Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার – ডিউক জন

    ডিউক জন এক পাতা গল্প253 Mins Read0

    বিষবাষ্প

    ছুটি শেষ হয়নি। তার পরও কাজে যোগ দিতে হয়েছে জন ডিউককে। হেড-অফিস থেকে আদেশ: যোগাযোগ করো। আর্জেন্ট।

    অকুপেশনাল হ্যাঁয়ার্ড।

    ওঅশিংটনে রওনা হয়নি আর। সিয়াটল থেকে সোজা স্যান ফ্রানসিসকো-তে। তারপর এয়ারপোর্ট টু ক্রাইম সিন।

    শান্ত দিঘির জলের মতো নিস্তরঙ্গ একটা দিন। পাকা কমলালেবুর খোসার মতো রোদ আছে, আঁচ নেই।

    এই সব দিনে আলুথালু বাতাস বয়। হারানো দিনলিপি থেকে বিস্মৃতির এক-একটা পৃষ্ঠা উঠে এসে মন উতল করে তোলে। কিছুটা মধুর, কিছুটা বিষাদমাখা দীর্ঘশ্বাস পড়ে কি পড়ে না।

    অধিকাংশ মেগাসিটির মতো স্যান ফ্রানসিসকোরও দুটো অংশ। নতুন। পুরানো। এক দিকে সারি সারি গগনচুম্বী অট্টালিকা, আরেক দিকে অনগ্রসর শহরতলি। যেন বড়লোকের গরিব আত্মীয়। ব্যস্ত দুনিয়া থেকে দূরে সরে আছে অনেকটা।

    জায়গাটা একটা প্লেগ্রাউণ্ড। মানে, ছিল এক কালে। এখন বাতিলের খাতায়। খেলার মাঠের এক ধারে রয়েছে দোলনা, স্লিপার সহ আরও নানা রকম খেলাধুলার সরঞ্জাম। পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। দোলনার দড়ি ছেঁড়া, কাঠে ঘুণ ধরেছে, লোহা ক্ষয়ে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে স্লিপারের চোখা দাঁত। খোঁচা খেলে ধনুষ্টঙ্কার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

    এক সময়ের যত্নে লালিত ছোট আর মাঝারি সাইজের গাছগুলো পরিণত হয়েছে ঝোপে। কয়েক পরত ধুলোবালির নিচে হারিয়ে গেছে সবুজ পাতার আসল রং।

    মলিন এই দৃশ্যের মাঝে আশ্চর্য বৈপরীত্য সৃষ্টি করেছে মৌসুমের শেষ কয়েকটা গোলাপ। লাল সৌন্দর্য নিয়ে বিকশিত।

    ভাড়া করা গাড়িটা পার্কের বাইরে পার্ক করল জন।

    দুটো পুলিস স্কোয়াড কার অকুস্থলে। কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে- দেখল।

    ভিতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না কাউকে। কৌতূহলী দর্শকদের নিবৃত্ত করছে এক মোটরসাইকেল ট্রেলম্যান। দীর্ঘদেহী এক যুবককে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে আসতে দেখে হাত তুলল।

    ফ্লাইট জ্যাকেটের পকেট থেকে পরিচয়পত্র বের করে মেলে ধরল জন।

    সাদা পোশাকের এফবিআই এজেন্টের পরিচয় পেয়ে হাত নামিয়ে নিল পেট্রলম্যান। সরে দাঁড়াল খানিকটা।

    CRIME SCENE. DO NOT ENTER. লেখা হলুদ ফিতার ব্যারিয়ার পার হলো জন।

    হমিসাইড টিমের সদস্যরা যার যার কাজে মগ্ন। ওর চোখ খুঁজে ফিরল হ্যারিকে। পেয়েও গেল।

    একটু দূরে দাঁড়িয়ে হ্যারিসন ফোর্ড। পিছন ফিরে আছে। ব্যস্ত আলাপে।

    পিছনে গিয়ে দাঁড়াতে কানে এল একজনের কথা। …চোখ-কান খোলা আছে আমাদের। থেমে গেল লোকাল ডিটেক্টিভ। ভোতা, থলথলে চেহারা। অচেনা আগন্তুককে

    দেখছে।

    কলিগের পাশে চলে এল জন। নাকে এসে লাগছে। আফটার-শেভ লোশনের সুবাস। ওল্ড স্পাইস। এটাই ব্যবহার করে হ্যারিস।

    গুড ডে, জন। সব ঠিক তো?

    রে-ব্যান সানগ্লাসটা খুলে ফেলল জন। নাহ। আনাড়ি পাইলট। প্লেনটা এত বাম্প করিয়েছে যে, মাথাটা ঘুরছে এখনও। ভাবছি, নিজেই একটা প্লেন কিনে ফেলব। নিজেই চালাব।

    এক্সকিউজ মি, বলে আরেক দিকে চলে গেল চর্বির ডিপো।

    এবারে কী? কাজের কথায় চলে এল জন।

    আগুন, এক কথায় প্রকাশ করল হ্যারিসন। হাঁটতে শুরু করল। চলার ফাঁকে বলতে লাগল বিস্তারিত।

    …পার্কটা এখন আর ব্যবহার না হলেও বার্ড ওঅচার ক্লাবের সদস্যরা মাঝে মাঝে আসে এখানে। ওদেরই একজন আবিষ্কার করে এটা। আজ ভোরেরই ঘটনা। অন্ধকার ছিল তখনও। বিনকিউলার নিয়ে ঝোঁপের ভিতরে ওত পেতে ছিল। মহিলা। আলো ফুটতেই খেয়াল করে হাতে, জামায় কালি লেগে আছে।

    কীসের কালি?

    নিজেই দেখো।

    মেহেদির একটা ঝাড়ের কাছে নিয়ে এল ওকে হ্যারিসন। কয়েকটা ডাল সরাল। হলুদ-বরণ দু -চারটে প্রজাপতি বসে ছিল গাছটাতে। ঝরা পাতার মতো উড়তে লাগল আশপাশে।

    গোড়ালির উপর ভর দিয়ে বসল জন। ঝুঁকে দেখতে লাগল।

    বড় বড় ঘাসের ফাঁকে ছাই জমে আছে। পরিমাণে প্রচুর। অনেক চেনা একটা গন্ধের ঝাঁপটা লাগছে নাকে।

    জনের চোখ আটকে গেল একটা মাংসপিণ্ডের উপরে আটকে আছে ঘাসের মধ্যে।

    মানুষের কান!

    কালো একটা পিপীলিকা দলবল ছেড়ে একা ঘোরাফেরা করছে মাটি আর ছাই মাখা কানটার উপরে।

    ঘাড় তুলল জন। সিধে হলো। ডালগুলো ছেড়ে দিল ফোর্ড।

    আগুনে পোড়া লাশ এরকম খাক হয়ে যায় না… বলল। জন নিজেকে।

    একমত।

    ব্যাপারটা দাঁড়াল এই- মরার পরে গুঁড়ো করে ফেলা হয়েছে লোকটাকে। …ক্রিমেটরিয়াম? কিন্তু এখানে ডাম্প করল কেন?

    চলো, আরেক জায়গা দেখাই।

    আরও আছে?

    চোখ দুটো রহস্যময় করে তুলল হ্যারিস।

    ক টা দেখতে চাও!

    দুই

    স্যান ফ্রানসিসকো পুলিস ডিপার্টমেন্ট।

    ফরেনসিক ল্যাব।

    ওষুধ-ওষুধ গন্ধ পরীক্ষাগারটায়। একাধিক টিউবলাইটের আলোয় উজ্জ্বল। নানান আকৃতির শেলফে শিশি, বোতল, ফ্লাস্ক, ফানেল, টেস্টটিউব, বিকার, ইত্যাদির সমাহার। আছে নানান ধরনের যন্ত্রপাতি। আর অনেকগুলো কমপিউটার।

    স্ট্যাণ্ড-বাই অবস্থায় রয়েছে। গুরুগম্ভীর আওয়াজ করে চলেছে। কয়েকটা ফ্রিজ। পাল্লাবিহীন দেয়াল-আলমারি বইয়ে বোঝাই।

    ধূমপান নিষেধ এখানে। ক্রিম কালারের দেয়ালে, সাটা স্টিকারে সতর্কবার্তা। নো স্মোকিং সাইনটার নিচে ছোট এক লাল ফায়ার এক্সটিংগুইশার।

    বেরিয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য, হ্যাণ্ড ট্রাক নিয়ে ফিরল প্যাথলজিস্ট। তিনটে কার্টন নিয়ে এসেছে ওটাতে করে। একটার উপরে আরেকটা।

    পরিচয়পর্ব সারা হয়ে গেছে আগেই। ডিয়েগো লুনা নাম। লোকটার। মেক্সিকান। ঠিক মোটা বলা যাবে না তাকে, শুধু ঠেলে বেরিয়ে এসেছে ভঁড়িটা। এক সময় এফবিআইতে ছিল সে-ও। ভাইক্যাপ-এ (ViCAP: The Violent Criminal Apprehension Program) কাজ করত। তবে এর আগে সাক্ষাৎ হয়নি জন বা হ্যারির সাথে।

    পুরো রিপোর্ট কিন্তু রেডি হয়নি এখনও,  বলল ফরেনসিক এক্সপার্ট।

    কেন? একযোগে জিজ্ঞেস করল জন-হ্যারিস।

    সাইটের এক্সকাভেশন বাকি রয়ে গেছে।

    কেন? একই প্রশ্ন দ্বিতীয়বার করল জন।

    পার্ক অথরিটি এসে বাগড়া দিয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির পারমিশন দিচ্ছে না। কী-না-কী আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

    শুনে মুখ বাঁকাল হ্যারিস।

    কী হবে এখন তা হলে? জানতে চাইল জন।

    বোঝানোর প্রয়াস চলছে ওদেরকে। সমস্যা হচ্ছে, মোটা মাথায় সহজে কিছু ঢুকতে চায় না। …যা-ই হোক, কিছু। আপডেট দিতে পারব আপনাদের।

    ছোট ছোট দুটো চাপড় মারল লোকটা বাক্সের গায়ে। উনচল্লিশ পাউণ্ড কার্বনাইজড মনুষ্যদেহের নমুনা জোগাড় করেছেন আপনারা। সাতজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সমান প্রায়, বলতে বলতে সাদা ল্যাব-কোটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল। বক্স-কাটার বেরোল একটা। বুড়ো আঙুলের ঠেলায় যন্ত্রটার ধারাল ফলা বের করে কেটে ফেলল উপরের বাক্সটার উপরিভাগ- হলুদ টেপ।

    খুলে ফেলল সে কার্টনটা। এভিডেন্স-ব্যাগ ভিতরে। প্লাসটিকের। মুখ খুলল ব্যাগের।

    আড়চোখে ভিতরটা দেখল জন। ছাই ভরা।

    কত দিনের পুরানো, এটা বের করাটা একটু টাফ, বিশেষজ্ঞ-মত ডিয়েগোর। যায় না যে, তা না। কিন্তু এখানে

    তো অনেকের ছাই মিশে গেছে। খানিকটা পরীক্ষা ক। বুঝেছি, এক-একটা এক-এক সময়ের।

    কোন সময়ের, ধরতে পেরেছেন? জিজ্ঞেস করল জন।

    যেটুকু দেখেছি… এক মাসের পুরানো ছাই পেয়েছি এর মধ্যে। আর নতুন পেয়েছি হপ্তা খানেক আগের।

    পরস্পরের দিকে চাইল হ্যারিস আর জন।

    সিরিয়াল কিলিং, অভিমত হ্যারির।

    ফরেনসিক প্যাথলজিস্টের দিকে ফিরল জন। হ্যারিও।

    একটা বিষয় লক্ষণীয়, ফের বয়ান শুরু করল মিস্টার লুনা। পুরোটাই কিন্তু মানুষ-পোড়া ছাই। কাপড়চোপড় কিংবা অন্য কিছুই পেলাম না।

    ন্যাংটা করে পুড়িয়েছে নাকি? স্বগতোক্তি হ্যারিসের।

    কানটার উপরে আলোকপাত করুন, অনুরোধ করল। জন।

    হ্যাঁ… কান। অ্যাপ্রনের আরেক পকেট থেকে একখানা কৌটা বের করল ডিয়েগো। পেপারওয়েটের চেয়ে সামান্য বড় হবে। ট্রান্সপারেন্ট। তুলে ধরে দেখাল ফর্মালডিহাইডে চুবানো কানটা। এটা একটা রহস্য বটে। গোটা শরীর, যেখানে চূর্ণবিচূর্ণ, সেখানে আধখানা এই কান রক্ষা পেল কীভাবে, কে বলবে। আর তো কোনও টুকরো-টাকরা পেলাম না।

    উল্লেখযোগ্য কিছু পেয়েছেন কানটাতে?

    মাথা ঝাঁকাল এক্সপার্ট। পেয়েছি। যদিও নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ নই আমি,  রসিকতা করল। হাসল।

    কী পেয়েছেন? তাড়া দেয়ার ভঙ্গিতে বলল বেরসিক হ্যারি।

    প্রচণ্ড তাপের শিকার হয়েছে কানটা- লোকটা আর কী। হতাশ হলো জন। এটাই তো স্বাভাবিক।

    স্বাভাবিক। তবে আপাত দৃষ্টিতে। অ্যাবনরমাল একটা ব্যাপার আছে এখানে।

    কী রকম?

    চোদ্দ শ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কার্বনে পরিণত হয় মানুষের হাড়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ছিল একুশ থেকে বাইশ শ ডিগ্রি।

    এই পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় কোথায়?

    যেখানে আছে হাই স্কেল মাইক্রোওয়েভের কারবার।

    ফর এগজাস্পল?

    কল-কারখানা।

    নোটেড। এনিথিং এলস? মাথা নাড়ল ডিয়েগো লুনা। লাইসারজিক অ্যাসিডের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে কানের টিসুর মধ্যে।

    লাইসারজিক? তা হলে তো… ।

    হ্যাঁ, এলএসডি।

    এলএসডি বা লাইসারজিক অ্যাসিড ডাইইথাইলামাইড এর ভয়ঙ্করত্ব কারও অজানা নয়। এই ড্রাগ নিলে মারাত্মক হ্যালুসিনেশনে ভোগে লোকে।

    শুধু তা-ই না, বক্তব্য শেষ হয়নি মেক্সিকানের। ফসজিনও আছে।

    ফসজিন? নামটা চেনে না হ্যারিস।

    এক ধরনের গ্যাস মূলত। আনকমন। তবে একটা কমন ব্যাপার আছে এই গ্যাসের।

    কেমন কমন?

    কোথাও যদি কোনও আগ্নেয় দুর্ঘটনা ঘটে, এই গ্যাসের উপস্থিতি দেখা যায় সেখানে। স্পেশালি, যেসব কেমিকেল প্ল্যান্টে কার্বন টেট্রাক্লোরাইড ইউজ করা হয়…

    কার্বন- কী?

    টেট্রাক্লোরাইড,  বলে দিল জন। এক ধরনের ড্রাই ক্লিনিং ফুইড।

    ইউ গট ইট, সোৎসাহে বলল মেক্স। আরেকটা সূত্র দিই এবার। …বছর সাতেক আগে স্মরণীয় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল এখানে। কোন্‌খানে, অনুমান করতে পারেন?

    কোনও ড্রাই-ক্লিনিং ফ্যাসিলিটিতে? একদম ঠিক।

    ফ্যাকটরিটা কোথায়? প্রশ্ন হ্যারিসের।

    পিয়ার ২৩-এর কাছে।

    তিন

    রাত হয়ে গেছে।

    পরিত্যক্ত কারখানায় ভুতুড়ে পরিবেশ। থমথমে শূন্য মঞ্চের রোমাঞ্চ।

    একটা বিড়াল ডেকে উঠল।

    অন্ধকার বলে নয়, এমনিতেই সব কিছু কালো-কালো এখানে। সাত বছর আগের বিস্ফোরণ তার দগদগে ক্ষত রেখে গেছে। তারপর আছে মানুষের অবহেলা আর প্রকৃতির অত্যাচার। বিশাল চত্বরের বিটুমেন-সারফেস খাওয়া-খাওয়া। জন আর হ্যারিস, যে-ভবনটা ঘুরে দেখছে, সেটাকে দালান না বলে দালানের কঙ্কাল বলাই ভালো। ভগ্ন দশা। পুড়ে যাওয়া লোহালক্কড়ের জঞ্জাল ফেলে রাখা হয়েছে। ভাঙা কাঁচ ছড়িয়ে আছে মেঝেময়।

    অনেক উপরে ছাত। স্কাইলাইট সিসটেম। এখন অবশ্য ভেঙে চুরমার জানালাগুলো। আধখানা চাঁদ উঁকি মারছে বাইরে থেকে।

    মিলটার মালিক কে, জানো? জিজ্ঞেস করল জন এক পর্যায়ে। ছয় ব্যাটারির টর্চের সাহায্যে আঁকিবুকি কাটছে আঁধারের গায়ে। বিচিত্র সব ছোট-বড় ছায়া নাচছে ওদের চারপাশে।

    শুনলাম তো- নগর কর্তৃপক্ষ, জানাল হ্যারিস। বেচার চেষ্টা করছে নাকি! বায়ার পাচ্ছে না।

    প্রস্রাব করার শব্দের মতো যে আওয়াজটা রাতের নীরবতায় জোরাল শোনাচ্ছে, সেটার উৎস খুঁজে পেল আলোকরশ্মি। গন্তব্যও।

    ধড়াস করে উঠল হ্যারিসের বুকটা।

    ফ্লোরের এক গর্ত হয়ে যাওয়া অংশে পানি জমেছে। পানির রং রক্তের মতো লাল!

    মরিচা, বন্ধু কী ভাবছে, আঁচ করতে পেরে শুধরে দিল জন। আলো ফেলে দেখাল ছাতে। কয় মণ রাস্ট পড়ে আছে, দেখো।

    দেখল হ্যারিস। বুঝতে পারল, কী ঘটছে।

    মোটা এক লোহার পাইপ সিলিং-এ। লিক আছে। মরচে-ধোয়া পানি সরু রেখায় নেমে আসছে নিচে।

    সেদিকে কদম বাড়াল জন। হ্যারিসও যোগ দিল ওর সঙ্গে। ময়লা পানি থেকে গা বাঁচিয়ে দাঁড়াল ওরা।

    বুঝতে পারছি না, জন। কী হতো এখানে?

    ড্রাই-ক্লিনিং, বলল জন ঠোঁট টিপে।

    আরে, ধুর! ওই কথা কে জানতে চায়! আমি বলছি লোকগুলোর কথা। কী সব পাওয়া গেছে… এলএসডি… ফসফিন…

    ফসজিন।

    একই কথা! ধৈর্যহারা হলো হ্যারিস।

    একই? ফ আর জ এক হলো? এই পরিবেশেও কৌতুক করতে ছাড়ল না জন। তোমাকে যদি ফোর্ড না বলে জোর্ড বলে ডাকি, আপত্তি করবে না?

    হেসে ফেলল হ্যারিস। ওর ট্যাগ হিউয়ার লুমিনাস। ঘড়িতে ক টা বাজে, দেখল।

    হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ল জন, পায়ের পাতার সামনের। অংশে ভর দিয়ে। কী জানি নজর কেড়ে নিয়েছে ওর।

    সাদা-সাদা কী যেন পড়ে আছে মাটিতে। লম্বা লম্বা কতগুলো জিনিস। ওগুলোর এক মাথা চৌকো, আরেক মাথা দুই ভাগে বিভক্ত। চৌকোনা থেকে সরু হতে হতে চোখা হয়ে গেছে জোড়া অংশ দুটো।

    মানুষের দাঁত!

    চারকোনা মাথাটা দাঁতের বহির্ভাগ, অন্য দুটো দন্তমূল।

    হ্যারিসও বসল হাঁটু ভেঙে। চোখ নিয়ে গেল দাঁতগুলোর কাছে। একটা দাঁত ঝিকিয়ে উঠল ওর চোখে।

    সোনা দিয়ে বাঁধানো দাঁতটা!

    চার

    পেষক দন্ত, দাঁতটা দেখেই রায় দিল ডিয়েগো লুনা। ম্যাগনিফাইং গ্লাসের নিচে ধরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছে এখন।

    উঁচু এক টুলে বসেছে। ওর দু পাশে দাঁড়ানো দুই এজেন্ট ঝুঁকে রয়েছে পেল্লায় কাঁচটার উপরে।

    মাড়ি থেকে কীভাবে আলাদা হয়েছে, তার কোনও আলামত রয়েছে? প্রশ্ন জনের। এ এলোপাতাড়ি আঁচড় রয়েছে এনামেলের গায়ে। দুই বিপরীত পাশে। একটা উপসংহারেই পৌঁছানো যায় এ থেকে। সাঁড়াশি।

    আগুনে পোড়ানোর আগে দাঁত খুলে ফেলেছে নাকি? আপন মনে বলে উঠল হ্যারিস। পানিশমেন্ট? নাকি…

    চিমটা দিয়ে আরেকটা দাঁত ধরল ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট অণুবীক্ষণ যন্ত্রে।

    ফিলিং করা হয়েছে এটাতে। তবে… যেসব জিনিস দিয়ে সচরাচর দাঁত ফিলিং করা হয়, এখানে মনে হচ্ছে করা হয়নি সেটা।

    কী দিয়ে করেছে ফিলিং? জিজ্ঞাসা জনের।

    টুল থেকে নামল স্পেশালিস্ট। গেল আলোকিত এক ডায়াসের দিকে। টেবিলের উপরটা সাদা প্লাসটিকের। তলায় আলো জ্বালবার ব্যবস্থা। ফিল্মের নেগেটিভের মতন দেখতে এক ফুট মাপের দুটো রিল রাখা সাদা প্ল্যাটফর্মে। প্রত্যেকটা দাঁতের এক্স-রে ইমেজ রয়েছে ও-দুটোয়। আলোয় স্পষ্ট।

    বিশেষ দাঁতটার ছবি মনোযোগ দিয়ে দেখল ডিয়েগো। দেখতে দেখতে মন্তব্য করল, অদ্ভুত!

    জন-হ্যারিস যথারীতি দাঁড়িয়েছে ওর দুই পাশে। মুখ তাকালাকি করল পরস্পরের।

    পালা করে দু জনের দিকেই তাকাল মেক্সিকান লোকটা। পারদের সাথে আরও কী-কী ব্যবহার করেছে।

    অদ্ভুত বলছেন কেন? জিজ্ঞাসা হ্যারিসের।

    বলছি- তার কারণ, আমেরিকায় এই পদ্ধতি ফলো করা হয় না।

    আবার পরস্পরের মুখ চাইল দুই বন্ধু।

    বকের মতো গলা বাড়াল জন। আর ইউ শিয়োর?

    ড্যাম শিয়ের, ম্যান। …রুট ক্যানাল করা হয়েছে এটাতে। অনেক ভাবেই করা যায় ক্যানাল। তার মধ্যে একটা পদ্ধতি হচ্ছে- এন-টু। অনেক পুরানো টেকনিক, ব্যাখ্যা করল মিস্টার লুনা। মেডিকেল সায়েন্সের অগ্রগতির ফলে উন্নত দেশগুলো থেকে এন-টুর প্র্যাকটিস এক রকম উঠেই গেছে, বলা যায়। তবে একেবারে লোপ পায়নি চর্চাটা। বিশেষ করে, পূর্ব ইউরোপের ডেন্টিস্টরা এখনও এই ভাবে রুট ক্যানাল করে থাকে।

    পাঁচ

    গুড মরনিং, স্যর। আমার নাম তাতিয়ানা। পাঁচটা মিনিট সময় হবে, স্যর, আপনার? বিশ্বাস করুন, ঠকবেন না। …ধন্যবাদ। স্যর, আপনি কি জানেন, বিশ্ববিখ্যাত কসমেটিকস কোম্পানি ব্রোকার্ড পুরুষদের জন্য নতুন একটি পারফিউম নিয়ে আসছে বাজারে? স্পেশাল এই সুগন্ধীটির নাম- লিবিডো। …জি, স্যর, বিদেশি কোম্পানি আমরা। অফিশিয়ালি লঞ্চ করার আগেই কোম্পানির তরফ থেকে সিক্রেট একটি অফার দেয়া হচ্ছে। সেটি হলো, আমাদের পণ্যটি বিনামূল্যে পরখ করতে পারবেন আপনি। দেখুন, এবং মতামত দিন। এ সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য। …না, স্যর। অল্প কয়েক জনকে নির্বাচন করা হয়েছে এই অফারটির জন্য। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, একবার ব্যবহারের পর আমাদের প্রডাক্ট নিয়মিত ব্যবহার করতে চাইবেন আপনি…

    তাতিয়ানার পিছনে দাঁড়ানো যুবকটিকে সন্তুষ্ট দেখাচ্ছে। ঝাড়া ছ ফুট লম্বা সে। ডান গালে লম্বা একটা কাটা চিহ্ন। প্রাইভেট ক্লাবের বডিগার্ডের মতো পেশিবহুল শরীরে এঁটে বসেছে জলপাই-সবুজ টি-শার্ট। নিচে অবশ্য ঢিলেঢালা মোবাইল প্যান্ট। চুলগুলো ক্রু-কাট করে কাটা। চেহারাটা নিষ্ঠুর ধরনের।

    আরেক জনের পিছনে গিয়ে দাঁড়াল লোকটা।

    …ম্যাম, আপনি কি জানেন, বিশ্ববিখ্যাত কসমেটিকস কোম্পানি ব্রোকার্ড মহিলাদের জন্য নতুন একটি পারফিউম নিয়ে আসছে বাজারে? স্পেশাল এই সুগন্ধীটির নাম লিবিডো। অফিশিয়ালি লঞ্চ করার আগেই কোম্পানির পক্ষ থেকে সিক্রেট একটি অফার দেয়া হচ্ছে ভাগ্যবান কয়েক জনকে। সেটি হলো, আমাদের পণ্যটি বিনামূল্যে পরখ করতে পারবেন আপনি। দেখুন, এবং নির্দ্বিধায় মতামত দিন। সুযোগটি সীমিত সময়ের জন্য। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস…

    সরে গেল মাসলম্যান। স্যাটিসফাইড। তার মতো জনা সাতেক নারী-পুরুষ একচুল্লিশ জন। সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজের তদারক করছে। বেঞ্চের। সারিগুলোর পাশ আর মাঝখান দিয়ে টহল দিচ্ছে ওরা। খেয়াল রাখছে, ঠিকমতো খদ্দের পটাতে পারছে কি না ছেলেমেয়েগুলো।

    …অসংখ্য ধন্যবাদ, স্যর, এক মেয়ের কথায় কান আরেক গার্ডের প্রডাক্ট স্যাম্পল নিয়ে লোক যাবে আপনার কাছে। কাইলি বলবেন, স্যর, কোন্ ঠিকানায় পেতে চান এগুলো? রাইটিং প্যাড মেয়েটার সামনে। আঙুলের ফাঁকে টিপ-কলম। খসখস করে কিছু তথ্য লিখল কাগজে।

    পিছন থেকে সামনে চলে এল মাঝারি হাইটের গাইড। ধীর পদক্ষেপে এপাশ-ওপাশ নজর বুলিয়ে থামল এসে এক তরুণের পাশে। ফোন কানে ধরে বসে আছে ছেলেটা। চুপচাপ। কিছুই লেখেনি প্যাডে।

    নো অর্ডারস?

    খোনা স্বরে চমকে পাশ ফিরে চাইল তরুণ রিপ্রেজেন্টেটিভ। মূর্তিমান যমদূত মনে হলো ওর টহলদারকে। বুকের উপরে দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে। সামান্য ফাঁক করে রেখেছে পা জোড়া।

    নট ইয়েট, স্যর! নার্ভাস গলায় বলল তরুণটি। টান টান মুখের চামড়া ওর। যেন ছুরি দিয়ে চাছা হয়েছে লম্বাটে মুখটা। মসৃণ, চকচকে ভাব। সমকামীদের মতো। লালচে, পাতলা ঠোঁট।

    এক নজর দেখল গার্ড তরুণকে। স্পাইক-চুল আর টার্টল-নেক সোয়েটার ওর চারকোনা পাথুরে মুখটায় ভাব ফোঁটাতে ব্যর্থ হলো। চোখেরও কোনও ভাব পরিবর্তন নেই। জুলজুল করে তাকিয়ে আছে।

    কী নাম?

    বোরিসভ, স্যর! লেভ বোরিসভ!

    বুক থেকে হাত নামাল গার্ড। রামগরুড়ের ছানা মার্কা চেহারাটা নিয়ে এগোল সামনে।

    লোকটার পিঠের দিকে চেয়ে আছে বোরিসভ। কেন জানি, কু ডাকল ওর মন। এদের নিস্পৃহ আচরণের মধ্যে ভীতিকর কী যেন আছে। অশুভ কিছু!

    ছয়

    পুলিস ডিপার্টমেন্ট থেকে ডেন্টাল রেকর্ডের সহায়তা নিয়ে ফিলিং করা দাঁতের মালিকের নাম-ধাম বের করা গেছে। বেশি খুঁজতে হয়নি। লাক ওদের অনুকূলেই ছিল। ইস্টার্ন ইউরোপ থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে অমন দাঁতের রেকর্ড কেবল একজনেরই।

    অল্পবয়সী এক ছেলে। পড়ত কলেজে। নিখোঁজ ছিল দুই মাস ধরে। পুলিসের কাছে ধরনা দিয়েছিল ওর বাপ।

    ছেলেটার কলেজ-আইডির ফোটোকপি নিয়েছে জন। গাড়িতে বসে আরেক দফা চোখ বোলাচ্ছে কাগজটায়।

    উপরে, বা দিকের কোণে তিনটে গাছের-পাতা। কলেজের মনোগ্রাম। তিনটে পাতায় তিনটে ইংরেজি অক্ষর। পি। সি। সি। ডান কোণে স্ট্যাম্প-সাইজ ছবি। ওইটুকু ছবিতে ব্যাক-ব্রাশ করা চুল ছাড়া আর কোনও বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ছে না।

    এরপর ছাত্রের প্রয়োজনীয় ইনফর্মেশন।

    পেটালুমা কমিউনিটি কলেজ
    মিখাইল ভিকটরোভিচ
    আইডি নং: ৮৯৩৪০১-৩৯৫৮
    কমার্স গ্রুপ
    মেয়াদ: এক বছর মেয়াদোত্তীর্ণের সময়: মার্চ, ২০১৫

    সবশেষে প্রিন্সিপালের স্বাক্ষর।

    ছেলেটার ফ্যামিলি সম্বন্ধেও কিছু ইনফর্মেশন দিয়েছে। পুলিস।

    ও আর ওর বাপ-মা এসেছে চেচনিয়া থেকে… পড়ছে। জন। ২০১১-তে… ছেলেটার বয়স তখন চোদ্দ। বেশ ক বার নাম উঠেছে ওর পুলিসের খাতায়।

    কী কেস? স্টিয়ারিং-এ হাত। রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়ে জিজ্ঞেস করল হ্যারিস।

    অনেক। শপ-লিফটিং… ভাংচুর… মারপিট… বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি… অনধিকার প্রবেশ… ।

    থাক-থাক, আর বলতে হবে না!

    চান্দি গরম টাইপ। সামান্য ছিট আছে মাথায়…

    ছিট, নাকি শিট? ,

    পাশে বসা বন্ধুকে এক পলক দেখল জন। খেপছ কেন তুমি?

    তৎক্ষণাৎ উত্তর করল না হ্যারিস। কয়েক মুহূর্ত পর চাপা ঝঝের সঙ্গে বলল, এই ইমিগ্র্যান্টগুলো… বিষফোঁড়া এক একটা… নষ্ট করে ফেলছে দেশটাকে… ।– বলেই বুঝল, বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছে। ঝাঁ-আঁ করে উঠল দুই কান। চট করে তাকাল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কো ওঅর্কারের দিকে। পোকা গিলে ফেলা চেহারায় বলল, সরি, জন! কিছু মনে কোরো না তুমি! তোমাকে মিন করে বলিনি! মার রাগ জার্মান, রাশান, আফ্রিকান, এশিয়ানদের উপরে। কী যে ভাবে এরা দেশটাকে, খোদাই মালুম! আমেরিকাতে এলেই সব সমস্যার সমাধান যেন… টাকা ওড়ে বাতাসে… হায়, রে, বোকা মানুষ! আর মুসলিমরা ধর্মের নামে যা করে বেড়াচ্ছে …

    মুসলমান মানেই কিন্তু টেররিস্ট নয়, হ্যারি। আপত্তি করল জন। ভালো-খারাপ সবার মধ্যেই আছে। দেখার চোখটা একটু বদলাও, বন্ধু!

    বন্ধু নারাজ হয়েছে, বুঝতে পেরে আরও বিব্রত হলো হ্যারিস। প্রসঙ্গ পালটাল তড়িঘড়ি করে, বাসার নাম্বারটা কত যেন?

    নোটবুক দেখল জন। এক তিন তিন দুই পাঁচ।

    লিবার্টি অ্যাভিনিউ অভিমুখে চলেছে গাড়ি।

    ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে গেল ডাউন-টাউনে।

    খেটে খাওয়া মানুষদের এলাকা। যারা থাকে, তাদের কেউই তেমন সচ্ছল নয়বোঝা যায়। বিলাসিতার তেমন। কোনও নিদর্শন চোখে পড়ল না ওদের।

    বাড়িটা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো। হোল্ডিং নাম্বারগুলো সব এলোমেলো। সিরিয়াল মেইনটেইন করা হয়নি।

    কালো বার্নিশ করা দরজার পাশে নারীর স্তন-আকৃতির বেলপুশ। লাল সুইচটা চেপে ধরতেই টিয়া পাখির কর্কশ চিৎকার শোনা গেল ভিতরে।

    অনেক সময় লাগিয়ে দরজা খুলল এক ভদ্রলোক। ছাপাই শার্ট পরনে। জমিনে হামিংবার্ড উড়ছে। ঠোঁটের উপরে মোটা চিরুনির মতো গোঁফ। কাঁচায়-পাকায় মেশানো। অগোছাল দাড়ি গালে। থুতনির বাঁ দিকে মস্ত এক আঁচিল। বড় বড় রোমে ভরা হাত। সস্তা জাপানি ঘড়ি কবজিতে। কালো ব্যাণ্ড। ব্র্যাণ্ডটা ক্যাসিও।

    ভদ্রলোকের চোখের নিচে কালি। ছলছলে, বিষণ্ণ দৃষ্টি। ধসে গেছে চেহারাটা। ছেলের মর্মান্তিক পরিণতির খবর পেয়ে গেছে ইতোমধ্যে।

    মিস্টার ভিকটরোভিচ?

    সামান্য কাপল মাথাটা।

    এফবিআই থেকে আসছি আমরা।

    ভাবান্তর হলো না। শূন্য দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা: কী চাই?

    আপনার ছেলের ব্যাপারে।

    প্রতিক্রিয়া নেই।

    আপনাকে সান্ত্বনা জানানোর ভাষা নেই আমাদের…

    কথা ফুটল এবারে। দুই মাসে দুই শ বার গিয়ে পড়েছি। দারোগাদের কাছে, ভেজা স্বর। গরজ দেখায়নি কেউ। আর আজকে আপনারা এসেছেন সিমপ্যাথি দেখাতে! তামাশা পেয়েছেন? জ্বলে উঠল প্রৌঢ়ের চোখের তারা।

    চোখ নত করল হ্যারিসন।

    পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারি জিনিস নাকি পিতার কাঁধে ছেলের কফিন। মিস্টার ভিকটরোভিচের মুখে হাসি। ফোঁটানোর এখন একটাই উপায়, মিখাইল ভিকটরোভিচকে জীবিত করে দেয়া। সেটা তো আর সম্ভব নয়।

    পুলিসের পক্ষ থেকে ব্যর্থতার দায় নিচ্ছি আমরা, এবারে মুখ খুলল জন। কিন্তু আপনার ছেলের মৃত্যতেই সব শেষ হয়ে যায়নি, মিস্টার ভিকটরোভিচ। আপনি কি চান না, বিচার হোক খুনির?

    কাজ হলো কথায়। এক দিকের নাক টানল ভদ্রলোক। কী চান আপনারা?

    সাহায্য।

    জনের চোখে প্রত্যয় দেখতে পেল প্রৌঢ় চেচেন। আসুন।

    সরু এক সংক্ষিপ্ত প্যাসেজ-ওয়ে দিয়ে ডাইনিং রুমে নিয়ে। এল ওদেরকে ভিকটরোভিচ। ছোট্ট এক খাওয়ার টেবিলে। এনে বসতে বলল। কোনও বৈঠকখানা নেই বাড়িটায়।

    বসল না হ্যারিসন। জায়গাও নেই বসার। দাঁড়িয়ে রইল ফ্রিজের পাশে।

    ফুল-তোলা অয়েলক্লথ টেবিলে। মাঝখানে লবণদানি। ব্যস। আর কিছু নেই।

    বলুন, কী সাহায্য করতে পারি।

    আপনার ছেলের কথা বলুন। কেমন সম্পর্ক ছিল তার বাড়ির সাথে?

    ফোঁস করে শ্বাস ফেলল চেচেন। কী আর বলব! এক বুক হতাশা। ও তো আমাদের কারও কথাই শুনত না! নিজের মেজাজ-মর্জিমতো চলত…

    পড়াশোনা?

    করত না।

    কোনও কমপ্লেইন আসেনি কলেজ থেকে?

    এন্তার। মাস চারেক আগে রাসটিকেট করা হয়েছে ওকে।

    নতুন তথ্য।

    তারপর?

    আমিও অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। শাসালাম একদিন, ভালো হয়ে না গেলে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। কী বলল, জানেন? মুখের উপর বলে দিল, লেখাপড়া আর করবে না সে। ও-কাজ তার জন্য নয়।

    কী করত তা হলে? সময় কাটাত কীভাবে?

    ধান্দাবাজি করে। সারাক্ষণ পয়সা কামানোর ধান্দায় থাকত। শর্টকাটে কী করে বড়লোক হওয়া যায়…

    বুঝেছি।

    তবে একটা কথা বলতেই হবে। পড়ালেখা ছাড়ার পর বখাটেপনাও কমে গিয়েছিল মিখাইলের। হঠাৎ করেই বদলে গেল যেন। বাউণ্ডুলেপনা বাদ দিল। তার এক মাত্র ধ্যানজ্ঞান তখন টাকা। বোধ হয় জুয়া বা ওই-জাতীয় কিছুতে মজেছিল। তারপর ঢুকল একটা চাকরিতে…

    চাকরি? হ্যারিসনের মুখ থেকে বেরোল প্রশ্নটা।

    তার দিকে তাকাল ভিকটরোভিচ, সিনিয়র। হ্যাঁ। আমিও অবাক হয়েছিলাম প্রথমে। অবশ্য খুশিও হয়েছিলাম। ভাবলাম, যাক, শেষ পর্যন্ত সুমতি ফিরেছে ছেলেটার। …মানুষ তো বদলায়, তা-ই না?

    কী চাকরি করত?

    সঠিক বলতে পারব না। ভেঙে বলেনি কিছু। জানতেও চাইনি। হুটহাট বিগড়ে যাওয়া স্বভাব ওর। ভেবেছিলাম, মুড ভালো থাকলে নিজেই বলবে। কথাবার্তা থেকে যা বুঝেছি, কাজটা কাস্টমার কেয়ারের মতো কিছু। টেলিফোনে সার্ভিস দেয়া লাগত। …কীসের কাস্টমার, জিজ্ঞেস করবেন না। বলতে পারব না।

    কখনও কি পয়সাকড়ি চেয়েছে আপনাদের কাছে? বা বাসা থেকে চুরি গেছে কিছু?

    জনের দিকে চাইল সিনিয়র ভিকটরোভিচ। না তো! কেন?

    তেমন কিছু না। সব রকম সম্ভাবনাই তলিয়ে দেখছি। আমরা।

    কী রকম?

    এই… যেমন ধরেন, ড্রাগস। নেশা করত কি না আপনার ছেলে…

    আমার তা মনে হয় না। এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়ল চেচনিয়ান। এই একটা ব্যাপারে আপনাদেরকে আমি নিরানব্বই পারসেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি। মাদকাসক্ত ছিল না ও।

    এলএসডির কথাটা তুলল না আর জন। অবশ্য ওই কান মিখাইলের না-ও হতে পারে। নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন।

    মিসিং হওয়ার আগে অস্বাভাবিক কোনও ব্যাপার লক্ষ করেছেন ওর মাঝে? এমন কোনও আচরণ, যেটা সাধারণত করত না…

    দুই সেকেণ্ড চিন্তা করল বাপ। কই… এমন কিছু তো মনে পড়ছে না। তবে বন্ধুবান্ধব জুটিয়েছিল কিছু নতুন। খেয়াল করেছি। ওদের সাথে চলত… দল বেঁধে। ডিউটি শেষে প্রায়ই গাড়িতে করে বাসায় নামিয়ে দিত ওকে বন্ধুরা। সম্ভবত একসাথে কাজ করত ওরা।

    হতে পারে। …আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরে কি আর দেখেছেন ওর বন্ধুদের?

    জবাব দিতে গিয়ে থেমে গেল লোকটা। পেণ্ডুলামঅলা দেয়ালঘড়ি সময়-সঙ্কেত দিতে শুরু করেছে।

    না, ঘণ্টাধ্বনি থামার পর বলল। এক বারও নয়।

    আবার দেখলে চিনতে পারবেন ওদেরকে?

    চেনা মুশকিল। কারও চেহারাই দেখিনি কখনও। গাড়ি থেকে নামত না ছেলেমেয়েগুলো।

    মেয়েও আছে এর মধ্যে!

    কী গাড়ি, বলতে পারবেন? জরুরি আরেকটা প্রশ্ন করল হ্যারিসন।

    তা পারব। গাড়ি-বিষয়ে ইন্টারেস্ট আছে আমার। গরিবের ঘোড়া-রোগ আর কী! …জার্মান গাড়ি। বিএমডব্লিউ।

    ধাঁই করে দুটো জিনিস ঘাই মারল জনের মাথায়। ইউরোপের সঙ্গে আরেকটা যোগসূত্র! আর দ্বিতীয়টা হলো খটকা। সার্ভিস-সেন্টারে কাজ করে, এরকম কেউ বিএমডব্লিউ চালাবে কেন? নাহ, মেলে না। একেবারেই খাপছাড়া।

    মিস্টার ভিকটরোভিচের কথা শেষ হয়নি তখনও। গাড়ির ব্যাপারে আমার মতোই উৎসাহ মিখাইলের। প্রায়ই বলত, খুব তাড়াতাড়ি ওরকম একটা গাড়ির মালিক হবে সে-ও।

    টাকা পেত কোথায়?

    রোজগারের টাকা। বলত, প্রমোশন হবে শাইন করতে পারলে। আস্তে আস্তে উপরে উঠবে সে।

    হুম। এই দুই মাসে সামান্যতম সন্দেহও কি জাগেনি আপনাদের, কোথায় গায়েব হতে পারে মিখাইল? ,

    একটা চিঠি দিয়েছিল…

    চিঠি!

    চোখাচোখি হলো জন ও হ্যারিসের।

    কার চিঠি?

    কার আবার! মিখাইলের।

    বলেন কী! কবে পেলেন চিঠিটা?

    দু মাস আগেই। তিন দিন ধরে লাপাত্তা তখন ছেলেটা। তারপর পেলাম ওই চিঠি। মাথামুণ্ডু কিচ্ছু বুঝিনি আমরা ওটা পড়ে। তার পরই পুলিসে যোগাযোগ করার তাগিদ অনুভব করি।

    চিঠিটার কথা বলেছেন পুলিসকে? দেখিয়েছেন। তাদেরকে?

    না।

    গাধামো করেছেন! মনে মনে গাল বকল হ্যারিস। কেন বলেননি? শুধাল কৈফিয়ত দাবি করার ভঙ্গিতে।

    আমতা আমতা করতে লাগল মিখাইলের বাপ। আসলে… চিঠিটা কেমন যেন। এটা বুঝতে পেরেছি, মিখাইল নিশ্চয়ই এমন কিছুর সাথে জড়িয়েছে, সমাজ যেটাকে ভালো চোখে দেখে না। পুলিসকে বললে আরও বিপদে পড়তে পারত ছেলেটা। খুঁজে বের করে হয়তো ওকেই অ্যারেস্ট করত পুলিস। ওর মা তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিল। পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল ওটা…

    ফেলেছেন নাকি? শঙ্কায় চড়ে গেল জনের গলার স্বর।

    আরে, না! বোকা মহিলার কথায় কান দিতে আছে নাকি!

    শব্দ করে স্বস্তির শ্বাস ফেলল দু জনেই।

    চিঠিটা কি দেখতে পারি?

    আলবত।

    ডাইনিং টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল প্রৌঢ়। ফিনফিনে, ময়লা পরদা সরিয়ে নিজেদের শোবার ঘরে গিয়ে ঢুকল। ফিরল একটা সাদা খাম নিয়ে। খামটা থেকে চিঠিটা বের করে তুলে দিল জনের হাতে।

    দুই পাতার চিঠি। কাগজের এপিঠ-ওপিঠ লেখা। প্রচুর ইংরেজি হরফ চোখে পড়লেও ইংরেজি নয় ভাষাটা ক্যাপিটাল লেটারে লেখা শব্দের ভিতরে আবার রয়েছে ছোট হাতের অক্ষর। N লেখা হয়েছে উলটো করে। O-এর পেট কাটা। ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির লেখা যেন।

    রুশ, জানাল ভদ্রলোক। দিন, পড়ে দিচ্ছি।

    থ্যাঙ্ক ইউ, মিস্টার ভিকটরোভিচ। তার দরকার হবে না। ইন্টারপ্রেট করার লোক আছে আমাদের।

    সাত

    জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ নাম মেয়েটার। শ্রী লঙ্কায় বাড়ি। এখন থিতু হয়েছে আমেরিকায়।

    বাড়াবাড়ি ধরনের সুন্দরী। উজ্জ্বল শ্যামলা বরণ। তলোয়ারের মতো ধারাল ফিগার। উগ্র একটা আকর্ষণ রয়েছে ওর মাঝে। আয়ত চোখ। টকটকে লাল ফ্রেমের চশমা সেক্স অ্যাপিল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মেয়েটার।

    মডেলিং-এ গেলে নাম কামাতে পারত। হয়েছে। ভাষাবিদ।

    দুটো স্লাইড বানানো হয়েছে চিঠির পাতা জোড়া থেকে। লাগানো হয়েছে ওভারহেড প্রজেক্টরে। সবার দৃষ্টি বড় পরদায়।

    লাইন বাই লাইন অনুবাদ করে চলেছে জ্যাকলিন। শ্যানেল নাম্বার ফাইভ-এর মিষ্টি গন্ধে ভুরভুর করছে চারপাশ।

    মাকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিটা। প্রথমে সালাম জানিয়েছে। তারপর কুশল। পর সমাচার এই যে বলে। জানাচ্ছে, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে সে।

    বাধ্য হয়েই তোমাদের সাথে সমস্ত বন্ধন শেষ করে দিতে চলেছি, বলে চলেছে জ্যাকলিন। এই মুহূর্তে এমন এক দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি আমি, যেখানে কোনও পিছুটান থাকলে চলে না। আমার অতীত পরিচয়ের সমস্ত চিহ্ন পোড়াতে চলেছি নতুন বিশ্বাসের পবিত্র আগুনে…

    কী বোঝাতে চেয়েছে? বলে উঠল হ্যারিস। কোনও ধর্মীয় সংগঠনে যোগ দিয়েছিল মিখাইল? পিছুটান রাখা যাবে

    … এটাকে তো আমার ধর্মীয় অনুশাসনের মতো লাগছে। নানদের যে প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হয়…

    আনুগত্যের কথা আছে এখানে,  বলল ভাষাবিদ। দায়িত্ব আর কর্তব্যের কথা লিখেছে…

    কার প্রতি?

    বিশেষ কারও প্রতি না, স্যর। বিশ্বাসের প্রতি। লিখেছে: আমি আমার বিশ্বাসের প্রতিনিধি।

    হোলি কাউ।

    আরও কী বলছে, শুনুন। যদি আমি নিজের বিশ্বাসে অটল থাকতে না পারি, যদি অসম্মানের কারণ হই আমার ভাইদের, শেষ দিন পর্যন্ত তা হলে আমার আত্মা পুড়বে গ্যাহেনার আগুনে।

    গ্যাহেনা কী?

    দোজখ,  জবাবটা দিয়ে দিল জন। হিব্রু ভাষায় দোজখকে বলে- গ্যাহেনা। ওল্ড টেস্টামেন্টে আছে শব্দটা।

    তুমি জানলে কী করে?

    জানি। হাই স্কুলে হিব্রু ছিল আমার। স্পেশাল স্টাডিজ।

    টাকে হাত বোলাচ্ছে হ্যারিস। চুল পড়ে যায়নি, কামিয়েছে মাথা। এটাই নাকি ওর হেয়ারস্টাইল। যা মনে হচ্ছে… কোনও ধরনের ভ্রাতসঙ্ঘে যোগ দিয়েছিল ছোঁড়াটা।

    আমি তাঁকে দেখেছি, পড়ে চলল ল্যাঙ্গুয়েজ-এক্সপার্ট। আকাশ থেকে মুষলধারে পড়ছিল রক্তের ফোঁটা! কিন্তু একটুও ভয় পাইনি, জানো? তিনি আমাদের অভয় দিয়েছিলেন… বললেন, ভয় নেই… ভয় নেই…

    এই তিনিটা কে? আবারও বাধা দিল হ্যারিস।

    কেউই না হয়তো,  মন্তব্য জনের। ড্রাগসের প্রভাব পুরোটাই। একবার এলএসডিতে আসক্ত এক হিপ্পি দাবি করেছিল, যিশু খ্রিস্টের সাথে দেখা হয়েছে তার…

    যত্ত সব পাগল-ছাগল!

    সীমাহীন ক্রোধে থরথর করে কাঁপছিলেন তিনি। ওঁর ঈষৎ লালচে মুখটা থেকে অনুরণনের মতো বেরিয়ে আসছিল একটাই কথা: বদলা হবে,… বদলা হবে… বদলা হবে…

    ঢোক গিলল হ্যারিস৷ খাইছে! কী এসব?

    প্রলয় আসন্ন। কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছে। প্রতারকদের ভুল সমীকরণ আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার আগেই সঠিক হিসাব বের করতে পেরেছি আমরা…

    দাঁড়াও, ভাই! একটু দাঁড়াও। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে আমার!

    পিরামিড নিয়ে কন্ট্রোভার্সি আছে, জানো? বলল। জন আচমকা।

    কীসের মধ্যে… বাক্যটা শেষ করল না হ্যারিস। কোন্ পিরামিড?

    মিশরের।

    অ্যালিয়েন এসে পিরামিড তৈরি করে দিয়েছে- ওইটা?

    না, ওই বিতর্ক না। অন্য একটা। …গিজার পিরামিডকে মানমন্দির হিসাবে দেখে অনেকে। পিরামিডের চূড়া থেকে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিচার করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস দিত প্রাচীন কালের জ্যোতিষীরা। তারা এমন কী এটাও বলে গেছে, কবে ধ্বংস হবে পৃথিবী। এদিকে এক দলের মতবাদ, পিরামিডগুলো স্থাপন করা হয়েছে ভুল পজিশনে। বহু পয়গম্বর নাকি বলে গেছেন এ কথা। ইজিপ্টোলজিস্টদের অনেকেও এই তত্ত্ব স্বীকার করে। তো, ভুল অবস্থানে থাকার কারণে গণকদের ফোরকাস্টগুলো পুরোপুরি মিলত না। কখনও কখনও অবশ্য ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ত। কথা সেটা না। কথা হচ্ছে…

    অ্যাপোক্যালিন্স নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, সেটা ভুল?

    এগজ্যাক্টলি। বিরুদ্ধবাদীদের গণনা অনুযায়ী, কেয়ামত হবে ২০১৬ সালে।

    নস্ট্রাডামাস ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি।

    যা-ই বলো… এই পাগলামির উপর ভিত্তি করেই কিন্তু ছোট-বড় অসংখ্য সঙ্ তৈরি হয়েছে দুনিয়া জুড়ে। মিখাইল সম্ভবত এমনই একটা গ্রুপে যোগ দিয়েছিল।

    স্যর, একটা কথা বলি? পারমিশন চাইল ভাষা বিশারদ।

    প্লিজ।

    গ্যাহেনা শব্দটা অস্বাভাবিক লাগছে আমার কাছে। ছেলেটা দোজখ, জাহান্নাম, ইত্যাদি না বলে গ্যাহেনা বলল কেন?

    চমৎকৃত হলো জন। গুড শট, মিস ফার্নান্দেজ। শব্দটার নিশ্চয়ই কোনও তাৎপর্য আছে।

    আট

    রাত্রি অন্ধকার।

    স্থানীয় সময়: নয়টা পঁচিশ।

    ড্রাই-ক্লিনিং এরিয়াতে এসে হাজির হলো দুটো বিএমডব্লিউ।

    রেডিয়ো বাজছে একটার। ফুল ভলিউম। জনবসতি নেই। আশপাশে। মৃত কারখানায় কেমন বিজাতীয় শোনাচ্ছে পিঙ্ক ফ্লয়েড-এর গান। ষাটের দশকের জনপ্রিয় রকব্যাণ্ড।

    …বাট ইট ওঅজ ওনলি ফ্যান্টাসি
    দ্য ওঅল ওঅজ টু হাই
    অ্যাজ ইউ ক্যান সি
    নো ম্যাটার হাউ হি ট্রাইড
    হি কুড নট ব্রেক ফ্রি
    অ্যাণ্ড দ্য ওঅর্স এইট ইনটু হিজ ব্রেইন…

    সাইকাডেলিক গানের মূৰ্ছনায় জিকিরের ভঙ্গিতে মাথা দোলাচ্ছে আরোহীরা। একজন বাদে। সিটিয়ে রয়েছে সে।

    গান শেষ হলো। রেডিয়োটা বন্ধ করে দিল একজন।

    দরজা খুলে গেল গাড়ির। ব্যাকসিট থেকে ঠেলে ফেলে দেয়া হলো সন্ত্রস্ত তরুণটিকে। ধুলো আর ময়লার মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল ছেলেটা।

    বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা। এরপর ওকে ঘিরে চক্কর দিতে আরম্ভ করল গাড়ি দুটো। ধুলোর ঝড় তুলে ফেলল।

    ঝট করে-করে চারদিকে সরছে ছেলেটার চোখ দুটো। উন্মাদ-দৃষ্টি। বুদ্ধিশুদ্ধি গুলিয়ে গেছে। ওর মনে হচ্ছে, এক জোড়া কালো চিতা চক্রাকারে ঘুরছে ওকে কেন্দ্র করে। গাড়ির হেডলাইটকে মনে হচ্ছে শ্বাপদের চোখ।

    সহসাই থেমে গেল গাড়ি দুটো।

    দৌড় দিল তরুণ। প্রেতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ফ্যাকটরি-বিল্ডিংগুলোর দিকে। দিগ্বিদিকজ্ঞান হারিয়েছে।

    গাড়ি দুটো দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। ফিরে যেতে শুরু করল তারপর।

    ছেলেটা থামল না তবু। চলে যাচ্ছে ওরা, জানে না ও। আবছা থেকে গাঢ়, গাঢ় থেকে প্রগাঢ় অন্ধকারে সেঁধিয়ে দিতে লাগল নিজেকে।

    হঠাৎ এক শক্তিশালী বাহু জাপটে ধরল পলায়নরত তরুণকে।

    সভয়ে চেঁচিয়ে উঠল ছেলেটা। কাঁপছে হিসটিরিয়াগ্রস্তের মতো।

    ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না! জনের গলায় কথা বলে উঠলেন সুকুমার রায়।

    বাংলা বোঝে না হ্যারিসন। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সহকর্মীর দিকে। কী বলল জন? হিব্রু?

    নয়

    স্যান ফ্রানসিসকো হল অভ জাস্টিস।

    ইন্টেরোগেশন রুম। রাত দশটা পনেরো।

    টেবিলের এক ধারে বসিয়ে রাখা হয়েছে তরুণটিকে। হ্যারিস আর জন ওর মুখোমুখি।

    ঘরটা সাউণ্ডপ্রুফ। এক দিকের দেয়াল জুড়ে আয়না। আয়নাটা টু-ওয়ে। বাইরে, সমবেত কয়েক জন দেখছে। ওদেরকে। স্পিকারের মাধ্যমে শুনছে কথা। হাতে কাগজের কাপ। কাপে কফি।

    হ্যারিস: স্যান ফ্রানসিসকোতে আছ, কত দিন হলো?

    তরুণ: আমি কিছুই জানি না।

    হ্যারিস: অবশ্যই জানো। এটা কি না জানার মতো কিছু? কী করছিলে ওখানে?

    তরুণ: আমার নাম লেভ বোরিসভ।

    হ্যারিস: আমি তোমার নাম জানতে চাইনি। একবার তো বলেইছ নাম। …কী হলো, কাপছ কেন?

    জুন: তুমি দেখেছ তাকে, তাই না?

    থেমে গেল কাঁপুনি।

    লেভ: জি?

    জন: প্রবল বৃষ্টির মধ্যে লাল বৃষ্টি…

    লেভ (বিস্ফারিত হয়ে উঠেছে চোখ দুটো): আপনিও দেখেছেন?

    জন: মুখটা তার… কুকুরের মতো… দেহটা মানুষের, মাথাটা…

    লেভ: নেকড়ে!

    জন: হা-হা… সেটাই। নেকড়ের রূপে দেখা দেয় সে। …আমি জানি, ভয় পাচ্ছ তুমি। পাওয়ারই কথা। তবে এটাও জানি, জান্তব এই ভয় থেকে মুক্তি চাও তুমি। ভুল বলেছি?

    লেভ (ইতস্তত করছে): মুক্তি… মুক্তি চাই…

    জন: তা হলে ঠিক জায়গাতেই পৌঁছে গেছ তুমি। সম্পূর্ণ নিরাপদ তুমি এখানে। কোনও অশুভ শক্তিই নাগাল পাবে না তোমার।

    লেভ: না…

    হ্যারিস: কী না?

    লেভ: এন্টারপ্রাইজ সম্বন্ধে কোনও ধারণাই নেই। আপনাদের। কারোরই নিস্তার নেই এন্টারপ্রাইজের কবল থেকে।

    জন: কী করতে পারবে ওরা তোমাকে? এ পর্যন্ত। পৌঁছাবেই না ওদের হাত।

    লেভ (মাথা নাড়ছে অধৈর্য ভঙ্গিতে): বুঝতে পারছেন না আপনি। তিনি সব দেখেন, সব জানেন

    জন: কীভাবে?

    লেভ: সংখ্যা দিয়ে।

    জন: সংখ্যা দিয়ে?

    লেভ: হ্যাঁ, সংখ্যা দিয়ে। আমি কী? কতগুলো সংখ্যা। আপনি কী? কতগুলো সংখ্যা। আমাদের সবারই পরিচয় সংখ্যা দিয়ে। ফোন নাম্বার… সিরিয়াল নাম্বার… ক্রেডিট কার্ড নাম্বার… আমি আপনার নাম্বার জানি- মানে, আপনাকে জানি আমি।

    হ্যারিস: চায়টা কী এন্টারপ্রাইজ?

    লেভ: আনুগত্য। আনুগত্য এবং নিয়ন্ত্রণ।

    জন: কীসের বিনিময়ে?

    লেভ: শক্তির।

    হ্যারিস: পরিষ্কার করে বলো।

    লেভ: যখন সব কিছুর অবসান ঘটবে, তখন তিনি ওঁর বিপুল শক্তি থেকে কিছুটা করে বিলিয়ে দেবেন অনুগতদের। মধ্যে।

    জন: কখন সেটা?

    লেভ: যখন লক্ষ্যের দিকে যাত্রা শেষ হবে আমাদের। যখন অনির্বাণ আগুনে পুড়ে ছারখার হবে সব কিছু। যখন সমস্ত দুর্বল ও অলস ব্যক্তিকে কতল করা হবে (চোখ উপচে পানি গড়িয়ে পড়ল তার গাল বেয়ে)। ব্রাদাররা বলেছিল, শিগগিরই ধনী হয়ে যাব আমরা। অনেক যাচাই-বাছাই করে সিলেক্ট করা হয়েছে আমাদের। এখন একটাই কাজ–এন্টারপ্রাইজের ডিসিপ্লিন মেনে চলা। এই নিয়মনীতির মধ্যেই রয়েছে আত্মার মুক্তি।

    জন: যে শক্তির কথা বললে, সেটা কী ধরনের? অলৌকিক কিছু?

    লেভ: সমৃদ্ধির শক্তি এটা।

    জন: অর্থ, বিত্ত, সুখ?

    লেভ: আমাকে বলা হয়েছিল, এন্টারপ্রাইজ একটা গণতান্ত্রিক সংগঠন। এর আদর্শ কারও পছন্দ না হলে বেরিয়ে যেতে পারে দল থেকে। মিথ্যা বলেছিল। এণ্টারপ্রাইজে ঢোকার রাস্তা আছে, বেরোবার দরজা নেই। মেম্বারদের উপর সামান্যতম নাখোশ হলেই ব্রাদাররা পরিণত হয় ঘরের শত্রু বিভীষণে।

    হ্যারিস: মিখাইল ভিকটরোভিচকে কি ওরাই হত্যা করেছে?

    লেভ (ভীতির ছায়া পড়েছে দুই চোখে): ওরাই। ফাঁকিবাজ ছিল সে। এন্টারপ্রাইজের চোখে কেউ যদি অযোগ্য। বলে বিবেচিত হয়, এন্টারপ্রাইজ খেয়ে ফেলে তাকে। মিখাইলকে খেয়েছে… ব্লখিনকে খেয়েছে… মিনস্কি… উরসুলাকে… আমাকেও খেয়ে ফেলবে! কেউ বাঁচাতে পারবে না আমাকে… কেউ না!

    অকস্মাৎ মৃগী রোগীর মতো কাঁপতে শুরু করল। বোরিসভ। উলটে গেল চোখ জোড়া। গোঁ-গোঁ আওয়াজ বেরোচ্ছে গলা দিয়ে। ঠোঁটের কোণ বেঁকে গিয়ে দেখাচ্ছে পশুর মতো। ফুলে ফুলে উঠছে নাকের পাটা। চেয়ারের পাশ দিয়ে ঢলে পড়তে আরম্ভ করল বোরিসভ।

    ছিটকে চেয়ার ছাড়ল দুই এজেন্ট। মাটি স্পর্শ করার আগেই ধরে ফেলল ছেলেটাকে।

    ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পড়ল দর্শকরা।

    আলতো করে তরুণকে মেঝেতে শুইয়ে দিল দু জনে।

    জ্ঞান হারিয়েছে বোরিসভ।

    মেডিক! কুইক! ভিড়ের উদ্দেশে হাঁক দিল হ্যারিস।

    পড়িমরি করে ছুটল একজন। পালস দেখল জন। নিস্তেজ। নেই বললেই চলে।

    কালবিলম্ব না করে সিপিআর দিতে আরম্ভ করল। বুকের উপরে দুই হাত রেখে চাপ দিচ্ছে। একবার। দুই বার। বার বার।

    এক সময় জনের বাহুতে হাত রাখল হ্যারিস। থামতে বলছে।

    খেয়ালই নেই সেদিকে জনের। দিয়েই যাচ্ছে প্রেশার… দিয়েই যাচ্ছে। বিন্দু-বিন্দু ঘাম ফুটেছে ওর কপালে।

    জন! চেঁচিয়ে ডাকল হ্যারিস।

    থামল এবারে। হাঁপাচ্ছে। তাকাল হ্যারিসের দিকে।

    ডাইনে-বাঁয়ে মাথা নাড়ল হ্যারিসন।

    দশ

    রাত এগারোটা।

    ডিপার্টমেন্টের অদূরেই রয়েছে এক পাবলিক পার্ক। পার্কে বসে আছে ওরা, সিমেন্টের বেঞ্চিতে।

    স্বাভাবিক ভাবেই জনহীন উদ্যানটা। ওরা ছাড়া নেই কেউ।

    আকাশে অর্ধচন্দ্র। সামনে দিয়ে বইছে ক্রিমসন লেক। গাছেদের ঝিরিঝিরি কথোপকথন চলছে।

    মনটা ভারি হয়ে আছে জনের। বিয়োগান্ত নাটক দেখে বেরিয়েছে যেন।

    প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে ছেলেটা, অনেকক্ষণ পরে বলল কথা। হার্টফেল করেছে ভয়ে!

    হ্যারিস শুধু বলল, বাড়ি যাও, জন। কষে একটা ঘুম দাও গিয়ে।

    প্রতিধ্বনি তুলল জন, বাড়ি?

    হোটেলে ফিরবে না?

    জবাব পেল না হ্যারিসন। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ওর বন্ধু।

    একটা কথা বলো তো! বোরিসভ যে নেকড়ে দেখত, কী করে বুঝলে?

    এলএসডি,  বলল জন। এখন আমি নিশ্চিত, নিয়মিত মাদক দেয়া হয় ব্রাদারহুডের রিক্রুটদের। এলএসডির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে- নেকড়ে বা কুকুরমুখো মানুষ দেখা।

    বুঝলাম।

    নীরবতা।

    ওদের গাড়িটা ট্রেস করতে পারলে ভালো হতো।

    খামটা থেকেও তো জানা গেল না কিছু! হতাশ স্বরে বলল হ্যারিস। বাড়তি একটা ফিঙ্গারপ্রিন্টও না! মনে হয়, নিজেই এসে লেটারবক্সে ফেলে গেছে চিঠিটা।

    এগারো

    মোটেল গ্রেভার ইন।

    সাড়ে এগারোটা বাজে।

    ঘুম নেই জনের চোখে। বসেছে বই নিয়ে। পাতা ওলটাচ্ছে একের পর এক। উলটে-পালটে চোখ বোলাচ্ছে। বিভিন্ন প্যাসেজে। হাবুডুবু খাচ্ছে চ্যাপটার, ভার্স আর নোটের মধ্যে।

    লাভের মধ্যে লাভ হলো, বেড়ে গেল কনফিউশন।

    বইটা বন্ধ করল জন। মরক্কো চামড়ার মলাট। সোনার জলে লেখা শিরোনাম।

    হোলি বাইবেল।

    রাইটিং টেবিলের পাশে ফেলা হয়েছে টব। বেড়ে উঠেছে। স্প্যাথিফিলাম সুপ্রিম। বড় আকারের পাতা। গাঢ় সবুজ রং।

    গাছটার দিকে তাকিয়ে ভাবল জন, হবে না এভাবে। অন্য ভাবে চেষ্টা করা যাক।

    পোর্টেবল কমপিউটারটা অন করল খুলে। এইসার ব্র্যাণ্ডের ল্যাপটপ। অ্যাসপায়ার এসসেভেন আন্ট্রাবুক।– কমপ্লিট হলো স্টার্ট-আপ। আগে একবার অ্যাকসেস কোড দিয়েছে; সরাইখানার ওয়াই-ফাই নেটওঅর্কে স্বয়ংক্রিয় ভাবে যুক্ত হলো তাই পিসি।

    টাচপ্যাডে আঙুল, ডেস্কটপে রাখা ব্রাউজারের শর্টকাট আইকনে ক্লিক করল জন। মজিলা ফায়ারফক্স।

    এল গুগল হোমপেজ। সার্চ-বক্সে টাইপ করল জন: gehena। এন্টার দিল।

    ভুল হয়েছে বানান। সার্চ-ইঞ্জিন বলছে: Did you mean: gehenna? মেসেজটার নিচে দেখানো হয়েছে। gehenna দিয়ে প্রাপ্ত রেজাল্টগুলো।

    প্রথমে অক্সফোর্ড ডিকশনারির দেয়া ডেফিনিশনটা পড়ল জন।

    ১. নরক (নিউ টেস্টামেন্টে)। ২. অগ্নিকুণ্ড, নিদারুণ যন্ত্রণা বা দুঃখময় স্থান। গির্জা বা যাজক সম্পর্কীয় ল্যাটিন শব্দ, যা গ্রিক ভাষা থেকে ল্যাটিন ভাষায় প্রবেশ করেছে। হিব্রু শব্দ ge hinnom থেকে উদ্ভূত। হিনোম হচ্ছে। জেরুজালেমের নিকটবর্তী এক উপত্যকা, যেখানে শিশুদের উৎসর্গ করা হতো শয়তানের উদ্দেশে।

    এবার অন্যান্য রেজাল্টে চোখ বোলাতে লাগল জন।

    গ্যাহেনা– উইকিপিডিয়া, দ্য ফ্রি এনসাইক্লোপিডিয়া en.wikipedia.org/wiki/Gehenna

    অন্ধকারময় স্থান। placeofdarkness.com

    গ্যাহেনা ভ্যাম্পায়ার tnc.livejournal.com/77289.html

    গ্যাহেনা করপোরেশন। gehennacorp.net

    গ্যাহেনা করপোরেশন, নিউ ইয়র্ক gehennacorp.net/branches/ny.htm

    গ্যাহেনা করপোরেশন, মোনাকো gehennacorp.net/branches/monaco.htm

    স্ক্রল করে নিচে নামল ও। গ্যাহেনা করপোরেশনের নামে। আরও কয়েকটা লিঙ্ক। সবগুলোই শাখা-অফিসের। সিডনি। কায়রো। স্যান ফ্রানসিসকো। টোকিয়ে।

    কেঁপে উঠল ল্যাপটপের ডিসপ্লে। ফোন এসেছে। সাইলেন্ট মোডে রাখা মোবাইলটা পাশ থেকে তুলে নিল। জন।

    হ্যারিস।

    কল রিসিভ করতেই প্রশ্ন: ঘুমাওনি?

    না।

    কী করছ?

    ইন্টারনেট ব্রাউজিং।…কই তুমি?

    ল্যাবে। …শোনো, যেজন্য ফোন করলাম… বোরিসভের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে এসেছে একটু আগে। চমকে যাবে।

    বুক ঢিপঢিপ করছে, টের পেল জন।

    ছেলেটার দেহকোষ আর কাপড়চোপড়ে ইনসেক্টিসাইড পাওয়া গেছে।

    কী নাম?

    সারিন।

    ভাবনায় ডুবে গেল জন। সারিন… সারিন… কোথায় যেন শুনেছি…

    মনে করিয়ে দিচ্ছি। টোকিয়ে।

    ইয়েস! মাস কয়েক আগের এক ঘটনা মনে পড়ে গেল জনের। রাশান এক কাল্ট সারিন গ্যাস ছড়িয়ে দিয়েছিল সাব ওয়েতে। ফলে মারা পড়ে শ দুয়েক মানুষ। অ্যাটাকটা নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছিল। স্বেচ্ছায় ধরা দেয় কাল্ট।

    লেভ বোরিসভ হার্ট-অ্যাটাক করেনি, জন! মারা গেছে সারিনের বিষক্রিয়ায়!

    তুমি কি আমাদের কেসটার সাথে জাপানের ওই কেসটার সম্পর্ক আছে বলে ভাবছ? জনের চোখ স্থির হয়ে আছে কমপিউটার-স্ক্রিনে, গ্যাহেনা করপোরেশন, টোকিয়ে লেখাটার উপরে।

    সরাসরি সম্পর্ক হয়তো নেই। অন্য গ্রুপ হতে পারে আমাদেরটা। কিন্তু পারপাস একই। …দাঁড়াও! নিজেই বুঝবে! একটু আগে চোখ বুলিয়েছি আমাদের ডেটাবেইসে। ফলো-আপ দেখলাম ওই কেসটার। জেরায় অনেক কথাই বলেছে ওই গুরু। এর মধ্যে একটা কথা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লোকটাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এসব কেন করছে ও। জবাব দিয়েছে: কেয়ামত সৃষ্টি করতে চায় পৃথিবীতে। মাইণ্ড ইট, জন! কেয়ামত!

    মাই গড!

    বিস্ময়ের ধাক্কাটা সামলানোর সময় দিল ওকে হ্যারিস। তুমি কিছু পেলে? জিজ্ঞেস করল। টাইম পাস করার জন্য নেটে বসোনি নিশ্চয়ই!

    পেয়েছি। গ্যাহেনা করপোরেশন।

    গ্যাহেনা?

    হু। প্রতিষ্ঠানের সাইটে ঢুকল জন। ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ফার্ম।

    কীসের? কোন্ দেশি?

    ইউক্রেনিয়ান। কেমিকেল প্রডিউস করে।

    হুম… বলে যাও।

    বেশ কয়েকটা ব্রাঞ্চ আছে এদের। দেশে… বিদেশে… স্যান ফ্রানসিসকোতেও আছে।

    কল্পনায় দেখতে পেল জন, শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গেছে। হ্যারিসের।

    তা-ই নাকি! এগজ্যাক্ট লোকেশন দেয়া আছে ফার্মটার?

    আছে। কেম্যান আইল্যাণ্ডে।

    কাছেই তো। বলো তো অ্যাড্রেসটা।

    বলল জন। যাবে নাকি?

    যাচ্ছি।

    এখনই?

    সময় নষ্ট করে লাভ কী?

    ফোর্স নিয়ে যাও তা হলে।

    লাগবে না। এখনও তো প্রমাণ পাইনি কোনও। …জাস্ট একটা চক্কর মেরে আসি। বাই। কেটে দিল হ্যারিস।

    কান থেকে ফোন সরাল জন। কেন জানি মনে হচ্ছে, বিপদে পড়তে যাচ্ছে ওর বন্ধু।

    উঠে পায়চারি করল কিছুক্ষণ। শেষে ড্যাম ইট বলে বিশেষ এক নাম্বারে ডায়াল করল।

    বারো

    গ্যাহেনা করপোরেশন। স্যান ফ্রানসিসকো শাখা।

    ঘুরে-টুরে ধারণা হলো হ্যারিসের, কোনও ধরনের স্টোরেজ প্ল্যান্ট এটা।

    সমস্যা হয়নি ঢুকতে। কোনও রকম পাহারা কিংবা সিকিউরিটি নেই। জনমানবহীন। নিঝঝুম।

    ও ফ্ল্যাশলাইট এনেছে সঙ্গে করে। এখন রয়েছে হলঘরের মতন এক কামরায়। লম্বা, প্লাস্টারবিহীন ঘরটায় খান চল্লিশ টেবিল-চেয়ার। কয়েক সারিতে বিন্যস্ত। প্রত্যেকটা টেবিলেই একটা করে ল্যাণ্ডফোন।

    কাস্টমার কেয়ার- ভাবল হ্যারিস। আরও বুঝল, ঠিক জায়গাতেই চলে এসেছে।

    হলরুমের ভিতর দিয়েই প্রবেশ করল সে আরেকটা কামরায়। এটাও বিরাট। গোডাউন সম্ভবত। পাতলা কেরোসিন কাঠের অসংখ্য বাক্স গাদাগাদি করে রাখা।

    কী আছে এর মধ্যে?

    প্রতিটা বাক্সেই একটা করে ত্রিভুজ আঁকা। চীনা ভাষায় কিছু লেখা রয়েছে তার ভিতরে। অনেকটা লোগোর মতো দেখতে। ইংরেজিতে সংখ্যার ছাপও রয়েছে বাক্সের গায়ে। এক-এক বাক্সে এক-এক নাম্বার।

    ডাইনে-বাঁয়ে-উপরে-নিচে আলো ফেলে দেখল হ্যারিস নাম্বারগুলো। ওর চোখের লেভেলে যেটা রয়েছে, ৭২ সেটা। ১৫৪ তার উপরেরটা ৭৩ নম্বর। বাঁ দিকে- ৫২। ডান দিকে দেখা যাচ্ছে- ৯২। মানে দাঁড়াচ্ছে প্রত্যেকটা কলামে বিশটা করে। বাক্স। …সব মিলিয়ে কতগুলো?

    বেরিয়ে এল সে অন্য একটা দরজা দিয়ে। ঢুকল আরেক ঘরে।

    ওয়্যারহাউস এটাও। ক্রেট জড়ো করা হয়েছে এখানেও। …নাহ, দেখতে হচ্ছে।

    এদিক-ওদিক তাকাল হ্যারিস। এক জায়গায় বাক্স কম দেখে এগিয়ে গেল।

    গোটা দশেক বাক্সের এক স্তম্ভ রয়েছে ওখানটায়। উপরেরটার ডালায় লেখা: ১১০৭২-১২১/১২৫, নিচে: রিপাবলিক অভ চায়না।

    ভাগ্য ভালো, ক্রোবার পাওয়া গেল একটা। ওটার সাহায্যে চাপ দিয়ে খুলে ফেলল বাক্সটা।

    শুকনো খড়ের মধ্যে শুয়ে আছে জিনিসটা। খবরের কাগজ দিয়ে মোড়ানো। আলগা হয়ে সরে গেছে এক জায়গার আবরণ।

    চাইনিজ অ্যাসল্ট রাইফেল আর অ্যামিউনিশন ক্লিপ!

    শিউরে উঠল হ্যারিস। এই গুদামের অন্তরালে কোন্ অশুভ তৎপরতার নীল নকশা রচিত হয়েছে, খোদা মালুম!

    মুঠোফোনটা বের করল প্যান্টের পকেট থেকে। ফোল্ডিং সেট। স্যামসাং-এর। ফেইলিয়র দেখাচ্ছে নেটওঅর্ক।

    জানা নেই ওর, প্ল্যান্টে এই মুহূর্তে অ্যাকটিভ রয়েছে বেশ কয়েকটা শক্তিশালী নেটওঅর্ক জ্যামিং ডিভাইস।

    নজরও রাখা হচ্ছে ওর উপরে! ছাতের এক অন্ধকার কোনায়, উলটানো গম্বুজ-আকৃতির বাতির ভিতরে লুকিয়ে আছে নাইট-ভিশন সিসিটিভি।

    আরও একটু দেখবে, সিদ্ধান্ত নিল হ্যারিস।

    ক্রেট ছাড়াও অনেকগুলো ব্যারেল রয়েছে ঘরটায়। গায়ে মড়ার খুলি আর তার নিচে গুণচিহ্নের ভঙ্গিতে আঁকা হাড় দুটো নির্দেশ করছে বিপৎসঙ্কেত। কী ধরনের বিপদ, লেখা রয়েছে সেটাও।

    সাবধান!
    দাহ্য পদার্থ- সোডিয়াম ফ্লুরাইড

    আরেক ঘরে চেমবারের মতন এক কক্ষ আবিষ্কার করল হ্যারিসন। ধাতু-নির্মিত কাঠামোটায় বড় বড় বোল্ট।

    দরজাটা ভেজানো চেমবারের। চারকোনা একটা ফোকর আছে দরজার মাথায়। কাঁচটাকা।

    কাঁচের ভিতর দিয়ে ভিতরে দৃষ্টি ফেলল হ্যারিস। হাতল ধরে ঠেলা দিল দরজায়। তীক্ষ্ণ কা-আঁ-চ শব্দ উঠল। ধাতব চিৎকারটা চিরে দিল স্নায়ু।

    ছাইয়ের স্তূপ চেমবারের মেঝেতে। সাদা কী যেন উঁকি দিচ্ছে মাঝে মাঝে। ভিতরের দেয়াল কালশিটে-পড়া।

    ভালো করে দেখার জন্য চেমবারে পা রাখল হ্যারিস। দরজার দিকে পিঠ দিয়ে নত হলো মেঝেতে। কুড়িয়ে নিল একটা টুকরো। চিনল মুহূর্তে।

    হাড়!

    ঘর জুড়ে মানুষের অস্থি আর ভস্ম।

    কিঁ-ইঁ-চ!

    ঝট করে ঘাড় ঘোরাল হ্যারিস। জোরে লেগে গেছে বলে অন্য রকম শুনিয়েছে কবাটের আর্তনাদটা। না, এমনি-এমনি বন্ধ হয়ে যায়নি ভারি দরজাটা। বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

    হেই! উঠে দাঁড়িয়েছে হ্যারিস। আছড়ে পড়ল পাল্লাটার উপরে।

    ক্রুর একটা মুখ উদয় হলো ফোকরটার ওপারে। ধক-ধক করে জ্বলছে চোখ দুটো। সরে গেল চকিতে।

    হেই! হেই! থাবা পড়তে লাগল ধাতব কবাটে। দরজা খোলো! দরজা খোলো, বলছি!

    সহসা গরম অনুভব করল। বদ্ধ চেমবারে হাঁসফাঁস লেগে উঠল মুহূর্তে। চিকন ঘাম দেখা দিল কপালে।

    পাগলের মতো টেনেটুনে টাই-এর নট ঢিলে করল হ্যারিস। খুলে দিল গলার বোতামটা। ক্লসট্রোফোবিয়া নেই ওর। তা-ও এত খারাপ লাগছে কেন! গরমটা যেন বেড়েই চলেছে!

    ব্লেজারটা খুলে ফেলল হ্যারিসন। টপ-টপ ঘাম ঝরছে। ওর সর্বাঙ্গ থেকে। চোখে উদ্ভ্রান্তের দৃষ্টি।

    বাড়ছে উত্তাপ… বাড়ছেই।

    ঘোলাটে কাঁচ। গরম নিঃশ্বাস আর ঘামের বাষ্পে ঘোলা হয়ে গেছে আরও। দুর্বল হাতে কিল দিল সে দরজায়। মগজটাও ঘোলাটে হয়ে এসেছে ওর। গলার ভিতর থেকে উঠে এল ঘড়-ঘড় আওয়াজ।

    ত্যানার মতো লুটিয়ে পড়ল হ্যারিসন। জ্ঞান হারানোর আগে উপলব্ধি করল, প্রমাণ সাইজের এক মাইক্রোওয়েভ আভেনের মধ্যে আটকা পড়েছে সে!

    তেরো

    অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। সেজন্য বেশির ভাগ লোকেরই চোখে পড়েনি নিউজফ্ল্যাশটা। তা ছাড়া, রাত জাগার অভ্যাস রয়েছে যাদের, তারা মূলত খবর দেখে না টিভিতে। অন্য কিছু দেখে। খেলা। এক্স-রেটেড চ্যানেল।

    প্রতিবেদন লিখবার সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। কাজেই, সকালের পত্রিকাতেও আসেনি কিছু।

    সকালে টিভি খুলল যারা, বড়সড় এক ধাক্কা অপেক্ষা করছিল তাদের জন্য। কেউ কেউ শুনল রেডিয়োতে। শতকরা আশি ভাগ দর্শক-শ্রোতা ভলিউম বাড়াল ভালো করে শোনার জন্য। ডিটেইলস জানবার জন্য এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে গেল শতকরা এক শ ভাগ।

    …আজ রাত একটার দিকে স্যান ফ্রানসিসকোর এক রাসায়নিক প্ল্যান্টে হানা দেয় সোয়াট (S.W.A.T.) টিম। আমরা জানতে পেরেছি, এক উগ্রবাদী সংগঠনের নেতা এবং বেশ কিছু সদস্যকে আটক করা হয়েছে সেখান থেকে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। এ ব্যাপারে আপনাদেরকে আরও তথ্য জানানোর জন্য কথা বলার চেষ্টা করছি পুলিসের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে… ।

    …নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতরা রাশান এক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত… ।

    …দু দিন আগে স্যান ফ্রানসিসকোর এক পুরানো পার্ক থেকে মানুষের যে ছাই পেয়েছে পুলিস, তাদের নির্মম পরিণতির জন্য উগ্রপন্থী এই গোষ্ঠীই দায়ী। কেম্যান আইল্যাণ্ডের এক কেমিকেল ফ্যাকটরিতে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাদেরকে। একই ভাবে ফেডারেল এজেন্ট হ্যারিসন ফোর্ডকেও মারার চেষ্টা করছিল টেরোরিস্টরা। মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে মিস্টার ফোর্ডকে। স্যান ফ্রানসিসকো জেনারেল হসপিটালের আইসিইউ-তে আছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি আমি লারিসা ল্যাটনিনা।

    দুপুর নাগাদ ডাকা হলো সংবাদ-সম্মেলন। বেলা দুটোর দিকে ভিড় উপচে পড়ল পুলিস-স্টেশনের অডিটরিয়ামে।

    এক গাদা বুম টেবিলে। প্রথমেই ব্রিফ করল পুলিসের এক কর্মকর্তা। শেষ করল এই বলে: এবার আপনাদের কোনও প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।

    প্রায় সব কটা হাত উঠল।

    সামনের সারিতে বসা অস্থির একজনকে দেয়া হলো গ্রিন সিগন্যাল। দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল সে হাত নেড়ে।

    সঙ্কেত পেয়েই তেড়েফুঁড়ে উঠে দাঁড়াল চ্যাংড়া যুবকটি। আপনাদের এই ঢাক-ঢাক গুড়-গুড়ের কারণ কী?

    অফিসারের ইচ্ছা হলো, লাথি মারে ছোকরার পাছায়। কিন্তু চাইলেই তো আর সব হয় না। যাহা চাই, তাহা…। সাংবাদিক জাতটা বড় সাংঘাতিক।

    ভিতরের রাগটা দমন করে ফেলল গুফো অফিসার। বিগলিত, মেকি হাসি দিল। আমি জানি, খবরের জন্য অধীর হয়ে ছিলেন আপনারা। কিন্তু আমাদের দিকটাও তো দেখতে হবে আপনাদের। গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি নিতে হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে আরও কয়েক জায়গায় অপারেশন চালিয়েছে পুলিস। অ্যারেস্ট হয়েছে আরও চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ জন। বুঝতেই পারছেন, মিশনের স্বার্থেই মুখ খুলতে পারিনি আমরা।

    এরপর অনুমতি পেল কমবয়সী এক মেয়ে। খুব সুন্দরী মেয়েটা। সাদা শার্ট আর ঘিয়ে রঙের স্কার্টে ফুটে বেরোচ্ছে গ্ল্যামার। ঠোঁটে চেরি-রঙের লিপস্টিক। পায়ের উপরে পা।

    গ্যাংটা কি রাশান? জিজ্ঞেস করল চেয়ার না ছেড়ে।

    ইউক্রেন।

    আমেরিকার বিরুদ্ধে লেগেছে?

    তা তো বটেই। তবে শুধু আমেরিকা নয়, আরও অনেক দেশেই সক্রিয় এদের র‍্যাকেট।

    উদ্দেশ্য?

    সিম্পল। টেরোরিজম। অনেকের সাথেই তো আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক ইউক্রেনের।

    সন্তুষ্ট হয়ে মাথা ঝাঁকাল তরুণী।

    ধেয়ে এল আরও প্রশ্ন।

    যারা ধরা পড়েছে, সবাই কি ইউক্রেনিয়ান?

    না, সবাই না। রাশান… চেচনিয়ান…

    কী বলছেন! রাশানদের কাজে লাগাচ্ছে ইউক্রেনিয়ানরা! হাউ কাম!

    মগজ ধোলাই।

    মানুষ পোড়ানোর ব্যাপারটা কী?

    শাস্তি। ব্যর্থদের স্থান নেই দলে। অযোগ্য প্রমাণিত হলে নিকেশ করে ফেলা হতো, যাতে বাইরে গিয়ে কোনও তথ্য ফাস করতে না পারে।

    কত জনকে হত্যা করেছে এভাবে?

    মোটমাট একুশ জন।

    আমরা জেনেছি, কল-সেন্টারের মতো কিছু একটা ছিল ওই প্ল্যান্টে। কী সেটা?

    এটা ওদের কর্মপদ্ধতির একটা অংশ। কয়েকটা সেগমেন্টে ভাগ করা গ্রুপের কাজগুলো। কল-সেন্টারটা হচ্ছে- কমিউনিকেশন-পার্ট।

    কাদের সাথে কমিউনিকেট করত?

    স্পনসর। ফ্রিতে বিভিন্ন জিনিসের অফার দেয়া হতো। ওদেরকে। সোজা কথায়, টোপ ফেলত। যারা টোপ গিলত, তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করত অন্যরা।

    ফ্রি দিলে টাকা আসত কীভাবে?

    আসল ব্যাপারটা এখানেই। ওরা যে প্রডাক্টটা অফার করে, সেটা একটা পারফিউম। এমনই এক সুগন্ধী, যেটা শুঁকলে ইচ্ছাশক্তি বলে কিছু থাকবে না আপনার। …পয়সাঅলা লোককে টার্গেট করা হতো। একবার সেন্টের গন্ধ শুঁকলেই এন্টারপ্রাইজের হাতের পুতুলে পরিণত হতো লোকগুলো। চাহিবা মাত্র যে-কোনও দাবি মেনে নিতে বাধ্য থাকত তখন। ওদের টাকায় ব্ল্যাক মার্কেট থেকে অস্ত্র কিনত এন্টারপ্রাইজ।

    গুঞ্জন উঠল সাংবাদিকদের মধ্যে।

    এই সব অপকর্মের হোতাটা কে?

    নাতাশা মালকোভা। এক্স-কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ার। মেধাবী, কিন্তু বিপথগামী। লিবিডো নামের পারফিউম ওরই আবিষ্কার।

    আমরা দেখতে চাই তাকে।

    হাজির করা হলো হ্যাণ্ডকাফ পরা বন্দিকে।

    আবারও গুঞ্জন… ফিসফাস। এ কি মানবী, না দেবী?

    খাঁটি ইউরোপীয় সৌন্দর্যের প্রতীক যেন মেয়েটা। চোখে বাঘিনীর দৃষ্টি।

    মুহুর্মুহু জ্বলে উঠতে লাগল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅদেখা ভুবন – ডিউক জন
    Next Article অশুভ সংকেত – কাজী মাহবুব হোসেন

    Related Articles

    ডিউক জন

    অদেখা ভুবন – ডিউক জন

    August 19, 2025
    ডিউক জন

    আর্সেন লুপাঁ ভার্সেস হার্লক শোমস

    August 19, 2025
    ডিউক জন

    সুবৰ্ণ সমাধি – ডিউক জন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.