Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প414 Mins Read0

    মহাপ্লাবন – ৩০

    ত্রিশ

    কয়েক ঘণ্টা হলো জাপানের পাহাড়ি অঞ্চলে ওরে চিচিওয়ার পিছু নিয়েছেন পুলিশ সুপারইন্টেণ্ডেণ্ট হিমুরা। সুচারুভাবে কাজ করছে ট্র্যাকিং কয়েন। দারুণ ইলেকট্রনিক্স ডিযাইন, প্রতি ত্রিশ সেকেণ্ড পর একটা করে পাল্স্ পাঠাচ্ছে সেল ফোন ব্যাণ্ডে। সত্যিকারের কয়েন থেকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব।

    জাপানের সেল টাওয়ারের বিশাল নেটওঅর্কের কারণে বহু দূর থেকেও জানা যাবে, যার পিছু নেয়া হয়েছে, কোথায় আছে লোকটা। ইলেট্রনিক কয়েন পাঠাচ্ছে সঠিক জিপিএস কোঅর্ডিনেশন।

    সিগনাল অনুযায়ী টোকিও থেকে বেরিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে চলেছেন হিমুরা। অনেকক্ষণ পর একটা পেট্রল স্টেশনে থামল ওরে চিচিওয়া। তেল নেয়ার পর ঢুকল রেস্টরুমে। এ সুযোগে তার গাড়ির বাম্পারে দ্বিতীয় ট্রান্স- মিটার প্ল্যান্ট করলেন পুলিশ সুপার।

    এখন সিগনাল দিচ্ছে দুটো ট্র্যান্সমিটার, চট্ করে পালাতে পারবে না লোকটা— একটা খরচ করে ফেললে থাকবে আরেকটা। পিছিয়ে গেলেন হিমুরা। ঠিক করেছেন প্রথম সুযোগেই গ্রেফতার করবেন খুনিটাকে।

    তবে বিস্মিত হতে হলো তাঁকে। নতুন করে রওনা হয়ে আরও ওপরের পাহাড়ি এলাকার দিকে চলল ওরে। মনে হলো গন্তব্য ফুজি মাউন্টেনের টিলার দিকে। প্রায় অব্যবহৃত সরু এক পথে একঘণ্টা চলার পর থামল ওরে চিচিওয়া।

    স্যাটেলাইট ইমেজ দেখলেন উবোন হিমুরা। এদিকটা জঙ্গলে ভরা টিলাটক্কর এলাকা। তারই মাঝে হলদে দাগটি বনের মাঝে ছোট একটা গেস্ট হাউস। ওখানে রয়েছে প্রাকৃতিক ওনসেন বা উষ্ণপ্রস্রবণ। ওই পানিতে আছে নানান মিনারেল। কেউ কেউ বলেন, ওখানে গোসল করলে সারবে সব রোগ। কিছুটা দূরে শিনটো মন্দির।

    গেস্ট হাউস পাশ কাটিয়ে অন্তত দু’মাইল এগিয়ে তারপর থামলেন হিমুরা। পেরোল আধঘণ্টা, জায়গা থেকে নড়ল না দুই ট্র্যান্সমিটার। মনে সন্দেহ আসতেই ফিরতি পথে চললেন তিনি। জঙ্গলের মাঝ দিয়ে হেঁটে পৌঁছুলেন গেস্ট হাউসের কাছে।

    পার্কিং লটে অন্তত বিশটা গাড়ি। আছে ওরে চিচিওয়ার গাড়িটাও। গেস্ট হাউস ভাল ব্যবসা করছে বলে বিস্মিত হলেন না হিমুরা। কাছেই পাহাড়ি উষ্ণ প্রস্রবণ, সামান্য দূরেই শিনটো মন্দির। সত্যিকারের আকর্ষণীয় পাহাড়ি এলাকা। প্রতিবছর জাপানের এদিকে ঘুরতে আসে প্রায় দশ লাখ পর্যটক। অবশ্য, পাহাড়ি ওই মন্দির খুবই ছোট, নির্জন এবং প্রায় অচেনা।

    কমপিউটার ঘেঁটে হিমুরা জেনেছেন, সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেয়া হয় না ওই মন্দিরে। বিস্মিত হয়েছেন তিনি, ওরে চিচিওয়ার মত লোক কেন ওখানে যাচ্ছে!

    নতুন গাড়িতে চেপে সে চলে গেছে কি না, বোঝার জন্যে ট্র্যান্সমিটারের লোকেশন দেখলেন তিনি।

    না, গেস্ট হাউস থেকেই পাল্স্ পাঠাচ্ছে নকল কয়েন।

    চিচিওয়া ওখানে আছে নিশ্চিত হয়ে বিশ্বস্ত অফিসারকে কল দিলেন হিমুরা। ‘পাহাড়ি মন্দিরের কাছে চিচিওয়া। চলে – এসো তোমার সেরা দু’জনকে নিয়ে। আজ রাতেই গ্রেফতার করব তাকে।’

    কিছুক্ষণ পর দলের লোক পৌঁছে যাবে। গলা থেকে টাই আলগা করে অপেক্ষা করতে লাগলেন হিমুরা।

    .

    ছোট্ট ঘরের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে জানালার পর্দা ফাঁক করে দেখছে ওরে চিচিওয়া। ওই যে, দেখা যাচ্ছে পার্কিং লটে কেউ নেই। রাস্তাও ফাঁকা

    পর্দা ছেড়ে স্বাভাবিক পোশাক খুলে আলখেল্লা পরে নিল ওরে। বেরিয়ে এল গেস্ট হাউসের পেছন পথ ব্যবহার করে। হাতের ভাঁজে রাখা জ্যাকেটের চোরা পকেট থেকে নিল ছোট একটা কেস। বের করল থ্রোয়িং নাইফ। কেস পকেটে রেখে একবার লুফে নিল ছোরাটা। ঘড়ি দেখল। যথেষ্ট সময় আছে হাতে।

    গেস্ট হাউসের পেছনের সরু মাটির পথ গেছে ওপরে মন্দিরের দিকে। একটু দূরেই উষ্ণ প্রস্রবণ। ওখানে পৌঁছে পোশাক ছেড়ে বলকে ওঠা পানিতে নামল সে। তপ্ত, ভেজা পাথরে পিঠ রেখে অপেক্ষায় থাকল।

    কিছুক্ষণ পর ওপরের পথে দেখল একজনকে। কুয়াশা থেকে বেরিয়ে এসেছে সে। পরনে সাদা আলখেল্লা। মাথায় কালো হ্যাট। জাপানে বলে কাক টুপি বা কারাসু। যে-কোনও শিনটো সাধুর প্রিয় পোশাক সাদা আলখেল্লা ও কারাসু।

    মন্দিরের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁদেরকে সম্মান দিয়ে বলা হয় শিনসোকু।

    ‘শিনসোকু,’ ভক্তি ভরা সুরে ডাকল ওরে।

    ঈশ্বরের নিযুক্ত লোকটি এগিয়ে এলেন তার দিকে।

    ‘মনে হচ্ছিল হয়তো শেষে এলেনই না,’ বলল ওরে।

    ওর গায়ের রঙিন উল্কি দেখে গম্ভীর হলেন সাধু। ‘তো তুমিই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলে?’

    ‘জী,’ মাথা দোলাল ওরে।

    ‘তুমি চাও সব নিয়ম মেনে পবিত্র হতে,’ বললেন বৃদ্ধ।

    ‘আমার চেয়ে বড় পাপী কেউ নেই, শিনসোকু, বলল ওরে।

    মাথা দোলালেন সাধু। ‘ভয় পেয়ো না, দায়িত্ব পালনে পিছিয়ে যাব না আমি। চেষ্টা করব তোমার সব পাপ দূর করে দিতে।’

    ‘এরই ভেতর গোসল করেছি,’ জানাল ওরে, ‘এবার কী করতে হবে, শিনসোকু?’

    ‘আলখেল্লা পরে নাও, তারপর পিছু নেবে। পথ দেখিয়ে দেব।’

    গরম পানির ঝর্না থেকে উঠে আলখেল্লা পরল ওরে। পায়ে এখন রাবারের স্যাণ্ডেল। বাম হাতের ভাঁজে নিজের পোশাক। চারপাশে জঙ্গল। মাঝ দিয়ে গেছে পাহাড়ি, সরু রাস্তা। শিনসোকুর পিছু নিয়ে হেঁটে চলল সে। পেছনে পড়ে রইল গেস্ট হাউস।

    আধমাইল পেরোবার পর দু’পাশে পড়ল বাঁশের ঝাড়। ওটা পেরোবার আগেই পড়ল সিঁদুর রঙা এক দরজা বা টোরি দু’পাশে লাল-কমলা রঙের খাড়া দুটো খুঁটি। কালো লিন্টেল থেকে ঝুলছে লণ্ঠন। সে আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে কুয়াশা ভরা পথ।

    প্রথম টোরি পেরোবার পর দ্বিতীয় এবং এরপর তৃতীয় টোরি পেরোল ওরে। এসব দরজা কোনওটা অতি পুরনো, আবার কোনওটা নতুন মনে হলো। প্রতিটি দরজায় খোদাই করা হয়েছে কিছু বংশের নাম। এসব পরিবারের লোক ও মহিলারা সাধুদের মাধ্যমে সাহায্য চেয়েছেন ঈশ্বরের কাছে।

    ‘এ কি সত্যি, একসময়ে টোকাগাওয়া পরিবার সাহায্য করতেন এই মন্দির কর্তৃপক্ষকে?’ জানতে চাইল ওরে।

    ‘টোকাগাওয়া?’ মাথা নাড়লেন যাজক। ‘না, মুখে মুখে কত কথাই ছড়িয়ে পড়ে!

    টিলার ওপরে উঠে এল সাধু ও ওরে। সামনের জমি সমতল। শেষ দরজা পেরোতে দূরে দেখা গেল মন্দিরটা। সামনে আছে ছোট এক উপাসনালয়। ওই কাঠামোর নিচে প্রার্থনার বেদি। একপাশে পানিতে ভরা বড় চৌবাচ্চা। ওটা পেরিয়ে মন্দিরে যেতে হলে পাশ কাটাতে হবে পাথরে খোদাই করা ভয়ানক চেহারার দুটো জন্তুকে।

    মন্দিরের দিকে পা বাড়াল ওরে। কিন্তু বলে উঠলেন শিনটো সাধু, ‘আবারও সাফ করতে হবে শরীর।’

    ভীষণ রেগে গেল ওরে। এই শালা নির্দেশ ঝাড়ছে, শেখাচ্ছে ও কী করবে আর কী করবে না!

    ‘আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি, গোসল করেছি।’

    ‘হাত পরিষ্কার খুবই জরুরি,’ বললেন শিনসোকু।

    সরু এক নালা বেয়ে তিরতির করে নিচের চৌবাচ্চায় পড়ছে পানি। বিরক্ত হয়ে কাপড়চোপড় রেখে হাত ধুতে লাগল ওরে। পানি বরফের মত ঠাণ্ডা। হাজার গুণে ভাল ছিল নিচের ওই গরম ঝর্না!

    পানি থেকে হাত তুলে কড়া চোখে সাধুকে দেখল ওরে। ‘আপনাদের জন্যে কিছু উপহার নিয়ে এসেছি।’

    ‘মুখও পরিষ্কার করবে,’ বললেন শিনসোকু।

    কথাটা পাত্তা দিল না ওরে। জ্যাকেটের পকেট থেকে নিল লো হুয়াং লিটনের সোনালি চিপ। ঠিক করেছে ওটা নিজের সঙ্গেই রাখবে।

    ‘ওটা কী?’ জানতে চাইলেন সাধু।

    ‘এটা আমার পুরনো জীবনের স্মৃতি।’

    কড়া মাস্টারের দৃষ্টিতে ওকে দেখলেন সাধু। ‘তার মানে আইনের দৃষ্টিতে তুমি অপরাধী।’

    অতীত ও ভবিষ্যৎ একইরকম হোক, ভাবল ওরে। নরম সুরে বলল, ‘অতীত ভুলে গড়তে চাই নতুন জীবন। আপনার কাজ তো আমার মত মানুষকে সাহায্য করা, তাই না?’

    ‘তা ঠিক,’ বললেন শিনসোকু। তুলে নিলেন পানি ভরা বড় একটা ডাবু। ধরিয়ে দিলেন ওরের হাতে। ‘পাপ মোচন করতে হলে আগে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে মুখ।’

    যথেষ্ট হয়েছে, ভাবল ওরে। বিরক্ত হয়ে ছুঁড়ে ফেলল পানি ভরা ডাবু। এক পা সামনে বেড়ে খপ্ করে ধরল বুড়ো মানুষটার ঢিলা আলখেল্লার ওপরের অংশ।

    ‘তোমার ওপর শয়তান ভর করেছে,’ শান্ত স্বরে বললেন শিনসোকু।

    ‘আপনি কিছুই জানেন না,’ ঘড়ঘড়ে গলায় বলল ওরে। ‘শয়তানের বাপও পালিয়ে যায় আমাকে দেখলে। এবার নিয়ে চলুন মন্দিরে। দেখাবেন কী রেখে গেছে টোকাগাওয়া পরিবারের লোকজন।

    পিছলে সরতে চাইলেন সাধু। কিন্তু তাঁর সাধ্য নেই যে ওরের সঙ্গে গায়ের জোরে পারবেন। থমকে থমকে বললেন, ‘মন্দিরে চোর-ডাকাতের কাজে লাগবে এমন কিছুই নেই। আছে শুধু জ্ঞান। কিন্তু সেটা তো তুমি চাও না।’

    ‘কী আছে আর কী নেই, সেটা ঠিক করব আমি,’ বলল ওরে।

    নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেন সাধু, কিন্তু তাঁর মাথা ধরে চৌবাচ্চার পাথরের দেয়ালে প্রচণ্ড জোরে ঠুকে দিল ওরে। প্রায় অচেতন হয়ে পড়লেন বৃদ্ধ। নড়বেন সে সাধ্য নেই। হ্যাঁচকা টানে তাঁর আলখেল্লার গলার দিকটা সরাল ওরে। বৃদ্ধের গলার সুতলিতে ঝুলছে রিং। ওখানে আছে কয়েকটা চাবি। টান দিয়ে সুতলি ছিঁড়ে রিং মুঠোয় পুরল ওরে।

    গলায় ব্যথা পেয়ে কাতরে উঠলেন সাধু। কিন্তু তখনই তাঁর মুখ চেপে ধরল নিষ্ঠুর খুনি। পরক্ষণে দু’হাতে ধরে প্রচণ্ড এক মোচড় দিল সাধুর ঘাড়ে। সামান্য নড়ে উঠে থেমে গেলেন নিরীহ মানুষটা। ঘাড় থেকে হাত সরিয়ে নিতেই মাটিতে পড়ল দেহটা। চট্ করে চারপাশ দেখল ওরে। বাঁশের ঝাড়ের মাঝ দিয়ে হু-হু করে বইছে শীতল হাওয়া। এ ছাড়া কোথাও কোনও আওয়াজ নেই।

    আশপাশে কেউ নেই। সাধুর পোশাক খুলে নিজে পরল ওরে। বেশ টাইট হয়েছে হালকা মানুষটার কাপড়। চেষ্টা করেও মাথায় পরতে পারল না কাক হ্যাট। থুতনিতে আটকে নিল স্ট্র্যাপ। মুচড়ে গিয়ে বেকায়দাভাবে ঝুলতে লাগল কারাসু।

    মন্দিরের দিকে পা বাড়াবার আগে চৌবাচ্চার পানিতে উলঙ্গ সাধুর লাশ ফেলল ওরে। বিড়বিড় করল, ‘এবার, শিনসোকু শালা, নিজেই তুই গোসল করতে থাক্!’

    অপরাধের চিহ্ন মুছে যেতেই ক্যাসিনো থেকে পাওয়া পেতলের চিপ্ জ্যাকেটের পকেটে রাখল ওরে। নিজের পোশাক নিয়ে খাড়া পথে হেঁটে চলল মন্দির লক্ষ্য করে।

    .

    পাশে এসে খয়েরি ভ্যান থামতেই খুশি হয়ে উঠলেন পুলিশ সুপার উবোন হিমুরা। গাড়ি থেকে নেমে পড়ল তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্ট এবং সাদা পোশাকের দুই পুলিশ অফিসার।

    ‘এখনও গেস্ট হাউসে?’ জানতে চাইল লেফটেন্যান্ট।

    একটু দূরের টিলা দেখালেন হিমুরা। ‘মন্দিরের দিকে গেছে।’

    সন্দেহের ছাপ পড়ল লেফটেন্যান্টের চেহারায়। ‘ওরের মত লোক মন্দিরে কী করছে?’

    ‘মনে হয় না পাপ মোচনের জন্যে গেছে,’ বললেন সুপারইণ্টেণ্ডেণ্ট।

    ‘স্যর, আপনি শিয়োর ওই লোকই ওরে চিচিওয়া?’

    ‘দু’বার দেখেছি। মিস্টার সোহেলের বর্ণনা করা ওই লোকই।’ কাঁধ ঝাঁকালেন হিমুরা। ‘জীবিত ধরতে চাই। ঝামেলা হবে মনে হয় না। পাহাড়ে কোনও সিভিলিয়ান নেই।’

    মৃদু মাথা দোলাল লেফটেন্যান্ট। সঙ্গে আছে পিস্তল এবং শক-স্টিক। লাঠির মত জিনিসটা হাই পাওয়ারের টেইযার। শক দিলে অবশ হবে যে-কেউ। অন্য দুই অফিসারের কাছে হেকলার অ্যাণ্ড কচ সাবমেশিন গান। প্রায় এমপি ফাইভের মত, তবে ব্যারেল আরও খাটো। মুখোমুখি লড়ার জন্যে উপযুক্ত অস্ত্র।

    নিজের পিস্তল বের করলেন হিমুরা। অধৈর্য হয়ে গেছেন অপেক্ষা করতে করতে। চাপা স্বরে বললেন, ‘চলো!’

    নিঃশব্দে হেঁটে ওনসেন বা উত্তপ্ত ঝর্নার কাছে পৌঁছুলেন তাঁরা। খাড়াই পথে দু’পাশে পড়ল বাঁশের ঝাড়। কিছুক্ষণ পর হাজির হলেন প্রথম টোরির সামনে। হাঁটার গতি না কমিয়ে পৌছে গেলেন চৌবাচ্চার কাছে। ওখানে থামলেন।

    আরাধনার বেদিতে গুঁজে রাখা হয়েছে হোটেলের আলখেল্লা।

    ‘কিছুক্ষণ আগেও ওটা ছিল ওরের পরনে,’ বললেন হিমুরা, ‘তার মানে নতুন পোশাক পরে নিয়েছে।’

    চৌবাচ্চার পাশ থেকে বলল তরুণ এক অফিসার। ‘স্যর, দেখুন!’

    অন্য তিন অফিসার গেলেন তার পাশে। চৌবাচ্চায় তাকাতেই দেখলেন পবিত্র করার পানির নিচে লাশ হয়ে শুয়ে আছেন এক সাধু।

    দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হিমুরা। ‘কারও মনে সন্দেহ আছে, আমরা পিছু নিয়েছি সাক্ষাৎ শয়তানের?’

    ‘স্যর, এখনও সিগনাল পাচ্ছেন?’ জানতে চাইল লেফটেন্যান্ট।

    ট্যাবলেটের ডিসপ্লে দেখলেন হিমুরা। পাহাড়ের আশপাশে সেল টাওয়ার নেই যে সিগনাল পাবেন। বাধ্য হয়ে ব্যবহার করলেন ডিরেক্ট সিকিং মোড। সহজেই ট্র্যাক করতে পারলেন নকল কয়েন। ‘মন্দিরে ঢুকেছে।’

    খাড়াই পথে দৌড়ে মন্দিরের উঠানে উঠল চার পুলিশ অফিসার। হাট হয়ে খোলা দালানের সদর দরজা। ভেতরের ঘরে এখানে ওখানে টিমটিম করে জ্বলছে মোমবাতি। পাথরের চুল্লিতে ছোট শিখার আগুন। কোথাও নেই ওরে চিচিওয়া। অন্য কাউকেও দেখা গেল না।

    ‘পরিবেশটা ভাল লাগছে না,’ বলল লেফটেন্যান্ট। ‘চারপাশ অতিরিক্ত নীরব।’

    ‘শিনসোকুরা কোথায় গেলেন?’ আনমনে বলল এক অফিসার।

    জবাবে কিছু বললেন না উবোন হিমুরা।

    এ ধরনের ছোট মন্দিরে অনেক সময় সাধুরা থাকেন না। উপস্থিত হন প্রার্থনার সময়। কিন্তু এখানে মোমবাতি জ্বলছে দেখে বোঝা যাচ্ছে ছিলেন কেউ না কেউ। বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন হিমুরা, আস্তে করে অফ করলেন পিস্তলের সেফটি ক্যাচ। ‘খারাপ কিছুর জন্যে তৈরি হয়ে যাও।’

    মাথা দোলাল লেফটেন্যান্ট। ‘আগে কোন্‌ দিকে যাব, স্যর?’

    স্ক্যানার চেক করলেন হিমুরা। ডিসপ্লেতে জ্বলজ্বল করছে লাল বিন্দু। ‘মন্দিরের পেছনে আছে ওরে। চলো!’

    করিডোর ধরে এগোতেই ক’ফুট দূরে একটা দরজার পাশে এক সাধুর লাশ পেল জাপানি পুলিশ অফিসাররা। মৃতদেহ পড়ে আছে রক্তের পুকুরের ভেতর। পরের ঘরে আরও তিনজনের লাশ। তচনচ করা হয়েছে তৃতীয় ঘর। মিলল আরও দু’জন সাধুর মৃতদেহ। অফিসারদের বুঝতে দেরি হলো না, যাকে পাচ্ছে তাকেই খুন করছে চিচিওয়া

    থমকে গিয়ে হাত দিয়ে গলা কাটার ইশারা করলেন উবোন হিমুরা। অর্থাৎ, গুলি করতে হবে দেখামাত্র। জীবিত ধরতে পারলে ভাল, নইলে কিছুই যায় আসে না খুনিটা মরলে। ঝুঁকি নেয়ার দরকার নেই।

    সাবধানে এগোল পুলিশ অফিসাররা।

    নিঃশব্দে করিডোরের শেষে পৌঁছুলেন সুপারইণ্টেণ্ডেণ্ট হিমুরা। হাতের ইণ্ডিকেটরের স্ক্রিন বলছে, বামের ঘরে রয়েছে ওরে চিচিওয়া।

    মন্দিরে আসার পর প্রথমবার অচেনা মানুষের নড়াচড়ার শব্দ শুনলেন পুলিশ কর্মকর্তা। ক’সেকেণ্ড লাগল মনস্থির করতে, তারপর সামনে বেড়ে লাথি মেরে বামের ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন।

    ডেস্কে ঝুঁকে বসে আছে কালো পোশাক পরা কেউ। ঝট্ করে তার দিকে পিস্তল তাক করেও থেমে গেলেন হিমুরা। না, ওই লোক ওরে চিচিওয়া নয়। বয়স্ক এক সাধু।

    সরু এক ইলেকট্রিকাল কালো তার দিয়ে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে তাঁকে। সামনে ডেস্কে ভাঁজ করা সাদা আলখেল্লা। ওপরে বৃত্তাকার ছোট্ট কয়েন। মাঝে ফুটো। উবোন হিমুরার দেয়া ট্র্যাকিং কয়েন।

    অনেক দেরিতে সচেতন হলেন পুলিশ সুপারইণ্টেণ্ডেণ্ট। পেছনে শুনলেন অস্ফুট আর্তনাদ।

    চরকির মত ঘুরে দেখলেন একটা ঝিলিক। একপাশ থেকে চালানো তলোয়ার কচ্ করে কেটে দিয়েছে তাঁর লেফটেন্যান্টের গলা। পরক্ষণে ওই তলোয়ার কাটল আরেক পুলিশ অফিসারের বাহু।

    আগেই মেঝেতে পড়ে আছে তৃতীয় অফিসার। বুক ভেদ করে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেছে থ্রোইং নাইফ।

    মাত্র একবার গুলি করতে পারলেন হিমুরা। এক সেকেণ্ড পর বুঝলেন মিস করেছেন তিনি। দেয়ালে বিধেছে বুলেট। পিস্তল ধরা হাতের ওপর নামল ঝিলিক দেয়া তলোয়ার। দ্বিতীয়বার ট্রিগার স্পর্শের সুযোগ পেলেন না তিনি। কাটা পড়ল তিন আঙুলের ডগা। পরক্ষণে প্রচণ্ড এক লাথি তাঁর হাত থেকে উড়িয়ে দিল পিস্তল। ঘরের কোণে গিয়ে পড়ল ওটা।

    অস্ত্র ধরতে ডানহাত বাড়িয়ে দিয়ে ডাইভ দিলেন হিমুরা, কিন্তু তাঁর চেয়ে অনেক দ্রুত ওরে চিচিওয়া। পুলিশ অফিসারের পাঁজরে লাগল প্রচণ্ড লাথি। কাত হয়ে ডেস্কের পাশে পড়লেন হিমুরা বুঝে গেলেন, প্রাচীন কোনও তলোয়ারের ধারালো ফলা চেপে বসেছে তাঁর গর্দানে।

    বরফের মূর্তি হলেন হিমুরা। তাঁর দিকে ঠাণ্ডা চোখে চেয়ে আছে ওরে চিচিওয়া।

    যে-কোনও সময়ে খুন হবেন, জানেন হিমুরা। কিন্তু গর্দানে কোপ না দিয়ে তাঁর দিকে চেয়ে হাসল ওরে। এমন ভঙ্গিতে তলোয়ার ধরেছে, যেন পিনে আটকে রাখা কোনও অসহায় পতঙ্গ পুলিশ অফিসার হিমুরা।

    ‘এটা খুঁজছ?’ ট্র্যাকিং কয়েন নিয়ে দেখাল ওরে।

    চুপ থাকলেন হিমুরা। আরেক হাতে শক্ত করে ধরেছেন কাটা আঙুলের ক্ষত। দরদর করে ঝরছে রক্ত। ব্যস্ত হয়ে ভাবছেন, কীভাবে উদ্ধার পাবেন বিপদ থেকে। বুঝতে দেরি হলো না, আগে চাই পিস্তল। একবার ঝাঁপ দিয়ে…..

    তলোয়ারের মোচড়ে টপটপ করে হিমুরার গর্দান থেকে নামল রক্তের ফোঁটা। হাসল ওরে। ‘ভেবেছিলে পিছু নিয়েছ দেখতে পাব না? প্রথম মোড়েই ধরা পড়লে। থামলাম পেট্রল স্টেশনে। দেখলাম আমার গাড়িতে রাখলে বিকন। সত্যি বলছি, বুঝিনি কীভাবে পিছু নিলে। তারপর পেয়ে গেলাম প্রথম কয়েনটাও।’

    ছোট্ট চাকতি ঘষল ওরে। ‘প্রায় আসলের মতই। তবে তফাৎ আছে। এটা একটু হালকা।’

    কয়েনটা উবোন হিমুরার মুখে ছুঁড়ল ওরে।

    ‘খুন করলে করো,’ বললেন দুঃসাহসী অফিসার। ‘তবে নিজেও বাঁচবে না। সাধু আর পুলিশ খুন করেছ। কোথাও পালিয়ে রক্ষা পাবে না। কর্তৃপক্ষ জেনে গেছে তুমি দেখতে কেমন।’

    তলোয়ার দিয়ে হিমুরাকে খুন না করে শক-স্টিকটা বামহাতে নিল ওরে। পরখ করল ওটার ওজন। নরম সুরে বলল, ‘ওরা যখন বুঝবে তুমি কী করেছ, ভুলে যাবে আমার কথা।’

    উবোন হিমুরার বুকে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক দিল ওরে। প্রথমটা সামলাবার আগেই এল দ্বিতীয় ও তৃতীয় শক। ভীষণ ঝাঁকি খেয়ে জ্ঞান হারাচ্ছেন হিমুরা। পরের ক’মিনিট সহ্য করলেন প্রচণ্ড কষ্ট, তারপর তাঁর চোখে নামল ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী
    Next Article মাসুদ রানা ৪৩৫ – মৃত্যুদ্বীপ

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.