Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাই জার্নি : স্বপ্নকে বাস্তবতা প্রদান – এ পি জে আবদুল কালাম

    এ পি জে আবদুল কালাম এক পাতা গল্প131 Mins Read0

    আমার প্রিয় বই

    যখনই কোনো ভারতীয় তরুণের সাথে আমার কথাবার্তা হয়, আমাকে তারা সবাই একটি প্রশ্ন করে থাকে। প্রশ্নটি হলো, আপনার প্রিয় বই কোনগুলো? আধুনিক জীবনযাপনের ধারায় আমাদের অনেক অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটেছে। তবে মানুষের পড়ার অভ্যাস এখনই বহাল আছে। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন বই থেকে শুরু করে সবকিছুই আমরা হাতের কাছে পেয়ে থাকি। তাই আমাদের পড়ার উৎসের কোনো অভাব নেই। ভারতে শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি, বইয়ের চাহিদাও রয়েছে। এই বিষয়টি সত্যিই অসাধারণ। এর মাধ্যমে বোঝা যায় জনগণ স্কুলে কেবল লেখাপড়া শিখছে না। তাদের মধ্যে জ্ঞান আহরণের স্পৃহা তৈরি হচ্ছে। আমার তাই মনে হয়, তারা একই সাথে শিক্ষিত হচ্ছে এবং নিজেদের চিন্তাভাবনার উন্নতি ঘটাচ্ছে। এতে করে তাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    পড়ার অভ্যাস মানুষের মাঝে কিছু অমূল্য গুণাবলির জন্ম দেয়। বই পড়া নিয়ে যত কিছুই বলা হোক না কেন, বলে শেষ করা যাবে না। ব্যক্তিগতভাবে যদি আমি নিজের কথা বলি, তাহলে বলব যে বই বরাবরই আমার পথের পাথেয়। আমার চিরন্তন বন্ধু। ছোটকাল থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস। আমার শৈশব থেকে পাওয়া বইয়ের সঙ্গ আমি কখনই ভুলে যাইনি। এই আমার এমন এক ধরনের সঙ্গ, যে আমাকে হাতে ধরে জীবনে চলতে শিখিয়েছে এবং কখনও আমার সঙ্গ ত্যাগ করেনি। বইয়ের প্রতিটি শব্দই ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির শিক্ষা দেয়। আর আমি আমার এই বন্ধুকে ব্যবহার করেছি আমার আশেপাশের জগতকে বুঝতে পারার জন্য।

    জীবনে বহু বইপ্রেমিদের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে। তারা সবাই বইয়ের প্রতি আমার ভালোবাসার প্রশংসা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন বইপ্রেমির কথা আমার মনে পড়ছে। তার সাথে আমার পরিচয় মাদ্রাজে। ঘটনা বহু আগের। আমি তখন MIT-তে পড়ালেখা করছিলাম। তখন রুশ সাহিত্য সম্পর্কে আমার অধীর আগ্রহ জাগায়। এবং রুশ সাহিত্য নিয়ে সংগ্রহ করা একটা বই পড়ে আমি আমার আগ্রহ মেটাচ্ছিলাম। যাই হোক, সেই সময়টায় আমার বাড়িতে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। তবে আমার পকেট প্রায় সময়ই ফাঁকা থাকত। এমনকি রামেশ্বরামে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকেটের টাকাটুকুও তখন আমার কাছে ছিল না। আমি দেখলাম, আমার সামনে একটা পথ খোলা আছে। আমি যে বইটি পড়ছিলাম, সেটি বিক্রি করে দিতে হবে। তাহলে এই আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। মাদ্রাজে যেই মার্কেটটিতে এই ধরনের বই কেনাবেচা হয় তা হলো, ‘মোর মার্কেট।’ এটি একটি বাজার এলাকা যেখানে সব ধরনের পণ্য-সামগ্রি পাওয়া যায়। তবে এই মার্কেটের আমার সবচাইতে পছন্দের জায়গা হলো পেছনের দিকের একটা সংকীর্ণ জায়গা। সেখানে সকল প্রকার ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ বই কেনাবেচা হয়। সেখানকার একটা দোকানে আমি প্রায়ই যেতাম। কারণ, দোকানের মালিক আমার বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। তার কাছ থেকেই আমি বিভিন্ন বই ও লেখকের কথা জানতে পারি। এবং তার অবদানেই নতুন আসা অসাধারণ সব বই পাঠ করার সুযোগ পাই। তো, আমি তার কাছে গেলাম রুশ সাহিত্য নিয়ে যে বইটি পড়ছিলাম, সেই বইটি বিক্রি করতে। তিনি আমার বই বিক্রির কথা শুনে আমার দিকে করুণা বা দুঃখিভাবে তাকালেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন আমি বইটা বিক্রি করতে চাই না। সাথে সাথে তিনি এই বিষয়টাও উপলব্ধি করতে পারছিলেন যে-বই বিক্রি করা ছাড় আমার আর কোনো পথ নেই। তার মাথায় একটি বুদ্ধি এলো। খুবই সাধারণ বুদ্ধি। তবে সেই বুদ্ধি দ্বারাই আমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

    তিনি আমাকে বললেন যে, আপনি বইটি আমার কাছে বন্ধক রাখতে পারেন। তিনি বইটি বন্ধক রেখে আমাকে টাকা ধার দেন। আবার যখন আমার কাছে টাকা হবে তখন আমি তার ধার পরিশোধ করে তার কাছে থেকে বইটি নিয়ে যাব। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, তিনি বইটি বিক্রি করবেন না। আচানক আমার ভাগ্যের পরিবর্তনে আমার আনন্দের সীমা রইল না। আমি তখন আমার বাড়িতেও যেতে পেরেছিলাম এবং আমাকে বইও বিক্রি করতে হয়নি।

    আমার এই বইপ্রেমি বন্ধু তার প্রতিজ্ঞা ঠিকই রেখেছিলেন। তিনি বইটি বিক্রি করে দেননি। এরপরও বহু বছর বইটি আমার কাছে ছিল। এই বইটি এক ধরনের স্মারক। আমার এই অদ্ভুত বইপ্রেমি বন্ধুকে স্মরণ করিয়ে দেয় এই বইটি।

    .

    আমি যখন সেন্ট যোসেফ কলেজের শেষবর্ষে অধ্যয়ন করছি, তখন থেকে আমি ইংরেজি ক্ল্যাসিক বইগুলো পড়া শুরু করি। লিউ টলস্টয়, ওয়াল্টার স্কট এবং থমাস হার্ডির সাথে আমার পরিচয় হয় তাদের বইয়ের মাধ্যমে। তাদের লেখা গল্পগুলোর ধরণ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল। সম্পূর্ণ নতুন ধাঁচের গল্প। আর তাদের বইয়ের ভাষা এবং বচনভঙ্গিও আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন ছিল। তবে তাদের লেখনির মাধ্যমে ফুটে ওঠা মানুষের সম্পর্ক এবং সামাজিক জীবন নিয়ে গভীর জীবনদর্শন আমাকে আকৃষ্ট করে।

    সাহিত্যের পর আমি স্বনামধন্য কিছু দার্শনিকের বই পড়ি। এরপর পড়ি বিজ্ঞান নিয়ে লেখা বই। বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান। আলবার্ট আইনস্টাইনের একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। গল্পটা হলো—

    আলবার্ট আইনস্টাইনের বয়স তখন বার। তার শিক্ষক ম্যাক্স ট্যালমুড তাকে একটি বই দিলেন। বইটি ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির ওপর লেখা। এই বইটি পড়েই কিশোর আইনস্টাইনের চিন্তার জগত উন্মোচিত হয়। তিনি এই মহাবিশ্বের নিগূঢ় রহস্য খুঁজে বের করার উৎসাহ পান। এমনকি তিনি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা সম্পর্কেও উপলব্ধি করতে পারেন।

    .

    আমার জীবনে আমি অসামান্য কিছু বই পড়তে পেরেছি। এ আমার সৌভাগ্য। তবে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আমার পছন্দের বই কোনগুলো। আর কোন বইগুলো আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পেরেছে, তবে আমি তিনটি বইয়ের নাম নেব।

    প্রথমটি হলো, ‘লাইট ফর মেনি ল্যাম্পস’। বইটির সম্পাদনায় ছিলেন লিলিয়েন এটকলার ওয়াটসন। বইটি আমি প্রথম পড়ি ১৯৫৩ সালে। সেই সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের দোকান থেকে কিনি বইটি। আমি এই বইটিকে নিজের পথচলার সঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করি। এই বইটি ঠিক কতবার পড়েছি, তা খেয়াল নেই। ‘লাইটস ফ্রম মেনি ল্যাম্পস’ বইটি বহু লেখকের লেখার সমন্বয় তৈরি। এই বইতে সব অনুপ্রেরণামূলক গল্প সংকলিত আছে। আমার নিজের জীবনের অনুপ্রেরণার উৎসগুলোর মধ্যে এই বইটি অন্যতম।

    সম্পাদক বিভিন্ন লেখকের যত অনুপ্রেরণামূলক গল্প আছে, তা সংকলন করেছেন। এবং বইটিতে খুব সুন্দর করে বর্ণনা করা আছে যে, কীভাবে এই গল্পগুলো লেখা হয়েছে। এবং এর মূলকথা বা শিক্ষণীয় বিষয় কী? এই বইতে যে গল্পগুলো আছে তা আমাকে জীবনের নানা দুঃখ-দুর্দশা অতিক্রম করতে সাহায্য করছে। যখন আমার উপদেশের দরকার ছিল, আমাকে উপদেশ দিয়েছে। যখন আমার আবেগের কারণে আমি কোনো বিপদের সম্মুখিন হয়েছি, তখন আমার চিন্তা-ভাবনার মধ্যে ভারসাম্য এনেছে বইটি। বইটির অনেক সংস্করণ হয়েছে। আমার এক বন্ধু কিছু বছর আগে নতুন এক সংস্করণ পেয়েছে এবং উপহারস্বরূপ আমাকে দিয়েছে বইটি।

    আমার পছন্দের দ্বিতীয় বইটি হলো, ‘থিরুকুরাল’। বইটি ২০০০ বছর আগের লেখা। লেখকের নাম থিরুভাল্লুভার। এই বইয়ে ৩৩০টি তামিল কাপলেটস বা কুড়াল রয়েছে। কুড়াল হলো, এক ধরনের নীতিমূলক ছোট কবিতা। এগুলো ছন্দানুযায়ী পড়তে হয়। বইটি তামিলেই রচিত। এই বইতে জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমার মতে, এই বই তামিল সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি এবং মূল্যবান সম্পদ। আমার মনে হয়েছে, এই বই আমার জীবনের পথ-প্রদর্শককের কাজ করেছে। কীভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা পালন করতে হয়, তা শিখিয়েছে এই বইটি। এই বইটি এমন এক মহৎকর্ম যা মানুষকে ভাবতে বাধ্য করবে। আমার পছন্দের একটি কুড়াল হলো-

    “Ulluvathellam uyarvullal matratu
    Tallinum tellamai nirttut”

    এর অর্থ হলো-

    জীবনে ওপরে ওঠার কথা চিন্তা কর, এই ভাবনাই হোক তোমার আকাঙ্ক্ষা, যদি তুমি লক্ষ্যে না পৌছাতে পার, তবে তোমার এই ভাবনাই তোমাকে লক্ষ্যে নিয়ে যাবে।’

    পরবর্তী যে বইটির কথা আমি বলতে চাই তা হলো, ‘ম্যান দ্য আননোন’। বইটির লেখক একজন নোবেল বিজয়ী। তার নাম অ্যালেক্সিস ক্যারেল। তিনি একাধারে একজন ডাক্তার এবং দার্শনিক। তিনি এই বইতে আলোচনা করেছেন, কীভাবে একই সাথে মানুষের মন এবং শরীরকে সারিয়ে তুলে মানুষকে সুস্থ করে তোলা যায়। তিনি মানব শরীরকে একটি বুদ্ধিমান এবং সমন্বিত সিস্টেম বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর অসাধারণ বর্ণনা দিয়েছেন। আমি মনে করি, সবারই তার এই বইটি পড়া উচিত। বিশেষ করে, যারা চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়তে ইচ্ছুক তাদের।

    .

    বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন উক্তি আমাকে দারুণ প্রভাবিত করেছে। আমি এগুলো পড়ে আমার মনে জমে থাকা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। পবিত্র কুরআন শরীফ, বেদ, গীতা এবং সকল ধর্মীয় গ্রন্থেই গভীর দর্শন বিদ্যমান। এগুলো আমাকে জীবনের বহু সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে সাহায্য করেছে।

    জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সকল ধর্মীয় উক্তিগুলো কীভাবে সহযোগিতা করে তার একটু বর্ণনা দেই। মূলত আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। ব্যাঙ্গালোরে অ্যারোনেটিকাল হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর আমাকে INCOSPAR-এ রকেট ইঞ্জিনিয়ার পদের সাক্ষাতকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই সংস্থার শুরু হয় ড. ভিকরম সারাভাইয়ের হাত ধরে। আমি সাক্ষাতকার নিয়ে ভীষণ চিন্তায় ছিলাম। কী হবে, না হবে তা বুঝতে পারছিলাম না। এমন সময় লক্ষ্মণ শাস্ত্রী, আমার বাবার বন্ধুর পাঠ করা গীতার উক্তিগুলো আমার মনে পড়ল। উক্তিটি হলো-

    ‘প্রতিটি সৃষ্টিই জন্ম থেকেই মোহের প্রতি আকৃষ্ট…
    এই মোহ্ ধীরে ধীরে আকাঙ্ক্ষা এবং ঘৃণার দ্বৈততার রূপ নেয়। তবে যে সকল মানুষ মহৎ কাজ করেছে বা করবার ক্ষমতা রাখে, সকল পাপ থেকে মুক্ত তারা—এই মোহ এবং উব্দুদ্ধতা থেকেও মুক্ত। তাদের মতো করে আমারই উপাসনা কর।’

    এই উক্তি আমার সাহস সঞ্চার করল। আমি ভাবলাম, বিজয় লাভের সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো, বিজয় লাভের প্রয়োজন অনুভব না করা। এই দৃষ্টিভঙ্গিই নিয়েই আমি সাক্ষাতকারের জন্য গেলাম।

    ভারতের স্পেস প্রোগ্রামের উন্নতি ঘটে এই সংস্থা দ্বারা এবং এই সংস্থায় আমার সেই সকল লোকের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। যাদের কারণে এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে। Indians Space Research Organisation-এর উষালগ্ন থেকে আমি এর সাথে সম্পৃক্ত। সংস্থা যেভাবে বেড়ে উঠেছে এবং দেশের সেবা করেছে, আর যে সকল লোকের কল্যাণে এই সংস্থা বেড়ে উঠেছে ও দিক-নির্দেশনা পেয়েছে, যে সকল লোকের কথা স্মরণ করলে আমার গীতার আরেকটি শ্লোকের কথা মনে পড়ে যায়।

    শ্লোকটির মূলকথা হলো-

    ‘ফুলকে দেখ/ একবার ফুলের দিকে তাকাও
    নিঃস্বার্থভাবে যে সুগন্ধ ছড়ায় এবং মধু দিয়ে যায়, যখন এর কাজ শেষ হয়-
    এ নিঃশব্দে ঝরে যায়।
    ফুলের মতো হওয়ার চেষ্টা করো
    এর গুণাগুণগুলো নিজের মাঝ বপন করো।’

    এই উদ্যোমি সংস্থা হলো ফুলের মতো। এরা নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা এবং দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছে। এ রকমটা তখন হয়েছিল যখন আমি Defense Research And Development Organization (DRDO)-তে কাজ করছিলাম। আমার কাজ ছিল, ভারতের নিজস্ব মিসাইল তৈরির প্রোগ্রামে। এখানে বহু সাহসিক এবং মেধাবি মানুষ ও নেতাদের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাদের কথা স্মরণ হলে আমার কানে পবিত্র কুরআনের বাণী বেজে ওঠে—

    ‘আলোর ওপর আলো। আল্লাহ তার পছন্দের বান্দাদেরকে নিজের
    আলোয় আলোকিত করেন এবং দিক-নির্দেশনা দেন।’

    আমার ব্যক্তিগত জীবনেও এই সকল ধর্মীয় গ্রন্থ আমাকে সহায়তা করেছে। জীবনের অর্থ উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে।

    .

    আমার বাবা-মা একই বছরে মারা যান। আমি তখন রাশ্বেরামের মসজিদে দুহাত তুলে প্রার্থনা করছিলাম।

    মায়ের মৃত্যুর আগে তাকে দেখতে আসতে না পারায় দুঃখে আমার হৃদয় তখন ভারাক্রান্ত। তবে কিছুক্ষণ পরে কুরআনের একটি বাণী মাথায় এলো—আমি এই বাণী দ্বারা বুঝতে পারলাম। এ-মৃত্যুকে কখনও থামানো যায় না। মৃত্যু, যখন যেখানে লেখা আছে, সেভাবেই হবে। কেবল সৃষ্টিকর্তাই অবিনশ্বর। বাণীটির মূলকথা হলো-

    ‘তোমার সহায় সম্পদ এবং সন্তান সন্তুতি কেবল সাময়িক সুখমাত্র। কেবল আল্লাহ এবং একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালাই চিরন্তন।’

    .

    সাহিত্যের জগতে আমার অন্যতম ভালোবাসা হলো কবিতা। টি এস এলিয়ট, লিউইস ক্যারোল এবং উইলিাম বাটলার ইয়েটস-এর কবিতা আমার মনের মাঝে আলোড়ন তোলে। বৈজ্ঞানিক কর্মক্ষেত্রে আমার পদচারণায় লিইউইস-এর কবিতার লাইনগুলো আমার জন্য যথার্থ বলে আমরা মনে হয়।

    Let craft, ambition, spite,
    Be quenched in Reason’s night,
    Till weakness turn to might,
    Till what is dark be light,
    Till what is wrong be right!

    যখন প্রচণ্ড কাজের চাপে আমি জর্জরিত থাকতাম। দিন কখন রাত হয়ে যেত তখন আমার খেয়াল থাকত না। তখন স্যামুয়েল টেইলর কলেরিজ-এর কবিতায় আমি নিজের মানসিক আস্থার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেতাম।

    Day after day, day after day,
    We stuck, nor breath, nor motion;
    As idle as a painted ship
    Upon a painted ocean

    প্রায়ই খুবই স্বল্প সময়ের মাঝে কাজ শেষ করার জন্য আমাকে উঠে পড়ে লাগতে হতো। গ্রুপ ক্যাপ্টেন নারায়ণ (আমার একজন সহকর্মী) গাইডেড মিসাইলের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য অস্থির হয়ে থাকত। তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, তুমি যা চাও আমাকে বল, আমি এক্ষুণি তোমার সামনে হাজির করছি। কেবল আমার কাছে সময় চাইবে না। আমি তার কথা শুনে হেসেছিলাম এবং টি.এস ইলিয়টের এই লাইনগুলো আবৃত্তি করেছিলাম-

    Between the conception
    And the creation
    Between the emotion
    And the response
    Falls the Shadow.

    আমাকে যেসকল লেখক এবং লেখনি প্রভাবিত করতে পেরেছে, তার সামান্য কিছুর উল্লেখ আছে এখানে। এই কবিতা, গল্প এবং শিল্পকর্ম সবগুলোই আমার কাছে বন্ধুর মতো। আমার পুরনো এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা আমার বিপদ, দুঃখ- দুর্দশা এবং মানসিক অবস্থা বুঝতে পারে। কেবল দুঃখ না, আমার পরম আনন্দের মুহূর্তেও আমার পাশে ছিল। বর্তমান উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগে যখন প্রতিটি তথ্য অতি দ্রুত আসে, তখনও তাদের মাঝেও সেই অসাধারণ লেখনিগুলো হারিয়ে যায়নি। আমি একবার বই নিয়েই একটি কবিতা লিখে ফেলি। প্রায়ই আমি তরুণ সমাজকে আমার এ-কবিতা পড়ে শুনাই। এই কবিতায় বইয়ের জন্য আমার অনুভূতি লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

    ‘বই বরাবরই আমার প্রিয় বন্ধু
    প্রায় পঞ্চাশ বছর হলো
    বই আমাকে স্বপ্ন দেখায়
    সেই স্বপ্ন আমার লক্ষ্য হয়ে ওঠে’
    বই আমাকে যেই সকল লক্ষ্য আত্মবিশ্বাসের সাথে অর্জনের অনুপ্রেরণা দেয়
    আমি যখন ব্যর্থ তখন বই আমাকে দিয়েছে সাহস
    ভালো বই আমার কাছে ফেরেশতার মতো
    আমার হৃদয় ছুঁড়ে গেছে
    তাই আমি আমার ছোট বন্ধুদেরও বইয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে বলি
    এই বই তোমাদেরও ভালো বন্ধু।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআল আকসা মসজিদের ইতিকথা – এ . এন. এম. সিরাজুল ইসলাম
    Next Article টার্নিং পয়েন্টস : এ জার্নি থ্র চ্যালেঞ্জেস – এ.পি.জে. আবদুল কালাম

    Related Articles

    এ পি জে আবদুল কালাম

    উত্তরণ : শ্রেষ্ঠত্বের পথে সকলে – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    সন্ধিক্ষণ : প্রতিকূলতা জয়ের লক্ষ্যে যাত্রা – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    উইংস অব ফায়ার – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    ইগনাইটেড মাইন্ডস – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    লার্নিং হাউ টু ফ্লাই : লাইফ লেসন্‌স ফর দি ইয়ুথ – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    টার্নিং পয়েন্টস : এ জার্নি থ্র চ্যালেঞ্জেস – এ.পি.জে. আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.