Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ব্ল্যাক অর্ডার (সিগমা ফোর্স – ৩) – জেমস রোলিন্স

    জেমস রোলিন্স এক পাতা গল্প617 Mins Read0

    ০৭. ব্ল্যাক মাম্বা

    দ্বিতীয় খণ্ড

    ০৭. ব্ল্যাক মাম্বা

    ভোর ৫ টা ৪৫ মিনিট।
    হুলুহুলুই-আমফলোজি প্রিজার্ভ
    জুলুল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা।

    প্রধান ওয়ার্ডেনের ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে আছে খামিশি টেইলর। ওয়ার্ডেন জেরাল্ড কেলজ ওর দেয়া গতকালের রিপোর্ট পড়ে শেষ করা পর্যন্ত মেরুদণ্ড শক্ত করে অপেক্ষা করল। মাথার ওপরে ঘুরতে থাকা ফ্যান থেকে বেরোনো আওয়াজ ছাড়া রুমে কোনো আওয়াজ নেই।

    ধার করা পোশাক পরে আছে খামিশি। প্যান্ট খুব বেশি লম্বা আর শার্ট বেশ টাইট হয়েছে। তবে ওগুলো শুকনো। গতকাল সারাদিন-রাত কাদাপানিতে শরীর ডুবিয়ে রাইফেল হাতে তৈরি হয়ে ছিল ও। ডাঙায় উঠে এখন এই শুকনো কাপড়-চোপড়ের মূল্য বুঝতে পারছে।

    দিনের আলো যে কতখানি জরুরি সেটাও বুঝতে পারছে ও। অফিসের পেছনের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ভোরের সূর্য গোলাপি আভা ফোঁটাচ্ছে আকাশে। ছায়া থেকে বেরিয়ে আসছে পৃথিবী।

    বেঁচে ফিরেছে খামিশি। বেঁচে আছে।

    নিজেকে বাঁচানো ছাড়া কিছু করার ছিল না ওর।

    ওর মাথায় এখনও উকুফার চিৎকার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

    রিপোর্ট পড়তে পড়তে প্রধান ওয়ার্ডেন জেরাল্ড কেলজ তার গোঁফ মোচড়ালেন। ভোরের আলো এসে তার চকচকে টাকঅলা মাথায় পড়ে সেটাকে তেলতেলে উজ্জ্বল করে তুলল। নাকের ডগায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির রিডিংগ্লাস নিয়ে অবশেষে মুখ তুললেন তিনি।

    মিস্টার টেইলর, আপনি চান আমি এই রিপোর্ট ফাইল করে রাখি? রিপোর্টের হলদে কাগজের ওপর এক আঙুল চালিয়ে দেখালেন। একটা অজ্ঞাত জানোয়ার। ড. ফেয়ারফিল্ডকে টেনে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে একটা অজ্ঞাত জানোয়ার। আপনি আর জিনিস খুঁজে পেলেন না?

    স্যার, আমি প্রাণীটাকে ভালভাবে দেখতে পাইনি। কেমন যেন বিশাল সাদা। লোমশঅলা। রিপোর্টে লিখেছি, স্যার।

    সিংহী হবে হয়তো। বললেন জেরাল্ড।

    না, স্যার… কোনো সিংহ-টিংহ নয়।

    কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন? একটু আগেই না বললেন, প্রাণীটাকে আপনি ভালভাবে দেখতে পাননি?

    জ্বী, স্যার… মানে ইয়ে… স্যার… আমি পরিচিত কোনো প্রাণীর সাথে ওটার কোনো মিল পাইনি।

    তাহলে কী পেয়েছেন?

    চুপ মেরে গেল খামিশি। ও জানে উকুফার নাম উচ্চারণ করলেই ল্যাঠা চুকে যাবে। কিন্তু সাদামাটা রৌদ্রউজ্জ্বল দিয়ে উকুফার কথা বললে হাসির পাত্র হতে হবে ওকে। খামিশি আফ্রিকার উপজাতির বংশধর হওয়ায় কুসংস্কারে আক্রান্ত বলে সবাই পরিহাস করবে।

    কোনো একটা জানোয়ার ড. ফেয়ারফিল্ডকে আক্রমণ করে টেনে নিয়ে যায়। আপনি ওটাকে কাছ দেখে দেখতে পারেননি যে চিনে ফেলবেন…

    ধীরে ধীরে খামিশি মাথা নাড়ল।

    … আর তারপর আপনি কী করলেন? কাদা-পানির ভেতরে গিয়ে লুকালেন? চাপ দিয়ে রিপোর্ট ভাজ করে ফেললেন জেরাল্ড। আপনার কী মনে হয়, এই রিপোর্ট আমাদের সার্ভিসের মানের ওপর প্রশ্ন সৃষ্টি করবে না? আমাদের একজন ওয়ার্ডেন একজন ৬০ বছর বয়স্কা নারীকে মরতে দিয়ে নিজে পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে! কোন প্রাণী এসে আক্রমণ করেছে সেটা খোঁজার চেষ্টা পর্যন্ত করেনি!

    স্যার, বিষয়টা ওরকম না…

    কীসের ওরকম না? গর্জে উঠলেন জেরাল্ড। এতটাই জোরে যে রুমের বাইরেও তার গলার আওয়াজ শোনা গেল। রুমের বাইরে সকল স্টাফকে জরুরি তলব করে ডেকে আনা হয়েছে। ড, ফেয়ারফিল্ডের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে আমি কী বলব? বলব… তাদের মা কিংবা দাদুনানুকে কোনো এক প্রাণী আক্রমণ করে টেনে নিয়ে গেছে আর আমার এক ওয়ার্ডেন… অস্ত্রধারী ওয়ার্ডেন পালিয়ে নিজের জান বাঁচিয়ে গুষ্ঠী উদ্ধার করেছে?

    আমার তখন কিছুই করার ছিল না।

    শুধু নিজের… চামড়া বাঁচানো ছাড়া।

    বাক্যের মধ্যে অনুচ্চারিত শব্দটিও খামিশি শুনতে পেল।

    শুধু নিজের কালাচামড়া বাঁচানো ছাড়া।

    খামিশিকে চাকরি করতে দেখে জেরাল্ড মোটও অবাক হননি। খামিশির পরিবারের সাথে পুরো আফ্রিকানের সরকারের সাথে সম্পর্ক আছে। আর সেই যোগসূত্র ধরেই এই পদে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে খামিশি। এমনকি সে এখনও ওলডাভি কান্ট্রি ক্লাবের সদস্য, যেখানে কি-না সবসময় অভিজাত সাদা চামড়াধারী বিত্তশালীদের আড্ডা বসে। তবে নতুন আইন পাস হওয়ার পর থেকে অনেক জাত-ভেদ, বাধা-বিঘ্ন কমে গেছে। এখনও সাউথ আফ্রিকায় ব্যবসা বলতে ব্যবসা-কেই বোঝায়। কোনোপ্রকার গণ্ডগোল নেই। ডি বিয়ার্সেস-রা তাঁদের হীরের খনি এখনও ধরে রেখেছে অন্যদিকে বাকি সবকিছু আছে ওয়ালেনবার্গ-এর দখলে।

    পরিবর্তন আসবে, তবে সেটা আসবে ধীরে ধীরে।

    খামিশির এই পদে যোগদান হলো একটি ছোট পদক্ষেপ মাত্র। ওর এই চাকরির মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বেশ সুবিধে করে দিয়ে যেতে পারবে। নিজের ও পরবর্তী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে কণ্ঠস্বর শান্ত রাখল খামিশি। যদি তদন্তকারিগণ ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে আসেন, তাহলে আমি নিশ্চিত আমার কৃতকর্মের পক্ষেই রায় দেবেন তাঁরা।

    তাই নাকি, মিস্টার টেইলর? মাঝরাতে হেলিকপ্টার আপনাকে কাদা-পানির ভেতর থেকে উদ্ধার করে আনার ১ ঘণ্টা পরেই আমি এক ডজন লোক পাঠিয়েছিলাম। ১৫ মিনিট আগে তারা রিপোর্ট দিয়েছে। শিয়াল আর হায়নার তাণ্ডবে প্রায় ছিঁড়ে-খুঁড়ে যাওয়া রাইনোর লাশ পেলেও আপনার রিপোর্টে থাকা বাচ্চা রাইনোর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তারচেয়েও বড় কথা ড. মারশিয়া ফেয়ারফিল্ডেরও কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

    মাথা নাড়ল খামিশি। এই অভিযোগগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করার পথ খুঁজছে। রাতের কথা মনে করল ও। দিন তো মনে হচ্ছিল ফুরোবে না, কিন্তু রাত নামার পর অবস্থা আরও জঘন্য হয়েছিল। সূর্য ডোবার পর থেকে হামলায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল খামিশি। কিন্তু হায়নার ইয়েপ-ইয়েপ-ইয়েপ ডাক, শিয়ালের হুক্কা-হুঁয়া আর বিভিন্ন পশুপাখির ডাক ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায়নি।

    পশুপাখিদের ডাক শুনে ও তখন ভেবেছিল এখন জিপের দিকে দৌড় দেয়া নিরাপদ হবে। যেহেতু স্বাভাবিকভাবে শিয়াল আর হায়না এখানে উপস্থিত হয়েছে, তার মানে দাঁড়াল, চলে গেছে উকুফা।

    কিন্তু খামিশি তবুও নড়ল না।

    ওর মনে তখনও ড. মারশিয়ার আক্রান্ত হবার দৃশ্য তাজা ছিল। সাহস হলো না।

    ওই প্রাণীর পায়ের ছাপ নিশ্চয়ই অন্যরকম হবে, বলল ও। ওখানে… একটু আশান্বিত হয়ে ভাবল খামিশি। যদি ওর কাছে প্রমাণ থাকত…

    সিংহের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। বললেন জেরাল্ড। একটু আগে আমি সেটাই বলছিলাম।

    সিংহ?

    হ্যাঁ। আমার মনে হয় আমাদের কাছে সেই উদ্ভট প্রাণীর কিছু ছবিও আছে। আপনি বরং সেগুলো ভালভাবে দেখে রাখুন, যাতে ভবিষ্যতে দেখলে চিনতে পারেন। আপনার হাতে তো সামনে অঢেল সময়, সময়গুলোকে এই কাজে লাগাবেন।

    স্যার?

    মিস্টার টেইলর, আপনাকে বরখাস্ত করা হলো।

    এই ধাক্কা লুকোতে ব্যর্থ হলো খামিশির চেহারা। ও জানে, এখানে ওর জায়গায় যদি অন্য কোনো ওয়ার্ডেন হতো… সাদা চামড়ার কেউ… তাহলে এই সিদ্ধান্ত হতো না। আরেকটু বিবেচনা করে দেখা হতো। কিন্তু ওর গায়ে যখন উপজাতির কালো চামড়া আছে সেহেতু ও সেই বিবেচনা পাবে না। এই বিষয় নিয়ে খামিশি তর্কে যেতে চায় না। তর্কে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে।

    আপনাকে কোনো টাকাও দেয়া হবে না। আগে পুরো তদন্ত শেষ হোক, তারপর পাবেন।

    পুরো তদন্ত। খামিশি জানে সেই তদন্ত কীভাবে শেষ হবে।

    পুলিশ বলেছে আপনি এই অঞ্চল ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। দায়িত্বের বিষয়টা ছাড়াও ক্রিমিনাল ব্যাপার-স্যাপার আছে।

    খামিশি চোখ বন্ধ করল।

    সূর্য উঠলেও কাল রাতের আঁধার এখনও কাটেনি।

    .

    দশ মিনিট পর।

    জেরাল্ড কেলজ তাঁর ডেস্কে বসে আছেন। অফিস রুম এখন ফাঁকা। ঘেমে যাওয়া হাতের তালু দিয়ে নিজের আপেলের মতো চকচকে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন তিনি। ঠোঁট বাঁকিয়ে বসে আছেন, স্বস্তি পাচ্ছেন না। রাতের ঘটনাটি তো আর মুছে ফেলা যাবে না, অনেক ঝক্কি সামলাতে হবে এবার। হাজারটা জিনিসের দিকে নজর রাখতে হবে তাকে। মিডিয়াকে সামলাতে হবে, ড, ফেয়ারফিল্ডের পরিবার ও পার্টনারের মুখোমুখি হতে হবে।

    শেষ বিষয়টি চিন্তা করতে গিয়ে মাথা নাড়লেন জেরাল্ড। সামনের দিকে ড. পলা কেইন খুব বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবেন, বোঝা যাচ্ছে। জেরাল্ড জানেন, এই দুই বয়স্কা নারীর পার্টনারশিপ রিসার্চ ক্ষেত্র ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ড. পলা কেইন-ই গতকাল রাতে ড. মারশিয়াকে বাড়ি ফিরতে না দেখে হেলিকপ্টার নিয়ে সার্চ পার্টি পাঠানোর জন্য তোড়জোর শুরু করেছিলেন।

    মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে বিষয়টি ভেবেছিলেন জেরাল্ড। বিভিন্ন গবেষক প্রায়ই জঙ্গলে রাত কাটিয়ে থাকেন, সেটা কোনো ব্যতিক্রম ব্যাপার নয়। কিন্তু যখন তিনি শুনলেন ড. মারশিয়া আর ওয়ার্ডেন ওয়ালেনবার্গ প্রাইভেট স্টেট অ্যান্ড প্রিজার্ভের কাছে থাকা পার্কের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গেছেন, তখন আর বিছানা থেকে না নেমে থাকতে পারেননি।

    তার নেতৃত্বে একটি জরুরি অভিযান শুরু করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। রাতের নির্জনতাকে নষ্ট করে কোলাহল করে অভিযান পরিচালনাও করা হয়েছিল কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। জিন তার বোতলে ফিরে গেছে।

    তবে এখনও একটি কাজ করা বাকি।

    কাজ ঝুলিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।

    ফোন তুলে একটি প্রাইভেট নাম্বারে ডায়াল করলেন তিনি। নোটপ্যাডে কলম দিয়ে দাগাতে দাগাতে ওপাশে ফোন ধরার জন্য অপেক্ষা করছেন।

    রিপোর্ট, ওপাশ থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

    এইমাত্র তার সাথে ইন্টারভিউ শেষ করলাম।

    তারপর?

    সে কিছুই দেখেনি… ঠিকভাবে কিছুই দেখতে পায়নি।

    মানে কী?

    এক ঝলক দেখে আরকি। কিন্তু চিনতে পারেনি।

    একটু দীর্ঘ নীরবতা।

    নার্ভাস হয়ে পড়লেন জেরাল্ড। তার দেয়া রিপোর্ট সম্পাদনা করে দেয়া হবে। সিংহ। এটাই লেখা থাকবে রিপোর্টে। আমরা আরও কয়েকটা গুলি করে এই ব্যাপারটা এখানেই দুই-একদিনের মধ্যে শেষ করে দেব। আর এই লোকটাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

    ভেরি গুড। কী করতে হবে জানা আছে তো?

    কেলজ একটু আপত্তি তুললেন। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আর ঘাটাতে সাহস পাবে না। খুব ভাল করে ভয় পাইয়ে দিয়েছি। আমার মনে হয় না…

    রাইট। কিছু মনে করতে হবে না। যা নির্দেশ দেয়ার দিয়েছি। ব্যাপারটা দুর্ঘটনার মতো করে সাজাবে।

    লাইন কেটে গেল।

    ক্রাড়লে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন কেলজ। রুমের ভেতরে ফ্যান চলার পরেও তার শ্বাস নিতে কষ্ট হতে লাগল। দিন বাড়ার সাথে গরমও বাড়ছে। ফ্যানে কিছু হচ্ছে না।

    অবশ্য এই গরমের ফলে তার কপাল থেকে ঘাম ঝরল না। ঘাম ঝরার অন্য কারণ আছে।

    যা নির্দেশ দেয়ার দিয়েছি।

    আর কেলজ ভাল করেই জানেন, নির্দেশ অমান্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

    ডেস্কে থাকা নোটপ্যাডের দিকে তাকালেন তিনি। আনমনে এই চিত্রকর্ম এঁকে বসে আছেন। মনের অজান্তে মনের ভেতরে থাকা ভয়ের প্রতিচ্ছবি নোটপ্যাডে উঠে এসেছে।

    জেরাল্ড পৃষ্ঠাটি দ্রুত ছিঁড়ে ফেললেন। ছিঁড়ে কুটিকুটি করলেন, কোনো প্রমাণ রাখলেন না। রাখা চলবেও না। এটাই নিয়ম।

    তাকে নির্দেশ দেয়া আছে।

    ব্যাপারটা দুর্ঘটনার মতো করে সাজাবে।

    .

    ভোর ৪টা ৫০ মিনিট।
    ৩৭ হাজার ফুট উঁচুতে, জার্মানি।

    এক ঘন্টার মধ্যে আমরা ল্যান্ড করব, বলল মনক। তুমি আরেকবার ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারো।

    টানটান হলো গ্রে। চ্যালেঞ্জার ৬০০ জেট-এর মৃদু গুঞ্জন ওকে স্বস্তি দিলেও ওর মনে ভেসে উঠছে গতকালের ঘটনাগুলো। ধাঁধা মেলানোর চেষ্টা করছে ও। চোখের সামনে ডারউইন বাইবেল খুলে বসে আছে।

    ফিওনার কী অবস্থা?

    মাথা নেড়ে প্লেনের পেছনের সোফার দিকে তাকাল মনক। কম্বলের নিচে শুয়ে আছে সে। অবশেষে শুয়েছে। ব্যথার ওষুধ দেয়াতে থেমেছে… বাচ্চারা কখনও মুখ বন্ধ রাখতে চায় না। বকর বকর করতেই থাকে।

    কোপেনহ্যাগেন এয়ারপোর্ট থেকে একটানা বক বক করে এসেছে ফিওনা। গ্রে মনকে ফোন করে সতর্ক করে দিয়েছিল। গ্রের কথা অনুযায়ী একটি প্রাইভেট কার এসে ওদের দুজনকে অপেক্ষমাণ জেটের কাছে এনে পৌঁছে দিয়ে গেছে। রিফিউলিং (জ্বালানি) ভরা হচ্ছিল জেটে। ভিসা আর কূটনীতিক বিষয়গুলো সামাল দিয়েছেন লোগান।

    তবে চ্যালেঞ্জার আকাশে উড্ডয়ন না করা পর্যন্ত গ্রে স্বস্তি পাচ্ছিল না।

    গুলির আঘাতের কী খবর?

    শ্রাগ করে পাশের চেয়ারে লুটিয়ে পড়ল মনক। গুলি বিদ্ধ হয়নি। জাস্ট ছুঁয়ে গেছে। তবে গভীর জখম হয়েছে কয়েকটা। সামনের কয়েকটা দিন ওকে ওগুলো বেশ ভালই যন্ত্রণা দেবে। তবে অ্যান্টিসেপটিক, লিকুইড স্কিন সিলেন্ট আর ব্যান্ডেজ দিলে আরও দুই দিন লাগবে সব সেরে যেতে। তারপর আরও লোকজনের পকেট মারবে।

    ওর ওয়ালেট ঠিক জায়গায় আছে কি-না নিজের পকেট হাতড়ে দেখল মনক।

    হ্যালো বলার জন্য ও পকেট মেরে থাকে।, বলল গ্রে। ক্লান্ত হাসি লুকোল ও। গ্রিট্টি নেয়াল ওকে এরকম একটি কথা গতকাল বলেছিলেন। ও খোদা, মাত্র গতকালের কথা! গতকাল?

    মনকে ফিওনার সেবায় রেখে লোগানের কাছে রিপোর্ট করেছিল গ্রে। নিলাম অনুষ্ঠানে গ্রের কর্মকাণ্ড শুনে সিগমার ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর মোটেও খুশি হননি। কারণ গ্রের ওখানে যাওয়ারই কথা ছিল না। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। কপাল ভাল, নিলামে অংশগ্রহণকারীদের ছবি ওর পেনড্রাইভে রাখা ছিল। ওই দুই নারী-পুরুষের ছবিও আছে। সবগুলো ছবি লোগানের কাছে পাঠিয়ে দিল গ্রে। সেই সাথে বাইবেলের কিছু পৃষ্ঠা ও ওর নোটে আঁকা বিভিন্ন ছবি ফ্যাক্স করে দিল।

    লোগান ও ক্যাট এসব নিয়ে কাজ করে বের করবে এগুলোর পেছনে কার হাত আছে।

    লোগান ইতোমধ্যে কোপেনহ্যাগের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ সেরে ফেলেছেন। না, পার্কে কোনো মানুষ মারা যাওয়ার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তাহলে দেখা যাচ্ছে ওদের সেই আততায়ীর লাশ স্রেফ গায়েব হয়ে গেছে। আতঙ্কিত দর্শনার্থীদেরকে ভড়কে দিয়ে ওদের পার্ক থেকে বেরিয়ে আসাটা অল্পের ভেতরে দিয়েই কেটে গেছে। কেউ কোনো গুরুতর আঘাত পায়নি… তবে আগলি ডাকলিং-এর কথা ভিন্ন।

    মনকের বুক পকেটের দিকে গ্রে তাকিয়ে আছে।

    আংটি এখনও আছে ওখানে? বলল ও। বন্ধুকে খোঁচা মারল আরকি।

    ওর তো এটাও চুরি করার কোনো দরকার নেই।

    ফিওনার চুরিবিদ্যার তারিফ করতেই হয়, ভাবল গ্রে। হাত খুব চালু।

    আংটির বক্স সম্পর্কে বলো। কাহিনি কী? ডারউইন বাইবেল বন্ধ করে প্রশ্ন করল গ্রে।

    আমি তোমাকে এটা দিয়ে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।

    মনক, অত ঢং করতে হবে না।

    আরে থামো। মানে, আমি তোমাকে ব্যাপারটা আমার সুবিধামতো সময়ে জানাতাম।

    পেছনে হেলান দিল গ্রে। মনকের দিকে তাকিয়ে হাত দুটো আড়াআড়ি করে রাখল। প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে। মিসেস মনককে চিনি না আমি। তাই সে তো আর এটা জানতে পারবে না।

    কচু। আমি এই জিনিস গত দুই মাস আগে কিনে বয়ে বেড়াচ্ছি। ওকে দেয়ার মতো উপযুক্ত সময়ই পাচ্ছি না।

    সময় না। বলল, সাহস পাচ্ছে না।

    হ্যাঁ, সেটাও হতে পারে।

    মনকের কাছে গিয়ে হাঁটু চাপড়ে দিল গ্রে। সে তোমাকে ভালবাসে, মনক। দুশ্চিন্তাও করে।

    মনক বাচ্চা ছেলেদের মতো হাসল। এই হাসিতে ওকে ভাল না লাগলেও ওর দুই চোখে গভীর ভালবাসা দেখতে পেল গ্রে। নিজের কৃত্রিম হাতের কব্জিতে হাত বুলাল ও। যতই সাহসী হোক, গত বছরের দুর্ঘটনা মনককে অনেক বড় ধাক্কা দিয়েছিল। ওকে সুস্থ করে তুলতে প্রায় পাগল হয়ে গেছিল ক্যাট ব্রায়ান্ট। ডাক্তারদের চেয়ে ক্যাট ই বেশি পরিশ্রম করেছে, সেবা করেছে। তারপরও মনকের মনে শংকা কাটেনি। ক্যাটের ব্যাপারে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।

    একটি কালো মখমলের বক্স খুলল মনক। ওর ভেতরে তিন ক্যারেটের অ্যাঙ্গেজমেন্ট রিং আছে। হয়তো আরেকটু বড় হীরা কেনা দরকার ছিল… বিশেষ করে এখনকার জন্য।

    মানে?

    গ্রের দিকে তাকাল মনক। ওর চেহারায় নতুন এক অভিব্যক্তি ফুটে উঠল। ক্যাট প্রেগন্যান্ট।

    গ্ৰে অবাক হয়ে গেছে। কী? কীভাবে হলো?

    আমার তো মনে হয় তুমি জানো, কীভাবে মেয়েরা প্রেগন্যান্ট হয়। মনক জবাব দিল।

    ক্রাইস্ট… কনগ্রাচুলেশনস, বোকার মতো কথা বলে সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে গ্রে। তবে এখন একটা কাজের প্রশ্ন করল। তার মানে, তোমরা বাবুটাকে রাখবে।

    এক চোখের ভ্রু উঁচু করল মনক।

    অবশ্যই রাখবে, আবার বোকার মতো কথা বলে মাথা নাড়ল ও।

    এখনও বেশিদিন হয়নি, মনক জানাল। ক্যাট চায় না ব্যাপারটা অন্য কেউ জানুক… তবে বলেছে তুমি জানলে কোনো সমস্যা নেই।

    মাথা নাড়ল গ্রে। এরকম একটা খবর পেয়ে ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করছে। মনককে বাবা হিসেবে কল্পনা করতে গিয়ে খেয়াল করল মনক বেশ সুন্দরভাবে বাবা হতে পারবে! বাবা হিসেবে মনক বেশ ভাল মানিয়ে যায়।

    ও খোদা, দারুণ ব্যাপার।

    আংটির বক্স বন্ধ করল মনক। এবার তোমার খবর বলো?

    গ্রে ভ্রু কুঁচকাল। আমার খবর?

    র‍্যাচেল আর তুমি। টিভোলি গার্ডেনস-এর কাহিনি ওকে বলার পর সে কী বলল?

    গ্রের কপালে ভাঁজ পড়ল।

    গ্রে…

    কী?

    তুমি এখনও তাকে ফোন করোনি, তাই না?

    আমার মনে হয় না…

    সে যেহেতু কাছাকাছি ছিল তাই কোপেনহ্যাগেনে সংগঠিত সম্ভাব্য সকল সন্ত্রাসী হামলার খবর সে জানে। আর কেউ যদি বোম! বলে চিৎকার করে কোনো ঘটনার সৃষ্টি করে, আগলি ডাকলিং-এ চড়ে পার্ক থেকে বের হয়ে তুলকালাম বাধিয়ে দেয় তাহলে তো কথাই নেই। তোমার ওকে পুরো বিষয়টা খুলে জানানো উচিত।

    মনক ঠিকই বলেছে। র‍্যাচেলকে ফোন করে জানানো উচিত ছিল।

    গ্রেসন পিয়ার্স, আপনাকে দিয়ে জাতি কী করবে? হতাশায় মাথা দোলাল মনক। বলেন, মেয়েটাকে কবে ছেড়ে দিচ্ছেন?

    কী বলছ?

    ঢং করো না। তুমি আর র‍্যাচেল রিলেশন করছ, ভাল কথা। কিন্তু রিলেশনটা কী আদৌ ঠিকভাবে হচ্ছে?

    গ্রে রেগে গেল। সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। তবে আমরা এসব নিয়েই আজকে কথা বলার জন্য প্ল্যান করেছিলাম। কিন্তু সব তো ভজকট হয়ে গেল।

    তোমার জন্য ভালই হয়েছে। রিলেশনের ভেজালে জড়াতে হবে না। বেঁচে গেলে।

    শোন, দুই মাস ধরে পকেটে অ্যাঙ্গেজমেন্টের আংটি বয়ে বেড়াচ্ছ বলে এই না যে তুমি লাভ শুরু হয়ে গেছ!

    দুই হাত জড়ো করে ক্ষমা প্রার্থনা করল মনক। ঠিক আছে ভাই, মাফ চাই… আমি জাস্ট বলছিলাম…

    গ্রে এত সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। কী?

    তুমি আসলে সত্যি সত্যি কোনো রিলেশনশিপ চাও না।

    কথার আঘাতে হতভম্ব হয়ে গেল গ্রে। কী বলছ তুমি? আমি আর র‍্যাচেল দুজনই এটাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আন্তরিক। আমি র‍্যাচেলকে ভালবাসি। তুমি তো সেটা জানোই।

    জানি। ভালবাসো, ওটা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি ওর সাথে আসল সম্পর্কে জড়াতে চাও না। হাতের তিন আঙুল বের করে বলল মনক। যেমন : স্ত্রী, বন্ধন, বাচ্চা কাচ্চা।

    গ্রে কিছু বলল না। স্রেফ মাথা নাড়ল।

    তুমি র‍্যাচেলের সাথে জাস্ট ডেটিং করার জন্য রিলেশন করছ।

    কিছু একটা বলে মোক্ষম জবাব দিতে চাচ্ছিল গ্রে। কিন্তু মনক তো একেবারে ভুল বলেনি। গ্রে আর র‍্যাচেলের যখনই দেখা হয় তখন একটুও রোমান্টিক সময় কাটাতে পারে না ওরা। বিছানায় যাওয়া এক ব্যাপার, সেটার আগে একটু ডেটিং করারও দরকার আছে। আর ঘাটতিটা সেখানেই।

    তোমাকে আমি কতদিন ধরে চিনি? মনক প্রশ্ন করল।

    প্রশ্নকে পাত্তাই দিল না গ্রে।

    তখন থেকে এপর্যন্ত কতগুলো সিরিয়াস গার্লফ্রেন্ড হয়েছে তোমার? হাত দিয়ে বড় করে শূন্য এঁকে দেখাল মনক। এটা তোমার প্রথম সিরিয়াস গার্লফ্রেন্ড। আর এর সাথে তোমার আচরণের এরকম দশা। কার সাথে রিলেশন করছ তুমি, দেখেছ একবারও?

    র‍্যাচেল তো খুব ভাল মেয়ে।

    হোক। যাক, অবশেষে মুখ খুলছ দেখে ভাল লাগছে। কিন্তু বন্ধু, এরকম অসম্ভব পরিস্থিতি আর বাধায় থেকে কী ভালবাসা হয়?

    কীসের বাধা?

    আটলান্টিক সাগরটাই ধরো। তোমার আর তোমার রিলেশনের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে বসে আছে। আবার তিন আঙুল দেখাল মনক। স্ত্রী, বন্ধন আর বাচ্চা।

    তুমি প্রস্তুত নও, বলল মনক। আমি যখন ক্যাটের প্রেগন্যান্ট হবার কথাটা বললাম তখন তোমার চেহারার ভাব খেয়াল করেছি। ওখানে আতঙ্ক আর ভয় ছিল। যদিও বাচ্চাটা আমার। কিন্তু ভয়ে তুমি অস্থির।

    গ্রের হৃদপিণ্ড একদম গলার কাছে এসে লাফাতে লাগল। ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আঘাত পেয়েছে একদম মোক্ষম জায়গায়।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল মনক। তোমার সমস্যা আছে, বন্ধু। ওগুলো নিয়ে একটু কাজ করো। কীভাবে করবে সেটা তুমি জানো।

    জেটের ইন্টারকম বেজে ওঠায় কিছু বলা থেকে বেঁচে গেল গ্রে।

    আমরা আর আধা ঘণ্টা পর ল্যান্ড করব। পাইলট জানাল।

    ল্যান্ড করার আগপর্যন্ত আমি এগুলো নিয়ে একটু ভে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বিড়বিড় করল গ্রে।

    শুনে ভাল লাগল।

    মনকের দিকে ফিরল ও। মনককে কড়া করে কিছু একটা বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আমি র‍্যাচেলকে ভালবাসি।

    সিটে হেলান দিল মনক। ঘোঁতঘোঁত করে বলল জানি তো। আর সেজন্যই ব্যাপারটা কঠিন।

    .

    সকাল ৭টা ০৫ মিনিট।
    হুলুহুলুই-আমফলোজি প্রিজার্ভ।

    চায়ে চুমুক দিল খামিশি টেইলর। যদিও চা-টায় মধু মেশানোয় বেশ সুস্বাদু হয়েছে। কিন্তু ও কোনো স্বাদ পেল না।

    তাহলে মারসিয়ার বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই? পলা কেইন প্রশ্ন করলেন।

    মাথা নাড়ল খামিশি। যা সত্য সেটা বলাই ভাল। প্রধান ওয়ার্ডেন ওকে বরখাস্ত করেছে বলে ও এখানে আসেনি। প্রিজার্ভের এক প্রান্তে থাকা নিজের এক রুমের বাসা থেকে জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য এসেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ডেনদের জন্য ওরকম ঘোট ঘোট বাসা বানিয়ে রাখা আছে এখানে। বরখাস্ত হয়েছে, তারপর যখন চাকরি একেবারে চলে যাবে তখন তো আর এখানেও থাকতে পারবে না। চাকরি চলে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।

    তবে সরাসরি বাসায় না ফিরে পলা কেইনের বাসায় এসে হাজির হয়েছে খামিশি। পার্কে যাওয়ার অর্ধেক রাস্তায় গবেষকদের জন্য নির্মিত অস্থায়ী বাসস্থান পাওয়া যায়। অর্থ যতদিন পর্যন্ত শেষ না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এখানে থাকবে গবেষকরা।

    খামিশি বেশ কয়েকবার এই দোতলা বাসায় এসেছে। এখানে থাকা দুইজন গবেষকের কখনও অর্থাভাব হয়নি। আগেরবার পলা কেইনের এই বাসায় থাকার ১০ম বর্ষপূর্তি উদযাপনের জন্য এখানে এসেছিল খামিশি। হুলুহুলুই-আমলোজি-র বিজ্ঞান কমিউনিটিতে এই জন একদম চেনা মুখ ছিলেন।

    কিন্তু এখন আছেন মাত্র একজন।

    নিচু টেবিলের অপরপাশে থাকা ছোট্ট আসনে বসেছেন ড. পলা কেইন। তার চোখ ছলছল করলেও গাল এখনও শুকনো আছে।

    ঠিক আছে। বললেন তিনি। দেয়ালে থাকা ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে সুখী জীবনের স্মৃতিগুলোর ওপরে চোখ বুলালেন। খামিশি জানে এরা দুজন অক্সফোর্ড থেকে পরিচিত। আমি খুব একটা আশা রাখিনি।

    ছোটখাটো আকৃতির এই পলা কেইনের শরীর স্বাস্থ্য বেশ হালকা। চুলগুলো কালো, স্কয়ার কাট দিয়ে কাঁধ পর্যন্ত রাখা। খামিশি জানে এই মহিলার বয়স প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই করছে, কিন্তু তাকে দেখতে আরও ১০ বছর কম মনে হয়। তার চেহারায় অন্যরকম সৌন্দর্য আছে, যেটা মেকি মেক-আপ দেয়া চেহারাগুলোকেও হার মানায়। কিন্তু আজ সকালে তার ভিন্ন চেহারা। নিজের ভূতুড়ে সংস্করণে হাজির হয়েছেন, চেহারা থেকে কিছু একটা চলে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে এই খাকি প্যান্ট আর ঢোলা সাদা ব্লাউজ পরেই ঘুমিয়েছিলেন তিনি।

    তার মনের বেদনা দূর করার জন্য খামিশি কোনো উপযুক্ত শব্দ পেল না। শুধু সমবেদনা জানিয়ে বলল, আমি দুঃখিত।

    ওর দিকে তাকালেন পলা। আমি জানি, আপনি আপনার সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। বাইরের আওয়াজ আমার কানে এসেছে। সাদা চামড়ার নারী মারা গেছে, কালো মানুষ বেঁচে আছে। এখানে বিষয়টা খুব একটা ভাল চোখে দেখা হবে না।

    খামিশি বুঝতে পারল তিনি প্রধান ওয়ার্ডেন-এর কথা বলছেন। ওই লোকটির সাথে পলা ও মারসিয়ার বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। ওয়ার্ডেনের ব্যাকগ্রাউন্ড, জানাশোনা সম্পর্কে অন্যদের মতো তিনিও জানেন। তবে এখানে বর্ণবৈষম্য করলেও বনের ভেতরে তো আর সেটা চলে না। ওখানে সবাই সমান।

    ওঁর মৃত্যুতে আপনার কোনো দোষ নেই। খামিশির চেহারার অভিব্যক্তি দেখে বললেন পলা।

    খামিশি অন্যদিকে তাকাল। উনি ওকে বুঝতে পেরেছে ভেবে ওর ভাল লাগছে কিন্তু একই সাথে ওয়ার্ডেনের অভিযোগও দগ্ধ করছে ওকে। যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করলে, ড. ফেয়ারফিল্ডকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা ও করেছে। কিন্তু ঘটনা হলো, জঙ্গল থেকে ও বেঁচে ফিরতে পারলেও ফেয়ারফিল্ড পারেননি। আর সমস্যা এখানেই।

    খামিশি উঠে দাঁড়াল। এখানে আর বেশিক্ষণ বিরক্ত করতে চাচ্ছে না। ড, কেইনকে ব্যক্তিগতভাবে কিছু জানানোর প্রয়োজন ছিল তাই এসেছিল। কাজ শেষ।

    আমি যাচ্ছি তাহলে।

    পলা উঠে ওকে স্ক্রিন ডোর পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। খামিশি বেরোতে যাবে এমন সময় ওকে ধরে থামালেন তিনি। আপনার কী মনে হয়, কী ছিল ওটা?

    তার দিকে ঘুরল ও।

    ওকে কীসে মেরে ফেলল? পলা জানতে চাইলেন।

    সূর্যের আলো দেখল খামিশি। এরকম ঝকঝকে সকালে দানব নিয়ে কথা বলাটা মানাবে না। তাছাড়া এব্যাপারে কথা বলা নিষেধ আছে। চাকরিটা তো এখনও একেবারে চলে যায়নি।

    পলার দিকে তাকিয়ে মিথ্যা এড়াল ও।

    ওটা সিংহ ছিল না।

    তাহলে কী…?

    আমি সেটা খুঁজে বের করতে যাচ্ছি।

    স্ক্রিন ডোর ঠেলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল ও। সূর্যের তাপে ওর মরিচাধরা পিকআপ সেদ্ধ হচ্ছে। ওতে চড়ে বাসার পথ ধরল খামিশি।

    এই নিয়ে আজ সকালে একশ বারের মতো গতকালের ভয়ঙ্কর ঘটনা মনে পড়ল। উকুফার সেই চিৎকার এখনও ওর কানে বাজছে… সেই চিৎকারের দাপটে ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না ও। সিংহ নয়। ওটা সিংহ, খামিশি সেটা জীবনেও বিশ্বাস করবে না।

    ওয়ার্ডেনদের জন্য নির্মিত সারি সারি বাসাগুলোর কাছে পৌঁছে গেল ও। লাল ধুলো উড়িয়ে উঠোনে সামনের গেইটে গিয়ে থামল।

    খুব ক্লান্ত। কয়েক ঘণ্টার বিশ্রাম প্রয়োজন।

    তারপর সত্য অনুসন্ধান করতে নামবে।

    ইতোমধ্যে ও জেনে গেছে কোথা থেকে তদন্ত শুরু করতে হবে। কিন্তু সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ওকে।

    উঠোনের বেড়ার দিকে এগোতে গিয়ে দেখল, গেইট একটু খোলা রয়েছে। প্রতিদিন বেরোনোর আগে সবসময় গেইটের ছিটকানি লাগিয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, গতরাতে ওকে যখন পাওয়া যাচ্ছিল না তখন হয়তো কেউ এসে খোঁজ নিয়ে গিয়ে থাকতে পারে।

    তবে খামিশির ইন্দ্রিয়জ্ঞান এখনও কমেনি… জঙ্গলে সেই প্রথম চিৎকার শোনার পর থেকে ওর ইন্দ্রিয়গুলো খুব সতর্ক হয়ে আছে। ওর সন্দেহ আছে, আর কখনও স্বাভাবিক হতে পারবে কি-না।

    গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকল ও। ওর সামনের দরজা তো বন্ধই মনে হচ্ছে। চিঠির বক্সে থাকা চিঠিগুলোও বেশ ঠিকঠাকভাবে আছে। কেউ হাত লাগায়নি। সিঁড়িতে এক পা ফেলে ফেলে এগোল ও।

    উঠতে উঠতে ভাবল, এখন সাথে একটা অস্ত্র থাকলে সুবিধে হতো।

    গুঙিয়ে উঠল মেঝেরবোর্ড। আওয়াজটা ওর পায়ের নিচ থেকে আসেনি… বাসার ভেতর থেকে এসেছে।

    খামিশির মন ওকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করল।

    কিন্তু না। এবার আর পালাবে না। একই ভুল দুইবার করবে না ও।

    বারান্দায় উঠে একপাশে দাঁড়িয়ে দরজার হাতল ঘুরিয়ে চেক করল।

    খোলা।

    দরজা ঠেলে খুলল ও। মেঝেরবোর্ড আবার গুঙিয়ে উঠল বাসার পেছন দিক থেকে।

    কে? কে ওখানে? খামিশি হাঁক ছাড়ল।

    .

    সকাল ৮টা ৫২ মিনিট।
    হিমালয়।

    এটা দেখো।

    হঠাৎ চমকে জেগে উঠল পেইন্টার। ওর দুই চোখের মাঝ অংশ মাথাব্যথায় দপদপ করছে। বিছানা গড়িয়ে উঠল ও, শরীরে পুরোপুরি পোশাক পরা আছে। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেও পারেনি। ঘণ্টা দুই আগে গার্ডদের পাহারায় রুমে ফিরেছে ও আর লিসা। অ্যানা তার কিছু কাজ সারতে আর পেইন্টারের অনুরোধে কিছু জিনিস আনতে গেছেন।

    কতক্ষণ ঘুমালাম? প্রশ্ন করল পেইন্টার। মাথাব্যথা ধীরে ধীরে কমছে।

    জানি না। আমি তো বুঝতেই পারিনি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। ফায়ারপ্লেসের সামনে থাকা টেবিলের পাশে আড়াআড়ি পা রেখে লিসা বসে আছে। কিছু কাগজ রাখা আছে টেবিলে। তবে মিনিট ১৫ হতে পারে… কিংবা ২০। বাদ দাও, এগুলো দেখ।

    পেইন্টার উঠে দাঁড়াল। লাটিমের মতো চক্কর দিয়ে উঠল পুরো রুম, তারপর আবার স্থির হলো। ওর অবস্থা ভাল নয়। এগিয়ে গিয়ে লিসার পাশে বসল ও।

    ক্রো দেখল, কয়েকটি কাগজের ওপর লিসার ক্যামেরা বসে আছে। সহযোগিতার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অ্যানাকে নিকন ক্যামেরা ফেরত দেয়ার জন্য বলেছিল লিসা।

    ক্রোর দিকে একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, দেখ।

    কাগজে কিছু চিহ্ন এঁকেছে সে। পেইন্টার ওগুলোকে চিনতে পারল। লামা খেমসার দেয়ালে এসব এঁকেছিলেন। লিসা নিশ্চয়ই ক্যামেরায় থাকা ছবিগুলো দেখে দেখে এগুলো এঁকেছে। কাগজে প্রত্যেকটি চিহ্নের নিচে সঙ্গতিপূর্ণ অক্ষরও লেখা আছে।

    SENPINAMENSGM SCHWARZESONNE

    খুব সাধারণ কোড। প্রত্যেকটা চিহ্ন একটা করে বর্ণ বোঝাচ্ছে। তবে একটু এদিক ওদিক করে নিতে হয়েছে, এই আরকি।

    schwarze Sonne শব্দ করে পড়ল ক্রো।

    কালো সূর্য। এখানকার প্রজেক্টের নাম।

    আচ্ছা, তাহলে লামা খেমসার এই প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতেন। ক্রো মাথা নেড়ে বলল। সন্ন্যাসী এখানে জড়িত হয়েছিলেন হয়তো।

    আর সেটা আঘাতও করেছে। ক্রোর কাছ থেকে লিসা কাগজ নিয়ে নিল। পাগমলামোর ফলে হয়তো তার ভেতরে থাকা পুরোনো ক্ষত জেগে উঠেছিল। অতীতে ফিরে গিয়েছিলেন।

    কিংবা এমনও হতে পারে, এই ক্যাসলের সাথে সমঝোতা করে এতদিন চলছিলেন তাঁরা।

    যদি তা-ই হয়ে থাকে… তাহলে দেখ, সমঝোতা করার বিনিময়ে তারা কী পেয়েছেন। বলল লিসা। আমরাও কী তাহলে এরকম প্রতিদান পাব?

    আমাদের হাতে আর কোনো উপায় নেই। বেঁচে থাকতে হলে এভাবেই বাঁচতে হবে। নিজেদেরকে তুলে ধরতে হবে দরকারি হিসেবে।

    আর তারপর? আমাদের যখন আর দরকার থাকবে না তখন?

    পেইন্টার কোনো ছল করল না। আমাদের মেরে ফেলবে। সহযোগিতা করে আমরা আমাদের আয়ু একটু বাড়াচ্ছি, এই তো।

    ও খেয়াল করে দেখল লিসা এই কঠিন সত্য শুনে ভয় পেল না, মনও খারাপ করল না। বরং এটা থেকে শক্তি অর্জন করল।

    তাহলে আমরা প্রথমে কী করব? লিসা জানতে চাইল।

    কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামার আগে প্রথমে জানাশোনা থাকা দরকার।

    কীরকম?

    শত্রুটা কে, সেটা আগে জানতে হবে।

    মনে হয় অ্যানা আর তার সাঙ্গপাঙ্গ সম্পর্কে আমি যথেষ্ট জানি।

    না। সেটা না। আমি বলতে চেয়েছি, এখানকার বিস্ফোরণের পেছনে কার হাত আছে। স্যাবোটাজটা কে করল… কে বা কারা করাল কাজটা। এখানে বেশ বড় কিছু হচ্ছে। স্যাবোটাজের ব্যাপারগুলো… বেল-এর সেফটি কন্ট্রোলে গোলমাল, অসুখ বিসুখ… এসব করে আমাদেরকে টেনে আনা হয়েছে। অদ্ভুত অসুখ-বিসুখের টোপ দেখিয়ে, ধোঁয়া উড়িয়ে আনা হয়েছে আমাদের।

    কিন্তু ওরা সেটা কেন করতে যাবে?

    যাতে অ্যানার দলবলের কথা ফাঁস হয়ে যায়। ওরা যা করছে সেটা যেন বন্ধ হয়। দ্য বেল… আমাদের এখানে আসার পর ওটা ধ্বংস করে দেয়া হলো। বিষয়টা তোমার কাছে আশ্চর্য লাগেনি? ঘটনাটা দিয়ে আসলে কী বোঝায়?

    তারা চাচ্ছিল অ্যানার প্রজেক্ট বন্ধ হোক এবং সেইসাথে বেল-এর প্রযুক্তি যেন অন্য কারও হাতে না পড়ে?

    মাথা নাড়ল ক্রো। ঘটনা হয়তো তারচেয়ে ভয়াবহ। এসবই হয়তো ভুল দিকে প্রলুব্ধ করছে। হাতের কারিশমা দেখাচ্ছে কেউ। হয়তো এদিকে ব্যস্ত রেখে আসল কৌশল খাটাচ্ছে অন্য কোথাও। কিন্তু এত কৌশলের পেছনে থাকা সেই জাদুকরটা কে? সে কী চায়? কী উদ্দেশ্য? আমাদেরকে সেটাই খুঁজে বের করতে হবে।

    আর তুমি অ্যানার কাছে যে জিনিসগুলোর জন্য অনুরোধ করেছ, ওগুলো?

    ওগুলো দিয়ে হয়তো আমরা এই ঘোরর পরিস্থিতিতে কিছু সুবিধা করতে পারব। যদি আমরা স্যাবোটাজকারীকে ফাঁদে ফেলতে পারি তাহলে হয়তো কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলবে। হয়তো জানা যাবে, এসবের পেছনে কার হাত আছে।

    দরজায় টোকা পড়ায় ওরা দুজনই চমকে উঠল।

    দরজা খুলে যেতে যেতে উঠে দাঁড়াল ক্রো।

    গানথারকে পাশে নিয়ে অ্যানা হাজির। শেষবার যখন গানথারকে দেখেছিল তখন বেশ নোংরা দেখালেও এখন পরিষ্কার হয়ে এসেছে। ওদের দুজনকে ভয় দেখানোর জন্য সাথে করে গার্ড আনেনি। এমনকী ওর নিজের কাছেও কোনো অস্ত্র নেই।

    আমাদের সাথে সকালের নাস্তা করতে আশা করি আপনাদের আপত্তি নেই, বললেন না। নাস্তা শেষ করে আপনাদের চাহিদা মোতাবেক জিনিসপত্র সরবরাহ করা হবে।

    সব? কীভাবে? কোত্থেকে পেলেন?

    কাঠমাণ্ডু। পাহাড়ের আরেক পাশে আমাদের একটা হেলিপ্যাড আছে।

    সত্যি? হেলিপ্যাড আছে অথচ সেটা কখনও কারো চোখে পড়েনি?

    শ্রাগ করলেন অ্যানা। প্রতিদিন গড়ে ১২ বার করে সাইট দেখার টুর আর পর্বতারোহীদের নিয়ে আমাদের হেলিকপ্টার চলাচল করে। যা-ই হোক, ১ ঘন্টার মাঝে পাইলট ফিরবে।

    মাথা নাড়ল পেইন্টার। এই ১ ঘণ্টার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে ওকে।

    সবকিছু জানতে হবে।

    প্রত্যেকটা সমস্যারই সমাধান থাকে। আশা করতে দোষ কী।

    রুম থেকে বেরোল ওরা। হলওয়েতে আজ বেশ লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। ওদের কথা জেনে গেছে সবাই। তাই এক নজর দেখতে এসেছে। কেউ কেউ রেগেও আছে। মনে হচ্ছে… স্যাবোটাজের জন্য পেইন্টার আর লিসা-ই দায়ী। তবে ওদের কেউ খুব কাছে ঘেঁষল না। কারণ সামনে পথ ফাঁকা করতে করতে গানথার এগোচ্ছে। যাদের হাতে বন্দী হয়েছিল তারাই রক্ষকের ভূমিকা পালন করছে এখন।

    অ্যানার স্টাডি রুমে পৌঁছুল ওরা।

    ফায়ারপ্লেসের সামনে থাকা টেবিলের ওপর একগাদা খাবার সাজানো আছে। সসেজ, পাউরুটি, সেদ্ধ করা খাবার, পরিজ, পনির আর ফল-ফলাদির মধ্যে আছে কালো জাম, তরমুজ ও আলুবোখারা।

    আমাদের সাথে পুরো ব্যাটেলিয়নও খেতে বসবে নাকি? খাবারের এত বাহার দেখে পেইন্টার জানতে চাইল।

    শীতপ্রধান এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকা খুবই জরুরি বিষয়। এতে দেহ, মন দুটোই ভাল থাকে। বললেন অ্যানা।

    বসল ওরা। সবাইকে খাবার পরিবেশন করা হলো। এ যেন বড় এক পরিবার।

    যদি চিকিৎসা করার কোনো উপায় থাকে, বলল লিসা, সেক্ষেত্রে আমরা আপনাদের এই বেল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। বেল-এর ইতিহাস… কীভাবে কাজ করতো… এসব জানতে চাই।

    হেঁটে আসার পর অ্যানার মন একটু খারাপ থাকলেও এখন বেশ ভাল লাগছে। তাদের এই আবিষ্কার সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য দুনিয়ার সব গবেষক-ই আগ্রহ প্রকাশ করবে। এটাই স্বাভাবিক।

    এনার্জী জেনারেটর হিসেবে পরীক্ষার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল, অ্যানা বলতে শুরু করলেন। একটা নতুন ইঞ্জিন। এর নাম বেল হয়েছিল ঘণ্টা আকৃতির বহিঃস্থ জারের কারণে। সিরামিকের তৈরি জারের আকার ছিল একশ গ্যালন ড্রামের সমান। সীসা দিয়ে লাইন করাছিল। ইঞ্জিনের ভেতরে ছিল দুটো ধাতব সিলিন্ডার। একটা সিলিন্ডারের ভেতরে আরেকটা ঢোকানো ছিল। দুটো পরস্পর বিপরীত দিকে ঘুরতো।

    অ্যানা হাত নেড়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করলেন।

    পুরো জিনিসটায় তেল দিয়ে বেল-এর ভেতরে মারকারির মতো তরল ধাতু দিয়ে ভরে দেয়া হতো। সেই তরল ধাতুর নাম : জেরাম-৫২৫।

    নামটা চিনতে পারল ক্রো। এই জিনিসের কথা আপনি আগেই বলেছিলেন। এটা আপনারা পুনরায় উৎপাদন করতে পারছেন না।

    মাথা নেড়ে সায় দিলেন অ্যানা। আমরা বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করে আসছি। তরল ধাতুর ভেতরের কী কী উপাদান আছে সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালিয়েছি অনেক। সেখান থেকে আমরা জেনেছি এতে থরিয়াম আর বেরিলিয়াম পেয়োক্সাইডস আছে। ব্যস এটুকুই, আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি। অথচ জেরাম-৫২৫ হলো নাৎসদের জিরো পয়েন্ট এনার্জী প্রজেক্টের একদম প্রধান উপাদান। জেরাম-৫২৫ ছাড়া কোনোভাবেই চলবে না। যে ল্যাবে এটা তৈরি করা হতো যুদ্ধের পর পর সেটাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।

    আর তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আপনারা ওটা উৎপাদন করতে সক্ষম হননি? পেইন্টার প্রশ্ন করল।

    মাথা নাড়লেন অ্যানা।

    আচ্ছা, কিন্তু বেল আসলে কী করত? লিসা জানতে চাইল।

    আমি আগেই বলেছি, এটা ছিল স্রেফ একধনের এক্সপেরিমেন্ট। অফুরন্ত জিরো পয়েন্ট এনার্জীকে বাগে আনার চেষ্টা। নাৎসিরা যখন এই প্রজেক্ট চালু করেছিল, তখন থেকেই বিভিন্ন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করে। ফ্যাকাসে উজ্জ্বলতা বিচ্ছুরণ করে বেল! ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতিতে বড় ধরনের শর্ট সার্কিট হয়। মারাও যায় অনেকে। এভাবে একের পর এক এক্সপেরিমেন্ট চালাতে চালাতে তারা ডিভাইসটাকে উন্নত করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। একটা পরিত্যক্ত খনিতে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল তখন। এরপর থেকে আর কেউ মারা যায়নি। তবে এক কিলোমিটার দূরে থাকা গ্রামের লোকদের মাঝে নিদ্রাহীনতা, মাখা ঘোরা, খিচুনিসহ নানার উপসর্গ দেখা দেয়। বেল থেকে রেডিয়েশনের মাধ্যমে কিছু একটা ছড়াচ্ছিল। বিষয়টা কর্তৃপক্ষের নজর কাড়ল।

    অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা, তাই তো? আন্দাজ করল পেইন্টার।

    তা জানি না। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান গবেষক অনেক রেকর্ড ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তবে সেই দলে থাকা বাকিদের কাছ থেকে বেল-এর কার্যপরিধি সম্পর্কে জানা গিয়েছিল। ফার্ন গাছ, ছত্রাক, ডিম, মাংস, দুধসহ পুরো প্রাণীজগতে জুড়ে বিস্তার ছিল বেল। মেরুদণ্ডী, অমেরুদণ্ডী প্রাণী; সব। তেলাপোকা, শামুক, গিরগিটি, ব্যাঙ, ইঁদুর, বিড়াল… সব।

    আর এদের সবার উপরে থাকা প্রাণী? মানুষ? এই মানুষের কী অবস্থা?

    অ্যানা মাথা নাড়লেন। হু, হতে পারে। উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো-বেশি নীতি মেনে চলা।

    তো এক্সপেরিমেন্টের সময় কী হয়েছিল? লিসা প্রশ্ন করল। প্লেটে থাকা খাবারের প্রতি ওর কোনো আগ্রহ নেই। খাবার যে মজা হয়নি, সেটা না। এই প্রসঙ্গ ওকে আগ্রহী করে তুলেছে।

    ওর দিকে ফিরলেন অ্যানা। এবারের প্রতিক্রিয়াগুলোও ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। গাছপালা থেকে ক্লোরোফিল গায়েব হয়ে সব সাদা হয়ে যাওয়া, কয়েক ঘন্টার মধ্যে পুরো গাছ তেল তেলে কাদায় পরিণত হওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও অন্যান্য প্রাণী স্রেফ জেলিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। টিস্যুগুলোতে সচ্ছ একধনের উপাদান এসে সব কোষকে একদম ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেয়।

    তবে আন্দাজ করছি, বলল পেইন্টার শুধু তেলাপোকারা অক্ষত ছিল।

    ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাল লিসা। তারপর ব্যানার দিকে ফিরে বলল। ওরকম প্রতিক্রিয়া কেন হয়েছিল সে-ব্যাপারে আপনার কোনো ধারণা আছে?

    আমরা অনুমান করতে পারি মাত্র। আমাদের বিশ্বাস, বেল যখন ঘুরতো তখন খুব শক্তিশালী ইলেকট্রোম্যাগনেটিক চক্র তৈরি হতো। জিরো পয়েন্ট এনার্জী প্রজেক্টে ব্যবহৃত উপাদান জেরাম-৫২৫ সেই চক্রের অধীনে পড়তেই অলৌকিক, অদ্ভুত রকমের কোয়ান্টাম এনার্জীর জন্ম হতো।

    পেইন্টার পুরো বিষয়টিকে মাথায় ঢুকিয়ে নিল। তাহলে জেরাম-২৫২ হলো জ্বালানি আর বেল হলো ইঞ্জিন।

    অ্যানা মাথা নাড়লেন।

    বেলকে একটা মিক্সমাস্টারে পরিণত করা হচ্ছিল। নতুন একটি কণ্ঠ গমগম করে উঠল।

    গানথারের দিকে তাকাল সবাই। তার মুখভর্তি সসেজ। এই প্রথমবারের মতো ওদের কথাবার্তার প্রতি আগ্রহ দেখাল সে।

    একটু ত্রুটি থাকলেও কথাটা একেবারে ভুল বলেনি। অ্যানা সহমত পোষণ করলেন।

    প্রকৃতিকে কেক চূর্ণ করার বাটি হিসেবে কল্পনা করে ঘুরন্ত বেলকে চূর্ণ করার যন্ত্র। হিসেবে কল্পনা করা যেতে পারে। কেক চূর্ণ করতে গিয়ে কেকের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনি এই বেল থেকে বাইরের প্রকৃতিতে কোয়ান্টাম এনার্জী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পাঠানোর ফলে কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল। সর্বশেষ এক্সপেরিমেন্ট ছিল, কীভাবে মিক্সারের ঘূর্ণন গতিতে রদবদল করা যায়। গতিতে পরিবর্তন আনতে পারলে কোয়ান্টাম এনার্জীর ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

    ক্ষতি কমানো আরকি। লিসা বলল।

    সেইসাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হার কমানো। সেটা সম্ভব হলে খারাপ প্রভাবগুলো কমে গেলে সেখানে ভাল কিছু জায়গা করে নিতে পারবে। বলল ক্রো। ও জানে বিষয়বস্তুর একদম কেন্দ্রে চলে এসেছে ওরা।

    অ্যানা সামনে ঝুঁকে বললেন, কিন্তু নাৎসি বিজ্ঞানীরা উল্টো পথে হাঁটল। তারা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমানোর চেষ্টা না করে বরং আরও বাড়িয়ে এক্সপেরিমেন্ট করল। ছত্রাক বড় করা, ফার্ন গাছ বড় করা, অত্যধিক ক্ষীপ্রতা ও বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ইঁদুর ইত্যাদি। বিভিন্ন জাতের প্রাণীর ক্ষেত্রে ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন এসেছে। এবং একপর্যায়ে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে বড় জাতের প্রাণীদের ক্ষেত্রে।

    তাহলে এরপর মানুষের পালা। বলল ক্রো।

    মিস্টার ক্রো, একটু ইতিহাসে চোখ রাখুন। নাৎসিরা ধরেই নিয়েছিল তারা আগামী প্রজন্মকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আর সেটা করার অস্ত্র ছিল এটা। নীতি ধুয়ে পানি খাওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। নীতি কোনো কাজে আসে না। নীতি পরিপন্থী কাজেই বেশি লাভ হয়।

    উন্নত প্রজাতির মানুষ তৈরি করে পুরো পৃথিবীতে রাজত্ব কায়েম করা, তাই তো?

    নাৎসিরা সেটাতেই বিশ্বাস করতো। শেষের দিকে এসে তারা বেল-এর পেছনে অনেক খেটেছে অনেক পরিশ্রম করেছে কিন্তু পুরো কাজ শেষ করতে পারার আগেই সব ভেস্তে গেল। পরাজয় হলো জার্মানদের। বেল-কে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল যাতে পরবর্তীতে গোপনে কাজ চালিয়ে নেয়া যায়। জার্মানির তৃতীয় প্রজন্মের জন্য শেষ আশা ছিল বেল। আর্য জাতির পুনরুত্থান হওয়ার একমাত্র সুযোগ ছিল। পুরো পৃথিবীতে দাপট দেখানো যেত।

    লুকিয়ে কাজ করার জন্য এই এলাকা বেছে নিলেন হিমল্যার, বলল ক্রো। হিমালয়ের গভীরে। কী পাগলামো। ও মাথা নাড়ল।

    সবসময় মেধার চেয়ে এই পাগলামো-ই পৃথিবীকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া কে-ইবা এরকম অসম্ভবকে সম্ভব করার পেছনে উঠে পড়ে লাগতে যাবে?

    আর এসব করতে গিয়ে গণহত্যাও কম হয় না।

    অ্যানা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

    আলোচনাকে মূল প্রসঙ্গে ফিরিয়ে আনল লিসা। মানুষের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে কী পাওয়া গেল? কণ্ঠস্বর যতদূর সম্ভব নিরপেক্ষ রেখে জানতে চাইল ও।

    প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তখনও ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিল। বিশেষ করে উচ্চতর সেটিঙে। কিন্তু রিসার্চ থেমে থাকল না। মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বয়স যখন ৮ সপ্তাহ তখন সেটার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে বেশ ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। প্রতি ৬ শিশুর ১ জন এরকম পজেটিভ ফল দিয়েছে। জিন পরিবর্তন হওয়ার ফলে বাচ্চাগুলোর মাংসপেশি বেশ সুগঠিত ছিল। এছাড়া আরও কিছু উন্নতি দেখা গিয়েছিল। যেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিক্ষমতা, হাত ও চোখের মধ্যে উন্নত সমন্বয়, দুর্দান্ত আইকিউ ইত্যাদি।

    সুপারচিলড্রেন! বলল পেইন্টার।

    কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাচ্চাগুলো ২ বছরের বেশি পার করতে পারত না, বললেন অ্যানা। ধীরে ধীরে ওরা অধঃপতিত হয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যেত। স্ফটিকের টুকরোর মতো হয়ে যেত কোষগুলো। হাত-পায়ের আঙুলগুলো ঝরে পড়ে যেত।

    ইন্টারেস্টিং, বলল লিসা। পরীক্ষার শুরুর দিকে থাকা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার মতো শোনাচ্ছে এগুলো।

    ওর দিকে তাকাল পেইন্টার। ইন্টারেস্টিং বলল নাকি? অ্যানার দিকে আগ্রহী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে লিসা। ও এত নিরপেক্ষ মুখভঙ্গি কীভাবে ধরে রাখছে? তারপর খেয়াল করে দেখল টেবিলের নিচে লিসার হাঁটু লাফালাফি করছে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে ক্রো ওর হাটুর কাঁপাকাঁপা থামিয়ে দিল। ওর ছোঁয়া পেতেই একটু কেঁপে উঠল লিসা। তবে চেহারায় সেসবের কোনো প্রকাশ নেই। পেইন্টার বুঝতে পারল, এই ব্যাপারে লিসার আগ্রহ স্রেফ ভান ছাড়া কিছুই নয়। নিজের রাগ আর ভয় লুকিয়ে রেখে ক্রোকে সুবিধে করে দিচ্ছে। ওর এরকম সহযোগী আচরণের কারণে অ্যানার মুখ থেকে কিছু কঠিন প্রশ্নের উত্তর বের করা সম্ভব। আর ওই উত্তরগুলোই ওদের দরকার।

    কাজের বাহবাস্বরূপ লিসার হাঁটু চাপড়ে দিল ক্রো।

    লিসা তার অভিনয় চালিয়ে গেল। আপনি বললেন, ৬টা বাচ্চার মধ্যে ১টা বাচ্চা এরকম উন্নত ক্ষমতা নিয়ে জন্মালেও অল্পদিন বাঁচত। তাহলে বাকি ৫ বাচ্চা?

    মাথা নাড়লেন অ্যানা। জন্মের সময়ই মারা যেত, মারাত্মক বিকৃতি, রূপান্তর। মায়েদের মৃত্যু। মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল।

    এই বাচ্চাগুলোর মা ছিল কারা? ওদের দুজনের কথার ভেতরে নাক গলাল পেইন্টার। আশা করি, কোনো সেচ্ছাসেবী ছিল না।

    মিস্টার ক্রো, এত রূঢ়ভাবে বিচার করবেন না। আপনার নিজের দেশে কত মানুষ মারা যায় সে হিসেব রাখেন? তৃতীয় বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে আপনাদের দেশের অবস্থা বেশি জঘন্য। ওই মৃত্যুগুলো থেকে কী ফায়দা হয়, বলুন দেখি?

    ও, খোদা! এই মহিলা কী সিরিয়াস? এরকম উদ্ভট তুলনা দিচ্ছে কী করে।

    প্রয়োজন ছিল বলেই নাৎসিরা সেটা করেছিল, বললেন অ্যানা। আর তাদের প্রয়োজন একটু হলেও ন্যায়সঙ্গত ছিল।

    অ্যানাকে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করল ক্রোর কিন্তু রাগের দমকে কিছুই বলতে পারল না।

    মুখ খুলল লিসা। ওর হাঁটুর উপরে থাকা ক্রোর হাতে হাত রেখে শক্ত করে ধরল। আশা করি, এখানকার বিজ্ঞানীরা বেল-কে সুন্দর করার কোনো একটা উপায় বের করেছিলেন। যাতে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলো আর দেখা না দেয়।

    অবশ্যই। কিন্তু যুদ্ধের শেষের দিকে আর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। একটা নিখুঁত বাচ্চা জন্ম নেয়ার ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত একটা রিপোর্ট ছিল একটা। এই বাচ্চা ছাড়া বেল-এর অধীনে জন্ম নেয়া সব বাচ্চারই কোনো না কোনো সমস্যা ছিল। তুকের ভিন্ন রঙ, বিসদৃশ অঙ্গ-প্রতঙ্গ, ভিন্ন রঙের চোখ। গানথারের দিকে একবার দৃষ্টি বুলালেন অ্যানা। কিন্তু ওই একটা বাচ্চা ছিল নিখুঁত। চুল-চেরা জেনেটিক বিশ্লেষণ করেও বাচ্চাটির কোনো খুঁত পাওয়া যায়নি। কিন্তু কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই বাচ্চার জন্ম দেয়া হয়েছিল সেটা অজানাই রয়ে গেছে। প্রধান রিসার্চার তার শেষ পরীক্ষা একদম গোপনে চালিয়ে ছিলেন। আমার দাদা যখন বেল-এর সবকিছু সরিয়ে নেয়ার জন্য হাজির হয়েছিলেন তখন ব্যক্তিগত ল্যাবের সব জিনিসপত্র আর নোটগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিলেন সেই রিসার্চার। তারপর বাচ্চাটা মারা যায়।

    পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণে?

    না, রিসার্চারের মেয়ে ওই বাচ্চাকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ নিয়ে আত্মহত্যা করে।

    কেন?

    মাথা নাড়লেন অ্যানা। আমার দাদা এ-ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ ছিলেন। গল্পটা সংক্ষিপ্ত, এখানেই শেষ।

    তো সেই গবেষকের নাম কী ছিল? জানতে চাইল পেইন্টার।

    মনে পড়ছে না। তবে আপনি যদি চান তো দেখতে পারি।

    পেইন্টার শ্রাগ করল। সিগমার কম্পিউটার যদি এখন ও ব্যবহার করতে পারত। ওর মন বলছে, অ্যানার দাদা সম্পর্কে কম্পিউটারে এরচেয়ে বেশি তথ্য আছে।

    সেখান থেকে সব সরিয়ে আনার পর রিসার্চ এখানে শুরু হলো? লিসা প্রশ্ন করল।

    বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান কমিউনিটির সাথে আমাদের যোগাযোগ রাখতে হয়েছে। যুদ্ধের পর নাৎসি বিজ্ঞানীরা বাতাসে মিলিয়ে গেল। তাদের অনেকেই গায়েব হয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন ব্ল্যাক প্রজেক্টে। ইউরোপ, সোভিয়েত ইউনিয়ন, সাউথ আফ্রিকা, আমেরিকা ইত্যাদি দেশে। আসলে তারা ছিল আমাদের সোর্স। আমাদের কান আর চোখ হিসেবে কাজ করত তারা। তথ্য পাচার করত। তাদের অনেকে সেচ্ছায় কাজ করলেও বাকিদেরকে অতীত স্মরণ করিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে হয়েছিল।

    আচ্ছা, তাহলে আপনারা কাজ চালিয়ে গেলেন?

    মাথা নাড়লেন অ্যানা। পরবর্তী দুই দশকে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছিল। সুপারচিলড্রেনগুলো জন্ম নিয়ে আরও দীর্ঘদিন করে বাঁচতে শুরু করল তখন। এখানে। ওদেরকে রাজকুমারদের মতো আদর-যত্ন করে বড় করা হতো। ওদের উপাধি ছিল  Ritter des Sonnekonig অর্থাৎ, রাজা সূর্যের বীর। কারণ কালো সূর্য নামের প্রজেক্ট থেকে ওদের জন্ম হয়েছিল।

    কেমন হাস্যকর শোনাচ্ছে, একটু উপহাস করে বলল ক্রো।

    হয়তো। আমার দাদা ঐতিহ্য পছন্দ করতেন। তবে আমি আপনাকে এতটুকু বলতে পারি, এখানে পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত সবাই ছিল সেচ্ছাসেবী।

    কিন্তু সেটাকে নৈতিকভাবে নেয়া হয়েছিল? নাকি হিমালয়ে আপনারা আর কোন ইহুদি না পেয়ে অগত্যা…?

    ভ্রু কুঁচকালেন অ্যানা। তবে ওর কথায় থাকা খোঁচাটুকু গায়ে মাখলেন না। পাকাঁপোক্ত প্রক্রিয়া চললেও Sonnekonige-দের মধ্যে মহামারী লেগেই রইল। এদিকে সেই শুরুর দিকে থাকা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলো আবার দেখা দিতে শুরু করল দুই বছর পর। তবে এবারের মাত্রা একটু কম। কিন্তু আয়ু বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি কিছু লক্ষণ দেখা দিল। যেমন : মানসিক সমস্যা, তীক্ষ্ণ মানসিক বৈকল্য, অনুভূতি ও কাজের মধ্যে ভিন্নতা, অস্বাভাবিক আচরণ ইত্যাদি।

    মুখ খুলল লিসা। শেষের লক্ষণগুলো… অনেকটা মঠের সন্ন্যাসীদের সাথে মিলে যাচ্ছে।

    অ্যানা মাথা নাড়লেন। প্রতিক্রিয়ার বিষয়টা মাত্রা আর বয়সের ওপর নির্ভর করে। বাচ্চাদের প্রতিক্রিয়া ছিল অল্প, কারণ ওরা বেল-এর নিয়ন্ত্রিত কোয়ান্টাম রেডিয়েশনের ভেতরে ছিল। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা, যেমন আমি, পেইন্টার, আমরা অনিয়ন্ত্ৰতিতভাবে রেডিয়েশনের কবলে পড়েছি। যার ফলে আমাদের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ। আর সন্ন্যাসীরা একদম চুড়ান্ত মাত্রার রেডিয়েশনের কবলে পড়েছিল ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে।

    আর Sonnekonige? ক্রো প্রশ্ন করল।

    আমাদের মতো, ওদের রোগেরও কোনো চিকিৎসা ছিল না। এমনকি বেল যখন আমাদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছে তখন ওরা বেল-এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ওদের চিন্তাধারা ছিল–এই বেল-কে আর কোনো কাজ করতে দেয়া যাবে না। হোক সেটা ভাল কিংবা মন্দ। বেল বন্ধ করতে হবে।

    তাহলে ওরা যখন পাগল হয়ে গেল…? পুরো ক্যাসল জুড়ে সুপারম্যানদের তাণ্ডব কল্পনা করল ক্রো।

    তখন পরিস্থিতি আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মানুষকে নিয়ে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা তখন বন্ধ করা হয়।

    ক্রো বিস্ময় লুকোতে পারল না। তার মানে, আপনারা রিসার্চ বন্ধ করে দিলেন?

    না, আসলে তা নয়। মানুষ নিয়ে পরীক্ষা করতে যাওয়া অনেক ঝক্কির বিষয়। ফলাফল জানতে অনেক সময় লেগে যায়। অপচয় মনে হচ্ছিল ব্যাপারটা। আমরা নতুন মডেল পেলাম। ইঁদুরের পরিবর্তিত পেশি, কোষকে বাধা দেয়া ইত্যাদি। মানুষের জেনোম বের করে ডিএনএ পরীক্ষা করলেই আমরা দ্রুত ফল পেয়ে যাচ্ছিলাম। দ্রুত এগোচ্ছিলাম আমরা। মাঝে মাঝে তো মনে হয়, Sonnekonige প্রজেক্টটা আবার শুরু করলে আজকের দিনে হয়তো আগের চেয়ে ভাল ফল পাওয়া যেত।

    তাহলে আপনারা আবার চেষ্টা করলেন না কেন?

    শ্রাগ করে অ্যানা বললেন, আমাদের ইঁদুরগুলোতে এখনও পাগলামোর লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। এটাই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমরা কিন্তু মানুষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে গত দশ বছরে। নতুন জাতির অগ্রদূত হিসেবে নিজেদেরকে না ভেবে আমরা এখন পুরো মানবজাতির উৎকর্ষের স্বার্থে কাজ করতে চাই।

    তাহলে আপনারা বাইরে বেরিয়ে আসছেন না কেন? লিসা প্রশ্ন করল।

    বের হয়ে বিভিন্ন দেশের আইন-কানুন আর হাবড়াদের রাজনীতির খুঁটি হব? বিজ্ঞান কোনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। অত ন্যায়নীতি মেনে কাজ করতে গেলে আমাদের কাজের গতি কচ্ছপের স্তরে নেমে আসবে। ওটা হতে দেয়া চলবে না।

    নাক দিয়ে সজোরে নিঃশ্বাস ফেলল ক্রো। যদি এটা ঠেকানোর জন্য চেষ্টা করেছিল কিন্তু কাজ হয়নি। দেখা যাচ্ছে, নাৎসিদের সেই দর্শন এখনও এখানে আছে।

    sonnekonige-দের কী হলো? প্রশ্ন করল লিসা।

    খুব খারাপ। ওদের অনেকেই মানসিক অবস্থার অবনতির কারণে মারা গিয়েছিল। আবার অনেকজনকে দেয়া হয়েছিল যন্ত্রণাহীন মৃত্যু। তারপরও অনেকজন বেঁচে গিয়েছিল। কালাউস তাদের মধ্যে একজন, আপনারা তো তাকে দেখেছেন।

    বিশালদেহি গার্ডটির কথা মনে পড়ল ক্রোর। লোকটির ফ্যাকাসে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আর দুর্বল চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছিল তার কিছু একটা হয়েছে। গানরের দিকে তাকাল ক্রো। গানথারও তাকাল। ভাবলেশহীন চেহারা। এক চোখ নীল, আরেক চোখ ধবধবে সাদা। এ-ও একজন Sonnekonige।

    এখানে সর্বশেষ জন্ম নিয়েছিল গানথার।

    বিশালদেহি গানধারের দিকে নির্দেশ করে বললেন অ্যানা।

    ভ্রু কুঁচকালেও গানথার ঠিকই নিজের হাতার কাপড় সরিয়ে একটি কালো ট্যাটু বের করে দেখাল।

    Sonnekonige-দের চিহ্ন। বললেন অ্যানা। দায়িত্ব, গর্ব ও সফলতার প্রতীক।

    হাতা নামিয়ে ট্যাটু ঢেকে ফেলল গানথার।

    গতকাল রাতে একজন গার্ড গানথারকে উদ্দেশ্য করে কী যেন বলেছিল? মনে করার চেষ্টা করল পেইন্টার।

    Leprakonige

    অনুবাদ করছে কুষ্ঠরোগী হয়। না, শব্দটা তাহলে কুষ্ঠরাজা হবে। রাজা সুর্যের বীরকে ব্যঙ্গ করে হলেও সম্মান দিয়েছিল গার্ডটি। গানথার এই প্রজাতির শেষ মানুষ। ধীরে ধীরে বিলুপ্তের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ওর জন্য শোকপ্রকাশ করবে কে?

    লিসা আর পেইন্টারের দিকে চোখ ফেরানোর আগে কয়েক মুহূর্ত গানথারের দিকে তাকিয়ে রইলেন অ্যানা।

    হয়তো শোকপ্রকাশ করার জন্য একজন থাকবে।

    লিসা মুখ খুলল। এখনও পেইন্টারের হাত ধরে রেখেছে। একটা জিনিস পরিষ্কার করে বলুন তো… দ্য বেল… কীভাবে এরকম পরিবর্তন আনল? আপনি বলেছিলেন তারা এলোমেলোভাবে হলেও এরকম রূপান্তর বারবার করতে চাচ্ছিলেন।

    মাথা নাড়লেন অ্যানা। হ্যাঁ। শুধু বেল-এর প্রভাব-এর ওপরেই আমাদের গবেষণা থেমে থাকেনি। এটা কীভাবে হয় সেটা নিয়েও আমাদের পর্যবেক্ষণ চলছিল।

    কতদূর এগোতে পেরেছিলেন? প্রশ্ন করল পেইন্টার।

    এটা কীভাবে কাজ করে সে-সম্পর্কে আমরা প্রাথমিকজ্ঞান লাভ করতে পেরেছিলাম।

    তাই? বিস্ময়ে চোখ পিট পিট করল ক্রো।

    অ্যানার ভ্রু-তে ভাজ পড়ল। হ্যাঁ, কেন নয়? সেটাই তো স্বাভাবিক। পেইন্টার আর লিসা দুজনের দিকে চোখ ঘুরিয়ে আনলেন। বেল বিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করে।

    .

    সকাল ৭টা ৩৫ মিনিট।
    লুহুলুই-আমফলোজি গেম প্রিজার্ভ।

    কে ওখানে? খামিশি আবার হাঁক ছাড়ল। ও দরজার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। কেউ একজন ঢুকে বেডরুমের পেছনের অংশে গিয়ে ঘাপটি মেরে আছে।

    কিংবা সেটা মানুষ না হয়ে কোনো প্রাণীও হতে পারে।

    এদিককার বাসা-বাড়িতে প্রায়ই বানর ঢুকে পড়ে, মাঝে মাঝে অন্য বড় প্রাণীও ঢোকে।

    খামিশি এখনও ভেতরে ঢুকতে নারাজ। ভেতরে দেখার চেষ্টা করল ও, কিন্তু পর্দার কারণে কিছুই দেখতে পেল না। সূর্যের আলোর ভেতর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে এসে এখন ঘরের হালকা অন্ধকারে চোখ কাজ করছে না।

    দরজার কাছে থেকেই লাইট জ্বালানোর জন্য সুইচের দিকে হাত বাড়াল খামিশি। আঙুল দিয়ে হাতড়ে সুইচ পেতেই লাইট জ্বালিয়ে দিল। রুম ও রান্নাঘরের কিছু অংশ আলোকিত করে দিল একটি লাইট। তবে সেই আলোতে অনাহুত ব্যক্তিটিকে দেখা গেল না।

    তবে রুমের পেছন দিক থেকে একটা হাতাহাতির মতো আওয়াজ এলো।

    কে…?

    একটা তীক্ষ্ণ কিছু ওর গলায় বিধে যাওয়ায় আর হাঁক ছাড়া হলো না। হতভম্ব হয়ে রুমের ভেতরে ঢুকল ও। আক্রান্তস্থানে হাত দিয়ে দেখল কিছু একটার পালক ওর গলায় বিঁধেছে। গলা থেকে পুরোটা বের করল খামিশি। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাকিয়ে দেখল…

    ডার্ট।

    এরকম জিনিস সে বড় জম্ভ জানোয়ারকে কাবু করতে ব্যবহার করেছে অনেকবার।

    কিন্তু এটা একটু আলাদা।

    ডার্ট ওর হাত থেকে পড়ে গেল।

    বিষ ওর মগজে পৌঁছে গেছে। এক দিকে কাত হয়ে গেল পুরো পৃথিবী। খামিশি ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করল কিন্তু… পারল না।

    কাঠের মেঝে ছুটে এলো ওর দিকে।

    নিজেকে একটু সামলে নিতে পারলেও মাথা ঠিকই মেঝেতে সজোরে ঠুকে গেল। চোখের সামনে লাল-নীল-হলুদ আলোর ফুটকি দেখতে পেল খামিশি। মাথা বো বো করছে। ওই অবস্থায় থেকে ও দেখতে পেল মেঝেতে একটা রশি পড়ে আছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখল ওটা রশি নয়।

    সাপ। দশ ফুট লম্বা।

    দেখেই চিনতে পারল।

    ব্ল্যাক মাম্বা।

    তবে সাপটি মৃত, কেটে দুভাগ করে ফেলা হয়েছে। একটা ম্যাচেটি (কুড়ালের মতো অস্ত্র) পড়ে রয়েছে কাছেই। ওর ম্যাচেটি।

    শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসতেই আসল ঘটনা বুঝতে পারল ও।

    ডার্টে বিষ মাখানো ছিল।

    কিন্তু ও যেরকম ডার্ট ব্যবহার করে এটা ওরকম নয়। এই ডার্টে দুটো সূচ আছে। সাপের বিষদাঁতের মতো।

    মরা সাপের দিকে তাকাল খামিশি।

    সাজানো নাটক।

    সাপের কামড়ে মৃত্যু।

    পেছনের বেডরুমের মেঝে শব্দ করে উঠল। নিজের মাথাটা ঘোরানোর মতো শক্তি থাকায় দেখতে পেল, একটা কালো অবয়ব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে ভাল করে দেখে নিচ্ছে সে। চেহারায় কোনো অভিব্যক্তি নেই।

    না।

    এর কোনো মানেই হয় না।

    কেন?

    খামিশির কাছে কোনো জবাব নেই।

    অন্ধকার ওর ওপর নেমে এসে দূরে নিয়ে গেল।

    দূরে… বহুদূরে…

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleহ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন (১) – জে. কে. রাওলিং
    Next Article জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ১ (অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন)
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.