Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মার্ক টোয়েন গল্পসমগ্র

    মার্ক টোয়েন এক পাতা গল্প767 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    একটি মধ্যযুগীয় রোমান্স

    একটি মধ্যযুগীয় রোমান্স
    A Medieval Romance

    ০১-রহস্য প্রকাশ হল

    অনেক রাত। ক্লুগেনস্টিন-এর অতি প্রাচীন সামন্যযুগীয় দুর্গে গভীর স্তব্ধ তা বিরাজ করছে। ১২২২ সাল শেষ হয়ে আসছে। অনেক উপরে দুর্গের সব চাইতে উঁচু চূড়ায় একটি মাত্র আলো জ্বলছে। সেখানে একটি গোপন সভা বসেছে। ক্লগেনস্টিন-এর বৃদ্ধ গম্ভীর মালিক রাজকীয় আসনে বসে মধ্যস্থতা করছে। এক সময় নরম গলায় সে বলল: মা আমার।

    পা থেকে মাথা পর্যন্ত যোদ্ধার বর্মে-কর্মে সজ্জিত উপস্থিত যুবকটি বলল: বল বাবা!

    কন্যা, যে রহস্য সমস্ত যৌবন-কালটা তোমাকে ঢেকে রেখেছে এবার যে তাকে উন্মোচনের সময় হয়েছে। এ রহস্য কেন সৃষ্টি করা। হয়েছিল সে কথাই খুলে বলছি। আমার দাদা উরিশ হল ব্র্যাণ্ডেনবুর্গ-এর ডিউক। আমাদের বাবা মৃত্যুশয্যায় নির্দেশ দেন যে উরিশ-এর যদি কোন পুত্র-সন্তান না জন্মে তাহলে আমার বংশই তার উত্তরাধিকারী হবে, অবশ্য যদি আমার কোন পুত্র-সন্তান জন্মে। তিনি আরও বলেন, কোন ভাইয়েরই যদি পুত্র-সন্তান না হয়, শুধু মেয়েই হয়, তাহলে নিলংক চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে পারলে উরিশ-এর মেয়েই উত্তরাধিকার লাভ করবে; তা যদি না হয় তাহলে সে অধিকার পাবে আমার মেয়ে, অবশ্য যদি তার সুনাম নিষ্কলুষ থাকে। তাই এখানে বসে আমি ও আমার বৃদ্ধা স্ত্রী একটি পুত্র-সন্তানের বর লাভের জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে লাগলাম, কিন্তু সব প্রার্থনাই বৃথা হল। জন্মালে তুমি। আমি হতাশ হলাম। এত বড় জমিদারি হাতছাড়া হতে বসল-উজ্জ্বল স্বপ্ন বুঝি দূরে মিলিয়ে যায়! অথচ কত আশাই না করেছিলাম! উরিশ-এর বিবাহিত জীবনের পাঁচ বছর কেটে গেলেও তাদের কোন সন্তানই হল না।

    মনে মনে বললাম, ধৈর্য ধর, এখনও সব আশা যায় নি। একটা মতলব মাথায় এল। তুমি জন্মেছিলে মাঝ রাতে। তুমি যে মেয়ে একথা জানল শুধু ডাক্তার, নার্স ও ছজন দাসী। এক ঘণ্টা পার না হতেই তাদের প্রত্যেককে ফাঁসিতে ঝোলালাম। পরদিন সকালে ক্লগেনস্টিন বংশে একটি পুত্র-সন্তান জন্মেছে-জন্মেছে মহান ব্র্যাণ্ডেনবুর্গ-এর উত্তরাধিকারী, এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারা জমিদারি আনন্দে উত্তাল হয়ে উঠল। সে রহস্য আজও গোপন আছে। শিশু কাল থেকে তোমার মায়ের নিজের বোন তোমাকে লালন-পালন করেছে। তাই সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত কোন ভয়ই আমাদের ছিল না।

    তোমার যখন দশ বছর বয়স তখন উরিশ-এর একটি মেয়ে হল। আমরা দুঃখ পেলাম, তবু আশা করতে লাগলাম যে হাম, বা। ডাক্তার, বা শৈশবে নানা রকম স্বাভাবিক শত্রুর কাছ থেকে ভাল ফল পাওয়া যাবে, কিন্তু সব ব্যাপারেই নিরাশ হলাম। সে বেঁচে রইল, বড় হতে লাগল-স্বর্গের অভিশাপ নামুক তার মাথায়! কিন্তু তাতে আমাদের কি? আমরা নিরাপদ। আরে, হা! হা! হা! আমাদের একটি ছেলে রয়েছে না? আর আমাদের সেই ছেলেই কি ভবিষ্যৎ ডি ড় ক নয়? আমাদের বড় আদরের কাড়–তাই নয় কি?-কারণ আটাশ বছরের স্ত্রীলোক হলেও আজ পর্যন্ত ও নাম ছাড়া আর কোন নামই তোমার হয় নি!

    এদিকে বয়সের হাত পড়েছে আমার দাদার দেহে, দিন দিন সে দুর্বল হয়ে পড়ছে। জমিদারির কাজকর্ম চালানো তার পক্ষে দুর হয়ে উঠেছে, তাই তার ইচ্ছা তুমি তার কাছে চলে যাও এবং নামে ডিউক না হলেও কার্যত ডিউক হও। তোমার অনুচররা তৈরি-আজ রাতেই যাত্রা কর।

    এবার মন দিয়ে শোন। আমি যা বলি তার প্রতিটি কথা মনে রেখো। জার্মেনি যত প্রাচীন তত প্রাচীন একটি বিধান আছে যে, জনসাধারণের সামনে জমিদারি তক্তে অভিষিক্ত হবার আগে কোন নারী যদি যদি মুহূর্তের জন্যও সেই মহান আসনে বসে তাহলেই-তার মৃত্যু হবে! সুতরাং ভাল করে শুনে রাখা সব সময় বিনয়ের অভিনয় করবে। সিংহাসনের পায়ের কাছে অবস্থিত প্রধান মন্ত্রীর আসনে বসে বিচারকার্য চালাবে। যতদিন তোমার অভিষেক না হয়, যতদিন নিরাপদ না হও, ততদিন এই ভাবে চলবে। তোমার নারীত্ব প্রকাশ পাবার কোন সম্ভাবনা নেই, তবু বিশ্বাসঘাতকতায় ভরা এই পার্থিব জীবনে নিরাপদে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

    হায় পিতা! এর জন্যই কি আমার জীবন মিথ্যায় ঢাকা? আমার নির্দোষ বোনটি কে যাতে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারি তার জন্যই কি এই ব্যবস্থা? আমাকে রেহাই দা ও বাবা, তোমার সন্তানকে রেহাই দাও!

    প্রগলভা বালিকা! বুদ্ধি খরচ করে যে তোমার জন্য এত বড় সৌভাগ্যের ব্যবস্থা করছি, এই কি তার পুরস্কার? আমার পিতৃপুরুষের অস্থির দিব্যি, তোমার এই প্যানপেনে মনোভাব আমার চরিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। এই মুহূর্তে ডিউকের কাছে চলে যাও; সাবধান, আমার উদ্দেশ্য যেন ভেস্তে দিও না।

    সংলাপ এই পর্যন্তই থাক। আমরা তো বুঝতে পারছি যে, ভাল মেয়েটির প্রার্থনা, অনুনয়-বিনয় ও চোখের জলে কোন ফলই হল না। কোন কিছুই ক্লুগেনস্টিন-এর কঠোর বৃদ্ধ মালিককে বিচলিত করতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে দুর্গের ফট ক পার হল; সশস্ত্র জায়গীরদারের সমারোহে ও একদল সাহসী ভৃত্য পরিবৃত হয়ে রাতের অন্ধকারে সে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল।

    মেয়ে চলে যাবার পরে বৃদ্ধা জমিদার অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল; তারপর তার বিষণ্ণ স্ত্রীকে বলল: বৌ, আমাদের ব্যবস্থা তো ভাল ভাবেই এগিয়ে চলেছে। তিন মাস হয়ে গেল ধূর্ত সুদর্শন কাউন্ট ডেট জিনকে শয়তানী মতলব দিয়ে পাঠিয়েছি দাদার মেয়ে। কন্সটান্স-এর কাছে। সে যদি বিফল হয় তাহলে আমরা পুরোপুরি নিরাপদ নই, কিন্তু সে যদি সফল হয় তাহলে ভাগ্য যত বিরোধিতাই করুক কোন শক্তিই আমাদের মেয়ের ডাচেস হবার পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না!

    আমার মন বড় কু-ডক ডাকছে: তবু সব যেন ভাল হয়!

    চুপ কর গো মেয়ে! প্যাঁচাকে ডাকতে দাও। এবার শুয়ে পড়, আর ব্র্যাণ্ডেনবুর্গ ও রাজকীয় সমারোহের স্বপ্ন দেখতে থাক।

    .

    ০২-উৎসব ও অশ্রুজল

    উপরের অধ্যায়ে বর্ণিত ঘটনার দুদিন পরে ব্র্যাণ্ডেনবুর্গ রাজ্যের উজ্জ্বল রাজধানী সামরিক লোকজনের চলাফেরায় আর হাজার হাজার রাজভক্ত প্রজার আনন্দের হৈ-হুঁল্লায় মুখর হয়ে উঠেছে, কারণ জমিদারী তরুণ উত্তরাধিকারী কনরাড এসে পৌঁছেছে। বৃদ্ধ ডিউকের মনেও সুখে ভরে উঠেছে, কারণ কনরাড–এর সুদর্শন চেহারা ও ভদ্র ব্যবহার সঙ্গে সঙ্গেই তার ভালবাসাকে জয় করে নিয়েছে। প্রাসাদের বড় বড় হল গু লি সম্ভ্রান্ত লোকজনে ভরে গেছে; সকলেই কনরাড কে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছে। চারদিকে সব কিছুই এত উজ্জ্বল ও আনন্দমুখর যে তার মনের সব ভয় ও দুঃখ দূরে গিয়ে সন্তোষ ও সান্ত্বনায় ভরে উঠেছে।

    কিন্তু প্রাসাদের একটি দূরতম কোণে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃশ্যের অবতারণা রয়েছে। ডিউকের একমাত্র সন্তান লেডি কন্সটান্স জানালায় দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দুটি লাল, ফোলা-ফোলা, জলে ভরা। সে একেবারে একা। আবার নতুন করে কাঁদতে শুরু করে সে বলে উঠল;

    শয়তান ডেট জিন চলে গেছে-জমিদারি ছেড়ে পালিয়েছে! প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নি, কিন্তু হায়! সেটাই সত্যি। তাকে আমি এত ভালবেসেছিলাম। যদিও জানতাম আমার বাবা ডিউক কখনও তার সঙ্গে আমার বিয়ে দেবে না, তবু তাকে ভালবেসেছিলাম ভালবেসেছিলাম-কিন্তু এখন কত ঘৃণা করি! সমস্ত মন দিয়ে ঘৃণা করি! হায়, আমার কি হবে? আমার যে সব শেষ, শেষ, শেষ! আমি বুঝি পাগল হয়ে যাব!

    .

    ০৩-গল্পাংশ জটিলতর হল

    কয়েক মাস পার হয়ে গেল। তরুণ কনরাড–এর শাসন ব্যবস্থার প্রশংসায় সকলেই পঞ্চ মুখ। তার বিচারের বুদ্ধিমত্তা, শাস্তির করুণাময়তা, আর এই গুরু দায়িত্ব পালনে সবিনয় আচরণ-সকলেরই ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করল। বৃদ্ধ জমিদার অচিরেই সবকিছু তার হাতে ছেড়ে দিল, আর তার উত্তরাধিকারী যখন প্রধান মন্ত্রীর আসনে বসে রাজকীয় নির্দেশাবলী ঘোষণা করত, তখন দূরে বসে সগর্ব সন্তোষের সঙ্গে সে শুনত। পরিঙ্কুর মনে হত যে, এত ভালবাসা, প্রশংসা ও সম্মান পেয়ে কনরাড ও সুখী না হয়ে পারে না। কিন্তু কী আশ্চর্য, সে মোটেই সুখী নয়। কারণ সে দুঃখের সঙ্গে বুঝতে পেরেছে যে রাজকুমারী কন্সটান্স তাকে ভালবাসতে শুরু করেছে। সারা বিশ্বের ভালবাসা তার কাছে পরম সৌভাগ্যের বিষয়, কিন্তু এ ভালবাসা যে বিপদ-সংকুল। সে আরও বুঝতে পেরেছে যে, ডিউকও তার মেয়ের মনোভাব বুঝতে পেরে খুসি হয়েছে, এবং এর মধ্যেই বিয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। রাজকুমারীর মুখে যে গভীর দুঃখের ছায়া নেমে এসেছিল প্রতিদিনই একটু একটু করে তা যেন সব সরে যাচ্ছে। প্রতিটি দিন আশা ও উৎসাহের আলো তার চোখে ঝলমলিয়ে উঠছে। এমন কি তার বিষাদদীর্ণ মুখে যেন একটু একটু করে যাযাবর হাসি দেখা দিচ্ছে।

    কনরাড ভীত হয়ে পড়ল। এখানে সে যখন নতুন এসেছিল, সকলের কাছে অপরিচিত ছিল-যখন বিষণ্ণ অন্তরে সেই সমবেদনার জন্য সে তৃষিত হয়ে উঠেছিল। যা একমাত্র নারীই দিতে বা অনুভব করতে পারে, তখন নিজেরই মত আর একটি মেয়ের সঙ্গ লাভের বাসনার কাছে সে যে আত্মসমর্পণ করেছিল, সে জন্য এখন সে নিজেকেই তীব্রভাবে অভিশাপ দিতে লাগল। এখন সে বোনকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল। কিন্তু তার ফল হল আরও খারাপ; যত সে তাকে এড়িয়ে চলে ততই মেয়েটি তার পথের সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রথমে এটা তার কাছে আশ্চর্য মনে হয়েছিল, কিন্তু পরে সে বিস্ময় বোধ করতে লাগল। মেয়েটি তাকে তাড়া করে ফিরছে; সব সময়, সব জায়গায় সে তার পিছনে লেগে আছে; রাত্রে ও দিনে একই অবস্থা। মেয়েটিকে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন মনে হল। নিশ্চয় কোথাও একটা রহস্য আছে।

    এভাবে চিরকাল চলতে পারে না। জগৎ-সংসার এই নিয়ে কথা বলতে শুরু করল। ডিউককেও বিচলিত মনে হল। কনরাড যেন একটি ভৌতিক উপস্থিতি হয়ে উঠল। একদিন সে চিত্র-কক্ষ সংলগ্ন একটা ছোট ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে এমন সময় কন্সটান্স তার সামনে এসে দাঁড়াল; দুটি হাত ধরে সোচারে বলে উঠল;

    ওঃ, তুমি আমাকে এড়িয়ে চ ল কেন? আমার সম্পর্কে তোমার যে ভাল ধারণা ছিল সেটা হারাবার মত কি আমি করেছি-কি বলেছি? কনরাড আমাকে ঘৃণা করো না, একটি ব্যথিত হৃদয়কে করুণা কর। যে কথা এতদিন না-বলা ছিল আর আমি তা চেপে রাখতে পারছি না, কারণ তাহলে আমি মরে যাব-আমি তোমাকে ভালবাসি কনরাড! যদি আমাকে ঘৃণা করতে চাও তো কর, তবু এ কথা আমি বলবই।

    কনরাড নির্বাক! কন্সটান্স এক মুহূর্ত ইতস্ততঃ করল; তারপরই তার নীরবতাকে ভুল বোঝার ফলে একটা উন্মাদ খুসি তার চোখে ঝিলিক দিয়ে উঠল; দুই হাতে তার গলাটা জড়িয়ে ধরে বলল: দয়া কর! দয়া কর! তুমি আমাকে ভালবাসতে পার-ভালবাসবেই! ওগো আমার আপন জন, আমার প্রভু কনরাড, বল তুমি আমাকে ভালবাসবে!

    কনরাড আর্তনাদ করে উঠল। তার মুখের উপর বিষাদের ছায়া নেমে এল। আস্পেন-পাতার মত সে কাঁপতে লাগল। বেপরোয়াভাবে হাতভাগিনী মেয়েটি কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে সে চেঁচিয়ে বলল: তুমি কি চাইছ তা নিজেই জান না! ওটা অসম্ভব, চিরদিনের মত।

    অসম্ভব! তারপরই সে একজন অপরাধীর মত পালিয়ে গেল; রাজকুমারী বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এক মিনিট পরে মেয়েটি সেখানেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল, আর কনরাডও কাঁদতে লাগল তার নিজের ঘরে। দুজনেই হতাশ। দুজনেই দেখল, তাদের সামনে সর্বনাশের রক্তচক্ষু।

    ধীরে ধীরে কন্সটান্স দাঁড়াল, আর যেতে যেতে বলল: যে মুহূর্তে ভেবেছিলাম তার নিষ্ঠুর হৃদয় বুঝি গলছে, সেই ক্ষণেই সে আমার ভালবাসাকে ঘৃণা করল! আমিও তাকে ঘৃণা করি! সে আমাকে পায়ে ঠেলেছে-এই লোকটা-কুকুরের মত সে আমাকে পায়ে ঠেলেছে!

    .

    ০৪-ভয়ংকর সত্য প্রকাশ পেল

    সময় কাটতে লাগল। ভাল মানুষ ডিউকের মেয়ের মুখের উপর আবার নেমে এল একটা স্থায়ী বিষণ্ণতা। কনরাড ও কন্সটান্সকে এখন আর এক সঙ্গে দেখা যায় না। তা দেখে ডিউক বড় দুঃখ পায়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরেই কনরাড-এর গালে আবার লালের ছোপ ফিরে এল, তার চোখে দেখা দিল পুরনো দিনের সজীবতা, এবং স্থির পরিপক্ক প্রজ্ঞার সঙ্গে সে রাজকার্য পরিচালনা করতে লাগল।

    ইতিমধ্যে সারা প্রাসাদে চুপি চুপি একটা অদ্ভুত ও ঞ্জন শোনা যেতে লাগল। সে গুঞ্জন উচচ তর হল, আরও ছড়িয়ে পড়ল। সারা শহরে কানাঘুসা চলতে লাগল। ক্রমে সেটা ছড়িয়ে পড়ল সারা জমিদারিতে। সে গুঞ্জনটা এই:

    লেডি কন্সটান্স-এর একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে।

    ক্লুগেনস্টিন-এর মালিক সে কথা শুনে তার পালকসজ্জিত শিরস্ত্রাণটা তিনবার মাথাক চারদিকে ঘুরিয়ে চেঁচিয়ে বলল:

    ডিউক কনরাড দীর্ঘজীবি হোক!-কারণ আজ থেকে তার মুকুট পাকা হয়ে গেল। ডেট জিন তার কাজ ভালভাবেই সমাধা করেছে; শয়তানটাকে ভালভাবে পুরস্কৃত করতে হবে।

    খবরটাকে সে দূরে দূরান্তরে ছড়িয়ে দিল; সারা জমিদারির সব মানুষ আটচল্লিশ ঘণ্টা ধরে নাচল, গাইল, আলো জ্বালাল, এতবড় ঘটনাটাকে নিয়ে উৎসব করল; আর সে সব খরচ বহন করল বড়ো ক্লুগেনস্টিন।

    .

    ০৫-চরম পরিণতি

    বিচারের দিন এল। ব্র্যাণ্ডেবুর্গ-এ সব বড় বড় লর্ড ও ব্যারনার ডিউক-প্রাসাদের বিচারকক্ষে সমবেত হল। এমন কোন জায়গা রইল না যেখানে আর একজন দর্শকও দাঁড়াতে বা বসতে পারে। লাল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে কনরাড বসেছে প্রধান মন্ত্রীর আসনে; তার দুই পাশে বসেছে রাজ্যের সব বড় বড় বিচারকরা। বৃদ্ধ ডিউক কঠোর নির্দেশ দিয়েছে যে তার মেয়ের বিচার যেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয়। তারপরই ভগ্নহৃদয়ে সে বিছানা নিয়েছে। তার দিন ফুরিয়ে এসেছে। নিজের বোনের বিচারের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহিত দেবার জন্য বেচারি কনরাড অনেক অনুনয় বিনয় করেছিল, কিন্তু কোন ফল হয় নি।

    সেই বিরাট জনসমাবেশ সব চাইতে দুঃখী হৃদয়টি বুঝি লুকিয়ে ছিল কনাড–এর বুকের মধ্যে।

    আর সব চাইতে সুখী হৃদয় বোধ হয় তার বাবার, কারণ মেয়ের কনরাড -এর অজ্ঞাতেই বৃদ্ধ ব্যারণ ব্লুগেনস্টিন সেখানে হাজির হয়েছিল এবং স্বীয় বংশের এই প্রভূত বিত্তলাভে উৎসাহিত ঘোষণা পাঠ করল; অন্য সব প্রাথমিক অনুষ্ঠান শেষ হল; তখন মাননীয় প্রধান বিচারপতি বলল: বন্দী, উঠে দাঁড়ান!

    ভাগ্যহীন রাজকুমারী উঠে দাঁড়াল; বিশাল জনতার সম্মুখে সে তখন অনবগুণ্ঠি তা। প্রধান বিচারপতি বলতে লাগল:

    মাননীয়া মহোদয়া, রাজ্যের প্রধান বিচারকমণ্ডলীর সম্মুখে এই অভিযোগ করা হয়েছে এবং সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে যে পবিত্র বিবাহবন্ধন ব্যতিরেকেই আপনি একটি সন্তান প্রসব করেছেন, আর আমাদের প্রাচীন বিধান অনুসারে এ অপরাধের শাস্তি প্রাণদণ্ড; অবশ্য তার একটি মাত্র বিশেষ শর্ত এই যে মহামান্য অস্থায়ী ডিউক লর্ড কনরাড এবার এই গু রুদণ্ডের আদেশ প্রচার করবেন; সুতরাং মন দিয়ে শুনুন।

    কনরাড অনিচ্ছুক হাতে রাজদণ্ড তুলে নিল। আর সেই মুহূর্তে রাজবেশের অন্তরালবর্তী তার নারী-হৃয় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এই বন্দিনীর প্রতি করুণায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, দুই চোখে নামল অশ্রুধারা। দণ্ডিত এই বন্দিনীর প্রতি করুণায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, দুই চোখে নামল অশ্রুধারা। ঘোষণার জন্য সে মুখ খুলল, আর প্রধান বিচারপতি তৎক্ষণাৎ বলে উঠল:

    এখান থেকে নয় মহামান্য, ওখান থেকে নয়। ডিউকের সিংহাসনে উপবিষ্ট না হয়ে ডিউক-বংশীয় কারণ প্রতি দণ্ডাজ্ঞা ঘোষণা করা আইনসম্মত নয়!

    বেচারি কনরাড–এর বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। তার বাবার লৌহকঠিন দেহটাও কাঁপতে লাগল। কনরাড-এর তো অভিষেক হয় নি-এ অবস্থায় কি সে সিংহাসনকে কলংকিত করতে সাহসী হবে? সে ইতস্তত করতে লাগল; ভয়ে তার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। কিন্তু এ কাজ তো তাকে করতেই হবে। সকলের সচকিত দৃষ্টি তার উপর নিবদ্ধ। বেশীক্ষণ ইতস্তত করলে সে দৃষ্টি সন্দেহে কুটীল হয়ে উঠবে। সে সিংহাসনে আরোহণ করল। পুনরায় রাজদণ্ডটি তুলে সে বলল:

    বন্দী, ব্র্যাণ্ডেনবুর্গ-এর ডিউক সর্বক্ষমতার অধীশ্বর লর্ড উরিশ-এ নামে আমার উপর ন্যস্ত গুরুকর্তব্য আমি পালন করছি। আমার সব কথা মন দিয়ে শোন। এ দেশের প্রাচীন বিধান অনুসারে, তুমি যদি তোমার এই অপরাধের অংশীদারকে এখানে উপস্থিত না কর এবং তাকে জল্লাদের হাতে তুলে না দাও তাহলে তোমার অবশ্য মৃত্যু হবে। এই সুযোগ গ্রহণ কর-সময় থাকতে এখনও নিজেকে বাঁচাও। তোমার সন্তানের পিতার নাম বল!

    দরবার-কক্ষে গভীর নিস্তব্ধতা নেমে এল-সে নৈঃশব্দ্য এত গভীর যে লোকে বুঝি বা নিজ নিজ হৃষ্ণুপিণ্ডের শব্দও শুনতে পাচ্ছিল।

    তখন রাজকুমারী ধীরে ধীরে মুখ ফেরাল: দুই চোখে জ্বলন্ত ঘৃণা নিয়ে সোজা কনরাড–এর দিকে আঙুল বাড়িয়ে বলল:

    আপনি সেই লোক!

    নিজের অসহায় অবস্থার ভয়ঙ্কর চিন্তায় কনরাড–এর বুকের ভিতরটা মৃত্যু-শীতলতায় শিরশির করতে উঠল। পৃথিবীর কোন শক্তি এখন তাকে বাঁচাবে! এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে হলে তাকে প্রকাশ করে বলতে হবে যে সে নারী, আর যে কোন অভিষেকহীন নারী ডিউকের আসনে বসলেও তার মৃত্যু অনিবার্য! একই সঙ্গে সে ও তার কঠোর-হৃয় বাবাম মুছিত হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।

    এই রোমহর্ষক ঘটনাবহুল কাহিনীর বাকি অংশটা এখানে বা অন্য কোন গ্রন্থেস বর্তমানে অথবা ভবিষ্যতে কখনও পাওয়া যাবে না।

    আসল কথা হল, আমার নায়ক (অথবা নায়িকা)-কে এমন একটা গাডড়ায় ঠেলে দিয়েছি যে তাকে আবার কি করে সেখান থেকে বের করে আনব তার হদিস আমি নিজেই জানি না; সুতরাং এ সব ব্যাপারে নিজের হাত ধুয়ে ফেলে নায়ক (অথবা নায়িকা)-কে তার ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিলাম। যদি পারে সেখান থেকে বেরিয়ে আসুক,নয়তো সেখানেই থাকুক। ভেবেছিলাম, এই সামান্য অসুবিধাকে সহজেই দূর করে ফেলতে পারব, কিন্তু এখন দেখছি ব্যাপারটা অন্য রকম হয়ে উঠেছে।

    [১৮৭০]

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঝাঁপতাল – মন্দাক্রান্তা সেন
    Next Article বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন – মুহম্মদ আবদুল হাই
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }