Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প358 Mins Read0

    অন্তর্যামী – ১১

    এগারো

    মাথার ভেতর ভুতুড়ে কণ্ঠটা শোনার আগে শেষ যে সুন্দর স্মৃতিটা মনে আছে অ্যাডাম নেপিয়ারের, সেটা বছরখানেকের পুরনো। দাদুর পিকআপ নিয়ে মরুভূমিতে গিয়েছিল সে, একটা কচ্ছপ খুঁজে বের করেছিল… পুরো বিকেল ধরে এঁকেছিল ওটার ছবি। ছবি আঁকার মাঝে অদ্ভুত এক প্রশান্তি খুঁজে পায় অ্যাডাম—দশ বছর আগে, হাই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি তার অনুরাগ। সাদা কাগজের বুকে পেন্সিলের আঁচড়ে কোনোকিছুকে জীবন্ত করে তুলে সে অদ্ভুত আনন্দ পায়। জীবনের জটিল সময়গুলোয় মনোযোগ অন্যদিকে ফেরানোরও একটা পন্থা ওটা।

    বোকা নয় অ্যাডাম—এ-কথা দাদুর মুখে বহুদিন আগে শুনেছে সে। একটা পুরনো গাড়ির গিয়ারবক্স মেরামত করেছিল সেদিন; কাজশেষে হাত থেকে তেল-কালি মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে শুনতে পেয়েছিল দাদুর কণ্ঠ—জিম নামে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। কয়েক মাইল দূরে, কোল্ড স্প্রিংসে জিমের একটা গ্রোসারি শপ রয়েছে। সেখান থেকেই ছবি আঁকার খাতা আর পেন্সিল কেনে অ্যাডাম।

    ‘বোকা নয় ও,’ বলেছিলেন দাদু। ‘কথাবার্তা একটু বুঝিয়ে বলতে হয়, এই আর কী। ওর মাথা কিন্তু খুব ভাল। গাড়ির কলকবজা মেরামতে আমার চেয়ে কম দক্ষ নয় ও।’

    ‘আগামীকাল যদি তুমি মারা যাও, তা হলে কী ঘটবে, সেটা ভেবে দেখেছ?’ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন জিম। ‘বয়স আটষট্টি চলছে তোমার… কত কিছুই তো ঘটতে পারে! একা একা • ব্যবসা সামলাতে পারবে ও? হাজারটা খরচ আছে শপের, নানা মেজাজের কাস্টমার আছে… ট্যাকেল দিতে পারবে? সেসব পরের কথা, শপটা চালু রাখতে চাইলে সার্টিফিকেশন নিতে হবে ওকে—আমি জানি না সেটা কীভাবে সম্ভব।’

    কথাগুলো শুনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন দাদু।

    জিম তখন নরম গলায় বললেন, ‘আমি শুধু এটা বলতে চাইছি যে, ওকে দেখাশোনার জন্যে কাউকে প্রয়োজন। আমার বা আমার বউয়ের পক্ষে সেটা সম্ভব না। রিটায়ার করার পর পশ্চিম উপকূলে চলে যাব বলে ভাবছি আমরা। আর সে-কারণেই তোমার মাথায় ঢোকাতে চাইছি সমস্যাটা। তোমার অবর্তমানে অ্যাডামের কী হবে, তার একটা ব্যবস্থা থাকা দরকার।’

    জবাবে কিচ্ছু বলেননি দাদু। সত্যিই হয়তো দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন।

    আজকাল জিমের কথাগুলো প্রায়ই মাথায় ভিড় করে অ্যাডামের। সত্যিই তো, দাদু যখন থাকবেন না, কী হবে ওর? মন অস্থির হয়ে ওঠে। ছবি না আঁকলে কাটে না সেই অস্থিরতা।

    মরুভূমিতে কচ্ছপের ছবি আঁকার সেই বিকেলটার সমাপ্তি হয়েছিল অপূর্ব এক সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে। লালচে আভায় ভরে গিয়েছিল পশ্চিমের আকাশ, থোকা থোকা মেঘেও লেগেছিল রঙের ছোপ। আকাশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত চিরে দিয়েছিল একটা পুরনো জেট ট্রেইল। নীড়ে ফেরা পাখির ঝাঁক ডানা ঝাপটে চলেছিল সেই পটভূমিতে। ঝটপট কাগজে আকাশের একটা স্কেচ করে ফেলেছিল অ্যাডাম। এরপর বাড়ি ফেরার জন্যে উঠে পড়েছিল পিকআপে। ইগনিশনের চাবি ঘোরাতে যাবে… আর তখুনি শুনল কণ্ঠটা।

    ‘হ্যাঁ, মনে হচ্ছে একজনকে পেয়েছি।’

    থমকে গিয়েছিল অ্যাডাম। বোকার মত তাকিয়েছিল চারদিকে। কোথাও কাউকে দেখতে পায়নি। পরক্ষণে আবার শুনতে পেয়েছিল কণ্ঠটা।

    ‘মার্ক করো। অফ-এক্সিস থ্রি সেভেন… টু। মড ট্র্যাক বেশ শক্তিশালী; দেখো, কমিয়ে আনা যায় কি না।’

    পুরুষের কণ্ঠ। অ্যাডামের মনে হচ্ছিল বহু দূর থেকে ভেসে আসছে। খসখসে, যেন মুখভর্তি নুড়িপাথর নিয়ে কথা বলছে।

    ‘হ্যাঁ, এবার ঠিক আছে, ‘বলে চলছিল কণ্ঠটা। ‘আরেকটু বাড়াও… থামো! পারফেক্ট! এবার বেরিয়ে যাও স্টেশন থেকে। বাকিটা আমিই সামলাতে পারব। ‘

    ততক্ষণে বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে অ্যাডামের। পাগল হয়ে যাচ্ছে ও? এভাবেই কি শুরু হয় মস্তিষ্কবিকৃতি?

    খানিক বিরতির পর ফের শোনা গেল কণ্ঠটা। এবার একদম পরিষ্কার, যেন পিকআপের ভেতরেই বসে আছে লোকটা। সবচেয়ে বড় কথা, এবার ওকেই লক্ষ্য করে কথা বলছে সে।

    ‘তোমার নাম কী?’

    ‘কী!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল অ্যাডাম।

    ‘ভয় পেয়ো না, ‘বলল কণ্ঠটা। ‘তোমার নাম বলো।’

    ঘামতে শুরু করল অ্যাডাম। হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে গেছে।

    ‘পাগল হয়ে যাওনি তুমি, নিশ্চিত থাকো, ‘ জানাল রুক্ষ কণ্ঠ। ‘তোমার নামটা বলো, প্লিজ।’

    তাড়াতাড়ি ইগনিশনের চাবি ঘোরাল অ্যাডাম। আর্তনাদ করে সচল হলো পিকআপের প্রাচীন ইঞ্জিন। হ্যাণ্ডব্রেক রিলিজ করে অ্যাকসেলারেটর চাপল ও। লাফ দিয়ে আগে বাড়ল পিকআপ। ছুটে চলল মরুপ্রান্তর ধরে।

    ‘পালাবার চেষ্টা করে লাভ নেই, ‘বলে উঠল রুক্ষ কণ্ঠ। ‘আমাকে তুমি ফাঁকি দিতে পারবে না।’

    হাত বাড়িয়ে রেডিয়োর সুইচ অন করল অ্যাডাম। ভলিউমের নব ঘুরিয়ে দিল পুরোটা। উদ্দাম সঙ্গীতে ভরে গেল ক্যাবের অভ্যন্তর। আশা করল, শব্দের বন্যায় ডুবে যাবে ভুতুড়ে কণ্ঠস্বর।

    লাভ হলো না। খানিক পরেই সবকিছু ছাপিয়ে কানে গমগম করে উঠল কণ্ঠটা।

    ‘অযথাই আমাকে ভয় পাচ্ছ তুমি।

    কথাটা শেষ করেই অনেকটা সময়ের জন্যে নীরব হয়ে গেল রুক্ষ কণ্ঠ। অ্যাডাম ভাবল, আপদ বিদেয় হয়েছে। তাও গতি কমাল না, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়ে চলল পিকআপ। দৃষ্টিসীমায় ওদের বাড়িটা উদয় হলে ব্রেক চাপল। বন্ধ করে দিল রেডিয়ো। দাদু যদি ওকে এভাবে গাড়ি চালাতে দেখেন, সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। অনেক বছর হয়ে গেল, বড় কোনও ঝামেলায় জড়ায়নি ও; দাদু ওকে বিশ্বাস, করেন। এখন পাগলের মত গাড়ি চালাতে দেখলে সে-বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে।

    বাড়ির সিকি মাইলের ভেতর পৌঁছুতেই ফিরে এল কণ্ঠটা। এবার আগের চেয়ে জোরালোভাবে।

    ‘নাম বলো… তা হলে কিছু সময়ের জন্যে আমি তোমাকে একা থাকতে দেব।’

    দূর থেকে দাদুকে দেখতে পেল অ্যাডাম-গ্যারাজে আলো জ্বলছে, দরজা খোলা, ভেতরে দাঁড়িয়ে একটা ট্রাক্টর মেরামত করছেন তিনি।

    ‘নাম বললেই তোমার মুক্তি। আপাতত আর কিছু জানতে চাই না আমি।’

    জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল অ্যাডাম। ফিসফিস করে বলল, ‘অ্যাডাম… আমার নাম অ্যাডাম।’

    ‘পুরো নাম বলো।’

    তার আর প্রয়োজন হলো না। মনের পর্দায় নামটা ভেসে উঠতেই সন্তুষ্টির হাসি শোনা গেল রুক্ষ কণ্ঠ থেকে।

    ‘অ্যাডাম নেপিয়ার, ‘ বলল লোকটা। ‘তোমাকে ধন্যবাদ।’

    .

    সারা সন্ধ্যা আর একবারও অ্যাডামকে বিরক্ত করল না ভুতুড়ে কণ্ঠ। ডিনার সারল ও, টিভি দেখল। দাদু ব্যস্ত রইলেন ব্যবসার হিসাবপত্র নিয়ে। সাড়ে এগারোটায় বিছানায় গেল ও। বাতি নিভিয়ে বন্ধ করল দু’চোখ। ভাবছে, ভালমত একটা ঘুম দিতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আগামীকাল সকালে সব আবার ফিরে যাবে আগের নিয়মে।

    তা আর হলো না। বাতি নেভানোর ত্রিশ সেকেণ্ডের মাথায় কথা বলে উঠল রুক্ষ কণ্ঠ।

    ‘হ্যালো, অ্যাডাম!’

    আঁতকে উঠল অ্যাডাম। এখন আর গাড়ি চালাচ্ছে না ও। রেডিয়ো ছেড়ে দিয়ে কণ্ঠটাকে দাবিয়ে রাখার উপায় নেই।

    ‘থামো!’ ফিসফিসিয়ে বলল ও। ‘প্লিজ।’

    ‘অভিজ্ঞতাটা তোমার জন্যে খারাপ হবার প্রয়োজন নেই, অ্যাডাম। ভালও হতে পারে… যদি তুমি আমাকে বাধা না দাও। দাঁড়াও, দেখাচ্ছি।’

    আবারও দ্রুত শ্বাস পড়ছে অ্যাডামের। ভয় পাচ্ছে ভীষণ। এমন ভয় আগে কোনোদিন পায়নি। বিভ্রান্তি? হ্যাঁ, তা হয়েছে বটে। ওর জীবনটাই বিভ্রান্তিতে ভরা… আর প্রত্যেক বিভ্রান্তির সঙ্গে মিশে ছিল ছোটখাট ভয়। কিন্তু এখনকার সঙ্গে তার কোনও তুলনা চলে না…

    হঠাৎ কী যেন ঘটে গেল। চোখের পলকে কেটে গেল সব ভয়, নতুন একটা অনুভূতি ছেঁকে ধরল ওকে। প্রথমটায় বুঝল না, পরে যখন বুঝল, বিস্মিত গলায় বলল, ‘এসব কী!’

    ‘রিল্যাক্স,’ বলল রুক্ষ কণ্ঠ। ‘শরীরের আনন্দে কোনও দোষ নেই।’

    এই অনুভূতির সঙ্গে অ্যাডাম পরিচিত। সাবালক হবার পর থেকে বহুবার জেগেছে অনুভূতিটা, যদিও ইদানীং তা কমে এসেছে অনেকটাই। শেষবার কবে এমন তীব্র অনুভূতি হয়েছিল? সম্ভবত বিশ বছর বয়সে।

    প্যান্টের ভেতর নিজের পুরুষাঙ্গের ফুলে ওঠা টের পাচ্ছে ও।

    ‘ভাল লাগছে না?’

    কোনোমতে মাথা ঝাঁকাল অ্যাডাম। ওর মনের পর্দায় এখন ভেসে উঠছে একের পর এক সুন্দরী তরুণীর ছবি-প্রত্যেকেই নিরাবরণ। আজ পর্যন্ত কোনও সত্যিকার মেয়ের সান্নিধ্য পায়নি ও, শুধু ছবি দেখেছে; কিন্তু এখন যা দেখছে তাকে ছবি বলা মুশকিল। একদম যেন জীবন্ত প্রতিটি মেয়ে—তাদের হাবভাব, চলাফেরা… সব কিছুতে রয়েছে প্রাণের ছোঁয়া।

    ‘উপভোগ করো।’

    না; ছবি নয়। অ্যাডামের মনে হলো, সব একদম বাস্তব… সত্যি। ছবি হলে শরীরে এমন শিহরন জাগত না। সুখের আবেশে কেঁপে উঠত না সমস্ত রোমকূপ। যেন এক সুখের সাগরে ভেসে চলেছে সে।

    কতক্ষণ এমনটা চলল, জানে না অ্যাডাম। শুধু একসময় টের পেল, ক্ষরণ হয়েছে ওর। সংবিৎ ফিরে পেল পরক্ষণে। উঠে বসে কপালের ঘাম মুছল। কী ঘটল, জানে না। তবে বুঝতে পারছে, সত্যিকার মিলনেও এরচেয়ে বেশি সুখ পাওয়া সম্ভব নয় কারও পক্ষে।

    ‘সাবাস!’মৃদু হাসিমাখা কণ্ঠ শুনতে পেল ও। ‘যদি লক্ষ্মী ছেলের মত আমার সব কথা শোনো; এমন আনন্দ তুমি প্রতি রাতে পাবে।’

    আর যদি কথা না শুনি? প্রশ্নটা নিজের অজান্তেই জেগে উঠল অ্যাডামের মনে।

    ‘সেটা তুমি যথাসময়ে জানতে পারবে,’ বলল অদৃশ্য কণ্ঠ।

    .

    পরদিনই প্রশ্নটার জবাব পেয়ে গেল অ্যাডাম। বাজার করার জন্যে শহরে গেলেন দাদু। তাঁর গাড়িটা দূরে মিলিয়ে যেতেই কানে বেজে উঠল রুক্ষ কণ্ঠ।

    ‘এমন কিছুর কথা ভাবো, যেটা তোমার দাদু খুব ভালবাসেন। তাঁর প্রিয় কোনও জিনিস… . যেটা বাড়িতেই আছে।

    ‘মানে?’

    ‘কথা বাড়িয়ো না। ভাবতে বলেছি, ভাবো।’

    চেষ্টা করে ভাবতে হলো না, আপনাআপনিই একটা ছবি ভেসে উঠল মানসচোখে—পোর্সেলিনের একটা বেড়াল মূর্তি, দাদুর বিছানার পাশের নাইটস্ট্যাণ্ডে রাখা থাকে। অ্যাডামের প্রয়াত দাদীর স্মৃতিচিহ্ন। খুব অল্প-বয়েসে বিয়ে হয়েছিল ওঁদের। দাদুকে জীবনের প্রথম উপহার হিসেবে ওই ছোট্ট মূর্তিটা দিয়েছিলেন দাদী।

    ‘চমৎকার। দাদুর রুমে যাও।’

    ‘ওখানে আমার ঢোকা বারণ।’

    ‘কিচ্ছু হবে না। যাও।’

    দ্বিধান্বিত ভঙ্গিতে বাড়িতে ঢুকল অ্যাডাম। লিভিংরুম পেরিয়ে দাদুর বেডরুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। মূর্তিটা দেখতে পাচ্ছে পরিষ্কার। ধবধবে সাদা, পোর্সেলিনের তৈরি একটা বেড়াল—এক পা শূন্যে তুলে থাবা চাটছে।

    ‘ওটা তুলে নিয়ে আছাড় মারো মেঝেতে।’

    ‘কী বলছ! না, আমি ভাঙব না।’

    ‘ভাঙবে। ভাঙতেই হবে তোমাকে!’

    ঝট্ করে ঘুরে দাঁড়াল অ্যাডাম। পা বাড়াল সামনের দরজার দিকে। যথেষ্ট সহ্য করেছে, আর না। হয়তো সত্যিই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর, তার মানে এই নয় যে, এখন থেকেই পাগলামি করে বেড়াবে। মাথার ভেতর যা খুশি বলে বেড়াক কণ্ঠটা, ও পাত্তা দেবে না।

    দরজা ঠেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল অ্যাডাম। পা রাখল আঙিনায়। পরক্ষণে থমকে গেল ও। গত রাতের মত আবারও কী যেন ঘটতে শুরু করেছে ওর ভেতরে। তবে এবারের অনুভূতি আনন্দময় নয়। দুটো অনুভূতি খেলা করছে ওর শরীরে। প্রথমটা শারীরিক বেদনার। মনে হলো, অদৃশ্য একটা হাত সেঁধিয়ে গেছে ওর পেটের ভেতর; নাড়িভুঁড়ি মুঠো করে ধরে মোচড়াচ্ছে। ব্যথায় দম আটকে আসার জোগাড়।

    একই সঙ্গে হানা দিল আরেকটা অনুভূতি—সেটা মানসিক যন্ত্রণার। মনের পর্দায় ভেসে উঠল দশ বছর আগেকার একটা দৃশ্য… দাদীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দৃশ্য। দাদুকে দেখতে পেল অ্যাডাম—কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, মাঝে মাঝে রুমাল দিয়ে মুছছেন চোখ। অতিথিরা একে একে কাছে আসছেন, দাদুকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। একটু পর বদলে গেল দৃশ্যটা। কয়েক ঘণ্টা পরের ঘটনা দেখতে পেল ও। নিজের বেডরুমে শুয়ে আছেন তিনি, দরজা বন্ধ। বাইরে থেকে পাল্লায় ধাক্কা দিচ্ছে ও। একটু পর ধরা গলায় দাদু বললেন, ‘আমাকে এখন বিরক্ত কোরো না, অ্যাডাম।’

    ‘আমার খিদে পেয়েছে!’

    ‘সময় হলেই খাবার পাবে। এখন নাহয় একটু বাইরে হেঁটে এসো। আমার মনটা ভাল নেই।’

    ‘না, আমার এখুনি খাবার চাই!’ ধুমধাম করে দরজায় কিল মারল অ্যাডাম। দাদু ফুঁপিয়ে উঠলেন।

    ‘এসবের জন্যে তুমি দায়ী!’ মাথার ভেতর গমগম করে উঠল অদৃশ্য কণ্ঠস্বর।

    ‘কী!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল অ্যাডাম।

    ‘হ্যাঁ। তোমারই কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তোমার দাদীর।’

    ‘মিথ্যে কথা!’ দাঁতে দাঁত পিষে বলল অ্যাডাম। কষ্ট অসহনীয় হয়ে উঠছে—শারীরিক কষ্ট, মানসিক কষ্ট

    ‘মিথ্যে বলছি না। তোমার অত্যাচারে মারা গেছেন তিনি। তোমার জন্যেই কাঁদতে হয়েছে তোমার দাদুকে। কারণ তিনি জানতেন, অত বড় একটা কাণ্ডের পরেও তোমাকে পরিত্যাগের কোনও উপায় ছিল না তাঁর।’

    ‘থামো! থামো বলছি!’

    ‘বেচারার জীবনটা নরকে পরিণত করেছ তুমি, অ্যাডাম। শেষ বয়সেও শান্তি নেই তাঁর। সারাক্ষণ তোমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয়, তোমার খেয়াল রাখতে হয় চব্বিশ ঘণ্টা। শান্তিতে মরবারও উপায় নেই তাঁর।’

    ‘এসব বানোয়াট কথা,’ দাঁতের ফাঁক দিয়ে কোনোমতে বলল অ্যাডাম। ‘সব আমার অবচেতন মনের চিন্তা। আমিই ভাবছি এসব।’

    ‘ভুল। মৃদু হাসল কণ্ঠটা। পরমুহূর্তে যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল অ্যাডামের তলপেটে। উষ্ণ তরলের মত তীব্র যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অনুভূতিটা গত রাতের মত জান্তব… বাস্তব; কিন্তু ঠিক বিপরীত।

    ‘সব তোমার দোষ, অ্যাডাম।

    আর প্রতিবাদ করল না অ্যাডাম। আচমকা উপলব্ধি করতে পারছে, বুকের ভেতর কী ভয়ানক কষ্টই না চাপা দিয়ে রেখেছেন দাদু। কোনোদিন কিছু বলেননি ওকে। অপরাধবোধে কাঁধ নুয়ে এল ওর।

    ‘যাও, মূর্তিটা ভেঙে ফেলো, ‘নির্দেশ এল। কথা দিচ্ছি, তা হলে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে তুমি।’

    ‘আ… আমি পারব না। দাদীর স্মৃতি ওটা… দাদু আগলে রেখেছেন।’

    ‘চিন্তার কিছু নেই। আঠা দিয়ে ভাঙা জিনিস আবার জোড়া দেয়া যায়। স্মৃতিচিহ্নটা হারাবে না।’

    ‘কিন্তু কেন? কেন আমাকে ওটা ভাঙতে বলছ তুমি? কী লাভ ওতে?’

    ‘যাতে বুঝতে পারি, আমার আদেশ তুমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।’

    ‘অন্য কিছু করতে বলো।’

    ‘না। যা বলছি, সেটাই করতে হবে।

    ‘দাদুকে আমি কী বলব? ভাঙা মূর্তি দেখে প্রশ্ন করবেন তিনি।’

    ‘সেটা তোমার সমস্যা। এখন যাও, ভাঙো মূর্তিটা। নড়ল না অ্যাডাম।

    ‘এই কষ্ট থেকে মুক্তি চাও না তুমি? দিনভর ভোগ করতে চাও কষ্টটা? রাতেও? ঘুমাতে পারবে না তুমি, ছটফট করবে অবিরাম। তোমার জীবন নরক করে তুলতে পারি আমি, অ্যাডাম। জানো না?

    জানে অ্যাডাম। চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে ওর।

    ‘যাও,’ নরম গলায় বলল কণ্ঠটা। বন্ধুর মত সুর। ‘কাজটা করামাত্র ভাল লাগবে তোমার। কথা দিচ্ছি। সময়ও বেশি লাগবে না। যাও!’

    মাথা ঝাঁকাল অ্যাডাম। সমস্ত প্রতিরোধ চূর্ণ হয়ে গেছে ওর। উল্টো ঘুরল ও। টলমল পায়ে এগিয়ে গেল দরজার দিকে।

    .

    পরের সপ্তাহগুলোয় আরও কিছু পরীক্ষা, দিতে হলো অ্যাডামকে। মূর্তি ভাঙার মত কঠিন ছিল না কোনোটাই, তবে একেবারে সহজও নয়। একটা ব্যাপার পরিষ্কার বুঝতে পারল ও—রহস্যময় কণ্ঠটা আর যা-ই হোক, ওর কল্পনাপ্রসূত নয়।

    মূর্তি ভাঙার দু’সপ্তাহ পর নিশ্চিত প্রমাণ পেল ও। সেদিনও বাজার করতে শহরে গিয়েছিলেন দাদু। কণ্ঠের মালিক ওকে হুকুম করল, ছোট একটা বেলচা নিয়ে পায়ে হেঁটে মরুভূমিতে যেতে হবে। ওদের বাড়ি থেকে আধ মাইল দূরে তিনটে জশুয়া গাছ একটা ত্রিভুজ তৈরি করেছে—একেকটা গাছের মাঝে দূরত্ব দশ ফুট। ওকে বলা হলো, ত্রিভুজের ঠিক মাঝখানটায় খুঁড়তে। ত্রিশ সেকেণ্ডের মাথায় ঠং করে কিছুতে বাড়ি খেল বেলচার ডগা। মাটি সরিয়ে ধাতব একটা বাক্স বের করে আনল অ্যাডাম। সেটার ডালা খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ।

    ‘কখনও অস্ত্র ধরেছ, অ্যাডাম?’

    ‘ওসব আমার ছোঁয়া বারণ।’

    ‘এটা ধরতে পারো। বাক্সের ভেতর যে-অস্ত্রটা দেখছ, ওটার নাম এমপি-ফাইভ। তোমার জন্যে লোড করে রাখা হয়েছে। সেফটিও অফ করা। তোলো ওটা।’

    যতটা ভেবেছিল, তারচেয়ে ভারী অস্ত্রটা। হাত কেঁপে উঠল অ্যাডামের। অস্ত্রের ওজনে নয়, নার্ভাসনেসে। আস্তে আস্তে কাঁধের কাছে তুলল, টিভিতে দেখা লোকজনের মত।

    ‘বিশ ফুট সামনে একটা মাটির ঢিবি দেখতে পাচ্ছ? গুলি করো ওটায়। ভয় নেই, কেউ শুনতে পাবে না।’

    ইতস্তত করল অ্যাডাম।

    ‘কাম অন! এই সামান্য কাজেও নিশ্চয়ই আপত্তি করবে না?’

    সেদিনের স্মৃতি মনে পড়ল অ্যাডামের। বাধা দিলে তার পরিণতি ভাল হবে না। বড় করে শ্বাস নিল ও। তারপর টিপে ধরল ট্রিগার। বিকট আওয়াজ হলো গুলিবর্ষণের, মুঠোর ভেতর লাফিয়ে উঠল এমপি-ফাইভ। আরেকটু হলেই হাত থেকে নিচে পড়ে যেত।

    ‘আরও শক্ত করে ধরতে হবে তোমাকে। সেজন্যেই প্র্যাকটিস করাচ্ছি। চিন্তা কোরো না, অ্যাডাম, আমি তোমাকে অস্ত্র চালানোর সব কলাকৌশল শিখিয়ে দেব।’

    .

    সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরীক্ষাটা দিতে হলো চার মাসের মাথায়। সেদিনও দাদু বাইরে গেলেন, তবে বাজার করতে নয়; দরকারি কিছু যন্ত্রাংশ কিনতে সিডারভিলে যেতে হলো তাঁকে। যাবার সময় বলে গেলেন, ফিরতে দেরি হবে। সুযোগটা হাতছাড়া করল না রহস্যময় কণ্ঠ। দাদু চলে যেতেই গমগম করে উঠল মাথার ভেতর।

    ‘গ্যারাজ থেকে কোয়াড-টা নাও। রাস্তা পেরিয়ে মরুভূমিতে যাবে। সোজা উত্তরদিকে। কোথায় যেতে হবে, সেটা রওনা হবার পর জানাচ্ছি।’

    বাধ্য ছেলের মত চার-চাকার কোয়াড বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অ্যাডাম। ওদিকটায় সরকারি জমি। পরিত্যক্ত। বাড়ি-ঘর নেই, এমনকী জিপ চলাচলের ট্রেইল পর্যন্ত নেই। পুরোটাই পাহাড়, প্রান্তর আর গিরিখাতে ভরা বন্ধ্যা এলাকা। একের পর এক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে চলল ও। বাড়ি থেকে সরে যাচ্ছে দূরে… আরও দূরে।

    ‘তোমাকে একটা জরুরি কথা বলতে চাই,’ হঠাৎ বলল রুক্ষ কণ্ঠ, ‘মানুষের জীবনের খুব মৌলিক একটা বিষয় সম্পর্কে।

    ‘কী বিষয়?’

    ‘দুঃখ, কষ্ট আর বেদনা। কীভাবে ওসব মোকাবেলা করে মানুষ, জানো?’

    ‘কীভাবে?’

    ‘নিজেই পুরোটা হজম করে, কিংবা অন্যের মাঝে নিজের কষ্টটা ছড়িয়ে দেয়।’

    ‘ঠিক বুঝলাম না।’

    ‘উদাহরণ দেয়া যাক। তোমার স্কুলে নিশ্চয়ই বখাটে কিছু ছেলে ছিল, যারা দুর্বল ছেলেদের ওপর অত্যাচার চালাত?’

    ‘সে তো সব স্কুলেই থাকে।’

    ‘ওরা কেন অমন করে, জানো? কারণ, বাড়িতে ওরা নিজেরাই বাপ অথবা অন্য কারও হাতে মার খায়। কেউ কেউ সেই কষ্ট চুপচাপ সহ্য করে, আর কেউ বা স্কুলে এসে অন্যদের মাঝে কষ্টটা ছড়িয়ে দেয়। এ-কাজ শুধু বখাটে ছেলেরাই করে না, অন্যেরাও করে। সেটাই দুনিয়ার নিয়ম। আরেকটা উদাহরণ দেব? স্কুলে থাকতে একটা মেয়েকে পছন্দ করতে তুমি, তাই না? ওর নাম শেরি।’

    অবাক হলো না অ্যাডাম। ওর মাথার ভেতরে যে ঘুরে বেড়াতে পারে, তার কাছে কিছুই গোপন থাকার কথা নয়।

    ‘হ্যাঁ,’ সংক্ষেপে সায় জানাল ও।

    ‘মেয়েটাও পছন্দ করত তোমাকে। গ্রীষ্মের ছুটির দুটো মাস খুব ভাল সময় কেটেছিল তোমাদের। দু’জনের পছন্দ- অপছন্দে প্রচুর মিল ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতে তোমরা। একটুও নার্ভাস হতে না তুমি।’

    কিছু বলল না অ্যাডাম। সেই সময়টার কথা ভাবতে চায় না। হ্যাঁ, ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল দু’জনের; কিন্তু ওর মত একটা ছেলের সঙ্গে ধনীর দুলালী শেরির সম্পর্ক তার চেয়ে বেশি এগোবার কথা ছিল না।

    ‘ছুটির শেষে কী ঘটল, মনে আছে? প্রথম দিন স্কুলে দু’জনে একসঙ্গে রইলে, আর তা দেখে টিটকিরির বন্যা বইল। তুমি তাতে অভ্যস্ত ছিলে, কিছু মনে করোনি; কিন্তু শেরির পক্ষে ওসব সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ল। কাজেই কী করল সে? পরদিন তুমি যখন ওর সঙ্গে কথা বলতে গেলে, অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। তোমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল নিজের বান্ধবীদের সঙ্গে। আর কোনোদিন তোমার সঙ্গে মেশেনি সে।’

    ‘এসব কেন শোনাচ্ছ আমাকে?’

    ‘বাস্তবতা বোঝাবার জন্যে। শেরি সেদিন কী করেছিল, জানো? সমস্ত কষ্ট চাপিয়ে দিয়েছিল তোমার ওপরে। নিজে হালকা হয়ে গিয়েছিল। অবজ্ঞা-অবহেলা তুমি সইলে, আর ও পেল বান্ধবীদের বাহবা। কষ্ট পেতে হলো না আর। এভাবেই পৃথিবী চলছে, অ্যাডাম— একের বোঝা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। তোমাকে সেটা বুঝতে হবে।’

    ‘কেন?’

    ‘কারণ ওই কাজটা তোমাকেও করতে হবে— নিজের কষ্ট চাপিয়ে দিতে হবে অন্য কারও ওপরে। কীভাবে তা করতে হয়, আমি তোমাকে শেখাব… আর সেটা আজই।’

    .

    মাইলখানেক পেরিয়ে শেষ চড়াইটা অতিক্রম করল অ্যাডাম। এরপর দিগন্তবিস্তৃত প্রান্তর। শ্যাওলা-রঙের একটা কনভার্টিবল গাড়িকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ওখানে। গাড়ির পেছনে উবু হয়ে আছে একজন মানুষ। কোয়াড বাইকের আওয়াজ কানে যেতেই ঝট্ করে সিধে হলো সে। পুরোপুরি উঠে দাঁড়াল না… কেন যেন দাঁড়াতে পারছে না… শুধু শরীর জাগিয়ে তাকাল ওর দিকে।

    কাছাকাছি যেতেই সমস্যাটা ধরতে পারল অ্যাডাম। হাত-পা বাঁধা মানুষটার—শেকল দিয়ে হাতদুটো আটকে দেয়া হয়েছে গাড়ির বাম্পারের সঙ্গে। বড়শিতে আটকা পড়া মাছের মত লাগছে তাকে, শরীর মোচড়াচ্ছে। অ্যাডামকে দেখতে পেয়ে স্থির হলো। ব্রেক কষে বাইক থামাল অ্যাডাম, নেমে এল মাটিতে। শান্ত চোখে দেখল মানুষটাকে। বয়স বেশি নয়, তরুণ—কলেজ-পড়ুয়া ছাত্রের মত চেহারা। পরনে টি- শার্ট আর জিন্স। বাহুতে কালো উল্কি আঁকা।

    এক্কেবারে ঠিক সময়ে হাজির হয়েছ, বন্ধু,’ বলল তরুণ। কোয়াড বাইকের দিকে ইশারা করল। ‘ওটায় যন্ত্রপাতি কিছু আছে? বাম্পারটা খুলতে পারলেই হয়।’

    ‘জবাব দেবার প্রয়োজন নেই,’ অ্যাডামকে বলল রুক্ষ কণ্ঠ। ‘তুমি ওকে মুক্ত করতে আসোনি।

    ‘কী হলো?’ তরুণের কণ্ঠে তাড়া। ‘কথা বলছ না কেন?’

    মাথা নাড়ল অ্যাডাম। ‘আমার সঙ্গে কোনও যন্ত্রপাতি নেই।’

    ‘তা হলে পুলিশে খবর দাও। তাড়াতাড়ি! যারা আমাকে বেঁধে রেখে গেছে, তারা ফিরে আসতে পারে। তোমার কাছে ফোন আছে তো?’

    অপলক তাকিয়ে রইল অ্যাডাম। ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। মরুভূমির মাঝখানে যেভাবে আগ্নেয়াস্ত্র পুঁতে রাখা হয়েছিল, ঠিক সেভাবে এই মানুষটাকেও রেখে যাওয়া হয়েছে ওর জন্যে।

    ‘অ্যাই!’ ডাকল তরুণ। ‘শুনতে পাচ্ছ আমার কথা?’

    ‘এসবের মানে কী?’ ফিসফিসিয়ে জানতে চাইল অ্যাডাম। গলা কাঁপছে ওর।

    ‘গাড়ির সামনে যাও,’ বলল রুক্ষ কণ্ঠ। ‘প্যাসেঞ্জার সাইডের দরজা খুললে মেঝেতে একটা ভারী রেঞ্চ পাবে।

    পরের নির্দেশটা অনুমান করতে পারছে অ্যাডাম। ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে।

    ‘আ… আমি পারব না,’ বলল ও।

    ‘মাথা থেকে শুরু করতে পারো,’ পরামর্শ দিল রুক্ষ কণ্ঠ। ‘তা হলে বেশিক্ষণ চেঁচাতে পারবে না। ত

    হাঁটু কাঁপছে অ্যাডামের। ওর উদ্দেশে চেঁচিয়ে কিছু বলছে ছেলেটা, লাল হয়ে উঠেছে চেহারা, কিন্তু কোনও কথা কানে পৌছুচ্ছে না ওর। হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে হৃৎপিণ্ডে, মাথার ভেতরে শুনতে পাচ্ছে নিজের কণ্ঠস্বর—না… কিছুতেই না! অদৃশ্য কণ্ঠটা গমগম করে উঠল তার মাঝে।

    ‘আমার আদেশ অমান্য কোরো না, অ্যাডাম। ফলাফল কী হতে পারে, সেটার নমুনা তুমি দেখেছ। চাইলে তার চেয়েও অনেক বেশি কষ্ট দিতে পারি আমি তোমাকে।’

    ‘আমাকে দিয়ে হবে না… আমি পারব না কিছুতেই।’

    ‘রেঞ্চটা নিয়ে এসো, অ্যাডাম। পিটিয়ে খুন করো ছেলেটাকে!’

    ‘না!’ চিৎকার করল অ্যাডাম।

    থতমত খেয়ে গেল বন্দি তরুণ। কী ঘটছে, বুঝতে পারছে না।

    পরমুহূর্তে ভয়াবহ অনুভূতিটা চেপে বসল অ্যাডামের মাঝে। দাদীর কবর দেখতে পেল ও, এবার সেটার পাশে দাদু নেই, রয়েছে কেবল ও—একা। হঠাৎ নড়ে উঠল কবরফলক। ছিটকে পড়ল একপাশে। ভূমিকম্পের মত কাঁপছে মাটি, সরে যাচ্ছে… উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে কবর! ধূলিধূসরিত কফিনটা দেখা গেল একটু পরেই। বিচ্ছিরি শব্দ তুলে খুলতে শুরু করল ডালা।

    ‘তোমার দোষ, অ্যাডাম! তোমার দোষ!!

    ‘না! আমি পারব না!’ বলল অ্যাডাম। ‘যা খুশি করো তুমি, আমি কারও প্রাণ নিতে পারব না।’

    ‘কষ্ট দিতে পারি তোমাকে— ভয়ঙ্কর কষ্ট। এতই ভয়ঙ্কর যে, কষ্টটা আরেকজনের ওপর না চাপিয়ে উপায় থাকবে না তোমার।’

    ‘পারব না আমি!’

    ‘পারবে। এই দেখো। ‘

    দৃষ্টি বিস্ফারিত হয়ে গেল অ্যাডামের। মনে হলো, কবরের ওপর ঝুঁকে গেছে সে, তাল হারিয়ে পড়ে যাচ্ছে ভেতরে। চেঁচিয়ে উঠল নিজের অজান্তে।

    ‘পিউট্রেফ্যাকশন কাকে বলে, জানো?’ প্রশ্ন করল রুক্ষ কণ্ঠ।

    জবাব দিল না অ্যাডাম। ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে কবরের তলদেশ। কফিনের ডালা সরে গেছে, দেখা যাচ্ছে দাদীর কঙ্কাল—থিকথিকে তরলের মাঝে ভাসছে তাঁর হাড়গোড়। তার ওপরে ধপাস করে পড়ল ও। দাদীর পাঁজরের হাড় ভেঙে ঢুকে গেল দু’হাত। সারা গা ভরে গেল পূতিগন্ধময় তরলটাতে।

    ‘ওটাই পিউট্ৰেফ্যাকশন। মরার পর যা ঘটে। পচে-গলে যায় শরীরের সব মাংস, পরিণত হয় ওই থিকথিকে স্যুপে।’

    চেঁচাচ্ছে অ্যাডাম। পিছিয়ে গেল দু’পা। চোখ বন্ধ করে ফেলল। তাতে লাভ হলো না। সব দেখতে পাচ্ছে এখনও। নাকে ভেসে আসছে মাংসপচা ভয়ানক বদগন্ধ, পেট উল্টে আসার জোগাড়।

    ‘হ্যাঁ, স্যুপ, ‘বলল রুক্ষ কণ্ঠ। ‘মরার পর স্যুপ হয়ে যায় মানুষ। তোমার দাদীও স্যুপ হয়ে গেছে। আর সেটা তোমার জন্যে। তুমিই তার জন্যে দায়ী।’

    হাঁচড়ে-পাঁচড়ে কীভাবে বাইকে উঠে বসল, বলতে পারবে না অ্যাডাম। টের পেল, ওর অবস্থা দেখে চেঁচাচ্ছে বন্দি তরুণ—সাহায্য চাইছে না, ভয় পেয়ে গেছে। চাবি ঘুরিয়ে ইঞ্জিন চালু করল ও, থ্রটল ঘুরিয়ে সামনে ছোটাল কোয়াড বাইক। কোথায় যাচ্ছে, কিচ্ছু জানে না। শুধু জানে, পালাতে হবে ওকে।

    ‘কোথায় যাচ্ছ তুমি?’জানতে চাইল রুক্ষ কণ্ঠ।

    কান দিল না অ্যাডাম। মরুর রুক্ষ জমি যেন প্রকাণ্ড সব ঢেউ, সেগুলোর ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে কোয়াড বাইক। প্রতি ঝাঁকিতে গুঙিয়ে উঠছে ওটার পুরো বড়ি। কিন্তু পাত্তা দিল না ও। থ্রটল পুরোপুরি খোলা। ইঞ্জিনের কাছ থেকে সমস্ত শক্তি আদায় করতে চাইছে। ক্ষণে ক্ষণে ঝাঁপ দিচ্ছে বাইক। পিছিয়ে যাচ্ছে শ্যাওলা রঙের গাড়ি আর বন্দি তরুণ।

    আচমকা সচেতন হয়ে উঠল অ্যাডাম। চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গেছে ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা। কানেও বাজছে না অদৃশ্য কণ্ঠস্বর। ওর ওপর থেকে যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে রহস্যময় শক্তিটা মনে পড়ল, এমনটা আগেও ঘটেছে—একেবারে প্রথম সন্ধ্যায়, ও যখন পিকআপ ছোটাচ্ছিল বাড়ির উদ্দেশে। তবে কি এ-আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাবার উপায় এটাই?

    অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল অ্যাডাম, সামনে আচমকা উদয় হওয়া উঁচু ঢিবিটা লক্ষ করেনি; ফুল স্পিডে ওটার ওপর দিয়ে ছুটল বাইক, ঝাঁপ দিল বাতাসে। শেষ মুহূর্তে মরিয়া হয়ে বাহনটাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করল ও, কিন্তু লাভ হলো না। দড়াম করে মাটিতে আছড়ে পড়ল বাইক। প্রচণ্ড ঝাঁকিতে ছিটকে পড়ল অ্যাডাম।

    কয়েক মুহূর্ত পর ককাতে ককাতে উঠে দাঁড়াল ও। ঘুরে তাকাল ফেলে আসা পথের দিকে। কনভার্টিবলটা আধ মাইল দূরে। বন্দি তরুণের মুখটা এতদূর থেকে অস্পষ্ট দেখাচ্ছে।

    ‘পালাবার চেষ্টা করে কোনও লাভ নেই, ‘কথা বলে উঠল রুক্ষ কণ্ঠ। ‘আমার হাত থেকে মুক্তি নেই তোমার।

    ‘প্লিজ!’ অনুনয় করল অ্যাডাম।

    ‘আমি কী চাই, তা তুমি জানো। কথামত কাজ না করলে কী ঘটবে, তাও জানা আছে তোমার। চাইলে বাকি জীবন তোমাকে ওই স্যুপের ভেতর রেখে দিতে পারি আমি। এখন নিজেই ঠিক করো কী করবে। ভাবনা-চিন্তার জন্যে কয়েক মিনিট সময় নিতে পারো, আমাদের বন্ধু কোথাও চলে যাচ্ছে না।’

    চুপ হয়ে গেল রুক্ষ কণ্ঠ। নেমে এল নীরবতা। কোয়াড বাইকের ইঞ্জিনের মৃদু আওয়াজ, আর নিজের বুকের ধুকপুকানি ছাড়া কিছু শুনতে পাচ্ছে না অ্যাডাম।

    ঘন ঘন শ্বাস নিল ও। নাকে লেগে আছে দাদীর পচা- গলা দেহের বিশ্রী দুর্গন্ধ, কিছুতেই যাচ্ছে না। হাতদুটো চোখের সামনে তুলে ধরল—শুকনো, ধুলোমাখা… অথচ ওর মনে হচ্ছে, ভিজে চট চট করছে দু’বাহু।

    পা গুটিয়ে মাটিতে বসে পড়ল অ্যাডাম। গুণচিহ্নের মত দু’বাহু ভাঁজ করল বুকের ওপর, খামচে ধরল দু’কাঁধ। তারপর সামনে-পিছে দোলাতে থাকল ঊর্ধ্বাঙ্গ—অপ্রকৃতিস্থের মত। সেই ছোটবেলায়, কোনও কারণে আপসেট হলে এমনটা করত. ও। স্কুলের ছেলেমেয়েরা এ-কারণে কম খেপায়নি ওকে। বহু চেষ্টায় দূর করেছিল অভ্যেসটা। আজ আবার ফিরে এসেছে সেটা।

    .

    বিশ মিনিট পর কোয়াড বাইক নিয়ে কনভার্টিবলের কাছে ফিরে এল অ্যাডাম। ইঞ্জিন বন্ধ করে ও যখন নামল, কিছু বলল না বন্দি তরুণ; শুধু ক্লান্ত দু’চোখ মেলে অপলক তাকিয়ে রইল ওর দিকে।

    নিঃশব্দে গাড়ির সামনে চলে গেল অ্যাডাম, প্যাসেঞ্জার সাইডের দরজা খুলল। মেঝের ওপর পড়ে আছে ভারী রেঞ্চটা, হাত বাড়িয়ে সেটা তুলে নিল ও। যন্ত্রটা দেখতে পেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তরুণের চেহারা। ভাবল, ওকে বুঝি মুক্ত করতে চলেছে অচেনা মানুষটা। পরক্ষণে অ্যাডামের সঙ্গে চোখাচোখি হলো তার। আশা মুছে গিয়ে চেহারায় ফুটে উঠল আতঙ্ক। শেকল ধরে টানাটানি শুরু করল তরুণ, পিছিয়ে যেতে চাইছে। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল কিছু দুর্বোধ্য শব্দ—করুণা প্রার্থনা ও ঘৃণামিশ্রিত ক্রোধের মিশেল।

    কয়েক মুহূর্ত তার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল অ্যাডাম। তারপর নিচু গলায় বলল, ‘ক্ষমা কোরো, আমি নিরুপায়।’

    রেঞ্চটা উঁচু করল ও।

    .

    দু’দিন পর দাদুর অনুপস্থিতির সুযোগে জায়গাটা আবার দেখতে গেল অ্যাডাম। কনভার্টিবলটা গায়েব। যেখানে হতভাগ্য তরুণটির মৃতদেহ পড়ে ছিল, সেখানে ধুলো ছাড়া আর কিছু নেই। রক্তে ভেজা জায়গাটা চেঁছে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

    তিন মাস পেরিয়ে গেছে সেই ঘটনার পর। প্রতি রাতে ঘুমাবার আগে অদৃশ্য কণ্ঠটা হানা দেয় ওর কানে। মনের পর্দায় জীবন্ত করে তোলে নিত্যনতুন সুন্দরী মেয়ে, শরীর ভরিয়ে দেয় সুখের আবেশে। ভাল লাগে ওর, অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ক্ষণিকের সেই সুখ শেষ হবার পর, ও যখন ফের নিঃসঙ্গ হয়ে যায়, মাথার ভেতরে ঘুরপাক খেতে থাকে হাজারো প্ৰশ্ন।

    এসব কেন ঘটছে? কী চায় ওই রুক্ষ কন্ঠের অশরীরী?

    আজও প্রশ্নগুলোর জবাব পায়নি অ্যাডাম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১
    Next Article মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.