Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প181 Mins Read0

    অপহরণ-১.১০

    দশ

    ল্যাংলি, ভার্জিনিয়া, সি.আই.এ. হেডকোয়ার্টার। পটোম্যাক নদীর ওপর দিয়ে ডাউনটাউন ওয়াশিংটন বিশ মিনিটের পথ।

    বিশাল ভবনের সাততলায় নিজের ডেস্কে বসে আছেন জেফ রিকার্ড, সি.আই.এ.চীফ। রাত পৌনে ন’টা।

    কির কির করে যান্ত্রিক একটা গুঞ্জন উঠল। ইণ্টারকমের সুইচ অন করলেন রিকার্ড।

    ‘এক্সকিউজ মি, স্যার,’ অপরপ্রান্ত থেকে বলল রিকার্ডের স্টাফ অ্যাসিস্ট্যান্ট, বাইরে অফিসে বসে আছে সে, ‘জানি আপনি নিষেধ করেছেন, বিরক্ত করা চলবে না, কিন্তু ফোন করেছেন সিক্রেট সার্ভিস চীফ নিজে।’

    বিরক্তির সাথে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকালেন রিকার্ড। ‘কীথ? কি চায় সে?’

    ‘জানি না, স্যার; তবে খুব নাকি জরুরী।’

    এক মুহূর্ত ইতস্তত করলেন রিকার্ড। তারপর ইন্টারকমের সুইচ অফ করে দিয়ে ফোনের রিসিভার তুলে নিলেন। ‘বলো, কীথ।’ এক মুহূর্ত, তারপরই তাঁর চেহারা থেকে সমস্ত বিরক্তির ছাপ উধাও হয়ে গেল। নিজেও টের পেলেন না, ধীরে ধীরে শক্ত করে ধরেছেন রিসিভারটা, বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটল কপালে। শুনছেন, কিন্তু বিশ্বাস করতে মন চাইছে না, আবার এ-ও জানেন, প্রতিটি শব্দ বাস্তব সত্য। পাথর হয়ে বসে থাকলেন চেয়ারে—বোবা, যেন বেকুব।

    কীথ বিউমণ্ট থামলেন। মাত্র একটা প্রশ্ন করলেন রিকার্ড, ‘প্রেসিডেণ্ট জানেন? ‘

    ‘হ্যাঁ। মেক্সিকো থেকে রওনা হয়েছেন তিনি। পৌঁছেই আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন।’

    সন্দেহ কি!

    ‘থাকব ওখানে,’ বিড়বিড় করে বললেন রিকার্ড। রিসিভার নামিয়ে রেখে নিঃসাড় বসে থাকলেন। সামনের সাদা দেয়ালে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন।

    কি করে সম্ভব? কেন?

    এত থাকতে প্রেসিডেন্টের মেয়ে কিডন্যাপ হলো!

    কে দায়ী? কারা? কেন?

    সি.আই.এ. চীফের গলা শুকিয়ে গেল। ঢোক গিলতে ভুলে গেলেন তিনি। ভাবলেন, উত্তরগুলো জানার আগে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেও বোধহয় মন্দ হয় না।

    .

    ডেস্কের ওপর মুষ্ট্যাঘাত করলেন প্রেসিডেণ্ট। ‘ড্যাম ইট, জেফ! সিক্রেট সার্ভিস ওখানে আমাকে তুলো দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। ওদের সন্দেহ প্রতিটি বিছানার তলায় টেরোরিস্ট লুকিয়ে আছে। মিশিগানে কি করছিল ওরা? এটা ওরা কিভাবে ঘটতে দিল?’

    সাথে সাথে কোন জবাব দিলেন না জেফ রিকার্ড। অপেক্ষা করছেন, বিস্ফোরণের প্রকোপ আগে কমুক। রিচার্ড কনওয়েকে পঁচিশ বছর ধরে চেনেন তিনি, সেই কলেজ জীবন থেকে। এক সাথে রাজনীতি করেছেন তাঁরা, কংগ্রেসে গেছেন, প্রেসিডেন্ট ইলেকশনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন, তারপর এখানে এই ওভাল অফিসে এসেছেন। জানেন, সঙ্কট যত জটিলই হোক এক সময় রিচার্ড কনওয়ে মাথা ঠাণ্ডা করবেন।

    তবে এ-ধরনের সঙ্কটের কথা ভাবা যায় না। বন্ধুর দিকে তাকালেন তিনি। যুবক প্রেসিডেন্ট, বয়স এখনও পঞ্চাশ পুরো হয়নি। এমনিতে কোমল স্বভাবের, কিন্তু প্রয়োজনে কঠিন হতে জানেন। বিনা যুক্তিতে বুঝ মানার লোক নন। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভালবাসেন। তাঁর অভিধানে অসম্ভব বলে কোন শব্দ নেই। সমাধান নেই, এ অজুহাত শুনতে তিনি রাজি নন।

    রক্তে আভিজাত্য রয়েছে, অথচ রক্তপিপাসু যোদ্ধা কখনোই হতে পারবেন না। প্রেসিডেন্ট, তাঁর বন্ধু, সুকুমার বৃত্তির চর্চা করেন, শিন্ধ এবং শিন্ধীর প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা। সন্দেহ নেই, তাঁর মত ব্যক্তিত্বকেই ওভাল অফিসে মানায়।

    বাইরে থেকে অতটা বোঝা না গেলেও, এই মুহূর্তে ভেতরে ক্রোধান্ধ অসুরে পরিণত হয়েছেন প্রেসিডেণ্ট। প্রিয়জনকে হারাবার আশঙ্কায় উদ্ভ্রান্ত। কোন রাজনৈতিক সঙ্কট তাঁকে এতটা উত্তেজিত করতে পারত না, রিকার্ড জানেন। এমন একজন মানুষ, যিনি সারা দুনিয়ার সমস্যা সমাধান করে থাকেন-আজ হঠাৎ করে নিজেই বিকট সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছেন। তাঁর মেয়েকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। এখন তাঁর অন্য লোকদের ওপর নির্ভর না করে উপায় নেই। যত ক্ষমতাই তাঁর থাক, নিজেই তিনি মেয়েকে খুঁজতে বেরুতে পারেন না।

    বন্ধুর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে জেফ রিকার্ডের চিন্তা-ভাবনা হঠাৎ অন্য খাতে বইতে শুরু করল। প্রেসিডেন্টের আচরণের মধ্যে কি রকম যেন একটা প্রচ্ছন্ন লোক-দেখানো ভাব রয়েছে। নাকি চোখের ভুল? তাঁর বসার ভঙ্গিতে কোন আড়ষ্টতা নেই। মেক্সিকো সফর থেকে সদ্য ফিরেছেন, অথচ মাথার চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো, পরনে সদ্য ভাঁজ খোলা ধূসর রঙের স্যুট, আলো লেগে ঝিক করে উঠছে হীরের আংটি। মনের ভেতর যাই ঘটে যাক, চেহারায় লাবণ্যের কোন কমতি নেই। উদ্বিগ্ন, কিন্তু কেমন যেন বানোয়াট মনে হয়।

    না, নিশ্চয়ই ভুল বিশ্লেষণ করছেন তিনি।

    চোখ থেকে চশমা খুলে কাঁচ দুটো মুছলেন রিকার্ড। রাত তিনটে বাজে, বিছানায় যাবার সময় পাননি। আবার কবে ঘুমাবেন, জানেন না।

    ‘কেউ ঘটতে দেয়নি,’ বললেন তিনি। ‘এটা কোন পাগলের কাজ নয় যে সিকিউরিটি আরও কড়া হলে ঠেকানো যেত। না, ঝোঁকের মাথায় বা হঠাৎ করে কাজটা করা হয়নি। লোকটা প্রফেশনাল, হাইলি স্কিলড প্রফেশনাল।’

    ‘আর সিক্রেট সার্ভিস?’ সাথে সাথে প্রশ্ন করলেন প্রেসিডেন্ট। ‘ওরা প্রফেশনাল নয়?’

    ‘রিচার্ড,’ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জেফ রিকার্ড বললেন, ‘ওরাও প্রফেশনাল। কিন্তু আমি ট্রেনিং পাওয়া বডিগার্ড সম্পর্কে বলছি না। বলছি স্কিলড ইণ্টেলিজেন্স এজেন্ট সম্পর্কে। সিক্রেট সার্ভিসকে তুমি দোষ দিতে পারো না।’

    ‘আমার যাকে খুশি তাকে দোষ দেব!’ বিস্ফোরিত হলেন প্রেসিডেণ্ট। চোখে আগুন নিয়ে বন্ধু সি.আই.এ. চীফের দিকে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন, ধীরে ধীরে পড়ে আসছে রাগ। হাতটা একটু তুলে শূন্যে নাড়লেন তিনি। ‘আমি জানি,’ শান্তভাবে বললেন। ‘অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের জন্ম দেয়।’ আবার তিনি চোখ মেললেন। দৃষ্টিতে উদ্বেগ, কিন্তু চেহারা শান্ত। ‘তুমি তাহলে তাই ভাবছ, জেফ? বিদেশী কোন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি?’

    চেয়ারে সিধে হয়ে বসলেন জেফ রিকার্ড। ‘সে রকমই দেখাচ্ছে না? আর কার এত সাহস বা যোগ্যতা আছে? টেরোরিস্টদের কাজ নয়, এটুকু পরিষ্কার। কাজের ধরনই সে-কথা বলে দেয়। দলবেঁধে আসেনি ওরা, কমাণ্ডো হামলা চালায়নি। তবে আমাদের সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা ছিল লোকটার। ছদ্মবেশে কোন ত্রুটি নেই, সময়ের চুলচেরা হিসেব ধরে কাজ সেরেছে। এ-সব গুণ একজন ইন্টেলিজেন্স এজেন্টেরই থাকে।’ এক মুহূর্ত থেমে ডেস্কের ওপর ঝুঁকলেন তিনি। ‘তবে এ ধরনের ব্যাখ্যা এখুনি না করাই ভাল। কাউকে বাদ দেয়া বোকামি হবে। বিদেশী শত্রু, দেশী শত্রু, রাজনৈতিক শত্রু, তালিকায় সবাইকেই রাখতে হবে।’

    ‘রাজনৈতিক শত্রু?’

    প্রেসিডেন্টের দিকে সরাসরি তাকালেন রিকার্ড। ‘যে-কেউ হতে পারে, রিচার্ড। তুমি অসহায় হয়ে পড়লে যারা লাভবান হবে তাদের যে কেউ কাজটা করিয়ে থাকতে পারে।’

    প্রেসিডেন্ট তিক্ত একটু হাসলেন। ‘তালিকাটা তাহলে শুধু লম্বাই হতে থাকবে। আমি অসহায় হয়ে পড়লে লাভবান হবে না এমন কেউ সত্যি আছে নাকি?’ চেয়ার ছাড়লেন তিনি, পায়চারি শুরু করলেন। ফায়ার প্লেসের কাছে, জর্জ ওয়াশিংটনের পোর্ট্রেটের সামনে থামলেন, ঘুরে ফিরে এলেন বিশাল জানালার পাশে নিজের ডেস্কের পিছনে। মুহূর্তের জন্যে থেমে সবুজাভ বুলেটপ্রুফ কাঁচের গায়ে হাত বুলালেন। ‘বিদেশী ইণ্টেলিজেন্স,’ যেন নিজের সাথে কথা বলছেন। তারপর ফিরলেন তিনি ‘তোমার কি মনে হয়, জেফ? কে.জি.বি.?’

    ‘প্রচুর সম্ভাবনা।’ কাঁধ ঝাঁকালেন রিকার্ড। ‘আরেকদিক থেকে ভাবলে সম্ভাবনা ক্ষীণ। ‘

    ‘ক্ষীণ কেন?’

    ‘কারণ, সাংঘাতিক ঝুঁকি। যদি ধরা পড়ে অনেক কিছু হারাতে হবে ওদের।’

    ‘যদি ধরা পড়ে? যদি? আমরা টিউলিপকে নিয়ে কথা বলছি, ফর গডস সেক! আমার মেয়ের জীবন বিপন্ন, তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে! এরপরও তুমি বলছ, যদি ধরা পড়ে?

    না, ভান নয়; ভাবলেন রিকার্ড। ক্ষমতা ভোগ করলে বিনিময়ে চড়া মূল্য দিতে হয়, রিচার্ড কনওয়ের কাছ থেকে সেই মূল্য দাবি করছে প্রকৃতি। জেফ রিকার্ড বন্ধুর চেহারায় ক্ষীণ একটু অপরাধ ভাব লক্ষ করলেন।

    ‘খুন-খারাবির মধ্যে যাবে না ওরা,’ প্রেসিডেণ্টকে আশ্বস্ত করতে চাইলেন রিকার্ড। বললেন জোরের সাথেই, কিন্তু নিজেই আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করলেন। ‘যে বা যারাই তাকে নিয়ে যাক, টিউলিপকে মেরে ফেলবে না। আমরা জানি, ওরা প্রফেশনাল। সত্যি কথা বলতে কি, এখানেই যা একটু সান্ত্বনা আমাদের।’

    ‘কিসের ভিত্তিতে এত জোর দিয়ে বলছ?’

    ‘বলছি, কারণ, আমাদের মেয়ে মারা গেলে তার আর কোন দাম থাকবে না।’

    প্রেসিডেন্ট একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন। ‘তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ না যে ওরা টাকার জন্যে কাজটা করেছে?

    ‘দাম শুধু টাকা দিয়ে মেটানো হয় না,’ বললেন রিকার্ড। ‘না, ওরা টাকা চাইবে বলে মনে হয় না। ইউ.এস. ট্রেজারির মাথায় যে বসে আছে তার জন্যে টাকা কোন সমস্যা নয়। যদি চায়, এমন কিছু চাইবে, দেয়া অসম্ভব বলে মনে হবে আমাদের।’

    ‘হ্যাঁ, এ-ব্যাপারে তোমার সাথে আমি একমত,’ প্রেসিডেন্ট ধীরেসুস্থে আবার বসলেন চেয়ারে। মুখ নিচু করে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন। ‘বড় ধরনের কিছু একটা চাইবে ওরা। আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়, এমন কিছু।’

    নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকালেন জেফ রিকার্ড। মেয়েকে ফিরে পাবার জন্যে এমন কিছু নেই যা একজন বাপ দিতে পারেন না। অপরদিকে, বিশ কোটি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে প্রেসিডেণ্টের কাঁধে, তিনি তাদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারেন না। বাপ আর প্রেসিডেণ্ট, দুটো আলাদা সত্তা। কিডন্যাপাররা অসম্ভব কিছু দাবি করে বসলে দুই সত্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যাবে।

    ‘ওঁরা দু’জনেই জানেন, প্রেসিডেন্ট হারবেন, নাকি বাপ হারবেন। গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যই হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ রক্ষা করা।

    ‘জন্ধনাকন্ধনার সময় নয় এটা,’ মুখ তুলে বললেন প্রেসিডেণ্ট। ‘টিউলিপকে খুঁজে বের করতে হবে—জলদি। ওরা কোন দাবি জানাবার আগেই। সেজন্যেই তুমি এখানে। তোমাকে যতটা বিশ্বাস করি, আর কাউকে তার অর্ধেকও করি না। এফ.বি.আই. চীফের কথা ধরো। আমিই তাকে বেছেছি, কিন্তু মাত্র ছ’মাস হলো অফিসে বসছে। সে কতটুকু কি করতে পারবে আমার জানা নেই।

    সামনের দিকে একটু ঝুঁকলেন রিকার্ড। ‘আমার দ্বারা যতটুকু সম্ভব আমি করব, রিচার্ড। কিন্তু, জানোই তো, আইন বলে কাজটা এফ.বি.আই-এর…

    ‘ঘরোয়া বলে? ঘরোয়া কিনা তা-ই তো জানি না। যদি বিদেশী ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি দায়ী হয়ে থাকে, দায়িত্বটা তোমার ঘাড়েই চাপে, তাই না?’

    মাথা ঝাঁকালেন রিকার্ড। ‘তোমার সিদ্ধান্তের ওপর আর কথা কি ‘

    ‘হ্যাঁ, এটাই আমার সিদ্ধান্ত। তাছাড়া, জেফ, আমি এফ.বি.আই.বা সি.আই.এ.-কে নিয়ে কথা বলছি না। বলছি তোমাকে নিয়ে। তুমি আমার বন্ধু, তোমার প্রতি এটা আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ। আমি চাই তুমি আমার মেয়েকে খুঁজে বের করো।

    কয়েক যুগ ধরে, ধীরে ধীরে জন্মে ওঠা আস্থা, বিশ্বাস, আর দাবি নিয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন ওঁরা। কিন্তু শুধুই কি আস্থা আর বিশ্বাস? এতগুলো বছর ধরে পরস্পরের প্রতি খানিকটা অবিশ্বাসও কি জন্মায়নি? খানিকটা ঈর্ষা? সামান্য বিদ্বেষ? বন্ধুত্ব বজায় আছে, কিন্তু অসন্তোষ কি একেবারেই নেই?

    ‘শুধু সি.আই.এ. নয়, এফ.বি.আই.কেও তোমার হাতে তুলে দেয়া হলো,’ প্রেসিডেণ্ট বললেন। ‘এমন কি সিক্রেট সার্ভিসও, যদি দরকার মনে করো। ট্রেজারি, ডিফেন্স, সামরিক বাহিনী—আমার সরকারের ক্ষমতার সমস্ত উৎস তোমার হাতে তুলে দিলাম।’

    আপনা থেকেই নত হয়ে এল জেফ রিকার্ডের মাথা। গুরুদায়িত্বের ভার তিনি অনুভব করছেন। আগেই ধারণা করেছিলেন, এই সংকটে বড় একটা ভূমিকা পালন করতে হবে তাঁকে। হয়তো সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা দেয়া হবে। কিন্তু তাই বলে এই? হাতের তালু এক করে ঘষলেন তিনি। ঘামে ভিজে গেছে। অগাধ ক্ষমতা, বিশাল দায়িত্ব, বিষম ঝুঁকি।

    বিকন্ধ কোন পথ নেই। ‘আমার সাধ্যমত করব আমি, রিচার্ড,’ তিনি বললেন।

    .

    পামেলা কনওয়ের প্রেস সেক্রেটারি অসুস্থ বোধ করল। কিন্তু জানে, কাজটা এখুনি সারতে হবে। চেয়ারে সিধে হয়ে বসে টাইপরাইটারে কাগজ ঢোকাল সে। অভ্যস্ত দক্ষতার সাথে, সংক্ষিপ্ত ভাষায় টাইপ করে ফেলল প্রেস রিলিজ। অন্যান্য রুটিন স্টেটমেন্টের সাথে এই খবরটাও যাবে।

    ‘ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে টিউলিপ কনওয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ইণ্ডিয়ান স্প্রিঙে সে তার মামার বাড়ি বেড়াতে গেছে। ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা করে বলেছেন, ব্যাপারটা গুরুতর কিছু নয়, তবে দিন কয়েক বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। আরও অন্তত এক হপ্তা প্রেসিডেন্টের মেয়ে ওয়াশিংটনে ফিরবে না।’

    প্রেস রিলিজটা আগামীকাল ইস্ট উইং থেকে সাংবাদিকদের দেয়া হবে। তারা সম্ভবত খবরটাকে তেমন গুরুত্বের সাথে নেবে না।

    .

    মোটাসোটা একটা রিপোর্ট, পাতাগুলো উল্টে গেলেন জেফ রিকার্ড। চোখ থেকে চশমা খুলে হেলান দিলেন চেয়ারে, হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ রগড়ালেন। আবার সিধে হয়ে বসলেন, ঝাঁক বেঁধে থাকা সুইচগুলোর একটায় চাপ দিলেন জোরে।

    ‘ইয়েস, স্যার?’

    ‘পিকেরিং-কে বলো, এখন আমি তার সাথে দেখা করতে পারি।’

    ‘ইয়েস, স্যার।’

    হেনরি পিকেরিং জেফ রিকার্ডের ডেপুটি, সি.আই.এ-র দ্বিতীয় ব্যক্তি। লম্বা, একহারা গড়ন, মাথার দু’পাশের চুলে সবে পাক ধরতে শুরু করেছে। পিকেরিং আগে ফিল্ড এজেণ্ট ছিল, সেখান থেকে সরে এসেও মুটিয়ে যায়নি, তার প্রাণপ্রাচুর্য এবং রিফ্লেক্স আগের মতই অটুট আছে। সংশ্লিষ্ট ওয়াশিংটন মহলে ‘বয় জিনিয়াস’ বলে ডাকা হয় তাকে। তার এই খ্যাতির পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং উর্বর মস্তিষ্ক, দুটোরই সমান কৃতিত্ব রয়েছে। বয়স এখনও পঁয়তাল্লিশ পেরোয়নি। ল্যাংলিতে কাজ করে সে।

    পিকেরিং ঘরে ঢুকতেই মুখ তুলে তাকালেন জেফ রিকার্ড। সপ্রতিভ এবং ব্যগ্র, ভাবলেন তিনি। তাঁর ধারণা, পঁচাশিতেও পিকেরিং এরকম তাজা আর প্রাণচঞ্চল থাকবে।

    ‘তোমার স্পেকিউলেশনগুলো পড়লাম, হেনরি,’ বললেন তিনি। ‘মন্দ নয়, কিন্তু…আরে, বসো!’

    ডেস্কের সামনের একটা চেয়ারে বসে পা দুটো সামনে লম্বা করে দিল পিকেরিং। জেফ রিকার্ডের মতই, শুধু শার্ট পরে আছে সে। চোখের কোলে কালি, যেন কত দিন ঘুমায়নি। ‘মন্দ নয় মানে, স্যার?’

    রিপোর্টটার ওপর একটা হাত রাখলেন সি.আই.এ. চীফ। আড়াইশো পৃষ্ঠার একটা গবেষণা। কমপিউটর আর হিউম্যান ইনফরমেশন ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা ডাটা-র সাহায্যে নিরেট একটা ধারণা পাবার চেষ্টা করা হয়েছে, সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে কিছু সাজেশন। ‘ধারণা আর সাজেশন যথেষ্ট নয়, হেনরি,’ বললেন তিনি। ‘তাড়াতাড়ি অ্যাকশনে নেমে তাড়াতাড়ি ফল পাবার মত কিছু একটা করতে হবে আমাদের।

    দু’জনের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব নতুন নয়। এজেন্সি-চীফ পলিসি নির্ধারণ করে সেই মুহূর্তে রেজাল্ট চাইবেন, কিন্তু তাঁর ডান হাতকে কাজ করতে হয় বাস্তবতা নামে সীমাবদ্ধতার ভেতর। খুক্ করে কেশে গলা পরিষ্কার করল পিকেরিং, তারপর শুরু করল, ‘এরপর আর কি করার আছে, আমার জানা নেই। ওঅর রূম-কে রেড অ্যালার্টের মধ্যে রেখেছি। পেন্টাগন আর ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল-কে সতর্ক রাখা হয়েছে। দেশে আর দেশের বাইরে যেখানে যত স্টেশন চীফ আছে তাদের সবাইকে সাবধান করা হয়েছে। মিত্র দেশের সব ক’টা ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সাথে যোগাযোগ রাখছি। এমনকি আন অফিশিয়ালি সামরিক বাহিনীকেও সতর্ক রাখা হয়েছে। জানি, এত সব করে পরিবেশটাকে আড়ষ্ট করে তোলা হচ্ছে, অথচ কোন ফলাফল আশা করার উপায় নেই। ফল পাব, যদি নতুন কোন সূত্র হাতে আসে।’

    ‘ইতিমধ্যে যেগুলো হাতে এসেছে?’ শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলেন সি.আই.এ. চীফ।

    ‘সেগুলোর ওপর কাজ হচ্ছে। কোত্থেকে কেনা হয়েছে খেলনা ভাল্লুকটা, ভুয়া স্যাম গ্রেসনের গাড়িটা কোত্থেকে এল। প্রিস্ট ভদ্রলোককে কে ফোন করেছিল সেটাও জানার চেষ্টা করছি আমরা। স্যাম গ্রেসন আমেরিকায় আসছে এই খবর যারা জানত তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে। এফ.বি.আই. ল্যাবরেটরিতে প্লেনের প্রতিটি অংশ টেস্ট করব আমরা…।

    ‘ঠিক এই কথাটাই বলতে চাইছি আমি,’ ডেপুটিকে বাধা দিলেন জেফ রিকার্ড। ‘প্লেনটা পরীক্ষা করে কিছুই আমরা জানতে পারব না। কিডন্যাপার ওটায় ছিলই না। ওটাকে ধোঁকা দেয়ার একটা কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কৌশলটা কাজেও লাগে। গরু, বুঝলে, সিক্রেট সার্ভিসে ওরা একপাল গরু কাজ করছে।’

    চেহারায় সহানুভূতি নিয়ে মাথা ঝাঁকাল পিকেরিং। ‘ব্যাপারটা আমি বুঝি, স্যার। দারুণ অস্বস্তিকর-কারণ প্রেসিডেন্টকে বুঝ দেয়ার কাজটা একা আপনার ওপর চেপেছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হলো, খোলা একটা পথ না পেলে এই মুহূর্তে তেমন কিছু আমাদের করার নেই। প্রথম চাল ওদের, স্যার।’

    রিকার্ড দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ‘হ্যাঁ, অনেকটা দাবা খেলার মতই বটে, কিন্তু মুশকিল হলো বোর্ডটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু, না, হেনরি-আমি অ্যাকশন চাই। কোথাও একটু ফাঁক থেকে গেলে, তার জন্যে যে-ই দায়ী হোক, তাকে আমি ক্ষমা করব না। তাঁর হাত আবার রিপোর্টের ওপর নামল। ‘এতে শুধু গত ছ’মাসের হট স্পটস সার্ভে করা হয়েছে। আমি চাই দু’বছরের রিপোর্ট দাও তুমি। অ্যানালিস্টদের বলো, এই কিডন্যাপিঙের মোটিভ হতে পারে এমন যে-কোন অ্যাকটিভিটি খতিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। যে-কোন ধরনের, যে-কোন সময়ের, যে-কোন জায়গার।’

    শার্টের পকেট থেকে একটা ইনডেক্স কার্ড বের করল পিকেরিং, নোট নিল।

    ‘বললে, স্টেশন চীফদের সতর্ক করে দিয়েছ। কী ফিল্ড এজেণ্টদের কথা ভাবোনি?’

    ‘ধরে নিয়েছি স্টেশন চীফরাই…’

    ‘ধরে নিলে চলবে না, হেনরি! সিদ্ধান্ত নাও কারা আমাদের টপ এজেণ্ট, কাজ থেকে তুলে এনে এখানে জড়ো করো সবাইকে। প্রত্যেককে তুমি নিজে ব্রিফ করবে। বুঝতে পারছ না, আমাদের সমস্ত ক্ষমতা এই কাজে লাগাতে হবে! প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন ফার্মগুলোরও সাহায্য নিতে পারি আমরা। মিত্র দেশের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলোর সাথে যোগাযোগ একটা কাজের কাজ হয়েছে…।’

    ‘প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন ফার্ম, স্যার?’

    ‘নয় কেন? শুধু দেশী নয়, বিদেশী ফার্ম যেগুলো খুব নাম করা তাদের সাহায্য নিতে আপত্তি কিসের?’ এক মুহূর্ত স্মরণ করার চেষ্টা করলেন সি.আই.এ. চীফ। ‘রানা ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি তো এর আগেও জটিল কিছু কাজ করে দিয়েছে আমাদের, তাই না? তবে…’

    ‘জ্বী, স্যার,’ বলল পিকেরিং। ‘তবে ফার্মটার ডিরেক্টর মাসুদ রানা রোড অ্যাক্সিডেণ্টে মারা গেছে।’

    ‘মারা গেলে কি আর করা। কিন্তু ফার্মটা তো আর বন্ধ হয়ে যায়নি। তাছাড়া, খোঁজ নিয়ে দেখো সত্যি মাসুদ রানা মারা গেছে কিনা। এর আগেও একবার তার মৃত্যুর খবর রটানো হয়েছিল। হয়তো কোন কারণে গা ঢাকা দেয়ার দরকার হয়েছে, তাই…’

    ‘মনে হয় না, স্যার,’ বলল পিকেরিং। ‘খবরটা পাবার সাথে সাথে তদন্ত করে দেখা হয়েছে। রিপোর্ট পেয়েছি, খবরটা ভুয়া নয়।’

    কাঁধ ঝাঁকালেন রিকার্ড ‘আমাদের দূতাবাসগুলোর পলিটিক্যাল অফিসারদেরও সতর্ক করা দরকার। ওদের বলো, বিদেশী ইন্টেলিজেন্স দফতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে খবর রাখতে হবে। কুখ্যাত টেরোরিস্ট গ্রুপগুলোর তৎপরতার ওপরও নজর রাখা জরুরী।’

    কার্ডে আরেকটা নোট নিল পিকেরিং।

    ‘হয়তো এই একবার অন্তত পলিটিক্যাল অফিসাররা এমন কিছু বলবে যা আমরা ইতিমধ্যে জানি না। ভাল কথা, জিজ্ঞেস করবে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের কি বলার আছে। ওরা রিপোর্ট পাঠালে সেই মুহূর্তে আমাকে যেন দেখানো হয়। আরেকটা কথা, কোন রিপোর্টই সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে যাবে না, সবার আগে আমাকে দেখিয়ে নিতে হবে-এর যেন কোন ব্যতিক্রম না হয়।’

    চেহারায় ক্ষীণ একটু বিস্ময় ফুটে উঠলেও পিকেরিং কোন প্রশ্ন করল না।

    ‘এফ.বি.আই. চীফ,’ বলে চললেন রিকার্ড, ‘কি করছে না করছে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখো। ভদ্রলোকের ওপর আমার তেমন আস্থা নেই। ওভাল অফিসে কার কথা খাটে, উনি জানেন না।

    নিঃশব্দে হাসল পিকেরিং। ‘একটু সময় দিন, স্যার। উনি শিখে নেবেন। কিন্তু, স্যার, ডিরেক্টরের সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি কখনও। এফ.বি.আই-এর ভেতরে আমার নিজস্ব লোক আছে-কয়েক বছর ধরেই।’

    খুশি হয়ে মাথা ঝাঁকালেন রিকার্ড। ‘গুড।’ জানেন, এ-সব কাজে পিকেরিঙের তুলনা হয় না। কাজের সুবিধের জন্যে সবখানে নিজের লোক ঢোকানো আছে তার। চেয়ার ছেড়ে জানালার সামনে দাঁড়ালেন তিনি। নিচের পার্কিং লটে উজ্জ্বল আলো জ্বলছে, তবে বিল্ডিংটাকে ঘিরে থাকা ঘন গাছপালার বেড় আবছা অন্ধকারে ঢাকা। গাছগুলোর মাথার ওপর আলোর ক্ষীণ আভাস দেখা গেল। সকাল হতে আর বেশি দেরি নেই। শুধু একটা কথা মনে রেখো, হেনরি,’ ঘাড় ফিরিয়ে ডেপুটির দিকে তাকালেন তিনি। ‘ওয়াশিংটনের সব কটা সান-অভ এ বীচ চাইছে এই সুযোগে হিরো বনে যাবে। তিনি ঘুরলেন। ‘কিন্তু সুযোগটা একা আমি নিতে চাই।’

    .

    দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে, গাড়িটা পুব দিকে বাঁক নিয়ে ভার্জিনিয়া রুট একশো তেইশে পড়ল। সি.আই.এ-র ল্যাংলি হেডকোয়ার্টারের পাশ ঘেঁষে এগোল রানা, কিন্তু ভেতরে ঢুকল না। ওল্ড জর্জটাউন পাইক-এ পৌঁছে সামনে আরেকটা বাঁক দেখল, সেটা পেরিয়ে চলে এল টার্কি রান রোডে। এদিকে সব অভিজাতদের বাড়ি।

    একজন কমপিউটর সেলসম্যান, রোজ সকালেই ব্রেকফাস্ট মীটিঙে উপস্থিত থাকার জন্যে ওয়াশিংটনে একবার আসতে হয়। আজও ঠিক সময়ে তাকে নিয়ে ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ল্যাণ্ড করেছে লীয়ার জেট। সেলসম্যানের বদলে, কিন্তু একই চেহারা নিয়ে, প্লেন থেকে নেমে এসেছে রানা, হাতে অ্যাটাচি কেস আর একটা গারমেণ্ট ব্যাগ। এয়ারপোর্ট কর্মী আর ক্রুরা অনেকেই তাকে দেখেছে, পরিচিত লোক, কাজেই বিশেষ মনোযোগ দেয়নি কেউ। ফেডারেল পুলিস যে ব্যারিকেড তৈরি করেছে, সেখানে এয়ারপোর্টের লোকজনও ছিল, ব্যারিকেড পেরোতেও তাই কোন অসুবিধে হয়নি।

    পুলিস যদি খোঁজ নিত, সহজেই ট্রেস করতে পারত ওর ফ্লাইট প্ল্যান। নক্সভিল, টেনেসি থেকে হুবহু একই চেহারার একটা লীয়ার জেট টেক-অফ করেছে, ঠিক যখন রানা মিশিগান ত্যাগ করে। সেটা অন্য কোথাও, সম্ভবত কোন প্রাইভেট এয়ারফিল্ডে ল্যাণ্ড করেছে। কমপিউটর সেলসম্যান বেচারা এই মুহূর্তে কোথায়, কেউ তা জানে না। প্লেনে চড়ার জন্যে বাড়ি থেকে ঠিকই বেরিয়েছে সে, কিন্তু এয়ারপোর্টে পৌঁছুবার ভাগ্য তার হয়নি। মাঝ রাস্তা থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছে। তার নিখোঁজ হওয়ার জন্যে দায়ী রানা এজেন্সির এজেন্টরা, কিন্তু রানা ছাড়া সে-কথা আর কেউ জানে না। পাইলটকে বলা আছে, ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে দ্বিতীয় লীয়ার জেটটা নিয়ে যাবে সে।

    আবার ডান দিকে বাঁক নিল রানার গাড়ি। বনভূমির গভীরে প্রবেশ করছে ও। মাইলখানেক এগোবার পর রাস্তার ধারে একটা লেটারবক্স চোখে পড়ল, গায়ে সদ্য আঁকা একজোড়া লাল গোলাপ কুঁড়ি।

    বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এসে রানাকে পথ দেখিয়ে পিছনের গ্যারেজে নিয়ে এল ডানিয়েল। ভেতরে ঢুকল গাড়ি, দরজা বন্ধ করে দিল ডানিয়েল। বলল, ‘একেবারে কাঁটায় কাঁটায়।’

    শুধু একটু মাথা ঝাঁকাল রানা।

    ‘আপনার আরোহী কেমন আছে?’

    ‘এখনও ঘুমিয়ে।’

    চেইন টেনে গারমেণ্ট ব্যাগটা খুলল রানা। এ-ধরনের ব্যাগ বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়, সাধারণত গারমেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো ব্যবহার করে। কয়েক জোড়া স্যুট সুন্দরভাবে রাখার মত জায়গা থাকে ভেতরে। কিন্তু রানার এটা শুধু বাইরে থেকে দেখতে গারমেণ্ট ব্যাগের মত, ভেতরে অন্য রকম।

    মহাশূন্যচারীদের জন্যে বিশেষ এক ধরনের স্পেস স্যুট তৈরি করেছিল নাসা, তার নমুনা সংগ্রহ করে খুদে একটা স্পেস স্যুট তৈরি করেছে রানা। স্পঞ্জ, তুলো, আর ফোম দিয়ে তৈরি, ভেতরে শুয়ে বা বসে থাকতে পারে ছোট একটা বাচ্চা, বাতাস চলাচলের যান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে। ব্যাগের ভেতর পাতলা ইস্পাতের পাত দিয়ে তৈরি কাঠামোয় আটকানো রয়েছে স্পেস স্যুট। ফ্রেমের ওপর থেকে কিছু কাপড়চোপড় সরাল রানা, তারপর ঢাকনি সরিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে টিউলিপের দিকে তাকাল। নরম কুশনে হেলান দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। পালস আর শ্বাস পরীক্ষা করল রানা, তারপর আরেকটা ইঞ্জেকশন দিল। সোডিয়াম পেন্টোথালের বদলে ভ্যালিয়াম ব্যবহার করছে ও, ট্রাংকুইলাইজার হিসেবে কড়া না হলেও নিরাপদ। এবারও, মাত্রা ঠিক থাকল, অচৈতন্যের অগভীর স্তরে নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্যে পৌঁছে গেল টিউলিপ।

    গ্যারেজে আরেকটা বাহন রয়েছে। ডানিয়েলের ইঙ্গিতে সেদিকে এগিয়ে গেল রানা।

    ‘সুন্দর, তাই না? হুবহু আসলটার মত দেখতে।

    লম্বা, কালো একটা বাহন, মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাবার কাজে ব্যবহার করা হয়। শবযানের সাইড ডোরে খুদে, সোনালি হরফে লেখা রয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি। ‘হ্যাঁ, হুবহু,’ একমত হলো রানা। পিছনের দরজা খুলে ভেতরে তাকাল ও।

    মেঝেতে একটা ফাঁক রয়েছে, কফিন আকারের। ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে গেছে, বারো ইঞ্চি নিচে দ্বিতীয় মেঝেতে। ‘ভেতরে যেটা ঢুকবে সেটা কই,’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘ইনসার্ট?’

    ‘এখানে।’ পথ দেখিয়ে গ্যারেজের সামনের দিকে চলে এল ডানিয়েল। লম্বা, চ্যাপ্টা আকৃতির একটা বাক্স দেখল রানা। মাটি থেকে এক ফুট উঁচু হয়ে আছে। বাক্সটা সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করল ও। ঢাকনি তুলল। তালাগুলো খুলল। ‘ফিট হয় কিনা ঢুকিয়ে দেখেছ?’

    ‘কোন খুঁত নেই।’

    ‘গুড।’

    ‘একটা প্রশ্ন,’ বলল ডানিয়েল।

    চোখ তুলল রানা।

    ইঙ্গিতে শবযানটা দেখাল ডানিয়েল। ‘মি. অবসন জানতে চেয়েছেন আপনার প্ল্যানের মধ্যে ওটা কিভাবে আসছে।’

    ক্ষীণ একটু হাসল রানা। ‘অবসনকে বোলো, চিন্তিত হবার কারণ নেই। খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে সে।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২
    Next Article মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.