Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1047 Mins Read0

    মানুষের ঘরবাড়ি – ৬

    ছয়

    মাকে ফিরে এসে বললাম, বাবা বেথুয়াডহরি গেছেন।

    —কার কাছে?

    —বলে যাননি কিছু।

    –কবে ফিরবে, কিছু বলেনি?

    –না।

    মা’র মুখটা কেমন দুশ্চিন্তায় ভরে গেল। এই আবাস তৈরির পর, না অন্য কোনো কারণে, ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না, এবারে বাবা চলে যাওয়ায় মাকে খুবই অসহায় দেখাচ্ছিল। বাবা বাড়ি না থাকায় এবং কবে ফিরবেন বুঝতে না পারায় একটা ভয়ঙ্কর অস্বস্তির ভিতর যেন পড়ে গেছেন। মনে হল, সবাই কাছে আছে, কেবল একটা মানুষ ঘুরছেন, কি খান কোথায় থাকেন এ-সব ভেবেই হয়ত মা’র মুখটা এত করুণ দেখাচ্ছে। সুখে হোক দুঃখে হোক মানুষটা এই নতুন আবাসে একটা বড় গাছের মতো। এটাই বোধ হয় মা’র ভরসা! আগের মতো আর উদাসীন থাকতে পারছে না। মাটিতে শেকড় ঢুকে যেতে থাকলে বুঝি তাই হয়।

    বাবা বাড়ি না থাকলে পিলু সংসারের অভিভাবক গোছের। সে একদিন সকালে উঠে বলল, এই দাদা ওঠ। যাবি না?

    মনে পড়ে গেল রাতে পুলি বলে রেখেছে, খুব সকালে উঠতে হবে। ঝাঁকায় যাবে পেঁপে, কিছু মূলাশাক। আপাতত এই বিক্রি করে যা-কিছু উপার্জন। সকালেই উঠে পড়া গেল। সূর্য ওঠেনি। আকাশে বাতাসে বনভূমি থেকে শেষ সবুজ গন্ধ ছড়াচ্ছে। রোদ উঠলেই গন্ধটা কেমন মরে যায়। গাছপালা পাখ-পাখালি তখন জেগে যায় বলে গন্ধটা বুঝি আর থাকে না।

    জমিতে সুন্দর সতেজ সব মুলাশাক। হেমন্তের শেষাশেষি বলে এবং অসময়ের প্রায় বলা যায় এই সব্জি দামে বিক্রি হবার খুব সম্ভাবনা। পিলু রাতে বলেছিল, মা, আমরা কতদিন আবার পেট ভরে ভাত খাইনি। পিলুর যা কাজকর্ম, দেখে মনে হচ্ছে সে আজ পেট ভরে ভাত খাবে। এটা যে সংসারে কত দরকারী কাজ পিলুর মুখ না দেখলে বোঝা যাবে না। সকাল থেকেই সে একজন বিষয়ী মানুষের মতো গম্ভীর।

    শহরে রওনা হবার সময় মা বলল, দাঁড়া। একটা লাল পেড়ে শাড়ি ট্রাঙ্ক থেকে বের করে বলল, নিয়ে যা। কোথাও বিক্রি করে টাকা নিস।

    পিলু বলল, তুমি এটা কেন দিচ্ছ মা। বাবা জানতে পারলে কত কষ্ট পাবেন।

    মা বলল, জানবে না।

    মাকেও সকালে খুব খুশী খুশী দেখাচ্ছিল। তবু কেন যে গভীরে তাকালে বোঝা যায় আশ্চর্য এক বিষণ্ণতা আছে মায়ের চোখে। বাবা বাড়ি না থাকাতেই বোধ হয় এটা হয়েছে। আমরা সবাই পেট ভরে খাব, বাবা বাড়ি নেই, বাবা খাবেন না, বাবার ছেলেমেয়েরা পেট ভরে খাচ্ছে, তিনি জানতেও পারবেন না। বোধহয় দুঃখটা এ-জন্যই মায়ের এত বেশি।

    এবং যেভাবে তাড়া লাগিয়েছে পিলু, যেন বেশ আমরা আগেকার মতো মানুষ। বাজারহাট, মেলা, টাকচাদা মাছের ঝোল, ঘোড় দৌড় কত কিছুতে ভরে ছিল আমাদের জীবনটা। সকাল থেকেই পিলুর হাঁক ডাক—নিপুণভাবে সবকিছু সাজিয়ে নিয়েছে ধামায়। আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল—শহর দু- ক্রোশের ওপর। শহর যেখানে আরম্ভ হয়েছে, সেখানে এখনও রাতে হ্যাজাক জ্বলে। আলো আসেনি। এবং চায়ের দোকান, মোটর গ্যারেজ, কিছু পাইকার মানুষ বসে থাকে— তাদের কাছে কম দামে সব বিক্রি করে দিতে হবে। ঝাঁকায় নিয়ে যাওয়া মুটে মানুষের মতো নিজেকে ভাবতে খুব খারাপ লাগছিল।

    পিলু বলল, কিরে দাদা, আয়। তুলে দে।

    পিলু নিজের ঝাঁকাটায় প্রায় বেশিটা নিয়েছে। আর পিলু বুঝি বুঝতে পেরেছিল, মাথায় এভাবে মুটে মানুষের মতো বয়ে নিয়ে যাওয়া তার দাদাটা পছন্দ করে না। সে তাড়াতাড়ি বলল, মা, একটা ব্যাগ দাও না? পেঁপে কটা দাদা ব্যাগে নিক, যদিও খুব স্বার্থপরের মতো দেখাচ্ছিল তবু পিলুর ওপর সামান্য সদাশয় হওয়া গেল। পিলুকে আগে আগে যেতে বললাম। পেছনে, বেশ দূরে, দূরে আমি। পিলুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক আছে রাস্তার মানুষেরা, অথবা কোনো লোকালয়ে ঢুকে গেলে বুঝতেই পারবে না কেউ। সবচেয়ে বেশি সেই দোতলা বাড়ি, টবে, গোলাপফুলের গাছ, বালিকার ইজিচেয়ারে শুয়ে বই পড়া জায়গাটায় দূরত্ব আমাদের আরও বেড়ে গেল। পিলু আমার মান-সম্ভ্রম সম্পর্কে বেশ সচেতন। সে সারা রাস্তায় এমন কি সেই সুন্দর মতো সোনালী ফ্রক গায়ে মেয়েটার কাছে বুঝতেও দিল না আমি তার দাদা হই। পিলুর ওপর কৃতজ্ঞতায় আমার মন ভরে গেল।

    আর পিলু প্রায় রীতিমতো দাম দর করে, কী যে বলছেন, এ দামে দেওয়া যায়। কি পেঁপে দেখেছেন, এক একটা কত বড় দেখেছেন। ভেতরটা কত পুষ্ট, আর যা মিষ্টি হবে সে না বলাই ভাল। একবার খেলে সারাজীবন মনে রাখতে হবে। প্রায় একজন দোকানীর মতো দরদস্তুর করে সবটা বিক্রি করে দিল। তারপর নতুন লাল পেড়ে শাড়িটা বিক্রি করা। সেও ছোট্ট একটা কাপড়ের দোকানে ঢুকে বেশ দামেই বিক্রি করা গেল। এবং গুনে দেখা গেল সবসুদ্ধ বার টাকার কাছাকাছি। এতগুলো টাকা একসঙ্গে আমরা অনেকদিন দেখিনি। প্রায় যেন আমরা জাদুকরের মতো বলশালী মানুষ। আমাদের হাতের মুঠোয় পৃথিবীর যাবতীয় প্রাচুর্য। এত টাকায় কি হবে প্রথমে স্থিরই করা গেল না। কি কিনব, কি না কিনব বাজারসুদ্ধু সব তুলে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আমাদের। মাছের বাজারে ঢুকে খুব বড়লোকি চালে কথাবার্তা বলতে থাকল পিলু। মাছ তো তোমার ভাল না। এ-মাছ মানুষে খায়! পচে গেছে। দেখি ওটা। আরে দাদা, দেখ, চাপিলা মাছ—কিনব। চাপিলা মাছ এ-দেশে এসে আমাদের কখনও খাওয়া হয়নি। পিলুর লোভ বেড়ে গেল। বেশ দামেই সে কিনে ফেলল পোয়াটাক মাছ। পুরো আট আনা পয়সা তিনবার গুনে পিলু লোকটার হাতে দেবার আগে ফের আমাকে গুনতে দিল। তারপরও পিলুর সংশয় গেল না। হিসাবে সে খুব পাকা।

    তারপর শহর ছাড়িয়ে আটাকল ফেলে এবং সেই ভুতুড়ে সাঁকোটার কাছে আসতেই পিলু কেমন দুঃখী গলায় বলল, পেট ভরে ভাত খাব। বাবা দেখতে পাবেন না। খুব খারাপ লাগছে।

    সাঁকোটার নিচে নেমে আমি বললাম, দুদিন পরে হলে কি হত। বাবাও থাকতেন। সবাই মিলে খেতাম। পিলু কিছু বলল না। সে ঝাঁকা মাথায় হাঁটছে। ডাল, আলু, মসলাপাতি, আনাজের মধ্যে বড় বড় বেগুন, যেমন দেশবাড়িতে আমাদের হাসিমের মাথায় বাবা হাট ফেরত সওদা করে ফিরতেন, মাছের থলে হাতে আমরাও প্রায় সে-ভাবে ফিরছি। গাছে গাছে রোদ, মানুষজন রাস্তায়, গরুর গাড়ি পাট বোঝাই, ছোট গঞ্জ মতো জায়গা পার হয়ে সোজা মিলের পথ ধরে হাঁটছি। আমাদের বাড়ি ফেরার আর একটা রাস্তা আছে পিলুর সঙ্গে ফেরার সময় টের পেলাম।

    পিলু একটা রাস্তা দেখিয়ে বলল, এদিকে গেলে বিষ্ণুপুরের কালীবাড়ি। মাকে নিয়ে একবার আসব। ওদিকে গেলে রাজবাড়ি। তোকে নিয়ে একদিন যাব। সারা রাস্তায় পিলু সব চিনিয়ে নিয়ে গেল। যাবার সময় শহরটার দক্ষিণের রাস্তায় গেছি, ফেরার সময় উত্তরের রাস্তায়। আর সবই দেখছি পিলুর নখদর্পণে। বড় হলে পিলুর গাড়ি ঘোড়া না হয়ে যাবে না। কত কম বয়সে সে কত বেশি অভিজ্ঞ।

    আমার হাতে চালের ব্যাগ। এবং যেহেতু বাবা বাড়ি নেই, এ-দিয়ে আমাদের কতদিন যে চালিয়ে নিতে হবে। চাল সামান্য, কিছু বন আলুর কুচি, একেবারে মা নিপুণভাবে কেটে নেয়। আলুর কুচি- সেদ্ধ সরু চালের ভাতের মতো মনে হয়—এ-ভাবে ভাত আর আলু কুচি ভাতের মতো আমাদের পাতে— কোনোরকমে জীবনধারণ করা, পেট ভরা নিয়ে কথা—যে কোনো ভাবে, যে কোনো উপায়ে। আজ ভাতে আলুর কুচি থাকবে না, সত্যিকারের ভাত মাছ খাব ভাবতেই মনটা পুলকে ভরে গেল। পিলু বোধহয় সেই আনন্দেই জোরে হাঁটছে। কতক্ষণে মাকে তার এই সওদা নিয়ে দেখাবে! মা হেসে ফেললেই পিলু দুটো লাফ দেবে—আরে ব্বাস, মাগো মা, একদিন তোমায় আমি কালীবাড়ি নিয়ে যাব। ওখানে মানত করলে সব হয়। আমাদের সব হবে না মা! আমরা বেশিদিন আর গরীব থাকব না।

    শেষ হেমন্তের রোদ উঠতেও সময় লাগে না। চলে যেতেও সময় লাগে না। দুপুর হয়ে গেল ফিরতে। মা, মায়া রাস্তায় ছুটে এসেছে। যেন মা আমরা কতক্ষণে ফিরব, সেই আশায় পথ চেয়ে বসেছিল। মাছ দেখে বলল, খুব তাজা মাছ। আনাজপাতি মা কত যত্নের সঙ্গে ঘরে তুলে নিলেন! রাতে আজ পেট ভরে আহার, সত্যিকারের মাছ ভাত। মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় সুখ, বড় আরাম আর কি আছে।

    রাতে বাড়িতে ভোজ। চাপিলা মাছের ঝোল সঙ্গে ধনেপাতা। ভাবা যায় না। যেন বাড়িটাতে রাতে উৎসব হবে কিছু। মা পুকুর থেকে চানটান করে এল। পিলু কাঠ সংগ্রহ করছে। রাতে মা’র রান্না করতে যেন এতটুকু কষ্ট না হয়। মায়া খুব বিনয়ী হয়ে গেছে। যত কাজ কাম, যেমন ঘর ঝাঁট দেওয়া, উঠোন ঝাঁট দেওয়া, সব এক হাতে করে ফেলছে। বাসন-কোসন ধুয়ে রাখছে। মসলা বেটে দেবে মাকে বায়না ধরলে মা বলল, পারবে না। ওটা আমি করে নেব। কেউ রাগ করছে না আজ। বচসা করছে না। পুনুকে মায়া আজ আর কোল থেকে নামাচ্ছেই না। গাছ, পাতা, পাখি, কীট- পতঙ্গ যেখানে যা আছে পুনুকে সব দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। রাতে মাছ ভাত, বেগুন ভাজা, ভাজা মুগের ডাল। মাকে পিলু গাছ থেকে একটা ছোট কচি লাউ পর্যন্ত কেটে দিল। সব দেখে বোঝা যায় দিন দিন যথার্থই বনভূমিটা মানুষের ঘরবাড়ি হয়ে উঠেছে। সুতরাং বাড়িটাতে সবাই আমরা উৎসাহী মানুষের মতো যেখানে যা কিছু কাজ সেরে ফেলছি। পিলু একটা কোদাল নিয়ে বের হয়ে গেল। সন্ধ্যার আগে আগে সে ফিরে এল। বনের মধ্যে সারা বিকেল সে কি করেছে আমি জানি। সে বড় একটা আলুর লতা ঠিক আবিষ্কার করে ফেলেছে। একটা অতিকায় বনআলু কাল পরশুর মধ্যে বাড়িতে চলে আসবে বোঝা গেল।

    পিলু ফিরে এলে মা বলল, কিরে পেলি?

    পিলু বারান্দায় কোদাল রেখে ঠিক বাবার মতো কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল। চোখ মুখ উত্তেজনায় খুব অধীর। সে শুধু বলল, কত বড় মা। সে দু হাত ছড়িয়ে দেখাল।

    মা’র বিশ্বাস হল না। পিলু বলল, দু হাত মাটি তুলেও ওর শেষ নাগাল পেলাম না মা। অর্থাৎ প্রায় মণখানেক ওজন না হয়ে যাবে না। চারপাশে মাটির অভ্যন্তরে আলুর শাখা-প্রশাখা ঢুকে গেছে। সে সবটাই তুলে আনবে বলে, খুব বড় মতো গর্ত করে রেখে এসেছে। কাল বাকি যা আছে গর্ত করে ফেললেই সেই প্রকাণ্ড হাতির দাঁতের মতো, কিংবা তার চেয়েও বড় একটা বনআলু। বাবা ফিরে না আসা পর্যন্ত বনআলুটা গোলায় মজুত শস্যের মতো কিছুদিন পিলুকে অহংকারী করে রাখবে।

    সূর্য অস্ত যাবার মুখে, মা আমাদের সবাইকে হাত পা ধুয়ে আসতে বলল কালীর পুকুর থেকে লণ্ঠন জ্বেলে পড়তে বসতে বলল। দল বেঁধে আমি পিলু মায়া ঘড়া নিয়ে গেলাম সেই মাঠ এবং জঙ্গল পার হয়ে কালীর পুকুরে। হাত মুখ ধোওয়া, সঙ্গে রান্নার জল। পিলু ব্যারাকের টিউকল থেকে খবার জল নিয়ে এল। ফিরে আসার সময় দেখতে পেলাম, দূরে বনের গভীরে বাড়িটাতে পিদিম জ্বলছে। তুলসী গাছের নীচে মা রোজ এই পিদিম দিচ্ছে কদিন থেকে। প্রণিপাত করছে ধরণীকে। জীবন ধারণের সব উপায় মানুষের যেমন থাকা দরকার, তেমনি শুভাশুভর জন্য ঈশ্বর বড় প্রয়োজনীয় জীব। মা তাঁর সব প্রার্থনা এই সময় সেরে নেয়। বনের গভীরে অন্ধকার। মা বারান্দায় লম্ফ জ্বালিয়ে রেখেছে। এখন আর শুধু বাড়িটা নয়, তার চারপাশে যা কিছু আছে, এমনকি আকাশ নক্ষত্র এবং বনভূমি সবটা মিলে আমাদের আবাস। আকাশ থেকে কেউ যদি ছোট্ট একটা নক্ষত্রও তুলে নেয়, টের পাব যেন আমাদের কেউ কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে।

    রান্নাঘরে মা রান্না করছে এক হাতে। পুনু আমাদের পাশে বসে ঢুলছিল ঘুমে। পিলু পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়ে ফেলল। স্লেট এগিয়ে দিয়ে সে পর পর তিনটে মিশ্র যোগ অঙ্ক করে, হাতের লেখা লিখতে বসে গেল। আমি ডেফোডিলস কবিতাটা মুখস্থ করতে থাকলাম, টেন থাউজেণ্ড আই স এট্‌ এ গ্ল্যান্স…… তারপর পড়লাম—হোম দি ব্রট ওয়ারিয়র ডেড। এবং এই কবিতা পড়তে পড়তে কখন জন কিটসের টু অটাম পড়ছি খেয়ালই নেই—জোরে জোরে, যেন এই আবাস এবং বনভূমি পার হয়ে আমার কণ্ঠস্বর দূরে কোনো এক অলৌকিক ভুবনে ছড়িয়ে পড়ছে। অ্যাণ্ড গেদারিং সোয়ালোজ টুইটার ইন দি স্কাইজ। আমার মা তখন ভাজা মুগের ডালে সম্বার দিচ্ছে। আশ্চর্য সুঘ্রাণ চারপাশে- আমরা কত সহজে কত বেশি মনোযোগী পড়ুয়া হয়ে গেলাম।

    মায়া পড়ছিল, আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে। পড়তে পড়তে ঘুমে ঢুলছিল মায়া। পিলু বলল, এই মায়া, ঘুমোচ্ছিস কেন রে?

    মায়া বলল, আমার ঘুম পাচ্ছে দাদা।

    পিলু খুব গম্ভীর গলায় বলল, চোখে জল দিয়ে আয়। ঘুমিয়ে পড়লে খেতে পাবে না। আমরা সব খেয়ে নেব।

    সঙ্গে সঙ্গে মায়া দৌড়ে উঠে গেল। ফিরে এসে পড়ল ফের—আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে…। সে কিছুতেই আর ঘুমোবে না ঠিক করেছে।

    ক্রমে অন্ধকার আরও ঘনিয়ে এল। মাথার ওপরে আকাশ, কিছু নক্ষত্র! বনভূমিতে পাতা পড়ার শব্দ পাচ্ছিলাম। কত সব কীট-পতঙ্গের আওয়াজ এবং দূরে শেয়ালের হাঁক। বাবা বাড়ি না থাকলে, বড় ভয় লাগে। যেন বনটা ধীর পায়ে খুব কাছে এগিয়ে আসে। সহজেই আমাদের বাড়িটাকে গ্রাস করে নেয়। চারপাশে গাছপালা অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই তখন চোখে পড়ে না।

    ভোজ হবে বলে, পিলু কলাপাতা কেটে রেখেছিল। আমরা অপেক্ষা করছিলাম, কখন মা বলবে, তোমরা খেতে এস। পিলু পড়া ফেলে মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে দেখছে—আর কত দেরি। এত বেশি সময় ধরে তার পক্ষে মনোযোগী পড়ুয়া হয়ে থাকা কঠিন। মা কেবল বলছিল আর একটু পড় বাবা। এইতো হয়ে গেল বলে। সে ফের এসে কিম্ভুতকিমাকার গলায় তীব্র আওয়াজে চেঁচিয়ে ফের পড়া শুরু করে দিল। আমি বললাম, এই পিলু, এত জোরে পড়ছিস কেন রে। সে কর্ণপাতই করছে না। মাকে বললাম, দ্যাখো মা, পিলু ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছে। পড়তে দিচ্ছে না।

    মা বুঝি বুঝতে পেরেছিল, পিলু আর ধৈর্য ধরতে পারছে না। রাগে দুঃখে সে এখন পড়ার নামে চেঁচাচ্ছে। হেসে বলল, আসন পেতে তোরা বোস। দিচ্ছি। এবং সঙ্গে সঙ্গে পিলু বইটা মাথার ওপরে ছুড়ে ফের কপ করে ধরে বলল, ওঠ ওঠ। বলে প্রায় টান মেরে মাদুর-ফাদুর তুলে আসন পেতে ফেলল। গ্লাসে গ্লাসে জল। কলাপাতা ধুয়ে নুন রাখল পাশে। মা আমাদের ভাত বেড়ে দিচ্ছে। পিলুকে যত দিচ্ছে তত খেয়ে নিচ্ছে। আমার পাতেও ভাত পড়ে থাকছে না। এবং পিলুর খেতে খেতে সহসা মনে পড়ে গেল, সে সবই খেয়ে ফেলছে না তো! সে বলল, মা, তোমার জন্য কিন্তু রেখ।

    —আছে। তোরা খা।

    —কৈ দেখি!

    মা হাঁড়িটা তুলে এনে দেখাল।

    —দি আর দুটো।

    —তোমার তবে থাকবে কি!

    —হয়ে যাবে। নে না।

    আমি বললাম, পিলু তোর পেট ভরেনি?

    সে তাকিয়ে থাকল। গলা অবধি খেয়ে এখন বোধহয় কানে-টানেও কম শুনছে।

    —তুই উঠে দাঁড়া তো দেখি।

    পিলু উঠে দাঁড়াল।

    —জামাটা তোল। পেটটা দেখি।

    সে চাদর সামলে কোনোরকমে জামাটা তুলে পেটটা ভাসিয়ে দিল।

    —পিলু করেছিস কি। তোর পেট ফাটল বলে।

    পিলু আমার কথা শুনে ঘাবড়ে গেল। তবু সে দোনোমোনো গলায় বলল, যা!

    —নুয়ে দেখ, পেটটা কি হয়েছে তোর!

    সে নুতে গিয়ে কেমন হাঁসফাঁস করতে থাকল। বলল, দাদারে, নুতে পারছি না। মাকে বললাম, আর তুমি দিও না। দেখেছ পেটের রগগুলো পর্যন্ত ভেসে উঠেছে। মা এবার লম্ফ তুলে পিলুর পেটের কাছে উঁকি দিয়ে সত্যি দেখল। বলল, কই। তুই যে কি না! ও আরো দুটো খেতে পারবে। বলে মা পিলুর পেটে দুটো টোকা মারল।

    —ঠিক আছে, থাক। পেট ফেটে গেলে আমি কিছু জানি না।

    পিলু সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেল। সে বলল, না মা, আর লাগবে না। সে ফট করে প্যান্টের গিট খুলে কিছুটা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। তারপর হাত চাটতে বসে গেল।

    মায়ার খাওয়া হয়ে গেছে। আমারও। মায়া শেষ পর্যন্ত মাছটা আস্তই রেখে দিয়েছে পাতে। সবার খাওয়া হলে, সে তারিয়ে তারিয়ে মাছটা খাবে। এটা মায়ার চিরদিনের অভ্যাস। ভাল সুস্বাদু খাবার দিলেই সে হাতে রেখে দেবে। মাঝে মাঝে খাবে, চাটবে। আমাদের শেষ না হলে সে শেষ করবে না।

    তখনই মনে হল রাস্তায় অন্ধকারে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। অথবা এগিয়ে আসছে মতো। বাবা বাড়ি না থাকলে, সাঁঝ লাগলেই আমাদের গা ছমছম করতে থাকে। যত রাত হয় তত ভয়টা বাড়ে। গভীর রাতে কখনও ঘুম ভেঙে গেলে গুটিসুটি শুয়ে থাকি পিলুকে জড়িয়ে। রাতে একা আমরা ঘর থেকে কেউ বের হতে সাহস পাই না। মা পাশে না থাকলে ভীষণ ভয় করে—তখন এমন একটা ছায়া- ছায়া মানুষের অবয়ব অন্ধকারে এগিয়ে আসতেই কেমন আমরা সবাই গুটিয়ে গেলাম। ছায়াটা উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছে। বোধহয় চিৎকার করে উঠতাম সবাই—তখনই লম্ফের আলোতে দেখলাম—সেই হাবিলদার লোকটা। লম্বা জুলফি, গোঁফ ঝুলে পড়েছে। দশাসই একটা দৈত্যের মতো। উঠোনে দাঁড়িয়ে বলছে, ঠাকুরমশাই আছে?

    মা আমার কেমন ঠাণ্ডা গলায় বলল, পিলু বলে দে, তিনি বাড়ি নেই?

    —কোথা গেছেন?

    অন্ধকারেও লোকটার চোখ জ্বলছিল। লম্বা মোটা গোঁফ, নাক থ্যাবড়া অতিকায় এক পাষণ্ডের মতো চেহারা। হাবিলদার লোকটা ব্যারাকে থাকে। এত রাতে বাবার সঙ্গে এমন কি কাজ বোঝা গেল না।

    —কখন আসবে?

    মা আবার ভেতর থেকে বলল, পিলু বলে দে, কবে ফিরবেন কিছু বলে যাননি। পিলু হঠাৎ মুখিয়ে উঠোনে নেমে বলল, কেন, কি দরকার?

    পিলুর সাহসে আমিও সাহসী হয়ে উঠলাম। এতক্ষণ বারান্দা থেকে কিছুতেই উঠোনে নামতে ভরসা পাচ্ছিলাম না। পিলুর পিছু পিছু এগিয়ে গিয়ে বললাম, বাবা ফিরলে কিছু বলতে হবে?

    —না কিছু বলতে হবে না। শেষে বলল, তোমার পিতাঠাকুর কেমন লোক আছে!

    পিলু বলল, ভাল লোক আছে।

    লোকটার এত কি দায় বোঝা গেল না। পিতাঠাকুর ভাল কি মন্দ আছে আমরা বুঝব। আর লোকটা তেমনি দাঁড়িয়ে আছে। পিতাঠাকুর বাড়ি নেই, আর কি কাজ কার সঙ্গে লোকটার থাকতে পারে। মা ভেতর থেকে কিছুতেই বের হচ্ছে না। এত ভয় মার আমি কখনো দেখিনি। এমন এক বন-জঙ্গলে কেউ খোঁজখবর নিতে এলে ভাল লাগারই কথা।

    পিলু বলল, বাবা কাজে বেথুয়াডহরি গেছেন।

    মা খুব সন্তর্পণে বলল, বলে দে, তোর বাবা এলে যেন আসেন।

    লোকটা তখন খুব আপনজনের মতো বলল, ইতো ঠিক নেহি আছে। ইসান বন-জঙ্গলে রাখকে চলা গিয়া!

    বাবার নামে কেউ খারাপ কিছু বললে, পিলুর মাথা গরম হয়ে যায়। সে কেমন চোয়াড়ে গলায় বলল, কাজ থাকলে যাবেন না। বাবা এলে কিছু বলতে হবে?

    —কুছ বুলতে হবে না। একবার কি ভি মোনে হল, যাই ঠাকুরমশাইর সাথ দেখা করি। লোকটা যেন কি খুঁজছে। কথা বলছে আর ধূর্ত চোখে ঘরের দিকে তাকাচ্ছে। চারপাশের এই নির্জনতা, গভীর অন্ধকার আর জোনাকি জ্বলছিল বলে লোকটার মতলব খুব ভাল ঠেকছে না। মা ঘরেই বসে আছে। মায়া এঁটো বাসনকোসন খুব দ্রুত ঘরে তুলে রাখছে।

    এই লোকটা আরও দুবার আমাদের বাড়ি এসেছিল। বাবা বাড়ি না থাকলেই চলে আসে। কি করে যে টের পায়, বাবা বাড়ি নেই। অন্য দুবার দিনের বেলায় এসেছিল বলে, আমাদের তত ভয় ছিল না। মাও সহজভাবে দুটো একটা কথা বলেছে। কিন্তু আজ মাও কেমন দুর্ব্যবহার করছে লোকটার সঙ্গে। বলছে, পিলু বলে দে, তোর বাবা এলে খবর দিবি।

    —বাবা এলে জানাব। তখন আসবেন।

    তবু লোকটার যাবার নাম নেই। কিছু করলে শত চিৎকারে কেউ কিছু টের পাবে না। অনায়াসে আমাদের সুন্দর ঘরবাড়ি লোকটা লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। এই প্রথম একজন মানুষ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকলে কি ভীষণ এবং ভয়াবহ টের পেলাম। লোকটা অথচ এমন কিছু করছে না, বরং লোকটার যেন দরদের শেষ নেই—তবু মার ভয়ার্ত মুখ দেখে আমরা ভারি কাবু হয়ে যাচ্ছি। এমনিতে মা ভীষণ সাহসী। কোনো ভূত-প্রেত, সাপখোপে মা এতটুকু ভয় পায় না। এ-সময়ে আমরা কি করব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।

    মা তখন কেমন শক্ত গলায় ঘর থেকে বলল, আপনি যান। উনি বাড়ি নেই। এলে বলব, আপনি এসেছিলেন।

    লোকটা তারপর আর দাঁড়াল না। চলে গেল। কেমন রাহুগ্রাস থেকে সমস্ত পরিবারটা যেন রক্ষা পেয়েছে। বাইরে থাকা আর নিরাপদ নয় ভেবে মা আমাদের সবাইকে ঘরে ঢুকে যেতে বলল। পিলু গেল না। সে উঠোনে দাঁড়িয়ে যতক্ষণ দেখা যায় লোকটাকে দেখল। বনজঙ্গলে কীট-পতঙ্গের আওয়াজ, কিছু শেয়ালের হাঁক এবং ক্রমে দুরাগত কোনো নিথর শব্দ বনভূমির অভ্যন্তরে তোলপাড় করে বেড়াচ্ছে যেন। রাতে আর মা বের হতে সাহস পেল না। কেবল বাবাকে গালমন্দ করতে থাকল। রাতে মা আর খেলও না। পিলু সকাল হলে কিছু একটা প্রতিবিধানের জন্য কোথায় যে না বলে না কয়ে বের হয়ে গেল!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঈশ্বরের বাগান – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }