Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মার্ক টোয়েন গল্পসমগ্র

    মার্ক টোয়েন এক পাতা গল্প767 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    অকর্মার কাহিনী

    অকর্মার কাহিনী
    The Invalids Story

    দেখলে মনে হবে আমার বয়স ষাট বছর আর আমি বিবাহিত, কিন্তু এ সবই আমার অবস্থা ও দুঃখ ভোগের ফল, কারণ আসলে আমি অবিবাহিত, আর আমার বয়স মাত্র পঁয়তাল্লিশ। আপনার হয় তো বিশ্বাস করা শক্ত যে আজ আমি একটি ছায়ামাত্র, অথচ মাত্র দুবছর আগে আমি ছিলাম সুস্থ ও সবল-লৌহকঠিন একটি মানুষ, একজন ক্রীড়াবিদের প্রতিমূর্তি।-অথচ এটাই সরল সত্য কথা। কিন্তু। যেভাবে আমি আমার স্বাস্থ্য হারিয়েছি সে ঘটনা এর চাইতেও বিস্ময়কর। এক শীতের রাতে দুশ মাইল রেলযাত্রায় এক বাক্সভর্তি বন্দুক পাহারার কাজে সাহায্য করতে গিয়েই হারিয়েছিলাম আমার স্বাস্থ্য। এটাই আসল সত্য, আর সেই কথাই আপনাকে বলব।

    আমি ওহিয়ো-র অন্তর্গত ক্লীভল্যাণ্ড-এর মানুষ। দু বছর আগে এক শীতের প্রচণ্ড বরফ-ঝড়ের মধ্যে সন্ধার পরে বাড়ি ফিরে প্রথমেই শুনলাম যে আমার ছেলেবেলার প্রিয়তম বন্ধু ও সহপাঠী জন বি. হ্যাকেট আগের দিন মারা গেছে এবং মরবার আগে এই শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছে, আমি যেন তার মৃতদেহকে তার উইকম্মি-এর বাড়িতে তার বাবা-মার কাছে পৌঁছে দেই। খবর শুনে খুবই আঘাত পেলাম, দুঃখ পেলাম, কিন্তু ভাবাবেগে নষ্ট করবার মত সময় ছিল না; তখনই আমাকে যাত্রা করতে হবে। ডিয়েকন লভি হ্যাকেট  লেখা কার্ড টা নিয়ে সেই ঝড়ের মধ্যেই রেলওয়ে-স্টেশনে ছুটলাম। সেখানে পৌঁছে বর্ণনা মতই একটা লম্বা সাদা পাইন কাঠের বাক্স দেখতে পেলাম। কয়েকটা পেরেক দিয়ে কার্ড টা বাক্সের গায়ে আটকে দিলাম, নিরাপদে সেটাকে এক্সপ্রেস ট্রেনে তুলে দেবার ব্যবস্থা করলাম এবং একটা স্যাণ্ডউইচ ও গোটাকয় চুরুট সংগ্রহ করতে খাবার-ঘরের দিকে দৌড়ে গেলাম। ফিরে এসে দেখলাম ইতিমধ্যে আমার কফিন-বাক্সটা ফিরে এসেছে এবং একটি যুবক একটা কার্ড, কিছু পেরেক ও হাতুড়ি নিয়ে সেটাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে! যেমন বিস্মিত তেমনই বিচলিত হলাম। সে পেরেক দিয়ে কার্ডটা মারতে শুরু করতেই চাইলাম। কিন্তু না-সেই এক্সপ্রেস গাড়িতে আমার বাক্সটা তো ঠিকই রয়েছে; সেটাকে সরানোই হয় নি। [আসল কথা, আমার অজ্ঞাতেই একটি বিস্ময়কর ভুল হয়ে গেছে। এই যুবকটি যে বন্দুকের বাক্সটাকে ইলিয়ন-এর অন্তর্গত পিওরিয়ার একটি রাইফেল কোম্পানিতে বুক করতে স্টেশনে এসেছিল সেটাই নিয়ে চললাম আমি, আর সেই যুবকটি নিয়ে চলল আমার মৃতদেহট!!] ঠিক সেই সময় চালক হাঁক দিয়ে সকলে গাড়িতে উঠে পড়ুন, আর আমিও লাফিয়ে এক্সপ্রেস-গাড়িতে উঠে পড়লাম এবং একটা বালতির বস্তার উপর আরামদায়ক আসনও পেয়ে গেলাম। এক্সপ্রেসের লোকটি খুবই কর্মব্যস্ত-সাদাসিধে লোকটির বয়স পঞ্চাশ বছর, সরল, সৎ ভালমানুষের মত মুখখানি, চালচলনের মনোরম আন্তরিকতার আমেজ। ট্রেনটা চলতে চলতেই একটি অপরিচিত লোক লাফিয়ে গাড়িতে উঠে এল এবং এক বস্তা বিশেষভাবে পাকানো লিল্বার্জার পনির রাখল আমার কফিন-বাক্সটার-মানে বন্দুকের বাক্সটার-ঠিক এক প্রান্তে। অর্থাৎ আমি এখন জেনেছি যে ওটা ছিল লিম্বার্জার মাখন, কিন্তু সে সময় আমি জীবনে ও বস্তুটির নামও কখনও শুনি নি এবং তার বৈশিষ্ট্যও কিছুই জানতাম না। দেখুন, সেই উন্মত্ত রাতের ভিতর দিয়ে আমরা চলতে লাগলাম; প্রচণ্ড ঝড় সমানে বয়ে চলেছে; ক্রমেই একটা নিরানন্দ দুঃখ যেন আমাকে পেয়ে বসল; আমার মন যেন ক্রমেই ডুবে যেতে লাগল-নীচে, আরও, আরও নীচে! এক্সপ্রেসের বুড়ো লোকটি এই ঝড় ও মেরু অঞ্চলের আবহাওয়া সম্পর্কে কয়েকটি কটু মন্তব্য করল, তার দরজাটা টেনে দিয়ে খিল লাগিয়ে দিল, জানালাটা নামিয়ে দিয়ে শক্ত করে আটকে দিল, তারপর সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখবার জন্য এখান-ওখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে সারাক্ষণ মনের সুখে নীচু গলায় সুর ভাঁজতে লাগল বিদায় হে প্রিয়। ইতিমধ্যে জমাট বাতাসে একটা বিশ্রী বদগন্ধ ভেসে এসে নাকে লাগতে লাগল। এই গন্ধ আমার মৃত বন্ধুর শরীর থেকে আসছে এ কথা ভেবে আমার মন আরও খারাপ হয়ে গেল। এই রকম মূক করুণ পথ বেয়ে সে আমার স্মৃতিতে জেগে থাকবে এ কথা চিন্তা করা আমার পক্ষে এতদূর দুঃখজনক যে চোখের জল বোধ করা আমার পক্ষে কষ্টকর হয়ে উঠল। এক্সপ্রেসের বুড়ো লোকটির জন্যই আমার দুঃখ আরও বেড়ে গেল, কারণ আমার ভয় হতে লাগল যে সে হয় তো গন্ধটা টের পেয়ে যাবে। যা হোক, শান্তভাবে গান করতে করতে সে চলে গেল; কোন রকম ভাবান্তর চোখে পড়ল না; আর সে জন্য তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ বটে কিন্তু তবু আমার অস্বস্তি গেল না; প্রতিটি মুহূর্তই আমার অস্বস্তি বাড়তে লাগল, কারণ যত সময় যেতে লাগল ততই সে গন্ধ আরও ঘন হতে লাগল, ক্রমেই তা সহ্য করা কঠিন হয়ে উঠল। ইতিমধ্যে সব কিছু মনের মত করে গুছিয়ে নিয়ে লোকটি কিছু কাঠ যোগাড় করে তার স্টোভে বেশ করে আগুন জেলে নিল। তাতে আমি এতদূর। বিচলিত বোধ করলাম যে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না, কারণ আমি না ভেবে পারলাম না যে এটাও ভুল হচ্ছে। আমি ঠিক জানতাম, আমার মৃত বন্ধুটির উপর এর প্রতিক্রিয়া হবে ক্ষতিকর। টপসন-সেই রাতেই আমি জেনেছিলাম যে এক্সপ্রেসের লোকটির নাম টম্পসন-এবার গাড়িটা পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করল এবং যেখানেই কোন রকম ফুটো-ফাটা দেখতে পেল সেটাই বন্ধ করে দিতে লাগল, আর বলতে লাগল যে বাইরে রাতের অবস্থা যাই হোক না কেন, সে আমাদের আরামে যাবার ব্যবস্থা অবশ্যই করবে।

    আমি কিছু বললাম না, কিন্তু বুঝতে পারলাম যে সে ভুল পথ বেছে নিয়েছে। ইতিমধ্যে সে কিন্তু আগের মতই গুন গুন করছে, আর তার স্টোভটাও ক্রমেই বেশী করে গরম হচ্ছে। ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেলেও নীরবেই সে কষ্ট সহ্য করতে লাগলাম, মুখে কিছু বললাম না। অচিরেই খেয়াল হল যে বিদায় হে প্রিয় ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হতে হতে একসময় থেমে গেল; নেমে এল একটা অশুভ স্তব্ধ তা। কয়েক মিনিট পরে টম্পসন বলল–

    ফু! আমি কি এই স্টোভটা দারচিনি দিয়ে বোঝাই করেছি।

    দুএকবার ঢোক গিলে সে এগিয়ে গেল কফি বন্দুকের বাক্সের দিকে, লিম্বার্জার পনিরের বাক্সের উপর ক্ষণেকের জন্য বসেই আবার ফিরে এসে আমার পাশে বসল। কিছুক্ষণ চিন্তিতভাবে চুপ করে থেকে ইঙ্গিতে বাক্সটা দেখিয়ে বলল

    আপনার বন্ধু বুঝি?

    হ্যাঁ, আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম।

    বেশ পাকা বলে মনে হচ্ছে, কি বলেন!

    মিনিট দুই আর কোন কথা হল না; প্রত্যেকেই যার যার চিন্তায় মশগুল। তারপর নীচু ভীত গলায় টম্পসন বলল–

    অনেক সময়ই ঠিক বোঝা যায় না তারা সত্যি গেছেন কি না-কি জানেন মনে হয় চলে গেছেন-শরীর গরম, গিট গুলো নরম-আর তাই যদিও আপনি ভাবছেন তারা চলে গেছেন, আসলে কিন্তু তা নয়। আমার গাড়িতেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে। ব্যাপারটা খুবই ভয়ানক, কারণ তারা কখন যে উঠে বসে আপনার দিকে তাকাবেন তা আপনি জানেন না! তারপর একটু খানি থেমে কনুইটাকে বাক্সটার দিকে ঈষৎ তুলে,-তিনি কিন্তু মোটেই অচৈতন্য হন নি! না স্যার, আমি বাজি ধরে বলতে পারি!

    চুপচাপ বসে ভাবছি, আর বাতাসে ও ট্রেনের গর্জন শুনছি। তখন টুম্পসন বেশ আবেগের সঙ্গে বলে উঠল:

    আরে মশাই, সকলকেই তো যেতে হবে; কারও ছাড়াছাড়ি নেই। শাস্ত্রেই বলেছে, নারীর গর্ভে যার জন্ম দুদিন আগে আর পরে তাকে তো যেতেই হবে। হাঁ, যে দিক থেকেই দেখুন না কেন, ব্যাপারটা যেমন গুরুগম্ভীর তেমনই আশ্চর্য: এর হাত থেকে কারও রেহাই নেই; সকলকেই যেতে হবে-বলতে পারেন প্রত্যেককেই। আজ আছেন সুস্থ ও সবল, আবার কালই কাটা ঘাসের মত ঢলে পড়লেন; একদিন যারা আপনাকে এত চিনত তারাই গেল ভুলে। কী আশ্চর্য বলুন। আজ হোক আর কাল হোক, সকলকেই যেতে হবে; তার হাত থেকে রেহাই নেই।

    অনেকক্ষণ চুপচাপ; তারপর

    কিসে মারা গেলেন?

    বললাম আমি জানি না।

    কতক্ষণ মারা গেছেন?

    সম্ভবপর কিছু বলাই সঙ্গত মনে করে বললাম:

    দু তিন দিন।

    কিন্তু তাতে কোন কাজ হল না; টম্পসন-এর চোখের আহত দৃষ্টি দেখে মনে হল সে যেন বলতে চায়, দুই বা তিন বছর বলুন। তারপরেই আমার কথাকে শান্তভাবে উপেক্ষা করে মৃতের সৎকারের কাজটা দীর্ঘকাল ফেলে রাখাটা যে অবিবেচকের মত কাজ সে সম্পর্কে সে দীর্ঘ বক্তৃতা শুরু করে দিল। তারপর বাক্সটার কাছে গিয়ে একটু দাঁড়িয়েই দ্রুত পায়ে ফিরে এসে বলল:

    এ কাজটা যদি গত বছর গ্রীষ্মকালে শুরু করা হত তাহলেই সব দিকে থেকে ভাল হত।

    আসনে বসে পড়ে টম্পসন লাল রেশমী রুমালে মুখটা ঢাকল এবং এমন ভাবে শরীরটাকে ধীরে ধীরে সামনে-পিছনে দোলাতে লাগল যেন অসহ্য কোন কিছু সহ্য করতে সে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ততক্ষণে সেই সুগন্ধে-সেটাকে যদি সুগন্ধ বলা যায়-প্রায় দম আটকে আসবার মত অবস্থা দেখা দিয়েছে। টম্পসন-এর মুখটা ধুসর হয়ে উঠছে; আমি জানতাম আমার মুখে তখন কোন রঙ ই নেই। এক। সময়ে হাঁটুর উপর কনুই রেখে বাঁ হাতের উপর কপালটা রেখে অন্য হাতে লাল রুমালটা বাক্সটার দিকে ওড়াতে ওড়াতে টুম্পসন বলল:

    এ ধরনের মাল আমি অনেক বয়ে নিয়ে গিয়েছি-কতকগুলি তো বেশ কিছু দিনের পুরনো মাল-কিন্তু ইনি দেখছি সকলের উপর টেক্কা দিয়েছেন-আর বেশ অনায়াসেই দিয়েছেন। আরে বাবা, এনার তুলনায় তারা তো সব সূর্যমুখী।

    এই বিষণ্ণ পরিস্থিতিতে বন্ধুবরের প্রশস্তি শুনে আমি বেশ খুসি হলাম, কারণ কথাগুলির মধ্যে প্রশংসার একটা সুর ছিল।

    অচিরেই পরিষ্কার বুঝতে পারলাম একটা কিছু করা দরকার। চুরুট ধরাবার প্রস্তাব করতে টম্পসন সেটা সমর্থন করল। বলল:

    হয় তো তাতে কিছুটা সংশোধন হবে।

    ভয়ে ভয়ে চুরুট টানতে লাগলাম আর ভাবতে চেষ্টা করলাম যে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তাতেও উপকার কিছু হল না। অনতিবিলম্বে কোন রকম পরামর্শ না করে দুটো চুরুট একই সময়ে আমাদের স্নায়ুবিহীন আঙুলের ফাঁক দিয়ে আস্তে খসে পড়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে টপসন বলল:

    না কর্তা, এক তিলও কমল না। কি জানেন, এতে অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে, কারণ এতে তার মনেও হয়তো ধূমপানের বাসনা জাগছে।

    আমার মুখে কোন কথা যোগাল না; আসলে কথা বলতে আমি ভরসাই পাচ্ছিলাম না। টম্পসন মনমরা হয়ে কাটা-কাটা ভাবে এই রাতটার শোচনীয় অভিজ্ঞতার কথা বলতে লাগল, আর সেই প্রসঙ্গে আমার বন্ধুকে নানা উপাধিতে ভূষিত করে চলল-কখনও সামরিক মর্যাদা, আবার কখনও বা অসামরিক; মোট কথা আমার বন্ধুর প্রভাব যত বাড়তে লাগল, টম্পসনের উপাধির মর্যাদাও ততই বেড়ে চলল। অবশেষে সে বলল:

    আমার মাথায় একটা ফন্দি এসেছে। ধরুন কর্নেল সাহেবকে একটা বকলস দিয়ে বেঁধে যদি গাড়ির পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাই,–এই ফুট দশেক, তাহলে তার প্রভাব এতটা আর থাকবে না। বুঝলেন তো?

    বললাম, মতলবটা ভাল। সুতরাং তাজা বাতাসে ভাল করে শ্বাস টেনে নিয়ে সেদিকে এগিয়ে সেই মারাত্মক পনিরের উপর ঝুঁকে পড়ে বাক্সটাকে জড়িয়ে ধরলাম। টুম্পসন মাথা নেড়ে হাঁক দিল, হেঁইয়ো জোয়ান; আর আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে ঠেলা মারলাম; কিন্তু টু পসন পা পিছনে ছিটকে পড়ল বাক্সটার উপরে; তার ভাঙা জায়গায় তার নাক থুবড়ে পড়ল পনিরের মধ্যে, তার দম আটকে এল। হাঁসফাঁস করতে করতে এবং হাঁপাতে হাঁপাতে দরজার দিকে যাবার চেষ্টায় সে কড়া গলায় চেঁচাতে লাগল, আমায় বাধা দেবেন না!–রাস্তা ছাড়ুন! আমি মরে যাচ্ছি; রাস্তা ছাড়ুন! সেই ঠাণ্ডা প্ল্যাটফর্মের উপর বসে পড়ে তার মাথাটা কোলে তুলে নিলাম। একটু সুস্থ হয়ে সে বলল:

    আপনার কি মনে হয় না যে জেনারেলকে আমরা নড়াতে পেরেছিলাম?

    আমি বললাম, না; তাকে একটুও নড়াতে পারি নি।

    তাহলে ও মতলবে গুলি মারুন। অন্য কিছু ভাবতে হচ্ছে। উনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকতে চান; আর এই যদি তাঁর মনোভাব হয় যে তিনি স্বস্থান থেকে নড়তে চান না, তাহলে তাঁর ইচ্ছামতই তো আমাদের চলতে হবে। হ্যাঁ, উনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন, যতক্ষণ ইচ্ছা থাকুন।

    কিন্তু সেই ভয়ানক ঝড়ে আমরা সেখানে বেশীক্ষণ থাকতে পারলাম না; থাকলে বরফে জমে গিয়েই মারা যাব। কাজেই ভিতরে ঢুকে আবার আমরা দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। এক সময়ে কোন একটা স্টেশন থেকে ট্রেনটা সবে ছেড়েছে এমন সময় টসন খুসিতে। নাচতে নাচতে বলে উঠল:

    এতক্ষণে পেয়েছি! এবার কমোডর সাহেবকে বাগে পেয়েছি। এখন এমন জিনিস পেয়েছি যাতে সব সুগন্ধ দূর হয়ে যাবে।

    জিনিসটা কার্বলিক এসিড। এক বোতল ভর্তি। সে চারদিকে সেটাকে ছিটিয়ে দিল; প্রকৃত পক্ষে রাইফেলের বাক্স, পনির-সব কিছু একেবারে ভিজিয়ে দিল; তারপর বেশ আশা নিয়েই বসে পড়ল। কিন্তু বেশীক্ষণ চলল না। কি জানেন, ক্রমেই দুটো গন্ধ এক সঙ্গে মিলে গেল–আর অচিরেই আবার আমরা দরজা খুলে বাইরে গেলাম। রঙিন রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে হতাশভাবে সে বলল:

    এতেও কোন কাজ হল না। ওনার সঙ্গে লড়াইতে পারা যাবে না। ওনাকে সংশোধন করতে যা কিছু ব্যবহার করি তাকেই তিনি নিজের কাজে লাগিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। কেন কর্তা, আপনি কি নিজেই দেখছেন না যে প্রথম দিককার তুলনায় ব্যাপারটা একশ-গুণ খারাপ হয়ে পড়েছে। এ রকমটা করতে তো আর কাউকে কখনও দেখি নি; না স্যার, এ রাস্তায় তো এতদিন ধরে চলাফেরা করছি, এ রকম অনেককেই বয়ে নিয়েছি, কিন্তু এ রকমটা কখনও দেখি নি।

    বরফে জমে গিয়ে আবার ভিতরে ঢুকে পড়লাম; কিন্তু এখন আর টেকা যাচ্ছে না। ছিট কে বেরিয়ে গেলাম, বরফের কামড় খেয়ে আবার ভিতরে ঢুকলাম; এমনই টানা-পোরেন চলতে লাগল। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আর একটা স্টেশনে আমরা থামলাম। সেটা ছেড়ে যাবার পরে টম্পসন একটা বস্তা নিয়ে ঢুকে বলল

    কর্তা, আর একবার চেষ্টা করে দেখছি-কুল্লে একবার। এতেও যদি ওনাকে নাড়াতে না পারি তাহলে আর কিছু করবার থাকবে না। অন্তত আমি তো তাই বুঝি ।

    সে বয়ে এনেছে এক বোঝা মুরগির পালক, শুকনো আপেল, তামাকপাতা, ছেঁড়া কাপড়, পুরনো জুতো, গন্ধক, হিং, এমনই টুকিটাকি অনেক কিছু। মেঝে র ঠিক মাঝ খানে একটা লোহার পাতের উপর সেগুলো স্তূপ করে সাজিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিল।

    সে সব বস্তু যখন জ্বলতে লাগল তখন একটা মরা মানুষও যে কেমন করে তা সহ্য করতে পারে আমি তো ভেবে পেলাম না। আগে যা ছিল সে সব তো এ গন্ধের তুলনায় কবিতা-কিন্তু মনে রাখবেন এ সব কিছুর মধ্যেও কিন্তু আগেই গন্ধটা স্বমহিমায়ই বিরাজ করছে-আসলে ব্যাপার কি জানেন, অন্য সব গন্ধ মিলে সে গন্ধটাকে আরও জোরদার করেছে। অহো, সে কি গন্ধ এ সব কথা কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে আমি ভাবি নি-সে সময়ই ছিল না-ভেবেছিলাম প্ল্যাটফর্মে নেমে। প্ল্যাটফর্মে নামতে গিয়ে তার আগেই টম্পসন দম বন্ধ হয়ে গড়িয়ে পড়ল। আমার নিজের অবস্থাও খুবই কাহিল হলেও কলার ধরে টেনে তাকে বাইরে বের করে আনলাম। দুজনই কিছুটা সুস্থ হবার পরে টপসন হতাশ ভঙ্গীতে বলল:

    এখানেই আমাদের থাকতে হবে কর্তা, এখানেই থাকতে হবে। আর কোন পথ নেই। গভর্ণর যখন একাই ভ্রমণ করতে চান তখন তিনি সহজেই আমাদের হারিয়ে দিতে পারেন।

    তারপর আরও বলল:

    আপনি কি জানেন যে আমাদের শরীরে বিষ ঢুকেছে। এটাই যে আমাদের শেষ যাত্রা সে বিষয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। এর ফলে দেখা দেবে সান্নিপাতিক জ্বর; তার আবির্ভাব আমি এখনই বুঝতে পারছি। হ্যাঁ স্যার, আমরা যে জন্মেছিলাম সেটা যেমন সত্যি, ঠিক তেমনই সত্যি যে আমাদের ডাক এসেছে।

    এক ঘণ্টা পরে বরফে জমে অচৈতন্য অবস্থায় আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে তুলে নেওয়া হল। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর হল। তারপর তিনটি সপ্তাহের কথা আর কিছুই মনে নেই। পরে জেনেছিলাম, সেই ভয়ংকর রাতটা আমি কাটিয়েছিলাম এক বাক্স নির্দোষ রাইফেল ও এক লট নিরীহ পনিরের সঙ্গে; কিন্তু সংবাদটা যখন জানলাম তখন আমার দফা রফা হয়ে গেছে: অতিরিক্ত কল্পনা-শক্তির ফলই ফলেছে; আমার স্বাস্থ্য চিরদিনের মত ভেঙে গেছে; বারমুডাতেই যাই আর যেখানেই যাই, কোন স্থানই আমার সে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে পারবে না। এটাই আমার শেষ যাত্রা; আমি বাড়ি চলেছি সেখানেই মরব বলে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঝাঁপতাল – মন্দাক্রান্তা সেন
    Next Article বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন – মুহম্মদ আবদুল হাই
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }