Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ভালোবাসা কারে কয় – অভিজিৎ রায়

    লেখক এক পাতা গল্প426 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩. সংস্কৃতির ‘ভূত’

    আগেই বলেছি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান সমাজ এবং সংস্কৃতির অনেক কিছু খুব পরিষ্কার এবং বোধগম্যভাবে ব্যাখ্যা করলেও এর অনেক উপসংহার এবং অনুসিদ্ধান্ত এতই বিপ্লবাত্মক যে এটি অবগাহন করা সবার জন্য খুব সহজ হয়নি, এখনও হচ্ছে না। এর অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে একটা কারণ আমাদের মধ্যেকার জমে থাকা দীর্ঘদিনের সংস্কার।

    তবে ওটাই একমাত্র কারণ নয়। বিতর্কের মুল কারণ খুঁজলে দেখা যাবে, বিতর্কটা যতটা না সংস্কারের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত

    অনুকল্প আর এর থেকে পাওয়া বিভিন্ন অনুসিদ্ধান্তের কারণে।

    মূল বিতর্কটা নিঃসন্দেহে মানব মনের স্বরূপ নিয়ে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা রঙ্গমঞ্চে হাজির হবার আগে সার্বজনীন মানবপ্রকৃতি’ বলে কিছু আছে কি না সেটাই ঠিকমত আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। যেমন, স্প্যানিশ লিবারেল দার্শনিক হোসে ওর্তেগাগ্যাসেট মানবপ্রকৃতির অস্তিত্ব অস্বীকার করে বলতেন, “মানুষের কোনো প্রকৃতি নেই, যা আছে তা হলো ইতিহাস। ব্রিটিশ-আমেরিকান নৃতত্ত্ববিদ অ্যাশলে মন্টেগু বলতেন, “মানুষের সহজাত স্পৃহা (instinct) বলে কিছু নেই; কারণ তার সব কিছুই তার চারপাশের সমাজ-সংস্কৃতি থেকেই শেখা। কেউ বা আবার মানবপ্রকৃতিকে স্বীকার করে নিলেও তাকে একেবারেই কাঁচামালের মতো আদিম মনে করতেন। যেমন প্রখ্যাত নৃতাত্ত্বিক মার্গারেট মীড বলতেন, ‘মানবপ্রকৃতি হচ্ছে অশোধিত, সবচেয়ে ম্যাড়মেড়ে কাঁচামাল[৫৫]।

    বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা এসে মানবপ্রকৃতি নিয়ে এই প্রচলিত ছকটিকেই উলটে দিয়েছেন। ব্যাপারটা একটু খোলাসা করা যাক। একজন শৈলচিকিৎসক যখন হাসপাতালে অপারেশনের জন্য আসা কোনো রোগীর পেটের ভিতর ছুরি চালাবেন বলে ঠিক করেন তখন তিনি জানেন যে, পেট কাটলে এর ভিতরে কী পাওয়া যাবে। পাকস্থলি, বৃহদান্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি। পাকস্থলির জায়গায় পাকস্থলি থাকে, আর অগ্ন্যাশয়ের জায়গায় অগ্ন্যাশয়। অন্য রোগীর ক্ষেত্রেও পেট কেটে চিকিৎসক পাকস্থলির জায়গায় পাকস্থলি দেখবার প্রত্যাশাই করেন। এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন রোগীর পাকস্থলিতে পার্থক্য থাকতে পারে কারোটা মোটা, কারোটা চিকন, কারোটা দেখলেই হয়তো বোঝা যাবে ব্যাটা আমাশয় রোগী, কারোটা আবার স্বাস্থ্যকর। বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য যাই থাকুক না কেন, মানুষের পাকস্থলি দেখে কারো গরুর কিংবা ঘোড়ার পাকস্থলি বলে ভুল হবে না। কারণ মানুষের পাকস্থলির একটা প্রকৃতি আছে, যেটা গরুর পাকস্থলি থেকে আলাদা। আমি অবশ্য গরুর পাকস্থলি বিশেষজ্ঞ নই, যিনি বিশেষজ্ঞ যেমন পলাশি বাজারের সলিমুল্লাহ কসাই তিনি খুব ভালো করেই আমাদের দেখিয়ে দিতে পারবেন গরুর পাকস্থলি কেমন হয়, খাসিরটা কেমন, ভেড়ারটা কেমন আর মুরগিরটা কেমন। ঠাটারিবাজারের নিত্যানন্দ কসাই হলে তার লিস্টে শুয়োরের পাকস্থলিও চলে আসতে পারে। সলিমুল্লা কিংবা নিত্যানন্দ কসাইয়ের অভিজ্ঞ চোখকে খাসির পাকস্থলির নামে শুয়োরের পাকস্থলি বলে চালানোর চেষ্টা করে ধোঁকা দেয়া যাবে না। কারণ তারা জানেন, খাসির পাকস্থলির প্রকৃতি শুয়োরেরটা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একই কথা মানুষের পাকস্থলির জন্যও প্রযোজ্য। একথাবলা ভুল হবে না যে, মানুষের পাকস্থলির প্রকৃতিই অন্যপ্রাণীর পাকস্থলি থেকে তাকে আলাদা করে দিচ্ছে।

    বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, পেটের ভিতরে পাকস্থলির যেমন একটা প্রকৃতি আছে, তেমনি মানুষের মনেরও আলাদা একটা প্রকৃতি আছে যেটা অন্য প্রাণী থেকে আলাদা। উদাহরণ দেয়া যাক। মানুষের খুব কাছাকাছি প্রজাতি শিম্পাঞ্জি। শিম্পাঞ্জির সাথে মানুষের জিনগত মিল শতকরা ৯৯ ভাগ। কাজেই ধরে নেওয়া যায় শিম্পাঞ্জির সাথে মানুষের অনেক কিছুতেই মিল থাকবে। কিন্তু যতই মিল থাকুক না কেন সার্বজনীনভাবে মানবপ্রকৃতি শিম্পাঞ্জির প্রকৃতি থেকে আলাদা হবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি, অনেকটা উপরের উদাহরণের পাকস্থলির প্রকৃতির মতোই। কিছু উদাহরণ হাজির করি। শিম্পাঞ্জি সমাজে মেয়ে শিম্পাঞ্জিরা বহুগামী হয়— তারা যত ইচ্ছা ছেলেদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের আসলেই কোনো বাছবিচার নেই। পুরুষ শিম্পাঞ্জিরা আবার অন্য মেয়ে শিম্পাঞ্জি (যাদের সাথে এখনও দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় নাই) তাদের বাচ্চাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলে। এ ধরনের কোনো প্যাটার্ন আমাদের মানবসমাজে চোখে পড়ে না। চোখে না পড়াই স্বাভাবিক, কারণ মানুষের প্রকৃতি শিম্পাঞ্জিদের প্রকৃতি থেকে আলাদা।

    বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীদের কথামত আমরা জানলাম ‘মানবপ্রকৃতি’ বলে একটা কিছু তাহলে আছে, যেটা অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা। কিন্তু কেমন সে প্রকৃতি? সমাজবিজ্ঞানী কিংবা নৃতাত্ত্বিকরা অনেকদিন ধরেই এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। তারা বলেন এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে মানবসমাজের সংস্কৃতিতে। সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা এমিল ডুর্খাইম কোনো সার্বজনীন মানবপ্রকৃতির জন্মগত প্রকরণকে অস্বীকার করে তাকে ব্ল্যাঙ্ক স্লেটের সাথে তুলনা করেছিলেন। তার মতে সাংস্কৃতিক বিভাজনই মানবপ্রকৃতিকে তুলে ধরার একমাত্র নিয়ামক। কাজেই মানবপ্রকৃতি বিষয়ে যে প্রশ্নই করা হোক না কেন–এর উত্তর আমাদের খুঁজে নিতে হবে সংস্কৃতিতে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি সহিংস কেন–এর উত্তর হলো সংস্কৃতিই এর কারণ। ছেলেরা কেন সত্তুর বছরের বুড়ির চাইতে বিশ বছরের ছুঁড়ির প্রতি বেশি লালায়িত হয় এর উত্তর হচ্ছে সংস্কৃতি। ছেলেরা কেন মেয়েদের চেয়ে বেশি পর্নোগ্রাফি দেখে, কিংবা বহুগামী উত্তর একটাই–সংস্কৃতি’! ওম সংস্কৃতায়ঃ নমো! Omnia cultura ex cultural

    সমাজবিজ্ঞানের পুরোধা এমিল ডুর্খাইম যে ইটের গাথুনি দিয়ে গিয়েছিলেন তাতে ‘সংস্কৃতির প্রাসাদ’ বানাতে এবারে এগিয়ে এলেন নৃতাত্ত্বিকেরা। নৃতত্ত্ববিদের জনক বলে যাকে অভিহিত করা হয় সেই ফ্রানজ বোয়া এবং মার্গারেট মীড ছিলেন এদের মূল কান্ডারি। ফ্রানজ বোয়া যে মতবাদ প্রচার করলেন তাতে সকলের মনে হলো, মানুষের প্রকৃতি বুঝি একেবারেই নমনীয়। এতে জন্মগত কোনো বৈশিষ্ট্যের কোনো ছাপ নেই, কোনোদিন ছিলও না। সব কিছুই সংস্কৃতিনির্ভর। আর বোয়ার প্রিয় ছাত্রী “নৃতত্ত্বের রানি’ মার্গারেট মীড আদিম ‘স্যামোয়া’ জাতির মেয়েদের নিয়ে এমন এক আদর্শিক সমাজ কল্পনা করে ফেললেন, যার বাস্তব অস্তিত্ব আসলে পৃথিবীর কোথাওই নেই। মীডের ‘স্যামোয়া’ যেন আক্ষরিক অর্থেই হচ্ছে স্বর্গের প্রতিরূপ। সেখানে কারো মধ্যে নেই কোনো ঝগড়া, নেই কোনো ঘৃণা, ঈর্ষা কিংবা হিংসা। যৌনতার ক্ষেত্রে তাদের আচরণ একেবারে স্বতঃস্ফুর্ত। সেখানকার মেয়েরা বহুগামী, যৌনতার ব্যাপারে পুরোপুরি স্বাধীন যখন ইচ্ছে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রিয় মানুষের সাথে সম্পর্ক করে নিতে পারে। তারা স্বাধীনভাবে যেটা চায় সেটা করতে পারে। মীডের অনুকল্প ছিল, স্যামোয়া জাতির সংস্কৃতিই তাদের মেয়েদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত আর স্বাধীন করে তুলেছে। তিনি সেসময় ফাপুয়া (Fa’apua’a) এবং ফোফোয়া (Fofoa) নামের দুজন স্যামোয়ান নারীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য তার গবেষণায় ব্যবহার করেন। তাদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে মীড সিদ্ধান্তে আসেন, বংশগতি নয় বরং সংস্কৃতিই ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে। মার্গারেট মীড তার চিন্তাধারা ব্যক্ত করে ১৯২৮ সালে ‘Coming of Age in Samoa নামের যে গ্রন্থ রচনা করেন সেটি ‘সংস্কৃতিভিত্তিক প্রাসাদের এক অগ্রগণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়[৫৬]। কিন্তু পরবর্তীতে ডেরেক ফ্রিম্যানসহ অন্যান্য গবেষকদের গবেষণায় প্রমানিত হয় যে, মীডের অনুকল্পগুলো স্রেফ উইশফুল থিংকিং ছাড়া আর কিছু ছিল না। [৫৭,৫৮] গবেষকেরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, মীডের গবেষণা ছিল একেবারেই সরল এবং মীড স্যামোয়ান মেয়েদের দ্বারা নিদারুণভাবে প্রতারিত হয়েছিলেন। ফ্রিম্যানের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এল, স্যামোয়ান জাতির মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, ঘৃণা, হত্যা লুণ্ঠন আর দশটা জাতির মতোই প্রবলভাবে বিদ্যমান, সরলমনা মীড সেগুলো দেখতেই পাননি। ডেরেক ফ্রিম্যানের অনুমান এবং অভিযোগের একেবারে সরাসরি সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় মীডের গবেষণা প্রকাশের ষাট বছর পর। ১৯৮৮ সালের মে মাসে ফাপুয়া (Fa’apua’a), যখন তার বয়স ৮৬ বছর অফিশিয়ালি স্যামোয়ান সরকারের কাছে স্বীকার করে নেন যে, তিনি আর তার বন্ধু ফোফোয়া স্যামোয়ান নারীদের যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ে যে তথ্য মীডকে ১৯২৬ সালে দিয়েছিলেন তার সবটুকুই ছিল বানোয়াট। এ কমপ্লিট হোক্স।

    চিত্র। পেজ ৬২

    চিত্র :দুটি বহুল আলোচিত বই :বাম পাশে মার্গারেট মীডের কামিং অফ এজ ইন সামোয়া (১৯২৬), আর ডানে ডেরেক ফ্রিম্যানের দ্য ফেটফুল হোক্সিং অব মার্গারেট মীড (১৯৯৯)।

    সেজন্যই ম্যাট রীডলী তার ‘এজাইল জিন’ বইয়ে মীডের গবেষণা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেন[৫৯], “তার মানবপ্রকৃতির সাংস্কৃতিক ভিন্নতা খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা অনেকটা এমন কুকুর খুঁজে পাওয়ার মতোই যে কুকুর ঘেউ ঘেউ না করে মিউ মিউ করে।

    মার্গারেট মীডের মতোই শান্তিপূর্ণ এক জাতির সন্ধান করতে গিয়ে সত্তুরের দশকে লেজে গোবরে করেছেন ম্যানুয়েল এলিজাল্ডে জুনিয়র (Manuel Elizalde Jr)। তিনি দেখাতে গিয়েছিলেন ঢালাওভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে সহিংসতা, যুদ্ধবাজির কথা ঢালাওভাবে উল্লেখ করা থাকলেও ফিলিপাইনের এক জঙ্গলে টেসাডে (Tasaday) নামে এমন এক ট্রাইব আছে যারা নাকি আক্ষরিক অর্থেই এখনও সেই আদিম প্রস্তর যুগে বাস করছে। তারা ছাল বাকল পড়ে ঘুরে বেড়ায়, গুহায় বসবাস করে আর তারা নাকি এমনই শান্তিপ্রিয় যে তাদের ভাষাতে সহিংসতা, আগ্রাসন কিংবা সংঘর্ষসূচক কোনো শব্দই নেই। তাদের সংস্কৃতি একেবারে শান্তিতে শান্তিময়। এই মহা ব্যতিক্রমী শান্তিপূর্ণ মানবপ্রজাতি নিয়ে ১৯৭৫ সালে একটি বইও বের হয়েছিল ‘শান্ত টেসাডে’ নামে[৬০]।

    চিত্র। পেজ ৬৩

    চিত্রঃ মার্কোস সরকারের পরিকল্পনায় সভ্য মানুষকে অর্ধনগ্ন করে ছাল বাকল পড়িয়ে শান্তিপূর্ণ টেসাডের মিথ সুপরিকল্পিত ভাবে তৈরি করা হয়।

    কিন্তু থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে সময় লাগেনি। আশির দশকের শেষদিকে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এল যে ম্যানুয়েল এলিজাল্ডের আগেকার কাজকর্ম আসলে ছিল পুরোটাই সাজানো[৬১]। আশে পাশের গ্রাম থেকে জিন্স আর টিশার্ট পরা সুশিক্ষিত ছেলেপিলেদের ছাল বাকল পরিয়ে ‘শান্ত টেসাডে’ সাজানো হয়েছিল। টেসাডের শান্তিময় ধরনের কোনো ট্রাইবই আসলে ফিলিপাইনে নেই, ছিলও না কখনোই। সত্তুরের দশকে ফিলিপাইনের একনায়ক ক্ষমতাশীন মার্কোস সরকারের পরিকল্পনায় ম্যানুয়েল এলিজাল্ডের কুকর্মে ইন্ধন যোগানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল ‘শান্ত টেসাডে’কে পুঁজি করে বহির্বিশ্বে ফিলিপাইনের ইমেজ বাড়ানো।

    আসলে সংস্কৃতির বিভাজনের কথা ঢালাওভাবে সাহিত্য, সংস্কৃতিতে আর নৃতত্ত্বে উল্লিখিত হয় বটে, কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় এই বিভাজন মোটেই বস্তুনিষ্ঠতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয় না। ব্যাপারটা নৃতত্ত্ববিদ আর সমাজবিদদের জন্য এক নিদারূন লজ্জার ব্যাপার। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, সংস্কৃতির যত বিভাজনই থাকুক না কেন, প্রত্যেক সংস্কৃতিতেই দেখা যায়, মানুষেরা অনেকটা একইভাবে রাগ অনুরাগ, হিংসা, ক্রোধ প্রকাশ করে থাকে। পশ্চিমা বিশ্বের আলো ঝলমলে তথাকথিত আধুনিক সভ্যতা থেকে শুরু করে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যত গহীন অরণ্যের যত নাম না জানা গোত্রের মধ্যেই অনুসন্ধান করা হোক না কেন দেখা যাবে নাচ, গান, ছবি আঁকার ব্যাপারগুলো সব সংস্কৃতিতেই কম বেশি বিদ্যমান। কেউ হয়তো গুহার পাথরে হরিণ শিকারের ছবি আঁকছে, কেউ পাথরে খোদাই করে মূর্তি বানাচ্ছে, কেউ নদীর ধারে বসে পাল তোলা নৌকাকে ক্যানভাসে উঠিয়ে আনছে, কেউবা আবার মাটির পটে গড়ে তুলছে অনবদ্য শিল্পকর্ম। সংস্কৃতির বিবিধ উপাদান যোগ হবার কারণে ব্যক্তি কিংবা সংস্কৃতিভেদে চিত্রকল্পের প্রকাশ ভঙ্গিতে হয়তো পার্থক্য আছে কিন্তু চিত্র প্রকাশের বিমূর্ত স্পৃহাটি সেই একই রকম থেকে যাচ্ছে। শুধু ছবি আঁকা নয়, নাচ-গানের ক্ষেত্রেও আমরা তাই দেখব। এক দেশে কেউ একতারা হাতে বাউল গান গেয়ে চলছে তো আরেকজন অন্য দেশে নিবিষ্ট মনে পিয়ানো বাজিয়ে চলছে। কেউবা চোখ মুদে সেতার বাজাচ্ছে তো কেউবা গিটার কিংবা কেউ সন্তুর। যে একেবারেই আলসে সে হয়তো পড়াশুনা করার টেবিলকেই ঢোল বানিয়ে তাল ঠুকছে রবীন্দ্র সংগীতের সাথে। এক সংস্কৃতিতে কেউ হয়তো ডিস্কো নাচ নাচছে, অন্য জায়গায় সেরকমই একজন কেউ ভরত নাট্যম, আরেক জায়গায় কেউ ল্যাটিন ফিউশন, কেউবা কোনো অচেনা ট্রাইবাল ড্যান্স। নাচের রকমফেরে কিংবা মুদ্রায় পার্থক্য থাকলেও সংস্কৃতি নির্বিশেষে নাচ-গানের অদম্য স্পাহাটি কিন্তু এক সার্বজনীন মানবপ্রকৃতিকেই উর্ধ্বে তুলে ধরছে। যুদ্ধের এবং যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারটিও অনেকটা তাই কম হোক বেশি হোক প্রতিটি সংস্কৃতিতেই যুদ্ধের উপাদান কম বেশি আছে। কেউ বা যুদ্ধ করেছে লাঠি-সোটা দিয়ে, কেউ বা বল্লম দিয়ে, কেউ বা তীর ধনুক দিয়ে কিংবা কেউ বুমেরাং ব্যবহার করে, কেউবা। কামান বন্দুক ব্যবহার করে, কেউবা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়ে। আদিম গুহাচিত্রগুলোতেও দেখা যায় তীক্ষ্ণ সেসব অস্ত্র ব্যবহার করে আমাদের পূর্বপুরুষেরা পশু শিকার করেছে, কখনো বা হানাহানি মারামারি করেছে নিজেদের মধ্যেই। কাজেই কেউ যদি হঠাৎ এসে দাবি করে কোনো এক দেশের বিচিত্র সংস্কৃতিতে মানুষ এতোই শান্তিপ্রিয় যে তাদের ভাষাতে কিংবা সংস্কৃতিতে সহিংসতা, আগ্রাসন কিংবা সংঘর্ষসূচক কোনো শব্দই নেই, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা সার্বজনীনতার বিরুদ্ধে যাবে। কিন্তু সেরকম কিছু আদৌ পাওয়া যায়নি। বরং যারা বিভিন্ন সময়ে সেরকম এক্সোটিক কিছু দাবি করেছিলেন, তাদের দাবিই শেষ পর্যন্ত মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। উপরের শান্তিময় টেসাড়ে কিংবা স্যামোয়ার উদাহরণগুলো কিন্তু তারই প্রমাণ। এই ব্যাপারটির তাৎপর্য উপলব্ধি করেই ডোনাল্ড ব্রাউন তার ‘Human Universals’ গ্রন্থে বলেছেন[৬২]—‘It is the human universals not the differences that are truly intriguing’

    বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সংস্কৃতি ব্যাপারটা মানবসমাজের অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হলেও এটি কোনো গায়েবি পথে নয়, বরং অন্য সব কিছুর মতো জৈব বিবর্তনের পথ ধরেই উদ্ভূত হয়েছে (evolved biologically)[৬৩]। আমরা উপরে যে নাচ, গান, ছবি আঁকা, যুদ্ধসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছি (যেগুলো মানব সভ্যতার যে কোনো সংস্কৃতিতেই খুঁজে পাওয়া যাবে ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তিতে), সেরকম অন্তত ৪০০টি বৈশিষ্ট্য স্টিভেন পিঙ্কার লিপিবদ্ধ করেছেন তার ব্ল্যাঙ্ক স্লেট বইয়ের পরিশিষ্টে[৬৪]। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন এগুলো সবগুলোই অভিন্ন মানবপ্রকৃতির দিকেই ইঙ্গিত করে। বাহ্যিকভাবে যত পার্থক্যই আমরা দেখি না কেন, আসলে আমরা মানুষেরা এক অভিন্ন সংস্কৃতির অংশ। কারণ, আমাদের দেহ কাঠামোর মতো সংস্কৃতিও মোটা দাগে মানব বিবর্তনের অভিযোজনগত ফসল। ঠিক যেমন আমাদের হাত পা কিংবা অগ্ন্যাশয় তৈরি হয়েছে বংশাণু বা জিনের নিয়ন্ত্রণে, ঠিক তেমনি মানবসংস্কৃতিও তৈরি হয়েছে বংশাণুর দ্বারাই (বংশাণুর দ্বারা বলা হচ্ছে কারণ, দীর্ঘকালের বিবর্তনীয় প্রক্রিয়াতেই তৈরি হয়েছে মানব বংশাণু যা আবার মস্তিষ্কের গঠনের অবিচ্ছেদ্য নিয়ামক, আর সংস্কৃতি হচ্ছে সেই মানব মস্তিষ্কেরই সম্মিলিত অভিব্যক্তি)।

    বাঘের যেমন নখর বিশিষ্ট থাবা আছে, ক্যাঙ্গারুর পেটে আছে থলি, ঠিক তেমনি মেরুভল্লুকের গায়ে আছে পুরু পশম। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন স্ব-স্ব প্রজাতির ক্ষেত্রে অনন্য বৈশিষ্টের দিকে নির্দেশ করে; ঠিক তেমনি মানবসমাজের জন্য অনন্য বৈশিষ্টের নিয়ামক হয়ে আছে মানবসংস্কৃতি। বাঘে বাঘে নখরের আকার আকৃতিতে পার্থক্য থাকলেও সেটা যেমন শেষ পর্যন্ত বাঘের নখরই, ঠিক তেমনি সংস্কৃতিতে কিছু বাহ্যিক ছোটখাট ভেদাভেদ থাকলেও সেটা শেষ পর্যন্ত অভিন্ন মানব সংস্কৃতিই। হ্যাঁ, শতধা বিভক্তি সত্ত্বেও মানব কালচারগুলো আসলে সম্মিলিতভাবে সার্বজনীন সংস্কৃতি বা কালচারাল ইউনিভার্সাল (Cultural Universal)-কেই উর্ধ্বে তুলে ধরে, অন্তত বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের তাই অভিমত।

    ২০১০ সালের আগস্ট মাসে মুক্তমনা ব্লগে যখন আমার লেখাটা ‘সংস্কৃতির ভূত’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল, ঠিক একই সময় ড. নৃপেন্দ্র সরকারও একটি চমৎকার লেখা লিখেছিলেন–বিবর্তনের চোখে চোখের জল শিরোনামে। সেখানে তিনি ব্যথা বেদনা আর চোখের জলের বিবর্তনীয় উৎস খুঁজতে সচেষ্ট হপ্যেছিলেন[৬৫]। লেখায় সংস্কৃতিভেদে কান্নার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, প্রিয়জনের মৃত্যুতে কান্নাকাটিতে হিন্দুদের জুড়ি নেই। কান্না চলবে দিনের পর দিন। কোনো কোনো হিন্দু সমাজে এই কান্না এক মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা হয়। মাস শেষে শ্রাদ্ধ করে অফিসিয়ালি কান্নার ইতি দেওয়া হয়। হিন্দু কান্না এখানেও শেষ হয় না। গয়াতে পিণ্ড দেওয়ার সময় একবার। কাশীতেও একবার। সেই পিণ্ডদান একবছর পরেই হোক আর বার বছর পরেই হোক। বুক ভাঙবে, চোখে বৃষ্টির ধারা বইবে। কিন্তু ড. সরকার তার লেখাটিতে তিব্বতীদের মধ্যে এক গোত্রের উল্লেখ করেছিলেন যারা প্রিয়জনের মৃত্যুতে কাঁদে না, দেবতা রুষ্ট হবে এই ভয়ে। তারা নাকি চোখের জল শুকিয়ে ফেলে। অনেকের মনে হতে পারে, তিব্বতীদের এই ব্যাপারটা (যদি না ব্যাপারটা মার্গারেট মীড কিংবা ম্যানুয়েল এলিজাল্ডে জুনিয়রের মতো হোক্স কিছু হয়) সার্বজনীন সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আসলে কিন্তু তা নয়। তারাও আমার আপনার মতো স্বজন হারার দুঃখে ব্যথিত হয়। হয়তো কল্পিত দেবতার শাস্তির ভয়ে প্রকাশ করে না, কিন্তু ব্যথা অনুভবের ব্যাপারটা থেকেই যায়। আমি লেখাটি মুক্তমনায় দেওয়ার পর ‘আবেগ বিশ্বজনীন, কিন্তু প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে’ বলে সেটাই স্পষ্ট করেছেন মুক্তমনা ব্লগার জওশন আরা তার একটি মন্তব্যে[৬৬]–

    আমাদের স্বাতন্ত্র্য পরিমাপ করি, পারিপার্শ্বিকতার সাপেক্ষে আমরা কতটুকু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করি, কাজ করি, সেইটুকু বিচার করে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা ‘ইউনিভার্সাল হিউম্যান কালচারের’ বাইরে যাই না। কেবল বহুল প্রচলিতর চেয়ে ভিন্ন পন্থা অনুসরণ করি। স্বজন হারানোয় কে চল্লিশ দিন কাঁদল আর কে চোখ শুষ্ক করে রেখেছিল, সেগুলো কেবল মাত্র মানদণ্ড থেকে ভিন্নতার উদাহরণ। ভিত্তিভূমি হলো, স্বজন হারানোতে বিচ্ছেদ ব্যথা বা কষ্ট অনুভব করা। এইখানেই সার্বজনীনতা।

    মানব সংস্কৃতি কোনো উদ্ভট কিংবা বিচিত্র সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন সমাবেশের জোড়াতালি দেয়া ফসল নয়, বরং, জৈবিক পথেই উদ্ভূত একটি অভিন্ন এবং সার্বজনীন মানব উপাদানের অংশ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিশ্বাসের ভাইরাস – অভিজিৎ রায়
    Next Article অবিশ্বাসের দর্শন – অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীর

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }