Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প414 Mins Read0

    মহাপ্লাবন – ৩

    তিন

    যে-কেউ ভাবতে পারে, এটা চমৎকার সবুজ এক পার্ক। আর এ মুহূর্তে দাবার মত রণকৌশলের জটিল কোনও খেলায় মগ্ন দুই লোক। চারপাশে প্রাচীন গাছ, ঘন ঝোপঝাড় ও কালো জলের গভীর পুকুর। কিন্তু বাস্তবে এটা চিন সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী লোকের বাড়ি। হরেক ধাঁচের স্কাল্পচার করা বাগানে গোপনে ওঁৎ পেতেছে সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরা। ফুলে ভরা লতাগাছে ঢাকা চারদিকের বারো ফুটি দেয়াল। ওপরে রেযর ওআয়ার। একটু পর পর নির্দিষ্ট জায়গায় সেন্সর। সর্বক্ষণ চারদিকে চোখ রাখছে একদল সশস্ত্র প্রহরী। বিনা অনুমতিতে এ বাড়িতে ঢুকতে চেষ্টা করলে বিনা দ্বিধায় গুলি করে খুন করা হবে যে-কাউকে।

    উঁচু দেয়ালের বাইরে বিশাল বেইজিঙে কোটি কোটি মানুষের ভিড় ও হৈ-হল্লা। বাড়ির চৌহদ্দির ভেতর শুধু স্বর্গের নীরবতা ও প্রশান্তি।

    এ বাড়িতে বহুবার এসেছে বিলিয়নেয়ার লো হুয়াং লিটন। তবে আগে কখনও খুচরা আলাপ করেনি বা এত সময় কাটায়নি গুরু ও পরামর্শদাতার সঙ্গে। আপাতত আলাপ করছে না তারা দু’জন, সব মনোযোগ উনিশ বাই উনিশ চৌকো ছকে আঁকা বাদামি বোর্ডে। নানাদিকে সাদা ও কালো বেশ কিছু পাথরের গুটি।

    এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন খেলা নিয়ে মেতে আছে দু’জনে। ওই খেলা দাবার চেয়েও পুরনো এবং জটিল। চিনদেশে বলা হয় ওয়েইকিউই, জাপানে ইগো আর কোরিয়ায় বাদুক। পশ্চিমারা সহজ নাম দিয়েছে: গো।

    একটা ভাল চাল দিতে পারবে ভেবে পাশের কাপ থেকে সাদা গুটি নিয়ে ঠিক জায়গায় রাখল লো হুয়াং লিটন, সন্তুষ্ট। প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখল স্বর্গের মত বাগান। নিচু গলায় বলল, ‘আসার সময় ভেবেছি: আছি হৈ-চৈ ভরা ব্যস্ত শহরে, কিন্তু এখন মোটেই অমন মনে হচ্ছে না।’

    লো হুয়াং লিটনের বয়স প্রায় পঞ্চাশ। গড়পড়তা চাইনি পুরুষের চেয়ে দীর্ঘ। দড়ির মত পেঁচানো হাত-পায়ের পেশি। যে-কেউ বলবে, ঝাঁটার কাঠি। জন্মেছে হংকং-এ। বাবা চাইনি, মা জাপানি। নামের শেষে পশ্চিমা নাম জুড়ে দেয়া হয়েছিল, যাতে ব্যবসা করতে গেলে সহজেই ঢুকে পড়তে পারে ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান কোম্পানিগুলোর মালিকপক্ষের বুকের ভেতর।

    লো হুয়াং লিটন জন্মাবার আগেই তার বাবা গুছিয়ে নিয়েছিল ছোট এক ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি। অন্য হংকংবাসী ব্যবসায়ীদের মত নাক উঁচু করে ঘুরত না সে, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছিল মূল ভূখণ্ডের চিন সরকারের সঙ্গে। ফলে পরে অন্যরা যখন স্বাধীনতার জন্যে আন্দোলন করেছে, সেসময়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে সে। চিন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে লো হুয়াঙের বাবা সাধারণ মিলিয়নেয়ার থেকে এক লাফে হয়ে গেল মস্তবড় বিলিয়নেয়ার। পরের এক দশকে হুয়াঙের বাবা গড়ে তুলল চিনের সবচেয়ে বড় কংগ্লোমারেট ব্যবসা: আইটিআই। ইণ্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি, ইনকর্পোরেটেড।

    বাবা মারা যাওয়ার পর শেষ দশক ধরে নিজেই ব্যবসা করছে লো হুয়াং লিটন। বেইজিঙের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তো রেখেইছে, আরও বড় করেছে ব্যবসা। অনেকে বলে, লো হুয়াং লিটন সরকারের পঞ্চম পিলার। টাকা, ক্ষমতা ও সম্মানের এমন এক শিখরে পৌঁচেছে, ভবিষ্যতে কঠিন হবে যে কারও জন্যে তাকে ছোঁয়া। অথচ, বোর্ডের ওদিকে বসে থাকা বয়স্ক লোকটার প্রতিটি কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে সে।

    ‘নীরব এবং প্রশান্তিময় আবাস জরুরি। হৈ-চৈ বা বাজে আওয়াজ সবসময় বিক্ষিপ্ত করে মানুষের মন। লো হুয়াঙের মনে হলো শুনল প্রিয় গুরুর রচিত কবিতা। বয়স্ক ভদ্রলোকের মাথাভরা টাক। কানের কাছে দু’গোছা পাকা, সাদা চুল। কুঁচকে গেছে মুখের ত্বক। ঝুলছে ডান গাল।

    গত ছয় দশক ধরে চাইনি কম্যুনিস্ট পার্টির বড় নেতা হিসেবে ক্ষমতার চূড়ায় আছেন যেইন নিং। প্রথমে ছিলেন সাধারণ সৈনিক, পরে হয়েছেন রাজনীতিবিদ। সবসময় ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাকারী। গুজব রয়েছে: তাঁর নির্দেশেই আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্রদেরকে ট্যাঙ্কের নিচে পিষে মেরে ফেলা হয়েছিল তিয়ানানমেন স্কয়ারে। এরপর যেইন নিঙের নির্দেশনাতেই মাত্র একটি রাজনৈতিক পার্টি নীতি বজায় রেখে চিন পা বাড়াল পুঁজিবাদের খোলা দুনিয়ায়।

    পার্টির ভেতর একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর বেসরকারী পদবী: লাও-শি। এর অর্থ, বড় পদে আসীন চূড়ান্ত দক্ষ বৃদ্ধ। তবে লো হুয়াং লিটনের কাছে তা নয়। মনে মনে বলে সে: জ্ঞানী প্রভু।

    বোর্ডে হুয়াঙের সাদা একটা গুটির পাশে তাঁর কালো গুটি রাখলেন লাও-শি। আটকে দিয়েছেন স্যাঙাতের গুটির পথ। নরম সুরে বললেন, ‘কী হলো যে এত মন খারাপ?’

    কথা বলার সঠিক সময় এসেছে, বুঝল লো হুয়াং লিটন। ‘খুব খারাপ কিছু হয়েছে। শেষ করা হয়েছে মাইনিং সাইটের সার্ভে। আমাদের ভয়টা ঠিক। ওই অ্যাভালাঞ্চে ধ্বংস হয়েছে বাইরের সব মডিউল। সরীসৃপের চোয়ালের মেঝে ভরে গেছে কোটি কোটি পাথর আর জঞ্জালে। নষ্ট হয়নি রিঅ্যাক্টর। কিন্তু বিশাল টাকা খরচ না করলে নতুন করে আবারও চালু করা যাবে না ওই প্রজেক্ট।’

    ‘কত টাকা লাগবে?’

    মনে মনে অঙ্কটা আরেকবার কষল হুয়াং। ‘জঞ্জাল সরাতে এক শ’ বিলিয়ন ইউয়ান। স্টেশন মেরামত আর নতুন করে কাজ শুরু করতে… অন্তত আরও পাঁচ শ’ বিলিয়ন ইউয়ান। এতে লাগবে বছরের পর বছর। এত সময় লাগত না, কিন্তু সবই করতে হবে গোপনে।’

    ‘ওই গোপনীয়তা অত্যন্ত জরুরি,’ বললেন লাও-শি।

    ‘সেক্ষেত্রে খনি থেকে সোনালি শিখা তুলতে লাগবে কমপক্ষে তিন বছর।’

    ‘তিন বছর,’ বিড়বিড় করলেন বৃদ্ধ। পিছিয়ে বসে ডুবে গেলেন চিন্তার জগতে।

    ‘অন্তত তিন বছর,’ আবারও বলল লো হুয়াং।

    বাস্তবে ফিরলেন লাও-শি। ‘দুর্ঘটনার আগে প্রতিমাসে কী

    পরিমাণ সোনালি শিখা তোলা হচ্ছিল?’

    ‘বড়জোর আধ টন। আরও কমছিল উত্তোলন।’

    ‘উত্তোলন বাড়াবার কোনও উপায় আছে?’

    ‘না বললেই চলে।’

    অসন্তুষ্ট হয়ে নাক দিয়ে মৃদু আওয়াজ করলেন লাও-শি। ‘তা হলে সাগরের নিচে গর্ত খুঁড়ে অত টাকা আর সময় ব্যয় করলাম কেন আমরা? এর কী কারণ?’

    চাপা শ্বাস ফেলল লো হুয়াং লিটন। ভেবেছিল তার পক্ষেই থাকবেন বৃদ্ধ। খনি থেকে সোনালি শিখা তোলার সময় থেকেই এতদিন প্রধান সাহায্যকারী ছিলেন লাও-শি। প্রথম থেকেই জানেন, চৈনিক যুদ্ধ-কৌশলে কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ওই অ্যালয়।

    ‘বিলিয়ন বিলিয়ন ইউয়ান আর প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে বা হবে, কিন্তু ওই ‘ওর’ এমনই জিনিস, আমাদের হাতে না এলেই নয়,’ বলল লো হুয়াং। ‘আপনি তো জানেন, প্রভু, সোনালি শিখা পৃথিবীর আর কোনও ধাতুর মত নয়। আগে কখনও কেউ দেখেনি এ জিনিস। টাইটেনিয়ামের পাঁচ গুণ শক্ত। পৃথিবীর অন্য কোনও ধাতু থেকে একেবারে আলাদা। তৈরি সম্ভব নয় কোনও ল্যাবোরেটরিতে। ওটার তুলনা নেই। আমরা যদি একবার ওই জিনিস দিয়ে তৈরি করতে পারি যুদ্ধ বিমান, জাহাজ বা মিসাইল, ধরে নেয়া যায় যতই চেষ্টা করুক শত্রুপক্ষ, ধ্বংস করতে পারবে না ওগুলোকে। আরও হাজার হাজার যেসব ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে লাগবে সোনালি শিখা, বাদ দিলাম সেসবের কথা। ওই খনি ছাড়া দুনিয়ার আর কোথাও নেই সোনালি শিখা। আপনি তো জানেন, লাও-শি। খরচ এখানে বিষয় নয়। নতুন করে আবারও খনি চালু না করার উপযুক্ত কোনও কারণ নেই।’

    কড়া চোখে হুয়াংকে দেখছেন লাও-শি।

    বিলিয়নেয়ার ভাবছে, বোধহয় বেশি বলে ফেলেছে সে।

    ‘কী করা উচিত আমাকে শেখাতে এসো না,’ বললেন বৃদ্ধ।

    মাথা নিচু করে নিল লো হুয়াং। ‘আমি বেশি কথা বলে থাকলে দয়া করে মাফ করবেন, লাও-শি।’

    চোখের শেকল থেকে বিলিয়নেয়ারকে ছেড়ে আবারও খেলায় মন দিলেন বৃদ্ধ। ঠিক জায়গায় রাখলেন আরেকটা কালো গুটি। ‘তোমার কথা আংশিক সঠিক। ওই উপাদান সত্যিই খুলে দেবে চিনের ভবিষ্যতের পথ। তামার চেয়ে বেশি কাজে লেগেছে ব্রোঞ্জ। ওটা ছিল তখন সেরা। আর পরে ওটার চেয়ে বেশি লোহা। মানুষের ইতিহাসে দেখবে সহজ একটা গল্প— যাদের তলোয়ার বেশি ধারালো, শক্ত আর মজবুত, সে জাতি কেড়ে নিয়েছে অন্যসব জাতির সম্পদ। এ কথা ঠিক, যে দেশের হাতে থাকবে সোনালি শিখা, তারাই হবে পৃথিবীর সেরা জাতি। কিন্তু হিসেবে একটা ভুল করে ফেলেছ তুমি। ফুরিয়ে যাওয়া খনিতে নতুন করে কাজ শুরু করা হবে বড় ভুল।

    ঘাড় কাত করে গুরুকে দেখল লো হুয়াং। ‘কিন্তু আর কোথাও তো নেই ওটার ডিপোযিট!’

    ‘এখনও পাওয়া যায়নি,’ জবাবে বললেন লাও-শি।

    ‘সম্মানের সঙ্গে বলছি, লাও-শি, বছরের পর বছর ধরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে সোনালি শিখা খুঁজতে লোক পাঠিয়েছি আমি। কোথাও পাওয়া যায়নি এক তিল। না আফ্রিকা, না দক্ষিণ আমেরিকা, না মধ্যপ্রাচ্য। আমাদের নিজেদের দেশে বা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সব দ্বীপে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি আমরা। কোথাও নেই সোনালি শিখা। দশ হাজার কোর স্যাম্পল তুলেছি সাগর থেকে। সেখানেও নেই। আছে শুধু ওই খনিতে।’

    ‘কথা ঠিক,’ বললেন যেইন নিং। ‘তবে ক’দিন আগে জানলাম, থাকতে পারে অন্য উৎস। যা ভেবেছি, তার বহু কাছেই আছে ওই খনি।’ খেলার বোর্ড দেখালেন তিনি। ‘এবার তোমার দান।

    বোর্ডের দিকে তাকাল লো হুয়াং লিটন। কঠিন হলো খেলায় মন দেয়া। সোনালি শিখার বিষয়ে নতুন তথ্য পেয়ে চমকে গেছে সে। বোর্ডে মনোযোগ দিয়ে দেখল, করুণ হাল তার। সাদা গুরুত্বপূর্ণ সব গুটিকে ঘিরে ফেলেছে কালো একদল গুটি। সাদা গুটি অন্যদিকে সরাতে গেলে আরও জোরালো অবস্থানে যাবেন লাও-শি। এখন হেরে যাওয়া থেকে বাঁচতে হলে প্রার্থনা করতে হবে, যাতে বড় কোনও ভুল করেন বৃদ্ধ। ‘এবারের চাল দেব না,’ জানাল বিলিয়নেয়ার।

    ‘বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত,’ মাথা দোলালেন যেইন নিং।

    ‘দয়া করে কি বলবেন, কোথায় আছে অন্য খনিটা?’

    লো হুয়াং লিটনের দিকে চেয়ে সামান্য দ্বিধা করলেন বৃদ্ধ, দু’আঙুলে ধরেছেন কালো এক গুটি। ‘ওই খনি আছে হনশু দ্বীপে কোথাও।’

    একটু পর বলল বিলিয়নেয়ার, ‘জাপান? ওদের হোম আইল্যাণ্ডে?’

    ‘হতে পারে সাগরে,’ বললেন লাও-শি। ‘তবে সম্ভাবনা বেশি দ্বীপেই আছে। আর আমার ভুল না হলে সোনালি শিখা আছে মাটির সামান্য নিচে।

    কথা বলা হয়েছে আবেগহীন কণ্ঠে, কিন্তু শ্বাস আটকে গেল লো হুয়াঙের। ‘কী করে জানলেন, গুরু? আরও বড় কথা, সোনালি শিখা কীভাবে পাব আমরা? যদি খুঁজতে গিয়ে জানাজানি হয়, কর্তৃপক্ষ এমন ব্যবস্থা নেবে, আর কখনও ওখান থেকে তুলতে পারব না। হয়তো জাপানিরা সোনালি শিখার খনি বিক্রি করবে আমেরিকান সরকারের কাছে। সেক্ষেত্রে ওই ধাতুর ওপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। ব্যাপারটা হবে ডিপোযিট খুঁজতে গিয়ে শত্রুর হাতে সব তুলে দেয়া।’

    ‘কথা ঠিক,’ বললেন যেইন নিং। এ কারণেই ওই তথ্য পাওয়ার পরেও খোঁজখবর নিইনি আমরা।’

    ‘তার মানে চালমাত অবস্থা,’ বলল লো হুয়াং।

    ‘সত্যিই কি তাই?’ হাত বাড়িয়ে কাপ থেকে মুঠো ভরা কালো গুটি নিলেন লাও-শি। নরম সুরে বললেন, ‘বলো তো, আসলে কী উদ্দেশ্য এই খেলার?’

    হতাশা পেয়ে বসেছে লো হুয়াং লিটনকে। বুঝে গেল, বহুবারের মত আজও ওকে অদ্ভুত কোনও কৌশল শেখাতে চান জ্ঞানী বৃদ্ধ। তবুও খুশি হতে পারল না সে। ‘এই খেলার প্রধান উদ্দেশ্য শত্রুকে ঘিরে ফেলা। যাতে করে সে আর স্বাধীন থাকতে না পারে। অর্থাৎ, তাকে জলে, স্থলে, আকাশে, সাগরে শেষ করে দেয়া হবে।’

    ‘ঠিক,’ মাথা নাড়লেন লাও-শি। ‘বলো তো, এই খেলার সেরা খেলোয়াড় কোন্ দেশের?’

    ‘চিনের?’ জানতে চাইল বিলিয়নেয়ার। ‘আমরাই তো বোধহয় আবিষ্কার করেছি এই খেলা।’

    ঠিক জায়গায় একটা কালো গুটি রাখলেন বৃদ্ধ। ‘তুমি কথা বলছ অহঙ্কার থেকে। এটা জ্ঞানীর আচরণ নয়।’

    ‘আমরা যদি না হই, তো জাপানিরা।’

    আবারও মাথা নাড়লেন যেইন নিং।

    চুপ করে থাকল লো হুয়াং লিটন। দান ছেড়ে দিল।

    এবার বোর্ডে আরেকটা কালো গুটি রাখলেন জ্ঞানী বৃদ্ধ।

    ভুরু কুঁচকে ফেলল বিলিয়নেয়ার। বাজেভাবে হারছে সে। আবারও দান ছাড়ল। হতাশা ও বিরক্তি চেপে নরম সুরে বলল, ‘কোরিয়ায় নামকরা অনেক খেলোয়াড় আছে।

    ‘বর্তমানে সেরা খেলোয়াড় আমেরিকা,’ বললেন লাও-শি। ‘আসলে পৃথিবীর যে-কোনও দেশের মানুষের চেয়ে অনেক চাতুর্যের সঙ্গে খেলছে আমেরিকানরা। কোনওকালে এত দক্ষতা নিয়ে খেলেনি অন্য কোনও দেশ।’

    ভুরু কুঁচকে অন্যদিকে চেয়ে বলল হুয়াং লিটন, ‘সত্যিই কি তাই, গুরু? আমি আজও দক্ষ কোনও আমেরিকানকে দেখিনি।’

    ‘কারণ, ভুলভাবে দেখছ এই বোর্ড,’ বললেন যেইন নিং। ‘আবারও খেলায় মন দাও। ভাবো এটা মানচিত্র।’

    দ্বিধা নিয়ে নতুন করে বোর্ড দেখছে লো হুয়াং লিটন। কিছুক্ষণ পর তার মনে হলো, এই বোর্ডের সঙ্গে অনেক মিল বিশ্বের মানচিত্রের। পশ্চিমা মানচিত্রের মত মাঝখানে নেই নর্থ আমেরিকা, তার বদলে মাঝে এশিয়ার মহাচিন।

    হুয়াঙের সাদা গুটি মাঝের চিন। একদিকের কালো গুটি ইউরোপ আর নর্থ আমেরিকা।

    কিছু বলার আগেই আবারও মুখ খুললেন লাও-শি, ‘ইউরোপে তারা রেখেছে সেনাবাহিনী।’ আরেকটা কালো গুটি রাখলেন বৃদ্ধ। ‘তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আটলাণ্টিক, ভূমধ্য সাগর আর ভারত মহাসাগর। ঘাঁটি করেছে মধ্যপ্রাচ্যে। আগে যেসব জায়গায় ছিল কমিউনিস্ট রাশার সেনাবাহিনী, সেখানে এখন তাদের সেনাবাহিনী। প্রশান্ত মহাসাগরের যে-কোনও জায়গা থেকে তারা আকাশে তুলতে পারবে আমেরিকান জঙ্গিবিমান।’

    এখন খেলা নিয়ে ভাবছেন না যেইন নিং। জটিল বিদ্যা দিচ্ছেন প্রিয় স্যাঙাৎকে। একের পর এক আমেরিকান অ্যাসেটের নাম বলে ঠিক জায়গায় রাখছেন কালো গুটি ‘হাওয়াই, অস্ট্রেলিয়া, নিউ যিল্যাণ্ড।’ রাখলেন আরও তিনটে কালো গুটি। ‘এবার কোরিয়া, ফিলিপাইন আর ফর্মোযা— যেটা তারা বলে তাইওয়ান— তারপর আছে জাপান।

    বোর্ডের শেষ কালো গুটি রাখার পর দেখা গেল লো হুয়াঙের সাদা গুটির চিনকে ঘিরে ফেলেছেন জ্ঞানী বৃদ্ধ।

    মুখ তুলে স্যাঙাৎকে দেখলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কোনও আবেগ বা দুর্বলতা নেই। ‘নিজেদের দ্বীপের মত মহাদেশ থেকে পুরো পৃথিবী ঘিরেছে তারা। অথচ, এই পৃথিবীটা হওয়ার কথা ছিল আমাদের।’

    আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গেছে লো হুয়াং লিটনের। ব্রিত বোধ করছে। ‘জী, বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা কী করব?’

    বোর্ডের দিকে আঙুল তাক করলেন যেইন নিং। ‘ঠিক কোন্ গুটি আগে সরিয়ে ফেলা জরুরি বলে বোধ করছ?’

    নতুন করে খেলায় মন দিল বিলিয়নেয়ার। শেষ চালটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওটার কারণেই বৃত্তের ভেতর আটকা পড়েছে সাদা গুটির তৈরি চিন। বোর্ড থেকে একটা গুটি সরিয়ে বলল লো হুয়াং লিটন, ‘সেটা এটা। জাপান।’

    ‘তা হলে তা-ই হোক,’ বললেন প্রাচীন শিক্ষক।

    যেইন নিং কী ইঙ্গিত করেছেন, সেটা বুঝে চমকে গেছে বিলিয়নেয়ার। ধক-ধক করছে হৃৎপিণ্ড। ‘গুরু, আপনি কি চান সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে?’

    ‘না,’ বললেন যেইন নিং। ‘কিন্তু একবার যদি কালো গুটি থেকে সাদা গুটি হয়ে যায় জাপান— অর্থাৎ আমেরিকার বন্ধুত্ব ত্যাগ করে হয়ে ওঠে চিনের বন্ধু— এক পলকে পাল্টে যাবে বোর্ডের পুরো চিত্র। তখন অনায়াসেই চারপাশ থেকে সরাতে পারব আমেরিকান কর্তৃত্ব। শুধু তাই নয়, কোনও বাধা ছাড়াই পৃথিবীর একমাত্র খনি থেকে তুলব সোনালি শিখা।’

    ‘আমরা কি কাজটা করতে পারব, গুরু?’ জানতে চাইল লো হুয়াং লিটন। ‘যুদ্ধকালীন অপরাধ আর বিতর্কিত এলাকা নিয়ে জাপানের সঙ্গে আমাদের শত শত বছরের শত্রুতা।’

    ‘আমরা কাজ শুরু করেছি,’ বললেন যেইন নিং। ‘আর এ কাজে বড় ভূমিকা রাখতে পারো তুমি।’

    ‘আমি অর্ধেক জাপানি বলে?’

    ‘হ্যাঁ,’ মাথা দোলালেন বৃদ্ধ। ‘তবে আরও কারণ আছে। তোমার কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়াররা আবিষ্কার করেছে নতুন সব টেকনোলজি।’

    গলা খুলে কাশছেন না চিনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। আসলে কী চান, আঁচ করতে পারল না লো হুয়াং লিটন। তবে বুঝল, পরে বিস্তারিতভাবে সবই খুলে বলবেন লাও-শি। এখন জানাতে হবে, তাঁর সঙ্গে আছে সে। ‘নিজ দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করব না। আপনি আমাকে যে-কোনও নির্দেশ দিতে পারেন, গুরু’

    ‘ভাল, মঙ্গল হোক তোমার,’ সন্তুষ্ট হলেন যেইন নিং। ‘নানাদিক থেকে চাই সাহায্য। সেসবের ভেতর রয়েছে দরকারি মেশিন। সেগুলো হতে হবে মানুষের মত। রোবট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বছরের পর বছর আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে তোমাকে। এবার জানাবে, কতটা এগোল প্রজেক্ট। …তুমি কি তৈরি করতে পারবে মানুষের মত রোবট? ওই জিনিস হতে হবে এমন, যাতে মানুষ বুঝতে না পারে ওটা যন্ত্রমানব।’

    আন্তরিক হাসল লো হুয়াং। বুঝে গেছে, আবারও হাতে পাবে ব্ল্যাঙ্ক চেক। কয়েক বছর ধরে জটিল এই পরিকল্পনা করেছেন যেইন নিং। ‘আমরা প্রায় শিখে গেছি কীভাবে তৈরি করতে হবে মানুষের মত রোবট।’

    ‘গুড,’ মাথা দোলালেন লাও-শি। বোর্ড থেকে তুলে দুটো কাপে রাখলেন সাদা ও কালো গুটি। ‘যাওয়ার পথে পাবে আমার সেক্রেটারির কাছ থেকে প্যাকেজ। ভেতরে থাকবে নির্দেশনা। তোমার প্রথম মিটিং নাগাসাকিতে। বন্ধুত্ব দেখাতে ওখানে খুলবে ফ্যাক্টরি। ওই চুক্তি ফ্রেণ্ডশিপ প্যাভিলিয়নে হওয়ার পর শুরু হবে বিজয়ের সোনালি পথে আমাদের হেঁটে যাওয়া। আর, ওই ফ্যাক্টরি হবে শুধু তোমার। ওখান থেকেই সারবে জরুরি কাজ।’

    উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়াল লো হুয়াং। ‘কিন্তু, কোনও কারণে আমাদের কাজে বাধা দেয়া হলে?’

    ‘কিছুই জানবে না কেউ,’ বললেন নিং। ‘মনে রেখো, যে খেলা আমরা খেলব, সেখানে বোকামির স্থান নেই। হয় শেষ করব শত্রু, নয়তো মরব। বাধা এলে নিশ্চিত করবে, যেন ব্যর্থ হয় বিপক্ষ।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী
    Next Article মাসুদ রানা ৪৩৫ – মৃত্যুদ্বীপ

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.