Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প358 Mins Read0

    অন্তর্যামী – ১৭

    সতেরো

    জেট ফাইটারদুটো যখন দ্বিতীয়বার ফ্রেজনোর ওপর দিয়ে উড়ে গেল, ডা. বারবারা হোল্ডেন তখন ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে সোপ অপেরা দেখছিলেন। বিকট আওয়াজে কানে তালা লেগে গেল তাঁর, সারা বাড়ি যেন কেঁপে উঠল থর থর করে, টিভির পর্দার ছবি ঝিরঝির করে উঠল কয়েক সেকেণ্ডের জন্য। বিরক্ত ভঙ্গিতে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ফ্রেজনোর আকাশে ফাইটারের আনাগোনা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এদিকটায় মাঝে মাঝেই বিমানবাহিনীর বিভিন্ন ধরনের মহড়া হয়, তাই বলে রাতের বেলা, কিংবা এত নিচ দিয়ে ওড়ে না ফাইটারগুলো। আরেকটু হলেই প্রচণ্ড শব্দে তাঁর সমস্ত জানালার কাঁচ ভেঙে যেত।

    নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেন বারবারা। বয়স পঞ্চাশের ঘর ছোঁবে খুব শীঘ্রি, কিন্তু সংসার করা হয়ে ওঠেনি আজও। অল্পবয়েসে বিয়ে করেছিলেন, তবে সে-ঘর টেকেনি বেশিদিন। ক’দিন যেতে না যেতে টের পেয়েছিলেন, ডাক্তারিই তাঁর সব; স্বামী-সংসারের প্রতি টান অনুভব করেন না মোটেও। ফলে শেষমেশ যা হবার তা-ই হলো, ডিভোর্স হয়ে গেল স্বামীর সঙ্গে, দ্বিতীয়বার আর সে-পথ মাড়াননি তিনি। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন ডাক্তারি পেশায়।

    ফাইটারের আওয়াজ মিলিয়ে যেতেই নতুন একটা আওয়াজ কানে এল বারবারার। একটা গাড়ি এসে থেমেছে তাঁর ড্রাইভওয়েতে। জানালার কাঁচে দেখা গেল হেডলাইটের আলো। খানিক পর বেজে উঠল কলিং বেল।

    ধীরে ধীরে দরজার কাছে গেলেন বারবারা, কিন্তু ছিটকিনি খুললেন না, দরজার পাল্লা ফাঁকা করে উঁকিও দিলেন না, বরং নিরাপদ দূরত্ব থেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে?’

    জবাবে যার কণ্ঠ শোনা গেল, সেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এই মানুষটাই তাঁকে দরজা খোলার আগে সতর্ক থাকার নিয়মকানুন শিখিয়েছে।

    ‘ডা. হোল্ডেন? আমি রানা… মাসুদ রানা।’

    চমকে উঠলেন বারবারা। ‘রানা!’ তাড়াতাড়ি খুললেন দরজা। ‘তুমি কোত্থেকে…’ বলতে বলতে থমকে গেলেন রানার উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে। ‘কী হয়েছে?’

    ‘আপনার সাহায্য দরকার,’ রানা বলল। ‘আমার সঙ্গে আসুন, প্লিজ।’

    তাড়াতাড়ি ওকে অনুসরণ করলেন বারবারা। গাড়ির কাছে গিয়ে পেছনের দরজা খুলে ধরল রানা। ব্যাকসিটে আধো-অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে অ্যালি। পথিমধ্যে নির্জন একটা জায়গায় গাড়ি থামিয়েছিল রানা, অ্যালির পরনের স্যুটটার ঊর্ধ্বাংশ খুলে নিয়ে পরীক্ষা করেছে হাতের ক্ষতটা। নিশ্চিত হয়েছে, শরীরের ওই একটা জায়গাতেই আঘাত পেয়েছে মেয়েটা, তবে সেটা কতটা গুরুতর তা এখনও বলতে পারছে না। এটুকু বুঝতে পারছে, রক্তবাহী কোনও ধমনী কাটা পড়েনি; সেক্ষেত্রে এতক্ষণে রক্তক্ষরণের ফলে জ্ঞান হারাত ও, কিংবা মারা যেত।

    গাড়ির দরজার কাছে এসে এক মুহূর্তের জন্য থমকালেন বারবারা, তারপর রানাকে পাশ কাটিয়ে উঠে পড়লেন পেছনের সিটে। শার্ট ছিঁড়ে অ্যালির হাতে একটা টর্নিকেট বেঁধে দিয়েছে রানা, সাবধানে খুলে নিলেন সেটা। স্বল্প আলোয় দেখলেন ক্ষতটা। থমথমে হয়ে উঠল চেহারা।

    ‘এ তো বুলেট ইনজুরি, ঘাড় ফিরিয়ে রানাকে বললেন তিনি। ‘ওকে এখানে এনেছ কেন? হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার…’

    ‘সরি,’ মাথা নাড়ল রানা। ‘হাসপাতালে যাওয়া যাবে না, পুলিশেও জানানো চলবে না। কেউ খবর পেলেই স্রেফ খুন হয়ে যাবে মেয়েটা।

    ‘কেউ হয় ও তোমার?’ জানতে চাইলেন বারবারা।

    আবারও মাথা নাড়ল রানা।

    কয়েক মুহূর্ত ওর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন বারবারা। তারপর নিচু গলায় বললেন, ‘বুঝতে পেরেছি।’

    না বোঝার কিছু নেই। এই অদ্ভুত বাঙালি যুবকটির স্বভাব সম্পর্কে ভালই জানা আছে তাঁর। সম্পূর্ণ অচেনা কোনও মানুষের দিকে নির্দ্বিধায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ও, প্রয়োজনে তাদের জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হয় না। তিনি নিজেই তার সাক্ষী।

    কয়েক বছর আগে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন বারবারা। উগ্র স্বভাবের চারজন কালো যুবক, নির্জন এক গলিতে পথরোধ করেছিল তাঁর, কেড়ে নিয়েছিল সর্বস্ব। বারবারা বাধা দেবার চেষ্টা করলে তাঁকে ছুরি মারে ওরা, এরপর পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় কষ্টেসৃষ্টে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন তিনি। রক্তক্ষরণে মারাই যাচ্ছিলেন, কিন্তু ঠিক সে-মুহূর্তে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল রানা। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে তুলে নেয় ও, নিয়ে যায় হাসপাতালে। ঘটনা এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলে কোনও কথা ছিল না, এমনতরো সাহায্যকারী অনেকই পাওয়া যায়, কিন্তু রানার ব্যাপার ভিন্ন। বারবারার অপারেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে অপেক্ষা করেছে সে, জ্ঞান হবার পর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পুরো ঘটনা জেনে নিয়েছে, এরপর নিঃশব্দে বেরিয়ে গেছে হাসপাতাল থেকে। চাইলে পুলিশের হাতে ঝামেলা গছিয়ে চলে যেতে পারত, কিন্তু যায়নি।

    আটচল্লিশ ঘণ্টার মাথায় বারবারা খবর পেলেন, ধরা পড়েছে চার ছিনতাইকারী—দু’জনের অবস্থা গুরুতর। আর তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করেছে মাসুদ রানা নামে এক বিদেশি যুবক। পুলিশের বদলে ও কেন কাজটা করতে গেল? কারণ চার দুর্বৃত্তই শহরের সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল গ্যাঙের সদস্য, তাদের বিরুদ্ধে কিছু করবার সাহস নেই পুলিশের। এ-কথা জানতে পেরে রানা নিজেই নেমে পড়েছিল মাঠে ভয়ঙ্কর একটা গ্যাঙের বিরুদ্ধে ও একা! নিজেও মারা যেতে পারত। কিন্তু পিছিয়ে যায়নি। একদম অচেনা একজন মানুষের জন্যে, কোনও ধরনের প্রতিদানের আশা ছাড়া, কেউ এতকিছু করতে পারে, তা কখনও কল্পনাও করেননি বারবারা। রানা তার দায়িত্ব সেখানেও শেষ করেনি। যতদিন হাসপাতালে ছিলেন, নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছে; সুস্থ হবার পর বাড়িতে পৌছে দিয়েছে, এমনকী ভবিষ্যতে বিপদ-আপদ এড়ানোর নানা কৌশল বলে দিয়েছে। তারপর একদিন… ধূমকেতুর মত যেভাবে উদয় হয়েছিল, সেভাবে মিলিয়ে গেছে।

    এভাবে আরও কত-শত মানুষকে সাহায্য করেছে রানা, তা জানা নেই বারবারার। কেউ জানে না। আর সেটাই রানাকে সাহস জুগিয়েছে তাঁর কাছে আসার জন্যে। শত্রুপক্ষের কাছে তাঁর সঙ্গে রানার পরিচয়ের কোনও ধরনের রেকর্ড থাকার কথা নয়।

    গাড়ি থেকে নেমে এলেন বারবারা। বললেন, ‘আমাকে সাহায্য করো। ওকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যেতে হবে।’

    দু’জনে ধরাধরি করে অ্যালিকে নিয়ে গেল বারবারার বেডরুমে, শুইয়ে দিল বিছানায়। বারবারা একটা ইঞ্জেকশন দিলেন ওকে, এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আঘাতটা পরীক্ষা করায়। পনেরো মিনিট পর রানা যখন গাড়িটা দূরের একটা পার্কিং লটে রেখে পায়ে হেঁটে ফিরে এল, তখন অ্যালির ক্ষতটার পরিচর্যা শুরু করেছেন বারবারা।

    ‘হাতের হাড় অক্ষত আছে,’ রানার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির জবাবে বললেন তিনি। ‘ব্র্যাকিয়াল আর্টারি বা ডিপ ব্র্যাকিয়ালেরও কোনও ক্ষতি হয়নি। এগজিট উণ্ড দেখে মনে হচ্ছে আস্ত বুলেটটাই বেরিয়ে গেছে, ভেতরে কোনও ফ্র্যাগমেন্ট রয়ে যায়নি।’

    স্বস্তি অনুভব করল রানা। সবগুলোই ভাল খবর।

    ‘ক্ষতটা পরিষ্কার করছি এখন,’ বললেন বারবারা। ‘এরপর ব্যথার ওষুধ আর অ্যান্টিবায়োটিক্স শুরু করব। আশা করি আধঘণ্টার ভেতরেই ব্যথা কমে যাবে ওর—পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই।

    ‘ধন্যবাদ, ডা. হোল্ডেন,’ কৃতজ্ঞতা জানাল রানা।

    ‘কী যে বলো না! ধন্যবাদ দেবার কী আছে? রোগীর সেবা করা তো আমার কর্তব্য। বাই দ্য ওয়ে, ওর তো বোধহয় নতুন পোশাকও লাগবে…’

    মেঝের ওপর পড়ে আছে প্রক্সিমিটি স্যুটটা। রক্তে মাখামাখি। একই অবস্থা অ্যালির গায়ের পোশাকের। আধভেজা হয়ে লেপ্টে গেছে শরীরে।

    ‘ঠিক বলেছেন,’ রানা সায় জানাল। ‘আশপাশে কোনও দোকান আছে?’

    ‘এ-অবস্থায় তোমার আর বাইরে যাবার প্রয়োজন নেই। অ্যাটিকে আমার প্রচুর পুরনো জামাকাপড় আছে। একটা না একটা ঠিকই ওর লেগে যাবে।’

    ‘কী বলে যে…’

    ‘আবার একই কথা?’ চোখ রাঙালেন বারবারা। ‘এখন যাও, আমাকে কাজ করতে দাও।’

    মাথা ঝাঁকিয়ে উল্টো ঘুরতে গেল রানা। কী যেন মনে পড়ায় জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার টিভিটা কোথায়?’

    ‘ড্রয়িং রুমে। কেন?’

    ‘শুনলাম আজ সারাদিন আমাকে খবরে দেখানো হচ্ছে। আপনি দেখেননি?

    ‘না, আমি নিউজ চ্যানেল দেখি না। ভাল কোনও খবর থাকে না… অসহ্য লাগে আমার।’

    ড্রয়িং রুমে চলে এল রানা। রিমোট তুলে চ্যানেল ঘোরাল। থামল সিএনএন-এ পৌঁছে। আকাশ থেকে তোলা স্টেডিয়ামের ছবি ফুটে উঠেছে পর্দায়। দেখা যাচ্ছে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটা—যেখানে ল্যাণ্ড করেছিল, সেখানেই বসে আছে এখনও, মাঠের পঞ্চাশ-গজ নির্দেশক লাইনটার ওপরে, আড়াআড়িভাবে। লাল-নীল বাতি জ্বলতে থাকা অনেকগুলো গাড়ি ঘিরে রেখেছে ওটাকে। দেখে মনে হচ্ছে, অন্তত আধ ডজন ফেডারেল এজেন্সি উদয় হয়েছে দৃশ্যপটে।

    সোফায় বসে নিউজ কাভারেজ দেখতে থাকল ও। বুঝতে চাইছে, পরিস্থিতি কতটা গুরুতর। বিশ মিনিটের মাথায় আরও কয়েকটা চ্যানেল ব্রাউজ করার পর বুঝল, সেটা যথেষ্টই খারাপ। ‘টিভির পর্দার নিচে স্ক্রল করছে খবরটা… সোজাসাপ্টা ভাষায়—হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটির বরাত দিয়ে জানানো হচ্ছে, এক মুসলিম জঙ্গি যুবক তার নিজ হাতে বানানো একটা রেডিয়োলজিক্যাল বোমা নিয়ে ঢুকে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, বিস্ফোরণ ঘটাতে চাইছে গুরুত্বপূর্ণ কোনও স্থানে। হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটির এক কর্তাব্যক্তির সাক্ষাৎকার দেখানো হলো। তিনি বলছেন, হাতে একদম সময় নেই, বোমাটা যে- কোনও মুহূর্তে ফাটানো হতে পারে। দেশবাসীর সাহায্য চাইছেন তিনি ভয়ঙ্কর ওই টেরোরিস্টকে খুঁজে বের করার জন্য।

    সন্দেহভাজন যুবকের নাম বলা হচ্ছে না কোথাও। সেটার কারণ আন্দাজ করতে কষ্ট হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের ওপরমহলে রানার বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। সরাসরি ওর নাম প্রচার করে যদি সন্ত্রাসবাদের আখ্যা দেয়া হয়, তা বিশ্বাস করবে না তারা কেউ, বরং প্রতিবাদ করে বসবে। তাই একটু ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখা হয়েছে নাম না বলে। কথিত টেরোরিস্ট আর রানা যে একই ব্যক্তি, সেটা পরিষ্কার হবার আগেই ওকে আর অ্যালিকে খুঁজে বের করে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার ইচ্ছে।

    নাম না বললেও একটা কম্পোজিট স্কেচ দেখানো হচ্ছে টিভিতে-হাতে আঁকা একটা ছবি, যেন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মোতাবেক আঁকা। তবে এক দেখাতেই রানা বুঝল, বর্ণনা- টর্ণনা কিছুই নয়, ডোশিয়ে-তে রাখা ওর ফটোগ্রাফ দেখে আঁকা হয়েছে ওটা। একদম নিখুঁত… কম্পোজিট স্কেচ এত নিখুঁত হয় না। ওটা দেখলেই যে কেউ চিনবে ওকে।

    চিনতেও পেরেছে। বেকারফিল্ডের যেখান থেকে পুরনো জিপটা কিনেছিল রানা, সেখানকার সেলসম্যান চিনেছে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ক্যাশিয়ার চিনেছে। ওরাই খবর দিয়েছে হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটিকে। জিপের বর্ণনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে টেলিভিশনের কল্যাণে। সে-কারণেই বনের কাছে ওটাকে দেখামাত্র একজন হাইকার আবার পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছিল।

    সব মিলে পরিস্থিতি রীতিমত বেগতিক, বুঝতে পারছে রানা। ওকে সাহায্য করার মত লোকের অভাব নেই, কিন্তু সে-সুযোগটাই দেয়া হবে না কাউকে। নিঃসন্দেহে আড়ি পাতা হয়েছে ওর বন্ধুবান্ধবদের ফোনে, লোক লাগানো হয়েছে তাদের পেছনে… রানা যোগাযোগ করলেই টের পেয়ে যাবে।

    পেছনে মৃদু আওয়াজ শুনে ঘাড় ফেরাল রানা। ড্রয়িং রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন বারবারা, চোখ টিভির দিকে কখন এসে দাঁড়িয়েছেন, টের পায়নি ও, খবর শোনার দিকে ছিল সব মনোযোগ।

    বড় করে একটা শ্বাস ফেলে ওর দিকে তাকালেন বারবারা। জিজ্ঞেস করলেন, ‘এসব সত্যি?’

    ‘টিভিতে যা বলছে?’ মলিন হাসি ফুটল রানার ঠোঁটে। ‘আপনার কী ধারণা?’

    ‘একটা বর্ণও বিশ্বাস করছি না। তোমাকে তো আমি চিনি।’ এগিয়ে এসে রানার পাশের সোফায় বসলেন বারবারা। ‘কিন্তু বড় ধরনের একটা গোলমালে যে জড়িয়েছ, তা বুঝতে পারছি পরিষ্কার।’

    ‘দুঃখিত,’ বিব্রত হলো রানা। ‘আপনাকে এসবের সঙ্গে জড়াবার আগে বোধহয় সবকিছু খুলে বলা উচিত ছিল।’

    ‘হ্যাঁ, ছিল। কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত বদলাত না ওতে। ব্যাপারটা যা-ই হোক না কেন, আমি তোমাকে সাহায্য করতাম।’

    কারণটা জানতে চাইল না রানা। ডা. বারবারার চোখে কৃতজ্ঞতার যে-আভা ফুটে উঠেছে, তা আগেও বহু মানুষের চোখে দেখেছে ও। এখন কিছু জিজ্ঞেস করতে যাওয়া মানেই আবেগঘন কণ্ঠে ওর গুণগান আর কৃতজ্ঞতা-প্রকাশের বন্যা বয়ে যাওয়া। ওসবে চিরকালই বিব্রত বোধ করে রানা। তাই ছোট্ট করে একটু মাথা ঝাঁকিয়ে ক্ষান্ত রইল।

    ‘তবে সবকিছু জানার কৌতূহল অনুভব করছি,’ বললেন বারবারা। ‘মেয়েটা কে? কোথায় পেলে ওকে? বলবে?’

    গোপন করার কোনও কারণ পেল না রানা। বারবারা জড়িয়ে গেছেন ওদের সঙ্গে, এখন তাঁকে অন্ধকারে রেখে লাভ নেই কোনও। তা ছাড়া, পুরো ব্যাপারটাই এখনও দুর্বোধ্য। ঘুমের ঘোরে যা বলেছে অ্যালি, তা খতিয়ে দেখার সময় পায়নি ও। কারও সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। সেক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের চেয়ে ভাল শ্রোতা আর কেউ হতে পারে না।

    কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করার পর বলতে শুরু করল রানা। একেবারে প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত—সব। অডিয়ো রেকর্ডার চালিয়ে অ্যালির কথাগুলোও শোনাল বারবারাকে। ওর কথা শেষ হলো পুরো বিশ মিনিট পর। মাঝে একবারও মুখ খোলেননি বারবারা, রানার কথা শেষ হবার পরেও কয়েক মিনিট চুপ করে রইলেন। চেহারা দেখে মনে হলো, কথাগুলো ভালমত আত্মস্থ করতে চাইছেন।

    খানিক পর নীরবতা ভাঙলেন তিনি। ঠিক অবিশ্বাস নয়; সন্দেহের সুরে বললেন, ‘মাইণ্ডরিডার? সত্যি?’

    ‘নিজের চোখে না দেখলে আমিও বিশ্বাস করতাম না।’ রানা কাঁধ ঝাঁকাল।

    ‘ইউটাহ্-র ব্যাপারটা কী? কী আছে ওখানে?’

    ‘কে জানে। হয়তো নতুন ধরনের কোনও ওয়েপন। লিয়ারির তৈরি করা। সে না করে থাকলে মার্কিন সরকার, কিংবা অন্য কোনও ডিফেন্স কন্ট্রাক্টর তৈরি করেছে।’

    ‘তার সঙ্গে একটা বাচ্চা মেয়ের কী সম্পর্ক?’

    ‘যতদূর বুঝতে পারছি, অ্যালিকে ওটার জন্যে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে ওরা। এতটাই যে, ওকে খুন করতে চাইছে। ওদের ধারণা, অ্যালি বেঁচে থাকলে এলিয়াস লেকের ওই জিনিসটার ক্ষতি হবে।’

    ‘তার মানে দাঁড়াচ্ছে, ওটার সঙ্গে মাইওরিডিঙের সম্পর্ক আছে,’ বললেন বারবারা। ‘অ্যালিকে আরেকবার ইন্টারোগেট করা গেলে…’

    ‘সম্ভব?’ জানতে চাইল রানা।

    মাথা নাড়লেন বারবারা। ‘কড়া ঘুমের ওষুধ দিয়েছি ওকে। স্লিপ ইন্টারোগেশনের জন্যে যেটুকু চেতনা থাকা দরকার, তা এ-মুহূর্তে নেই। জেগে ওঠার পর দ্বিতীয়বার কখন ঘুমাবে, বলতে পারি না। হাতের ব্যথাটা ভোগাবে বেশ, ঠিকমত ঘুম হবে বলে মনে হয় না। আর যে-ড্রাগটার কথা তুমি বললে, ওটাও বেরোতে শুরু করেছে শরীর থেকে… তার একটা প্রভাব তো আছেই।’

    ‘তা হলে ওর কাছ থেকে আর কিছু জানার উপায় নেই। যতটুকু জেনেছি, তা-ই বেশি।’ ঠোঁট কামড়াল রানা। কী যেন ভাবল কয়েক মুহূর্ত। এরপর মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল, ‘কম্পিউটার আছে আপনার?’

    ‘হ্যাঁ। এনে দিচ্ছি।’

    কয়েক মিনিট পরেই একটা ল্যাপটপ কম্পিউটার নিয়ে এলেন বারবারা। রানার সামনে, সেন্টার টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখলেন সেটা। পাওয়ার বাটন টিপে কম্পিউটারটা অন্ করল রানা। দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। আজকালকার প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়ে গেছে, অনায়াসে সার্চ ইঞ্জিনে ব্যবহার করা কি-ওয়ার্ড ট্র্যাক করা যায়। রানা যদি গুগলের সার্চ বারে ‘এলিয়াস ড্রাই লেক’ লেখে, সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্নিং পাবে শত্রুপক্ষ—কেউ একজন লেকটার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। এরপর আই.পি. অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে ওকে খুঁজে বের করা তো ছেলেখেলা!

    ভেবেচিন্তে বিকল্প একটা কায়দা বের করল রানা। সার্চ ইঞ্জিনের বদলে কম্পিউটারের ব্রাউজারে খুলল গুগল ম্যাপস্। সার্চ অপশন ব্যবহারের ঝামেলায় গেল না, মাউসপ্যাডের সাহায্যে খুঁজে নিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্র, আস্তে আস্তে যুম করতে শুরু করল ইউটাহ্ রাজ্যের মানচিত্ৰ।

    এলিয়াস ড্রাই লেক।

    নামটা মাথার ভেতরে খোঁচাচ্ছে রানার। আগে কখনও শুনেছে কি না, মনে পড়ছে না। দেখা দরকার, ওখানে আসলে কী আছে। এর জন্যে গুগল ম্যাপসের থ্রিডি ইমেজের চেয়ে ভাল অপশন এ-মুহূর্তে আর কিছু নেই।

    ম্যাপটা বড় হতে হতে ক্রমান্বয়ে পর্দায় ফুটে উঠল বিভিন্ন ধরনের ভৌগোলিক বিশেষত্ব—পাহাড়, নদী, সমতলভূমি, ইত্যাদি। সবগুলোর পাশে নামও ভেসে উঠেছে। রাজ্যের উত্তর প্রান্ত থেকে নামগুলো পড়তে শুরু করল রানা। যা খুঁজছিল, তা পেয়ে গেল তিন মিনিটের মাথায়। শুধু নামে নয়, কাজেও ওটা ড্রাই লেক-পানি নেই… শুকনো, খটখটে।

    রকি পর্বতমালার পশ্চিমে, বিশাল মরু এলাকার দক্ষিণ প্রান্তে হ্রদটা। উত্তরে, পাঁচ মাইল দূর দিয়ে গেছে পঞ্চাশ নম্বর হাইওয়ে। সরু একটা রাস্তা বেরিয়ে এসেছে হাইওয়ে থেকে, মিলেছে লেকের মাথায়… রাস্তাটা শেষ হয়ে গেছে ওখানেই। খুব বড় নয় লেকটা, দৈর্ঘ্য-প্রস্থ দু’দিকেই তিন মাইলের মত। পুরো স্ক্রিনজুড়ে লেককে যুম করে খুঁটিয়ে দেখল রানা, ধারেকাছে কোনও বাড়িঘরের চিহ্নমাত্র নেই। পুরোটাই ফাঁকা, সাদাটে… মরুভূমির স্ট্যাণ্ডার্ডেও একেবারে বন্ধ্যা।

    ‘ওটা আবার কী?’ হঠাৎ বলে উঠলেন বারবারা।

    স্ক্রিনের মাঝখানে, বিন্দুর মত একটা দাগের দিকে ইশারা করছেন তিনি—ব্যাকগ্রাউণ্ড থেকে আলাদা করা যায় কি যায় না। রানার চোখ এড়িয়ে গেছে প্রথম দফায়। মাউসপ্যাডের ওপর আঙুল ঘোরাল ও, বড় করতে থাকল ছবিটা। যুম করার সর্বোচ্চ লিমিটে যখন পৌঁছল, তখন বিন্দুটা স্ক্রিনের অনেকখানি দখল করে নিয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি, তাই বিন্দুর মত লাগছে, কিন্তু লেকের বেড়ে বিছিয়ে থাকা ছায়া দেখে বোঝা গেল ওটার পরিচয়। সেলফোনের একটা টাওয়ার।

    ‘ফলস্ অ্যালার্ম,’ বললেন বারবারা। .

    ‘আমার তা মনে হয় না।’ রানার কপালে ভাঁজ দেখা দিয়েছে। মনে পড়ে যাচ্ছে; বেকারফিল্ডে একটা সেলফোন টাওয়ার দেখে কী ভীষণ ভয় পেয়েছিল অ্যালি। ম্যাপটা ছোট করে নিল ও। হাইওয়ে অনুসরণ করে খুঁজে বের করল সবচেয়ে নিকটবর্তী জনপদ। কয়েক মাইল দূরে রয়েছে ছোট্ট একটা শহর, হাইওয়ের পাশে। শহরে কোনও সেলফোন টাওয়ার আছে কি না দেখল। আছে… শহরের উত্তর প্রান্তে। ভাল করে হাইওয়ের পুরো দৈর্ঘ্য চেক করল ও। আরও অনেকগুলো টাওয়ারের খোঁজ পেল, সবগুলোই রাস্তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ানো। ব্যতিক্রম শুধু লেকের টাওয়ারটা।

    ‘গড়বড় আছে এখানে,’ রানা বলল। ‘লেকের মাঝখানে দাঁড়ানো টাওয়ারটা হাইওয়ে বা কাছের শহরটাকে সার্ভিস দিচ্ছে না। আশপাশের বিশ মাইলের ভেতর আর কোনও শহর-টহরও নেই। অমন একটা স্পটে টাওয়ার বসানোর কোনও মানেই হয় না।’

    ‘তা হলে কী ওটা?’

    জবাবটা জানা নেই রানার। একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল টাওয়ারটার দিকে।

    ‘রেকর্ডিঙে অ্যালি যা কিছু বলেছে, তার বেশিরভাগের অর্থ বুঝিনি আমি,’ বারবারা বললেন। ‘তবে একটা শব্দ আমার ভেতর খটকা জাগিয়েছে।’

    চোখ তুলল রানা। ‘কোন্ শব্দ?’

    ‘নকআউট।’

    নকআউট ওয়ান ওয়ান—নিজের পরিচয় দেবার সময় বলেছিল অ্যালি, মনে পড়ল রানার। বারবারাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি ওটার অর্থ জানেন?’

    ‘একটা অর্থ জানি। আমার ধারণা, এক্ষেত্রে সেটাই বোঝানো হয়েছে।’

    চুপচাপ শুনে গেল রানা।

    ‘বিষয়টা আমার ফিল্ডের নয়, বারবারা বলে চললেন, ‘তবে ডাক্তারিশাস্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের জন্যে শব্দটা একেবারে অপরিচিত নয়। সাধারণত ল্যাবরেটরির ইঁদুরের বেলায় ব্যবহার করা হয় শব্দটা— নকআউট মাউস। মানে, জিনেটিক মডিফিকেশন করা হয়েছে ইঁদুরটার—নির্দিষ্ট একটা জিন সরিয়ে নেয়া হয়েছে ওটার শরীর থেকে… নকড় আউট।’

    একটু ভাবল রানা। ব্যাখ্যাটা মন্দ নয়। অ্যালির বাকি কথাগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। মলিকিউলার বায়োলজি… আর.এন.এ. ইন্টারফ্যারেন্স… বিজ্ঞানে রানার কোনও ডিগ্রি নেই, কিন্তু এটুকু জানে, শব্দগুলো জিনেটিক রিসার্চের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

    ‘কিন্তু কোনও জিন সরিয়ে নিলে কেন নতুন ক্ষমতা পাবে কেউ?’ জানতে চাইল ও।

    ‘কারণ ডি.এন.এ. জিনিসটা একটা মস্ত বড় রহস্য,’ বললেন বারবারা। ‘লোকে ডি.এন.এ.-কে মানবদেহের ব্লুপ্রিন্ট মনে করে, কিন্তু আদপে ওটা একটা রেসিপির মত, যেটা নিয়ে লক্ষ-কোটি বছর ধরে পরীক্ষা চালাচ্ছে প্রকৃতি। আমার এক পুরনো প্রফেসর বলতেন কথাটা। এমন একটা রেসিপি, যেটায় নিত্যনতুন উপকরণ লেখা হচ্ছে, কেটে দেয়া হচ্ছে পুরনোগুলো। কিন্তু পুরোপুরি মুছে ফেলা হচ্ছে না। অনেকটা কাগজের লেখাকে দাগ দিয়ে কেটে তলায় নতুন কিছু লেখার মত একটা ব্যাপার আর কী। আমাদের বেলাতেও তা-ই ঘটছে। বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়ে চলেছে মানুষের শরীর—একসময় লেজ ছিল আমাদের, গা- ভর্তি মোটা মোটা ভারী পশম ছিল… এখন কিছুই নেই। কিন্তু সেসবের জিন মুছে যায়নি আমাদের ডি.এন.এ. থেকে, বরং নতুন জিন এসে দমিয়ে রেখেছে ওগুলোকে। ব্যাপারটা কি বোঝাতে পারলাম তোমাকে?’

    ‘কিছুটা,’ বলল রানা। সোফা ছাড়ল ও, হেঁটে চলে গেল কামরার পেছনদিকে স্লাইডিং ডোরের কাছে। বাড়ির পেছনের সুইমিংপুল আর গলফ গ্রাউণ্ডের দিকে চলে গেল চোখ। স্প্রিঙ্কলার চালু করা হয়েছে, ল্যাণ্ডস্কেপিঙের লাইটগুলোর আলোয় চকচক করছে ভেজা ঘাস।

    ‘মাইণ্ডরিডিং,’ ওদিকে তাকিয়ে বলল ও। ‘ওটাও কি লেজ বা লোম খসানোর মত ব্যাপার?’

    ‘হ্যাঁ,’ বারবারা বললেন। ‘মাঝে মাঝে বিভিন্ন মেডিক্যাল কনফারেন্সে যেতে হয় আমাকে, সেখানে যে কত সব অদ্ভুত জিনেটিক রিসার্চের ব্যাপারে বক্তৃতা শুনতে হয়, কল্পনা করতে পারবে না। বেশ কিছু প্রাণী আছে… যেমন ধরো নিউট বা গোসাপ… অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গজাতে পারে। কাঁধের জয়েন্ট থেকে সামনের একটা পা কেটে ফেলে দাও, দেখবে কয়েক সপ্তাহের ভেতরেই আরেকটা পা গজিয়ে গেছে—টিস্যু, মাসল, নার্ভ, চামড়া, হাড়… সবকিছু সহ! বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই ক্ষমতা দুনিয়ার সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর মাঝে আছে, কিন্তু সুপ্ত অবস্থায়। কারণ অন্যান্য জিন এই হাত-পা গজানোর জিনকে দমন করে রেখেছে। এখন যদি আমরা ওই বিশেষ জিনগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে পারি… ওগুলোকে সরিয়ে দিতে পারি, মানুষও তার হাত-পা কাটা পড়লে আবার গজিয়ে নিতে পারবে।’

    স্লাইডিং ডোর থেকে ঘুরে দাঁড়াল রানা। ‘কিন্তু ক্ষমতাটা চাপা পড়ল কেন? এমন একটা ক্ষমতা তো সহজে হাতছাড়া হবার কথা নয়।’

    ‘এ-ব্যাপারে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য যে-যুক্তি শুনেছি, তা হলো, নতুন হাত-পা গজানোর চেয়ে না-গজানো নিরাপদ। কারণ প্রাথমিকভাবে খুবই নাজুক থাকবে নতুন অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ—রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে না, সহজেই ইনফেকশনের শিকার হবে, আর সেটা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো শরীরে। তাই অমন জিনিস না-থাকাই ভাল। প্রকৃতি হয়তো সেজন্যেই কেড়ে নিয়েছে ক্ষমতাটা।’

    ‘আর মাইগুরিডিং?’

    কাঁধ ঝাঁকালেন বারবারা। ‘এ-বিষয়ে কিছুই জানা নেই আমার। কোনও কনফারেন্সে এ-নিয়ে আলোচনাও হতে শুনিনি।’

    কাছে এসে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকাল রানা। ওর নজর আটকে রইল ড্রাই লেক আর টাওয়ারের ইমেজের ওপর।

    ‘ওখানে যাবে তুমি,’ বললেন বারবারা, তবে প্রশ্নের সুরে নয়।

    মাথা ঝাঁকাল রানা।

    ‘তার কোনও দরকার কি সত্যিই আছে? অ্যালির স্মৃতি ফিরলেই তো জানতে পারবে সব। বড়জোর সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে তার জন্যে। এ-সময়টা তোমরা আমার এখানেই কাটিয়ে দিতে পারো।’

    ‘শুধু অ্যালিকে রাখলেই চলবে,’ রানা বলল। ‘দু-তিনদিন ওকে একাকী সামলাতে পারবেন আপনি? মানে, আমি না ফেরা পর্যন্ত?’

    ‘নিশ্চয়ই পারব। কিন্তু ওখানে যাবার ঝুঁকি নিচ্ছ কেন?’

    ‘কারণ অন্ধের মত ঘুরপাক খেতে পছন্দ করি না আমি,’ শান্ত গলায় বলল রানা। ‘লড়াইয়ে নামার আগে শত্রুরা যা জানে আমিও তা জানতে চাই। তা ছাড়া অ্যালিই বলেছে, ওখানে লুকিয়ে আছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর।’

    ‘ওখানে না গিয়েও সে-উত্তর জানা সম্ভব তোমার পক্ষে। ছ’সাতদিনেরই তো ব্যাপার।’

    ‘সাতদিন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা মানে ওদেরকেও সাতদিন সময় দেয়া। সংগঠিত হবার সময় পাবে শত্রুরা, ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের সবক’টা সম্ভাব্য পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করবে, সে-অনুযায়ী পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে রাখবে। যত লোক লাগুক, যত ধরনের যন্ত্রপাতি লাগুক… সবকিছুর আয়োজন করে রাখবে। তখন আর একটাও অপ্রত্যাশিত চাল দিতে পারব না আমরা। কিন্তু এখন… ওরা খানিকটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। এ-সুযোগেই যা করার করে ফেলতে হবে, ওরা নিজেদের গুছিয়ে নেবার আগেই।’

    টাওয়ারের দিকে ইশারা করলেন বারবারা। ‘ওটার খবর লিয়ারি জানে। অ্যালিকে ইন্টারোগেট করেছে ওরা। তুমি যে ওখানে যেতে পারো, সেটা আন্দাজ করা কঠিন কিছু নয়। গিয়ে হয়তো দেখবে, ফাঁদ পেতে অপেক্ষা করছে ওরা।

    ‘জানি। কিন্তু যেতে আমাকে হবেই।’

    ‘আমাকেও।’

    অ্যালির কণ্ঠ শুনে ঝট করে দরজার দিকে তাকাল রানা ও বারবারা, মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। ক্লান্ত চেহারা, তবে আগের চেয়ে সতেজ দেখাচ্ছে। রক্তমাখা পোশাক পাল্টে পুরনো একটা জিন্স আর টি-শার্ট পরেছে।

    বারবারার দিকে কটাক্ষ হানল রানা। ‘ওকে না ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলেন?’

    ‘হ্যাঁ,’ বোঁকা বোকা দেখাচ্ছে বারবারাকে। কিন্তু কাজ করেনি দেখছি!’

    ‘কেন?’

    বারবারা জবাব দেবার আগেই আবার মুখ খুলল অ্যালি। বলল, ‘ঘুমের ওষুধের চেয়ে বড় একটা রহস্য রয়েছে আমাদের সামনে। এলিয়াস ড্রাই লেক, আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেলফোন টাওয়ারের রহস্য।’

    ‘তোমার বিশ্রাম নেয়া দরকার, ডিয়ার…’ বলার চেষ্টা করলেন বারবারা।

    অ্যালি বাধা দিয়ে বলল, ‘আমি এখানেই বসব। ব্যাপারটা জরুরি।’

    শান্ত চোখে ওর দিকে তাকাল রানা। মেয়েটাকে যথেষ্ট সিরিয়াস দেখাচ্ছে। তাই আপত্তি করল না আর।

    এগিয়ে এসে সোফায় বসল অ্যালি।

    রানা জিজ্ঞেস করল, ‘আমাদের কথাবার্তা তুমি শুনতে পেয়েছ?’

    ‘না। শুনেছি শুধু চিন্তাগুলো।’

    ‘অডিয়ো রেকর্ডারের কথাগুলো?’

    ‘ওগুলোও। একই কায়দায়।’

    বারবারার সঙ্গে চোখাচোখি হলো রানার। এই প্রথম অ্যালির ক্ষমতা চাক্ষুষ করছেন ডাক্তার, তাঁকে বিহ্বল দেখাল। অ্যালি ততক্ষণে কম্পিউটারের ওপর ঝুঁকে পড়েছে। মাউসপ্যাডে আঙুল বুলিয়ে যুম করল লেকের ছবিটা। টাওয়ারটা বড় করে দেখছে।

    ‘ওখানে তোমাকে নিতে পারব না আমি, সেটা বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই?’ বলল রানা। ‘নিজের প্রাণের ঝুঁকি নেয়া এক কথা, কিন্তু তোমাকে… না, সেটা সম্ভব নয়।’

    ‘ঝুঁকি ছাড়াই লেকটার কয়েক মাইলের ভেতর পৌঁছুনো সম্ভব,’ বলল অ্যালি। ‘এরপর তুমি যদি কাছে গিয়ে জায়গাটা খুঁটিয়ে দেখতে চাও, আমি আপত্তি করব না। তাই বলে আমাকে কয়েক হাজার মাইল দূরে ফেলে যেতে পারো না তুমি। আমি সেটা মানব না। তা ছাড়া আমাকে সঙ্গে নেবার পেছনে আরেকটা যুক্তি আছে। ওখানে গেলে হয়তো কিছু মনে পড়বে আমার… খুলে যাবে স্মৃতির দুয়ার। তুমি কি চাও না সেটা?’

    জবাব দিল না রানা। গম্ভীর চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে অ্যালি বলল, ‘আমার ধারণা, এই ব্যাপারটা স্রেফ তোমার-আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, অনেক বড় কিছু জড়িত এর সঙ্গে। তোমার কি সেটা মনে হচ্ছে না? আমি তো বলব, এক মুহূর্তও নষ্ট করা উচিত হবে না আমাদের। এখুনি যাওয়া দরকার ওখানে।

    তাড়াটা রানাও অনুভব করছে, কিন্তু মুখে বলতে পারল না। অ্যালিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে প্রতি মুহূর্তে। লুবনাকে বাঁচাতে পারেনি, এখন যদি এরও কিছু হয়ে যায়…

    ‘রানা,’ নীরবতা ভেঙে ডাকলেন বারবারা। ‘কথাগুলো খুব একটা ভুল বলেনি অ্যালি। আমি বলব, ইউটাহ্-য় যদি যেতেই হয় তোমাকে, ওকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই উচিত। তা ছাড়া ওর যা মনোভাব দেখছি, তাতে এখানে ওকে আটকে রাখতে পারব না আমি।’

    ‘তা হলে কী করতে বলেন আমাকে?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘পুরনো একটা গাড়ি আছে আমার। ওটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ো। ফ্রেজনোর চারদিকে রোডব্লক থাকবে, তবে আমি সেগুলো পার করে দিতে পারব তোমাদের। মডেস্টো পর্যন্ত ড্রাইভ করে নিয়ে যাব, এরপর ট্রেনে চড়ে ফিরে আসব নাহয়। যদি তোমরা ধরা পড়ে যাও, বলে দিয়ো, গাড়িটা আমার গ্যারাজের তালা ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছ।’

    অ্যালির সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হলো রানার। দু’জনেই অদ্ভুত এক কৃতজ্ঞতা অনুভব করছে বারবারার প্রতি।

    ‘আপনি সত্যিই তুলনাহীন, ডা. হোল্ডেন,’ বলল রানা। ‘থাক, আর পাম দিতে হবে না, হালকা গলায় বললেন বারবারা। ‘তুমি নিজেও কম যাও না।’

    ‘কখন বেরোতে পারবেন?’ অ্যালি জানতে চাইল। ‘তোমরা যখন বলবে, তখুনি। আমার হাতে তো আর কোনও কাজ নেই।’

    ‘তা হলে এখুনি বেরোনো যাক,’ রানা বলল। ‘শহর থেকে বেরুবার সবগুলো পথ ভালমত বন্ধ হবার আগেই।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১
    Next Article মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.