Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প414 Mins Read0

    মহাপ্লাবন – ৩৬

    ছত্রিশ

    জোসেফ কার্কের ফোন রাখার পর প্রথমেই বলল সোহেল, ‘বুঝতেই পারছিস, এটা ফাঁদ।’

    মোবাইল ফোন হাতে নিল রানা। ‘ভাল লক্ষণ। যা ভেবেছি, তার চেয়ে বেশি ঝাঁকি খেয়েছে লোকটা। ঝুঁকি থাকলেও এবার সুযোগ পাব তার ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখার।’

    ‘এমন কিছু দেখাবে না, যেটা তোর সন্দেহ বাড়াবে,’ বলল সোহেল। ‘আর একবার তোকে নিজের এলাকায় পাওয়ার পর কী করবে তার ঠিক নেই।’

    ‘ঝুঁকি নিতে আপত্তি নেই আমার,’ বলল রানা। ‘তা ছাড়া, আজ মিটিং করার জন্যে এত ঘেষ্টানোর পর তার নিমন্ত্রণ, এড়িয়ে যাওয়া স্রেফ অন্যায়।’

    ‘হুঁ, অন্যায়, তবে এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ,’ বলল সোহেল।

    ‘আমাকে নিয়ে তোর এত ভয় কীসের?’ চোখ টিপে হাসল রানা।

    ‘এরপর তুই বলবি আমার বোনের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করছি,’ গম্ভীর হয়ে গেছে সোহেল। ‘কিন্তু সত্যিই, তুই ওখানে যাবি ভাবতেই কেমন কু ডাকছে আমার মন।’

    ‘প্রথম সুযোগে আপনাকে খুন করবে,’ নিজের মতামত জানাল হিনা।

    মাথা নাড়ল রানা। ‘আমার তা মনে হয় না। কাকে কী বলে ওখানে গেছি, তার ঠিক আছে? নিজের এলাকায় ডেকে খুন করলে অনেক ঝুঁকি নিতে হবে তাকে। সেটা করবে না সে। আমার ধারণা, চাপা হুমকি দেবে। ঘাবড়ে গিয়ে থাকলে মুখ বন্ধ করাবার জন্যে ঘুষও দিতে চাইতে পারে।’

    ‘দুর্ঘটনায় মারা যেতে পারেন আপনি,’ বলল হিনা।

    ‘সম্ভাবনা তো আছেই,’ বলল রানা। ‘তাই ব্যাক স্টেজে থাকবে সোহেল। বিপদ দেখলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’

    ‘পাগল হলি?’ মাথা নাড়ল সোহেল। ‘আমি তোকে জেনেবুঝে ফাঁদে পা দিতে দেব না।’

    ‘ঝামেলায় পড়লে তুই তো আছিসই,’ বলল রানা। ‘ফ্যাক্টরির ওদিকে আছে টিলা। ওখান থেকে নিচের সবই দেখা যায়। ফ্যাক্টরির ভেতরের দিক দেখবি না, তবে তোকে জানিয়ে দেব বিপদ হলে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবি।’

    ভুরু কুঁচকে ফেলল সোহেল। ‘ও, তুই মৌজ মারবি, আর আমি শালা বাইরে পাহারাদার কুকুর?’

    ‘আমারও যাওয়া উচিত,’ বলল হিনা। ‘আমার দায়িত্ব ছিল পরম গুরু শিমেযুকে নিরাপত্তা দেয়া। এখন মনে হচ্ছে আপনার ব্যাপারেও আমার দায়িত্ব আছে, মিস্টার রানা।’

    মৃদু হাসল রানা। ‘কথাটা বলেছ তাই কৃতজ্ঞ বোধ করছি, হিনা। অনেক ধন্যবাদ। তবে এবারের কাজটা একাই করতে চাই।’

    ‘আপনি চিনা বা জাপানি ভাষা জানেন? ওরা যদি নিজেরা আলাপ করে, বুঝবেন কিছু? আপনি তো কিছুই বুঝবেন না। ফিসফিস করে বলছে কীভাবে খুন করবে আপনাকে, অথচ কিছুই জানলেন না। হতে পারে না?’

    চুপ করে থাকল রানা। হিনাকে জানাল না, জাপানি বা চিনা ভাষা ভালই জানে ও।

    ‘হিনা ঠিকই বলেছে, যাক তোর সঙ্গে,’ বলল সোহেল। ‘একজনের চেয়ে দু’জনের বুদ্ধি বেশি।’

    ‘তা ছাড়া, বেশিরভাগ লোকের মনোযোগ নিজের দিকে টেনে নিতে পারব,’ বলল হিনা। ‘সে সুযোগে অন্যদিকে মন দিতে পারবেন। আর লড়তে হলেও দেখবেন খারাপ করি না আমি।’

    ‘রাজি হয়ে যা, রানা,’ অনুনয়ের সুরে বলল সোহেল, ‘লক্ষ্মী, দুলাভাই আমার!’

    মাথা দোলাল রানা। ‘ঠিক আছে, আমি রাজি। এবার কিনতে হবে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্যে উপযুক্ত পোশাক।’

    কিছুক্ষণ পর নাগাসাকির ডিযাইনার শপে গিয়ে হিনা আর নিজের জন্যে অভিজাত পোশাক কিনল রানা। ধসিয়ে দিল নুমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার ডলার।

    এখন ওর পরনে ডাবল ব্রেস্টেড ডিনার জ্যাকেট ও ফ্রেঞ্চ কাফওয়ালা ঘিয়ে শার্ট। হিনাকে দেবীর মত দেখাচ্ছে দু’কাঁধ খোলা চকচকে ধূসর ড্রেসে। বুকে এব্রয়ডারিটা রঙিন ফুলের। কবজি ছাড়িয়ে কয়েক ইঞ্চি নেমেছে হাতা।

    ‘জীবনেও এমন সুন্দর পোশাক পরিনি,’ বলল মেয়েটা।

    ‘দারুণ লাগছে তোমাকে,’ প্রশংসা করল রানা।

    ‘দেখতে দারুণ হলে হবে কী, আরামদায়ক নয়,’ মাথা নাড়ল হিনা।

    টিলার ওপরে স্কাইলাইন জিটি-আর নিয়ে অপেক্ষা করছে সোহেল। নিজেরা ভাড়া করা এক সেডান নিয়ে ফ্যাসিলিটির জমিতে পৌঁছুল রানা ও হিনা। ফ্যাক্টরির মেইন গেট থেকে সত্তর ফুট দূরে শক্তিশালী এক বৈদ্যুতিক আলোর নিচে গাড়ি রাখল রানা। দর্শকরা বিদায় নেয়ায় এখন খাঁ-খাঁ করছে পরিত্যক্ত পার্কিং লট

    গাড়ি থেকে নামার আগে পার্স থেকে কার্বন ফাইবারের সরু ছোরা নিল হিনা। ওটা দেখতে লেটার ওপেনারের মত হলেও একদিক খাঁজ কাটা। হিনার ডান কবজির হাতার ভেতর গেল ছোরা। নিচু গলায় বলল মেয়েটা, ‘আমি প্রস্তুত থাকতে ভালবাসি। আপনিও ভাল করবেন সঙ্গে অস্ত্র রাখলে।’

    বুক পকেট থেকে ধাতব কলম নিয়ে দেখাল রানা। ‘আমার সবসময় মনে হয়, তলোয়ারের চেয়ে কলম অনেক বেশি শক্তিশালী।

    ‘ভুল জানেন,’ বলল হিনা।

    ‘আমার শুধু মুচড়ে দিতে হবে ওপরের ক্যাপ, তাতেই সোহেল শুনবে আমাদের সবার কথা।’

    ‘আপনাদের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া গোপন যন্ত্রপাতি?’

    ‘না,. তোমার পোশাক যখন অল্টার হচ্ছিল, সে সুযোগে একটু দূরের এক ইলেকট্রনিক্স দোকান থেকে কিনেছি এটা। দুই হাজার ইয়েন। বিশ ডলারেরও কম।’

    কলমের ক্যাপ মুচড়ে দিল রানা। ‘পৌঁছে গেছি, সোহেল। শুনছিস আমার কথা?’

    সোহেলের জবাব এল গাড়ির স্পিকারের মাধ্যমে। ‘পরিষ্কার দেখছি তোদেরকে। তোরা ভেতরে গেলে গাড়ির ওপর চোখ রাখব। আমাকে একা ফেলে বেশি ফুর্তি করতে যাসনে।’

    ‘আপ্রাণ চেষ্টা করব,’ বলল রানা।

    কলমের ক্যাপ ঠিক করে নেয়ায় কেটে গেল সংযোগ। গাড়ি থেকে নেমে দরজা লক করে মেইন গেটের কাছে পৌঁছুল রানা ও হিনা। জালের মত গেটের ওদিকে এক গার্ড, কবাট খুলে ওদেরকে নিয়ে গেল ফ্যাক্টরি বিল্ডিঙে। ইন্টারকমে খবর দিতেই হাজির হলো স্বয়ং লো হুয়াং লিটন।

    ‘খুব খুশি হলাম সময় দিয়েছেন বলে,’ বলল রানা। ‘ও হিনা, নুমার জাপানিস লিয়েইযন অফিসার।’

    মাথা নিচু করে বাউ করল লো হুয়াং। কয়েক সেকেণ্ড সুন্দরী মেয়েটার ওপর চোখ থাকল তার, তারপর সহকারীর সঙ্গে রানা ও হিনাকে পরিচয় করিয়ে দিল, ‘ইনি আমাদের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাবা সাবেলা।’

    ছাতের নিয়ন বাতির উজ্জ্বল আলোয় চকচক করছে সাবা সাবেলার শেভ করা ন্যাড়া মাথা। পরনে সাধারণ কালো প্যান্ট ও সাদা শার্ট। একের পর এক সবুজ আইকন ভেসে উঠছে চোখের চশমার কাঁচে। ডাঁটি থেকে তার গেছে কানের ইয়ারবাড়ে। কোমরের বেল্টে ভারী পাওয়ার প্যাক। রানা বুঝল, ওই চশমা আসলে কমপিউটার। ডিসপ্লেতে দেখছে আইকন। গলায় মেডেলের মত ভারী ব্যাজ। দু’পাশে বাটন। টিপটিপ করে জ্বলছে দুটো এলইডি বাতি, বোধহয় মাইক্রোফোন ও স্পিকারের। বুক পকেটে কলম, ফ্ল্যাশলাইট ও লেয়ার পয়েন্টার। বাহুর ওপরে আরেকটা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস। রানা নিশ্চিত হতে পারল না, ওটা ফিটনেস মনিটর কি না।

    সাবা সাবেলার দিকে যে দৃষ্টিতে চেয়ে আছে হিনা, রানার মনে হলো মেয়েটা দেখছে ভয়ঙ্কর প্লেগের জীবাণু। ফিসফিস করে বলল হিনা, ‘এ তো হয়ে গেছে পুরো অ্যাণ্ড্রয়েড!’

    ‘মানবীয় আকর্ষণ ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির চেয়ে বেশি,’ নিচু গলায় বলল রানা। ‘যে দৃষ্টিতে তোমাকে দেখছে, দ্বিধা করবে না একটা চুমুর বিনিময়ে সব ডিভাইস পুকুরে বিসর্জন দিতে।’

    এ কথা শুনে সাবা সাবেলার প্রতি আবছা আগ্রহ দেখাল হিনা। সুযোগ পেলে নাকে দড়ি দিয়ে লোকটাকে ঘোরাবে।

    টুকটাক আলাপ করছে সবাই। কিছুক্ষণ পর লো হুয়াং লিটন বলল, ‘ডিনার দেয়া হবে আমাদের এগযিকিউটিভ ডাইনিং রুমে। তবে আমার মনে হয়েছে, আপনারা আগে হয়তো ঘুরে দেখতে চাইবেন ফ্যাক্টরি।’

    ‘খুব খুশি হব,’ বলল রানা।

    পথ দেখাল লো হুয়াং। বিশাল ফ্যাক্টরির প্রথম তলায় এখন কোনও কর্মী নেই। অথচ, নানান কাজ করছে ডযন দেড়েক মেশিন। ফ্যাসিলিটির এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পার্টস সরিয়ে নিচ্ছে কোনও কোনওটা। অন্যগুলো ব্যস্ত প্রোডাকশন লাইনের কমপোনেন্ট ঝালাই দিতে।

    ‘আসলে কী তৈরি হয় এই ফ্যাক্টরিতে?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘বহু ফ্যাক্টরির জন্যে তৈরি করা হচ্ছে রোবটিক্স।’

    ‘তার মানে মেশিনগুলো তৈরি করছে আরও মেশিন,’ মন্তব্য করল রানা।

    ‘ঠিক তা নয়,’ বলল হুয়াং, ‘ডিযাইন বা প্রোডাকশনের কাজটা এখনও করে মানব-কর্মীরা। তবে একটা সময় আসবে, যখন সব কাজই করবে রোবট।’

    ‘মানব-কর্মী?’ কথাটা ধরেছে হিনা। ‘তা হলে কি আপনারা ঠিক করেছেন এরপর কাজে নেবেন রোবট কর্মী?’

    ‘কথার কথা বলেছি,’ বলল লো হুয়াং, ‘একসময় সত্যিকার অর্থে মানুষকে সব ঝামেলা থেকে মুক্ত করবে রোবট। বিপজ্জনক বা কঠিন কাজ করতে হবে না আর মানুষকে। ধরুন, প্রতিদিন শত শত স্ক্রুর প্যাঁচ কষছে এক লোক, তার জীবন হয়েছে অর্থহীন। অথবা, প্রায় অন্ধকার সুড়ঙ্গে প্রতিদিন দশঘণ্টা বাটালি চালাচ্ছে একজন। অথচ ওখানে তাপমাত্রা অনেক বেশি। যখন তখন হতে পারে ভয়ানক দুর্ঘটনা। এসব ক্ষেত্রে বিপদ ছাড়াই কাজ করবে আমাদের মেশিন। বা ধরুন, অপরাধীদেরকে ধরতে হবে, যখন তখন গুলি খেয়ে মরে যেতে পারে পুলিশ অফিসার বা সৈনিকরা, এসব সময়ে সত্যিকারের কাজে আসবে রোবট পুলিশ বা সোলজার।’

    ‘রোবটিক সৈন্য?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘ক্ষতি কী?’ হাসল লো হুয়াং লিটন।

    ‘দেখাতে পারবেন?’

    রানা আর হিনাকে নিয়ে ফ্যাক্টরির প্রথম কক্ষ থেকে বেরিয়ে আরও বড় এক ঘরে ঢুকল লো হুয়াং। তার সঙ্গে রয়ে গেছে সাবা সাবেলা। এ কামরা অনেকটা কনভেনশন হলের মত। একপাশে কংক্রিটের উঁচু সেতু গেছে ঘরের দূরে। ওটার ওপর থেকে দেখা যাবে টেস্টিং এরিয়া।

    চারপাশে হাই-টেক সব ইকুইপমেন্ট। নানাদিকে জ্বলছে কমপিউটার স্ক্রিন। বড়-ছোট অনেক ধরনের মেশিন, বিভিন্ন কাজ করছে যে যার মত।

    ওরা সবাই সেতুর ওপর ওঠার পর বলল লো হুয়াং, ‘শুরু করুন ডেমনস্ট্রেশন।’

    বাহুর ডিভাইসের স্ক্রিনে কী যেন টিপল সাবা সাবেলা। ছাতে জ্বলে উঠল ফ্লাডলাইট। পরিষ্কার দেখা গেল নিচের চারপাশ। এখানে ওখানে কয়েকটা ম্যানিকিন। কয়েকটা আছে আড়ালে। দু’দলের মাঝে আছে এক লোক। ‘সাধারণ জিম্মি পরিস্থিতি,’ বলল হুয়াং। ‘আট টেরোরিস্ট, সাত জিম্মি।’

    হঠাৎ রেসিং ট্র্যাক থেকে ধুম্ আওয়াজ তুলে একটা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল ছোট এক ব্যাটারিং র‍্যাম মেশিন। পেছনে বেশ কয়েকটা যন্ত্র। ওগুলো দেরি না করে গুলি করল নানাদিকে দাঁড়িয়ে থাকা টেরোরিস্ট ম্যানিকিনের দিকে। আর্মার প্লেটিঙে গুলি লাগতেই ছিটকে উঠল কমলা ফুলকি।

    ‘লাইভ অ্যামো?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘অবশ্যই,’ মাথা দোলাল লো হুয়াং। ‘তবে আপাতত রয়েছে কম বারুদ। চাই না গুলি ছিটকে কাউকে আহত করুক।’

    ‘নিচে আপনার যে লোক, সে কি নিরাপদ?’ জানতে চাইল রানা। ‘তার দিকে গুলি করবে না ওসব মেশিন?’

    ‘না, ওর গলায় ঝুলছে আইডেন্টিফায়ার,’ বলল লো হুয়াং। ‘রোবটকে জানিয়ে দিচ্ছে, গুলি করা চলবে না তাকে। ওই একই জিনিস ব্যবহার হবে মানুষ ও রোবটের মিলিত অ্যাসল্টের সময়। এতে গুলি করে মানুষ মারার ঝুঁকি কমেছে পঁচানব্বুই পার্সেন্ট।’

    ‘প্রশংসা না করে পারছি না,’ বলল রানা।

    ব্যাটারিং র‍্যামের পেছনে ঢুকেছে আরও কয়েকটা রোবট নিচের অংশে চাকার বদলে ছয়টা পা। দালানের অনেক ভেতরে ঢুকে পড়েছে মাকড়সা রোবট। অনায়াসে টপকে যাচ্ছে উঁচু বাধা। কয়েক পশলা গুলি করে খতম করল টেরোরিস্টদেরকে।

    ‘ওরা হিট সেন্সর, সাউণ্ড ওয়েভ আর ক্যামেরার মাধ্যমে খুঁজে বের করছে টার্গেট,’ বলল লো হুয়াং। ‘একইভাবে যোগাযোগ রাখছে পরস্পরের সঙ্গে। একটা যদি কিছু জানতে পারে, জেনে যাচ্ছে অন্যরা।’

    হঠাৎ থেমে গেল প্রতিটি মেশিন। স্ক্যান করছে পরের ঘরের থার্মাল আউটপুট। এক সেকেণ্ড পর ছয় পায়ে ভর করে ঢুকল ওদিকের ঘরে। পরমুহূর্তে এল গুলির আওয়াজ।

    ‘সহজ, তাই না?’ হাসল লো হুয়াং। ‘মারা গেছে টেরোরিস্টরা, নিরাপদ রয়ে গেছে জিম্মিরা। কারও গায়ে গুলি লাগেনি।’

    মনে মনে প্রশংসা করল রানা। মুখে বলল, ‘টেরোরিস্ট আর হোস্টেজদের ভেতর তফাৎ করছে কী করে?’

    ‘আমরা ওটাকে বলি ডিসক্রিমিনেটর ফাঙ্কশন,’ বলল বিলিয়নেয়ার, ‘ক্যাপটিভদের ফেশাল রেকগনিশন প্যাটার্ন, হিট সেন্সর ও ওয়েপন রেকগনিশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে রোবটের প্রোসেসর জেনে যাচ্ছে, কোন্ লোকের কাছে অস্ত্র আছে, আর কার কাছে নেই।’

    ‘প্ৰশংসনীয়।’

    ‘তা ছাড়া, রোবটের গায়ে গুলি লাগলে সময় লাগে না মেরামত করতে।’

    ওদের পাশের টার্মিনাল থেকে চিনা ভাষায় বেরিয়ে এল প্রিন্টেড ব্যাটল রিপোর্ট। ওটা পড়ে নিয়ে ব্যাখ্যা দিল লো হুয়াং, ‘এসব রোবট খরচ করেছে মোট বাইশটা গুলি। সামান্য ক্ষতি হয়েছে দুটো রোবটের। পুলিশ বা সৈনিকের দল লড়লে মরত তাদের কয়েকজন, আহত হতো জিম্মিরা। এ থেকে আশা করি বুঝছেন, ভবিষ্যতে খারাপ পরিস্থিতি দেখা দিলে ব্যবহার করা উচিত হবে রোবট টিম।’

    ‘তবে টেরোরিস্টদের শক্ত ঘাঁটি দখলের সময় এভাবে সহজেই কাজটা করা যাবে না,’ মন্তব্য করল রানা।

    ‘ভুল ভাবছেন,’ বলল লো হুয়াং। ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক মিশনে সৈনিক না পাঠিয়ে ব্যবহার করা হবে ওঅর-বট। তারা দখল করবে যে-কোনও দুর্গ।’

    ‘ওঅর-বট?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘চমৎকার নাম, তাই না?’

    ‘এটা ছিল পুলিশী রেসকিউ মিশন, তাই না?’

    ‘জী,’ গর্বের সঙ্গে মাথা দোলাল লো হুয়াং। ‘কিন্তু আমরা তৈরি করছি আর্মি মেশিন। দুনিয়ার যে-কোনও বিপজ্জনক এলাকা দখল করবে ওই রোবট। ওগুলো আরও শক্তপোক্ত, আধুনিক আর ভয়ঙ্কর। প্রয়োজন হলে লড়বে পুরো চব্বিশ ঘণ্টা। এভাবে যুদ্ধ করতে পারবে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। তাদের ঘুম লাগবে না, খাবার লাগবে না, মেডিকেল চিকিৎসা লাগবে না। আমরা মানুষ খুনের মাত্রা কমিয়ে দেব। যুদ্ধের সময় এলাকার ক্ষতিও হবে কম। আহত হবে না মানব সৈনিক। যুদ্ধের পরের ট্রমা নিয়েও চিন্তা নেই। তাদের আত্মীয়- স্বজনদেরকে ভুগতে হবে না।’

    ‘তবে শত্রুপক্ষের পরিণতি ভয়ঙ্কর, তাই না?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘আমাদের তা মনে হয় না,’ বলল বিলিয়নেয়ার, ‘রোবট যে শুধু নিখুঁত তাই নয়, গুলিও করবে অনেক হিসেব কষে। মানবিকতাও দেয়া হবে ওদেরকে। ওরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবে না। সহ রোবট বিকল হলে রেগে গিয়ে অত্যাচার করবে না বন্দিদের ওপর। লড়াইয়ের ভয়াবহতা দেখে পাগল হয়ে যা খুশি তা করবে না। রেপ করবে না রোবট। নির্যাতন করবে না কাউকে। চুরি-ডাকাতির চিন্তাই থাকবে না ওদের প্রসেসরে। বলতে পারেন, যুদ্ধ হবে বীভৎসতা ছাড়াই।’

    মৃদু মাথা দোলাল রানা। বিলিয়নেয়ার যেসব কথা বলেছে, তার বিপক্ষের যুক্তিও শুনেছে ও। অনেকের ধারণা, একসময়ে আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না বুদ্ধিমান রোবট। পুরো পৃথিবী হবে সত্যিকারের নরক। আসলে কী হবে তা নতুন পরিস্থিতিতে না পড়লে বোঝার উপায় নেই।

    লো হুয়াঙের অনুরোধে একটু সরে সেতু থেকে নিচে তাকাল সবাই। মেঝেতে কিছু মেশিন তৈরি করছে হাইওয়ের অংশ। জ্যাকহ্যামার চালিয়ে কংক্রিট ভাঙছে এক মেশিন। আরেক মেশিন সেসব জঞ্জাল তুলছে ড্রাইভারহীন ট্রাকে। পেছনে জঞ্জাল ভরে যেতেই কোনও দিকে গুঁতো না দিয়ে দূরের এক দরজা পেরিয়ে চলে গেল ট্রাক।

    ‘রোবটিক আর্মি আসতে অন্তত এক যুগ বাকি,’ বলল লো হুয়াং। ‘তবে সেলফ ড্রাইভিং ভেহিকেল কিন্তু আজই পেতে পারেন।’

    ‘দেখেছি কিছু,’ বলল রানা।

    ‘খুব একটা দেখেননি,’ বলল বিলিয়নেয়ার। ‘তবে কিছু দিন পর দেখবেন ওগুলো ছাড়া আর কোনও গাড়িই নেই। এনসিআর এরই ভেতর তৈরি করেছে ড্রাইভারহীন রেস কার। দুনিয়া-সেরা রেসারদেরকে হারিয়ে দেবে হাসতে হাসতে ‘

    ‘রিমোট গাইডেড?’ জানতে চাইল রানা।

    মাথা নাড়ল লো হুয়াং। ‘স্বয়ংক্রিয় ভেহিকেল। কারও সাহায্য লাগবে না। প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেবে নিজের যুক্তি-বুদ্ধি ব্যবহার করে।’

    ‘শহরের রাস্তায় চলা এককথা, আর হাই স্পিডে গাড়ির ক্ষমতা বুঝে রেসের ট্র্যাকে চলা অন্য কিছু,’ বলল রানা। ‘আমি নিজেও দু’একবার রেস করেছি। কাজটা কিন্তু বেশ বিপজ্জনক।’

    ঠাট্টার হাসি হাসল লো হুয়াং। ‘অবশ্যই তাই। তবে আপনি যখন ফুড চেইনের ওপরে থাকার জন্যে লড়ছেন, সেসময়ে যে-কোনও মানুষের চেয়ে অনেক বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। ক’দিন পর দেখবেন ওরা অনায়াসে চালাচ্ছে ফাইটার জেট বিমান বা জাহাজ। এ ছাড়া, সাগরতল থেকে তুলবে তলিয়ে যাওয়া জাহাজ বা বোট। আর ট্র্যাকে রেসে জিতে যাওয়া? ওটা তো এখনই পারে রোবটিক রেস কার। যে-কোনও মানুষের চেয়ে অনেক ভালভাবে চালাবে ওরা।’

    চুপচাপ শুনছিল রানা, কিন্তু বুঝে গেল, বিলিয়নেয়ারের কথায় খোঁচা আছে। এতক্ষণ বরফের মত ঠাণ্ডা ছিল লোকটা, তবে মেশিনের কথা ওঠার পর সামান্য ফুলে গেছে নাকের পাটা। একটু ফাঁক করে রেখেছে দুই পা। চোখে বিপ্লবী দৃষ্টি।

    বুঝে গেল, কীভাবে পাল্টা খোঁচা দিতে হবে লোকটাকে। ‘আজ থেকে হাজার বছর পর, সত্যিই হয়তো একদিন রোবট হবে মানুষের সমকক্ষ,’ নিজেও ঠাট্টার সুরে বলল রানা। ‘তবে এ জীবনে দেখব না, রেসের ট্র্যাকে মানুষকে হারিয়ে দিয়েছে কোনও রোবট। মেশিন অনেক কিছুই পারে, কিন্তু কখনোই থাকে না তার বিবেক বা বিবেচনা।’

    গম্ভীর চেহারায় ওকে দেখল লো হুয়াং। কয়েক সেকেণ্ড পর মুচকি হাসল। ‘সাহস থাকলে প্রমাণ করুন আপনার থিয়োরি।

    ‘খুশি মনে,’ বলল রানা, ‘সেজন্যে কী করতে হবে তাকে?’

    ‘এ ফ্যাক্টরির গ্রাউণ্ডে আছে রেসিং ট্র্যাক,’ বলল হুয়াং, ‘গ্যারাজে আছে প্রোটোটাইপ রোবট রেস কার। পাশেই দুটো রেসিং কার। ওগুলো রাখা হয়েছে রেসিং ড্রাইভারদের জন্যে।

    চাইলে রোবট রেসিং কারের বিরুদ্ধে নামতে পারেন। আশা করি দেখার মত হবে রেস। বড় অঙ্কের বাজি ধরতেও আপত্তি নেই আমার।’

    ‘আমি রাজি,’ দ্বিধাহীনভাবে বলল রানা। ‘তবে আপনি বিলিয়নেয়ার, আর আমি বাংলাদেশের আধাসরকারী সংস্থার কর্মকর্তা, কাজেই বড় অঙ্কের বাজি ধরতে পারব না। টাকা নয়, অন্য কিছু নিয়ে বাজি ধরতে পারি।’

    ‘আপনি যে বলেছিলেন নুমায় আছেন?’

    ‘অনারারি পদে,’ বলল রানা।

    মাথা দোলাল লো হুয়াং। ‘ঠিক আছে, আপনি যদি রেসে জেতেন, এনসিআর থেকে আপনার এক্সপিডিশনের জন্যে প্রতিটি রোবট ভেহিকেল বিনা পয়সায় দেয়া হবে।’

    ‘আর আমি হেরে গেলে?’

    ‘কঠিন কিছু করতে হবে না,’ বলল বিলিয়নেয়ার, ‘শুধু স্বীকার করবেন, আসলে মানুষের চেয়ে ঢের কাজের এসব রোবট।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী
    Next Article মাসুদ রানা ৪৩৫ – মৃত্যুদ্বীপ

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.