Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প181 Mins Read0

    অপহরণ-১.১১

    এগারো

    পরদিন, শনিবার, ছ’টা বেজে কয়েক মিনিট।

    হোয়াইট হাউসের উল্টো দিকে, লাফায়েটি স্কয়ারে দাঁড়িয়ে রয়েছে বহুতল হে-অ্যাডামস হোটেল। হোটেলের সুসজ্জিত লবিতে ধীর পায়ে ঢুকল রানা। জানা সত্ত্বেও ডেস্কের পিছনে বসা লোকটাকে রকি ডুরেলসনের রূম নাম্বার জিজ্ঞেস করল ও। তারপর লবির অপর প্রান্তে হাউস ফোনের দিকে এগোল।

    রকি ডুরেলসন দ্রুত জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়েস?’ অত্যন্ত ব্যস্ত লোক সে, সোয়ানটেক্স করপোরেশনের ভাইস-প্রেসিডেণ্ট। গলার আওয়াজ শুনেই বোঝা গেল, অপ্রত্যাশিত ফোন কলে বিরক্ত হয়েছে।

    ‘মি. ডুরেলসন, আমার নাম হ্যালোরান,’ বলল রানা। ‘স্টেট ডিপার্টমেন্টে কাজ করি।’

    ‘ইয়েস?’

    ‘আপনার যদি খানিক সময় হয়, দেখা করতে চাই।’

    ‘এখন?’

    ‘হ্যাঁ, ব্যাপারটা জরুরী।

    অপরপ্রান্তে ইতস্তত করতে লাগল রকি ডুরেলসন। তারপর বলল, ‘ঠিক আছে। কিন্তু তাড়াতাড়ি করতে হবে। একটু পরই আমি বাইরে বেরিয়ে যাব।’

    ‘ইয়েস, স্যার, জানি। এখুনি উঠে আসছি আমি।’

    এলিভেটরে চেপে ছ’তলায় উঠল রানা, কার্পেট মোড়া করিডর ধরে বাঁ দিকে মোড় নিল। কামরার দরজা খুলে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে রকি ডুরেলসন। তার পরনে টক্সেডো প্যাণ্ট, ফরমাল শার্ট, বো-টাই। ধূসর চুল ব্যাকব্রাশ করা। চেহারায় ব্যস্ত আর বিরক্ত ভাব। ‘কি এমন জরুরী ব্যাপার যে শনিবার রাতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এসে হাজির?’ রানা ঘরে ঢোকার পর দরজা ঠেলে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল সে।

    ‘সত্যি কথা বলতে কি, অত্যন্ত নাজুক একটা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, স্যার,’ বলল রানা। লক্ষ করল, রকি ডুরেলসন নিজেও বসছে না, ওকেও বসতে বলছে না। ‘অস্ট্রিয়ান সরকার আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।’

    ‘প্রতিবাদ?’ রকি ডুরেলসন আকাশ থেকে পড়ল, কিছুই বুঝতে পারছে না সে। ‘কি নিয়ে প্রতিবাদ?’

    ‘কয়েকজন অস্ট্রিয়ান অফিশিয়ালকে পেমেণ্ট দেয়ার ব্যাপারে। আপনাদের করপোরেশন পেমেণ্ট করেছে…’

    ডুরেলসনের চিবুক ঝুলে পড়ল, রাজ্যের অবিশ্বাস নিয়ে রানার দিকে তাকিয়ে থাকল সে। ‘কি ধরনের ননসেন্স এটা, শুনি? ত্রিশ বছর ধরে ভিয়েনায় আমাদের হেডকোয়ার্টার রয়েছে। অস্ট্রিয়ান সরকারের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল…।’

    ‘তা হতে পারে, স্যার। কিন্তু, আমরা যতদূর জানি, আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।’

    ‘আপনি জোক করছেন, ইয়ংম্যান?’ হঠাৎ সতর্ক দেখাল ভাইস-প্রেসিডেন্টকে। ‘কে আপনি?’

    ‘আমার নাম মাইক হ্যালোরান। স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রটোকল অফিসার হিসেবে আছি।’ পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দেখাল রানা, ভেতরে সরকারি আই.ডি. রয়েছে, ওর ছবি সহ। লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে রানা। মনে মনে প্রশংসা করল সে, লোকটার মনের ভাব বাইরে ফুটছে না। এমন কোন লক্ষণ নেই চেহারায় যা দেখে বোঝা যাবে রানার মত সে-ও ব্যাপারটা জানে। কিন্তু জানে যে সে-ব্যাপারে রানার কোন সন্দেহ নেই। সোয়ানটেক্স করপোরেশন সত্যি সত্যি অস্ট্রিয়ান সরকারের কিছু অফিসারকে মোটা টাকা ঘুষ দিয়েছে। ঘটনা এই প্রথম নয়, অনেক বছর ধরেই ঘটছে। ঘুষের বিনিময়ে এক্সপোর্ট কোটা, আয়কর, জাহাজ চলাচল, এবং পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়ে অবৈধ কিছু সুবিধে ভোগ করছে এই করপোরেশন।

    অন্ধ কিছুদিন হলো ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছে অস্ট্রিয়ান সরকার। তদন্তের ভার দেয়া হয় নাম করা একটা আন্তর্জাতিক মানের ইনভেস্টিগেশন ফার্মকে। তদন্তের রিপোর্ট এখনও অস্ট্রিয়ান সরকারের হাতে পৌঁছায়নি, কাজেই সোয়ানটেক্সের বিরুদ্ধে এখুনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না, অপরাধবোধ থাকায় রকি ডুরেলসন সাবধানে পা ফেলবে। সোমবারের আগে টেরই পাবে না যে তাকে বোকা বানানো হয়েছে।

    ‘এরকম নাজুক পরিস্থিতিতে,’ ওয়ালেট ফিরিয়ে নিয়ে পকেটে ভরতে ভরতে বলল রানা, ‘প্রটোকল অফিস ভাবছে, আজ রাতে সোয়ানটেক্সের তরফ থেকে হোয়াইট হাউসে কোন প্রতিনিধি না পাঠানোই উচিত হবে।’

    ‘আই সি! তারমানে অস্পষ্ট একটা অভিযোগ তুলে অফিশিয়ালি আমাকে অবাüিত ঘোষণা করা হলো, তাই কি? অভিযোগ কি প্রমাণিত হয়েছে, হ্যালোরান? জানতে পারি, অভিযোগটা কে করছে?’

    মাথা নাড়ল রানা। ‘দুঃখিত, স্যার। আমরা একটা ফরেন গভর্নমেন্টের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে কাজ করছি। এর বেশি আপনাকে কিছু বলা সম্ভব নয়।’

    ‘ব্যাখ্যা নেই, অথচ হোয়াইট হাউসে যেতে নিষেধ করা হলো আমাকে…।’

    ‘ঠিক ওভাবে দেখবেন না, স্যার, প্লীজ। ব্যাপারটা ব্যক্তিগত নয়। তবে আমার ধারণা, অবস্থা কি আপনি বুঝতে পারছেন, আপনি গেলে হয়তো…’

    ‘ভদ্রভাবে ফিরিয়ে দেয়া হবে, এই তো?’ প্রচণ্ড ক্ষোভে টাই ধরে টানা-হ্যাঁচড়া শুরু করল সে, খুলে ফেলে দিল ছুঁড়ে। ‘বেরিয়ে যাও, হ্যালোরান! ফোনে জরুরী কথা বলতে হবে আমার!’

    নিরীহ ভঙ্গিতে বেরিয়ে এল রানা। স্টেট ডিপার্টমেণ্ট বা হোয়াইট হাউস, যেখানে খুশি ফোন করুক ডুরেলসন, শনিবার রাতে ডিউটি অফিসার ছাড়া কাউকে পাবে না সে। ডিউটি অফিসাররা সবাই এক বাক্যে জানাবে, এ-প্রসঙ্গে কিছুই তাদের জানা নেই। আর যদি চিন্তা-ভাবনা করার জন্যে সময় নেয় ডুরেলসন, কোথাও খোঁজ নেয়ার চেষ্টাই করবে না সে। বেশিরভাগ সম্ভাবনা, পরবর্তী ফ্লাইটে ভিয়েনায় চলে যাবে।

    .

    সোয়া ঘণ্টা পর রকি ডুরেলসনের চেহারা, পরিচয়-পত্র, আর নিমন্ত্রণ-পত্র নিয়ে হোয়াইট হাউসের ইস্ট গেট-এ হাজির হলো রানা। এমন সময় পৌছুল, যখন নিমন্ত্রিতরা বেশিরভাগই ভেতরে ঢুকে গেছে। ভিড় ঠেলতে বা লাইন দিতে হলো না, ওর হাত থেকে এনগ্রেভ করা কার্ড নিয়ে চোখ বুলাল গার্ড, খাতায় লেখা রকি ডুরেলসনের নামের পাশে একটা টিক চিহ্ন দিল। কার্ড ফেরত নিয়ে এগোল রানা, ঢুকে পড়ল ইস্ট উইং-এ। এখানে সামরিক পোশাক পরা একটা মেয়ে কার্ডটা নিয়ে আর ফেরত দিল না। ‘হ্যাভ এ নাইস ইভনিং, মি. ডুরেলসন,’ উজ্জ্বল হেসে বলল মেয়েটা।

    ‘থাঙ্ক ইউ, আই য়্যাম শিওর আই উইল।’

    প্রশস্ত একটা হলঘরে ঢুকল রানা, জানালার বাইরে জ্যাকুলিন কেনেডি গার্ডেন। ক্লোকরূমকে পাশ কাটিয়ে চলে এল ম্যানসনের প্রধান অংশে। এখানে কার্পেট মোড়া করিডরে মৃদু আলো জ্বলছে, দু’দিকের দেয়ালে সার সার পোর্ট্রেট ঝুলছে বর্তমান ফার্স্ট লেডির। লোকজন রয়েছে, কিন্তু খুব বেশি নয়-কয়েকজন মাত্র অতিথি, ইউনিফর্ম পরা আরও অনেক সোশিয়াল এইডস, গাঢ় রঙের স্যুট পরা দু’জন সিক্রেট সার্ভিস এজেণ্ট-বুকের কাছে কোটের ভাঁজে লাল পিন লাগানো।

    হোয়াইট হাউসে এর আগে কখনও আসেনি রানা। ফ্লোর প্ল্যান দেখেছে, লোকমুখে শুনেছে কোথায় কি আছে না আছে। একজন ইউনিফর্ম পরা লোকের পাশে দাঁড়াল ও, জিজ্ঞেস করল, ‘মেন’স রূম কোন্ দিকে, প্লীজ?’

    ‘লাইব্রেরির ভেতর দিয়ে, স্যার, আপনার ডান দিকে।’

    লাইব্রেরিতে ঢুকে চারদিকে ভাল করে দেখল রানা। দরজা আর জানালা বাদ দিয়ে দেয়ালের প্রতি ইঞ্চি কাঁচ-ঢাকা র‍্যাকে শুধু বই আর বই। অগ্নিকুণ্ডে দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। কামরাটা তৈরিই করা হয়েছে আগুনের ধারে বসে গন্ধ-গুজব বা আলোচনা চালাবার জন্যে, যে-সব গন্ধ-গুজব বা আলোচনা ঐতিহাসিক গুরুত্ব পেতে পারে। বিশাল কামরা জুড়ে এত দামী দামী ফার্নিচার, এখানে বসে কেউ পড়ায় মন বসাতে পারবে কিনা সন্দেহ হলো রানার। লাইব্রেরিতে ও একা। মেন’স রূমে ঢোকার পথ পুব দেয়ালে, চারজন ইণ্ডিয়ান চীফ-এর পোর্ট্রেট ঘেঁষে যেতে হয়। সবুজ একটা দরজা, পিতলের চকচকে হরফে লেখা: জেণ্টলমেন।

    কয়েক মিনিট পর আবার বেরিয়ে এল রানা, ইউনিফর্ম পরা এইডের উদ্দেশে মাথা ঝাঁকাল। লাল কার্পেটে মোড়া সিঁড়ির ধাপ, সোনালি রেইলিং, ম্যানসনের স্টেট লেভেলে উঠে এল ও। ঢুকল সোনালি আর সাদায় ঝলমলে ইস্ট রূম-এ। আরও ঝলমলে পোশাক পরা নিমন্ত্রিত নারী-পুরুষ দলে দলে নাচছে, হাঁটাহাঁটি করছে, গন্ধ করছে। সবার মাথার ওপর থমথমে চেহারা নিয়ে জর্জ ওয়াশিংটন আর জন কুয়েন্সি অ্যাডামস। সব মিলিয়ে কয়েক শো-র কম নয়-পুরুষরা প্রায় সবাই কালো টাই পরেছে, ফুলে থাকা গাউন পরেছে মেয়েরা। এদের মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস সদস্য, ক্যাবিনেট অফিসার, বিদেশী কূটনীতিক, প্রখ্যাত জার্নালিস্ট, আর হোমরাচোমরা হোয়াইট হাউস স্টাফ। মুখ তুলে মার্থা ওয়াশিংটনের একটা পেইণ্টিঙের দিকে তাকাল রানা, স্বামীর চেয়ে কম গম্ভীর নন।

    একজন ওয়েটার পাশ ঘেঁষে যাচ্ছিল, তাকে থামিয়ে গ্লাসে স্কচ নিল রানা। পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে মোটেও কোন অসুবিধে হলো না ওর। ভদ্রতাবোধ যেখানে দাবি করে সেখানে থেমে মাথা ঝাঁকাল কখনও, কখনও মৃদু হাসল, বিখ্যাত কারও সামনে পড়ে গেলে কুশল জানতে চাইল। সুবিধে হলো, ওকে কেউ চেনে না, কিন্তু ও অনেককে চেনে। নিয়মিত টাইম আর নিউজউইক পড়ায় এই একটা লাভ হয়েছে।

    বেশিক্ষণ কোথাও দাঁড়াল না রানা। প্রায় সারাক্ষণ ঘোরার মধ্যে থাকল ও। ওয়াশিংটন এমন একটা শহর যেখানে বহিরাগতদের নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামায় না। পরিচয় নেই, কাজেই কেউ রানার দিকে মনোযোগ দিল না। কয়েকটা দলের পাশ ঘেঁষে গেল রানা, দু’একটা দলের ভেতর ঢুকে আলোচনায় অংশ নিল-বুঝল, এদের সাথে মেলামেশা না থাকলে পাত্তা পাওয়া অসম্ভব। কেউ কোম্পানি বা করপোরেশনের পুরো নাম উচ্চারণ করে না, ইনিশিয়াল দিয়ে কাজ সারে। প্রখ্যাত কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে ডাকনাম ব্যবহার করা হয়।

    সরে এল রানা। একা হয়ে পড়ল। এরপর ওর একমাত্র কাজ হলো, সোশিয়াল এইডদের দৃষ্টি এড়িয়ে থাকা। ওদের দায়িত্বের একটা অংশ হলো, কেউ যেন নিঃসঙ্গ বোধ না করে।

    গ্রীন রূম থেকে ব্লু রূমে, সেখান থেকে রেড রূমে এল রানা। পেইণ্টিং-এর সামনে যারা দাঁড়িয়ে আছে তাদের সাথে আলাপ করা অনেকটা নিরাপদ, কমবেশি সবাই তারা শিন্ধ বোঝে, অন্য কোন ব্যাপারে আগ্রহী নয়। প্রচুর অ্যান্টিকস দেখল রানা, সাধারণ অতিথিদের ছোঁয়া বারণ। তারপর হাঁটতে হাঁটতে চলে এল স্টেট ডাইনিং রূমে। বড়সড় একটা ভিড় জমে উঠেছে লম্বা বুফে টেবিলের সামনে। আরেকটা ভিড় বার-কে ঘিরে। ডাইনিং রুমটা এতই বড় যে আরেক ধারে কয়েকশো লোকের লম্বা একটা লাইন থাকা সত্ত্বেও প্রচুর জায়গা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ক্রস হলে যাবে ওরা, রিসিভিং লাইনে প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডি দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের সাথে হ্যাণ্ডশেক করবে। ক্রস রূম থেকে স্টেট রূমে যাওয়া যায়।

    গ্লাসটা আবার ভরার জন্যে বারের সামনে থামল রানা। তারপর লাইনে দাঁড়াল। শুধু প্রেসিডেন্ট বা ফার্স্ট লেডির সাথে নয়, প্রেসিডেন্টের সম্মানিত একজন মেহমানের সাথেও হ্যাণ্ডশেক করবে ও।

    *

    রিসিভিং লাইনে দশ মিনিট হলো দাঁড়িয়ে আছেন পামেলা কনওয়ে। ক্লান্ত, অসুস্থ বোধ করলেন তিনি। মনে হলো, আরও দশ মিনিট এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে তিনি জ্ঞান হারাবেন। আজ বলে কথা নয়, তাঁর জীবনে ভয়ানক একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে বলেও নয়, রিসিভিং লাইনে দাঁড়াতে চিরকালই খারাপ লাগে তাঁর। প্রতিটি মানুষের জন্যে দু’সেকেণ্ডের বেশি সময় দেয়া সম্ভব নয়, এই দু’সেকেণ্ডে একবার করে মানুষ হাসে কি করে?

    না, আজ সম্ভব নয়। সিদ্ধান্ত নিয়ে পামেলা কনওয়ে পালিয়ে চলে এলেন ওপরতলায়। নিজস্ব পারিবারিক, ঘরোয়া পরিবেশে ফিরে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

    সি.আই.এ. চীফের স্ত্রী মার্গারেট তাঁকে টিউলিপের শোবার ঘরে এসে খুঁজে পেল। পামেলা কনওয়ের চোখ শুকনো, নিঃসাড় দাঁড়িয়ে আছেন, দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে মেয়ের নিভাঁজ বিছানার ওপর। টিউলিপ মিশিগানে যাবার আগে সাজানো হয়েছে বিছানাটা।

    দোরগোড়ায় দাঁড়াল মার্গারেট। ‘পামেলা?’

    ফার্স্ট লেডি মুখ তুলে তাকালেন। তাঁর চোখে যেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি, কণ্ঠস্বরও তেমনি ভোঁতা শোনাল। ‘হাই, মার্গারেট । ভেতরে এসো।’

    ‘এখানে তুমি কি করছ?’ ঘরে ঢুকে এগিয়ে এল মার্গারেট, একটা হাত রাখল বান্ধবীর কাঁধে। ‘এখানে তো তোমার থাকার কথা নয়।’

    ‘জানি নেই, তবু বারবার শুধু মনে হচ্ছিল এখানে এলে ওকে হয়তো দেখতে পাব।’

    দরদমাখা হাসি দেখা গেল মার্গারেটের ঠোঁটে, কিন্তু দৃঢ় ভাবটুকু বজায় থাকল চেহারায়। ‘এসো, আমার সাথে এসো। নিজেকে এভাবে কষ্ট দেয়ার কোন মানে হয় না।’

    ‘জানি।’ পাশের ঘরে যাবার বন্ধ দরজার দিকে তাকালেন পামেলা। ‘মিসেস কেনটারকিও হলরুমে থাকতে চেয়েছে, এখানে আসতে তার খারাপ লাগে।’

    ‘কেমন আছে মিসেস কেনটারকি?’

    ‘শরীর ভাল। কিন্তু সব দোষ নিজের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।’ চোখ বুজলেন পামেলা। ‘মার্গারেট, দোষ তো আসলে আমার…।’

    ‘কি ছাই বকছ! তোমার দোষ হতে যাবে কি জন্যে?’

    ‘আমি যদি মেক্সিকোয় না যেতাম, আমরা যদি টিউলিপকে মিশিগানে না পাঠাতাম…।’

    ‘অন্য কোনভাবে কাজটা ওরা ঠিকই করত।’

    ‘হয়তো করত না, হয়তো করার সুযোগ পেত না, কিংবা হয়তো করতে গিয়ে পারত না…।

    মাথা নাড়ল মার্গারেট। ‘প্রফেশনালদের এত সহজ ভেবো না, বুঝলে! সুযোগ ওদের পেতে হয় না, সুযোগ তৈরি করে নেয়। জেফের সাথে থেকে এটুকু অন্তত জেনেছি।’

    পামেলা মেনে নিতে পারলেন না। সামনের দিকে ঝুঁকে বালিশের পাশ থেকে একটা পুতুল তুলে নিলেন, হাত দিয়ে ঠিক করে দিলেন কালো চুল। ‘বলতে পারো, কি করব আমি?’ মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, যেন নিজের সাথে কথা বলছেন। ‘ছবি আঁকতে পারি না, চিঠি পড়তে পারি না…।’

    বান্ধবীকে আরও শক্ত করে ধরল মার্গারেট। ‘কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছ, আমি জানি, ভাই। হায় ঈশ্বর, এর চেয়ে খারাপ কিছু কন্ধনা করা যায় না। কিন্তু, পামেলা, এ-ও সত্যি যে টিউলিপকে ওরা ঠিকই ফিরিয়ে আনবে। এই মুহূর্তে হাজার হাজার লোক হন্যে হয়ে খুঁজছে তাকে। জানো, সেই থেকে জেফকে আমি বলতে গেলে দেখিইনি…’

    ‘কিন্তু মার্গারেট, দু’দিন হয়ে গেল! এখনও ওরা কোন সূত্রই পায়নি…।’ নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না, বিছানার ওপর ধপাস করে বসে পড়লেন পামেলা কনওয়ে। ‘কি চায় ওরা? বলে না কেন কি চায়! টিউলিপের জন্যে সব দিতে পারি আমি, স-ব…।’

    পুতুলটাকে বুকে চেপে ধরে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফার্স্ট লেডি।

    .

    কয়েকশো লোকের লাইনে রানাও একজন। সম্ভবত নামটা ছাড়া আর কিছু না শুনেই প্রেসিডেন্ট ওর সাথে হ্যাণ্ডশেক করলেন। কিংবা হয়তো তাও শোনেননি।

    ‘আপনি আসতে পেরেছেন সেজন্যে আমি খুশি,’ বললেন তিনি। ‘ওহো, ওস্তাদের সাথে পরিচয় হয়েছে কি?’

    পাশে দাঁড়ানো পক্ককেশ বৃদ্ধের দিকে তাকাল রানা, ইতোমধ্যে লাইনের পরবর্তী লোকের দিকে মুখ ফিরিয়েছেন প্রেসিডেণ্ট।

    প্রখ্যাত বেহালাবাদকের চোখে চোখ রেখে হাসল রানা। ‘আমার সৌভাগ্য, হের ভ্যানডেরবার্গ। আপনার সঙ্গীতের আমি একজন নগণ্য শ্রোতা-অনেক বছর ধরে।

    হাতের ছড়ি নেড়ে মৃদু হাসল ওস্তাদ বেহালাবাদক। ‘ধন্যবাদ। শুনে খুশি হলাম।’

    ‘সম্ভবত আমার এক বন্ধুকে আপনিও চেনেন,’ মৃদু কণ্ঠে বলল রানা।

    ‘ইয়েস?’

    ‘অ্যানা দিয়েত্রিচ।’

    এক মুহূর্ত রানার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকল ভ্যানডেরবার্গ। পরমুহূর্তে তার চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টি ফুটে উঠল। কেউ যেন বোতাম টিপে দিয়েছে, আচমকা ঘামতে শুরু করল সে। ব্যস্ত, কাঁপা হাতে রুমাল বের করে কপাল আর মুখ মুছল ওস্তাদ।

    ‘আমরা সম্ভবত পরে এক সময় কথা বলব।’

    ‘হ্যাঁ, কথা বলার দরকার হবে।’

    ছোট্ট করে, সবিনয়ে মাথা ঝাঁকাল রানা। ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে ইস্ট রূমে চলে গেল ও। অটল দাঁড়িয়ে আছে হফ ভ্যানডেরবার্গ-বরাবরের মত ঋজু ভঙ্গি, চোখ দুটো ঠাণ্ডা, চেহারায় রাজ্যের অহমিকা। সরাসরি এমনভাবে তাকিয়ে আছে, রানা যেন একটা নর্দমার কীট।

    ‘অ্যানা দিয়েত্রিচ,’ বলল রানা। ‘নাৎসী বাহিনীর সাথে আপনার যোগাযোগের মাধ্যম।’

    কামরায় আর কেউ নেই। বাইরে লাল কার্পেট মোড়া করিডরে সিকিউরিটি এজেণ্ট আর মিলিটারি এইডরা রয়েছে, একটু জোরে ডাকলেই ছুটে আসবে। তবে ওরা কেউ লাইব্রেরি রূমের দিকে এই মুহূর্তে তাকিয়ে নেই।

    ‘কে আপনি?’ জিজ্ঞেস করল ভ্যানডেরবার্গ।

    রানা নিরুত্তর।

    ‘ইসরায়েলী?’

    মৃদু শব্দে হেসে উঠল রানা। ‘না, তবে আপনার কথা জানলে ধেই ধেই করে নাচবে ওরা। আপনার চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ লোকের জন্যে দুনিয়া চষে বেড়িয়েছে।’

    ভ্যানডেরবার্গের চেহারায় ক্ষীণ একটু হাসি ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল। ‘ইসরায়েলী যদি না হন, কে আপনি? আর কার মাথাব্যথা থাকতে পারে?’

    ‘ইসরায়েল ছাড়াও পাইকারী হত্যা অনুমোদন করে না এমন দেশ অনেক আছে,’ বলল রানা। ‘তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, হাটে আমি হাঁড়ি ভাঙছি না। কাউকে কিছু বলার কোন ইচ্ছে আমার নেই।’

    ভ্যানডেরবার্গের চেহারায় সন্দেহের ছায়া পড়ল। ‘আপনার কি ধারণা, আপনাকে আমি ভয় পাই?’

    কাঁধ ঝাঁকাল রানা।

    ‘লোকে আপনাকে বিশ্বাস করবে, নাকি আমাকে?’

    ‘অত দূর ব্যাপারটা গড়াবে বলে মনে করি না আমি।’

    ‘কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে? অ্যানা বার্লিনে মারা গেছে। আর সবাইও কেউ বেঁচে নেই।’

    ‘এতটা বিশ্বাস করা বোকামি।’ সবজান্নর হাসি দেখা গেল রানার ঠোঁটে। ‘কেউ না কেউ ঠিকই বেঁচে থাকে। কেন, আমার চেয়ে ভাল জানেন আপনি, এমনকি নাৎসী ডেথ ক্যাম্পেও কিছু লোক বেঁচে গিয়েছিল, তাই না?’

    মুখ ঘুরিয়ে নিল ভ্যানডেরবার্গ। বিরক্তি বা রাগে নয়, ঘৃণায়। আগুনের পাশে একটা চেয়ারে বসল সে, ঠাণ্ডা শ্বাপদের দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকল রানার দিকে। টান টান হয়ে আছে পেশী, শিরদাঁড়া খাড়া। পঁয়তাল্লিশ, কি তারও বেশি বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু নাৎসী স্বভাব আজও রয়ে গেছে লোকটার মধ্যে।

    তার জন্যে কিছুই বদলায়নি।

    ‘আপনি কি জানেন বলে ধারণা করেন? আমার হয়তো শোনার আগ্রহ থাকতে পারে।’

    রানা দাঁড়িয়েই থাকল। লোকটার দিক থেকে চোখ না সরিয়ে সিগারেট ধরাল ও। ‘উনিশশো আটত্রিশ সাল,’ শুরু করল ও। ‘আপনি তখন তরুণ একজন বেহালাবাদক, দ্রুত নাম কিনছেন, অ্যানা দিয়েত্রিচ আপনার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। অ্যানা ছিল জার্মান। নাৎসী বাহিনী অস্ট্রিয়া দখল করে নিল, সেই সাথে পাসপোর্ট বাতিল করার অভিযান শুরু হয়ে গেল।’

    ভ্যানডেরবার্গের চোখ জোড়া ঘৃণায় জ্বলজ্বল করছে। ‘এ সব ইতিহাস। আমার, আর থার্ড রাইখের। সবারই জানা আছে।’

    ‘সব কথা সবার জানা নেই,’ বলল রানা। ‘ঊনচল্লিশ সালের শুরুতে আপনার সাথে গোপনে অ্যানার দেখা হয়েছিল, জানে কেউ? নিজের পাসপোর্ট রক্ষা করার জন্যে এক কথায় অ্যানার শর্তে রাজি হয়ে গেলেন আপনি, জানে কেউ? ভিয়েনার শিন্ধী মহলে আপনার যারা বন্ধু-বান্ধব ছিল, তাদের পরিচয়, ঠিকানা ইত্যাদি নাৎসীদের হাতে তুলে দিলেন আপনি, কেউ জানে?’

    ‘বন্ধু-বান্ধব? ওরা কেন আমার বন্ধু-বান্ধব হতে যাবে? ওরা তো ইহুদি ছিল!’ চাপা স্বরে প্রতিবাদ জানাল ভ্যানডেরবার্গ। হুঁশ জ্ঞান বোধহয় হারাতে শুরু করেছে সে।

    সত্যি, তার জন্যে কিছুই বদলায়নি।

    ‘হ্যাঁ, ইহুদি ছিল ওরা,’ বলল রানা। ‘আত্মগোপন করে ছিল। একটা-দুটো নয়, অনেকগুলো পরিবার। সবগুলোর হদিশ আপনি ফাঁস করে দিলেন। কত, আপনার মনে আছে?’

    ‘কম বা বেশি, কি আসে যায়!’

    ‘এখন আর তেমন কিছু আসে যায় না।’

    ‘তখনও কিছু আসে যায়নি।’

    ‘না। হাজার হাজার ইহুদি ধরা পড়ছিল, তার মধ্যে দু’চারটে পরিবারকে কে ধরিয়ে দিল না দিল কে আর তা নিয়ে মাথা ঘামাতে যায়। কেউ জানল না, আপনি নাৎসী না হয়েও নাৎসীদের সাহায্য করলেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের ঠেলে দিলেন মৃত্যুর মুখে। আসলে, মনে প্রাণে আপনি বরাবরই নাৎসী ছিলেন, বাইরে সেটা প্রকাশ করেননি, এই যা।’

    ‘নাৎসীদের আদর্শে আমার বিশ্বাস ছিল,’ এমন সুরে কথাটা বলল ভ্যানডেরবার্গ, যেন কোন ছাত্রের ভুল সংশোধন করে দিচ্ছে। ‘নাৎসীরা নিজেরাও মানুষ হিসেবে নিকৃষ্ট ছিল। মৌলিক অনেক গুণের অভাব ছিল তাদের মধ্যে। আরও যোগ্য লোক পাওয়া গেলে আদর্শটা বাস্তবায়িত হত।’ হাত নেড়ে আক্ষেপ প্রকাশ করল সে। ‘নাৎসীরা নেই। তবে, হ্যাঁ, আদর্শ কখনও মরে না-আদর্শ আছে, থাকবে। কিন্তু, আপনি? আপনি কে? এত কথা জানলেন কিভাবে? কে আপনাকে বলতে পারে! ত্রিশ বছরের বেশি হলো মারা গেছে অ্যানা।’

    একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে রানা বলল, ‘অ্যানা দু’বছর আগে মারা গেছে। আত্মহত্যা। বার্লিনে নয়, ব্রাজিলে। মারা যাবার আগে এটা সই করে গেছে সে।’ কোটের পকেট থেকে ভাঁজ করা কিছু কাগজ বের করল ও।

    ভ্যানডেরবার্গ অপেক্ষা করল, কিন্তু রানা এগিয়ে এল না। অগত্যা চেয়ার ছাড়তে হলো ভ্যানডেরবার্গকে। মন দিয়ে পড়ার দরকার হলো না, চোখ বুলিয়েই যা বোঝার বুঝে নিল সে। ধীরে ধীরে মুখ তুলল রানার দিকে, চোখ জোড়া এখন আর ঠাণ্ডা নয়। ধিকি ধিকি জ্বলছে। ‘কি চান আপনি?’

    ‘নাৎসীরা যা চেয়েছিল,’ বলল রানা। ‘আপনার সহযোগিতা।’

    দ্রুত দরজার দিকে তাকাল রানা। বাইরের হলে অনেক লোকের মিলিত কণ্ঠের গমগমে গুঞ্জন শোনা গেল। হলে ঢুকে আবার করিডরে বেরিয়ে এল তারা, অতিথিদের কয়েকটা দল একটু তাড়াতাড়ি বিদায় নিচ্ছে। ‘ইচ্ছে করলে আপনি চিৎকার করে লোক জড়ো করতে পারেন, ভ্যানডেরবার্গ। অথবা আমার সাথে আসতে পারেন।’

    এক মুহূর্ত ইতস্তত করল ভ্যানডেরবার্গ। হাতের কাগজগুলোর দিকে একবার তাকাল। তারপর নিঃশব্দে রানাকে অনুসরণ করল সে, সবুজ দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল একটা সিটিং রূমে। এখানে বিশাল একটা আয়না রয়েছে, দেয়াল জুড়ে বইয়ের র‍্যাক। সোজা বাথরূমের দিকে এগোল রানা।

    মোজাইক করা মেঝে থেকে সিলিঙের আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। ভ্যানডেরবার্গকে হঠাৎ করে ছোটখাট দেখাল। শিরদাঁড়া বাঁকা হয়ে গেছে তার, চোখে বিষণ্ন দৃষ্টি। রানা জানে, নষ্ট করার মত সময় নেই হাতে। সম্মানীয় ওস্তাদকে এরই মধ্যে হয়তো খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেছে। দোতলা থেকে নির্দেশ পেয়ে যে-কোন মুহূর্তে সোশিয়াল এইড আর সিকিউরিটি এজেন্টরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

    পকেটে হাত ভরে ঝরনা কলমটা বের করল রানা। ক্যাপ খুলে কলমটা উল্টো করে ধরল।

    সিরিঞ্জের সূঁচটা দেখল ভ্যানডেরবার্গ। ধীরে ধীরে তার চোখের দৃষ্টি বদলে গেল। তিক্ত একটু হাসি ফুটল ঠোঁটের কোণে। রানার দিকে তাকাল সে। চেহারায় ঘৃণা, আর চোখের দৃষ্টিতে পরাজয় না মানার জেদ। ‘কি করতে চান?’

    ‘আমি?’ রানা হাসল। ‘আমি কেন কিছু করতে যাব?’ কলমটা ভ্যানডেরবার্গের দিকে বাড়িয়ে দিল ও। ‘ইচ্ছে করলে এটা নিতে পারেন আপনি। অথবা আমার সাথে বেরিয়ে যেতে পারেন।’

    ‘থানায়?’

    রানা কোন উত্তর দিল না।

    তিক্ত হাসিটুকুও ভ্যানডেরবার্গের ঠোঁট থেকে মিলিয়ে গেল। একদৃষ্টে কিছুক্ষণ রানার দিকে তাকিয়ে থাকল সে। ‘সোয়াইন! অনার্য পশু! ঠিক আছে, জীবন দিয়েই আমি প্রমাণ করে যাব নাৎসী আদর্শের মৃত্যু নেই।’ প্ৰায় ছোঁ দিয়ে রানার হাত থেকে কলমটা কেড়ে নিল সে। হ্যাঁচকা টানে শার্টের আস্তিন ওপর দিকে তুলে দিয়ে বাহুতে সিরিঞ্জের সূঁচ ঠেকাল, রানার ওপর স্থির হয়ে থাকল দৃষ্টি। সূঁচটা চামড়া ভেদ করে ঢুকে গেল ভেতরে, মুখের এক বিন্দু চামড়া কোঁচকাল না।

    কোন প্রতিবাদ না, আক্ষেপ না, হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি না, বুক ফুলিয়ে মারা গেল লোকটা। টলে পড়ে যাচ্ছিল, রানা তাকে ধরে ফেলল। তারপর ধীরে ধীরে নামিয়ে দিল বাথরূমের মেঝেতে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২
    Next Article মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.