Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প361 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মৃত্যুঘণ্টা – ৩৩

    তেত্রিশ

    সুযোগ থাকলে বিসিআই-এর কয়েকজন এজেন্টকে সঙ্গে নিত রানা, কিন্তু এ মুহূর্তে সে উপায় নেই। হাতে নেই পর্যাপ্ত সময়। একবার ভেবেছিল, মোনাকে ছাড়াই খুঁজতে যাবে ওই বাগান। কিন্তু স্পষ্ট মানা করে দিয়েছে মেয়েটা। সেক্ষেত্রে গোপন কোনও ইনফর্মেশন দেবে না ওকে। একমাত্র মোনা জানে জীবন-বৃক্ষের রহস্য। বাধ্য হয়েই ওকে সঙ্গে নিতে হয়েছে।

    এনআরআই-এর ছোট এক সেফ হাউসে মিনা ফুফু ও মিনতিকে রেখেছে ওরা। গাড়ি করে মোনাকে নিয়ে ইরাকে  ঢুকেছে রানা, সীমান্তে সামান্য বিরতির পর রওনা হয়েছে সোজা উত্তর দিকে। গন্তব্য: আল কুয়ারনা শহর।

    কিন্তু ওখানে পৌঁছবার একটু আগে নিরালা এক জায়গায় জঙ্গলের ভেতর মিলিত হয়েছে জন গ্রাহামের সঙ্গে। তার পরনে মরুভূমির ক্যামোফ্লেজ ড্রেস। এত স্বল্প সময়ে ওকে ছাড়া সশস্ত্র অন্য কাউকে জোগাড় করতে পারেনি রানা। সংক্ষিপ্ত বিরতির পর আবারও গাড়ি যোগে রওনা হয়েছে ওরা।

    ‘ঠিক আগের মতই, না, রানা?’ বলল গ্রাহাম, ‘সামনের পথে থাকবে বড় সব ঝামেলা।’

    ‘হুঁ,’ বিড়বিড় করল রানা।

    রাস্তা ধরে পাঁচ মাইল যাওয়ার পর একটা ফ্ল্যাটবেড ট্রাকের পাশে থামল ওরা। বড়সড় গাড়িটার পেছনে তারপুলিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে কী যেন। ক্যাবের পাশে সুন্দরী এক মেয়ে।

    ‘হুরপরী কোত্থেকে?’ রানার কাছে জানতে চাইল গ্রাহাম।

    ‘বান্ধবী,’ জানাল রানা।

    গাড়ি থেকে নেমে পড়ল ওরা। এলেনার সঙ্গে মোনা ও গ্রাহামের পরিচয় করিয়ে দিতে চাইল রানা, কিন্তু তার আগেই গ্রাহামকে পাত্তা না দিয়ে মোনার দিকে হাত বাড়াল এলেনা। ‘এলেনা রবার্টসন, চাকরি করি ন্যাশনাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটে।’

    ‘উনি আমেরিকান সরকারের হয়ে কাজ করেন?’ দ্বিধা নিয়ে রানাকে দেখল মোনা। কণ্ঠ শুনে মনে হলো, বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে ওর সঙ্গে।

    ‘তা-ই করে, এ মিশন সফল করতে ওর সাহায্য লাগবে,’ বলল রানা।

    ‘আসলে কী চান?’ সরাসরি এলেনার চোখে তাকাল মোনা।

    ‘আপনি যা চাইছেন, ওই একই জিনিস,’ বলল এলেনা, ‘ওই গাছের বীজ চাই, যাতে ঠেকাতে পারি কাল্টের লোকগুলোকে।’

    ‘তার মানে, প্রথম সুযোগে সব কেড়ে নেবেন,’ খুব গম্ভীর হয়ে গেছে মোনা।

    ‘তা করব না,’ সহজ স্বরে বলল এলেনা। ‘এক সঙ্গে কাজ করব আমরা। বলা যায় না, পরে আপনার এক্সপেরিমেন্টের জন্যে টাকাও জোগান দিতে পারে এনআরআই। আপনার বোনের চিকিৎসার জন্যে যা করার করবেন, তাতে কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু তার আগে, নষ্ট বা পাল্টে দেবেন বাহক ভাইরাস, যাতে শুরু না হয় মহামারী।’

    আশ্বস্ত করা হলেও দ্বিধার ভেতর আছে মোনা। রানাকে বলল, ‘সত্যি কি এদের দু’জনকে বিশ্বাস করতে পারি?’

    ‘কোনও ক্ষতি তো দেখছি না,’ বলল রানা, ‘ওরা আমার পুরনো বন্ধু।’

    এলেনাকে বলল মোনা, ‘ঠিক আছে, রানা আপনাদেরকে রিশ্বাস করছে, আমারও বিশ্বাস করাই উচিত।’ রানার বাহুতে হাত রাখল ও।

    রানা দেখল, ফ্যাকাসে লাগছে এলেনার মুখ। নানা অনুভূতির ঝড় এনআরআই এজেন্টের চোখে-মুখে। মিশন সফল করাই মূল কাজ, ভাবল ও।

    এবার গ্রাহামের সঙ্গে হাত মেলাল এলেনা।

    তাতে চওড়া হাসি দিল গ্রাহাম। ‘শুনেছি রানার খুব ভাল বন্ধু আপনি।’

    চট করে একবার রানাকে দেখল মোনা।

    ‘হ্যাঁ, দু’জনেই ভাল বন্ধু।’

    গম্ভীর চেহারায় ট্রাকের পেছন দিকে চলে গেল এলেনা। মুচকি হাসল গ্রাহাম। ‘এর বুক পাথর দিয়ে তৈরি, রানা!’

    ‘উঠে পড়ো ট্রাকের ক্যাবে,’ দরজা খুলে বন্ধুকে তাড়া দিল রানা।

    মোনা ও গ্রাহাম ক্যাবে ওঠার পর ট্রাকের পেছনে এলেনার সঙ্গে দেখা করল রানা।

    ‘খুব সুন্দরী, তা-ই না. রানা?’ গম্ভীর চোখে রানাকে দেখল এলেনা।

    ‘তুমি, না ও? কার কথা জানতে চাও?’ আকাশ থেকে পড়ল রানা।

    ‘সুন্দরী বলল, ‘ঠিক আছে, রানা আপনাদেরকে বিশ্বাস করছে, আমারও বিশ্বাস করাই উচিত।’ এসব শুনে অস্বস্তি লাগছে আমার!’

    ‘অস্বস্তিটা আপাতত সহ্য করো।’ বলল রানা। উঠে পড়ল ফ্ল্যাটবেড ট্রাকের পেছনটা সরিয়ে দেখল তারপুলিন। নিচে বসে আছে এয়ারবোট। এসব জিনিস ব্যবহার করা হয় এভারগ্লেড-এ ‘জিনিসটা নতুন মনে হচ্ছে। অস্ত্র জোগাড় হয়েছে?’

    মাথার ইশারা করে __ দেখাল এলেনা। উঠে এল রানার পাশে। লকার খুলল। এখানে এআর-১৫ এস, ওগুলোর দুটোর নলের নিচে গ্রেনেড লঞ্চার আর রাইফেলের বামে রাখা বড় এক বাক্স ম্যাগাযিন।

    ‘অন্য দুই রাইফেল চলতে পাবব ট্রাইপডে,’ বোটের সামনের দিকে মাউন্ট দেখাল এলেনা।

    ‘আর কিছু?’

    ‘বডি আর্মার। রেইডার-আবসবেন্ট কোটিং দেয়া বোট প্রয়োজনে তৈরি করতে পারব প্রচুর ধোঁয়া।’

    যাওয়ার পথে ইরানিয়ান আর্মির সঙ্গে দেখা হলে শুধু ধোঁয়া দিয়ে কাজ হবে না। তারা ফেলবে গোলা।

    ‘আমরা ঢুকব জলার উনিশ মাইল ভেতরে, শেষ আট মাইল ইরানের ওদিকে,’ বলল এলেনা। ‘ওখান থেকে শক্ত জমিতে উঠে আরও পাঁচ মাইল। ওই এলাকা পরিত্যক্ত। তিন ঘণ্টা আগে ওদিক দিয়ে গেছে স্যাটালাইট। কেউ নেই।’

    পশ্চিমে তাকাল রানা। ডুবি-ডুবি করছে সূর্য। আঁধার নামলে রওনা হবে ওরা।

    ‘কাজটা সহজ মনে হচ্ছে?’ জানতে চাইল এলেনা।

    ‘শত্রুপক্ষ না থাকলে বিপদ হবে কেন?’ পাল্টা প্রশ্ন তুলল রানা।

    ‘কিন্তু তারা যদি হাজির হয়?’

    ‘তখন লুকিয়ে পড়ব তোমার আঁচলের আড়ালে,’ হাসল রানা।

    ‘আমার আঁচল, না মোনার?’

    ‘কাছে যে থাকে!’

    আরও গম্ভীর হয়ে গেল এলেনা।

    .

    হাওইয়েহ মার্শের পানির খুব কাছে ফ্ল্যাটবেড ট্রাক নিয়ে গেল রানা। ইরান-ইরাকের সীমান্ত জুড়ে বিশাল বিস্তৃত এই জলাভূমি।

    আগেই বোটে উঠেছে এলেনা, পরীক্ষা করছে সব সিস্টেম কাজ শেষ হলে হাতের ইশারা করল রানা, গ্রাহাম ও মোনার উদ্দেশে। পরের মিনিটে বোট বেঁধে রাখা সব স্ট্যাপ খুলে ফেললা ওরা। এয়ারবোট নামিয়ে দেয়া হলো অগভীর জলে।

    ট্রাক নিয়ে জঙ্গলে রাখল গ্রাহাম।

    আবার সবাই জড় হতে বলল রানা, ‘সবাই তৈরি তো?’

    মাথা দোলাল এলেনা, গ্রাহাম ও মোনা।

    উঠে পড়ল ওরা বোটে। সেকেণ্ডারি মোটর চালু করল এলেনা। নীরবে চলবে ইলেকট্রিক ইমপেলার। বোটের সামনের ওই ইঞ্জিন পানি টেনে নিয়ে বের করে দেবে পেছনের সরু নালা দিয়ে। প্রায় নিঃশব্দ, কিন্তু গতি অনেক কম। এই মোটর ব্যবহার করে বড়জোর সাত নট বেগে চলতে পারবে ওরা। ফলে পুরো  তিন ঘণ্টা লাগবে জলাভূমি পেরোতে।

    বড় কোনও বিপদে তুমুল গতি তুলে ইরাকি সীমান্তে ফিরতে হলে, ব্যবহার করবে বিশাল এয়ারফ্যান। মাত্র কয়েক সেকেণ্ডে ওটা গতি তুলবে পঞ্চাশ নটে। একটাই সমস্যা, চট্ করে ঘুরিয়ে নেয়া যায় না বোট।

    আপাতত নীরবে আঁধার ভেদ করে চলেছে ওরা। এই এলাকা একসময়ে ছিল দুই দেশের যুদ্ধক্ষেত্র।

    জলাভূমি সীমান্তে, তাই একবার ইরানিয়ান ফোর্সকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সামনে বেড়ে ইরাকে হামলা করতে। আর্মির বেশিরভাগই ছিল নিরস্ত্র ভবঘুরে ধরনের লোক। তাদের ব্যবহার করা হয় কামানের গোলা ঠেকাতে। পেছনে ছিল সত্যিকারের সশস্ত্র আর্মি।

    সেই সময়ে এই ধরনের হামলা হবে ধারণা করে জলাভূমির এদিকে আমেরিকার সাহায্য নিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয় সাদ্দাম হোসেন। ফলে খুন হয়েছিল কয়েক হাজার ইরানিয়ান। এ মুহূর্তে নেই সেই ভয়ঙ্কর পরিবেশ, তবুও কেমন ভারী হয়ে এল রানার বুক।

    ‘প্রফেসর বার্ডম্যান কী ভাবছেন?’ এলেনার কাছে জানতে চাইল। ‘উনি খুশি যে আমাদের সঙ্গে আসতে হয়নি?’

    মৃদু হেসে নিচু স্বরে জানাল এলেনা, ‘ওই তাম্রলিপির ফোটোগ্রাফ দেখে প্রফেসর জেনেছেন, আগে পৃথিবীতে বেশ কয়েকটা এরকম বাগান ছিল। চারদিকে থাকত খাল, মাঝে দ্বীপ। কয়েক হাজার বছর আগে শুকিয়ে যেতে লাগল মিডল ইস্ট। তখন টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস নদী থেকে খাল কেটে রক্ষা করা হয়েছিল ইডিন বাগান। প্রাচীন ওই সময়ে সবাই ধারণা করত, এসব খালের কারণে বেঁচে গেছে জীবন-বৃক্ষ।’

    ‘অসম্ভব নয়, এলেনার কথা শুনে বলল মোনা। ‘আমার বাবা গবেষণা করে জেনেছিলেন, প্রায় প্রতিটি সভ্যতায় এমন কিছু গাছ ছিল, যেগুলো অনেক বাড়িয়ে দিত আয়ু। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানান কারণে বিলুপ্ত হয়েছে সেসব গাছ।’

    ‘তো সাত হাজার বছর ধরে বাগান শুকিয়ে আছে, গাছ পাব কোথায়?’ জানতে চাইল গ্রাহাম।

    স্যাটালাইট ছবি দেখছে রানা। জবাব জানা আছে ওর। কিন্তু আগে মুখ খুলল মোনা, ‘ভাল পরিবেশ পেলে হাজার হাজার বছর রয়ে যায় ওসব বীজ। গরম, খরা, শীত, গ্রীষ্ম, অগ্ন্যুৎপাত সবই সহ্য করে। কমপিউটারের প্রায় ঘুমন্ত প্রোগ্রামের মত। সঠিক সময় বা পরিবেশ পেলেই জেগে ওঠে।’

    ‘সেই পরিবেশটা কী ছিল?’ জানতে চাইল গ্রাহাম।

    ‘ঠিক তাপ ও পানি পেলেই জন্ম নিত গাছ,’ বলল মোনা।

    ‘তাই বলে সাত হাজার বছর পরও?’

    ‘হ্যাঁ, পরেও,’ বলল মোনা, ‘দরকার সঠিক তাপ ও পানি। আমাদের অবশ্য বীজ থেকে গাছ জন্মাতে হবে না। একটা বীজ পেলেই হবে। ওটার ভেতর রয়ে যাওয়ার কথা ভাইরাস।’

    ‘এখনও থাকবে ভাইরাস?’ জানতে চাইল এলেনা।

    ‘নানাদিক থেকে কঠিন হয় ভাইরাসের জীবন,’ বলল মোনা। ‘আসলে ওটা কয়েক ধরনের মিশ্রণে তৈরি কেমিকেল ছাড়া কিছুই নয়, হঠাৎ ভাল সেল বা কোষ পেলেই বহু কালের জন্যে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার জেগে উঠবে সঠিক সময়ে।’

    ‘খাবার লাগে না?’ অবাক হয়ে জানতে চাইল গ্রাহাম। ওর আধখানা পাকস্থলিরও খাবারের ব্যাপারে আগ্রহ খুব বেশি।

    ‘না,’ মাথা নাড়ল মোনা, ‘খাবার চাই না ওদের। তাপ উৎপাদন করে না, তাই থাকে না কোনও সেলিউলার প্রক্রিয়া।’

    ‘বাঁচে কী করে?’ অবাক হয়েছে গ্রাহাম। ‘আমি হলে তো…’

    ‘বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ ভাবেন, ওরা বেঁচে নেই। বড়জোর  র‍্যাম কোডিং। ঘুরে বেড়াচ্ছে দুনিয়া জুড়ে। ঠিক ধরনের কোষ পেলেই অনড় পাথরের মত চেপে বসে তার ভেতর।’

    ‘তার মানে, ওই বীজের সেই ভাইরাস আজও থাকতে পারে, যদিও এখন নেই সেই গাছ বা ফল,’ বলল এলেনা।

    মৃদু মাথা দোলাল মোনা। ‘একবার ওটা পেলে ডিএনএ নিয়ে ক্লোন করব। খুব সহজ জিনিস ভাইরাস। চব্বিশ ঘণ্টার ভেতর ক্লোন করতে পারব জীবন-বৃক্ষের ফল বা বীজ। আর লাগবে না ওই গাছ। ভেবেও রেখেছি, কী ধরনের সিরাম তৈরি করব।’

    রানাকে ভালবাসে বলে এই মেয়েকে হিংসে হচ্ছে, কিন্তু মনে মনে স্বীকার করল এলেনা: যা-তা কথা নয়, এ এমন কাজ জানে, যেটা বেশিরভাগ মানুষ পারবে না।

    ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই ফসিলাইযড় গাছ বা জন্তু থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করছি আমরা। সঠিকভাবে কাদার ভেতর বীজ থাকলে ধরে নেয়া যায়, ওটা অক্ষতই আছে,’ বলল মোনা।

    ‘তার মানে কাদা ঘেঁটে বীজ খুঁজতে হবে?’ বলল গ্রাহাম।

    মোনা জবাব দেবার আগেই এলেনার মিলিটারি গ্রেড স্ক্যানারে ভেসে এল দু’জনের কথা। ভাষাটা ফার্সি

    রানা ছাড়া অন্য সবাই হয়ে গেল আড়ষ্ট, ভাবল, এবার যখন- তখন ‘ ধরা পড়বে ইরানিয়ান আর্মির হাতে। বিপদ হবে হেলিকপ্টার এলে। অনেক দূর থেকেই দেখবে, হাজির হবে এয়ারবোটের আকাশে।

    এজন্যেই আনা হয়েছে স্ক্যানার। শোনা হবে রেঞ্জের ভেতরের সব এয়ার ইউনিটের কথা।

    এতই অস্পষ্ট, বক্তব্য বুঝল না রানা।

    ওখানে উড়ছে হেলিকপ্টার।

    আরও কয়েক সেকেণ্ড পর বামে দেখাল ও। ‘ঠিক আছে, বিপদ হবে না। দূরের এয়ারলাইন ট্রাফিক।’

    রানার আঙুল লক্ষ করে দূরে দেখল এলেনা। ক’মাইল দূরে অন্তত বিশ হাজার ফুট ওপরে টিপটিপ করছে এয়ারলাইনারের লাল বাতি। নীরবে আকাশ চিরে চলেছে দক্ষিণ-পুবে।

    দ্বিতীয় ডিভাইস দেখছে রানা। রেইডার ওয়ার্নিং রিসিভার বা আরডাব্লিউআর-এর পর্দা একদম সবুজ। আশপাশে কেউ নেই।

    এলেনার দিকে ফিরল মোনা। ‘রানা থাকলে কেমন একটা নিরাপত্তার ভাব তৈরি হয় মনে, তা-ই না?’

    সর্বনাশ! ভাবল এলেনা। ওর মন থেকে মুছে গেল মোনার জন্যে তৈরি শ্রদ্ধাবোধ। বিড়বিড় করল, ‘তা-ই তো মনে হচ্ছে!’

    আরও কিছুক্ষণ পর অদ্ভুত দৃশ্য দেখল ওরা। দূরে পানির দিকে ঝুঁকে এসেছে কুয়োনসেট কুঁড়ে। জলাভূমির মাঝে একটা দ্বীপে। কিন্তু আরও কাছে যাওয়ার পর বোঝা গেল, ওই কুঁড়ে আসলে নলখাগড়া দিয়ে তৈরি।

    ব্রিফিঙের সময় এসব কুঁড়ের কথা আগেই বলেছে এলেনা। বেদুঈনদের মতই, কিন্তু মরুভূমির বালিতে না থেকে এসব আস্তানা তৈরি করে বাস করত জলাভূমির আরবরা। আজকাল তাদেরকে খুঁজেই পাওয়া যায় না।

    ‘মুধিফ,’ বলল রানা, ‘একসময় এখানে জড় হয়ে আলাপ বা আলোচনা করত সবাই।’

    ‘এদের কী হয়েছে যে এখন আর আসে না?’ জানতে চাইল গ্রাহাম।

    ‘এরা সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে আবারও এসে লুকিয়ে পড়ত জলায়,’ বলল রানা, ‘কিন্তু জলাভূমির বেশিরভাগ এলাকা শুকিয়ে ফেলল মার্কিন মদদপুষ্ট ইরাকি সরকার। নদীর এদিকের সব খাল বন্ধ করে দেয়ায় চারপাশ হয়ে গেল মরুভূমি। এরপর আর কোথাও লুকাবার জায়গা থাকল না তাদের।’

    মুধিফের দিকে তাকাল ওরা।

    এইমাত্র ওটাকে পাশ কাটিয়ে এল।

    মাটির দ্বীপ নয়, জলার ভেতর কাদা ও ঘাসে তৈরি মানুষের বাড়ি বা দ্বীপ। প্রচণ্ড পরিশ্রম দিয়ে তৈরি করেছিল অনেকে মিলে। আকারে বড় একটা বাসের সমান। নলখাগড়া দিয়ে বুনন করা। তবে অযত্নে খসে আসছে সব। পরিত্যক্ত, কেউ আসে না এখানে।

    ‘আজ থেকে এক শ’ বছর আগে এখানে বাস করত কমপক্ষে একলাখ আরব,’ বলল রানা, ‘এখন আছে সবমিলে এক হাজার। ছড়িয়ে পড়েছে জলাভূমির চারপাশে।’

    ‘আহা রে,’ কেন যেন দুঃখ লাগছে গ্রাহামের।

    ‘আসলে যুদ্ধ শেষ করে দেয় সব,’ বলল রানা।

    সায় দিল এলেনা, ‘প্রফেসর বার্ডম্যান বলেছেন, এরা ছিল সুমেরিয়ানদের বংশধর। আজ থেকে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে তাদের সভ্যতা ছিল ‘আর’ ও ‘আরাক’ শহরে। তাদের ভাষা অনুযায়ী এই এলাকা খোলা প্রান্তর বা ইডিন।

    ‘ওল্ড টেস্টামেন্টে আছে: একটি বাগানে ছিল জীবন রক্ষা করে এমন এক গাছ। আবার ওই একই কাহিনি আছে অন্যান্য সভ্যতার সাহিত্যে। এসব ফল খেলে মরতে হতো না কাউকে। ইরাকে আর মিশরে ছিল এমন বেশ কয়েকটা বাগান। ওই ফল খেতেন বলে কয়েকজন ফেরাউন বেঁচে ছিলেন নব্বুই বছরেরও বেশি। অথচ, সে সময়ে মানুষের গড় আয়ু ছিল বড়জোর সাতাশ বছর। গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল, রা-র মরূদ্যানে আছে অদ্ভুত এক ফলের গাছ,’ ওটার ফল খেলে অমর হওয়া যেত। ওই গাছ ফেরাউনকে উপহার দিয়েছিলেন সুমার রাজা।

    ‘ওটা ছিল তেঁতুল গাছ বা টক ধরনের ফলের গাছ। ওই জিনিস খুঁজতে গিয়েই নাকি প্রায় পুরো পৃথিবী ছুঁড়ে ফেলেছিলেন সম্রাট আলেক্যাণ্ডার। ব্যর্থ হলেন বলেই মাত্র তিরিশ বছর বয়সে মরতে হলো তাঁকে। ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর মৃত্যুর পর তাকে জীবিত করতে গিয়ে একটা খালে ডুব দেন সুমেরিয়ান দেবতা-রাজা গিলগামেশ। অগভীর পানিতে পান অমৃত। কিন্তু কোথা থেকে এসে ওটা চুরি করে নিয়ে গেল এক সরীসৃপ।

    তিনঘণ্টায় জলাভূমি পেরিয়ে গেল ওরা। কাদার তীরে থামল ওদের এয়ারবোট।

    রানা ও গ্রাহাম মিলে তীরে তুলল দুটো এটিভি (অল টেরেইন ভেহিকেল)। ওই একই সময়ে দরকারি ইকুইপমেন্ট জড় করল এলেনা। সেগুলোর ভেতর রয়েছে প্রফেসর বার্ডম্যানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রোগ্রাম করা দুটো জিপিএস রিসিভার। এ ছাড়া, দুটো নাইট ভিশন গগল্স, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট, গ্লাভ্স্‌, অস্ত্র ইত্যাদি। প্রত্যেকের জন্যে আনা হয়েছে একটা করে পিস্তল। এ ছাড়া, রানা ও এলেনা সঙ্গে নেবে রাইফেল।

    এলেনা বেরেটা পিস্তল দিতে যাওয়ায় মোনা বলল, ‘লাগবে না। আমার সঙ্গে আছে।’

    কথাটা শুনে অবাক হলো না কেউ। কয়েক বছর ধরে বিপদে আছে মেয়েটা। নিজের সঙ্গে অস্ত্র না রাখাই অস্বাভাবিক। লকারে বেরেটা রেখে দিল এলেনা। ঘুরে দেখল গ্রাহামকে। সে আবার উঠে পড়েছে এয়ারবোটে।

    ‘আপনি আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেন না?’

    ‘না, ওস্তাদের মানা আছে।’ মাথা নাড়ল গ্রাহাম। ‘এখানেই বসে থাকব। কেউ বোট চুরি করতে এলে তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলব।’

    রানার হাতে দ্বিতীয় নাইট ভিশন গগল্স্ দিল এলেনা। একটু লজ্জিত সুরে বলল, ‘সরি, রানা, তোমার বান্ধবীর জন্যে নেই। ‘

    ‘অসুবিধে নেই,’ বলল মোনা।

    ‘রানার পেছনের সিটে বসবে,’ বলল এলেনা।

    বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরল ওরা। এটিভিতে উঠে চালু করল ইঞ্জিন। ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে দেখা গেল আবছা সবুজ আলো। প্রায় কোনও আওয়াজ তুলছে না চার হুইলের ইলেকট্রিক গাড়ি।

    ‘হেডলাইট অফ রাখবে,’ এলেনাকে বলল রানা। ‘নক্ষত্রের আলোই যথেষ্ট।’ পেছনের সিটে বসেছে মোনা।

    রানার এটিভির পিছু নিয়ে রওনা হলো এলেনা।

    আঁধার চিরে নীরবে ছুটে চলেছে গাড়ি। মরুভূমির কোনও আওয়াজ নেই। তবে খুব খেয়াল করলে শোনা যাচ্ছে ইলেকট্রিক কিরকির শব্দ। কখনও কখনও চাকা ও ঝিরঝিরে হাওয়ার কারণে আওয়াজ হচ্ছে। যে কারও মনে হবে, রাতের আঁধারে উড়ে চলেছে কোথায় যেন।

    সামনে চোখ রেখেছে রানা, একটু পর পর দেখছে জিপিএস। একবার সামান্য বদলে নিল কোর্স, তারপর আবারও বাড়াল গতি। পনেরো মিনিট পর পেছনে পড়ল কাদাটে জমি। শুরু হলো বালির উঁচু-নিচু সব ঢিবি, যেন মস্ত কোনও সাগরের ঢেউ।

    বালির মেঝে পাওয়ার পর মসৃণ পথে চলল ওরা, অবশ্য একটু কমে গেল স্পিড।

    একের পর এক ঢিবি পেরোবার পর এল চওড়া বিস্তৃত জমিন। শুকিয়ে যাওয়া নদীর বুক চিরে চলেছে ওরা। একসময় এদিকে ছিল বেশ কয়েকটা খাল। আরও এক মাইল যাওয়ার পর একটা খাদের ভেতর থেকে উঠে এল রানা। জিপিএস অনুযায়ী যেতে হবে তিন মাইল দূরে।

    এটিভির ওয়ার্নিং রিসিভার জানিয়ে চলেছে আশপাশে কেউ নেই। মনে মনে বলল রানা, ‘আপাতত সব ঠিক আছে।’ গাড়ির গতি আরও বাড়াল। সামনে থাকবে দ্বীপের মত এক জায়গা।

    আরও কিছুক্ষণ পর বামে শুকিয়ে যাওয়া এক গাছ দেখল। নদীখাতের দেয়াল বালির, কখনও তাতে মিশে আছে পাথরকুচি। মাঝে মাঝে বড়সব পাথর খণ্ড। সেজন্যই বোঝা গেল, একসময় এদিকে ছিল খাল, দু’পাড়ে পাথুরে দেয়াল।

    বামের দেয়ালের পাশ দিয়ে গিয়ে আবারও বাঁক নিল রানা, তারপর হঠাৎ করেই পৌঁছে গেল গন্তব্যে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন
    Next Article খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }