Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প192 Mins Read0

    অপহরণ-২.৩

    তিন

    অ্যাসাইনমেণ্টের প্রথম ধাপটা সাফল্যের সাথে পেরিয়ে এসেছে, কাজেই পরম স্বস্তিবোধ করল রানা। ডানিয়েলের কাছ থেকে বা ডানিয়েলের মাধ্যমে কর্নেল অবসনের কাছ থেকে কোন বিপদ সঙ্কেত আসেনি। তার মানে ফেউ হয়ে কেউ ওর পিছনে লেগে নেই।

    মার্কিন প্রেসিডেন্টের মেয়েকে কিডন্যাপ করা অসম্ভব বলে মনে করা হয়েছিল, কিন্তু কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতর থেকে কৌশলে তাকে বের করে আনে রানা। প্রায় সাথে সাথেই ব্যাপারটা ধরা পড়ে যায়, সিক্রেট সার্ভিস ওকে ধাওয়া করতে শুরু করে। প্ল্যান-প্রোগ্রাম আগেই তৈরি করা ছিল, কাজেই সিক্রেট সার্ভিসকে সহজেই বোকা বানাতে পারে ও। তারপর শুধু মিশিগান থেকে নয়, টিউলিপকে নিয়ে আমেরিকা থেকে বেরিয়ে আসে। প্রথমে অস্ট্রিয়া, সেখান থেকে ইটালি, ইটালি থেকে গ্রীসের মূল ভূখণ্ড হয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ক্রিটে পৌঁচেছে ও। প্রতি পদে ধরা পড়ার ভয় ছিল, মার্কিন প্রশাসন সবগুলো মিত্র দেশের এসপিওনাজ জগৎ আর পুলিস বিভাগকে সতর্ক করে দিয়েছে। শুধু নিত্য-নতুন কৌশল অবল’ন করে একের পর এক বাধাগুলো পেরিয়ে আসতে পেরেছে রানা। ক্রিট ছোট একটা দ্বীপ, সারাটা বছর ট্যুরিস্টদের ভিড় লেগে থাকে। এখানকার মানুষ যে যার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, কারও ব্যাপারে অহেতুক কৌতূহল প্রকাশ করে না। দ্বীপে আসার সময় পিছনে কোন চিহ্ন রেখে আসেনি রানা, কাজেই এখানে তাকে কেউ খুঁজতে আসবে না।

    গাঢ় নীল ক্রিটান সাগর কড়া রোদ মেখে পারদের মত ঝলমল করছে, আর জলপাই ঝোপগুলোয় যেন এই মাত্র সবুজ এক পোচ রঙ লাগানো হয়েছে। গাছগুলোর স্থুল কাণ্ডের ফাঁকে পাথুরে উপকূলরেখা দেখতে পেল রানা, ঢেউগুলো একের পর এক তীরে ভেঙে পড়ায় সাদা ফেনায় ধোয়া হয়ে যাচ্ছে বালুকাবেলা। ঢেউয়ের একঘেয়ে, চাপা গর্জন ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। রানার ইচ্ছে হলো ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাগরে, সাঁতরে অনেক দূর চলে যায়, বন্ধুত্ব করে একটা ডলফিনের সাথে। কাছে এলেই সাগর ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। আপাতত ঝোঁকটা সামলাতে হলো, কারণ এখুনি ওকে চেহারা বদলাবার জন্যে আয়নার সামনে বসতে হবে।

    টিউলিপের ঘুম ভাঙার সময় হয়ে এসেছে। যে-কোন মুহূর্তে ওষুধের প্রভাব কেটে যাবে।

    বারান্দা থেকে তবু নড়তে ইচ্ছে করল না। সকালের হিম বাতাস পুলক এনে দেয় শরীরে। বাতাসে লেবু আর জলপাইয়ের গন্ধ, মন ভরে যায়। কিন্তু রানা জানে, সবুজের এই সমারোহ বেশিদিন থাকবে না। গ্রীষ্মের খরতাপে দগ্ধ হবে প্রকৃতি, সমস্ত রস আর রঙ শুকিয়ে যাবে।

    আশা করা যায় ততদিন এখানে থাকবে না রানা।

    ঘুরে দাঁড়িয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকল ও। ছোট একটা দোতলা বাংলো, দেয়ালগুলো সাদা চুনকাম করা। সবগুলো জানালা চওড়া একটা পথের দিকে, পথের ওপারে জলপাই বাগান, তারপর সাগর। ফল তোলার সময় লোকজনের ভিড় লেগে থাকবে এই পথে। কিন্তু আপাতত বাড়ির চারপাশ অনেক দূর পর্যন্ত সম্পূর্ণ নির্জন। হেরাক্লিয়ন থেকে পুব দিকে চলে গেছে কোস্ট রোড, সে-রাস্তা থেকে বাড়িটা অনেক দূরে।

    নিচতলার একটা ঘরের আয়নার সামনে আধ ঘণ্টা বসল রানা। তারপর দোতলায় উঠে তালা খুলে টিউলিপের ঘরে ঢুকল। সাদা দেয়াল, টিউলিপের পরিচিত কিছু মানুষের ফটো আর পেইণ্টিং ঝুলছে। বিছানায় শুয়ে রয়েছে মেয়েটা, একটুও নড়ছে না, গায়ে সাদা একটা চাদর। বিছানার কিনারায় বসে তার একটা হাত তুলে নিল রানা। পালস স্বাভাবিক, হার্টবিট স্বাভাবিক। বোধহয় স্পর্শ পেয়েই চোখের পাতা নড়ে উঠল টিউলিপের। বন্ধ পাতার ভেতর নড়াচড়া করছে মণি দুটো।

    আরও পনেরো মিনিট পর চোখ মেলে তাকাল টিউলিপ। নড়ল না, শুধু চোখ ঘুরিয়ে কামরার চারদিকে তাকাল। তারপর পাশ ফিরল সে। বিছানায় বসা লোকটাকে চিনতে পেরে একটু উজ্জ্বল হলো চোখ দুটো

    স্যাম গ্রেসনের পরিচিত চেহারা।

    মিষ্টি করে হাসল রানা, ওর চোখে স্নেহ আর আদর। ‘হাই!’

    টিউলিপের ম্লান চেহারায় আশ্চর্য উজ্জ্বল হয়ে ফুটল হাসিটুকু। ছোট্ট করে বলল সে, ‘হাই!’

    কচি মেয়েটার মাথায় একটা হাত রাখল রানা। ‘লালা-লা, লা-লালা-লা-লা…,’ মিশিগানে, মামা বাড়িতে, এই সুরটা সারাক্ষণ লেগে থাকত টিউলিপের ঠোঁটে

    ‘লালা-লালা-লা-লালা,’ শূন্যস্থান পূরণ করল টিউলিপ, তারপরই দেয়ালে বাবার ফটোর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল, ‘মিসেস কেনটারকি কোথায়?’ গভর্নেসের কথাই আগে মনে পড়ল, তার কাছেই মানুষ সে, প্রায় সারাটা দিন তার সাথেই কাটে।

    ‘দিন কয়েকের জন্যে এক জায়গায় যেতে হয়েছে তাকে। বলে গেছে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি তোমাকে দেখব।’

    ‘বাড়িটা তোমার?’ মা-বাবার, পরিচিত আরও লোকজনের ছবি থাকলেও, মেয়েটা ঠিকই বুঝতে পেরেছে ঘরটা তার অচেনা।

    ‘হ্যাঁ, আপাতত।’

    ব্যাখ্যা হিসেবে এটুকুই যথেষ্ট। বড় বড় কোমল চোখে এতটুকু সন্দেহ বা অবিশ্বাসের ছায়া পড়ল না। অচেনা জায়গা আর অচেনা মানুষ দেখে অভ্যস্ত সে। মাত্র চার বছরে এত জায়গায় বেড়িয়েছে, বেশিরভাগ মানুষ সারা জীবনেও অত বেড়াবার সুযোগ পায় না। তাছাড়া, স্যাম গ্রেসন তার অপরিচিত কেউ নয়। মিসেস কেনটারকির বন্ধু। ‘আমার সেই খেলনা ভাল্লুকটা?’

    ‘নোড়ো না,’ কৃত্রিম শাসনের ভঙ্গিতে চোখ রাঙাল রানা। তারপর খাটের তলা থেকে বড়সড় একটা খেলনা ভাল্লুক বের করে বিছানার ওপর রাখল। দুর্বল, তাই টিউলিপ বসতে গেলে বাধা দিল রানা। দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ভাল্লুকটাকে নিজের বুকের ওপর টেনে নিল টিউলিপ। আনন্দে চিক চিক করছে চোখ দুটো। হঠাৎ মনে পড়তে, রানার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল সে। পাকা গিন্নীর মত বলল, ‘আমাদের কিছু গোপন কথা আছে, তুমি এখন যাও।’

    মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে এরকম একটা ভঙ্গি করে কাঁধ ঝাঁকাল রানা। দরজার কাছে চলে গেছে ও, পিছন থেকে ডাকল টিউলিপ, ‘ফ্রেণ্ড?’

    পিছন ফিরল রানা। ‘ইয়েস?’

    ‘ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ।

    হাসতে হাসতে বাইরে বেরিয়ে এল রানা। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে যাওয়ায় হাতঘড়ি দেখল ও। ওয়াশিংটনে এখন রাত। হাসি মিলিয়ে গিয়ে ম্লান হয়ে গেল চেহারা। ভাবল, দিনকাল কেমন কাটছে প্রেসিডেন্ট আর ফার্স্ট লেডির?

    .

    বিছানায় পিঠ দিয়ে শুয়ে আছেন রিচার্ড কনওয়ে। প্রায় অন্ধকার ঘর। চোখ খোলা, বিছানার ওপর টাঙানো নেট ভেদ করে সিলিঙে স্থির হয়ে আছে দৃষ্টি। তাঁর পাশেই শুয়ে রয়েছেন পামেলা কনওয়ে, অবশেষে শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

    কান খাড়া করে স্ত্রীর নিঃশ্বাস পতনের আওয়াজ শুনলেন প্রেসিডেণ্ট। তারপর একটা কনুইয়ে ভর দিয়ে মাথাটা একটু তুলে তাঁর মুখের দিকে তাকালেন। ঘুমের মধ্যেও ফার্স্ট লেডির চেহারা থেকে উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তার রেখাগুলো মিলিয়ে যায়নি।

    হায় ঈশ্বর, ভাবলেন প্রেসিডেন্ট, পামেলাকে আমি কি অশান্তির মধ্যেই না রেখেছি! আর টিউলিপ? আজ তার এই বিপদের জন্যে কি আমিই দায়ী নই?

    বিছানা থেকে নিঃশব্দে নেমে পড়লেন প্রেসিডেণ্ট। কার্পেটের ওপর দিয়ে পা টিপে টিপে এগোলেন, থামলেন বাথরূমের সামনে এসে। ঘাড় ফিরিয়ে আরেকবার দেখে নিলেন স্ত্রীকে, পাশ ফিরে অঘোরে ঘুমাচ্ছেন পামেলা। বাথরূমে ঢুকে বোতাম টিপলেন তিনি, চোখ ধাঁধিয়ে গেল আকস্মিক আলোয়। বাথটাবের চওড়া কিনারায় বসলেন, কনুই দুটো হাঁটুর ওপর, তালুর ওপর মুখ।

    হোয়াইট হাউসে এই একমাত্র জায়গা যেখানে সত্যি সত্যি নিজেকে একা অনুভব করতে পারেন প্রেসিডেণ্ট-বাথরূম। ব্যাপারটা প্রায় হাস্যকর বলা চলে। কিন্তু যে-কোন দরজা খুলে বাইরে পা দিলেই দু’জন সিক্রেট সার্ভিস এজেণ্ট ছায়া হয়ে পিছু নেবে তাঁর, একা কোথাও যাওয়া হবে না।

    এই মুহূর্তে একা হওয়া দরকার তাঁর, কিন্তু অন্ধকার বেডরূমে সমস্যাগুলো আরও যেন বিকট চেহারা নিয়ে গ্রাস করতে আসে তাঁকে।

    চোখ বুজলেন তিনি, পুরানো দিনের কথা স্মরণ করলেন। কংগ্রেস নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তখন। ভাড়া করা ছোট একটা কামরা থেকে মুষ্টিমেয় ভলান্টিয়ারের সাহায্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভলান্টিয়ারদের মধ্যে অন্যতম ছিল পামেলা, জেফ রিকার্ড, আর মার্গারেট। সবাই তাঁর বিশ্বস্ত, পুরানো বন্ধু। ইলেকশনের রাত। বিজয়। কি আনন্দময় মুহূর্ত!

    কিন্তু তখন যদি জানতেন নিয়তি কোথায় তাঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, সেদিন কি বিজয়ের আনন্দে উৎফুল্ল হতে পারতেন? ভাড়া করা ঘরে যা শুরু হয়েছিল, আজ এই তার পরিণতি। স্ত্রী ভয়ে সিটকে আছে। মেয়ে নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতার শিকার। প্রিয় বন্ধুকে মনে হচ্ছে অপরিচিত লোক।

    আর, তিনি নিজে?

    ক্লান্ত একটু হাসি ফুটল তাঁর ঠোঁটে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, বাথটাবের কিনারায় বসে আছেন, একাকী, মনে তাঁর ভয় আর অপরাধবোধ, ভাবছেন ক্ষমতার লোভ করা উচিত হয়নি তাঁর, লোভ করাতেই আজ তাঁকে এত বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে।

    ‘রিচার্ড…?’ দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ এল।

    চোখ তুলে তাকালেন প্রেসিডেন্ট। পামেলার ঘুম ভেঙে গেছে।

    ‘তোমার খারাপ লাগছে?’ জিজ্ঞেস করলেন ফার্স্ট লেডি।

    ‘না। বাথটাব থেকে নেমে দরজা খুললেন প্রেসিডেন্ট। আলোর একটা ফালি বিছানার ওপর পড়ল। বিছানায় উঠে বসেছেন পামেলা, চেহারায় চিন্তার ছাপ। ‘হ্যাঁ,’ সত্যি কথা বললেন এবার, ‘খুব খারাপ লাগছে।’

    তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নামতে গেলেন ফার্স্ট লেডি, কিন্তু তার আগেই বিছানার কাছে পৌঁছে গেলেন প্রেসিডেণ্ট। স্ত্রীকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলেন তিনি, কাছে টানলেন—শুধু যে সান্ত্বনা আর সহানুভূতি পেতে চাইছেন তাই নয়, সম পরিমাণে দিতেও চাইছেন।

    ‘রিচার্ড।’

    স্ত্রীর ঠোঁটে হালকা একটা আঙুল রাখলেন প্রেসিডেণ্ট। ‘প্লীজ কথা বোলো না, শুধু শুনে যাও

    স্বামীর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন পামেলা। তারপর মাথা ঝাঁকালেন।

    ‘গোটা ব্যাপারটার জন্যে আমি দায়ী,’ শান্তভাবে বললেন রিচার্ড কনওয়ে, পামেলা প্রতিবাদ করতে যাচ্ছে দেখে আবার তিনি হাত তুলে তাঁকে বাধা দিলেন। ‘ক’দিন ধরেই ভাবছি, একটা ব্যাখ্যা পাবার চেষ্টা করছি। একটু আগে হঠাৎ আমার উপলব্ধি হলো। শোনো, তোমাকে তাহলে সব বলি…।’

    .

    গাড়ি চালিয়ে সরাসরি ল্যাংলিতে চলে এল হেনরি পিকেরিং, জানতে পারল জেফ রিকার্ড বাড়ি চলে গেছেন। সাথে সাথে ফোন করল সে, রিসিভার তুলল মার্গারেট। জেফ রিকার্ড এখনও বাড়ি ফেরেননি। নিশ্চয়ই ফেরার পথে রয়েছেন। ‘ফিরলেই আমাকে টেলিফোন করতে বলবেন,’ ভারী গলায় বলল সে, নামিয়ে রাখল রিসিভার।

    সময়ের দিকে অস্থির একটা চোখ রেখে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল পিকেরিং। ক্যাপিটল ক্রিপ্টে, লিংকন ক্যাটাফালকে লাশ রয়েছে ডানিয়েলের। সত্যি, অদ্ভুত একটা ব্যাপার! সি.আই.এ. হিরোরা মারা যাবার পর উপযুক্ত সম্মান প্রায় কখনোই পায় না। সি.আই.এ. ভিলেনদের তো প্রশ্নই ওঠে না।

    গোটা ব্যাপারটা ভাবতে গিয়ে শুধু অসন্তুষ্ট নয়, রাগে কেঁপে উঠল পিকেরিং। মৃত একজন এজেন্টের এক কানাকড়ি মূল্য নেই।

    ফোনের দিকে হাত বাড়াল সে। হেডকোয়ার্টারের ভেতরই দু’জায়গায় ফোন করল। ক্যাপিটলের মত পুরানো একটা বিল্ডিঙের মেরামতের কাজ সব সময় লেগে থাকে। এক দল রঙ মিস্ত্রীকে দেখে কেউ কিছু সন্দেহ করবে না, সাথে যদি সরকারি জব অর্ডার আর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ভরা একটা ঠেলাগাড়ি থাকে। কেউ জানবে না ডানিয়েল ওখানে কখনও ছিল। এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হবে কাজটা। একটা দিক সামলানো গেল।

    ইতোমধ্যে ডানিয়েলের ফাইল পৌঁছুল ডেস্কে। সতর্কতার সাথে পড়ল পিকেরিং। ফাইলে এমন কিছু নেই যা মেরিলিন শাপ বা টিউলিপের সাথে ডানিয়েলকে জড়াতে পারে। ফাইল বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল সে, পায়চারি শুরু করল।

    এখনও বাজছে না ফোন। জেফ রিকার্ড করছে কি? কোথায় গেল সে?

    হঠাৎ নক হলো দরজায়। ঝট্ করে ঘুরল পিকেরিং। ‘কাম ইন।’

    নিচের তলা কমিউনিকেশন রূম থেকে একজন মেসেঞ্জার। সীল করা একটা এনভেলাপ দিয়ে চলে গেল সে। এনভেলাপটা নেড়েচেড়ে দেখল পিকেরিং। লাল এনভেলাপ, তারমানে আলট্রাআর্জেণ্ট। লেখা আছে শুধু তার দেখার জন্যে। এনভেলাপ ছিঁড়ে ভেতরের টেলেক্সটা রুদ্ধশ্বাসে পড়ে গেল সে। পরমুহূর্তে ছোঁ দিয়ে তুলে নিল রিসিভার, আবার ফোন করল সি.আই.এ. চীফ জেফ রিকার্ডের বাড়িতে।

    ‘দুঃখিত,’ বলল মার্গারেট। ‘এখনও ফেরেনি ও। বুঝতে পারছি না কেন এত দেরি করছে। কোথায় আছে তাও আমার জানা নেই…।’

    এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল পিকেরিং। হাতের টেলেক্সটা আরেকবার দেখল। তারপর টেলিফোনের সাথে সংযুক্ত স্ক্র্যা’লারের সুইচ অন করল। ‘শুনুন, মিসেস রিকার্ড, ওনাকে বলবেন আমার পক্ষে আর দেরি করা সম্ভব হলো না। এথেন্স থেকে আমরা একটা টেলেক্স পেয়েছি। একজন মেয়ে এজেণ্ট খবর দিয়েছে, সে নাকি টিউলিপকে দেখেছে।’

    ‘টিউলিপকে দেখেছে! কোথায়? কখন? ‘

    ‘সব কথা ব্যাখ্যা করার সময় নেই, দুঃখিত। ওনাকে বলবেন, টেলেক্সটা আমার সেফে থাকল। এখানে এসে ওটা পড়তে বলবেন। বলবেন, এথেন্স যাচ্ছি আমি।’

    ‘আজ রাতে?’

    ‘এখুনি। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে যদি তিনি বাড়িতে ফেরেন, এনডুতে গেলে আমার সাথে দেখা হবে। তা না হলে গ্রীস থেকে ফোনে কথা বলব আমি।’

    ‘ঠিক আছে।’

    ‘আরও একটা ব্যাপার,’ বলল পিকেরিং। ‘ওনাকে বলবেন, মেরিলিন শার্পকে রোটাণ্ডায় রেখে এসেছি আমি। অনেক কথা বলার আছে তার। স্ক্র্যা’লারেও সে-সব কথা আপনাকে বলা যাচ্ছে না। মি. রিকার্ডের সাথে আপনার দেখা হোক বা তিনি আপনাকে ফোন করুন, বলবেন এক মুহূর্ত দেরি না করে মেরিলিনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ওনার জন্য একটা ফাইল থাকল এখানে। টেলেক্সের সাথে সেফে রেখে গেলাম।’

    ‘ঠিক আছে।’

    ‘ধন্যবাদ,’ শুভরাত্রি না জানিয়েই যোগাযোগ কেটে দিল পিকেরিং।

    .

    মেরিলিন শার্প সম্পর্কে কারও কাছ থেকে কিছু শোনার দরকার নেই জেফ রিকার্ডের। তার সম্পর্কে পিকেরিং মার্গারেটকে যা বলেছে, তিনি আরও অনেক বেশি জানেন। জানেন মেরিলিন বেঁচে নেই।

    পুরানো রোটাণ্ডা থেকে বেশ খানিক দূরে নিজের গাড়িতে বসে আছেন তিনি। রোটাণ্ডায় এই মুহূর্তে গিজগিজ করছে পুলিস। পুলিস আর সাংবাদিক। ঘটনা তো আর সামান্য নয়-অভিজাত ক্লাবে কংগ্রেস সদস্যা খুন, সামনের দরজা দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীর পলায়ন-আলোড়ন তোলার জন্যে যথেষ্ট।

    কিন্তু আরও আছে। কংগ্রেস সদস্যার কোটে বুলেটের একটা ফুটো, ফুটোর চারধারে গান পাউডার। বোঝাই যায়, কোটের ভেতর থেকে গুলি করা হয়েছিল। আজ রাতে। অথচ পিস্তল বা রিভলভার কিছুই পাওয়া যায়নি। বারের সামনে, একটা টুলের ওপর ভাঁজ করা অবস্থায় পাওয়া গেছে কোটটা। ওটা যে মেরিলিনের, অনেকেই সাক্ষী দিয়েছে।

    প্রশ্ন ওঠে, ক্লাবে আসার আগে কোথায় ছিল মেরিলিন শার্প? পুলিস জানতে চাইবে।

    তিনিও জানতে চান।

    পাশের সীটে বসা লোকটার দিকে তাকালেন জেফ রিকার্ড এ সেই লবিইস্ট, ক্লাবে শেষবার যে কথা বলেছে মেরিলিনের সাথে। লোকটার স্ত্রী আছে, চার মেয়ে আছে। বড় মেয়ের বয়স পঁচিশ। অথচ গোপনে ভালবাসে তেইশ বছরের এক যুবতীকে। আলাদা একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে রেখেছে তাকে। হার পাঁচটা দুপুর এই যুবতীর সাথে ঘুমায়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এ-ধরনের দুর্বলতা সম্পর্কে খবর রাখতে হয় সি.আই.এ-কে। মাঝে মধ্যে এ-সব তথ্য কাজ দেয়, এই যেমন আজ রাতে। জেফ রিকার্ড উপলব্ধি করেছিলেন, রোটাণ্ডায় তাঁর নিজের একজন লোক থাকা দরকার, যে শুধু একা তাঁর কাছে রিপোর্ট করবে। গোপন তালিকায় চোখ বুলিয়ে লবিইস্ট লোকটাকে বেছে নেন তিনি। লোকটা জানে, সি.আই.এ. চীফ কোন নির্দেশ দিলে শুনতে হবে তাকে, তা না হলে তার গোপন অভিসারের কথা চাপা থাকবে না।

    ‘ক্লাবে আসার আগে কোথায় ছিল, আপনাকে বলেনি সে?’

    নার্ভাস ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল লবিইস্ট। ‘এ-ব্যাপারে কথা হয়নি। সম্ভবত ফ্লোরে ছিলেন। অধিবেশন চলেছে এগারোটা পর্যন্ত।’

    ‘এগারোটার পর আরও কিছুক্ষণ অধিবেশন চলে,’ বললেন জেফ রিকার্ড। এরইমধ্যে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন তিনি। ‘আপনি বললেন, প্রায় মাঝরাতের দিকে ক্লাবে আসে সে। মাঝখানের সময়টা কোথায় ছিল?’

    ‘কি জানি। হয়তো তার অফিসে।’ ঢোক গিলল লবিইস্ট।

    অন্যমনস্কভাবে মাথা ঝাঁকালেন সি.আই.এ. চীফ। লোকটা ভয়ে কুঁকড়ে আছে, মিথ্যে বলবে না। ‘ঠিক আছে, এবার আপনি যেতে পারেন।’

    লবিইস্টের চেহারায় স্বস্তি ফুটে উঠল

    ‘কিন্তু আমাদের চুক্তির কথাটা ভুলবেন না যেন,’ সাবধান করে দিলেন জেফ রিকার্ড, বলতে চাইলেন তাদের এই সাক্ষাৎকারের ঘটনা যেন প্রকাশ না পায়, পেলে গোপন অভিসারের কথা ফাঁস হয়ে যাবে।

    ‘জ্বী, ভুলব না।’

    ‘ভুললে নিজের পায়ে কুড়োল মারবেন। এ-ব্যাপারে আমার আগ্রহ আছে তা যদি প্রকাশ পায়, আপনার ফাইল ডাকযোগে আপনার স্ত্রীর হাতে পৌঁছে যাবে। আপনি যাতে আর কাজ করতে না পারেন সেদিকটাও দেখব আমি।

    লবিইস্ট কয়েক সেকেণ্ড একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নেমে গেল। ক্যাপিটল হিলের দিকে, অন্ধকারে হারিয়ে গেল লোকটা। গাড়ি স্টার্ট দিলেন জেফ রিকার্ড।

    উদ্দেশ্যহীনভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন তিনি, নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই। একা থাকা দরকার কিছুক্ষণ, কয়েকটা ব্যাপার গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার।

    অ্যারো আর এগম্যানের মত, মেরিলিন শাপও মারা গেল। এবারও কাঁটায় কাঁটায় ঠিক সময়ে রোটাণ্ডায় উপস্থিত ছিল খুনী। মেরিলিন কখন রোটাণ্ডায় যাবে জানল কিভাবে? নিশ্চয়ই কেউ তাকে আগেভাগে জানিয়েছে। কে জানাতে পারে? এমন একজন, যে নিজে জানে। উঁচু পদের কোন লোক, ভাবলেন জেফ রিকার্ড, যারা আমার আশপাশে রয়েছে তাদের কেউ। মাই গড, সি.আই.এ-র ভেতর দু’মুখো সাপ!

    চিন্তার খেই ধরে আবার তন্ময় হলেন জেফ রিকার্ড। মেরিলিন ক্লাবে যাচ্ছে, কে কে জানত? তিনি জানতেন। তিনি আর পিকেরিং প্ল্যানটা তৈরি করেন। হ্যাঁ, পিকেরিং জানত। আর জানতেন প্রেসিডেন্ট। জেফ রিকার্ড নিজে তাঁকে রিপোর্ট করেছিলেন।

    মেরিলিনকে রোটাণ্ডায় পাঠাবার আগে সবরকম সাবধানতা অবল’ন করা হয়েছিল। জেফ রিকার্ডের পরিষ্কার নির্দেশ ছিল, সন্দেহের ঊর্ধ্বে তিনজন লোক ছাড়া কেউ জানবে না মেরিলিন কখন রোটাণ্ডায় যাচ্ছে।

    অথচ খুনী ঠিকই জেনে ফেলে। সময়মত সেখানে উপস্থিত ছিল সে। ঠিক যখন তার থাকা দরকার।

    সি.আই.এ. চীফ জেফ রিকার্ডের মাথা ঘুরে উঠল উইণ্ডস্ক্রীনের সামনে আলোগুলো চোখের সামনে নাচছে। বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গের মত একটা চিন্তা বাড়ি খাচ্ছে খুলির ভেতর দিকের দেয়ালে। শুধু ওয়াশিংটনে নয়, পশ্চিম জার্মানী আর দক্ষিণ আফ্রিকাতেও খুনীকে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

    এবং দু’জনের একজন বেঈমান।

    হয় পিকেরিং, নয়তো রিচার্ড কনওয়ে!

    ঘ্যাচ করে ব্রেক কষে গাড়ি থামালেন জেফ রিকার্ড। এ-ধরনের উল্লট চিন্তা মাথায় এল বলে নিজেকে তিনি ধিক্কার দিলেন না। এমন একটা পরিস্থিতি, ব্যাপারটাকে অসম্ভব বলে বাতিল করার উপায় নেই।

    জোরে একটা ঝাঁকি খেয়েছেন জেফ রিকার্ড, হুইলের সাথে ঠুকে গিয়ে ফুলে উঠেছে কপাল। কিন্তু তিনি কোন ব্যথা অনুভব করলেন না। চিন্তার ঝড় বয়ে চলেছে মাথার ভেতর। আমেরিকার প্রেসিডেণ্ট সাহায্য করছেন কিডন্যাপারদের? তারমানে কি নিজের মেয়েকে তিনিই কিডন্যাপ করার অনুমতি দিয়েছেন? অসম্ভব! কিন্তু পিকেরিং? তাই বা কিভাবে সম্ভব! সি.আই.এ-র ডেপুটি ডিরেক্টর প্রেসিডেন্টের মেয়েকে কিডন্যাপ করার সাথে জড়িত? কাজটা কেন সে করতে যাবে? কাজটা করে কি তার লাভ? দু’জনের কারই বা কি লাভ?

    ধীরে ধীরে আবার গাড়ি ছাড়লেন তিনি। মাথার ভেতর সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে। পাঁজরের গায়ে হাতুড়ির বাড়ি মারছে হৃৎপিণ্ড। এ-ধরনের উন্মাদ-করা সমস্যায় আগে কখনও পড়েননি তিনি। সমস্যাটা ভীতিকর নয়, আর সব সমস্যার মত এটারও তিনি মীমাংসা করার যোগ্যতা রাখেন। ভীতিকর হলো সংশ্লিষ্ট চরিত্রগুলো।

    গভীর একটা শ্বাস টানলেন তিনি। ঠিক আছে, যুক্তি দিয়ে চিন্তা করা যাক।

    ‘রিচার্ড কনওয়ে। আমেরিকার প্রেসিডেণ্ট। নিখোঁজ টিউলিপের বাবা। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে কি…?’

    কিসের যুক্তি? যুক্তির এখানে নেতিবাচক ভূমিকা হয় কি করে? না, রিচার্ড কনওয়ে বাদ। প্রেসিডেণ্ট…অসম্ভব! তাহলে নিশ্চয়ই পিকেরিং।

    লাল আলোর সামনে গাড়ি থামালেন জেফ রিকার্ড। কয়েক মুহূর্ত শুধু গাড়ি নয়, তাঁর মাথাও নিশ্চল হয়ে থাকল। ভেতরটা যেন ফাঁকা হয়ে গেছে।

    সবুজ বাতি জ্বলল। গাড়ির সাথে সাথে সচল হলো ব্রেন। বোধহয় কয়েক মুহূর্ত বিশ্রাম পেয়ে পরিষ্কার হয়ে গেছে মাথাটা। কিভাবে কি ঘটেছে তিনি যেন তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। সম্পূর্ণ নতুন একটা দিক ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে শুরু করল। সেই সাথে প্রশ্ন জাগল মনে, চীফ হয়ে সি.আই.এ-র কতটুকু তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন?

    হ্যাঁ, তিনি ডিরেক্টর বটে, কিন্তু ভেতরের লোক বলতে যা বোঝায় তা নন। সি.আই.এ. ডিরেক্টরকে প্রেসিডেণ্ট বাইরে থেকে নিয়োগ করেন। ঠিক সেভাবেই তাঁকেও নিয়োগ করা হয়েছে। কারণ আর কিছুই নয়, হোয়াইট হাউস তাঁর বিশ্বস্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত, তাঁর যোগ্যতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ। এবং, প্রেসিডেন্ট তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু। কিন্তু যেহেতু তিনি ভেতরের লোক নন, ল্যাংলিতে কি ঘটছে না ঘটছে সব খবর তাঁকে জানানো হয় না। তিনি শুধু নীতি নির্ধারণ করে দেন, তাঁকে শুধু রিপোর্ট দেখতে দেয়া হয়। কাজের খুঁটিনাটি দিক সম্পর্কে কিছুই তিনি জানেন না, কাজগুলো যারা করে তাদের খুব কম লোককেই তিনি চেনেন। কাগজে কলমে তিনি ডিরেক্টর, কিন্তু ভেতরের লোক তিনি হতে পারেননি।

    আর পিকেরিং? না, সে বাইরের লোক নয়। সে একজন প্রফেশনাল, ধাপে ধাপে ওপরে উঠে এসেছে। সংস্থাটাকে এমনভাবে চেনে সে, সেভাবে কোনদিনই জেফ রিকার্ডের পক্ষে চেনা সম্ভব হবে না। প্রেসিডেন্ট আসেন এবং যান, সেই সাথে আসে আর যায় তাঁদের নিয়োগ করা ডিরেক্টররা। কিন্তু পিকেরিঙের মত প্রফেশনালরা রাজনৈতিক পালাবদলের পরও যার যার জায়গায় থেকে যায়। সি.আই.এ-র অন্যান্য প্রফেশনালদের কাছে পিকেরিং হলো সত্যিকার কর্তা, তাদের বিশ্বস্ততা একমাত্র পিকেরিং-ই অর্জন করতে পেরেছে।

    পিকেরিং, হ্যাঁ, পিকেরিং। সে-ই সি.আই.এ-কে পরিচালনা করে।

    গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে সাউথওয়েস্ট ফ্রিওয়ে-তে চলে এলেন জেফ রিকার্ড, ডান দিকের রাস্তায় থাকলেন। রাস্তায় আরও অনেক গাড়ি রয়েছে, চারপাশে শহরের ঝলমলে আলো। জেফারসন মেমোরিয়ালে এত রাতেও কিছু ট্যুরিস্টকে দেখা গেল। অথচ নিজেকে সম্পূর্ণ একা, পরিত্যক্ত, নিঃসঙ্গ মনে হলো তাঁর। লোকে জানে, তাঁর ক্ষমতার অন্ত নেই। একদিকে সি.আই.এ-র ডিরেক্টর, আরেক দিকে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেণ্টের বন্ধু। কিন্তু ক্ষমতার দুটো উৎসই যেন কেড়ে নেয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে। পিকেরিং কি করছে জানতে হবে তাঁকে, অথচ সাহায্যের জন্যে প্রেসিডেন্টের কাছে যাবার উপায় নেই তাঁর। অন্তত এখুনি নয়, যতক্ষণ না জানতে পারছেন রিচার্ড কনওয়ে ব্যাপারটার সাথে জড়িত নন। শুধু কি তাই, পিকেরিং বা প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ লোকজনদের কাছ থেকেও কোন সাহায্য তাঁর নেয়া চলে না।

    উপায় তাহলে একটাই থাকল। বাইরে থেকে সাহায্য নিতে হবে তাঁর। পটোম্যাক পেরিয়ে এলেন তিনি। উত্তর দিকে যাচ্ছেন। কিছু চিন্তা না করেই ল্যাংলির দিকে গাড়ি ছোটালেন, যেখানে তাঁর এই মুহূর্তে যাওয়া চলে না।

    পিকেরিঙের সাথে কথা বলবেন তিনি।

    ক্রিস্টাল সিটিতে পৌঁছুলেন, ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। স্টেশনের চারদিক ফ্লাডলাইটের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে আছে। আলোর পিছনে ফোন বুদ, এক কোণে।

    সি.আই.এ. হেডকোয়ার্টারে ফোন করলেন তিনি।

    ‘দুঃখিত, স্যার,’ ডিউটি অফিসার বলল। ‘পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে বেরিয়ে গেছেন ডেপুটি ডিরেক্টর। বলে গেছেন, আপনি এলে বা ফোন করলে আপনাকে বলতে বাড়িতে রিঙ করুন…।’

    মার্গারেটের সাথে যোগাযোগ করতে হবে? কেন?

    আবার ডায়াল করলেন জেফ রিকার্ড।

    জেফ, কোথায় তুমি?’ অপরপ্রান্ত থেকে উদ্বেগের সাথে জানতে চাইল মার্গারেট।

    ‘কোথায় সে-কথা জানার দরকার নেই,’ বললেন তিনি। ‘পিকেরিং আমার জন্যে কোন মেসেজ রেখে গেছে?’

    ‘লাইন কি নিরাপদ?’

    ‘হ্যাঁ, আমি একটা ফোন বুদ থেকে বলছি। তবে ওদিকের স্ক্র্যা’লার অন করো।’

    কয়েক মুহূর্ত কোন শব্দ হলো না। তারপর মার্গারেট যখন কথা বলল, ফাঁপা শোনাল তার কণ্ঠস্বর। স্ক্র্যা’লার কাজ করছে। তবে মার্গারেটের গলার উত্তেজনা ঠিকই টের পাওয়া গেল। ‘তোমাদের একজন এজেন্ট টিউলিপকে এথেন্সে দেখেছে!’ বলল সে। ‘এরই মধ্যে রওনা হয়ে গেছে পিকেরিং ‘

    ‘পিকেরিং রওনা হয়ে গেছে!’

    ‘দু’বার তোমার খোঁজে ফোন করেছিল সে। আমাকে বলল, তার পক্ষে আর দেরি করা সম্ভব নয়। এথেন্স থেকে একটা টেলেক্স পেয়েছে সে, তার সেফে রেখে গেছে তোমার জন্যে।

    কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন জেফ রিকার্ড। মিলছে কি? মিলছে না কেন?

    ‘কোথাও কিছু গণ্ডগোল হয়েছে, জেফ?’

    প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন জেফ রিকার্ড। ‘আর কি বলল পিকেরিং?’

    ‘বলল, মেরিলিন শার্পের সাথে যোগাযোগ করতে হবে তোমাকে-ইমিডিয়েটলি। পুরানো রোটাণ্ডায় পাওয়া যাবে তাকে। নাম্বারটা খুঁজে দেব?’

    শুকনো গলায় জেফ রিকার্ড বললেন, ‘না, তার দরকার নেই।’

    ‘কিছু একটা হয়েছে,’ বলল মার্গারেট। ‘তুমি খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছ।’

    ‘বলো, কিছু হতে বাকি নেই,’ জবাব দিলেন জেফ রিকার্ড ‘জানি না কখন বাড়ি ফিরতে পারব, তবে চিন্তা কোরো না।’

    ‘জেফ…?’

    কিন্তু মার্গারেটের কথা জেফ রিকার্ড শুনতে পেলেন না, রিসিভার নামিয়ে রেখেছেন। ফোন বুদে দাঁড়িয়ে চিন্তায় ডুবে গেলেন তিনি। মনে মনে একটা প্ল্যান তৈরি করছেন। ভয়ঙ্কর একটা প্ল্যান।

    একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। পিকেরিং যাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের কারও সাহায্য তিনি নেবেন না। তারমানে গোটা সি.আই.এ-কে এড়িয়ে চলতে হবে এখন।

    কি নির্মম পরিহাস, সি.আই.এ-র ডিরেক্টর সি.আই.এ-কে বিশ্বাস করতে পারছেন না।

    বিপজ্জনক একটা প্ল্যান তৈরি হলো, কিন্তু ঝুঁকিটা প্রকাণ্ড। তিনি উপলব্ধি করলেন, এ-ছাড়া তাঁর কোন উপায়ও নেই। রিসিভার তুলে আবার তিনি আরেক ন’রে ডায়াল করলেন।

    অপরপ্রান্তে রিসিভার তুলল মিখাইল পোলোনভ। ওয়াশিংটন, সোভিয়েত দূতাবাসের ভাইস কনসালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সে। তার আরও একটা পরিচয়, আমেরিকা কে.জি.বি-র সিনিয়র আবাসিক অফিসার।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.