Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মায়াজাল – আশাপূর্ণা দেবী

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প137 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩. বাড়ির মধ্যে নয়

    চার দেয়ালের মধ্যে নয়, খোলা আকাশের নীচে।

    গাড়ি করে কোনও একখানে বেড়াতে যাওয়াটা তো হাতের মধ্যে।

    চির-অবোধ সুনন্দা দের টুকরো ছেলেটার ওপর আস্থা রেখে নিশ্চিন্ত আছে। নিশ্চিন্ত আছে ভাই-বোন সম্পর্কের রক্ষাকবচে। বরং এতেই ওর সায়। মেয়েটার মন বসাবার এটাই মুখ্য উপায় বলে মনে করে। এতদিন অন্যত্র থাকা, অন্য পরিবেশে বেড়ে ওঠা মনটা যে সীমার সুনন্দার এই সোনার খাঁচার মধ্যে প্রকৃত স্বস্তি পাচ্ছে না, তা সুনন্দা বুঝতে পারে। বুঝতে পারে, এ ঘরকে এখনো নিজের ঘর বলে ভাবতে পেরে উঠছে না সীমা। সেই না পারার যন্ত্রণা সীমার মুখে চোখে, আচারে আচরণে, প্রত্যেকটি ভঙ্গীতে।

    সীমার ঘরের আলমারি, দেরাজ, ওয়ার্ডরোবের চাবির রিং সীমাকে দিয়ে রেখেছে সুনন্দা। তবু সীমা নিজে হাতে করে একটা জিনিসের চাবি খোলে না। শাড়ী বার করে বদলে বদলে পরে না। যা শাড়ী জামা সুনন্দা বার করে আলনায় গুছিয়ে রাখে, তাই পরে চলে। সুনন্দা দেখে, সীমা পর পর তিন দিন একই শাড়ী পরছে। সুনন্দাই অগত্যা আবার শাড়ী জামা বার করে রেখে দেয়, অনুযোগ করে।

    অনুযোগ তো সর্বদাই করে।

    সীমার সঙ্গে যা কিছু কথা সুনন্দার, সবই তো অনুযোগের কথা।

    –টুলু, টয়লেটের জিনিসগুলোর প্যাকই খুলিসনি এখনো? কি মেয়েরে তুই? টুলু, দুধ না কি খাসনি, ফেরৎ দিয়েছিস! দুবেলা একটু একটু করে দুধ না খেলে কী করে চলে বল তো বাছা! শরীরটা একটু না সারলে

    ..টুলু নিজে নাকি ব্লাউসে সাবান দিয়েছিস? কোথায় আমি যাব রে! এতগুলো লোক থাকতে

    টুলুই যদি বলতে হয় তো বলিটুলু এসব কথার উত্তর বড় দেয় না, চুপ করেই থাকে। এক আধ বার হয়তো আস্তে বলে, বরাবর নিজের কাজ নিজে হাতে করার অভ্যাস ছিল, অন্যকে বলতে মনে থাকে না।…হয়তো বলে–জীবনে কখনো দুধ খেয়েছি কি না সন্দেহ, তবু তো দিব্যিই বেঁচে আছি। শরীর আর বেশী সেরে কী হবে?…হয়তো বা বলে–ওসব কৌটো শিশি তুলি বুরুশের ব্যবহারই জানি না মা, খুলে কি করব!

    সুনন্দা বলে ওঠে, ও আমার সোনা, শিখে নাও মাণিক!

    সুনন্দা আড়ালে চোখ মোছে। সুনন্দার মেয়ে জীবনে দুধ খেয়েছে কিনা সন্দেহ শুনে চোখের জল মুছে শেষ করতে পারে না।

    শুধু সুনন্দা যখন বলে–ও টুলু, সারাক্ষণ কেন ঘরের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়ে আছিস মা, যা দাদার সঙ্গে একটু বেড়িয়ে আয়–তখন টুলু প্রস্তুত হয়।

    যদিও টুলুর দাদা বলে–আচ্ছা পিসিমা, নির্জন কারাগারে বন্দী হয়ে পড়ে থাকারই বা কী দরকার? ঘরে যে অমন চমৎকার রেকর্ড চেঞ্জার রয়েছে, সেটাকে খানিক খাটানো যায় না? ….শুয়ে শুয়ে দুটো গান শুনতেও এত কষ্ট! বলে–তোমার ওই নিধিটিকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েই কি সুখ আছে? হয়তো এমন হাঁড়ি মুখ করে বসে থাকবে, মনে হবে এই মাত্র ব্যাঙ্কফেলের খবর পেয়েছে।

    এই সব বলে হাঁক দেয়–নিধি, চলে এসো গাড়ী প্রস্তুত।

    এই। এই অবস্থা।

    সন্দেহই বা করবে কি করে সুনন্দা?

    কি করে ভাববে তারই বাড়িতে তার অলক্ষ্যে এক নতুন নাটক রচিত হচ্ছে। ভাবে না, ভাবতে পারে না।

    শুধু নতুন সেই নাটকের নায়ক নায়িকা দুটি ভাবনায় জর্জরিত হতে থাকে।

    উদ্দালক আগে বেশি ভাবত না। বলত–নিয়তির হাতে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়ে বসে থেকে দেখো না।….কিন্তু ইদানীং সীমার যন্ত্রণা তাকেও চিন্তিত করে তুলেছে।

    অদ্ভুত এক যন্ত্রণার জগতে বাস করছে সীমা। একদিকে একখানি ভালবাসার হাত, অপরদিকে একখানি আকুল অস্থির ভালবাসার হৃদয়। নিশ্চিন্তে সেই হাতে হাত রাখবে এমন উপায় নেই। নির্মল চিত্তে সেই হৃদয়ের কাছে ধরা দেয় সে ক্ষমতা নেই।

    তা ছাড়াও-যন্ত্রণার আর কোনও কারণ নেই?

    যতীন সেন নেই? নেই তার কটুভাষিণী স্ত্রী? বুভুক্ষু ছেলে মেয়ে?

    তাদের সঙ্গে কী ব্যবহার করে এসেছে সীমা?

    সেদিনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন ধরে ধরে পেরেক বিধতে থাকে সীমাকে। যেন মরচে ধরা একটা অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে কেটে চলে।

    সেই কটু কদর্য মুহূর্তগুলোকে যদি ফিরিয়ে নেওয়া যেত! সীমা তাহলে তার মা বাপ ভাই বোন আর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে একটু সদ্ব্যবহার করে আসত।

    সীমা কি আবার যাবে?

    গিয়ে আছড়ে পড়ে বলবে, মা গো তুমি কেবল আমার বাইরেটাই দেখলে, ভিতরটা দেখতে পেলে না? মনে ভাবলে কি হবে, বাস্তবে আর একবার যাওয়ার কথা চিন্তাতেও আনতে পারে না। যতীন সেনের সেই কলোনী। সেই কলোনীর বাসা, তার সমস্ত পারিপার্শ্বিকতা যেন একটা ডেলাপাকানো আতঙ্কের মত জমাট হয়ে বসে আছে।

    সর্বদা একা থাকতে ইচ্ছে হয় সীমার। একা একা ভাবতে ইচ্ছে হয়, কেমন ছিল সেই পুরানো জীবনটা। সে জীবনে কষ্ট ছিল, অসুবিধে ছিল, অভাব ছিল, দুঃখ ছিল, কিন্তু গ্লানি ছিল কি?

    ভাবতে থাকে সীমা।

    তা ছিল বৈ কি।

    দারিদ্র বস্তুটাই তো গ্লানিকর। সে দারিদ্র যদি চরম পর্যায়ের হয়, গ্লানিটাও চরমই হয়। সেই চরম গ্লানির মধ্যেই কেটেছে প্রায় জীবনের সব দিনগুলো।

    সেই গ্লানির ক্লেদ মাখা একটা মেয়েকে দেখতে পায় সীমা।

    জরাজীর্ণ একটা ব্লাউস গায়ে, ততোধিক জীর্ণ একখানা বিবর্ণ রঙিন শাড়ী। হাত দুখানা, ফ্যাসানের জন্যে হয়, শুধু অভাবের জন্যেই খালি।

    সেই মেয়েটা একটা টিনের চালের ঘরের কাঠের খুঁটিটা ধরে কঠিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

    পাড়ার লোকের কাছে ধার চাইতে যেতে পারবে না। অথচ তার অভাবজীর্ণ কটুভাষী বাপ সমানে তর্জন গর্জন চালিয়ে যাচ্ছে সেই কুৎসিত কাজটা করতে যাবার জন্যেই।

    ধার চাই। কিছু একটু ধার না পেলে এই নিয়ে তিন বেলা হাঁড়ি চড়বে না। হয় টাকা, নয় চাল, নিয়ে আসুক চেয়ে।

    মেয়েটা এতক্ষণ শুধু একভাবে জানিয়ে এসেছে, আমি পারব না, আমার দ্বারা হবে না। এবার এক সময় চড়ে ওঠে। সীমা দেখতে পায় সেই চড়ে ওঠা মেয়েটা চড়া গলাতেই বলে–তা নাই বা চড়লো হাঁড়ি। এই হতভাগা সংসারে হাঁড়ি যদি আর কোনোদিনই না চড়ে, সবকটাতে মিলে যদি না খেয়ে মরা যায়, কী লোকসান হয় পৃথিবীর?

    মেয়েটার মা এবার আসরে নামে।

    পতির সুয়ো সতী হয়ে বলে,–ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও তুমি ওই আপ্তসারা স্বার্থপর মেয়েকে। তোমার সংসারের মুখ চাইতে ওর দায় পড়েছে। ওর মান মর্যাদাটা বজায় থাকলেই হল।

    আবার বাপ কথা বলে ক্ষোভের গলায়–তা বটে! মান মর্যাদা! আর ওই সনৎ বাবুর মেয়েরা! সতীলক্ষ্মী জগদ্ধাত্রীর মত মেয়েরা! বাপের কষ্ট চোখে না দেখতে পেরে নারীধর্মের সারধর্ম ইজ্জৎ বেচে ঘরে পয়সা আনছে।….দশে ধর্মে সবাই জানছে, তবু বলুক দিকি কেউ কিছু? রে রে করে পড়বে সনৎ। বলবে–ভাত দিতে পারো? তাই জাত নিতে এসেছ? বেশ করছে। আমার মেয়েরা। তবু তো সংসারের মুখে দুটো অল্প তুলে দিচ্ছে!

    সীমা দেখতে পাচ্ছে, বলতে বলতে লোকটার শীর্ণ মুখটা যেন কেমন একরকম পাশবিক হয়ে উঠছে। কী ভয়ানক একটা লোকসানের আক্ষেপে যেন বিকৃত হয়ে উঠছে। আর সেই মুখে আরও গলা চড়াচ্ছে সে, আমিও বলব সেই কথা। বেশ করছে সনতের মেয়েরা। চাকরী করতে গেলেও তো খাটতে হয়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। এও ধরে নাও চাকরী।….ভালভাবে ধরলেই ভাল। চোখের সামনে মা ভাই উপোস করে মরছে দেখে মান ইজ্জত নিয়ে গাট হয়ে বসে থাকার চেয়ে অনেক ভাল।…..কিন্তু আমার ললাটটি? চমৎকার! আমার মেয়ে মাথা হেঁট করে কারো বাড়ি গিয়ে দুটো টাকা কর্জ চাইতে পারেন না।

    সীমার চোখের সামনে দিয়ে ঘটে যাচ্ছে ঘটনাটা, সীমা দেখছে মেয়েটা মুখ তুলে লাল লাল চোখ মেলে বলছে,–আনি নি কোনও দিন?

    –এনেছ! ঘাড় হেট করে স্বীকার করছি এনেছ? বাপের মাথা কিনে এনেছ দু একবার! তা তাতেই চিরদিন চলবে?

    মেয়েটা রুদ্ধ গলায় বলে ধার করে চিরদিন চলে?

    –চলে না জানি। তাই তো নিজের গালে রাত দিন সাত জুতো মারছি। আঁকার ওজনে টাকা আনবার ক্ষমতা যদি নিজের থাকত, কোন্ হারামজাদা শালা তোমার মত মেয়ের এতটুকু অনুগ্রহ ভিক্ষে করত!

    মেয়েটা এবার কেঁদে ফেলেছে।

    কেঁদে ফেলে বলছে, ধার কি কেউ দিতে চায় আর? সক্কলের কাছে নিয়ে নিয়ে রেখেছ, শোধ দাওনা, কে দেবে? এত বড়লোকই বা কে আছে? আমরা কারও বাড়ি গেলেই ভয় খায়, ভাবে ধার চাইতে গেছি।

    লোকটার ভঙ্গীটা এবার একটু দুর্বল দুর্বল দেখায়। বলে–তা অভাবের সময় পাড়াপড়শীতে এমন দেখেই থাকে। নইলে আর মানুষ বলেছে কেন? মানুষ বলেই মানুষকে দেখে! আরধার। কি আমি শোধ দেব না বলেছি? দিন এলেই শোধ দেব!

    দিন!

    মেয়েটা হেসে ওঠে–দিন ফিরে আসবে এ ভরসা তা হলে আছে তোমার বাবা?

    বাবা বোধকরি এ প্রশ্নে একটু থতমত খেয়ে যায়। বাবা একটু চুপ করে যায়। হাল ধরে মা। বলে ওঠে,তুমি ইচ্ছে করলেই ফেরে মা! সনৎবাবুর মেয়েদের মত হতে আমি বলছি না! কিন্তু আজকাল তো তাবড় তাবড় নামকরা ঘরের সব মেয়েরা সিনেমায় নামছে, থিয়েটারে নামছে। নিন্দে তো দূরের কথা–মুখোজ্জ্বল হচ্ছে বরং তাদের। তাতে তো কোনও দোষের, দেখি না আমি! দুদিনে সংসারের চেহারা ফিরে যাচ্ছে তাদের।

    মেয়েটা হঠাৎ ঘাড় তুলে বলে ওঠে, বেশ, তাই করব আমি। ঢুকিয়ে দাও আমায় কোনখানে।

    –আমি? আমি দেব ঢুকিয়ে?

    মা ঠিকরে ঘরে ঢুকে যায়। ঘরের মধ্যে থেকে বলে ওঠে–সে পথ যদি জানা থাকত, সে দরজা যদি চেনা থাকত, তাহলে কি আর তোমার খোসামোদ করতে যেতাম মা? নিজেই যেতাম। ঝিয়ের পার্টেরও তো দরকার হয়!

    সীমা দেখছে, সমগ্ৰ সংসারটা যেন প্রবল একটা আক্রোশের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওই মেয়েটার দিকে।

    কেন!

    হয়তো ভয়ানক একটা আশাভঙ্গের আশঙ্কায়। অনেকদিন ধরে তাকিয়েছিল তারা সংসারের এই বড় হয়ে ওঠা মেয়েটার দিকে। আশা করছিল ও ওর কর্তব্য করবে। দায়িত্বটা নিজের হাতে তুলে নেবে।

    কিন্তু যেমন ভাবছিল তেমন হচ্ছে না।

    ও একটা কর্পোরেশন স্কুলের মাস্টারী করে, সব কর্তব্য সারা হল ভেবে আত্মপ্রসাদ অনুভব করছে!

    অথচ একটা যুবতী মেয়েকে দিয়ে কী না হতে পারে!

    .

    সীমা দেখতে পাচ্ছে, সেই মেয়েটা মাথা হেঁট করে পাড়ার একজনদের বাড়িতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বাড়ির আধবুড়ো কর্তাকে বলছে–আপনি তো স্টুডিওতে যাওয়া আসা করেন জগবন্ধু কাকা, আমাকে একবার ইনট্রোডিউস করিয়ে দিতে পারেন না?

    জগবন্ধু কাকা হতাশ গলায় উত্তর দেন–আমি! আমি আর কী পদের কাজ করি মা, আমার তো কাজ ড্রেস সাপ্লাই। আমার কি সাধ্য

    বেশ আমাকে শুধু একদিন নিয়েই চলুন, যা বলবার আমি নিজেই বলব।

    –যেতে চাও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি–জগবন্ধুকাকা আরও নিরুৎসাহের বাণী ঘোষণা করেন গিয়ে দেখবে গাদা গাদা উমেদার বসে আছে। কর্তারা কেউ তাদের দিকে তাকিয়েও দেখছেন না। পায়ে পায়ে ঘুরছে, এখন সময় নেই বলে ভাগাচ্ছেন।….দেখেছি তো চোখের সামনে।

    তবু সেই নিরুৎসাহী ব্যক্তির স্কন্ধে চেপেই গিয়েছে মেয়েটা। একদিন নয়, দিনের পর দিন। কেউ কথা বলেনি। কেউ তাকিয়ে দেখেনি।

    বাস ভাড়া দেবার ক্ষমতা নেই, পাড়ার কাকা আর কদিন বাস ভাড়া দেবে?

    .

    এমনি এক ভয়ঙ্কর সময়ে এলো ব্ৰজ উকিলের প্রস্তাব। যতীন সেনের মামার এককালের সহপাঠী।

    মেয়েটা হাতে চাঁদ পেল।

    ভাবল, তার একান্ত আকুলতায় ঈশ্বর মুখ তুলে চাইলেন। ভাবল, অভিনয়ে নামতেই তো চেয়েছিলাম, তার সুযোগ পাচ্ছি। এর থেকে পবিত্র শুচিস্নিগ্ধ অভিনয় আর কি হতে পারে? প্রেমের অভিনয় নয়, নয় কুটিলা নায়িকার অভিনয়। একটি সন্তানহারা মায়ের কাছে সন্তান হয়ে থাকা!

    গ্লানিহীন সুন্দর! তখন তাই ভেবেছিল সীমা।

    ভাবেনি, সেই সহজ অভিনয়টা এতখানি মারাত্মক হয়ে উঠবে। সীমার যদি হৃদয় বলে কোনও বস্তু না থাকত, না থাকত বিবেক বলে কোনও জিনিস, তা হলে তার অঙ্কটা নির্ভুল হত।

    কিন্তু সাজানো সংখ্যার মধ্যে বাড়তি ওই দুটো সংখ্যা এসে পড়ল, হৃদয় আর বিবেক! এলোমেলো হয়ে গেল সব অঙ্ক!

    তাই এই খোলা আকাশের নীচে, এলোমলো বসন্ত হাওয়ার মাঝখানে একান্ত প্রিয়তমের হাতে হাত রাখতেও মন গুটিয়ে আসছে সীমার। কে যেন মুঠোয় চেপে ধরে রয়েছে ওর সমস্ত সত্তাকে!

    হাতে হাত রাখে না। উভ্রান্ত গলায় বলে ওঠে–আমি আর পারছি না! আমি আজই বলব। তারপর যা হয় তোক।

    উদ্দালক মৃদুস্বরে বলে–কিন্তু জানো বোধহয়, পিসিমা একটা ঘটনার আয়োজনে মেতেছেন। কী অসম্ভব উৎসাহে তার তোড়জোড় করছেন। তুমি লক্ষ্য করোনি হয়তো, কিন্তু আমি তো করেছি!..টাকার পাহাড়ের ওপর বসে আছেন মানুষটা, জীবনে কখনো একটা উৎসব করতে পাননি, বাড়িতে কাউকে একমুঠো খেতে ডাকতে পাননি। সেই রুদ্ধ আবেগকে বাঁধ ছেড়ে দিয়ে খুব একটা আহ্লাদ নিয়ে মেতেছেন, এসময় এতবড় একটা শক্‌

    সীমা ম্লান বিষণ্ণ স্বরে বলে,–শক তো উনি সব সময়ই পাবেন উদ্দালক! এ বরং ভালই হবে যে, অতটা আনন্দের পর হঠাৎ যবনিকা পতনের কষ্টটা সইতে হবে না। তাছাড়া অনেক লোক আসবে বলছ, ধর যদি কেউ চিনে ফেলে? যদি সেই সভার মধ্যে হাটে হাঁড়ি ভেঙে যায়?

    এ সম্ভাবনা যে উদ্দালকের মনের মধ্যে আসেনি তা নয়, তবে তার উত্তরটাও ভেবে রেখেছে সে। সেই উত্তরটাই বলে–ভাঙবে না কিছুই। এতদিন যে তুমি কোনও একখানে কারুর একজনের মেয়ের পরিচয়ে ছিলে, সে কথা তো জানেন পিসিমা! কেউ যদি হাঁড়ি ভাঙতে আসে, নতুন কোনও লোকসান ঘটাতে পারবে না!

    –অনেক লোকের সামনে দাঁড়াতে হবে ভেবে এখন থেকেই অস্থির হয়ে যাচ্ছি আমি উদ্দালক!

    –কিন্তু সীমা, তুমি তো বলেছ, এক সময় সিনেমা থিয়েটারে নামবার জন্যেও মরীয়া হয়ে উঠেছিলে তুমি। মনে কর না এটা তোমার সেই মঞ্চ! হাজার হাজার দর্শকের সামনে পড়েও ঘাবড়াবে না।

    –সে অভিনয়ের সঙ্গে কি প্রাণের কোনও যোগ থাকে উদ্দালক?

    –জানি,–উদ্দালক বলে–বুঝতে পারছি তোমার অসুবিধে, কিন্তু তবুও তোমায় মিনতি করছি, পিসিমার এই আহ্বাদটায় বাধা দিও না। তারপর একটা প্ল্যান আমার মাথায় এসেছে

    –আর প্ল্যানের কথা শুনতে ইচ্ছে নেই উদ্দালক!

    –আহা শোনই না মন দিয়ে। এতে হয়তো দুদিক রক্ষে হতে পারে। মানে হবেই।…এই উৎসবে তো আমার মা আসছেন? আমি ঠিক করেছি মার কাছে সব খুলে বলব। আর একথাও বলব–উদ্দালক মোহন একটু হাস্য করে–একথাও বলব–এই মেঘবরণ-কেশ কন্যাটিকে না পেলে আমার চলবেই না। অতএব–অতএবটা কি জানো? মাকে দিয়ে আস্তে আস্তে পিসিমাকে বলাব–ব্যাপারটা একটা ধাপ্পাই, তবে তুমি এর মধ্যে নেই। আসল নায়ক ওই ব্ৰজ উকিল, পার্শ্বনায়ক তোমার বাবা। আর তোমার বাবা যদি বলেন তুমি তার নিজের মেয়ে নও, পালিতা কন্যা, তোমার কি উপায় আছে তার সত্য মিথ্যা যাচাই করবার? তোমার ছোট ভাই বোনেরা ইনোসেন্ট, তুমিও তাই। এরপর আর তোমার আমার মধ্যে ব্যবধান কি?

    –থামো উদ্দালক–সীমা ক্লান্ত গলায় বলে, এতবড় একটা মিথ্যের ওপর জীবনটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব না। তার থেকে ধুলোয় লুটিয়ে যাক অপ্রতিষ্ঠিত অপরাধীর জীবন!

    উদ্দালক গভীর কণ্ঠে বলে–তাকাও আমার দিকে! এবার জবাব দাও! বল–অপরাধীর জীবনের জন্যে না হয় ধূলোয় লুটোনোর ব্যবস্থা, কিন্তু নিরপরাধীর জীবনের জন্যে ব্যবস্থাটা কি? বল?

    উদ্দালক! সীমা বেঞ্চটায় বসে পড়ে বলে–উদ্দালক, সব জেনেও আমায় ঘৃণা করছ না কেন? কেন তোমার মন ফিরিয়ে নিচ্ছ না?

    উদ্দালক তেমনি গভীর স্বরেই বলে–দেখ সীমা, বেশ গুছিয়ে টুছিয়ে কথা আমি বলতে পারি না, কাজেই এলোমেলো করেই বলছি–মন বস্তুটা কি ফিরিয়ে নেবার? ইচ্ছে করলেই ফিরিয়ে নেওয়া যায়? তাছাড়া–সব জেনে ফেলার পরই তো মনটা ছুটে এগিয়ে গেল! ঘৃণা করবার সময় পেল কোথায়? শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়েই তো–নাঃ বড্ড নাটুকে নাটুকে হয়ে যাচ্ছে কথাবার্তা!…মোটকথা, আমি তোমার ওসব নীতি দুর্নীতি বুঝি না, আমার প্রথম কথা, শেষ কথা, এবং একটাই মাত্র কথা, তোমাকে হারানো আমার চলবে না! লাভ করতেই হবে। তা সে ছলে বলে কৌশলে যে করেই হোক!…সাপ না মরুক লাঠিটা ভাঙবই–এ গোঁয়ার্তুমিতে দরকার কি? উল্টোটা যদি হয় সেটাই তো ভাল!

    –কিন্তু উদ্দালক, মন বলে তো একটা বস্তু আছে আমার?

    উদ্দালক এবার হাসে।

    মৃদু হাসির সঙ্গেই বলে-উঁহু সেটা আর তোমার নেই, সেটা আমার সম্পত্তি হয়ে গেছে!

    আরও খানিকক্ষণ বসে থাকে ওরা, আর শেষ পর্যন্ত উদ্দালকের মতেই মত দিতে হয় সীমাকে। অন্তত সুনন্দার এই উৎসবের আয়োজনটি সার্থক সুন্দর হতে দেবে সীমা।

    হতে দেবে যতদূর সম্ভব নিপুণ অভিনয় করে।

    তারপর?

    মুখ দেখাবার মুখ যদি না থাকে, মুখ তো দেখাবে না সীমা। এই লাঞ্ছিত মুখটা নিয়ে তলিয়ে যাবে অন্ধকারের অতলতায়।

    উদ্দালক বলে–যেতে দিলে তো!

    এরপর ফিরে আসে দুজনে গাড়িতে। আর তখনই ভাবতে থাকে সীমা…আমি কি শুধু উদ্দালকের অনুরোধ রাখতেই ফিরে এলাম? আমার মধ্যে কি আর কোনও কিছু কাজ করছে না? রায় বাড়ির উঁচু লোহার গেটের মধ্যে ফিরে না যেতে চাইলেই যে আমাকে সেই কলোনীর যতীন সেনের দাওয়ার ধারে গিয়ে দাঁড়াতে হবে, অবচেতনায় কি সেই স্পষ্ট বাস্তবটা দাঁত খিঁচিয়ে বসে নেই?

    তারপর সেখানে আর এখানে কত ধূলোর ঝড় উঠবে, কত পঙ্কিল আবর্তের সৃষ্টি হবে সেই সত্যভাষিণী সীমাকে ঘিরে, সে কথাও কি জানছে না সীমার মনের ভিতরের মন!

    ভাবতে ভাবতেই বাড়িতে এসে পৌঁছে যায়।

    আর সেই উঁচু লোহার গেটটা পার হয়ে বারান্দার মার্বেল পাথরের সিঁড়িতে পা রাখতেই অজান্তে একটা স্বস্তির নিশ্বাস পড়ে সীমার।

    এ বাড়িতে এসে পর্যন্ত একদিনের জন্যও তো স্বস্তি পায়নি সীমা, একবারের জন্যেও যথার্থ আশ্রয় বলে ভাবতে পারেনি, তবু আজ এই ছেড়ে চলে যাবার দৃঢ়সংকল্পের মুখে হঠাৎ যেন ভারী একটা স্বস্তির আশ্রয়ে এস পড়ার শাস্তি অনুভব করে সীমা!

    যেন বাঁচল!

    যেন বহু দুর্গতির ঝড় থেকে সরে জানলা দরজা লাগানো ঘরের মধ্যে এসে বসল।

    .

    বেরোবার মুখে সুনন্দা দুএকটা জিনিসের ফরমাস করেছিলেন। বলেছিলেন–ফেরার সময় কিনে আনিস তোরা।

    সেই ফরমাসটা মনে পড়ল বাড়ি ফিরে।

    উদ্দালক বলল–ওই যাঃ পিসিমার ঠাকুরের অগুরু আর চন্দন কাঠ আনা হল না!

    সীমা দাঁড়িয়ে পড়ে বলে–এখন মনে পড়ল? যাকগে আবার বেরিয়ে পড়, গ্যারেজ তো বন্ধ হয়নি এখনও।

    গ্যারেজ বন্ধ হয়নি, দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে–উদ্দালক হাতের ঘড়িটা দেখে নিয়ে বলে–রাত নটা তো বাজে প্রায়।

    সীতা হতাশ গলায় বলে–এত দেরী করলে তুমি! এখন ওঁকে কি করে যে মুখ দেখাব।

    ওঁকে না বলে মাকে বললেও পায়রা সীমা–উদ্দালক বলে–মা বলাটা আর এত কি শক্ত? সকলকেই তো বলা যায়!

    উদ্দালকের গলায় দুঃখের সুর।

    সীমা লজ্জিত হয়। আর বোধকরি লজ্জা ঢাকতেই হঠাৎ এক বেস কথা বলে বসে।

    বলে–এরপর আবার তো মা বদলে পিসিমা ডাকবার হুকুম হবে! বলেই মরমে মরে যায়।

    ছি ছি, বেহায়ার মত এ কী বলে বসল সে! এতক্ষণ ধরে সকলের সঙ্গে সম্পর্কছেদ করে চলে যাবার সংকল্প ঘোষণা করছিল বসে বসে উদ্দালকের কাছে?

    উদ্দালক আর সীমা করিডোেরটার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

    একটু দাঁড়িয়ে পড়ে উদ্দালক। সীমার বিপর্যস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে। মৃদু হেসে বলে–হুঁকুম আরও কতরকম হবে। সহজে পার পাবে না কি?

    .

    দুজনে একসঙ্গে সুনন্দার সামনে দাঁড়াবে এ সাহস হয় না সীমার, তাই পাশ কাটিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। উদ্দালক প্রমাদ গণে।

    এই দৃশ্যটা শোভন হল না।

    যতই সরল আর নির্মলচিত্ত হোন সুনন্দা, সীমার ওই চোরের মত ঝপ করে ঘরে ঢুকে যাওয়াটা নিশ্চয় তারও চোখে কটু ঠেকবে। ভাইবোন সম্পর্কটাকে যতই বড় করে তুলে ধরুন সুনন্দা, সত্যিই তো এক্ষেত্রে তত বড় নয়। একে তো মামাতো পিসতুতো ভাইবোনের স্নেহ প্রীতির বাড়াবাড়িটা তত উদারচক্ষে দেখতে পারে না লোকে, তার ওপর এ আবার সাতজন্মের অজানা অচেনা।

    বেশি উদার দৃষ্টিতে কে দেখবে?

    হারানো মেয়ে খুঁজে পেয়ে সুনন্দা তাকে বুকে ধরবেন বলে যে, সুনন্দার ভাইপোকেও তাই। ধরতে দেবেন, এ তো আর হতে পারে না!

    সন্দেহের চোখে দেখতে পারেন সুনন্দা।

    অতএব উদ্দালককেই চেষ্টা করতে হয়–আবহাওয়াকে সহজ রাখবার। চেঁচিয়ে বলতে হয়, তাড়াতাড়ি বদ্ধ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়বার দরকার নেই টুলু, বাইরে এসে হাওয়ায় বোস। বরং একটা সারিডন খা।

    সুনন্দা চমকে ওঠে।

    সুনন্দা কাতর গলায় বলে–কেন মাথা ধরল না কি?

    –মাথা তো তোমার কন্যার ধরেই আছে পিসিমা! দামী মাথা! সেই থেকে বলছি টুল বাড়ি চল ঠাণ্ডা লাগছে, তা নয় বাবু গঙ্গার ধারে বসে হাওয়া খাচ্ছেন! খাও হাওয়া!

    –এই দেখ কাণ্ড!

    সুনন্দা উদ্বিগ্ন হয়ে সীমার ঘরে এসে ঢোকে।

    না, সীমা এখন আর আড়ষ্ট হবে না। সীমা উদ্দালকের ওই সামলে নেবার অলৌকিক ক্ষমতা দর্শনে স্তম্ভিত হয়ে গেছে, লজ্জিত হয়ে উঠেছে। নিজেকে সামলে নেবার শক্তি খুঁজে পাচ্ছে।

    তাই সহজ ভাবে বলে ওঠে–কেন শোনেন মা ওর কথা? বাজে কথার রাজা! মোটেই মাথা ধরেনি আমার। ভাল শাড়িটা বদলাবো বলে তাড়াতাড়ি

    মা! মা!

    সীমার মুখে এমন সহজ কথা! সীমার মুখে একসঙ্গে এতগুলো কথা!

    সুনন্দা যেন বর্তে যায়, ধন্য হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি চেঁচিয়ে বলে–হ্যাঁরে দুলু, কী ছেলে রে তুই! শুধু-শুধু কি না–আর হারে টুলু, ভাল শাড়ি বলে তাড়াতাড়ি বদলাবার কী দরকার রে? আমি দেখি না একটু ভাল শাড়ি পরা মূর্তিটা! কত ভাল ভাল শাড়ি আলমারিতে পচছে, তুই আবার শাড়ি বাঁচাতে বসছিস! রাতদিন ভাল ভাল পরে বেড়াস তুই, এই আমার ইচ্ছে।

    সীমা একটু হেসে বলে–মায়া লাগে! দুটো ভিন্ন তিনটে শাড়ি একসঙ্গে পরিনি কখনো, সহ্য হয় না।

    সুনন্দা একটু থতমত খায়।

    তারপর সামলে নিয়ে বলে–সেই জন্যেই তো আরও বেশি করে সব পরবি, খাবি, খরচ করবি। এতদিনের শোধ তুলবি। তা হ্যাঁ রে টুলু, মনে কিছু না করিস তো একটা কথা বলি–যাঁরা এতদিন তোকে দেখাশুনা করেছেন, তারা তো তেমন অবস্থাপন্ন নন শুনেছি, তা তুই যদি চুপিচুপি তাদের হাতে কিছু দিস, নেবেন না?

    সীমা চমকে ওঠে।

    সুনন্দা যে হঠাৎ এমন একটা কথা বলে বসবে সেটা তার ধারণার মধ্যে ছিল না। সহজ ভাবটা তবে আর সহজে বজায় রাখে কি করে বেচারী?

    আস্তে বলে–হঠাৎ একথা কেন বলছেন?

    -না না, অন্য কিছু ভেবে বলিনি রে–সুনন্দা ব্যস্ত হয়ে ওঠে–মানে এতকাল যাকে মা বলে ডেকেছিস, তার প্রতিও তো একটা কর্তব্য আছে? ওই যে দুটো বৈ তিনটে শাড়ী না থাকার কথা বলছিস, তা তাঁর তো সে অবস্থা রয়েই গেল? তোর এত হল, তুই তাকে

    সীমা উত্তর দেয় না, মাথা হেঁট করে।

    হেঁট করে, হয়তো উত্তর দেবার ক্ষমতা থাকে না বলেই।

    সুনন্দা মৌনং সম্মতি লক্ষণং ধরে নিয়ে মহোৎসাহে বলে–ধর তুই জোড়া দশেক শাড়ী, দু। ডজন সায়া-ব্লাউস, অনেক করে তেল সাবান স্নো পাউডার

    সীমা হেসে ফেলে বলে–স্নো পাউডার?

    –আহা না হয় তা না হল, আরও যা সব দরকারি জিনিস আছে, অনেক করে কিনে নিয়ে তুই একদিন–মানে তুই উপহার দিলে অবিশ্যিই নেবেন।

    সীমার চোখে এবার জল আসে।

    কী নির্মল মন! কী পবিত্র দৃষ্টি! আর কী বিশ্বাসী হৃদয়!

    উনি সেই অবধি ধরেই থেকেছেন সীমার পূর্বজীবনের মা বাপ গরীব বলেই বড় বেশি আত্মসম্মান জ্ঞান তাদের। অথচ তাদের সাহায্য করতে ইচ্ছে এঁর হৃদয় উজাড় করে!

    এই মানুষকে ঠকাতে এসেছে সীমা। ঠকাচ্ছে, ঠকিয়ে চলেছে।

    শুধু কি হারানো মেয়ে সেজেই ঠকাচ্ছে? উদ্দালকের সঙ্গে গোপন এক সম্পর্ক গড়ে, চাতুরীর জোরে চাপা দিয়ে রাখছে না? প্রতিনিয়ত ঠকিয়েই চলেছে এঁকে সীমা!

    .

    সুনন্দা দেখে সীমার চোখে জল।

    ভাবে, তাদের জন্যে মনটা এখনো পুড়ছে মেয়েটার। তাহলে বলতেই হবে মায়ার প্রাণ!

    হবে বৈ কি। হবে না? কেমন মানুষের মেয়ে! কী মায়ার প্রাণই ছিল তার! স্বামীর কথা স্মরণ করে বুকটা ব্যথায় টনটনিয়ে ওঠে সুনন্দার। দেখতে পেলেন না। শূন্যপুরী পূর্ণ হয়ে ওঠা দেখতে পেলেন না।

    তারপর ভাবে, আমার মত হয়নি, তার মত হয়েছে মেয়েটা, মায়া মমতায়-ভরা বুক, কিন্তু চাপা।

    যেখানে যে পরিবারেই মানুষ হোক, মূল কাঠামোর গুণ যাবে কোথায়? আচ্ছা, এই সব জিনিসপত্র কিনে গোছ করে একদিন পাঠিয়ে দেব সীমাকে, দিয়ে আসবে। আগে ভেবেছিলাম ওদের সঙ্গে আদৌ আর মেলামেশা না করা, এখন মনে হচ্ছে সেটা ভুল হবে। জোর করে কিছু সুফল হয় না। কোনও ক্ষেত্রেই না। নিজে থেকেই হবে। আস্তে আস্তেসহজে। যেমন করে বাপের বাড়ির মেয়ের মন বসে শ্বশুরবাড়িতে।

    সে ক্ষেত্রেও তো বড় হয়ে যাওয়া মেয়েই। তবু প্রথমটা তারা শ্বশুরবাড়ি আসতে কাঁদে, পরে বাপেরবাড়ি যাবার সময় পায় না।

    সুনন্দা হাসে একটু মনে মনে–তবে তারা একটা বাড়তি পায়, বর। একেও বর দিতে হবে একটা তাড়াতাড়ি। তারপর সুনন্দা সেই নবীন যুগলকে নিয়ে….ভগবান এত দুঃখের পর এত সুখও লিখেছিলে সুনন্দার জন্যে!

    মেয়েটা মুখটা শুকিয়ে বসে আছে।

    এবার অন্য প্রসঙ্গে আসে সুনন্দা। ….দুলু, আমার ধূপ চন্দন কাঠ?

    দুলু সাড়া দেয়।

    ধূপ চন্দন কাঠ? জিগ্যেস কর তোমার আদরের মেয়েকে। রাত নটা বাজিয়ে দিলেন গঙ্গার ধারে বসে। দোকানদাররা যেন দরজা খুলে বসে থাকবে ওর জন্যে!

    সুনন্দা ব্যস্ত হয়ে বলে-থাক বাপু, আমার কিছু আর অচল হচ্ছে না ওর জন্যে। কাল আনলেই হবে!

    তারপর বোধকরি সীমাকে উৎসাহ দিতেই সুরু করে সুনন্দা, আগামী উৎসবের আলোচনা।

    –তোকে এবার মামা মামী দেখাব, বুঝলি টুলু। দেখিস কী মানুষ! বৌদি তো ভালই, তবে দাদার তুলনাই হয় না। আমার যে যেখানে আছে সবাইকে আমি নেমন্তন্ন করব দুলুর পাশকরা উপলক্ষে।

    উদ্দালক কটাক্ষপাত করে সীমার দিকে, বলা বাহুল্য উৎসাহের লেশ দেখে না সেখানে। তাড়াতাড়ি আবহাওয়া সরস করে নেবার চেষ্টা করে,–উপলক্ষ! শুনে রাখ টুলু, নট লক্ষ্য। লক্ষ্যটি কে বুঝতেই পারা যাচ্ছে। ভাল ভাল! কিন্তু পিসিমা, খাওয়া দাওয়ার দিকে একটু লক্ষ্য করলে ভাল হত না এবার?

    এই একটা প্রসঙ্গ, যে প্রসঙ্গ তুললে সুনন্দা গুরু ইষ্ট ভুলে যায়। খিদে পেয়েছে কারও একথা শুনলেই সুনন্দা ষাট ষাট করে ছুটে যায় তার ব্যবস্থায়।

    গেল।

    টুলু উদ্দালকের দিকে তাকাল।

    টুলু আস্তে বলল,–ওই সবের আগেই আমি পালাব!

    উদ্দালক গভীর দৃষ্টিতে তাকায়।

    — গলা নামিয়ে বলে তাহলে আমাকেও পালাতে হবে।

    –তোমাকে?

    -হ্যাঁ! না-তো কি? ফিরিয়ে আনবার সাধনা করতে খুঁজে ফিরতে হবে!

    সীমা মাথা নীচু করে।

    সীমা এই পরম ঐশ্বর্যকে হেলায় ত্যাগ করে চলে যাবে, কলোনীর যতীন সেনের কাছে গিয়ে আশ্রয় চাইবে?

    .

    এমনি দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে চলে দিন। এগিয়ে আসে সেই দিন।

    ভোরবেলা উদ্দালককে ডেকে তোলে সুনন্দা-ওরে গাড়ি নিয়ে স্টেশনে যেতে হবে যে? উদ্দালক পাশ ফিরে বলে–তার এখনো তিন ঘণ্টা দেরী। সাড়ে আটটায় গাড়ি আসবে।

    -দেখো মুশকিল, সাড়ে আটটা কোথা? ব্রজবাবু যে বললেন আটটা সাতাশ মিনিটে এসে ইন করবে।

    –আটটা সাতাশ! ব্রজবাবু বলেছেন?

    হেসে ওঠে উদ্দালক–মানতেই হবে ব্রজবাবুর থেকে অনেক বেশি গাঁইয়া আমি। সেকেন্ড মিনিট দিয়ে সময়ের হিসেব করতে শিখিনি, শুধু ঘণ্টাই জানি। কিন্তু এখন আমি কিছুতেই উঠব না। কেটে ফেললেও না। আটটা সাতাশে স্টেশনে যেতে হবে বলে, পাঁচটা পঁচিশ থেকে তোড় জোড় করতে পারব না আমি।

    –অভদ্র ছেলে! তোর না নিজের মা বাপ!

    –তাকে কি! নিজের পরের তফাৎ কিছু নেই আমার! তোমার মা বাবা স্টেশনে এলেও ঠিক একই ব্যবহার করতাম আমি।

    –আমার মা বাপ?

    সুনন্দা গালে হাত দেয়। বলে–মনেও বা পড়ল তোর। জীবনে দেখিস নি তাদের

    –তাতে কি, ছিলেন তো? সেটা তো অস্বীকার করা যায় না?

    বলতে বলতে উঠেই বসে। বলেনাঃ মৌজের ঘুমটাই নষ্ট করে দিলে! আর শুয়ে কি হবে?

    সুনন্দা হাসতে হাসতে চলে যায়।

    উদ্দালক ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ায়, আর ঠিক সেই মুহূর্তেই বারান্দার ওপ্রান্তে এসে দাঁড়ায় আর একটা মানুষ।

    সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে পূবের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে সে। উদ্দলককে দেখতে পায়নি।

    উদ্দালক দূরে থেকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ, তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়।

    সীমা চমকে ওঠে। সীমা চোখ তুলে তাকায়। মৃদুস্বরে বলে–এক্ষুণি উঠেছ যে?

    উদ্দালক আজ আর হেসে উঠে উত্তর দেয় না। গভীর দৃষ্টি মেলে বলে,–সে কথা তো আমিও জিগ্যেস করতে পারি।

    –আমি রোজই এ সময় উঠি। আরও আগেই উঠি। বেশি ভোরে ঘর থেকে বেরোতে অস্বস্তি হয় তাই

    উদ্দালক তেমনি স্বরেই বলে–খানিকটা ঘুমের আরামের জন্যে রোজ কতটা করে লোকসান ঘটিয়েছি তাই ভেবে আপশোষ হচ্ছে।

    –লোকসান? কিসের লোকসান?

    –এই দৃশ্যটির! তুমি এসে পূব আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়ালে, মনে হল যেন-কোন শিল্পীর আঁকা ছবি!

    -ঠাট্টা করা হচ্ছে?

    –ঠাট্টা নয় সীমা সত্যিই!

    –ছবির মত দেখতে বলে কোনও অহঙ্কার তো কোনদিন ছিল না,সীমা মৃদু হেসে বলে–হঠাৎ কি করে ভাবি ঠাট্টা নয়, সত্যি?

    তুমি ছবির মত দেখতে, একথা তো বলিনি। বলেছি–দৃশ্যটা যেন শিল্পীর আঁকা ছবি! ভুল নয় সেটা। মহাশিল্পীর হাতের ছাপ পড়েছে এখানে। ওই পূব আকাশ, এই ভোরের রং। এই স্নিগ্ধ শান্তিবহা বাতাস

    –ওমা আবার এখন গল্প করতে বসলি?

    পিছন থেকে সুনন্দার স্বর শোনা যায়। স্নান সেরে এসে পূজো করতে যাচ্ছে। শাদা গরদের থান, হাতে ফুলে ভর্তি সাজি।

    না, সন্দেহের গলায় অভিযোগ করে ওঠেনি সুনন্দা, সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় নি। শুধু ব্যস্ততার ছাপ তার চোখে মুখে।

    উদ্দালক একটু হেসে বলে–পিসিমা, একটা কথা বোধ হয় ভুলেই গেছ?

    –কি ভুলে গেছি?

    –তোমার দাদাটির শৈশব পার হয়ে গেছে, এবং হাওড়া স্টেশনে এসে ট্রেন থেমে পড়ে, ছুটে পালায় না?

    –শোনো কথা আমি যেন তাই বলছি। মুখ ধুবি, চা খাবি, কাজ নেই বুঝি? টুলু সাজবে টাজবে

    উদ্দালক এবার জোর হেসে উঠে বলে–সাজবে? বিয়ে না কি?

    –আহা সাজবে মানে, ইয়ে একটু পরিষ্কার টরিষ্কার হবে তো? মামা মামী এই প্রথম দেখবে।…টুলু তুই তোর সেই হালকা নীল রঙের নাইলন শাড়িটা পরে নিস কেমন? আর সেই সোনালী বুটি-ব্লাউসটা

    –আর তোর সেই হীরের মুকুটটাউদ্দালক বলে–মুক্তোর মালাটা, পান্নার দুলটা

    -থাম বাছা, সকাল বেলা খালি কাজ পণ্ড! ঠিক সময় স্টেশনে যাবি, এই বলে দিয়ে চললাম পূজোর ঘরে।

    সেই দিকে তাকিয়ে সীমা নিশ্বাস ফেলে বলে–উনি যদি এত ভাল না হতেন, হয়তো আমার কাজ অনেক সোজা হত।

    .

    খানিক পরে বেরিয়ে যায় উদ্দালক গাড়ি নিয়ে।

    খানিক পরে এসে পড়েন উদ্দালকের মা মামা। এসে পড়ে তাদের ছোট তিনটি ছেলে মেয়ে।

    দাদা দাদা করে অস্থির করে তারা উদ্দালককে।

    সুনন্দা বলে,–চল এবার দিদি দেখবি। দাদা তো দেখা, দিদি নতুন।

    .

    এতদিন ধরে মনের মধ্যে এমনি কত চিন্তাই চলছিল সুনন্দার।

    কেমন করে পরিচয় করাবে টুলুর সঙ্গে সকলের, কেমন করে সবাইকে দেখাবে তার ফিরে পাওয়া হারানো নিধিকে। তারপর উৎসবের স্রোত ববে।

    তলায় তলায় আয়োজন করিয়েছে গানের, বাজনার, ম্যাজিকের।

    সন্ধ্যার দিকে আসবে তারা।

    খাওয়া দাওয়ার আয়োজনের অবসরে চলবে এই চিত্ত বিনোদনের পালা।

    দীর্ঘকালের শোকভারাক্রান্ত মন, যেন সেই ভার ফেলে দিয়ে পুতুল খেলায় মেতে উঠেছে।

    কিন্তু অন্য আর এক জায়গায় চলছিল না কি আর এক খেলা? হ্যাঁ চলছিল যতীন সেন আর ব্রজ উকিলের মধ্যে।

    তাদের সম্পর্কটা মনোমালিন্যের–ওঠা পড়ার কোঠা থেকে ক্রমশ গিয়ে পড়েছে পরম শত্রুতার পর্যায়ে। তাই মনে মনে চরম পথ বেছে নিয়েছে কাণ্ডজ্ঞানহীন গোঁয়ারগোবিন্দ যতীন সেন। অনেক আশার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে তার।

    বড় আশা ছিল ওই গিন্নীটার কাছে মায়া কাড়িয়ে ছলে কৌশলে অবিরত টাকাকড়ি জিনিসপত্র আদায় করে লুকিয়ে লুকিয়ে পাচার করবে সীমা, ঢেলে দিয়ে যাবে তার অভাবগ্রস্ত বাপের সংসারে, নয় একদিন এসে মা বাপকে যাচ্ছেতাই শুনিয়ে দিয়ে গিয়ে নিজে রাজকন্যা হয়ে রাজসুখ করতে লাগলি? মেয়ে না পিশাচী?…অবস্থাটি কেমন? সোনার খাটে গা, রূপোর খাটে পা, রাতদিন হাওয়াগাড়ি চড়ে হাওয়া খাচ্ছেন।…আবার সঙ্গে নাকি সেই বজ্জাত ছোঁড়াটা লেগে থাকে। গিন্নী না হয় জানেন সম্পর্কটা ভাই-বোন। তুই হারামজাদী তো জানিস সব? তার মানে ছোঁড়াটার সঙ্গে ল করছিস তুই।

    যত ভেবেছে, আর জ্বলে পুড়ে মরেছে যতীন সেন, অবশেষে একদিন ঘোষণা করলে তীব্র সংকল্প।

    –ঠিক আছে, মরি মরব মেরে মরব। আমি ব্যাটা যে ভিখিরি সেই ভিখিরি থাকলাম, কন্যে আমার গিয়ে রাজসুখ করবেন? অসহ্য! প্রকাশ করে দেব সব ষড়যন্ত্র। ফাঁস করে দেব সব জালিয়াতি।

    যতীন গিন্নী ভয়ার্ত গলায় বলে–তা ফাস করতে গেলে তো নিজেও ফসবে গো! হাতে দড়ি পড়বে!

    পড়ুক! তার সঙ্গে ওই হারামজাদীরও পড়বে। নাবালিকা নয় যে, বলবে বোঝেনি, ভুলিয়ে ওকে দিয়ে করিয়েছে লোকে!

    –ভেবে দেখ ভাল করে বাপু,

    –দেখেছি ভেবে। অনেক ভেবেছি।

    -আমি ভাবছি একে তো দুঃখের দশা, আবার ইচ্ছে করে থানা পুলিসের হাতে পড়তে যাবে? এগুলো যে না খেয়ে মরবে!

    –মরবে না! এই আমি হতভাগা বিদেয় হলেই দেখবে পাড়ার লোকেরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে সাহায্য করতে

    –হ্যাঁ পাড়ার লোক কত মহৎ!

    হবে মহৎ!

    যতীন সেন কুটিল হাসি হেসে বলে,–গার্জেনহীন বাড়িতে রূপসী তরুণী থাকলে পাড়ার লোক মহৎ হয়। তোমার বড়মেয়ের তো রূপের বালাই নেই, এটা তো সুন্দরী।

    কথাটা অবশ্য সুন্দরী মেয়ের মার খুব ভাল লাগে না। বিরক্ত গলায় বলে জানি না, যা বোঝো কর।

    কিন্তু বুঝে সুঝে তো কিছু করছে না যতীন সেন, অবুঝ গোঁয়ারের মতই করতে ছুটছে। সর্বনেশে কাজটা।

    .

    এবাড়িতে তখন বসেছে সেই উৎসবের আসর। বাড়িটা গমগম করছে লোকে, ঝকঝক করছে আলোয়, মুছিত হচ্ছে সঙ্গীতের সুরে।….ভিতর থেকে ভেসে আসছে লোভনীয় খাদ্যের সুঘ্রাণ। যা নিমন্ত্রিতের ক্ষুধা আর আগ্রহ বাড়াচ্ছে।….মরীয়া যতীন সেন সেইখানে এসে দাঁড়াল কুৎসিত এক ছন্দ পতনের মত।

    কেমন করে যেন গেটে দাঁড়ান দ্বাররক্ষীর চোখ এড়িয়ে কাদের পিছনে পিছনে এসে ঢুকে পড়েছে একেবারে ভিতরের হ-এ।

    উদ্ভ্রান্ত চোখ উদ্ভ্রান্ত ভাব।

    হয়ত এই উদভ্রান্ত ভাবটা এতটা হত না, যদি না ঘরে ঢুকে দেখত মুক্তামালার মধ্যমণি হীরক খণ্ডের মত আসরের ঠিক মাঝখানটিতে সীমা বসে আছে বেশে ভূষায় ঝকমকে হয়ে।

    ওই রাজদুলালীটি এই হতভাগ্য যতীন সেনেরই মেয়ে! যাকে না কি যতীন সেনই কৌশল করে ওইখানে পৌঁছে দিয়েছে।

    আর অকৃতজ্ঞ পাজী মেয়ে কি না সেই বাপকে আর পুঁছছে না?

    ওকে ফাঁসিয়ে নিজে ফঁসবে যতীন সেন।

    আর তবে কিসের বাধা?

    চড়া কুৎসিত গলায় অতএব চেঁচিয়ে ওঠে যতীন সেন–এই যে কন্যে আমার! মহারাণীর বাড়ির পুষ্যি হয়ে খুব লঞ্চপানি দেখাচ্ছিস যে দেখছি! হতভাগা বাপ মা ভাই বোন খেতে পাচ্ছে কি পাচ্ছে না, তার খোঁজও করছিস না। একটা দিন মাত্তর মস্ত গাড়ি হাঁকিয়ে গিয়ে মুষ্টিভিক্ষে দিয়ে এলি, তারপর? পেট কি একদিন খেয়ে চুপ করে থাকবে?

    এক ঘর লোক স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। এ দৃশ্যের অর্থ দুর্বোধ্য। কয়েকটা মুহূর্ত স্তব্ধতা, তারপরই বিরাট একটা রোল ওঠে–পাগল! পাগল! গোলমালে একটা পাগল ঢুকে পড়েছে। গেটে কেউ নেই না কি? দাড়োয়ান কি করছে?

    কেউ ধরতে যায়, কেউ মারতে যায়, একজন ঘাড়ে হাত দেয়।

    –বেরিয়ে যা! বেরিয়ে যা ব্যাটা!

    কী মুশকিল! এই আহ্বাদের মাঝখানে হঠাৎ পাগলটা এসে

    ওদের কথা শেষ হতে পায় না।

    ভীড় সরিয়ে এগিয়ে আসে বসন ভূষণে উজ্জ্বল এক মেয়ে।

    আজকের উৎসবের যে মধ্যমণি!

    এসে দাঁড়ায় পাগলবেশী লোকটার কাছে! সকলের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে স্থিরগলায় বলে–পাগল নয়।

    -পাগল নয়?

    –না পাগল নয়।

    –কে তবে? জানো তুমি, কে ও?

    আমার বাবা!

    –তোমার বাবা!

    –হ্যাঁ আমার বাবা!

    ভীড় পাতলা হয়ে যায়, এদিক ওদিকে সরে যায় সবাই। যারা উঠে দাঁড়িয়েছিল, বসে পড়ে।

    সুনন্দা এগিয়ে আসে।

    সুনন্দা বুঝতে পারে এতদিন কেন ওর সেই–বাবা সুনন্দার সঙ্গে দেখা করেনি। আসল কথা দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ক্ষ্যাপা ক্ষ্যাপা মতন আর কি!

    কিন্তু সুনন্দার স্নেহ সবাইয়ের জন্যে।

    তাই সুনন্দা কোমল স্বরে বলে-ও, তোমার সেই পালক বাবা?

    –না, আমার নিজের বাবা! সত্যিকার বাবা, যার ঘরে জন্মেছি, যার অন্ন খেয়ে বড় হয়েছি।

    সীমার কণ্ঠে দৃঢ়তা। সীমার চোখে বেপরোয়া দুঃসাহসিক সংকল্পের ছাপ!

    উদ্দালক এখন এই ভয়াবহ মুহূর্তে কী করতে পারে?

    উদ্দালক কি এগিয়ে গিয়ে বলবে–এই টুলু কী হচ্ছে? বুঝলাম ওঁর প্রতি তোর কৃতজ্ঞতা আছে, তাই বলে ওঁকে প্লীজ করবার জন্যে এতটা ইয়ে করা উচিত নয়।

    নাঃ উদ্দালকের পক্ষে সম্ভব নয়, এখন কোনও কিছু বলা।

    উদ্দালক অনুভব করছে এ সময় সীমার কাছে গিয়ে তাকে কথার জালে নিবৃত্ত করতে যাওয়াটা হবে পাগলামী। সে চেষ্টার ফল হবে সীমার সঙ্গে উদ্দালকের নিবিড় আর গভীর সম্বন্ধটুকু ফঁস হয়ে যাওয়া।

    তাই উদ্দালক তাকিয়ে থাকে নিরুপায় দর্শকের দৃষ্টিতে।

    তাকিয়ে দেখে আরক্তমুখ সুনন্দা রুদ্ধকণ্ঠে বলছে,

    -তবে? তবে যে ব্রজনাথ বাবু

    –সবে মিথ্যে কথা, সব গল্প! বানানো কাহিনী!

    –সব বানানো কাহিনী?

    সুনন্দার কপালের শির ফুলে উঠছে, সুনন্দা তাকিয়েও দেখছে না তার নিমন্ত্রিতদের দিকে, সুনন্দা তীব্রস্বরে বলে চলেছে–বানানো কাহিনী? কেন? কেন? কেন?

    সীমা অচঞ্চল–কেন, বুঝতে পারছেন না? আপনার অগাধ টাকা, আপনার উত্তরাধিকারিণী সেজে এসে বসলে, সে টাকা আস্তে আস্তে চলে যাবে এই যতীন সেনের হাতে, ওই আপনার পরম হিতৈষী ব্রজবাবু উকিলের হাতে। তাদের সাজানো পুতুল সিন্দুকের চাবি হস্তগত করে ধরে দেবে তাদের কাছে, ধরে দেবে রায় কোম্পানীর মালিকানা।…বুঝতে পারছেন এবার?…ও কি ব্রজবাবু ওপাশ থেকে সরে পড়ছেন কেন চোরের মত? বসে থেকে নাটকের শেষ দৃশ্যটা দেখুন? অভিনয়টা বেশ জমেছে না?

    সুনন্দা উন্মাদ গলায় বলে ওঠেন, রঘু গেটে চাবি দে। কেউ যেন বেরিয়ে যেতে পারে না।….ব্রজবাবু বলুন একথা মিথ্যে? বলুন, বলুন আপনি!

    ব্রজনাথ মাথা নীচু করেন।

    সুনন্দা হয়তো সত্যিই উন্মাদ হয়ে গেছে, তাই সুনন্দার দাদা কাছে এসে যতই বলতে থাকেন–এই নন্দা বোস! মাথা খারাপ করিসনে, ভাল করে বুঝতে চেষ্টা কর ব্যাপারটা

    সুনন্দা ততই উত্তেজিত হয়।

    যতীন সেনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে-আর আপনি? আপনিও বলবেন একথা সত্যি?

    যতীন সেনও সুনন্দার মতই উত্তেজিত উন্মাদ।

    –সত্যিই তো! ষোলো আনা সত্যি। কেন সত্যি হবে না? আমি গরীব, আমার অভাব, স্বভাব নষ্ট তো হবেই? আজকাল এ নষ্ট কার না হচ্ছে? মেয়ে দিয়ে সংসারের ডুবো নৌকো কে না টেনে তুলছে? কে না তাকে ভাঙিয়ে খাচ্ছে? যে যেমন পারছে।….আমার সামনে প্রলোভনের ছবি ধরেছেন ওই আপনার উকিলবাবু।

    –আপনি থামুন, আপনি থামুন-সুনন্দা এবার সীমার দিকে তাকায়। তারপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তার হাত ধরে বলে–কিন্তু তোক যে আমি আমার সেই হারানো টুলু বলেই জেনেছি। ওরে টুলু, তুই একবার বল্ একথা মিথ্যে। বল্ এটাই কোনও নতুন ষড়যন্ত্র। আমার বুক ভেঙে দেবার জন্যে কোনও রাক্ষস এই মতলব ভেঁজেছে বসে বসে। তুই সেই জাল ছিঁড়ে দে। বল্ মা, যা বলেছিস মিথ্যে–

    –মিথ্যে নয় মা!

    –নয়? নয়? মিথ্যে নয়? তবে কোন মুখে মা বলে ডাকছিস শয়তানী? দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে।…না দূরই বা হবি কেন? তোকে আমি পুলিশে দেব। তোদের সব কটাকে জেলে পুরবো। মায়া বাড়িয়ে এখন আবার মা বলতে আসছে!….তাই তাই-তাই তোর মা ডাকতে জিভ আড়ষ্ট হয়ে যেত! তাই আমার স্নেহের সমুদ্র দুহাতে ঠেলে সরিয়ে দিতিস, তাই সব সময় তোর চোরের মত ভাব ছিল!….এখন বুঝতে পারছি। সব বুঝতে পারছি–

    চিরদিনের শান্ত মানুষটা যেন ক্ষেপে উঠেছে, তাই এমন শক্ত করে চেপে ধরছে সীমার হাত যে, রক্ত জমে উঠছে তার। সীমা হাতটা ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে। পারে না।

    আস্তে বলে, হাতটা ছেড়ে দিন, লাগছে।

    ছেড়ে দেব? ছেড়ে দেব তোকে আমি? জেলে দেব না?

    .

    –পিসিমা!

    উঠে আসে উদ্দালক। জোরালো গলায় বলে কী পাগলামি হচ্ছে? বোসা তো শান্ত হয়ে?

    শান্ত হয়ে? শান্ত হব আমি?

    সুনন্দা বসে পড়ে।

    আর এবার হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠেভগবান! কত মহাপাপ করেছিলাম আমি, তাই এমনি করে হরিষে বিষাদ করলে।

    .

    হল-এ যে যেখানে ছিল, যেন পাথরের পুতুল হয়ে গিয়েছিল, সুনন্দার দাদা বাদে। তিনি উঠে গিয়ে হল-এর শেষপ্রান্তে পৌঁছে ব্রজ উকিলকে প্রশ্ন করছিলেন কটু কঠিন চাপা গলায়। এবার তিনি যতীন সেনের সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেন কী চান আপনি? টাকা? কত টাকা? হাত পেতে চাইলে পাবেন সে টাকা; বলুন কত চান? হাজার, দুহাজার? পাঁচ হাজার?….আমার এই বোনটিকে দেখছেন? এঁর কাছে যদি আপনি ওই টাকাটা চান, হাসতে হাসতে দিতে পারেন ইনি, একসময় আপনি এঁর হারানো মেয়েকে পালন করেছেন বলে। কিন্তু যদি প্যাঁচ কসে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করতে চান, ফল ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।

    হ্যাঁ, এই ভাবেই আপাতত শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চেষ্টা করেন সুনন্দার দাদা। সত্যি মিথ্যে পরে বোঝা যাবে, এখন লোকসমাজে মানটা রাখতে হয়।

    কিন্তু তোক কি ঘাসের বীচি খায়?

    সুনন্দার এই মেয়ে খুঁজে পাওয়ার পর থেকে আত্মীয় মহলে কি সন্দেহের চাষ চলছিল না? সুনন্দার মত দেখতে নয়, নয় শোভনের মত দেখতে; হঠাৎ কোথা থেকে না কোথা থেকে ধাড়ি একটা মেয়ে এসে রাজ্যপাটে বসল, এটা সহ্য করা সোজা না কি?

    যতীন সেন আকস্মিক এহেন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না, তাই এদিক ওদিক তাকায়, তারপর মেজাজি গলায় বলে ওঠে–তাই দিন। দিয়ে দিন হাজার পাঁচেক টাকা, চলে যাচ্ছি।

    –দেব! আপনি বাইরে চলুন। মনে করেছিলেন এই রকম একটা সীন ক্রিয়েট করলেই সবাই আপনার কথা বিশ্বাস করবে। আর ওই বেচারী মেয়েটা–যে না কি এ যাবকাল আপনার কাছে প্রতিপালিত হয়েছে সে, সাধারণ ভদ্রতা এবং কৃতজ্ঞতার বশে নিশ্চয়ই আপনাকে সমর্থন করবে। সে মতলব আপনার কিছুটা হাসিল হয়েছে; তবে চালাকি দিয়ে চিরদিন ঠকানো যায় না, মনে রাখবেন সেটা। একবার দেব টাকা, কিন্তু আপনি যে বারে বারে এসে মোচড় দেবেন; তা চলবে না। চলুন, চলুন আমার সঙ্গে।

    যতীন একবার জ্বলন্ত দৃষ্টিতে ব্রজনাথের দিকে তাকায়, ভাবে ওই বুড়োই নিশ্চয় আমায় ফাঁদে ফেলবার তাল করছে, নিজে এর ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। নইলে এক কথায় টাকা দিতে রাজী হয়? পরীর গল্প না কি! আর কিছু না, বাইরে বার করে নিয়ে গিয়ে দুঘা রদ্দা দিয়ে ছেড়ে দেবে।…তবে গেট বন্ধ, আর ওই মহিলাটি তো উগ্রচণ্ডী হয়ে রয়েছেন। মেজাজ দেখিয়ে লাভ নেই। টাকা দেবে, এ হতেই পারে না। তবু দেখাই যাক! এক মাঘে তো শীত পালায় না।

    তাই ব্রজনাথকে ভস্ম করে ফেলবার ইচ্ছে পরিত্যাগ করে ব্যাজার ভাবে বলে,–টাকা যে কত দেবেন বোঝাই গেছে। বেশ চলুন!

    .

    -না।

    সীমা এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন এই ঘরভর্তি লোকের কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না। শুনতে পাচ্ছিল না কারও কথা! এখন শুনতে পেল। তাই এগিয়ে এসে শান্তদৃঢ় গলায় বলল–না!

    সুনন্দা সেই ক্লান্ত কণ্ঠে জোর এনে বলে–সব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রায় কোম্পানীর বিরাট সম্পত্তি তিলে তিলে গ্রাস করে আশা মিটছিল না ওঁর, তাই জাল পেতে–থেমে যায়, রুদ্ধকণ্ঠ পরিষ্কার করে নিয়ে আবার বলে–এদের যেতে দে দুলু, ওঁকে আটকা।

    .

    টাকাটার কথা তাহলে ফাঁকা?–মরিয়া যতীন সেন ব্যঙ্গহাসি হেসে কটু প্রশ্ন করে। এবং সমবেত অভ্যাগতরা এইবার হৈ হৈ করে ওঠে–টাকা! আবার টাকার নাম করতে লজ্জা করছে না? অনেক ভাগ্য যে ছাড়া পাচ্ছ, নইলে দশবছর ঘানি ঘোরাতে হত!…আমাদের কিন্তু মনে হচ্ছে মিসেস রায়, ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। এই জাল মেয়ে আর তার বাবা দুজনেরই রীতিমত শাস্তি পাওয়া দরকার। মেয়েটি তো শিশু নয় যে, না বুঝে কিছু করেছে। এ সব মেয়ে সমাজ ধ্বংসকারী আগুন! কোনও সেন্টিমেন্টের মুখ চেয়ে একে ক্ষমা করা যায় না। ক্ষমা করা উচিত নয়।….

    অনেকের কণ্ঠ হতে ঝরে পড়ে কথাগুলো নানা আকারে।

    সুনন্দা সকলের দিকে তাকায়।

    তারপর ক্লান্ত গলায় বলে জানি। মানছি তোমাদের যুক্তি, তবু জিগ্যেস করি, যদি তোমরা কখনো ভুল করে শালগ্রাম ভেবে একটা পাথর নুড়িকে পূজোর সিংহাসনে বসিয়ে অনেক দিন ধরে পুজো কর, ভুলটা ধরা পড়লে কি সেই নুড়িকে সিংহাসন থেকে টেনে এনে জুতোর তলায় মাড়াতে পারো? বল পারো কি মা? বল? বল?

    .

    না, বলতে সেদিন পারেনি কেউ–হ্যাঁ পারি মাড়াতে!

    বলতে বলতে আরক্ত-মুখ সুনন্দা বাড়ির মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল, খোলা গেট দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল যতীন সেন আর সীমা, বেরিয়ে গিয়েছিল ব্রজ উকিল।…তবে সুনন্দার দাদা কঁচা কাজ করেননি, খবর দিয়ে রেখেছেন পুলিসের ঘরে, পাশের ঘরে গিয়ে ফোনের রিসিভার তুলে।

    আসল আসামী জালে পড়লে, ওদের জন্যে ভাবতে হবে না। ঠিক ধরা পড়বে, সীমা–আর সীমার বাপ। এখন সুনন্দা ভয়ানক একটা সেন্টিমেন্টের বশে ছেড়ে দিচ্ছে, দিক। শাস্তি ওদের পেতেই হবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশুধু তারা দু’জন – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article নদী দিকহারা – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }