাজটা খুব সহজ হলো না কিন্তু যখন সত্যি সত্যি তিনজনই শুকনো কাপড় পরে বসেছে তখন নিজেদের এতো ঝরঝরে লাগছিল যে সেটা আর বলার মতো নয়। গাড়ি ছেড়ে দেবার সাথে সাথে সুমি বলল, আম্মু খিদে লেগেছে!

    ছোট খালা বললেন, খিদে তো লাগবেই, এতো ছোটাচ্চুটি নাচানাচি করলে খিদে লাগবেনা? কী খাবি বল। পরোটা শিক কাবাব নাকি ডালপুরি স্যাণ্ডউইচ? বাবুর্চি সবকিছু তৈরি করে দিয়েছে।

    রুমি বলল, বাবুর্চি ভাই! জিন্দাবাদ।

    .

    ওরা বাসায় পৌঁছালো রাত সাড়ে বারোটায়। গাড়ি থেকে নেমে উপরে ওঠার সময় সবাই দেখল সিঁড়িতে একজন গুটি গুটি মেরে বসে আছে। টুম্পা একটু অবাক হয়ে এগিয়ে গেল, মানুষটি মাথা তুলে বলল, টুম্পা?

    টুম্পা অবাক হয়ে দেখলো মানুষটি তার আব্বু।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article নিতু আর তার বন্ধুরা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }