Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প414 Mins Read0

    মহাপ্লাবন – ২৫

    পঁচিশ

    ‘দড়ির আরেক মাথা ওর হাতের কাছে ফেলো,’ বলল রানা।

    ওর পাশে ক্যাটওঅকে দাঁড়িয়ে আছে হিনা ও গোখারো নাগিনো। এইমাত্র নিভিয়ে দেয়া হয়েছে নিচে তাক করা সব বাতি। মৃদু বাতি জ্বলছে ওপরের ক্যাটওঅকে।

    রেলিঙে বেঁধে নেয়া হয়েছে দড়ির একমাথা, অন্য অংশ সরাসরি সোহেলের পাশে ফেলল হিনা। ‘দেখতে পাবেন কি না কে জানে! মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। খুব জোরে আছাড় খেয়েছেন।’

    রানা দেখেছে, চোখের কাছে কয়েন নিয়েছে সোহেল। দুই-এ-দুই মেলাতে দেরি হবে না ওর।

    ‘ওই লোক উঠলেই অ্যান্টিডোট দেবেন,’ কাঁপা গলায় বলল নাগিনো।

    ‘ক্লাব থেকে বেরোবার আগে না,’ বলল রানা।

    টানটান হলো দড়ি। দুটো ঝাঁকি খেল ওটা। সোহেল জানিয়ে দিয়েছে, ও তৈরি।

    ‘এবার টেনে তুলতে হবে,’ বলল রানা।

    তিনজন মিলে হাত লাগাল ওরা। একেকবারে একফুট করে উঠছে সোহেল। মেঝে থেকে বহু ওপরে ক্যাটওঅক। রানা বুঝল, মাঝে বিশ্রাম নিতে হবে, তাতে অন্তত দু’মিনিট লাগবে সোহেলকে তুলতে।

    অর্ধেক দড়ি তোলার পর থেমে গেল নাগিনো। এক হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ক্যাটওঅকে। দু’হাতে চেপে ধরল বুক। ঘামছে দরদর করে। ‘ওই অ্যান্টিডোট না দিলে মরে যাব!’

    ‘দড়ি টেনে তোলো!’ ধমক দিল রানা।

    ‘বড়ি না দিলে আর পারব না। মরে যাচ্ছি!’

    তিনজনের কাজ করছে হিনা আর রানা মিলে।

    ‘আমার বন্ধু উঠলেই বড়ি পাবে, হাত লাগাও!’ তাড়া দিল রানা।

    কিন্তু পাগল হয়ে উঠল জাপানি ডাকাত। খামচে ধরল রানার কলার, বামহাত ভরল ওর পকেটে। বড়ি এখনই চাই। কাত হয়ে রেলিঙে পড়ল ওরা দু’জন। হাত থেকে দু’ফুট দড়ি বেরিয়ে গেল রানার। নেমে যাচ্ছে সোহেল। প্রাণপণে আবারও দড়ি ধরল ও। ওকে সাহায্য করতে চাইছে হিনা।

    ‘অ্যান্টিডোট!’ প্রাণপণে চেঁচাল নাগিনো।

    জবাব না দিয়ে বামহাতের ধাক্কায় তাকে সরাল রানা। পরক্ষণে বুকে জড়িয়ে নিল দুই পাক দড়ি। পাছায় কষে লাথি মেরে ফেলতে চাইল ওকে ক্যাটওঅক থেকে। কিন্তু প্রাণের ভয়ে রেলিঙে পা বাধিয়ে নিয়েছে দস্যু। রানা ভেবেছিল তার ওজনে সরসর করে উঠবে সোহেল। কিন্তু মাঝপথে আটকা পড়েছে ওর বন্ধু।

    ওপরের আলোয় পকেট থেকে কমলা ট্যাবলেট বের করল রানা। ‘এই যে, তুমি এগুলো চাইছ।’

    ‘প্লিয, দাও,’ কাতর সুরে বলল নাগিনো।

    ‘তার আগে একটা প্রশ্ন,’ বলল রানা। ‘ওরে চিচিওয়াকে টাকা দিয়েছে কে?’

    ‘এসব কী বলছ?’

    এক পা পিছিয়ে গেল রানা। ভাব দেখে মনে হলো ট্যাবলেট ছুঁড়ে ফেলবে নিচের অন্ধকারে।

    ‘একমিনিট!’ অনুনয় করল নাগিনো, ‘টাকা দিয়েছে হুয়াং।’

    ‘পুরো নাম কী?’

    ‘লো হুয়াং লিটন।’

    ‘সে কি ইয়াকুযা?’

    ‘না,’ মাথা নাড়ল নাগিনো, ‘চাইনি ব্যবসায়ী। অনেক বড়লোক।’

    সময় নেই, তবুও জিজ্ঞেস করল রানা, ‘ব্যবসায়ী কেন ভাড়া করছে খুনিকে?’

    ‘জানি না।’

    সোহেলের দিকের দড়ি টানতে শুরু করল রানা। ‘সত্যি বলো। নইলে পোঁদে এক লাথ্ মেরে নিচে ফেলব।’

    ‘সত্যিই বলছি, কিরে!’ হাউমাউ করে উঠল নাগিনো। —ভাই আমার… লক্ষ্মী ভাই… আমার ট্যাবলেট?’

    অনেক নিচ থেকে ফ্ল্যাশলাইটের আলো মারছে গার্ডরা। বুঝতে চাইছে, কেন হঠাৎ নিভল ফ্লাডলাইট। সওয়াল জবাবের সময় নেই আর। রেলিঙের বাইরে হাত নিয়ে ট্যাবলেট ফেলল রানা। ‘এরিনায় পাবে সব। রওনা হয়ে যাও নিচে।’

    পরক্ষণে জাপানি ডাকুর পাছায় মাঝারি এক লাথি বসিয়ে দিল রানা। দড়ির মধ্যে জড়িয়ে নেমে চলেছে ভারী লোকটা। এদিকে উঠে আসছে সোহেল। থ্যাপ আওয়াজ তুলে এরিনার মেঝেতে নামল নাগিনো। ব্যস্ত হয়ে উঠল দড়ি থেকে ছুটতে। তার চাই কমলা সব ট্যাবলেট।

    ওদিকে সোহেলকে ধরে ক্যাটওঅকে তুলে নিল রানা ও হিনা।

    ‘আমি কি ঠিক দেখেছি, না ভুল?’ বলল সোহেল, ‘সাঁই সাঁই করে নেমে গেল হোঁৎকা এক লোক?’

    ‘নরকের কীট,’ বলল রানা। ‘পৃথিবীতে নেমেছে।’

    ‘কিন্তু ওই নরকের কীট ছিল বেরোবার টিকেট,’ দুঃখিত স্বরে বলল হিনা।

    চোখ পিটপিট করল সোহেল। ‘নিচের ওই কিংকং মাথায় জোরে বাড়ি দিয়েছে। নইলে তুমি এখানে কেন, হিনা?’

    ‘পরে সব বলব,’ জানাল রানা। ‘এবার অন্যদিকে সরাতে হবে সবার চোখ। দে তোর বামের ওই এক্সটিংগুইশার।’

    লাল ট্যাঙ্ক তুলে রানার হাতে দিল সোহেল। জিনিসটা ড্রাই কেমিকেলের আগুন নির্বাপক। কটার পিন খুলে হ্যাণ্ডেলে চাপ দিয়ে ক্যাটওঅক থেকে ওটা ফেলল রানা। ওদের মনে হলো স্লো মোশনে রওনা হয়েছে জিনিসটা। মুখ থেকে বেরোচ্ছে সাদা ধোঁয়ার মত ভেপার। এরিনার মেঝেতে পড়ে বোমার মত আওয়াজ তুলল লাল সিলিণ্ডার।

    ‘আগুন!’ জাপানি ভাষায় তীক্ষ্ণ চিৎকার ছাড়ল হিনা। ‘আগুন!’

    ঘন ভেপারের মাঝে উন্মত্ত হয়ে উঠল কিছু ফ্ল্যাশলাইট। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়ার মত কেমিকেল। ভীষণ ভয়ে বিশৃঙ্খল হলো দর্শকরা। হৈ-চৈ, ধাক্কা-ধাক্কি করে নানাদিকের দরজার দিকে ছুটল তারা।

    ‘এবার, চল,’ তাড়া দিল রানা।

    ক্যাটওঅক শেষে অ্যাকসেস ডোর দিয়ে মেইনটেন্যান্স টানেলের ওয়াই আকৃতির জাংশনে পৌঁছল ওরা। বামে বাঁক নিয়ে পৌছল আরেকটা দরজার সামনে। ওটা খুলতেই বেরিয়ে এল রাতের অন্ধকারে।

    এদিকে জ্বেলে দেয়া হয়েছে ক্লাবের প্রতিটি বাতি। নানাদিকের দরজা দিয়ে ছিটকে বেরোচ্ছে লোকজন। এরই ভেতর মেইন গেটের দিকে রওনা হয়েছে কয়েকটা গাড়ি।

    ‘তুমি কি গাড়ি এনেছ?’ হিনার কাছে জানতে চাইল রানা।

    ‘না, তবে চুরি করতে পারব।’

    মেইন গেটের দিকে তাকাল রানা। হুলুস্থুল চলছে ওদিকে। রাস্তা আটকে দিয়েছে গার্ডরা।

    ‘ওদিকে যাওয়া যাবে না,’ বলল রানা। ‘প্রতিটা গাড়ি চেক করে তারপর ছাড়বে। গোপনে বেরোতে হবে এখান থেকে। এসো। চল্, সোহেল!

    ক্লাব ভবন থেকে সরে অন্ধকার বাগানে ঢুকল ওরা।

    ‘এদিকে ক্যামেরা থাকলে ধরা পড়ব,’ বলল সোহেল।

    ‘সিকিউরিটি অফিসে ক্যামেরা স্ক্রিনে চোখ রাখার মত কেউ নেই,’ বলল রানা, ‘তবুও দেরি না করে দেয়াল টপকে বেরিয়ে যাব আমরা।’

    ‘তারপর কী করব?’ জানতে চাইল হিনা।

    ‘কোনও গাড়ি থামিয়ে চেপে বসব,’ বলল রানা।

    ‘বেন্টলি হলে ভাল হয়,’ মতামত জানাল সোহেল।

    ‘আমার মনের কথা।’ মৃদু হাসল রানা।

    বাগান পেরিয়ে বারো ফুট উঁচু লোহার বেড়ার কাছে পৌছল ওরা। নাগিনোর কাছ থেকে ছিনতাই করা মোবাইল ফোন পকেট থেকে নিয়ে মুখস্থ নম্বরে কল দিল রানা। পুলিশের সুপারইন্টেণ্ডেণ্ট হিমুরা কল রিসিভ করতেই বলল, ‘রানা বলছি, আছি ক্লাবের পশ্চিম দেয়ালের কাছে। ওদিকে রাস্তা। এসে তুলে নিতে পারবেন?

    ‘আসছি,’ বললেন হিমুরা, ‘ক্লাব থেকে একটার পর এ গাড়ি বেরোচ্ছে। ভেতরে কী হয়েছে?’

    ‘এখান থেকে সরে জানাব,’ বলল রানা।

    গলা উঁচিয়ে বলল সোহেল, ‘দেরি করবেন না, নইলে খুন হব।’

    ফোনে রানা শুনল বেন্টলি গাড়ির ইঞ্জিনের জোরালো গর্জন। রওনা হয়েছেন পুলিশ অফিসার। টপকে যাওয়ার জন্যে রটআয়ার্নের বেড়ার দিকে হাত বাড়াল ও।

    খপ করে ওর হাতটা ধরল সোহেল। ‘না, দোস্ত, ইলেকট্রিফায়েড!’

    ঝোপ থেকে কয়েকটা তার গেছে ক্রসবারে।

    ‘তৃতীয় তার বোধহয় সেন্সরের। বেড়া স্পর্শ হলেই ওরা জানবে আমরা কোথায় আছি।’ ক্লাব বিল্ডিঙের দিকে তাকাল রানা। ওদিক থেকে এল কয়েকটা কুকুরের তর্জন। খোলা বাগানে ঘুরছে কিছু ফ্ল্যাশলাইট। ‘আগে হোক পরে হোক, ধরা পড়ব।’

    ‘কারেন্ট শর্ট করতে পারবি?’ জানতে চাইল সোহেল।

    দুর্বল দিক খুঁজতে গিয়ে ক’সেকেণ্ড ব্যয় করল রানা, তারপর বলল, ‘সুযোগ নেই।’

    ‘ওরা আসছে,’ বলল হিনা।

    শোনা গেল হিমুরার বেন্টলি গাড়ির ইঞ্জিনের গর্জন। বাঁক নিয়ে অ্যাকসেস রোড ধরে ছুটে এল উজ্জ্বল সাদা হেডলাইট। আবারও ফোনকল দিল রানা। ‘আমরা আছি ইলেট্রিফায়েড বেড়ার এদিকে। আপনি বেড়ার নিচের ইঁটের দেয়াল ভাঙলে ওই পথে ক্রল করে বেরোব।’

    কাছে চলে এসেছে বেন্টলি। দূরে নেই কুকুর ও সিকিউরিটির লোক।

    ‘আপনাদের দেখতে পেয়েছি, সরে দাঁড়ান,’ বললেন হিমুরা।

    বাগানের দিকে পিছিয়ে গেল রানা, সোহেল ও হিনা। গতি কমল বেন্টলির, বড় একটা বৃত্ত তৈরি করে সোজা ছুটে এল ইঁটের দেয়াল লক্ষ্য করে। আরও বাড়ছে গতি।

    ক’সেকেণ্ড পর তিন টনি হাতুড়ির মত দেয়ালে লাগল ভারী বেন্টলি। বেঁকে গেল লোহার বেড়া। আরও অনেক জরুরি এক কাজ হলো তাতে, বেন্টলি তৈরি করেছে ইঁটের দেয়ালের মাঝে দু’ফুটি ফোকর।

    হেডলাইটের আলোয় চারপাশে ভাসছে হলদেটে ধুলো। বাগান থেকে এল ফ্ল্যাশলাইটের আলো। সিকিউরিটির লোক চেইন খুলে নেয়ায় হুঙ্কার ছেড়ে রানাদের দিকে ছুটে এল হিংস্র কুকুরের পাল।

    ‘জলদি!’ তাড়া দিল রানা।

    ভাঙা দেয়াল থেকে নাক পিছিয়ে নিল বেন্টলি। খসে পড়ল দু’একটা ইঁট। হিনার পর পর ক্রল করে ওদিকে গেল সোহেল। পরক্ষণে ডাইভ দিয়ে বেরোল রানা। বেন্টলির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেছে সোহেল ও হিনা। আটকে নিয়েছে দরজা। সামনের দরজা খুলে রানা উঠতে না উঠতেই দেয়ালের ফোকর গলে হাজির হলো ক’টা বিশাল কুকুর। ওগুলোর নাকের ওপর ধুম করে দরজা বন্ধ করল রানা। কাঁচের ওদিকে সাদা ঝিকঝিকে ক্ষুরধার দাঁত। তাগাদা দিল ও, ‘চলুন, রওনা হওয়া যাক!’

    অ্যাক্সেলারেটর দাবিয়ে দিলেন হিমুরা। বনবন করে একই জায়গায় চাকা ঘুরিয়ে নুড়িপাথর ছিটকে রওনা হলো, বেন্টলি। তৈরি হলো ধুলোর ঘন মেঘ। পেছনে পড়ে রইল উত্তেজিত কুকুর ও একদল সিকিউরিটি গার্ড।

    ‘ওয়ান ওয়ে রোড নয় তো?’ জানতে চাইল সোহেল। ‘ভাববেন না,’ বললেন হিমুরা, ‘সামনেই সেকেণ্ডারি হাইওয়ে। সামনের পথ খোলা।’

    পেছনের টিন্টেড কাঁচের ভেতর দিয়ে পেছনে তাকাল রানা।

    ‘কাউকে দেখছি না,’ বলল সোহেল।

    রিয়ার ভিউ মিররে চোখ রেখেছেন হিমুরাও। কয়েক সেকেণ্ড পর বললেন, ‘অবাক কাণ্ড! প্যাসেঞ্জার নামিয়ে গেলাম সুটকোট পরা দু’জন, ফেরত পেলাম তিনজনকে। একজনের পরনে আবার পায়জামা। ব্যাপারটা কী, মিস্টার আহমেদ, আপনি কি কারও প্রেমিকাকে চুমু দিয়েছেন? নইলে এত ঝামেলা কীসের?’

    ‘কোনও মেয়েকে চুমু দেয়ার সুযোগ পেলাম কই,’ জানাল গম্ভীর সোহেল।

    ‘সুপারইণ্টেণ্ডেণ্ট, পরিচয় করিয়ে দিই, ও হিনা,’ বলল রানা, ‘হিনা, ইনি জাপানি ফেডারেল পুলিশ অফিসার উবোন হিমুরা। উনি তোমাকে খুঁজছেন।’

    ভুরু কুঁচকে ফেলল মেয়েটা। চুপ করে আছে।

    মৃদু হাসছেন হিমুরা। ‘বুঝলাম, আজ বহু কিছুই ঘটেছে।’

    ‘তা ঠিক,’ বলল সোহেল।

    রানা সংক্ষেপে জানাল, প্রথমে জুয়ায় দশ মিলিয়ন ইয়েন জিতে নেয়ার পর পেয়েছে সুন্দরী তরুণীকে, তারপর নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে উদ্ধার করেছে প্রিয় বন্ধুকে। শেষে কুকুর ও গার্ডদের তাড়া খেয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে উঠেছে এই গাড়িতে।

    ‘ওর কথা বিশ্বাস করবেন না,’ বলল সোহেল, ‘তবে এ-ও ঠিক, প্রতিদিন এসবই করে ছেলেটা। মিথ্যাও বলে না।’

    একবার সোহেল ও রানার ছেলেমি দেখে মুচকি হাসি ফুটল হিনার মুখে। নরম সুরে বলল, ‘আরেকটা কথা ভুলে গেছেন রানা, আমরা বিষ খাইয়ে দিয়েছি মাঝারি পদের এক ইয়াকুয়া নেতাকে।’

    ‘তাতে আমাদের বাঁচার সম্ভাবনা আরও কমল,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল সোহেল।

    ‘সত্যি তো আর বিষ দিইনি,’ বলল রানা। ‘লকার রুমে ছিল এক বোতল ক্যাফেন পিল। প্রতিদিন দশ ঘণ্টা কাজ করতে হলে ওই জিনিস না খেয়ে উপায় থাকে না ক্লাবের বয় আর ওয়েট্রেসদের। পাঁচটা বড়ি গুঁড়ো করে গোখারো নাগিনোর ড্রিঙ্কে ফেলেছি। ক্যাফেনের তোড়ে লোকটার মনে হয়েছে যে-কোনও সময়ে বন্ধ হবে হৃৎপিণ্ড।’

    ‘তবুও প্রতিশোধ নিতে পারে,’ সতর্ক করলেন হিমুরা।

    ‘মনে হয় না,’ বলল রানা। ‘নইলে ওকে বলতে হবে যে আমাদেরকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’

    মাথা দোলালেন হিমুরা। ‘দেখা যাক কতটা কাঁপে ইয়াকুয়া সংগঠন। তাতে পুষিয়ে গেল কি না সেটাও বুঝতে হবে। এই গাড়ি মেরামত করতে কিন্তু বহু টাকা লাগবে।’

    সিরিয়াস হলো রানা। ‘আমরা জেনেছি দুর্গে হামলার পেছনে কে দায়ী। এক চাইনি ব্যবসায়ী। নাম লো হুয়াং লিটন।’

    চট্ করে ওকে দেখলেন পুলিশ অফিসার। ‘লো হুয়াং লিটন?’ গলার আওয়াজ খাদে নেমে গেছে তাঁর। ‘তাই? সর্বনাশ! আপনারা বোধহয় ভুল জেনেছেন।’

    ‘নিজ কানে শুনেছি,’ বলল রানা। ‘ওই লোকই দুর্গে হামলা করতে বলেছিল ওরে চিচিওয়াকে।’

    এর কোনও অর্থ বুঝতে পারছি না,’ বললেন হিমুরা।

    ‘কে লো হুয়াং লিটন?’ জানতে চাইল সোহেল।

    ‘হাই-টেক ম্যাগনেট, বললেন অফিসার, ‘বিশাল ইণ্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট। এয়ারক্রাফট ও মেশিনারি পার্টস্ তৈরি করেন। চিনের হাজারো ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করেন আধুনিক সব রোবটিক সিস্টেম। জোর গলায় বলেন, চিন আর জাপানের উচিত শত শত বছরের সন্দেহ ও তিক্ততা পেছনে ফেলে একসঙ্গে কাজ করা। উঁচু পর্যায়ের লোক। মাঝে মাঝেই মিটিং করেন চিন-জাপানের হোমরাচোমরাদের সঙ্গে। তাঁর তো খাতির রাখার কথা নয় ইয়াকুয়াদের সঙ্গে!’

    ‘সেক্ষেত্রে তার কথা কেন বলবে মাঝারি পদের এক ইয়াকুয়া নেতা?’ বলল রানা।

    ‘বোধহয় ডাহা মিথ্যা বলেছে,’ বললেন হিমুরা। ‘প্রাণের ভয়ে।’

    ‘নামের বেশিরভাগ অংশ চিনা, শেষাংশ পশ্চিমা,’ বলল সোহেল। ‘হঠাৎ করে ওই নাম মনে পড়ার কথা নয়।’

    ‘গত কিছু দিনে বারবার খবরে এসেছেন,’ বললেন হিমুরা, ‘গতরাতে অংশ নেন স্টেট ডিনারে। এক সপ্তাহ পর উদ্বোধন করছেন নাগাসাকিতে নতুন প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটি। ওখানেই নতুন চুক্তি হবে জাপান ও চিনের। সেখানে উপস্থিত থাকবেন তিনি।’

    ‘তা হলে ভাবছেন টিভিতে লো হুয়াং লিটনকে দেখেছে বলে চট করে ওই নাম বলেছে নাগিনো?’

    ‘হতে পারে।’

    কয়েক মুহূর্ত ভেবে মাথা নাড়ল রানা। ‘আমার তা মনে হয় না। ভীষণ বিপদ হলে সত্যি কথা বলে মিথ্যুক লোক। তা করে বাঁচার জন্যে। ওই মুহূর্তে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত ছিল নাগিনো।’

    চুপ থাকলেন হিমুরা। কিছুক্ষণ পর বললেন, ‘হয়তো আপনার কথাই ঠিক। তবে সেক্ষেত্রে এটা খুব খারাপ খবর। এর মানে, শেষ হয়ে গেছে আমাদের তদন্ত।

    ‘তদন্ত শেষ কেন?’ জানতে চাইল সোহেল।

    ‘লো হুয়াং লিটন আমার নাগালের বাইরে,’ বললেন সুপারইণ্টেণ্ডেণ্ট। ‘দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। ওপর মহলে অসংখ্য ক্ষমতাশালী বন্ধু। একে বন্ধুর অভাব নেই, তার ওপর হাজারো কোটি ডলার। তাঁকে বলতে পারেন আনঅফিশিয়াল ডিপ্লোম্যাট। অত উঁচু মাপের কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে লাভ হবে না। পুলিশের ওপর মহলের অফিসাররা চুপ করিয়ে দেবেন আমাকে। বাধ্য করা হবে পাহাড়ি নির্জন কোনও গ্রাম পাহারা দিতে।’

    ‘তার মানে, ছোঁয়া যাবে না তাকে,’ বলল সোহেল।

    থমথমে মুখে মাথা দোলালেন হিমুরা। ‘মিথ্যা নয়।’

    ‘কিন্তু ওরে চিচিওয়া তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দিলে?’ বলল সোহেল। ‘তা হলেও কি আপনার সুপিরিয়ররা দ্বিধা করবেন লো হুয়াং লিটনের বিরুদ্ধে নামতে?’

    ‘হয়তো তদন্ত করবেন তাঁরা,’ বললেন হিমুরা, ‘কিন্তু আগে চাই চিচিওয়াকে। আমরা জানিও না দেখতে কেমন সে। আর আজ যা হলো, এরপর সে বাতাসে মিলিয়ে যাবে।’

    ‘ট্র্যাকিং নেটওঅর্ক চালু করলেই পাবেন তাকে,’ বলল সোহেল, ‘তার পকেটে আছে আপনার দেয়া কয়েন।’

    সবার চোখ চলে গেল ওর দিকে।

    রানাকে বলল সোহেল, ‘তুই যখন জুয়া খেলছিস ক্যাসিনোয়, আমি তখন কাজে ব্যস্ত।’

    ‘কিন্তু তুই না তখন এরিনায়?’

    ‘নাহ্, ছিলাম লবিতে।’

    ‘তখনই আপনাকে চিনে ফেলেছিল কেউ,’ আন্দাজ করল হিনা।

    ‘হ্যাঁ, চিনেছিল,’ বলল সোহেল। ‘স্বয়ং ওরে চিচিওয়া! ওকে খুঁজে নেয়ার আগেই ব্যাটা নিজে চড়াও হলো আমার ওপর। তখনই ওর শার্টের পকেটে ঢুকেছে কয়েন। সৌভাগ্যের জিনিস, না ফেলে থাকলে অনায়াসেই অনুসরণ করতে পারবেন অফিসার হিমুরা।’

    মৃদু মাথা দোলাল রানা। ‘কাজের কাজ করেছিস।’

    ‘তা হলে এবার ধরতে পারব তাকে,’ বললেন হিমুরা।

    ‘আমরা কোনও সাহায্যে আসব?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

    ‘না, এরই ভেতর অনেক ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছেন,’ বললেন পুলিশ অফিসার। ‘ওরে চিচিওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। আজ রাতে আরেকটু হলে আমার কারণে খুন হতেন। এবার সঙ্গে ক’জন বিশ্বাসী অফিসারকে নিয়ে খুঁজে নেব ওকে।’

    ‘বেশ,’ বলল রানা। ‘আশা করি মিস্টার হুয়াঙের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বাধা দেবেন না?’

    মাথা নাড়লেন হিমুরা। ‘তা করব না। তাঁকে পাবেন নাগাসাকিতে। পরশু সাগরতীরে তাঁর ফ্যাসিলিটিতে বক্তৃতা দেবেন। সতর্ক থাকবেন। বিলিয়নেয়ার, তার ওপর দু’দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতায় যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে বন্ধুর অভাব নেই তাঁর। সত্যি ওরেকে ভাড়া করে থাকলে, যা ভেবেছি তার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক মানুষ তিনি।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী
    Next Article মাসুদ রানা ৪৩৫ – মৃত্যুদ্বীপ

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.