Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প358 Mins Read0

    অন্তর্যামী – ৩১

    একত্রিশ

    টিফানির সঙ্গে রানাকে পরিচয় করিয়ে দিল লিয়ারি। সেদিন রাতে দূর থেকে ওকে দেখেছে রানা, এবার কাছ থেকে নজর বোলানোর সুযোগ পেল। সুন্দরী, মায়াময় চেহারা। তবে ঘুমের অভাবে ভুগছে বলে মনে হলো। চোখের নিচে কালি পড়েছে। রোগা শরীর, খাওয়াদাওয়াতেও অনিয়ম হচ্ছে নিঃসন্দেহে। বয়সের ব্যাপারে রানার আন্দাজই ঠিক—ত্রিশের আশপাশে।

    হাত মেলাল রানা। ‘নাইস টু মিট ইউ, ডা. ক্যানট্রেল।’

    ‘আমাকে শুধু টিফানি বলে ডাকলে খুশি হব,’ বলল টিফানি। ‘অ্যালির জন্যে আপনি যা করেছেন, তাতে আমি আপনার বন্ধু হতে চাইব, মি. রানা।’

    ‘সেক্ষেত্রে আমাকেও রানা বলে ডাকতে পারো।’

    ‘সো নাইস অভ ইউ, রানা।’

    ‘তুমি কি ফোর্ট ডেট্রিকের সঙ্গে জড়িত ছিলে?’ রানা জিজ্ঞেস করল।

    ‘হ্যাঁ, তবে অ্যালির সঙ্গে নয়… মানে, শুরু থেকে আর কী,’ বলল, টিফানি। ‘আমি ওখানে ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের হয়ে অন্য একটা গবেষণা করছিলাম। ছ’মাসের মাথায় মাইণ্ডরিডিঙের প্রজেক্টটার সঙ্গে যুক্ত হবার প্রস্তাব পাই। খুব যে আগ্রহ নিয়ে গিয়েছিলাম, তা নয়। আমাকে বলা হয়েছিল, ওখানে কিছুদিন সাহায্য করলে আমার ক্যান্সার রিসার্চের জন্যে মোটা অঙ্কের অনুদান দেয়া হবে। বলা বাহুল্য, রাজি হবার আগে প্রজেক্টের কিছুই আমাকে জানানো হয়নি। শেষে যখন জানলাম, তখন আর পিছিয়ে আসার উপায় ছিল না।’

    ‘অ্যালির সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন ছিল?’

    ‘খুব ভাল। আসলে, ওকে কখনও টেস্ট সাবজেক্ট হিসেবে ভাবিনি। আমি যখন প্রজেক্টে যোগ দিই, তখন ওর বয়স পাঁচ বছর। এতগুলো বন্দি মেয়ের মাঝখানে ছোট্ট একটা বাচ্চা… মায়া হতো খুব। আদর করতাম ওকে। যতটা পারি যত্ন নেবার চেষ্টা করতাম। এক অর্থে ওটাই শেষ পর্যন্ত বিপদে ফেলে আমাকে।

    ‘কী বিপদ?’

    ‘এখুনি জানবেন, মি. রানা,’ বলে উঠল লিয়ারি। ‘আমি আমার গল্পের শেষ অংশে পৌঁছে গেছি। এবার আপনাকে বলব, কীভাবে ফোর্ট ডেট্রিক থেকে অ্যালি, এলিনা আর ভেরোনিকা পালায়। ওখান থেকেই সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন আপনি। তার আগে ওখানকার বন্দিনীদের ব্যাপারে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দিতে চাই। ওদের সবাইকে আনা হয়েছিল জেল থেকে… প্রত্যেকেই ছিল ক্রিমিনাল। অ্যালির মা অ্যাম্বরের একটা ড্রাগ রিলেটেড কেসে কারাদণ্ড হয়েছিল, কিন্তু সত্যিকার অর্থে মন্দ মানুষ ছিল না সে। কথাটা এলিনা বা ভেরোনিকার বেলায় খাটে না। ওরা দু’জনেই সোশিয়োপ্যাথ… খুনের মামলার আসামী। এই তথ্যটা মাথায় রাখবেন।’

    দম নিল সে। তারপর খেই ধরল কথার। ‘ফোর্ট ডেট্রিক থেকে দু’বার পালানোর চেষ্টা করেছে বন্দিনীরা। প্রথমটা ব্যর্থ হয়, আর দ্বিতীয়টা সফল। প্রথমটা ছিল… যাকে বলে, সুন্দর প্রচেষ্টা… অ্যাম্বার আর অ্যালি ওটাই চেয়েছিল। ওটা যখন ঘটে, তখন অ্যালির বয়স সাত।’ টিফানির দিকে ফিরল লিয়ারি। ‘এনেছেন ওগুলো? মি. রানাকে দেখতে দিন।’

    মাথা ঝাঁকিয়ে পকেট থেকে একটা খাম বের করল টিফানি। তার ভেতর থেকে বেরুল ভাঁজ করা তিনটে কাগজ। প্রথমটা রানার হাতে তুলে দিল সে।

    গুটি গুটি হরফে কী যেন লেখা কাগজটায়। রানা জিজ্ঞেস করল, ‘কী এটা?’

    টিফানি জবাব দিল না।

    লিয়ারি বলল, ‘পড়ুন। তা হলেই বুঝবেন।’

    কাগজে চোখ বোলাল রানা।

    .

    টিফানি, আমি অ্যালি। জরুরি একটা কথা বলার জন্যে এ-চিঠি লেখাচ্ছি। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই, কারণ তুমি যখন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসো, তখন সারাক্ষণ আমাদেরকে চোখে চোখে রাখা হয়। মা বলেছে, আমাদের কথাবার্তা নাকি গোপনে রেকর্ডও করে রাখে ওরা। তাই চিঠি লেখাতে হচ্ছে। আমাদের সাহায্য করো, টিফানি। মা-র ধারণা, তুমি যদি কোনও পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এখানকার ঘটনা জানাও, তা হলে আমাদেরকে এরা মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। যেভাবে আমাদেরকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, তা অমানবিক। এভাবে চলতে পারে না। প্লিজ, টিফানি, কোনও একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলো। আমাদেরকে বাঁচাও। আমি জানি, তুমি বাকিদের মত নও, আমাদের জন্যে দরদ আছে তোমার ভেতর। প্লিজ, সাহায্য করো আমাদেরকে।

    পড়া শেষ করে মুখ তুলল রানা। একটু দ্বিধায় পড়ে গেছে, কারণ অমন কড়া পাহারার ভেতরে অ্যালি চিঠি লিখল কীভাবে… গোপনে টিফানিকে দিলই বা কীভাবে! জিজ্ঞেস করল, ‘এই চিঠি কি অ্যালি দিয়েছিল তোমাকে?

    মাথা নাড়ল টিফানি। ‘না। এক রাতে নিজের অফিসে বসে ছিলাম, ল্যাব রেজাল্টের কাগজপত্র দেখছিলাম… হঠাৎ কী যেন হলো, সবকিছু একপাশে সরিয়ে কাগজ-কলম তুলে নিলাম, খসখস করে লিখতে শুরু করলাম ওই চিঠি। একবারও মনে হয়নি, আমাকে দিয়ে কেউ ওটা লিখিয়ে নিচ্ছে; মনে হচ্ছিল কবি-সাহিত্যিকদের মত হঠাৎ মাথায় একটা আইডিয়া আসায় সেটা লিখতে শুরু করেছি। লেখা শেষ হবার পর পড়ে দেখলাম ওটা, বোকা বনে গেলাম। ভাবলাম, মাথায় নিশ্চয়ই গোলমাল দেখা দিয়েছে।’

    চিঠিটার দিকে আবার তাকাল রানা। করুণ এক আকুতি ফুটে উঠেছে ওতে। কল্পনায় সাত বছর বয়েসী অ্যালিকে দেখতে পেল, বন্দিশালার প্রকোষ্ঠে বসে করজোড়ে মিনতি করছে টিফানির কাছে… সাহায্য চাইছে।

    ‘এরপর কী করলে?’ জানতে চাইল ও।

    ‘কিছুই না,’ টিফানি বলল। ‘ব্যাপারটা মনের কোনও অদ্ভুত খেয়াল ভেবে সরিয়ে রাখলাম কাগজটা, নিজের কাজে ফিরে গেলাম। কিন্তু আধঘণ্টা যেতে না যেতে আবার তুলে নিলাম কাগজ-কলম, দ্বিতীয় একটা চিঠি লিখলাম। এই যে… এটা।’

    আরেকটা কাগজ এবার রানার হাতে দিল সে। ওটা এরকম:

    তোমার মাথায় গোলমাল দেখা দেয়নি, টিফানি, কিংবা এসব কল্পনা করছ না তুমি। সত্যিই আমি যোগাযোগ করছি তোমার সঙ্গে। মা বলল, এটা যে তোমার কল্পনা নয়, তার প্রমাণ দেখাতে। তোমার বসের ইমেইল অ্যাড্রেস জানো তো? দুটো পাসওয়ার্ড লাগে ওটা খোলার জন্যে— ৭১৬পিসি৪২ডি৭৭, এবং ৮০৫জে৫২টি০৯। চেক করে দেখো। তা হলেই বুঝবে, পাসওয়ার্ডদুটো কোনোভাবেই তোমার জানার কথা নয়, ওটা শুধু আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব… তোমার বসের মাথা থেকে। ইমেইল খোলা গেলে তুমি বুঝবে, সত্যি সত্যি আমি যোগাযোগ করছি তোমার সঙ্গে। প্লিজ, টিফানি, আমাদেরকে সাহায্য করো!

    ‘ধরে নিচ্ছি, পাসওয়ার্ডদুটো কাজ করেছিল?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

    নিঃশব্দে সায় জানাল টিফানি, চেহারায় বেদনার ছায়া।

    ‘মিডিয়ার কাছে যাবার কথা কি ভেবেছিলে?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘কিন্তু যাওনি।’

    ‘ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল টিফানি। ‘প্রথমত, অ্যালির ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে। চিঠি লেখানোর বদলে ও তো আমাকে দিয়ে কাউকে খুনও করাতে পারত! দ্বিতীয়ত, আমাকে যেটা করতে বলা হয়েছে, তা ভেবে। নিজেই ভেবে দেখো, মিলিটারির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হতো আমাকে… টপ সিক্রেট একটা প্রজেক্টের খবর ফাঁস করে দিতে হতো মিডিয়ার কাছে। এরপর আমার কপালে কী ঘটত? আমেরিকান সরকার কি এমনি এমনি ছেড়ে দিত আমাকে?’

    ‘তাই প্রাণভয়ে চুপ করে রইলে তুমি? অমানবিক একটা গবেষণা চলতে দিলে?’ রানার কণ্ঠে স্পষ্ট অভিযোগ।

    ‘ওভাবে বোলো না, প্লিজ!’ অনুনয় করল টিফানি। ‘আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে, রানা। তোমার মত’ ট্রেইণ্ড এসপিয়োনাজ এজেন্ট নই। সরকার বা মিলিটারির সঙ্গে টক্কর দেবার সাহস না পেলে তুমি আমাকে দোষ দিতে পারো না।’

    ‘সরি,’ লজ্জিত হলো রানা। ‘আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি। যাক গে, এরপর কী করলে?’

    ‘ঝাড়া দশ মিনিট বসে রইলাম মূর্তির মত। বসে বসে ভাবলাম। অ্যালি যা চাইছিল, তা করার সাহস তো পেলামই না, বরং ভাবলাম, ওর ক্ষমতার কথা চেপে গেলে কী ঘটবে। সন্দেহ নেই, ওটা একসময় না একসময় প্রকাশ পাবে, আর তখন আমার বসেরা যদি জানতে পারেন, আমি ব্যাপারটা জেনেও কাউকে বলিনি, তখন কী ধরনের শাস্তি দেয়া হতে পারে আমাকে। ভেবেচিন্তে একটাই করণীয় পেলাম… আমার বসকে গিয়ে দেখালাম চিঠিদুটো।’

    ‘সর্বনাশ!’ আঁতকে উঠল রানা।

    ‘ভুল করেছিলাম আমি,’ স্বীকার করল টিফানি। ‘বিশ্বাস করো, সে-ভুল শোধরানোর জন্যে আমি সবকিছু করতে রাজি।’

    ‘ভুল তো বটেই। তোমরা নিশ্চয়ই খবরটা জানিয়ে দিয়েছিলে সবখানে?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘তারপর কী ঘটল?’

    কম্পিউটারের কাছে গেল লিয়ারি। ‘এটা,’ বলল সে। স্লাইড-শোর প্লে বাটন চাপল।

    মুখ ঘুরিয়ে নিল টিফানি। রানা মনোযোগ দিল প্রজেক্টরে ফুটে ওঠা ছবির দিকে। ঝিরঝিরে একটা রঙিন ছবি ফুটে উঠেছে দেয়ালে। দেখে মনে হলো, কারাগারের কোনও সেল . ব্লকের ছাতে লাগানো সিকিউরিটি ক্যামেরায় তোলা। এক সারি কারাপ্রকোষ্ঠ দেখা যাচ্ছে ছবিতে। ন’টা প্রকোষ্ঠে রয়েছে একজন করে বন্দি—কালো জাম্পসুট পরা কিছু নারী। দশমটায় সাত বছর বয়েসী অ্যালি ও তার মা।

    ‘ফোর্ট ডেট্রিকের ষোলো নম্বর বিল্ডিং, বলল লিয়ারি, ‘মানে, যেখানে ওদেরকে রাখা হয়েছিল, সেখানকার সিকিউরিটি ফুটেজের স্ক্রিনশট এগুলো।’

    প্রকোষ্ঠগুলোর ওপর নজর বুলিয়ে এলিনা আর ভেরোনিকাকে খুঁজে বের করল রানা। এরপর তাকাল কোনায় জ্বলজ্বল করতে থাকা টাইমস্ট্যাম্পের দিকে। তারিখটা পাঁচ বছর আগেকার। সময়: রাত সাড়ে এগারোটা।

    ছবি বদলাতে শুরু করল। টাইমস্ট্যাম্প কয়েক সেকেণ্ড করে এগোচ্ছে প্রতিটায়। দ্বিতীয় ছবিটা স্বাভাবিক, কিন্তু তৃতীয় ছবিতে পরিস্থিতি বদলে গেল। হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে বন্দিনীরা। উঠে দাঁড়িয়েছে। অ্যালিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে তার মা। চতুর্থ ফ্রেমে সিকিউরিটি ইউনিফর্ম পরা পাঁচজন গার্ড উদয় হলো। অস্ত্র হাতে অ্যাম্বার আর অ্যালির প্রকোষ্ঠের দিকে এগোচ্ছে। বন্দিনীরা চেঁচাচ্ছে তাদেরকে লক্ষ্য করে। মায়ের কাঁধে মুখ গুঁজে রেখেছে অ্যালি।

    ধারাবর্ণনা দিতে শুরু করল লিয়ারি। তার কণ্ঠ শীতল, আবেগহীন।

    ‘আপনি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন, মি. রানা, ডা. ক্যানট্রেলের রিপোর্টটা পাবার পর অ্যালিকে সেপারেট টেস্টিঙের জন্যে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওকে আনার জন্যে পাঠানো হয় পাঁচজন গার্ডকে। এরা ছিল অল্পবয়েসী, অনভিজ্ঞ। সত্যিকার কারাগারের কারারক্ষীদের মত বন্দি-সামলানোর অভিজ্ঞতা ছিল না কারও। শটগানে সত্যিকার বুলেট ভরেনি ওরা, লোড করেছিল বিনব্যাগ রাউণ্ড—দূর থেকে গুলি করা হলে ওগুলোর আঘাতে মরে না কেউ, কিন্তু পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে… ওয়েল, আঘাতটা ভয়াবহ। সরাসরি অ্যাম্বারের প্রকোষ্ঠে ঢোকে ওরা, অ্যালিকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করে। দু’পাশের প্রকোষ্ঠের দুই বন্দিনীকে কেয়ারই করেনি ওরা। ফলে, গরাদের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে একজন গার্ডের অস্ত্র কেড়ে নেয় এক বন্দিনী, ফায়ার ওপেন করে। দু’জন গার্ড আহত হয় তাতে, মাটিতে পড়ে যায়। বাকি তিনজনের ভেতর দু’জন অ্যালিকে টেনেহিঁচড়ে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়। অ্যাম্বার বাধা দেবার চেষ্টা করলে তৃতীয়জন তার মুখের কাছে শটগান তুলে ফায়ার করে—মাত্র ছ’ইঞ্চি দূর থেকে। পুরো মুখমণ্ডল থেঁতলে যায় অ্যাম্বারের, ওখানেই মারা যায় সে, অ্যালির চোখের সামনে।

    ‘এরপর যা ঘটল, তা ব্যাখ্যাতীত। আচমকা অ্যালিকে ছেড়ে দিল গার্ডেরা। ছুটে গিয়ে মায়ের মৃতদেহের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সে, জড়িয়ে ধরে পড়ে রইল মাটিতে। ততক্ষণে অন্যপাশের প্রকোষ্ঠের মেয়েটা আহত এক গার্ডের শটগান কুড়িয়ে নিয়েছে গরাদের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে। দু- দুটো শটগান থেকে ফায়ার করা হলো তিন গার্ডের ওপর, ওরা আহত হয়ে লুটিয়ে পড়ল। শটগানের পরের গুলিতে দরজার তালা ভেঙে বেরিয়ে আসে দুই বন্দিনী, সবাইকে মুক্ত করে। গার্ডদের সবাইকে খুন করে অস্ত্র কেড়ে নেয়া হয়। অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিল্ডিং থেকে বেরুবার চেষ্টা করে বন্দিনীরা। তবে তার আগেই সিকিউরিটি ক্যামেরার কল্যাণে ঘটনাটা জেনে গেছে সবাই। লাইভ অ্যামিউনিশন-সহ একটা টিম পাঠানো হয় ওদেরকে ঠেকাবার জন্যে। ষোলো নম্বর বিল্ডিঙের করিডোরে শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ। প্রশিক্ষিত, সশস্ত্র সৈনিকদের সঙ্গে বিনব্যাগ রাউণ্ডঅলা শটগান নিয়ে পেরে ওঠার কথা নয় কয়েকটা মেয়ের, খুব শীঘ্রি মারা পড়ে ওদের সবাই।

    ‘স্লাইডের দিকে লক্ষ করুন, মি. রানা। দু’জন বন্দিনী এই ব্যর্থ পলায়ন প্রচেষ্টায় যোগ দেয়নি—এলিনা ও ভেরোনিকা। নিজেদের প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়েই অ্যাম্বারের প্রকোষ্ঠে ঢুকেছে ওরা, অ্যালিকে লাশের পাশ থেকে সরিয়ে এনে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। কানে কানে কিছু বলছে সারাক্ষণ। তার ফলাফল পরের ফ্রেমে দেখতে পাবেন। শটগানধারী বন্দিনীদের হত্যা করার পর ওদেরকে গ্রেফতার করার জন্যে এগোতে শুরু করেছে সিকিউরিটি টিম, হঠাৎ কী যেন হলো তাদের। বন্দুক ঘুরিয়ে একে অন্যকে গুলি করতে শুরু করল। কয়েক সেকেণ্ডের ভেতর মারা গেল সবাই। অবস্থা দেখে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ দ্বিতীয় একটা টিমকে পাঠানো হলো, এদের অবস্থাও হলো প্রথম টিমের মত। নিজেরা গোলাগুলি করে খুন হয়ে গেল। শেষ যে-লোকটা দাঁড়িয়ে ছিল, সে নিজের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করল।’

    স্লাইড-শো শেষ। বন্ধ হয়ে গেল প্রজেক্টর। রানার দিকে ঘুরল লিয়ারি। ‘সেদিন রাতে পুরো বেসজুড়ে এরপর যা ঘটেছে, সেটাকে গ্যাস-লাইন এক্সপ্লোশন বলে প্রচার করেছি আমরা, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সাতষট্টি জন মারা গেছে সে- রাতে, প্রত্যেকেই গুলির আঘাতে—নিজের কিংবা ঘনিষ্ঠ কোনও সহযোদ্ধার অস্ত্র থেকে। ষোলো নম্বর বিল্ডিঙে যেটার সূচনা ঘটেছিল, সেটা ঢেউয়ের মত ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো বেসে। বেঁচে গিয়েছিল শুধু কিছু নিরস্ত্র, নিঃসঙ্গ সিভিলিয়ান; এ ছাড়া ঘাঁটিতে যত মানুষের হাতে অস্ত্র ছিল, তাদের প্রত্যেকেই খুন হয়ে গেছে অবিশ্বাস্যভাবে। এর জন্যে দায়ী অ্যালিসন মিচেল। পাশে বসে সান্ত্বনা দেবার নামে ওকে পরামর্শ দিয়ে গেছে এলিনা আর ভেরোনিকা।

    ‘চার মিনিট পর, সবকিছু যখন শেষ হয়ে গেল, ওদেরকে ঠেকাবার আর কেউ ছিল না। বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে একটা গাড়িতে চড়েছে ওরা, গেট খুলে বিনা বাধায় চলে গেছে ফোর্ট ডেট্রিক থেকে। যাবার আগে শেষ একটা কাজ করেছে অ্যালি—তৃতীয় একটা নোট লিখিয়েছে ডা. ক্যানট্রেলকে দিয়ে। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি, নিজের অফিসে একাকী কাজ করছিলেন, গোলাগুলির আওয়াজ শুরু হতেই লুকিয়ে পড়েছিলেন ডেস্কের তলায়। ডা. ক্যানট্রেল, নোটটা দেখান মি. রানাকে। ‘

    হাতে ধরা তৃতীয় কাগজটা এবার রানাকে দেখতে দিল টিফানি। দুটো মাত্র শব্দ লেখা ওটায়।

    তুমি দায়ী।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১
    Next Article মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.