Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প160 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. ঠিকানা

    ঠিকানা

    টুম্পা হাতে অনেকগুলো ছবি নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দুদিন আগে এখানে সে বাচ্চাগুলোর ছবি তুলেছিল। বাচ্চাদের ছবি তোলা হয়েছিল তাতেই তাদের আনন্দের সীমা ছিল না, টুম্পা তখনই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল ছবিগুলো প্রিন্ট করে সে বাচ্চাগুলোকে দেবার চেষ্টা করবে। আজ সে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে বাচ্চাগুলোকে খুঁজছে, সত্যি সত্যি হঠাৎ করে কোথা থেকে দুটি বাচ্চা এসে হাজির হলো! রিনরিনে গলায় বলল, আপা! দুইটা টাকা দেবেন? ভাত

    টুম্পা বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে তাদের ছবি তুলেছিলো কী না। এতোগুলো বাচ্চার ছবি তুলেছিল যে আলাদা করে তাদের চেহারা মনে করতে পারছিল না, কিন্তু হঠাৎ বাচ্চাগুলো তাকে চিনে ফেললো। তারা আনন্দে চিৎকার করে বলল, ফটো ভোলা আপা! ফটো তোলা আপা!

    আমি তোমাদের দুজনের ছবি তুলেছিলাম?

    হে আপা! আজকে আবার তুলবেন?

    না। আজকে তোমাদের ছবি দিতে এসেছি। টুম্পা হাতের ছবিগুলো মেলে ধরলো, কোনটা তোমাদের?

    দুইজন উত্তেজিত ভাবে তাদের ছবি খুঁজতে থাকে এবং সেটা পেয়ে যাবার পর আনন্দে এতো জোরে চিৎকার করে উঠে যে আশেপাশে মানুষেরা অবাক হয়ে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। কিছু বোঝার আগেই টুম্পাকে ঘিরে ছোট ছোট বাচ্চাদের ভীড় জমে যায়, তারা কাড়াকাড়ি করে নিজেদের ছবি নিয়ে আনন্দে লাফালাফি করতে থাকে। কিছুক্ষণের মাঝেই দেখা গেল বেশ কয়েকজন বাচ্চা, যারা সেদিন ছিল না এবং আজকে এসেছে তারা মুখ কালো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

    খুব ছোট একজন তার ছবি নেই বলে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলো। কাজেই টুম্পাকে আবার নতুন করে তাদের ছবি তুলতে হলো এবং হঠাৎ বাচ্চাদের মাঝে এক ধরনের মারামারি শুরু হয়ে যায়। টুম্পা অনেক কষ্টে তাদের মারামারি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে? কী হয়েছে তোমাদের? মারামারি করছ কেন?

    উত্তেজিত একজন হড়বড় করে বলল, মইত্যা কতো বড় চোরা, আগের দিন ছবি তুলছে আজকে আরেকবার তুলছে।

    মতি, যাকে মইত্যা বলে ডাকা হচ্ছে গলা ফাটিয়ে প্রতিবাদ করল, আগে তুলি নাই।

    এইবারে একসাথে কয়েকজন চিৎকার করে উঠল, তুলছে। একজন বলছে, নিজের ছবি নিছ।

    মতি তার ছবিটি গেঞ্জির তলায় লুকিয়ে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে করতে বলল, নেই নাই।

    এতো বড় মিথ্যা কথার প্রতিবাদ হিসেবে একসাথে কয়েকজন মতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চেয়েছিল টুম্পাকে কষ্ট করে থামাতে হলো। সে মুখ শক্ত করে বলল, খবরদার, নো মারামারি। মারামারি করলে আমি কোনোদিন আসব না।

    টুম্পার কথায় ম্যাজিকের মতো কাজ হলো। বাচ্চাগুলো সাথে সাথে তাদের মারামারি থামিয়ে টুম্পাকে ঘিরে দাঁড়ালো। ভদ্র চেহারার মানুষেরা কখনো তাদের সাথে ভালো করে কথা বলে না, এরকম সুন্দর একটা আপা শুধু যে তাদের সাথে ভালো করে কথা বলছে তা না, তাদের ছবি পর্যন্ত তুলে দিচ্ছে সেই আপাকে তারা রাগাতে চায় না। টুম্পা বলল, গুড। কেউ মারামারি করবে না। যাদের ছবি তোলা হয় নাই শুধু তারা আস একজন একজন করে।

    এবারে মোটামুটি ঝামেলা ছাড়াই নতুন বাচ্চাদের ছবি তোলা শেষ হলো। টুম্পা চলে আসার আগে তাকে আবার নতুন ছবি নিয়ে ফিরে আসার কথা দিতে হলো।

    .

    টুম্পা বাসায় ফিরে ছোট খালাকে জিজ্ঞেস করল, আমার কী কোনো ফোন এসেছিল?

    ছোট খালা মাথা নাড়লেন, বললেন, না, আসে নি।

    টুম্পা পরের দিনটা কাটালো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। প্রথমে শহীদ মিনারে যাবার কথা ছিল, সেখানে অনেক মানুষের ভীড় কেউ একজন খুব রেগে মেগে বক্তৃতা দিচ্ছে অন্য অনেকে তার সাথে সাথে গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে। টুম্পা এরকম দৃশ্য কখনো দেখে নি, তার আরো দেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু অন্যেরা রাজি হলো না। তাই তারা চলে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। জাদুঘর কথাটা শুনলেই মনে হয় বিশাল জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একটা কিছু। সেই হিসেবে এই জাদুঘরটা খুবই ছোট। ভিতরে ঢুকে সে অবশ্যি আবিষ্কার করলো খুব গুছিয়ে সবকিছু রাখা আছে। কেউ যদি একেবারে গোড়া থেকে পুরোটুকু দেখতে দেখতে যায় তাহলে এই দেশের ইতিহাসটা মোটামুটি জানা হয়ে যায়। শুরু হয়েছে একেবারে পাকিস্তান ইন্ডিয়া থেকে, তারপর নানা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ইলেকশান বদমাইস ইয়াহিয়া খান তারপর যুদ্ধ! টুম্পা অবাক হয়ে দেখলো কতো বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছে, দেখে মনে হয় তাদের বুঝি দেশ বলতে কী বোঝায় আর স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায় সেটা বোঝার বয়সই হয় নি কিন্তু যখন প্রাণ দেবার সময় হয়েছে তখন হাসতে হাসতে প্রাণ দিয়েছে! টুম্পা নিঃশ্বাস বন্ধ করে পুরো জাদুঘরটা দেখলো। ফিরে আসার আগে সে জাদুঘরের বইয়ের দোকান থেকে কয়েকটা বই, একটা পোস্টার আর অনেকগুলো ভিউকার্ড কিনলো। সুমি জিজ্ঞেস করলো, কেমন লেগেছে এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

    টুম্পা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কখনো এরকম কিছু দেখি নাই। মনে হয় দেখবও না।

    .

    বাসায় এসে টুম্পা ছোট খালার কাছে ছুটে গেল,  ছোট খালা, আমার কী কোনো ফোন এসেছে?

    ছোট খালা মাথা নাড়লেন, বললেন, না টুম্পা। কোনো ফোন আসে নি।

    বিকালবেলা টুম্পাকে নিয়ে যাওয়া হলো সংসদ ভবনে। টুম্পা গিয়ে দেখে সেখানে হাজার হাজার মানুষ। একটু অবাক হয়ে সুমিকে জিজ্ঞেস করল, আজকে এখানে কী হচ্ছে?

    কিছু না।

    তাহলে এতো ভীড় কেন?

    সুমি হেসে বলল, প্রত্যেকদিনই এরকম ভীড় হয়! ঢাকা শহরের মানুষ বিকালে এখানে বেড়াতে আসে।

    টুম্পা বলল, তাই বল!

    সে তাকিয়ে দেখে আসলেই তাই, যারা এসেছে সবাই সেজেগুঁজে এসেছে, হাঁটছে, বেড়াচ্ছে, কথা বলছে, বাদাম খাচ্ছে, বেলুন কিনছে। পুরো এলাকাটাতে কেমন যেন আনন্দের একটা ভাব। টুম্পা মানুষজনকে ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে সংসদ ভবনের দিকে তাকিয়ে থাকে–অত্যন্ত আধুনিক একটা ভবন। এটাকে দেখলে মোটেও একটা ভবনের মতো মনে হয় না, মনে হয় একটা বিশাল ভাস্কৰ্য্য! প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে তৈরি করেছে কিন্তু ভবনটা আশ্চর্য রকম আধুনিক। ইন্টারনেটে পড়েছিল এই ভবনটা নাকি সবসময়েই আধুনিক থাকবে, তখন বুঝতে পারেনি কথাটির অর্থ কী, ভবনটি নিজের চোখে দেখে বুঝতে পারল আসলে এর অর্থ কী। ভবনটি ডিজাইন করেছেন লুই কান, বেচারা একটা ট্রেন স্টেশনের বাথরুমে হার্টফেল করে মারা গেছেন। এতো বড় একজন মানুষ ট্রেন স্টেশনের বাথরুমে কীভাবে মারা যায়?

    টুম্পারা সবাই অন্ধকার নেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো, চারপাশ থেকে আলো জ্বেলে দেবার পর সংসদ ভবনটাকে একেবারে অন্যরকম দেখাতে থাকে। টুম্পার আরো কিছুক্ষণ থাকার ইচ্ছে ছিল কিন্তু মশা এসে খুব বিরক্ত করতে শুরু করে দিলো। ফিরে আসার সময় দেখলো একজন জাপানি মানুষ বিশাল একটা ট্রাইপডের ওপর বড় একটা ক্যামেরা বসিয়ে সংসদ ভবনের ছবি তুলছে। মানুষটার চোখে মুখে একধরনের ভ্যাবাচেকার ভাব, সংসদ ভবন দেখে এরকম ভ্যাবাচেকা খেয়েছে নাকি চেহারাটাই এরকম টুম্পা বুঝতে পারল না!

    বাসায় ফিরে এসে টুম্পা ছোট খালার কাছে ছুটে গেল, ছোট খালা।

    কী মা টুম্পা।

    আমার কী কোনো ফোন এসেছে?

    না রে! কোনো ফোন আসে নি।

    ও! টুম্পার মুখের আলো দপ করে নিভে যায় হঠাৎ।

    .

    রাত্রিবেলা যখন সবাই খেতে বসেছে, রুমি তাদের একজন স্যার কেমন করে পড়ায় সেটা অভিনয় করে দেখাচ্ছে ঠিক তখন একটা টেলিফোন এল। এই বাসায় কার পরে কে টেলিফোন ধরবে তার একটা নিয়ম আছে, এর আগেরটা ধরেছিল সুমি তাই অভিনয় বন্ধ করে একটা যন্ত্রণার মতো শব্দ করে রুমি টেলিফোনটা ধরতে গেল। প্রায় সাথে সাথে ফিরে এসে টুম্পাকে বলল, টুম্পা আপু তোমার ফোন।

    টুম্পার হঠাৎ করে মনে হলো তার নিঃশ্বাস আটকে যাবে। খানিকটা হতচকিতের মতো জিজ্ঞেস করলো, আমার?

    হ্যাঁ, তোমার।

    টুম্পা ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে ড্রয়িংরুমে গিয়ে টেলিফোনটা ধরে কাঁপা গলায় বলল, হ্যালো।

    অন্য পাশ থেকে একজন ভারী গলায় বললেন, টুম্পা?

    জি।

    আমি শামীম আহমেদ বলছি। ঐ যে সেদিন এক্সিবিশনে দেখা হলো—

    জি। বুঝতে পেরেছি।

    আমি শেষ পর্যন্ত একজনকে খুঁজে পেয়েছি যে বুলবুলের খোঁজ জানে।

    টুম্পার মনে হলো তার হৃৎস্পন্দন বুঝি থেমে গেছে। শামীম আহমেদ নামের মানুষটি বললেন, বুলবুলের খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল। নাম শুভ চৌধুরী। একটা খবরের কাগজের স্টাফ আর্টিস্ট–

    টুম্পার মনে হলো তার চারপাশের সবকিছু বুঝি তাকে ঘিরে ঘুরতে শুরু করেছে। সে খুব ধীরে ধীরে মেঝেতে বসলো, তার মনে হতে লাগলো সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।

    শুভ চৌধুরী একটু পাগলা টাইপের, ফাইন আর্টের ছাত্র ছিল এখন গ্রাফিক্সের কাজ করে। খুব ব্রাইট। তার সাথে বুলবুলের যোগাযোগ আছে, তার কাছে তুমি ঠিাকানটা পাবে

    টুম্পা তখনও কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে রিসিভারটা কানে ধরে রাখে। শামীম আহমেদ বললেন, হ্যালো।

    জি।

    তুমি শুনছো?

    জি শুনছি। আমাকে শুভ চৌধুরীর টেলিফোন নম্বরটি দেবেন।

    শুভ চৌধুরীর কোনো টেলিফোন নাই। সে টেলিফোন রাখে না। আমি তোমাকে ঠিকানা দিচ্ছি, তুমি তার সাথে দেখা করো। কাল দুপুরে অফিসে থাকবে। আমাকে বলেছে।

    জি করব।

    শামীম আহমেদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, শোনো টুম্পা, মাঝখানে অনেকদিন পার হয়ে গেছে, তোমার মনে তোমার বাবার কীরকম ছবি আছে আমি জানি না। কিন্তু খুব বেশি কিছু আশা করো না।

    টুম্পা নিঃশ্বাস আটকে রেকে বলল, করব না।

    নাও, ঠিকানাটা লিখো।

    টুম্পা ঠিকানাটা লিখলো।

    .

    যখন আবার ডাইনিং টেবিলে ফিরে এল তখন সবাই নিঃশব্দে টুম্পার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছে। ছোট খালা নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন, কে ছিল?

    আর্টিস্ট শামীম আহমেদ।

    ও। একটু থেমে জিজ্ঞেস করলেন, কী বলল?

    আমাকে আরেকজনের ঠিকানা দিয়েছেন। পত্রিকার স্টাফ আর্টিস্ট। নাম শুভ চৌধুরী।

    ও!

    টুম্পা নিচু গলায় বলল, শুভ চৌধুরী আমার আব্বুর ঠিকানা জানেন।

    কেউ কোনো কথা বলল না, টুম্পা ফিস ফিস করে বলল, আমার আব্বু বেঁচে আছেন। তারপর অনেক কষ্ট করেও নিজেকে শান্ত রাখতে পারল না, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

    ছোট খালা কয়েকবার কিছু একটা বলতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু ঠিক কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। তাই চুপ করে রইলেন।

    .

    শুভ চৌধুরী চেয়ারে হেলান দিয়ে টুম্পার দিকে তাকিয়ে রইলেন। টুম্পা একটু অস্বস্তি অনুভব করে, শুভ চৌধুরীর মাথায় বড় বড় চুল পেছনে ঝুটির মতো করে বাঁধা। মুখে বড় বড় গোঁফ দাড়ি, চুলগুলো কুচকুচে কালো হলেও গোঁফ এবং দাড়ি আধা পাকা। শুভ চৌধুরী হাত দিয়ে তার গোঁফের উপর হাত বুলিয়ে বললেন, তুমি বুলবুলের মেয়ে?

    টুম্পা মাথা নাড়ল। শুভ চৌধুরী ছোট খালার দিকে তাকালেন, আপনি?

    আমি টুম্পার খালা।

    থ্যাংক গড। আপনি টুম্পার মা হলে সমস্যা ছিল।

    কী সমস্যা?

    শুভ চৌধুরী কোনো উত্তর না দিয়ে আবার টুম্পার দিকে তাকালেন, বললেন, তুমি সত্যি তোমার বাবার সাথে দেখা করতে চাও?

    টুম্পা মাথা নাড়ল। শুভ চৌধুরী বললেন, তুমি নিশ্চয়ই জান তোমার বাবার অবস্থা স্বাভাবিক নয়।

    জি জানি।

    তোমার সাথে দেখা করতে চাইবে কী না আমি জানি না। বুলবুল কারো সাথে দেখা করে না।

    আমি চেষ্টা করব। আমার আব্বু–নিশ্চয়ই আমার সাথে দেখা করবেন।

    তোমার আব্বু তোমাকে গত দশ বারো বছর দেখে নি। এতো দিনে সে একধরনের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। হঠাৎ করে তোমার সাথে দেখা হলে তার লাইফে কিন্তু বিশাল একটা ওলটপালট হয়ে যাবে। সে যেরকম অবস্থায় আছে সেই ওলট পালট তার জন্যে ভালো হবে কী না আমি জানি না।

    টুম্পা কোনো কথা বলল না। শুভ চৌধুরী বললেন, তুমি কয়দিনের জন্যে এসেছ আবার চলে যাবে। তোমার বাবা এখানে থাকবে। তুমি আমাকে আগে বল, তোমার বাবার জীবনটা ওলটপালট করে চলে যেতে চাও কী না? যেরকম আছে সেভাবে থাকাটাই কী ভালো না?

    টুম্পা মাথা নাড়ল, বলল, আমি আমার বাবাকে দেখতে চাই।

    শুধু দেখবে? দূর থেকে দেখবে?

    না। আমি কাছে থেকে দেখব। কথা বলব–

    শুভ চৌধুরী একটা নিঃশ্বাস ফেললেন, বললেন, তুমি মনে মনে ঠিক কী কল্পনা করছ আমি জানি না, তোমার বাবা কিন্তু স্বাভাবিক না। সত্যি কথা বলতে খুব অসুস্থ।

    আমি তবু দেখতে চাই।

    ঠিক আছে। হঠাৎ করে শুভ চৌধুরী চেয়ারে সোজা হয়ে বসলেন, বললেন, তুমি কখন দেখা করতে চাও?

    আজকেই। এখনই। আমাকে ঠিকানাটা দেন।

    শুভ চৌধুরী হাসার মতো একটা ভঙ্গী করলেন, বললেন, তোমাকে ঠিকানা দিয়ে লাভ নেই। তুমি বাসাতে ঢুকতেই পারবে না। বুলবুল দরজাই খুলবে না!

    আপনি আমাকে ঠিকানা দেন, আমি চেষ্টা করব।

    কোনো লাভ হবে না। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে। বুলবুল আমাকে ছাড়া আর কাউকে বাসায় ঢুকতে দেয় না।

    ঠিক আছে। টুম্পা মাথা নাড়ল, বলল, তাহলে আপনি যখন বলবেন আমি তখনই যাব।

    শুভ চৌধুরী টেবিলে আঙুল দিয়ে খানিকক্ষণ ঠোকা দিয়ে বললেন, আমার একটা কাজ শেষ করতে হবে, আধা ঘণ্টার মতো লাগবে। তোমরা যদি আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করো তাহলে আমরা আজকেই যেতে পারি।

    টুম্পা ছোট খালার দিকে তাকালো, ছোট খালা মাথা নাড়লেন। টুম্পা শুভ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা অপেক্ষা করছি।

    .

    আধা ঘণ্টা পর খবরের কাগজের অফিসের সামনে থেকে শুভ চৌধুরী একটা হলুদ ক্যাব নিলেন। টুম্পা আর ছোট খালা বললেন পিছনে, শুভ চৌধুরী বসলেন ড্রাইভারের পাশে। রাস্তায় অনেক ভীড়, মাঝে মাঝেই ক্যাবটা তার মাঝে পুরোপুরি থেমে যাচ্ছিল। অন্য কোনো দিন হলে টুম্পা চারপাশে দেখতো, প্রত্যেকটা গাড়ি, প্রত্যেকটা স্কুটার, প্রত্যেকটা মানুষের মুখের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতো, কিন্তু আজকে কোনো কিছুতে সে মন দিতে পারছে না। ছোট খালা শুভ চৌধুরীর সাথে কথা বলছিলেন, ভাসা ভাসা ভাবে সেটা সে শুনতে পাচ্ছিল। যখন ভালো ছিলেন তখন খুব বড় বড় কাজ করেছিলেন, অনেক ছবি এঁকেছেন বিক্রি করেছেন, বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির এডভাইজার ছিলেন–তারা তাকে ফেলে দেয় নি। ব্যাংকে সেফ ডিপোজিটে টাকা আছে মাসিক ভাতা পান, তা দিয়ে তার আব্বুর দিন চলে যায়। তার বড় একটা কারণ যে আব্বুর কোনো খরচ নাই, দিনের পর দিন আব্বু ঘরের ভেতর দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন। টুম্পা চিন্তাও করতে পারে না, এটা কী ভয়ংকর একটা জীবন!

    হলুদ রঙের ক্যাবটা শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের একটা গলির ভেতর দিয়ে গিয়ে ছোট একটা দোতালা বাসার সামনে দাঁড়ালো। শুভ চৌধুরী ক্যাব থেকে নেমে বললেন, এই যে এই বাসা। বুলবুল দোতালায় থাকে।

    টুম্পার বুক ধ্বক ধ্বক করতে থাকে, তার মনে হয় সেই শব্দ বুঝি সবাই শুনতে পাচ্ছে। সে ছোট খালার হাত ধরে ফিস ফিস করে বলল, ছোট খালা আমার খুব ভয় করছে।

    ভয় কী টুম্পা। ছোট খালা নরম গলায় বললেন, ভয়ের কিছু নেই। আয় আমার সাথে।

    শুভ চৌধুরীর পিছু পিছু টুম্পা আর ছোট খালা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলেন। সিঁড়ির সামনে একটা ভারী দরজা, শুভ চৌধুরী দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকলেন, বুলবুল।

    ভেতরে কিছু একটা শব্দ হচ্ছিল, শব্দটা হঠাৎ থেমে গেলো। শুভ চৌধুরী আবার ডাকলেন, বুলবুল।

    ভেতর থেকে টুম্পা ভারী গলায় একজনের কথা শুনতে পেল, কে? এটা তার আব্বুর গলার স্বর? টুম্পা আরো জোরে তার ছোট খালার হাত আঁকড়ে ধরলো।

    শুভ চৌধুরী বললেন, আমি শুভ।

    শুভ?

    হ্যাঁ। দরজা খোলো বুলবুল।

    খুট করে দরজা খুলে গেল। দরজার সামনে পর্দা, পর্দার ভেতর থেকে একটা শুকনো ফর্সা হাত বের হয়ে এল। হাতটা শুভকে স্পর্শ করার চেষ্টা করে বলল, দাও।

    আমি তোমার জন্যে কিছু আনি নি–দেখা করতে এসেছি।

    সাথে সাথে ফর্সা হাতটা ভেতরে ঢুকে সশব্দে দরজাটাও বন্ধ হয়ে গেল। শুভ চৌধুরী টুম্পার দিকে তাকিয়ে দুর্বল ভাবে হাসলেন। আবার দরজায় শব্দ করে বললেন, দরজা খোলো বুলবুল। তোমার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে?

    ভেতরে দীর্ঘসময় কোনো শব্দ নেই, তারপর একটা ভয়ার্ত গলা শোনা গেল, কে?

    দরজা খুললেই তুমি দেখবে।

    না আমি দেখতে চাই না। তুমি চলে যেতে বলো।

    তুমি আগে দরজা খুলে দেখো।

    না। ভেতর থেকে প্রায় আর্ত চিৎকারের মতো শব্দ হলো, না। আমি দেখতে চাই না। তুমি চলে যেতে বল–চলে যেতে বল!।

    শুভ চৌধুরী বললেন, ছিঃ বুলবুল, ছিঃ! এভাবে চিৎকার করে না। তুমি দরজা খোলো–দরজা খুললেই দেখবে তোমার মেয়ে দেখা করতে এসেছে।

    কে?

    তোমার মেয়ে।

    প্রায় চিৎকার করে ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করলো, কে?

    বলেছিতো, তোমার মেয়ে টুম্পা।

    মিথ্যা কথা বলবে না শুভ। খবরদার তুমি আমার সাথে মিথ্যা কথা বলবে না। খবরদার শুভ–খবরদার—

    তুমি দরজা খোলো তাহলেই দেখবে। আমি মিথ্যা বলছি না। তোমার মেয়ে টুম্পা এসেছে।

    টুম্পা?

    হ্যাঁ টুম্পা।

    টুম্পা?

    হ্যাঁ বললাম তো, টুম্পা।

    তুমি মিথ্যা কথা বল না শুভ, টুম্পাকে ওরা আমেরিকা নিয়ে গেছে, আমি জানি।

    আমেরিকা থেকে টুম্পা এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে। তুমি দরজা খুললেই দেখবে।

    এতো ছোট টুম্পা কেমন করে আমেরিকা থেকে আসবে?

    শুভ চৌধুরী হাসার মতো শব্দ করে বললেন, টুম্পা এখন আরো ছোট নেই বুলবুল। টুম্পা এখন বড় হয়েছে। দরজা খুললেই দেখবে।

    না না না। ভেতরে হঠাৎ আর্ত চিৎকারের মতো শব্দ হতে থাকে, আমি দেখব না। দেখব না। চলে যাওয়া তোমরা চলে যাও। চলে যাও।

    হঠাৎ করে ভেতরে ঝন ঝন করে কী একটা যেন ভেঙে পড়লো। শুভ চৌধুরী টুম্পার দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আজকে মনে হয় হবে না।

    আমি একটু কথা বলি?

    আমার মনে হয় এখন না বলাই ভালো।

    আমার আব্বুর সাথে আমি দেখা করতে পারব না?

    শুভ চৌধুরী ইতস্তুত করে বললেন, দেখতেই পাচ্ছ কাজটা কঠিন। অনেক কঠিন। আমরা চেষ্টা করব। ঠিক আছে? শুভ চৌধুরী টুম্পার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তুমি মন খারাপ করো না টুম্পা।

    ইয়েলো ক্যাবে টুম্পা নিঃশব্দে ছোটখালার কাছে বসে ছিল। শুভ চৌধুরী তার নিজের মতো করে চলে গেছেন, ছোট খালা টুম্পাকে নিয়ে বাসায় ফিরছেন। ক্যাবটি আসাদগেটের কাছে আসতেই টুম্পা বলল, ড্রাইভার ক্যাবটা ঘোরান।

    ক্যাব ড্রাইভার অবাক হয়ে বলল, ঘোরাবো?

    হ্যাঁ, কোথায় ঘোরাব?

    যেখান থেকে এসেছেন সেখানে আমাকে নামিয়ে দেন।

    ছোট খালা অবাক হয়ে বললেন, কী বললি টুম্পা?

    হ্যাঁ ছোট খালা আমি যাব। টুম্পা ছোট খালার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাও। আমি আমার আব্বুর সাথে দেখা না করে যাব না।

    কিন্তু– কোনো কিন্তু নেই ছোট খালা। টুম্পা তার ছোট খালার দিকে তাকিয়ে হাসলো, আমার আব্বু আমার সাথে দেখা করবে না এটা কী হতে পারে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article নিতু আর তার বন্ধুরা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }