Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ব্রাদার্স অ্যাট ওয়ার : অ্যাম্পেয়ার অব দ্য মোগল – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড

    লেখক এক পাতা গল্প789 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২.৮ মরুভূমির পিশাচনৃত্য

    হুমায়ুন হাতের ইশারায় ক্ষুদ্র রেকীকারী দলটাকে থামতে ইঙ্গিত করে, যার সাথে সে তাঁর মূল সৈন্যসারি ত্যাগ করে অনেকটাই সামনে এগিয়ে এসেছে। সে তাঁর ঘোড়ার পর্যানের একপাশে চামড়ার মশকে রক্ষিত মহামূল্যবান পানি থেকে এক ঢোক গলাধঃকরণ করে তারপরে ঘামের তেলতেলে দাগে ছোপ ছোপ হয়ে থাকা ঘোড়ার গলায় আলতো করে চাপড় দেয়। তার চারপাশে যে দিকে দৃষ্টি যায় দাবদাহে চোখ ধাধিয়ে দেয়া মরুভূমি, নিরব, সীমাহীন এবং সর্বগ্রাসী।

    ওদিকে দেখেন! গুপ্তদূতদের একজন চেঁচিয়ে উঠে- সদ্য কৈশোর অতিক্রম করেছে- রৌদ্রের চোখ ঝলসানো আলোর হাত থেকে বাঁচতে চোখের দুপাশে হাত দিয়ে আড়াল তৈরী করেছে। বামদিকে!

    হুমায়ুন চোখ কুচকে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং দাবদাহের আড়াল থেকে প্রথমে একটা পরে আরো দুটো খেজুর গাছের অস্পষ্ট আকৃতি ভেসে উঠতে সে শ্বাস নিতে ভুলে যায় এবং তারপরে আরেকটু দূরে পানির উপরে সূর্যের আলো পড়ে বোধহয় মুহূর্তের জন্য ঝলকে উঠে। আমি খেজুর গাছ দেখতে পাচ্ছি এবং সম্ভবত একটা নদী। আহমেদ খান, তোমার কি মনে হয়?

    হ্যাঁ। ঐ গাছগুলোর আড়ালে সম্ভবত বালতোরা বসতি ঢাকা পড়ে রয়েছে যার কথা আমরা আগেই শুনেছি। সূর্যের আলোয় যে পানিতে পড়ে ঝলসে উঠেছে সেটা সম্ভবত কচ্ছের মরুভূমি দিকে বয়ে চলা লুনী নদী।

    বালতোরা বসতি সম্বন্ধে আমরা কতটুকু জানি?

    খুবই সামান্য। কিন্তু বসতিটা দেখে মনে হচ্ছে সেটা এখনও পনের মাইল বা সেরকমই দূরে রয়েছে। সুলতান, আপনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে আমি আমাদের সাথের কয়েকজন গুপ্তদূতকে সামনে পাঠিয়ে আমরা আমাদের মূল দলের জন্য অপেক্ষা এবং রাতের মতো এখানে অস্থায়ী ছাউনি স্থাপন করতে পারি।

    তাই কর, এবং সামনের বসতিতে মালদেওর লোকেরা ওত পেতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে না এই বিষয়ে গুপ্তদূতরা যেন ভালো করে নিশ্চিত হতে।

    ভাগ্য এখন পর্যন্ত হুমায়ুনের পক্ষে রয়েছে। কাঁধের উপর দিয়ে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে বহুবার পেছনে তাকান সত্ত্বেও, গত কয়েক সপ্তাহে মারওয়ার থেকে আগত অনুসরণকারীদের এখন পর্যন্ত কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। তাঁর মূল বাহিনীর সাথে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে মিলিত হবার পরে, কয়েক দিনের জন্য হুমায়ুন উত্তরের দিকে তার বাহিনীর মুখ ঘুরিয়ে নেয় মালদেওকে বিভ্রান্ত করার একটা পরিকল্পিত অভিপ্রায়ে। পরবর্তী চারদিনের দুঃসহ যাত্রায় প্রত্যেকের স্নায়ু সতর্কতার চূড়ান্ত সীমা স্পর্শ করে থাকে, সৈন্যসারির চারদিকে প্রতিবন্ধকতা মোতায়েন করা হয়, গুপ্তদূতদের গতিবিধির সীমানা দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত ব্যাপত করা হয় এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের গমন পথে বাতিল উপকরণ- এমনকি মালবাহী শকটও পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় সেখানে আগত মালদেওর গুপ্তদূতদের মনে প্রত্যয় জন্মাতে যে তারা সত্যিই উত্তর দিকে যাচ্ছে, হুমায়ুন এরপরই পূর্বদিকে বৃত্তাকারে ঘুরে যায়। তারপরে সে দক্ষিণ অভিমুখে দিক পরিবর্তন করে, প্রথমদিকে তাঁদের পথচলার চিহ্ন গোপন করতে পদাতিক বাহিনীর সৈন্যরা শুকনো ঝোপঝাড় দিয়ে বালুতে ঝাড় দিতে দিতে অনুসরণ করে।

    পুরো যাত্রায় হুমায়ুনের কেবল একবারই মনে হয়েছিল দিগন্তের কাছে সে অশ্বারোহীদের দেখতে পেয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে সেগুলো মরুভূমির এখানে সেখানে দেখতে পাওয়া ঝাকড়া ঝোপঝাড়ে জন্মানো ছোট ছোট টক খাবার লোভে দূরের গ্রাম থেকে আগত ছাগলের একটা পালের চেয়ে বেশী হুমকিদায়ক না। শেরশাহের প্রতিনিধিদের সাথে গোপন বৈঠক শেষে ফিরে এসে অতিথি কাউকে খুঁজে না পেয়ে মালদেওর ক্ষুব্ধ চেহারাটা সে মনে মনে আঁকতে চেষ্টা করে কিন্তু শীঘ্রই নিজের পরিবার আর তার লোকদের জন্য কিভাবে একটা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজে বের করা যায় তার ভাবনার স্রোত সেদিকে ধাবিত হয়। মরুভূমির ভিতরে উদ্দেশ্যহীনভাবে তারা অনন্তকাল ঘুরে বেড়াতে পারে না। রাজপুত তীর আর গাঁদা বন্দুকের গুলির মতো মরুভূমির শ্বাসরুদ্ধকর দাবদাহ এবং তাজা খাবার আর পরিষ্কার পানির স্বল্পতা অনায়াসে তাদের শেষ করে দিতে পারে।

    আর সবসময়ে হামিদার জন্য উদ্বেগ তাঁকে বিদ্ধ করে। রাতের বেলা নিষ্ঠুম জেগে থাকার কারণে বিছানায় শুয়ে হামিদার এপাশ ওপাশ আর ছটফট করতে থাকার শব্দ সে শুনতে পায়, সম্ভবত মালদের হাতে ধরা পড়ে নিজের আর তার ভাবী সন্তানের খুন হবার দৃশ্যকল্প তাঁকে যন্ত্রণাবিদ্ধ করছে। কিন্তু হামিদা কোনো অভিযোগ করে না এবং হুমায়ুন জানতে চাইলে এটা ওটা বলে পাশ কাটিয়ে যায় যে সামান্য বদহজম হয়েছে- গর্ভবতী অবস্থায় সব মেয়েরই নাকি এই সমস্যা হয় হামিদা শুনেছে। গত রাতে হামিদা তাকে বলে, আমরা আমাদের সন্তানের কাছে গল্প করবো যে পরিস্থিতি তখন কেমন ছিল- কিভাবে নরকতুল্য স্থানে আমরা তাঁকে আগলে রেখেছিলাম- আমরা সবাই কিভাবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিলাম সেই গল্প থেকে সে মনোবল সংগ্রহ করবে, নাকি করবে না? হুমায়ুন হামিদাকে কাছে টেনে নেয় এবং মেয়েটার সাহস আর অভিযোগহীন মনোভাবে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে।

    সুলতান, আহমদ খান, পরের দিন সকালে হুমায়ুন যখন তাঁর তাবুর বাইরে পানিপূর্ণ ছোট একটা পাত্র আর খামিরবিহীন একটুকরো রুটি, সূর্যের আলোয় শুকিয়ে কটকটে হয়ে যাওয়া খুবানি যা চিবোতে গিয়ে হুমায়ুনের মনে হয় তার দাঁত বুঝি ভেঙে যাবে- সহযোগে প্রাতরাশ করছে, তখন এসে হাজির হয়। আমার গুপ্তদূতেরা মাত্র ফিরে এসেছে। জায়গাটা বালোত্রাই, এখান থেকে প্রায় বিশ মাইল দূরে।

    মালদেও বা তার লোকদের কোনো চিহ্ন তাঁর দেখতে পায়নি।

    না।

    সেখানে কতজন অধিবাসী রয়েছে?

    সম্ভবত দুইশোজন, সবাই পশুপালক আর কৃষিজীবি।

    আহমেদ খান তুমি তোমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। আমাদের পথ দেখিয়ে সেখানে নিয়ে চলো। হুমায়ুন যত অতৃপ্তি নিয়ে খেতে শুরু করেছিল তার চেয়ে অনেকবেশী তৃপ্তি নিয়ে নিজের অপ্রতুল আহার শেষ করে। দূর থেকে বালোত্রাকে দেখে যেমন মনে হয়েছে, জায়গাটা যদি সত্যিই তেমন হয় তাহলে সে তার পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনা করার সাথে সাথে, সেখানে সে তার দলবল নিয়ে আশ্রয় নিতে পারবে।

    সেইদিন মধ্যাহ্নের সামান্য পূর্বে হুমায়ুন তাঁর সাথের লোকজন নিয়ে বসতিটার দিকে এগিয়ে যাবার সময় সে দেখে যে নদীর সমতল তীরে গড়ে উঠা বসতিটা আসলে যত্রতত্র কয়েক ডজন মাটির বাড়ির সমষ্টি ছাড়া আর কিছু না, নদীর লালচে-খয়েরী রঙের পানি গ্রীষ্মকালে যেমনটা হবার কথা তেমনিই নদীগর্ভেও অনেক নীচু দিয়ে মন্থর গতিতে বয়ে চলেছে। কিন্তু শস্য উৎপাদনের জন্য গ্রামবাসীদের চাহিদার চেয়ে বেশী পানিই রয়েছে নদীতে, আর নদীর তীর বরাবর আবাদী জমির চাষ করা মাটি ভেদ করে শস্যের সবুজ শীষ বেশ দেখা যাচ্ছে।

    জওহর। গ্রামের মাতব্বরকে গিয়ে খুঁজে বের কর। তাঁকে গিয়ে বলবে আমরা নিতান্তই পর্যটক এবং আমাদের দ্বারা তার বসতির লোকদের কোনো ক্ষতি হবে না এবং আমরা নদীর তীরে তাদের আবাদি জমি যেখানে শেষ হয়েছে তারও পরে আমাদের অস্থায়ী ছাউনি স্থাপণ করতে চাই। তাঁকে আরও বলবে যে আমাদের রসদ আর জ্বালানি এবং সেই সাথে একটা মাটির বাড়ি প্রয়োজন যেখানে আমাদের মেয়েরা বিশ্রাম নিতে পারবে, আর সামান্য আড়াল খুঁজে পাবে- আর এসবের জন্য আমরা উপযুক্ত মূল্য দিব।

    *

    মাটির তৈরী একটা একতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে, হুমায়ুন একদৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে। সেপ্টেম্বর মাস চলছে এবং গ্রীষ্মের দাবদাহের তীব্রতাও তাই এখন অনেকটাই সহনীয়। বিরল জনবসতি অধ্যুষিত অঞ্চলের একপ্রান্তে অবস্থিত হবার কারণে যাত্রাবিরতির জন্য বালত্রোরা নিঃসন্দেহে একটা উপযুক্ত স্থান নিরাপদ। বালক্রোরা গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ, প্রায় অন্ধ মোড়ল সিম্ভুর ভাষ্যমতে, লুনী নদীর দুপাশে বালত্রোরাসহ হাতে গোনা যে কয়টি বসতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তাঁদের ব্যাপারে স্থানীয় জমিদার কিংবা যুদ্ধবাজ গোত্রপতিরা খুব বেশী আগ্রহী না হবার কারণে তারা শান্তিতেই বসবাস করছে। গ্রামবাসীদের একঘেয়ে জীবন ঋতু পরিবর্তনের চক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

    সিম্ভুকে হুমায়ুন সঙ্গত কারণেই নিজের আসল পরিচয় দেয়নি এবং মোড়লও ঘোলাটে চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কিছু জানতে চায় না। বস্তুতপক্ষে, সে তাঁকে প্রায় কোনো প্রশ্নই করে না এবং আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় হুমায়ুনের গল্পটা সে বিশ্বাস করেছে, যে সে একজন সেনাপতি যে নিজের এলাকা থেকে পথভুল করে বহুদূরে এসে পড়েছে যার সৈন্যদলের বিশ্রাম আর রসদ প্রয়োজন। হুমায়ুন অবশ্য এতকিছুর পরেও সিদ্ভুর অস্বস্তি ঠিকই আঁচ করতে পারে, যে সে আর তাঁর সৈন্যবাহিনী হয়ত তার লোকদের জন্য বড় ধরনের কোনো বিপদ বয়ে আনবে যতই। সে প্রতিশ্রুতি দিক এবং সে টাকা খরচ করুক। তারা যখন এখান থেকে বিদায় নেবে, বৃদ্ধ লোকটা তখন সত্যিই ভারমুক্ত হবে।

    হুমায়ুন নিজেও অবশ্য এখান থেকে বিদায় নেবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছে যতই দুর্গম আর প্রত্যন্তস্থান হোক, বেশীদিন একস্থানে অবস্থান করাটা বড্ডবেশী বিপজ্জনক- কিন্তু মুশকিল হল সে কোথায় যাবে? কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা সামলে নেবার ক্ষমতা এখন তার নেই। তাঁর সমস্থ অনুভূতি চাইছে- এখন যখন তাঁর মনে হচ্ছে যে অনুসরণরত মালদেবের লোকদের সে খসিয়ে ফেলতে পেরেছে উত্তরে খাইবার গিরিপথের দিকে অগ্রসর হতে এবং সেখানের পাহাড়ী গোত্রগুলো। যারা তাঁর কাছে আনুগত্যের বন্ধনে আবদ্ধ, তাদের একত্রিত করে কাবুল অভিমুখে রওয়ানা দেয়া এবং আসকারি আর কামরান সেখানে নিজেদের আধিপত্য জোরদার করার আগেই শহরটা তাঁদের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার প্রয়াস নেয়া। কাবুলে নিজের কর্তৃত্ব যতক্ষণ সে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না করছে এবং পেছন থেকে ধেয়ে আসা হুমকি অপসারিত করছে, ততক্ষণ শেরশাহকে মোকাবেলা করা নিয়ে সে কিছু ভাবতেই পারছে না।

    উত্তরদিকে অগ্রসর হলে অবশ্য তাকে পুনরায় মারওয়ারের কাছাকাছি যাবার ঝুঁকি নিতে হবে কিন্তু তাঁর সামনে অন্য যেসব বিকল্প পথ রয়েছে সেগুলোর কোনোটাই তাকে দ্রুত কাবুলে ফিরে যাবার সুবিধা দেবে না কিন্তু সমান ঝুঁকিপূর্ণ। সে যদি পূর্বদিকে অগ্রসর হয় তাহলে সে অচিরেই মেবার আর আম্বারের রাজপুত রাজত্বে প্রবেশ করবে যাদের শাসকদের, সে যতটুকু জানে, মালদেবের সাথে যোগ দেবার জোরাল সম্ভাবনা রয়েছে। একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যদিও রাজপুতদের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে কিন্তু কোনো লোককে যদি তারা নিজেদের সাধারণ শত্রু হিসাবে বিবেচনা করে তবে তার বিরুদ্ধে তারা দ্রুতই নিজেদের একতাবদ্ধও করতে জানে বা শেরশাহের দেয়া উৎকোচের প্রতিশ্রুতির অঙ্কটা যদি বিশাল হয়।

    হুমায়ুন দক্ষিণে অগ্রসর হলে সামনে গুজরাত পড়বে যা এখন শেরশাহের করতলগত সেইসাথে পশ্চিম অভিমুখী পথও ঝুঁকিশূন্য নয়। সিস্তুর ভাষ্য অনুযায়ী, লুনী নদীর অপর তীরে পশ্চিমদিকে সিন্ধ পর্যন্ত প্রায় তিনশ মাইল প্রসারিত আরেকটা মরুভূমি রয়েছে- চোরাবালি আর বিক্ষিপ্ত বাতাসের একটা প্রতারক প্রতিবেশ যেখানে অসতর্ক অভিযাত্রী নিমেষেই মৃত্যুর বরাভয়ে সিক্ত হতে পারে। মরুভূমির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রাচীন মরুদ্যান, অমরকো অভিমুখী পুরো কাফেলা মরুভূমির বুকে হারিয়ে গেছে এমনটাও শোনা যায়। বালত্রোরা অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অমরকে আসা যাওয়া করে এবং একটা নিরাপদ রাস্তাও তারা চেনে কিন্তু সিন্ধু তার অভিজ্ঞতঋদ্ধ বুড়ো মাথাটা গম্ভীরভাবে ঝাঁকিয়ে হুমায়ুনকে সতর্ক করে দেয়, যাত্রাটাকে হাল্কাভাবে নেয়াটা মোটেই ঠিক হবে না।

    বৃহত্তর পৃথিবীর ঘটনাবলী সম্বন্ধে হুমায়ুনের অজ্ঞতা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আরো কঠিন করে তুলে। শেরশাহ বা মালদেব কিংবা তাঁর সৎ-ভাইদের অবস্থান সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই নেই। হিন্দালই বা এখন কোথায়? কামরান আর আসকারির সাথে? এবং বয়সে তারচেয়ে বড় সত্তাইয়েরা কি ইতিমধ্যে যতখানি ভূখণ্ড চুরি করে দখল করেছে তার পরিধি বাড়াতে আরও বিশাল কোনো অভিযানের পরিকল্পনা করছে। কামরানের উচ্চাভিলাসের মাত্রা সম্বন্ধে অবহিত থাকার কারণে তেমন কিছু একটা ঘটলে সে মোটেই অবাক হবে না। হুমায়ুন এক সময়ে না এক সময়ে তাঁর যে খোঁজ করবে, এটা নিশ্চয়ই তাঁর সৎ-ভাই জানে এবং নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে তাঁর পক্ষে যতটা উদ্যোগী হওয়া সম্ভব সে হবে। অভিজ্ঞতাঋদ্ধ বৃদ্ধ কাশিম কিংবা তার ফুপিজান খানজাদা নিজের জীবনের সব অভিজ্ঞতা তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেও তাকে কোনো পরামর্শ দিতে পারে না, এমনকি তার ব্যক্তিগত জ্যোতিষী শারাফকেও কেমন যেন বিভ্রান্ত মনে হয়। রাতের আকাশে পরিষ্কার আর তীক্ষ্ণ সৌন্দর্য নিয়ে জ্বলজ্বল করতে থাকা তারকারাজি হুমায়ুনের জন্য কোনো আলোকিত প্রভার বার্তা বয়ে আনে না। সে ভালো করেই জানে যে সারা পৃথিবী যখন তাঁর আব্বাজানের উপর বিরূপ হয়ে উঠেছিল তখন তার আব্বাজান বাবর যা করেছিলেন, উত্তর খুঁজে বের করার জন্য তাকেও নিজের অন্তদৃষ্টির উপরে নির্ভর করতে হবে।

    এক মহিলার গানের শব্দ হুমায়ুনকে তার ভাবনার জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। নীচু আর সুরেলা এই কণ্ঠস্বরের অধিকারিণীকে হুমায়ুন ভালো করেই চেনে কণ্ঠস্বরটা হামিদার। তরমুজের মতো বৃত্তাকার উদরের অধিকারিনী মহিলাটা অনুযোগের অঙ্গিতে হুমায়ুনকে হয়ত বলবে যে অনাগত সন্তান বিশালদেহী হবে এবং হুমায়ুনের হাত নিজের উদরের উপর নিয়ে স্থাপণ করবে যাতে হুমায়ুনও প্রাণশক্তিতে টগবগ করতে থাকা আবহাওয়া অনুভব করতে চেষ্টা করে। ছেলেটা প্রাণশক্তিতে ভরপুর। নিজের স্ফীত উদরের উপর থেকে হাত সরিয়ে এনে সে বাংলা একাডেমীর সংকীর্ণ ঘিঞ্জি সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসেন।

    নদীর তীর দিয়ে হুমায়ুন যখন অস্থায়ী শিবিরে জাহিদ বেগকে খুঁজতে যায় গ্রাম থেকে একজন ঘোড়া দাবড়ে শিবিরের দিকে এগিয়ে আসে। হুমায়ুন চিনকে পারে দারয়া, আহমদ খানের ব্যক্তিগত দেখতে হলে তোমায় সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে। তার ধুসর ঘোড়াটার দেহ ঘামে জবজব করছে এবং তাঁর নিজের দেহের পোষাক সেই ঘামে ভিজে গাঢ় বর্ণ ধারণ করেছে। তাঁকে দেখে কাবুল পতনের সংবাদ সে যখন বয়ে এনেছিল, সেই সময়ের তুলনায় কমই উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়।

    সুলতান! দারয়া পিছলে নিজের ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে আসে। কি ব্যাপার?

    এখান থেকে প্রায় পনের মাইল দূরে রাজপুত অশ্বারোহীদের একটা দল অবস্থান করছে।

    কতজনের?

    কমপক্ষে তিনহাজার হবে, এবং চৌকষ একটা দল আর তাদের কারো কারো কাছে আবার গাদা বন্দুকও রয়েছে। দলটা কোনো মালপত্র বহন করছে না আর ক্ষিপ্রতার সাথে ভ্রমণ করছে, আমরা তাঁদের সাথে কোনো মালবাহী শকট দেখতে পাইনি।

    দলটা কোনদিক থেকে এগিয়ে আসছে?

    উত্তরপশ্চিম দিক থেকে।

    তার মানে দলটা মারওয়ার থেকে আগত সৈন্যবাহিনীও হতে পারে… পুরষ্কারের প্রাপ্তি যেখানে বিশাল সেখানে মালদেব এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দেবে, সে কেন আগেই এমন একটা ধারণা নিজের মনে পোষণ করছিল? আহমেদ খানকে ডেকে আন?

    লোকগুলো কারা এবং তাঁদের সম্ভাব্য গন্তব্যস্থল জানার জন্য তিনি এখনও চেষ্টা করছেন। আপনাকে সর্তক করার জন্যই আমাকে তিনি পাঠিয়েছেন এবং সেই সাথে এটাও বলেছেন তিনি আমার পেছনেই থাকবেন।

    দশ মিনিট পরে, সেনাপতিদের সাথে হুমায়ুনকে কথা বলতে দেখা যায়। দারয়ার নিয়ে আসা সংবাদ তার মনের অনিশ্চয়তা দূর করেছে। নিজের কর্তব্য করণীয় সম্পর্কে তার এখন স্পষ্ট ধারণা রয়েছে।

    পনের মাইল দূরে আমাদের গুপ্তদূতেরা রাজপুত অশ্বারোহীদের একটা চৌকষ দলকে সনাক্ত করেছে। আমি জানি না, ভাগ্য তাদের আমাদের এতো কাছাকাছি নিয়ে এসেছে নাকি আমাদের অবস্থান সম্পর্কে তারা আদতেই নিশ্চিতভাবে অবগত রয়েছে। তবে একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে এখানে আমাদের পক্ষে লড়াই করা অসম্ভব। দূরের মাটির তৈরী বাড়ির বাইরে হাতের কব্জি আর পায়ের গোড়ালিতে পিতলের চকচক করতে থাকা বালায় সজ্জিত সুতির শাড়ি পরিহিত রমণীর দল আসনপিড়ি হয়ে বসে গরুর শুকনো গোবরে আগুন জ্বালাতে চেষ্টা করছে, যাতে তারা রাতের খাবার রান্না করা শুরু করতে পারে তাদের দিকে সে ইঙ্গিত করে।

    কিন্তু সুলতান আমরা তাহলে কোথায় যাব? জাহিদ বেগ জানতে চায়।

    লুনীর অপর তীরে। এখান থেকে মাইলখানেক উজানে নদী বেশ অগম্ভীর হওয়ায় গভীরতা কয়েক ফিটের বেশী হবে না- অতিক্রম করা সহজ হবে। আমি গতকাল সেখানে গিয়েছিলাম। আমরা তারপরে মরুভূমির উপর দিয়ে সোজা পশ্চিম দিকে যাত্রা করবো। গ্রামের মুখিয়া অমরকে বলে একটা প্রত্যন্ত এলাকার কথা বলেছে যেখানে আমরা নিরাপদে থাকতে পারবো।

    হুমায়ুন দেখে তার সেনাপতিরা পরস্পরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে। মরুভূমির বিপদের কথা তারাও জানে। আমি জানি, মরুভূমির একটা অশুভ খ্যাতি রয়েছে। আর সেজন্যই আমরা সেদিকে গিয়েছে জানতে পারার পরেও আমাদের শত্রুরা আমাদের অনুসরণ করতে ইতস্ততবোধ করবে। কিন্তু ভয় পেয়ো না- মরুভূমির মাঝে আমাদের পথ দেখাবার জন্য আমরা এখান থেকে একজন পথপ্রদর্শক সাথে নেব… সে নিশ্চিত করবে যে…

    দ্রুত ধাবমান ঘোড়ার খুরের শব্দে কথার খেই হারিয়ে ফেলে হুমায়ুন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে চরতে থাকা মুরগীর পালে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং ধূলোর মেঘ উড়িয়ে আহমেদ খানের বাহন তাঁদের অস্থায়ী ছাউনিতে প্রবেশ করছে।

    সুলতান, আমরা যাদের দেখেছি তারা জয়সলমিরের রাজার অনুগত বাহিনী। মালদেবের সাথে সে নিজেকে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আমি এক রাখালের কাছ থেকে খবরটা জানতে পেরেছি, যে তাদের কাছে কয়েকটা ভেড়া বিক্রি করেছে। তারা গর্বোদ্ধত ভঙ্গিতে তাকে বলেছে যে তারা একজন সম্রাটকে শিকার করতে এসেছে, যার পালাবার চিহ্ন বেশ তাজা এবং তাঁরা শীঘ্রই চূড়ান্ত আঘাত হানতে চলেছে। কিন্তু আমার মনে হয় তাদের দক্ষতার চেয়ে তাদের মুখটা একটু বেশীই চলে। আমার মনে হয় না আমরা ঠিক কোথায় অবস্থান করছি, সেটা মূর্খগুলো এখনও আবিষ্কার করতে পেরেছে…আমি তাঁদের দক্ষিণদিকে এগিয়ে যেতে দেখে এসেছি…।

    সে যাই হোক, আমাদের হাতে খুব একটা বেশী সময় নেই। আহমেদ খান আমাদের অবশ্যই দ্রুত তাবু গুটিয়ে নিয়ে নদী অতিক্রম করে, সোজা পশ্চিম অভিমুখে যাত্রা শুরু করতে হবে। গ্রামের মোড়লকে ডেকে আন এবং তাঁকে বল যে মরুভূমির ভিতর দিয়ে অমরকো পর্যন্ত পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমাদের একজন পথপ্রদর্শক প্রয়োজন। তাঁকে আরও বলবে যে আমি তাঁকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেবো- তাঁকে স্বর্ণমুদ্রায় পারিশ্রমিক দেয়া হবে।

    গ্রামবাসীদের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে তার লোকেরা যখন দৌড়ে গিয়ে আগুন নিভিয়ে দেয় এবং তাবু গুটিয়ে নিয়ে নিজেদের অস্ত্র সংগ্রহ করে পর্যানে তুলতে শুরু করে, হুমায়ুন তখন হামিদার কাছে ফিরে আসে। হামিদা তাঁর চরকা সরিয়ে রেখেছে। গুলবদন এখন তার সাথে রয়েছে এবং তারা দুজনে কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে, কিন্তু হুমায়ুনের চোখেমুখের অভিব্যক্তি দেখে তারা উভয়েই হাসি থামিয়ে নিরবে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।

    আহমেদ খান খবর নিয়ে এসেছে রাজপুত সৈন্যরা এখান থেকে খুব কাছেই অবস্থান করছে।

    গুলবদন আঁতকে উঠে জোরে শ্বাস নেয় এবং হামিদা সহজাত প্রবৃত্তির বশে নিজের অজান্তে নিজের স্ফীত উদর স্পর্শ করে। হুমায়ুন দুহাতে তার মুখটা তুলে ধরে তার ত্বকের উষ্ণ কোমনীয়তা অনুভব করে। মাথা নীচু করে সে তার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়। সাহস রাখো। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। তুমি যা পারো গুছিয়ে নাও। আমরা ঘন্টাখানেকের ভিতরে রওয়ানা দেব। গুলবদন- খানজাদাকে খুঁজে বের কর এবং তাঁকে এই নতুন উপদ্রব সম্পর্কে অবহিত কর।

    *

    ওটা কি? দূরে দিগন্তের কাছে ঘূর্ণায়মান এবং আন্দোলিত হতে থাকা মেঘের দিকে তাকিয়ে হুমায়ুন জিজ্ঞেস করে। নিশ্চিতভাবেই কিছুক্ষণ আগে ওটার কোনো অস্তি ত্বই ছিল না। আকাশের পটভূমিও পাল্টে গিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেও যা ছিল উজ্জ্বল সবুজাভ-নীল সেটাই এখন ইস্পাতের ধুসরতা নিয়ে নীচে নেমে এসেছে। হুমায়ুনের ঘোড়াটা প্রলম্বিত হ্রেষাধ্বনি করে এবং অস্বস্তির সাথে মাথা ঝাঁকাতে থাকে। অনিল সিম্ভুর আঠার বছর বয়সী নাতি যে তাঁদের পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করছে এবং হুমায়ুনের ঘোড়ার পাশে পাশেই হাঁটছিলো- সেও পর্যন্ত তরঙ্গের ন্যায় ফুঁসতে থাকা অবয়বটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যা তাদের চোখের সামনেই যেন ক্রমশ বিশাল আকৃতি ধারণ করছে।

    আমি যখন ছোট ছিলাম তখন মাত্র একবার আমি এটা দেখেছি। মরুভূমির পর্যটকেরা একে বালিয়াড়ির পিশাচ বলে… ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার…মারাত্মক একটা বালুঝড় যার কেন্দ্রে রয়েছে একটার বেশী ঘূর্ণিঝড়। অনিল একহাত দিয়ে চোখ ডলে যেন এমন করলে তাদের দিকে মুখ ব্যাদান করে ধেয়ে আসা ভয়ঙ্কর দৃশ্যপটটা যেন উবে যাবে। কিন্তু হুমায়ুন তাকিয়ে দেখে তামাটে বর্ণের চরাচরগ্রাসী মেঘটা সূর্যকে ঢেকে দিয়ে তাঁদের দিকে ধেয়ে আসছে। সহসা সে এর কেন্দ্রস্থলে ঘূর্ণিঝড়ের একটাকে দেখতে পায়। ঝড়টাকে দেখে মনে হয় সেটা যেন পৃথিবীর নাড়িভূড়ি শুষে নিয়ে উপরের দিকে ছিটিয়ে দিচ্ছে।

    তাড়াতাড়ি…আমাদের কি করতে হবে বল। হুমায়ুন ঝুঁকে এসে অনিলের শীর্ণ কাঁধ ধরে ঝাঁকি দেয়।

    বালিতে আমাদের দ্রুত নিজেদের আর আমাদের সাথে প্রাণীগুলোর জন্য গর্ত খুঁড়তে হবে এবং ঝড়ের দিকে পিঠ দিয়ে সেখানে শুয়ে থাকতে হবে যতক্ষণ না ঝড়টা আমাদের উপর দিয়ে অতিক্রম করে।

    আমাদের হাতে কতক্ষণ সময় আছে?

    কিশোর ছেলেটা আবার আগুয়ান বিপর্যয়ের দিকে তাকায়। কয়েক মিনিটের বেশী মনে হয় না…

    আমার লোকদের বল বালিতে নিজেদের জন্য গর্ত খুঁড়তে এবং বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ঘোড়াগুলোকে তারা যেন নিজেদের পেছনে টেনে বসায়, হুমায়ুন জওহর আর জাহিদ বেগকে চিৎকার করে বলে, অনিলের সাথে তাঁর কথোপকথন তাঁরা আগেই শুনতে পেয়েছে। নিজের ভীত সন্ত্রস্ত্র চঞ্চল ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে লাগাম ধরে সেটাকে টেনে নিয়ে যাবার সময় হুমায়ুন হামিদা, গুলবদন, খানজাদা এবং তাঁদের পরিচারিকাদের বহনকারী গরুর গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়।

    নিজেদের এবং জেনানাদের আশ্রয়ের জন্য বালিতে গর্ত খুঁড়ো- তারাও তোমাদের গর্ত খুঁড়তে সাহায্য করবে, হুমায়ুন চিৎকার করে দেহরক্ষীদের বলে যারা মেয়েদের প্রহরায় নিয়োজিত ছিল। দ্রুত! নিজেদের ঘোড়াগুলোকে নিজেদের পাশেই শুইয়ে রাখবে কিন্তু ষাড়গুলোর দড়ি খুলে দাও- তাঁরা নিজেদের রক্ষার উপায় খুঁজে নেবে।

    হুমায়ুনের কথা শেষ হবার আগেই সে দেখে বয়স হওয়া সত্ত্বেও খানজাদা নিজের গরুর গাড়ির ভেতর থেকে সবার আগে বের হয়ে এসেছে এবং ঝুঁকে পড়ে খালি হাতেই বালিতে গর্ত করতে আরম্ভ করেছে। গুলবদন তার পাশেই রয়েছে। ফুপিজান, ঝড় আমাদের উপর দিয়ে বয়ে যাবার সময় আপনি আর গুলবদন ঝড়ের দিকে পিঠ করে অবশ্যই একসাথে মাটিতে শুয়ে থাকবেন এবং শক্ত করে পরস্পরকে আকড়ে রাখবেন, আমার কথা বোঝা গেছে?

    খানজাদা গর্ত করা বন্ধ না করেই মাথা নাড়ে কিন্তু তার সৎ-বোনকে পাংশুটে দেখায় এবং হুমায়ুন দেখে বেচারী থরথর করে কাঁপছে। গর্ত খোড়ো! খানজাদা চিৎকার করে তাঁকে আদেশ দেয়।

    হুমায়ুন তার চারপাশে তাকিয়ে উন্মত্তের ন্যায় বালিতে গর্ত করতে ব্যস্ত অবয়ব দেখতে পায়, সে তার ঘোড়ার পেছনের দুপা বাঁধে তারপরে হামিদাকে গরুর গাড়ি থেকে কোলে তুলে নিয়ে কয়েক পা সামনে এগিয়ে যায়, যেখানের বালি দেখে নরম আর গর্ত করা সহজ হবে বলে মনে হয়।

    আমিও সাহায্য করতে চাই… আসন্নপ্রসবা হামিদা নিজের বিশাল অবয়ব নিয়েও তাঁর পাশে হাটু মুড়ে বসে এবং নখ দিয়ে বালিতে গর্ত করতে শুরু করে। তারা উন্মত্তভাবে কাজ করে, খালি হাতে তাঁদের পক্ষে যতটা সম্ভব একটা স্থানে তাঁরা গর্ত করে। অচিরেই হামিদার নখ ভেঙে রক্তপাত শুরু হয়। হুমায়ুন ঘাড়ের উপর দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে ঝড় আরও এগিয়ে এসেছে আর ঝড়ের সাথে উড়তে থাকা আবর্জনায় আকাশ অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। চারপাশের বাতাসে একটা জান্তব গর্জন ভাসতে থাকে এবং সে যদিও হামিদাকে কিছু বলতে দেখে কিন্তু সে তার একটা বর্ণও শুনতে পায় না। সে ক্ষিপ্রভাবে নিজের প্রয়াস আরও জোরদার করে এবং শীঘ্রই বালি আর বাতাসের যুগলবন্দি তাঁদের আচ্ছন্ন করলে, হামিদাকে জড়িয়ে ধরে তাদের খোঁড়া গর্তে তাঁকে নিজের দেহ দিয়ে ঢেকে শুইয়ে দেয়। নিজের দেহ দিয়ে তাঁকে আড়াল করার প্রয়াসে হুমায়ুন তাঁকে দুবাহু দিয়ে জড়িয়ে শক্ত করে নিজের সাথে আটকে রাখলে হামিদার মুখ তার বুকে ঘষা খায়।

    হুমায়ুন হামিদাকে প্রাণপনে আকড়ে থাকে কিন্তু তারপরেও যেন সে তার বাহুর বেষ্টনী থেকে ছিটকে যেতে চায়, চামড়া ছাড়ানোর একটা অনুভূতি তার মুখে এবং তার করোটি থেকে কেউ যেন চুলগুলো উপড়ে ফেলতে চাইছে। তাঁর নাসারন্ধ্র আর মুখ বালিতে ভরে যায় এবং সে শ্বাস নেয়ার জন্য হাঁসফাঁস করলে গরম বাতাস বুকে প্রবেশ করায় তাঁর ফুসফুস বুঝি এখনই বিদীর্ণ হবে মনে হয়। তাঁর শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে এবং নিজের জীবন বাঁচাতে প্রাণান্ত প্রয়াসের মাঝে সে টের পায় হামিদাকে আকড়ে ধরা আলিঙ্গন শিথীল হয়ে আসছে।

    দেহের শেষ শক্তিটুকু একত্রিত করে সে নিজেকে বাধ্য করে তাঁকে শক্ত করে আকড়ে রাখতে। হামিদা আর তার গর্ভের সন্তানের বেঁচে থাকাটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হুমায়ুন এখন তাঁর আব্বাজানের অনুভূতি বেশ বুঝতে পারে যখন হুমায়ুন মৃত্যু পথযাত্রী বিশ্বাস করে তিনি আগ্রা দূর্গের মসজিদে গিয়ে নিজের প্রিয়তম সন্তানের জীবনের বদলা হিসাবে আল্লাহর কাছে নিজের প্রাণ উৎসর্গ। করেছিলেন। সে মনে মনে দোয়া করে হামিদা যেন বেঁচে থাকে এবং তাঁদের সন্তান যেন সালামত থাকে। তোমার যদি সেটাই অভিপ্রায় হয়ে থাকে তবে তাদের বখশ দিয়ে আমার জীবন গ্রহণ করো…

    সে কায়মনো বাক্যে দোয়া করার মাঝেই টের পায় যে ধূলো আর হুড়দঙ্গলের মাত্রা কমছে। সে অবশেষে শ্বাস নিতে সক্ষম হলে তার নির্যাতিত ফুসফুস পুনরায় প্রসারিত হতে পেরেছে সে অনুভব করে। প্রতিবার শ্বাস নেবার সময় যন্ত্রণা হুল ফোঁটায়- ঠোঁট, মুখ গহ্বর, গলা, শ্বাসনালীতে কেমন দগদগে অনুভূতি এবং তার নাসারন্ধ্র এখনও বালিতে কিচকিচ করছে। তার চোখের অবস্থাও তথৈবচ, চোখের পাতার নীচে বালি ঢুকেছে এবং তাঁর মনে হয় কেউ বুঝি তাতানো লাল সুঁই দিয়ে চোখের মণিতে খোঁচা দিচ্ছে। সে চোখ খুলে রাখতে চেষ্টা করে এবং ঝরঝর করে ঝরতে থাকা অশ্রুর কারণে ঝাপসা হয়ে উঠা দৃষ্টি দিয়ে হামিদার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং একটা সময় সে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে।

    সে টের পায় যে হামিদা তাঁর আলিঙ্গনের মাঝে একদম নিথর হয়ে শুয়ে আছে। পালকের মতো নরম বিভঙ্গে তাঁকে আলিঙ্গন মুক্ত করে হুমায়ুন আধ-শোয়া একটা ভঙ্গিতে নিজেকে উঁচু করে। প্রিয়তমা… সে কিছু বলতে চেষ্টা করে কিন্তু কোনো শব্দ খুঁজে পায় না। হামিদা, সে অবশেষে কথা খুঁজে পায় এবং সামনের দিকে ঝুঁকে এসে তাকেও তুলতে চেষ্টা করে। হামিদার কাঁধের অবস্থান খুঁজে পেতে, হুমায়ুনের দুই হাত তার গলার দিকে ধেয়ে যায় দুহাতের তালুতে তাঁর প্রেমময় মুখ স্পর্শ করার বাসনায়। হামিদাকে ভীষণ নিস্তেজ মনে হয়। অনেকটা যেন হাত দিয়ে মৃত পাখি ধরার একটা অনুভূতি….

    হুমায়ুনের চারপাশ থেকে রুদ্ধশ্বাস গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসতে শুরু করে কিন্তু এই মুহূর্তে হামিদা ছাড়া আর কারও বিষয়ে সে ভাবিত নয়। পরম মমতায় সে আরো একবার হামিদার মুখটা নিজের বুকের কাছে টেনে এনে তার নোংরা জট লাগা চুলে বিলি কাঁতে থাকে অথচ একটা সময় ছিল যখন এই চুলে সূর্য মুখ লুকাত। সে যেন একটা শিশুকে ধরে রয়েছে- এমন ভঙ্গিতে হুমায়ুন সামনে পিছনে দুলতে আরম্ভ করে। দুলুনিটা তাঁকে খানিকটা হলেও স্বস্তি দেয়, এই পৃথিবীতে সে যাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে সেই মানুষটাকে হারাবার শোক স্বীকার করে নেবার সময়টাকে বিলম্বিত করে।

    কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে কয়েক জন্মের দ্যোতনাবহ কিন্তু কয়েক পল হয়তো ততক্ষণে সময়ের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে অতিবাহিত হবার পরে সে টের পায় হামিদা নড়ে উঠেছে। তারপরে সে ভীষণভাবে কাশতে শুরু করে, বালি আর লালার কালচে কমলা রঙের মিশ্রণের থুতু ফেলে। হামিদা বেঁচে আছে আনন্দের এই বোধটা হুমায়ুনকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলে। হামিদাকে উঠে বসতে সাহায্য করার মাঝেই একটু আগে তার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল অবিকল সেভাবেই তাঁকে লোভী, বুভুক্ষের ন্যায় বাতাসের প্রসাদ গ্রহণ করতে শোনে।

    ঘাবড়ে যাবার মতো কিছু হয়নি, সে কর্কশ কণ্ঠে বলে, সবকিছু ঠিক আছে…

    হুমায়ুন টের পায় কিছুক্ষণ অতিবাহিত হবার পরে হামিদা তাঁর হাতটা তুলে নিয়ে নিজের স্ফীত গম্বুজাকৃতি উদরে স্থাপণ করে। নিজের ভাবী সন্তানকে মাতৃগর্ভের নিরাপত্তায় জোরালভাবে লাথি মারতে দেখে তার বালিতে ঢাকা মুখে আবারও তাজা অশ্রু ঝরতে আরম্ভ করে, পার্থক্য কেবল একটাই এবার যন্ত্রণার বদলে আনন্দের অশ্রু ঝরছে।

    মানুষজন আর ভারবাহী পশুর পাল ধীরে ধীরে নিজেদের ভর পায়ের উপরে আরোপ করে উঠতে আরম্ভ করে, যদিও অনেকেই অশুভ ভঙ্গিতে নিথর হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে। হুমায়ুন উঠে দাঁড়াবার ফাঁকে কাছেই বালির পুরু আবরনের নীচে একটা ঘোড়াকে দুর্বল ভাবে নড়ে উঠতে দেখে। সে টলমলো পায়ে এগিয়ে গিয়ে জন্তুটার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে এবং পরম মমতায় প্রাণীটার মুখ থেকে বালি সরাতে নিজের স্ট্যালিয়নকে চিনতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টা তাঁদের উপর দিয়ে বয়ে যাবার পূর্বের ভীতিকর শেষ মুহূর্তগুলোতে প্রাণীটার কথা সে বেমালুম বিস্মৃত হয়েছিল। জন্তুটা নিশ্চয়ই চারপায়ে দ্রুত দৌড়াতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু পেছনের দুই পা বাঁধা থাকার কারণে মাটিতে আছড়ে পড়েছে। হুমায়ুন ঘোড়াটার পায়ে খুরের উপরের আর পেছনের কেশগুচ্ছে দ্রুত হাত বুলাতে অস্থিভঙ্গের লক্ষণ টের পায়। একহাতে জন্তুটার গলায় আলতো করে হাত বুলিয়ে এবং কানের কাছে মৃদু কণ্ঠে ফিসফিস করে ঘোড়াটাকে আশ্বস্ত করার মাঝে, সে অপর হাতে কোমর থেকে খঞ্জর টেনে বের করে দ্রুত ঘোড়াটার ঘাড়ের মোটা শিরাটা কেটে দিলে, উষ্ণ রক্ত ছিটকে এসে তাঁকে ভিজিয়ে দেয় এবং বালিতে কালচে একটা দাগের সৃষ্টি করে।

    সে চারপাশে তাকিয়ে দেখে যে জয়নাব হামিদার জন্য পানি নিয়ে এসেছে। কিন্তু সে টলোমলো পায়ে আরেকজন রমণীকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে মাথার চুল উস্কোখুস্কো, কাপড়ের উপরে বালির স্তর জমে আছে এবং মেয়েটা অঝোরে কাঁদছে বলে তার নোংরা মুখে কান্নার ধারা জ্বলজ্বল করছে, মেয়েটা আর কেউ না গুলবদন। হুমায়ুন নিজের বোনকে আশ্বস্ত করার জন্য তাঁকে জড়িয়ে ধরতে যায় কিন্তু সে নিজেকে তাঁর কাছ থেকে সরিয়ে নেয়।

    আমি ঠিক আছি কিন্তু খানজাদা… গুলবদন তাঁকে নিথর হয়ে পড়ে থাকা একটা দেহের কাছে নিয়ে যায় এবং হুমায়ুন চোখ নামিয়ে তাকিয়ে তাঁর ফুপিজানের বালির প্রলেপযুক্ত মুখ দেখতে পায়। ফুপিজানের দুচোখ বন্ধ এবং তার কাত থেকে থাকা মাথার ভঙ্গি দেখে- যুদ্ধক্ষেত্রে সে নিজে যেখানে অসংখ্য মৃতদেহ প্রত্যক্ষ করেছে- বুঝতে পারে তিনি মারা গিয়েছেন। যান্ত্রিকভাবে, সে তার গলা স্পর্শ করে কিন্তু সেখানে নাড়ীর কোনো স্পন্দন অনুভব করে না। তাঁর নাসারন্ধ্র আর মুখ দেখে বালিতে শ্বাসরোধ হয়েছিল মনে হয় এবং তার দুই হাত এমনভাবে কুচকে রয়েছে। যেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মৃত্যুর সাথে তুমুল লড়াই করেছেন- খানজাদা নিশ্চিতভাবেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন।

    আমার নিজের আম্মিজান মারা যাবার পর থেকে তিনি আমার সাথে একেবারে আমার মায়ের মতো আচরণ করতেন। নিজের দেহ দিয়ে তিনি আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি কতটা ভয় পেয়েছি তিনি ভালো করেই জানতেন… গুলবদন ফিসফিস করে বলে।

    গুলবদনকে সান্ত্বনা দেবার মতো কোনো শব্দ খুঁজে না পেয়ে হুমায়ুন নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে। খানজাদা- বাবরের বিপর্যয় আর সাফল্যের সমান অংশীদার এবং সম্রাট হিসাবে তাঁকে প্রথমদিকে যিনি পথ দেখিয়েছেন, আফিমের নেশার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আর নিজের নিয়তির মুখোমুখি হতে বাধ্য করেছেন যিনি সেই মহিলা- আর বেঁচে নেই। সারা জীবনে কতকিছু দেখা আর সহ্য করার পরে, খোলা প্রান্তরে বালিঝড়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাঁর এভাবে মৃত্যুবরণ করাটা যেন কেমন ভয়ঙ্কর আর নিষ্ঠুর বলে মনে হয়। তাঁদের রাজবংশের প্রতি তাঁর নিঃশঙ্ক আত্মনিয়োজন এবং তাঁর প্রতি খানজাদার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কিংবা তাঁর সাহসিকতার কথা সে কখনও ভুলবে না। একটা সর্বগ্রাসী বিষণ্ণতা, কিছুক্ষণ পূর্বের আনন্দকে আচ্ছন্ন করে, তাকে আপুত করে ফেলে। কাবুলের উপকণ্ঠে পাহাড়ের পাদদেশে তার ভাই সম্রাট বাবরের সমাধির পাশে বা আগ্রায় যমুনার তীরে কোনো পুষ্পবীথি শোভিত উদ্যান খানজাদার অন্তিম সমাধিস্থল হবার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব না। হুমায়ুন ঝুঁকে গিয়ে তার ফুপিজানের দেহটা তুলে নিয়ে পরম মমতায় তাঁকে নিজের বাহুতে আকড়ে ধরে আপন মনে কথা বলতে থাকে। স্থানটা যদিও মনুষ্যবর্জিত আর বিরান একটা এলাকা, তাঁকে আমাদের এখানেই সমাধিস্থ করতে হবে। তাঁর কবর আমি নিজে খুড়বো।

    *

    হুমায়ুনের ক্লান্ত অবসন্ন সৈন্যবাহনীর সামনে অবশেষে রৌদ্রদগ্ধ দশটা দীর্ঘ দিনের শেষে অমরকোটের দেয়াল দিগন্তের কাছে ভেসে উঠে। জাহিদ বেগ আর কাশিমকে, স্বস্তির দৃষ্টি বিনিময় করতে দেখে সে। সেই ভয়ঙ্কর ঝড়ে হুমায়ুনের দশজন লোক মৃত্যুবরণ করেছিল- ঘূর্ণিঝড়ের তোড়ে বলদে টানা মালবাহী শকটের একটা গুঁড়িয়ে গেলে সেখান থেকে উড়ে আসা কাঠের টুকরো দুজনকে ঘায়েল করেছিল। জওহরের মতো, অনেকেরই দেহের ত্বকে মারাত্মক আঁচড় লেগেছিল এবং কেটে গিয়েছিল, অনেকেরই অস্থিভঙ্গ হয়েছিল আর গাদাবন্দুক সজ্জিত তাঁর সেরা তরকিদের একজন ধারাল পাথরের টুকরোর আঘাতে একচোখের দৃষ্টি হারিয়েছে।

    এতো বিপুল সংখ্যক ঘোড়া হয় মারা গিয়েছে বা ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছে যে বেশীর ভাগ লোককেই পায়ে হেঁটে চলতে হচ্ছে, তাদের ভিতরে হুমায়ুনও রয়েছে। তাদের বেশীরভাগ সাজসরঞ্জাম যার ভিতরে অসংখ্য গাদাবন্দুকও রয়েছে, হয় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বা বালির নীচে চাপা পড়েছে। সরঞ্জামাদি যদি ধ্বংসপ্রাপ্ত নাও হতো, মালবাহী শকট ছাড়া এবং গুটিকয়েক ভারবাহী প্রাণী অবশিষ্ট থাকায়- দশটা খচ্চর আর ছয়টা উট- তারা বেশীর ভাগই পথিমধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে আসতে বাধ্য হতো। তাদের সাথে যে কয়টা ভারবাহী জন্তু অবশিষ্ট ছিল সেগুলোর পিঠেই তারা যতটা সম্ভব মালপত্র তুলে দিয়েছে। হুমায়ুনের সিন্দুকগুলোর ভিতরে একটাই অক্ষত অবস্থায় ছিল কিন্তু এখন সেটাও খালি করে তার ভিতরে যা কিছু ছিল সব ঘোড়ার পিঠের দুদিকে ঝোলান থলেতে ভরা হয়েছে। হুমায়ুনের গলায় একটা ঝুলন্ত থলেতে কোহ-ই-নূর এখনও নিরাপদেই রয়েছে।

    একটা কুৎসিত দর্শন উটের পাশে হুমায়ুন অবসন্ন ভঙ্গিতে পা টেনে টেনে হাঁটতে থাকে জটা, আবার তার চওড়া, চ্যাপটা আর উপরের দিকে উল্টানো পায়ে সামনে এগোবার সময় জান্তব আর্তনাদ করে আর বালিতে দুর্গন্ধযুক্ত শ্লেষ্মর দলা। নিক্ষেপ করে। তার সম্রাজ্ঞীর জন্য মোটেই মানানসই বাহন বলা যাবে না, হামিদার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হুমায়ুন মনে মনে ভাবে, সে অবশিষ্ট উটের একটার অস্থিসার পার্শ্বদেশ থেকে ঝুলন্ত ঝুরিতে ভ্রমণ করছে, উটটার অপর পাশে আরেকটা ঝুরিতে অবস্থানরত গুলবদনকে দিয়ে দুপাশের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। হামিদা চোখ বন্ধ করে রয়েছে এবং তাকে দেখে তন্দ্রাচ্ছন্ন মনে হয়। হুমায়ুন ভাবে ভাগ্য সহায় থাকলে রাত নামার আগেই তারা অমরকো পৌঁছে যাবে, তারপরে সে হামিদার বিশ্রামের জন্য ভালো কোনো বন্দোবস্ত করতে পারবে।

    কিন্তু সে যেমনটা ধারণা করেছে অমরকে নিশ্চয়ই তার চেয়ে আরও দূরে অবস্থিত। মরুভূমিতে দূরত্বের ধারণা সবসময়েই ছলনাময়ী। পশ্চিমের আকাশে রক্তের লালচে আভা ছড়িয়ে দিয়ে সূর্য যখন দিগন্তের নীচে ডুব দেয়, মরুদ্যানের নীচু সীমারেখা তখনও বেশ কয়েক মাইল দূরে বলে প্রতীয়মান হয়। রাত্রির অন্ধকার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায়, এখন অগ্রসর হওয়াটা বোধহয় অজ্ঞতার পরিচায়ক হবে। হুমায়ুন চিৎকার করে সৈন্যসারিকে যাত্রাবিরতির আদেশ দেয় এবং চারপাশে তাকিয়ে অনিলকে খোঁজে তার সাথে পরামর্শ করবে বলে, এমন সময় সে হামিদাকে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠতে শুনে। তারপরে আবারও।

    কি হয়েছে?

    সন্তান… আমার মনে হয় সন্তান ভূমিষ্ট হবার সময় ঘনিয়ে এসেছে।

    হুমায়ুন, উটের পায়ে চাপড় দিয়ে ইঙ্গিত করতে জন্তুটা নাক দিয়ে ঘোঁতঘোঁত শব্দ করে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লে, হামিদাকে ঝুরি থেকে তুলে নিয়ে কণ্টকযুক্ত পত্রবিশিষ্ট নীচু ঝোপের একটা ঘন ঝাড়ের দিকে নিয়ে গিয়ে তাকে সেখানে আলতো করে শুইয়ে দেয়। গুলবদনও ইতিমধ্যে তাঁর ঝুরি থেকে নেমে এসেছে এবং হামিদার আরেকপাশে আসনপিড়ি হয়ে বসে, তার লালচে হয়ে উঠা মুখে টোকা দেয় আর চুলে বিলি কাঁতে থাকে।

    গুলবদন হামিদার কাছে থাকো। আমি জয়নাব আর অন্য মেয়েদের তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমি অমরকো থেকে সাহায্যের জন্য কাউকে নিয়ে আসতে চেষ্টা করি।

    হুমায়ুনের দলবল যেখানে যাত্রাবিরতি করেছে সেদিকে সে যখন দৌড়ে যায় তার হৃৎপিণ্ড রীতিমতো ধকধক করতে থাকে। সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে রক্তাক্ত যুদ্ধের সময়ও এমন ভয়ের সাথে সে কখনও পরিচিত ছিল না। সন্তান ভূমিষ্ট হবার সময় এখনও হয়নি। হামিদা নিশ্চিত ছিল যে এখনও একমাস বাকি আছে… হিসাবে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, এই বিরূপ বিরানপ্রান্তর যা ইতিমধ্যে খানজাদার মৃত্যুর কারণ হয়েছে যদি হামিদাও এখানে মৃত্যুবরণ করে?

    জওহর, সে শুনতে পাবার মতো দূরত্বে পৌঁছেই চিৎকার করে উঠে। সম্রাজ্ঞীর প্রসব-বেদনা শুরু হয়েছে। আমাদের অবশিষ্ট ঘোড়াগুলোর ভেতর থেকে সবচেয়ে সেরাটা বেছে নাও এবং তোমার পক্ষে যত দ্রুত সম্ভব অমরকোটের উদ্দেশ্যে ঘোড়া হাকাও। সেখানের লোকদের কাছে আমার পরিচয় দেবে এবং এটাও বলবে যে আমার স্ত্রীর জন্য আমাদের আশ্রয় প্রার্থনা করেছি। আতিথিয়তার রীতি অনুসারে তারা আমাকে বিমুখ করতে পারবে না। আমাকে এবং আমার সৈন্যদের যদি তারা ভয়ও পায় হামিদাকে তারা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। সেখানে অবশ্যই হাকিম এবং ধাত্রীরা রয়েছে। জলদি যাও!

    জওহর, চকরাবকরা রঙের ছোটখাট দেখতে একটা মাদী ঘোড়া বেছে নিয়ে, যার পায়ে তখনও সামান্য হলেও দৌড়াবার মতো শক্তি রয়েছে, ক্রমশ ঘনায়মান অন্ধকারের মাঝে যাত্রা করে। হুমায়ুন তড়িঘড়ি হামিদার কাছে ফিরে আসতে তার চারপাশে মেয়েদের একটা ছোটখাট জটলা দেখতে পায়, যারা তাঁকে এগিয়ে আসতে দেখে দুপাশে সরে গিয়ে জায়গা করে দেয়। হামিদা চোখ বন্ধ করে, মাটিতে পিঠ দিয়ে শুয়ে রয়েছে এবং ধীরে শ্বাস নিচ্ছে। ঘামে তার মুখটা চকচক করছে।

    সুলতান, বেগম সাহেবার গর্ভমোচন শুরু হয়েছে, জয়নাব বলে। আমি জানি আমার বোনদের আমি অনেকবার সন্তান জন্ম দিতে দেখেছি। এবং তাঁর ব্যাথা ক্রমশ আরও ঘন ঘন উঠছে…আমাদের হাতে বেশী সময় নেই… জয়নাবের কথার গুরুত্ব বোঝাতেই যেন হামিদা ব্যাথায় গুঙিয়ে উঠে এবং তাঁর চোখের পাতার নীচে থেকে অশ্রু ভেসে উঠে, তাঁর মুখের ঘামের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, যা এখন স্রোতের মতো তাঁর দেহ থেকে নির্গত হচ্ছে। আরেকদফা খিচুনী তাকে যন্ত্রণাদগ্ধ করতে, সে ধনুকের মতো পিছনের দিকে বেঁকে যায় তারপরে হাঁটু মুড়ে বুকের কাছে তুলে এনে একপাশে কাত হয়ে যায়।

    হুমায়ুনের পক্ষে তাকিয়ে থেকে এ দৃশ্য দেখা অসম্ভব। সময় গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে হামিদার আর্তনাদের মাত্রা জোরাল আর দ্রুততর হতে থাকলে, সে অসহায় ভঙ্গিতে পায়চারি করতে থাকে আর কিছুক্ষণ পর পর হামিদার শিয়রের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে গিয়ে পুনরায় পায়চারি করতে থাকে। রাতের নিজস্ব শব্দ- শিয়ালের ডাক, ময়ুরের কর্কশ কণ্ঠের চিৎকারের আকস্মিকতা- তার নিজের অসহায়তার বোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জওহর কোথায়? তার নিজেরই হয়তো যাওয়া উচিত ছিল- বা তার পরিচয়ের প্রমাণ হিসাবে জওহরের সাথে তৈমূরের অঙ্গুরীয়টা পাঠাতে পারতো…

    হামিদা আরেক দফা ব্যাথায় চাপা স্বরে আর্তনাদ করে উঠলে ব্যাথাটা যেন সে নিজেও অনুভব করছে এমন ভঙ্গিতে হুমায়ুন কুঁচকে যায়। একটা ঝোপের নীচে, এই বিরান, উদ্ধৃঙ্খল পরিবেশে হামিদাকে যে সন্তানের জন্ম দিতে হচ্ছে…

    সুলতান, হুমায়ুন তাঁর নিজের ব্যক্তিগত মর্মবেদনায় এতোটাই বিভোর হয়েছিল যে, একটা ছোট অশ্বারোহী দলকে পথ দেখিয়ে অন্ধকারের ভিতর থেকে জওহরকে এগিয়ে আসতে সে দেখেনি বা শব্দও শোনেনি, দলটার সাথে কয়েকটা অতিরিক্ত ঘোড়া রয়েছে, তার মধ্যে দুটো ঘোড়ার মাঝে স্ট্রেচারেরমতো একটা কাঠামো ঝুলছে।

    সুলতান, জওহর পুনরায় তাকে সম্বোধন করে। অমরকোটের শাসক আপনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি আপনাকে, বেগমসাহেবাকে আর আপনার ব্যক্তিগত সফরসঙ্গীদের তাঁর বাসস্থানে নিয়ে যাবার জন্য একদল সৈন্য আর একজন হাকিম আর ধাত্রীও পাঠিয়ে দিয়েছেন।

    স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হুমায়ুন মাথা নাড়ে।

    হুমায়ুন এবং ছয়জন দেহরক্ষী সমেত তার ছোট দলটা, জাহিদ বেগের উপরে অবশিষ্ট সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব অর্পন করে, যখন রওয়ানা দেয় অমরকোটের মাটির কাঁচা দেয়াল চাঁদের ধুসর আলোয় রূপালি রং ধারণ করেছে। জওহরের নিয়ে আসা ধাত্রী হামিদাকে ইতিমধ্যে একটা ঔষধি উপাচার দিয়েছে- যা মনে হয় তার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করেছে।

    মশালের আলোয় হুমায়ুনের জন্য তাঁর পারিপার্শ্বিকতা অনুধাবন করাটা বেশ কঠিন হয় এবং সৈন্যরা ঘোড়ার পিঠ থেকে হামিদাকে বহনকারী স্ট্রেচারটা আলতো করে খুলে নিয়ে, একটা বেশ বড় ভবনের চৌকাঠের নীচে দিয়ে, দেয়াল থেকে ঝুলন্ত মশালদানিতে রক্ষিত জ্বলন্ত মশালের আলোয় যার দুপাশ আলোকিত, সেটা বহন করে ভেতরে প্রবেশ করলে, তাঁর দৃষ্টি সবকিছু বাদ দিয়ে সেদিকেই নিবদ্ধ থাকে। হামিদাকে বহনকারী স্ট্রেচারটা অনুসরণ করে সে একটা করিডোরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, যার শেষ প্রান্তে সে কাঠের কারুকাজ করা দরজার একজোড়া পাল্লা দেখতে পায়, যার সামনে পরিচারিকার দল অপেক্ষা করে রয়েছে। স্ট্রেচার বহনকারী দলটা দরজার নিকটবর্তী হতে তারা দরজার পাল্লা খুলে দেয়। হামিদাকে সাথে নিয়ে হেকিম এবং তাঁদের পেছন পেছন ধাত্রী মেয়েটা ভেতরে প্রবেশ করে। হুমায়ুনও তাঁদের অনুসরণ করে ভেতরে প্রবেশ করতে যাবে- এমন সময় গাঢ় সবুজ রঙের আলখাল্লা পরিহিত একজন লোক সে তাঁকে আগে লক্ষ্য করেনি সামনে এগিয়ে আসে এবং কুর্নিশ করে।

    মহামান্য সুলতান, আমি অমরকোটের রানার উজির, আপনাকে স্বাগত জানাবার জন্য তিনি যাকে প্রেরণ করেছেন। এটা জেনানা মহলে প্রবেশের পথ। রানা ব্যতীত কেবল একজনের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে তিনি হলেন আমাদের হাকিমসাহেব। কিন্তু আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না আপনার আবাসনকক্ষের বন্দোবস্ত পাশেই করা হয়েছে এবং কোনো সংবাদ থাকলে সেটা সাথে সাথে আপনাকে জানানো হবে।

    হুমায়ুন ভাবে, এই পরিস্থিতিতে রাজি হওয়া ছাড়া তার আর কিইবা করার আছে এবং সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। সেই রাতে ঘন্টার কাঁটা যেন সহসাই মন্থর হয়ে পড়ে বা তার কাছে সেরকমই মনে হয়। গবাক্ষের ভিতর দিয়ে পূর্বাকাশে ধীরে ধীরে আলো ফুটতে দেখে- ভোর হবার ঠিক আগে আগে সে বোধহয় হাল্কা তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। কাঁধের উপরে সে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করতে, সাথে সাথে সে সজাগ হয়ে উঠে এবং সহজাত প্রবৃত্তির বশে নিজের খঞ্জর আকড়ে ধরে, তখন তাঁর খেয়াল হয় যে অনেক আগেই সকাল হয়েছে আর তাঁকে ঘুম থেকে আর কেউ না গুলবদন উঠিয়েছে। সে এমনভাবে হাসছে যেভাবে হাসতে হুমায়ুন তাকে বহুদিন দেখেনি।

    হুমায়ুন আপনার একটি পুত্র সন্তান হয়েছে, বলিষ্ঠ এবং স্বাস্থ্যবান আর ইতিমধ্যেই চিৎকার করে আকাশ মাথায় করেছে। ধাত্রী তাকে পরিষ্কার করা মাত্র কয়েক মিনিটের ভিতরে আপনার কাছে তাকে নিয়ে আসবে।

    আর হামিদা?

    তার জন্য প্রসব-বেদনা একটা কষ্টকর অভিজ্ঞতা ছিল। ধাত্রীর সমস্ত দক্ষতা তার প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভালোই আছেন এবং এখন ঘুমাচ্ছেন।

    আনন্দ আর স্বস্তির একটা যুগপৎ ধারায় সিক্ত হয়ে, হুমায়ুন কিছুক্ষণের জন্য মাথা নীচু করে চুপ করে থাকে। তারপরে তাঁর পরণের আলখাল্লার জেব থেকে সে মূল্যবান কস্তরীর একটা আধার বের করে যা ঠিক এই মুহূর্তের জন্য সে আগলে রেখেছিল এবং থলেটা সে গুলবদনের হাতে দেয়। এটা আতুরঘরে নিয়ে যাও। আমার সন্তানের জন্ম উদযাপনের অভিপ্রায়ে এটা সেখানে ভাঙবে এবং পুরো কামরায় যেন এর সৌরভ ছড়িয়ে পড়তে দেবে- এই পৃথিবীতে আমার সন্তানের প্রথম যে ঘ্রাণ গ্রহণ করবে এটাই হোক তার অন্যতম বস্তু। হামিদাকে বলবে যে এই মুহূর্তে যদিও এরচেয়ে বেশী কিছু তাঁকে দেবার সামর্থ্য আমার নেই তবুও এটা কেবল আমার ভালোবাসার স্মারকই না সেই সাথে এটা আমাদের বংশের ভাবী মহত্বের সৌরভ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরুলার অভ দা ওয়ার্ল্ড : এম্পায়ার অভ দা মোগল – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড
    Next Article অ্যাম্পায়ার অব দ্য মোঘল : রাইডারস ফ্রম দ্য নর্থ – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }