Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মার্ক টোয়েন গল্পসমগ্র

    মার্ক টোয়েন এক পাতা গল্প767 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    নায়াগারায় একটি দিন

    নায়াগারায় একটি দিন
    A Day at Niagara

    নায়াগারা জলপ্রপাত একটি অত্যন্ত উপভোগ্য ভ্রমণ-কেন্দ্র। হোটেলগুলি চমৎকার; ভাড়াও অত্যধিক নয়। এখানকার চাইতে মাছ ধরবার বেশী সুযোগ দেশের আর কোথাও নেই; বস্তুত, এখানকার সমান সুযোগ সুবিধাও আর কোথাও নেই। কারণ অন্য যে কোন স্থানে নদীর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মাছ ধরার সুবিধা কম-বেশী থাকে, কিন্তু নায়াগারায় সব জায়গাই সমান, কারণ সেখানে কোন জায়গায়ই মাছ বড়শি খায় না, আর তার ফলে পাঁচ মাইল পথ হেঁটে কোথাও যাবারই দরকার হয় না; বাড়ির কাছেই হোক আর দূরেই হোক, অসফলতা যে সর্বত্রই সমান হবে সেটা তো জানা কথা। এই সুবিধার কথাটা কিন্তু এখনও জনসাধারণকে যথাযথভাবে জানানো হয় নি।

    গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া বেশ ঠাণ্ডা থাকে; পায়ে হাঁটার ও গাড়ির পথ থাকে আরামদায়ক মোটেই ক্লান্তি আসে না। প্রপাত সারবার জন্য যাত্রা করে প্রথমেই মাইল খানেক গাড়িতে গিয়ে পাহাড়ের উপর থেকে নায়াগারা নদীর সংকীর্ণতম অংশটাকে দেখবার সৌভাগ্য লাভ করতে সামান্য কিছু টাকা দিন। একটা পাহাড়ের ভিতর দিয়ে রেলপথটাকে এমনভাবে কেটে  নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে ক্রুদ্ধ নদীটা তার নীচ দিয়েই সফেন গর্জনে ছুটে চলেছে। এখানে প্রায় দেড়শ ফুট নীচে নেমে আপনি জলের একেবারে তীরে গিয়ে। দাঁড়াতে পারেন। সে কাজটা করা হয়ে গেলে কিন্তু অপনি অবাক হয়ে ভাববেন এমন কাজ করলেন কেন; কিন্তু তখন আপনি অনেক দেরী করে ফেলেছেন।

    রক্তে শিহরণ জাগানো ভঙ্গীতে গাইড় আপনাকে বিশদ ব্যাখ্যা করে বলবে, কেমন করে সে দেখেছিল, মেইড অব দি মিষ্ট নামক ছোট স্টীমারটা প্রথমে স্রোতের মুখে নেমে গেল-উচ্ছ্বসিত স্রোতের মধ্যে প্রথমে একটা চাকা অদৃশ্য হয়ে গেল, তারপর গেল দ্বিতীয়টা, একসময় ধোঁয়ার চোঙ টাই সম্পূর্ণ উল্টে গেল, তারপর তক্তাগুলো ভেঙে ছিটকে বেরিয়ে যেতে লাগল-এবং তার পরেও ছ মিনিটে সতেরো মাইল, কি সতেরো মিনিটে ছমাইল, আমার সঠিক মনে নেই, পথ অতিক্রম করবার অবিশ্বাস্য কার্যটি সমাধা করে স্টীমারটি শেষ পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই রয়ে গেল। সে যাই হোক, ব্যাপারটাও খুবই অসাধারণ। বিভিন্ন যাত্রীদলকে পরপর ন বার ঐ একই কাহিনী যেভাবে সে বলে যায়, কখনও একটি কথা বাদ পড়ে না, বা একটি পংক্তি ও অঙ্গভঙ্গীরও বদল হয় না, তা শুনলে প্রবেশমূল্য হিসাবে যা দেওয়া হয় সেটা পুষিয়ে যায়।

    তারপর ঝুলন্ত সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিন-দু শ ফুট নীচে নদীর বুকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা এবং উপরকার রেলপথটা মাথার উপর ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা-এই দুই সম্ভাবনার দুঃখকে সমানভাবে ভাগ করে নিন। যে কোন একটি সম্ভাবনাই যথেষ্ট অস্বস্তিকর। কিন্তু দুটো মিলিয়ে যোগফল যা দাঁড়ায় সে তো চরম সুখহীনতার নামান্তর।

    কানাডার দিকে ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে দাঁড়ানো ফটোগ্রাফারদের দীর্ঘ সারির সামনে দিয়ে যখন গাড়ি চালিয়ে যাবেন, তখন দেখতে পাবেন মহান নায়াগারার অস্পষ্ট পট ভূমিতে আপনার নিজের ও আপনার ধ্বংসোন্মুখ গাড়ি ও মালপত্রের ছবি তুলে কোন মাসিক পত্রিকার সাড়ম্বর প্রচ্ছদপট তৈরি করবার জন্য ফটোগ্রাফাররা প্রস্তুত হয়েই আছে; আর এ ধরনের অপরাধকে সাহায্য ও সমর্থন করবার মত নীতিভ্রষ্ট মানুষের সেখানে অভাব নেই।

    যে কোন দিন এইসব ফটোগ্রাফারদের হাতে আপনি দেখতে পাবেন অনেক বাবা ও মায়ের, জনি ও বাবু ও সিস-এর, যা কোন। পল্লীগ্রামের ভাই-বোনের জমকালো সব ছবি-মুখে অর্থহীন হাসি, অস্বস্তিকর ভঙ্গীতে গাড়িতে উপবিষ্ট, আর যে মহান দৃশ্যের আত্মা ওই বিচিত্র রামধনু, প্রচণ্ড গর্জন যার বাণী, মেঘে-মেঘে আবৃত যার মুখমণ্ডল, তার সম্মুখে ত্রাসে-আতংকে অবসন্ন-দৃষ্টি সব মানুষের দল। নিজের বিস্ময়কর তুচ্ছতাকে উজ্জ্বল আলোর সামনে তুলে ধরবার জন্য নায়াগারাকে পশ্চাৎপট হিসাবে ব্যবহার করায় সত্যিকারের কোন ক্ষতি নেই, কিন্তু সেটা করতে হলে এক প্রকার অতিমানবিক আত্ম-সংযম প্রয়োজন।

    অশ্বক্ষুর প্রপাত (Horseshoe Fall)-এ প্রচণ্ড জলস্রোত দেখে দেখে যখন মনে হবে এর তুলনা নেই তখন নতুন ঝুলন্ত সেতু বেয়ে আপনি যাবেন আমেরিকায়, এবং তীর বরাবর যেতে যেতে দেখতে পাবেন পবন গুহা (Cave of the winds)।

    এখানে গাইডের নির্দেশ মত গায়ের পোশাক-পরিচ্ছদ খুলে ফেলে ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট ও ওভার-অল পরে নিলাম। পোশাকটা বিচিত্র, কিন্তু সুন্দর নয়। অনুরূপ পোশাক-পরিহিত গাইড আমাকে নিয়ে একটা ঘোড়ানো সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগল। সিঁড়িটা ঘুরেই চলেছে, আমরাও নেমেই চলেছি। চলতে চলতে একসময় তার অভিনবত্ব গেল হারিয়ে এবং কোন রকম খুসি হবার আগেই একসময় সিঁড়িটা শেষ হয়ে গেল। আমরা তখন পাহাড়ের একেবারে নীচে নেমে গিয়েছি, কিন্তু তখনও নদীর সমতল থেকে আমরা বেশ খানিকটা উঁচুতে।

    এবার আমরা একখানা তক্তার একটা ঠুনকো সেতুর উপর দিয়ে গুঁড়িসুড়ি মেরে এগোতে লাগলাম; একটা নড়বড়ে কাঠের রেলিং আমাদের ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছ: দুই হাতে আমি সেটাকে আঁকড়ে ধরে চলেছি-ভয় পেয়েছি বলে নয়, সে রকমটা ইচ্ছা হয়েছিল তাই। ইতিমধ্যে পথটা আরও খাড়াই, সেতুটা আরও ঠুনকো হয়েছে, আর আমেরিকান জলপ্রপাতের উচ্ছ্বসিত জল-কণার ধারা ক্রমেই বাড়তে বাড়তে আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিতে লাগল; ক্রমেই আমরাও হাতড়াতে হাতড়াতেই এগোতে লাগলাম। এবার জলপ্রপাতের পিছন থেকে একটা প্রচণ্ড বাতাস ধেয়ে এল; মনে হল, আমাদের বুঝি সেতুর উপর থেকে উড়িয়ে নিয়ে নিচের পাথর ও জলস্রোতের উপর আছড়ে ফেলবে। বললাম, আমি বাড়ি ফিরে যাব; কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। আমরা তখন উপর থেকে বজ্রের গর্জনে ধেয়ে-ধেয়ে জলরাশির বিরাট প্রাচীরের একেবারে নীচে এসে দাঁড়িয়েছি; সেই নির্মম গর্জনের মধ্যে কোন কতা বলাই বৃথা।

    পরমুহূর্তেই সেই প্রবল জলস্রোতের পিছনে গাইডটি অদৃশ্য হয়ে গেল, আর সেই গর্জনে বিমূঢ়চিত্ত, সেই বাতাসে অসহায়ভাবে তাড়িত এবং জলধারার তীক্ষ্ণ শরে আহত অবস্থায় আমিও তার পিছু নিলাম। চারদিক অন্ধকার। সংগ্রামক্ষুব্ধ বাতাস ও জলের এমন উন্মত্ত দাপাদাপি, গর্জন, আর হাহাকার এর আগে কখনও আমার কানকে এভাবে বধির করে তোলে নি। মাথাটা নীচু করলাম; মনে হল। অতলান্তিক মহাসাগর বুঝি আমার পিঠের উপর আছড়ে পড়ল। মনে হল, পৃথিবীটা বুঝি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জলের ধারা এমন । হিংস্রভাবে নেমে আসছে যে আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। মাথা তুলে মুখটা হাঁ করলাম, আর অমনি আমেরিকান জলপ্রপাতের সবটাই যেন আমার গলার মধ্যে ঢুকে গেল। তখন নড়াচড়া করলেই মৃত্যু। সেই মুহূর্তে বুঝতে পারলাম, সেতুটা শেষ হয়ে গেছে, এবার আমাদের পা ফেলতে হবে পিচ্ছিল খাড়া পাথরের উপর। জীবনে কখনও এতদূর আতংকিত বোধ করি নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাকে পেরিয়ে গেলাম এবং পরিষ্কার দিনের আলোয় পৌঁছে গেলাম। সেখানে দাঁড়িয়ে ফেনায়িত, তরঙ্গ-সংকুল পতনশীল জলরাশির এক নতুন জগৎকে সামনে দেখতে পেলাম। যখন দেখতে পেলাম সেখানে কত জল, আর সে কী ভয়ংকর, তখন ওরই পিছনে গিয়েছিলাম ভেবে আমার দুঃখ হতে লাগল।

    মহাপ্রাণ লাল মানুষ সব সময়ই আমার বন্ধু ও প্রিয়। গল্পে, উপকথায় রোমান্সে তার কথা পড়তে আমি ভালবাসি। তার অনুপ্রেরণাশীল বিচক্ষণতা, অরণ্যে-পর্বতে তার উদ্দাম মুক্ত জীবন, তার চারিত্রিক মহত্ত্ব, আর অলংকারবহুল গম্ভীর ভাষা, শ্যামা রুপসীর প্রতি তার উদার সাহসিক ভালবাসা, তার পোশাক ও সামরিক সজ্জার বর্ণবহুল জাঁকজমক-এ সব কিছু পড়তেই আমি ভালবাসি। বিশেষ করে তার পোশাক ও সামরিক সজ্জার বর্ণবহুল জাঁকজমকের কথা। যখন দেখতে পেলাম নায়াগারা জলপ্রপাতের দোকানগুলিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে সুন্দর সুন্দর সব ইণ্ডিয়ান মালা, সুন্দর সুন্দর চামড়ার জুতো, তেমনই সুন্দর সব খেলনা-মানুষ যারা বাহুতে ও শরীরের নানাস্থানে গর্ত করে সেখানে অস্ত্রশস্ত্র রাখে, আর যাদের পা দেখতে পাখির মত, তখন আমার মন খুসিতে ভরে উঠল। বুঝতে পারলাম, শেষ পর্যন্ত আমি মহৎ লাল মানুষটির মুখোমুখি দাঁড়াতে চলেছি।

    দোকানের একটি মহিলা করণিক সত্যি সত্যি আমাকে বলল যে তার দোকানের সব ভাল ভাল পুরাতত্ত্ব-মূর্তিই ইণ্ডিয়ান দের তৈরি; জলপ্রপাতের আশেপাশে তারা অনেকে বাস করে। তারা খুবই বন্ধুপরায়ণ এবং তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলাতে বিপদের কিছু নেই। ঠিক তাই; লুনা দ্বীপে যাবার সেতুটার কাছে এগিয়ে যেতেই একটি মহৎ অরণ্য-সন্তানের সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গেল। একটা গাছের নীচে বসে একমনে সে একটা মালার থলি তৈরি করে চলেছে। মাথায় ঝোলানো টুপি, মুখে একটা ছোট কালো পাইপ। আমাদের মেয়েলি সভ্যতার বিষময় সংস্পর্শে এসে ইণ্ডিয়ানরা এই ভাবেই তাদের স্বাভাবিক জাঁকজমকের বৈচিত্র্য হারিয়ে ফেলেছে। তার সঙ্গে এই ভাবে আমি কথা বললাম:

    হোয়াক-ও হোয়াক-এর ওয়াহু-ওয়াং-ওয়াং কি সুখে আছেন? মহান বিচিত্র বজ্র কি যুদ্ধে যাবার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, না কি অরণ্য-গবিনী কালো মেয়ের স্বপ্নেই বিভোর হয়ে আছেন? শক্তিমান সাকেম কি শত্রুর রক্তপান করতে ইচ্ছুক, না কি মালার থলি তৈরি করেই খুসি? অতীত গৌরবের মহান অবশেষ-মহামান্য ধ্বংসস্তূপ, কথা বল, উত্তর দাও!

    সে উত্তর দিল:

    আরে এ তো মুই, ডেনিস হলিগ্যান, যাকে তুমি লণ্ঠন-মুখো মাকড়সাঠ্যাং নোংরা শয়তান ইজিন বলে ভুল করতেছ। মোজেস-এর সামনে যে বাঁশি বাজিয়েছিল তার দিব্যি, আমি তোমাকে খেয়ে ফেলাব!

    সেখান থেকে চলে এলাম।

    ঘুরতে ঘুরতে টে রাপিন টাওয়ার-এর কাছে একটি শান্ত আদি অধিবাসিনী মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ঝলরওয়ালা ও গুটি বসানো হরিণের চামড়ার জুতো ও পায়ের পট্টি পরে সুন্দর সুন্দর পসরা নিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসে আছে। এইমাত্র একটু। কাঠের সেনাপতি বানিয়ে ধনুকটা ভরে দেবার জন্য তার পেটের ভিতরে একটু ফুটো করতে লেগেছে। এক মুহূর্ত ইতস্তত করে তাকে বললাম:

    অরণ্য-কন্যাটির মন কি খারাপ? হাস্যময়ী বেঙচি কি সঙ্গীহীনা? তার বংশের সভাকক্ষের অগ্নি নির্বাপিত হওয়ায় এবং পূর্বপূরষদের বিলীন গৌরবের জন্য সে কি শোকমগ্না? অথবা তার সাহসী বিদ্যুৎভুখ বীরটি যে অরণ্যে শিকার করতে গেছে তার বিষণ্ণ অন্তর কি সেই সুদূরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে? আমার মেয়েটি নীরব কেন? এই ক্লান-বদন অপরিচিতের প্রতি সে কি রাগ করেছে?

    মেয়েটি বলল:

    আরে বাবা, তুমি বিডডি ম্যালেন-কে গালাগালি করছ কেন? ওসব ছাড়, নইলে তোমার শু টুকো দেহটা জলপ্রপাতের মধ্যে ছুঁড়ে দেব, শিকনি-ঝরা দুশমন কোথাকার!

    সেখান থেকেও কেটে পড়লাম।

    বললাম, এদের কখনও ঘাটাতে আছে! লোকেরা বলে ওরা খুব শান্তশিষ্ট; কিন্তু চেহারা দেখলে তো বলতে হয় সকলেই রণরঙ্গে মেতেছে।

    আরও একবার তাদের সঙ্গে ভাই-ভাই সম্পর্কে পাতাতে চেষ্টা করলাম-শুধু একবার। তাদের একটা দলকে দেখতে পেলাম বড়ে একটা গাছের নীচে বসে জুতো তৈরি করছে। বন্ধুত্বপূর্ণ ভাষায় তাদের বললাম:

    মহান লাল মানুষরা, সাহসী বীররা, উদার শাসেমরা, সেনাপতিরা, পদস্থ মা-ও-মারা, অস্ত সূর্যের দেশ থেকে আগত প্লান-মুখ এই মানুষটি তোমাদের অভিবাদন জনাচ্ছে! হে পরোপকারী গন্ধগোকুল-হে পর্বত-ভুখ-হে গর্জনকারী ঝড়ো হাওয়া-হে কাঁচ–চক্ষু সর্দার। বালক-সমুদ্রের ওপার থেকে আগত ম্লান-মুখ মানুষটি তোমাদের সকলকে অভিবাদন জানাচ্ছে! যুদ্ধ ও মহামারী তোমাদের লোকক্ষয় করেছে, তোমাদের এককালের গর্বোদ্ধত জাতিকে ধ্বংস করেছে। পোকার এবং সেভেন-আপ খেলা, আর তোমাদের গৌরবদীপ্ত পূর্বপুরুষদের কাছে অজানা সাবানের পিছনে ব্যর্থ আধুনিক অর্থব্যয় তোমাদের টাকার থলিতে ভাঙন ধরিয়েছে। সরল মনে অপরের সম্পত্তি আত্মসাৎ করায় তোমরা বিপদে জড়িয়ে পড়েছ। সরল ভালমানষেমির দনি মিথ্যা ভাষণ তোমাদের সুনামকে কলংকিত। করেছে। তোমরা যাতে মাতলামির সুখে বিভোর হয়ে আদিম রণ-কুঠার দিয়ে তোমাদের পরিবারকে হত্যা করতে পার সেজন্য তোমরা হুইস্কির ব্যবসাতে নেমেছ; তারই ফলে তোমাদের পোশাকের সেই বিচিত্র জৌলুশ বিদায় নিয়েছে, আর তার জায়গায় উনবিংশ শতাব্দীর উজ্জ্বল আলোয় দেখা দিয়েছ তোমরা-নিউ ইয়র্ক-এর শহরতলির ইতর লোকদের কাছ থেকে ধার করা পোশাক গায়ে চড়িয়ে। কী লজ্জা! স্মরণ কর তোমাদের পূর্বপুরুষদের! স্মরণ করে তাদের মহান কার্যাবলী স্মরণ কর আংকাস-কে!-আর লাল কোর্তা-কে!-আর দিবস-গহুর-কে!-আর হুডি ডু ডু ডু -কে। তাদের সফলতাকে অনুসরণ কর! হে মহান বর্বরের দল, হে বিখ্যাত বাউ গুলের দল, আমার পতাকার তলে তোমরা সমবেত হও-

    ওটাকে মার! হতভাগাকে আছড়ে মার! পুড়িয়ে মার! ফাঁসিতে ঝোলোও! জলে ডুবিয়ে মার!

    অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেল। শুধু দেখলাম হঠাৎ বাতাসে ঝ সে উঠল মুগুর, ইট, ঘুষি, গুটির ঝুড়ি, জুতো-সবকিছু নিয় সকলে একসঙ্গে আমাকে মারতে উদ্যত হল। পর মুহূর্তেই তাদের গোটা উপজাতিটাই আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমার অর্ধেক পোশাক ছিঁড়ে নিয়ে গেল, আমার হাত-পা ভাঙ ল; একটা আঘাতে আমার মাতাটাকে কফি র পাত্রের মত চ্যাপ্টা করে দিল, আর সেই আঘাতের সঙ্গে অপমানকে জুড়ে দিতে তারা আমাকে নায়াগারা জলপ্রপাতের উপর ছুঁড়ে দিল; আমি ভিজে গেলাম।

    উপর থেকে প্রায় নব্বই কি একশ গজ নীচে আমার গায়ের বাকি পোশাক একটা মাথা বের-করা পাথরে আটকে গেল; ডুবতে ডুবতেও কোনরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। শেষ পর্যন্ত ছিটকে পড়লাম জলপ্রপাতের নীচে কার সাদা ফেনার রাজ্যে-সেখানকার ফেনায়িত জলরাশি আমার মাথা ছাড়িয়ে কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। একটা ঘূর্ণিপাকের মধ্যে পড়ে গেলাম। তার মধ্যে ভেসে ভেসে চুয়াল্লিশ বার ঘুরলাম-একখণ্ড কাঠের পিছনে ছুটে ছুটে সেটাকে ধরে ফেললাম-ঘূর্ণিটাকে এক পাক দিতে আধ-মাইল পথ বার হতে হয়-তীরের একই ঝোঁপকে ধরতে চুয়াল্লিশবার চেষ্টা করলাম-আর প্রতিবারই এক চুলের জন্য সেটা নাগাল এড়িয়ে গেল।

    অবশেষে একটি লোক হাঁটতে হাঁটতে এসে সেই ঝোঁপটার পাশে বসল। পাইপটা মুখে দিল, দেশলাই ধরাল, এবং সেটাকে বাতাস থেকে আড়াল করে ধরে একটা চোখ রাখল আমার দিকে, আর অন্য চোখটা রাখল দেশলাইয়ের দিকে। হঠাৎ এক ঝলক বাতাস এসে দেশলাইয়ের কাঠি টা নিভিয়ে দিল। পরের বার যখন আমি ঘুরে সেখানে এলাম তখন সে বলল:

    দেশলাই আছে?

    হ্যাঁ; আমার অন্য জামায়। দয়া করে আমাকে উঠতে সাহায্য কর।

    সেটি হচ্ছে না।

    আবার ঘুরে এসে বললাম:

    একটি ডুবন্ত মানুষের এই আপাত-অন্যায় কৌতূহল মার্জনা কর; তোমার-এই অদ্ভুত আচরণের কারণ বুঝিয়ে বলবে কি?

    আনন্দের সঙ্গে। আমি করোনার। আমার জন্য তাড়াহুড়া করো না। তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করব। কিন্তু আমার যে একটা দেশলাই চাই।

    আমি বললাম: আমার জায়গায় এস। আমি গিয়ে তোমাকে একটা এনে দিচিচ।

    এ প্রস্তাব সে প্রত্যাখ্যান করল। তার এই বিশ্বাসের অভাব আমাদের সম্পর্ককে শিথিল করে দিল, আর আমিও তাকে এড়িয়ে চলতে লাগলাম। স্থির করলাম, আমার যদি কিছু ঘটে ই যায় তাহলে সে-ঘটনার সময়টাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত করব যাতে আমি গিয়ে আমেরিকা-র দিককার বিরোধী করোনারের হাতে পড়তে পারি।

    শেষ পর্যন্ত একজন পুলিশের লোক এগিয়ে এল এবং তীরবর্তী লোকদের কাছে সাহায্যের জন্য চীকার করে তাদের শান্তি ভঙ্গ করার অপরাধে আমাকে গ্রেপ্তার করল। জজসাহেব আমাকে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করল, কিন্তু তাতে আমারই সুবিধা হল। আমার টাকা ছিল আমার পাঁলুনের মধ্যে, আর আমার পালুনটা ছিল ইণ্ডিয়ান-দের হেফাজতে।

    এইভাবে আমি পার পেয়ে গেলাম। এখন আমি অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় শুয়ে আছি। সংকটজনক হোক আর না হোক, শুয়ে যে আছি সেটা অন্তত ঠিক। আমার সমস্ত শরীরে ব্যথা, কিন্তু তার পূর্ণ বিবরণ আমি এখনও দিতে পারছি না, কারণ ডাক্তার এখনও তার ফর্দ তৈরি করে নি। আজ সন্ধায় সেটা প্রকাশ করবে। অবশ্য এখনও পর্যন্ত সে মনে করে যে আমার ক্ষতের মাত্র ষোলটি মারাত্মক।

    অন্যগুলো নিয়ে আমি মাথা ঘামাচ্ছি না।

    মনের সঠিক অবস্থা ফিরে এলে আমি বললাম:

    ডাক্তার, নায়াগারা জলপ্রপাতে যে ইণ্ডিয়ান-রা দানার কাজ করে ও জুতো তৈরি করে তারা তো ভয়ংকর উপজাতীয় লোক। তারা কোথা থেকে এসেছে?

    লিমেরিক থেকে বৎস।

    [১৮৬৯]

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঝাঁপতাল – মন্দাক্রান্তা সেন
    Next Article বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন – মুহম্মদ আবদুল হাই
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }