Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মায়া

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প14 Mins Read0

    মায়া

    দু-বছর আগের কথা বলি। এখনও অল্প-অল্প যেন মনে পড়ে। সব ভুল হয়ে যায়। কী করে এলাম এখানে! বগুলা থেকে রাস্তা চলে গেল সিঁদরানির দিকে। চলি সেই রাস্তা ধরেই। রাঁধুনি বামুনের চাকরিটুকু ছিল অনেক দিনের, আজ তা গেল।

    যাক, তাতে কোনো দুঃখ নেই। দুঃখ এই অবিচারে চাকরিটা গেল। ঘি চুরি করিনি, কে করেছে আমি জানিও না, অথচ বাবুদের বিচারে আমি দোষী সাব্যস্ত হলাম। শান্তিপাড়া, সরষে, বেজেরডাঙা পার হতে বেলা দুপুর ঘুরে গেল। খিদেও বেশ পেয়েছে। জোয়ান বয়স, হাতে সামান্য কিছু পয়সা থাকলেও খাবার দোকান এ-পর্যন্ত এসব অজ পাড়াগাঁয়ে চোখে পড়ল না।

    রাস্তার এক জায়গায় ভারি চমৎকার একটি পুকুর। স্নান করতে আমি চিরকালই ভালোবাসি। পুকুরের ভাঙা ঘাটে কাপড় নামিয়ে রেখে জলে নামলাম। জলে অনেক পানা-শেওলা, সেগুলি সরিয়ে পরিষ্কার করে প্রাণ ভরে ডুব দিলাম। বৈশাখের শেষ, গরমও বেশ পড়েছে, স্নান করে সত্যি ভারি তৃপ্তি হল। শরীর ঠান্ডা হল বটে, কিন্তু পেট জ্বলছে। এ সময় কোনো বনের ফল নেই? চোখে তো পড়ে না যেদিকে চাই।

    এমন সময় একজন বুড়ো লোক পুকুরটাতে নাইতে আসছে দেখা গেল। আমাকে দেখে বললেন— বাড়ি কোথায়?

    আমি বললাম— আমি গরিব ব্রাহ্মণ, চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছি। আপাতত বড়ো খিদে পেয়েছে, খাবো কোথায়, তিনি কি সন্ধান দিতে পারেন?

    বুড়ো লোকটি বললে— রোসো, নেয়ে নি— সব ঠিক করে দিচ্ছি।

    স্নান সেরে উঠে লোকটি আমাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে জঙ্গলে ঘেরা একটি পুরোনো বাড়িতে ঢুকল। বললে— আমার নাম নিবারণ চক্রবর্তী। এ বাড়ি আমার, কিন্তু এখানে আমি থাকিনে। কলকাতায় আমার ছেলেরা ব্যাবসা করে, শ্যামবাজারে ওদের বাসা। এত বড়ো বাড়ি পড়ে আছে, আর সেখানে মাত্র তিনখানা ঘরে আমরা থাকি। কী কষ্ট বলো দিকি? আমি মাসে মাসে একবার আসি, বাড়ি দেখাশুনো করি। ছেলেরা ম্যালেরিয়ার ভয়ে আসতে চায় না। মস্ত বড়ো বাগান আছে বাড়ির পেছনে। তাতে সবরকম ফলের গাছ আছে, বারো ভূতে খায়। তুমি এখানে থাকবে?

    বললাম— থাকতে পারি।

    —কী কাজ করবে?

    —রাঁধুনির কাজ।

    —যে ক-দিন এখানে আছি সে ক-দিন এখানে রাঁধো, দু-জনে খাই।

    —খুব ভালো।

    আমি রাজি হয়ে যেতে লোকটা যেন হঠাৎ ভারি খুশি হল। আমার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলে তখনি। খাওয়া-দাওয়ার পরে আমাকে একটা পুরোনো মাদুর আর একটা মোটা তাকিয়া বালিশ দিয়ে বললে— বিশ্রাম করো।

    পথ হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ঘুমিয়ে যখন উঠলাম, বেলা আর তখন নেই। রাঙা রোদ বড়ো বড়ো গাছপালার উঁচু ডালে। এরই মধ্যে বাড়ির পেছনের জঙ্গলে শেয়ালের ডাক শুরু হল। আমি বাইরে গিয়ে এদিক-ওদিক খানিকটা ঘুরে বেড়ালাম। যেদিকে চাই, সেদিকেই পুরোনো আম-কাঁঠালের বন আর জঙ্গল। কোনো লোকের বাড়ি নজরে পড়ল না। জঙ্গলের মধ্যে এক স্থানে কেবল একটা ভাঙা দেউল দেখতে পেলাম। তার মধ্যে উঁকি মেরে দেখি, বুড়ো নিবারণ চক্রবর্তী বসে তামাক খাচ্ছে। আমায় বললে— চা করতে জানো? একটু চা করো। চিঁড়ে ভাজো। তেল-নুন মেখে কাঁচালঙ্কা দিয়ে খাওয়া যাবে।

    সন্ধ্যার পর বললে— ভাত চড়িয়ে দাও। সরু আতপ আছে, গাওয়া ঘি আছে, আলুভাতে— ব্যস।

    —যে আজ্ঞে।

    —তোমার জন্যে ঝিঙের একটা তরকারি করে নিও। ঝিঙে আছে রান্নাঘরের পেছনে। আলো হাতে নিয়ে তুলে আনো এইবেলা। আর একটা কথা, রান্নাঘরে সর্বদা আলো জ্বেলে রাখবে।

    —তা তো রাখতেই হবে। অন্ধকারে কি রান্না করা যায়?

    —হ্যাঁ, তাই বলছি।

    মস্ত বড়ো বাড়ি। ওপরে-নীচে বোধ হয় চোদ্দো-পনেরো খানা ঘর। এ ছাড়া টানা বারান্দা। দু-চারখানা ছাড়া অন্য সব ঘরে তালা দেওয়া। রান্নাঘরের সামনে মস্ত বড়ো লম্বা রোয়াক, রোয়াকের ও-মুড়োয় চার-পাঁচটা নারকেল গাছ আর একটা বাতাবি লেবুর গাছ। ঝিঙে তুলতে হলে এই লম্বা রোয়াকের ও-মুড়োয় গিয়ে আমায় উঠোনে নামতে হবে; তারপর ঘুরে রান্নাঘরের পেছনদিকে যেতে হবে। তখনও সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়নি, আলোর দরকার নেই ভেবে আমি এখন শুধু হাতে ঝিঙে তুলতে গেলাম।

    বাব্বা, কী আগাছার জঙ্গল রান্নাঘরের পেছনে! বুনো ঝিঙে গাছ, যাকে এঁটো গাছ বলে। অর্থাৎ এমনি বীজ পড়ে যে গাছ হয়, তাই। অনেক ঝিঙে ফলেছে দেখে বেছে বেছে কচি ঝিঙে তুলতে লাগলাম। হঠাৎ আমার চোখে পড়ল একটি বউ মতো কে মেয়েছেলে আমার সামনাসামনি হাত-দশেক দূরে ঝোপের মধ্যে নীচু হয়ে আধ-ঘোমটা দিয়ে আমারই মতো ঝিঙে তুলছে। দু-বার আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তারপর পেছনে ফিরে সাত-আটটা কচি ঝিঙে তুলে আসবার সময় আর-একবার চেয়ে দেখলাম। দেখি, বউটি তখনও ঝিঙে তুলছে।

    নিবারণ চক্কোত্তি বললে— ঝিঙে পেলে?

    —আজ্ঞে হ্যাঁ। অনেক ঝিঙে হয়ে আছে। আর-একজন কে তুলছিল।

    নিবারণ বিস্ময়ের সুরে বললে— কোথায়?

    —ওই রান্নাঘরের পেছনে। বেশি জঙ্গলের দিকে।

    —পুরুষ মানুষ?

    —না। একটি বউ।

    নিবারণ চক্রবর্তীর মুখ কেমন হয়ে গেল। বললে— কোথায় বউ! চলো দিকি দেখি!

    আমি তাকে সঙ্গে করে রান্নাঘরের পেছনে দেখতে গিয়ে দেখি, কিছুই না। নিবারণ বললে— কই বউ?

    —ওই তো ওখানে ছিল। ওই ঝোপটার কাছে।

    —হুঁ! যত সব! চলো চলো! দিনে-দুপুরে বউ দেখলে অমনি!

    আমি একটু আশ্চর্য হলাম। যদি একজন পাড়াগাঁয়ের বউ-ঝি দুটো জংলি ঝিঙে তুলতে এসেই থাকে, তাতে এত খাপ্পা হবার কী আছে ভেবে পাইনে। তা ছাড়া, আজ না-হয় উনি এখানে আছেন, কাল যখন কলকাতায় চলে যাবেন, তখন বুনো ঝিঙে কে চৌকি দেবে?

    রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর চক্কোত্তি বুড়ো আবার সেই ঝিঙে চুরির কথা তুললে। বললে— আলো নিয়ে যাওনি কেন ঝিঙে তুলতে? তোমায় আমি আলো হাতে নিয়ে যেতে বলেছিলাম, মনে আছে? কেন তা যাওনি?

    আমি বুঝলাম না, তাতে কী দোষ হল। বুড়োটা খিটখিটে ধরনের। বিনা আলোতে যখন সব আমি দেখতে পাচ্ছি, এমনকী ঝিঙে চুরি করা বউকে পর্যন্ত, তখন আলো না-নিয়ে দোষ করেছি কি?

    বুড়ো বললে— না— না, সন্ধের পর সর্বদা আলো কাছে রাখবে।

    —কেন?

    —তাই বলছি। তোমার বয়স কত?

    —সাঁইত্রিশ-আটত্রিশ হবে।

    —অনেক কম বয়স আমাদের চেয়ে। আমার তেষট্টি। যা বলি কান পেতে শুনো।

    —আজ্ঞে নিশ্চয়।

    .

    রাত্রে শুয়ে আছি, ওপরের ঘরে কীসের যেন খটখট শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল। জিনিসপত্র টানাটানির শব্দ। কে-বা-কারা যেন বাক্স বিছানা এখান থেকে ওখানে সরাচ্ছে। ভারী জিনিস সরাচ্ছে। বুড়ো সকালে চলে যাবে কলকাতায়, তাই বোধ হয় জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। কিন্তু এত রাত্রে?

    বাব্বাঃ, কী বাতিকগ্রস্ত মানুষ!

    সকালে উঠে বুড়োকে বলতে বুড়ো অবাক হয়ে বললে— আমি?

    —হ্যাঁ। অনেক রাতে।

    —ও! হ্যাঁ— না— হুঁ— ঠিক।

    —আমাকে বললেই হত আমি গুছিয়ে দিতাম।

    চক্কোত্তি বুড়ো আর কিছু না-বলে চুপ করে গেল। বেলা ন-টার মধ্যে আমি ভাত ডাল আর ঝিঙে ভাজা রান্না করলাম। খেয়ে-দেয়ে পোঁটলা বেঁধে সে রওনা হল কলকাতায়। যাবার সময় বার বার বলে গেল— নিজের ঘরের লোকের মতো থেকো ঠাকুর। পেয়ারা আছে, আম-কাঁঠাল আছে, উৎকৃষ্ট পেঁপে আছে। তরিতরকারি পোঁতো। আমার খাস জমি পড়ে আছে তিন বিঘে। ভদ্রাসন হল দেড় বিঘের ওপর। লোকাভাবে জঙ্গল হয়ে আছে। খাটো, তরকারি উৎপন্ন করো— খাও, বেচো— তোমার নিজের বাড়ি ভাববে। দেখাশুনো করো। থাকো। ভাবনা নেই। আর একটা কথা—

    —কী?

    চক্কোত্তি বুড়ো অকারণে সুর খাটো করে বললে— কত লোকে ভাঙচি দেবে। কারও কথা শুনো না যেন। বাড়ি দেখাশুনো যেমন করবে, নিজের মতো থাকবে; কোনো কথায় কান দেবে না, গাছের ফলফুলুরি তুমিই খাবে। দুটো ঘর খোলা রইল তোমার জন্যে।

    বুড়ো চলে গেল। আমাকে যেন আকাশে তুলে দিয়ে গেল। আরে, এত বড়ো বাড়ির বড়ো বড়ো দু-খানা ঘর আমার ব্যবহারের জন্যে রয়েছে। তা ছাড়া বারান্দা, রান্নাঘর! রোয়াক তো আছেই। বাড়িতে পাতকুয়ো। জলের কষ্ট নেই। দশটা টাকা আগাম দিয়ে গিয়েছে বুড়ো, প্রায় আধমণটাক সরু আতপ চালও আছে। গাছ ভরা আম-কাঁঠাল। এ যেন ভগবানের দান আকাশ থেকে পড়ল হঠাৎ!

    বিকেলের দিকে তেল নুন কিনবো বলে মুদির দোকান খুঁজতে বেরোলাম। বাপরে, কী ঘন জঙ্গল গাঁ-খানার ভেতরে! আর এদের যেখানে বাড়ি, তার ত্রিসীমানায় কি কোনো লোকালয় নেই? জঙ্গল ভেঙে সুঁড়ি পথ ধরে আধ মাইল যাবার পর একজন লোকের সঙ্গে দেখা হল। সেও তেল কিনতে যাচ্ছে। আমায় দেখে বললে— বাড়ি কোথায়?

    —এখানে আছি নিবারণ চক্কোত্তির বাড়ি।

    —নিবারণ চক্কোত্তির? কেন?

    —দেখাশুনো করি। কাল এসেছি।

    —ও-বাড়িতে থাকতে পারবে না।

    —কেন?

    —এই বলে দিলাম। দেখে নিও। কত লোক ও-বাড়িতে এল গেল। ওরা নিজেরাই থাকতে পারে না, তো অন্য লোক! ওর বাড়ির ছেলে-বউরা কস্মিনকালেও বাড়িতে আসে না।

    —কেন?

    —তা কী জানি? ও বড়ো ভয়ানক বাড়ি! তুমি বিদেশি লোক। খুব সাবধান!

    আর কিছু না-বলে লোকটা চলে গেল। আমি দোকান খুঁজে জিনিস কিনে বাড়ি ফিরলাম। তখন বিকাল গড়িয়ে গিয়ে সন্ধ্যা নামছে। দূর থেকে জঙ্গলের মধ্যকার পুরোনো উঁচু দোতলা বাড়িখানা দেখে আমার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। সত্যি, বাড়িখানার চেহারা কীরকম যেন! ও যেন একটা জীবন্ত জীব, আমার মতো ক্ষুদ্র লোককে যেন গিলে ফেলবার জন্যে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে! অমনতরো ওর চেহারা কেন?

    কিছু না। লোকটা আমার মন খারাপ করবার জন্যে দায়ী। আমি যখন তেল নুন কিনতে যাই, তখন আমার মনে দিব্যি ফুর্তি ছিল; হঠাৎ এমন হবার কারণ হচ্ছে, ওই লোকটার ভয়-দেখানো কথাবার্তা। গায়ে পড়ে অত হিত করবার দরকার কী ছিল বাপু তোমার? চক্কোত্তি বুড়ো তো বলেই দিয়েছে কত লোক কত কথা বলবে, কারোর কথায় কান দিও না।

    কিছু না। গাছপালার ফল-ফুলুরি গাঁয়ের লোক চুরি করে খায় কিনা, বাড়িতে একজন পাহারাদার বসলে লুটপাট করে খাওয়ার ব্যাঘাত হয়। সেই জন্যেই ভয় দেখানো। যেমন ওই বউটি কাল সন্ধ্যা বেলা ঝিঙে চুরি করছিল।

    অনেক দিন এমন আরামে থাকিনি। বিনা খাটুনিতে পয়সা রোজগারের এমন সুযোগ জীবনে কখনো ঘটেনি। নিজের জন্যে শুধু দুটো রান্না— মিটে গেল কাজ। সকাল-সকাল রান্না সেরে নিয়ে নীচের বড়ো রোয়াকে বসে আপন মনে গান গাতে লাগলাম। এত বড়ো বাড়ির আমিই মালিক, কারোর কিছু বলার নেই আমাকে। যা খুশি করবো।

    হঠাৎ ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে গেলাম। দোতলার নালির মুখ দিয়ে পড়তে লাগল জল। যেমন উপরের বারান্দাতে কেউ হাত-পা ধুলে পড়ে। বেশ মোটা ধারে জল পড়তে লাগল। তখন আমি উঠে রোয়াকের ধারে দাঁড়িয়ে দোতলার বারান্দার দিকে চেয়ে দেখলাম। তখনও জল পড়ছে সমানে, মোটা ধারায়। ওপরের সিঁড়ির দরজায় তালা দেওয়া। চাবি চক্কোত্তিমশায় নিয়ে গিয়েছেন সুতরাং দোতলায় যাবার কোনো উপায় আমার নেই। এ জল কোথা থেকে পড়ছে?

    মিনিট দশেক পড়ার পর জলের ধারা বন্ধ হয়ে গেল। আমার মনে হল চক্কোত্তিমশায় বোধ হয় কোনো কলসি বা ঘড়ায় জল রেখে গিয়েছিল ওপরে বারান্দাতে, সেই কলসি কীভাবে উলটে পড়ে গিয়ে থাকবে! নিশ্চয় তাই। তা ছাড়া জল আসবে কোথা থেকে?

    একটু পরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আলো নিবিয়ে শুয়ে পড়বার সঙ্গেসঙ্গে আমার চোখে ঘুম জড়িয়ে এল। অনেক রাত্রে একবার ঘুম ভেঙে গেল, জানলা দিয়ে সুন্দর জ্যোৎস্না এসে পড়েছে বিছানায়। কী একটা ফুলের গন্ধও আসছে। বেশ সুবাস ফুলের।

    কী ফুল?

    ঘুমের ঘোরেই ভাবছি, কোনো সুগন্ধওয়ালা ফুল তো বাড়ির কাছাকাছি দেখিনি!

    তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম। ও-কী? জানলার সামনে দিয়ে একটা বউ চলে গেল রোয়াক বেয়ে। হ্যাঁ, স্পষ্ট দেখেছি, ভুল হবার নয়। আমি তখনই উঠে দরজা খুলে রোয়াকে গিয়ে দাঁড়ালাম। রোয়াকে গিয়ে দাঁড়াতে দুটো জিনিস আমার কাছে স্পষ্ট হল। প্রথম, সেই ফুলের সুবাসটা অনেকখানি কম, ওই বউটি যেন এই সুবাস ছড়িয়ে গেল এই এতক্ষণ। না, এ কোনো ফুলের সুবাস নয়। কীসের সুবাস তা আমার মাথায় আসছে না।

    কেমন একরকম যেন লাগছে। একরকম নেশার মতো। কেন আমি বাইরে এসেছি? ও! কে একটি বউ রোয়াক বেয়ে খানিক আগে চলে গিয়েছিল, সে-ই ছড়িয়ে গিয়েছে এই তীব্র সুবাস। কিন্তু কোনো দিকে নেই তো সে! গেল কোথায়?

    সে রাত্রে সেই পর্যন্ত। কিছুক্ষণ পরে ঘরে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে মনে হল, সব স্বপ্ন। মনটা বেশ হালকা হয়ে গেল। কাজকর্মে ভালো করে মন দিলাম। বনজঙ্গল কেটে কীভাবে তরি-তরকারির আবাদ করব, সেই আলোচনা করতে লাগলাম মনের মধ্যে। একটা অসুবিধে এখানে থাকবার, বড়ো নির্জনে থাকতে হয়। কাছাকাছি যদি একঘর লোকও থাকত, তবে এত কষ্ট হত না। কথা বলবার একটা লোকও নেই। এই হল মহা কষ্ট।

    সেদিন দুপুরে এক ঘটনা ঘটল।

    আমি ভাত নামিয়ে হাঁড়ি রাখতে যাচ্ছি, এমন সময়ে দোতলার বারান্দাতে অনেক লোক যেন একসঙ্গে হেসে উঠল। সে কী ভীষণ অট্টহাসি! আমার গা যেন দোল দিয়ে উঠল সে হাসি শুনে। খিল-খিল করে হাসি নয়— খল-খল করে হাসি। আকাশ বাতাস থমথমিয়ে উঠল সে হাসির শব্দে।

    ভাত ফেলে রেখে দৌড়ে গেলাম। রোয়াকে গিয়ে উপরের দিকে দেখি, কিছুই না। দরজা যেমন বন্ধ, ওপরের ঘরের সারবন্দি জানলা তেমনি বন্ধ। হাসির লহর তখন থেমে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে।

    ব্যাপার কী? কোনো বদমাইশ লোকের দল ওপরে আড্ডা বেঁধেছে? ওপরের সিঁড়ির মুখে গিয়ে দেখি, দরজাতে তেমনি কুলুপ ঝুলছে।

    আমার ভয় হয়নি, কেননা দিনমান, চারিদিকে সূর্যের আলো; এ সময়ে মনের মধ্যে কোনো ভূতের সংস্কার থাকে না। এই হাসিই যদি আমি রাত্রে শুনতাম, তবে বোধ হয় ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতাম। চাবি দিয়ে দাঁত খুলতে হত।

    রান্নাঘরে ফিরে এসে ভাতের ফ্যান গেলে ঝিঙের তরকারি চাপিয়ে দিই। প্রচুর ঝিঙে জঙ্গলে ফলেছে, যত ইচ্ছে তুলে নিয়ে যাও। আমারই বাড়ি, আমারই ঝিঙে-লতা। মালিক হওয়ার যে একটা মাদকতা আছে, তা কাল থেকে বুঝছি। আমার মতো গরিব মানুষের জীবনে এমন জিনিস এই প্রথম।

    কান পেতে রইলাম ওপরের ঘরের কোনো শব্দ আসে কি না শুনতে। ছুঁচ পড়বার শব্দও পেলাম না। খেয়ে-দেয়ে নিজের মনে বিছানায় গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি— ঘুমের ঘোরে শুনছি, যেমন কোনো বিয়েবাড়িতে ঘর ভরতি লোকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে লোকজনের গলার শব্দ ঘুমের মধ্যে পাওয়া যায়। হয়তো সবটাই মনের ভুল। মনের সেই যে ভাব হয়েছিল হাসি শুনে, তারই ফলে।

    এরপর ন-দিন আর কোনো কিছু ঘটেনি।

    মানুষের মনের অভ্যাস, অপ্রীতিকর জিনিসগুলো তাড়াতাড়ি দিব্যি ভুলে যেতে চায়, পারেও ভুলে যেতে। আমি নিজের মনকে বোঝালুম, ওসব কিছু না। কী শুনতে কী শুনেছি! বউ দেখা চোখের ভুল, হাসি শোনাও কানের ভুল। সব ভুল।

    এই ক-দিনে আমার শরীর বেশ সেরে উঠল। খাই-দাই আর শুধু ঘুমুই, কাজকর্ম কিছু নেই। কেমন একরকম কুঁড়েমি পেয়ে বসেছে আমাকে। আমি সাধারণত খুব খাটিয়ে লোক, শুয়ে-বসে থাকতে ভালোবাসিনে; কিন্তু অনেক দিন ধরে অতিরিক্ত খাটুনির ফলে কেমন এক রকমের অবসাদ এসে গিয়েছে। শুধু আরাম করতে ইচ্ছা হয়।

    ন-দিনের দিন বিকেলে মনে হল রান্নাঘরের পেছনে সেই ঝিঙে জঙ্গলটা কেটে একটু পরিষ্কার করি, ঝিঙের লতাগুলো বাঁচিয়ে অবশ্য। ওখানে মানের চারা পুতব, আর একটা চালকুমড়োর এঁটো লতা হয়েছে এই জঙ্গলের মধ্যে, সেটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে রান্নাঘরে ছাদে উঠিয়ে দেবো। এ-বাড়িতে কাজ করে সুখ আছে, কারণ দা, কোদাল, কাস্তে, নিড়েন, শাবল, কুড়ুল সব মজুত আছে— ঘরের কোণে একটা হাত-কোদাল ইস্তক।

    অল্পক্ষণ মাত্র কাজ করেছি, আধঘণ্টাও হবে না। হঠাৎ দেখি সেই বউটি ঝিঙে তুলতে এসেছে; নীচু হয়ে ঝোপের মধ্যে ঝিঙে তুলছে।

    সঙ্গেসঙ্গে দোতলার ঘরগুলোর মধ্যে এক মহা কলরব উপস্থিত হল। অনেকগুলো লোক, আন্দাজ জন-পঞ্চাশেক, একসঙ্গে যেন হইহই করে উঠল। সব দরজা জানলা যেন একটা ঝাপটা লেগে একসঙ্গে খুলে গেল।

    বন কাটা ফেলে আমি ওপর দিকে চেয়ে দেখলাম। সামনের রোয়াকে এসে দাঁড়ালাম— কই, একটা জানলা দরজার কপাটও খোলেনি দোতলার; যেমন তেমনি আছে।

    ব্যাপার কী? বাড়িটার মৃগী রোগ আছে না কি? মাঝে মাঝে একটা বিকট চিৎকার ওঠে কেন? এসব তো ভুল হবার কোনো কথা নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ মনে কাজ করতে করতে এ চিৎকার আমি শুনেছি একমাত্র। এখন আবার চারদিক নিস্তব্ধ। কোনো দিকে কোনো শব্দ নেই।

    সেই বউটি আবার ঝিঙে তুলতে এসেছে এই গোলমালের মধ্যে। দৌড়ে গেলাম রান্নাঘরের পেছনে। সেখানেও কেউ নেই।

    সেদিন রাত্রে এক ঘটনা ঘটল। ভারি মজার ব্যাপার বটে।

    খেয়ে-দেয়ে সবে শুয়েছি, সামান্য তন্দ্রা এসেছে— এমন সময় কীসের শব্দে তন্দ্রা ছুটে গেল। চেয়ে দেখি আমার বিছানার চারিপাশে অনেক লোক জড়ো হয়েছে। তাদের সবারই মাথায় লাল পাগড়ি, হাতে ছোটো ছোটো লাঠি; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সকলেরই মুখ দেখতে একরকম। একই লোক যেন পঞ্চাশটি হয়েছে— এইরকম মনে হয় প্রথমটা। বহু আরশিতে যেন একটা মুখই দেখছি।

    কে যেন বলে উঠল— আমাদের মধ্যে আজ কে যেন এসেছে!

    একজন তার উত্তর দিলে— এখানে একজন পৃথিবীর লোকের বাড়ি আছে অনেক দিন থেকে। আমি দেখিনি বাড়িটা, তবে শুনেছি; যারা দেখতে জানে তারা বলে। সেই বাড়ির মধ্যে একটা লোক রয়েছে।

    —সব মিথ্যে। কোথায় বাড়ি?

    —আমরা কেউ দেখিনি।

    —তবে এসো, আমরা নাচ আরম্ভ করি।

    বাপরে বাপ! সে কী কাণ্ড! অতগুলো লোক একসঙ্গে ঢোল বাজিয়ে এক তাণ্ডবনৃত্য শুরু করে দিলে; আমার দেহের মধ্যে দিয়ে কতবার যে এল গেলো! তার সঙ্গেসঙ্গে বিকট চিৎকার আর হল্লা!

    আমার বিছানার বা আমার কোনো অংশ তারা স্পর্শও করল না। আমি যে সেখানে আছি, তাও যেন তারা জানে না। আমার অস্তিত্ব সম্বন্ধে ওরা আদৌ সচেতন নয়। ওদের হুংকার আর ভৈরব নৃত্যে আমি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলাম।

    যখন জ্ঞান হল, তখন শেষ রাত্রের জ্যোৎস্না খোলা জানলা দিয়ে এসে বিছানায় পড়েছে। সেই ফুলের অতিমৃদু সুবাস ঘরের ঠান্ডা বাতাসে। আমি আধো অচেতনভাবে জানলার বাইরের জ্যোৎস্নামাখা গাছপালার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

    কতক্ষণ পরে জানিনে, ভোর হয়ে গেল।

    বিছানা ছেড়ে উঠে দেখি, ঘুমের কোনো ব্যাঘাত হয়নি। সুনিদ্রা হলে শরীর যেমন ঝরঝরে আর সুস্থ হয়, তেমনি বোধ করছি।

    তবে সে-ভূতের নাচ কে দেখেছিল? সে নাচ কি তবে ভুল? খেয়ে-দেয়ে পরম আরামে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে স্বপ্ন দেখেছি?

    তাই যদি হয়, তবে এই শেষরাত্রের ঠান্ডা বাতাসে ফুলের সুবাস পেয়েছি, তা কোথা থেকে এল? সেই বউটি যখন চলাফেরা করে, তখনই অমন সুবাস ছড়ায় বাতাসে। সুবাসটা ভুল হতে পারে না। এখনও সে-গন্ধ আমার নাকে লেগে রয়েছে।

    কোনো অজানা বনফুলের সুবাস হয়তো। তাই হবে।

    তেল কিনতে গিয়েছি দোকানে, দোকানি বললে— কীরকম আছো? বলি, কিছু দেখেছ না কি?

    —না।

    —শুনেছ কিছু?

    —না।

    —খুব বেঁচে গিয়েছ তুমি। তোমার আগে যারা ওখানে থাকত, তার সবাই একটি বউকে দেখত ওখানে প্রায়ই। এমন হত শেষে, ও বাড়ি ছেড়ে তারা নড়তে চাইত না। তারপর রোগা হয়ে দিন দিন শুকিয়ে শেষপর্যন্ত মারা পড়ত। দু-টি লোকের এইরকম হয়েছে এ পর্যন্ত। বাড়িতে ভূতের আড্ডা। ভূতে লোককে পাগল করে দেয়। তাদের কাণ্ডজ্ঞান থাকে না, না-খেয়ে না-দেয়ে ওখানে পড়ে থাকে— ছেড়ে যেতে চায় না। তুমি দেখছি ভূতের মন্তর জানো। আমরা তো ও বাড়ির ত্রিসীমানায় যাইনে। মাথা খারাপ করে দেয় সাধারণ মানুষের।

    .

    তেল নিয়ে চলে এলাম। ভাবতে ভাবতে এলাম, মাথা খারাপ হওয়ার সূত্রপাত আমারও হল না কি? বাড়ির ত্রিসীমানায় পা না-দিতেই আমারও মনে হল, নাঃ সব ভুল। পরম সুখে আছি। এ ছেড়ে কোথায় যাবো? বেশ আছি, খাসা আছি! তোফা আছি!

    সেই থেকে আজ দু-বছর পড়ে আছি এ-বাড়িতে। চক্কোত্তিমশায় মাইনে-টাইনে কিছুই দেয় না, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। বাড়ি দেখাশুনো করি, বেগুন কলা বেচি, দিন-রাত ওদের নৃত্য দেখি, ওদের মধ্যেই বাস করি— এক পা যাইনে বাড়ি ছেড়ে।

    জ্যৈষ্ঠ ১৩৬৬, রূপহলুদ

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমশলা-ভূত
    Next Article মেঘমল্লার

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী ছোটগল্প

    আসল বেনারসী ল্যাংড়া

    April 5, 2025
    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    অসাধারণ | Ashadharon

    April 3, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    জুয়াড়ির বউ

    March 27, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    অন্ধের বউ

    March 27, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    সর্ববিদ্যাবিশারদের বউ

    March 27, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }