Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মার্ক টোয়েন গল্পসমগ্র

    মার্ক টোয়েন এক পাতা গল্প767 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    এডোয়ার্ড মিলস্ ও জর্জ বেনটন: একটি কাহিনী

    এডোয়ার্ড মিলস্ ও জর্জ বেনটন: একটি কাহিনী
    Edward Mills and George Benton: A Tale

    দুজনের মধ্যে ছিল দূর সম্পর্ক-সাত পুরুষের ভাই-ভাই, বা ঐ রকম একটা কিছু। শিশু কালেই তারা বাবা-মাকে হারায় এবং নিঃসন্তান ব্রাট দম্পতি তাদের দত্তক নেয়, আর অচিরেই শিশু দুটির প্রতি তাদের খুব মায়া পড়ে যায়। ব্রান্ট দলপতি সব সময়ই তাদের বলত: পবিত্র হও, সৎ হও, মিতাচারী ও পরিশ্রমী হও, অপরের প্রতি বিবেচনাশীল হও, তবেই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে। কথাগুলির অর্থ বুঝবার আগেই শিশু দুটি কে কয়েক হাজার বার তা শুনতে হল; প্রভুর প্রতি প্রার্থনা শিখবার আগেই তারা এই কথাগুলি আওড়াতে শিখে ফেলল; নার্সারীর দরজায় কথাগুলি লিখে দেওয়া হল, আর সম্ভবত তারা প্রথম পড়তেও শিখল এই কথাগুলি, এডোয়ার্ড মিস্-এর জীবনে এটাই হয়ে উঠল অপরিবর্তনীয় বিধান। বান্ট রা কখনও কখনও কথাগুলিকে একটু বদলে দিয়ে বলত: পবিত্র, সৎ, পরিশ্রমী ও বিবেচনাশীল হও, কখনও তোমাদের বন্ধুর অভাব হবে না।

    আশেপাশের সকলেই খোকা মিত্সকে ভালবাসত। সে যখন মিশ্রি খেতে চেয়ে না পেত, কখনও কেউ বোঝালে সে বুঝত এবং না পেয়েও খুসি থাকত। খোকা বেনটন যখন মিশ্রি খেতে চাইত তখন না পাওয়া পর্যন্ত সমানে কাঁদতে থাকত। খোকা মিস্ তার খেলনাগুলোকে যত্ন করে রাখত, আর খোকা বেনটন অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের খেলনা ভেঙে ফেলে এমন গোলমাল শুরু করে দিত যে বাড়ির শান্তি বজায় রাখতে ছোট্ট এডোয়ার্ডকেই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তার খেলনা বেনটনকে দিয়ে দেওয়া হত।

    ছেলেরা একটু বড় হয়ে উঠতেই জর্জি হয়ে উঠল অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ: সে নিজের পোশাকপত্রের মোটে ই যত্ন নিত না; ফলে প্রায়ই তার গায়ে উঠত ঝকঝকে নতুন জামা; কিন্তু এডি র বেলায় তা হত না। দুজন একসঙ্গে বাড়তে লাগল। এডি ক্রমাগতই ভাল হতে লাগল, আর জর্জি হতে লাগল দুশ্চিন্তার কারণ। সাঁতার কাটা, স্কেটিং করা, পিকনিক করা, ফ ল কুড়নো, খেলাধুলা করা-এমনই আব্দার করলে তাকে যদি বলা হয়, আমি চাই যে তুমি এটা করবে না বাস, তাই যথেষ্ট; কিন্তু জর্জি কোন কথাই শুনত না; তার যা চাই তা করতে দিতেই হবে, নইলে সে জোর করবে। স্বভাবতই এ সব কাজের সুযোগ-সুবিধা সে যত পেত তেমনটি কেউ পায় না। ভাল মানুষ ব্রান্ট রা গ্রীষ্মকালে রাত নটার পরে ছেলেদের বাইরে খেলতে দিত না; ঐ সময় তাদের শুতে পাঠানো হত; এডি ঠিক শুয়ে পড়ত, কিন্তু জর্জি প্রায়ই দশটা নাগাদ জানালা গলে বেরিয়ে যেত এবং মাঝরাত পর্যন্ত বাইরে স্ফুর্তি করে বেড়াত। জর্জির এই বদ অভ্যাস দূর করা অত্যন্ত কঠিন বুঝতে পেরে ব্রান্ট রা শেষ পর্যন্ত আপেল ও মার্বেল কিনে দিয়ে তাকে বাড়িতে রাখবার ব্যবস্থা করত। জর্জিকে সংশোধন করবার জন্য বৃথাই তারা তাদের সব সময় ও মনোযোগ ব্যয় করত; চোখের জল ফেলতে ফেলতে তারা বলত, এডি এত ভাল, এত বিবেচক ও সব দিক থেকে এত সুন্দর যে তার জন্য কোন খাটুনিই করতে হয় না।

    দেখতে দেখতে ছেলেদের কাজকর্মের বয়স হল; তাদের শিক্ষানবীশ হিসাবে পাঠানো হল; এডোয়ার্ড গেল স্বেচ্ছায়, আর জর্জকে পাঠানো হল ঘুষ দিয়ে, অনেক বলে-কয়ে। এডোয়ার্ড বিশ্বস্তভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে লাগল; ফলে তার জন্য ভাল মানুষ ব্রান্ট দের কোন খরচ ই লাগল না; কিন্তু জর্জ কাজ থেকে পালিয়ে যেত, আর তার ফলে তাকে খুঁজে পেতে এনে আবার ফেরৎ পাঠাতে মিঃ ব্রান্টের অর্থ ব্যয় হত, ঝামেলাও হত। এইভাবে সে আবার পালাতে লাগল-আবার টাকা ও ঝামেলা। সে তৃতীয় বার পালিয়ে গেল-এবার চুরি করে নিয়ে গেল কিছু ছোট খাট জিনিস। আবার মিঃ ব্রান্ট কে টাকা খরচ করতে হল, ঝামেলাও হল; তাছাড়া, মালিক যাতে চুরির জন্য ছেলেটি কে কোন রকম শাস্তি না দেয় তার জন্যও অনেক চেষ্টা করতে হল।

    এডোয়ার্ড ধীরস্থিরভাবে কাজ করতে লাগল এবং কালক্রমে তার মালিকের ব্যবসার পুরোপুরি অংশীদার হয়ে গেল। জর্জের কোন রকম উন্নতি হল না, প্রবীণ বাবা-মার দুশ্চিন্তা-দুর্ভোগের বোঝাই সে বাড়িয়ে চলল; তাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য তাদের নিত্যনতুন কৌশল আবিষ্কার করতে হত। বালক বয়সে এডোয়ার্ড রবিবার-বিদ্যালয়, বিতর্কসভা, ছোট খাট সেবা-প্রতিষ্ঠান, ধূমপান-নিবারণী সভা, অশ্লীলতা-বিরোধী সভা ইত্যাদিতে যোগ দিয়েছিল; এখন বড় হয়ে গির্জা, মিতাচারী সমিতি ও মানব উন্নতিমূলক নানাবিধ কাজে সাহায্য করতে লাগল। এসব কাজ করতে তাকে বলতেও হত না-স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বশেই করত।

    শেষ পর্যন্ত বুড়ো-বুড়ি মারা গেল। উইলে প্রকাশ পেল এডোয়ার্ড-এর জন্য তাদের আন্তরিক গর্ব, আর তাদের যৎসামান্য সম্পত্তি দেওয়া হল জর্জকে-তারই সেটা প্রয়োজন, কিন্তু করুনাময় ঈশ্বরের উচ্ছায় এডোয়ার্ড-এর বেলা তা নয়। সম্পত্তি জর্জকে দেওয়া হল বটে, কিন্তু এক শর্তে-এই সম্পত্তির অর্থে তাকে এডোয়ার্ড–এর অংশীদারকে কিনে নিতে হবে, অন্যথায় সম্পত্তি চলে যাবে বন্দী-মিত্র সমিতি নামক একটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের হাতে। বুড়ো একখানি চিঠি রেখে গেল, তাতে জানিয়ে দিল, তার প্রিয় পুত্র এডোয়ার্ড যেন তাদের স্থান গ্রহণ করে এবং তাদের মত করেই জর্জের উপর নজর রাখে ও আপদে-বিপদে তাকে রক্ষা করে।

    এডোয়ার্ড কর্তব্যবোধেই তাদের কথামত চলতে লাগল; আর জর্জও তার ব্যবসার অংশীদার হল। অংশীদার হিসাবে সে মোটেই দামী নয়; আগে থেকে তার মদ্যপানে আসক্তি জন্মেছিল, এবার সে পাড় মাতাল হয়ে উঠল; তার চেহারা-ছবিতেই সেটা অশোভনভাবে ফুটে উঠল। কিছুদিন হল একটি মিষ্টি ভাল মেয়ের সঙ্গে এডোয়ার্ড-এর প্রণয় চলছিল। তারা পরস্পরকে খুব ভালবাসত। আর-কিন্তু এই সময় জর্জ ভীষণভাবে মেয়েটির পিছনে লাগল; প্রথমে অনুনয়-বিনয় ও শেষ পর্যন্ত চোখের জলও ফেলতে লাগল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে এডোয়ার্ড-এর কাছে গিয়ে বলল, এ অবস্থায় তার সুউচ্চ পবিত্র কর্তব্য অতি পরিষ্কার-নিজের স্বার্থপর বাসনাকে এই কর্তব্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে সে দেবে না; সে বেচারী জর্জ কে বিয়ে করে তাকে ভাল করে তুলবে। সে জানে, এতে তার হৃদয় ভেঙে যাবে, তবু কর্তব্য কর্তব্যই। কাজেই সে জর্জকেই বিয়ে করল। এতে এডোয়ার্ড-এর বুক বুঝি বা ভেঙে গেল, মেয়েটির অবস্থাও তথৈবচ। যাই হোক, এডোয়ার্ড ক্রমে সে ধাক্কা সামলে উঠল এবং আর একটি মেয়েকে বিয়ে করল–এ মেয়েটি ও খুবই চমৎকার।

    দুটি পরিবারেই সন্তানাদি হল। স্বামীকে ভাল করে তুলতে মেরি সাধ্যমত চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু ব্যাপার তখন অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। জর্জ-এর মদ খাওয়া সমানেই চলতে লাগল, আর ক্রমে সে তার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি দূব্যবহার শুরু করল। প্রতিবেশীরাও সাধ্যমত চেষ্টা করল, কিন্তু তার স্বভাব বদলাল না। বরং একটা নতুন পাপ তাকে ভর করল–ইদানিং সে গোপনে জুয়া খেলতে শুরু করেছে। ফলে তার অনেক টাকা ধার হল; কাউকে না জানিয়ে সে ব্যবসা বন্ধক রেখে টাকা ধার করতে লাগল এবং এই ব্যাপার এতদূর গড়াল যে একদিন সকালে শেরিফ এসে দোকানের কর্তৃত্ব নিয়ে নিল, আর দুই ভাই হল কপর্দকহীন।

    একেই দিনকাল খুব খারাপ, ক্রমে আরও খারাপ হতে লাগল। এডোয়ার্ড সপরিবারে একটা চিলেকোঠায় গিয়ে উঠল এবং কাজের খোঁজে সারা দিন পথে ঘুরতে লাগল। অনেকের কাছে ধর্ণা দিল, কিন্তু কাজ জুটল না। কত তাড়াতাড়ি লোকে তাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। এতদিন তার প্রতি লোকের যে আগ্রহ ছিল সেটা এত তাড়াতাড়ি উধাও হয়ে গেল দেখে সে যেমন অবাক হল, তেমনই মর্মাহত হল। তবু কাজ তার চাই-ই; কাজেই সব কিছু হজম করে সে কাজের খোঁজেই ফিরতে লাগল। অবশেষে একটা কাজ সে পেল; ইট মাথায় নিয়ে মই বেয়ে উপরে উঠতে হবে; তবু তাতেই সে কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেই থেকেই সকলে যেন তাকে ভুলে গেল। বিভিন্ন নৈতিক প্রতিষ্ঠানে সে যে টাকা দিত তা না দিতে পারায় সেখান থেকে তার নাম কাটা গেল। ফলে তার লজ্জার আর সীমা-পরিসীমা রইল না।

    কিন্তু এডোয়ার্ড যত তাড়াতাড়ি জনসাধারণের মন থেকে মুছে গেল, ঠিক তত তাড়াতাড়িই জর্জ সেখানে নিজের আসন করে নিল। একদিন সকালে ছিন্ন বস্ত্রে মাতাল অবস্থায় তাকে একটা পতিতাপল্লীতে পাওয়া গেল। একটি মহিলা মিতাচার আশ্রয় সংস্থা তাকে দেখতে পেয়ে তুলে নিল, তার জন্য চাঁদা তুলল, সারাটা সপ্তাহ তাকে ভালভাবে রাখল, আর তারপরে তাকে একটা কাজ জুটিয়ে দিল। এই সবের একটা বিবরণও খবরের কাগজে ছাপা হল। ফলে এই অসহায় লোকটির প্রতি সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট হল; তাকে নানা ভাবে সাহায্য করতে ও উৎসাহ দিতে অনেক লোক এগিয়ে এল। দুমাস সে এক ফোঁটা মদ খেল না; ফুলে সে সকলেরই প্রিয়পাত্র হয়ে উঠল। তারপর আবার তার পতন হল-আবার পতিতাপল্লী; সকলেই দুঃখিত হল, হা-হুতাশ করল। সেই মহীয়সী ভগ্নী-সংঘ। আবার তাকে উদ্ধার করল। তারা তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করল, খেতে দিল, মন দিয়ে তার অনুতাপের করুণ বিলাপ শু নল, আবার তার চাকরিটা পাইয়ে দিল। এই ঘটনার বিবরণও খবরের কাগজে প্রকাশিত হল। মদের পাত্রের যুযুধান শিকার এই অসহায় জন্তুটির পুনরুদ্ধারকে কেন্দ্র করে গোটা শহর অনেক চোখের জল ফেলল। বেশ বড় করে একটা মিতাচার-সম্মেলন ডাকা হল; অনেক জ্বালাময়ী বক্তৃতা হল; তারপর সভাপতি বলল: এবার আমরা পাপীদের আহ্বান করছি; এমন একটা দৃশ্য আপনাদরে সামনে উপস্থিত করা হবে যা দেখে অনেকেই চোখের জল রুখতে পারবেন না। কিছুক্ষণ বাজ্ঞায় নীরবতার পরে মহিলা মিতাচার আশ্রয় সংস্থা-র জনৈক লাল পোশাকধারিণীর সঙ্গে মঞ্চের সামনে এসে হাজির হল জর্জ বেনটন। প্রতিশ্রুতি-পত্রে স্বাক্ষর করল। হাততালিতে বাতাস মুখরিত হল; প্রত্যেকেই আনন্দে চীৎকার করে উঠল। সভার শেষে সকলেই নতুন সদস্যটির সঙ্গে করমর্দন করল; পরদিন তার মাইনে বাড়ানো হল; সারা শহরে শুধু তারই কথা; সেই নায়ক। এ ঘটনার বিবরণও খবরের কাগজে প্রকাশিত হল।

    প্রতি তিন মাস অন্তর নিয়মিতভাবেই জর্জ বেনটন-এর পতন ঘটতে লাগল আর প্রতিবারই বিশ্বস্ত হাতে তাকে উদ্ধার করে এনে নতুন চাকরিতে বহাল করা হতে লাগল। শেষ পর্যন্ত তাকে সারা দেশ ঘুরিয়ে আনা হল; একজন সংশোধিত মাতাল হিসাবে সর্বত্র সে বক্তৃতা

    করল; তাকে মস্ত বড় বাড়ি দেওয়া হল; অনেক সোনাদানা সে সঞ্চয় করে ফেলল।

    সে সময়টা সে ভালভাবে থাকে সেই সময় সে স্বদেশে এত বেশী জনপ্রিয়তা অর্জন করল এবং সকলের এত বেশী বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠল সে একজন গণ্যমান্য নাগরিকের নাম ভাড়িয়ে সে ব্যাংক থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিল। এই জালিয়াতির ফল ভোগ করার হাত থেকে তাকে বাঁচাবার জন্য প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হল এবং আংশিক সফলও হল-মাত্র দু বছরের জন্য তাকে সংশোধনাগারে। পাঠিয়ে দেওয়া হল। এক বছর পরেই পরোপকারী সংস্থাটির নিরলস প্রচেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত হল; পকেটে একখানি মার্জনা-পত্র নিয়ে সে বেরিয়ে এল সংশোধনাগার থেকে। বন্দী-মিত্র সমিতি দরজাতেই তার সঙ্গে দেখা করে একটা ভাল মাইনের চাকরি তাকে দিল; অন্য সব মহানুভব লোকরাও এগিয়ে এসে তাকে দিল পরামর্শ, উৎসাহ ও সাহায্য। অত্যন্ত প্রয়োজনে এডোয়ার্ড মিস্ একবার একটা চাকরির জন্য বন্দী-মিত্র সমিতি-তে দরখাস্ত করেছিল; কিন্তু আপনি কি কখনও কয়েদী ছিলেন? এই প্রশ্নটি ই তার আবেদন নাকচ করার পক্ষে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়েছিল।

    এদিকে যখন এই সব চলছে, ওদিকে তখন এডোয়ার্ড মিলস্ শান্তভাবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। সে তখনও গরিব, তবে। একটা ব্যাংকের সম্মানিত ও বিশ্বাসভাজন ক্যাশিয়ার হিসাবে একটা মোটামুটি ভাল মাইনেই পায়। জর্জ বেনটন কখনও তার কাছে। যায় না, বা তার খোঁজ-খবর নেয় না। জর্জ প্রায়ই শহর থেকে বাইরে গিয়ে দীর্ঘ দিন কাটিয়ে আসে; তার সম্পর্কে নানা রকম খারাপ। কথা শোনা যায়, কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কিছুই জানা যায় না।

    একদা এক শীতের রাতে কয়েকটি মুখোশধারী চোর ব্যাংকে ঢুকে দেখে সেখানে এডোয়ার্ড মিস্ একা আছে। সিন্দুক খুলবার জন্য তারা এডোয়ার্ড-এর কাছে চাবির নম্বর জানতে চাইল। সে জানাতে অস্বীকার করল। তারা তাকে জীবনের ভয় দেখাল। সে বলল, মালিকরা তাকে বিশ্বাস করে, সুতরাং সে বিশ্বাস ভঙ্গ করতে পারবে না। দরকার হলে সে প্রাণ দেবে, কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকবে বিশ্বাসভাজন হয়েই বাঁচবে; চাবির নম্বর সে কিছুতেই বলবে না। চোররা তাকে খুন করল।

    গোয়েন্দারা দুস্কৃতকারীদের খুঁজে বের করল; তাদের পাণ্ডা স্বয়ং জর্জ বেনটন। মৃত লোকটির বিধবা পত্নী ও পিতৃহীন সন্তানদের জন্য সকলের মনেই সহানুভূতি জাগল; দেশের সব খবরের কাগজই লেখা হল-নিহত ক্যাশিয়ারের বিশ্বস্ততা ও বীরত্বের স্বীকৃতির প্রমাণ হিসাবে মৃতের সহায়সম্বলহীন পরিবারের জন্য উদারভাবে অর্থ সাহায্য করা দেশের সবগুলি ব্যাংকের অবশ্য কর্তব্য। ফলে মোটা নগদ টাকা চাঁদা উঠল-একটি ব্যাংক উৰ্দ্ধসংখ্যা পাঁচ শ ডলার পর্যন্ত দিল। কিন্তু ক্যাশিয়ারের নিজের ব্যাংক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে জানাল যে, এই নিষ্কলংক কর্মীটি র নিজের হিসাবেই গোলমাল ছিল, আর ধরা পড়ে শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য সে। নিজেই একটা মুগু ড় দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।

    জর্জ বেনটনকে বিচারের জন্য ডাকা হল। তখন বেচারি জর্জের প্রতি অনুকম্পায় সকলেই বিধবা ও তার সন্তানদের কথা ভুলে গেল। তাকে বাঁচাবার জন্য অর্থ ও প্রতিপত্তি দিয়ে যা করা সম্ভব সবই করা হল, কিন্তু সবই বৃথা হল; তার মৃত্যুদণ্ড হল। সঙ্গে সঙ্গে দণ্ডহাস অথবা ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য আবেদনপত্র নিয়ে গভর্ণরকে ঘেরাও করা হল; আবেদনপত্রগুলি নিয়ে এল ক্রন্দনরতা বালিকারা; শোকার্ত বুড়িরা; বিপন্ন বিধবাদের প্রতিনিদিরা; ঝাঁকে ঝাঁকে বাপ-মাহারা শিশুরা। কিন্তু না, গভর্ণর-এই একটি ক্ষেত্রে-কোন কথা শুনল না।

    এতদিনে জর্জ বেনটন-এর ধর্মীয় অভিজ্ঞতা হল। সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সেদিন থেকে তার জেলখানার ঘর সব সময় বালিকা, স্ত্রীলোক ও তাজা ফুলে ভরে উঠতে লাগল; সারাদিন ধরে চলল প্রার্থনা, স্তব-গান, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, ধর্মোপদেশ ও অশ্রুবর্ষণ; মাঝে। মাঝে জলখাবার জন্য সাময়িক বিরতি ছাড়া এই অনুষ্ঠান চলতে লাগল নিরবচ্ছিন্নভাবে।

    ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত এই সব কাণ্ড-কারখানা চলতে লাগল; দেশের সব চাইতে মিষ্টি ও বিলাসকারীদের সমুখ দিয়ে জর্জ বেনটন কালো টুপি পরে সগর্বে স্বস্থানে চলে গেল। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য তার সমাধিকে তাজা ফুলে ঢেকে দেওয়া হতে লাগল; মাথার দিককার পাথরে উপরের দিক লক্ষ্য করে একটা তীর-চিহ্ন দিয়ে এই কথাগুলি লিখে দেওয়া হল: তার যুদ্ধ সে ভালভাবেই করে গেছে।

    সাহসী ক্যাশিয়ারের সমাধির মাথার দিককার পাথরে লেখা হল এই কথাগুলি: পবিত্র, সৎ, মিতাচারী, ও বিবেচনাধীন হও, তাহলে কখনও-

    এ কথাগুলি লিখবার নির্দেশ কে দিয়েছিল তা কেউ জানে না, কিন্তু নির্দেশটা এই রকমই ছিল।

    লোকে বলে, ক্যাশিয়ারের পরিবার এখন খুবই দুঃস্থ অবস্থায় আছে; কিন্তু তাতে কি; বহু গুণমুগ্ধ লোক ভাবল যে এ রকম একটা বীরত্বপূর্ণ সৎকাজ কোন রকম পুরস্কার পাবে না এটা ঠিক নয়। সুতরাং তারা বিয়াল্লিশ হাজার ডলার চাঁদা তুলল-এবং সেই অর্থে একটি স্মৃতি-গির্জা নির্মাণ করল।

    [১৮৮০]

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঝাঁপতাল – মন্দাক্রান্তা সেন
    Next Article বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন – মুহম্মদ আবদুল হাই
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }