Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মানুষের কি কোনো ভবিষ্যত আছে? – বার্ট্রান্ড রাসেল

    বার্ট্রান্ড রাসেল এক পাতা গল্প154 Mins Read0
    ⤷

    ০১. উপক্রমণিকা না উপসংহার?

    উপক্রমণিকা না উপসংহার?

    পৃথিবী গ্রহের যাবতীয় প্রাণী-প্রজাতির মধ্যে সবথেকে চিত্তাকর্ষক এবং সব ডথকে বিরক্তিকর হচ্ছে মানুষ, অথবা তার নিজের উদ্ধত ভাষায়-হোমো স্যাসিয়েনস।

    মঙ্গলগ্রহের কোনো দার্শনিক মনোভাবাপন্ন জীববিজ্ঞানী যদি আমাদের এই গ্রহের উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুল সম্বন্ধে একটি প্রতিবেদন লিখতেন, তাহলে সেই প্রতিবেদনের শেষ পরিচ্ছেদের প্রথম বাক্যটি হয়তো এ রকমই হতো। আমরা নিজেরা এই গ্রহের সঙ্গে মানসিক ও প্রবৃত্তিগত নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ বলে ভিন্ন। গ্রহের কোনো পর্যবেক্ষকের মতো নির্মোহ মন এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি অর্জন করা আমাদের পক্ষে দূরূহ। কিন্তু মাঝেমধ্যে আমাদের কাল্পনিক মঙ্গলবাসীটির মতো গভীর পর্যালোচনায় ব্যাপৃত হওয়াও দরকার; আর সেই পর্যালোচনার আলোয় বিচার করে দেখা দরকার আমাদের প্রজাতির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎকে (অবশ্য যদি আদৌ কোনো ভবিষ্যৎ থেকে থাকে)। সেই সঙ্গেই বিচার করা দরকার পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের ব্যাপারে মানুষ ভালো-মন্দ যা কিছু করেছে, করে চলেছে এবং আগামীদিনে করতে পারে, আর হয়তো ভবিষ্যতে অন্য কোনো গ্রহের জীবনে হয়তো ভবিষ্যতে অন্য কোনো গ্রহের জীবনে যা-কিছু সে ঘটাতে পারে–তার মূল্যকে। এ ধরনের সমীক্ষায় অস্থায়ী আবেগের কোনো গুরুত্ব থাকে না, ঠিক যেমন বিমান থেকে নিচের দিকে তাকালে ছোট ছোট পাহাড়গুলোকে সমতলভূমি বলেই মনে হয়। অন্যদিকে, স্থায়ী মূল্যবিশিষ্ট আবেগগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ চেহারা নিয়ে এসে দাঁড়ায়।

    পৃথিবীতে টিকে-থাকার সগ্রামে প্রথমে কিন্তু মানুষ মোটেই খুব-একটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল না। তখনও সে এক বিরল প্রজাতি, বন্য জীবজন্তুদের নাগাল এড়িয়ে গাছে চড়ার ব্যাপারে বানরদের তুলনায় অনেক কম চটপটে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার প্রাকৃতিক আস্তরণ অর্থাৎ লোম তার শরীরে নেই বললেই চলে, দীর্ঘ শৈশবের প্রতিবন্ধকতা এবং অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে খাদ্য সংগ্রহের প্রতিকূলতা-সবে মিলে সে তখন এক কঠিন পরিস্থিতির বাসিন্দা। সেই সূচনালগ্নে তার সম্বল ছিল একটাই জিনিস-মস্তিষ্ক। এই সম্পদটিই ক্রমশ উন্নত হতে হতে রূপান্তরিত করেছে তাকে-বন্য জন্তুদের তাড়া-খাওয়া পলাতক থেকে সে পরিণত হয়েছে সারা দুনিয়ার অধীশ্বরে। এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপগুলো প্রাগৈতিহাসিক যুগের, কার পর কোনটা ঘটেছে তা অনুমানসাপেক্ষ।

    আগুনকে বশ মানাতে শিখেছিল সে-আজকের দিনে পারমাণবিক শক্তির মতো একই ধরনের বিপদের উৎস ছিল আগুনও, যদিও অনেক কম মাত্রায়। আগুনের ব্যবহার খাদ্যকে উন্নত করে তুলল তো বটেই, সেইসঙ্গেই গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতেও পারল সে। তারপর তার উদ্ভাবনীশক্তি জন্ম দিল বর্শা আর তীর ধনুকের। গর্তে কেটে ফাঁদ পাতল সে, সেই ফাঁদে আটকা পড়ে নিস্কল আক্রোশে ছটফট করতে লাগল ম্যামথের দল। বন্য জীবজন্তুকে পোষ মানাল মানুষ, তারপর ইতিহাসের ঊষালগ্নে আবিস্কার করল কৃষির পদ্ধতি।

     

     

    কিন্তু এই সবকিছুকে ছাপিয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তির আসনটি অধিকার করে নিয়েছিল অন্য একটা জিনিস ভাষা। ধরেই নেওয়া যায়, পুরোপুরি জান্তব চিৎকার থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েই গড়ে উঠেছিল কথ্য ভাষা। লিখিত ভাষা প্রথমে কথার প্রতিনিধির ভূমিকা পালন করত না, বরং ক্রমশ বেশি করে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠা তথ্যজ্ঞাপক আগামী দিনের হাতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল ভাষার সাহায্যেই এবং সেটাই ছিল তার সর্বোত্তম গুণ। একটা প্রজন্ম নিজের অভিজ্ঞতায় যা কিছু শিখত, তা তারা জানিয়ে যেতে পারত পরবর্তী প্রজন্মকে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার পথ বেয়ে সবকিছু শেখার বদলে বিভিন্ন নির্দেশ থেকেই অনেক কিছু শিখে নিতে পারত মানুষ। জ্ঞানের স্থায়ী ভাণ্ডার গড়ে তোলার ব্যাপারে কথ্য ভাষার থেকেও বড় ভূমিকা নিয়েছিল লিখিত ভাষা, স্মৃতির পরিপূরক হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল লিখিত নথি। অন্য যেকোনও বিষয়ের থেকে বেশি করে এই ব্যাপারটাই, বিভিন্ন মানুষ তাদের জীবনে যা কিছু জেনেছে তা সংরক্ষণ করার এই সুবিধাটাই, মানব-প্রগতিকে বাস্তবায়িত করেছে। একটা সময় মস্তিষ্কের ক্ষমতারও জৈব উন্নতি ঘটত, পাশাপাশি জিনগত (Genetic) ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে চলত। কিন্তু সে পর্যায় শেষ হয়ে গেছে ৫ লক্ষ বছর আগে। তারপর থেকে মানুষের জন্মগত বুদ্ধিমত্তা খুব কমই বেড়েছে বা আদৌ বাড়েনি এবং তখন থেকে ঐতিহ্য ও শিক্ষা মারফত পাওয়া অর্জিত দক্ষতার ওপরেই নির্ভর করেছে মানবগতি। এর ভিত্তিস্থাপন হয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগেই, সম্ভবত কোনো সচেতন উদ্দেশ্য ছাড়াই, কিন্তু একবার শুরু হয়ে যাওয়ার পর এই প্রক্রিয়া মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতার ক্রমাগত অগ্রগতিকে সম্ভব করে তুলেছে। লিখিত ইতিহাসের সমগ্র পর্যায়ে পৃথিবী যতটা এগিয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি উন্নতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি বিগত পাঁচশো বছরে। আমাদের এই যুগের একটা প্রধান সমস্যা হলো-প্রযুক্তি যত দ্রুত পালটেছে, চিন্তা পদ্ধতি তত দ্রুত পালটায়নি। ফলে দক্ষতা বেড়েছে, কিন্তু হারিয়ে গেছে প্রজ্ঞা।

     

     

    ধূসর অতীতের সেই সুদীর্ঘ পর্যায়ে পৃথিবীর বুকে মানুষের অস্তিত্ব রীতিমতো বিপন্নই ছিল। সেখান থেকে সে উঠে এসেছে প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে, উঠে এসেছে অতীতের দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে গড়ে-ওঠা বিভিন্ন সহজাত প্রবৃত্তি আর অভ্যাস নিয়ে। তখনও তার সামনে ছিল অ-মানবীয় বিপদের বিরুদ্ধে মানুষ কি ব্যবস্থা নিত, তার বর্ণনা পাওয়া যাবে বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব-এ। বন্যা ঠেকানোর দুটি পদ্ধতি ছিল: প্রথম যুগের চীনারা বাঁধ দিয়েছিল ইয়েলো নদীর ধার বরাবর, আবার নোয়ার উপাখ্যান থেকে জানা যায়, পশ্চিম এশিয়ার বাসিন্দারা মনে করত পবিত্র জীবনযাপনই বন্যা প্রতিরোধের সেরা উপায়। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত সম্বন্ধেও একই ধারণা পোষণ করত তারা, সাহিত্যে যার প্রতিফলন দেখা যায় সোডোম আর গোমোরা অঞ্চল দুটির ধ্বংসের বিবরণের মধ্যে। চৈনিক আর পশ্চিম-এশিয়া-পরস্পরবিরোধী এই দুটি ধারণা আজও টিকে আছে, তবে সময়ের তালে তালে চৈনিক ধারণাটিই ক্রমশ জোরদার হয়ে উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাস্রোত দেখিয়ে দিয়েছে যে টিকে-থাকার জন্য বাঁধ যেমন দরকার, তেমনি দরকার পবিত্র জীবনযাপনও (যদিও সেটা প্রচলিত অর্থে নয়)।

    নিজের চারপাশের অমানবীয় বিপদের আবহ থেকে উঠে এসেছিল মানুষ। উঠে আসার সময় তার সঙ্গী হয়েছিল সেইসব সহজাত প্রবৃত্তি আর আবেগ যেগুলোর সাহায্যে নিজের ফেলে-আসা জীবনে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিল সে। পেছনে ফেলে আসা সেই অনিশ্চিত জীবনে টিকে-থাকার জন্য তার দরকার ছিল প্রচণ্ড কঠোরতা আর তীব্র জেদ, দরকার ছিল নিয়ত সতর্কতা, অতন্দ্র হুঁশিয়ারি এবং যেকোনোও বিপদের মোকাবিলা করার মতো সাহস। পুরোনো সেই বিপদগুলো পার হয়ে আসার পর নিজের ওইসব অভ্যাস আর আবেগগুলো নিয়ে কি করার ছিল তার? ভেবেচিন্তে একটা সমাধান খুঁজে পেয়েছিল সে, তবে দুর্ভাগ্যবশত সেই সমাধানটা খুব সুখকর ছিল না। যে বৈরিতা আর যে সন্দেহকে এবার সে পরিচালিত করল অন্য মানুষদের বিরুদ্ধে। না, সবার বিরুদ্ধে নয়, কারণ যে-সব দক্ষতার সাহায্যে সে টিকে থাকতে পেরেছিল তার অনেকগুলোর জন্যই প্রয়োজন হতো সামাজিক সহযোগিতা। সেই সহযোগিতার বৃত্তের বাইরে থাকত যারা, তাদের বিরুদ্ধেই নিজের সন্দেহ আর বৈরিতা পরিচালিত করল মানুষ। এইভাবে গোষ্ঠীগত ঐক্য ও সংগঠিত যুদ্ধের সাহায্যে বহু শতাব্দী ধরে সামাজিক সহযোগিতার প্রয়োজন মিটিয়েছিল সে, যে সহযোগিতার সঙ্গে মিশে ছিল অতীতের সংগ্রামজ্ঞাত সহজাত হিংস্রতা আর সন্দেহপ্রবণতা। ইতিহাসের ঊষাকাল থেকে শুরু করে আমাদের আজকের এই যুগ পর্যন্ত সর্বদাই বুদ্ধিমত্তাসঞ্জাত দক্ষতা পরিবেশকে নিরন্তর পরিবর্তিত করেছে, বিপরীতে সহজাত প্রবৃত্তি ও আবেগ টিকে থেকেছে মূলত সেই আদি রূপেই যে রূপে একসময় সেগুলো গড়ে উঠেছিল বন্য ও আদিম পারিপার্শ্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।

     

     

    অ-মানব জগতের, দিক থেকে মানুষের ভীতি ও সন্দেহ প্রতিদ্বন্দ্বী মানবগোষ্ঠীদের দিকে ঘুরে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল যুথবদ্ধতার এক নতুন যাত্রা। পিঁপড়ে বা মৌমাছিদের মতো অসামাজিক পন্থায় কিছু করারর কোনও তাড়না অনুভব করে না। নানান জায়গায় মানুষরা প্রায়শই তাদের রাজাদের হত্যা করেছে, কিন্তু মৌমাছিরা কখনোই তাদের রানীদের হত্যা করে না। বাইরের কোনো পিঁপড়ে ঘটনাচক্রে অন্য কোনো পিঁপড়েদের বাসায় ঢুকে পড়লে তাকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করা হয় এবং তার জন্য কোনও শান্তিবাদী প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় না। তাদের সমাজে ভিন্নমতাবলম্বী সংখ্যালঘু অংশ বলে কোনো বস্তু নেই, সামাজিক ঐক্যই প্রতিটি জীবের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক এ রকম নয়। পরিবারের থেকে বড় কোনো সামাজিক দলের কথা আদিম মানুষরা সম্ভবত জানত না। ধরে নেওয়াই যায় যে, অন্য মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বিপদ থেকে বাঁচার জন্যই পরিবার বর্ধিত হয়ে পরিণত হয়েছিল গোষ্ঠীতে, যে গোষ্ঠীর প্রত্যেকের পূর্বপুরুষ এক ছিল অথবা এক ছিল বলে ধরে নেওয়া হতো। যুদ্ধবিগ্রহের ফলে সম্মিলন ঘটল বিভিন্ন গোষ্ঠীর, তার পর একে একে গড়ে উঠল জাতি, সাম্রাজ্য এবং বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মৈত্রীবন্ধন। অত্যাবশ্যক সামাজিক ঐক্য অনেক সময় ভেঙে পড়ত এবং সেই ভাঙন পরাজয়কেই ডেকে আনত। ফলস্বরূপ, অংশ প্রাকৃতির নির্বাচনের সাহায্যে এবং অংশ স্বার্থচেতনার প্রভাবে, মানুষ ক্রমশই বড় বড় দলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে সুদক্ষ হয়ে উঠতে লাগল এবং এমন এক যুথবদ্ধতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠল যা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে কখনোই দেখা যায়নি।

     

     

    আজ যে জগতে আমরা বাস করি, সে জগৎ গড়ে উঠেছে প্রায় ৬ হাজার বছরের সংগঠিত যুদ্ধবিগ্রহের সাহায্যে। যুদ্ধে পরাজিত জনগোষ্ঠীগুলো সাধারণত নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে অথবা তাদের জনসংখ্যা বিপুলভাবে হ্রাস পেত। যুদ্ধের সাফল্য নির্ভর করত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বেশি লোকসংখ্যা, উন্নততর প্রায়োগিক দক্ষতা, উৎকৃষ্টতর সামাজিক ঐক্য এবং উদ্দীপনা। নিখাদ জীবতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে, যা কিছু কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে, তাকে প্রগতি হিসেবেই গণ্য করা উচিত। এই সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বহু যুদ্ধকেই সৌভাগ্যের দ্যোতক হিসেবে মেনে নিতে হবে। রোমানরা পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলের জনসংখ্যাকে বিপুলভাবে বাড়িয়ে তুলেছিল। কলম্বাস আর তাঁর উত্তরসূরিদের প্রভাবে পশ্চিম গোলার্ধে তাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রাক্‌-কলম্বাস ইন্ডিয়ানদের থেকে অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল।

    চীন ও ভারতে বহুযুগব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহের পর প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সরকারগুলোই তাদের জনসংখ্যার বিপুল বৃদ্ধিকে সম্ভব করে তুলেছিল। তবে জনসংখ্যাবৃদ্ধি যে সর্বদাই যুদ্ধের ফলে ঘটেছে, তা মোটেই নয়। মঙ্গোলরা পারস্যের অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়েছিল, ঠিক যেমনটা তুর্কিরা করেছিল খলিফা সাম্রাজ্যের। বর্তমানে মরুভূমিতে পরিণত হওয়া উত্তর আফ্রিকার কিছু কিছু অঞ্চলের ধ্বংসাবশেষের নানান লক্ষণ থেকে বোঝা যায়, রোমান সাম্রাজ্যের পতনের ফলেই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল এইসব অঞ্চলকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তাইপিং বিদ্রোহের সময়। এই সবকটা ক্ষেত্রেই বিজয়ী হয়েছিল সভ্যতার মাপকাঠিতে পিছিয়ে থাকা পক্ষরাই। তবে বিপরীত নজিরগুলোর কথা মনে রেখেও বলা যায়-অতীতের যুদ্ধগুলো আমাদের এই গ্রহে মানুষের সংখ্যা কমানোর থেকে বাড়ানোর কাজেই বরং বেশি করে সাহায্য করেছে।

     

     

    তবে জীবতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ ছাড়া আর-একটি দৃষ্টিকোণও আছে। নিছক সংখ্যাগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বলতেই হবে যে পিঁপড়েরা মানুষের থেকে বহু শতগুণ বেশি সফল। অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আমি দেখেছি সেখানে কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই, অথচ অসংখ্য উইপোকা আছে। কিন্তু এ থেকে নিশ্চয়ই বলা চলে না যে, উইপোকারা আমাদের থেকে উন্নততর প্রাণী। বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সংখ্যায় সর্বাধিক হয়ে ওঠার জন্য যে সব বৈশিষ্ট্য মানুষকে সাহায্য করেছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে তার মূল্যবোধ। একান্তভাবেই মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এই মুল্যবোধকে সামগ্রিকভাবে সংস্কৃতিগত মূল্যবোধ হিসেবে অভিহিত করা যায়। এই মূল্যবোধের মধ্যে সামাজিক বৈশিষ্ট্যের তুলনায় ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যই বেশি করে ফুটে ওঠে এবং এমন সব বিষয় এর আওতায় থাকে যেগুলো সামাজিক ঐক্য বা যুদ্ধজয়ের ক্ষমতা থেকে একেবারেই আলাদা।

    বিভিন্ন পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী এবং প্রায়শই পরস্পর-বৈরী জাতিতে মানবজাতির বিভাজন জাতিগত মূল্যবিচারের ওপর রীতিমতো কুপ্রভাব বিস্তার করেছে, কে শ্রদ্ধার যোগ্য আর কে নয় তার এক বিকৃত মাপকাঠি তৈরি হয়েছিল। ব্রিটেনে আমরা সব থেকে চমৎকার স্মৃতিস্তম্ভ বানিয়েছি নেলসন আর ওয়েলিংটনের স্মরণে, যাদের আমরা শ্রদ্ধা করি বিদেশিদের হত্যা করার ব্যাপারে তাঁদের অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এই ধরনের চতুরতার জন্য ব্রিটেনের যে সব মানুষদের আমরা শ্রদ্ধা করি, বিদেশিরা কিন্তু তাঁদেরকে আদৌ শ্রদ্ধা করে না। ব্রিটেনের বাসিন্দা নন এমন কোন শিক্ষিত ব্যক্তিকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে তাঁর মতে ব্রিটেনের মহত্তম ব্যক্তি কারা, তাহলে তিনি নেলসন আর ওয়েলিংটনের নাম না করে শেকসপিয়ার, নিউটন ও ডারউইনের নামই উল্লেখ করবেন। সাধারণভাবে মানবজাতির স্বার্থে বিদেশিদের হত্যা করাটা কখনও কখনও হয়তো প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল, কিন্তু সে-সব ক্ষেত্রেও যেখানে শুধু রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলাটুকু বজায় রাখলেই কাজ চলে যেত, সেখানে তা সেটুকুতে আবদ্ধ না থেকে জাতীয় গৌরব এবং হিংস্রতার প্রদর্শনীতে পর্যবসিত হয়েছিল। নরহত্যায় নৈপুণ্যের জন্য মানবজাতি কোনো সম্মানের দাবিদার হতে পারে না। পৃথিবীর সম্ভাব্য শেষতম মানুষটি যখন পাতালের বিচারকের সম্মুখীন হবে (ইজিপ্সীয় মৃতের পুস্তক- এ যেমনটা দেখানো হয়েছে) এবং জানাবে যে তার প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার, তখন সেই বিলুপ্তির কি কারণ দেখাবে সে? সে যদি বলতে পারত মানুষের জীবন সাধারণভাবে সুখময়ই ছিল, তাহলে নিশ্চয়ই ভালো হতো। কিন্তু কৃষির উদ্ভাবন, সামাজিক অসাম্য সৃষ্টি এবং সংগঠিত যুদ্ধবিগ্রহ শুরু হওয়ার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মানজাতির অধিকাংশই যে জীবন কাটিয়ে এসেছে সে জীবনের নিত্যসঙ্গী ছিল নিদারুণ কষ্ট, অত্যধিক পরিশ্রম এবং মাঝেমাঝেই মর্মান্তিক বিপর্যয়। ভবিষ্যতের চিত্রটি হয়তো ঠিক এ রকম থাকবে না, কারণ অতি সামান্য প্রজ্ঞাটুকুও কখন দেখা দেবে, কে বলতে পারে? আর যতদিন তা না আসে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের শেষতম মানুষটি ওসাইরিসের সামনে মানবজাতির সুখশান্তির বৃত্তান্ত উপস্থাপিত করতে পারবে না।

     

     

    মানবজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখার স্বপক্ষে আমাকে যদি ওসাইরিসের সামনে উকিল হিসেবে দাঁড় করানো হতো, তাহলে আমি বলতাম : হে ন্যায়পরায়ণ এবং অপ্রতিরোধ্য বিচারক, আমার প্রজাতির অভিযুক্ত হওয়াই উচিত, বিশেষত আজকের দিনে তা আরও বেশি করে সত্য। কিন্তু আমরা সবাই দোষী নই। আমাদের পরিপার্শ্ব কয়েকজনকে বেশি শক্তিমান করে তুলেছে, অন্যরা ততটা শক্তিমান হতে পারেনি। মনে রাখবেন, সুপ্রাচীন অজ্ঞতার বদ্ধজলা এবং অস্তিত্বরক্ষার বহুযুগব্যাপী সংগ্রামের আবর্ত থেকে মাত্র কিছুদিন হলো উঠে এসেছি আমরা। আজ আমারেদ যেটুকু জ্ঞানের সঞ্চয়, তা আবিষ্কৃত হয়েছে বিগত বারো প্রজন্মের সময়কালে। প্রাকৃতিকে জয় করার নতুন শক্তিতে নেশাগ্রস্ত হয়ে আমাদের মধ্যে অনেকে অন্য মানুষদের ওপরে কর্তৃত্ব অর্জনের ভ্রান্তপথে পা বাড়িয়েছে। এ এক আলেয়ার আলো। এ আলো আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সেই জলাভূমির দিকে, যেখান থেকে আংশিকভাবে মুক্তি পেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এই স্বেচ্ছাচারী মূর্খতা আমাদের সবটুকু শক্তিকে এখনও শেষ করে দিতে পারেনি। যে পৃথিবীতে আমরা বাস করি তার সম্বন্ধে, নীহারিকা ও পরমাণু সম্বন্ধে, বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সম্বন্ধে আমরা যা কিছু জেনেছি, তা আমাদের এই বর্তমান যুগের আগে ভাবাও সম্ভব ছিল না। উপযুক্ত প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের হাতে না পড়লে জ্ঞান কোনো কাজে লাগে না-এ কথা হয়তো আপনি বলতে পারেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সে রকম প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরাও আছেন, তবে তাঁরা আছেন বিক্ষিপ্তভাবে, ঘটনাচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। মনীষী ও ভবিষ্যদ্রষ্টারা বারবার বলেছেন নিজেদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদে জড়িয়ে পড়া মূর্খতারই নামান্তর। তাঁদের কথা অনুযায়ী চললে আবার আমরা নতুন করে সুখশান্তি গড়ে তুলতে পারি।

     

     

    কোন কোন জিনিসকে এড়িয়ে চলা দরকার, সেটুকু দেখিয়েই ক্ষান্ত হননি মনীষীরা। প্রদীপ্ত সৌন্দর্য আর আশ্চর্য দ্যুতিময় এক পৃথিবী গড়ে তোলার শক্তিও যে মানুষের আছে, তাও দেখিয়েছেন তারা। কবি, সুরস্রষ্টা, চিত্রকরদের কথা ভাবুন। তাঁদের অন্তর্দৃষ্টি মহিমাময় ঔজ্বল্যে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছে স্বপ্ন রাজ্যের ছবি। স্বপ্নের সেইসব দেশ আমাদের হতেই পারে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও হয়ে উঠতে পারে গীতিকাব্যের মতো সুন্দর। নারী-পুরুষের ভালোবাসায় কখনও কখনও এই ধরনের একটা সম্ভাবনার ছবি অনেকের কাছেই মূর্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু কোনো সঙ্কীর্ণ সীমার মধ্যে এ সম্ভাবনাও আবদ্ধ থাকার কোনো কারণ নেই। কোরাল সিম্ফনির মতো এ সম্ভাবনাও ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা বিশ্ব জুড়ে। এইসব বিষয় মানুষের সাধ্যের সীমার মধ্যে আছে, সময় পেলে ভবিষ্যতে এগুলোকে হয়তো বাস্তবায়িতও করা যাবে। হে প্রভু ওসাইরিস, এইসব কারণে আমরা আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি আমাদের দণ্ডাদেশ মুলতবি রাখুন আপনি, আদিম মূর্খতা থেকে আলো আর ভালোবাসা আর সৌন্দর্য্যের এক পৃথিবীতে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ দিন আমাদের।

    আমাদের এই প্রার্থনা হয়তো মঞ্জুর হবে। আর শুধুমাত্র এইসব সম্ভাবনা আছে বলেই আমাদের প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখা যায়। একমাত্র মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীই তো এইসব সম্ভাবনা অধিকারী নয়।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশক্তি – বার্ট্রান্ড রাসেল
    Next Article দর্শনের সমস্যাবলি – বার্ট্রান্ড রাসেল

    Related Articles

    বার্ট্রান্ড রাসেল

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    কর্তৃত্ব ও ব্যক্তিসত্তা – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    ধর্ম ও বিজ্ঞান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    দর্শনের সমস্যাবলি – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Our Picks

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }