Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প358 Mins Read0

    অন্তর্যামী – ৭

    সাত

    কম্পিউটার রুমে ব্যস্ততা। হুপারকে সাহায্য করার জন্যে চারজন অ্যানালিস্ট ডেকে এনেছে লিয়ারি-ম্যাপের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তারা। ইন্টারস্টেট ১০১ ধরে শিকার কোথায় যেতে পারে, তা বিশ্লেষণ করছে। রানার পরবর্তী চাল আঁচ করার ওপর নির্ভর করছে অপারেশনের সাফল্য। চালু লোক এই মাসুদ রানা… স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যে ওদেরকে ট্র্যাক করা হচ্ছে, তা জানে নিঃসন্দেহে; নিশ্চয়ই মিরাণ্ডার চোখগুলোকে ফাঁকি দেবার উপায় খুঁজছে।

    একটা সুবিধে অবশ্য পাচ্ছে লিয়ারি। আমেরিকান স্যাটেলাইটের প্রযুক্তি গত কয়েক বছরে কতখানি এগিয়ে গেছে, তা জানার কথা নয় একজন বাঙালি স্পাইয়ের। সাধারণ স্যাটেলাইটকে ধোঁকা দেবার কলাকৌশল হয়তো সে জানে, কিন্তু সেসব কৌশল মিরাণ্ডার বেলায় কাজ করবে না। সবচেয়ে বড় কথা, মাত্র আধঘণ্টা রানাকে চোখে চোখে রাখলেই কার্যোদ্ধার হবে। ফ্রিওয়েতে ভ্যানের অ্যাকসিডেন্ট ঘটার সঙ্গে সঙ্গে লস অ্যালামিটোসের প্যাড থেকে একটা এএইচ-সিক্স হেলিকপ্টার গানশিপ উড়িয়েছে সে, এখন সেটা লস অ্যাঞ্জেলেসের ওপর দিয়ে দেড়শো মাইল বেগে ছুটে যাচ্ছে পিকআপটাকে লক্ষ্য করে। যদি সব ঠিক থাকে, সামনাসামনি দেখা হবে ওদের।

    পায়চারি করতে করতে নিঃশব্দে নিজেকে অভিসম্পাত দিচ্ছে লিয়ারি—মেয়েটার পালানোর খবর পেয়েই চপারটা পাঠায়নি বলে। তা-ই যদি করত, ভ্যানটা ধ্বংস হবার আগেই পিকআপের মাথার ওপরে থাকত ওটা। তবে তখন সেটা মাথায় আসেনি। সিসকোর ওপর অগাধ আস্থা ছিল তার; ভেবেছিল, মেয়েটার লোকেশন বের করে দিলেই কাজটা অনায়াসে সারতে পারবে সে। একবারও ভাবেনি, তার মত অভিজ্ঞ লোক ব্যর্থ হতে পারে।

    একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল লিয়ারি। চোখ রাখল দেয়ালে ঝোলানো মনিটরে। মিরাণ্ডার ফিড ভেসে উঠেছে ওগুলোয়। একটায় ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে দেখা যাচ্ছে হেলিকপ্টার গানশিপ… সেঞ্চুরি সিটি পার হচ্ছে ওটা। বাকি তিনটে স্ক্রিন লক হয়ে আছে ছুটন্ত পিকআপের ওপর। মাইলখানেক দূরে একটা এগজিট রয়েছে—এল্ সেডেরোর পর ওটাই প্রথম এগজিট, হাইওয়ে থেকে নেমে যাবার জন্যে। পিকআপ ওটার কাছাকাছি চলে আসায় ম্যাপ ছেড়ে চোখ তুলল অ্যানালিস্টরা। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সম্ভাব্য গন্তব্য বের করেছে ওরা। ওদের ধারণা, স্যাটেলাইটকে ফাঁকি দেবার জন্যে আণ্ডারগ্রাউণ্ডে যেতে চাইবে রানা—কোনও বিল্ডিঙের বেজমেন্ট, কিংবা সিউয়ারেজের টানেলে। বড়-সড় কোনও বিল্ডিঙের আণ্ডারগ্রাউণ্ড গ্যারাজে, অথবা জটিল কোনও টানেল নেটওঅর্কে যদি ঢুকতে পারে, বেরুবার জন্যে একাধিক রাস্তা খুঁজে পাবে সে। লিয়ারিও তা-ই চাইছে। থামুক রানা, ঢুকে পড়ুক কোথাও। আগের স্যাটেলাইটকে ওভাবে ফাঁকি দেয়া যেত, কিন্তু মিরাণ্ডারা একটা নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত মাটি ভেদ করেও দেখতে পারে। রানা যেদিকেই যাবার চেষ্টা করুক, সেখানেই আগেভাগে ওত পেতে বসে থাকা যাবে।

    মনিটরে পিকআপকে এগজিট পেরিয়ে এগিয়ে যেতে দেখল সবাই। হাইওয়ে থেকে নামেনি রানা। তাড়াতাড়ি ক্যালকুলেশনের কাগজপত্র থেকে দুটো পাতা ফেলে দিল অ্যানালিস্টরা। পরের এগজিটগুলোর ওপর নজর দিল এবার।

    কম্পিউটারে অনবরত দেখানো হচ্ছে পিকআপ আর এএইচ-সিক্সের মধ্যবর্তী দূরত্ব। গতিবেগের যোগফল অনুসারে দুইশো ত্রিশ মাইল বেগে পরস্পরের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ওরা। রানা যদি হাইওয়ে না ছাড়ে, তা হলে খুব শীঘ্রি ওকে ইণ্টারসেপ্ট করবে হেলিকপ্টারটা। তবে সমস্যা হলো, ইতিমধ্যে জনবহুল একটা এলাকায় পৌঁছে গেছে পিকআপ। কেটে পড়ার জন্যে অন্তত আধ ডজন এগজিট রয়েছে রানার সামনে।

    উঠে আবারও পায়চারি করতে শুরু করল লিয়ারি। সিসকোর ব্যর্থতার পর তার আত্মবিশ্বাস টলে গেছে। এটা ঠিক যে, রানার পক্ষে মিরাণ্ডার চোখ ফাঁকি দেবার কোনও উপায় নেই, কিন্তু তারপরেও আরেকটা ব্যাকআপ প্ল্যানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে সে। সাবধানের মার নেই। করিডোরে বেরিয়ে এল সে। সেলফোন হাতে নিয়ে ডায়াল করল ওয়াশিংটনের নাম্বারটাতে।

    ‘আবার কোনও দুঃসংবাদ দেবে না তো?’ ওপাশ থেকে বলল পরিচিত কণ্ঠটা। তাকে সিসকোর দলের পরিণতির খবর আগেই জানিয়েছে লিয়ারি।

    ‘এখনও তেমন কিছু ঘটেনি,’ বলল লিয়ারি। ‘যেন না ঘটে, সেটাই নিশ্চিত করতে চাই।’

    ‘মানে?’

    ‘রানা যদি কোনোভাবে মিরাণ্ডাগুলোকে ফাঁকি দেয়, বিপদে পড়ে যাব আমরা। পৃথিবীর বুক থেকে স্রেফ মিলিয়ে যাবে সে। ওর বন্ধুবান্ধবের পেছনে ফেউ লাগিয়ে, কিংবা ওদের ফোনে আড়ি পেতে কোনও লাভ হবে না। ও-ধরনের ছেলেমানুষি ভুল রানা করবে না। বসে বসে আঙুল চুষতে হবে আমাদেরকে।‘

    ‘আসল কথা বলো।’

    ‘বলতে চাইছি যে, ওকে যদি হারাই, তা হলে বড় ধরনের কোনও পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদেরকে। সারা দুনিয়ার চোখ ঘুরিয়ে দিতে হবে রানার দিকে। এমন কিছু করতে হবে, যাতে পত্রিকার পাতায় দিনের পর দিন ওর নাম আর ছবি ছাপা হয়।’

    কয়েক মুহূর্তের নীরবতা বিরাজ করল ওপাশে। তারপর প্রশ্ন এল, ‘কী করা যেতে পারে, সেটা ভেবেছ?’

    ঠোঁট কামড়াল লিয়ারি। ‘হ্যাঁ। মোটামুটি।’

    ‘খুলে বলো, শুনি।

    প্ল্যানটা ব্যাখ্যা করতে ত্রিশ সেকেণ্ড নিল লিয়ারি।

    ‘ঝুঁকি আছে,’ বলল লোকটা।

    লোকটা। ‘এদেশে রানার শুভানুধ্যায়ীর অভাব নেই। ওদেরকে ট্যাকেল করতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হবে। শেষ পর্যন্ত সব যদি ঠিকঠাক না, এগোয়, আমরাই ঝামেলায় পড়ে যাব।’

    ‘মেয়েটাকে কবজা করতে না পারলে আরও বড় ঝামেলা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।’

    আবারও নীরবতা। বড় বড় শ্বাস ফেলছে লোকটা। অবশেষে বলল, ‘বেশ, হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটিতে ফুলারের সঙ্গে কথা বলছি আমি। কাজটা কখন করতে হবে, আমাকে জানিয়ো।’ লাইন কেটে দিল সে।

    কম্পিউটার রুমে ফিরে এল লিয়ারি। অ্যানালিস্টরা ছোটাছুটি করছে। নতুন করে কমাণ্ড পাঠানো হয়েছে স্যাটেলাইটে। চারটে মিরাণ্ডাই এখন তাক করা হয়েছে পিকআপের ওপর।

    ‘হাইওয়ে থেকে নেমে গেছে ওরা,’ হুপার জানাল। ‘পাঁচটা ক্যাণ্ডিডেট লোকেশনের একটা ক্লাস্টারের দিকে এগোচ্ছে। সম্ভাব্য ডেস্টিনেশন: একটা চারতলা হাসপাতাল… আধ মাইল দূরে।’

    একটা মিরাণ্ডাকে হাসপাতালের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হলো। ডেটাবেজ ঘেঁটে বিল্ডিংটার নকশা বের করে আনল সফটওয়্যার। বারোটা এগজিট আছে হাসপাতালে, তার ভেতর একটা মিশেছে আণ্ডারগ্রাউণ্ড টানেলে—সেটা আবার রাস্তার তলা দিয়ে চলে গেছে ওপাশের দ্বিতীয় আরেকটা হাসপাতালে, সেখানে রয়েছে আরও সাতটা এগজিট। দুই বিল্ডিঙের মাঝখানে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে টানেলে ঢোকার পাঁচটা অ্যাকসেস পয়েন্ট।

    সম্ভাব্য আরও যে-তিনটা বিল্ডিং রয়েছে, সবগুলোই কমবেশি একই রকম। শেষ মুহূর্তের আগে বোঝার উপায় নেই, রানা ঠিক কোন্টায় ঢুকবে। তবে আশার বাণী একটাই—এখন পর্যন্ত অ্যানালিস্টদের অনুমান মোতাবেক কাজ করছে লোকটা।

    ‘আয়, শালা,’ বিড়বিড় করল লিয়ারি। ‘ফাঁদে পা দে।’

    .

    প্রায় ফাঁকা রাস্তা ধরে পিকআপ ছোটাচ্ছে রানা। চারদিক এখনও অন্ধকার, ভোরের আভা ফুটতে অন্তত ঘণ্টাখানেক বাকি। সামনে, কালো আকাশের পটভূমিতে মাথা তুলে রেখেছে কিছু মাঝারি উচ্চতার অফিস ভবন। সেগুলোর ছায়ায় রয়েছে ছোট ছোট কিছু বিল্ডিং—দোকান, রেস্টুরেন্ট, গুদাম, ইত্যাদি।

    অস্বস্তি লাগছে রানার। স্যাটেলাইটের দৃষ্টি যেন অনুভব করতে পারছে ঘাড়ের ওপর। পুরো পথ ওগুলোকে নিয়েই ভাবছে ও। আমেরিকান স্পাই স্যাটেলাইট সম্পর্কে মোটামুটি জানা আছে ওর। গত কয়েক বছরে ওগুলোর টেকনোলজি অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু ঠিক কতটা?

    রানার পাশে চুপচাপ বসে আছে অ্যালি। হাতদুটো কোলের ওপর রাখা। নার্ভাস, সন্দেহ নেই… কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ করছে না।

    সামনে ট্রাফিক লাইট সবুজ থেকে লাল হয়ে গেল। ব্রেক চেপে সাবধানে গাড়ি থামাল রানা।

    ‘আর এক মিনিট লাগবে পৌঁছুতে,’ বলল ও।

    মাথা ঝাঁকাল অ্যালি। ‘তোমার প্ল্যানটা আমার পছন্দ হয়েছে। ওটা… অন্যরকম।

    ‘অন্যরকমই হওয়া দরকার।’

    উইণ্ডশিল্ড ভেদ করে গন্তব্যের দিকে তাকাল অ্যালি। জিজ্ঞেস করল, ‘জায়গাটা তুমি চেনো কী করে?

    ‘আগেও এসেছি—চ্যারিটি ওঅর্কের জন্যে।’

    ‘বিপদ হবে না তো? মানে… ওখানে যারা থাকে, তাদের?’

    মাথা নাড়ল রানা। ‘না, না। এসবের প্র্যাকটিস আছে ওদের—ইর্মাজেন্সির জন্যে নিয়মিত মহড়া হয় ওখানে। আজও তেমনটাই ঘটবে।’

    ‘ওরা খুব রেগে যেতে পারে।’

    ‘সবকিছু ভালয় ভালয় শেষ হলে ওদের জন্যে একটা ডোনেশন পাঠিয়ে দেব।’

    ‘যদি সুযোগ পাও আর কী।’

    .

    মনিটরে পিকআপকে আবার চলতে দেখল লিয়ারি। ইণ্টারসেকশন পেরিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে, স্পিড বাড়াচ্ছে না। মাত্র ত্রিশ সেকেণ্ড চলল গাড়িটা, এরপর থেমে দাঁড়াল রাস্তার পাশে। হাসপাতাল এখনও তিন ব্লক দূরে। সম্ভাব্য বাকি ডেস্টিনেশনগুলোর দূরত্ব আরও বেশি। অ্যানালিস্টরা তাদের নোট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, কম্পিউটারে ডেটাবেজ খুলল হুপার—যে-বিল্ডিঙের সামনে থেমেছে রানা, সেটার পরিচয় জানতে চায়।

    পিকআপের দরজা খুলে গেল। লাফ দিয়ে নামল রানা আর অ্যালি—দৌড় শুরু করেছে। লম্বা ওঅকওয়ে ধরে ছুটে যাচ্ছে বিল্ডিঙের মেইন এন্ট্রান্সের দিকে। চোখ পিটপিট করে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল লিয়ারি, বিল্ডিঙের ইনফ্রারেড ইমেজ ভেসে উঠেছে ওখানে। একতলা একটা হোটেলের মত লাগছে—সারি বাঁধা অনেকগুলো রুম, মাঝে লম্বা করিডোর। ঘোলাটে কিছু অবয়বও ভেসে উঠল, ছাদ ভেদ করে হিট সিগনেচার পড়ছে মিরাণ্ডা—বোঝা গেল, প্রতিটা কামরায় ঘুমাচ্ছে বেশ কিছু মানুষ। রাতের এই সময়টায় সেটাই স্বাভাবিক।

    মনিটরের দিকে এগিয়ে গেল লিয়ারি। ঘুমন্ত আকৃতিগুলো দেখে কেন যেন তার মন খুঁতখুঁত করছে।

    ‘পেয়েছি,’ হঠাৎ বলে উঠল হুপার। ‘ওটা একটা বোর্ডিং স্কুল।’

    মুখ চাওয়াচাওয়ি করল অ্যানালিস্টরা। বোর্ডিং স্কুলকে গোনায় ধরেনি তারা। ধরার প্রয়োজন ছিল না। একতলা একটা বিল্ডিং… যেটায় বেজমেন্ট নেই, সেখানে ঢুকে কেউ স্যাটেলাইটকে ফাঁকি দিতে পারবে না।

    আচমকা সচকিত হলো লিয়ারি। খুঁতখুঁতানির কারণ ধরতে পেরেছে। ঘুমিয়ে থাকা দেহগুলোর আকার দেখে অমনটা লেগেছে। ছোট ছোট দেহ… ওরা সবাই শিশু!

    ওহ্ গড!’ আঁতকে উঠল সে।

    .

    বোর্ডিং স্কুলের দরজা বন্ধ। সেটাই স্বাভাবিক। তবে নিঃশব্দে ভেতরে ঢোকার প্রয়োজন নেই, বরং রানা শব্দই করতে চাইছে। দৌড়ের ফাঁকেই ঝুঁকে ওঅকওয়ের পাশ থেকে একটা পাথর তুলে নিল ও। দরজা কাছে পৌঁছে ওটা ছুঁড়ে দিল পাশের একটা জানালার দিকে। বিকট শব্দে ভেঙে পড়ল কাঁচ। ফোকরটা ওর জন্যে ছোট, তবে অ্যালি সহজেই ঢুকে যেতে পারল। কয়েক সেকেণ্ড পর ভেতর থেকে দরজা খুলে দিল সে।

    হলওয়ের প্রথম ইন্টারসেকশন পর্যন্ত দৌড়ে গেল দু’জনে। এরপর থামল। অ্যালির দিকে ফিরল রানা।

    ‘কী করতে হবে, জানো তো?’ জিজ্ঞেস করল ও।

    মাথা ঝাঁকাল মেয়েটা।

    ‘গুড,’ বলল রানা। ‘বাইরে পৌঁছুনোর পর যেদিকে আমরা যাচ্ছিলাম, মানে পুবদিকে, দৌড়াবে। এখান থেকে পাঁচ ব্লক দূরে গিয়ে মিলব আমরা। তবে কাছাকাছি হব না, একটু দূরত্ব বজায় রাখব।’

    ‘বুঝতে পেরেছি।’

    অ্যালির কাঁধে হাত রাখল রানা। ‘বেশ, চলো, এবার একটা শোরগোল তোলা যাক।’

    দু’জনে দু’দিকের করিডোর ধরে ছুটল। বিশ গজ সামনে একটা ফায়ার অ্যালার্মের হ্যাণ্ডেল দেখতে পাচ্ছে রানা, তবে ওটা ধরার আগেই যেন নরক ভেঙে পড়ল। ওপাশের করিডোরে আরেকটা হ্যাণ্ডেল টেনে দিয়েছে অ্যালি। বিকট সুরে বেজে উঠল ফায়ার অ্যালার্ম।

    .

    মনিটরের সঙ্গে কোনও অডিয়ো ফিড নেই, তবে তার দরকার হলো না। ঘটনা বুঝতে পারছে লিয়ারি। একসঙ্গে জেগে উঠেছে বোর্ডিং স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রী। থারমাল ইমেজে অদ্ভুত দেখাল দৃশ্যটা। সবগুলো কামরা থেকে বেরিয়ে আসছে অসংখ্য রঙিন বিন্দু, জমা হচ্ছে হলওয়েতে। অ্যালির বিন্দুটা হারিয়ে গেল তার মাঝে। হলওয়ে পরিণত হলো আলোর নদীতে।

    রানাকে আরও কিছুক্ষণ ট্র্যাক করা গেল। বাচ্চাদের চেয়ে লম্বা ও। কিন্তু সংকীর্ণ করিডোরে বাচ্চাদের ভিড় বাড়ায় সে-ও হারিয়ে গেল রঙের ভিড়ে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নিল বড়রা হাজির হওয়ায়। স্কুলে বেশ কিছু আবাসিক শিক্ষক রয়েছে, তারা ছুটে এসেছে আতঙ্কিত বাচ্চাদের সামলাতে। লিয়ারি বুঝতে পারছে, ভিড়টা যখন বিল্ডিং থেকে বেরুবে, তখন বাচ্চা আর শিক্ষকদের ভিড়ের মাঝ থেকে আলাদা করা যাবে না রানা বা মেয়েটাকে।

    .

    ভিড়ের স্রোতে গা ভাসিয়েছে রানা। এগিয়ে চলেছে স্কুলের বাচ্চা আর শিক্ষকদের সঙ্গে। সবাই আতঙ্কিত, পাগলের মত ছোটাছুটি করছে। আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যে সম্ভবত অ্যালিই দায়ী, কানাঘুষো শুনতে পাচ্ছে রানা—আগুন নয়, গ্যাস লিক হয়েছে বিল্ডিঙের ভেতরে। যত দ্রুত সম্ভব, সবাইকে দূরে সরে যেতে হবে! গুজবটা ও-ই ছড়াবে ভেবেছিল, কিন্তু ফায়ার অ্যালার্মের মত গুজব চালু করাতেও ওকে হারিয়ে দিয়েছে মেয়েটা।

    তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ছে পুরো ছক, মূর্তির মত দাঁড়িয়ে মনিটরে তা প্রত্যক্ষ করছে লিয়ারি। হুড়মুড় করে স্কুল থেকে বেরিয়ে আসছে সবাই, তারপর ছুটে পালাচ্ছে। বাইরে বেরিয়ে যদি জটলা পাকাত, তা হলেও আশা ছিল। ভিড়ের ওপর নজর রাখতে পারত মিরাণ্ডা, সেখান থেকে কেউ সটকে পড়ার চেষ্টা করলে ট্র্যাক করতে পারত।

    কিন্তু থামাথামির কোনও লক্ষণ নেই ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষকদের মাঝে। বিল্ডিং থেকে বেরিয়েই ছোটাছুটি করছে তারা। থামছে না এক ব্লক, দু’ব্লক বা পাঁচ ব্লক দূরে গিয়েও। ওদের কারণে দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। হৈচৈ শুনে আশপাশের বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে আসছে আরও মানুষ। সার্চের পরিধি বাড়ছে ক্রমাগত। একসঙ্গে এত মানুষকে ট্র্যাক করা সম্ভব নয় স্যাটেলাইটের পক্ষে।

    ‘হচ্ছেটা কী এসব!’ হতভম্ব গলায় বলল হুপার। কি- বোর্ডের ওপর থেকে নিজের অজান্তেই হাত সরে গেছে তার। ‘ফায়ার ড্রিলের সময় তো বাইরে বেরিয়ে বাচ্চাদের লাইন ধরে দাঁড়ানোর কথা… স্কুলে আমরা তা-ই শিখেছি।’

    ‘রানা সেটা হতে দেয়নি,’ বলল লিয়ারি। ‘নিশ্চয়ই ওদেরকে এমন কিছু বলেছে, যার কারণে ভয় পেয়ে গেছে সবাই।’

    ‘কিন্তু কেন? মিরাণ্ডা স্যাটেলাইটের ক্ষমতা তো ওর জানার কথা নয়।’

    ‘হয়তো জানে না, কিন্তু অনুমান করে নিয়েছে। ওকে আসলে আমরা আণ্ডার-এস্টিমেট করেছি।’

    ‘এত সহজে হাল ছাড়ছি না,’ গোঁয়ারের মত বলল হুপার। তাকাল সঙ্গীদের দিকে। ‘জলদি আরও কয়েকটা স্যাটেলাইট নিয়ে এসো এদিকে। পুরো এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজব। রানাকে পাওয়া যাবেই।’

    ‘যাবে না,’ শান্ত গলায় বলল লিয়ারি। সেলফোন হাতে আবার বেরিয়ে গেল কামরা থেকে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ১৪৩ – অপহরণ-১
    Next Article মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.