Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাল্যবান – জীবনানন্দ দাশ

    জীবনানন্দ দাশ এক পাতা গল্প189 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২০. সরস্বতী পূজোর দিন

    সরস্বতী পূজোর দিন মাল্যবানের ঘরের পাশেই বোর্ডিং-এর কয়েকজন জনে মিলে খুব মদ খেল। বোর্ডিং-এর একটা হলের মতো ঘরে বাঈনাচ হয়। বোর্ডিং-এর ঝি বাবুদের সঙ্গে পাশা-পাশি চেয়ারে বসে নাচগান দেখল-শুনল; মাল্যবান অবাক হয়ে দেখছিল, ঝি একটুও সঙ্কোচ বোধ করছে না—এ যেন তার পাকাপাকি অভ্যাস; বাবুদের মায়ের মতন কখনো তার ঠাট, কখনো কারু-কারু বিশেষ গিন্নি যেন সে, তেম্নি ভাবগতিক; কখনো-কখনো সকলের অন্তরঙ্গ বন্ধু যেন-নম্র অমায়িক, সকলকে হাতের ভেতর গুছিয়ে নেবার জন্যে ব্যস্ত, নানা রকম সহজ সুলভ ছেনালিতে সরস। কাল সকালেই গিয়ে তো আবার বাসন মাজতে বসবে। তখন এর ন্যালাভ্যালা মুখের দিকে মাল্যবান অন্তত তাকিয়েও দেখতে যাবে না। এই বাবুরাও কোনো তক্কা রাখবে কি? কিন্তু আজ রাতে একে দিয়েই আসর জমানো। আসর জমাচ্ছেও মন্দ না। পান চিবোয়-সিগারেট টানে—গালগল্পের পাট নিয়ে এর কাছে তার কাছে ফেরে—একে না পেলে কয়েকটি বাবুর অন্তত আজ রাতের অনেকখানি ফুর্তি মাটি হয়ে যেত।

    মাল্যবান সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ভাবার-মাথায় ভাবছিল : সরস্বতী পূজোর সঙ্গে এ-সবের কী সম্পর্ক! মদ বাঈনাচ ঝি—এ-সবের কী দরকার। কিন্তু এ-আসরের মধ্যে এমন কথা সে হয়তো একাই ভাবছিল। একাই সে কেমন এক! নিস্তব্ধ-কেমন যেন ঝক মেরে গেছে অন্য সবাইয়ের হল্লা জৌলুশের তুলনায়। কিন্তু এ-কথা ঠিক, এদের কারুর ওপরই কোনো বিমুখ ভাব ছিল না তার।

    মদ খেল না অবিশ্যি, আজ কেন যেন সিগারেট টানতে গেল না, দুএকটা পান চিবুল মাত্র, কিন্তু আসর থেকে উঠে গেল না তো বসে-বসে নাচগান দেখছিল-শুনছিল। গয়মতী (মানে কী এ-নামের?) ঝিকে নিয়ে সবাই ফুর্তি করছিল, কিন্তু এই মাকরের ঠ্যাং ফিঙের ঠ্যাং, কাতলের মুখ ভেটকির মুখের মতো মেয়েমানুষটির দিকে তাকিয়ে মাঝে-মাঝে ভারি দুঃখ হচ্ছিল মাল্যবানের। ইলেকট্রিক লাইটের আলো মাঝে-মাঝে মেয়েটির টিমটিমে চোখে এসে পড়ে, বাতির কড়া কড়কড়ে ঝঝে সে কষ্ট পায়, এমন দুঃখ হয় মাল্যবানের; মাথার থেকে ঘোমটা খসে পড়ে মেয়েটির, ছোট্ট খুকিদের মতো এতটুকু একটা খোঁপা বেরিয়ে পড়ে—বড় কষ্ট লাগে মাল্যবানের; একটা ভাঙা চেয়ারের খোঁচা খেয়ে মেয়েটির শাড়ির অনেকখানি ছিড়ে যায়, নিজে সে তা বুঝতেও পারে না, কিন্তু মাল্যবানের সংবেদনায় গিয়ে লাগে খুব,—খুব; মেয়েটি সিগারেট টানতে-টানতে প্রায়ই বুকে হাত দিয়ে কাশে—সুবিধের লাগে না মাল্যবানের; কাশে যখন মেয়েটি, তখন তার চোখ দুটো মাছের মতো গোল হয়ে ওঠে—বড় বিশ্রী দেখায়—মাল্যবানের খারাপ লাগে, কেমন দুঃখ করে এই অদ্ভুত হাড্ডিসারের জন্যে, এই ব্যক্তিটির জন্যেই। মাল্যবান খুব ভালো বোধ করছিল না, অবাক হয়ে ভাবছিল, এত সিগারেট টানছে, এতে কি সুখ পাচ্ছে গয়মতী, টানছে। আর ক, এত কাশছে তবুও এরকম খিচে সিগারেট টানছে, খুবই অদ্ভুত ভারি মজার বোধ হত জিনিসটাকে, কিন্তু দুঃখ হতে লাগল মাল্যবানের।

    চার-পাঁচ জন বাবু মিলে ঝিকে আলাদা একটা কামরায় নিয়ে গেল। মাল্যবান নিজের ঘরে চলে যাচ্ছিল, তাকিয়ে দেখল ঝিকে সবাই মিলে মদ খাওয়াচ্ছে।

    মাল্যবান হাঁটতে-হাঁটতে ভাবল : এ কী-রকম ফুর্তি! কিন্তু তবুও প্রতিবাদ করতে গেল না; প্রতিবাদ করবার মতো চোপা নেই তার, সে-শক্তি ও ঐশ্বর্য নেই; সে তাগিদও নেই; সে জানে, পৃথিবীর অনেক দিকেই এ-রকম অনাচার অজাচার চলেছে, কেউ রোধ করতে পারে না, কারুর রোধ মানে না।

    তেতলায় উঠে অন্ধকারের মধ্যে বারান্দায় খানিকক্ষণ সে পায়চারি করল। তারপর রেলিং-এর কাছে এসে নিচের দিকে তাকাল একবার; দেখল, সেই ঝি কলতলার পাশে বসে মুখ থুবড়ে বমি করছে; তার আশে-পাশে দুজন সঙ্গী শুধু। মেসের ঠাকুর বামদেবলম্বা হিরগিরে মানুষ—মুখটা অনেকটা স্যর ত্রৈলোক্যের মতো—ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাং চড়িয়ে খানিকটা দুরে দেয়ালে ঠেস দিয়ে নিরাসক্ত ভাবে খইনি টিপছে—মাঝে-মাঝে মাকড়সার জালের মতো জড়িত চোখের দৃষ্টি তুলে ঝির দিকে তাচ্ছে; কি বসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ছাপরা জেলার পূর্ণ কুর্মি। লোটা বেঁটে, কালো, মুখে বসন্তের দাগ, উঁচু-উঁচু শাদা—খুব বেশি শাদা দাঁত থেকে তবুও বিশ্রী গন্ধ বেরোয়; কিন্তু হাসি-হাসি মানুষ; এই মেসে সব চেয়ে এই ঝিকেই ভালোবাসে সে। ঝি কাকে ভালোবাসে? পূর্ণকে নয়—ঠাকুরকে নয়, কাকে জানে না মাল্যবান। উঠে-পড়ে ভালোবাসার ব্যাপারে লেগে গেছে পূর্ণ আজ; ট্যাঁকে আজ কিছু টাকা আছে তার; ঝির সঙ্গে আজ রাতে কাজ হবে তার।

    ওপর থেকে হঠাৎ এক সঙ্গে কয়েকটা গলার রোশনচৌকি বেজে উঠল যেন পূর্ণ! পূর্ণ! পূর্ণ!

    ওপরে মাল খাস্ত পড়েছে হয়তো—মদের কিংবা মাংসের অথবা সোডা ওয়াটারের; এখুনি দোকানে ছুটতে হবে পূর্ণকে।

    গয়মতী বললে, তুই যা পূর্ণ, বামদেব আছে, হুই বসে আছে—ওই ওতেই হবে—দেড়টা নাগাদ আসিস তুই।

    পূর্ণ আড়ামোড়া ভাঙতে-ভাঙতে বসে বাঁকিয়ে নতুন মাটির কেঁচোর মতো শরীরটাকে পাক খাওয়াল কিছুক্ষণ। তার পরে ঠা করে হাওয়া দিল।

    বামদেব বললে, পরকাল ঝরঝরে করে রাঁড়ি তো হয়েছিস। কিন্তু আমি চক্কোত্তি বামুন, মনে রাখিস, পয়সা-টয়সা পূর্ণর মতো আমি দিতে পারব না।

    তুমি বামুন আছ, আমিও হাড়ির মেয়ে নই, আমার বাপের নাম সীধু—সরকার—

    গোবরার সেই সীধু না-কি রে? ওই যে আসত, আর তুই পাৎ পেড়ে দিতি।

    কসবার সীধু সরকার, তুমি দ্যাখোনি তাকে।

    সরকারও এক রকম কায়েত বটে, বামদেব একটা ঢেকুর তুলে বললে, যাক গে, শোন বলি কায়েতের মেয়ে, বমি করলি যে?

    ও-সব খাওয়ার অভ্যেস নেই আমার।

    একটু বেসামাল হয়ে গেছিস, গয়া; আর বমি করবি?

    না।

    বমি-বমি করে যদি বল আমাকে, আমি তো তোর পিঠে হাত দিলেই বেরিয়ে যাবে সব হড়-হড় করে—

    নাঃ। শান্তি হয়েছে। গয়মতী বললে, হাড় নড়ে ঠাণ্ডা হচ্ছে শরীলের ভেতর।

    তবে চ—

    কোথা?

    আর কোথা, বাবুদের খাওয়াদাওয়া হয়ে গেছে ই তো খেয়ে আঁশবটি হাতে করে উগড়ে ফেললি সব ভ্যাক-ভ্যাক করে দেখে-দেখে আমার হয়ে গেছে, আর খেয়েছি আমি।

    নাও, নাও, খেয়ে নাও গে। গয়া বললে খুব আত্তি দেখিয়ে, খইনি টিপছ তো টিপছই নাও ওঠো।

    পিবিত্তি নেই, মুখটা কেমন যেন ভেঙে-চুরে ফেলে বামদেব বললে, সারাদিন কড়া আগুনে রাঁধতে-রাঁধতে, তোর বমি দেখতে-দেখতে খাবার হাঁড়ি পেটের ভেতর শুকিয়ে আমার শালকাট হয়ে গেছে, গয়া!

    কলতলায় বসে ছিল এত-ক্ষণ, মাথায় একটা আলতো ঝাকুনি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গয়া বললে, এও বলি বাপু, ভালো ঠেকছে না আমার কেমন যেন ঠ্যাকার তোমার, বাপু, ভারি ঠ্যাকারে হয়েছ! তোমার নাম ধরেই ডাকছি তোমাকে, বামদেব—খাবে না? সত্যিই কিছুই খাবে না!

    নাঃ, অন্ন খাব না আজ আর, মেষ্টান্ন খাব!

    আচ্ছা! আচ্ছা! একটা মরুঞ্চে শ্যাওড়াগাছের মতো বাতাসের ঝাপটায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল যেন হাসতে-হাসতে গয়া। রোয়াকের ওপরে বামদেবের কাছেই এসে বসল সে।

    পূর্ণ কি দেড়টার সময়ে আসবে বলেছে?

    কে জানে কী বলেছে, ভারি বিপদে গণে বামদেবকে সালিশ মেনে ক্লান্ত মলিন চোখ দুটো বামদেবের চেনা চাওয়া-রসে খানিকটা স্পষ্ট করে তুলে গয়া বললে, বড্ড হুজ্জোৎ করে পূর্ণ। ও-সব দেইজিপণা হবে না আজ।

    বাঃ, কী করে হবে, তোমার তো একটা মেয়েমানুষের গতর, গয়া। ও চায় সেটাকে পাঁচখানা করে নিতে।

    বামদেব শিবিরাজার আশ্রিত পাখিকে ভরসা দিয়ে বললে, ও-সব কালকেউটের জন্যে বেউলার রাত জাগতে হবে না, গয়া। আমি তোমাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাব, ও বিষদাঁত সেঁধোতেই পারবে না।

    শুনতে-শুনতে মাল্যবান নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকল।

     

    বোর্ডিং-এর খাওয়াদাওয়া মাল্যবানের ভালো লাগছিল না। কী কতকগুলো ভঁটা খোসা চোকলা-চাকলা দিয়ে একটা ঘাট বানায়—রাঁধতে পারে না—তেল-মসলা খরচ করে না—বাজারের থেকে ভালো মাছ-তরকারি আনতে পারে না; এ-রকম হলে এ-বোর্ডিং ছেড়ে যাব আমি।

    একদিন বোর্ডিং-এর ম্যানেজার গোটা তিনেক পাঁঠা এনে নিচের ঘরের একটা গুদামে বেঁধে রাখল। সারাদিন পাঁঠাগুলো চাচায়, মাল্যবান কেমন একটু অস্পষ্ট অমানবসাধারণ ভাবে চিন্তা করে ভাবে এই যবক্ষার শীতে বেচারিদের কী কষ্ট! হয়তো এরা টের পেয়েছে, মরতে হবে শীগগিরই; আমিষ গন্ধ যেন পেয়েছে, নিজেদের মৃত্যুর; মানুষের হাতে তৈরি যে সেটা, তাও বুঝেছে। সৃষ্টি, মাল্যবান ভেবে যেতে লাগল, প্রকৃতি এদের এত মোক্ষম কাম প্রবৃত্তি দিল কেবলি সন্তান বানিয়ে কেবলি সেগুলোকে ধ্বংস করবার জন্যে। এদের লালসার বাড়াবাড়ির সুবিধে নিয়ে এদের দিয়ে কেবলি এদের ঝাড়বংশ বাড়াচ্ছে কাটছে—খাচ্ছে মানুষ। মানুষের চেয়ে বড় শয়তান কে আছে এই সৃষ্টির ভেতর! শয়তান। শয়তান।

    মাল্যবানের মন বেঁকে দুমড়ে গেল কেমন যেন, ইচ্ছে হচ্ছিল ম্যানেজারকে গিয়ে বলে, এগুলোকে আপনি ছেড়ে দিন, আচায্যিমশাই, টাকাটা আপনাকে দিয়ে দেব আমি। কিন্তু, ছেড়ে দিলে কী হবে, অন্য-কেউ ধরে খাবে। নিজেদের সুমাংস নিয়ে এরা মানুষ-সমাজ থেকে অক্ষত হয়ে এড়িয়ে যাবে? কোথায়? কোন অজব্রহ্মাণ্ডে? তা তো নেই।

    ম্যানেজার মনোহর আচায্যি তিনটি বেশ পুরুষ্টু তেলচুকচুকে পাঁঠা এনেছে। বোর্ডিং-এর সকলেই পাঁঠার মাংস খাবার জন্যে খুব ব্যস্ত, কবে পাঁঠা কাটা হবে এ নিয়ে চারদিকে এমন একটা প্রবল তাগিদ, সব্বায়েরই জিভে এত জল যে মাল্যবান এদেরি মধ্যে এক জন মানুষ, ভাবতে গিয়ে মনে হল, সহজ বিবেকেই মাংস খায় মানুষ, যেমন ফল-ফসল খায় সহজ বিবেকে; কেবলমাত্র তার মতন এক-আধ জন মানুষের বিবেকে এসে খোঁচা লাগে; মানুষ হিসেবে সেটা হয়তো অস্বাভাবিক; নিজেকে খানিকটা অস্বাভাবিক মনে হল তার—মানুষ হিসেবে। মাল্যবান ঠিক করল; এ-পাঁঠার মাংস সে খাবে না।

    কিন্তু চার পাঁচ দিন পরে ম্যানেজার পাঁঠা তিনটি বিক্রি করে ফেলল; ঠাকুর পলতার তরকারি ট্যাংরা মাছের ঝোল আর কলাইয়ের ডাল দিয়ে সাজিয়ে ভাত নিয়ে এল। মাল্যবানের মনটা কেমন একটু বিরস হয়ে উঠল, বললে, ঠাকুর, মাংস আর আমাদের কপালে জুটল না। কিন্তু, খেতে-খেতে মাল্যবান নিজেকে ধিক্কার দিতে-দিতে বলল : ছি, তিনটে প্রাণীর জীবনের চেয়ে আমার মাংস খাওয়া হল বেশি।

    পর-দিনই গুদামঘরে দুটো পাঁঠা দেখা গেল আবার; মাল্যবান একটু ধাক্কা খেল; ভাবল : এ আবার কী। ভাত খেতে-খেতে ভাবল : ও মাংস আমাদের খাবার জন্যে নয়, হয়তো পাঁঠার ব্যবসা ধরেছে ম্যানেজার। ভেবে—খানিকটা টেসে গেল তার সাত্ত্বিক উপলব্ধির সমস্ত তোড়জোড়।

    সন্ধ্যের সময় ম্যানেজার নিকুঞ্জ পাকড়াশিকে বলছিল, না, না, এ-পাঁঠা আমি কালই কাটব।

    শুনে কেমন একটু ভরসা পেল যেন মাল্যবান। গোলদীঘিতে ঘুরতে ঘুরতে ভাবল; জীবন এমনি নোংরা হয়ে পড়েছে আজ-কয়েক টুকরো তো মাংস, সে-জন্যে দুটো প্রাণীর মৃত্যু আমার কাছে এমন আশা-ভরসার জিনিস হয়ে দাঁড়াল! কিন্তু, এ তো স্বাভাবিকতা, শেয়াল বেড়াল চিতে-বাঘ কেঁদো-বাঘের মতো মানুষ হিংসাত্মক তো। মানুষ হয়ে স্বাভাবিক ভাবে অহিংসা করে বেড়াবার পথ নেই তো তার। কিন্তু, তবুও মাল্যবান সংকল্প করল, এ-মাংস সে খাবে না।

    এবং খেল না বটে, কিন্তু মাংসের বাটি ফিরিয়ে দিতে ভারি বেগ পেতে হল তার, রাবড়ির তিন চামচে ঝোল মোটেই সরস লাগল না, খুব সক্রিয় আক্রোশে ম্যানেজার ঠাকুরের ওপর মারমুখো হয়ে উঠল তার মন। মানুষের জীবন সহজ সুন্দর মোটেই নয়, মাল্যবানের নিজের জীবনটাও সরল নয়, সত্য নয়, অনুভব করছিল সে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগ্রন্থিত কবিতা – জীবনানন্দ দাশ
    Next Article শ্রেষ্ঠ কবিতা – জীবনানন্দ দাশ

    Related Articles

    জীবনানন্দ দাশ

    ঝরা পালক – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    ধূসর পাণ্ডুলিপি – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    বনলতা সেন – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    মহাপৃথিবী – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    সাতটি তারার তিমির – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    শ্রেষ্ঠ কবিতা – জীবনানন্দ দাশ

    August 13, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }