Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ভালোবাসা চিরকালীন – আশাপূর্ণা দেবী

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প813 Mins Read0

    ০২. পিতৃত্বের দাবী

    পরিমলবাবু তার কাছে পিতৃত্বের দাবী করেন, কিন্তু তা দেওয়ার ক্ষমতা নেই পিসির। তাই বলে কোন দত্তক নিয়ে তিনি যেমন তার মাতৃত্বের স্বাদ মেটাতে চাননা তেমনি ঐ একই উপায়ে তিনি পরিমলবাবুকে পিতৃত্ব দেওয়ারও ঘোর বিরোধী। তিনি চান, পরিমল বাবু আবার বিয়ে করুক। আর সেই নবাগতার সন্তান মেটাক তার পিতৃত্বের আকাঙ্খা।

    জানি আমি, কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। নীলাঞ্জনা পিসিকে যতটুকু বুঝেছি বা জেনেছি তাতে মনে হয় তিনি এখন কি চান তা বোধ হয় তিনি নিজেও জানেন না। আর একথা শুধু পিসি কেন, আমরা কেউ কি জানি, আমরা কি চাই? অথচ নীলাঞ্জনা পিসি একদিন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন পরিমলবাবুকে। সবে কলেজে ঢুকেছেন নীলাঞ্জনা পিসি। আর সেই সময় উঁচু ক্লাসের পরিমলবাবুর নজরে পড়ে যান তিনি। শুনেছি নীলাঞ্জনা পিসির রূপে মুগ্ধ হয়ে আরো অনেক ছেলে তার প্রেমে পড়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু পিসি কারো দিকে ফিরেও তাকাননি। বলা চলে পরিমলবাবুই তার জীবনের প্রথম পুরুষ এবং একমাত্র পুরুষ হিসাবে প্রথম দিন থেকে মেনে নিয়ে তার ঘরে এসেছিলেন। সম্ভবতঃ পরিমলবাবু তা জানতেন। তাই নীলাঞ্জনাকে লাভ করা যেমন তার জয়ের একটা অঙ্গ, তেমনি কৃতজ্ঞতাবশত অন্য কোন নারীর কথা এতদিন তিনি মনেও আনেন নি। অবশ্য এসব আমার শোনা কথা, কিছু অনুমান মাত্র।

    মিনতি সেনই বোধ হয় তার প্রথম ছন্দপতন। অবশ্য তাও ঠিক আমি ভালো করে জানিনা। পিসিকে নিয়ে তার একাকী আর নিঃসঙ্গ জীবনের কথা ভাবিনি কখনো। সেদিন যা কিছু বলেছিলাম, কথার পর কথা সাজিয়ে তার একটা কাব্যিক রূপ দিয়েছিলাম মাত্র। কিন্তু পিসি যে এমন একটা কিছু করবেন তা কখনো ভাবিনি। হয়তো এটা ভাবার কোন বিষয় নয় বলেই।

    আমার উথাল পাতাল চিন্তাকে প্রতিহত করে কে যেন বলল, তুমি এখানে বসে আছো প্রান্তিক আর আমি তোমাকে সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছি। তাকিয়ে দেখি রেহানা। বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাই ওর দিকে। বেশ কয়েকদিন পরে দেখা রেহানার সাথে। ও কয়েকদিন কলেজে আসেনি। যদিও ওদের বাড়ীতে যাওয়া যেতো কিন্তু ইচ্ছে করেনি। সহজ ভাবে বললাম, খুব দরকার আমাকে? কেন খুঁজছিলে? আমার উত্তরটা ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু কোথায় যেন রেহানার অভিমানে আঘাত লাগে। বলে, দরকার না হলে বুঝি তোমাকে খোঁজা যায় না। তারপর বলল, না প্রান্তিক তোমার সাথে আমার কোন দরকার নেই। একথা বলেই ও সামনের দিকে পা বাড়ায়।

    আর, ও চলে যাচ্ছে দেখে, আমি ওকে পিছু ডেকে বললাম একি রেহানা, তুমি চলে যাচ্ছ যে! বিশ্বাস কর আমি কোন কিছু মনে করে একথা বলিনি। তবু চলে যাচ্ছে। দেখে বললাম, আরে শোন শোন! কিন্তু কে কার কথা শোনে, ও দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে . চলেছে। একবার মনে হল দৌড়ে গিয়ে ধরি ওকে। তারপর কি ভেবে যেন থেমে গেলাম। রেহানা যেমন এসেছিল, তেমনি ভাবেই চলে গেল। আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার পথের দিকে।

    যে জটিলতার জালে আমি ক্রমান্বয়ে জড়িয়ে পড়ছি নিজেরই ভুলে, তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পাচ্ছিনা। অথচ আমার একথা যে কাউকে বলার নয়। আর এদিকে সাতদিন কেন ১০ দিন হয়ে গেছে পরিমলবাবু ফেরেননি। আজ তার চিঠি এসেছে, তার আরো মাস খানেক দেরি হবে। কোম্পানীর একটা বিরাট প্রজেক্ট-এ তাকে আটকে পড়তে হয়েছে, তাই নীলাঞ্জনা যেন সাবধানে থাকে। আমার পড়াশোনার যাতে কোন বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে অবশ্য বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। চিঠিটা পোষ্টকার্ডের। ডাক বাক্সে দেখে পিসিকে না জানিয়ে পড়ে ফেলেছি। অথচ অন্যের চিঠি যে পড়া উচিৎ নয় বুঝেও কৌতূহল দমন করতে না পেরে পড়ে ফেলি চিঠিটা। পিসিকে না জানিয়ে। কিন্তু আমার যা অবাক আর বিস্ময়ের ব্যাপার তা হচ্ছে পরিমলবাবুর এ কেমন চিঠি? প্রথম কথা স্বামী লিখছেন স্ত্রীকে চিঠি, তাও পোষ্টকার্ডে, দ্বিতীয়ত স্বামী স্ত্রীর চিঠির মধ্যে থাকবেনা এমন কিছু যা মনকে ছুঁয়ে যায়। এ আবার হয় নাকি, তৃতীয়ত ব্যক্তিগত চিঠিতে আর ব্যবসায়িক চিঠি নয় যে তাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটা শব্দও ব্যয় করা যাবে না। চতুর্থত একবারও জানতে চাইবেন না স্বামী যে তার স্ত্রী কেমন আছেন? বা তিনি নিজেইবা কেমন আছেন? এ চিঠিতেও পরিমলবাবু একবারের জন্যও পিসি কেমন আছে জানতে চাননি। শুধুমাত্র একটা সংবাদ যে তার ফিরতে আরো মাস খানেক দেরি হবে। তা হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে স্বামীর চিঠিতে ধরা পড়বেনা স্ত্রীর জন্য কোন উদ্বিগ্নতা। চিঠিটা পড়ার পর ডাক বাক্সে আবারও তেমনি ভাবে রেখে এসেছি আমি। রাতে বাড়ী ফেরার পরে হয়তো সে চিঠি দেখবেন পিসি। পড়ে তিনি কি ভাববেন? কি ভাবে নেবেন জানিনা। হঠাৎই মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় পিসির সঙ্গে পরিমল বাবুর দুরত্বটা অনেকটাই বেড়ে গেছে।

    কয়েকদিন ধরে আমার কিছুই ভালো লাগছেনা। পিসির কাছে কেন যেন স্বাভাবিক হতে পারছি না। খারাপ জেনেও অকারণ এড়িয়ে চলছিলাম। কেন এড়িয়ে চলছি তারও কোন উত্তর জানা নেই।

    পরের দিন আবারও পিসি জিজ্ঞেসা করেছিলেন, রেহানাকে বলেছিলে আমার কথা? দায় সারা উত্তর দিয়েছিলাম, কলেজে আসেনি। পিসি আর কথা বাড়াননি।

    এদিকে রেহানা ঐ ভাবে চলে যাওয়ার পরে অনেক ভেবেছি, কেন তার এই অভিমান। পরের ক্লাসটা অফ। তিনটে থেকে ক্লাস আছে ডি এন বি এর। একবার মনে হল যাব না ক্লাসে, তারপর অবশ্য ভেবে দেখলাম ক্লাসটা ফাঁকি দেওয়া ঠিক হবে না। রেহানার সাথে দেখা হওয়াটাও ভীষণ দরকার। এভাবে সবাই আমাকে ভুল বুঝবে তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

    কলেজ থেকে ফেরার পথে, লাল কৃষ্ণচূড়ার নীচে একাকী পেয়ে গেলাম রেহানাকে। জানি ও আমাকে এড়িয়ে যাবে। তাই দ্রুত তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ও ভাবে চলে এলে কেন? এমন ভাবে ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি যে ওর চলে যাওয়ার বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন উপায়ই নেই। বলল, পথ ছাড় প্রান্তিক, আমার কাজ আছে। কাজ আমারও আছে, কিন্তু তোমাকে বলতেই হবে কেন আমাকে ওভাবে অপমান করলে? অপমান আমি করলাম না তুমি করলে? তারপর বলল যাকগে, আমি কথা বাড়াতে চাইনে, তুমি পথ ছাড়, অনেকে এদিকে তাকিয়ে আছে। থাকুক। আমাকে উত্তরটা জানতেই হবে। কোন উত্তরই আমার কাছে পাবেনা, তুমি পথ ছাড়, না হলে সত্যিই কিন্তু তুমি অপমানিত হবে। তখন। কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবেনা। তার কণ্ঠের দৃঢ়তায় আমি অবাক হয়ে যাই।

    এ কোন রেহানা? এতো আমার পরিচিত রেহানা নয়? আমি পথ ছেড়ে দিলাম। দিনটা আমার একদম খারাপ যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে কালুদার চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম, এটা কলেজ থেকে একটু দূরে। বললাম কালুদা পকেটে পয়সা নেই, কিন্তু ভীষণ খিদে পেয়েছে। কালুদা বললেন, কি খাবে বল।–যা হয় দাও, তার সঙ্গে এক কাপ চা, কাল। দাম দিয়ে দেব।

    চায়ের দোকানে আর কোন খরিদ্দার নেই। কাগজটা পড়েই আছে। কাগজটার প্রতিটি লাইন পড়ে শেষ করলাম। তারপর উঠে পড়লাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম শিয়ালদা, সেখান থেকে ঢাকুরিয়া ট্রেনে। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয়। কেন এখানে এলাম জানিনা। অনুতপাদের বাড়ী যাওয়া যায়। কিন্তু ওর সঙ্গেতো আজ কলেজে দেখা হয়েছে। তাহলে কি অজুহাতে ওদের বাড়ী যাব। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আবার ফিরে এলাম শিয়ালদায় তারপর হাঁটতে হাঁটতে বাড়ী।

    পিসি আজ অফিস থেকে আগেই ফিরেছেন। ডাক বাক্সে চিঠিটা নেই। তার মানে পিসি চিঠিটা নিয়ে নিয়েছেন। উনি বসে আছেন বারান্দায়। আমি যে এসেছি সেদিকে কোন ভূক্ষেপ নেই। আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পিসির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে বললেন কি চাই? তোমার শরীর খারাপ এভাবে বসে আছ? আর কিছু বলার আছে? না। তাহলে যাও এখন। দেখ ডাইনিং টেবিলে খাবার ঢাকা আছে। আজকাল কোথায় যাও কলেজ তো শেষ হয়েছে সেই ৪টেয়। আর এখন ৭টা, এত সময় কোথায় ছিলে? এভাবে যদি নিজের ইচ্ছেমত চলো, তা হলে মাষ্টার মশাইকে বলতে হবে, তোমাকে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মনে পড়ে যায় আগেও একদিন ঠিক এরকম কথাই বলেছিলেন পিসি। ফিরতে দেরি হওয়ার জন্য বুঝতে পারছি অন্য কোন রাগ আমার পরে ঝাড়ছেন। উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না বলে আস্তে আস্তে চলে এলাম।

    রাতে খাবার টেবিলে বললাম পিসি, মাষ্টারমশাইকে কিছুই বলতে হবে না, আমি নিজেই চলে যাবো। আমাকে নিয়ে তোমার অসুবিধা হচ্ছে একথা তুমি আমাকে বলতেই পারতে। কেন যে না বলে এই কষ্ট পাচ্ছ? কোথায় যাবে? মিনতি সেনের বাড়ীতে? আমি চমকে উঠে বললাম এতুমি কি বলছ পিসি? অবাক হচ্ছ যে বড়। তারপর বললেন তুমি যাওনি মিনতি সেনের বাড়ীতে? বুঝতে পারছি যে ভাবেই হোক মিনতি সেনের বাড়ী যাওয়ার সংবাদ পিসি পেয়েছেন। আস্তে আস্তে বললাম হ্যাঁ গিয়েছিলাম। অথচ আমাকে বলনি কেন? আমি তোমাকে না করতাম? কোন বিশ্বাস নেই আমার উপর?

    আমি আরো ধীরে এবং মৃদুস্বরে বললাম, বলতে চেয়েছিলাম পিসি, কিন্তু তুমি যে আমার সব কেমন এলোমেলো করে দিলে। তুমি আমাকে এমন সব উল্টো পাল্টা কথা বলতে আরম্ভ করলে যে মিনতি সেনের কথা আর বলাই হল না। যাতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় তেমন ভাবেই বললাম কথাগুলো।

    পিসি চুপ করে শুনলেন সব। তারপর বললেন, থাক আর বলতে হবে না, তোমাদের পুরুষ জাতটাকে চিনতে আর বাকী নেই আমার। একথার আমি আর কি উত্তর দেব? বুঝতে পারছি মনের মধ্যে ঝড় বইছে নীলাঞ্জনা পিসির। খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লাম। তারপর আলো নিভিয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কপালে কার কোমল স্পর্শে চোখ মেলে দেখি পিসি। বললাম, একি পিসি তোমার চোখে জল? তুমি ঘুমাওনি?

    সামনের চেয়াটায় বসে পড়ে বললেন, আমার কথায় খুব আঘাত পেয়েছ না? কিন্তু বিশ্বাস কর, প্রান্তিক আমি তোমায় আঘাত দেওয়ার জন্য কিছুই বলিনি। আসলে নিজেই বিভিন্ন ব্যাপারে এমন ক্ষতবিক্ষত যে তোমাকে কি বলতে কি বলেছি, তার জন্য তুমি কিছু মনে করোনা। আমি উঠে বসলাম। তারপর বললাম, আমি জানি পিসি, আমি কিছুই মনে করিনি। তুমি জান? কি জান তুমি? থাক না। না তোমাকে বলতেই হবে। আমি বললাম, তুমি সব ব্যাপারে এত জোর কর কেন বলত। তারপর বললাম দেখ পিসি আমি যা জানি, মানে যা আমি মনে করি, তা কি সব সময় বলা যায়? যায় না বুঝি? ম্লান হেসে নীলাঞ্জনা পিসি বললেন তা হলে সেদিন কেন বললে আমায় তুমি ভালোবাস? আর আমি তোমায় ভালোবাসি কি না তা আমার মুখ দিয়ে শোনার জন্য জেদাজেদিই বা করলে কেন বল? তবুও তো তুমি বলোনি আমায় তুমি ভালোবাস কিনা। আর কি ভাবে বলব প্রান্তিক ওতেও যদি তুমি তোমার উত্তর না পেয়ে থাক, তবে থাক না তা চির অন্ধকারে, কিছুই তোমাকে জানতে হবে না। উঠে পড়লেন, পিসি। আমি অবাক হয়ে ভাবি কি বলতে চান পিসি? তিনি কি আমার মধ্যে অন্য কিছু আশা করেন? না আমার কোন আচরণ তাকে এমন ভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে? নিজের আচরণের জন্য নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।

    রোজকার মত আজও পিসি বেরিয়ে যান অফিসে। আমিও কলেজে যাব বলে প্রস্তুত হচ্ছি। কিছুই ভালো লাগছেনা। মিনতি সেনের কথা ঠিক ঠিক মত বলতে হবে পিসিকে। কিন্তু মিনতি সেনের আমি কতটুকু জানি? যা সামান্য জানি তাতে তাকে অন্যরকম ভাববার কোন কারণ নেই। মিনতি সেন বলেছিলেন, আমি যেন পরের দিন পিসিকে বলি। তাকে ফোন করতে। কিন্তু সুযোগের অভাবে বলা হয়নি। সত্যি সত্যিই এতবার এত কথা হয়েছে তারমধ্যে কি এই সামান্য কথাটা বলা যেতনা? আসলে পিসি যদি অন্য কিছু ভাবেন, তাই বলিনি তাকে। বুঝতে পারি এটা অন্যায়। সত্যকে গোপন করার একটা যন্ত্রণা আমকে কুরে কুরে খায়।

    গত দিনে রেহানার সঙ্গে ব্যবহারটা কেমন বেসুরো হয়ে গেছে। অথচ কিছুতেই বুঝতে পারছি না রেহানার সঙ্গে আমি খারাপ ব্যবহার কি করেছি। ওর সঙ্গে আমার মুখোমুখি হতে হবে। এই আশঙ্কায় কলেজে যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু যাব কোথায়? এই কলকাতায় আমার পরিচিতির সংখ্যা এত কম যে, কোথাও গিয়ে সময় কাটাবার মত জায়গা নেই। এক মিনতি সেনের সঙ্গে দেখা করা যেতে পারে তার অফিসে গিয়ে। যদিও কোন দিন সেখানে যাইনি।

    বেরিয়ে পড়লাম, কলেজে যাবনা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছি। তাই আর বাস নয়, কলকাতার এগলি ওগলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যেন এন্টালী মার্কেটের কাছে এসে উপস্থিত হয়েছি হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে ডাকে প্রান্তিক ভাই। কিন্তু পিছনের দিকে তাকিয়ে কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না। আবারও যখন এক পা দুপা করে এগিয়ে চলেছি শুনতে পাই সেই কণ্ঠস্বর, প্রান্তিক ভাই।

    আমি পিছনে সামনে ডাইনে বায়ে সব দিকে তাকিয়েও পরিচিত কোন মুখ দেখতে পাচ্ছিনা। আর তাছাড়া প্রান্তিক ভাই এই ভাবে আমাকে কেউ ডাকে কিনা তাও তো জানিনা। তাইতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। যদি সত্যি সত্যি আমাকে কেউ ডেকে থাকে তাহলে সে নিজেই কাছে আসবে।

    বাব্বাঃ, কোন দিকে হুস নেই? কাকে খুঁজছেন প্রান্তিক ভাই? হাফাতে হাফাতে আর উজ্জ্বল হাসিতে মুখ ভরিয়ে কাছে এসে দাঁড়ালো সেলিনা। রেহানার বোন, আমি অবাক হয়ে বললাম তুমি এখানে? কোত্থেকে? অবাক হচ্ছেন তো। জানি আমাকে আপনি খুঁজছেন না, কিন্তু খুঁজছেন কাকে? আবার সেই অমলিন হাসি, সীমাহীন কৌতুক দুটি চোখে। আমি ঠাট্টা করতে ছাড়লাম না। বললাম, তুমি যখন সিওর জান তোমায় আমি খুঁজছিনা, তাহলে একথাও তোমার জানার কথা, কাকে আমি খুঁজছি। ঠোঁট উলটে সেলিনা বলল, ইস বয়ে গেছে আমার সে কথা জানতে। তারপর বলল আসলে প্রান্তিক ভাই ভীষণ খিদে পেয়েছে। কিছু খাওয়াবেন না?

    আমি অবাক হয়ে তাকাই ওর দিকে। নিজের খিদে পেলে দোকানে বলেছি, না হলে এই কলকাতায় শুধু পিসিকে। পরিচিত কাউকে নিজে খিদের কথা বলা যায় কিনা ভাবিনি কখনো। আর এই সেলিনা ওর সঙ্গে বুঝি আমার একদিন বা দুদিন দেখা হয়েছে। আর কথাও হয়েছে অতি সামান্য। সঙ্গে ধর্মীয় ব্যবধানতো আছে? আর এই সব কিছুকে উপেক্ষা করে এই যে আবদার তা আমাকে অবাক না করে পারেনা, মনে মনে ভাবি আহারে যদি আমার অনেক টাকা থাকতো, তাহলে ও যা যা খেতে চাইতো দাতা কর্ণের মতো সর্বস্ব উজাড় করে দিতাম। কিন্তু আমার পকেটে যে মাত্র ৫ টাকা সম্বল। ভীষণ খিদে তে রুটি তরকারি আর বড় জোর দুকাপ চা খাওয়া যেতে পারে।

    ও আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, কি ভাবছেন প্রান্তিক ভাই, মেয়েটাতো আচ্ছা, বিধর্মী হয়ে লাজ লজ্জা বিসর্জন দিয়ে আমায় লজ্জায় ফেলতে চাইছে, তাইতো? আমি বললাম, তোমার কথা ঠিক নয় সেলিনা। আমি ধর্ম দিয়ে কাউকে বিচার করি না। ধর্ম মানুষের নিজস্ব আচরণ মাত্র। তাহলে কি দিয়ে বিচার করেন? সে কথা বলতে তো সময় লাগবে। তার চেয়ে চলনা সামনের ঐ রেস্টুরেন্টটায়। ওখানে খেতে খেতে বলব। সেলিনা বলল না প্রান্তিক ভাই ওখানে যাব না। ওই রেস্টুরেন্টটা ভালো না। তার চেয়ে বরং হাঁটতে হাঁটতে শিয়ালদার দিকে চলুন। ওখানে প্রাচীর কাছে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। মানুষের ভিড়ও বেশী থাকে না আবার আলাদা কেবিনেরও ব্যবস্থা আছে। খেতে খেতে আপনার কথা শুনব চলুন। আমি ইতস্তত করছি দেখে বলল, কি হল ভয় পাচ্ছেন? না না ভয় পাব কেন? তাহলে? না কিছুনা চল। অবশ্য একথা বলা ছাড়া আমার উপায়ও ছিল না।

    নির্দিষ্ট কেবিনে ঢুকে আমরা মুখোমুখি বসেছি। সত্যি রেস্টুরেন্টটা বেশ ফাঁকা। যে ২/৪ জন আসছেন তারা তাদের নিজেদের মতো করে খেয়ে দেয়ে চলে যাচ্ছেন। ঔৎসুক্য বা কৌতূহল কোনটাই যেন তাদের থাকতে নেই। আমি বললাম কি খাবে বল? আপনার যা ইচ্ছে। আমি দেখলাম লজ্জা করে লাভ নেই। তাই বললাম দেখ সেলিনা, একটা কথা তোমাকে আগে বলে নেওয়া ভাল। আমার পকেটে কিন্তু মাত্র ৫ টাকা আছে। ওটাই আমাকে পথ খরচা দেওয়া হয়। যা কিছু খেতে হবে ওতেই। ও হাসতে হাসতে বলল, তাহলে ফিরবেন কি করে? কেন হাঁটতে হাঁটতে। তোমার যদি তাতে আপত্তি হয় তাহলে ৪ টাকার মধ্যে খেতে হবে। ও বলল, বেশ আমরা হাঁটতে হাঁটতেই ফিরব।

    এরপর আর কথা চলে না। আমি ৫ টাকার মধ্যে যে রকম হয় সে রকম অর্ডার দিলাম। তার সঙ্গে ২ কাপ চা। কিছুক্ষণ চুপচাপ আছি। এরই মধ্যে সেলিনাকে একটু একটু করে বেশ ভালোই লেগে গেল। কত সাবলীল আড়ষ্টতাহীন। ভীষণ প্রণোচ্ছল। ও বলল কি ভাবছেন প্রান্তিক ভাই? না কিছুনা। তা তোমার স্কুল কি ছুটি হয়ে গেছে? না স্কুল এখন বন্ধ। তাহলে? স্কুলেই এসে ছিলাম, একটু কাজ ছিল। হঠাৎ দেখি আপনি আমাদের স্কুলের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। তখন ডাকলে না কেন? আপনাকে আইডেন্টিফাই করতে একটু সময় লেগেছিল। যখন বুঝতে পারলাম আপনিই তখন আপনি বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে গেছেন। দ্রুত পায়ে আপনাকে ধরবার চেষ্টা করছি, আর প্রান্তিক ভাই, প্রান্তিক ভাই, বলে চিৎকার করে চলেছি। কি করে বুঝবো আপনি কারো ধ্যানে এমন নিবিষ্ট যে, চার পাশের কাউকে ভূক্ষেপই করতে চাননা। আবার সেই হাসি, উজ্জ্বল হাসির চমকে তার সারা শরীরে যেন সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে পড়ছে।

    মুগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ভাবি এমন করে কি রেহানা হাসতে পারে? পারেকি এমন করে ভালোলাগার রক্তে দোলা দিতে। আমি বললাম, তোমার মতো অবস্থা হলে আমিও তাই ভাবতাম। কিন্তু আসল কথা তা নয় সেলিনা। তবে আসল কথাটা কি? আমি বললাম থাক ওসব কথা, তোমার পড়াশুনা কেমন হচ্ছে বলো? ও অধৈৰ্য্য হয়ে বলল, দূর প্রান্তিক ভাই, এই পড়াশুনা ছাড়া কি আমরা আর কোন কথা বলতে পারিনা। আমি বললাম, আচ্ছা তুমিই বল আমি শুনি। আমি বলব? শুনতে ভালো লাগবে আপনার। এমন কি বলবে যা আমার ভালো লাগবে না? তারপর অবশ্য বললাম তুমিই বল তোমার কথা শুনতে আমার ভালোই লাগবে। বললাম আমি।

    ও বড় বড় চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে। তারপর নীচু হয়ে খেতে খেতে বলল, জানেন, কাল মা কতকিছু রান্না করেছিলো, আমার জন্মদিন উপলক্ষে। এক সময় মা জানতে চাইলেন, কাউকে বলবি। আমি মাকে বললাম, কোনদিনতো কাউকে বলা হয়, আজ আবার কাকে বলব। জানেন প্রান্তিক ভাই, আমাদের তো কোনভাই নেই, আর সেই যে একদিন আপনি গিয়ে মাকে কি মায়ায় বেঁধেছেন। তাই হয়তো বললেন, রেহানা, ছেলেটা শুনেছি পিসিব কাছে থাকে, মা তো নেই। অবশ্য আমি ওর মা নই, তবু একবার কলেজ থেকে ফেরার পথে ধরে নিয়ে আসিস তো। কেন যে এই পোড়া মনটা তার কথা ভাবে কে জানে। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম মার দুটো চোখ ছলছল করছে। রেহানা মাকে বলল, এই তোমার দোষ মা। সবাইকে আপন করে নেওয়া। তারপর বলল তুমি আসতে বলছো, কিন্তু যদি ও না আসে। যদি আমাদের বিধর্মী ভেবে যে কোন অজুহাতে এড়িয়ে চলে। আমার কিন্তু রেহানার এই অজুহাতটা একদমই ভাল লাগেনি। বলল সেলিনা।

    মা আর কোন কথা বলেন না। কিন্তু মায়ের জন্য আমার মনটা এমন করে উঠলো যে, মনে হল মা শুধু একা কাঁদছেন না আমিও কাঁদছি। আমি রেহানাকে বললাম, আপা, তোমার সাথে কি দেখা হবে না প্রান্তিক ভাইয়ের। ও চিরদিনই একটু কম কথা বলে। মেপে কথা বলে। আমার মতো উচ্ছল নয়। আমার মতো আনন্দ বা দুঃখ অবলীলায় প্রকাশ করতে পারে না। তাই অনেকে ওকে দাম্ভিক বলে, আবার উন্নাসিক বলে। আসলে ওর মনটা শিশুর মত এল। বাবা ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন, কিন্তু বছর খানেক আগে এক বাস দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু হয়। আমরা হঠাৎ বড় অসহায় হয়ে পড়ি। ডালিম নামে একটি ছেলে, প্রেসিডেন্সিতে আপার থেকে সিনিয়র ক্লাসে পড়তেন। তিনিই সংবাদটি নিয়ে আসেন। তারপর, ধীরে ধীরে একদিন সব শোকের যেমন অবসান হয়, আমাদের ও হয়েছিল! ডালিম ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক ধীরে ধীরে গাঢ়তর হয়েছিল, রেহানা মনে হয় আস্তে আস্তে ওকে ভালবেসেও ফেলে। কিন্তু বড় চাপাতো। তাই তার ভালোবাসার কোন প্রকাশ ছিল না। আমাদের দুই বোনের সামনে একদিন মা বলেছিলেন, রেহানা ওকে কি তোর পছন্দ? আমরা অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। রেহানা অন্য ঘরে পালিয়ে বাঁচতে চাইল। আমি বললাম, তুমি কি ডালিম ভাইয়ের সাথে রেহানার বিয়ে দিতে চাও? জানতে চাইলাম তাহলে ওর পড়াশুনার কি হবে? তাছাড়া রেহানা বা তোমার পছন্দেতো সব হবে না। ডালিম ভাইয়েরও একটা নিজস্ব পছন্দ আছে। আছেন তার অভিভাবকেরা। আর তারা যদি রাজি না হন, কেন অপমানিত হতে যাবে। মা বললেন আমি ডালিমের সাথে কথা বলেছি ও রেহানার মত জানতে চেয়েছে তা ছাড়া ও আরো একটা কথা বলেছে যে রেহানা রাজী থাকলে ও অপেক্ষা করবে যতদিন না ও প্রতিষ্ঠিত হয়, ওর শিক্ষা শেষ না হয়।

    আমি বললাম, এ তোমার ঠিক হচ্ছে না মা। কি দরকার এই ভাবে জড়িয়ে পড়ার। আমাদের পড়াশুনা করতে দাও। আমরা নিজেরা দাঁড়াতে পারলে তোমার আর কোন চিন্তা থাকবে না। মা বলেছিলেন না থাকবে না ঠিক। কিন্তু আমাদের সমাজে কটা মেয়েকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়? আমি মা কে বললাম, সবটাই সমাজের ঘাড়ে চাপিয়ে লাভ নেই মা! আমাদের দাঁড়াবার ইচ্ছেটাও জোরদার নয়। তারপর জোর দিয়ে বললাম না মা, ও চিন্তা তুমি ছেড়ে দাও। মা বললেন ডালিম আসলে কি বলব? বলবে ও এখনো ছেলে মানুষ। ও সময় চাইছে। এত কথা বলার পরে আমার একটা কথা মনে হল, না, আমার মনে হয় এটা বলা ঠিক হয়নি। কারণ মা তো আমার জন্য ডালিমকে পছন্দ করেননি। তিনি পছন্দ করেছেন রেহানার জন্য। আর ওর মনে যদি অন্য কোন ভাবনা থাকে। তাই বলার পরে বেশ অনুশোচনা হয় আমার।

    কিন্তু প্রান্তিক ভাই! সেই ডালিম ভাই কি করলেন জানেন? বললাম কি? যে ডালিম ভাই রোজ একবার আসতেন তার দেখা নেই ৩/৪ দিন। পরে একদিন খুঁজে খুঁজে আমার স্কুলে এসে উপস্থিত। গেটে দাঁড়িয়ে আছেন ছুটির অপেক্ষায়। আমি বেরিয়েই দেখি ডালিম ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। বললাম ডালিম ভাই আপনি? কোথাও গিয়েছিলেন বুঝি? উনি বললেন না। তাহলে আমাদের ওখানে যান না কেন? কোন কথা না বলে উনি হাঁটতে লাগলেন। আমিও হাঁটতে লাগলাম ওঁর পিছন পিছন। বললাম জানেন, এ কদিন আমরা। সব সময় আপনার কথা ভেবেছি। ও তাই বুঝি। একেবারে নিরাসক্ত উত্তর। বললাম, কেন বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? হঠাৎ ও পিছন ফিরে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো। আমি চমকে উঠে বললাম কিছু বলবেন? ও বলল তুমি ভাবতে আমার কথা? বাঃ আমরা কি আমাকে বাদ দিয়ে। ও তেমনি ভাবে বলল আমি স্পষ্ট কবে জানতে চাইছি তোমার কথা। তুমি ভাবতে কিনা? আমি সরল মনে বললাম হ্যাঁ, আমিও ভাবতাম ডালিম ভাই। কতদিন আপনি আসেননা। সত্যি, বলে ও আমার হাতটা চেপে ধরল। আমি অবাক হয়ে বললাম, ছিঃ ডালিম ভাই এসব কি করছেন, হাত ছাড়ন। কণ্ঠে যেন কি ছিল, ও আমার হাত ছেড়ে দিল কিন্তু তার পকেট থেকে একটা ভাজ করা কাগজ আমার হাতে জোর করে গুঁজে দিয়ে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেল।

    চিঠিটা যে রেহানার নয়, সেটুকু বুদ্ধি তখন আমার হয়েছে প্রান্তিক ভাই। একবার ভেবেছিলাম ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিই চিঠিটা। কিন্তু ঐ যে কৌতূহল, নারী মনের যা স্বাভাবিক স্বভাব আর কেবল নারীমনই বা বলি কেন যৌবনের এতো স্বাভাবিক কৌতূহল। চিঠিটাকে লুকিয়ে ফেললাম আমার ব্লাউজের মধ্যে। একবার ভেবেছিলাম রাস্তায় কোথাও বসে পড়ি। তারপর ভাবলাম না থাক। বাড়ী গিয়েই পড়ব।

    আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম ওর কথা, যেন নিরাপদ আশ্রয় স্থল ভেবে সব কথা বলা যায় আমাকে। তারপর সেলিনা বলল শুনবেন ও কি লিখেছিল? আমি বেশী কৌতূহল দেখিয়ে বললাম, তোমার যদি মনে হয় এরপরের কথাও বলা যায় তাহলে বল। কেন আপনার কি কোন কৌতূহল নেই? বললাম, দেখ সেলিনা, কৌতূহল থাকা ভালো, কিন্তু অকারণ কৌতূহল ভালো না। আমি বিশ্বাস করি, যেটুকু বলার প্রয়োজন বলে তুমি মনে করবে তা তুমি বলবে। আসলে কারো মনের কথা জানার অধিকার কি জোর করে কিছু শোনা যায়? হঠাৎ সেলিনা বলল, এখানে ভালো চিকেন পকোড়া হয়, অর্ডার দিননা প্রান্তিক ভাই! শুধু বসে বসে গল্প করলে ওরা কিছু ভাবতে পারে। বাধ্য হয়ে আমাকে অর্ডার দিতে হয়।

    সেলিনা বলে চলে, বাড়ী ফিরে বাথরুমে গিয়ে ডালিম ভাইয়ের চিঠিটা পড়ি। তাজ্জব ব্যাপার প্রান্তিক ভাই ও লিখেছে ও আমাকেই চায় রেহানাকে নয়। কিন্তু সে কথা বলতে গিয়ে ও আমাদের দুজনের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের যে বর্ণনা দিয়েছে তা শুনলে লজ্জায় কানে আঙুল দিতে হবে। আরো যে সব কথা লিখছে তা আমি বলতে পারব না। একবার ভেবে ছিলাম রেহানাকে দেখাব চিঠিটা ও বুঝুক কেমন পুরুষকে ও ওর মনের মানুষ করতে চেয়েছে, ঘৃণায় রাগে আমার সমস্ত শরীরটা যেন রিরি করতে থাকে। ভাবলাম ওকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। তারপর মনে হল দূর এ সব করে কী হবে। আসলে তো ও কোন মেয়ের রাগ প্রকাশেরও যোগ্য নয়। তাইতো কাউকে কিছু বলা হল না। না রেহানা না মা। কিন্তু কাউকে কিছু না বললেনও ওর বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ আমার মনের মধ্যে পুঞ্জিভূত হতে থাকে বিস্ফোরণের অপেক্ষায়।

    তারপর একদিন আসে ডালিম। রেহানাকে ওর সামনে একলা রেখে জানালায় চোখ রাখি। কিন্তু অনুভব করতে পারি, ওর দুটি উৎসুক চোখ সেলিনাকে খুঁজে ফিরছে। রেহানা চা করতে ভিতরে গেলে আমি তার চিঠিটা নিয়ে এসে দাঁড়াই তার সামনে। আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ওর দুটি চোখ। আস্তে আস্তে ও বলে, আমার চিঠির উত্তর দিলে না কেন। সেলিনা বলল আপনি আর আসেন কই। আমি তো উত্তর লিখে বসে আছি আপনার জন্য। ও বলে, এইতো আমি এসেছি, এবার দাও। আর তার সঙ্গে সেই জিনিষটা। আমি কৌতূহলী হয়ে জানতে চাই কি? ওই তো যা আমি চেয়েছি। আমি বললাম এই দিনের বেলায়? তাহলে রাত্রে আসব? আমি একটু ভেবে নিয়ে বললাম না তার আর দরকার নেই, আপনি আসুন আমি এখনি দেব। কিভাবে? তা তো আপনার জেনে দরকার নেই। আমি দেব আপনি নেবেন এইতো।

    ওর শরীরে এক অদম্য দোদুল্যমনতা দেখে আমার হাসি পেল। বললাম, আগে থেকে এমন কাঁপতে আরম্ভ করলে নেবেন কি করে? সব যে ঝরে পড়ে যাবে। ও বলল, কিছুই ঝরে পরবেনা তোমার দেওয়া দান আমি দু হাত পেতে নেবো। তাই বুঝি, আমি হাসতে লাগলাম। ও তখন আমার বুকের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।

    রেহানা এসে দাঁড়ালো পাশে। আমি ওকে জোরে এক ধাক্কা দিলাম। আর তাতে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল ও। তারপর বললাম, ডালিম ভাই আমি রেহানা নই। আমি সেলিনা। নিয়মিত বক্সিং করি।

    রেহানা এই হঠাৎ আক্রমণে দিশেহারা হয়ে ডালিমকে ধরতে গেলে আমি চিৎকার করে বলি, একদম ছুবিনা ওকে। ও একটা নরকের কীট। ও ভেবেছে কি? তারপর ডালিম ভাই-এর কাছে গিয়ে তুলে দিয়ে বললাম, যান এক্ষুনি এখান থেকে চলে যান। আর কোন দিন আসবেন না এখানে। আর মনে রাখবেন, আমি সেলিনা রহমান। এবারের ক্লাব প্রতিযোগিতায় বক্সিংএ প্রথম হয়েছি। আমি একাই যথেষ্ট আমাদের দু বোনকে রক্ষা করার জন্য। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রেহানা তখনো। আর ডালিম তখন উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেছে। ও চলে গেলে আমি রেহানাকে আমার বুকের উপর টেনে নিয়ে বললাম আমাকে ক্ষমা করিস আপা। আসলে ও একটা শয়তান, বলে ডালিমের লেখা চিঠিটা তার হাতে তুলে দিলাম। রেহানা এক নিমেষে চিঠিটা পড়ে ফেলে কান্নায় ভেঙে পড়লো আমার বুকের পরে। আমি জানি প্রান্তিক ভাই সেদিন ও কত বড় আঘাত পেয়েছিল। যার জন্য থরে থরে সাজিয়ে ছিল ভালবাসার ডালি তার যে এমন পরিণতি হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেনি। তাছাড়া সহ্য করবার শক্তিতে সবার এক নয়। সেলিনার কথা শুনে আমার মনের মধ্যে যে কী হচ্ছিল সে শুধু আমিই জানি। মানুষের মনের মধ্যে এমন শয়তানও বাস করে, ভাবতেও অবাক লাগে। প্রেসিডেন্সির ব্রিলিয়ান্ট ছেলে ডালিম, তার মনটা এমন কুৎসিৎ! ভালবাসা, শ্রদ্ধা, মায়া, মমতা এসব কিছুই নয়? সত্যি শুধু শারীরিক ঐশ্বৰ্য্য।

    সেলিনা বলে চলে, তারপর থেকে নিজেকে ও আরো গুটিয়ে নিয়েছে নিজের মধ্যে। তবু বলেছিলাম, মাকে আঘাত দিবি? যা না একবার কলেজে, প্রান্তিক ভাইকে বলনা একবার আসতে।

    ফিরে এলে মা জানতে চাইলেন, এলো না ছেলেটা? সংক্ষিপ্ত উত্তরে রেহানা বলেছিল, দেখা হয়নি। আমার কিন্তু মনে হয়েছিল এমন কিছু ঘটেছে যা সে বলতে চায়না। তারপর বলল বলবেন প্রান্তিক ভাই, কি হয়েছিল এমন, কেন এলেন না আপনি?

    আমার সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগল। রেহানা যে এত অভিমানী তা জানব কি করে? অথচ সত্যি কথাটাও বলতে পারছি না, তাতে হয়তো রেহানাকে ছোট্ট করা হবে। সেলিনা বলল, এত কি ভাবছেন প্রান্তিক ভাই? রেহানার সাথে ভুল বোঝাবুঝি কিছু হয়েছে?

    আমি সেলিনাকে যতই দেখছি ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি। ও যে ডালিমকে বলেছে, আমি রেহানা নই আমি সেলিনা। আমাদের দু বোনকে রক্ষা করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। সেলিনার উপর বিশ্বাস যেন আমার বাড়তে থাকে। আমি সেলিনাকে বললাম, তুমিতো যথেষ্ট বুদ্ধিমতি, রেহানাকে তুমি ভালভাবেই জান। তাহলে তার কথায় তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না কেন? হচ্ছেনা কারণ ওটা বিশ্বাস যোগ্য কথা নয় তাই। তাছাড়া আমি ওকে এত জানি যে ওর মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হওয়া সম্ভব নয়। তা ওর চোখ দেখে বুঝতে পারি। কিন্তু আমারই ভুল হয়েছে প্রান্তিক ভাই আপনি যে রেহানার থেকেও এক কাঠি উপরে এ সত্য আমার জানা ছিল না।

    তারপর হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে পড়ে বলল চলুন যাওয়া যাক। আমি বললাম, হ্যাঁ তাই চল। আমিও উঠে পড়লাম। ও আমাকে কোন দাম দিতে দিল না। বেশি জোরও করতে পারলামনা। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কাল ওর জন্মদিন ছিল। কিন্তু কালকের দিনটা তো আর ফিরে আসবেনা। তাই বললাম, তোমার জন্মদিনটা আমার মনে থাকবে সেলিনা। আগামী জন্মদিনে আমি নিশ্চয়ই যাব। ও হাসতে হাসতে বলল, সত্যি আপনি পাগল আছেন প্রান্তিক ভাই! আগামী জন্মদিন মানেতো আরো এক বছর পরে। ততদিনে দেখবেন সব গোলমাল হয়ে গেছে। তার থেকে চুপি চুপি একটা কথা বলি, কাউকে বলবেন না কিন্তু। কৌতুক ছড়িয়ে পড়েছে তার উজ্জ্বল দুটি চোখে। আমি তখনো কিছু না বলে চুপ করে আছি দেখে ও বলল, আসছে রবিবারের পরের রবিবার রেহানার জন্মদিন। ও কিন্তু ওর জন্মদিনের জন্য কোন আয়োজন মাকে করতে দেবেনা। মা কত সাধ্য সাধনা করেও একটা জন্মদিনের পোষাকও পরাতে পারবেনা তাকে। সেদিন সে উপোস করবে। খাবে তার পরের দিন, যাতে জন্মদিনে কিছু না খেতে হয়। আমি অবাক হয়ে বললাম, এমন কথা তো শুনিনি কখনো। সত্যি অবাক হচ্ছি তোমার কথা শুনে। তুমি সত্যি বলছ তো। সেলিনা বলল, এতক্ষণ কি তবে সব আমি মিথ্যে কথা বলেছি। যাকগে গোপন কথাটি বলে দিলাম। এবার যা ভালো বুঝবেন করবেন। আর একটা কথা, রেহানা খায়না বলে, ও দিন কিন্তু আমাদেরও উপোষ করতে হয়। না হলে দোকান থেকে খাবার কিনে এনে খেতে হয়। তবে বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন কিন্তু রেহানার জন্ম দিন ঘরোয়া ভাবে হলেও ভালো ভাবেই পালন করা হতো। জানতে চাই তবে এখন হয়না কেন? সেলিনা বলল আসলে ওর জন্মদিনেই বাবার এক্সিডেন্টটা হয়, আর তা ওকে এমন ভাবে আঘাত দেয় যে, ঐ দিনটাকে ও প্রানপণে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারপর আমাকে চমকে দিয়ে বললেন একি আপনি আবারও বসে পড়লেন যে। এরপরও বসতে গেলে আমার ক্ষমতায় কুলোবেনা। চলুন বলে হাসতে থাকে সেলিনা। সেলিনার যৌবন যেন উপছে পড়ছে।

    রাস্তায় এসে সেলিনাকে বললাম, আমার একটা কাজ আছে। একটু দেরি হবে, তুমি বরং চলে যাও। সামান্য হেসে বললাম, তোমার গোপন কথাটা আমার মনে থাকবে, আর তোমার কথাও মনে থাকবে। আসি বাই বাই।

    ও চলে গেল। আসলে আজতো আমার কোন কাজ নেই। কিন্তু এমন একটা সুন্দর আর জোরালো মনের সঙ্গে পথ চলতে বড়ই তৃপ্তি লাগছিল। ও চলে গেলে আমি তাই আরো খানিকটা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে কখন যে কি কারনে শিয়ালদা স্টেশনে চলে এসেছি বুঝতে পারছি না।

    আবারও সেই মিনতি সেন। বুঝতে পারিনা, কেন মিনতি সেনের মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আর কেনইবা মিনতি সেন বার বার টানে আমায়, কি যে দুর্নিবার আকর্ষণ মিনতি সেন আমার কাছে তার কোন ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। তাইতো নিজের অজান্তেই সাউথ গামী ট্রেনে উঠে পড়ি আর নেমেও পড়ি ঢাকুরিয়া স্টেশনে। আর সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে মিনতি সেনের বাড়ী।

    স্ট্রীট লাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে বাইরে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন মিনতি সেন। আটপৌরে পোক। চুল এলায়িত। তার মানে হয় অফিসে যাননি, না হলে অফিস থেকে ফিরে এসেছেন অনেক আগে। বেল দিতেই, উপর থেকে বললেন খোলা অছে। চলে এস, তার মানে আমাকে এর মাঝে কখন যেন দেখে নিয়েছেন এক ফাঁকে।

    সিঁড়ির দরজাটা ভেজানো ছিল। আবার তেমনি ভেজিয়ে দিয়ে আমি উপরে চলে এলাম। আমাকে দেখে যে উনি অখুশী হন নি তা তার চোখমুখ দেখে বুঝতে পারি। বললেন, কোথায় এসেছিলে অনুতপাদের বাড়ীতে? ওকে নিয়ে এলেনা কেন? বললাম, না পিসি আমি সোজাসুজি আপনার এখানে চলে এসেছি। ভীষণ আনন্দিত হলেন মিনতি সেন। মুখে বললেন, শুধু আমার কথা মনে করে আমার কাছে এসেছে, কি যে ভালো লাগছে, বল কি খাবে?

    আমি বললাম, বাড়ীতে যা আছে, আপনি কিন্তু দোকানে যেতে পারবেন না। তাই হবে। উনি উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি এবং টুকি টাকি আরো কিছু নিয়ে এলেন।

    মিনতি সেনদের এই রাস্তা মুখী বারান্দাটা বেশ বড়। কয়েকটা চেয়ার পাতা আছে এবং একটি টি টেবিল। উনি আমার হাতে খাবরের প্লেটটা তুলে দিয়ে বললেন, আচ্ছা প্রান্তিক তুমি আমায় পিসি বলে ডাক কেন বলত। আমি বললাম, ঠিক কোন কিছু ভেবে বলিনা, তবে আপনার যদি আপত্তি থাকে, তবে যা বলে ডাকতে বলবেন, তাই বলেই ডাকব। উনি হেসে ফেললেন, বললেন, তোমার মনটা এত সরল। তোমাদের মতন ছেলে মেয়েরা আছে বলেই এখনো পৃথিবীটাকে ভাললাগে। তারপর প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললেন, ওই যে সেদিন তোমার সঙ্গে যে মেয়েটা এসেছিল, কি যেন নাম .. হ্যাঁ মনে পড়েছে অশ্রুকণা। তোমরা এক সাথে পড়? বললাম হ্যাঁ। মেয়েটি খুব ভালো তাইনা? আমি সন্দেহতুর হয়ে বললাম কেন বলুন তো। না এমনি, ওকে আমার ভীষণ আপনার মনে হয়েছিল। সেদিন জলযোগে তো ওর সঙ্গেই দেখা হয়ে ছিল তাই না প্রান্তিক? আমি সম্মতি সুচক ঘাড় নাড়ি।

    তারপর খাওয়া শেষ করে বললাম এবার তা হলে উঠি। এই তো এলে। বেশী রাত হলে পিসি চিন্তা করবেন। তুমি যে বলেছিলে তোমার পিসি আমায় খুঁজছিলেন, কই তিনি তো ফোন করলেন না। হয়তো সময় পাননি, হয়তো বা যে জন্য খুঁজে ছিলেন তা মিটে গেছে। হবে হয়তো। তারপর একটু থেমে বললেন নীলাঞ্জনা তোমার কেমন পিসি। আমারই মত কি? হঠাৎ এ প্রশ্নের কারণ কি, আমার মন সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠে।

    কঠিন, অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন। এর উত্তর আমি কিভাবে দেব। তিনি যদি সহজ ভাবে জানতে চাইতেন নীলাঞ্জনা আমার কেমন পিসি, উত্তর দেওয়া সহজ হতো। হয়তো সত্যি কথাই বলতাম, গ্রাম সম্পর্কে পিসি। কিন্তু ঐ যে আমার মতো কি। প্রশ্নটা জুড়ে দিয়ে আমার সবকিছু কেমন এলো মেলো করে দিলেন। কোন উত্তরই দেওয়া হয়না। চুপ করে আছি দেখে বললেন, বললে নাতো। আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বললাম আমাদের গ্রামের মেয়ে। গ্রাম সম্পর্কে আমার পিসি হয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, সত্যি কারে দায়িত্ব নেওয়ার যার অধিকার আছে, রক্ত দিয়ে তার বিচার করা যায় না। এই যে বলতে গেলে আপনি তো আমার কেউ নন। অথচ কেন যে আপনার কথা মনে হয় সব সময় বুঝতে পারিনা। সম্পর্ক দিয়ে কি এর বিচার করা যায়? তবে যদি আপনি আমায় অস্বীকার করতেন এড়িয়ে চলতেন, তখন হয়তো মনে হতো আপনিতো আমার কেউ না।

    ওঘর থেকে কে যেন বললেন, কার সঙ্গে কথা বলছিস মিনতি? পিসির বাবার কণ্ঠস্বর। বললেন, প্রান্তিক এসেছে। ওই যে কয়েক দিন আগে এসেছিল, তুমি উঠোনা আমি ওকে তোমার কাছে নিয়ে আসছি। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবা চোখে কম দেখেন, আর সব সময় ভাবেন আমার কি হবে?

    মিনতি পিসি কেন এসব কথা বললেন জানিনা, আমি গিয়ে ওনাকে প্রণাম করে বললাম কেমন আছেন? অবাক হলেন যেন বৃদ্ধ ভদ্রলোক। কিন্তু কোন রকম প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করে বললেন, মিনতি ওকে খেতে দিয়েছিস? তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন, তোমার নামতো প্রান্তিক? মিনতি বলছিল। তা তুমি কি করছ? আমি বিজ্ঞান নিয়ে অর্নাসে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি। খুব ভালো খুব ভালো, বৃদ্ধ তারিফ করলেন আমাকে। তারপর বললেন, যাও মিনতির সঙ্গে কথা বল, আমার মতো বুড়োর সঙ্গে তোমার আর কতক্ষণ ভালোলাগবে। বললাম, আমার কিন্তু আপনাকে ভালোই লাগছে। তারপর ওনার বিছানার একেবারে কাছে এসে বললাম, আপনার মাথাটা একটু উঁচু করুনতো দাদু, আমি বালিশটা দেওয়ালের সঙ্গে ঠেশ দিয়ে দিচ্ছি, আপনি বসুন। কি সব সময় শুয়ে থাকেন।

    তারপর আমি ওনার মতামতের অপেক্ষা না করে ওনার মাথাটা নিজের হাতে একটু উঁচু করে বালিশটাকে ঝেড়ে দেওয়ালে ঠেশ দিয়ে ওনাকে সাহায্য করে বসিয়ে দিলাম। তারপর নিজেই বিছানার অগোছালো চাদরটা তুলে নিয়ে, মাথার জট পাকানো চুল গুলোকে আঁচড়িয়ে দিলাম। খোঁচা খোঁচা দাড়ি তা আর চিরুনি দিয়ে ঠিক করা সম্ভব হয়না। গায়ের কোচকানো জামাটা খুলে ফেলে পাউডারের কৌটো থেকে কিছু পাউডার নিয়ে তার সারা গায়ে ছড়িয়ে দিলাম, পাশের আলনা থেকে একটা পরিস্কার জামা তুলে নিয়ে তার গায়ে গলিয়ে দিয়ে বললাম, এমন নোংরা হয়ে থাকেন কেন? দাঁড়িও কাটেননি। দেখবেন কয়েকদিন পরে ওখানে পোকা কিল বিল করছে। কালই নাপিত ডেকে জঙ্গল পরিস্কার করে ফেলবেন। আর রোজ না হলেও আমি পিসিকে বলে যাব, যেন একদিন অন্তর একদিন বিছানার চাদর বদলিয়ে দেন। এমন নোংরা ভাবে কি বাঁচার স্বপ্ন দেখা যায়? পিসি যে কি করে! বৃদ্ধ মন্মথনাথ। সেন। অবাক হয়ে আমার কাজ দেখছিলেন আর মনে মনে কি যেন ভাবছিলেন। কেন যে এই কাজগুলো উপযাচক হয়ে করলাম জানিনা। হয়তো মিনতি সেনের জন্য, উনি আমার বাবা, উনি আমার একমাত্র আপনজন কথাটা আমায় প্রভাবিত করে থাকবে। আপনজনের সিঁড়ি বেয়েই তো আরো আপন জনের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। সে যাই হোক এই কাজগুলো করতে আমাকে যেমন কোন জেদ করতে হয়নি। তেমনি বৃদ্ধ মন্মথ সেনও কোনরকম বাধা দেননি। মিনতি সেন অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কে করল তুমি? আমি নীরবে মাথা নাড়লাম এবং মিনতি সেনের হাত থেকে চায়ের প্লেটটা নিয়ে তার হাতে দিয়ে বললাম, দাদু চা খান, কিন্তু আপনার চশমা কোথায়? মিনতি সেন দেরাজ থেকে চশমা জোড়া বের করে আমার হাতে দিলেন। আমি চশমাটা তার চোখে পরিয়ে দিয়ে বললাম দেখুন তো আগে আমাকে কখনো দেখেছেন কী না। কিন্তু আমার এত আগ্রহের কোন জবাব দিলেন না উনি। আমি এরপর দিনের কাগজটা খুঁজে পেতে তার হাতে দিয়ে বললাম, সারাদিন শুয়ে থাকেন কেন? কাগজ, বই, ম্যাগাজিন যা পাবেন তাই পড়বেন। এইবার চা খেতে খেতে কাগজটা পড়ে ফেলুন তো। আমি একটু পরে এসে জিজ্ঞাস করব কি পড়লেন। বলতে হবে কিন্তু। এতক্ষণে হেসে ফেললেন বৃদ্ধ। বললেন পড়া ধরবে তো! বেশ তাই হবে। কিন্তু দাদুভাই পাশ না ফেল তা কিন্তু বলতে হবে তোমায়। এই যে মুহূর্তে আপন জনের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলো, তাতে মনটা ভীষণ ভাল হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখি মিনতি সেনের দৃষ্টি হতে বিস্ময় যেন আর কাটতে চায় না। তার বিস্ময় আমার এই কাজের জন্য না, তার বাবার এই সহজ হয়ে ওটা। বুঝতে পারি না।

    এরপর মিনতি সেনের সঙ্গে আবার সেই বাইরে এসে বসলাম আমি। চা খেতে খেতে বললাম, আপনার চা যে ঠান্ডা হয়ে গেল পিসি। এই খাই, বলে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে এক চুমুক খেয়ে আবার রেখে দিলেন।

    বললাম, কি এত ভাবছেন। উনি ধীরে ধীরে বললেন, কি যে ভাবছি তা তোমাকে বোঝাবো কি করে প্রান্তিক? এই যে দেখছ আমার বাবা, ব্যাঙ্কের একজন সিনিয়র রিটায়ার্ড অফিসার। আজ ১০ বছর হয়ে গেল চাকরী থেকে অবসর নিয়েছেন। আমার বাবা যে কি আমুদে মানুষ ছিলেন তা তোমাকে বোঝাতে পারবনা। একদিন তিনি একটি ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা প্রায় পাকা করে এসে আমার মাকে বললেন, বুঝলে গিন্নী, আমি মিনতির বিয়ের ব্যাপারটা পাকা করে এলাম। মা জিজ্ঞাস করলেন একেবারে পাকা? ছেলেটি কে? বাবা কৌতুক করে বললেন, সে তোমাকে একেবারে আশীবাদের দিনই বলব। মা বললেন। তা হলে ওটুকুই বা আমার জন্য বাকী রাখলে কেন? সেকি হয় তুমি যে মা, আমার যে দাবী, তোমারও তো সেই একই দাবী। মা আর কথা বাড়াননি। ছেলের বাড়ী থেকে আশীর্বাদ করতে এলেন, সঙ্গে ছেলেও এলেন। আমার কোন মতামত নেন নি বাবা। আর তার ব্যক্তিত্ব এমন ছিল যে তার সামনে গিয়ে তার বিরুদ্ধাচারণ করতে আমাদের বুক দূর দূর করে কাঁপতো। কিন্তু ছেলেকে দেখে মা বেঁকে বসলেন। বাবাকে ভিতরের ঘরে ডেকে নিয়ে বললেন এ বিয়ে হবে না। বাবা বললেন কেন? মা বললেন, আমার সাফ কথা, আমি যখন বলেছি এ বিয়ে হবে না তখন হবে না।

    আমার তখন মনের অবস্থা বুঝতে পারছ প্রান্তিক। বাবা মা ঝগড়া করে চলেছেন, অথচ আমার কথা কেউ ভাবছেন না। বাবা তখনো বলে চলেছেন, আমি মেয়ের বাবা, তোমার স্বামী, এ বাড়ীর অভিভাবক, আমি বলছি এ বিয়ে হবে। তোমার ওঘরে যাওয়ার দরকার নেই। বাবা চলে যেতে উদ্যত হয়েই মা বললেন শোন, তোমার জেদের কাছে আমি বারবার হার স্বীকার করেছি। তার একমাত্র কারণ তুমি বাড়ীর অভিভাবক। একমাত্র অর্থ উপার্জনকারী। আমি মা হয়েও কোন কথা বলার অধিকার নেই, কারণ আমার কোন আর্থিক ক্ষমতা নেই। আমিও তোমার উপর নির্ভরশীল। তাইতো তোমার মতের বিরুদ্ধে আমিই মিনতিকে চাকরি করতে পাঠিয়েছি, যাতে সে স্বাবলম্বী হতে পারে আমার মত অসহায়তার শিকার না হতে হয়। আজও আবার সেই অর্থ ক্ষমতার দম্ভে নিজের ইচ্ছেটাই চাপিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু ভাল করে শোন, আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যদি তুমি ওর বিয়ে দাও, তা হলে আমার মৃতদেহ মাড়িয়েই তোমাকে তা করতে হবে। আমি বেঁচে থাকতে তা হবে না। মিনতি সেন বললেন, আমিতো শিউরে উঠি, মায়ের হল কি! কিন্তু মায়ের এই জেদে বাবার জেদও আরো বেড়ে গেলো। তার মুখের উপর এই পরিবারের যে কেউ কথা বলতে পারে, তা ছিল তার কল্পনার অতীত। তার পৌরষত্ত্বে আঘাত। তিনি তা মেনে নেবেন কেন? দম্ভভরে বললেন প্রয়োজনে তোমার মৃতদেহ মাড়িয়েই ওর বিয়ে হবে। আমি যাচ্ছি। যাওয়ার আগে তাই বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে গেলাম বেরিয়ে নাটক করবার চেষ্টা করোনা। বাড়ীতে অতিথি তাদের কোন অমর্যাদা হতে আমি দেব না।

    তারপর জেদী পুরুষ আমার বাবা বাড়ীর কাজের লোকদের দ্বারা এমন নিখুত ভাবে অনুষ্ঠানটি শেষ করলেন যে, কারো কিছু বোঝার কোন উপায় রইল না।

    দিনের শেষে অতিথিদের বিদায় দিয়ে ফিরে আসতে আসতে যে ৪/৫ ঘন্টা সময় কেটে গেছে তাতে যা হওয়ার তাই হয়ে গেছে। মা কি ভাবে অতগুলো ঘুমের ওষুধ জোগাড় করেছিলেন তা উনিই জানেন। যখন দরজা খুলে বাবা ভিতরে ঢুকলেন তখন সব শেষ, তবুও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো মাকে, কিন্তু যিনি সব কিছুর উর্ধ্বে চলে গেছেন, তার জন্য কেইবা কি করবে। মিনতি সেনের গলাটা বুঝি সামান্য কেঁপে যায়। বলে চলেন বাবার মতো পুরুষের এই বোধ হয় প্রথম পরাজয়। মা কোথাও কিছু লিখে যাননি। সুতরাং বাবাকে গ্রেপ্তার হতে হল। কিন্তু বাবার এক কথা আমি কিছুই জানিনা। বিচারক আমাদের কোন কথা শুনলেন না। বাবাকে তিন বছর সশ্রম কারাদন্ড দিল। ছেলেদের বাড়ীর থেকে ওরা অবশ্য এসেছিলেন। ছেলেটির নাম ছিল প্রতীম। শিবপুর কলেজ থেকে বি, ই, পাশ। ভালো কোম্পানিতে গজ করেন। বাবার ভেল হওয়া সত্বেও তারা আমাকে তাদের ঘরের বৌ করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমিই রাজী হতে পারিনি।

    এতক্ষনে থামলেন মিনতি সেন। মনে মনে ভাবছিলাম, কোন মানুষকে উপর থেকে দেখে বোঝা যায় না কার জীবনে কি ঝড় বয়ে চলেছে। মিনতি সেনেরও যেন আর কিছু বলার নই।

    আমি ডাকলাম পিসি? চমকে উঠলেন মিনতি সেন। বললেন কিছু বলছ? জানতে চাইলাম কেন আপনার মা এই বিয়েতে একদম রাজী না হয়ে মৃত্যুকে বেছে নিলেন। জানতে পেরেছিলেন কোন দিন, কিসের জন্য তার এই জেদ? একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে বললেন, না প্রান্তিক জানতে পারিনি। জানবার চেষ্টা করেছিলেন? যিনি কিছুই বলে যাননি সে চেষ্টা করব কি করে? আপনার বাবাও কিছু অনুমান করেননি? জানিনা ঠিক। যদি কিছু অনুমান করেও থাকেন আমাকে বলেননি কিছুই।

    জেল থেকে ফিরে এসে ঐ যে বিছানা নিয়েছেন, ওখানেই তার দিন রাত কাটে। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে আমার সঙ্গেও কথা বলেন না। কোন কিছু করতে গেলে, তিনি সজোরে প্রত্যাখ্যান করেন। নিজের কাজ তিনি নিজেই করেন। আজই প্রথম দেখলাম তোমাকে উনি কোন বাধা দেননি।

    আমি বললাম, প্রতীমবাবু আপনার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেননি? হ্যাঁ করেছিলেন। আমি যখন তার বাবা মাকে না করে দিয়েছিলাম। তখন তার একটা চিঠি পেয়ে ছিলাম আমার অফিস ঠিকানায়, লিখেছিলেন, সুচরিতাসু,

    আমাকে আপনারা ভুল বুঝবেন না। বাবা মাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। জানি আমাকেও ফিরিয়ে দেবেন তবু যদি জানতে পারতাম, আমার অপরাধ কোথায়? হয়তো বলবেন এ মিলন ঈশ্বর চাননি। ঘটনার গতি হয়তো তাতে বিশ্বাসের আলপনা আঁকতেও পারে। কিন্তু এক্সিডেন্টতো এক্সিডেন্টই। এটাও জানিনা তিনি কেন এমন চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমি কোন অজুহাত খাড়া করছিনা, যদি সব কিছুকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন, আমাকে জানাবেন। আমি অপেক্ষা করব, ইশ্বর আপনাকে শান্তি দিন। কল্যাণাকাঙ্খী প্রতীম।

    মনে মনে ভাবলাম, এতবড় মনের মানুষকে আমি খারাপ ভাববো কি করে? বললাম, আপনি উত্তর দিয়ে ছিলেন? না দেওয়া হয়নি। কেন দিলেন না? মায়ের কথা মনে করে। হয়তো ঠিক কথাই বলেছেন মিনতি সেন। যার জন্য তার মা মৃত্যু বরণ করলেন, তাকে কি করে জীবনসাথ হিসাবে বেছে নেবেন তিনি? তবু জিজ্ঞাসা করতাম প্রতীমবাবু কি পরে কোথাও বিয়ে করেছেন? জানিনা। তিনি এখন কোথায় আছেন? তাও জানিনা। বললাম, ওনার কোন অফিস ঠিকানাই আপনি জানেননা? কি করবে? কিছুই করব না পিসি, শুধু চোখের দেখা দেখে আসব। একটা জীবন তো ধ্বংস হয়ে গেল, আরেকটা জীবনও ধ্বংস হয়ে গেল কি না।

    মিনতি সেন মৃদু হেসে বললেন কি দরকার প্রান্তিক? আমার পক্ষে যা মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না, সেখানে আরেকজনের দুঃখ বাড়িয়ে লাভ কি? লাভ কিছু নয় পিসি, কিন্তু একথা তো সত্য, জীবনে কোনদিন আপনি তাকে ভুলতে পারবেন না। আমি আপনাকে জোর করব না, শুধু ঠিকানাটা দিন। মিনতি সেন বেশ কয়েক বছর আগের অফিস ঠিকানাটা আমার হাতে এনে দিলেন। আমি উঠে পড়লাম। জানতে চাইলেন, আমি আবার কবে আসব। খুব তাড়াতাড়ি আসব, জানিনা কেন সব সময় আপনার কথা মনে পড়ে! আমি বেরিয়ে এলাম।

    রেহানার সঙ্গে কলেজে কয়েকবারই দেখা হয়েছে, কিন্তু আমাকে এড়িয়ে গেছে প্রতি মুহূর্তে। আজ রবিবার। পিসিকে বললাম আমি একটু বেরোব পিসি। কোথায়? আমাদের এক কলেজ বন্ধুর জন্মদিন ওদের বাড়ী যাব। তোমাকে লো; না বলে নি, তাইতো জেদ হয়েছে আমি যাব। পিসী আর কথা না বাড়িয়ে আমাকে ২০ টাকা দিয়ে বললেন, জন্মদিনের গ্রীটিং কার্ড আর একটি ফুলের তোড়া নিয়ে যেও।

    তোমার জন্মদিনে আমার শুভেচ্ছা লেখা গ্রীটিং কার্ড আর বিভিন্ন রংয়ের ফুলের সমাহারে সাজানো ফুলের তোড়া নিয়ে আমি যখন ওদের বাড়ী উপস্থিত হয়েছি তখনো দুপুর হয়নি। সেলিনা আমাকে ঘরে ডেকে নিল। তার ওর মায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, সেদিন উনি আসেননি মা আজ কিন্তু এসেছেন। রেহানার জন্মদিনে, কিছু খাওয়াবেনা? ওর মাকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম আমি।

    একটু পরে সেলিনা রেহানাকে ডেকে নিয়ে আসে এ ঘরে। আমি আমার ঝোলা থেকে প্রথমে ফুলের তোড়াটা তার হাতে দিতেই ও প্রায় ছিটকে গিয়ে বলে এটাকি? আমি বললাম, আগে গ্রহণ কর তারপর বলছি। ও আমার হাত থেকে ফুলের তোড়াটি নেওয়ার পর আমি গ্রীটিংস কার্ডটা মেলে দিলাম ফুলের তোড়ার উপরে। তাতে এক পলক চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, কে তোমাকে বলল আজ আমার জন্মদিন? আমি হাসতে হাসতে বললাম অত অধৈর্য হয়ো না রেহানা? কে আবার বলবে? তোমার চোখ বলছে, তোমার চেহারা বলছে, সর্বোপরি তোমার এ্যাডমিশান রেজিষ্টার তাকে তুমি অস্বীকার করবে কি করে?

    রেহানা আমার কথার কোন প্রতি উত্তর না দিয়ে নিয়ে চলে গেল। আমি ওকে বাধা দিতে গেলে সেলিনা ইশারায় না করল। তারপর বলল, আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন প্রান্তিক ভাই। তারপর তার মাকে বলল, তোমরা না হয় উপোস করবে, কিন্তু প্রান্তিক ভাইকে কিছু খাওয়াবে না। আফরোজ বেগম বললেন এই যাই।

    উনি চলে গেলে, সেলিনা বলল আপনি রেহানার ঘরে যান। আজ আপনার অগ্নি পরীক্ষা। মানে? মানে আবার কি, যার জন্মদিনে শুভেচ্ছার উপহার নিয়ে এসেছেন, সেকি উপোষ করে থাকবে নাকি! কিন্তু সেলিনা, কোন অধিকারে আমি তার ব্রত ভাঙব? যদি পারবেন না, তবে দম্ভ করে এলেন কেন? তারপর আরো কাছে এসে চুপিচুপি বলল, ভালোবাসার অধিকারে সব করা যায় প্রান্তিক ভাই! সেই অধিকারে আপনি তার ব্রত ভাঙবেন। কিন্তু একজনের ভালোবাসার অধিকারই কি সব। আরেক জনের দরকার নেই? সেলিনা বলল এইটুকু যদি না বুঝতে পারেন ভালোবাসার কথা বলবেন না জীবনে কখনো। বড় অদ্ভুত মেয়ে এই সেলিনা। বয়সে ছোট হলে হবে কি। জ্ঞানে বুদ্ধিতে আর অনুভূতিতে সবাইকে যেন টেক্কা দেয়। সেলিনা ওর মায়ের কাছে চলে গেলে, আমার পক্ষে আর কতক্ষণ একা একা এ ঘরে বসে থাকা সম্ভব? আমি আস্তে আস্তে যে ঘরে রেহানা আছে সে ঘরে গিয়ে উপস্থিত হলাম। একটা আকাশী রং-এর পর্দা ঝুলছে দরজায়। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে রেহানা বলল, চলে এস। আমি ভিতরে গিয়ে দেখি, একাকী বসে আছে, পাশে ফুলের তোড়া এবং তার উপর গ্রীটিংস কার্ড আমি নিজেই ওটা তুলে নিয়ে সামনের ড্রেসিং টেবিলের একপাশে যে টিপয় আছে তাতে সাজিয়ে রাখলাম। আর নীচে গ্রীটিংস কার্ডটা খুলে রাখলাম। খাট থেকে তাকালেই দেখা যায়। ও আমার দিকে তাকিয়ে অকারণ একটু হাসল। বললাম হাসলে যে। না, ভাবছিলাম, তুমি এত ভীরু কেন? বুঝলামনা। বুঝে কাজ নেই। ঐ গ্রীটিংস কার্ডটা নিয়ে এস। কেন? আরে আনইনা। আমি নিয়ে এলাম। তারপর খাটের লাগোয়া পড়ার টেবিলের দেরাজ থেকে সবুজ কালির কলমটা বের করে বললো, লেখ। আমি অবাক হয়ে বললাম কি লিখব? বারে! কাকে তুমি জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছ তার নাম লিখবে? আর কে দিচ্ছে? সে জায়গাটাও কি ফাঁকা থাকবে নাকি? আমি পেনটা নিলাম ওর হাত থেকে তারপর সুন্দর করে লিখলাম রেহানাকে আর শেষে লিখলাম প্রান্তিক। কেন। যেন মনে হল আনন্দে ওর চোখ দুটি চক করছে। তারপর নিজেই উঠে গিয়ে এমন সুন্দর করে ফুলের তোড়াটার নীচে রাখল যেন তা আরো সুন্দর ভাবে প্রতিভাত হয়। তারপর আবার নিজের বিছানায় এসে বসল।

    আমি বললাম, জন্মদিনে এমন একটা ময়লা শাড়ী পরে আছো কেন? ও বলল, তুমি হয়তো জানো প্রান্তিক, আমার জীবনে জন্মদিন কোন নুতন বার্তা বয়ে নিয়ে আসেনা, তাই ভালো লাগেনা। বললাম, তোমার ভালো লাগাটাই কি সব, আমাদের ভালো লাগতে নেই? হয়তো আছে, কিন্তু তুমি আমাকে কতটুকু জান? একটু হাসলাম। তারপরে বললাম, যতটুকু জানলে তোমাকে চেনা যায় ঠিক ততটুকুই জানি। চমকে উঠলো ও, বলল, মানে?

    এমন সময় সেলিনা পর্দার বাইরে থেকে বলল, প্রান্তিক ভাই, মা চা দিতে বললেন, এ ঘরে নিয়ে আসব না ডাইনিংএ দেব। বললাম, আমি আসছি, এ ঘরে আনতে হবে না। সেলিনা চলে গেলে রেহানাকে বললাম, চল। ও বলল তুমি যাও। আমি বললাম সেকি করে হবে? আমি যাচ্ছি তুমি কিন্তু ৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে। তারপর ওর দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। বলল কি দেখছ? কিছুনা। আমি যাচ্ছি। পর্দার কাছে গিয়েও আবার ফিরে এসে বললাম, ঠিক এই ভাবে এসোনা, অন্তত আমার কথা মেনে একটা নতুন শাড়ী পরে এস। আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে এলাম।

    পাঁচ মিনিট নয়, অন্তত ১০ মিনিট পরে রেহানা এলো। রেখেছে আমার কথা। নতুন লাল শাড়ী, কপালে লাল টীপ, চোখে কাজল, সুন্দর করে এক বেনীতে বাঁধা চুল। ফুলের তোড়া থেকে তুলে নেওয়া একটা লাল গোলাপ বেনীর গোড়ায় গোজা। মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে টেবিলের পাশে। সেলিনা একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গিয়ে ওর মাকে ডেকে নিয়ে এলো। মা ওকে দেখে শুধু বলল রেহানা! আর কোন কথা বলতে পারলেন না। দু চোখ দিয়ে শুধু টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো আফরোজ বেগমের।

    বললাম রেহানা বস। রেহানা বলল তুমিই বস আমি আসছি। ভিতরে গিয়ে সেলিনার হাত থেকে খাবারের রেকাবী আর চায়ের কাপ নিয়ে বলল, তুইও বোসগে সেলিনা। আমি এসব নিয়ে যাচ্ছি। সেলিনা কোন প্রতিবাদ না করে তার হাতে দিয়ে দিল সব। তারপর আমার মুখোমুখি বসে পড়ল। রেহানা এরপর সেলিনা এবং তার মায়ের জন্য মিষ্টি এবং চা নিয়ে এসে মাকে বলল, তুমিও বোস মা। আফরোজ বেগম অবাক হয়ে দেখছিলেন রেহানাকে।

    আমি বললাম, তুমি কেন বাকী থাকবে রেহানা তুমিও বোসনা। রেহানা বলল, আগে তো তোমরা খেয়ে নাও, তারপর দেখছি। লক্ষ করে দেখলাম, সেলিনা কোন কথা বলছেনা, শুধু আড় চোখে বার বার দেখছে রেহানাকে। রেহানা এত সুন্দর। কোন দিন ভালো করে তাকিয়েও দেখেনি ও। সেলিনা বলল, বোস না আপা তুই কেন পরিবেশন করবি, আজতো আমার পরিবেশন করার দিন।

    মানুষের মন কেমন করে যে আপন নিয়মে তার পথ করে নেয় তা বোধ হয় সে নিজেও জানে না। রেহানার ভালোলাগা, মন্দ লাগা, তার রাগ মান অভিমান ভালবাসা ঘৃণা দ্বন্দ্ব কোন কিছুর পরে যেন তার স্থায়ী কোন অধিকার নেই। ঘাসের ডগায় ভোরের শিশিরের মত তা যেন বড় ক্ষণিকের কিন্তু ভারি সুন্দর। রাগলে যেমন কাউকে সুন্দর লাগে তেমনি ভালবাসা যখন চিকচিক্ করে ওঠে তার চোখের মনিতে তখন তা এক অপূর্ব পায় কাছের মানুষের সম্মোহনী দৃষ্টিতে।

    ঐ লাল শাড়ী, যেন নব বধূর লাল বেনারসী। সব কিছু লাল আর লাল, তার শাড়ী, ব্লাউজ, কপালের টিপ, হাতের পলা, লাল তার বেনীতে গোজা উপহারী গোলাপ, ভাবতে অবাক লাগছে, অথচ বুঝতে পারছি না কেন সে আজ এমনি লাল রঙে সেজেছে। আর ঐ যে এক টুকরো হাসি ও-তে যেন লজ্জায় লাল।

    আমার সামনে বসে আছে শুধু সেলিনা। আফরোজ বেগম একটু খানি বসে নিজের চায়ের কাপ নিয়ে উঠে চলে যাচ্ছেন দেখে আমি বললাম একি আপনি কেন চলে যাচ্ছেন, বসুন না। উনি বললেন, তোমরা বস। আমি রেহানাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

    সেলিনা বলল, কি প্রান্তিক ভাই, আপনি যে যুদ্ধ জিতে গেছেন, তবে আর আমি থাকি কেন? আমি বললাম, জিতিনি ভাই, তবে জেতার আশা আছে। এখনো আশা করছেন? কোন সেনাপতি কি হারতে ভালবাসে? দেখবেন কিন্তু যুদ্ধ জয় হয়ে গেলৈ সৈনিকদের আবার ভুলে যাবেন না। মনে রাখবেন আসল যুদ্ধ কিন্তু তারাই করে, আর কৃতিত্ব নেয় সেনাপতি নিজে। হাসতে হাসতে বললাম যুদ্ধজয়ের পরে ভাববো, এই যুদ্ধে তোমার কোন ফল্ট ছিল কি না। তারপর নির্ভর করবে তোমাকে সৈনিক হিসাবে বহাল করা যাবে কি না। ও বলল, এত দন্ত কিন্তু ভালো নয় প্রান্তিক ভাই। আমিও চললাম। এবার না হয় বসে বসে ঠিক করুন সেলিনাকে বহাল রাখা যাবে কি না। হাসতে হাসতে সমস্ত শরীরে হিন্দোল ছড়িয়ে উঠে পড়লো সেলিনা। রেহানা এসে বলল, একি তুই চলে যাচ্ছিস যে, সেলিনা শুধু একটু হাসল, তারপর চলে গেল। আমি বললাম, তোমার চা কোথায়? আমি কিছু খাবোনা। কেন? এ আমার ব্রত। আমি জানি। জা? হ্যাঁ জানি। কে বলেছে সেলিনা? সেলিনা ছাড়া কি জানবার আর কোন উপায় নেই? হয়তো আছে। তবে আমার বিশ্বাস সেলিনাই তোমাকে বলেছে এসব। কিন্তু তুমি আমাকে এ অনুরোধ করোনা প্রান্তিক। না করবো না। ঠিক আছে।

    আমি সামনে খাবার নিয়ে চুপ চাপ বসে আছি। ও বলল চুপ করে থাকবে? কিছু খাবে না? বললাম তুমিই বল, এভাবে খাওয়া যায়? তোমার জন্মদিনে তুমি কিছু খাবেনা। আমার খেতে ভালো লাগবে? তার চেয়ে একটা কথা বলব? ও তাকায় আমার দিকে। তারপর আস্তে আস্তে বলল বল। বললাম আমি জানি রেহানা তোমার আঘাতটা কোথায়? আজতো আনন্দের দিন শুধু নয়, আজতো স্মৃতি তর্পনেরও দিন। নিজের জন্ম দিনের মুহূর্তটা তুমি ভুলে যেতে পারে। কিন্তু কি করে ভুলবে এদিন যে তোমার একান্ত প্রিয় জনের বিদায়ের দিনও। কিন্তু আজ যদি তুমি এমনি ভাবে চিরদিনের নিয়মটাকে উল্টিয়ে দিয়ে নতুন নিয়মের সৃষ্টি করো, তোমার বাবার সেটা ভালো লাগবে? তিনি কি দুঃখ পাবেননা? তার এই অকালে চলে যাওয়ার জন্য তো তুমি দায়ী নও। তবে কেন তাকে এই আঘাত দেবে? তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে কি এমনি ব্রত গ্রহণ করতে?

    ও আমাকে বাধা দিয়ে বলল, না না তুমি এমনি ভাবে বলল না। বললাম, আমি তো বলতে চাইনি রেহানা। তুমি যা করছ এটা নিয়ম নয়। এ তোমার আঘাতের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। জীবনে অনেক আঘাত আসবে, আসতে পারে আরো কঠিন আঘাত। সেদিন কি তুমি আরেক ব্রত গ্রহণ করে জীবনটাকে আরো দুর্বিসহ করে তুলবে? তার দ্বারা তুমি কাকে শাস্তি দেবে? আর তা ছাড়া যেকোন আচরণ পালনের অধিকার যেমন তোমার আছে, তেমনি এটা দেখাও তোমার দায়িত্ব, তোমার সেই আচরণে অন্য কেউ যেন আঘাত না পায়? এখানে তোমার বোন আছে। তারও নিশ্চয় জন্মদিন পালন হয়। আমি জানি না তার জন্মদিনে কোন উৎসব হয় কি না। যদি না হয়, তবে তার জন্য কি তোমার নিজেকে দায়ী মনে হবেনা?

    রেহানা চুপচাপ শুনছিল আমার কথা। কোন উত্তর দিচ্ছেনা দেখে আমি আবারও বললাম, অবশ্য এ আমারই ভুল, আমার আসাই ঠিক হয়নি। তুমি জান না রেহানা তোমার জন্মদিনে আসার জন্য আমি পিসিকে মিথ্যে কথা বলেছি?

    আঁতকে উঠলো রেহানা মিথ্যে কথা বলেছে? মানে পিসি কি তোমাকে আসতে দিতে চাননি। না ঠিক তা নয়। আসলে আমার মনে হয়েছিল তোমার জন্মদিনে হয়তো আমাকে তুমি বলতে পার। কিন্তু আমার তো জানা ছিলনা, না বলার পিছনে আছে আরেক ইতিহাস। যা তোমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। তাই পিসি যখন বললেন, তোমাকে কি নিমন্ত্রণ করেছে। বললাম না, তাই আরো জেদ বেড়ে গেছে এজন্যই আমাকে যেতেই হবে।

    রেহানা বলল, তুমি এ ভাবে বলছ কেন? তুমিতো দেখতেই পাচ্ছ, জন্মদিন আমার জীবনে আরেক অন্ধকার স্মৃতি বয়ে নিয়ে আসে। আমার বাবা, তিনি আমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতেন, কিন্তু কি যে হল, কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না।

    আমি বললাম, তুমি যা করছ সে শুধু তোমার বাবাকে অসম্মান নয়, অসম্মান করছ তুমি তোমার মা ও বোনকেও। তাহলে আমি কি করব। আমি আস্তে আস্তে বললাম মৃত্যু বেঁচে থাকে স্মৃতির মধ্যে, আর স্মৃতিকে জাগরিত করাই মৃত্যুকে শ্রদ্ধা জানান। তারপর খানিক থেমে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললাম, আচ্ছা রেহানা তোমার বাবার কোন ছবি নেই? ও বলল কেন বলত! না তোমার ঘরে বা এ ঘরে তোমাদের দুই বোনের ছবি দেখছি, অথচ তোমার বাবা বা মায়ের কোন ছবি দেখছিনা। তাই আর কি। ও বলল, ছিল কিন্তু ছবিটা দেখলে কি যে হতো, কি যে যন্ত্রণায় আমি ছটফট করতাম, তাই তাকে সরিয়ে ফেলেছি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগ্নিপরীক্ষা – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }