Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প414 Mins Read0

    মহাপ্লাবন – ২৬

    ছাব্বিশ

    মেইন ডেকে ভিড়ের মাঝ দিয়ে হাঁটছে তানিয়া। চারপাশে গাদা করে রাখা লাগেজ, বাদ পড়েনি প্যাসেজওয়ে। বেশিরভাগ যাত্রী হতদরিদ্র, সাধ্য নেই ভাড়া নেবে কেবিন। অবশ্য বুদ্ধিমানরা দল তৈরি করে কিনেছে টিকেট। একেকটা কেবিন ইঁদুরের খুপরির মত, সেখানে বসেছে ছয় থেকে আটজন।

    সংক্ষিপ্ত যাত্রা। ওসাকা থেকে পুব চিন সাগর পাড়ি দিয়ে শাংহাই-এর দিকে চলেছে প্রকাণ্ড ফেরি।

    আজ সকালের আকাশ ধূসর ও বিষণ্ন। বাইরে ঝরছে হিমঠাণ্ডা বৃষ্টি। তাই নিচের বদ্ধ পরিবেশে রয়ে গেছে বেশিরভাগ যাত্রী। ওপরের ডেকে কেউ নেই।

    পথ খুঁজে নিয়ে ওদের কেবিনে ফিরে তানিয়া দেখল, শরীরের তুলনায় অনেক ছোট ডেস্কে বসে আছে আসিফ।

    তানিয়া জানতে চাইল, ‘কী অবস্থা?’

    ঝুঁকে চার্ট দেখছে আসিফ। ঠিক করছে ভবিষ্যৎ পযিশন। ‘এখন জানি কোথায় আছি। ভাবছিলাম হঠাৎ কোথায় গেলে।’

    ‘হারিয়ে গিয়েছিলাম,’ বলল তানিয়া। ‘তারপর স্মৃতির সাহায্যে ফিরলাম। সাইন সব চাইনি। কোথাও ইংরেজি নেই।’ স্বামীর হাতে কাগজের গরম কাপ ধরিয়ে দিল ও।

    ‘কফি?’

    ‘গ্রিন টি,’ বলল তানিয়া। ‘আর কিছু নেই।’

    হতাশার ছাপ পড়ল আসিফের চোখে।

    ‘গ্রিন টি শরীরের জন্যে ভাল,’ বলল তানিয়া।

    মাথা দোলাল আসিফ। ‘ওপরের কী হাল?’

    ‘ওপরের ডেকে কেউ নেই,’ জানাল তানিয়া। ‘বরফের মত ঠাণ্ডা পরিবেশ।’

    ‘আমাদের জন্যে ভাল,’ মাথা দোলাল আসিফ। ‘যা ভেবেছি, তার চেয়েও কাছে পৌঁছেছি টার্গেট এরিয়ার। এবার জাগাতে হবে দাঁড়কাকের সিস্টেম।

    ‘সময় লাগবে না।’ ল্যাপটপের সামনে বসল তানিয়া। ওদিকে কেবিনের জানালা খুলল আসিফ। দমকা হাওয়ার তাড়া খেয়ে বেরিয়ে গেল ভাপসা গরম।

    ‘নোনা হাওয়া পেলে আবার কফি লাগে নাকি?’ বলল তানিয়া।

    ‘আমার মত লোকের লাগে,’ বলল আসিফ। জানালার পাশে থেমে লাগেজ থেকে বের করল গুটিয়ে রাখা কেবলের বাণ্ডিল। ওটার শেষমাথায় মুচড়ে বসাল ওঅটারপ্রুফ ট্র্যান্সমিটার। জানালা দিয়ে বাইরে ফেলল কেবল। জাহাজের গায়ে চুমু দিয়ে দমকা হাওয়ায় দুলে সাগরে গিয়ে পড়ল ওটা

    ‘ট্র্যান্সমিটার পানিতে,’ বলল আসিফ। ‘প্রার্থনা করো, যাতে জানালা দিয়ে উঁকি না দেয় কেউ। কালো কেবল দেখলে ভাববে, জাহাজের বাইরে ওটা কী করছে।’

    ‘ভেবো না, সবাই ভেতরে, জানালার ধারেকাছে যাবে না এই বৃষ্টিতে,’ বলল তানিয়া। ‘আমি ট্র্যান্সমিট করতে তৈরি।’

    ‘ঠিক আছে।’

    কি-বোর্ডে টোকা দিল তানিয়া। সিগনাল পাঠিয়ে দিল দাঁড়কাকের কাছে। তাতে জেগে উঠল রোভ। ক’সেকেণ্ড পর পাল্টা দিল সিগনাল। কমপিউটারের স্ক্রিনে ভেসে উঠল রিমোট কমাণ্ড অপশন। যে-কেউ ভাববে ওটা ভিডিয়ো গেমের ডিসপ্লে। রয়েছে ভার্চুয়াল কন্ট্রোল ও ডায়াল। সেগুলোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে রোভের ওঠা-নামার গতি ও ক্যামেরা। স্ক্রিনের একপাশের ডিসপ্লে থেকে জানা যাবে ম্যাগনেটোমিটার ও অন্যান্য সেন্সরের রিডিং।

    ‘সব সিস্টেমের বাতি সবুজ,’ বলল তানিয়া, ‘জাহাজ থেকে সরিয়ে নিচ্ছি ওটাকে।’

    বাটন টিপতেই অফ হলো ইলেকট্রোম্যাগনেট, ফেরির খোল থেকে খসে পড়ল রোভ। ঘুরন্ত প্রপেলার থেকে দূরে সরল ওটা, তারপর বাঁক নিয়ে নামতে লাগল সাগরতল লক্ষ্য করে। কিছুক্ষণ শুধু দেখা গেল বিক্ষুব্ধ পানি, তারপর জাহাজের কাছ থেকে সরে শান্ত পানিতে পৌঁছুল রোভ।

    ‘নতুন কোর্স?’ জানতে চাইল তানিয়া।

    ‘প্রায় সরাসরি দক্ষিণে টার্গেট এরিয়া,’ চার্ট দেখল আসিফ, ‘কোর্স ধরো ওয়ান-নাইন-ওয়ান।’

    কি টিপে কোর্স ও ডাইভ অ্যাংগেল ঠিক করল তানিয়া। এবার নিজ কাজ করবে রোভ। ওর নিজের আর কিছু করার নেই। তিন মাইল দূরে টার্গেট যোন। ওখানে পৌঁছুতে লাগবে প্রায় বাইশ মিনিট।

    ‘নিশ্চয়ই চার্জ করে তারপর দিয়েছে ব্যাটারি?’

    মৃদু হাসল আসিফ। ‘এয়ারপোর্টে ওটা নেয়ার সময় তার প্রথম কাজই ছিল ব্যাটারি দেখে নেয়া।’

    চুপচাপ অপেক্ষা করল ওরা। নির্দিষ্ট গতি তুলে অন্ধকারাচ্ছন্ন সাগরতলে চলেছে রোভ। মাঝে মাঝে একটা দুটো ইন্সট্রুমেন্ট চেক করছে তানিয়া। কিছুক্ষণ পর অস্বাভাবিক কিছু দেখল ও। ‘এটা চেক করে দেখো।’

    ল্যাপটপের দিকে ঝুঁকল আসিফ। ‘কী দেখব?’

    ‘রোভের স্পিড এগারো নট। কিন্তু পযিশন মার্কার দেখাচ্ছে মাত্র সাত নট। সামনে থেকে আসছে জোরালো স্রোত।’

    ‘তা হওয়ার কথা নয়,’ চার্টের দিকে তাকাল আসিফ। ‘আমাদের বর্তমান লোকেশন, আর বছরের এ সময়ে স্রোত যেমন, তাতে পেছন থেকে রোভটাকে দক্ষিণে ঠেলবে।’

    ‘অথচ সামনে থেকে আসছে চার নটিকাল বেগের স্রোত, বলল তানিয়া।

    ‘এর কারণ আমরা হয়তো গত চারঘণ্টা দক্ষিণের বদলে শিপিং লেনের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। নিচের প্রোফাইলের কী হাল?’

    আরেকটা কি টিপল তানিয়া। স্ক্রিনে ফুটে উঠল রোভের নিচের সাগরতলের গ্রাফিক ডিসপ্লে। ‘রুটির মত সমতল।’

    ‘তা হলে আমার পার্বত্য এলাকা থিয়োরি মার খেয়ে যাচ্ছে,’ বলল আসিফ।

    ‘আমরা এখনও টার্গেট যোন থেকে ক’মাইল দূরে।’

    মাথা নাড়ল আসিফ। ‘নিচে পার্বত্য রেঞ্জ থাকলে সেডিমেন্ট লেয়ার ফাটিয়ে উঠবে টিলার মত ঢিবি। তা হলে আগেই ওপরে উঠবে সাগরের মেঝে।’

    রিডআউট দেখছে তানিয়া। কোথাও ওঠেনি সাগরের মেঝে। ‘দেখা যাক টার্গেট যোন। ওখানে অস্বাভাবিক কিছু না দেখলে তখন অন্য কথা ভাবা যাবে।’

    ‘কী ভাবব? ভাবারই তো সুযোগ নেই।’ হতাশ হয়ে গেছে আসিফ।

    এক হাতে চা-র কাপ নিল তানিয়া, অন্যহাতে টিপল কি-বোর্ড। দেখছে সব রিডিং। ভার্চুয়াল টপোগ্রাফি, ওঅটার টেম্পারেচার ও স্যালিনিটি লেভেল। তিন ধরনের গ্রাফের ডিসপ্লে দেখাচ্ছে কমপিউটার। কিন্তু সেসব উল্টোপাল্টা ডেটা

    দেখে দ্বিধান্বিত হয়ে উঠেছে তানিয়া-আসিফ দু’জনেই।

    ‘যন্ত্রপাতি নষ্ট হলো?’ চায়ের কাপ টেবিলে রাখল তানিয়া।

    ‘এমন ভাবছ কেন?’

    ‘টেম্পারেচার প্রোফাইল অনুযায়ী, রোভ আরও নেমে যেতেই বাড়ছে সাগরের তাপমাত্রা।’

    তানিয়ার কাঁধের ওপর দিয়ে স্ক্রিন দেখল আসিফ। ‘হয়তো কোনও থার্মোক্লাইনের ওপর দিয়ে গেছে রোভ।’

    ‘না, তেমন কিছু দেখিনি,’ বলল তানিয়া। ‘খুব ধীরে বাড়ছে তাপমাত্রা। প্রতি সত্তর ফুটে এক ডিগ্রি করে। এ থেকে মনে হচ্ছে, সাগরে মিশছে প্রচুর পরিমাণে গরম পানি।’

    ‘লবণের পরিমাণ কেমন?’ জানতে চাইল আসিফ।

    কি টিপে স্ক্রিনে আরেকটা সেন্সর রিডিং আনল তানিয়া। ‘তাপমাত্রার চেয়েও বিদঘুটে অবস্থা স্যালিনিটির। রোভ নিচে যাচ্ছে, আর কমছে সাগরের লবণ!’

    ‘কিন্তু এটা হতে পারে না। সেন্সর প্রোব ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট দেখো। হয়তো যন্ত্রপাতি নষ্ট।’

    রোভের সেন্সর ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে শেখানো হয়নি তানিয়াকে। দূর থেকে যন্ত্রপাতি মেরামত দূরের কথা! ‘ববি মুরল্যাণ্ড হয়তো কিছু করতে পারতেন,’ বলল তানিয়া। ‘আমাকে শুধু শেখানো হয়েছে কীভাবে চালাতে হবে রোভ।’

    ‘ওটাকে এক শ’ ফুট ওপরে তোলো,’ বলল আসিফ।

    ‘তাতে কী লাভ?’

    ‘সেন্সর ভুল তথ্য দিলে আগের মতই বাড়বে তাপমাত্রা,’ বলল আসিফ। ‘কিন্তু যদি এমন হয় যে এসব রিডিং ঠিকই আছে, তো পাব ইনভার্টেড টেম্পারেচার প্রোফাইল। সেক্ষেত্রে জানব আবারও ঠাণ্ডা হচ্ছে পানি।’

    ‘ভাল বুদ্ধি,’ মাথা দোলাল তানিয়া। ডাইভ অ্যাংগেল পাল্টে ওপরে তুলছে রোভ। ‘কমে যাচ্ছে তাপমাত্রা, বাড়ছে লবণ। ঠিকভাবেই চলছে সেন্সর। …এবার কী করব?’

    ‘আগের কোর্স ধরে চলো,’ বলল আসিফ।

    সন্তুষ্ট হলেও অবাক লাগছে তানিয়ার। অ্যাডজাস্ট করল ডাইভ প্রোফাইল। নামছে রোভ। পাঁচ শ’ ফুট গভীরতায় ওটাকে নিল তানিয়া। কাছ থেকে দেখছে বিস্তৃত এলাকা। নিচু গলায় বলল, ‘এখনও সমতল।’

    ‘অবাক কাণ্ড,’ বলল আসিফ। ‘ইস্ত্রি করা শার্টের চেয়েও মসৃণ।’

    ‘তা হলে তৈরি হচ্ছে না মাউন্টেন রেঞ্জ,’ বলল তানিয়া, ‘কিন্তু তাপমাত্রা আর লবণের তথ্য একটা আরেকটার উল্টো। এর কী ব্যাখ্যা দেবে?’

    ‘আপাতত ব্যাখ্যা নেই,’ আবারও চার্ট দেখল আসিফ। ‘প্রায় পৌছে গেছি.শিমের ভূমিকম্প এলাকায়। এবার যেতে হবে পশ্চিমে।’

    কি টিপে রোভের গতি ঠিক করল তানিয়া। পাল্টে গেল রিডআউট। ‘নতুন কিছু হচ্ছে।’

    ‘টিলা বা ঢিবি?’ আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করল আসিফ।

    ‘না, সামনে গভীর খাদ। নিচে মনে হচ্ছে ক্যানিয়ন।’

    চার্টে দেখানো হয়েছে ওই এলাকা সমতল। সাগরের মেঝে ছুঁয়ে চলেছে রোভ। সামনেই ভি আকৃতির চওড়া খাদ। ওটা তীরের মত, ডগা তাক করা শাংহাই-এর দিকে।

    ‘খাদে নেমে দেখো কী আছে।’

    ভি আকৃতির ক্যানিয়নের দিকে রোভ নিল তানিয়া। ‘বাড়ছে তাপমাত্রা। কমছে লবণাক্ততা।’

    যুক্তির বাইরে ঘটছে এসব। মিঠা পানির চেয়ে ঘন হয় লবণাক্ত পানি, তাই সাগরতলে গভীর খাদ বা ক্যনিয়নের দিকে নামে। পাহাড়ি রেঞ্জের গ্লেসিয়ারের ক্ষেত্রেও নিচে থাকে লবণাক্ত পানি।

    সব সাগরের নিচেই আছে এসব লবণভরা পুকুর বা স্রোত। ওগুলোকে ওশনোগ্রাফাররা বলেন সাগরতলের নদী। সাগরের অন্য পানির সঙ্গে মোটেই মিশ খায় না।

    ক্যানিয়নে দাঁড়কাক নামতেই বাতি জ্বালল তানিয়া। ক্যামেরায় দেখল চারপাশে সেডিমেন্ট। যেন আকাশ থেকে পড়ছে তুষার কণা।

    ‘এক হাজার ফুট,’ বলল তানিয়া।

    ‘দাঁড়কাকের গভীরে নামার ক্ষমতা কতটুকু?’

    ‘তিন হাজার ফুট,’ বলল তানিয়া। ‘কিন্তু তৈরি করেছেন ববি মুরল্যাণ্ড, ধরে নিতে পারো ছয় হাজার ফুট পর্যন্ত কিছুই হবে না ওটার।’

    সোনার রিডিং থেকে ওরা দেখছে সরু হচ্ছে ক্যানিয়ন। ‘উঠে আসছে তলদেশ,’ বলল তানিয়া। ‘পুরো ঘুরে দেখতে চাও?’

    ‘পয়সা দিচ্ছে এজন্যেই,’ বলল আসিফ। ‘নিজেদের কাজ ঠিকভাবে করাই ভাল।’

    দাঁড়কাকের নতুন কোর্স ঠিক করল তানিয়া। একটু পর বলল, ‘এগোতে হচ্ছে জোরালো স্রোত ঠেলে। নামছি পাঁচ ডিগ্রি অ্যাংগেল ধরে। নিচে যেতে ব্যবহার করছি থ্রাস্টার।’

    ‘স্রোত উঠে আসছে ক্যানিয়ন থেকে?’

    মাথা দোলাল তানিয়া। ‘বুঝলাম না কেন এমন হচ্ছে।’ সোনার স্ক্যানে কী যেন দেখাতে চাইল আসিফ। ‘ওটা কী?’

    দাঁড়কাকের গতিপথ সামান্য বদলে নিল তানিয়া। ক্যানিয়নের নিচে ঢিবির মত কী যেন। ওদিকে এগোতে গিয়ে লড়ছে রোভ। ওদের মনে হলো, তুমুল বেগের বাতাসের বিরুদ্ধে লড়ছে উড়ন্ত কোনও পাখি। আরও কাছে যাওয়ার পর দেখল ঢিবিটা কোন্ আইসক্রিমের মত। ওটার ওপর দিয়ে যেতেই আরেক দিকে ছিটকে সরে গেল রোভ।

    ঘুরে আবারও ওদিকে যাবার আগেই সামনে পড়ল আরেকটা ঢিবি। একটু দূরে তৃতীয়টা। তলদেশে আছে আরও বহু।

    ‘এগুলো কী?’ আনমনে বলল তানিয়া।

    ‘বোধহয় জানি,’ বলল আসিফ, ‘এগোতে থাকো।’

    এঁকেবেঁকে চলল রোভ। সামনে বিস্তৃত হয়েছে ক্যানিয়ন। মেঝেতে দেখা গেল অন্তত এক ডযন ঢিবি।

    একটার খুব কাছে যাব,’ বলল তানিয়া।

    ফুল পাওয়ারে ঢিবির চূড়ায় উঠছে রোভ। ঠিকভাবে কাজ করছে ক্যামেরা। চূড়া থেকে ছিটকে বেরোচ্ছে পলি মাটি। দেখাচ্ছে আগ্নেয় ছাইয়ের মত।

    ‘পাতাল উষ্ণপ্রস্রবণ,’ জানাল আসিফ, ‘উঠছে তীব্র বেগে।’

    ‘ভূ-তাপীয়?’

    ‘অবশ্যই।’

    ‘চূড়ায় উঠে দেখি,’ বলল তানিয়া। ‘আন্দাজ করা যাবে কী পরিমাণ পানি উঠছে। স্যাম্পলও নিতে পারব।’

    ‘ভাল হয়,’ বলল আসিফ।

    চূড়ার দিকে রোভ তাক করল তানিয়া। কিন্তু কয়েক ফুট যেতেই ছিটকে ওঠা পানির স্রোতে পড়ল দাঁড়কাক। ঝটকা দিয়ে উঠতে গিয়ে পরক্ষণে কাত হয়ে মেঝের দিকে চলল রোভ। স্রোত এতই জোরালো, গ্রীষ্মকালীন হাওয়ায় ভর করা পাতলা কাগজের মত উড়ে গেছে ভারী যন্ত্র।

    ছিটকে ওঠা পানি থেকে রোভ সরে আসায় আবারও নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেল তানিয়া। ‘পানির তাপ প্রায় দুই শ’ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।’ আরেকবার রিডিং দেখল। ‘স্যালিনিটি যিরো।’

    চেয়ারে হেলান দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগল আসিফ।

    ‘আগে কখনও এই জিনিস দেখিনি।’

    ‘মিড-আটলাণ্টিক রিজ?’ মনে করিয়ে দিল তানিয়া। ‘কালো ধোঁয়ার মত।’

    ‘এক নয়,’ বলল আসিফ, ‘ওগুলো থেকে বেরোয় নানা বিষাক্ত পদার্থ। সেসব আগ্নেয়গিরির আবর্জনা। কিন্তু নিচের ওই পানি ঠাণ্ডা করে খেতে পারবে, কোনও ক্ষতি হবে না।’

    ‘গরম রাখলে কফি তৈরি করতে পারবে।’ হাসল তানিয়া।

    ‘এতক্ষণে ভাল কথা বলেছ,’ বলল আসিফ। ‘যাওয়ার পথে কয়টা কোন্ আইসক্রিম দেখলে?’

    ‘অন্তত পঞ্চাশটা,’ বলল তানিয়া।

    ‘আরও আছে কি না দেখতে হবে।’

    আবারও ক্যানিয়নের মাঝ দিয়ে চলল দাঁড়কাক। পরের বিশ মিনিটে দেখা গেল শতখানেক পানি উৎক্ষেপক ঢিবি সামনে বোধহয় রয়েছে আরও অনেক।

    ‘লোহার পরিমাণ বাড়ছে পানিতে, ম্যাগনেটোমিটার দেখছে তানিয়া। ‘তবে যে-কোনও সময়ে হারাব সিগনাল।’

    ‘ম্যাক্সিমাম ট্র্যান্সমিশন রেঞ্জের কাছে পৌঁছেছে রোভ,’ বলল আসিফ। ‘এবার হারিয়ে যেতে পারে।’

    কোর্স ঠিক করল তানিয়া। কমেছে ইমেজ ট্র্যান্সমিশনের পিক্সেল। ছবি হয়ে উঠছে ঝাপসা। একবার জমাট বেঁধে আবারও পরিষ্কার হলো দৃশ্য।

    ‘থামো,’ সতর্ক করল আসিফ।

    ‘হঠাৎ করেই উঠছে ক্যানিয়নের মেঝে,’ জানাল তানিয়া।

    ক্যামেরার দৃশ্য ফ্রিয হয়েও আবার পরিষ্কার হলো, পরক্ষণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচের পলিমাটিতে আছড়ে পড়ল রোভ।

    ‘যাহ্, অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল,’ মাথা নাড়ল আসিফ।

    কন্ট্রোল নাড়াচাড়া করে রোভ তুলতে চাইছে তানিয়া। ‘কপাল ভাল কোনও আরোহী নেই।’

    পলির মাঝে রোভ গেঁথে যাওয়ায় চারপাশের পানি এখন কাদাটে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য কিছুক্ষণ পর রিসেট হলো লিঙ্ক। চালু হলো ক্যামেরা। প্রথম দৃশ্যেই দেখা গেল ধাতব জঞ্জাল।

    ‘নিচে কাজ করেছে কারা যেন,’ বলল আসিফ।

    ‘তাই তো মনে হচ্ছে,’ সায় দিল তানিয়া। দেখা গেল মুচড়ে যাওয়া স্টিলের পাইপ ও প্লেটিং। অতীতে যা-ই করা হোক, এখন চাপা পড়েছে প্রায় সব।

    বাতি জ্বেলে নানাদিকে ক্যামেরা তাক করছে তানিয়া। চালু করল ভিডিয়ো। তাতে ওরা দেখল অদ্ভুত এক দৃশ্য। আনমনে বলল তানিয়া, ‘একটা হাত।’

    ক্যামেরার দিকে তাক করা ফ্যাকাসে সাদা হাত। যেন বছরের পর বছর ধোলাই হয়েছে। মনে হলো না মানুষের। নিখুঁত। চকচকে। হাতের শেষে স্টিলের তৈরি আঙুল।

    ‘ইন্টারেস্টিং,’ বিড়বিড় করল আসিফ।

    পলি মাটিতে আটকা পড়েছে রোভ, তবে ওটার থ্রাস্টার সরিয়ে দিচ্ছে কাদা। ক’মুহূর্ত পর ওরা দেখল একটা কাঁধ… তারপর কাদার মাঝে একটা মুখ। যেন তৈরি সাদা কাঁচের। যে-কারও মনে হবে ওটা অ্যাথেনা থেকে খুঁড়ে তোলা কোনও মূর্তি।

    ‘সুন্দরী,’ মন্তব্য করল আসিফ।

    ‘ও একটা মেশিন,’ আপত্তি তুলল তানিয়া। ‘মেশিনও সুন্দর হতে পারে।’

    মাথা দোলাল তানিয়া। আসিফের কথা ঠিক। তবে এই মেশিনটা প্রায় মানুষের মতই দেখতে। নড়াচড়া করলে মনে হতো সত্যিকারের মানবী। মুখটা বিষণ্ণ। ওপর দিকে চেয়ে আছে খোলা চোখ, যেন একদিন কেউ উদ্ধার করবে তাকে।

    আর কিছু দেখার আগেই হঠাৎ হারিয়ে গেল সিগনাল। চিরকালের জন্যে সাগরতলে রয়ে গেল ওদের রোভ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী
    Next Article মাসুদ রানা ৪৩৫ – মৃত্যুদ্বীপ

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.