Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ভালোবাসা চিরকালীন – আশাপূর্ণা দেবী

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প813 Mins Read0

    ০৩. হাসলাম আমি

    হাসলাম আমি বললাম, ছবি সরিয়ে কি যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? তার চেয়ে ছবিটা এমন একটা জায়গায় টাঙিয়ে দাও যে বাড়ীর সকলের তা নজরে পড়ে। তারপর তোমার বাবার জন্মদিন, তোমার মা বাবার বিয়ের দিন, তোমার ও সেলিনার জন্মদিন ছাড়াও আরো যে সমস্ত দিন গুলো তোমাদের জীবনে স্মরণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে তোমরা মনে করো, সেই সব দিনে তাজা ফুলের মালা পরিয়ে দাও ছবিতে। আর মনে মনে বলল, বাবা তুমি যেখানেই থাক চিন্তা করোনা, তোমার স্বপ্ন আমি পূরণ করবই। দেখবে আস্তে আস্তে মনে এক অন্য ধরনের জোর পাবে। আর সেই ভয়ংকর স্মৃতির দিনটা মলিন হয়ে ভাস্বর হয়ে উঠবে সেই সব স্মৃতি গুলো যা তোমাদের আনন্দে ভরিয়ে রাখতো। তিনি বেঁচে থাকতে বিভিন্ন দিনে যা যা করতেন তোমরাও তাই করো, আর সেটাই হবে তাকে সর্ব শ্রেষ্ট শ্রদ্ধা অর্পণ। এই ভাবে তার সমস্ত আনন্দকে এড়িয়ে গিয়ে তুমি কি তাকে অপমান করছো না?

    রেহানা নীরবে আমার সব কথা শুনলো কোন রকম প্রতিবাদ না করে। তারপর আস্তে আস্তে বলল, কিন্তু প্রান্তিক তুমি জানো, আমার জন্মদিনে প্রথম মিষ্টিটা তিনি নিজে হাতে আমার মুখে তুলে দিতেন। আমি তা ভুলব কি করে। বললাম তোমার তো মা আছেন, তার হাত থেকে নিয়ে নাও তোমার প্রথম মিষ্টিটা। এই পৃথিবীতে কোন সন্তানের কাছে বাবাই সব নয়, মাকে তার অর্ধেক অংশতো ছেড়ে দিতেই হবে। তোমার মাযের আঘাতটা তুমি দেখবেনা?

    তাহলে আমি কি করব তুমি বলে দাও প্রান্তিক? বলল রেহানা, আমি বললাম, আমি বলে দেওয়ার কে? কখন যেন সেলিনা এসে দাঁড়িয়েছে পাশে বুঝতেও পারিনি। বলল, চা একেবারে জল হয়ে গেছে প্রান্তিক ভাই, মিষ্টিটাও সেই ভাবে পড়ে রয়েছে। দিন না সব বদলিয়ে নিয়ে আসি।

    রেহানা বলল, তুই বোস সেলিনা। আমি নিয়ে আসছি এসব। ও হাসতে হাসতে বলল সেই ভাল। রেহানা ও সব নিয়ে চলে গেলে, চাপা হাসিতে মুখ ভরিয়ে ফেলল সেলিনা। বললাম কিছু বলবে? বা একজনকে এত কথা বললেন আর আমার বেলায় ফাঁকি? তা। হবেনা প্রান্তিক ভাই? আপনাকে আজ শাস্তি পেতেই হবে! হেসে বললাম কি শাস্তি। ও তেমনি চাপা কৌতুকে বলল, এ নাটকের শেষ দৃশ্যে আপনি কেমন অভিনয় কবেন, তা দেখতে হবে। মানে?

    আমার দিকে কৌতূহলী চোখ তুলে বলল, ওই তো রেহানা আসছে ওর কাছে মানেটা বুঝবেন, আমি আসছি। আমি বললাম, না তুমি বস। আমি যখন অভিনয়ই করছি তখন সে অভিনয় ঠিকঠিক হচ্ছে কিনা তার জন্যতো দর্শক চাই, তুমিই না হয় আজকের দর্শক হও। আমার বয়ে গেছে, বলে চাপা কৌতুক ছড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো ও।

    রেহানা বলল, ও চলে গেল যে। বললাম, কি করে বলব কেন চলে গেল। তুমি ওকে ডাকনা। থাক না, ও এমনিই আসবে, এবার খেয়ে নাও। আগে তুমি খাও। তারপর কি ভাবে ভেবে বললাম, আরে দাঁড়াও দাঁড়াও, একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি। ও চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে বলল কোথায় যাচ্ছ। এই আসছি বলে রান্না ঘরের কাছে গিয়ে সেলিনাকে বললাম, মাসীমাকে নিয়ে একবার এ ঘবে এসোতো সেলিনা।

    একটু পরে ওরা ঘরে এলে, আমি আফরোজ বেগমকে বললাম মাসীমা আজতো রেহানার জন্মদিন তাই না? উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম তা এই রকম নিরামিষ জন্মদিন হবে? মিষ্টি মুখ খাওয়া দাওয়া কিছু হবে না? সেলিনা বলল, আপনি যে এরকম পেটুক তাতো জানা ছিল না। আমি হাসতে হাসতে বললাম আসলে পিসির বাড়ী থাকি কিনা। সব সময়তে ইচ্ছে মতো খাওয়া হয় না, তাই কোন আনন্দ উৎসবের বাড়ী গেলে পুষিয়ে নিই। সেলিনা তেমনি হাসতে হাসতে বলল, তাই বুঝি। তা সামনেই তো এক গাদা খাবার রয়েছে, ওখান থেকে তো ইচ্ছে মতো খেয়ে নিতে পারেন প্রান্তিক ভাই! পারি কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে, নিয়ম! যার জন্মদিন তার বাবা বা মা, নাহলে সব থেকে বয়োজ্যেষ্ট যিনি তিনি যার জন্য এই উৎসব তার মুখে প্রথম খাবার তুলে না দিলে খাই কি করে? অথচ সামনের এই ভাল ভাল খাবার দেখে জিভের জলও ধরে রাখা যাচ্ছে না। সেলিনা চোখ টিপে হাসছে।

    আমি আফরোজ বেগমের দিকে তাকিয়ে বললাম, নিন মাসীমা, ওখান থেকে মিষ্টি তুলে নিয়ে আগে রেহানা, তারপর সেলিনাকে দিন। সেলিনা বলল, আর আপনাকে! আরে আমি তো আজকের অভিনেতা, মানে তোমার ভাষায় যদিও আমার মর্যাদা পাওয়া উচিৎ ছিল আজকের একমাত্র অতিথির। তা তোমার ভাষায় আমি যখন অভিনেতাই, তখন না হয় অভিনয় করতে করতেই খেয়ে নেব। কিন্তু সেলিনা, শুধু মিষ্টিতে অতিথি আপ্যায়ন এ আমার একদম পছন্দ নয়।

    রেহানা অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে। তার যেন কেমন সন্দেহ হল। বলল, কি ব্যাপার প্রান্তিক এ সব অভিনয় টভিনয় কি সব বলছ? আমি বুঝতে পারছি আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কথাটা রেহানার মনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এর থেকে বেরোবো কি করে? বললাম, সেলিনা তখন কি বলল জান? কি? আমাকে নাকি দেখতে ঠিক অভিনেতার মতো।

    হেসে উঠলো সেলিনা। আর সেই সঙ্গে আমরা সবাই। আফরোজ বেগম প্লেট থেকে একটা সন্দেশ তুলে দিলেন রেহানার মুখে, আর সঙ্গে সঙ্গে ও মাথা নীচু করে ওর মায়ের কাছ থেকে আর্শীবাদ নিলো। সেলিনাও মিষ্টি তুলে ওর মুখে দিল। রেহানা আমার দিকে তাকিয়ে বলল তুমি দেবেনা? আমি ইতস্তত করে বললাম, দিতেতো ইচ্ছে করছে, কিন্তু দিই কোন অধিকারে বলতো?

    সেলিনা আবার তার কৌতুক ছড়িয়ে দিয়ে বলল, এত কি ভাবছেন প্রান্তিক ভাই। আপনিতো অভিনেতা, সেই অভিনেতার অধিকারেই না হয় রেহানার ইচ্ছেটা পূরণ করুন। এক সঙ্গে আমরা আবার হেসে উঠলাম সবাই।

    দিন যায় মাস যায় জীবন এগিয়ে চলে তার নিজস্ব গতিতে। কেমন যেন মনে হয় আরো জটিল শৃঙ্খলে বাধা পড়ে যাচ্ছি প্রায় সব জায়গায়।

    আকাশ সেদিন গোধুলি আবিরে রাঙা, হয়তো তখনি সন্ধ্যা নামবে পৃথিবীর অঙ্গনে, পাখীর কলকাকলিতে মুখর আকাশ। উঠতে হবে। অশ্রুকণা আপন মনে পরপর ঢিল ছুঁড়ে চলেছে সামনের বয়ে যাওয়া নদীর জলে। নদীর এ পাশটা নির্জন। সাধারণের যাতায়াত প্রায় নেই বললেই চলে। এক ঘন্টা বেশী অতিবাহিত হয়ে গেছে নীরবে বসে আছি পাশাপাশি।

    অথচ আজ যখন পরীক্ষার হলে ঢুকতে যাচ্ছি, ও পাশ থেকে ডেকে বলল, প্রান্তিক তোমার বইটা পড়া হয়ে গেছে, এ কয়দিন দেওয়া হয়ে ওঠেনি। ভীষণ ভালো লাগলো বইটা। ওনি আরেকবার পড়বে, তারপর না হয় একদিন আলোচনা করা যাবে। বইটা দিয়ে এত দ্রুত ভিতরে ঢুকে গেল যে আমার কোন কথা শোনার অপেক্ষায় থাকলনা ও।

    আমি বইটা আমার ঝোলা ব্যাগে, না দেখেই ঢুকিয়ে রাখলাম। মনে করতে পারছি না কবে ওকে বইটা দিয়েছিলাম। আর বইটাই বা কি। হলে ঢোকার আগে বাথরুমে যেতে যেতে একবার খুলে দেখি ওর মধ্যে ভাজ করা একটা কাগজ। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেটা বুক পকেটে ভরে নিয়ে বইটা আবার আমার ঝোলা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলাম। বাথরুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে বুক পকেট থেকে কাগজটা বের করে এক পলকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। প্রান্তিক, আজ কি পরীক্ষা শেষে তোমার সঙ্গে দেখা হতে পারে? আমি অপেক্ষা করব নদীর পারে সেই নির্জন বটগাছটার নীচে। আসতে ভুলোনা কিন্তু কণা।

    যৌবনের যে প্রান্তে উপনীত হয়েছি তাতে ইচ্ছে করে, ভীষণ ইচ্ছে করে, কারো চিঠি পেতে বা কাউকে দিতে। দেওয়ার সাহস অর্জন করতে পারছি না, ভীরু মন বার বার বাধা দিচ্ছে। যদি কেউ ভুল ভাবে। পেতে ইচ্ছে করে রেহানার চিঠি। কিন্তু কেন? আমি কি ওকে ভালোবাসি? জানিনা। সেরকম কোন গভীর শূণ্যতা তো মনের মাঝে উঁকি মারে না। প্রায়ই দেখা হয় ওর সাথে, মাঝে মাঝে ফেরার পথে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। কোন দিন সেলিনা থাকে কোন দিন থাকে না। যে দিন থাকে না সেদিন অস্বস্তি হয়। বুঝি আমি গেলে আফরোজ বেগম খুশী হন। তবু রোজ যেতে মন চায় না। মাঝে মাঝে মনে হয়, অনেক দিন যদি দেখা না হয় ওর সাথে, তা হলে ও নিশ্চয় চিঠি লিখে জানতে চাইতো আমি কি রাগ করেছি? কেন যাইনা ওদের বাড়ি? পারলে তাড়াতাড়ি একরার অবশ্যই যেন যাই। আর কি কিছু লিখতো? জানিনা, সেরকম কোন ছবিতো কল্পনায়ও দেখছিনা, অথচ তার চিঠি পেতে ইচ্ছে করে কিন্তু কেন? কেন? কে দেবে এ উত্তর আমায়?

    পরীক্ষা শেষের একটু আগে বেরিয়ে গেছে অশ্রুকণা। ও হল থেকে ঝেরয়ে যেতে তাকালাম ওর দিকে, ও তাকালো, তারপর নীরবে এবং দ্রুত বেরিয়ে গেল।

    পরীক্ষা শেষ হলে অনেকের সাথে আমিও বেরোলাম। আমার ঠিক পিছনে রেহানা। তারপর একা পেয়ে বলল, অনেকদিন আসছেনা কিন্তু। আজ মা ভীষণ ভাবে তোমার কথা বলছিলেন। আসছো তো।

    কি অদ্ভুত, ঠিক এমনি ভাষায় তার লেখা কাল্পনিক চিঠির কথা মনে পড়ে গেল। বললাম যাব, কিন্তু একটু দেরি হবে। কেন কোথাও যাবে? না একটু কাজ আছে। কোথায়? অসুবিধা না হলে আমিও যেতে পারি। কি যে বলি ওকে। বললাম, ওটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে রেহানা। তুমি যাও, একটু দেরি হবে। তবে আমি যাব। হঠাৎ ও বলে উঠলো। কোন অভিসারিকা অপেক্ষা করছে বুঝি? বলে ভীষণ কৌতুকে হেসে উঠলো ও। আমিও হেসে উঠে, বললাম, তোমার একথা যদি সত্যি হতো রেহানা তবে, নিজেকে ভীষণ দামী বলে মনে হতো। ও তেমনি চোখের তারা নাচিয়ে বলল তাই বুঝি। চেষ্টা করে দেখব তোমার সাধ মেটে কিনা। বলে হাসতে হাসতে চলে গেল

    নিছক কৌতুক। কিন্তু সবটাই কি কৌতুক। অশ্রুকণার বই দেওয়া দেখেছে, আগে আগে চলে যাওয়াও দেখেছে। কিছু সন্দেহ উঁকি দেয় নিতো? আর তাছাড়া এত দিনের মেলামেশায় রেহানাকে এমন চপল মনে হয়নি কখনো।

    অবশ্য বেশীক্ষণ ওর কথা ভাবার সময় পাইনি। এক সময় সেই পরিচিত বটগাছটার নীচে এসে উপস্থিত হলাম। কিছু আগেই ওখানে এসে অপেক্ষা করছে অশ্রুকণা। আমি চুপিচুপি ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ও যেন জানতই আমি ছাড়া আর কেউ নয়। তাই কোন হেলদোল নয়, নীরবে এক দিকে সরে বসল মাত্র। কিন্তু কোন কথা বললনা। আমি পকেট থেকে ওর লেখা চিঠিটা ওকে ফেরৎ দিয়ে বললাম, তুমি আসতে বলেছিলে। ও চিঠিটাতে একবার চোখ বুলিয়ে কুটি কুটি করে ছিঁড়ে নদীর জলে ভাসিয়ে দিল। বললাম, একি করলে কণা? ওটার ওপরতো তোমার কোন অধিকার নেই, বলল ভেবেছিলাম নেই, কিন্তু এখন দেখছি অধিকার জিনিষটা বড় কঠিন, তা হেলায় অর্জন করা যায় না।

    বুঝতে পারলাম না অশ্রুকণার এই অভিমানের কারণ কি? ও নীরবে একের পর এক ঢিল ছুঁড়ে চলেছে নদীর জলে। বললাম কণা, ভীষণ খিদে পেয়েছে। চলো ওঠা যাক। ক্যান্টিনে খেতে খেতে তোমার কথা শুনব। ও বলল দরকার নেই আমার কথা শুনে। তোমার তো খিদে পেয়েছে, কি খাবে বল? মানে, আমি যা খেতে চাইব তাই তুমি খেতে দেবে? না তা হয়তো পারব না, তবে আমার কাছে যা আছে তা তোমাকে দিতে পারি।

    বুঝতে পারছি না অশ্রুকণা কোন দৃষ্টিভঙ্গীতে কথা বলছে। এত কাটাকাটা কথাতো ও কোন দিন বলেনা। যাই হোক আমি অন্যরকম ব্যাখা না করে বললাম, তোমার সঙ্গে যা আছে তা খেতে আমার কোন আপত্তি নেই। আসলে খাওয়ার ব্যাপারে আমার কোন বাছ বিচারই নেই। খিদের সময় পেট ভরার মতো যে কোন রকম খাবার পেলেই আমার চলে যায়। ও চুপ করে আছে। কোন কথা বলছেনা। বললাম, কি এত চুপ করে আছো যে? না। ভাবছি? কি ভাবছো? ভাবছি তোমার জীবনের এই সহজাত সৌন্দর্য যদি আমি পেতাম! তোমার কোন কথাই বুঝতে পারছি না আমি। ও বলল বুঝে তোমার কাজ নেই প্রান্তিক। তারপর নিজের ব্যাগ থেকে বের করলো টিফিনের কৌটো। পরোটা আলুভাজা এবং সন্দেশ। কৌটো খুলে আমার হাতে দিয়ে দিল সবটাই। বললাম। তোমার টা? আমি খেয়েছি। মিথ্যে কথা। আমি মিথ্যে কথা বলিনা। এটাও মিথ্যে কথা। তুমি কি আমার সঙ্গে ঝগড়া করবে নাকি?

    আমি অবাক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে। বললাম তোমার সঙ্গে ঝগড়া করবো? কেন বলতো? কি করেছো তুমি যে তোমার সাথে ঝগড়া করব। ও বলল, তাহলে আমার সঙ্গে তুমি ঝগড়াও করতে চাওনা। তারপর ধীর গলায় বলল জানতাম প্রান্তিক, আমার কোন মূল্যই নেই তোমার কাছে। অথচ এ কদিন আমি প্রতি মুহূর্ত তোমাকে এড়িয়ে চলেছি কেন, জান? আমি আবারও অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। ও বলে চলল, কি জানি তুমি হয়তো আমাকে এড়িয়ে চলবে তাই। না হলে যে কথা মুখে বলতে পারতাম, তা চিঠিতে বলার দরকার হতো না। কণ্ঠভারি, দৃষ্টি উদাস, মন যেন বিষণ্ণ। বললম সত্যি আমি কিছু জানি না কণা, কি হয়েছে তোমার? কি এমন করেছে যাতে তোমাকে এড়িয়ে চলার প্রয়োজন হবে আমার? না কিছুনা। তার মানে আমাকে তুমি বলতে চাওনা। থাক ওসব কথা, বল কেমন আছো?

    আমি রেগে গিয়ে বললাম, এবার কিন্তু সত্যি এড়িয়ে চলার মতো কথা বলছ। কি হয়েছে তোমার? কি করেছে এমন? না কিছুনা। ও আস্তে বলল। কিছুনা বললে হবে কেন?

    আমাকে তুমি বলতে চাওনা? ও বলল জানিনা, এবার খেয়ে নাও তো। আমারই বোঝ উচিৎ ছিল। তুমিতো টিফিন আনো না খিদেতো তোমার লাগতেই পারে। না আমি খাবনা। যতক্ষণ তুমি না বলবে ততক্ষণ আমি কিছুই খাবনা। ও বলল, মাথা গরম করোনা প্রান্তিক, আজ খেয়ে নাও। তোমাকে নিশ্চয়ই বলব, তবে আজ নয় আরেক দিন।

    আমার যে কি হল জানিনা, ওর সমস্ত খাবারটা নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললাম, তবে আমিও আরেক দিন খাব। ও অস্পষ্ট ভাবে উচ্চরণ করলো কি নিষ্ঠুর তুমি। কিন্তু আমি তা শুনেও শুনলাম না। ও আর কোন কথা বলল না। আমারও যেন কিছু বলার নেই। মনের মধ্যে একটা শুধু প্রশ্ন, আমি কি সত্যিই এত অভিমানী? দীর্ঘক্ষণ কেটে গেছে একই ভাবে। এখুনি আঁধার নামবে। বললাম, আজ তা হলে ওঠা যাক কণা। ও হ্যাঁ–না কিছুনা বলে তেমনি মাথা নীচু করে রইল। আমি এবার ওর মাথাটা নিজ হাতে ঘুরিয়ে দিয়ে বললাম কি হল? কিন্তু একি! চোখের জলে ওর বুকের আঁচল পর্যন্ত ভিজে গেছে।

    অঝোরে কাঁদছে ও। কী হয়েছে ওর?

    জানিনা একে ভালোবাসা বলে কী না। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে শুধু ওর কথা ভেবেছি। কি হয়েছে ওর? ওকে কি কেউ ঠকিয়েছে? না ও ঠকিয়েছে কাউকে। জানিনা, কিছুই জানিনা। মনটা এক অজানা দুশ্চিন্তায় ভারি হয়ে ওঠে।

    তখন সন্ধ্যা অতিক্রান্ত। বাস স্ট্যান্ডে ওকে বললাম, আমি কি এগিয়ে দিয়ে আসব। তোমাকে? না। আমার কিন্তু কোন অসুবিধা নেই। আমার আছে। ও ঠিক আছে।

    রুটের বাস এসে দাঁড়াতেই, আমি ওকে তুলে দিয়ে নিজের বাস ধরব বলে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ মনে হলো আমি তো রেহানাকে কথা দিয়েছিলাম। কি করে তা ভুলে গেলাম। একবার মনে হল থাক আজ আর যাবনা। সঙ্গে সঙ্গে মনে হল, তা কি করে হবে? আমিতো কথা দিয়েছি রেহানাকে। একটু দেরি হবে। কিন্তু আমি যাবই। ওর মা আফরোজ বেগম আমাকে সন্তানের মত ভালোবাসেন তাকে অপেক্ষায় রাখা কি ঠিক হবে? আর রেহানাই বা কী ভাববে? কিন্তু ওখানে যে এতটা দেরি হয়ে যাবে, বুঝতে পারিনি।

    যখন পিসির ওখানে ফিরেছি তখন রাত ১০টা। সারাটা পথ ভাবতে ভাবতে এসেছি। পিসি না জানি কী না কী বলবেন। এমনিতেই দেরি হলে হাজারো কথা শুনিয়ে দেন। আর আজতো একেবারে রাত দশটা। কিন্তু এমন ভাবে ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটে গেল যে, আমার কোন উপায় ছিল না, ভয়ে ভয়ে বাড়ীতে ফিরে দেখি পরিমলবাবু ফিরে এসেছেন। উনি জানতে চাইলেন কেমন আছো প্রান্তিক? পরীক্ষা কেমন হয়েছে? বললাম ভালো। আপনার শরীর কেমন? উনি বললেন ভালো, তারপর আমাকে জিজ্ঞাস করলেন তোমার কন্তু এ বাড়ীতে ফিরে মেন হয়েছে? বলল তোমার

    পিসি কি কোথাও গেছেন? বলে গেছেন কি কিছু তোমাকে? আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন উনি ফেরেন নি? না ফেরেননি, তাইতো তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি। তাছাড়া ওনার অফিস থেকে বেরুবার আগেই আমি বেরিয়ে এসেছি। বললাম আপনি আসবেন উনি জানেন? তাতো ঠিক জানিনা, তবে চিঠি একটা দিয়েছিলাম। পেয়েছে কীনা তাও জানিনা। বললাম তার মানে আপনার চা বা কফি কিছুই খাওয়া হয় নি। আমি দেখছি বলে তাড়াতাড়ি গ্যাস জ্বালিয়ে ওনার জন্য এক কাপ কফি বানালাম। একাজ গুলো অবশ্য সব এখানে এসে শিখে নিয়েছি। কলকাতা আর যাই হোক মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।

    উনি কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, কোথায় যেতে পারেন বলে মনে হয়। বললাম, তাতো ঠিক জানিনা পিসেমশাই। আপনি বরং ওনার অফিসে একবার যোগযোগ করে দেখুননা। নিস্পৃহ গলায় বললেন, এখন কি আর কাউকে পাওয়া যাবে? আমি চিন্তিত ভাবে বললাম, তাও ঠিক। কিন্তু কোথাও তো খোঁজ নিতে হবে। একবার থানায় খোঁজ নেবো? থানায় কেন? কোথাও কোন দুর্ঘটনা তো হতে পারে। হ্যাঁ তা পারে। তারপর বললেন দরকার নেই। তুমি একটা কাজ করতে পারবে? বলুন! মনে হয় হোটেল এখনো খোলা আছে। আমি টাকা দিচ্ছি, তুমি বরং রাতের খাবারটা কিনে নিয়ে এসো।

    মাঝে মাঝে যে রাতের খাবার হোটেল থেকে আনা হয় না তা নয়। তবে, সেটার পরিবেশ এবং পরিস্থিতি আলাদা রকম। কিন্তু মনে মনে ভাবলাম, পিসেমশাইয়ের দিকটাও দেখতে হবে। সারাদিন উনি কিছু খাননি, কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি। বললাম, হোটেলে যেতে আসতে সময় লাগবে, তার চেয়ে আমি বরং আলু, ডিম সিদ্ধ ভাত করছি। ঘরে মাখন এবং দূধ আছে বেশী সময় লাগবেনা। উনি বললেন তা হয়তো লাগবেনা। কিন্তু কালতো তোমার পরীক্ষা আছে। পড়বে কখন? বললাম, না আমার পরীক্ষা আজই শেষ হয়ে গেছে। উনি আর কথা বাড়ালেন না, শুধু বললেন, তাহলে যা ভাল হয় কর। তার এই নিস্পৃহ। কণ্ঠস্বরে বোঝা যায় যে ভীষণ ক্লান্ত, মায়া হয় মানুষটার জন্য।

    ভাত বসিয়ে দিয়ে ভাবতে বসলাম পিসি কোথায় যেতে পারেন। পরিমল বাবু বলছেন, তিনি আজ আসবেন তা তিনি আগেই জানিয়েছেন, তা হলে? হঠাৎ মনে হল দীনেন্দ্র স্ত্রীটে পিসিদের এক অফিস সহকর্মী থাকেন, একবার খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে আদৌ তিনি অপিসে গিয়েছিলেন কিনা। সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের আঁচ কমিয়ে আমি বেরিয়ে পড়লাম, দীপংকর বাবু বাড়ীতেই ছিলেন। অত রাতে আমাকে দেখে অবাকই হয়েছেন বুঝতে পারছি, আগেও ২/১ দিন আমি এ বাড়ীতে এসেছি বললেন কি ব্যপার প্রান্তিক, এত রাতে? আমি বললাম, পিসি এখনো বাড়ী ফেরেননি। আজ কি উনি অফিসে গিয়েছিলেন? উনি অবাক হয়ে বললেন, সেকি উনিতো অফিস থেকে আজ অনেক আগেই বেরিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করলাম এত আগে যে? উত্তরে বললেন, পরিমলের আজ আসার কথা, অথচ একটু বরানগর যেতে হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম বরানগর? সেখানে কোথায় যাবেন কিছু জানেন? না ঠিক জানিনা, আমি জিজ্ঞাসা করিনি। তারপর নিজেই জানতে চাইলেন ওখানেকি তোমাদের কোন আত্মীয় স্বজন নেই?

    মনে মনে ভাবলাম এর কি উত্তর দেব? আমি যতদিন আছি ততদিন বরানগরের কারো কথা শুনিনি। অবশ্য কয়েকদিন ধরে অশ্রুকণাদের বাড়ী কোথায়? ওদের বাড়ীতে কে কে আছে? আমি ওদের বাড়ী গেছি কিনা এসব কথা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেছেন, কিন্তু সেখানে যাবেনই বা কেন। অশ্রুকণাদের ফোন আছে, ফোন করা যেতে পারে। কিন্তু ফোনটা কোথা থেকে করা যাবে? দীপঙ্করবাবু বললেন কি ভাবছ? বললাম না কিছুনা। কিন্তু ওখানে তো যাওয়ার কোন কারণ নেই, মানে আমাদের বাড়ীর সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগও নেই। তবে কোন বিশেষ কারণে যেতে পারেন, কিন্তু এখনতো বাস ট্রাম সব বন্ধ হয়ে গেছে, অথচ পিসেমশাই খুব চিন্তা করছেন। কি যে করি। আমি কি তোমায় কোন সাহায্য করতে পারি? আমি বললাম, এখানে কি কোন ফোন পাওয়া যাবে? যেখানে যেতে পারেন বলে মনে হয়, সেখানে ফোন আছে, একবার ফোন করে দেখা যেতে পাবে। উনি বললেন, এসো আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ীতেই ফোন আছে। তুমি ফোন নাম্বার জানতো? আমি বললাম হা জানি। ডায়াল করলে ও পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে কে যেন বললেন হ্যালো? আমি প্রান্তিক বলছি। ও তুমি? কি ব্যাপার এতরাতে কোথা থেকে ফোন করছ? আমি কথা বলছি। অশ্রুকণার সঙ্গে কথা বলার মানসিকতা এই মুহূর্তে একদম নেই। তাই উচ্ছলতা প্রকাশ না করে সরাসরি বললাম, পিসি এখনও ফেরেনি, খুব চিন্তায় আছি। চিন্তা করোনা উনি এক্ষুনি পৌঁছে যাবেন। কাল কলেজে এসো–বাই। অশ্রুকণা ফোন ছেড়ে দিল। অশ্রুকণাও বাহুল্য কথা না বাড়িয়ে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বলে লাইনটা কেটে দিল। আমার মনে এক জটিল প্রশ্ন। পিসি কণাদের ওখানে কেন? কিন্তু এটা ঠিক, পিসির একটা নিদিষ্ট সংবাদ পেয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। মানে শেন দুর্ঘটনা ঘটেনি। দীপঙ্করবাবু বললেন, খোঁজ পাওয়া গেল? হ্যাঁ, পিসি অশ্রুকণাদের বাড়ী গিয়েছিলেন, তবে একটু আগে বেরিয়ে এসেছেন। যাক নিশ্চিন্ত।

    বাড়ীতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর দেখি একটি ট্যাক্সি থেকে নামছেন পিসি? আমাকে উদ্বিগ্ন দেখে বললেন, কি ব্যাপার? আমার তখন কথা বলতে একদম ভালো লাগছেনা। বললাম, এত রাত পর্যন্ত তুমি বাড়ীর বাইরে, চিন্তা হয় না? চিন্তা কেন? আমি তো জানিয়ে গেছি, যে আমার আসতে রাত হবে, চিন্তা করোনা। কাকে বলে গেছো? কেন তোমার পড়ার টেবিলে আমি চিঠি লিখে চাপা দিয়ে গেছি তুমি পাওনি? হয়তো হবে। কিন্তু পড়ার টেবিলে যাওয়ার সময় পেলাম কোথায়।

    কিন্তু আমি এই প্রসঙ্গে না গিয়ে বললাম, পিসেমশাই তোমাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি আজই আসছেন, তাহলে কি তোমার আজ কোথাও না গেলে হতো না? উনি ভীষণ রেগে মেগে বললেন, কি সব আজে বাজে কথা বলছ। আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। যাও ঘরে যাও। উনি এতটা রেগে আছেন কেন জানি না। কিন্তু এত কঠিন কথারও কোন প্রতিবাদ না করে আমি রান্না ঘরে এসে ঢুকলাম আর উনি আমার পিছন পিছন এসে ঢুকলেন সেখানে। গ্যাসে তখন ভাত প্রায় ফুটে এসেছে আঁচটা বাড়িয়ে দিয়ে খানিক পরে ভাতটা নামিয়ে নিলাম।

    পিসি কোন প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে ভুকে গেলেন। আমি টেবিলে পেপার ওয়েটে চাপা দেওয়া পিসির লেখা কাগজটা তুলে নিলাম। প্রান্তিক, আমার একটু কাজ আছে। ফিরতে দেরি হবে। চিন্তা করো না। তোমার পিসেমশাইয়ের আসার কথা। আসবে কী না জানি না। ফ্রীজে মাছের ঝোল করা আছে। পারলে ভাতটা করে নিও–পিসি।

    নিজেকেই নিজের ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করলো। একবারতো টেবিলটা দেখা উচিৎ ছিল। না, দেখছি আমার সাধারণ বুদ্ধিটুকুও লোপ পেয়ে গেছে। বাইরে বেরিয়ে আসতে গিয়ে শুনতে পাচ্ছি, পরিমলবাবু এবং পিসি কথা কাটাকাটি করছেন। একসময় মনে হলো, আমার ইনটারফেয়ার করা উচিৎ, কিন্তু তারপর মনে হলো না দরকার নেই। একসময় নিশ্চয়ই বন্ধ হবে। স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তা ঘটতেও যেমন সময় লাগে না মিটতেও তাই।

    খানিক পরে আমি পিসেমশাইকে ডাকলাম। বললাম পিসেমশাই আসুন। খাবার দিয়েছি।

    ছোট্ট সংসার, এসব কাজ গুলো শিখে নিতে হয়েছে। অবশ্য তার জন্য আমি পিসির কাছে কৃতজ্ঞ। পিসিও এলেন। বলতে গেলে নীরবেই রাতের খাওয়া শেষ হল।

    রাতে কিছুতেই ঘুম আসছেনা। চিঠিতে লিখেছেন, পরিমলবাবুর আসার কথা, আবার আমাকে বললেন, উনিতো জানেন না। এসবের মানে কি? আবার আজই অশ্রুকণাদের বাড়ী যাওয়ার দরকার কি ছিল?

    পরের দিন অশ্রুকণার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, খুব হাসিখুশী। ম্যাচিং করা শাড়ী ব্লাউজ চটি পরেছে কণা। তার সঙ্গে ম্যাচিং করা সবুজ টিপ। শ্যাম্পু করা চুলে এলো বেণী। ভীষণ ভালো আর সুন্দব দেখাচ্ছে অশ্রুকণাকে। ঠাট্টা করতে ছাড়লাম না, বললাম, আজকি তুমি ছেলেদের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এই অপরূপ সাজে সেজেছো কণা? ও ঠাট্টা করেই জবাব দিলো, মনে হচ্ছে তোমার মাথাটাই শুধু ঘোরেনি এখনো, ওটা যদি ঘুরতো তাহলে না হয় বুঝতাম তোমার কথার একটা মূল্য আছে। বললাম, তাই বুঝি? ও কিছু বললনা, শুধু হাসল, আমি বললাম, আজ কি তোমার কলেজে কোন কাজ আছে? কেন বলত। না এমনি বলছিলাম।

    আমরা কলেজ থেকে একটু দূরে চায়ের দোকানে এসে বসলাম। ও বলল এখানে বসলে যে। বা! তুমিতো বলনি কোথায় যাবে? আমি না বললে বুঝি তোমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না? বললাম সে কথা ঠিক নয় কণা। আসলে তোমাকে একটু বুঝতে সময় দেবেতো? তোমাকে ঠিক বুঝতে পারছি না।

    ও আমোক বলল আচ্ছা তুমি কি কাউকে বোঝ? আমি অবাক হয়ে বললাম তার মানে? ও উত্তরে হঠাৎ বলল আচ্ছা, দেবযানীর ওই কথাটা তোমার মনে আছে? কোন কথাটা। ওই যে দেবযানী যেখানে বলছে, কখনো কি এ হয় নাই মনে, তৃপ্ত চোখে আজি এরে দেখায় সুন্দর। আমি হাসতে হাসতে বললাম, আগে চা খাই তারপর ভেবে দেখা যাবে।

    ও যেন চুপসে গেল। বললাম কি হলো? না কিছুনা। চাটা খেয়ে আমরা হাঁটতে হাঁটতে শিয়ালদায় এলাম। বললাম, এবার বল কোথায় যাবে? কোথাও না। মানে? তারপর অবশ্য জানতে চাইলাম ছবি দেখবে? না। তাহলে চলনা মিনতি সেনদের বাড়ী থেকে ঘুরে আসি। অনেক দিন যাওয়া হয় না। আমার ভালো লাগছেনা প্রান্তিক। তাহলে চলো আমরা ফিরেই যাই। হ্যাঁ তাই চলো। আমরা আবার ফিরলাম। চলতি বাসে উঠে পড়লো ও আমাকে কোন কিছু বোঝর অবকাশ না দিয়েই। হতভম্বের মত শুধু বললাম, আমার যে অনেক কথা জানার ছিল কণা। সেই ক্ষণিকের অবসরে ও শুধু বলল, আমার কিছু জানাবার নেই। হু হু করে আমার সামনে দিয়ে বাসটা বেরিয়ে গেল।

    এই ক্ষণিকের আনন্দ ও বিদায় দৃশ্যে বিষণ্ণতায় ভরে গেল আমার মন। মাঝে মাঝে মনে হয় একে যেন চিনি, আবার কেন যেন মনে হয় ও অনেক দূর-দূরান্তের। আর একথা মনে হতেই কখনো যা হয়নি, তাই যেন হতে লাগলো আমার ভিতরটায়, যেন বুকের মাঝ খানটাতে হু হু করে এক নিঃসঙ্গতার সুর বেজে চলেছে অবিরাম। কেন বুঝতে পারছি না ওকে আর ওই বা কেন এই আধো ধরা আধো ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে বার বার। আমিই বা কি চাই? আমিই বা নিজেকে এমন করে অপ্রকাশ্যতার ঘেরাটোপে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখছি কেন?

    হাঁটতে হাঁটতে আবার সেই শিয়ালদা স্টেশন। প্লাটফরমে ঢুকে পড়লাম। শুনতে পাচ্ছি ডানকুনির ট্রেন ছাড়বে এখনি। কে যেন জোর করে আমাকে ওই ট্রেনে তুলে দিলো। কিন্তু কোথায় যাব? বরানগরে ঢুকতেই নিজের খেয়ালে নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে। পথ চিনিনা। রিক্সায় উঠে পড়লাম এবং মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম অশ্রুকণাদের বাড়ী। ভাবতে আশ্চর্য লাগে এখানে কি আমি আমার নিজের ইচ্ছেয় এসেছি, না কেউ আমায় জোর করে নিয়ে এসেছে?

    মনে মনে ভাবলাম, তবে কি এতক্ষণেও আমি অশ্রুকণাকে ভুলতে পারিনি। না ওর ওই ভাবে চলে আসাটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি বলেই মুখোমুখি বোঝ পড়ার তাগিদটাই আমাকে এখানে পৌঁছে দিল। জানিনা, কিছুই জানিনা আমি।

    কলিং বেল টিপতেই বেরিয়ে এলেন শ্রীময়ীদেবী। অশ্রুকণার মা। আমাকে একা দেখে বললেন, তোমার সঙ্গে অশ্রুর দেখা হয়নি? বিস্ময় আর অবাক দৃষ্টিতে আমার উত্তরের জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকেন তিনি। বললাম–হা হয়েছে। ও কোথায়? এখনও তো আসেনি। উনি আমাকে ভিতরে এসে বসতে বললেন। তারপর বললেন, ও যে বলে গেল তোমার সঙ্গে ব্যান্ডেল যাবে। যাওনি বুঝি?

    কি যে উত্তর দেব বুঝতে পারছি না। ও ব্যালে যাওয়ার কথা একবারও বলেনি আমাকে। তবুতো উত্তর একটা দিতে হবে, বললাম ওকে জিজ্ঞাস করাতে ও বলল, না আজ আর কোথাও যাবে না, বাড়ীতেই ফিরে যাবো। ভাল লাগছেনা। মায়ের উদ্বিগ্নতা নিয়ে শ্রীময়ীদেবী বললেন শরীরটা খারাপ হয়নিতো? বললাম, মনে হয় না। উনি বললেন তুমি একটু বোস, আমি এখনি আসছি।

    বাইরে আবার কলিং বেলটা বেজে উঠলো। আমি দরজা খুলতেই ও অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে। আমি আস্তে বললাম, ব্যান্ডেলে যেতে চেয়েছিলে আমাকে বললে

    কেন? আমি কিন্তু মাসীমাকে বলেছি, ভাল লাগছে না বলে ও আজ আর যেতে চায়নি। দেখ তুমি আবার অন্য রকম কিছু বলোনা। ও, আচ্ছা, বলে দাঁড়িয়ে রইল। বললাম ভিতরে আসবেনা? ও ঢুকতে ঢুকতে বলল, আমার মন বলছিল তুমি আসবে। তারপর বলল আমার ও রকম ব্যবহারের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত প্রান্তিক।

    শ্রীময়ীদেবী ওকে দেখে বললেন, কি হল শরীর খারাপ? না। তাহলে ব্যান্ডেলে যাবি বলেও গেলিনা কেন? উত্তরে বলল হঠাৎ মনে হল, যাবো না। বিরক্তি মিশিয়ে শ্রীময়ীদেবী বললেন তোর এই হঠাৎ হঠাৎ খেয়াল কবে বন্ধ করবি অশ্রু? আর তাছাড়া ওকে একলা ছেড়ে দিয়ে কোথায় গিয়েছিলি? একটু দরকার ছিল মা। শ্রীময়ীদেবী রাগত ভাবে বললেন সে তো বুঝলাম, কিন্তু তা কি পরে করলেও চলতো না। ছেলেটা কতক্ষণ বসে আছে বলতো? তারপর বললেন চা খাবি? অশ্রুকণা বলল চা করেছে নাকি? উনি তেমনি ভাবে বলে চলেন, না করিনি, কি করে জানব কখন আসবি? যা শাড়ীটা ছেড়ে ফেল, আমি তোর চা টা করে নিয়ে আসছি।

    আমি বললাম, দরকার নেই মাসিমা। আপনি বরং একটা খালি কাপ নিয়ে আসুন। আমারটা ভাগ করে নিচ্ছি। অশ্রুকণা বলল, সেই ভাল। শ্রীময়ীদেবী আর কথা বাড়ালেন না। একটা খালি কাপ এনে রাখলেন টেবিলের উপরে।

    আমাকে একা পেয়ে এক সময় অশ্রুকণা বলল, জান প্রান্তিক আমার না ভীষণ ভালো লাগছে, ভীষণ, ভীষণ। হঠাৎ তোমার কি হলো এত ভালো লাগার। ও বলল, সে তুমি বুঝবে না প্রান্তিক। তারপর বলল একটু বোস আমি শাড়ীটা ছেড়ে আসছি।

    পিসি ও পরিমলবাবুর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। গতদিন থেকে পিসি অন্য ঘরে নিজের বিছানা আলাদা করে নিয়েছেন। ঘরটা আমার পাশের ঘর।

    আমার আর একমুহূর্তও এবাড়ীতে ভালো লাগছেনা। পরিমলবাবু অফিসে চলে গেছেন। পিসির তখনো কোন তাড়া নেই। বললাম, অফিসে যাবে না? না। কেন? ছুটি নিয়েছো? না, যেতে ইচ্ছে করছেনা তাই। তুমিতো এমন হঠাৎ করে অফিস কামাই কর না। তা তোমাকে কি সব কথাই জানতে হবে? আমি বললাম, তুমি কিন্তু অকারণে রেগে যাচ্ছ। তারপর বললাম একটা কথা বলব? বল। বললাম, মনে হচ্ছে পিসি তুমি ঠিক করছ না। হঠাৎ উনি রেগে গিয়ে বললেন, আমার পক্ষে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক তা কি তোমার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে? এও তোমার রাগের কথা পিসি। কিন্তু একটু স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করে দেখো, তুমি যা করছ তা ঠিক কীনা। কি ঠিক নয়। এই যে আলাদা ভাবে থাকা, এটাকি তুমি ঠিক করছ? পিসি বললেন এটা আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যক্তিগত ব্যাপার, এখানে তোমার নাক গলানো একেবারে অন্যায়। আমিও দমবার পাত্র নই। বললাম, হয়তো একদিন এটা তোমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার ছিল, কিন্তু আজ আর তা নেই, মানে? মানে কি আমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে? মনে হচ্ছে তুমি অনেক বড় হয়ে গেছে। বড় যে হয়ে গেছি তা কি তুমি অস্বীকার করতে পার? পিসি বললেন, তুমি যতই বড় হও না কেন আমার কাছে তুমি সেই ছোট্ট আছ। আমি জোরের সঙ্গে বললাম। তোমার একথা মানিনা পিসি। তুমি কিছুতেই আমাকে আর আগের মত ছোট্টটি ভাব না। তা হলে কি ভাবি। কি ভাব সেটাতো তোমারই ভালো করে জানার কথা, আমি কি করে বলব। আমি শুধু তোমাকে বলতে চাই, একই বাড়ীতে এভাবে আলাদা থাকাটা আমার ভাল লাগছেনা। নিজেকে অপরাধী বলে মনে হচ্ছে। এভাবে যদি তোমবা থাকতে চাও তা হলে আমাকেও এখান থেকে চলে যেতে হবে।

    পিসির কণ্ঠে উম্মা। বললেন, তাতো যাবেই। পিসির প্রয়োজন তো ফুরিয়ে গেছে। তোমার কাছে। আর থাকার প্রয়োজনটা কিসের। আমি বললাম এও তোমার ভুল পিসি। পিসি বললেন, কোন দিনই তোমাকে আর আমার দরকার হবে কীনা জানিনা। ভবিষ্যতই তা বলতে পারবে। আজ কিন্তু অন্তত নিজের স্বার্থের জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন। তাই যখন তখন ছেড়ে যাওয়ার কথা বলনা প্রান্তিক, তাতে আমার কষ্ট হয়। কিন্তু আমাকে নিয়ে তোমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হোক তা আমি কি করে চাইব? তোমাকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে এ তোমাকে কে বলল? আমরা বলেছি কখনো? না বলনি, তবে তুমি যা করছ তাতে আমাকে একটা পক্ষ হতে বেশী সময় লাগবেনা। তাছাড়া পিসেমশাইয়ের দোষটা কি? পিসি বললেন, তুমিওতো পুরুষ ছেলে তাই আরেকটা পুরুষের দোষ দেখতে পাওনা, পাবেও না কোনদিন। তোমাদের কাছে তো মেয়েরাই সব অশান্তির মূলে। তারা মানিয়ে নিতে পারেনা, তারা অবুঝ, তারা স্বার্থপর। তারা নিজেরটা যেমন বোঝে, অন্যেরটা সে ভাবে বোঝেনা। এসব তো প্রবাদ বাক্য হয়ে গেছে। আর তাকে সযত্নে লালন করে চলেছে। তোমাদের মত পুরুষেরাই। তাই তুমি বুঝবেনা। পিসি যে মানসিক ভাবে যন্ত্রনা বিদ্ধ তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।

    আমি আস্তে বললাম, আমার মনে হয় তোমার এ অনুমান ভুল। পিসি বললেন দেখ আমি মেয়ে। পুরুষের যে কোন পদক্ষেপ মেয়েদের চোখে যে ভাবে প্রতিভাত হয়, তা আর কাবো চোখে হয় না। তাই তোমার কথা মানতে পারছি না। আমি আরো জোরের সঙ্গে বললাম, এটাও তোমার সম্ভবত ভুল ধারণা পিসি, বরং তুমি যদি বলতে মেয়ে হিসাবে তুমি আরেকটা মেয়ের তাকানো, চাওয়া, তার প্রতিটি পদক্ষেপ, তার মন কি চায়, একটা মেয়ে হিসাবে তোমার তা অজানা নয়, তাহলে তারমধ্যে হয়তো খানিকটা সত্য থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু তুমি মেয়ে বলে কোন পুরুষের পদক্ষেপ তোমার নখদর্পনে তা আমি বিশ্বাস করিনা। তারপর হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে জানতে চাইলাম বলতো আমি কি চাই? আমিও তো একজন পুরুষ।

    পিসি চমকে উঠে বলল তার মানে? কি বলতে চাও তুমি? আমাকে তুমি এত কাছ থেকে দেখছ, আমার প্রতিটি গতিবিধি তোমার নখদর্পণে শুধু নয়, তুমি তা নিজ অভিজ্ঞতায় তীক্ষ্ণভাবে বিচার করতে চাইছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও কি তুমি বলতে পারবে আমি কি চাই? আমার ভেতরটায় কিসের যন্ত্রণা?

    পিসি বোধ হয় আমার কাছ থেকে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন আশা করেনি। কিন্তু তাই বলে দমবার পাত্রীও তিনি নন। বললেন তা আমি কি করে জানবো তুমি কি চাও? হয়তো চাও, আমি যা চাই তার বিপরীত কিছু। তারপর একটু থেমে বললেন, আর আমাকে বিরক্ত করো না। আমি ভীষণ ক্লান্ত প্রান্তিক।

    আমি দমে গেলাম। এরপর কি ভাবে কি বলা যায় বুঝতে পারছি না, তবু বললাম, পিসি তা নয়, তুমি যা চাও হয়তো আমিও তাই চাই, শুধু আমরা কেউই জানিনা, সত্যি করে কি চাই আমরা। ঐ সব চাওয়া পাওয়া থাক পিসি। অনেকদিন গ্রামের বাড়ীতে যাইনা। ভাবছি একবার যাব, তুমি যাবে নাকি। তুমিও তো যাওনা অনেক দিন।

    একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পিসি বললেন, যেতে তো ইচ্ছে করে প্রান্তিক, তবু যেন মন থেকে সাড়া পাইনা। কোথায় যেন আমার সব কিছু গোলমাল হয়ে গেছে। কাউকে আর আগের মতো বিশ্বাস করতে পারিনা। তুমি যখন এত কাছে থেকেও আমাকে বুঝতে পারছনা। বুঝতে পারছি কেউ আমাকে বুঝতে পারবেনা। অনেক ছোট তুমি। তবু পারবে কি বলতে, কি হলে আবার আমি নিজের মনে সেই হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারব?

    বুঝতে পারছি পিসির দুটি চোখ ছলছল করে উঠছে। এখন ওনার সত্যি একা থাকা দরকার। আর দরকার অন্তত একবার মিনতি সেনের সঙ্গে তাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া। আর আমাকেও এখানে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করা ঠিক নয়। তাই আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে চাইলে পিসি বললেন তুমি কোথায় যাচ্ছ প্রান্তিক? বললাম একবার মিনতি সেনদের বাড়ী যাব ওনার বাবা খুব অসুস্থ। আমাকে একবার যেতে বলেছেন। ভীষণ অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে। তোমাকে যেতে বলেছেন? তোমার সঙ্গে তার প্রায়ই দেখা হয় বুঝি? বললাম না পিসি প্রায়ই দেখা হয় না, তবে মাঝে মাঝে হয়। কিভাবে? ওর অসুস্থ বাবা বলেছিলেন তুমি মাঝে মাঝে এসো দাদুভাই, তাই মাঝে মাঝে আমি নিজেই যাই। দাদুভাই কথাটা কানে যেতে কেমন যেন চমকে উঠলেন পিসি। খানিকক্ষণ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা বুঝবার চেষ্টা করেন পিসি। তারপর সহজ ভাবে জানতে চাইলেন, সম্পকটা সুন্দর, কিন্তু বুঝতে পারছি না প্রান্তিক মিনতি সেনের বাবা তোমার দাদুভাই হলেন কি করে? বললাম সে অনেক কথা পিসি। এক কথায়তো তার উত্তর দেওয়া যাবে না। তার চেয়ে একদিন আসতে বলব মিনতি সেনকে। দেখবে তোমার মন কত হাল্কা হয়ে গেছে।

    আমি উসুক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে, যদি কিছু বলেন? কিন্তু না, আমার মনের আশা ব্যঞ্জক কিছুই বললেন না, পিসি। শুধু বললেন, বুঝতে পারছি প্রান্তিক আমি তোমার কাছে মূল্যহীন। আমার কোন দাম নেই তোমার কাছে। এখন ওই মিনতি সেন, ওঁর বাবা, এঁরাই তোমার সব, এরাই তোমার আপনজন। তাহলে আর দেরি করে কী লাভ? যাওনা তুমি মিনতি সেনদের ওখানে। হয়তো একদিন জানতে পারবো, তুমি এখন পাকাঁপাকি ভাবে ওখানেই আস্তানা গেড়েছে। আমাকে হয়তো চিনতেও পারবেনা। সেই চিরন্তন নারী, ভিতরটা যার ঈর্ষার আগুনে জ্বলছে। বুঝতে পারছি নিজেকে শোধরাবার কোন চেষ্টাই নেই নীলাঞ্জনা পিসির। কিন্তু আর কথা বাড়ানো ঠিক হবে না। আস্তে আস্তে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের পড়ার চেয়ারটায় এসে বসলাম। আমার ভিতরটাও বড্ড অশান্ত। কি যে বলতে চেয়ে ছিলাম, আর কি যে বললাম, সব যেন কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। সুস্থ হয়ে বসে থাকতে পারছি না। আবার উঠলাম। তারপর পিসিকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়লাম।

    আবার সেই পথ ভ্রান্ত পথিকের মতো পথ খুঁজে বেড়ানো আর পথে পথে ঘোরা। মিনতি সেনকে এক রকম বুঝেছি। আমার বোঝাটা ঠিক না বেঠিক সেটা পরের কথা। আর নীলাঞ্জনা পিসি, কিছুতেই বুঝতে পারছি না তাকে। অথচ আমি তো কত কাছে তার। কিছুতেই তার তল পাওয়া যায়না।

    কিন্তু একি, আমি রেহানাদের বাড়ীতে এলাম কি করে? এখানে তো আমার আসার কথা নয়। কখনই বা ঘর থেকে নেমেছি পথে, আর সেই পথইবা কী ভাবে নিয়ে এসেছে। আমাকে এখানে, একি কোন ভোজবাজী? দিশাহারার মতো ভাবছি কলিং বেলটা বাজাবো কিনা, হঠাৎ জানালা থেকে মুখ বাড়িয়ে সেলিনা বলল প্রান্তিক ভাইনা? অমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন কেন? শরীর খারাপ? তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল সেলিনা।

    ও যেন বিষণ্ণ হৃদয়ে এক ঝলক আনন্দ, প্রচন্ড গরমে যেন এক পশলা বৃষ্টি, সরোবরে ফুটন্ত পদ্ম, বাগানেব রক্ত গোলাপ, যেন বসন্তের দখিনা বাতাস। যা শুধু দেহের ক্লান্তি দূর করে না, মনের ক্লান্তিও শুষে নেয় আপন ক্ষমতায়।

    আজ যদি না আসতেন, আর কোনদিন কথা বলতাম না আপনার সাথে। অবাক হয়ে বললাম কেন বলত? বা বলব কেন? দিদিই এখন আপনার সব। তারপর বলল পরপর ২ দিন এসেছেন একদিনও আমার সঙ্গে দেখা করেননি। কেন একটু দেরি করলে কি আপনার মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো? ভিতর থেকে আফরোজ বেগম বললেন, কার সঙ্গে কথা বলছিসরে সেলিনা। ও জোরে জোরে বলল, প্রান্তিক ভাই। জান মা, ও বোধ হয় জেনে গেছে রেহানা বাড়ী নেই, তাই ঢুকতেই চাইছিলেন না, আমরা যেন কেউ নই। রেহানাই সব। মা, এর বিচার তোমাকে করতেই হবে। সেলিনাকি এতই হেলা ফেলার? প্রান্তিক ভাইকে একথা বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার আছে যে সেলিনা ছাড়া রেহানার কোন মূল্য নেই। অভিযোগ করতে করতে ও যে মুখ টিপে হাসছিল তা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।

    এক নিঃশ্বাসে এতগুলো অভিযোগ। এক সঙ্গে শুনতে বেশ খারাপ লাগলেও এক ধরনের মজাও পাচ্ছিলাম। ভীষণ মজা। সত্যি সেলিনা যেন প্রচণ্ড দাবদাহে এক হঠাৎ ঝটিকা। মুহূর্তে সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। আফরোজ বেগম বললেন, কি কথার ছিরি তুই কি, সাধারণ ভদ্র ভাবেও কথা বলতে পারিসনা। তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন, তুমি কিছু মনে করোনা বাবা। ও এইরকমই, মায়ের সস্নেহ প্রশ্রয়।

    আমি নিজেও জানি, সেলিনা ঐ রকম, আর মনটা যেন শ্বেতশুভ্র গোলাপ পাপড়ি। ভাল না লেগে উপায় নেই। বললাম, না মাসিমা আমি কিছু মনে করিনি। তাছাড়া সেলিনা তো অভিযোগ করতেই পারে। এ বাড়ীতে আসব অথচ ওর সঙ্গে দেখা করব না এ অবিচার ও মানবে কেন? তবে? এইবার পথে এসেছেন প্রান্তিক ভাই, বলল সেলিনা। কিন্তু তারপর হেসেই বলল, তাই বলে মন খারাপ করবেন না কিন্তু। আমি বললাম, কেন মন খারাপ করব কেন? রেহানার সঙ্গে দেখা হবে না তাই। এটা ওর দুষ্টমি না সত্যি সত্যি দেখা হবে না, কোনটা সে বলতে চায় সেই ধন্ধে পড়ে যাই আমি। মনের মধ্যে যেমনই হোক, মুখে বললাম, আমি কি শুধু রেহানার সঙ্গে দেখা করতেই আসি? ওর সঙ্গে তো কলেজেই দেখা হয়। তবে আসেন কেন? হেসে বললাম সেলিনাকে, মাসীমাকে দেখতে। ও বড় বড় চোখ তুলে বলল এ কিন্তু ভালো কথা নয় প্রান্তিক ভাই। আমি কিন্তু বক্সিং-এর মেয়ে। ডালিমের কথা মনে আছেতো? আমি চুপসে গেলাম। সেলিনার মনে কি অন্য কোন ছায়া পড়ছে। তারপর খিল খিল করে হেসে উঠে বলল, না প্রান্তিক ভাই, আপনি যাদু জানেন দেখছি। কোথায় রেহানার অবর্তমানে ভাবছি একটু মনের কথা বলব তার আর উপায় নেই জানালার দিকে তাকিয়ে বলল, ঐ দেখুন না রেহানা ফিরে আসছে। অথচ যাওয়ার সময় বলে গেছে। সন্ধ্যার আগে ফিরবেনা। আর দেখুন মাত্র আধঘন্টার মধ্যেই ফিরে এলো৷ ইনটুইশান না পূর্ব পরিকল্পনা কে জানে। বলতে বলতে আরো খিল খিল করে হাসতে হাসতে মরাল গ্রীবা দুলিয়ে এমন ভাবে হেঁটে চলে গেল যেন সরোবরে রাজহংসী সাঁতার কেটে এগিয়ে চলেছে জল ভেঙ্গে ভেঙ্গে। সত্যি অবাক হয়ে ভাবছি কি অফুরন্ত প্রানশক্তি থাকলে জীবনটাকে এমন সহজ ভাবে ভাসিয়ে দেওয়া যায়।

    পাশে দাঁড়িয়ে রেহানা বলল, কখন এলে? কাল তো দেখা হলো বলনিতো আসবে। কি আর বলার অছে। তবু বললাম কোথায় গিয়েছিলে? আর বলল না। খিদিরপুরে ছোট মাসীর ওখানে যাব বলে বেরিয়ে ছিলাম, শিয়ালদায় কি এক গণ্ডগোল হয়েছে, বাস-ট্রাম সব বন্ধ। বললাম ভালই হয়েছে। ও বলল কেন ভালো হয়েছে কেন? তুমি তো বলনি। তুমি খিদিরপুরে যাবে। কেন বললে যেতে নাকি? আপত্তি না থাকলে আমার তরফ থেকে অসুবিধা ছিল না। তারপর বললাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবে বোস না, ও বলল, একটু অপেক্ষা করো শাড়ীটা ছেড়েই আসছি।

    সেলিনা চা নিয়ে এলো। বলল, কই রেহানা কই? পরামর্শটা করে নিয়েছেন? অবাক হয়ে বললাম কিসের পরামর্শ? বা কি কি বলতে ভুলে গিয়েছিলেন আর কি কি বললে ঠিক মতো ম্যানেজ হয়ে যাবে বলতে বলতে আর হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল ও। শাড়ী বদলে চোখে মুখে জল দিয়ে একে বারে আটপৌরে পোষাকে রেহানা এসে বসল মুখোমুখি। কি জানি কেন এত ভাল লাগছিল ওকে, যেন ভোরের শিউলি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। বলল অমন করে কি দেখছ? তোমাকে। লজ্জায় রাঙা হয়ে রেহানা বলল ধ্যাৎ। অকারণ শাড়ীর আঁচলটা টেনে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলো ও আমার দিকে না তাকিয়ে। বললাম কি অপূর্ব সহবস্থান। মানে? একজন যেন শান্ত সরোবর। আরেক জন, সেই সরোবরেই ঢেউ তুলে আনোচ্ছলতায় ডানা ঝাঁপটিয়ে সাঁতার কেটে চলেছে। ও চোখ তুলে বলল, তুমি সেলিনার কথা বলছ? জান ও ভীষণ ভাল মেয়ে। মনটা কাঁচের মত স্বচ্ছ। ওকে ভালবেসে কেউ কখনো ঠকবেনা। আমি বললাম তার থেকে বলো ঠকাতে দেবেনা। মানে? ঠকাতে গেলেই তাকে নিয়ে যাবে বস্কিংয়ের নেটে এবং সেখান থেকে ফেরার কোন উপায় থাকবেনা। কিন্তু ওর কথা থাক। তুমি কি তা হলে বলতে চাইছো, তোমাকে ভালবাসলে ঠকার ভয় আছে।

    কি জানি কেন অকারণ কেঁপে উঠলো রেহানা। বলল, আমার মধ্যে এমন কিছু নেই যাতে করে কেউ আমাকে ভালবাসতে পারে। আসলে জানকি প্রান্তিক, এক অতি সাধারণ মেয়েকে কেউ ভালবাসে না। ২/১ দিন তাকে কারো ভাল লাগলেও লাগতে পারে। মানতে পারলাম না তোমার কথা। কেন? ভালবাসা মানুষের সহজ এবং স্বভাবজাত। তাই তো বিশ্বের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ একে অপরকে ভালবেসে তাদের প্রতি ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করে পৃথিবীটাকে আজো সুন্দর করে রেখেছে। বরং অসাধারণরা সেখানে ব্যতিক্রম। সাধারণের ভালবাসা তার স্বাভাবিক ভালবাসা, অযত্নেও তা বিকশিত, আর ঐ যে টবের গোলাপ, হয়তো অসাধারণ, কিন্তু পরিচর্যার ব্যাঘাত ঘটলে শুধু ফুল নয় তার উৎসেও মৃত্যু ঘটে মুহূর্তে। তুমি সাধারণ বলেইতো এত অসাধারণ আমার কাছে।

    এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে মন হয়তো এখনই ভেঙে পড়বে এক চবম দুর্বলতায়। কিন্তু কে বুঝবে আমাকে, এ আকাশ কুসুম, এ অসম্ভব। বেহানাতো অসম্ভবকে পেতে চায় না তার পরশ শুধু অনুভব করতে চায়? সে কাঁদতে চায়। কাঁদতে চায় ভালবেসে। কাঁদতে চায় না পাওয়ার আনন্দে। বৈশাখী দুপুরের প্রখর সূর্যতাপে, এক খন্ড কালো মেঘ হয়ে থাকুক এই ভালবাসার বেশটুকু। বেহানা চায় না ঐ মেঘ জল হয়ে নামুক পৃথিবীতে, সিক্ত করুক তার তপ্ত হৃদয়। সেতো শেষ হওয়াব সঙ্কেত। না রেহানা তা চায় না। ওকে যতটা বুঝেছি তাতে বুঝতে পারি বাস্তবে নয় ও ধরা দিতে চায় অনুভুতিতে। রেহানা ডুবে আছে তাব আপন চিন্তার গভীবে, অতল সমুদ্রে ডুব দিয়ে সে যে কী কুড়াতে চাইছে, তা সেই জানে। ওর দিকে তাকাতেই দেখি হাসি হাসি মুখে কখন যেন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে সেলিনা। ওর চোখে বিদ্যুৎ ঝলক। ইঙ্গিতে কিসের যেন ঈশারা। জানতে চাই কিছু বলবে? আবারও সেই মুক্ত ঝলক, সেই উচ্ছলতা, সেই আনন্দ প্রবাহ, নিথর সরবরে যেন হাজারো বুদ্বুদ–উত্তরে বলল থাক প্রান্তিক ভাই, নিঃশব্দতার মানেই যদি না বোঝেন, কেন যে এলেন এ পথে কে জানে।

    রেহান। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। মনে হল গুমোট গরম থেকে মুক্তির বাতাস বয়ে নিয়ে এসেছে সেলিনার উপস্থিতি। রেহানা উঠে দাঁড়ালো। সেলিনা বলল, কিরে উঠলি যে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কি প্রান্তিক ভাই আপনাদের ছন্দপতন ঘটালাম। রেহানা আস্তে আস্তে ভিতরের ঘরে ঢুকে গেল, আমি বললাম, ভীষণ ভাবে তোমাকে চাইছিলাম সেলিনা। হেসে বলল কেন বৃন্দা হতে। আমি তা পারবনা। বললাম, বৃন্দা না হতে পার চন্দ্রাবলীতে আপত্তি আছে? ও বলল দাঁড়ান দাঁড়ান আপনাদের ঐ রাধাকৃষ্ণ লীলার সব চরিত্রের নামও ভালো করে মনে থাকে না ছাই। ওই যে চন্দ্রাবলীর কথা বললেন না, ওর রোলটা কি? আমি হাসতে হাসতে বললাম রাধার প্রেমের পূর্ণতা দেওয়া। মানে? প্রেমের আরেক সত্য অভিমান ঈর্ষা থেকে যার জন্ম জানতো। সেই অভিমানকে তীব্রতা দেওয়াই চন্দ্রাবলীর কাজ। বুঝলাম না। থাক তোমার বুঝেও কাজ নেই। আসলে তোমার বক্সিংএর মাঠে চন্দ্রাবলী একেবারে বাজে খেলোয়াড়। তা তুমি বেরোবে কখন? কোথায়? যেথা মন চায়। আপনিও যাবেন নাকি। যদি প্রথমে নক আউট না কর যেতে পারি। রেহানা জানে? যাব তোমার সাথে তাতে রেহানার জানার দরকার কি? তাছাড়া আমিতো রেহানার সঙ্গে যাচ্ছিনা। সাহস আছে আমার সঙ্গে বেরোবার? আগে না বেরিয়ে বলি কি করে? তাহলে দরকার নেই। আপনি বরং আরেক দিন যাবেন। কেন আজ নয় কেন? ও কি ভেবে যেন বলল, বেশ চলুন, কিন্তু সারা পথে আমার সঙ্গে আমার কথাই বলবেন। রেহানার কোন কথা কিন্তু জিজ্ঞাস করতে পারবেন না। কেন রেহানাকে তুমি ঈর্ষা কর নাকি? না মশাই না, রেহানাতো সাধারণ বাগানের সহস্র গোলাপের একটি গোলাপ মাত্র। আর তুমি? কেন? ঐ যে বড়লোকের সখের টবের পরিচতি গোলাপ। যত্ন না পেলে মুহূর্তে উৎস সহ শুকিয়ে যেতে পারে। তাইতো চলার পথে যত্ন থেকে বিচ্যুত হতে চাইনে। মিষ্টি মিষ্টি হাসছেও। বুঝলাম সব কথা শুনেছে ও। তাই বললাম, কিন্তু এমন টবও তো আছে সেলিনা যেখানে বাগানের গোলাপ ঝরে গেলেও টবের গোলাপ কিন্তু ঝরেনা। সেলিনা বলল, ও আপনি প্লাস্টিক গোলাপের কথা বলছেন তো? হবে হয়তো। তাই হয়তো ডালিমরা ছিঁড়তে পারে না। আঘাতে পর্যুদস্ত হয় মাত্র। যাকগে সে কথা, আমার সাথে পথ চলবেন বলেছেন, তাহলে আর দেরি কেন?

    এতো পরিচিত সেলিনা নয়। কোথায় যেন ছন্দপতন হয়ে গেছে। এ কোন সেলিনা? আমি কি ভুল করেছি? রেহানা কি ভুল করেছে? কিন্তু মুহূর্তে মাত্র। আবার সেই সেলিনা। মুখে অমায়িক হাসি নিয়ে বললে কৈ চলুন। তারপর হেসে উঠলো খিল খিল করে। সেই পরিচিত সেলিনা। মনের মধ্যে যেন কিছু লুকিয়ে থাকতে নেই। বলল খুব ভয় পেয়ে গেছেন, তাই না? বললাম, সত্যি বেরোবে? কেন? আমার সঙ্গে যেতে সাহস হচ্ছে না বুঝি। না ঠিক তা নয়। তাহলে? আসলে! থাক থাক আর বলতে হবে না। আমারই ভুল প্রান্তিক ভাই। রেহানা একা আর আপনি রেরুবেন আমার সঙ্গে এ হয় নাকি? তারপর দ্রুত বেরিয়ে গেল ও ঘর থেকে বাইরে, তার পরে পথে।

    আমি জোরে জোরে ডাকলাম দাঁড়াও সেলিনা আমিও আসছি। রান্না ঘর থেকে বৈরিয়ে এসে আফরোজ বেগম বললেন, কোথায় যাবে তুমি? উত্তরে বললাম উঠতে হবে মাসীমা। উনি বললেন, সেলিনা এক্ষুনি আসবে। ও কোথায় গেল। এই একটু দোকানে গেছে। যাবে আর আসবে। তবু আমাকে উঠতে হবে মাসীমা। ভাবছি একবার গ্রামের বাড়ীতে যাব। পরীক্ষা হয়ে গেছে অনেক দিন যাওয়া হয় না। রেহানা পাশে এসে বলল, আমরা যদি যাই, তোমরা যাও মানে? এই আমি, সেলিনা আর মা, তারপর বলল জান গ্রাম দেখতে আমার ভীষণ ইচ্ছে করে। কি যে বলব ওকে বুঝতে পারছি না। মনের মধ্যে কি যে দ্বিধা না দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ অবশ্য একটা আছে। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। আমার বাবা মাকে জানি। তাদের সব কিছু মেনে নিতে অসুবিধা নেই। কিন্তু অন্যরা যদি না মেনে নেন। তারা যদি অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন এদের। কি উত্তর দেব আমি? রেহানা বলল, কি ভাবছো? না কিছু না। আমি জানি কি ভাবছো? কি ভাবছি? আমাদের কি পরিচয় দেবে তাই না? না মানে? যা সত্যি তাই পরিচয় দেবে। বললাম তোমার তো গ্রাম্যসমাজ সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতাই নেই? না তা নেই। তবে তোমার অসুবিধা যে দ্বিবিধ তা বুঝতে পারছি। যেমন? একটাতো সাধারণ। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে আমার এবং আমাদের ধর্মমত।

    বললাম, হয়তো তোমার কথাই সত্য। আর তাছাড়া আমাদের যেখানে বাড়ী তার কাছাকাছি তোমাদের ধর্মাবলম্বী কেউ নেই। রেহানা বলল, ধর্মই কি আমাদের সাধারণ ভাবে মেলামেশায় বাধা? উত্তরে বললাম, আমি জানিনা রেহানা। আমার কাছে ধর্ম মানুষের কোন আসল পরিচয় নয়। এবং এ শিক্ষা আমি আমার বাবা মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছি। তাহলে? বললাম সত্যি কি তোমরা যেতে চাও?

    সেলিনা যেমন দ্রুত বেরিয়ে গিয়েছিল, তেমনি দ্রুত আবার ফিরেও এল। আমি বললাম বক্সিং কি হয়ে গেল। ও বলল, না হয়নি। আজ ভাবছি আমার বিপরীতে আপনাকে চাইব। হঠাৎ আমার উপরে রাগের কারণ। কেন এতক্ষণ ধরে যে যুক্তির জাল বিছিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে চাইছেন। সেও তো বক্সিংএর নেট। রেহানা যেতে চাইছে আপনার সাথে, তাইনা।

    না এ মেয়েটাকে কিছুই লুকোবার উপায় নেই। তারপর রেহানার দিকে তাকিয়ে বললাম, ঠিক আছে যাবে তোমরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যাবে না তো। রেহানা বলল হঠাৎ তোমার একথা মনে হচ্ছে কেন? না এমনি।

    আফরোজ বেগম রান্না ঘর থেকে সব কথা শুনে বললেন, তুমি এবার একলা ঘুরে এসো বাবা, ওরা যখন যেতে চাইছে, পরেই যাবে। এত তাড়া কিসের। বললাম, না মাসীমা, আমি যখন যাব, আপনাদেরও নিয়েই যাব। কোন অসুবিধা হবে না। পরশু আপনাদের নিয়ে যাব, প্রস্তুত থাকবেন। এরপর আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম।

    সারাটা দিন এক বিচিত্রতায় কেটে গেল আমার প্রতিটি মুহূর্ত। অশ্রুকণা, পিসি, রেহানা, সেলিনা, মিনতি সেন, তার বাবা, পরিমল বাবু, সকলেই যেন কত স্বতন্ত্র, কত আলাদা। আবার কোন কোন বিষয়ে তারা কত এক।

    রাতে পিসিকে বললাম, পরশু বাড়ী যাব। বেশতো। কিন্তু একটা সমস্যা হয়েছে পিসি, কি করা যাবে বলতো। কি? রেহানারা যেতে চায় আমার সাথে? কোথায়? তারা কখনো গ্রাম দেখেনি, তাই আমাদের গ্রামে তারা যেতে চায়। ভালো কথা, তুমি ওদের নিয়ে যাও। তুমিতো বলেই খালাস। কিন্তু পরিণতি কি হবে ভেবে দেখেছো? কিসের পরিণতি। বা গ্রামের লোকের হাজার প্রশ্নের কি উত্তর দেবো? কারো কোন উত্তর দিতে হবে এমন কি কোন কথা আছে নাকি? আছে পিসি আছে? তুমি বুঝতে পারছনা। পিসি বললেন তুমি কি বলতে চাইছো বলত। আমি ধীরে ধীরে বললাম, আমি কিন্তু তোমার উপর গভীর বিশ্বাস রেখে ওদের কথা দিয়েছি? আমার উপর বিশ্বাস রেখে? কি এমন বিশ্বাস। তোমাকেও যেতে হবে আমাদের সাথে।

    পিসি কি যেন ভাবলেন, তারপর বললেন, কবে যাবে বলে ঠিক করেছে। পরশু দিন। আর কে কে যাবে? রেহানা, সেলিনা ও ওর মা আফরোজ বেগম। ও আচ্ছা। তা হলে তুমি যাচ্ছতো। পিসি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আমি নিজেও হাফিয়ে উঠেছি। সারাদিন তোমার কথা নিয়ে ভেবেছি। দেখি এবার গ্রামের মুক্ত হাওয়া থেকে ঘুরে আসি, যদি কোন পরিবর্তন হয়।

    নির্দিষ্ট দিনের রাতে ট্রেন। সকালে রেহানাদের ওখানে গেলাম। গোটা বাড়ীটা একটা থমথমে ভাব। কলিং বেল বাজিয়ে চলেছি। কেউ খুলে দেওয়ার জন্য আসছেনা। এমনতো হওয়ার কথা নয়। অনেক বারতে এসেছি এ বাড়িতে। তবে কি আমার কলিং বেল বাজানোর শব্দ ওরা শুনতে পাচ্ছেনা। আবার বেল দিলাম। সেলিনা বেরিয়ে এল। কোথায় সেই চঞ্চলা হরিণী। আমাকে দেখে বলল, প্রান্তিক ভাই অনেকক্ষণ বুঝি? কিন্তু সেই আগ্রহ, সেই দাবী, সেই অধিকার, সেই চপলতা সবই যেন অনুপস্থিত। বললে ভিতরে আসবেন? এতে আহ্বান নয়। এযে বিতাড়ন। তবু বললাম, আজ আমার গ্রামের বাড়ীতে যাওয়ার কথা। সেদিন কথা হয়েছিল তোমরাও যাবে। রাতে ট্রেন। তাই বলতে এসেছিলাম। কিন্তু কোন কথা বলতে আমার ভয় হচ্ছে। আসলে আমি বুঝতে পারছি না এই দু দিনের মধ্যে কি এমন হয়েছে যা আমি বুঝতে পারছি না। সেলিনা বলল প্রান্তিক ভাই, হয় আপনি ভিতরে এসে বসুন, না হয় পরে আসুন।

    এযে কি দুর্বিষহ অবস্থা, তা কাউকে বোঝাতে পারছি না। রাস্তার দিকের সমস্ত জানালাগুলো বন্ধ। বাইরে থেকে বোঝারও কোন উপায় নেই ভিতরে কেউ আছে কি না। মন ভীষণ ভাবে চাইছিল রেহানার সঙ্গে একবার দেখা হোক। কিন্তু মুখে তা বলতে পারছি না। আমার জানা ও দেখা সেলিনা সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করে আমার সামনেই গেটের দরজা বন্ধ করে ভিতরে চলে গেল। এই কি সেই সেলিনা নিজেকে যে বক্সার হিসাবে জাহির করে। যার এক আঘাতে ডালিম নামের ছেলেটি আর কোনদিন এদিকে পা বাড়ায়নি।

    আস্তে আস্তে ফিরে এলাম। পিসিকেই বা কি বলব। তিনি রাজী হয়েছেন। টিকিট কাটতে বলা হয়েছে। ফেরার পথে টিকিট কেটে নিয়ে যাব। পিসি কাল রাত থেকে গোছানো আরম্ভ করেছেন। কয়েকটা টুকিটাকি জিনিষ কিনতে হবে। তাই আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছেন, আমাকে নিয়ে বেরোবেন। কিন্তু এখন যে ফিরে গিয়ে কি বলব। কিছুই ভালো লাগছে না। কেন যে রেহানারা এমন ব্যবহার করল কে জানে? আমাকে নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি তো। অবশ্য এতদিন ওদের বাড়ী আমার যাতায়াত, ওদের কোন আত্মীয় স্বজন আছেন কি না জানিনা। সেদিন কেবল মাত্র শুনেছিলাম রেহানার কোন এক মাসী নাকি খিদিরপুর থাকেন। হঠাৎ মনে হল তাদের কেউ আসেনিতো। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করে বাড়ীতে ফিরে এলাম। পিসি বললেন, অনেক তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে। টিকিট পেয়েছে তো। বললাম না পিসি। কোন টিকিট নেই। পিসি অবাক হয়ে বললেন, সেকি কথা, কোন টিকিট নেই মানে? প্রথম শ্রেণী এসি বা সাধারণ কোন টিকিটই নেই। আমি সম্পূর্ণ মিথ্যে করে বললাম, অন্য কোন শ্রেণীর খোঁজ নিইনি। তুমি যদি বল, তা হলে আমি এখনি গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসছি। বুঝতে পারছি পিসি আশাহত হয়েছেন। বললেন, মনকে ভীষন ভাবে প্রস্তুত করেছিলাম। গ্রামের সেই ছেলেবেলার দিনগুলি নিয়ে কতকিছুই না ভাবছিলাম, কিন্তু আমি চাইলেই হবে কেন? সবার অলক্ষ্যে যিনি আমাদের নিয়ে দিনরাত খেলা করে চলেছেন, তিনি না চাইলে যে কিছুই হবার নয়। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নীলাঞ্জনা পিসি।

    আমি বললাম, এতো আশাহত হওয়ার কি আছে পিসি? আজকে যাওয়া হলোনা বলে কয়েকদিন পরেও যাওয়া যাবে না, তাতো নয় পিসি বললেন, হয়তো যাবে, কিন্তু সেদিন আর আজকের ইচ্ছেটা থাকবে কিনা কে জানে? বললাম, সব কিছুতেই তোমার এই হতাশা আমার ভালো লাগেনা, মনের ইচ্ছে বলেতো একটা জিনিষ আছে। তা আছে, তাই বলে হতাশায় ভুগতে আমি রাজি নই। পিসি বললেন, তোমাদের বয়স অল্প, স্বপ্ন বা উদ্যম তোমাদের যে ভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়, আমাদের কি সেই ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে? যাকগে সেকথা, কিন্তু তোমার সঙ্গে যারা যাবে বলেছিলেন, তাদের জানিয়েছো না জানাওনি। দেখি এক সময় গিয়ে জানিয়ে আসব। তারা যদি প্রস্তুত হয়ে থাকেন? কি আর করা যাবে। সত্যি কথাটাই তো বলতে হবে। তারপর বললাম আচ্ছা পিসি চলনা কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি। অবাক হয়ে নীলাঞ্জনা বললেন কোথায়? যে কোন জায়গায়। পিসি, এই যে আজকে যাওয়া হচ্ছে না, এ আমারও ভাল লাগছেনা। কিন্তু কোথায় যেতে চাও? যেকোন জায়গায়। যেখানে তুমি নিয়ে যাবে। আমার সঙ্গে যাবে? ভাল লাগবে? তোমার সঙ্গে যাবো, ভালো লাগবেনা কেন? কি করে ভাল লাগবে, ভাল লাগার জন্য যে স্বপ্ন দেখতে হয়। আর সেই স্বপ্ন দেখার বয়সটাই যে নেই আমার। কি এক গম্ভীর হতাশা নেমে আসে নিলাঞ্জনা পিসির কণ্ঠে। আমি বললাম তোমার এই হতাশা আমায় ভীষণ যন্ত্রণা দেয় পিসি। পার না নিজেকে সব সময় উদ্যমী রাখতে। পিসি কি ভাবলেন, তা তিনিই জানেন। জানতে চাইলেন বল কোথায় যাবে? আরো বললেন, যদি আমার সঙ্গে যেতে তোমার খারাপ না লাগে তা হলে যে কোন জায়গায় যেতে চাও চল। বললাম তা হলে চলল তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়া যাক। কোথায়? ডায়মন্ড হারবার। ডায়মন্ডহারবার? আর কেউ যাবে? না শুধু তুমি আর আমি। হঠাৎ পিসি বললেন, বুঝতে পারছি যেকোন কারণে হোক তোমার মন আজ ঠিক নেই। কি হয়েছে বলত প্রান্তিক। না কিছু হয়নি। তাহলে আজই তোমার ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে কেন? কারো সঙ্গে ঝগড়া করেছো, না ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ঝগড়া করব কেন? আর ভুল বোঝাবুঝিইবা হবে কেন? তা আমি কি করে বলব। তারপর ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে বললেন, রেহানারা কি যেতে রাজী হয়নি?

    বুঝতে পারছি, পিসি কিছু একটা সন্দেহ করেছেন, বললাম, ওদের বাড়ীতেতো যাওয়াই হয়নি, সুতরাং ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ কোথায়? নিলাঞ্জনা পিসি বললেন, প্রান্তিক আমি শুধু তোমার পিসি নই, আমি তোমার বন্ধুও বটে। আমার মন বলছে কি যেন তুমি আমাকে লুকাচ্ছে। তার থেকে চল বিকালে আমরা রেহানাদের বাড়ী থেকে ঘুরে আসি। মেয়েটিকে আজো আমি দেখিনি। চল না ওর মায়ের সঙ্গেও আলাপ করা যাবে।

    আমি না করতে পারছি না, আবার যেতেও মন সায় দিচ্ছেনা। বিশদ ভাবে না বললেও টুকরো টুকরো ভাবে তাদের কথা আমি বলেছি পিসিকে। ওদের সম্পর্কে পিসির একটা ধারণা হয়েছে, তা ভেঙে যাক, আমি তা চাইতে পারিনা। বললাম তুমি যেতে চাইছে তোমাকে আমার নিয়ে যাওয়া উচিৎ। তবুও পিসি এভাবে যাওয়া কি ঠিক হবে। ওরা অপ্রস্তুত হতে পারে। তা ছাড়া ওরা মানে আফরোজ বেগমেরা কবে ফ্রি থাকতে পারেন তাওতো জানা দরকার। আমার মনে হয় বরং ওদের সঙ্গে কথা বলে একদিন সময় করে যাওয়া যেতে পরে।

    নীলাঞ্জনা পিসি আর কথা বাড়ালেন না। বললেন বেশ, তোমার কথাই থাক। তাহলে ডায়মন্ডহারবার যাওয়াই ঠিক। চল বেরিয়েতো পড়া যাক। তারপর যেতে যেতে যদি মনে হয় অন্য কোথাও গেলে হয় তখন না হয় সে কথা ভাবা যাবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগ্নিপরীক্ষা – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }