Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    ইসমাইল আরমান এক পাতা গল্প358 Mins Read0

    অন্তর্যামী – ২৭

    সাতাশ

    হঠাৎ জেগে উঠল রানা। উঠে বসল ধড়মড় করে। তীক্ষ্ণ চোখে আশপাশে তাকাল। কীসে ঘুম ভাঙিয়েছে, বুঝতে চাইছে। ক্ষণিকের জন্যে মনে হলো, অযাচিত শব্দ বা আলোর ঝলকানি তার জন্যে দায়ী, কিন্তু তেমন কোনও আলামত দেখল না।

    কাউচ থেকে উঠে পড়ল ও। সেন্টার টেবিল থেকে তুলে নিল সিগ সাওয়ার। অস্ত্রটা হাতে নিয়ে চক্কর দিতে শুরু করল—প্রথমে লিভিং রুমে, তারপর ডাইনিং রুম আর কিচেনে। কোথাও কেউ নেই। ঘড়িতে বাজে সোয়া চারটা।

    লিভিং রুমে ফিরে এল ও। দক্ষিণের কাঁচের দেয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। নিচে ঘুমন্ত শহর। সুনসান রাস্তা। সমস্ত বাড়িঘরের আলো নিভে গেছে। মিটমিট করছে কেবল উঁচু উঁচু বিল্ডিঙের ছাতে লাগানো বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টেনার বাতি। সবচেয়ে উজ্জ্বল ঝলকানিটা ভেসে আসছে উইলিস টাওয়ারের ছাতে বসানো রেডিয়ো মাস্টের চূড়া থেকে। যেন ক্ষণকাল পর পর কালো অন্ধকারের বুক চিরে দিচ্ছে একটা চোখ ধাঁধানো ছুরি।

    চোখ ধাঁধানো… ভ্রূকুটি করল রানা… হ্যাঁ, চোখ ধাঁধানোই বটে। বাতিটা শিকাগোর বাকি সব রিঙ্কিং লাইটের চেয়ে অন্তত তিনগুণ উজ্জ্বল। মিটমিট করার ছন্দটাও ঠিক স্বাভাবিক নয়। নির্দিষ্ট বিরতিতে নয়, বরং এলোমেলোভাবে জ্বলছে-নিভছে ওটা।

    ঘাড় ফিরিয়ে কাউচের দিকে তাকাল রানা। যতবার জ্বলে উঠছে উইলিস টাওয়ারের বাতি, ততবারই আলোকিত হয়ে উঠছে কাউচটা। কাঁচ ভেদ করে লিভিং রুমের ভেতরে অনুপ্রবেশ করছে উজ্জ্বল আলো। সন্দেহ নেই, চোখের পাতায় ওই আলোর অত্যাচারেই ঘুম ভেঙেছে ওর।

    সোজা হয়ে আবার বাতিটার দিকে তাকাল রানা। লজিক বলছে, অর্থহীন একটা বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে ও; কিন্তু মন মানল না। বাতির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যেন ঘোরের ভেতর চলে গেল… বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল বাস্তবতা থেকে। হঠাৎ অনুভব করল, আলোটা দেখতে পাচ্ছে না আর। তার বদলে চোখের সামনে ভাসতে শুরু করেছে ইংরেজি বর্ণমালার বিভিন্ন অক্ষর। মোর্স কোডের সঙ্কেত দেখলে এমন প্রতিক্রিয়াই দেখা দেয় ওর ভেতর।

    এক মিনিট পেরুল। তারপরেই সচকিত হলো রানা। নিজের অজান্তেই বলে উঠল, ‘এ কী!’

    মনের ভুল নয়, সত্যি সত্যি মোর্স কোডে একটা মেসেজ ট্রান্সমিট করা হচ্ছে বাতিটার সাহায্যে। সোজাসাপ্টা মেসেজ নয়, সাঙ্কেতিক ভাষার মেসেজ। এই বিশেষ ভাষাটা রানা ও তার খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু ছাড়া কেউ জানে না!

    চঞ্চল হয়ে উঠল রানা। এবার সচেতনভাবে পড়তে শুরু করল মেসেজটা। ছোট্ট মেসেজ, বার বার প্রচার করা হচ্ছে। সেটা বাংলা করলে অনেকটা এ-রকম দাঁড়ায়:

    হ্যালো, রানা। আমি ববি। সিলভারফিন। লিয়ারির লোকদের সাহায্য করছি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্যে। তোমার সঙ্গের মেয়েটা জানে না, সে কে, বা তার ক্ষমতা কতখানি। ক্ষমতাটা মাইওরিডিঙে সীমাবদ্ধ নয়, তার চেয়ে অনেক বড়। আর ওটার সাহায্যে ইতিমধ্যেই সে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। মেয়েটির দুই সঙ্গিনী তাকে দিয়ে এ-কাজ করিয়েছে। আমি তার প্রমাণ দেখেছি। তুমি এখুনি ওদের কাছ থেকে পালাও, এবং উইলিস টাওয়ারের সিকিউরিটি অফিসে এসে লিয়ারির প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করো, অথবা ফোন করো— ০৬৫-৮৫০১৮৪। তোমার কোনও ক্ষতি করা হবে না। রিপিট। হ্যালো, রানা। আমি ববি। সিলভারফিন। লিয়ারির …

    থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল রানা। কোনও সন্দেহ নেই, মেসেজটা ওর প্রাণের বন্ধু ববি মুরল্যাণ্ড পাঠিয়েছে। মোর্স কোডের ভেতরে সাঙ্কেতিক ভাষা, আর কোডওয়ার্ড ‘সিলভারফিন’ তার প্রমাণ। তারপরেও ওটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে ওর। মনে হচ্ছে, ববিকে হয়তো বোকা বানানো হয়েছে, কিংবা বাধ্য করা হয়েছে মেসেজটা পাঠানোর জন্যে… যদিও জানে, মুরুল্যাণ্ডকে দুটোর কোনোটাই করা সম্ভব নয়। আর স্বেচ্ছায় মেসেজ না পাঠালে ওর বন্ধুটি কখনোই কোডওয়ার্ড ব্যবহার করত না।

    ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে শুরু করল রানা। মেসেজটা কি সত্যি হতে পারে? ডাইনিং টেবিলের আলোচনা মনে পড়ে গেল। এলিনা আর ভেরোনিকা তো বলেছেই, অ্যালি ওদের সবার চেয়ে আলাদা। তারমানে মাইওরিডিঙের বাইরে ক্ষমতা আছে ওর। কী সেই ক্ষমতা, সেটা বলেনি। দ্বিধা করেছে। সেটা কি এজন্যে যে, ক্ষমতাটা সত্যিই নিরীহ মানুষ হত্যার কাজে ব্যবহার করেছে অ্যালি? সেজন্যেই কি ওরা বলছিল, বললে বিশ্বাস করবে না মেয়েটা, বড় ধরনের ধাক্কা খাবে? নিজেরা যদি ওকে দিয়ে কাজটা করিয়ে থাকে, তা হলেও সবকিছু গোপন করার পেছনে একটা যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যালিও অবচেতন মন থেকে কোনও সঙ্কেত পেয়েছে নিশ্চয়ই। ঘুমাতে যাবার আগে কি সে-কারণেই মন্দ কাজের প্রসঙ্গ তুলেছিল? ভয় পাচ্ছিল সত্যটা জানতে?

    কিন্তু… কিন্তু ও তো একটা বাচ্চা মেয়ে! নিজ থেকে মানুষ খুন করবে কেন? মেসেজে এলিনা আর ভেরোনিকাকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হয়েছে, ওরাই অ্যালিকে দিয়ে মানুষ খুন করিয়েছিল। কীভাবে? কেন ওদের কথা শুনে খুনোখুনি করবে অ্যালি… তাও আবার দু-একজন নয়, বহু নিরীহ মানুষ?

    অনেকগুলো প্রশ্ন। আনমনে মাথা নাড়ল রানা। একটারও জবাব জানা নেই ওর। তবে একটা জিনিস জানে। তা হলো, অ্যালিকে ফেলে চলে যাওয়া সম্ভব নয় ওর পক্ষে। ববি মুরলাণ্ডের কথায় তো নয়ই, এমনকী বিসিআই চিফ মেজর জেনারেল (অবঃ) রাহাত খানও যদি এখন আদেশ দেন, সেটা পালন করতে পারবে না ও। তার আগে প্রমাণগুলো নিজ চোখে দেখতে হবে ওকে। নিশ্চিত হতে হবে, অ্যালির ব্যাপারে যা বলা হচ্ছে, তা সত্যি কি না। ফুটফুটে কিশোরীটি সত্যিই কোনও মানবরূপী দানবী কি না।

    কী করবে ভাবছে রানা। লিয়ারির কাছে যাবার প্রশ্নই ওঠে না। রানাকে হাতে পেলে কী করবে না-করবে, সেটা পরের কথা; কিন্তু অ্যালিকে দেখামাত্র খুন করবে সে। তা হলে? কী করা যায়?

    ভেবেচিন্তে একটাই পথ দেখতে পেল ও। মুঠোয় ধরা পিস্তলটা নেড়েচেড়ে নিল, তারপর নিঃশব্দে বেরিয়ে এল লিভিং রুম থেকে। হলঘর পেরিয়ে হাঁটতে শুরু করল অ্যালির রুমের দিকে।

    .

    ডায়নোসরের পুতুলটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে অ্যালি। যেন ইন্টারোগেট করছে ওটাকে… নাম বলাতে চাইছে। লাভ হলো না। প্রাণহীন পুতুলটা ড্যাবড্যাবে চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইল কেবল।

    ‘জাহান্নামে যাও,’ বিড়বিড় করল ও। চিৎ হয়ে শুল।

    জানালা ভেদ করে কামরার ভেতরে ঢুকছে শহরের অপর্যাপ্ত আলো। বিচিত্র সব ছায়া তৈরি করছে দেয়াল আর ছাতের গায়ে। ঘুম আসছে না। রানার অনুপস্থিতি অস্থির করে তুলছে ওকে। সারা রাতে অন্তত চারবার বিছানা ছেড়েছে ও, বালিশ-কম্বল হাতে নিয়ে রওনা হতে চেয়েছে লিভিং রুমের উদ্দেশে, যাতে রানার কাছাকাছি গিয়ে শুতে পারে, কিন্তু প্রতিবারই শেষ মুহূর্তে নিরস্ত করেছে নিজেকে। না, রানা কিছু মনে করবে বলে নয়… তেমন কোনও সম্ভাবনাই নেই… থেমে গেছে নিজের দুর্বলতা উপলব্ধি করে। একটা রাত যদি একাকী থাকতে না পারে, পরে কী হবে? রানা তো আর সারাজীবন পিতা বা বড় ভাইয়ের মত ওকে পাহারা দেবে না! তেমনটা আশা করাও অন্যায়।

    হাত বাড়িয়ে পুতুলটা আবার কাছে টেনে নিল অ্যালি, জড়িয়ে ধরল বুকের সঙ্গে। চোখ মুদল। তাকাবার প্রয়োজন বোধ করছে না, পুতুলটাকে স্পর্শ করে জাগাতে চাইছে স্মৃতি। পুতুলের গায়ে হাত বোলাল ও। অনুভূতিটা চেনা চেনা লাগছে। কী যেন নাম পুতুলটার…

    এক মুহূর্তের জন্য নামটা স্মৃতির সাগর থেকে ভেসে উঠল, কিন্তু ডুবে গেল পরক্ষণেই। একটুর জন্যে যেন ধরা পড়তে পড়তে পড়ল না।

    হতাশায় মাথা দোলাল অ্যালি। পুতুলের নামটা স্মৃতির সুতোর প্রথম গিঁঠ হতে পারত। একটা গিঁঠ খুলতে পারলে সুতো ধরে বাকি সব গিঁঠও খুলে যাবে বলে আশা করছে ও। স্মৃতিরা ঠেলাঠেলি করছে বেরিয়ে আসার জন্যে—পরিষ্কার অনুভব করতে পারছে। পুতুলটা জড়িয়ে ধরল আবার।

    এই তো, আবার আলোড়ন উঠছে স্মৃতির সাগরে। তলা থেকে উঠে আসছে নামটা। আবছাভাবে ওটার অবয়ব দেখতে পাচ্ছে অ্যালি। এখুনি পুরোটা দেখতে পাবে পরিষ্কার…

    আচমকা ছিঁড়ে গেল চিন্তার সুতো। সচেতন হয়ে উঠল ও। বাইরে উদয় হয়েছে কেউ। রানা! যেন ঝড় উঠেছে ওর মাথায়। কী নিয়ে যেন চিন্তিত…. উত্তেজিত। রানা যখন দরজা ঠেলে নিঃশব্দে কামরায় ঢুকল, তখন ওর দৃষ্টি বিস্ফারিত হয়ে গেছে।

    ‘অ্যালি?’ নরম সুরে ডাকল রানা।

    ‘না!’ ফিসফিসাল অ্যালি। ‘এসব কী ভাবছ তুমি! তোমার ধারণা, আমি একজন খুনি?’

    বিছানার কাছে চলে এল রানা। হাঁটু গেড়ে বসল। হাত রাখল ওর কাঁধে। বলল, ‘আমি মোটেই তেমন কিছু ভাবছি না। শুধু সম্ভাবনাটা খতিয়ে দেখছি। সেটাও ইচ্ছেকৃতভাবে নয়। একটা মিথ্যে কথা শুনলেও মানুষ অবচেতনভাবে ওটার কথা ভাবে।’

    ‘তুমি বিশ্বাস করো, আমি ওসব করতে পারি?’

    ‘এ-মুহূর্তে আমি কোনোকিছুই বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করছি না। আসল সত্যটা নিয়ে পরে মাথা ঘামানো যাবে। তার আগে এখান থেকে সরে যাওয়া প্রয়োজন। এখানে তুমি নিরাপদ নও।’

    দ্বিধা ফুটল অ্যালির চেহারায়।

    ‘অ্যালি, আমাকে তুমি চেনো… আমার মন তুমি পড়তে পারো। নিজেই বলো, কার কাছে নিরাপদে থাকবে তুমি? আমার কাছে, নাকি এলিনা আর ভেরোনিকার কাছে? ওদের মন পড়তে পারো না তুমি। তোমাকে নিয়ে ওরা কী প্ল্যান আঁটছে, তা জানার কোনও কায়দা নেই।’

    তাও দ্বিধা দূর হলো না অ্যালির মাঝ থেকে।

    ‘আমাকে তুমি বিশ্বাস করো, অ্যালি?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

    ‘করি,’ স্পষ্ট ভাষায় বলল মেয়েটা।

    ‘তা হলে বিশ্বাস করো আমার কথা। এক্ষুণি… এ-মুহূর্তে এখান থেকে চলে যেতে আমাদেরকে।’

    বড় করে শ্বাস ফেলল অ্যালি। মাথা ঝাঁকাল। তারপর নেমে পড়ল বিছানা থেকে। ওর হাত ধরে দরজার দিকে পা বাড়াল রানা। কিন্তু দু’পা না যেতেই বোঁ করে উঠল মাথা। দপ দপ করছে কপালের দু’পাশ… আবারও পাচ্ছে সেই শীতল স্পর্শ। থমকে দাঁড়াল ও। পিস্তল তুলল দরজা লক্ষ করে। সন্দেহ নেই, ওপাশে উদয় হয়েছে দুই মাইণ্ডরিডার।

    কয়েক সেকেণ্ড পরেই দরজা ভেদ করে শোনা গেল ভেরোনিকার কণ্ঠ

    ‘ওসব মিথ্যে, রানা। লিয়ারির কূটচাল বৈ আর কিছু নয়। তোমাকে ম্যানিপুলেট করে আমাদের নাগাল পেতে চাইছে। ভেবে দেখো!’

    ‘বুঝতে পারছি, তোমার মনে সন্দেহ ঢুকেছে,’ বলল এলিনা। ‘সেটাই স্বাভাবিক। যে-কেউই সন্দিহান হয়ে পড়বে তোমার পরিস্থিতিতে। আর সেজন্যেই চালটা দিয়েছে লিয়ারি।’

    ‘ফর গড’স্ সেক, রানা,’ চাপা গলায় বলে উঠল অ্যালি, ‘চলো, ওদের সঙ্গে কথা বলি। নিশ্চয়ই কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে…

    ‘এখুনি না,’ রানা ওকে থামাল। ‘আগে ব্যাপারটা বুঝে নিতে দাও আমাকে।’

    ‘…ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখো ব্যাপারটা,’ ওপাশ থেকে বলছে এলিনা। ‘অস্ত্রশস্ত্রের অভাব নেই আমাদের। তোমাকে যদি সরাবার ইচ্ছে থাকত, এতক্ষণ কি বসে থাকতাম? আরও আগেই কি খুন করে ফেলতাম না?’

    পয়েন্টটা নিয়ে ভাবল রানা। না, যুক্তিটা খুব সবল নয়। এতক্ষণ ওকে হুমকি হিসেবে গণ্য করেনি ওরা, তাই খুন করার প্রয়োজন দেখা দেয়নি। মাইওরিডিঙের কল্যাণে ও কখন কী ভাবছে, সব জানতে পারছে ওরা। রানা যদি হুমকি হয়ে ওঠে… এই যেমন এখন… তা হলে তো খুন করার সুযোগ থাকছেই। আগেভাগেই খামোকা হাত রাঙানো কেন?

    কথাগুলো গলা চড়িয়ে বলতে গেল রানা, পরমুহূর্তে থামল। তার প্রয়োজন নেই, ওরা ওর চিন্তাভাবনা তো শুনতে পাচ্ছেই।

    ‘রানা…’ ডাকল এলিনা। কণ্ঠ নরম, মায়াভরা। তবে ধোঁকা খেল না রানা। গলার সুরেই বুঝতে পারছে, এরা অন্য কোনও মতলব আঁটছে। দরজার দিক থেকে পিস্তল সরাল না ও। খোদা জানে ওপাশে ওরা কী বাগিয়ে ধরে আছে।

    একটা আইডিয়া মাথায় খেলল ওর। সেটা পুরোপুরি দানা বাঁধার আগেই বিদ্যুৎ বেগে নড়ল, যাতে ওরা রিঅ্যাক্ট করার সুযোগ না পায়। এক ধাক্কায় মেঝেতে ফেলে দিল অ্যালির ওয়ার্ডরোবটা, পরক্ষণে আরেক ধাক্কায় ওটাকে ঠেলে দিল সামনে। পিছলে দরজার পাল্লায় গিয়ে ঠেকল ওয়ার্ডরোব। ব্যস, এবার সহজে ভেতরে ঢুকতে পারবে না ওরা। বাইরে থেকে এলোপাতাড়ি গুলিও ছুঁড়তে পারবে না, কারণ ভেতরে অ্যালি আছে।

    ‘পাগলামি করছ তুমি, রানা!’ রাগী গলায় চেঁচিয়ে উঠল ভেরোনিকা।

    ‘প্রমাণ করো, তোমরা সত্যি কথা বলছ,’ পাল্টা জবাব দিল রানা। ‘অ্যালির ডায়েরিটা দাও আমাদের। দরজার তলা দিয়ে ওটা ঢুকিয়ে দাও ভেতরে। যদি দেখি, সত্যিই পাগলামি করেছি, হাজারবার ক্ষমা চাইব।’

    ক্ষণিকের নীরবতা। এরপর বাইরে থেকে ভেসে এল রাইফেল কক করার শব্দ। সব সন্দেহের অবসান ঘটল ওতেই।

    কেঁপে উঠল অ্যালি। রানাকে জড়িয়ে ধরল।

    ‘এসব সাময়িক ভুল-বোঝাবুঝি, অ্যালি,’ দরজার ওপাশ থেকে বলল ভেরোনিকা। কণ্ঠ থেকে মায়াদয়া উধাও হয়েছে। ‘সবকিছু যখন মনে পড়ে যাবে, তখন তুমি এ-ঘটনা নিয়ে হাসবে।’

    আচমকা নড়ে উঠল অ্যালি। ছোঁ মেরে রানার হাত থেকে কেড়ে নিল পিস্তলটা, দরজা তাক করে দ্রুত তিনবার গুলি করল। পাল্লা ভেদ করে বেরিয়ে গেল বুলেট। ওপাশে দড়াম করে পড়ল কেউ—ঝাঁপ দিয়েছে, কিংবা আছড়ে পড়েছে মেঝেতে। রাইফেল ছুটে গেছে হাত থেকে, খটখট আওয়াজ উঠল। শোনা গেল বিশ্রী গালাগাল।

    কপালের দু’পাশের দপদপানি একটু কমল রানার। অনুমান করল, নিরাপদ দূরত্বে পিছিয়ে গেছে মেয়েদুটো

    ‘সাহস থাকে তো গুলি করো তোমরাও!’ চেঁচাল অ্যালি। কিন্তু গুলি করল না ওরা।

    অ্যালির হাত থেকে পিস্তলটা নিল রানা। বলল, ‘বাপ রে, তুমি যে এত সাংঘাতিক মেয়ে, তা আগে বুঝিনি।’

    ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল অ্যালি। ফিসফিসিয়ে জানতে চাইল, ‘এখন আমরা কী করব?’

    কামরার ভেতরে নজর বোলাল রানা। দুটো দেয়াল নিরেট, আর কোনার দেয়ালদুটো কাঁচের। নিরেট দেয়াল ভেদ করে বেরুবার উপায় নেই, আর কাঁচের ওপারে শূন্যতা। অ্যাটাচড্ বাথরুম আছে, তবে সেটা কোনও কাজে আসছে না। পাগলাটে একটা আইডিয়া নিয়ে নাড়াচাড়া করল—বিছানার চাদর পাকিয়ে দড়ি বানানো যেতে পারে, সেই দড়িতে ঝুলে নিচের ফ্লোরে নেমে যাওয়া যায়। কাঁচ ভাঙার জন্য পিস্তলের গুলিই যথেষ্ট। কিন্তু তাতে আদৌ কাজ হবে কি? কাজে নামার আগেই প্ল্যানটা ওর মাথা থেকে জেনে নেবে দুই মাইণ্ডরিডার… এখুনি হয়তো জেনে গেছে। তারমানে, ওরা নিচে নামতে গেলেই লিফট বা সিঁড়ি ধরে ওখানে চলে যাবে ওরা, ওত পেতে বসে থাকবে।

    সমস্যা শুধু এই একটা প্ল্যানের বেলায় নয়, রানা যা-ই ফন্দি আঁটুক, সব জেনে যাবে ওরা। এখন উপায়?

    ‘আমি তো আছি,’ বলল অ্যালি। ‘আমার মাথা থেকে কিছু জানতে পারবে না ওরা।’

    ‘তোমার কোনও প্ল্যান আছে?’

    দ্বিধা করল অ্যালি। তারপর বলল, ‘হ্যাঁ।’

    .

    রানার চিন্তাধারা অনুসরণ করছে ভেরোনিকা। অ্যালির কথায় একটু যেন থমকে গেল বাঙালি যুবক। মেয়েটাকে বিশ্বাস করে ও, প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসে, কিন্তু তারপরেও কোনোকিছু না জেনে প্রস্তাবটায় সায় জানাতে দ্বিধা করছে। যেন বিমানের পাইলটের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে কোনও যাত্রী।

    তবে দ্বিধান্বিত অবস্থাটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। সৈনিকসুলভ লজিক খাটাতে শুরু করল রানার মগজ—দ্রুত, পরিষ্কার। এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল যে, চিন্তার ট্রেনটাকে ঠিকমত ধরতেই পারল না ভেরোনিকা। শুধু বুঝল, নিজের প্ল্যান খাটানোর কোনও উপায় নেই বলে অ্যালির প্ল্যান মেনে নিচ্ছে রানা, সেটা যা-ই হোক না কেন। কোনও কৌতূহলও দেখাল না প্ল্যানটা জানার। সংক্ষেপে অ্যালিকে কাজে নামতে বলল।

    ভেরোনিকার পাশে অন্ধকারে উপুড় হয়ে আছে এলিনা, সে গাল দিয়ে উঠল, ‘শিট!’

    ওর গলায় শঙ্কা আর ভয়ের ছাপ। একই অবস্থা ভেরোনিকারও। অ্যালির প্ল্যান জানে না রানা, কাজেই ওদেরও তা জানার উপায় নেই। অনুমান করতে হবে। নতুন একটা অভিজ্ঞতা। শেষ কবে কারও মনের খবর জানতে পারেনি ওরা, তা স্মরণ নেই। এক হিসেবে, অনুমান করতেই ভুলে গেছে ওরা। আক্রান্ত হয়েছে অনিশ্চয়তায়।

    এলিনার দিকে তাকাল ভেরোনিকা। ‘এভাবে পড়ে থাকার কোনও মানে হয় না। ওপর আর নিচতলার লোকে নিশ্চয়ই গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। সিকিউরিটিকে খবর দেবে ওরা। এলিভেটর দিয়ে নামতে পারব না আমরা।’

    মাথা ঝাঁকাল এলিনা। ‘আমি প্যারাশুট নিয়ে আসছি।’

    ‘আমার জন্যে ট্যাণ্ডেম হারনেস এনো।’

    উঠে পড়ল এলিনা। ছুটে গেল নিজের রুমের দিকে।

    .

    অ্যাটাচড্ বাথরুমে ঢুকেছে অ্যালি। দোরগোড়ায় একটু থামল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল রানার দিকে। হাঁটু গেড়ে পজিশন নিয়েছে ও, পিস্তল হাতে কাভার করছে কামরার দরজা। কৃতজ্ঞ বোধ করল অ্যালি, প্রিয় এই মানুষটা ওর ওপর আস্থা রাখছে বলে। সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পারবে তো ও?

    রিডিং ডেস্কের ওপর থেকে কর্ডলেস ফোনটা তুলে নিল অ্যালি, ঢুকে পড়ল বাথরুমে। দরজা বন্ধ করে দিল। নৈঃশব্দ্যের মাঝে মন দিল রানার চিন্তায়। উইলিস টাওয়ারের বাতি থেকে পাওয়া মেসেজটা এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে ওখানে।

    উইলিস টাওয়ারের সিকিউরিটি অফিসে এসে লিয়ারির প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করো, অথবা ফোন করো— ০৬৫- ৮৫০১৮৪… তোমার কোনও ক্ষতি করা হবে না…

    রানার কোনও ক্ষতি করা হবে না, কিন্তু ওর কী হবে? ওকে কি দেখামাত্র গুলি করবে না ওরা? যা হবার হোক, পরোয়া করছে না অ্যালি। রানাকে বাঁচানোই সবচেয়ে বড় কথা।

    বেসিনের ওপরে লাগানো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাল ও। করুণ হাসি হাসল। বিড়বিড় করল, ‘তোমার সময় শেষ।’

    কর্ডলেসের টক বাটন চাপল ও। তারপর ডায়াল করল উইলিস টাওয়ারের নাম্বারটায়। একটা রিং হতেই কলটা রিসিভ করা হলো। কথা বলল না অ্যালি, লাইন খোলা রেখে ফোনটা নামিয়ে রাখল কাউন্টারের ওপর। তারপর বেরিয়ে এল বাথরুম থেকে। রানার পাশে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল।

    ঘড়ি দেখল রানা। বড়জোর দু’মিনিট পেরিয়েছে। এই অল্প সময়ে মেয়েটা কী কৌশল খাটিয়েছে, ভেবে পেল না। শুধু জিজ্ঞেস করল, ‘কাজ শেষ?’

    ‘হুঁ। খুব শীঘ্রি তার ফল দেখতে পারে, ঠাণ্ডা গলায় বলল অ্যালি।

    রানার মনে হলো, কবরস্তানের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতল হাওয়ার পরশ পেল গায়ে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরিং – কোজি সুজুকি
    Next Article সাবাস অয়ন! সাবাস জিমি!! – ইসমাইল আরমান

    Related Articles

    ইসমাইল আরমান

    দ্য সি-হক – রাফায়েল সাবাতিনি

    July 11, 2025
    ইসমাইল আরমান

    সাবাস অয়ন! সাবাস জিমি!! – ইসমাইল আরমান

    July 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.