Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প160 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. নতুন বাবা

    নতুন বাবা

    স্কুল বাসে টুম্পার পাশে বসেছে জেসিকা। একটা বড় চকলেটের বার চিবাতে চিবাতে বলল, শুক্রবার সন্ধ্যেবেলা কী করছ?

    শুক্রবার সন্ধ্যেবেলা টুম্পা সে কিছুই করছে না কিন্তু কথাটা সে বলতে পারল না, কারণ তাকে বাসা থেকে এই আমেরিকান বন্ধুদের সাথে কোথাও যেতে দেবে না। টুম্পা সরল মুখ রেখে বলল, শুক্রবার বাসায় একটা পার্টি আছে–বাসায় থাকতে হবে।

    ও! আমরা সিনেমা দেখতে যাব। জনি ডেপের নতুন মুভিটা রিলিজ হয়েছে।

    আমি মিস করব। টুম্পা একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল, জনি ডেপ তার খুব প্রিয় অভিনেতা।

    সামনের উইক এন্ডে আমরা শহরে যাব, তখন চলো আমাদের সাথে।

    হ্যা! টুম্পা উজ্জ্বল মুখে বলল, তখন যাব তোমাদের সাথে। অনেক মজা হবে। টুম্পা খুব ভালো করে জানে সামনের উইক এন্ডে যখন যাবার সময় হবে তখন তাকে যেতে না পারার জন্যে আরেকটা কৈফিয়ত খুঁজে বের করতে হবে। অনেক সোজা হতো সে যদি সবাইকে সত্যি কথাটা বলে দিতে পারতো তাহলে তাকে এই যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হতো না। কিন্তু টুম্পা কাউকে বলতে পারে না, তার বাবা–মা তাকে বিশ্বাস করে কোথাও যেতে দেয় না বলতে তার খুব লজ্জা হয়।

    বাস থেকে জেসিকা নেমে যাবার পর টুম্পা বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। শহর ঘুরে ঘুরে একেবারে শহরের শেষ মাথায় তাদের বাসা। প্রত্যেকদিনই তাকে অনেকক্ষণ বাসে সময় কাটাতে হয়, তার ভালোই লাগে। তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে কী করবে? টুম্পার মনে হয় সে যতক্ষণ বাইরে থাকে ততক্ষণই বুঝি সে স্বাধীনভাবে আছে। যখন বাসায় পৌঁছাবে তখনই তার ওপর একশরকম নিয়ম কানুন চেপে বসবে। তার বয়স এখন তেরো, এই বয়সের ছেলে মেয়েদের জন্যে এখানে কতো কী করার আছে, তার কিছুই সে করতে পারে না। ভাগ্যিস তার ছবি আঁকার সখটা ছিল তাই যখন খুব মন খারাপ হয় সে বসে বসে ছবি আঁকে। সবকিছু ভুলে যেতে পারে তখন। তা না হলে যে কী হতো–মনে হয় সে পাগলই হয়ে যেতো।

    পাগল! বাসায় তাকে কথায় কথায় এই কথাটা শুনতে হয়, তার শরীরে পাগলের রক্ত আছে সে জন্যে তার সবকিছু নাকি উল্টাপাল্টা। কথাটা বলেন তার বাবা, আসল বাবা নয় তার সৎ বাবা। টুম্পার আসল বাবা নাকি পাগল ছিল, তার আম্মুকে এতো অত্যাচার করতো যে আম্মু আর না পেরে টুম্পাকে নিয়ে পালিয়ে আমেরিকা চলে এসেছেন। আসল বাবার পুরো জীবন নাকি কেটেছে পাগলা গারদে। শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। এতোদিনে নিশ্চয়ই মরে টরে গেছেন। টুম্পার নতুন বাবা বলেন যে বাংলাদেশে ভালো মানুষই বেঁচে থাকতে পারে না, পাগল বেঁচে থাকবে কেমন করে? বাংলাদেশকে নিয়ে সবসময় তার নতুন বাবাও নাক শিটকান। আজকে মিসেস হেনরিকসনের কথা শোনার আগে টুম্পা কোনোদিন বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ভালো কথা শোনে নি। টুম্পার নতুন বাবাও তো বাংলাদেশের, একটা মানুষের তার নিজের দেশের জন্যে মায়া থাকে না কেন টুম্পা কখনো ঠিক করে বুঝতে পারে না।

    স্কুল বাসটা তার বাসা থেকে এক ব্লক দূরে থেমে গেল। স্কুল ব্যাগটা নিয়ে বাস থেকে নামার সময় টুম্পা হাত নেড়ে বাস ড্রাইভার মিসেস রজার্সকে বিদায় জানালো। পাহাড়ের মতো বড় মিসেস রজার্স বললেন, সাবধানে থেকো সোনা। কাল আবার দেখা হবে!

    একেবারেই সাধারণ গৎবাধা স্নেহের কথা কিন্তু শুনে টুম্পার বুকের ভেতর টন টন করে ওঠে, তার বাসায় কেউ তাকে এই নরম কথাগুলো বলে না। সত্যিকারের বাবার কথা তার একটুও মনে নেই, নতুন বাবার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে তার আম্মু তাকে খুব আদর করতেন, বিয়ে হয়ে যাবার পর সব কেমন যেন ওলট পালট হয়ে গেল। টুম্পার বয়স তখন মাত্র ছয় কিছুতেই সে বুঝতে পারছিল না কেন তার আম্মুকে অচেনা একটা মানুষকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ের দিন কী কান্নাটাই না কেঁদেছিল এখনো মনে আছে। তার নতুন বাবাকে সে ভয় পেতো, ছোট বাচ্চারা সব কিছু নিজেদের মতো করে বুঝতে পারে সেও বুঝেছিল এই মানুষটা তাকে পছন্দ করে না। হাসি হাসি মুখ করে তাকে আদর করার ভান করতেন কিন্তু তার মাঝে কোনো ভালোবাসা ছিল না।

    তার ছোট ভাই লিটনের জন্ম হল এক বছর পর, তার নতুন বাবা আর আম্মু লিটনকে নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে গেলেন যে টুম্পা বলে যে কেউ আছে সেটা যেন কারো মনেই থাকলো না। সে যখন আরো ছোট ছিল তখন তার খুব হিংসে হতো, এখন একটু বড় হয়েছে এখন আর হিংসে হয় না, মাঝে মাঝে একটু অভিমান হয়। তবে লিটনকে সে খুব আদর করে। মনে হয় তার নতুন বাবা আর আম্মু থেকে সেই লিটনকে বেশি আদর করে।

    টুম্পার কাছে বাসার একটা চাবি আছে, দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে লিটন একটা খেলনা বন্দুক নিয়ে ছোটাচ্চুটি করছে, টুম্পাকে দেখে গুলি করতে করতে তার দিকে ছুটে এল। টুম্পাও তার দুই হাতকে দুটো পিস্তল বানিয়ে লিটনকে গুলি করার ভান করে। তারপর ব্যাগটা নিচে রেখে সে লিটনের পিছু ধাওয়া করে তাকে ধরে ঘাড়ে তুলে নিয়ে কাতুকুতু দেয়, লিটন হাত পা ছুঁড়ে হাসতে হাসতে আনন্দে চিৎকার করতে থাকে।

    আম্মু রান্নাঘর থেকে বাংলায় জিজ্ঞেস করলেন, টুম্পা, মা এসেছিস?

    টুম্পার কী মনে হলো কে জানে, বাংলায় উত্তর দিলো, বলল, হ্যাঁ, আম্মু এসেছি।

    বাসায় তার নতুন বাবা আর আম্মু সবসময় বাংলায় কথা বলেন, টুম্পা যখন ছোট ছিল সেও খুব সুন্দর বাংলা বলতে পারতো। যতোই বড় হচ্ছে বাংলাতে দখল কমে আসছে। লিটন এখন পরিষ্কার বাংলায় কথা বলে, স্কুলে যেতে শুরু করা মাত্রই আস্তে আস্তে বাংলা ভুলে যেতে শুরু করবে।

    আম্মু বললেন, হাত মুখ ধুয়ে আয়। কিছু খাবি।

    টুম্পা লিটনকে ঘাড় থেকে নামিয়ে স্কুল ব্যাগটা তুলে নিজের ঘরে গেল। ছোট এই ঘরটাই হচ্ছে তার পৃথিবী, ভাগ্যিস তার নিজের এই ছোট একটা পৃথিবী আছে যেখানে এসে সে সবকিছু থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে। টেবিলে তার কম্পিউটার, দেওয়ালে ফ্রেন্ডস এর একটা পোস্টারে রস, জোয়ী, মনিকা, চ্যান্ডলার, র‍্যাচেল আর ফিবি গলাগলি করে দাঁড়িয়ে আছে। টুম্পার নতুন বাবা তার ঘরে খুব বেশি আসেন না। যখন আসেন তখন এই পোস্টারটা দেখে খুব বিরক্ত হন আর বিড় বিড় করে বলেন, এটা ঘরে টানানোর একটা জিনিষ হলো? ছিঃ! ভাগ্যিস তার নতুন বাবা কোনোদিন টেলিভিশনে ফ্রেন্ডস দেখেন নি, যদি দেখতেন তাহলে নির্ঘাত পোস্টারটা টেনে ছিঁড়ে ফেলতেন। টুম্পা জানালায় পর্দা টেনে দেয়, পিছনে একটা ছোট বনের মতো, সেখানে অনেকগুলো পাইন গাছ জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। এই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে টুম্পার খুব ভালো লাগে। তার কাছে সবচেয়ে সুন্দর লাগে যখন তুষারে সবকিছু ঢেকে যায়, পৃথিবীতে কী এর চাইতে সুন্দর কোনো দৃশ্য আছে?

    টুম্পা বাথরুমে গিয়ে হাত–মুখ ধুয়ে নিচে নেমে আসে। আম্মু রান্নাঘরের ছোট টেবিলে এক স্লাইস পিতজা গরম করে রেখেছেন। পিতজার দোকানে গরম গরম পিতজা খেতে খুব মজা কিন্তু ফ্রিজ থেকে বের করে আনা পিতজার মতো জঘন্য আর কী হতে পারে? টুম্পা অবশ্যি কিছু বলল না, ফ্রিজ থেকে। কোকের বোতল বের করে এক গ্লাস কোক নিয়ে পিতজার স্লাইসটা খেতে থাকে। একটা খাবার যত অখাদ্যই হোক কোকের সাথে সেটা খেয়ে ফেলা যায়।

    আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, স্কুল কেমন হলো?

    ভালো। টুম্পার হঠাৎ করে মিসেস হেনরিকসনের কথা মনে পড়ল। বলল, আচ্ছা আম্মু তুমি কী জর্জ হ্যারিসনের কনসার্টের কথা জান? বাংলাদেশের উপর হয়েছিল। উনিশশো একাত্তর সালে?

    আম্মুকে একটু বিভ্রান্ত দেখা গেল, ইতস্তত করে বললেন ও আচ্ছা! মনে হয় শুনেছি। অনেক আগের ব্যাপার–

    তুমি কী জেসোর রোড কবিতাটা পড়েছ?

    কী রোড?

    জেসোর। জেসোর রোড।

    কে লিখেছে?

    এলেন গিনসবার্গ।

    আম্মু ভুরু কুঁচকে চিন্তা করতে থাকেন। হঠাৎ করে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, বললেন, ও আচ্ছা, যশোর রোড। যশোরকে জেলোর বললে আমি বুঝব কেমন করে?

    যশোর রোড কী?

    যশোর হচ্ছে বাংলাদেশের একটা শহর। সেই শহর থেকে যে রাস্তাটা গেছে সেটা হচ্ছে যশোর রোড।

    টুম্পা পিতজা স্লাইসের শেষ টুকরোটা মুখে জোর করে ঠেসে দিয়ে বলল, তুমি কবিতাটা পড় নি?

    নাহ্। আম্মু মাথা নাড়লেন, ইংরেজি কবিতা আর কয়টা পড়েছি। তবে এটার উপর মৌসুমী ভৌমিকের একটা গান আছে সেটা শুনেছি।

    বাসায় আছে সেটা আম্মু?

    থাকার কথা। খুঁজে দেখ। আম্মু একটু অবাক হয়ে বললেন, তুই কবে থেকে বাংলা গানের জন্যে এত পাগল হয়ে গেলি?

    না পাগল হই নাই। আজকে স্কুলে একজন বললেন তো তাই শুনতে চাচ্ছিলাম।

    কী বলেছে?

    বাংলাদেশের কথা।

    আমেরিকান মানুষ?

    টুম্পা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। মিসেস হেনরিকসন। আমাদের সাবস্টিটিউট টিচার।

    আম্মু মুখ শক্ত করে বললেন, বন্যা সাইক্লোন এইসব নিয়ে কথা বলেছে নিশ্চয়ই।

    টুম্পা মাথা নাড়ল। আম্মু বললেন, তাই হবে। কবে যে দেশটা ঠিক হবে–এই দেশ নিয়ে কেউ ভালো একটা কথা বলতে পারে না।

    টুম্পা বলল, আসলে মিসেস হেনরিকসন, বাংলাদেশ নিয়ে ভালো ভালো কথাই বলেছেন।

    ছাই বলেছে। বন্যা সাইক্লোন নিয়ে কথা বললে ভালো কথা বলা হলো? এগুলো ভালো কথা?

    টুম্পা আর তর্ক করল না। সিডির স্তূপ থেকে মৌসুমী ভৌমিকের গানের সিডিটা খুঁজে বের করে সে নিজের রুমে এনে যশোর রোড গানটি শুনল। এতো সুন্দর গানের কথাগুলো, আর মৌসুমী ভৌমিক এতো সুরেলা গলায় এতো দরদ দিয়ে গানটি গেয়েছে যে টুম্পার মনে হলো সে বুঝি পুরো দৃশ্যটি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। সে ভাসা ভাসা ভাবে জানে উনিশশো একাত্তর সালে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, প্রায় এক কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছিল, মানুষ মারা গিয়েছিল তিরিশ লক্ষ, কিন্তু সেই দুঃখ কষ্ট আর যন্ত্রণার বিষয়টা সে আগে কখনোই ঠিক করে অনুভব করে নি। এই গানটা শুনতে শুনতে মনে হলো সে প্রথমবারের মতো সেটা অনুভব করল। পৃথিবীর অপর পৃষ্ঠে তার একটা দেশ আছে, সেই দেশের মাটিতে তার জন্ম হয়েছিল, সেটাই তার জন্মভূমি। দেশটা ঠিক তার মতোই দুঃখী! অনেক কষ্ট করে সেই দেশের জন্ম হয়েছিল এখন সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্যে অনেক কষ্ট করছে। ঠিক কী কারণ জানা নেই, যে দেশটিকে সে দেখেনি শুধু মাত্র সেই দেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছিল বলে টুম্পা তার বুকের ভেতর সেই দেশটির জন্যে গভীর এক ধরনের মমতা অনুভব করতে থাকে।

    টুম্পার ক্লাশের বন্ধু বান্ধবেরা যখন মলে দুবার চক্কর খেয়ে সিনেমা হলে ঢুকেছে জনি ডেপের শেষ সিনেমাটা দেখার জন্যে তখন টুম্পা তার ছোট ঘরটায় কম্পিউটারের সামনে বসে রইলো। ইন্টারনেটে বাংলাদেশ নিয়ে যত রকম তথ্য পাওয়া যায় সে এক ধরনের ছেলেমানুষী আগ্রহ নিয়ে সেগুলো দেখতে থাকে। টুম্পা অবাক হয়ে আবিষ্কার করলো এই দেশটিকে টিকিয়ে রেখেছে এই দেশের গরিব মানুষেরা, যারা চাষবাস করে, গার্মেন্টসে কাজ করে কিংবা দেশে বিদেশে গিয়ে ছোটখাটো কাজ করে। আর দেশটাকে লুটেপুটে খায় বড়লোকেরা, মন্ত্রীরা, ব্যবসায়ীরা! এতো কষ্টের দেশকে টিকিয়ে রাখছে গরিব মানুষেরা আর লুটেপুটে খাচ্ছে বড়লোকেরা সেটা পড়েই টুম্পার রক্ত কেন জানি গরম হয়ে উঠতে থাকে!

    রাত্রে খাবার টেবিলে দেখা গেল টুম্পার নতুন বাবার মেজাজ খুব খারাপ। মাঝে মাঝে অফিসে কিছু একটা ঝামেলা হয় আর সেই রাগটা বাসায় এসে লিটন আর টুম্পার উপর ঝাড়েন। আজকেও তাই হলো, লিটন প্লেটের ভাতগুলোকে একটা পাহাড়ের মতো বানিয়ে তার উপরে একটা চামুচ বসিয়ে সেটাকে মেশিনগান বানিয়ে গুলি করছিল আব্বু তখন তাকে ধমক দিলেন, কী হচ্ছে লিটন খাবার নিয়ে খেলা?

    লিটন এখনো একটু গাধা রয়ে গেছে কখন চুপ করে থাকতে হয় শেখে নি, বাবাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বললো, কী হয় আব্বু খাবার নিয়ে খেললে?

    বাবা একটু থতমত খেয়ে গেলেন, গম্ভীর হয়ে বললেন, পৃথিবীতে এতো মানুষ না খেয়ে থাকে সেই খাবার নিয়ে খেলতে হয় না।

    কোন মানুষ না খেয়ে আছে আব্বু?

    বাংলাদেশেই লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে আছে।

    টুম্পা এতোক্ষণ ইন্টারনেটে বসে বসে বাংলাদেশের উপর গবেষণা করে এসেছে কাজেই সে একটু প্রতিবাদ না করে পারল না, বলল, না বাবা, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

    বাবা চোখ পাকিয়ে বললেন, তুই কেমন করে জানিস? ইন্টারনেটে দেখেছি। বাবা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ঐ সব হচ্ছে বাকোয়াজ। বাংলাদেশে কী আছে? না আছে কোনো ইন্ডাস্ট্রি, না আছে কোনো তেল, না আছে কোনো রিসোর্স–আছে শুধু চোর আর বাটপার। যদি চোর আর বাটপার এক্সপোর্ট করা যেতো তাহলে বাংলাদেশ এতোদিনে বড়লোক হয়ে যেতো! কথা শেষ করে আব্বু হা হা করে হেসে উঠলেন যেন খুব মজার কথা বলেছেন।

    লিটন জিজ্ঞেস করল, চোর, বাটপার কেমন করে এক্সপোর্ট করে আব্বু? টুম্পা বলল, ধুর গাধা! যেটা বুঝিস না সেটা নিয়ে কথা বলিস না।

    আম্মু বললেন, কী যে হবে দেশটার। যখনই খোঁজ নিই শুনি হরতাল আর অবরোধ

    টুম্পা আস্তে আস্তে বলল, এই সব গোলমালের মাঝেও বাংলাদেশের গ্রোথ ছয় পার্সেন্ট।

    বাবা বললেন,  দেশটা টিকে আছে ভিক্ষার উপর। আমেরিকা ইউরোপ যদি ফরেন এইড না দিতো তাহলে এতোদিনে দেখতে কী হতো। সব বঙ্গোপসাগরে ভেসে যেতো।

    টুম্পা বলল, না বাবা। বাংলাদেশে ফরেন এইড হাফ বিলিয়ন থেকে কম! গার্মেন্টস–এর এক্সপোর্ট হচ্ছে আট বিলিয়ন। মিডল ইস্টের শ্রমিকেরা পাঠায়

    আট বিলিয়ন।

    বাবা মুখ শক্ত করে বললেন, তুই কেমন করে জানিস?

    ইন্টারেনটে দেখেছি।

    বাবা একটু থতমত খেয়ে বললেন, ঐ বিলিয়ন ডলারের হিসাব দিয়ে লাভ নেই। ঐ বিলিয়ন ডলার হচ্ছে খালি কাগজে কলমে। আসলে সব ফক্কা। আমি ঐ দেশটা দেখেছি। আমি জানি দেশটা হচ্ছে চোরের দেশ। সবাই চোর। তুই জানিস আমার জমিটা বিক্রি করার জন্যে কত টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল?

    টুম্পার খুব ইচ্ছে করল বলতে, তুমি যদি ঘুষ দাও তাহলে তো তুমিও চোর কিন্তু সে বলল বললে তার ধড়ে আর মাথা থাকবে না।

    জমি বিক্রি করার জন্যে বাবার কতো টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল সেটা জানার জন্যে টুম্পা কোনো প্রশ্ন করলো না দেখে বাবা মনে হয় আরেকটু রেগে গেলেন, বললেন, আমার কোনো কথা তোর বিশ্বাস হয় না বিশ্বাস হয় তোর ইন্টারনেট?

    টুম্পা বুঝলো এখন কোনো কথা বললে আরো বিপদ হয়ে যাবে তাই সে চুপ করে রইলো। বাবা বললেন, এতোই যদি বাংলাদেশের উপর বিশ্বাস তাহলে এই দেশে পড়ে আছিস কেন? চলে যা বাংলাদেশে! গার্মেন্টসে কাজ কর গিয়ে।

    টুম্পা এবারেও কোনো কথা বলল না। বাবা তখন আরো রেগে গেলেন, বললেন, শেষবার যখন গিয়েছি তখন দেখেছি, দেশটা যে শুধু চোর বাটপারের দেশ তা না, দেশটা হচ্ছে ময়লা আবর্জনার দেশ। মশা মাছি আর পোকা মাকড়ের দেশ। ফকির আর ফকিরনীর দেশ–

    টুম্পার ঠিক কী হলো কে জানে, সে ফিস ফিস করে বলল, আমার খুব বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছা করে।

    বাবা অবাক হয়ে বললেন, কী বললি?

    টুম্পা মুখ তুলে একবার তার বাবা আরেকবার তার আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার খুব বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছে করে।

    কিছু না বুঝে লিটনও বললো, আমারও যেতে ইচ্ছা করে।

    আব্বু চোখ পাকিয়ে লিটনের দিকে তাকালেন, লিটন সাথে সাথে বলল, ডিজনিল্যান্ডেও যেতে ইচ্ছা করে।

    বাবা খাওয়া থামিয়ে টুম্পাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোর কেন বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছে করে?

    দেখতে।

    কী দেখতে?

    সব কিছু। একটু থেমে বলল, বাংলাদেশে নাকি খুব সুন্দর বৃষ্টি হয়। পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে সুন্দর।

    বাবা জোর করে একটু হাসার মতো শব্দ করলেন, তারপর আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার মেয়ের কথা শোনো! সে নাকি বৃষ্টি দেখতে যাবে বাংলাদেশ! মাথা খারাপ আর কাকে বলে!

    আম্মু বললেন, নিজের দেশ দেখার সখ তো থাকতেই পারে! বাবা বললেন, না! নিজের দেশটা যদি হয় বাংলাদেশ তাহলে সেই সখ থাকে শুধু পাগলের  বাবা হঠাৎ করে থেমে গেলেন তারপর কিছু একটা মনে পড়েছে সেরকম ভান করে বললেন, হয়তো সেটাই ঘটেছে! হাজার হলেও বাপের রক্ত আছে শরীরে। পাগলামির বীজ তো আসতে হবে কোথা থেকে! খুব বড় ধরনের রসিকতা হয়েছে এরকম ভান করে আব্বু হা হা করে হাসতে লাগলেন। নির্মম আনন্দহীন হাসি। টুম্পা মাথা নিচু করে খাওয়ার ভান করতে থাকে। লিটন টুম্পার হাত ধরে বলল, পাগলামির বীজ মানে কী আপু?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article নিতু আর তার বন্ধুরা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }