Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গোয়েন্দা কৃষ্ণা – প্রভাবতী দেবী সরস্বতী

    September 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মহাপ্রস্থানের পথে – প্রবোধকুমার সান্যাল

    প্রবোধকুমার সান্যাল এক পাতা গল্প210 Mins Read0

    উপক্রমণিকা

    মনের মানুষ মেলে না সংসারে, মানুষের মন তাই সঙ্গীহীন। আসলে আমরা সবাই একা। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন হয় বাইরের প্রয়োজনে,-বন্ধুত্বের প্রয়োজন, সৃষ্টির প্রয়োজন, স্বার্থের প্রয়োজন।

    সেদিন কম্বল, ঝোল, লোটা ও লাঠি নিয়ে যখন নিতান্ত একাকী হিমালয়ের উদ্দেশে যাত্রা করতে হ’লো, সঙ্গী পেলাম না বলে, সেদিন কারো উপর অভিমান করিনি, নিরাসক্ত নির্লিপ্ত মানুষ চললো নিরুদ্দেশ হয়ে।

    প্রথম বৈশাখের চিতা জ্বলচে চারিদিকে, সমগ্র আর্যাবর্ত জুড়ে চলচে সূর্যদেবের অভিশাপের অগ্নিবৃষ্টি, ধু-ধু করচে মাঠ, সারা আকাশ মেঘের তৃষ্ণায় খাঁখাঁ করছে,—এমন দিনে কাশী হয়ে ছুটলাম হরিদ্বারের দিকে। যখন আমরা স্থাণু, সীমাবদ্ধ, গৃহগতপ্রাণ, শহর-সভ্যতার জোয়াল কাঁধে নিয়ে চোখে ঠুলি বেঁধে ঘুরি, তখন বুঝিনে এর বাইরে আছে বৃহত্তর জগৎ, উদার জীবন; প্রতিদিনের লাভ-ক্ষতি, সংকীর্ণ জীবনের তুচ্ছতা, ক্ষুদ্রতার পিছনে আছে যে একটি পরম আহ্বান, একথা ভুলে যাই। চারিদিকে যেমন জমে জঞ্জাল, তেমনি জোটে মানুষ; কিন্তু যেদিন আসে পথের ডাক, যেদিন বাজে দূরের ব্যাকুল বাঁশী, সেদিন আমাদের গা-ঝাড়া দিয়ে একা একাই ছুটে বেরুতে হয়, তখন আর অপেক্ষা নেই, পিছনে চাওয়া নেই।

    পার হ’লো ফয়জাবাদ, পার হ’লো লক্ষ্ণৌ, পিছনে রইল বেরিলী, গাড়ি চললো ছুটে। আমার এই যাত্রার পথে কোনো পদ্ধতি ছিল না, আয়োজন ছিল না, এ যেমন বিশৃঙ্খল তেমনি আকস্মিক। রাত্রিশেষে লাকসার অতিক্রম করে যখন হরিদ্বারে এসে পৌঁছলাম, তখন চেয়ে দেখি এ একেবারে নতুন রাজ্য! শীতের হাওয়ায় সর্বশরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেচে, এমন ঠাণ্ডা যে হাত-পা জড়িয়ে যায়; গরম থেকে মুক্তি পেয়ে আনন্দ হ’লো, শরীরে এলো উৎসাহ, গতির চাঞ্চল্য। রাত্রিশেষের অন্ধকার, মাথার উপরে নক্ষত্রখচিত কালো আকাশ, আশে পাশে কৃষ্ণকায় প্রহরীর মতো পাহাড়ের সারি, মধুর শীতল বাতাস-এদেরই ভিতর দিয়ে পথ চিনে চিনে চললাম ধর্মশালার দিকে। ধর্মশালাই তীর্থযাত্রীরা পথের অবলম্বন।

    হিমালয়ের যতগুলি প্রবেশ-পথ আছে তাদের মধ্যে হরিদ্বার হচ্ছে প্রশস্ত ও সুগম এখানে তিনটি মাত্র ঋতু-বর্ষা, শীত এবং বসন্ত। নিকটে গঙ্গার নীলধারা, কলম্বনা, উপল-মুখরা। নদীর তীরে তীরে সন্ন্যাসিগণের আস্তানা ও আসন, ধুনি জ্বলচে, গঞ্জিকা চলচে; বেদ, গীতা, তুলসীদাসের আলোচনা। ব্রহ্মকুণ্ডে গান, কুশাবর্তে শ্রদ্ধ ও তর্পণ কোথাও চাঞ্চল্য নেই, জীবন-সংগ্রাম নেই, নির্বিবাদ এবং নির্লিপ্ত। এ সময়টায় বহু যাত্রীর ভিড়, সকলেরই পথ বদরীনারায়ণের দিকে, চোখে মুখে উৎসাহ, যাত্রার আয়োজন, তাদেরই সঙ্গে পাণ্ডা ও কুলীদের কচকচি ছোট শহর, ছোট বাজার,-বাজারে শীতকালের আনাজ তরকারি থরে থরে সাজানো-ওদিকে ভোলাগিরি ধর্মশালা ও আশ্রম। আশ্রমে বাঙালীর কর্তৃত্ব ও প্রতিপত্তিই বেশি সকলেই গৃহবিরাগী, গেরুয়াধারী, মুণ্ডিতমস্তক-ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অনেকে আছেন, কোথাও তারা আত্মপরিচয় দেন না, দেবার কথাও নয়, গঙ্গার তীরে এই আশ্রমে তপস্যায় তারা জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। শুনলাম, এই মনোরম নিভৃত যোগাশ্রমের মধ্যেও মানুষের ছোটখাটো কলহ, সংশয় ও বিদ্বেষ মাঝে মাঝে সংযম ও তপস্যার আবরণ সরিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ায়। তীর্থযাত্রী ছাড়াও অনেকে এখানে এসেছেন স্বাস্থ্য ফেরাতে।

    সমুদ্রের তীরে পথ হারিয়ে গেলে মানুষ যেমন নিরুপায় হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, হিমালয়ের তীরে দাঁড়িয়ে তেমনি করে দূরের দিকে একবার তাকালাম। লক্ষ্যহীন নিরুদ্দেষ্টা পর্বত-শ্রেণী, এর কোথায় আরম্ভ আর কোথায় শেষ কিছুই বোঝবার উপায় নেই; কোনদিকে বদরীনাথ? শুধু মেঘের পরে মেঘ, পাহাড়ের পর পাহাড়-উত্তুঙ্গ কঠিন, নির্দয়। আমি যে আসলে নার্ভাস, ভয়চকিত, আরামপ্রিয়, দুঃসাহস আছে অথচ সাধ্য নেই-একথা এমন করে এর আগে আর বুঝতে পারিনি। মনে হলো এখনো সময় আছে, ফিরে যাই, কিংবা এখানে কোনো আশ্রমে আত্মগোপন করে থেকে মাস দুই পরে দেশে ফিরে গিয়ে বলবে, ঘুরে এলাম!! অথচ ইতিমধ্যেই ভালো একটা লোহা বাঁধানো লাঠি কিনেছি, ক্রেপ সোল ক্যাম্বিসের জুতো কিনেচি ইসবগুল, মিছরি, রান্নার মসলা, হরীতকী এবং আমাশয়ের ওষুধের পুঁটলিতে কাঁধের ঝোলাটা ভারী হয়ে উঠল, যাত্রীদের কাছ থেকে আসছে অবারিত উৎসাহ ও উদ্দীপনা, কত ভয়, কত দুশ্চিন্তা, কত সান্ত্বনা। কী করি, পথের বিপন্ন ও কষ্টের গল্প শুনে প্রাণের ভয় বুকের মধ্যে গুরগুর করে উঠচে, কেমন করে ফিরি, দেশ থেকে যদি একটা বিপদসূচক জরুরী টেলিগ্রাম আসে ত বাঁচি, এর চেয়ে জেলে যাওয়া যে ছিল ভাল; একবার মনেও হলো পথের ধারে দাঁড়িয়ে বার দুই ‘বন্দে মাতরম্’ উড়িয়ে না-হয় গ্রেপ্তারই হই, কিন্তু মুখে আর আওয়াজ নেই, কণ্ঠে নেই শক্তি, হৃদয়ে নেই সাহস, কেবল নিরুপায় অনুশোচনায় দূর রেলপথের দিকে একবার তাকালাম।

    না, ফেরবার আর উপায় নেই। সঙ্গী নেই, বন্ধু নেই, পরিচিত কেউ নেই। যাত্রীদের মধ্যে প্রায় সবাই সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে এসেছে, ফিরবার আশা তারা আর হয়ত করে না, বিলি ব্যবস্থা শেষ হয়ে গেচে, জীবনের মূল্য নিজেদের কাছে তাদের আর কিছুই নেই, পায়ে হেঁটে হেঁটে দেহক্ষয় করে তারা অনায়াসে মৃত্যুবরণ করবে! এই ধর্মশালা থেকেই শীঘ্র একদল বাঙালী যাত্রী বদরীনাথ রওনা হবে। তাদের সঙ্গে একটি মাত্র পুরুষ, আর সবাই বৃদ্ধা এবং প্রৌঢ়া। স্ত্রীলোকেব পুণ্যকামনা এবং তীর্থযাত্রার আগ্রহ যে পুরুষের চেয়ে বেশি, এর পিছনে একটি তত্ত্ব হয়ত আছে; কিন্তু সে কথা এখন থাক। পুরুষটি ব্রহ্মচারী, মুণ্ডিতমস্তক, নাম জ্ঞানানন্দ স্বামী, জাতিতে বাঙালী, বয়সে যুবক, ভদ্র এবং শিক্ষিত, মাথায় সিল্কের গেরুয়া-পাগড়ি, পায়ে মোজা ও জুতা, গায়ের জামা, চাদর, গেঞ্জি গেরুয়া ছাপানো,-অবস্থাপন্ন বলেই মনে হলো। সঙ্গে তার মা আছেন, আর আছেন জন কুড়ি সহযাত্রিণী। সহজেই আলাপ জমে উঠলো। বললেন, ‘আপনার যাবার ত কোনো কারণ নেই। এই দুর্গম পথ কত বিপদ… আপনি বাড়ি ফিবে যান ‘

    বলমাম, ‘সে কি, ফিরে যাবো? আমিও যে গেরুয়া কাপড়, চাদর ছুপিয়ে নিয়েচি স্বামীজি!’

    স্বামীজি মুখের দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখে একটু হাসলেন। বললেন, ‘সন্ন্যাস নিচ্ছেন নাকি? সে ত আপনার জন্যে নয়। আমার মনে হয় আপনার ফিরে যাওয়াই ভাল, এ বড় কঠিন পথ। তাছাড়া গেরুয়া নিলেই ত আর, মানে… সন্ন্যাসী হতে গেলে তার মন্ত্র আছে, শোধন আছে, নানা ক্রিয়াকলাপ… আপনাদের জন্যে আমাদের হয় বদ্‌নাম, লোকে আমাদের বিশ্বাস করতে চায় না!

    আরো দু’চার কথা উপদেশ দিয়ে তিনি উঠে গেলেন। তাঁকে আর জানাতে পারলাম না যে, আমি সারাপথ এগিয়ে আসতে আসতে পিছিয়ে যাবার চেষ্টাই করেছি। কে যেন ভূতের মতো আমাকে টাচে।

    দু’দিন ধরে পথে বাজাবে নদীর ধারে মন্দিরে-মন্দিরে ঘুরে বেড়ালাম। কাকে জানাই মনের কথা? বাইরে উৎসাহ প্রকাশ করেচি, যাবার আয়োজন করেচি, কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে আমার আর এতটুকু ইচ্ছা নেই-এ কথা আজ কে বিশ্বাস কবে? হায়, তবু যেতে হবে, আমায় না দেখে বদরীনাথের দিন আর কাচে না, আমাকে তার চাই! বুঝলাম না এটা দৈববুদ্ধি, না দুর্দৈব!

    তৃতীয় দিন অপরাহ্ণে যাত্রা; যাঁদের সঙ্গে ধর্মশালায় থাকতে অল্প পরিচয় হয়েছিল তাঁদের কাছে স্নান হেসে বিদায় নিলাম। ধর্মশালার ম্যানেজার একটি বাঙালী ছোকরা, নাম-চাটুয্যে, গাইয়ে-বাজিয়ে, মধুর ব্যবহারে তিনি সকল যাত্রীকে মুগ্ধ করেচেন। তিনি সকরুণ চোখে বিদায় দিলেন। পথে নেমে এলাম। পরনে গৈরিকবাস, কাঁধের একদিকে দড়ি দিয়ে বাঁধা কম্বল, আর একদিকে ঝোলা, হাতে লাঠি ও দড়ি বাঁধা লোটা, পায়ে ক্যাম্বিসের নতুন জুতো। চোখে শূন্য দৃষ্টি, হৃদয়ে অবসন্নতা, আত্মগ্লানি, প্রাণে ভয়, দেহে নিরুৎসাহ-এমনি করেই টলতে টলতে পথ দিয়ে চললাম। বাজার পার হয়ে এলাম বড় রাস্তার উপর, হৃষীকেশ পর্যন্ত মোটরবাস পাওয়া যায়। গলা শুকিয়ে উঠেছিল, এক ঘটি সরবৎ খেয়ে গাড়িতে এসে উঠলাম। দশ আনা ভাড়া, পনেরো মাইল পথ। কে যেন পিছন থেকে ঠেলচে। হায়রে, “মন না রাঙায়ে কি ভুল করিলে, বসন রাঙালে যোগী।”

    বেলা দেখতে দেখতে গড়িয়ে এল, পাহাড়ের পদতল থেকে মাথার দিকে রোদ উঠলো, এক একজন করে হৃষীকেশের যাত্রী এসে গাড়িতে চড়ে বসলো। কত জটলা, কত কলরব। মাথায় পাগড়ী-বাঁধা, খোঁচা খোঁচা দাড়িগোঁফ,-একটি সাধু এসে উঠলেন। তাঁর বয়স অল্প মনে হওয়াতে এবং তার কাছেও ঝুলি- কম্বল-লোটা দেখে সাহস করে করুণ কণ্ঠে বললাম, “আপ কাঁহা যায়ঙ্গে সাধুজি?”

    মুখের দিকে চেয়ে তিনি হাসলেন। গাড়ি ততক্ষণে ছেড়েছে। তার হাসি সন্ন্যাসীর স্বর্গীয় হাসি নয়, বন্ধুর হাসি। বললেন, ‘বদরীনারায়ণ। ওঁ নমো নারায়ণায়!’

    চুপ করে মুখ ফিরিয়ে রইলাম। একটু আনন্দ হলো, যাক সঙ্গী পেলাম! কিন্তু সে-আনন্দ প্রকাশ করে দুর্বলতার পরিচয় দিতে বাধলো। মিনিট খানেক পরে ঝুলির ভিতর থেকে দু’ খিলি সাজা পান বার করে হাত বাড়িয়ে সাধুটি স্মিত হাস্যে বললেন, ‘লিজিয়ে মহারাজ, ধাইয়ে।’-বলে অন্য হাতে তিনি বিড়ি বা’র করলেন।

    মুখের দিকে মুখ তুলে তাকালাম। তিনি আবার হাসলেন। হেসে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, ‘কোথা থেকে আসচেন।’

    হেসে বললাম, ‘এতক্ষণ চিনতে পারিনি, আপনি বাঙালী?’

    ‘হ্যাঁ, আপনি বদরীনাথ যাচ্ছেন?’

    ‘হ্যাঁ।’

    চলন্ত গাড়ির মধ্যে আলাপ চলতে লাগল। নাম তার পাগলা ভোলা ব্রহ্মচারী; ব্রহ্মচারী বলেই পরিচিত। বহুদিন হলো সংসার ত্যাগ করেচেন, পরিব্রাজক হয়ে বহু দেশ পর্যটন করেচেন। সংসারে কে আছে এবং কে নেই তার হিসাব রাখেন না, রাখার প্রয়োজনও নেই। ভগবদগীতা তাঁর মুখস্থ, সংসার মায়া, কর্মত্যাগেই মুক্তি, ভগবানের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও পরিপূর্ণ আত্মদান ছাড়া মানুষের গতি নেই, তুচ্ছ জীবন, মোক্ষলাভই পরম লক্ষ্য। ভক্তিভরে তার বাণী শুনছিলাম। তিনি বিড়ি টানতে টানতে আলাপ করছিলেন। বাস্তবিক, জীবনে এই প্রথম সৎসঙ্গ পেলাম!

    গঙ্গার তীরে তীরে গাড়ি চলচে, কোথাও উঁচু-নীচু পার্বত্য পথ, মাঝে মাঝে উপলখণ্ডময়, শীর্ণস্রোতা ঝরনা, কোথাও কোথাও সন্ন্যাসীর আস্তানা, ছোট ছোট দেবালয়, নদীর ওপারে পাহাড়, নিচে বাবলার ঘন জঙ্গল। গাড়ি ছুটে চলেছে। বাঁ দিকে রেলপথ দেরাদুনের দিকে গেচে, ছোট ছোট স্টেশন জনবিরল, দক্ষিণে হৃষীকেশের পথ। পথে যেতে পড়ল ভীমগোড়া চটি। এখানে আছে একটি গুহা, পুরাকালে ভীমের অশ্বক্ষুরাঘাতে গুহার ক্ষত নাকি গভীর হয়েছিল। তারপর এল সত্যনারায়ণের মন্দির, মন্দিরের কাছে কালীকম্বলীওয়ালার সদাচটি। যারা দাগী সাধু-সন্ন্যাসী, তারা বিনামূল্যে এখানে আহার ও আশ্রয় পেয়ে থাকেন। গাড়ি কয়েক মিনিটের জন্য থামলে ব্রহ্মচারী নেমে মন্দির দর্শন করে এলেন। দেব, দ্বিজ ও সন্ন্যাসীতে তার অবিচলিত ভক্তি!

    দিনের অবসান হয়েছে, পশ্চিম দিগন্তের রক্তলেখা ইতিমধ্যে কখন ম্লান হয়ে গেচে, বনচ্ছায়া ও পর্বতের অন্ধকারে ঝিল্লিরব জেগে উঠেচে, গাড়ি এসে থামলো হৃষীকেশের এক ধর্ম্মশালার নিকটে। সবাই নেমে এলাম। এতক্ষণে একটু নিৰ্ভয় হয়েছি। কাছেই কালীকম্বলীওয়ালার বিরাট ধর্মশালা, এখানেই তাদের হেড আপিস। এই কম্বলীওয়ালা ছিলেন এক সাধু অখ্যাত, নগণ্য এই সাধু গিয়েছিলেন বদরীনাথে, সম্বল ছিল একখানি মাত্র কালো কম্বল। পথে পেয়েছিলেন অপরিসীম দুঃখকষ্ট, উপবাসে দিন কাটত, দরিদ্র যাত্রীদের কাছে দরিদ্র সাধুর ভিক্ষাও জুটতো না। কিন্তু এই মহাপুরুষ একদিন আপন পরিশ্রম ও চেষ্টায়, হৃদয়ের ঐকান্তিক আগ্রহে দেশে দেশে ভিক্ষা সংগ্রহ করে নিরুপায় সাধু- সন্ন্যাসীর দুঃখ লাঘব করেচেন। তাঁরই কৃপায় এখন পথের মাঝে মাঝে ‘সদাব্ৰত’ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আজ তিনি এ জগতের কোথাও নেই, কিন্তু অসংখ্য নিঃসম্বল সন্ন্যাসীর নতমস্তকের প্রণাম নিরন্তর তার পদপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছয়।

    ব্রহ্মচারী বললেন, ‘আমাকেও ত সদাব্রত নিতে হবে দাদা! গরীব লোক, সেই আশাতেই ত এসেচি। আপনি একটু বলে কয়ে দিন দয়া করে।’

    ভিতরে লোকজনের, জটলা, কোলাহল, যাত্রীর ভিড়, তারই ভিতর দিয়ে পথ কেটে গদীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। হিসাবপত্র নিয়ে গদীর ম্যানেজার ও কেরানী বসে রয়েচে। আশপাশে প্রায় জন পঁচিশ তিরিশ সাধু ভিক্ষুক করজোড়ে করুণনেত্রে দণ্ডায়মান কেউ কেউ প্রত্যাখ্যাত হয়ে আপন আপন অবস্থার কথা নিবেদন করচে, কেউ বদরীনারায়ণের শপথ করে বলচে, সে প্রকৃতই সন্ন্যাসী, পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে ভ্রমণের সখ নিয়ে সে আসেনি, সে নিতান্তই নিরুপায় তীর্থযাত্রী। ভাবগতিক দেখে ব্রহ্মচারীর মুখখানি শুকিয়ে গেল। এবং যখন সত্যিই শুনলো, সেও সদাব্রতের টিকিট পাবে না, তখন সে সেইখানে বসে পড়ে বললে, ‘কি হবে দাদা, আমি যে অনেক আশা করে…শুনেছিলাম যে আসে সেই টিকিট পায়!’

    এ কথা সে জানে না, পৃথিবীতে এত বড় দানশীলতা কোথাও নেই। দান সম্বন্ধে কড়াকড়ি আছে বলেই দানের এত মূল্য!

    অতএব নিরাশ হয়ে ব্রহ্মচারীকে ফিরতে হলো, তার মুখের চেহারা দেখে ভয় পেলাম, যে উৎসাহ ও আনন্দ দেখেচি তার পথে, সেটুকু নিঃশেষে মুছে গেল, কণ্ঠ হ’লো রুদ্ধ, সর্বহারার মতো হতাশা-ম্লান চোখে তাকিয়ে সে বললে, ‘তবে ফিরেই যাই…সামান্য পাঁচ সাত টাকা নিয়ে এতদিনের পথ…ফিরেই যাই তাহ’লে!’

    মনটা খারাপই হয়ে গেল। বললাম, ‘ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায়ই বা কী, সত্যি ত আর উপবাস করে পথ হাঁটা যায় না!’

    পরমুখাপেক্ষার চেহারাই এমনি। যখন সে আশায় জ্বলে তখন দাবানল, যখন নিবে যায় তখন সে একেবারেই ভস্মস্তূপ। ব্রহ্মচারী যখন নিতান্ত বালকের মতো সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগল, সে সময় স্পষ্টই অনুভব করলাম, ভগবানে পূর্ণ বিশ্বাস তার শিথিল হয়ে এসেছে। সদাব্রত না পেয়ে তার দারিদ্র্যের সত্য রূপটি আমার চোখে বিসদৃশ হয়ে ফুটে উঠল।

    নীলধারার তীরে এসে বসলাম। অন্ধকার নদী, তরঙ্গসঙ্কুল, জলের উপরে নক্ষত্রের আলো ঝলমল করচে, ভয়ভীষণ ও রহস্যময়, পর্বতের গভীর গহ্বর থেকে কালো জল বন্য জন্তুর মতো চীৎকার করে ছুটে আসছে, স্রোতের অবিশ্রান্ত শব্দে চারিদিক মুখর। তীরে বহুদূর পর্যন্ত কোথাও কোথাও ধুনি জ্বালিয়ে সন্ন্যাসীরা আসন পেতেচে। একটি নিরুদ্বেগ, নিবিড় প্রশান্তি। তপস্যার উপযুক্ত স্থান বটে।

    একখানা বড় পাথরের উপর দু’জনে নিঃশব্দে বসেছিলাম। পাথরের গা বেয়ে জল ছুটচে। একাই যাবে, তাকে ফিরে যেতেই হবে, কিন্তু কী বলে সান্ত্বনা দেব তাই ভাবছিলাম, অথচ এক্ষেত্রে সকল সান্ত্বনাই উপহাসের মতো শোনাবে! আমার এ সমস্যার সে নিজেই সমাধান করে নিল। অন্ধকারে সে তার আবেগ- ব্যাকুল দুই চোখ তুলে আমার একটি হাত ধরে বললে, ‘দাদা, এত পরিশ্রম আমার পণ্ড হলো, ফিরেই তবে যেতে হবে, কী বলেন?’

    বললাম, ‘তাই ত ভাবচি।’

    সে বললে, ‘ভদ্রলোকের ছেলে আমি, তবু আপনার কাছে বলতে আমার বাধবে না, যদি কখনো দিন পাই আপনার দেনা আমি শোধ করব। ফিরে আর যাব না, পথে যেন উপবাস না করতে হয়, এই আপনার কাছে প্রার্থনা। ফিরে আর আমি যাব না দাদা!

    ‘কত দুঃখে যে এসেচি সে আপনাকে কী বলব! ছ’শো মাইল পথ হেঁটে একদিন হরিদ্বারে এসে পৌঁচেছিলাম……আর কোনো সাধ নেই দাদা, বুঝলেন? একটিমাত্র আশা, মনের মতন একটি মঠ করে যাবো। বহুকাল থেকে বদরী যাবার ইচ্ছে, কতদিন ভেবেছি মনে মনে –

    গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে বললাম, ‘চলুন, যা হবার তাই হবে। ফিরে গিয়ে আর কাজ নেই, উপবাস যদি করতেই হয়, দুজনেই একসঙ্গে করব। চলুন, রাত কাটাবার একটা জায়গা দেখে নিইগে।’

    অপরিসীম কৃতজ্ঞতায় ব্রহ্মচারী শুধু বললে ‘চলুন দাদা।’

    অনেক অনুসন্ধান এবং সুপারিশের পর হাসপাতালের পাশে এক যাত্রিশালায় রাত্রিবাসের জায়গা পাওয়া গেল। যাত্রিশালার দালানে জায়গা অতি সঙ্কীর্ণ। অন্ধকারে বসে জনকয়েক গাড়োয়ালী কুলী-মজুর জটলা করছিল, শ্রদ্ধাসহকারে আমাদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে সরে বসল।

    ভিতরে চেয়ে দেখি, একদল যাত্রী। বাংলা ভাষায় তাদের আলাপ শুনে ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। একটি প্রায়-বৃদ্ধ ব্যক্তি অভ্যর্থনা করে বসালেন। সমস্ত ঘর জুড়ে জন পনেরো স্ত্রীলোক এখানে ওখানে ছড়িয়ে শুয়ে রয়েচে। বললাম, কোথা থেকে আসছেন আপনারা?

    ‘কালীঘাট থেকে। আপনারা?’

    ‘আমি আসচি কাশী থেকে, উনি পরিব্রাজক।’

    লোকটির এতখানি দাড়ি, যাত্রাওয়ালার মতো মাথার চুল, পরনে গেরুয়া, গায়ে একটা গরম ওয়েস্ট-কোট, পায়ে পাহারাওয়ালার মতো কালো বনাতের ফেট্টি বাঁধা। ছোট্ট একটা কলকেয় তামাক সাজছিলেন। বললেন, ‘আপনি?’

    বললাম, ‘ব্রাহ্মণ,-আহা হা, করেন কি? আমি যে বয়সে অনেক ছোট?”

    ‘তা হোক, কেউটের বাচ্চা।’ বলে তিনি হঠাৎ জোর করে আমার পায়ের ধুলো মাথায় তুলে নিলেন। বললেন, ‘বুড়োমানুষ এতগুলি মেয়েছেলে নিয়ে এই দুর্গম পথে…একটু দেখবেন দয়া করে। পথের সঙ্গী!’-ঝুলি থেকে দু’টি বিড়ি তিনি আমাদের বার করে দিলেন।

    তাঁর সঙ্গে আলাপ করে আবার বাইরে এলাম। আলো জ্বালবার উপায় ছিল না। অন্ধকারে কম্বল ছড়িয়ে পাশাপাশি দু’জনে শুয়ে পড়লাম। ব্রহ্মচারী হাই তুলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার অভ্যাস মতে বলে উঠলো, ‘ওঁ নমো নারায়ণায় ওঁ তৎসৎ!’

    বললাম, ‘আমরা ত কেউ পথ চিনিনে, যাব কোনদিকে?’

    ‘একই পথ, দ্বিতীয় নেই। পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে চলবো দাদা, ভয় কি? ওঁ নমো নারায়ণায়।’

    অনেক গল্প চললো। অনেক পথের ইতিহাস, কত দেশ, কত রাজ্যের কথা। ব্রহ্মচারীর পথের জীবন বহুদিনের, কিন্তু তার বিপুল অভিজ্ঞতার ভিতর থেকে তার আত্মোপলব্ধি হয়নি। সে জীবনকে দেখেচে গীতার ভিতর দিয়ে, বেদের কয়েকটা শ্লোকে, মহাভারত ও রামায়ণের কয়েকটা ঘটনায়, ভগবানের প্রতি তথাকথিত পূর্ণ বিশ্বাসে। ধর্মের আলোচনায় তার হৃদয়াবেগের পরিচয় পাওয়া যায়, ধর্মজ্ঞতা ও জ্ঞানের প্রকাশ পাওয়া যায় না। সংসারে সবই সে অবলীলাক্রমে বিসর্জন দিয়ে এসেচে, দেয়নি শুধু আশা। আশা নিয়ে সে বাঁচে, আশা নিয়ে তার তীর্থ পর্যটন, আশা নিয়েই তার ধর্মজীবন।

    তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে শুয়ে শুয়ে তার কথা শুনে চলেচি। সে এক সময় বললে, ‘কত জায়গায় আসন পাতলাম, বুঝলেন দাদা, বাঁকুড়ায় জয়নগর আছে জানেন ত, সেই গ্রামের এক গাছতলায়…তারপর গেলাম বৃন্দাবন, বৃন্দাবন থেকে সোজা আলামুখী…উহুঁ, সুবিধে হ’লো-এলাম হরিদ্বারে। কিন্তু এখানেও তাই, সেই ধুনি জ্বালিয়ে মুগ্ধ সন্ন্যাসীর দল বসে বসে গাঁজা টিপচে, সেই তাদের ক্ষিধের সময় ক্ষিধে পায়…বিশেষ করে ওই নেশাখোর সন্ন্যাসীর দল আমার ভালো লাগে না। কী হয় ওতে বলুন ত? নেশার চোখেই যদি দুনিয়াকে দেখলাম—’

    ক্লান্তি এসেচে শরীরে; চোখ বুজে বললাম, ‘তা ত বটেই।’

    ব্রহ্মচারী হেসে বললে, ‘তবে নিলে আমি করিনে দাদা, আমি বলি, নেশাই যদি দিনরাত করলে তবে সাধনার সময় কোথায়? সাধনা চাই, তপস্যা। যে- আসনে বসবে সে-আসনে একদিন আগুন জ্বলে উঠবে, নাক টিপে নাভিশ্বাস… নিলে আমি করিনে, তবে কি জানেন—’

    সে নিজেই আবার বললে, ‘দরকার মতো খাওয়া ভালো, সময় মতো, শরীর মন দুই-ই থাকে তাজা…ধরুন বেশ শীত পড়লো, ঠাণ্ডার দিন, কিম্বা ধরুন রাতে ঘুম হচ্ছে না, হ্যা তখন বুঝি…নিলে আমি করিনে দাদা, ওটা খাওয়া ত আর পাপ নয়, পাপ বললেই পাপ…ধরুন কে না খায়!”

    বললাম, ‘তা ত বটেই!

    ‘আমিও কি আগে খেতাম? কেমন যেন জতো না, ওটা অভ্যেসের কথা, হাবিট্ ইজ্ দি সেকেন্ড, নেচার…হাঃ হাঃ হাঃ…আপনি ত সবই জানেন দাদা, শিক্ষিত লোক আপনি। বলতে বলতেই সে হঠাৎ আবার বলে উঠলো, ‘একটু কিনেছিলাম সেদিন, সেই গোঁজা রয়েচে ট্যাকে, খেতে আমার ইচ্ছে হয় না, কী হবে ও-সব, বদ্ অভ্যেস্। আঃ, আজ বেশ ঠাণ্ডা পড়েচে দেখচি, এক হাত সাজবো দাদা?’

    নির্জন, নিস্তব্ধ রাত্রি চারিদিকে তখন থম্ থম্ করচে গঙ্গার জলের শব্দ এতদূর থেকেও শুনতে পাচ্ছিলাম।

    1 2 3 4
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রত্যন্ত বাংলায় গুপ্তবিদ্যা – প্রবোধকুমার ভৌমিক
    Next Article রত্নদীপ – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Our Picks

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গোয়েন্দা কৃষ্ণা – প্রভাবতী দেবী সরস্বতী

    September 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.