Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প192 Mins Read0

    অপহরণ-২.১২

    বারো

    মানুষটা সুঠামদেহী। মিশমিশে কালো চুল ব্যাকব্রাশ করা। চকচকে ধাতব সাইনবোর্ডের ওপর একবার চোখ বুলাল সে। এ.জি.ভি.এ.। আমেরিকান গিল্ড অভ ভ্যারাইটি আর্টিস্টস-ওয়াশিংটন অফিস। একটা হাত তুলে বোতামে চাপ দিল সে। ভেতরে একটা বেল বাজার সাথে দরজার অটোমেটিক তালা খুলে গেল। কবাটে ঠেলা দিয়ে ভেতরে ঢুকল সে।

    রিসেপশনিস্ট মেয়েটাকে দেখে মনে হলো বোধহয় কিছুদিন আগেও শো-গার্ল ছিল। দেখতে ভালই, নিখুঁত মেকআপ নেয়ায় আরও ভাল লাগছে। সকালের প্রথম কাপ কফি থেকে মুখ তুলে তাকাল সে। আগন্তুককে দেখে মিষ্টি করে হাসল।

    ‘ইয়েস, স্যার?’

    দরজার কাছ থেকে এগিয়ে এল আগন্তুক। তার হাঁটার সপ্রতিভ, সাবলীল ভঙ্গি দেখে মুগ্ধ হলো রিসেপশনিস্ট, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াবার একটা তাগাদা অনুভব করল। মনে হলো কর্তৃত্ব আর প্রভাবের একটা অদৃশ্য বলয় সারাক্ষণ ঘিরে আছে লোকটাকে। পরনে অত্যন্ত দামী স্যুট, পালিশ করা নখ, জুতোয় মুখ দেখা যায়। বাঁ হাতের কড়ে আঙুলে হীরের আংটিটা জানালা পথে আসা রোদ লেগে ঝিক্ করে উঠল।

    ‘আমি এম.এন. গডফেলো।’

    এবার সটান দাঁড়িয়ে পড়ল রিসেপশনিস্ট। এম.এন. গডফেলো আমেরিকার বড় একটা সার্কাস পার্টির মালিক, গিল্ডের বেশিরভাগ সদস্য-সদস্যার চাকুরিদাতা। শুধু ওয়াশিংটনে নয়, হলিউডেও তার সমান প্রতিপত্তি। শো-বিজনেসের যাদুকর বলা হয় তাকে। আয়োজনের পিছনে যেমন টাকার সাগর উপুড় করতে পারে, তেমনি তার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে অহরহই বেরিয়ে আসে নিত্য-নুতন চমক লাগানো অনুষ্ঠান-সূচী। এর আগে কখনও গিল্ড অফিসে আসেনি সে, ফোন করেনি। তার কাজ করে দেয়ার জন্যে এক পাল লোক আছে।

    ‘ইয়েস, মি. গডফেলো?’

    ‘একটা নাম আর ঠিকানা দরকার,’ বলল রানা। জানে, গডফেলো খোশগন্ধ করে সময় নষ্ট করার লোক নয়। ‘আমার খুব তাড়া আছে। আজই আমি ইউরোপ রওনা হব।’

    গিল্ডের পত্রিকা ভ্যারাইটিতে তাই বলা হয়েছে। শো-বিজনেসে যারা কেউকেটা তাদের সমস্ত খবর এই পত্রিকায় ছাপা হয়, কারও সর্দি লাগলে সেটাও।

    ‘কি নাম, স্যার?’ সবিনয়ে জানতে চাইল রিসেপশনিস্ট।

    নিজের সমস্যাটা ব্যাখ্যা করল রানা।

    দশ মিনিট পর মেয়েটার হাতে একটা ফাইল দেখা গেল। ‘এই নিন, স্যার,’ বলল সে। ‘রিপ নরটন। গেইথার্সবার্গ, মেরীল্যাণ্ডে থাকেন উনি

    নোটবুকে নামটা লিখে নিল রানা। তারপর ঠিকানা। ‘ফোন?’

    রিসেপশনিস্ট মাথা নাড়ল। ‘তার ফোন নেই, স্যার।’

    নেই, ভালই তো।

    ‘ধন্যবাদ,’ বলল রানা। নোটবুক পকেটে ভরে মেয়েটার উদ্দেশে মাথা ঝাঁকাল, তারপর বেরিয়ে এল অফিস থেকে।

    .

    রিপ নরটন মধ্য বয়স্ক, মাথায় চকচকে টাকের বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে। অসংখ্য রেখা আর ভাঁজ তার মুখে, চোয়ালের নিচে  ঢিলে হয়ে ঝুলে আছে চামড়া, বয়সের তুলনায় অনেক বেশি। অতিরিক্ত মদ্য পানের কুফল। অবশ্য কাজ করতে তার কোন অসুবিধে হয় না, যত নেশাই হোক কাজের সময় সব টুটে যায়। তবে তার দরজায় রানা যখন উপস্থিত হলো, মদে একেবারে চুর হয়ে আছে সে। রক্তচক্ষু মেলে রানার দিকে তাকিয়ে থাকল। যেন অন্তরের ভেতরটা পর্যন্ত দেখে নিতে চাইছে। ‘কি যেন পরিচয় দিলেন?’

    ‘আমি এ.জি.ভি.এ-র গ্যালি সোবার্স,’ আবার বলল রানা। ‘ফোনই করতাম, কিন্তু আমাদের কাছে আপনার নাম্বারটা নেই।’

    দরজার কাছ থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করে হাসল রিপ নরটন। ‘ফোনই রাখি না, নাম্বার পাবেন কিভাবে! ঢুকে পড় ন।’

    ‘ধন্যবাদ।’

    একটা চেয়ার থেকে একজোড়া মোজা সরিয়ে বসল রানা। ‘আপনার জন্যে আমি একটা দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছি, মি. নরটন।’

    মুখের কাছে গ্লাস তুলল নরটন। জল-রঙ তরল পদার্থ, দেখে পানি মনে হলেও তা নয়। ঢক ঢক করে দু’ঢোক খেলো সে। ‘দুঃসংবাদ যত তাড়াতাড়ি শোনা যায় ততই ভাল।’

    ‘পিকনিকটা বাতিল করা হয়েছে।

    প্রথমে হতাশা, তারপরই নির্লিপ্ত একটা ভাব ফুটে উঠল নরটনের চেহারায়। ‘এরকম আগেও হয়েছে। কি আর করা-কপাল মন্দ

    ‘তবে,’ তাড়াতাড়ি বলল রানা, ‘আপনার জন্যে আরেকটা অফার আছে। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক, সমস্ত খরচ কোম্পানির।

    রক্ত বর্ণ চোখের দৃষ্টি এতটুকু বদলাল না। ‘রাজি না হবার কি কারণ আছে?’ সিলিঙের দিকে চোখ মটকে হাসল নরটন, এক ঢোকে গ্লাসটা খালি করে ফেলল।

    ‘কোন কারণ নেই,’ বলল রানা। পকেট থেকে বের করে দু’জনের মাঝখানে টেবিলের ওপর একটা এয়ারলাইন টিকেট ফোল্ডার ফেলল ও। তারপর সেটার ওপরে বিশটা একশো ডলারের নোট রাখল।

    নরটন টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকল। কুঁচকে আছে ভুরু। হাত বাড়িয়ে টাকাগুলো নিল সে, গুনল। অবাক চোখ তুলে তাকাল রানার দিকে। এখন আর নির্লিপ্ত নয় চেহারা। ‘মাই গড, তারমানে আপনি সিরিয়াস!’

    ‘অবশ্যই সিরিয়াস।’

    টিকেট ফোল্ডার নিয়ে খুলল নরটন। আবার অবাক হয়ে তাকাল রানার দিকে। ‘নাইরোবি?’

    মাথা ঝাঁকাল রানা। ‘ওখানে একটা সার্কাস পার্টির সাথে ছয় হার এনগেজমেন্ট ‘

    ‘কিন্তু আমি? আমাকে কেন?’

    কাঁধ ঝাঁকাল রানা। ‘ওদের একজন স্টার ক্লাউন দরকার, আর কোথাও যার চুক্তি নেই।’ সামনের দিকে ঝুঁকল ও। ‘এটা মাত্র স্রেফ অগ্রিম। এর অর্ধেক খরচের খাতে ধরা হবে। বাকিটা আপনার প্রথম সাাহিক বেতন।’

    চোখে অবিশ্বাস নিয়ে রানার দিকে তাকিয়ে থাকল রিপ নরটন।

    ‘আজই আপনাকে ফ্লাইট ধরতে হবে,’ বলল রানা। ‘কাল রাতটা আপনাকে লণ্ডনে কাটাতে হবে, পরদিন পৌঁছে যাবেন নাইরোবি। পারবেন তো?’

    ‘পারব?’ ঠোঁট মুড়ে হাসল নরটন। ‘আপনি ঠাট্টা করছেন? এই পরিমাণ টাকা পেলে নাইরোবি কেন, চাঁদে যেতেও আমার আপত্তি নেই!’

    .

    হোয়াইট হাউসের উত্তরে, ফরটি স্ট্রীটের একটা বারে ঢুকল পিকেরিং। রঙচটা জিনস আর পুরানো শার্ট পরে আছে সে, ক্যাপটা ভুরুর কাছে নামানো। তাকে আসতে দেখে বারটেণ্ডার তাকাল কি তাকাল না। শেষ মাথার একটা বুদে ঢুকল পিকেরিং।

    সময় মত ওয়েট্রেস এল। বিয়ারের অর্ডার দিল পিকেরিং। পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখল ফোন বুদে লোক রয়েছে। তারমানে অপেক্ষা করতে হবে।

    সি.আই.এ-র ভেতর বিশ্বস্ত দু’চারজন যারা আছে, আবার তাদের সাথে যোগাযোগ করবে পিকেরিং। ওরাই এখন তার শেষ অবল’ন, যদিও তেমন শক্তিশালী নয়। এখন পর্যন্ত এমন কোন সূত্র বা তথ্য ওরা দিতে পারেনি যার সাহায্যে মাসুদ রানার সন্ধান করা যায়। তবে ওদের তথ্য থেকেই জানা গেছে, জেফ রিকার্ডও রানার সন্ধান পাচ্ছে না। তার মানে, এখনও বোধহয় খানিকটা সময় হাতে আছে তার।

    ফোন করে যাকে যা বলার বলে, বার থেকে বেরিয়ে এল পিকেরিং। সামনে একটা নিউজ স্ট্যাণ্ডে দাঁড়াল, কেউ পিছু নিয়েছে কিনা দেখতে হবে। ওয়াশিংটন পোস্ট, সান্ধ্য সংস্করণ কিনল সে। না, কেউ ওর ওপর নজর রাখছে না।

    কাগজের প্রথম পাতায় শুধু আন্তর্জাতিক খবর, সরকারি আর রাজনৈতিক। এখন আর এ-সবে তার আগ্রহ নেই। ভেতরের পাতা খুলল সে। স্টাইল এবং মেট্রো সেকশনের ওপর দ্রুত চোখ বুলিয়ে গেল। তারপর, বরাবরের অভ্যেসবশে, বিজ্ঞাপনের পাতায় চোখ রাখল।

    একটু পরই চমকে উঠল পিকেরিং। প্রথম দর্শনেই বুঝল, বিজ্ঞাপনটা তাকে উদ্দেশ্য করে ছাপানো হয়েছে। এমনিতে বিজ্ঞাপনটা আরগুলোর মতই, কিন্তু দুটো শব্দ, বড় বড় অক্ষরে ছাপা, যার অর্থ শুধু সে আর রানা জানে।

    গোলাপ কুঁড়ি।

    বিজ্ঞাপনটার শিরোনাম দেয়া হয়েছে-সাহায্য প্রয়োজন।

    শিরোনামের নিচে ছাপা হয়েছে-গোলাপ কুঁড়ির জন্যে ডিলার আবশ্যক। অপূর্ব সুযোগ। মুন রক। এখুনি যোগাযোগ করুন, বক্স সেভেন-ফোর-ফাইভ পি।

    পিকেরিং হাসল। এও কি সম্ভব? তার সাথে একটা চুক্তিতে আসতে চাইছে রানা?

    এখুনি যোগাযোগ করুন মানে আজই, কিংবা আজ রাত পৌনে আটটায়। সময় মত পৌঁছুতে চাইলে দু’ঘণ্টা সময় আছে হাতে। কিন্তু পৌঁছুতে হবে আরও আগে। ইতোমধ্যে খেয়ে নেয়া দরকার, খিদে পেয়েছে। কিন্তু খেতে বসার আগে গোসল করা দরকার। কাপড় পাল্টাতে হবে।

    রানার যদি কোন প্রস্তাব থাকে, অন্তত প্ৰায় গ্রহণযোগ্য হবে সেটা। আবার এটা ওর একটা চালাকিও হতে পারে। তবে খারাপ ভাল যাই হোক, রানাকে নাগালের মধ্যে পাওয়ার একটা সুযোগ তো বটে!

    মুন রক প্রদর্শনীতে নিশ্চয় যাবে পিকেরিং।

    .

    ক্যাপিটল আর ওয়াশিংটন মনুমেন্টের মাঝখানে চওড়া মল, মলের দু’পাশে নয়টা মিউজিয়ামের একটা হলো এয়ার অ্যাণ্ড স্পেস মিউজিয়াম। সুইংডোর ঠেলে ভেতরে ঢুকল সুদর্শন এক যুবক।

    সাড়ে সাতটা বাজে। তবে প্রধান প্রদর্শনী হলের মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত লম্বা জানালাগুলো দিয়ে এখনও দিনের আলো ঢুকছে। প্রায় বিল্ডিংটার সমানই উঁচু সিলিং, সিলিং থেকে ঝুলছে এরোপ্লেনগুলো, দেখে মনে হলো যেন উড়তে উড়তে হঠাৎ মাঝ আকাশে স্থির হয়ে গেছে। ওগুলোর মধ্যে রাইট ব্রাদার্সের ফ্লাইয়ার রয়েছে, রয়েছে লিণ্ডবার্গের স্পিরিট অভ সেণ্ট লুইস, বেল এক্স-ওয়ান-প্রথম যেটা শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিতে উড়েছিল। বিশাল ফ্লোর জুড়েও দেখার মত অনেক বস্তু রয়েছে-পাইওনিয়ার টেন, ফ্রেণ্ডশিপ সেভেন, জেমিনি ফোর-সবগুলো মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসার সময় কালো হয়ে গেছে।

    প্রকাণ্ড আরেক হলে, ডান দিকে, রয়েছে প্যাসেঞ্জার প্লেনগুলোর প্রথম দিককার সংস্করণ। বাঁ দিকের হলে রয়েছে নাসা-র রকেট, গাইডেড মিসাইল, বোমা নিক্ষেপণ মঞ্চসহ বাহন, এবং একটা লুনার ল্যাণ্ডিংক্রাফট।

    আর আছে শয়ে শয়ে দর্শক।

    বছরের এই সময়টায় ন’টা পর্যন্ত খোলা থাকে মিউজিয়াম। বিভিন্ন রাজ্যের ট্যুরিস্টরা

    ট্যুরিস্টরা তো দল বেঁধে আসেই, ওয়াশিংটনবাসীদের কাছেও এই মিউজিয়ামের আবেদন পুরানো হবার নয়। সময় পেলেই চলে আসে লোকজন। মলের উল্টোদিকে ন্যাশনাল গ্যালারির মত নয় এটা, এখানে ওখানে থেমে থেমে বা লাইন দিয়ে প্রদর্শনী দেখতে হয় না। বিশাল ফাঁকা জায়গা ছাড়া আছে, যার যেদিক খুশি এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াতে বাধা নেই।

    জায়গাটাই এমন, ভিড় থাকলে নির্দিষ্ট একজন লোকের ওপর নজর রাখা প্রায় অসম্ভব।

    অলসভঙ্গিতে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে রানা, হাত দুটো ট্রাউজারের পকেটে, বাঁধনহীন ভবঘুরের মত লাগছে ওকে। এখানে কাউকে দেখতে আসেনি ও, দেখা দিতে এসেছে। ঘড়ির দিকে একবারও তাকাল না, তবে আন্দাজ প্রায় দশ মিনিট পর ঘুরে দাঁড়িয়ে মেইন হলের দিকে এগোল।

    এক ধারের মেঝে থেকে একটা মেটাল শ্যাফট ওপর দিকে উঠেছে, প্রায় দশ ফিটের মত। কোমর সমান উঁচুতে শ্যাফটের গায়ে একটা ফাঁক। ভেতরে ছুঁয়ে দেখার জন্যে রয়েছে চার বিলিয়ন বছরের পুরানো একটা নমুনা। চাঁদ থেকে নিয়ে আসা তেকোনা একটা পাথর। মসৃণ, কালো।

    শুধু এখানেই একটা লাইন দেখা গেল। শ্যাফটের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে মানুষ, তারপর সামনে বাড়ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার সময় চারদিকে চোখ বুলাল রানা।

    কে জানে কি করবে পিকেরিং!

    .

    সময়ের আগেই পৌঁচেছে পিকেরিং। প্রদর্শনী হলগুলো একবার দেখে নিয়ে এসক্যালেটরে চেপে ওপরতলায় উঠে এসেছে সে। ঝুল-বারান্দার রেইলের কাছে ভাল একটা আড়াল পেয়ে গেছে, সেখান থেকে লক্ষ রাখছে নিচের দিকে। কালো একটা এক্সফিফটিন, হাই অলটিচ্যুড রিসার্চ প্লেন, ঝুল-বারান্দার সমান উঁচুতে ঝুলছে-চমৎকার আড়াল। চোখে ক্যামেরা তুলল সে। টেলিস্কোপে চোখ রেখে ছবিও তুলছে, লোকজনদের চেহারাও দেখে নিচ্ছে।

    সময়ের আগে রানাও পৌঁচেছে, কাজেই পিকেরিঙের চোখে ধরা না পড়ার কারণ নেই। প্রথমে পিকেরিং চেহারাটা চিনতে পারল না। সুদর্শন এক যুবক, পরনে জিনসের ট্রাউজার, মাথাভর্তি এলোমেলো কালো চুল, কাকের বাসা বললেই হয়। অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার হাবভাব পরিচিত লাগল পিকেরিঙের। ছদ্মবেশ নিয়ে আছে, কিন্তু রানাই। মুন রক দেখার জন্যে লাইনে দাঁড়াল ও। ক্যামেরার ফোকাস অ্যাডজাস্ট করে আবার তাকাল পিকেরিং। না, আর কোন সন্দেহ নেই।

    পিকেরিঙের ভেতর থেকে খুশির ফোয়ারা উথলে উঠল। রেইলের কাছে থেকে পিছিয়ে এল সে। কিন্তু রানার সাথে যোগাযোগ করার জন্যে নিচে নামল না।

    .

    অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে উঠল রানা। আরও কিছুক্ষণ দেখল সে, কিন্তু পিকেরিং যোগাযোগ করল না। বাইরে কালো হয়ে আসছে আকাশ। এতক্ষণে ঘড়ি দেখল রানা। সোয়া আটটা বাজে। নাহ, আর অপেক্ষা করার কোন মানে হয় না। মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে এল ও।

    বিল্ডিঙের পিছনের রাস্তায় রেখে যাওয়া গাড়িটা দূর থেকেই দেখতে পেল রানা। গাড়িতে বসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। সিগারেট ধরাল একটা। তারপর আপনমনে কাঁধ ঝাঁকিয়ে স্টার্ট দিল, রওনা হলো পুব দিকে।

    ওর বাঁ দিকে পড়ল ক্যাপিটল, প্রায় অন্ধকার আকাশের গায়ে উঁচু গ’জটা উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত। হাউজ অফিস বিল্ডিং পেরিয়ে এসে ডান দিকে বাঁক নিল গাড়ি, ফিরে যাচ্ছে ক্যাপিটল হিলে ভাড়া করা গ্রাউণ্ড ফ্লোর অ্যাপার্টমেন্টে।

    আকাশ কালো হতে শুরু করলেও, কোথাও মেঘ নেই, অনেকগুলো তারা পিটপিট করে জ্বলছে। আবহাওয়ার রিপোর্ট ভালই, কাল দিনটা শুকনো খটখটে থাকবে। পিকনিকের জন্যে চমৎকার একটা দিন।

    কিন্তু সে কালকের কথা।

    বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে ডাডিংটন প্লেসে ঢুকল গাড়ি। ফুটপাথের পাশে থামল রানা। সার সার বাড়ি, বাড়ির সামনে গাছপালা, লাইটপোস্টের হলুদাভ আলোয় সুন্দর দেখাচ্ছে চারদিক। গাড়িতে তালা লাগাল রানা, কটা ধাপ টপকে সামনের দরজায় দাঁড়াল। তারপর ঘুরল ও।

    রাস্তায় কেউ নেই। একটা বিড়াল পর্যন্ত না।

    তালা খুলে ভেতরে ঢুকল রানা।

    স্বামীর দিকে তাকালেন পামেলা কনওয়ে, তারপর কামরার আরেক প্রান্তে বসা জেফ রিকার্ডের দিকে ফিরলেন। ‘তোমার কি সত্যি মনে হয়, এতে কাজ হবে?’ প্রশ্ন করলেন তিনি।

    হোয়াইট হাউসের ওপরতলায় রয়েছেন ওঁরা, লিংকন সিটিং রূমে। ছোট কামরা, রুচি স্নিগ্ধ আসবাবে সাজানো, পর্দা আর দেয়াল একই রঙের। লিংকন পরিবারের যদি নাও হয়, রোজ উডের তৈরি চেয়ারগুলো লিংকন আমলের তো বটেই।

    একটা চেয়ারে প্রায় শুয়ে আছেন জেফ রিকার্ড, তাঁর তুলনায় চেয়ারটা আকারে ছোট হওয়ায় ঢাকা পড়ে গেছে সেটা। পামেলার দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে রিচার্ড কনওয়ের দিকে তাকালেন তিনি, তারপর আবার পামেলার দিকে ফিরলেন। বাঁ দিকের কাঁধটা একটু উঁচু করলেন তিনি। ‘রানা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলার উপায় নেই,’ নিস্তব্ধতা ভাঙলেন তিনি। ‘ইতিমধ্যে যা বলেছি আরেকবার তোমাদের শোনাতে পারি। আমার ধারণা-স্রেফ ধারণা—টিউলিপকে রানা বাড়ি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’

    একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন পামেলা কনওয়ে। ‘ভাল হত যদি জানতাম…’

    ‘তা হত বৈকি। কিন্তু পরিষ্কারভাবে কিছু জানার উপায় কোথায়? যা ঘটছে তার ওপর চোখ রেখে হিসেব মেলাতে হবে। প্রশ্ন হলো, টিউলিপকে রানা সাথে করে রাখবে কেন? কেন সে ঝুঁকিটা নিতে যাবে? টিউলিপ সাথে না থাকলে আণ্ডারগ্রাউণ্ডে চলে যেতে পারে সে। সেক্ষেত্রে তাকে হয়তো আর কোনদিনই আমরা খুঁজে বের করতে পারব না। কিন্তু টিউলিপ সাথে থাকলে?’ কাধ ঝাঁকালেন জেফ রিকার্ড, প্রশ্নের উত্তর সবাইকে আন্দাজ করে নেয়ার সুযোগ দিলেন।

    ওপর-নিচে মাথা দোলালেন পামেলা। তিনিও আশা করছেন, কিন্তু বিশ্বাস রাখতে পারছেন না।

    ‘আরও একটা ব্যাপার,’ আবার মুখ খুললেন, সি.আই.এ. চীফ। ‘রানার জন্যে এর মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তাই না? যা কারও কন্ধনায় আসে না, সে-ধরনের কাজ করতে ভালবাসে রানা। তার অতীত ইতিহাস অন্তত তাই বলে। হোয়াইট হাউসে টিউলিপকে ফিরিয়ে আনা সে-ধরনের একটা কাজ। শুধু ফিরিয়ে আনা নয়, টিউলিপকে তার মা-বাবার হাতে তুলে দিয়ে নিজের প্রাণ নিয়ে পালানো।

    ‘কিন্তু দুটোই অসম্ভব…।’

    পামেলাকে থামিয়ে দিয়ে জেফ রিকার্ড বলে উঠলেন, ‘আমিও তো ঠিক তাই বলতে চাইছি। অসম্ভব। আর অসম্ভব বলেই এই কাজ করবে রানা। কাজেই, আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করব।

    পামেলা তার হাতের কাগজটার দিকে তাকালেন। অতিথিদের তালিকা। ‘এদের মধ্যে কে হবে বলে তোমার ধারণা?’

    ‘আন্দাজ করা অসম্ভব। স্পীকার? একজন কেবিনেট সেক্রেটারি?

    ‘সোভিয়েট রাষ্ট্রদূত?’ জানালার দিকে পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করলেন প্রেসিডেন্ট। সাউথ লনের সামনে, ওয়াশিংটন মনুমেন্টের চারধারে উজ্জ্বল আলো জ্বলছে, সেই আলোর আভা লাগল তাঁর মুখের একদিকে। ঘরের মৃদু আলো পড়েছে তাঁর মুখের আরেক দিকে।

    চোখ তুলে বন্ধুর দিকে তাকালেন জেফ রিকার্ড। ‘সে যদি তোমার ছদ্মবেশ নিয়ে আসে, তাতেও আমি আশ্চর্য হব না, রিচার্ড।’

    ‘কোন মানুষ এত দক্ষ হয় কি করে?’ পামেলা কনওয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন।

    ‘আমার ধারণা সত্যি হলে সেটা তুমি নিজের চোখেই দেখতে পাবে,’ বললেন পারিবারিক বন্ধু জেফ রিকার্ড।

    ওঁদের দু’জনের দিকেই কটমট করে তাকালেন প্রেসিডেন্ট। ‘সে কতটা দক্ষ আমি জানতে চাই না। আমি চাই রানা ধরা পড় ক। প্রথমে আমি টিউলিপকে ফিরে চাই, তারপর রানাকে। সবশেষে, যদি সম্ভব হয়, হেনরি পিকেরিংকে। রানা…টিউলিপকে ফিরিয়ে আনলেই তার অপরাধ মাফ হয়ে যাবে না। তাকে ধরতে হবে। কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আমি চাই তার যাবজ্জীবন হোক।’

    বন্ধুর দিকে তাকিয়ে থেকে জেফ রিকার্ড বললেন, ‘তুমি হয়তো ভাবছ আবার মৃত্যুদণ্ড চালু করা গেলে মন্দ হত না, তাই কি?’

    কিন্তু রিচার্ড কনওয়ে কৌতুক বোধ করলেন না। ‘লোকটা কিডন্যাপার। একজন খুনী। রাশিয়ার একজন গুপ্তচরও হতে পারে।

    ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন জেফ রিকার্ড। ‘এখানে তোমার ভুল হচ্ছে। মাসুদ রানা যেমন সি.আই.এ-র স্পাই নয়, তেমনি কে.জি.বি-রও স্পাই নয়। এ আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।’

    ‘সে ধরা পড়বে এই গ্যারান্টি দিতে পারো না?’ কঠিন সুরে প্রশ্ন করলেন প্রেসিডেণ্ট।

    একমুহূর্ত চুপ করে থাকলেন জেফ রিকার্ড। তারপর বললেন, ‘পারি। রানা ধরা পড়বে। তোমার কাছে এই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম।’

    .

    রাত প্রায় দুটোর দিকে বাইরে থেকে রানার ঘরের জানালা খোলার চেষ্টা করল পিকেরিং। ফ্রেমের চারদিকে আলতোভাবে আঙুল বুলাল সে, লুকানো তার আছে কিনা দেখছে।

    আছে তার, অন্তত দুই সিস্টেমের দুটো, বেশিও হতে পারে। যার নাম মাসুদ রানা, ভাবল পিকেরিং, প্রতিটা মুহূর্ত সতর্ক থাকে বানচোত। নিশ্চয় ভেতর দিকেও আরেক প্রস্থ তার আছে। সবগুলো তার নাগালের মধ্যে পেলেও, কেটে ফেলা বা খুলে নেয়া সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ছাড়া উপায় নেই

    জানালার কাছ থেকে পিছিয়ে এল পিকেরিং। অন্ধকারে ঘুরল। তারপর নিঃশব্দে পা বাড়াল বেসমেণ্ট দরজার দিকে।

    .

    একটা ঝাঁকি খেয়ে ঘুম ভেঙে গেল রানার।

    ঘরের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটাই জানালা, বন্ধ থাকার কথা। সেদিক থেকে কোন শব্দ এল না। শুধু রানার কানে খুদে একটা প্লাগ মৃদু শোঁ শোঁ আওয়াজ করছে। তারমানে জানালাটা এখন আর বন্ধ নয়।

    স্থির হয়ে শুয়ে থাকল রানা, জানালার দিকে পিঠ। শ্বাসপ্রশ্বাসে কোন পরিবর্তন ঘটল না, যেমন বইছিল তেমনি বইতে লাগল—ধীর ভাবে, নিয়মিত-একজন ঘুমন্ত লোক যেভাবে শ্বাস ফেলে আর নেয়। শুধু চোখ দুটো ঘুরল রানার, বিছানার পাশে টেবিলের ওপর রাখা ঘড়িটা নেই। আছে নিশ্চয়, কিন্তু লিউমিনাস ডায়াল নিভে গেছে। তারমানে বিদ্যুৎ নেই। মেইন সুইচ অফ করে দিয়েছে কেউ।

    বাড়ির ইলেকট্রিকাল সার্কিটে চারটে অ্যালার্ম সিস্টেম সেট করেছিল রানা। সবগুলোই অকেজো করে দেয়া হয়েছে। ফিউজ বক্সটা বেসমেন্টে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সেখান থেকে বন্ধ করা হয়েছে।

    যান্ত্রিক গোলযোগের ওপর হাত নেই। তাছাড়া অপরাধপ্রবণ মানুষের ওপরও বিশ্বাস নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এ রানা আগেই আশঙ্কা করেছিল। সে-কথা ভেবেই আরও একটা ব্যবস্থা করা আছে ওর, এমনকি প্রফেশনাল কারও চোখেও ধরা পড়বে না। জানালার ফ্রেমে, গোড়ার দিকে, ব্যাটারিচালিত একটা অ্যালার্ম, সামান্য নড়াচড়াতেই জ্যান্ত হয়ে উঠবে।

    সতর্ক সঙ্কেত, তার বেশি কিছু না। তবে যথেষ্ট।

    শুধু হাতটা নাড়ল রানা, বালিশের তলায় সুইচে আঙুল ঠেকাল। তারপর রিভলভারের ওপর হাত পড়তেই পিছন থেকে কর্কশ গলায় নির্দেশ এল, ‘নড়বে না, রানা। আমার হাতে পিস্তল।’

    পিকেরিং।

    রানা নড়ল না।

    পিছনে একটা টর্চ জ্বলে উঠল। ‘এবার এদিকে ফেরো। ধীরে ধীরে।’

    ধীরে ধীরে পাশ ফিরতে শুরু করে বিছানায় পিঠ দিল রানা। ডান হাতের কনুই দিয়ে চোখ ঢাকল, উজ্জ্বল আলো সহ্য হলো না। কনুইয়ের আড়াল থেকে চোখ পিট পিট করে তাকাল ও। টর্চের পিছনে কিছু দেখা গেল না, অন্ধকার। ক্ষীণ একটু তিক্ত হাসি ফুটল রানার ঠোঁটে।

    ‘বাঁ হাতটাও বের করো, রানা,’ বলল পিকেরিং। ‘সাবধান। কোন রকম চালাকি করতে যেয়ো না।’

    রিভলভারটা ছেড়ে দিয়ে চাদরের তলা থেকে হাতটা বের করে আনল রানা। পিস্তলের মুখে আর কিই বা করতে পারে ও?

    ‘মেয়েটা কোথায়?’

    ‘তোমারটা আসলে ওয়ান-ট্র্যাক মাইণ্ড,’ বলল রানা। ‘বড় মেয়ে ঘেঁষা লোক, বাবা! দেখা হলেই শুধু মেয়েটা কোথায়, মেয়েটা কোথায়। আর বুঝি কিছু ভাবতে পারো না তুমি?’

    ‘কোথায় মেয়েটা?’

    ‘নেই। অন্তত এখানে নেই। এমনকি ওয়াশিংটনেও তাকে আমি রাখিনি।’

    ‘বলবে না?’

    রানা উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না।

    কয়েক সেকেণ্ড আর কিছু বলল না পিকেরিংও। ঘরের চারদিকে টর্চের আলো ফেলল সে। এতক্ষণে তার মুখ দেখার সুযোগ হলো রানার। ছায়া পড়ায় ভাঙাচোরা লাগল চেহারা।

    ‘ভেবেছ তোমার কথা আমি বিশ্বাস করব?

    কাঁধ ঝাঁকাল রানা। ‘যা খুশি বিশ্বাস করতে পারো তুমি। আমার কি!’

    হঠাৎ মৃদু একটা শব্দ শোনা গেল। উল্টোদিকের দরজার ওদিক থেকে এল আওয়াজটা। কোমল একটা গোঙানির মত আওয়াজ। চট করে একবার সেদিকে তাকিয়েই দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিল রানা। চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

    নিস্তব্ধ বাড়ি, গভীর রাত, ঘুমন্ত শিশুর কোমল গোঙানির আওয়াজ-কালা না হলে যে-কেউ শুনতে পাবে। ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হলো পিকেরিঙের চেহারা। সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল হাসিটা। রানার দিকে তাক করা থাকল পিস্তল আর দৃষ্টি, পিছাতে শুরু করল সে।

    বিছানার ওপর উঠে বসার চেষ্টা করল রানা। উদ্‌ভ্রান্ত দেখাল ওকে। ‘ওদিকে যেয়ো না!’

    ‘খবরদার!’ দাঁড়িয়ে পড়ে গর্জে উঠল পিকেরিং।

    পিকেরিং গুলি করতে যাচ্ছে দেখে আবার শুয়ে পড়ল রানা।

    পিকেরিঙের পিস্তল ধরা হাতে ঢিল পড়ল। আবার পিছাতে লাগল সে। এক পা এক পা করে।

    রাগে আর হতাশায় নিঃশব্দে ছটফট করছে রানার চোখ জোড়া। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে ও। এই মুহূর্তে আর কিছু করার নেই ওর।

    দরজার পাশে পিঠ ঠেকল পিকেরিঙের। নিরেট ওক কাঠের কবাট, তামার চকচকে নব। একশো বছরের পুরানো বাড়ি। তারপর, মুহূর্তের জন্যে, রানার ওপর থেকে তার দৃষ্টি সরে গেল। চাদরের তলায় ঢুকে গেল রানার হাত। ‘তোমাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি…’

    ‘চোপ শালা!’ গর্জে উঠল পিকেরিং। ‘হাত বের কর!’

    চাদরের তলা থেকে খালি হাতটা বের করল রানা।

    টর্চটা পিস্তল ধরা হাতে নিল পিকেরিং, তারপর বগলের নিচে ঢোকাল সেটা, আলোটা এখনও রানার দিকে তাক করা থাকল। এবার সে তার মুক্ত হাতটা বাড়াল নব ধরার জন্যে।

    কাছে পৌঁছল, কিন্তু ছোঁয়াছুঁয়ি হলো না। নব আর হাতের মাঝখানে চুল পরিমাণ দূরত্ব থাকল, সংযোগ ঘটতে সেকেণ্ডের ভগ্নাংশ বাকি, এই সময় দৈত্যাকার একটা স্ফুলিঙ্গ মুক্তি পেল। ঘন নীল আগুনের স্বচ্ছ একটা শিখা। অকস্মাৎ তীক্ষ্ণ গুঞ্জন ধ্বনি শোনা গেল, বিদ্যুৎ শক্তির ৪৪,০০০ ভোল্ট পিকেরিঙের হাত বেয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা শরীরে

    অসম্পূর্ণ একটা আওয়াজ বেরুল তার মুখ থেকে। গোঙানির মত, তেমন জোরাল নয়, শুরু হতে না হতেই থেমে গেল। খিঁচ ধরে গেল শরীরে। খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল মাথার সব চুল। তারপরই অদৃশ্য হলো নীল আলোর প্রবাহ, থেমে গেল গুঞ্জন ধ্বনি। মেঝেতে পড়ে গেল পিকেরিং।

    আধ মাইল দূরে ক্যাপিটল গম্বুজের উজ্জ্বল আলো দু’চারবার কেঁপে উঠে ম্লান হয়ে গেল। মাঝখানের বাকি সব আলো নিভে গেল। রেডিও-টিভি চলছে না, লাইটপোস্টে আলো নেই। গোটা এলাকা ঢাকা পড়ে গেল গাঢ় অন্ধকারে। পাওয়ার শর্ট-সার্কিট।

    বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নামল রানা, লম্বা তিন পা ফেলে পিকেরিঙের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসল। একটা হাত তুলে লোকটার বুকে চাপড় মারল ও। তারপর বুকে কান ঠেকাল। কোন আওয়াজ নেই। বুকটা আবার চাপড়াল রানা। এবার হার্টবিট শোনা গেল। বেঁচে আছে পিকেরিং, কিন্তু জ্ঞান ফিরতে দেরি হবে।

    দরজার সামনে পাপোশের ওপর বসল রানা। আর্থিং-এর জন্যে পাপোশটা ভিজিয়ে রেখেছিল ও। হাত দিয়ে দেখল, ভেজা ভেজা লাগছে, তার বেশি কিছু না-পিকেরিং ব্যাপারটা লক্ষই করেনি।

    তামার নব থেকে একটা তার নেমে এসে ঢুকে গেছে পাপোশের ভেতর। দ্বিতীয় একটা তার বেরিয়েছে বাইরের দরজার কাছে, দরজার নিচ দিয়ে এগিয়ে গেছে উঠানের কিনারা ঘেঁষে একটা ম্যানহোলের দিকে। তারটাকে আণ্ডারগ্রাউণ্ড মেইন পাওয়ার লাইনের সাথে টেপ দিয়ে আটকে রেখে এসেছিল রানা।

    এখন আর সাবধান হওয়ার দরকার নেই, পাওয়ার লাইন অফ হয়ে গেছে। এক প্রস্থ তার উদ্ধার করল রানা, সেটা দিয়ে বাঁধল পিকেরিংকে। এবার দাঁড়াল ও, তামার নবটা ছুঁলো। চাপ দিতেই খুলল সেটা। চৌকাঠ পেরিয়ে পাশের ঘরে এল ও। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে টিউলিপ।

    শেষ ইঞ্জেকশনটা মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে দিয়েছে রানা, জানত যা-ই ঘটুক না কেন, টিউলিপের ঘুম ভাঙবে না।

    টিউলিপের বিছানার পাশে টেবিলের ওপর একটা টেপ রেকর্ডার রয়েছে। সুইচটা পাশের ঘরে, রানার বালিশের তলায়। এখনও ঘুরছে টেপ, তবে আর কোন আওয়াজ বেরোবে না। একমাত্র যে আওয়াজটা হবার কথা তা খানিক আগেই হয়ে গেছে-কোমল একটা গোঙানির শব্দ। ওই শব্দটাই এ-ঘরের দরজার কাছে টেনে এনেছিল পিকেরিংকে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.