Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প358 Mins Read0

    অন্তর্যামী – ৫

    পাঁচ

    লেইন বদলে একটা ট্রেইলারকে পাশ কাটাল রানা। স্পিড লিমিট মেনে ড্রাইভ করছে, দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে না কারও। ইন্টারস্টেট ১০১ ধরে দক্ষিণে ছুটছে পিকআপ, উপকূলের সমান্তরালে। এদিকটায় শহরের তুলনায় কুয়াশা অনেকখানি পাতলা, রাস্তাটাও উঁচুতে, ফলে সামনে দেখা যাচ্ছে অনেকদূর।

    আপাতত এল্ সেডেরো থেকে যতটা সম্ভব দূরে সরে যেতে চাইছে ও। কোথায় যাবে, তা নিয়ে পরে ভাববে। অ্যালির পুরো ব্যাপারটাও তার আগে জেনে নেয়া জরুরি। শত্রুপক্ষের পরিচয় জানার পর বুঝতে পারবে, কোথায় গেলে নিরাপত্তা আসতে পারে।

    ঘাড় ফিরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল রানা। চুপ করে আছে সে। চেহারা দেখে মনে হলো, মুখ খোলার আগে কথাগুলো সাজিয়ে নিচ্ছে।

    ‘সব কথা বলার আগে আমাকে একটা কাজ করতে হবে,’ হঠাৎ বলল অ্যালি।

    ‘কী কাজ?’ ভুরু কুঁচকে জানতে চাইল রানা।

    ‘তেমন কিছু না। আসলে… তুমি যেন আমার কথা বিশ্বাস করো, সেজন্যেই…’

    ‘মেশিনগান নিয়ে তোমাকে তাড়া করছিল একদল খুনি, ‘ রানা বলল। ‘নিশ্চিন্তে থাকো, মেয়ে, তোমার কোনও কথাই আমি অবিশ্বাস করব না।’

    ‘সব শোনার পর তোমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে পারে।’

    মাথা নিচু করে আঙুল দিয়ে হাঁটুর ওপর অদৃশ্য আঁকিবুকি কাটছে মেয়েটা। নার্ভাস দেখাচ্ছে তাকে। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকার পর বলল, ‘যা করব, সেটা তোমার কাছে অদ্ভুত লাগতে পারে।’

    ‘কতটা অদ্ভুত?’

    ‘অনেকটাই।’

    বড় করে শ্বাস ফেলল অ্যালি। রানা কিছু বলার আগেই বলল, ‘চার ডিজিটের একটা সংখ্যা কল্পনা করো—একেবারে বানোয়াট। মানে, তোমার ফোন নাম্বার, বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বারের অংশ নয়, এমন। চেনা নাম্বার হলে সেটা অন্য কারও জানা থাকতে পারে। ঠোঁট চেপে রাখো, যাতে ভুল করে মুখটাও না নড়ে।’

    ওর দিকে অপলকে তাকাল রানা। বুঝতে চাইছে, ঠাট্টা করছে কি না। নাহ্, ঠাট্টা নয়। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে, সিরিয়াস চেহারা। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে উদ্বেগের তোড়ে।

    কাঁধ ঝাঁকিয়ে রাস্তার দিকে নজর ফেরাল রানা। দেখা যাক কী করে মেয়েটা। মনে মনে এলোমেলো একটা সংখ্যা ভাবল—৮৯২৩। একেবারেই কল্পনাপ্রসূত সংখ্যা। ভাবনাটা শেষ হবার সময় পেল না, তার আগেই কথা বলে উঠল অ্যালি।

    ‘আট হাজার নয়শো তেইশ।’

    চমকে উঠল রানা, ঝট্ করে তাকাল ওর দিকে। ক্ষণিকের জন্য মনোযোগ, টুটে গেল ড্রাইভিং থেকে, পিকআপের একপাশের চাকা নেমে গেল কাঁকর-বিছানো মাটিতে। ঝাঁকি খেল পুরো কাঠামো। তাড়াতাড়ি আবার সামনে তাকাল রানা, স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে পাকা রাস্তায় তুলে আনল সবক’টা চাকা। মুখের ভাষা হারিয়েছে। অবিশ্বাস্য একটা কাণ্ড ঘটিয়েছে মেয়েটা, কিন্তু সেটাকে অগ্রাহ্য করবার উপায় নেই।

    কোনও ধরনের কৌশল? আড়চোখে তাকাল অ্যালির দিকে। গভীর মনোযোগে ওর প্রতিক্রিয়া দেখছে মেয়েটা।

    আবারও সামনে তাকাল ও। রাস্তায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে মনে মনে ভাবল, ‘দেখি, এটা বলতে পারো কি না—বাংলাদেশ পৃথিবীর সেরা দেশ।’

    ‘রানা?’ ডাকল অ্যালি।

    ‘কী?’

    ‘বাংলাদেশ কি সত্যিই পৃথিবীর সেরা দেশ?’

    .

    গাড়ির গতি নব্বুই মাইলে তুলে আনল সিসকো। রাস্তায় যানবাহন তেমন নেই, দু-একটা যা আছে, অনায়াসে পাশ কাটাচ্ছে।

    ‘ওরা সাড়ে চার মাইল সামনে,’ সেলফোনে জানাল লিয়ারি। ‘স্পিড লিমিট ক্রস করছে না, আশা করি কয়েক মিনিটের ভেতরেই ধরে ফেলতে পারবে। পরের এগজিটটা বিশ মাইল দূরে।’

    লিয়ারিকে মাঝে মাঝে ঈশ্বরের মত লাগে সিসকোর। লোকটার জ্ঞান বা ক্ষমতার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই, অথচ ঈশ্বরের মতই সে একটা ধূম্রজালের ভেতর বাস করে। এই তো, সেই লস অ্যাঞ্জেলেসে বসে নিখুঁতভাবে বলে দিচ্ছে শিকার কী করছে না করছে। পারে কী করে?

    ‘শুনতে পেয়েছ যা বলেছি?’ ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করা হলো।

    ‘হ্যাঁ,’ বলল সিসকো।

    লাইন কেটে গেল।

    .

    ‘তুমি আমার মন পড়তে পারছ!’ বিস্মিতকণ্ঠে বলল রানা। ব্যাপারটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে ওর। স্রেফ গল্প শুনেছে মাইওরিডিঙের; বাস্তবে দেখবে, কখনও কল্পনা করেনি। ম্যাজিশিয়ানরা তাদের স্টেজ শো-তে যা দেখায়, সবাই জানে সেটা সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। কিন্তু… এখানে তো নাটকের কোনও সুযোগই নেই।

    ‘ঠিক পড়া বলা যায় না একে, অ্যালি বলল। ‘পড়া বললে মনে হয় যেন আমি ইচ্ছে করে করছি কাজটা। আসলে তা নয়। বরং শোনা বলতে পারো। চাই বা না-চাই, তোমার মনের কথাগুলো শুনতে পাচ্ছি আমি। এটা বন্ধ করার কোনও কায়দা নেই।’

    ‘সব শুনতে পাও? প্রতিটা চিন্তা-ভাবনা?’

    মাথা ঝাঁকাল অ্যালি। ‘হুঁ। মাঝে মাঝে মাথায় জট পাকিয়ে যায়। বুঝতে পারি না, চিন্তাটা আমার, নাকি অন্য কারও। যেমন ধরো, হঠাৎ ভয় ভয় করে উঠল; কিন্তু বলা মুশকিল, ভয়টা সত্যিই আমি পাচ্ছি, নাকি অন্য কেউ পাচ্ছে। অবশ্য… পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, এমন চিন্তার সংখ্যাও কম নয়। এই যেমন এখন তোমারটা বুঝলাম।’

    ‘আরও অনেক কিছুই নিশ্চয়ই শুনেছ,’ বলল রানা। ‘কী বুঝলে?’

    ‘বুঝলাম: আসলে তুমি খুব ভাল মানুষ। আমার ওপর মায়া পড়ে গেছে তোমার, আমাকে রক্ষা করা নিজের দায়িত্ব বলে ভাবছ। আমাকে দেখে অন্য কারও কথা মনে পড়ে যাচ্ছে… সেই স্মৃতি একই সঙ্গে আনন্দ আর কষ্টের। মেয়েটার নাম লুবনা, তাই না??

    টেনশনে পড়ে গেল রানা। এখন থেকে কি তা হলে ভাবনা-চিন্তার লাগাম টানতে হবে? সেটা কি আদৌ সম্ভব?

    ‘খামোকা দুশ্চিন্তা করছ,’ বলল অ্যালি।।

    থতমত খেয়ে গেল রানা। মুখ দিয়ে কিছু বলার আগেই জবাব দিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। ব্যাপারটা খুব অস্বস্তিকর।

    ‘সরি,’ অ্যালিকে ব্ৰিত দেখাল। ‘কাজটা ঠিক করিনি। এরপর থেকে তুমি মুখ ফুটে না বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’

    দীর্ঘ কয়েকটা মুহূর্ত চুপ করে রইল রানা। স্থির চোখে তাকিয়ে রইল সামনের রাস্তায়। একটু পর জিজ্ঞেস করল, ‘কীভাবে করছ তুমি এসব? কৌশলটা কী?’

    ‘আমার জানা নেই। ‘

    ‘কতদিন থেকে মাইণ্ডরিডিং করতে পারছ তুমি?’

    ‘অন্তত গত দু’মাস। এর আগের কথা বলতে পারি না।’

    অ্যালির গলায় অনিশ্চয়তার ছাপ। অদ্ভুত ক্ষমতাটা নিয়ে সে নিজেও বোধহয় অস্বস্তিতে ভুগছে।

    ‘ইয়ে… একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের পর আমি কিছু শুনতে পাই না,’ অ্যালি জানাল। ‘তোমার যদি কখনও প্রাইভেসির প্রয়োজন হয়, আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেয়ো।’

    কপালের দু’পাশের ঠাণ্ডা দপদপানিটা এখনও যায়নি রানার। হাইওয়ের পাশে পৌঁছুনোর পর প্রথম টের পেয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে, তার আগেও ছিল। শহরে… বোর্ডওয়াকে… মানে, মেয়েটাকে প্রথম দেখার সময় থেকেই।

    ‘ওটার জন্যে আমি দায়ী,’ বলে উঠল অ্যালি। ‘আমার ব্রেন যা করছে, তার প্রভাবে ওই দপদপে ব্যথা হয়। তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?’

    ক্ষমা প্রার্থনার সুরে কথাটা বলল ও। রানা বুঝল, মনে মনে ভয় পাচ্ছে বেচারি। ভাবছে, ওর বিদঘুটে ক্ষমতার কথা শুনে ঘাবড়ে যেতে পারে রানা… ওকে ফেলে পালিয়ে যেতে পারে।

    ‘নাহ্, ব্যথাটা খুব সামান্য,’ মেয়েটাকে আশ্বস্ত করল ও। ‘খেয়াল না করলে টেরই পাচ্ছি না।’

    মাথা ঝাঁকাল অ্যালি। সিটের ওপর তুলে আনল দু’পা। হাঁটুর ওপর থুতনি রেখে পা-দুটো জড়িয়ে ধরল দু’হাত দিয়ে। কেমন যেন অসহায় দেখাচ্ছে ওকে।

    .

    চার মিনিট লাগবে পিকআপটাকে ওভারটেক করতে। কোস্ট হাইওয়ের আঁক-বাঁকের কারণে এখনও ওটার টেইললাইট দেখতে পাচ্ছে না সিসকো, তবে মনে মনে হিসেব কষে নিয়েছে।

    ঘাড় ফিরিয়ে পেছনটা এক ঝলক দেখে নিল সে। ভ্যানের মাঝখানের সিটে বসে আছে তার দলের তিন সদস্য, হাতে লোডেড ওয়েপন। লোকগুলোর মুখ অভিব্যক্তিহীন। যন্ত্রের মত দায়িত্ব পালন করতে চলেছে, সেখানে আবেগের কোনও স্থান নেই।

    ‘গাড়িটাকে থামাবার কোনও প্রয়োজন নেই, ওদেরকে বলল সিসকো। ‘খুন করার জন্যে গুলি ছুঁড়বে। প্রথমে টার্গেট করবে মেয়েটাকে।’

    .

    ‘হাসপাতালের মত একটা জায়গায় আটকে রেখেছিল আমাকে,’ নীরবতা ভেঙে বলল অ্যালি। ‘তবে ওটা হাসপাতাল না। আমি ছাড়া অন্য কোনও রোগী ছিল না ওখানে। আর ছিল কিছু লোক—আমাকে দেখাশোনার জন্যে।’

    ‘আজ রাতে ওখান থেকেই পালিয়ে এসেছ?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

    মাথা ঝাঁকাল অ্যালি।

    জায়গাটা কোথায় হতে পারে, ভেবে দেখল রানা। শহর হিসেবে এল্ সেডেরো বেশ ছোট। পরিত্যক্ত কোনও হাসপাতাল নেই ওখানে। তবে যেদিক থেকে মেয়েটা দৌড়ে এসেছে, সেদিকে বেশ বড়-সড় একটা অফিস কমপ্লেক্স আছে। বিশাল একটা এলাকা জুড়ে ছোট ছোট অসংখ্য বিল্ডিং, তাতে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানের অফিস, গুদাম, শো- রুম, ইত্যাদি। এসব জায়গায় সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে, পাশের বিল্ডিঙে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামায় না।

    ‘হ্যাঁ, বিল্ডিংটা ওখানেই,’ অ্যালি বলল। ‘কমপ্লেক্সের একদম পেছন দিকে। কাছাকাছি আর কোনও বিল্ডিং ছিল না।’

    চুপচাপ শুনছে রানা। এখনও হাঁটু জড়িয়ে বসে আছে মেয়েটা। চোখ সামনের দিকে।

    ‘দু’মাস আগে ওখানে জেগে উঠি আমি,’ বলে চলল অ্যালি। ‘চোখ খুলতেই দেখি, হাসপাতালের বিছানায় বেঁধে রাখা হয়েছে আমাকে। নিজের পরিচয়, বা কীভাবে ওখানে গেলাম—কিচ্ছু মনে করতে পারিনি। মাঝে মাঝে সোনালি চুলের একজন ডাক্তার আসত… আমাকে ইঞ্জেকশন দিত, কিংবা হাতে লাগিয়ে দিত স্যালাইন। আজ আমাকে যারা ধাওয়া করছে, এরাও আসত কখনও কখনও। বাঁধন খুলে আমাকে হাঁটাচলা করতে দিত, তারপর আবার বিছানায় শুইয়ে আটকে দিত সব স্ট্র্যাপ। একটা কথাও বলত না কেউ, অস্ত্র তাক করে বোবার মত দাঁড়িয়ে থাকত। কতবার ডেকেছি ওদের… কতবার প্রশ্ন করেছি… অথচ কিচ্ছু বলেনি। কী ঘটছে, কেন ঘটছে, তার কোনও ধারণাই ছিল না আমার।’

    দম নেবার জন্যে একটু থামল ও। এই সুযোগে রিয়ারভিউ মিররে চোখ বুলিয়ে নিল রানা।

    ‘কয়েকদিন কেটে গেলে হঠাৎ লক্ষ করলাম, অদ্ভুত সব চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়,’ আবার বলতে শুরু করল অ্যালি। ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, বোধহয় স্মৃতি ফিরে আসছে। কিন্তু পরে টের পেলাম, আসলে তা নয়। চিন্তাগুলো বড্ড এলোমেলো, বিক্ষিপ্ত। ওগুলো আমার হতেই পারে না। যেমন ধরো, বউকে নিয়ে ভাবনা—ওটা আমার মাথায় আসবে কেন? কিংবা ধরো, বেতনের টাকা জমানোর চিন্তা। সোনালিচুলো ওই ডাক্তার বা অন্যেরা কামরায় এলেই ওসব বেশি বেশি শুনতাম। একটা সময় বুঝে ফেললাম কী ঘটছে।’

    আরেকটা ট্রেইলারকে পাশ কাটাল রানা। সামনের রাস্তা একদম ফাঁকা, দৃষ্টিসীমার মাঝে কোনও গাড়ি নেই।

    ‘যা কিছু জেনেছি, সব ওই লোকগুলোর মাথা থেকে,’ বলল অ্যালি। ‘খুব বেশি জেনেছি বলা যাবে না, কারণ ওরা নিজেরাই কিছু জানত না। ওদেরকে পাঠানো হয়েছিল স্রেফ আমাকে ওখানে আটকে রাখার জন্যে। আমি কোত্থেকে ……এসেছি, বা আমার সত্যিকার পরিচয় কী—তা জানা ছিল না

    ওদের। তবে ওরা আমার ক্ষমতার কথা জানত… ওদেরকে কাজে পাঠাবার আগেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল আমার ব্যাপারে। কিন্তু কীভাবে পেলাম এই ক্ষমতা, বা কীভাবে পুরো ব্যাপারটা কাজ করে, সেসব জানা ছিল না লোকগুলোর। আমিও তাই জানতে পারিনি।’

    ‘কিন্তু অন্যান্য বিষয় তো জানত?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘মানে… কার হয়ে কাজ করছে, সেটা? আমেরিকান সরকার, নাকি কোনও প্রাইভেট ফার্ম?’

    ‘সরি, তাও জানতে পারিনি। আমার কাছে বেশি সময় থাকত না ওরা। আর থাকলেও ওসব নিয়ে কখনও ভাবত না। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত, বুঝলে? বেশিরভাগ সময়ে মানুষের মাথায় আবোল-তাবোল চিন্তা খেলা করে। ধরো, কারও সঙ্গে কখনও ঝগড়া হয়েছে, সেই ঝগড়াই মাথার ভেতর ঘুরপাক খায়। কী করলে ঝগড়াটা এড়ানো যেত, বা কী বললে রাগ ভাঙানো যেত—এসব নিয়ে ভাবে। কখনও বা মনে মনে পছন্দের গান গায় বা ছোটবেলার কথা ভাবে। কোনও ধরনের দুশ্চিন্তা যদি মাথায় ঢোকে, সেটা বার বার উল্টেপাল্টে দেখে। আমার যেটা দরকার ছিল… মানে, লোকগুলোর নাম, বা কোথায় কাজ করে… সেসব কখনোই কাউকে ভাবতে শুনিনি। তুমি নিজের কথাই ভাবো। শেষ কবে মনে মনে নিজের নাম উচ্চারণ করেছ তুমি?’

    ‘কথা সত্য,’ স্বীকার করল রানা।

    ‘আর যখন মানুষ সচেতনভাবে চিন্তা করে, তখন সে অজানা বিষয় বা অনিশ্চয়তা নিয়ে মাথা ঘামায়। আমার মত ওদের মাথাতেও একই প্রশ্ন ঘুরপাক খেত—আমি কে? কোত্থেকে এসেছি? ওদের জানা ছিল না। তবে হ্যাঁ, একবার একটা লোকের নাম শুনেছি ওদের চিন্তায়। খুব ক্ষমতাবান এক লোক—ওরা সম্ভবত তার হয়ে কাজ করে—লোকটার নাম লিয়ারি।’

    নামটা চেনা চেনা লাগল রানার। পরিষ্কার মনে পড়ছে না, তবে মনে হচ্ছে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা খাতে বেসরকারি যেসব ফার্ম কাজ করে, তারই কোনোটার শীর্ষপদে আছে এ- লোক। ডিফেন্স কন্ট্রাক্টর বলে এদেরকে। তবে নামেই বেসরকারি, আসলে এসব ফার্ম আমেরিকান সরকারের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। যেসব অনৈতিক কাজ সরকারিভাবে করা যায় না, সেগুলো করানো হয় বেসরকারি ফার্মের ছায়ায়।

    ‘লোকটাকে সবাই ভয় পায়,’ অ্যালি বলল। ‘ওকে নিয়ে কমবেশি ভাবতে শুনেছি সবাইকে। সবচেয়ে বেশি ভারত আমার ডাক্তার। লিয়ারির কথা মনে পড়লেই ভয়ে জড়সড় হয়ে যেত সে। এই ডাক্তারের মাথা থেকেই সবচেয়ে বেশি তথ্য পেয়েছি আমি। আমার কামরার পাশেই ছিল তার অফিস। সে ভেবেছিল, ওটা আমার রেঞ্জের বাইরে, কিন্তু তা নয়।’

    ‘কী কী জেনেছ তার কাছ থেকে?’

    চোখ বন্ধ করল অ্যালি। মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছে কথা। খানিক পর বলল, ‘আমার কাছ থেকে ইনফরমেশন আদায় করার দায়িত্ব পেয়েছিল ওরা। সেজন্যেই আমাকে ইঞ্জেকশন আর স্যালাইন দিচ্ছিল। ওসব ওষুধ দিলে নাকি ঘুমের মধ্যে কথা বলে মানুষ—অবচেতন মন থেকে বেরিয়ে আসে সব সত্য। অনেকটা সম্মোহনের মত একটা ব্যাপার। স্মৃতি চলে যাওয়া… এটা ওই ওষুধগুলোর সাইড-ইফেক্ট। ডাক্তারের চিন্তা থেকে জেনেছি, ওষুধের কারণে জেগে থাকা অবস্থায় স্মৃতিগুলো চাপা পড়ে যায়, কিন্তু ঘুমালে সব আবার ভেসে ওঠে। তখন যা কিছু জিজ্ঞেস করা হয়, তার জবাব ঠিক ঠিক দিতে পারি আমি।’

    কথাগুলো বলতে বলতে কেঁপে যাচ্ছে মেয়েটার কণ্ঠ। ভয় পাচ্ছে সে।

    ‘কিন্তু ঘুমের ভেতর যা যা বলছ, তা তো ডাক্তার শুনতে পাচ্ছে, রানা বলল। ‘ওর মাথা থেকে সেসব জানতে, পারোনি?’

    ‘না,’ অ্যালি মাথা নাড়ল। ‘কারণ ও আমাকে জেরা করত না। আমি ঘুমিয়ে গেলেই সম্পূর্ণ ভিন্ন একদল লোক আসত, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করত। তখন কামরায় কাউকে থাকতে দিত না ওরা। আমার ঘুম ভাঙার আগেই আবার চলে যেত লোকগুলো। ডাক্তার বা নিরাপত্তারক্ষীরা ওদের পরিচয় জানে না। আমাকে কী নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে, বা আমি কী জবাব দিচ্ছি—সেসব জানার কোনও উপায় ছিল না ওদের।’ একটু থামল ও। ‘আমার কথাগুলো নিশ্চয়ই খুব অদ্ভুত লাগছে তোমার?’

    রাস্তা থেকে চোখ সরাল না রানা। অ্যালির কথাগুলো অদ্ভুত নয় মোটেই। ও নিজে অন্তত তিনটে নারকোটিক এজেন্টের নাম বলতে পারবে, যেগুলোর সাহায্যে ঘুমন্ত মানুষকে ইন্টারোগেট করা যায়…. যেগুলো সাবজেক্টের স্মৃতিভ্রংশ ঘটায়। এমন ঘটনা রানার নিজের জীবনেই ঘটেছে—ইজরায়েলি ইন্টেলিজেন্সের দেয়া ওষুধের প্রভাবে পুরোপুরি স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছিল ও, সুস্থ হবার জন্যে দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছিল অ্যাসপেন নামে এক ছোট্ট পাহাড়ি শহরে।*

    [* ‘অখণ্ড অবসর’ দ্রষ্টব্য।]

    বিস্মিত চোখে ওর দিকে তাকাল অ্যালি। সন্দেহ নেই, রানার চিন্তাটা শুনতে পেয়েছে।

    ‘আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানা বাকি তোমার, অভয় দেবার ভঙ্গিতে হাসল রানা। ‘সময়মত খুলে বলব।’

    মাথা ঝাঁকিয়ে আবার সামনে তাকাল মেয়েটা।

    ‘যে-ইনফরমেশন ওরা তোমার কাছ থেকে জানতে চাইছে…’ বলল রানা, ‘…সেটা কি ভয়ঙ্কর কিছু? কেন যেন মনে হচ্ছে, তুমি নিজেও ভয় পাচ্ছ।’

    মুখে জবাব দিল না, শুধু মাথা ঝাঁকাল অ্যালি।

    ‘কেন ভয় পাচ্ছ?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘তোমার তো কিছু মনে নেই।’

    ‘আমি ভয় পাচ্ছি ওদেরকে ভয় পেতে দেখে। ওই ইনফরমেশনের ব্যাপারে যাদের ধারণা আছে… মানে, লিয়ারি ও তার সঙ্গীসাথীরা… তাদের অনেককেই চেনে আমার ডাক্তার আর গার্ডেরা। ওদের চিন্তা থেকে জেনেছি, লোকগুলো ভয়ানক আতঙ্কের মধ্যে আছে—বড় ধরনের কোনও দুর্যোগ, যুদ্ধ বা মহামারীর খবর পেলে যেমন ভয় পায় মানুষ, ঠিক সেরকম! ওদের হাবভাবে মনে হচ্ছে, ভয়ঙ্কর কিছু একটা আসছে… একমাত্র আমিই জানি তার খবর।’

    নিজের অজান্তে কেঁপে উঠল রানা। হালকাভাবে নিতে পারছে না।

    কথাগুলো বড় করে শ্বাস ফেলল অ্যালি। ‘ব্যস, যা যা জানি, সব খুলে বললাম তোমাকে। তুমি ঠিকই ধরেছ, রানা, আমার সত্যিই খুব ভয় করছে।’

    ওকে কিছু বলতে চাইছিল রানা, কিন্তু থেমে গেল আয়নায় নতুন একজোড়া হেডলাইট উদয় হতে দেখে। দূর থেকে খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে ওটা, বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করল একটা গাড়িকে। অ্যালিও টের পেয়েছে ব্যাপারটা—রানাকে দেখে কিংবা ওর মনের কথা পড়তে পেরে। পা নামিয়ে সামনে ঝুঁকল ও, চোখ রাখল প্যাসেঞ্জার সাইডের মিররে।

    রিয়ারভিউ মিরর থেকে চোখ সরায়নি রানা, বুঝতে চাইছে নবাগত গাড়িটার উদ্দেশ্য। ওভারটেক করা গাড়িটার সামনে চলে এসেছে ওটা, পেছন থেকে আলো পড়ায় ফুটে উঠেছে অবয়ব।

    হুইলের ওপর রানার হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেল। ওটা একটা ভ্যান।

    মনিটরে ভেসে ওঠা ফোর্ড পিকআপটার দিকে তাকিয়ে আছে লিয়ারি, থারমাল ইমেজে ওটার ইঞ্জিন কম্পার্টমেন্ট আর ক্যাব ছড়াচ্ছে নীলচে দ্যুতি। তিনটা ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল থেকে ট্র্যাক করা হচ্ছে গাড়িটাকে। চতুর্থ আরেকটা মিরাণ্ডাকে ইতিমধ্যে কাজে নামানো হয়েছে—ওটা থেকে পাওয়া যাচ্ছে ওয়াইড ভিউ, ফলে দেখা যাচ্ছে সিসকো ও তার দলের ভ্যানটাকেও দ্রুত দূরত্ব কমিয়ে আনছে ওরা। হাবভাবে মনে হচ্ছে, ধাওয়াকারীদের দেখতে পায়নি রানা; আগের গতিতেই এগোচ্ছে তার পিকআপ।

    লিয়ারির সেলফোন বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে জ্যাকসনের নাম ভেসে উঠতে দেখল সে। লোকটা তার সহকারী, তাকে মাসুদ রানার ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে বলেছে সে। সে-বিষয়েই সম্ভবত রিপোর্ট দেবার জন্যে ফোন করেছে। কল রিসিভ করল না লিয়ারি, এখন ওসব তথ্যের প্রয়োজন নেই। সামনের মনিটরে যে-নাটকের সূত্রপাত হতে চলেছে, এ-মুহূর্তে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। লিয়ারি আশা করছে, দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজটা সম্পন্ন করবে সিসকোর টিম। রানা একজন অভিজ্ঞ ইনভেস্টিগেটর হতে পারে, কিন্তু সশস্ত্র লড়াইয়ে ওদের সঙ্গে তার কোনও তুলনা চলে না। সিসকোর দলের প্রত্যেকেই প্রথম শ্রেণীর ট্রেইনিং পাওয়া সৈনিক… আধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত… সবচেয়ে বড় কথা, অপ্রস্তুত অবস্থায় শিকারকে চমকে দিতে চলেছে ওরা।

    পিকআপের পাঁচশো গজের ভেতর পৌছে গেছে ভ্যান। পালাবার কোনও পথ নেই রানার।

    রিং হতে হতে থেমে গেল লিয়ারির ফোন।

    ধীরে ধীরে কাছে চলে আসছে ভ্যান-রিয়ারভিউ মিররে দেখতে পাচ্ছে রানা। শুরুতে গতি কমিয়েছিল, যাতে সন্দেহ না জাগে, তবে খানিক পরেই আবার বাড়িয়েছে গতি। গত পঁয়তাল্লিশ সেকেণ্ডে অর্ধেক দূরত্ব কমিয়ে এনেছে পিকআপের সঙ্গে।

    ‘কীভাবে ওরা খুঁজে পেল আমাদের?’ বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করল অ্যালি।

    হাইওয়ের পাশে অপেক্ষা করার সময় কীসের আভাস দিচ্ছিল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়, তা এবার বুঝতে পারছে রানা। তিক্ত গলায় বলল, ‘স্যাটেলাইট… স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে ওরা। একটা, কিংবা আরও বেশি।’

    সমস্যাটা ঠাণ্ডা মাথায় খতিয়ে দেখতে শুরু করল ও। কতটা আধুনিক স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে লিয়ারি, জানা নেই। তবে আকাশ থেকে যে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে ওদেরকে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কাজেই গাড়ি ফেলে পাহাড়ের দিকে দৌড়ে পালাবার চেষ্টা করা বৃথা। স্যাটেলাইটের থারমাল ক্যামেরায় ওদেরকে ট্র্যাক করতে পারবে লোকটা, পেছনে লেলিয়ে দেয়া খুনিদের গাইড করতে পারবে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, সমীকরণ থেকে সরাতে হবে ওই খুনিগুলোকে… আর সেটা বেশ বাজে কায়দায়।

    অবাক ব্যাপার, অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করল রানা। অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন হলো ফিল্ডের বাইরে ও… শরীরে যেন জং ধরে গিয়েছিল, নিজেকে দুর্বল-অক্ষম মনে হচ্ছিল। কিন্তু আজ, বিপদের মুখে আবারও সচল হয়ে উঠেছে দেহ-মন। উন্মুখ হয়ে উঠেছে অ্যাকশনে নামার * জন্যে। এটাই ওর জীবন, এই সংঘাত ওর অস্তিত্বের অংশ।

    ‘তুমি দেখছি আর ভয় পাচ্ছ না,’ বলে উঠল অ্যালি। ‘খুব ভাল। কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না—তুমি এখনও গাড়ির স্পিড বাড়াচ্ছ না কেন?’

    ‘ওদেরকে বোকা বানাবার জন্যে,’ বলল রানা। ‘ওরা ভাববে, আমরা কিছু টের পাইনি… আমাদেরকে চমকে দিয়ে হামলা করা যাবে। আসলে চমক অপেক্ষা করছে ওদেরই জন্যে!’

    সামনে একটা বড় ট্রাক দেখা গেল। ওটাকে ওভারটেক করার মত যথেষ্ট সময় আছে কি না কে জানে। ভ্যানটা প্ৰায় ঘাড়ের ওপর উঠে এসেছে। হঠাৎ রানা বুঝে ফেলল, কী করতে হবে ওকে। রাস্তাটা সেজন্যে একদম আদর্শ—দুটো মাত্র লেইন, বামে কংক্রিটের ডিভাইডার, ডানে গার্ডরেইল… রেইলের ওপারে বিপজ্জনক ঢাল, সাগরে গিয়ে মিশেছে। রাস্তার দু’পাশে কোনও বাড়তি জায়গাও নেই। ফ্রিওয়ে হলেও রাস্তাটার সঙ্গে একটা টানেলের বিশেষ পার্থক্য নেই। এমনটাই তো চাই!

    অ্যালির দিকে এক পলক তাকাল রানা। ‘আমার প্ল্যান তুমি জেনে গেছ, তাই না?’

    নার্ভাসভাবে মাথা ঝাঁকাল মেয়েটা। শক্ত করে আঁকড়ে ধরল প্যাসেঞ্জার ডোরের আর্মরেস্ট। ঝড়-ঝাপটা শুরু হবে এখুনি।

    ঝুঁকি নিয়ে স্পিড সামান্য বাড়াল রানা। ইণ্ডিকেটর জ্বেলে লেইন বদলাল, ওভারটেক করতে শুরু করল ট্রাকটাকে। পেছনে ভ্যানটাও লেইন বদলাল, এরপর খেপা ষাঁড়ের মত ছুটে এল দু’পক্ষের মাঝখানের দূরত্ব ঘোচাতে।

    .

    মনিটরের ওপর আঠার মত সেঁটে রয়েছে লিয়ারির দৃষ্টি। থারমাল ইমেজের রঙিন বিন্দুগুলো দেখে বুঝতে চাইছে ঘটনা। টেনশন কেটে গেছে অনেকখানিই। বিশ্রী সমস্যাটার সমাধান হতে চলেছে খুব শীঘ্রি।

    পেছনে দরজা খোলার শব্দ হলো। করিডোর থেকে এক টেকনিশিয়ান ঢুকেছে কামরায়। হাতে কর্ডলেস ফোন।

    ‘মাফ করবেন, স্যর,’ বলল সে। ‘জ্যাকসনের ফোন। খুব নাকি জরুরি।’

    পর্দা থেকে চোখ সরাল না, হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিল লিয়ারি। খেঁকিয়ে উঠে বলল, ‘কী এমন ঘটেছে যে, ত্রিশ সেকেণ্ড অপেক্ষা করতে পারছ না তুমি?’

    ‘সরি, স্যর। কিন্তু ইনফরমেশনটা আপনার জানা থাকা উচিত,’ ওপাশ থেকে বলল জ্যাকসন। ‘সেলফোনেই ট্রাই করেছিলাম, আপনি ধরলেন না…’

    ‘অযথা সময় নষ্ট করছ। যা বলার, ঝটপট বলে ফেলো।’

    ‘ব্যাপারটা মাসুদ রানাকে নিয়ে, স্যর। আমি ওর ফাইল জোগাড় করেছি। লোকটা সাধারণ কোনও প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর নয়। সিসকো যদি ওর পেছনে লেগে থাকে, তাকে সাবধান করে দেয়া দরকার।

    ‘প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর নয়?’ ভ্রূকুটি করল লিয়ারি। ‘তা হলে কে ও?’

    ‘এসপিয়োনাজ ‘ এজেন্ট, স্যর। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের অন্যতম সেরা এজেন্ট এই মাসুদ রানা। ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিটা আসলে বিসিআইয়ের কাভার, এই লোক ওটার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। শুধু তা-ই নয়, আরও অনেকগুলো পরিচয় আছে ওর। এক্স-আর্মি অফিসার, সৌখিন আর্কিয়োলজিস্ট, চ্যাম্পিয়ন কার-রেসার, দক্ষ স্নাইপার, ফার্স্ট ক্লাস কমাণ্ডো, ইউএন অ্যান্টি-টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশনের স্পেশাল এজেন্ট… লিস্টটা আরও অনেক-অনেক লম্বা। এর কোয়ালিফিকেশনের সামনে সিসকো বা তার টিমের লোকজন কিছুই না।’

    আতঙ্কের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল লিয়ারির শিরদাঁড়া বেয়ে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাল মনিটরে। স্পিড লিমিট বজায় রেখে অলসভাবে চলছে রানার পিকআপ। পেছন থেকে গতি বাড়িয়ে ওটাকে ধরতে যাচ্ছে সিসকোর ভ্যান। গলদটা এতক্ষণে ধরতে পারছে লিয়ারি। রানার মত অভিজ্ঞ লোক ভ্যানটাকে দেখতে পায়নি, তা হতেই পারে না। নিশ্চয়ই কিছু একটা করবে সে… অপ্রত্যাশিত কিছু। কী সেটা?

    কর্ডলেস ফোনটা ফেলে দিল লিয়ারি, তাড়াতাড়ি হাতে নিল নিজের সেলফোন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১
    Next Article মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.