Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ভালোবাসা চিরকালীন – আশাপূর্ণা দেবী

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প813 Mins Read0

    ১৬. ফিরে আসার সময়

    ফিরে আসার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা ওকে বৌমা বল কেন? বা তবে কি বলব, ডালিমের সাথেতো ওর একদিন বিয়ে হয়েছিল। আমি আর কোন কথা বলি না। ফিরে এলাম বাড়ীতে।

    এবার বল প্রান্তিক ভাই, আমি কি করব? চাচী যা দিয়েছেন ইচ্ছে করলে তুমি তা এক এক করে খুলে নিতে পার আমার অঙ্গ থেকে। বললাম ভালবাসার দান খুলতে নেই সেলিনা। মিথ্যে জেনেও? উনিতো মিথ্যে জানেন না। সেলিনা বলল কিন্তু তুমি?

    আমি বললাম রাত বুঝি শেষ হয়ে আসছে এবার ঘুমাও। তুমি ঘুমাবেনা? হ্যাঁ ঘুমাবো, আগে তুমি ঘুমোও। তবে তুমিও এস। ও আমাকে হাত ধরে নিয়ে এল বিছানায়, তারপর মনোয়ারা বেগমের সাজানো বিছানায় আমাকে শুইয়ে দিয়ে বলল, সত্যি কি ঘুম পাচ্ছে? কি বললে সুখী হবে তুমি? যদি আমাকে তুমি তোমার ঘুম পাড়ানোর গানের অধিকার দাও। তবে তাই দিলাম।

    তাই বলে সেলিনার গানের প্রয়োজন হয়নি মাথায় হাত ছোঁয়াতেই ঘুমিয়ে গেলাম। পাশে ও ছিল কিনা জানিনা। কে যেন দরজায় মৃদু আঘাত করছে। চোখ মেলে দেখি সেলিনা নির্বিঘ্নে ঘুমাচ্ছে নীচের খালি মেঝেয়। আমি ওকে আস্তে কানে কানে ডাকলাম। চাচী মনে হয় ডাকছেন। ও ধড়মড় করে উঠে পড়ল। তারপর নিজের পোষাকের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতে ইচ্ছে করে শাড়ীর বিভিন্ন অংশ কুঁচকে দিল। এগিয়ে এসে আমার জামাটা এলো মেলো করে ভাজ ফেলে দিল। সিঁথির সিঁদুর দিল লেপটে। তারপর বিছানার চাদর দলমচা করে আবার তাকে স্বাবাবিক করে রাখল। খোঁপাটা খুলে গেছে কখন যেন। এমনি ভাবে ইচ্ছে করে খুলে দিয়ে এলোমেলো করে হাই তুলে দরজার কাছে গিয়ে বলল কে? আমি চাচী, দরজা খোল মা? সেলিনা দরজা খুলেতেই এক পলক তাকিয়ে মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে বলল নাস্তা হয়েছে। তোমার চাচা ও আকবর বসে আছে, সেলিনা বলল, ওনাদের খেয়ে নিতে বল চাচী। আমার একটু দেরি হবে। স্নান না করে কিছু খেতে পারবনা।

    দরজাটা বন্ধ করে কাছে এসে দাঁড়ালো ও। তখনো বুকের খাঁজের এক পাশ রয়েছে শাড়ীর ভাঁজে, কোমরে আধ খোলা শাড়ী গোজা। চুল নিজের হাতে করা এলোমেলো। পলকহীন তাকিয়ে আছি ওর দিকে। হঠাৎ নিজের দিকে তাকিয়ে শাড়ীর আঁচলটা পরিপাটি করে তুলে দিল কাঁধের উপরে। লজ্জায় আনত হয়ে বলল কি দেখছো অমন করে? তোমাকে, কি বিচিত্র তোমার রূপ। আমি অবাক হয়ে ভাবছি আমার ভালবাসা কি তোমাতেই পাবে তার ঠিকানা? দুষ্টুমি করছ না ঠাট্টা। দুটোতেই ভীষণ লোভ হচ্ছে সেলিনা। ও বলল, যে পথ অন্ধকারে খুঁজে নিতে হয় আলোতে কি তার ঠিকানা মেলে? তা হলে উপায়? আবার প্রতীক্ষা হোক শুরু কবে পাবে এমন এক নিকষ কালো অন্ধকার রাত সেই অপেক্ষায়। যদি তর না সয়। হাসতে হাসতে বলল, জীবনের প্রথম যুদ্ধে যে জয়ী হতে পারে না, তাকে তো জয়ের অপেক্ষা করতেই হবে। বেরিয়ে গেল ও। মনে হলো। ওগো নারী কি বিচিত্র রূপিনি তুমি।

    দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে আবাব বিশ্রাম নিতে এলাম সেই ঘরে, যেখানে কালকের রাত কাটিয়েছি প্রহর গুনে। সেলিনা আসেনি, আমি একাই এসেছি, শুয়ে শুয়ে ভাবছি জীবনের এই কয়েকটা দিন। সেইতো দিন সাত আট আগে অশ্রুকণাকে এগিয়ে দিতে এসেছিলাম। আর আজ সেই মেদিনীপুরেরই আর একটা গ্রামে যে মেদিনীপুর কেড়ে নিয়েছে আমার প্রথম যৌবনের স্বপ্ন-ভালবাসা, আমার প্রেম, আমার অনুভূতি ও উপলব্ধি, সেইই আবার দুহাত ভরে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছে জীবনের সব অপূর্ণতা। তবু অমি নিতে পারছি না কেন? কোথায় আমার অসুবিধা? এখানে এসে আবিষ্কার করেছি রেহানাকে নতুন ভাবে। যে রেহানা একদিন ডালিমকে ভালবাসা দিতে চেয়েছিল সেই রেহানা মাঝের দিনগুলোকে ভুলে নতুন করে ডালিমকে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতে এসেছিল। যাকে জীবনে কোন দিন অন্যভাবে ভাবিনি। তাকে আজ নতুন করে ভাবছি কেন? কেন মনে হচ্ছে রেহানা আসেনি কোনদিন আমার কাছে পরিপূর্ণ রেহানা হয়ে। একি আমার পাপ? ওকে তো জীবনের সবটুকু দিয়ে ভালবেসে ছিলাম, তবে কেন সে ফাঁকি দিয়ে গেল। যদি ডালিমের জন্য তার মনে কোন দুর্বলতা থাকেও তবুও আমি তো তাকে অস্বীকার করতাম না। তাহলে সে নিজেকে প্রকাশ করতে পারলো না কেন আমার কাছে। ডালিমকে বলেছে আমি তার গুরু। এটাইকি সত্য? গুরু শিষ্যের সম্পর্কের আবরণ উন্মোচন করে সেকি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছে? একবার হে ঈশ্বর তুমি শুধু একবার ওর সঙ্গে আমার দেখা করিয়ে দাও।

    মোসলেউদ্দীন সাহেব বললেন, রেহানা ফিরে এলে আমি তাকে কি ভাবে গ্রহণ করব। মিনতি সেন চেয়েছিলেন আমার জীবনে রেহানাই যেন আসে, তার অবর্তমানে অশ্রুকণাকে এগিয়ে দিতে চেয়েছেন আমার কাছে। সেলিনার জন্য অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও সেলিনার জন্য ভাবেননি, আবার নীলাঞ্জনা পিসি রেহানার ভালোবাসকে মর্যাদা দিয়েও চেয়েছেন সেলিনাই যেন আসে আমার জীবনে। একসময় আফরোজ বেগম ও তাই চেয়েছিলেন। যদিও মৃত্যু শয্যায় তিনি অন্য রকম বলেছিলেন, তপতী ও অশ্রুকণার অনুভূতিতে রেহানা নয়, সেলিনাই আসতে চেয়েছে তার সবটুকু দাবী নিয়ে। যদিও এসব তারা মনে করেছে যদি রেহানা ফিরে না আসে। তপতীর মনে একদিন যাইই থাকুকনা কেন, আজ সে নতুন ভাবে বাঁচবার পথের সন্ধান পেয়েছে। তার জন্য বেশী ভাবনা হয় না। কিন্তু অশ্রুকণা? সেইতো এসেছিল জীবনে প্রথম প্রেমের ডালি নিয়ে। তারপর সাড়া না পেয়ে আস্তে আস্তে রেহানার জন্য সরে গিয়েছিল সে। কিন্তু তার অবর্তমানে আবার যে সে আসতে চেয়েছিল–জীবনের চরম জটিল মুহূর্তে। কিন্তু তাই বলে সে এমন কিছু করতে চায়না, যাতে সেলিনা আঘাত পেতে পারে। আমার কাছ থেকে বিন্দু মাত্র সাড়া পেলে কি হতে জানিনা। কিন্তু পারলাম না ধরা দিতে। কিন্তু এটাই কি সত্যি? কেন ওর জন্য মনটা হু হু করে কেঁদে ওঠে মাঝে মাঝে। কেন এক নিঃসঙ্গ জীবন বেছে নিতে চায় সে, কিসের প্রতীক্ষায়?

    আর সেলিনা? সব নারীর স্বপ্নে বেঁচে থাকে কারো বধু হওয়ার আকাঙ্খ। তারই কি পূর্ণতা পেল এখানে? প্রথম দিন থেকেই বুঝিনি তাকে। কি সহজ আর স্বাভাবিক, প্রথম যেদিন স্কুল থেকে ফিরতে গিয়ে আমাকে ডেকেছিল। তারপর হাঁটতে হাঁটতে সেই ক্যান্টিন, তার উচ্ছলতা। নিজেকে প্রকাশ করার স্বাভাবিকতা, আজ অস্বীকার করতে চাইনা যে তা আমাকে আকর্ষণ করেছিল তীব্র ভাবে। ভাললাগার সম্মোহনী মোহে তাকে বুঝি ভালবেসে ফেলেছিলাম। তার মনে কি ছিল জানি না। কিন্তু আমি যখন তার দিকে এগিয়ে যেতে চেয়েছি, তখনি সে আমাকে এগিয়ে দিয়েছে রেহানার দিকে। আর এমনি করে কবে যেন নিজের অজান্তেই নিজেকে একবার করে দিয়েছি রেহানার সঙ্গে। তবু কি অস্বীকার করতে পারবো এই মন বারবার চেয়েছে সেলিনাকে, আর আমার সেই দুর্বল অনুভূতির কথা বুঝি সবার থেকে ভাল বোঝে সেলিনা। তাই নির্জন হাসপাতলের কেবিনে তার তীব্র অভিমান, আর অসম্ভব অধিকার বোধ, তার চোখের জল, তার মনের দ্বন্দ্ব সব কিছুই আমাকে প্রতি মুহূর্তে ভাবিয়েছে। কিন্তু কখনো মনে করিনি, সেলিনা ভিতরে ভিতরে এত দুর্বল হয়ে গেছে। কি আছে ওর মধ্যে, যে চৌম্বক শক্তি, আমার দিকে ধাবিত হয়ে আঘাতে আঘাতে খান খান করে দিতে চায় আমার অস্তিত্ব।

    এসব ভাবতে ভাবতে কখন বুঝি আধো ঘুম নেমে এসেছিল চোখে। আবছা দেখতে পাচ্ছি, রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সেলিনা এসেছে আমার ঘরে। তারপর ড্রেসিং আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সারা দিনের ক্লান্তিকর পোষাক গুলিকে ছেড়ে রাতের পোষাকে নিজেকে সাজাচ্ছে। এক বেনী চুল বাধা আমার পছন্দ। তাই এলো খোপ খুলে, বাঁধছে এক বেনী চুল। সামনের ফুলদানী থেকে তুলে নিয়েছে গোলাপ। তারপর খুঁজেছে বেনীর গোড়ায়। ঠোঁটে আলতো লিপষ্টিক বোলাতে বোলাতে হঠাৎ বলে উঠলো দুষ্টু কোথাকার। শুধু ভিতরের জামাটা পরে ব্লাউজের বোতাম আটকাতে আটকাতে, কি মনে করে, না আটকিয়েই, রাতের লাল রঙের হালকা শাড়িটা তুলে নিলো কোমরে, আঁচল ভাজ দিয়ে রাখল তা কাঁধের উপর। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো আমার দিকে।

    হঠাৎ ভেজানো দরজা খোলার শব্দে চোখ মেলে তাকালাম, ও দরজাটা নিঃশব্দে ভেজিয়ে দিয়ে বলল এতক্ষণ জেগে জেগে কার কথা ভাবছিলে? বলতো কার কথা? হাসতে হাসতে সেলিনা বলল ইদানীং তো দেখছি শয়নে স্বপনে তুমি একজনের কথা ভাবো, নিশ্চয়ই তার কথা ভাবছো? বলতো কে? যে তোমার চিরকালের শত্রু নিশ্চয়ই তাকে। ও সব হেঁয়ালি করে চটপট বলে ফেলতে নামটা। আমি বলব কেন? তুমিই বলনা। বেশ তাহলে কাছে এসো। আমি শুনতে পাচ্ছি এখান থেকেই। দুর ছাই, এতদূর থেকে বলা যায় নাকি। কাছে এগিয়ে এসোনা? ও আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো আমার কাছে। আমি ওর একটা হাত নাগালের মধ্যে পেতেই জোরে টেনে নিয়ে এলাম একেবারে আমার বুকের পরে, তারপর তার কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললাম, যে মেয়ের প্রতীক্ষায় আর একটা নিকষ কালো অন্ধকার রাতের প্রহর গুনছি, তার কথা ভাবছিলাম। ও বলল যাঃ। আমি বললাম আজ যাব না সেলিনা, চাচীকে বলে দাও। ও জোর করে উঠে পড়ল আমার বুক থেকে। বলল, আকবর চলে গেছে গাড়ীতে। আমারও গোছানো শেষ। এখন বলছ যাবে না, তা হবে না, আত্মমর্যাদাকে বিলিয়ে দিয়ে থাকতে পারবো না। আমি তোমাকে বলতে এসেছিলাম তাড়াতাড়ি উঠে প্রস্তুত হওয়ার জন্য। চাচা অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। আমি হতাশ হয়ে বললাম, সত্যি আরেকটা রাত থেকে গেলে খুব অসুবিধা হবে? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গছে! না এক রাতের শাস্তিতে মন ভরেনি! আরো শাস্তি দিতে চাও। আমি তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বলছি? তা ছাড়া আবার কি? কি ভাবে আমার রাত কেটেছে জানো? আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, না জানতে চাইনা। তুমি প্রস্তুত? হ্যাঁ প্রস্তুত। তাহলে চল আমিও প্রস্তুত।

    ও আর দাঁড়ালো না। চাচীর ঘরে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে বেরিয়ে এলো। সাজাতে গিয়ে চাচী ওর সিঁথিতে সিন্দুর পরিয়ে দিতে গেলে সেলিনা বাধা দিয়ে বলে, থাক না চাচী, রেখে দাও ওটা তোমার কাছে। আবার যেদিন আসবো, নিজের মতো সাজিয়ে দিও। সেকি কথা মা, এটাতো হিন্দু স্ত্রীর অলংকার, হাতে এযযাতিব চিহ্ন লোহা আব সিঁথিতে সিন্দুর এ হলে হিন্দু স্ত্রীকে মানায় না। বাধ্য হয়ে পরতে হয়। পরতে হয় চাচীর দেওয়া লাল শাড়ী।

    বেরিয়ে এসে প্রণাম করে মোসলেউদ্দীন সাহেবকে, বলে কই চাচা আশীর্বাদ করলেন। বৃদ্ধ বললেন আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করুক বেটি, আর স্বামীর গরবে গরবিনি হও। তারপর তার পকেট থেকে একটা সোনার চেন বের করে বল্লেন, গরীব চাচার এই সামান্য উপহারকে কোন অজুহাতে ফিরিয়ে দিও না মা। সেলিনা হাটু গেড়ে নীচু হয়ে বসে বলে পরিয়ে দিন চাচা। এ যে আমার মঙ্গল সুত্র, আমার বাবার আশীর্বাদ। একে কি অস্বীকার করতে পারি? বৃদ্ধ চোখের জলে পরিয়ে দিলেন সেই সোনার চেনটি সেলিনার গলায়। দাম হয়তো বেশী নয় কিন্তু এর মানবিক মূল্যতো পয়সা দিয়ে কেনা যায়না। আমি প্রনাম করতে গেলে আমাকেও দেন উপহার ধুতি ও পাঞ্জাবি। বললেন তুমি ঐ জামা প্যান্ট হৈছে এটা যদি পর বাবা, মনে করব আমার সব অভাব পূর্ণ হয়ে গেছে। সেলিনা যেমন ওদের আঘাত দিতে পারলো না, আমিও বুঝি পারলাম না, ভিতরে গিয়ে জামা প্যান্ট খুলে পরে নিলাম ধুতি আর পাঞ্জাবি।

    বেরিয়ে যখন আসছি, আমাদের সঙ্গে অনেক দূর এলেন। সেই যেখানে গাড়ী রাখা হয়েছে। আমরা গাড়ীতে উঠলে বৃদ্ধ বললেন, কোন অধিকার বলে তোমাদের আসতে বলব জানিনা বাবা, তবু যদি কখনো আমাদের কথা মনে পড়ে, আসতে ভুল করো না।

    গাড়ী ছেড়ে দিল। যতক্ষণ দেখা যায়, দেখলাম সজল চোখে তাকিয়ে আছেন বৃদ্ধ মোসলেউদ্দীন এবং মনোয়ারা বেগম।

    জীবন কি ভাবে এগিয়ে যাবে, কেউ বোধ হয় তা আগাম বলতে পারে না। কোথায় যে তার বাঁধন আছে কে বলতে পারে। জনপদ ছেড়ে গাড়ী হু হু করে এগিয়ে চলেছে। দুই পাশে সবুজ মাঠের বুক চিরে মসৃণ রাস্তা দিয়ে। সেলিনা চুপ করে আছে। আনন্দে বুঝি ভরে গেছে বুক, তাই বাহুল্য কথা বলে সে আনন্দকে ব্যর্থ করে দিতে চায় না ও। এক সময় নিজের অজান্তে তার একখানা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আমিও চুপ করে রইলাম।

    সবুজ প্রান্তরে নামে অন্ধকার। সেলিনা তার মাথাটা নামিয়ে নিয়ে আসে আমার কাঁধের ওপরে। বললাম শরীর খারাপ লাগছে? বলল না। তা হলে কি ভাবছো? বলতে পারব না। আমিও বলতে পারবনা সেলিনা আমি কি ভাবছি! আমি জানি তুমি কি ভাবছো? কি? ভারি বোঝা নামাবে কি করে তাইতো। দেখ সেলিনা জীবনের অভিজ্ঞতা খুব বেশী নয়। কিন্তু আমার ছোট্ট জীবনে যা পেয়েছি, তার কোন তুলনা হয় না। শুধু আমাকে ছাড়া, আস্তে বলল সেলিনা। তারপর কাঁধ থেকে মাথাটা তুলে নিয়ে বলল পকেটে রুমাল আছে? হ্যাঁ আছে। তাহলে দাওনা সিঁথির সিঁদুরটা মুছে! আমি কণ্ঠে যত আবেগ আনা সম্ভব, তাই এনে বললাম সেলিনা! ও বলল, জানি তুমি কি বলবে, তবু এ হয় না। এই সাজে আমি কারো সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবনা। কি বলব প্রতীমবাবুকে? কি বলব মা ও মিনতি পিসিকে।

    বললাম, কাউকে কিছু বলতে হবে না সেলিনা, যাদের যা বোঝার তা তারা নিজেরাই বুঝবেন। আমি নিজ হাতে তোমাকে সিঁদুর পরিয়েছি। কি করে তা মুছে দেব? তুমিতো ইচ্ছে করে পরাওনি। সিচুয়েশান তোমাকে বাধ্য করেছিল। যতই বাধ্য করুক আমার ইচ্ছে না থাকলে পরাতে পারতাম? আমি জানিনা, তুমি মুছে দাও। পিরবো না সেলিনা, কিছুতেই পিরবো না। ও বেশ জোরে বলল আমিও পারবনা, কিছুতেই পারবনা এই সাজে প্রতীমবাবুর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। তা হলে কি করবে? তুমি যদি না মুছে দাও আমি নিজেই মুছে দেবো। তার মানে তোমার অহংকারের সাথে আমাকে মানিয়ে নিতে পারছনা তাইতো। না গো তা নয়। আমার অহংকার তো তুমি এমন করে তোমাকে পাবো ভাবিনি কোনদিন। ভাবনা যখন বাস্তব, তখনো তুমি তাকে অস্বীকার করবে? যদি পারতাম তোমাকে বুক চিরে দেখাতাম কি আছে এখানে, তবু আমায় অনুমতি দাও, এটাকে মুছে ফেলার। যদি না দিই। আমাকে কাঁদাবে তুমি? ঝর ঝর করে শব্দহীন কেঁদে ফেলল সেলিনা। আমি ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললাম, জানিনা কেন মুছে দিতে চাইছে, যে রূপ তোমার আসল রূপ তাকে মুছে দিয়ে কি চাইবে আমার কাছে? জানিনা কি চাইবো? বল না। কথা দাও নারীর সর্বোত্তম অধিকার থেকে তুমি আমায় বঞ্চিত করবে না। আমি বললাম, নারীর সেই সববাত্তম অধিকার কি? ও লাজুক দৃষ্টি হেনে বলল, তার মাতৃত্ব। আমি বললাম সেলিনা কল্পনাকে তুমি কোথায় নিয়ে চলেছে। নারীত্বের শেষ ঠিকানায়। তারপর একটু খানি চুপ করে থেকে বলল এবার তুমি মুছে দাও লক্ষ্মীটি।

    বুঝতে পারছি কেন বারবার ও সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলতে চাইছে। ওতো জানে না হিন্দু নারীর কাছে এই সিঁদুরের মূল্য কত অমূল্য। বললাম, খেয়ালে পরেছো তুমি তাই তুমি ভাবতে পারছ এ বুঝি মুছে দেওয়া যায় সহজে। কিন্তু আজন্ম সংস্কারে লালিত কোন হিন্দু নারীর পক্ষে এযে কত বড় পাপ, তা তুমি ভাবতেও পারবেনা। পাপ? পাপ নয়? জান হিন্দু নারী এক ফোঁটা সিঁথির সিঁদুরকে বাঁচিয়ে রাখবার জন্য করতে পার না এমন কিছু নেই। হিন্দু স্বামী যতবড় নিষ্ঠুরই হোক না কেন তার স্ত্রীর সিঁথির সিঁদুর কোন ভাবেই মুছে দিতে পারে না।

    কি বুঝলো সেলিনা সেই জানে, আর জোর করল না। কিন্তু কথাও বলল না আমার সাথে। প্রায় ৮টা নাগাদ আমরা পৌঁছিয়ে গেলাম মেদিনীপুর হোটেলের ৪ নং ঘরে। নক করতেই বেরিয়ে এলেন প্রতীম চৌধুরী। সেলিনার দিকে একবার তাকিয়ে তাকালেন আমার দিকে, আর সেই অবকাশে পালিয়ে গেল সেলিনা। প্রতীমবাবু জিজ্ঞাসা করলেন উদ্ধার করতে পারলে কিছু? হা পেরেছি। রুকসানা নামের মেয়েটিই রেহানা। ও গিয়েছিল ওখানে। বেশ বেশ আর বলতে হবে না। বাকীটা আমি বুঝে নেবো। বরং এই বেলা হাতে মুখে জল দিয়ে ফ্রেস হয়ে এস।

    আধ ঘন্টার মধ্যে এলাম তার ঘরে। সেলিনা বাথরুমে গিয়ে ভাল করে চোখেমুখে সাবান দিয়েছে। তারপর ভাজহীন নতুন শাড়ী পরেছে সিঁথি না করে চুলটাকে উল্টে করে আঁচড়ে বেঁধেছে বেনী। চাপা পড়ে গেছে সিঁথির সিঁদুর। তবে তা সে মোছেনি। খুব ভালো করে না তাকালে বোঝা যায় না সিঁথিতে সিঁদুর আছে কি না। আমিও নতুন করে পরেছি পাজামা পাঞ্জাবি। এলাম প্রতীমবাবুর ঘরে।

    ডিনার দিয়েছে। খেতে খেতে প্রতীমবাবু জেনে নিলেন মোসলেউদ্দীন সাহেবের ওখানকার সব ঘটনা। তারপর একথা সে কথার পরে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন এবারতো তুমি এম এ ফাঁইনাল দেবে তাই না? হ্যাঁ। তোমার পরীক্ষা কবে? বললাম, আর মাস দুয়েক আছে। খুব ভাল কথা, তা তুমিতো আমাদের ওখানে পরীক্ষায় বসবার জন্য দরখাস্ত করে ছিলে, বসবে নাকি পরীক্ষায়। ভাবছি। ভাবছ মানে? মানে পিসি ও মাকে একবার জিজ্ঞাসা করতে হবে। উনি আর কথা না বাড়িয়ে বললেন তাই কর। একটা কথা প্রান্তিক, যদি শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দাও আর চাকরিটা হয়, করবে তো? কেন বলুন তো। না ভট্টাচাজ সাহেব বলেছিলেন, কোন একটা কোম্পানী থেকে তুমি নিয়োগ পত্র পেয়ে গেছে তাই আর কি? আমি জানতামনা, কোন নিয়োগ পত্র এসেছে কি না। সেই বহুদিন আগে মিনতি সেন একবার ওনাকে আমার চাকরির কথা বলেছিলেন হয়তো সেটাই হবে। ভট্টাচাজ সাহেব কথা রেখেছেন, আমি বললাম, একটা কিছুতো করতেই হবে। তবে এখনি আমার পক্ষ্যে জয়েন করা কোথাও সম্ভব নয় সামনে পরীক্ষা। প্রতীমবাবু বললেন ভটাচাজ সাহেব নিশ্চয়ই তা জানেন, তাইতো তোমাকে পরীক্ষা শেষে জয়েন করতে বলা হয়েছে।

    সেলিনা চুপ চাপ আমাদের কথা শুনছিল, স্বভাব কি ভাবে নিজেকে এর মধ্যে জড়ায়নি একবারও। আমি প্রতীম বাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি বলেন? উনি বললেন কি ভাবে জিজ্ঞাসা করছ? একজন সত্যি কারের বন্ধুর উপদেশ চাইছে না কর্ম জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কোনটা ভাল জানতে চাইছে? দুটোই। তাহলে তুমি ভট্টাচাজ সাহেবের অফারটা গ্রহণ কর কোন দ্বিধা না রেখে। একটু হতাশ হলাম, ভেবেছিলাম, তিনি হয়তো বলবেন, তার কোম্পানীর ভবিষ্যত উজ্জ্বল। হতাশ যে হয়েছি তার প্রকাশ আমার চোখে মুখেও বিকশিত হয়েছিল, এই প্রথম তাকিয়ে দেখি সেলিনা মিটি মিটি হাসছে। বললাম তুমি হাসছো যে। সেলিনা যেন সেই পুরোনো সেলিনা। বলল বা চাইলে এক, হল আর এক, হাসবো না? তোমার হতাশা দেখে না আমার ভীষণ করুণা হচ্ছে তোমার ওপর। তারপর প্রতীমবাবুর দিকে তাকিয়ে বললে, আচ্ছা কাকু ওর চাকরিটা আমাকে দেওয়া যায় না? এমন সরাসরি তার উপস্থিতিতে কাউকে আঘাত দেওয়া যায় এ বোধ হয় তিনি ভাবেন নি কোন দিন। আর তা ছাড়া একজনের চাকরি তাকে দেওয়া যায় কিনা, এর ভিতর দাবী না অধিকার কোনটা আছে বুঝতে পারেন না প্রতীমবাবু। তার থেকে আরো অবাক হয়ে যান, প্রান্তিক যেখানে বহুবার এসেও যাকে কোন সন্মোধন পর্যন্ত করতে পারেনি, এ মেয়ে সেখানে অনায়াসে কাকু বলে তাকে আপনার করে নিতে পারল। প্রতীমবাবু বললেন, তুমি চাকবি করবে? বাঃ সবার বাঁচার অধিকার আছে আমার নেই? হেসে ফেললেন প্রতীমবাবু। না তোমার সঙ্গে পারবো না। তা তুমি চাকরি করতে চাইছো কেন? ওরা চাকরি করছে কেন? ওরা মানে কারা? ওরা মানে অশ্রুদি, প্রান্তিক ভাই? তোমার কথা ঠিক হল না সেলিনা। অশ্রু করছে, কিন্তু প্রান্তিকতো এখনো করেনি। ওই একই হল আজকে না করলেও কালকে তো করবে। তা হলে তুমি কি বল ওরা চাকরি করবে না? কে খাওয়াবে ওদের? কেন মিনতি পিসি? আবার সেই ভুলে যাওয়া অতীত স্মৃতি। প্রতীমবাবু বুঝতে পারেন। এ মেয়ের মনে ভালবাসার জটিলতা ছাড়া আর কোন জটিলতা নেই। যদি থাকতো তাহলে অন্তত ওনামটা উচ্চারণ করতো না। কথা বাড়ালে গতি কোন দিকে যাবে বুঝতে না পেরে চুপ করলেন প্রতীমবাবু। তারপর বললেন তোমার একটা চাকরির দরকার তাইতো। সামান্য হেসে বললেন, আজকে যদি দিই কাল জয়েন করতে পারবে? অবাক হয়ে গেল সেলিনা, বলেন কি ইনি, কি যে উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে মনের অবস্থা সঙ্গিন। এবার জোরে হেসে বললেন প্রতীমবাবু, কি হল মা? তোমারও কি প্রান্তিকের মতন অবস্থা, কাউকে না কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, তাইতো। কিন্তু না, বুঝেছি মা! একটু আগে বলেছিলে না অদির চাকরির দরকার হল কেন? মানুষের জীবনে এমন এমন মুহূর্ত আসে, তখন তার কাছে ওটা ভীষণ জরুরী। অশ্রুর কাছেও তাই ছিল। সে রকম যদি প্রয়োজন মনে করি, তোমাকে কিছু বলতে হবে না, আমি নিজেই তোমাকে ডেকে নেবো। তারপর হেসে বললেন, পথে আসতে আসতে কি প্রান্তিকের সঙ্গে ঝগড়া করেছে নাকি? করেছি তো। কেন? সব সময় আমার পিছনে লাগে তাই, প্রতীমবাবু শুধু হাসলেন। সেলিনা বলল, আপনি শুধু হাসলেন কাকু, ওকে কিছু বললেন না। হা হা বলব, তারপর সত্যিই আমাকে বললেন, দেখ প্রান্তিক নিশ্চয়ই ওকে তুমি একদমই বোঝার চেষ্টা করো না। এটা তোমার ঠিক নয়। অযথা ওর পিছনে লেগে না। আমি মুখে কিছুটা লজ্জা এনে, বললাম তাই হবে।

    চলে এলাম ঘরে। আসার আগে প্রতীমবাবু বললেন। এঘর আরো একদিনের জন্য বুক করা আছে। ইচ্ছে করলে তোমরা আরো একদিন থেকে যেতে পারে। আপনি? না আমাকে কাল চলে যেতে হবে। তা হলে আমরাও চলে যাবো। বেশ তা হলে সকালে ব্রেকফাষ্ট করে বেরোবো কিন্তু। আচ্ছা।

    ঘরে ঢুকেই আমি সেলিনাকে বললাম, দিন দিন তোমার কি হয়েছে বল? কেন? কেন মানে? আমি তোমার পিছনে লাগি? লাগই তো? কিরকম ভাবে? তুমি প্রতি মুহূর্তে আমাকে জ্বালাতন কর না? আমি তোমাকে জ্বালাতন করি? করই তো! কি ভাবে? নিজের কাছেই জিজ্ঞাসা কর কি ভাবে জ্বালাও। আমাকে বলছ কেন? বেশ আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলব না। বেশ বলবেনা। আমিও বলব না।

    ভীষণ রাগ হতে লাগলো ওর পরে। এমনিতে বুঝতেই পারছি না যে সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছে তার মীমাংসা হবে কি করে, কি ভাবে ওকে পরিচয় দেব? তায় উল্টো পাল্টা বলেই চলেছে।

    আলোটা নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম, কিছুক্ষণ পরে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ কানে এলো, ঘরের আসবাব পত্র একবার টেনে এদিকে নিচ্ছেতো আরেকবার ওদিকে আর সেই শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। তখনো তাই করেই যাচ্ছে। আমি ভেজানো দরজা খুলে.ওর ঘরে গেলাম। বললাম এসব কি হচ্ছে সেলিনা। আমার ইচ্ছে তোমার কি? তোমার ইচ্ছে বলে কি, তুমি অন্যের বিঘ্ন ঘটাতে পার? আমিতো তোমাকে বিরক্ত করছিনা। না তা করছনা, তবে যা করছ তাতে আমি ঘুমাতে পারছি না। ঘুমাতে পারছনা তো জেগে থাকো, কে তোমাকে ঘুমাতে বলেছে। বা তুমি ঘুমাবে না বলেকি আমিও ঘুমাতে পারবো না। আমি তো না বলিনি। বললাম দেখ সেলিনা বড় ছেলেমানুষি হয়ে যাচ্ছে। এই হোটেলে আরো অনেকে আছেন। তারা কে কি ভাবছেন বলতো। তারা ভাবলে আমার উপরে ভাববে, তোমার উপরে তো ভাববেন না সুতরাং তোমার চিন্তা কিসের? আমি একটু জোরে বললাম তুমি এসব করতে পারো না? সিভিক সেন্স বলে একটা জিনিষ আছে। সেটা সকলেই তোমার কাছে আশা করতে পারে। কেউ আশা করল বলেই আমাকে তা দিতে হবে, এমন কোন মাথার দিব্যি আছে নাকি? না তোমার সঙ্গে আর পারা যাবে না। কে তোমাকে পারতে বলেছে? যাও ঘুমিয়ে পড়। আমার ঘুমের জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি এ ভাবে কথা বলছ কেন? তুমিই বা আমাকে এত রাতে বিরক্ত করছ কেন? আমি নিজেকে যথা সম্ভব সংযত রেখে বললাম সেলিনা, আমি যদি তোমায় বিরক্ত করে থাকি তার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী, কিন্তু এবার ঘুমাও লক্ষ্মীটি। আমার যখন ঘুম আসবে আমি ঘুমাবো, তোমাকে বলতে হবে না। আমি জোর করে বললাম, না এত অবাধ্য তুমি হতে পারো না কেন? কেন আবার কি? তুমি যা ইচ্ছে তাই করতে পার নাকি? আমি যা ইচ্ছা করিনা কেন তাতে তোমার কি যায় আসে। আসে সেলিনা আসে, কারণ আমি তোমার স্বামী। ও এই কথায় চুপ করে গেল। আমি ওকে ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। ও কোন বাধা দিল না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে ফুঁসছে বুঝতে পারছি। আমি নীরবে ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। এক সময় ও বলল, তুমি ঘুমোবে না? হ্যাঁ তুমি আগে ঘুমাও তারপর আমি ঘুমোবো। ও বলল, কাল কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে যাবে না। যাবে না মানে কোথায় থাকবে? ভাবছি অশ্ৰুদির ওখানে চলে যাবো। কেন? হঠাৎ অশ্রুশার ওখানে কেন? আমার এখন তোমার সঙ্গে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছেনা। আমি বললাম বেশ তাই যেও কিন্তু এখন ঘুমাও। ও বলল, আমি ঘুমালে তুমি চলে যাবে নাতো! না যাবোনা। থাকবো তোমার কাছে।

    কাল রাতেই সিদ্ধান্ত হয়েছে সকাল বেলায় চলে যেতে হবে। তাই সেই ভাবেই প্রস্তুত হচ্ছি। প্রতীমবাবু নক কবলেন। দরজা খুলে বেরিয়ে এসে বললাম হয়ে গেছে। উনি বললেন সেলিনা কোথায়? বাথরুমে। আচ্ছা ও বেরোলে ওকে নিয়ে এসো। উনি চলে গেলেন। সেলিনাকে বললাম প্রতীমবাবু তাড়া দিয়ে গেছেন। বেশী দেরি করোনা। একটু তাড়াতাড়ি করো। তুমি যাও আমি আসছি।

    আমি প্রতীমবাবুব ঘরে আসার মিনিট দশেক পরে ও এলো। কাল রাতে যে ও ওই রকম ব্যবহার করেছে তার কোন চিহ্নই যেন নেই। প্রতীমবাবু বললেন। হঠাৎ কাজ পড়ে গেল, তাই আজও আমাব যাওয়া হবে না। তোমরাও বরং আজকের দিনটা থেকে যাও। মেদিনীপুর শহরটাকে তো দেখোনি। ভাল করে দেখে নাও। আমি আর কিছু বললাম না।

    পড়াশুনার সত্যি ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু একটা জিনিষ পরিস্কার নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। এরপর উনি সেলিনাকে বললেন, তোমার যদি আমার সঙ্গে যেতে খারাপ না লাগে তাহলে চলনা আমার সঙ্গে ঘুরে আসবে। ও বলল কোথায়? কাছেই বেশ চলুন।

    ভেবেছিলাম একবার জিজ্ঞাসা করি, আমি কি করব। কিন্তু কিছুই বলতে পারলামনা। ব্রেকফাষ্ট করে ওনারা বেরিয়ে পড়লেন। আকবর গেল ওদের সঙ্গে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কখন ফিরবেন? লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে গেছি এসে খাব। সেলিনা আমার দিকে রক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়ীতে উঠলো।

    নির্জন মুহূর্ত গুলোতে আমি একা। নিঃসঙ্গ মুহূর্ত আমার জীবনে খুব কম এসেছে। আর মানুষ যখন নির্জন মুহূর্ত একা কাটায়, তখন হয় অতীত তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, না হয় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়।

    বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঘুন এলো না। সকালের কাগজ এখানে একটু দেরিতে আসে। সেই কাগজও পড়া শেষ হয়ে গেছে, আজ দশ দিন নীলাঞ্জনা পিসিকে ছেড়ে এসেছি। এতদিন কেন, মাত্র কয়েকটা দিনও তাকে ছেড়ে থাকিনি কলকাতায় আসার পরে। ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে নীলাঞ্জনা পিসিকে। মিনতি সেনকেও মনে পড়ছে। তবু নীলাঞ্জনা পিসির জন্য এক ধরনের অভাব অনুভূত হচ্ছে বারবার। একজনকে গভীর ভাবে ভালবেসেও কি পেলেন জীবনে। মিনতি সেনও পাননি কিছু। নীলাঞ্জনা পিসির জীবন একদিন সত্যি পূর্ণ ছিল, পরে একদিন সবশূণ্য। সেই শূন্যতা তিনি আমাকে আর সেলিনাকে নিয়ে পূর্ণ করতে চেয়েছিলেন। সেলিনা তার জীবনকে যে অর্থে ভরে দিয়েছে আমি তা পারিনি, তবু যে তিনি আমার জন্য ভাবেন, একথা আমি অস্বীকার করব কি করে?

    আজ সেলিনাকে অস্বীকার করতে পারবো না কোন ভাবে। মোসলেউদ্দীন সাহেবের বাড়ীতে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের, তাতে কারো কোন হাত ছিল না। ঘটনা গুলো এমন ভাবে ঘটে গেছে যে তাকে আমরা আমাদের মত চালিত করতে পারিনি।

    সেলিনা হয়তো হিন্দু নারীর সিঁথির সিঁদুরের মূল্য অতত বোঝেনা, কিন্তু আমিতো জানি, আপন পুরুষের হাতে একে দেওয়া ওই রক্তিম সিঁথি কত গরবিনী হতে পারে।

    তাই মনে মনে ভাবছি, যদি সত্যি কথাটি বলি অবিশ্বাস হয়তো করবেনা, কিন্তু সবটুকু বিশ্বাস কি করতে পারবেন? কোন প্রশ্ন দেখা দেবেনা মনে? জানি মিনতি সেন হয়তো কিছুই ভাববেন না। কারণ কোন পুরুষের ভালবাসা জাগতিক ভাবে তিনি পাননি কোন দিন। কিন্তু এটাকি সত্যি? প্রতীমবাবুর ভালোবাসা কি তিনি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন না? যদি না করেন তাহলে এমন নির্লিপ্ত থাকেন কি করে।

    পরে কোন এক সময় বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সেলিনা দরজায় একের পর এক করাঘাত করেই চলেছে। চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুলে বললাম এত তাড়াতাড়ি চলে এলে? হ্যাঁ এলাম। কেন? না ভালো লাগছিল না। তাই এক সময় প্রতীমবাবুকে বললাম, কাকু আমি চলে যাব আমার একদম ভাল লাগছেনা। উনি বললেন, আমিও ভাবছিলাম, আকবরকে দিয়ে তোমাকে পাঠিয়ে দেব। প্রান্তিক একা আছে। ওকেও নিয়ে আসলে ভাল হতো। ও ভিতরে ঢুকলো। দেখলাম খুব হাসছে ও। আমি বললাম হাসছো যে, না এমনি, কাঁধের ব্যাগটা আমার বিছানায় ফেলে রেখে ও চলে গেলো নিজেব ঘরে। তারপর বাথকম থেকে যখন বেরোল একেবারে ফ্রেশ এবং নতুন পোষাকে সজ্জিত হয়ে, তখন অবাক হয়ে দেখলাম ওর সিঁথিতে যে সিঁদুরের রক্তিম দাগ ছিল তা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেছে। ব্যাগটা যে ভাবে ছিল সেই ভাবেই পড়ে আছে। একবার ভেবেছিলাম হয়তো ইচ্ছে করে ফেলে গেছে, দেখা যাক না কি আছে ওর ভিতরে, কিন্তু তবু আজন্ম সংস্কার বাধা দিল। হাসতে হাসতে বেরিয়ে এল ও। একটা মানুষ কখনো রাগছে, কখনো অভিমান করছে, কখনো ভালবাসছে ভাবতেও অবাক লাগে। বললাম কি ব্যাপার কোন অলকাপুরীর সন্ধান পেলে নাকি? না তা পাইনি, তবে পাব মনে হয়। মুখে সেই মৃদু হাসি লেগে আছে যা মনকে ছুঁয়ে হৃদয়কে স্পর্শ করে। বলল, আমাকে কেমন লাগছে বলতো? ঠিক তোমার মত, বললাম আমি। ও রাগলোনা বলল, ভুল বললে। ভুল? হ্যাঁ ভুল, তুমি বলতে গিয়েও যা বলতে পারনি ঠিক তেমনি লাগছে আমাকে। তারপর বলল, জান সকালে যখন প্রতীমবাবুর সঙ্গে বেরিয়েছি, শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে যেতেই দেখি ফুলওয়ালী ফুল বিক্রী করছে রাস্তার পাশে বাজারে, প্রতীমবাবু বললেন আকবর গাড়ীটা থামাও তো। আকবর গাড়ী থামালেন। উনি বললেন, নাম সেলিনা। আমি নামলাম। ফুলওয়ালীকে বললেন, তোমার এই সমস্ত ফুল ও মালাগুলোর দাম কত? ফুলওয়ালী বললেন পঞ্চাশ টাকা। তিনি পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে দিয়ে বললেন, সেলিনা সব থেকে ভাল মালা ও ফুলগুলো আলাদা করতে। আমি কিছু না ভেবে তাই করলাম। উনি বললেন ওগুলো তোমার ব্যাগে নাও। আমি অবাক হয়ে বললাম কেন? বা তোমার ভাল লেগেছে, তাই নিতে বলছি। কিন্তু এতফুল দিয়ে আমি কি করব। উনি বললেন, ফুল দিয়ে কি করব বলতে নেই সেলিনা, জীবনের পবিত্রতা খুঁজে নিতে হয় ফুলের পবিত্রতার মধ্যে। তারপর তাড়া লাগালেন চল। আমি বললাম ওগুলো। থাক, তারপর ফুলওয়ালীকে ওগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বললেন এগুলো তোমাকে দিলাম। উঠে পড়লাম আমরা। রাস্তায় চলতে চলতে ভেবেছি সত্যিই তো উনি আমায় এত ফুল দিলেন কেন?

    বললাম মিছিমিছি চিন্তা করছ? একটু ঠাট্টা করবার জন্য বললাম, আসলে তোমাকে নিয়ে বেরিয়েছেন এই বয়সে তো আর তোমাকে চকেলেট খাওয়াতে পারেনা। আর মূল্যবান কিছু দিতে গেলে সেতো অনেক খরচা। অথচ ফুল, সেতো সবার ক্ষেত্রে গ্রহণ করা ও যেমন সহজ দান করাও সহজ। খরচাও বেশী হল না অথচ পবিত্র করে এমন এক মূল্য তাকে দেওয়া হল এক রাতেই যা বাসী হয়ে যেতে পারে।

    কিন্তু কি আশ্চর্য সেলিনা এত বড় কঠিন কথাতেও রাগলনা। তেমনি হাসতে লাগলো। তারপর বলল নাগো মশাই না। আসলে ফুল যে আমার ভাল লাগে, ফুলের গয়নায় যে নিজেকে সাজাতে চাই যে ভাবে হোক তিনি তা জানতে পেরেছেন। তাইতো তিনি ফুলওয়ালীর সর্বোৎকৃষ্ট মালা ও ফুল আমাকে দিয়েছেন। তারপর আমার কাছে এসে বলল। দাওনা গো এই মালা ও ফুলে তোমার ইচ্ছে মতো আমায় সাজিয়ে, বলেই সে এগিয়ে এসে তার ব্যাগ খুলে সেই সব ফুল ও মালা বের করল। আমি বললাম সেলিনা। বল? আমি কি তোমায় সাজাতে পারব? যদি ঠিকমত না পারি?

    ঠিক মতো তো তোমায় সাজাতে বলিনি, শুধু বলেছি তোমার মনের মতো সাজিয়ে দাও। তবুও ইতস্তত করছি দেখে বলল, কি গো, সাজাবেনা? সত্যি তুমি সাজবে আমার হাতে? ও আকুল ভাবে বলল, দাওনা সাজিয়ে। বললাম, এখন থাক সেলিনা। কারণ ফুলের সাজে সাজতে গেলে সব সময় সাজা যায় না। তারজন্য বিশেষ সময় আছে? তার মানে তোমার রাগ এখনো মেটেনি। আমি ঘাট মানছি, আমার অন্যায় হয়ে গেছে। তোমার অবাধ্য হবে না বলেও অবাধ্য হয়েছি। বললাম ছি কাল রাতের কথা আমার মনেই নেই। তবে আমাকে সাজাতে তোমার আপত্তি কোথায়?

    সাজাব বন্ধু সাজাবো। সাজাবো তোমায় মনের মতন করে।
    আসুক সন্ধ্যা আসুক আধার নেমে
    শিশির সোহগে ভিজুক রুক্ষ মাটি।
    পেলবতা পাক তপ্ত আকাশ রুদ্রের হুংকার
    সাঁঝের আধারে মুছে যাক তটভূমি।
    মাটির প্রদীপ জ্বেলে নিয়ে যদি তখন সাজতে চাও
    সাজাবো তোমায় বন্ধু আমার মনের মতন করে।

    সেলিনা বলল, কিন্তু ততইশ যদি আমার ইচ্ছেটা মরে যায়, যদি মন আর মজতে না চায়?

    ক্ষতি কি তাতে, মম অনুরাগে রাঙাবো তোমায়
    অভিমান যদি করো, অস্তবেলার গোধুলি পরশ দিয়ে
    শিশির সোহাগে ভেজাবো তোমায় গভীর অন্ধকারে।
    মিথ্যে রাগের ভেলায় ভেসে যদি যাও দূরে সরে
    কি হবে উপায় তাই যদি ভাবো মনে, ভেবোনা বন্ধু
    হৃদয় তোমারে নীববে লইবে টেনে, কেমনে পালাবে? আঁখিতে তোমার
    নীরবে মাগিছে যাহা, সাধ্য কি আমার ফিরাবো তোমায়
    হৃদয় আমার যেখানে শুকিয়ে গেছে, সেইখানে তুমি এসেছো গো বাব বার
    শুধু আজ নয় বহুদিন বহুকাল, বহু বরষের সঞ্চিত সাধনায়
    তোমার পরশ লাগি উন্মুখ মম মন।
    আমি কি ফিরাতে পারি।

    সেলিনা বলল, এমন করে বল না, এমন করে তুমি আমায় কাঙাল করে দিও না। তুমিতো বলেছিলে ভিখারিনীকে করুণা করা যায় ভালবাস যায় না। তারপর কাতর ভাবে বলল আমি তোমাকে ভালবাসতে চাই, আমি তোমাকে পেতে চাই। সুদূর বেদী হতে আমি তোমার আর্শীবাদ চাইনা। আমি তোমার শিষ্যা হতে চাইনা। তোমাকে চাই আমার মতন করে।

    বললাম, আমাকে তুমি যেমন করে পেতে চাও তেমনি ভাবেই পাবে। পাবে আমাকে তোমার অহংকারের মধ্যে, পাবে তোমার ঘৃণার মধ্যে, তোমার ভালবাসার মধ্যে, তোমার হিংসার মধ্যে। তোমার ঈর্ষার মধ্যে তোমার রাগ ও অনুরাগের বিচরণ ভূমিতে। তোমার বক্ত মাংসের অভিমানে আমাকে তুমি তোমার মত করে বুকে তুলে নাও।

    সেলিনা যেন বিজয়িনী আজ। বলল, তাই নিলাম। আমার স্বপ্ন কল্পনা তোমাকে দিয়ে আমি ধন্য হলাম আজ। তারপর ফুলও ফুলের মালা সকলি আমাকে দিয়ে বলল, এগুলো থাক তোমার কাছে, তোমার পরশে গরবিনী হোক ওরা। মালার অলংকারে সাজবার সাধ আমার আর নেই।

    ফিরে গেল নিজের ঘরে। পিছু ডাকতে পারলম না। আকবর যে যায়নি বুঝতে পারিনি। ফিরে এলো এক সময়। বলল, সাহেব তখন বলে দিয়েছেন, যদি কোথাও যেতে চান, আমি যেন আপনাদের নিয়ে যাই। বিকালে কোথাও বেরোবেন?

    সেলিনা বেরিয়ে এসে বলল, আকবর ভাই, তোমার সাহেব কখন আসবেন? উনিতো আসবেন না আজ। সেকি কই আমাকে তো বলেননি। তাহলে হয়তো ভুলে গেছেন, উনি কাল বিকেলে আসবেন। যেখানে গেছেন, সেখানে অনেক কাজ পড়ে গেছে একদিনে হবে না, তাইতো আমাকে বললেন আপনাকে হোটেলে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য। উনি আসবেন কি করে। উনিতো কাল আসবেন। আমিই নিয়ে আসব। তা হলে আকবর ভাই তুমি আজ আমাদের সঙ্গে থাকছে তো। আমিতো আছি আপনাদের সঙ্গে। কোথায় থাক? এই হোটেলের নীচ তলায়। এখানে তো সাহেবকে সবাই চেনেন। সাহেব আসতে চাইলে, ৪/৫/৬ এই তিনটি ঘরই তিনি বুকড করেন? কেন? যদি কেউ এসে পড়েন থাকবে কোথায়? তবে সাহেব যখন আসেন তখন কেউ না কেউ সঙ্গে আসেন। আমি আগে আপনাদের দেখিনি এই প্রথম দেখলাম। সাহেবের কোন আত্মীয় স্বজন আছে কিনা জানিনা। সেলিনা বলল আচ্ছা তুমি যাও আকবর ভাই, যদি বেরোই তোমাকে সংবাদ দেব। আচ্ছা বলে আকবর বেরিয়ে যায়।

    আমি বলি, সেলিনা, অনেকদিন বাড়ী থেকে এসেছি। বাড়ীর জন্য কোন ভাবনা হচ্ছে না? হচ্ছে বৈকি, সব থেকে ভাবনা হচ্ছে মায়ের জন্য। আর ভীষণ করে তার কথা মনে পড়ছে, কি জানি কেমন আছেন উনি। কারণে অকারণে আমাকে চোখের সামনে দেখতে না পারলে মন খারাপ হয়ে যায়, তিনি আজ প্রায় ১০ দিন হয়ে গেল, আমাকে দেখতে পাননা। খুব কষ্ট হয় প্রান্তিক ভাই ওনার কথা ভাবলে? তাহলে চল, কাল আমরা চলেই যাই, বললাম আমি। আমারও তাই ইচ্ছে কিন্তু যদি প্রতীমকাকু কিছু মনে করেন। তা করতে পারেন। তাহলে?

    তাহলে আর কিছু করার নেই। কালও থাকতে হবে। এই বদ্ধ ঘরে ভাল লাগে বল। অশ্রুকলার সংবাদ নেওয়ার জন্য মিনতি সেন অপেক্ষা করছেন। তিনিও নিশ্চয়ই ভাবছেন অনেক কিছু। আর জানতো প্রিয়জনের মন সব সময় খারাপটাই ভাবে। তারপর বললাম, চলনা এখান থেকে আমরা আমাদের গ্রাম থেকে ঘুরে আসি। আমাকে নিয়ে? কেন অসুবিধা আছে? কি পরিচয় দেবে? কেন তোমার যা পরিচয়। তুমিতো নতুন যাচ্ছ না। একটু হাসলো সেলিনা। নতুন যাচ্ছি না বলেই তো তোমার অস্বস্তি বাড়বে। কোন পরিচয়ই আমার দিতে পারবেনা। শুধু তোমার অসহায় রূপটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমায় দেখতে হবে। বুঝলাম না তোমার কথা। ও বলল, আচ্ছা, গ্রামে গিয়ে তোমার মনটা কোথায় ছিল বলতো? মানে? কেউ কি তোমায় কিছু বলেনি? কে কি বলবে। গ্রামের লোকেরা, তোমার বন্ধু বান্ধব, তোমার আত্মীয়স্বজন। আমি বললাম একটু ভালো করে বলতো সেলিনা। সত্যি আমি বুঝতে পারছি না। ও আমার কোন কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল, আমাদের যাওয়ার আগে, তোমাদের গ্রামে শুধু নয় তোমাদের বাড়ীতেও গিয়েছিল রেহানা, তাই না। আমার বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো। একথাতো ওর জানার কথা নয়? বললাম, রেহানা যদি আমাদের ওখানে গিয়ে থাকবে, তাহলে এখানে খুঁজতে এলাম কেন? সেলিনা বলল, এটা আমার উত্তর নয়। আসল প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল মাত্র। গিয়েছিল কি না তুমি হ্যাঁ, বা না বল। বললাম আমি জানি না ও বলল মিথ্যে কথা বলছ। বুঝতে পারছি সত্যি কথা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। বললাম, জানি না আজ এতদিন পরে একথা জিজ্ঞাসা করছ কেন? তারপর বললাম হ্যাঁ একটা মেয়ে গিয়েছিল আমাদের গ্রামে শুধু নয়, আমাদের বাড়ীতেও। কিন্তু সে রেহানা কিনা আমার বাবা জানেন না। তিনি ভেবেছিলেন মাষ্টারমশায়ের কোন আত্মীয়া হবে। ওকে ভীষণ ভালো লেগেছিল আমার বাবার, তাই পরের দিন আবার মাষ্টারমশাইদের বাড়ীতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন ও চলে গেছে। নিজের পরিচয় গোপন করেই যে গিয়েছিল। শুধু শেষবেলায় মাষ্টার মশাই জানতে চেয়েছিলেন, তুমি কেমা? কি তোমার আসল পরিচয়? বলেছিল আমি রেহানা কিন্তু তারপর সে যে ট্রেনের কোন কামরায় গিয়ে উঠলো মাষ্টারমশাই আর তাকে খুঁজে পাননি। তাই তিনি বাবাকে বলেছিলেন, আমি নিজেই তার ঠিকানা জানি

    আপনাকে কি ঠিকানা দেবো সীতাংশুবাবু। তবে ও মেয়ে চলে গেলেও আবার সে আসবে, আসলেই আপনার কাছে নিয়ে যাবে। এব থেকে বেশী আমি কিছু জানিনা সেলিনা। সে কেন গিয়েছিল, কেন হারিয়ে গেল, কোন উত্তরই আমার জানা নেই।

    মুগ্ধ শ্রোতার মত শুনল সেলিনা তারপর বলল, অথচ একথা তুমি আমায় বলনি। না বলিনি, শুধু তোমাকে কেন, কাউকে বলিনি, কেন বলিনি জানিনা। কিন্তু তুমি জানলে কি করে? সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে তুমি কি করে আমায এড়িয়ে গেছ। বলতে চাইলাম ঠিক এড়িয়ে যাওয়া নয় সেলিনা। আসলে যার সত্যটাই জানিনা। সেকথা বলে অকারণ সন্দেহের দোলায় দুলে কি লাভ? আমি ইচ্ছে করে তোমাকে লুকিয়েছি এটা ঠিক নয়। বরং কোন রকম আগ্রহ না দেখিয়ে নিজেকে বুঝিয়েছি, যদি ও আসে আবার, মাষ্টাবমশাই জানাবেন, তার আগে বেশী আগ্রহ দেখিয়ে যদি তার আসার আশাটা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তোমাকে নিয়ে গেলে কেন অস্বস্তি হবে সেটাতো বললে না? হবে বললাম, কিন্তু কেন হবে এটা তোমাকেই বুঝে নিতে হবে। সেই হেঁয়ালি। ও বলল হেঁয়ালি শুধু আমার নয়। তুমি বলেছো আমার যা পরিচয় তুমি তা দেবে? বলতে কি আমার পরিচয়? বাঃ তুমি, সেলিনা, এটাই কি যথেষ্ট নয় তোমাকে পরিচিত করার। না যথেষ্ট নয়। সেলিনা একটা নাম, সেলিনা কোন পরিচয় নয়। তার থেকে বড় কথা, মা, আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, আমার মেয়ে সেলিনা। গ্রামের মানুষের ঔৎসুক্য তাতে নষ্ট হবে কেন? তারা বলেছিলেন নাম বলছো সেলিনা রহমান অথচ তোমার মেয়ে, তাহলে কি তোমার নাম নীলাঞ্জনা রহমান? মা আঘাত পেয়েছিলেন। বললেন, তাতে যদি তোমাদের ওর পরিচয় বুঝতে সুবিধা হয়, তাহলে আমি নীলাঞ্জনা রহমান। তোমরা মান বা না মান, ও আমার মেয়ে, এটাই ওর এক মাত্র পরিচয়। অবশ্য তারপর আমাকে ডেকে বললেন, কালই চলে যেতে চাই। আমি বললাম, তাই চল মা। আমারও ভাল লাগছেনা। জিজ্ঞাসা করলাম, মিনতি সেন জানেন ব্যাপারটা। না জানার তো কথা নয়? কারণ তিনি তো তখন ওখানেই ছিলেন।

    নিজের অজ্ঞতার জন্য নিজের উপরেই ধিক্কার হচ্ছিল। এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে অথচ আমি জানি না। বললাম খুবই দুঃখের সেলিনা। তোমার কোথায় আঘাত বুঝি আমি, কিন্তু আমার বাবা বা মা তোমাকে কিছু বলেছেন? তোমার বাবার সঙ্গে আমার তো দেখাই হয় নি। মায়ের সঙ্গে? হা হয়েছিল। তোমার সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার করেছেন? ও একটু রেগে গিয়ে বলল তুমি কি জানতে চাইছে আমার কাছে বলত? আমি কি তোমার বাবা-মায়ের কথা বলেছি? না বলনি, তবে এত দিন পরে অতীতে কি ঘটেছিল তাই যখন বলতে পারছে তখনতো আমার জানতে হবে আমার কি করণীয়? তুমি কি আমার জন্য তোমার আপন জনের সঙ্গে ঝগড়া করবে? আমি উম্মা ভরে বললাম, কে আমার আপন জন তুমি না ওরা? ও বলল থাক ও সব কথা। অযথা নিজেদের সুন্দর মুহূর্তকে নষ্ট করে দিয়ে লাভ নেই। তাছাড়া শুধু স্বপ্ন আর কল্পনা দিয়ে তো জীবন হয় না। তীব্র বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সব স্বপ্ন আর কল্পনা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তাই বলছি ওসব কথা ভেবে লাভ কি? বরং ভাবা যাক নিজেদের কথা। নিজেদের ভবিষ্যতের কথা। ভাবা যাক আমি কি ছিলাম আর কি হয়েছি। নিজেদের প্রশ্ন করে দেখা যাক, যা হয়েছি তাই কি চেয়েছিলাম।

    কোথায় যেন আঘাত পেয়েছে সেলিনা। আমি কি নিজের অসতর্কে কোন আঘাত দিয়েছি? কি জানি, বললাম, হঠাৎ মনে হচ্ছে তুমি দার্শনিক হয়ে গেলে। ও বলল এক অর্থে দার্শনিক তো আমরা সবাই। যে কিছু ভাবনা ও চিন্তা করে, সে নিজের সম্পর্কে হোক বা অন্য কাউকে নিয়েই হোক সেই তো দার্শনিক।

    কথা বলতে বলতে সময় গড়িয়ে চলেছে। হোটেল বয় দরজায় নক করে লাঞ্চ দিয়ে গেল। খেতে খেতে ওকে বললাম, আজতো প্রতীমবাবু আসবেন না। আকবরও থাকবে আমাদের সঙ্গে, চলনা দীঘা থেকে ঘুরে আসি। তটভূমি ব্যাপী ঝাউবন সামনে সীমাহীন সমুদ্র। ও বলল, সত্যি যাবে তুমি। যদি তুমি যাও।

    আকববকে বললাম। ও বলল, বিকালে বেরিয়ে তো ফিরে আসা যাবে না। আজ ওখানে থেকে কাল যদি আসি। হয়তো অসুবিধা হবে না। কিন্তু সাহেব তো দীঘার ঠিকানা জানবেন না। যদি প্রয়োজন হয় কোথায় সংবাদ পাঠাবেন? বললাম তাও তো ঠিক। তাহলে থাক। আশাহতের বেদনা ফুটে উঠে সেলিনার চোখে মুখে। আকবর বলল, অন্য কোথাও গেলে বলবেন। আমি নিচেই আছি। সাহেব যদি এখানে থাকতেন, তাহলে কোন অসুবিধা ছিল না। ও চলে গেলে আমি বললাম সেলিনা, চলনা বিকালে মেদিনীপুর শহরটা ঘুরে দেখি। না আমার কিছু ভাল লাগছেনা। তাহলে কি করবে? কেন যে প্রতীমকাকু আমাদের এখানে আটকে রেখেছেন জানিনা। আজতো চলে যেতে পারতাম। হঠাৎ বললেন, আজ নয় কাল। এখন বলছেন কাল নয় পরশু। এর থেকে অশুদির ওখানে থাকলেও ভাল হতো। উনিতো বলতে পারতেন আমরা যেন চলে যাই। এমনতো দূর নয়।

    সত্যিই তো এমন কিছু দূর নয়। কাল বললেন আজ ব্রেকফাষ্ট করেই চলে যাবেন। পরে বললেন হঠাৎ কাজ পড়ে গেছে আজ যাওয়া হবে না, এখন আবার বলছেন কালও যাওয়া হবে না। কি জানি কি কাজ।

    যাওয়াত হলেই না, এমনকি বিকালে শহরটা ঘুরে দেখার আশাও ত্যাগ করতে হল সেলিনার অনিচ্ছার জন্য। শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিলাম বিকাল থেকে সন্ধ্যা। তারপর এক সময় রাত হয়। ডিনারের ঠিক আগে আগে আকবর বলে, সাহেব লোক পাঠিয়েছেন, এখান থেকে মাইল ত্রিশেক দূরে উনি আছেন। বলে পাঠিয়েছেন আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে সকাল ৮ টায় ওখানে ওনার সঙ্গে ব্রেকফাস্টে যোগ দিতে। সেলিনা বলল আকবর ভাই জায়গাটা কোথায়? আকবর বলল, শহর থেকে বেরিয়ে নাক বরাবর উত্তরে যে রাস্তাটা চলে গেছে ওই রাস্তা ধরে এগোলে পড়বে। জায়গাটার নাম কি? কোন নাম নেই। আসলে ধু ধু প্রান্তর। সাহেবদের ম্যানেজমেন্ট ওখানে একটা ইউনিট খুলবেন তারই তদরকি হচ্ছে। অফিস, কর্মীদের বাসস্থানের জন্য মাটি কাটা এই সব চলছে আর কি? ভাল লাগবে চলুন না। দেখতে পাবেন কি উৎসাহ নিয়ে সকলে কাজ করছেন যেন কর্মযজ্ঞ। সে __ জানতে চাইল সকালে কটায় যেতে হবে। আকবর বলল ছটার মধ্যে প্রস্তুত থাকবেন, আমি এসে ডাকব।

    রাত প্রায় ১০টা বেজে গেছে। ঘুম আসছেনা, অথচ দুপুরে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম শুধু নয়, দেখিয়েছিলাম, তা কেমন মিইয়ে গেছে। যে আবেগ নিয়ে ওকে নিজের মত সাজাবার যে বায়না ধরেছিল আমার কাছে, এবং কথাও দিয়েছিলাম; উভয় পক্ষের প্রস্তুতির অভাবে তা হাওয়াই ফানুসের মত কোথায় মিলিয়ে গেল। এইই হয়। সেলিমা বলেছিল, তখন হয়তো ইচ্ছেটাই যাবে মরে। বলেছিলাম, যাক না, আমার অনুরাগে সাজাবো তোমায়। কিন্তু কেন পারছি না। কেন বলতে পারছি না, এস সেলিনা, ফুল সম্ভারে সাজাবো তোমায়। কিন্তু কোন কথাই বলার জোর যেন হারিয়ে ফেলেছি। এক সমূয় বাথরুমে যেতে গিয়ে উঁকি মারলাম ওর ঘরে। বললাম ঘুমাওনি। ঘুম যে আসছেনা। তাহলে এস আমার ঘরে। কেন? আমারও যে ঘুম আসছেনা। ও বলল, এতে ঘুমের কোন দোষ নেই, ঘুম আর আসবেনা। শুধু আজ নয, কতরাত যে ঘুম আসবেনা কে জানে? আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে ওর বিছানায় গিয়ে বসলাম, জানতে চাইলাম একথা বলছ কেন? আমি শুধু বলছি ্না ভাবছি। কেন অমূলক এসব নিয়ে ভাবছ? তুমি ভাবছ না? কই নাতো। মিথ্যে কথা। তারপর বলল কে জানে কবে তুমি সত্যি কথা বলতে পারবে। তারপর একটু থেমে বলল, জান, আমার কেবলি মনে হয় এই ১০টা দিন তোমার আমার জীবনের সব থেকে অভিশপ্ত মুহূর্ত। আমি অবাক হয়ে বললাম এসব কি বলছ তুমি। ও বলল, সত্যি বলছি। এতদিন তোমাকে মনে মনে চাইলেও, আমার বিভিন্ন আচরণে তা প্রকাশ পেলেও এমন ভাবেতো কখনো বাইরে আসেনি। এমন ভাবেতো উজাড় করে নিজেকে তোমার হাতে সঁপে দিইনি, যা ছিল কেবল গোপন, মধুর স্মৃতিতে যা ছিল আলোকিত, তাই এল বাস্তবের রুক্ষতায়, হারালো তার পেলবতা। আজ যেমন এগিয়ে যাওয়ারও পথ নেই, পিছিয়ে আসার পথও বন্ধ। আপন শিকলে বন্দিনী আমি। আমি বললাম। এসব কি আবোল তাবোল ভাবছে সেলিনা। জীবনের এই মুহূর্তটুকুকে তুমি অভিশপ্ত বলছ? যা আমরা চেয়েছিলাম এই মুক্তিতে তো তারই প্রকাশ ঘটল। তবু বলবে তুমি অভিশপ্ত? ও বলল, আমরা নয়, বল, আমি যা চেয়েছিলাম। অভিমানে আমি বললাম তুমি চেয়েছিলে আর আমি চাইনি? না চাওনি। তোমার দরজা বন্ধই ছিল, আজও বন্ধ আছে। মাঝে মাঝে শুধু একটু ফাঁক করে উঁকি মেরে দেখেছে নীল আকাশে কোন মেঘের ঘনঘটা আছে কিনা। আমি ওর আরো কাছে এগিয়ে একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম, তোমাকে কি করে বোঝাবো সেলিনা, আমার মন কেমন করে চেয়েছে তোমাকে। ও বলল জানি মাঝে মাঝে মনেও হয়েছে। তোমার একটা মন তীব্র ভাবে আমাকে চেয়েছে, তাইতো তার চুম্বক আকর্ষণে বার বার তোমার কাছে এসেছি? কিন্তু এবার বলত সত্যি কি তুমি চেয়েছে কখনো? গ্রহণ করতে পেরেছো আমাকে তোমার হৃদয়ের মধ্যে? পারনি। আর পারবেও না। এটা কোন আদর্শের অজুহাত নয়। যে যৌবন নিঃসঙ্গ মুহূর্ত খোঁজে মিলতে, মেলাতে পেরেও যদি তা ব্যর্থ হয়ে যায়, কি কৈফিয়ত দেবে? আমি বললাম, সেকি শুধু আমার দোষ? না দোষ তোমার নয়, দোষ আমার। দোষ আমার অবাস্তব আকাঙ্খর, তাইতো তোমার নিজের হাতে সিঁথি রাঙিয়ে দিলেও তুমি কিন্তু আমার হলে না। নিজেকে সবটুকু তুলে দেওয়া সত্ত্বেও নিতে পারলে না। নারীর সর্বোত্তম মাতৃত্বের অধিকার চেয়েও পেলাম না এরপরও বলবে আমি তো তোমার সেলিনা। যে নাবী সর্বস্ব উজাড় করে তোমাকে দিতে চাইলে তার কৌমার্য্য, কি সহজ অবহেলায় সরিয়ে রাখলে, তুমি তা, তবু বলবে, জীবন অভিশপ্ত নয়? জানি তুমি হয়তো বলবে, এস সেলিনা, সব চাওয়া পাওয়ার আসান হোক আজ। যদি মুহূর্তের দুর্বলতায় তোমার সাগরে অবগাহন করি সারা জীবন ভরে যে কষ্ট তুমি বয়ে বেড়াবে কেমন করে সইবো তা। না আমি তা পারবো না, তার থেকে আমার একটা অনুরোধ রাখবে? আমি বললাম, কোন অনুরোধই তোমার-রাখব না সেলিনা। যদি না, বলা কথাগুলো তুমি ফিরিয়ে না নাও। ও বলল অবুঝ হয়ো না। ত্যাগ শুধু রেহানাই করতে পারে না সেলিনাও পারে। আমাকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে অদির প্রেম তোমার হৃদয় জুড়ে থাকবে তা আমি হতে দেবো না। রেহানা যদি আসে ভালো না হলে অশ্ৰুদিকে তোমার জন্য রেখে দিয়ে আমি চলে যাবো। চলে যাবে? হ্যাঁ চলে যাবো। কোথায়? প্রতীমকাকুকে বলেছি, তিনি নিশ্চয়ই কোন ব্যবস্থা করে দেবেন। আমি আর পারালাম না। পুরুষের সংযমের সমস্ত বাধ প্রবল বন্যায় ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়ে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইলো। ওকে বুঝতে না দিয়ে ওর সমস্ত দেহটা আমার বুকের পরে তুলে নিয়ে পেষনে পেষনে নিষ্পেষিত করতে চাইলাম ওকে। আর কণ্ঠদিয়ে শুধু নিঃসারিত হলো, কেন আমাকে বোঝনা, কেন এভাবে আঘাত দাও। কেন বোঝনা সকলকে ছাড়তে পারলেও তোমাকে ছাড়তে পারার কোন উপায় নেই। এত নিষ্ঠুর কেন তুমি? ও বলল, ছাড় আমাকে এ ভাবে নিজেকে ছোট করোনা। মন যা চায় না, জোর করে তা নিতে যেওনা। কোন ভাবেই তুমি ছোট হয়ে যাও, এ আমি চাই না। এইটুকু অহংকারকে অন্তত তুমি বাঁচিয়ে রাখতে দাও। ওকে ছেড়ে দিয়ে চোখের জলে বললাম বুঝতে পারিনি সেলিনা। তুমিও আমার কেউ নও। তাই তোক তুমি সুখী হও।

    পা চলছেনা। তবু কোন ভাবে ওর কাছ থেকে যেন পালিয়ে এলাম নিজের ঘরে। সারা রাত নিদ্রাহীন কাটিয়ে দিলাম। শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করতে লাগলাম। কাল যেন ওর সঙ্গে যেতে না হয়। সকাল রাতের ঘুম আমাকে আচ্ছন্ন করে দিল। কাল যে কবর বলে গিয়েছিল সকাল ৬টার মধ্যে প্রস্তুত থাকতে। ভুলে গেলাম তা। সেলিনার হাতের স্পর্শে চোখ মেলে তাকালাম। হাসছে ও, সকালে স্নান করেছে। পরেছে মনোয়ারা বেগমের দেওয়া লাল শাড়ী। হাতে গলিয়েছে এয়োতির চিহ্ন নোয়া, যা এসেই খুলে রেখেছিল। পরিপাটি করে সিঁদুর দিয়েছে সিঁথিতে। চোখে দিয়েছে কাজল। লাল টিপ পরেছে দুই ভুর মাঝে। নিজের হাতে রচিত বেনীতে কালকের কেনা যুইয়ের মালা জড়িয়ে নিয়েছে, হাতে শুভ্র গোলাপ। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তো তাকিয়েই আছি। এটা যেন বিভ্রান্ত স্মৃতিতে ভুলেছে তার পথ। মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।

    একি অপরূপা এলে তুমি আজ
    দুয়ারে আমার
    গভীর রাতের আঁধার পেরিয়ে
    একি তর অভিসার
    চোখের কাজলে
    বিদ্যুৎ হানি করেছ কি
    অনুমান–
    হৃদয় আমার উন্মুখ
    কেন কাঁপে বুক
    অকারণ।
    কাটার আঘাতে বিক্ষত মন
    সেকি তবে অভিমান?

    ও বলল, উঠবেনা? কটা বাজে জান? এখনিতো আকবর আসবে। মনে পড়ে যায়, কাল রাতের সব ঘটনা। এইকি তবে সেই সেলিনা। যে অশ্রুকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বিদায় নিতে চেয়েছিল। জীবনে এমন বিচিত্র রূপিনী কোন নারীকে দেখেছি বলে মনে পড়েনা। বললাম একদম ইচ্ছে করছে না। ওকে ফিরে যেতে বল। সে হয় না। তারপর বলল, বার বার ব্যর্থ হয়েছি আমি। আজ আমি জয়ী হতে চাই, ওঠো, বলে ও আমার হাত ধরে টেনে তুললল। আর সেই সময় ওকে কাছে টানতে গেলে বলল, স্নান করে এসো আগে। আমি ওর কথারই প্রতিধ্বনি করে বললাম ততক্ষণ যদি এই মনটা মরে যায়। মরবেনা। আমি আছি এখানে তুমি তাড়াতাড়ি এসো। আমি বাথরুম থেকে স্নান করে বেরোলাম। নতুন একটা পায়জামা ও পাঞ্জাবী আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল। এটা পরে নাও। বললাম কোথায় পেলে। বলল ও কাল আকবরের সঙ্গে বাজারে গিয়ে নিজের হাতে কিনেছি। কারো জন্য আমার প্রথম কিছু কেনা। আমি নিলাম। তারপর ভিতরে গিয়ে ওটা পরে বেরোলাম। ও আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, কি দেব তোমায় বল। আমার ক্ষুদ্রতা তোমাকে দিতে পারি না, আমার নীচতা তোমাকে আঘাত করতে পারে। আমার অহংকার তোমাকে অহংকারী করতে পারে। তাই নিজেকে তুলে দিলাম তোমার হাতে। জানলাটা ভোলা ছিল সেই দিকে তাকিয়ে বলল, ঐ দেখ পূব আকাশ লাল হয়ে উঠেছে, এখনি সূৰ্য্য উঠবে, ঐ সূর্যকে সাক্ষী রেখে তোমাকে বরণ করে নিলাম আজ প্রভাত বেলায়। বলেই কালকের কেনা সেই অপূর্ব রজনী গন্ধার মালাটি আমার গলায় পরিয়ে দিয়ে বলল কিছু দেবে না? মনযে কত কিছু দিতে চাইছিল, তার হদিশ কি করে করব। বেনীতে ফুল গুঁজে দিয়ে আমার তৃষ্ণাব্যাকুল ওষ্ট দুটি নামিয়ে নিয়ে এলাম ওর অধর প্রান্তে। না কোন বাঁধা দিল না। যেন যুগ যুগান্ত ধরে যে তৃষ্ণার স্রোত বয়ে চলেছে দুই পাহাড়ী নদীতে, হঠাৎ তা জলস্ফীতিতে ভাসিয়ে নিয়ে চলল তটভূমি, আঘাত করতে উদ্যত যখন, তটভূমি প্রান্তর, হঠাৎ বন্যার আশঙ্কায় যখন প্রতিটি মুহূর্তের অধীর প্রতীক্ষা, দরজায় নকের পর নক করে ডেকে চলল আকবর। সাহেব ছটা বেজে গেছে, একটু তাড়াতাড়ি করুণ। সাহেবের ব্রেকফাষ্ট করতে দেরি হয়ে যাবে। ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম, আসছি আকবর তুমি গাড়ীতে যাও।

    হাসছে ও। মৃদু হাসির তরঙ্গে যেন দুলে উঠছে মন। চাইছে নিবিড় করে সর্বস্ব উজাড় করে তাকে পেতে। ভগ্ন সারথী আমি পেলাম না আজো তাকে, জানিনা, সবটুকু পেতে আর কত কাল অপেক্ষা করতে হবে। ও তখনো একটা হাত ধরে আছে। বললাম, আকবর গাড়ীতে আছে চল। ও বলল, যাব তুমি তার আগে একটু সোজা হয়ে দাঁড়াও। বললাম কেন? দাঁড়াওনা। ওর কথা মত দাঁড়ালাম। ও হাটুভেঙে নীচু হয়ে আমাকে প্রণাম করল। উঠে বলল, আশীর্বাদ করলে না। করেছি? কি আশীর্বাদ করলে। ওটা গোপন বলতে নেই। তুমি না বলতে পারলেও তোমাকে প্রণাম করে কি চেয়েছি তোমার কাছে জানতে ইচ্ছে করছেনা? গভীর উৎসাহে বললাম, কি চেয়েছো? ও বলল আমার মাতৃত্বে তোমার রক্তের উত্তরাধিকার। তখনো, মিটি মিটি হাসছে সেলিনা। আমি বললাম, সে যোগ্যতা যদি আমার থাকে, তোমাকেই সেই অধিকার দিয়ে ধন্য হব আমি। তারপর একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম আমরা।

    কতদিন, কত ভাবেই তো দেখেছি ওকে। কখনো চঞ্চলা হরিণী। কখনো অভিমানিনী, কখনো বা নিষ্ঠুর নিয়তি হিসাবে। আর এই রূপেতো প্রথম দেখেছিলাম তাকে মোনোয়ারা বেগমের ঘরে। নব বধুকে সাজিয়ে যেন বাসর ঘরে পাঠিয়েছেন তিনি। ওরই অনুরোধে ওর সিঁথি আমি অলক্তরাগে রাঙিয়ে দিয়েছিলাম। আজ সেজেছে ও নিজে। যেন নিজের অধিকারে সচেতন এক গরবিনী। যে মালায় বরণ করেছিল আমাকে। এখনো তা ওর গলায় শোভা পাচ্ছে। কি অপূর্ব যে লাগছে ওকে। কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছি না। বলল, কি দেখছো অমন করে। বললাম নারীর রূপ থেকে রূপান্তরে উত্তরণ। বন্ধু থেকে প্রেয়সী সেখান থেকে তোমার এই বধূরূপ এর যে ব্যপ্তি ও ব্যঞ্জনা কেমন করে বোঝাবো সেই অপরুপাকে। এরপর বললাম সেলিনা, বল তো কেমন করে জীবনে ঘটাও এই রূপান্তর। ও বলল জানি না। তার পর আমার হাতটা ওর নিজের হাতে তুলে নিয়ে বলল, আমাকে তোমার ভাল লাগছে? কেমন করে জানাবো তোমায় কেমন লাগছে তোমাকে? জানতো কবিগুরু বলেছিলেন–বিয়ের বাসরের আড়ম্বর বিলীন হয়ে যায় একসময়, কিন্তু ৰাজে যে সানাইয়ের সুর তার রেশটুকু থাকে আজীবন। এই যে অপরূপা তুমি, সানাই না বাজলেও যে সুর বাজছে আমার মনে তাই চির অমলিন হয়ে থাকবে আমার শেষ যাত্রার দিন পর্যন্ত। কি? আজ আর কোন কিন্তু নয় সেলিনা। আজ আর কোন বিরূপ মন্তব্যে আমার মুখ দৃষ্টি আর ভালো লাগার রেশটুকু নষ্ট করে দিওনা। তুমি যখন আঘাত দাও, হৃদয়ের কোথায় গিয়ে তা বাজে যদি হৃদয় চিরে তা দেখাতে পারতাম। এমন করে বলো না। আমি জানি, শুধু যে জ্বালায় নিজে জুলছি তারই আগুনটুকু পাও তুমি। জ্বালাতে পাও না। তুমি দেখতে পাওনা তাই। যদি দেখতে পেতে এমন করে জ্বালাতে পারতেন। জানিগো জানি, বলল সেলিনা। তবু ভয় হয়। যে স্বপ্নে তোমায় আমি ভাসিয়ে নিয়ে চলেছি, স্বপ্নের মরিচিৎকার মত তা মিলিয়ে যাবে নাতো? বললাম কেন এত ভয় পাও। কাকে ভয় পাও তুমি। নিজেকেই ভয় পাই সব থেকে বেশী। যন্ত্রণার কীটগুলো আমাকে যখন মুহুর্মুহুঃ দংশন করে, আমি পাগল হয়ে যাই। ভাবি, যদি তোমার আত্মীয় স্বজন আমায় গ্রহণ না করে। নাইবা করলো সেলিনা। আমি তো করেছি? সবই বুঝলাম, কিন্তু এইভাবে দাঁড়াবো কি করে তোমার পিসি মানে আমার মায়ের কাছে। মিনতি পিসির কাছে। বললাম মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সেলিনা। তুমি তো কোন অন্যায় করোনি। দুটি হৃদয় ভালবেসে কাছে এসেছে, দুটি যৌবন একসাথে ভেসে যেতে চেয়েছে এতে তো লজ্জার কিছু নেই। কিন্তু এই সমাজ। আমি বললাম, সমাজতো মানুষ সৃষ্টি করেনি। মানুষই তার প্রয়োজনে বানিয়েছে সমাজ। আবার প্রয়োজনে তাকে ভেঙে নতুন সমাজ গড়বে। সেই সমাজের কারিগর হিসাবে আমরা শুধু আমাদের নাম লিপিবদ্ধ করে যাবো। সব থেকে বড় কথা সেলিনা, এমন করে কোনদিন বুঝতে পারিনি, রেহানাকে নয়, অশ্রুকণাকেও নয় আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছিলাম। ও আমার দিকে অপলক তাকিয়ে বলল, পেয়েছো কি আমায়? আর কোন ভুল হবে না সেলিনা। হাজার চেষ্টায় আজ আর তুমি পালাতে পারবে না। তারপর বললাম, যে বাঁধনে বেধেছি তোমায় সে তো তোমার কণ্ঠে শোভা পাচ্ছে এখনো, যে সিঁদুর মুছে ফেলতে চেয়েছিলে দৃপ্ততায় তাতেই রাঙিয়েছে সিঁথি। সে তো তোমার অধিকার। তাইতো চলার পথে ভুলের ঠিকানা হারিয়ে গেছে কখন নিজেও জানো না। সত্যি কি তাই? হ্যাঁ সত্যি।

    গাড়ীটা থেমে গেল এক সময়। চারিদিকে সবুজ মাঠ। মাটি কাটা হচ্ছে একটু দূরে। আকবর বলল এসে গেছি সাহেব। এবার নামতে হবে। গাড়ী আর যাবে না? জিজ্ঞাসা করলাম আমি। বলল না। সামান্য পথ হাঁটতে হবে। আকবর আগে। আমি তারপরে, আর আমার হাত ধরে আছে সেলিনা। আমরা এগিয়ে চলেছি। আমি সেলিনার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। সিঁথিতে উজ্জ্বল সিঁদুর হাতে নোয়া। পরনে লাল শাড়ী, যেন বিজয়িনী চলেছেন দিগ্বিজয় করে।

    প্রতীমবাবু বেরিয়ে এলেন। সেলিনার দিকে তাকালেন উৎসুক দৃষ্টিতে। তারপর আমাকে বললেন কোন অসুবিধা হয়নি তো। বললাম না। সেলিনা বলল, কাকু একটু দাঁড়ান না। অবাক হয়ে দাঁড়ালেন প্রতীমবাবু। সেলিনা ওই ভাবে প্রতীমবাবুকে প্রণাম করল। তারপর বলল, আশীর্বাদ করলেন না। বললেন করেছি মা! কি আর্শীবাদ করলেন। উনি বললেন যে সত্যের সন্ধান তুমি পেয়েছে তা যেন তোমার জীবনে চিরস্থায়ী হয়। সেলিনা বলল, তা হলে আপনি বলছেন এতদিন যা আমি চেয়েছি তা আমি পেয়েছি? পেয়েছে যে তারতো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তোমার ঐ রক্তিম সিঁথি, তোমার হাতের নোয়া, তোমার লাল শাড়ী। লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো সেলিনা। তাহলে আপনি আমাকে মেনে নিচ্ছেন তো। প্রতীমবাবু বললেন, আমি মানার কে মা? তোমার হৃদয় তোমার আকাঙ্খা পেয়েছে পরিণতি। মেনেছে তোমার মন। কিন্তু একটা কথা জানকি সেলিনা? বলুন। হিন্দু নারীর কাছে সিঁথির সিঁদুরের মূল্য যে কি অমূল্য, জানি না সে ধারণা তোমার আছে কি না। যদি খেয়ালে ও সিঁদুর ধারণ না করে থাকো, তাহলে আমি আশীর্বাদ করছি তুমি সীমন্তনী হও। লজ্জা ও নম্রতায় সেলিনা বলল, আপনার ইচ্ছেকে যেন যোগ্য মর্যাদা দিতে পারি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগ্নিপরীক্ষা – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }