Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প361 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মৃত্যুঘণ্টা – ১৫

    পনেরো

    ঘন কালো মেঘে ঢাকা প্যারিসের চার্লস দ্য গল এয়ারপোর্টের আকাশ। টারমাকে পা রেখে হাঁটার গতি কমাল রানা। ওর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছে এলেনা। একটু দূরেই এনআরআই-এর সাইটেশন। ওটাতে করেই আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে এ দেশে এসেছিল ওরা।

    পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি করে হোটেলে যাওয়ার সময় নিজেদের ভেতর আলাপ করেছে রানা ও এলেনা। পরে হোটেল কক্ষে বিশ্রামের সময় মোটামুটি সব গুছিয়ে নিয়েছে। তারপর এলেনা ফোন করেছে এনআরআই চিফকে। জানিয়ে দিয়েছে, রানার পেনড্রাইভ থেকে যেসব তথ্য ওরা পেয়েছে, তাতে মনে হয়েছে, যাওয়া উচিত বৈরুতে। খোঁজ নিয়ে দেখবে, কেন ওখানে যেতে চেয়েছিল প্রত্নতাত্ত্বিক আবু রশিদ। এ ছাড়া উপায়ও নেই ওদের। সামনের সব পথ আপাতত বন্ধ।

    বিমানের সিঁড়ির ওপরের ধাপে দাঁড়িয়ে আছেন এক বয়স্ক লোক। চুল সব ধূসর। পরনে সবুজ ওভারকোট।

    এনআরআই চিফ জেমস ব্রায়ান।

    এরই ভেতর বিসিআই-এ যোগাযোগ করেছিলেন ভদ্রলোক, মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খানের কাছ থেকে শুনেছে রানা। আপাতত ওদের হয়ে রানা কিছু করলে তাঁর আপত্তি নেই, বলেছেন। অবশ্য সিদ্ধান্ত রানার।

    ওরা দু’জন সিঁড়ির কাছে পৌঁছতেই ব্রায়ান বললেন, ‘আসুন, ভেতরে গিয়ে বসা যাক।’

    ওরা যে যার সিটে বসার পর ককপিট থেকে এল কো- পাইলট। সিঁড়ি সরে যেতেই ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল দরজা। আবার ফিরল ককপিটে। পাঁচ মিনিট পর আকাশে ডানা মেলল বিমান। ওটা চলেছে দক্ষিণ-পুবে বৈরুত লক্ষ্য করে।

    আরও কিছুক্ষণ পর মুখ খুললেন ব্রায়ান খুব গম্ভীর শোনাল তাঁর কণ্ঠ: ‘আমাদের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করছে ফ্রেঞ্চরা। যারা এসব হত্যা করছে, তাদের বিষয়ে অসংখ্য ডেটাবেস ঘাঁটা হচ্ছে। ইউএন লেটার, ডক্টর মোবারকের মৃত্যু, ধর্মের নামে আগুন দিয়ে নির্যাতন শেষে মানুষ খুন করে ফেলা কাল্ট… এসব থেকে পাওয়া গেছে একটা প্রোফাইল।’ একইরকম দুটো ডোশিয়ে রানা ও এলেনার দিকে বাড়িয়ে দিলেন তিনি।

    প্রথম পাতায় চোখ বোলাল রানা।

    ইরাক কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্ট। লিখেছে: হামলা করেছে কাল্ট অভ মেন নামের এক গোপন সংগঠন।

    ‘খুব গোপন কাল্ট, গত দু’এক বছরের ভেতর বেশ কিছু খুন করেছে,’ বললেন ব্রায়ান। ‘তার আগে যেন ছিলই না।’

    ‘কোন্ পক্ষের হয়ে কাজ করছে?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘কারও পক্ষেই নেই এরা।’ মাথা পড়লেন ব্রায়ান। ‘বৈরুতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পক্ষে যারা কথা বলে, সেসব মুসলিমকেও খুন করছে। বাদ পড়ছে না হামাস মিলিট্যান্টরাও। প্রথম হামলা করে বেলফাস্টের এক দালানে। প্রতিবার দায় স্বীকার করেছে।’

    ‘বদ্ধ উন্মাদ মনে হচ্ছে,’ মন্তব্য করল এলেনা।

    ‘ইরাক আর ইজরায়েল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের ধারণা: এরাই এসব হামলা করছে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই,’ বললেন ব্রায়ান।

    ‘মিথ্যা-মিথ্যি কেন কাঁধে নেবে দায়?’ জানতে চাইল রানা।

    গোক্ষুরের ফণার মত,’ বললেন ব্রায়ান, ‘ওদেরকে যত বড় বলে মনে করছি, আসলে হয়তো তেমন বড় নয় ওই সংগঠন।’

    ‘কেন ভাবছেন ডক্টর মোবারক খুনের সঙ্গে এদের সম্পর্ক আছে?’ প্রশ্ন তুলল রানা।

    ‘ছয় মাস আগে তাদের একজনের ছবি তুলেছিল আমাদের এক এজেণ্ট। সেই লোক ছিল ডক্টর মোবারকের সঙ্গে।’

    ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছে রানা।

    ‘ইরাকি আর ইজরায়েলি ইন্টেলিজেন্সের ধারণা: ওই লোক ধার্মিকদের বিপক্ষে কাজ করছিল। এরা পৃথিবীর সব অন্যায়ের  দায় চাপিয়ে দিচ্ছে স্রষ্টার ওপর।’

    ‘কোন্ ধর্মের গডের বিপক্ষে?’

    ‘সব ধর্মের স্রষ্টার বিরোধিতা করছে। প্রচার করছে, সব ধর্মের স্রষ্টাই আসলে ক্ষতিকর মানুষের জন্যে। এসব ধর্ম তৈরি হওয়ায় চালু হয়েছে মানুষে মানুষে লড়াই পরস্পরকে ছোট করছে মানুষ… ইত্যাদি ইত্যাদি।’

    ‘তা হলে তাদের কথা হচ্ছে: স্রষ্টার নামে নানান ধর্মের মানুষ খুন করছে একে অপরকে,’ বলল গম্ভীর রানা। ‘অর্থাৎ পাওয়া গেল এমন এক দলকে, যারা কোনও স্রষ্টার নামে খুন না করে নিজেদের প্রয়োজনে যা খুশি করছে।’

    ‘কিন্তু এসবের সঙ্গে ইউএন চিঠির কী সম্পর্ক?’ জানতে চাইল এলেনা। ‘ইউএন সংগঠন তো কোনও ধার্মিক অবকাঠামো নয়।’

    ‘এখনও জানি না কী কারণে কী হচ্ছে,’ স্বীকার করলেন ব্রায়ান। ‘কিন্তু একটা কথা পরিষ্কার: বিগড়ে গেছে এদের মাথা। খুব গোপন দল। অতীত জানতে গিয়ে থমকে গেছি আমরা। যেন আকাশ থেকে পড়েছে দু’এক বছর আগে। কোত্থেকে জোগাড় করছে লোক, কোথায় ট্রেনিং নিচ্ছে, টাকা পাচ্ছে কোথা থেকে, এদের মূল উদ্দেশ্য কী— সবই অজানা। এদের অতীত বলতে কিছুই নেই।’

    ‘অর্থাৎ, আসল উদ্দেশ্যও জানা যায়নি,’ বলল এলেনা।

    ‘ওরা প্রচার করছে ধর্ম অত্যন্ত খারাপ পদ্ধতি। ধর্ম আমাদেরকে রক্ষা করছে না, ধর্মের কারণেই ছোট হয় মানুষের মন। আমরা হয়ে উঠি হিংস্র। একটা প্রচারপত্রে ওই দল লিখেছে: “মিথ্যার পর মিথ্যা শুনি, তার ফলে আরও ছড়িয়ে পড়ে মিথ্যার ঢেউ। ধর্মের নামে পৃথিবীর বুকে যে-যার মত সুবিধা আদায় করছে অনেকে। অন্যায় বাড়ছে মহামারীর মত। এই রোগ এতই বেশি, গ্রাস করছে চারপাশ। প্রতিবেশী বা নিজ ভাইকে না খাইয়ে রাখছি আমরা। দরকার পড়লেই খুন করছি। আসলে যা খুশি চলছে পৃথিবী জুড়ে। কোনওভাবেই লোভকে সামলে রাখছে না কেউ। স্রষ্টা থাকলে এমন হতো না। আমরা মানুষ বুঝতেই পারছি না, নিজ দোষে ডেকে আনছি পৃথিবী ও মানব জাতির নিশ্চিত ধ্বংস।’’’

    এসব আগেও শুনেছি, ভাবল রানা। কিন্তু কোথায়?

    ‘এই উদ্ধৃতি কি টেনিসন বা অন্য কারও?’

    ‘মিল্টনের করাপশন,’ বললেন ব্রায়ান, ‘প্যারাডাইস লস্ট। ‘ইভ আপেল খেয়েছে তা কবিতায় তুলে ধরেছিলেন,’ বলল এলেনা।

    ‘এ ছাড়াও অনেক উদ্ধৃতি আছে,’ বললেন ব্রায়ান, ‘ইউএন চিঠিতে লিখেছে: হি হু ওভারকাম বাই ফোর্স, হ্যাথ ওভারকাম বাট হাফ হিয ফো।’

    ‘কিছু যেন বোঝাতে চাইছে,’ সন্দেহ নিয়ে বলল এলেনা।

    ‘স্বয়ং শয়তানের ভূমিকা নিয়েছে,’ বললেন এনআরআই চিফ, ‘স্রষ্টার সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গেছে, কাজেই ধ্বংস করতে চাইছে পৃথিবীর বুকে মানব জাতিকে। কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএন-এর চিঠিতে লিখেছে: আমরা নিজেরাই ধ্বংস করে দেব পৃথিবী।’

    আবারও কাগজে চোখ দিল রানা। পড়তে পড়তে ওর মনে হলো, প্রতিটা চরণ থেকে ঝরছে তিক্ততা ও ঘৃণা। সঠিকভাবেই বেছে নেয়া হয়েছে মিল্টনকে। উন্মাদ লোকটা যেন বোঝাতে চাইছে আরও অনেক কিছুই, অথচ ঝেড়ে লেখেনি।

    ‘এরা আর কী চায়?’ বলল এলেনা, ‘স্রষ্টার বিরুদ্ধে লড়বে, না মানুষের বিরুদ্ধে?’

    ‘এটা বুঝতে পারছি, প্রথম কাজ ধার্মিকদের ওপর হামলা,’  বললেন ব্রায়ান। ‘বড় প্রতিটি ধর্মেই বলা হয়েছে, যত বেশি পারো সন্তান উৎপাদন করো। নইলে সংখ্যায় কমে যাবে। তখন লড়াই করে তোমাদেরকে হারিয়ে দেবে শত্রুদল। কিন্তু অন্যসব ডকুমেণ্ট বা ইউএন চিঠি থেকে বুঝতে পারছি, ওদের নেতা চাইছে কমে যাক জনসংখ্যা। নইলে এমন এক পরিবেশ তৈরি হবে, বাঁচার উপায় থাকবে না কারও। পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা নানান ওষুধ ও টেকনোলজি তৈরি করেছে বলেই অনেক কমে গেছে মৃত্যুহার। কিন্তু গতি কমেনি জন্মহারের।’

    ‘তার মানে মহামারী দিয়ে মানব জাতিকে ছোট করে আনতে চাইছে ওরা?’ জানতে চাইল এলেনা।

    ‘উন্নত দেশে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি হলে গরু, ছাগল, শুয়োর, খরগোশ, মুরগি এসব মেরে ফেলি আমরা,’ বললেন ব্রায়ান। আর কিছুই বলছেন না।

    ‘কিন্তু মানুষ তো জীবজন্তু নয়,’ আপত্তির সুরে বলল এলেনা।

    ‘ওই কাল্ট হয়তো তোমার সঙ্গে একমত নয়,’ মাথা নাড়লেন ব্রায়ান।

    চুপ করে আছে রানা। নিজ চোখে বহু কিছুই দেখেছে। পৃথিবী জুড়ে বহু মানুষ আছে, যারা অন্য মানুষকে সামান্য তেলাপোকার সমান বলেও মনে করে না। অত্যাচারের চূড়ান্ত করে এরাই।

    ‘ডক্টর মোবারক এমন এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন, যার মাধ্যমে কমিয়ে দেয়া যাবে মানুষের আয়ু,’ বলল এলেনা। ‘সাফল্যের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আর ওই জিনিসই হয়তো হাতের নাগালে চাইছে ওই কাল্ট।

    ‘হতে পারে,’ বললেন ব্রায়ান।

    রানা বুঝে গেছে, ভীষণভাবে মগজ নষ্ট বিপজ্জনক একদল লোক স্থির করেছে, যা খুশি করবে। সহজ হবে না তাদেরকে গ্রেফতার করা, মরতেও আপত্তি থাকবে না তাদের।

    ‘যে কারণেই হোক, এদের সঙ্গে মিশতে থাকেন ডক্টর মোবারক,’ বলল রানা। ‘যদি বের করা যায় ঠিক কোন্ সময় থেকে, সেক্ষেত্রে হয়তো খুঁজে পাব তাদের গোপন আস্তানা। খুব খারাপ কিছু হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া দেখাবার চেয়ে বিপদ আসার আগেই ঠেকিয়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।’

    চিন্তিত চোখে ওকে দেখলেন ব্রায়ান। ‘কখন থেকে এদের সঙ্গে মেশেন ডক্টর মোবারক, সেটা বোধহয় আমরা জানি।’ বাটন টিপে দিতেই এয়ারক্রাফটের বালকহেডের স্ক্রিনে দেখা দিল ছবি।

    ঘুরে বসে মনিটরে চোখ রাখল রানা। কয়েক সেকেণ্ড বুঝল না কী হচ্ছে। ছায়াছবিটা খুব ঝাপসা। যে হলরুমে ক্যামেরা, সেখানে পর্যাপ্ত আলো নেই। বড় অডিটোরিয়াম। ক্যামেরা যুম হতেই দেখা গেল স্টেজে বসে আছে কয়েকজন। তাদের ভেতর ডক্টর মোবারককে চিনতে পারল রানা। বয়স কম তাঁর। হালকা- পাতলা শরীর। পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট ও কালো টাই।

    মানব জাতির বিপুল খাবার জোগাড় করার সঙ্কট বিষয়ে কথা বলছে মডারেটর। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে বাধ্য হয়েই উৎপাদন করতে হবে জেনেটিকালি মডিফায়েড ফসল।

    আগামী বিশ বছরে কৃত্রিম ফসল উৎপাদনে কতটা উন্নতি সম্ভব, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো ডক্টর মোবারকের কাছে।

    ‘অনাবৃষ্টি ও খরা ঠেকিয়ে রাখা খুবই জরুরি,’ জোর দিয়ে বললেন মোবারক। ‘ফসল নষ্ট হলে মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে পারব না আমরা। কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে হবে, সবসময় ভারসাম্য বজায় রাখে প্রকৃতি। খরা ঠেকাতে গেলে সেজন্যে অন্যভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সাধারণ অবস্থার চেয়ে অনেক  কম ফসল পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিক থেকে দেখুন, জেনেটিকালি ফসল উৎপাদন করলে তাতেও রয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকি। এসব ফসলের জন্যে বেশি পানি ও সার লাগবে, কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে চরমভাবে ব্যাহত হবে ফসলের উৎপাদন। হয়তো ফসল হলোই না।’

    শ্রোতাদের ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তা হলে কী করা উচিত, ডক্টর মোবারক? ভবিষ্যতে আমরা কী আশা করতে পারি?’

    গলা পরিষ্কার করে মুখ খুললেন মোবারক, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চরম অসম্ভবকে সম্ভব করতে চাইছি আমরা। জবাব হিসেবে বলতে পারি, আমরা চাই এমন এক ফসল, যেটা খুব খারাপ পরিবেশেও প্রচুর পরিমাণে ফলবে। একর ভরা ফসলও হবে, আবার নষ্টও করবে না মাটি, টেনে নেবে না বেশি পানি। এসব নিয়েই কাজ করছি আমরা।’ থেমে গেলেন তিনি, একটু বিরতি দিয়ে অনুৎসাহী সুরে বললেন, ‘কিন্তু ব্যাপারটা প্রায় অসম্ভব। আপনি তো আর হাতিকে নির্দেশ দিতে পারেন না, ওজন কমাতে পারবে না, কিন্তু এখন থেকে উড়তে হবে আকাশে।’

    হেসে ফেলল দর্শক-শ্রোতারা।

    ‘নানান দিকে সমস্যার শেষ নেই,’ বললেন মোবারক। ‘সাধ্য মত করছি আমরা। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি জানতে চাইলে বলব: আমরা ফসল পাওয়ার সমস্যা দূর করতে গিয়ে ভুল জায়গা হাতড়ে বেড়াচ্ছি। অনেকেই বলেন, বাস্তবে খুব কম খাবার উৎপাদন করছে পৃথিবী। কিন্তু তাঁরা একটা কথা বলেন না, আমরা সবাই মিলে অনেক বেশি ভোগ করছি।’

    চুপ হয়ে গেলেন মোবারক। রানার মনে পড়ল, জরুরি পয়েন্ট তুলে ধরার সময় সবসময় এভাবে বিরতি নিতেন বিজ্ঞানী।

    ‘কিছু দিন পর পৃথিবীতে আমরা থাকব সাত বিলিয়ন মানুষ। পরের বিশ বছরে মানুষের সংখ্যা হবে দশ বিলিয়ন। যতই ঠেকিয়ে রাখা যাক জনসংখ্যা, দু’ হাজার পঁচাত্তর সালে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা হবে কমপক্ষে বারো থেকে পনেরো বিলিয়ন। কিন্তু এত মানুষের খাবার জোগাড়ের সাধ্য নেই পৃথিবীর।। বিশেষ করে আমেরিকানদের মত আয়েস করে জীবন কাটাতে চাইলে তা হবে একেবারেই অসম্ভব।’

    গুঞ্জন তুলল শ্রোতারা।

    ‘মনে ভুল ধারণা রাখবেন না,’ বললেন মোবারক, ‘পৃথিবীর প্রতিটি কোণে মানুষ স্বপ্ন দেখে, সে-ও আমেরিকানদের মত ভোগ করবে রাজকীয় জীবন। … আমরা হিসেব কষে দেখেছি, এভাবে বিলাস করতে চাইলে প্রত্যেকের লাগবে বর্তমান পৃথিবীর উৎপাদন ক্ষমতার ছয় গুণ বেশি খাবার, পানি ও ফিউয়েল। কিন্তু এসব দেয়ার সাধ্য আছে এই গ্রহেব? আমেরিকানদের মত ফুর্তি করতে হলে চাই পঞ্চাশ বিলিয়ন মানুষ যে পরিমাণ খরচ করবে, সে পরিমাণ সম্পদ। যা পৃথিবীর নেই!’

    আবারও গুঞ্জন তুলল শ্রোতারা।

    ‘প্রাণী, কীট বা ব্যাকটেরিয়া সংখ্যায় বেশি হলে দেখা দেয় তাদের ভেতর বিপর্যয়… নিজেরাই ধ্বংস করে নিজেদের। আমাদেরও তা-ই হবে। খাবারের অভাবে ধ্বংস হব আমরা।’

    প্যানেলিস্টদের একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি আসলে কী বোঝাতে চাইছেন?’

    ‘পৃথিবী আসলে আমাদের বাড়ি ও খাবারের গোডাউন,‘ ভদ্রলোকের উদ্দেশে বলে আবার শ্রোতাদের দিকে ফিরলেন মোবারক। ‘আরও অনেক বেশি ফসল উৎপাদন করার ভেতর সমাধান লুকিয়ে নেই। আসল কথা, কমিয়ে নিতে হবে আমাদের জনসংখ্যা। যত জলদি আমরা তা করব, ততই কম হবে ক্ষতি। কিন্তু বড়সব ধর্ম বলছে: যত বেশি পারো সন্তান উৎপাদন করো, দলে ভারী হও। একই কথা বলবে আরও অনেকে। কিন্তু সত্যি যখন দেরি হয়ে যাবে, তখন আর ফেরার উপায় থাকবে না। তখনই প্রলয়ের মত খারাপ কিছুর মাধ্যমে হঠাৎ করেই হ্রাস পাবে জনসংখ্যা। খুশি মত সন্তান নেয়ার অধিকার যেসব দেশে আছে, তাদের কথা বাদই যাক, ‘এক সন্তান’ আইন পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারেনি কঠোর চায়না সরকারও।‘

    ক্যামেরা থেকে দূরে অস্বস্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল একজন, ‘আপনি আসলে কী করতে বলছেন?’

    আবারও গলা পরিষ্কার করলেন মোবারক। ‘গবেষণা করে যেমন ফসল উৎপাদন বাড়াতে হবে, ঠিক সেভাবেই কমিয়ে আনতে হবে জনসংখ্যা। যেমন, এমন কোনও ভাইরাস তৈরি করা যেতে পারে, যেটা ছড়িয়ে পড়বে একজন থেকে অন্যের ভেতর। ওটার ভেতর থাকবে জেনেটিক কোডিং। ফলে নির্দিষ্ট সব মানুষের জন্মদানের ক্ষমতা কমবে বা নষ্ট হবে। অথবা কমিয়ে দেবে মানুষের বাঁচার ক্ষমতা। সত্যি যদি বড়জোর পঞ্চাশ বা চল্লিশ বছর বাঁচে কেউ— আগে যেমন ছিল— হুড়মুড় করে বাড়তে পারবে না এত মানুষ। ‘

    ‘কী বললেন?’ চিৎকার করে উঠল এক লোক।

    ‘আপনার কি মাথা খারাপ?’ জানতে চাইল আরেকজন।

    নতুন করে শুরু হয়ে গেছে জোরালো গুঞ্জন।

    ‘দয়া করে মাথা ঠাণ্ডা রাখুন, এটা অ্যাকাডেমিক ডিসকাশন,’ শান্ত স্বরে বললেন মোবারক। ‘ভবিষ্যতে জন্মদান ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া বা আয়ু কমিয়ে দেয়া ছাড়া কোনও উপায় আসলে নেই। হয় গাদাগাদা বাচ্চার জন্ম দেব না আমরা, নয়তো বেছে নেব স্বল্প আয়ু। দুটোর একটা না একটা করতেই হবে। কে কোন্‌টা বেছে নেবে, তা ঠিক করবে মানুষ।

    ভুল জায়গায় অ্যাকাডেমিক তর্কের বিষয় নিয়ে কথা বলছেন মোবারক। শতখানেক গালি আর অনেকগুলো এক পাটি জুতো ছুটে এল তাঁর দিকে।

    ‘মার শালাকে!’ চিৎকার করে উঠল একজন।

    ‘শালা নাযি! ফাঁসি দে!’

    পোডিয়াম থেকে নেমে গেলেন না মোবারক।

    ‘দয়া করে শান্ত হোন, প্লিয,’ বারবার অনুরোধ করতে লাগল মডারেটর।

    চিৎকার তাতে কমল না।

    ‘আপনারা আমেরিকায় বাস করছেন, দেশটা ধনী, জায়গার অভাব নেই,’ বললেন মোবারক। ‘কিন্তু অন্য দেশের কথা ভাবুন। দেখেছেন তৃতীয় বিশ্বের বস্তিতে কীভাবে বাস করে মানুষ? তাদের বাচ্চাদের পোশাক নেই, লক্ষ লক্ষ হাত ভিক্ষা চাইছে, কায়ক্লেশে চলছে জীবন। ওটাই অতিরিক্ত জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া। আপনাদের ফ্রিওয়েতে জ্যাম নেই, রেস্টুরেন্টে লাইন ধরে খেতে হচ্ছে না। কিন্তু আপনাদের দেশের বাইরে কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে আছে। ওরা পিঁপড়ের মত একজন আরেকজনের ঘাড়ে পা রেখে বাঁচার চেষ্টা করছে।’

    এক পাটি জুতো মোবারকের নাকের পাশ দিয়ে গেল। মাথা পিছিয়ে নিয়েও আবার সোজা হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। নিস্পৃহ চোখে দেখলেন শ্রোতাদেরকে। হই-চই এতই বেড়ে গেল, মাইক্রোফোন থাকা সত্ত্বেও কষ্ট হলো তাঁর কণ্ঠ শুনতে।

    ‘আপনাদেরকে বুঝতে হবে কোটা বাস্তব!’ চিৎকার করে বললেন তিনি! ‘আমরা যদি নিজেরা ওই কাজ না করি, ওই কাজ নিজ হাতে তুলে নেবে প্রকৃতি। আর প্রকৃতি সবসময় সবকিছুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণেই রাখে।

    বেশ কয়েকজন এগোচ্ছে মঞ্চে উঠবে বলে। মোবারকের হাত থেকে মাইক্রোফোন প্রায় কেড়ে নিল মডারেটর। শান্ত করতে চাইল সবাইকে। তাতে একটু কাজও হলো। অনেকেই বেরিয়ে যেতে লাগল অডিটোরিয়াম ছেড়ে। কেউ কেউ আঙুল তুলে দেখাচ্ছে ডক্টর মোবারকের দিকে। আরেকদল চিৎকার করে গালি দিচ্ছে। হলরুমে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। কে যেন আছড়ে ফেলল একটা টেবিল। তখনই ফুরিয়ে গেল ডিভিডি ফুটেজ।

    চুপ করে আছে রানা।

    ডক্টর মোবারকের বলা কথাগুলোই লিখেছে কাল্টের চিঠিতে।

    ‘খুব দুঃখজনক,’ নিচু স্বরে রানাকে বলল এলেনা।

    মৃদু মাথা দোলাল রানা। অন্য কথা ভাবছে। ছবিতে ডক্টর মোবারককে কম বয়সী মনে হয়েছে। মসৃণ মুখ। মাথা ভরা চুল। ‘ওই দৃশ্য কত সালের?’ জানতে চাইল ও।

    ‘দু’ হাজার দশ সাল’ বললেন ব্রায়ান। ‘ক্রপ প্রোডাকশন বিষয়ক কনফারেন্স। এরপর থেকে নানান দেশের বেশ কিছু ল্যাবে কাজ করেছেন। আমাদের তথ্য অনুযায়ী, শেষ কাজ কঙ্গোয়। এরপর কোথাও আর বেশি দিন টিকতে পারেননি।’

    সিলিঙের দিকে চেয়ে বড় করে দম নিল রানা। ‘কথা শুনলে মনে হয় পাগল হয়ে গেছেন ডক্টর মোবারক।’

    ‘এসব থেকে কী ভাবব?’ বসের দিকে তাকাল এলেনা।

    ‘বিজ্ঞানীর কমপিউটার থেকে সংগ্রহ করা তথ্য মিস্টার রানার মোবাইল ড্রাইভে আছে, ওসব অ্যানালাইয করছে লাউ আন আর সিডিসি, বললেন ব্রায়ান। ‘জরুরি কিছু পেলেই জানব।’

    ‘কী ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে ওই দল?’ জানতে চাইল এলেনা।

    ‘আগেও অনেক দল নানান হুমকি দিয়েছে,’ বললেন ব্রায়ান। ‘গায়ানায় নিজের নয় শ’ সাগরেদকে সায়ানাইড দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছে জিম জোন্স। কেউ যেন বাঁচতে না পারে, সেজন্যে সে এবং তার দলের কয়েকজন মিলে গুলি করে মেরেছে অনেককে। তাদের ভেতর ছিল এক ইউ.এস. কংগ্রেসম্যান। আইয়ুআম

    আইয়ুআম শিনরিকয়ো কাল্ট টোকিয়োর সাবওয়েতে ছেড়ে দিয়েছে নার্ভ গ্যাস সারিন। খুন হয়েছিল বারোজন। আহত হয়েছিল অন্তত এক হাজার মানুষ।, তার পর পরই জানা গেল আতঙ্কিত হওয়ার মত খবর। পুলিশ রেইড করেছিল কাল্টের গোপন আস্তানায়। আরিষ্কার করা হয়েছিল অ্যানথ্রাক্স আর ইবোলা ভাইরাসের বড় চালান। এ ছাড়া ছিল বিস্ফোরক, ক্যাপটাগনের মত হ্যালুসিনোজেনিক ড্রাগ ও ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর সব কেমিকেল। ওই সাইটে যে পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ ছিল, তাতে সারিন গ্যাস ছেড়ে শেষ করে দিতে পারত চল্লিশ লাখ মানুষকে।’

    ‘জানতাম না ওসবের ভেতর অ্যানথ্রাক্স আর ইবোলা আছে, বলল এলেনা। ‘ব্যবহার করেনি কেন?’

    ‘ভেবেছিল এসব করার মত পরিবেশ তৈরি হয়নি,’ বললেন ব্রায়ান। ‘গুজব শুনেছিল, যে-কোনও সময়ে রেইড করবে পুলিশ, তাই চেষ্টা করে আত্মহত্যা করতে। একই কাজ করেছিল জিম জোন্স। চারপাশে খবর ছড়িয়ে পড়ে, লোকজনকে আটকে রেখেছে তারা। আসলে কী হচ্ছে জানতে গিয়েছিল কংগ্রেসম্যান রায়ান। দলের নেতা যখন বুঝল, যে-কোনও সময়ে ধরা পড়বে, চাইল সবাইকে নিয়ে আত্মহত্যা করতে। এ ধরনের অন্যায় আসলে এভাবেই শেষ হয়।’

    মাথা নাড়লেন ব্রায়ান। ‘অনেকটা শোকো আসাহারার দলের মত এদের কাল্ট। আসাহারা ছিল জাপানিজ কাল্টের নেতা। প্রলয় চেয়েছিল। বুদ্ধের ওপর লেখা কিছু কথা ছিল তার মুখে। বিশ্বাস করত ঠিক বলে গেছে নস্ট্রাডামাস।’

    ‘আরেক উন্মাদ,’ বলল এলেনা।

    ‘সবাইকে যৌক্তিক হতে হবে, এমন কথা নেই,’ বললেন ব্রায়ান। ‘একদল মানুষকে প্রভাবিত করতে পারলেই হলো। এই ধরনের কাল্ট একই ধরনের আচরণ করে।’

    ‘খুন করতে দ্বিধা থাকে না,’ নড করল এলেনা। ‘নির্যাতন শেষে খুন করে খুশি হয়। এদের তুলনায় বায়ো ওয়েপন ব্যবহার করে মানুষ খুন করা তো রীতিমত আর্ট।’

    ‘হয়তো ডক্টর মোবারকের তৈরি বায়ো ওয়েপন এমনই কিছু,’ বললেন ব্রায়ান। ‘ওটা নিঃসন্তান করবে কোটি মানুষকে, বা কমিয়ে দেবে অনেকের আয়ু।’

    মুখ খুলল রানা: ‘যেভাবে হোক ঠেকাতে হবে এসব সাইকোপ্যাথকে।

    রানার চোখে তাকিয়ে আছে এলেনা, মাথা দোলাল। ‘বৈরুতে গিয়ে কী করা উচিত ভাবছ?’

    ‘আবু রশিদ চোরাই শিল্পের ডিলার, আর বৈরুত এসব আর্টিফ্যাক্ট বিক্রির জন্যে বিখ্যাত,’ বলল রানা। ‘কেউ এশিয়া বা আফ্রিকা থেকে ইউরোপে পালাতে চাইলেও ওটাই হবে গোপন পথ। ওখানে কয়েকজনকে চিনি, যারা আমাদেরকে ওই নিলামের ডাকে পৌঁছে দেবে।’

    ‘তারপর কী করবেন?’ জিজ্ঞেস করলেন ব্রায়ান।

    কঠোর হলো রানার কণ্ঠ: ‘অবস্থা বুঝে পরে ব্যবস্থা নেব।’

    ‘ডক্টর মোবারকের গবেষণার জন্যে টাকা জোগাড় করতেই বিক্রি হতো চোরাই আর্টিফ্যাক্ট?’ জানতে চাইল এলেনা। ‘নাকি টাকা জোগাড় করা হচ্ছে ওই কাল্টের জন্যে?’

    ‘মনে হয় না এসব করা হয়েছে,’ বললেন ব্রায়ান, ‘এ ধরনের কোনও লিঙ্ক নেই। কিন্তু মিস্টার রানার মোবাইল হার্ডডিস্কের তথ্য অনুযায়ী, কখনও আর্টিফ্যাক্ট বিক্রেতা ছিলেন না ডক্টর মোবারক। বরং কী যেন কিনতে চেয়েছিলেন। ওটা কী, আমরা জানি না। তোমাদেরই একজনকে জানতে হবে, কেন আগ্রহী হন ডক্টর।

    ‘তার মানে এক সঙ্গে কাজ করব না আমরা?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল এলেনা।

    ‘অপর সূত্র দুবাইয়ে, কাজেই দ্বিতীয়জন যাবে ওখানে,’ বললেন ব্রায়ান, ‘মার্ভেল নামের এক ড্রাগ কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের জন্যে ওখানে সম্মেলন ডাকা হয়েছে। একসময় ওই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ডক্টর মোবারক।’

    বৈরুতে কিছু পাওয়া বা জানা যাবে, তার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, ভাবল রানা। এদিকে বিসিআই চিফ নির্দেশ দিয়েছেন, বৈরুতে না গিয়ে দুবাইয়ে যেতে। ওর উচিত, বিপদ হওয়ার আগেই মোনা মোবারককে সরিয়ে নেয়া।

    ‘বিধ্বস্ত শহর বৈরুত, চারপাশে কালো বাজার, তবুও হাই- টেক বিলাসী, নির্লজ্জ শহর দুবাইয়ের চেয়ে ওই প্রাচীন নগরীতে যেতেই বেশি ভাল লাগবে আমার,’ বলল এলেনা।

    নরম সুরে জিজ্ঞেস করলেন ব্রায়ান, ‘আপনি দুবাই যাবেন, মিস্টার রানা?’

    জবাবে কাঁধ ঝাঁকাল রানা, মনে মনে খুশি।

    ‘আজ একটা কল এসেছিল আপনার ফোনে, ওটা ইন্টারসেপ্ট করা হয়েছে,’ বললেন ব্রায়ান, ‘সরি, এ ছাড়া উপায় ছিল না। ফোন যে করেছে, তার নাম জন গ্রাহাম। আমার ভুল না হয়ে থাকলে, সে আগে ছিল এম.আই.সিক্সের এজেণ্ট।

    ‘ডক্টর মোবারক সম্পর্কে খবর দিয়েছিল ওই বন্ধু,’ বলল  রানা।

    ‘যাকে খুঁজে বের করতে বলেছিলেন, তাকে পেয়েছে সে, বললেন ব্রায়ান। কোলে তুলে নিলেন ল্যাপটপ।

    স্ক্রিনে ফুটে উঠল লেখা। সেই সঙ্গে এল জন গ্রাহামের কণ্ঠ:

    ‘শালা বুড়ো ভাম! মেয়েটাকে পেয়ে গেছি! আগেই বলেছি, তোমার উচিত ছিল ওই মেয়েকে বিয়ে করে ফেলা! সে কী রূপ রে, বাপ! এখন বিরাট ফার্মা কোম্পানি মার্ভেলের সবচেয়ে দামি বিজ্ঞানী! ওরে, শালা, আমার কথা শুনলে দিন-রাত টানতে পারতে সেরা শ্যাম্পেন! যখন-তখন বুলেট খেয়ে মরে যাওয়ারও ভয় থাকত না। কিনে নিতে পারতে সবচেয়ে দামি পোলো ঘোড়া। কিন্তু বলে কী লাভ তোমাকে? তুমি শালা বুড়ো ভাম! যাক গে, ওই মেয়ে আছে দুবাই শহরে। সব তথ্য পাঠিয়ে দিচ্ছি মেসেজ করে। বিপদে কাজে আসব মনে করলে যোগাযোগ কোরো।’

    কথা ফুরিয়ে গেল। এক্স টিপে প্রোগ্রাম বন্ধ করলেন জেমস ব্রায়ান। খুব গম্ভীর। মনেই হলো না জন গ্রাহামের বক্তব্য শুনতে পেয়েছেন।

    আতঙ্কিত ও বিস্মিত সুরে জানতে চাইল এলেনা, ‘রানা, তুমি কি সত্যিই ওই মেয়েকে বিয়ে করবে?

    ‘গ্রাহাম ওভাবেই কথা বলে, ওর ধারণা ওটা রসিকতা, বলল রানা।

    ‘বেশ মজার লোক, কষ্ট করে হাসল এলেনা।

    ‘নিজ যোগ্যতায় জেনেটিসিস্ট হয়েছে মোনা, বললেন ব্রায়ান। ‘মার্ভেল ফার্মার নামকরা বিজ্ঞানী। দুবাই গেছে বক্তৃতা দিয়ে বড় বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করতে। মিস্টার রানা, ওর সঙ্গে দেখা হবে, দেখুন জানতে পারেন কি না আসলে কী জানে সে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন
    Next Article খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }