Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মার্ক টোয়েন গল্পসমগ্র

    মার্ক টোয়েন এক পাতা গল্প767 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    টেনেসি-তে সাংবাদিকতা

    টেনেসি-তে সাংবাদিকতা
    Journalism in Tennessee

    ডাক্তার আমাকে বলেছিল দক্ষিণ অঞ্চলের আবহাওয়ায় আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, আর সেই জন্যই আমি টেনেসি-তে চলে গেলাম। সেখানে মণিং গ্লোরি অ্যাণ্ড জনসন কাউন্টি ওয়ার-হুঁপ-এ সহযোগী সম্পাদকের চাকরিটাও পেয়ে গেলাম। কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখলাম, প্রধান সম্পাদক একটা তিন-পাওয়ালা চেয়ারে হেলান দিয়ে পাইন কাঠের টেবিলে পা তুলে দিয়ে বসে আছে। ঘরে আরও একটা পাইন কাঠের টেবিল ও একখানা কষ্টকর চেয়ার ছিল! দুটোই খবরের কাগজ, ছেঁড়া কাগজ ও পাণ্ডুলিপিতে অর্ধেক ঠাসা। বালি-ভর্তি একটা কাঠের বাক্সও ছিল; সেটাও সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ও ওল্ড সোলজার-এ বোঝাই। আর ছিল একটা স্টোভ; তার পাল্লাটা উপরের কার সঙ্গে ঝুলে আছে। প্রধান সম্পাদকের পরনে লম্বা লেজওয়ালা কালো সুতির ফুঁ ককোট ও সাদা সুতির প্যান্ট। পায়ে পরিঙ্কুর কালি-করা ছোট জুতো। একটা দুমড়ানো শাল, আঙুলে বড় শিলা-আংটি, অপ্রচলিত খাড়া কলার, আর ঝুলে-পড়া চৌখুপিকরা নেকারচিফ। পোশাক-পরিচ্ছদ একেবারে ১৮৪৮ সালের। সিগারেট টানতে টানতে সে একটা শব্দের কথা ভাবছিল আর মাথার চুল টানছিল। এমন ভয়ংকরভাবে সে চোখ-মুখ কুঁচ কাচ্ছিল যে আমার মনে হল সে একটা জটিল সম্পাদকীয় প্রবন্ধের খসড়া তৈরি করছে। সে আমাকে বলল, সবগুলো খবরের কাগজ একসঙ্গে নিয়ে সেগুলো ভাল করে পড়ে তার দরকারী। সারাংশ নিয়ে টেনেসি সংবাদপত্রের মর্মকথা শীর্ষক একটি প্রবন্ধলিখে ফেলতে।

    আমি এই রকম লিখলাম:

    টেনেসি সংবাদপত্রের মর্মকথা

    অর্ধ সাপ্তাহিক আর্থকোয়েক-এর সম্পাদকগণ বালিহ্যাক রেলপথ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন। বুজাউভিল-কে পাশ কাটিয়ে পাওয়া কোম্পানীর উদ্দেশ্য নয়। বরং জায়গাটিকে তারা এই রেলপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বলে মনে করেন, আর তাই জায়গাটি কে উপেক্ষা করবার কোন ইচ্ছা তাদের থাকতে পারে না। আশা করি, আর্থকোয়েক-এর ভদ্রমহোদয়গণ সানন্দে এই ভুলটুকু সংশোধন করে নেবেন।

    হিগিন্সভিল থাণ্ডারবোল্ট অ্যাণ্ড ব্যাট ক্রাই অব ফুড ম-এর সুযোগ্য সম্পাদক জন ডব্লু. ব্লোসম, এস্কেয়ার, গতকাল এই শহরে এসেছেন। তিনি ভ্যান ব্যুরেন হাউস-এ উঠেছেন।

    আমরা বলতে চাই যে মাড় স্প্রিংস্ মণিং হাউল পত্রিকার সম্পাদক বন্ধুটি ভ্যান ওয়ার্টার-এর নির্বাচনের সংবাদটি সঠিক নয় বলে যে মন্তব্য করেছেন সেটা ভুল। আশা করি আমাদের এই বক্তব্য তার কাছে পৌঁছবার আগেই তিনি তার ভুল ধরতে পেরেছেন। নির্বাচনের অসম্পূর্ণ ফলাফলের জন্যই যে তিনি ভুলটি করেছিলেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

    ব্ল্যাথার্সভিল শহরে তার প্রায় অচল রাস্তাগু লিকে নিকলসন পাথর দিয়ে পাকা করে দেবার জন্য নিউ ইয়র্ক-এর কতিপয় ভদ্রলোকের সঙ্গে চুক্তি করবার চেষ্টা করছে জেনে আমরা আনন্দিত। দি ডে উলি হুররা পত্রিকা এই ব্যবস্থাকে খুবই জরুরী বলে বর্ণনা করে এর চুড়ান্ত সাফল্য সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন।

    আমার পাণ্ডুলিপিকে গ্রহণ, সংশোধন বা বর্জনের জন্য প্রধান সম্পাদকের কাছে পেশ করলাম। সেটা দেখতে দেখতে তার মুখ। মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠল। পাতাগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে তার মুখ কুটি কুটিল হয়ে উঠল। সহজেই বোঝা গেল পরিস্থিতি ভাল নয়। এমন সময় লাফিয়ে উঠে সে বলল;

    বজ্র ও বিদ্যুৎ! আপনি কি মনে করেন, এই সব গুরুদের সম্পর্কে আমি এভাবে কথা বলব? আপনি কি মনে করেন আমার, গ্রাহকরা এই সব বাজে মাল সহ্য করবে? দিন আমাকে কলমটা!

    একটা কলম যে এত ভয়ংকরভাবে কাটাকুটি করতে পারে, বা এমন নিরংকুশভাবে অন্য কারও ক্রিয়াপদ ও বিশেষণ পদের উপর চেয়ে বেড়াতে পারে তা আগে কখনও দেখি নি। সে যখন এইভাবে তার কাজে ব্যস্ত ছিল তখন কে যেন তাকে লক্ষ্য করে খোলা জানালা দিয়ে গুলি করল।

    সে বলে উঠল, অন্য কারও ক্রিয়াপদ ও বিশেষণ পদের উপর চেয়ে বেড়াতে পারে তা আগে কখনও দেখি নি। সে যখন এইভাবে তার কাজে ব্যস্ত ছিল তখন কে যেন তাকে লক্ষ্য করে খোলা জানালা দিয়ে গুলি করল।

    সে বলে উঠল, ওঃ, ওই তো মরাল ভানো পত্রিকার সেই শয়তান স্মিথ-কাল তার আসবার কথা ছিল। দ্রুত হাতে বেল থেকে নৌ-বাহিনীর রিভলবারটা তুলে নিয়ে সেও গুলি ছুঁড়ল। উরুতে গুলি লেগে স্মিথ পড়ে গেল। ফলে স্মিথ-এর দ্বিতীয়বার গুলি করার চেষ্টা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল এবং একটি অপরিচিত লোককে পঙ্গু করে দিল। সেই লোক আমি। একটা আঙুল স্রেফ উড়ে গেল।

    তখন প্রধান সম্পাদক আবার আমার লেখাটার পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের কাজে লেগে গেল। কাজটা সবে শেষ হয়েছে এমন সময় একটা হাত-বোমা স্টোভের পাইপ বেয়ে নেমে এমনভাবে ফার্টল যে স্টোভটা টুকরো-টুকরো হয়ে গেল। যা হোক, একটা টুকরো ছিটকে এসে আমার দুটো দাঁতকে উড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর বিশেষ কোন ক্ষতি হল না।

    স্টোভটা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেল, প্রধান সম্পাদক বলল।

    আমারও যে সেই মত সেটা জানালাম।

    ঠিক আছে। এ কাজ যে করেছে তাকে আমি চিনি। তাকে ঠিক হাতের মধ্যে পাব। হ্যাঁ, ঠিক এইভাবেই এ সব জিনিস লিখতে হয়।

    পাণ্ডুলিপিটা হাতে নিলাম। মোছামুছি, কাটাকাটি ও রদ-বদলের পরে তার যা চেহারা দাঁড়িয়েছে তাতে তার মা থাকলে সেও তাকে চিনতে পারত না। এখন লেখাটা এই রকম দাঁড়িয়েছে:

    টেনেসি সংবাদপত্রের মর্মকথা

    অর্থ সাপ্তাহিক ,আর্থকোয়েক পত্রিকার মেরুদণ্ডহীন মিথ্যাবাদীর দল পুনরায় উনবিংশ শতাব্দীর গৌরবময় পরিকল্পনা বালিহ্যাক রেলপথ প্রসঙ্গে একদল মহৎ ও উদ্যোগশীল মানুষের বিরুদ্ধে তাদের নীচ জঘন্য মিথ্যার পশরা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই উদ্যোগে বুজার্ড ভিলকে উপেক্ষা করা হচ্ছে-এই ধারণাটি তাদের নির্বোধ মস্তিক-অথবা তাদের মস্তকের যে জায়গাটাকে তারা মস্তিস্ক বলে মনে করে সেখান থেকেই উদ্ভূত হয়েছে। তাদের সরীসৃপসুলভ দেহে যে গো-চর্মের কশার আঘাত তাদের একান্ত প্রাপ্য তা থেকে নিজেদের বাঁচাতে হলে তারা যেন অবিলম্বে এই মিথ্যা প্রচারকে প্রত্যাহার করে নেয়।

    হিগিন্সভিল থাণ্ডারবোল্ট অ্যান্ড ব্যাটল-ক্রাই অব ফ্রীডম পত্রিকার সেই ব্লসম নামক গাধাটি পুনরায় এখানে হাজির হয়ে ভন বুরেন-এ ঘাস খাচ্ছে।

    আমরা বলতে চাই, মাড় স্প্রিংস্ মর্ণিং হাউল পত্রিকাটির নির্বোধ বদমাশটি তার স্বাভাবিক অমৃতভাষণের প্রবৃত্তিবশেই গেয়ে বেড়াচ্ছে। যে ভ্যান ওয়ার্টার নির্বাচিত হন নি। সত্য প্রচার, সর্ব প্রকার মূলোচ্ছেদ করা, জনসাধরণের নৈতিক চরিত্র ও আচরণেকে সুশিক্ষিত করা, সংস্কৃতিবান করা, উন্নত করা, এবং মানুষকে আরও ভদ্র, আরও ধর্মানুগ করে তোলা, এবং সর্বতোভাবে মানুষকে মহত্তর, পবিত্রতর ও আরও সুখী করাই সাংবাদিকতার ঈশ্বর-নির্দিষ্ট আদর্শ; অথচ হীন-চরিত্র বদমাশটি অনবরত মিথ্যারট না, কুৎসাপ্রচার, অকারণ কটুক্তি ও অশালীন ব্যবহারের দ্বারা সেই মহান মর্যাদার অপব ঘটাচ্ছে।

    ব্ল্যাথার্সভিল শহর নিকলসন পাথরের পাকা রাস্তা চাইছে-চাইছে আরও একটি করে কারাগার ও অনাথ আশ্রম। যে এক ঘোড়ার শহরে আছে মাত্র দুটি মদের ভাঁটি, একটা কামারশালা, আর আর ঐ তেল-মালিশ করা খোসামুদে সংবাদপত্র ডেইলি হু-হায়রে; সেখানে। আবার পাকা রাস্তার স্বপ্ন; আর ঐ যে পায়ে-হাঁটা ফড়িং বাকশ্বর যে হুররা সম্পাদনা করে, সে আবার তার স্বভাবসিদ্ধ অক্ষমতাবশত এ ব্যাপারে গাধার মত চেঁচাতে শুরু করেছে আর ভাবছে না জানি কত বড় বুদ্ধিমানের মতই কথা বলছে।

    ঠিক এইভাবে লিখতে হয়-যেমন সঠিক তেমনই লংকার ঝাল।

    ঠিক সেই সময় একটা থান ইট জানালার কাঁচ ভেঙে আমার পিঠে এসে পড়ল। আমি ছিটকে একপাশে সরে গেলাম-ব্যথাও পেলাম।

    প্রধান বলল, ওটা নিশ্চয় কর্নেল হবে। দুদিন ধরে তার জন্য অপেক্ষা করছি। এক্ষুণই এসে পড়বে।

    ঠিক তাই। অশ্বারোহী সৈনিকদের রিভলবার হাতে কর্নেল দরজায় দেখা দিল।

    বলল, এই বাজে কাগজখানা যিনি সম্পাদনা করেন সেই কাপুরুষের সঙ্গে কথা বলবার সৌভাগ্য কি আমার হয়েছে স্যার?

    তা হয়েছে। দয়া করে আসন গ্রহণ করুন স্যার। সাবধানে বসবেন, চেয়ারের একটা পা কিন্তু নেই। আমি কি পচা মিথ্যাবাদী কর্নেল ব্ল্যাথারাইট টে কুমেশ-এর সঙ্গে কথা বলবার সৌভাগ্য অর্জন করেছি?

    ঠিক ধরেছেন স্যার। আপনার সঙ্গে একটি ছোট খাট হিসাব মিটিয়ে নিতে চাই। আপনার যদি সময় হয় তাহলে এখনই শুরু করি।

    অবশ্য আমেরিকায় নৈতিক ও বৌদ্ধিক উন্নতির উৎসাহজনক অগ্রগতির উপর লেখা প্রবন্ধটি শেষ করতে এখনও আমার বাকি আছে; তা হোক, ও নিয়ে কোন তাড়া নেই। শুরু করুন।

    মুহূর্তের মধ্যে দুটো পিস্তল একসঙ্গে ভীষণ শব্দে গর্জে উঠল। প্রধানের একগাছি চুল নষ্ট হল, আর আমার উরুর মাংসের মধ্যে কর্নেলের বুলেটের ভবলীলা সাঙ্গ হল। কর্নেলের বাঁ কাঁধটা খানিকটা কেটে গেল। তারা আবার গুলি ছুড়ল। এবার দুজনের গুলিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হল, কিন্তু আমার প্রাপ্য আমি পেলাম আমার বাহুতে গুলি লাগল। তৃতীয়বার গুলি চালানোর ফলে দুজনই সামান্য আহত হলাম, আর আমার আঙুলের গাঁট কেটে গেল। তখন আমি বললাম, যেহেতু এটা একটা ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার এবং আমার পক্ষে আর এতে অংশ নেওয়াটা ভাল দেখায় না, সেজন্য বাইরে গিয়ে আমি একটু হেঁটে বেড়াতে চাই। কিন্তু দুটি ভদ্রলোকই আমাকে আসন গ্রহণ করতে অনুরোধ করে জানাল যে আমার উপস্থিতি কোন রকম বিঘ্ন সৃষ্টি করছে না।

    তারপর তারা নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা বলতে লাগল, আর আমি আমার ক্ষতস্থানগুলি বাঁধবার কাজে লেগে গেলাম। কিন্তু ততক্ষণে তারা আবার নতুন উৎসাহে গুলি ছুঁড়তে শুরু করল, আর প্রতিটি গু লিই বেশ কার্যকর হল-কিন্তু এখানে বলা দরকার যে ছটা। গুলির পাঁচ টার ফলই ভোগ করতে হল আমাকে। ষষ্ঠ গুলিতে কর্নেল মারাত্মকভাবে আহত হয়ে সহাস্যে বলল যে তাকে এখন বিদায় নিতে হবে কারণ শহরের অন্যত্র তার কাজ রয়েছে। মুর্দাফরাসের কাছে কি ভাবে যাওয়া যায় সেই খোঁজ-খবর নিয়ে সে চলে গেল।

    প্রধান আমার দিকে ফিরে বলল, খাবার সময় সে আবার এসে হাজির হবে। আর আমাকেও প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনি যদি প্রুফ গুলো দেখে দেন এবং খদ্দেরদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন তাহলে উপকৃত হব।

    খদ্দেরদের দেখাশোনা করার কথা ভেবে কিছুটা সংকোচ বোধ করলেও এইসব গুলি-গোলার শব্দে আমি এতই বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম যে কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হল না।

    সে বলতে লাগল, তিনটে নাগাদ জোন্স আসবে-তাকে আচ্ছা করে চাবকাবেন, গিলেসৃপি হয়তো আরও আগে আসবে-তাকে। জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন-ফাওঁ সন আসবে চারটে নাগাদ-তাকে খুন করবেন-বাস, আজকের মত এই কাজ। তারপরেও যদি হাতে সময় থাকে তো পুলিশদের নিয়ে একটা গরম-গরম প্রবন্ধ লিখতে পারেন-বড় সাহেবকে একহাত নেবেন। চামড়ার চবুিক গুলো। টে বিলের নীচে আছে; অস্ত্রশস্ত্র আছে দেরাজে-বারুদ আছে ঐ কোণে-তুলো ও ব্যাণ্ডেজ রয়েছে ওখানকার খোপে। দুর্ঘটনা কিছু ঘটলে নীচে সার্জন ল্যান্সেট–এর কাছে যাবেন।

    সে তো চলে গেল। আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। তারপর তিন ঘণ্টা ধরে যে বিপদের ঝডু আমার উপর দিয়ে বয়ে গেল তাতে আমার সব শান্তি, সব আনন্দ মিলিয়ে গেল। গিলেপি এসে আমাকেই জানালা দিয়ে ছুঁড়ে দিল। জেন্সও যথাসময়েই হাজির হল, আর যখন তাকে চাবুক মারতে গেলাম তখন উল্টে সে কাজটা সেই তার হাতে নিয়ে নিল। তালিকার বাইরে জনৈক নবাগতের সঙ্গে সংঘর্ষে আমার খুলিটাই উড়ে গেল। টমসন নামক আর একজন নবাগত আমাকে একেবারে তুলোধোনা করে রেখে গেল। এবং শেষপর্যন্ত এক দঙ্গল সপাদক, দলত্যাগী, রাজনীতিক ও গুণ্ডার ক্রু বাহিনী এসে এমনভাবে গালাগালি শুরু করল এবং আমার মাথার উপর এমনভাবে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ঘোরাতে লাগল যে বাতাসে শুধু ইস্পাতের ঝলকানিই চোখে পড়তে লাগল; পর্যুদস্ত অবস্থায় এককোণে সরে গিয়ে একখানা কাগজে চকুিরীতে ইস্তফা-পত্র লিখতে গিয়েছি এমন সময় একদল উ ৎসাহী বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান সম্পাদক এসে হাজির হল। তখন এমন একটা দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও নারকীয় কাণ্ডকারখানা শুরু হয়ে গেল যার বিবরণ কোন মানুষের হাতের কলম-তা সে কলম ইস্পাতের তৈরি হলেও-দিতে পারে না। গুলি করা হল, হাত-পা কাটা হল, উড়িয়ে দেওয়া হল, জানালা দিয়ে। ছুঁড়ে ফেলা হল। খিস্তি-খেউড়ের ঝড় বয়ে গেল; চলল বেপরোয়া যুদ্ধের নাচ। তারপরেই সব শেষ। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব চুপচাপ। রক্তাক্ত প্রধান সম্পাদক ও আমি বসে পড়ে মেঝেতে ছড়ানো রক্তাপ্লুত ধ্বংসস্তূপ দেখতে লাগলাম।

    সে বলল, একবার অভ্যাস হয়ে গেলে এ সব দেখতে আপনার ভালই লাগবে।

    আমি বললাম, আমাকে মাফ করতে হবে: হয় তো কিছুদিন পরে আপনার পছন্দমাফিক লেখা আমি লিখতে পারব; কিছুটা অনুশীলন করলে এবং ভাষাটা ভাল করে শিখে নিলে নিশ্চয়ই পারব। কিন্তু সত্য কথা বলতে কি, সে ধরনের লেখার ক্ষমতার আবার কতকগুলি অসুবিধা আছে। সেটা তো আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন। জোরদার লেখা যে মানুষকে উন্নত করে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তার ফলে মানুষের যে রকম অতি আগ্রহের সৃষ্টি হয় সেটা আমি চাই না। আজ যে রকমটা ঘটেছে এ ধরনের বাধা-বিঘ্নের মধ্যে আমি আরাম করে লিখতে পারি না। চাকরিটা আমার খুবই পছন্দ, কিন্তু এখানে থেকে খদ্দেরদের মোকাবিলা করাটা আমার মোটেই পছন্দ নয়। স্বীকার করছি, অভিজ্ঞতাগুলি বেশ নতুন ও মনোগ্রাহী, কিন্তু তার ফলাফলটা সমুচিতভাবে বন্টিত হয় না। কোন ভদ্রলোক জানালা দিয়ে গুলি করলেন আপনাকে, আর খোঁড়া হই আমি; স্টোভের পাইপ বেয়ে একটি বোমার খোল নেবে আসে আপনার। তুষ্টিবিধানের জন্য, আর স্টোভের পাল্লাটা ঢুকে যায় আমার গলায়; বন্ধু হাজির হয় আপনার সঙ্গে কুশ-বিনিময় করতে, আর বুলেটের গর্তে চিত্র-বিচিত্র হয়ে ওঠে আমার চামড়া; আপনি চলে যান খেতে, আর জোন্স এসে আমাকে চাবুক মারে, গিলেসৃপি আমাকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে দেয়, টমনস আমার জামা-কাপড় খুলে নেয়; অপরিচিত লোক এসে পুরনো বন্ধুর মত মাথায় চঁটি মেরে খুলিটাই উড়িয়ে দেয়; আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দেশের যত বদমাশের দল রণসাজে সেজে এসে হাজির হয়ে আমার যেটুকু অস্তিত্ব তখনও অবশিষ্ট থাকে তার উপর রণ-কুঠার চালায়। মোট কথা, আজকের মত এমন মজার দিন আমার জীবনে আর কখনও আসে নি। না; আপনাকে আমার ভাল লেগেছে; ভাল লেগেছে খদ্দেরদের সঙ্গে আপনার অবিচলিত শান্ত আচরণ, কিন্তু বুঝতেই তো পারছেন আমি এতে অভ্যস্ত নই। দক্ষিণীরা বড় বেশী আবেগপ্রধান; নবাগতের প্রতি দক্ষিণী আতিথেয়তার প্রাচুর্য বড়ই বেশী। যে কয়টি অনুচ্ছেদ আজ আমি লিখেছি, এবং যার উপর আপনার সক্ষম হাতে টেনেসীয় সাংবাদিকতার মর্মকথার আন্তরিক স্পর্শ লেগেছে, তার ফলে আর একটি ভীমরুলের চাকেও নিশ্চয় খোঁচা লাগবে। সেই সম্পাদকের দল এখানে আসবে-ক্ষুধার্ত হয়ে আসবে, আর প্রাতরাশের জন্য নিশ্চয় কারও খোঁজ করবে। কাজেই আপনাকে জানাই বিদায়-সম্ভাষণ। সে উৎসবে উপস্থিত থাকবার বাসনা আমার নেই। স্বাস্থ্যের জন্য দক্ষিণে এসেছিলাম, আবার সেই একই কারণে ফিরে যাচ্ছি; টে নেসীয় সাংবাদিকতা আমার পক্ষে বড়ই গুরুপাক।

    তারপর দুজনেই দুঃখিত মনে বিদায় নিলাম; আমি বাসা নিলাম হাসপাতালে।

    [১৮৬৯]

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঝাঁপতাল – মন্দাক্রান্তা সেন
    Next Article বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন – মুহম্মদ আবদুল হাই
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }