Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৫৯ – অন্তর্যামী

    ইসমাইল আরমান এক পাতা গল্প358 Mins Read0

    অন্তর্যামী – ৩০

    ত্রিশ

    বিল্ডিঙের ছাতে নামা টিমটাই সবার আগে রানার কাছে পৌঁছুল। বিমের পাশের অফিসটায় ঢুকল ওরা, কাঁচ ভেঙে রানাকে টেনে নিল ভেতরে। হাত-পা বেঁধে ফেলা হলো ওর। উদ্ধার হবার ফাঁকে লোকগুলোর অস্ত্র দেখে নিল রানা। নাইন মিলিমিটার বেরেটা রয়েছে সবার কাছে, কোমরের হোলস্টারে খাপবদ্ধ অবস্থায়। কাঁধে ঝুলছে ট্র্যাঙ্কুইলাইযার রাইফেল। খটকা লাগল রানার। হেলিকপ্টারের স্নাইপারের হাতেও একই ধরনের রাইফেল দেখেছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে কি ওদেরকে খুন করতে চাইছিল না ওরা?

    বিল্ডিং থেকে বের করে একটা গাড়িতে তোলা হলো রানাকে। একটা শব্দ করল না ও, লোকগুলোও আগ বাড়িয়ে কোনও কথা বলল না ওর সঙ্গে। মিশিগান অ্যাভিনিউ ধরে উইলিস টাওয়ারে ওকে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ভেবেছিল, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটল না। উত্তরে রওনা হলো গাড়ি, কয়েক মিনিট পর পশ্চিমে মোড় নিয়ে উঠে এল ইন্টারস্টেট-নাইন্টি ফোরে। শহরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলল উত্তর-পশ্চিমে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ও’হেয়ার এয়ারপোর্টের আভা।

    হঠাৎ ঘাড়ের কাছে একটা সুঁইয়ের খোঁচা অনুভব করল রানা। জ্ঞান হারাল সঙ্গে সঙ্গে।

    .

    কানের কাছে তুড়ির শব্দ। ধীরে ধীরে চোখ মেলল রানা।

    অচেনা একটা কণ্ঠ বলল, ‘চোখ পিটপিট করুন।’

    করল রানা। এবার কন্ঠের মালিককে দেখতে পেল। অ্যাপ্রন পরা একজন মানুষ… ঝুঁকে আছে ওর ওপর। সম্ভবত ডাক্তার।

    ‘সামনের দাঁতের পেছনে জিভের ডগা ঠেকান, নিৰ্দেশ দিল লোকটা।

    ঠেকাল রানা।

    ‘চোখে ঝাপসা দেখছেন?’

    মাথা নাড়ল রানা।

    ‘লাইটের আলোয় কি চোখ ব্যথা করছে?’

    আবারও মাথা নাড়ল রানা। দেখে নিল আশপাশ। বড়- সড় একটা প্রাইভেট জেটের কেবিনে বসে আছে ও। শোনা যাচ্ছে টার্বোফ্যানের গুঞ্জন। হ্যাঙার থেকে ধীরে ধীরে বেরুচ্ছে বিমানটা। পোর্টহোল দিয়ে শেষরাতের আবছা আলোয় বিশাল এয়ারপোর্টের কাঠামোও দেখা গেল।

    রানার হাত-পা এখনও বাঁধা। শুধু তাই নয়, চওড়া একটা স্ট্র্যাপ দিয়ে সিটের সঙ্গে ওর ঊর্ধ্বাঙ্গও বেঁধে রাখা হয়েছে। আইলের ওপাশে, সামনে আর পেছনে বসে আছে বেশ কয়েকজন পাহারাদার—হাতে ডার্ট গান, সতর্ক নজর রাখছে ওর ওপর।

    ‘মাথা তুলে ওভারহেড লাইটের দিকে তাকান,’ বলল ডাক্তার। ‘এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনুন।’

    গুনল রানা। লাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেলেও মুখ নামাল না। নামাল ডাক্তারের ইশারা পাবার পর’।

    ‘কোনও কংকাশন নেই,’ পাহারাদারদের একজনের উদ্দেশে বলল ডাক্তার। ‘ছোটখাট কিছু আঘাত বাদ দিলে উনি সম্পূর্ণ সুস্থ।’

    মাথা ঝাঁকাল লোকটা। পকেট থেকে একটা সেলফোন বের করে ডায়াল করল। কল রিসিভ করা হলে বলল, ‘আমরা টেকঅফের জন্যে তৈরি, স্যর।’

    কয়েক সেকেণ্ডের নীরবতা। ওপাশ থেকে কী যেন বলা হচ্ছে।

    মাথা ঝাঁকাল পাহারাদার। ‘ওকে, স্যর। ওখানে পৌঁছে আপনি ওকে তৈরি অবস্থায় পাবেন।’

    .

    সংক্ষিপ্ত ফ্লাইট শেষে ওয়াশিংটন ডি.সি.-র কাছে, অ্যান্ড্রুজ এয়ারফোর্স বেসে ল্যাণ্ড করল জেট। ট্যাক্সিইং করে রানওয়ে থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা একতলা বিল্ডিঙের সামনের টারমাকে থামল। পায়ের বাঁধন খুলে দেয়া হলো রানার, বিমান থেকে নামিয়ে হাঁটিয়ে ঢোকানো হলো বিল্ডিঙে। লম্বা করিডোর পেরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো একটা বড় অফিস রুমে। বড় একটা ডেস্ক টেবিল, কয়েকটা চেয়ার আর এক সেট সোফা রয়েছে কামরায়।

    সোফায় বসানো হলো রানাকে। পা বেঁধে ফেলা হলো আবার। প্রহরীদের লিডার বলল, ‘চাইলে ঘুমিয়ে নিতে পারো।’

    প্রস্তাবটা মন্দ নয়। এ-মুহূর্তে করার কিছু নেই, তারচেয়ে বিশ্রাম নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করা যাক। পরে কাজে লাগতে পারে। সোফায় পা তুলে শুয়ে পড়ল রানা। চোখ মুদল।

    ওর পাহারায় দু’জনকে রেখে বাকি প্রহরীরা বেরিয়ে গেল কামরা থেকে।

    .

    করিডোরে পদশব্দ। ঝট করে চোখ মেলল রানা। দেখল, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে দুই পাহারাদার। ক্ষণকাল পরেই দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল একজন মানুষ। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, সুঠাম দেহ। খাকি স্ল্যাকস্ আর সাদা অক্সফোর্ড শার্টের ওপর কালো উইণ্ডব্রেকার পরেছে। হাবভাবে সামরিক কেতা… তবে এ-ও বোঝা যায়, সে-জীবনটা পেছনে ফেলে এসেছে বহুদিন আগে, এখন ভিন্ন কোনোকিছুর সঙ্গে জড়িত।

    উঠে বসল রানা। প্রশ্নের সুরে বলল, ‘অ্যালেক্স লিয়ারি?’

    মাথা ঝাঁকাল লোকটা। তার পিছু পিছু কামরায় ঢুকল জনা ছয়েক লোক। হাতে ল্যাপটপ-সহ নানা ধরনের ইকুইপমেন্ট। ডেস্কের ওপর সেগুলো সেটআপে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

    সবার শেষে যে-মানুষটা ঢুকল, তাকে দেখে চমকে উঠল রানা।

    ‘ববি!’

    ভুল দেখছে না রানা, সত্যিই ববি মুরল্যাণ্ড ঢুকেছে কামরায়। ছোটখাট মানুষ সে, বেঁটেই বলা যায়, তবে সৃষ্টিকর্তা উচ্চতার ঘাটতি পুরো করে দিয়েছেন শরীরভর্তি পেশি আর অমানুষিক শক্তি দিয়ে। মুখটা প্রায় গোল, কালো কোঁকড়া চুল ঘিরে রেখেছে; যখন হাসছে না তখনও ঠোঁটের কোণ সামান্য বাঁকা হয়ে থাকে, যেন দুনিয়ার সমস্ত ব্যাপারেই . কৌতুক বোধ না করে পারে না সে। নাকটা এমন খাড়া, দেখে মনে হয় তার পূর্বপুরুষেরা রোমান ছিলেন। নুমায় একসঙ্গে কাজ করার সূত্রে পরিচয় হয়েছিল, কিন্তু এখন পৃথিবীতে রানা তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন, আর বন্ধুর জন্য পারে না এমন কোনও কাজ তার অভিধানে নেই। রানাকে দেখে উজ্জ্বল হলো তার চেহারা, প্রায় ছুটে এসে জাপটে ধরল। ‘হাই, দোস্ত!’

    বহুদিন পর দেখা হয়েছে দু’জনের, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু হাঁসফাঁস করে উঠল রানা। গায়ে প্রচণ্ড শক্তি মুরল্যাণ্ডের, লম্বা ও চওড়ায় ছোটখাট একটা ভল্লুকের সঙ্গে শতকরা আটানব্বই ভাগ মিল রয়েছে তার। উত্তেজনায় এত জোরে রানাকে চাপ দিচ্ছে যে মনে হলো, হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে যাবে এখুনি।

    ‘আরে… ছাড়ো, ছাড়ো! মেরেই ফেলবে নাকি!’

    ‘আমি মারব কী, তুমি তো এমনিতেই মরতে বসেছিলে।’ রানাকে মুক্তি দিল মুরল্যাণ্ড। ভ্রূকুটি করে রানার কালশিরে পড়া চেহারাটা দেখল। স্বভাবসুলভ কৌতুকের স্বরে বলল, ‘তুমি আর বদলালে না। একটা না একটা ঝামেলায় জড়াবেই! শেষ কবে তোমাকে সুস্থ আর অক্ষত অবস্থায় দেখেছি, মনে পড়ে না। ‘

    ‘এখন সুস্থ অবস্থাতেই দেখছ,’ বলল রানা। বাঁকা চোখে তাকাল লিয়ারির দিকে। ‘বিমানে ওঠার পর ডাক্তার এসে চেকআপ করেছে আমার।’

    ‘এঁদের দয়ার শরীর, বাঁকা সুরে বলল মুরল্যাণ্ড।

    ‘কিন্তু তুমি এখানে কেন, ববি? এদের সঙ্গে কেন?’

    ‘সবই জানবে। তার আগে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।’

    ‘কী কাজ?’

    ‘সব খুলে বলো আমাদের। গত তিনদিনের সব ঘটনা—শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কিচ্ছু বাদ দিয়ো না। তোমারটুকু শোনার পর আমাদের অংশটা বলব। তা হলেই বুঝবে, ব্যাপারটা কতখানি সিরিয়াস।’

    মুরল্যাণ্ডের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে রানা, গোপন কোনও সঙ্কেত দিলে যাতে বুঝতে পারে। লিয়ারির মত লোকের পক্ষ হয়ে ও কাজ করবে, ভাবা যায় না। হয়তো * বাধ্য করা হচ্ছে ওকে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনও সঙ্কেত দিল না মুরল্যাণ্ড। ভণিতা নেই হাবভাবে। সিরিয়াসলিই রানাকে সব খুলে বলতে বলছে। অগত্যা কাঁধ ঝাঁকাল রানা, বসে পড়ল সোফায়।

    ‘এগুলো খুলে দেয়া যায় না?’ রানার হাত-পায়ের বাঁধনের দিকে ইশারা করল মুরল্যাণ্ড। ‘কথা দিচ্ছি, পাশের হ্যাঙারে ঢুকে ও এয়ারফোর্স ওয়ান চুরি করে পালাবে না।’

    প্রহরীকে ইঙ্গিত করল লিয়ারি। এগিয়ে এসে রানার বাঁধন খুলে দিল লোকটা।

    .

    তিনদিনের বিশদ বর্ণনা দিতে এক ঘণ্টা নিল রানা। বারবারা হোল্ডেনের নাম উহ্য রাখল ও; তাঁকে আইডেন্টিফাই করা যেতে পারে, এমন সব তথ্যও চেপে গেল; এ ছাড়া লুকাল না কিছুই। কথা বলার ফাঁকে তুলা আর অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ওর মুখ-হাতের কাটাছেঁড়ার পরিচর্যা করে দিল মুরল্যাণ্ড।

    রানার কথা শেষ হলে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল লিয়ারি। হাবভাবে মনে হলো, নিজের চিন্তাগুলো গুছিয়ে নিতে চাইছে।

    ‘আপনার লোকেরা শিকাগোয় ট্র্যাঙ্কুইলাইযার গান ব্যবহার করছিল কেন?’ জানতে চাইল রানা। ‘এর আগ পর্যন্ত আপনারা তো অ্যালিকে খুন করতে চেয়েছেন।’

    ‘আপনাকেও, মি. রানা,’ বলল লিয়ারি। বলার ভঙ্গিতে ক্ষমাপ্রার্থনার কোনও সুর বাজল না।

    কয়েক মুহূর্ত পর নড়েচড়ে বসল লোকটা। বলল, ‘বেশ, এবার তা হলে গোড়া থেকে সব খুলে বলছি আপনাকে, মি. রানা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে হলে সবকিছু জানা থাকা ভাল। মি. মুরল্যাণ্ডও গোঁ ধরেছেন, আপনাকে সব জানাতে ‘হবে।’

    পাশ থেকে সায় জানাল মুরল্যাণ্ড।

    ‘প্রথমে নিজের পরিচয় জানাই,’ বলল লিয়ারি। ‘ফিল্ডিং- গেলার নামে একটা ডিফেন্স কন্ট্রাক্টর কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আমি। আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো সাদার্ন অ্যাসোশিয়েটস্ নামে একটা কোম্পানি, জিনেটিক রিসার্চে তারা বহুদিন থেকে আমাদের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে আছে। দু’মাস আগে অ্যালিসন মিচেল … মানে, অ্যালিকে কাস্টডিতে নিই আমি, কারণ বহু বছর আগেকার যে-মিলিটারি রিসার্চের ওপর ভিত্তি করে আমরা ও সাদার্ন অ্যাসোশিয়েটস্ কাজ করছি, অ্যালি ছিল তারই ফসল… গবেষণার জন্যে খুব মূল্যবান এক সাবজেক্ট। শুধু মানুষ হিসেবে নয়, ও যা যা জানে, তাও আমাদের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। অ্যালি আর ওর দুই সঙ্গিনী… ওদের সঙ্গে তো দেখা হয়েছে আপনার… বহুদিন থেকে নজর রাখছিল আমাদের দুই কোম্পানির ওপর; আমরা কী করছি না করছি, তা জেনে নিচ্ছিল। মাইণ্ডরিডারদের জন্যে সেটা কোনও কঠিন কাজ নয়, তা ছাড়া যৌক্তিক কারণও ছিল এর পেছনে। ওরা জানতে চাইছিল, আমরা এমন কিছু আবিষ্কার করে বসছি কি না, যা ওদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। যা হোক, এ-কারণেই অ্যালিকে ধরে ইন্টারোগেশন শুরু করলাম আমরা—নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরে, সেই সঙ্গে সাদার্ন অ্যাসোশিয়েটসের হাঁড়ির খবর জানার পর। বলা, বাহুল্য, ড্রাগ-ইনডিউসড্ স্লিপ ইন্টারোগেশনের ফলে কিছুই গোপন করার উপায় রইল না মেয়েটার, গড়গড় করে পেট থেকে সব তথ্য উগরে দিল। আর সেখান থেকে সাদার্নের রিসার্চ সম্পর্কে নতুন একটা ব্যাপার জানতে পারলাম। না, আমি অ্যান্টেনা সাইট, বা ওগুলো যে-কাজে ব্যবহার হচ্ছে, তার কথা বলছি না। সম্পূর্ণ নতুন একটা ব্যাপার।’

    ‘এমন কিছু, যেটা আপনাদের ভয় পাইয়ে দিল,’ শান্ত গলায় বলল রানা।

    ‘ঠিক,’ মাথা ঝাঁকাল লিয়ারি। ‘কেন সেটা ভয়ের, তা শীঘ্রি বুঝতে পারবেন। কেন অ্যালিকে তার বান্ধবীরা ওটা খুলে বলেনি… তাও। এর সঙ্গে ওর অতীতের সম্পর্ক আছে। এই নতুন জিনিসটার পেছনে যারা রয়েছে, তারাও ভয় পাচ্ছে অ্যালি জীবিত থাকা অবস্থায় ওটা কাজে লাগাতে। তাদের ধারণা, অ্যালির পক্ষে ওটায় বাধা সৃষ্টি করা সম্ভব। আমিও তা-ই মনে করি। আর এ-কারণেই সরকারের উঁচু মহল থেকে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়, মেয়েটাকে হত্যা করতে হবে। আমি যে খুব আগ্রহ নিয়ে কাজটা করতে চেয়েছি, এমন নয়। আমার আসলে এখানে বলার কিছু ছিল না।’

    স্রেফ আদেশ পালন করেছেন, এই তো?’ বাঁকা সুরে বলল রানা। ‘অজুহাতটা মন্দ নয়।

    পাশ থেকে হেসে উঠল মুরল্যাণ্ড।

    লিয়ারি কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাল না। বলল, ‘যা খুশি ভাবতে পারেন, আমি সেটা গোনায় ধরছি না। যা হোক, বন্দি অবস্থায় অ্যালিকে খুন করতে ব্যর্থ হলাম আমরা। ও পালাল। আশ্রয় নিল আপনার কাছে। আপনি আমাদেরকে রীতিমত ঘোল খাইয়ে উধাও হয়ে গেলেন এল্ সেডেরো থেকে। উপায়ান্তর না দেখে হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটির হেডের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম আমি, তাকে ছাড়া আপনাদেরকে খুঁজে বের করা সম্ভব ছিল না আমার পক্ষে। আমি ভেবেছিলাম, সবকিছু খুলে বললে সে আমাদের দিকটা বুঝবে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। দিয়েওছিল। কিন্তু খুব বেশি সময়ের জন্যে নয়।’

    ‘মানে?’ ভ্রূকুটি করল রানা।

    এবার মুখ খুলল মুরল্যাণ্ড। ‘হোমল্যাণ্ডের ওই ভদ্রলোকের নাম আলবার্ট ফুলার-বিবেক-বুদ্ধি এখনও কিছুটা অবশিষ্ট আছে তাঁর। মি. লিয়ারির কথায় তোমার বিরুদ্ধে ম্যানহান্ট চালু করলেন ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে খোঁজখবর নিলেন তোমার সম্পর্কে। যখনই জানলেন, তুমি নুমার অনারারি প্রজেক্ট ডিরেক্টর, বিপদে-আপদে বহুবার সাহায্য করেছ আমেরিকাকে, সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করলেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন আর আমার সঙ্গে। আমরা তখন তোমার বস, মেজর জেনারেল রাহাত খানকে ব্যাপারটা জানালাম। তিনি কয়েকটা পরামর্শ দিলেন। সেই মোতাবেক খুঁজে বের করলাম ডা. টিফানি ক্যানট্রেলকে। সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করলাম, এভাবে ব্যাপারটা চলতে দেয়া যায় না। তখন মি. লিয়ারির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো, তাকে একটা হুমকি দিলাম আমরা। এসব গত পরশু রাতের কথা।’

    যে-রাতে ডা. ক্যানট্রেলের ওপর আড়ি পাততে গিয়েছিল ও আর অ্যালি, মনে মনে ভাবল রানা। টিফানিকে লিয়ারির কাছে ফোন করতে শুনেছিল অ্যালি। কেন, তার ব্যাখ্যা মিলছে এবার।

    এর সঙ্গে ডা. ক্যানট্রেল কীভাবে জড়িত?’ জানতে চাইল রানা।

    ‘সেটা খানিক পর তার মুখ থেকেই জানতে পারবেন,’ গম্ভীর গলায় বলল লিয়ারি।

    ‘হুম। তা… কী হুমকি দেয়া হয়েছে আপনাকে?’

    ‘সবকিছু ফাঁস করে দেবার,’ মুরল্যাণ্ড বলল। ‘যা কিছু ঘটেছে, তার জন্যে মি. লিয়ারি ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্ম দায়ী। এর জন্যে তোমাকে বলির পাঁঠা বানানো চলে না। তাই ওঁকে প্রস্তাব দেয়া হলো, খুনোখুনি থামিয়ে বিকল্প কোনও সমাধান বের করতে হবে এই সমস্যার। কী করা যেতে পারে, সে- বিষয়ে মেজর জেনারেল রাহাত আর অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন আলোচনা করে একটা আইডিয়া দিয়েছেন। আমি তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছি।’

    ‘আপনি সে-আইডিয়া মেনে নিয়েছেন?’ লিয়ারিকে জিজ্ঞেস করল রানা।

    ‘সত্যি বলতে কী, বিশাল যে সমস্যা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি, সেটার সবচেয়ে ভাল সমাধান এটাই,’ লিয়ারি বলল। তার লোকদের কাজ শেষ হয়েছে—ডেস্কের ওপর কম্পিউটার আর একটা ডিজিটাল প্রজেক্টর বসিয়েছে তারা। উঠে গিয়ে প্রজেক্টরটা অন করল সে। দেয়ালের গায়ে ফুটে উঠল একটা স্লাইড। তাতে লেখা: ফোর্ট ডেট্রিক। তলায় বারো বছর আগেকার একটা তারিখ।

    রানার দিকে ফিরল লিয়ারি। ‘অ্যালি সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে আপনার, মি. রানা। বিশেষ করে আপনার বন্ধুরা যা করতে চাইছেন, সেটার জন্যে ওর ব্যাপারে পরিষ্কার জ্ঞান থাকা প্রয়োজন আপনার।

    একটু থামল সে। কথা গুছিয়ে নিল। এরপর শুরু করল বলতে, ‘অ্যালি হলো… রিসার্চের ভাষায় যাকে বলে… একটা নকআউট। সহজ করে বলতে গেলে, অপ্রত্যাশিত একটা ফলাফল। এই রিসার্চটার গোড়া লুকিয়ে আছে বহু আগে, সেই নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। ফোর্ট ডেট্রিকের বায়ো- ওয়ারফেয়ার ল্যাবে বানর দিয়ে সূচনা হয়েছিল এর। প্রাণীগুলোর ওপর সেন্সরি ডিপ্রাইভেশন টেস্ট চালানো হয়েছিল—বন্দি করে রাখা হয়েছিল এমন সব প্রকোষ্ঠে, যেখানে শব্দ, আলো, গন্ধ… কোনোকিছুরই প্রবেশাধিকার নেই। ফুলপ্রুফ সেল আর কী। কিছুদিন পর ল্যাব ওঅর্কাররা দেখল, সবকিছু বন্ধ রাখার পরেও বানরগুলোর মাঝে অদৃশ্য এক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটা সেলের বানর যদি উত্তেজিত হয়ে ওঠে, তা হলে পাশের সেলের বানরটাও উত্তেজিত হয়ে উঠছে। অথচ তা হবার কোনও কারণ নেই। শতকরা পাঁচ ভাগ ক্ষেত্রে ঘটছিল এমন ঘটনা।’

    কম্পিউটারের পাশ থেকে সরে এল লিয়ারি। ‘আপনি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন, কী ঘটছিল ওখানে। তবে সে-আমলের বিজ্ঞানীরা জানতেন না। জানতে পারলেন, পাঁচ- ছয় বছর পরে… যখন জিনোম সিকোয়েন্সিং সহজ হয়ে উঠল। বানরের জিন বিশ্লেষণ করে তাঁরা আবিষ্কার করলেন, যে-বানরগুলো পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল, কারণ, তাদের দেহে একটা রিশেষ জিন প্রাকৃতিকভাবে অনুপস্থিত। জিনটার নাম এনপি-২০। এই জিনটা দেহের কিছু প্রাচীন জিনকে অবদমিত অবস্থায় রাখে। আমাদের বিশ্বাস, ওই জিনগুলো প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রাণীকে পরস্পরের আলফা ওয়েভ, বা ব্রেইন অ্যাক্টিভিটি পড়ার ক্ষমতা দিত।’

    ‘ঠিক যেভাবে ইইজি মেশিন ব্রেইন ওয়েভ পড়তে পারে?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

    ‘এগজ্যাক্টলি,’ সায় জানাল

    জানাল লিয়ারি। ‘বিজ্ঞানীরা দেখলেন, কোনও বানর যদি এনপি-২০ জিন ছাড়া জন্মগ্রহণ করে, কিংবা কৃত্রিমভাবে ওই জিন অচল করে দেয়া যায়, তা হলে পুরনো জিনগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে ব্রেইনের সিনাপটিক প্যাটার্ন বদলে যায়, এমন সব কাঠামো তৈরি হয় যা ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের মত কাজ করতে পারে। এ- কারণেই সব ইন্দ্রিয় বন্ধ করে দেবার পরেও পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে ওরা। আমাদের এখনকার রিসার্চের মূলমন্ত্র এল ওখান থেকেই। ইউ সি, এনপি-২০ জিনটা শুধু বানর নয়, উঁচু সারির সব প্রাইমেটের মধ্যেই আছে। মানে, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, মানুষ… সবার মধ্যে। পার্থক্য হলো যে, মানবশরীরে এনপি-২০ এর পাশাপাশি আরও তিনটে জিন আছে, যেগুলো ওটার মত প্রাচীন জিনগুলোকে দমিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন করে। ব্যাপারটা অনেকটা বন্দুকে বাড়তি সেফটি ক্যাচ লাগানোর মত আর কী। কিছুতেই যাতে গুলি বেরিয়ে না যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে, প্রকৃতি মনেপ্রাণে চেয়েছে, আমরা যেন কিছুতেই একে-অন্যের চিন্তা পড়তে না পারি।’

    ‘কিন্তু কেন?’ পুরনো প্রশ্নটা আবার তুলল রানা। ‘প্রকৃতি কেন এমন একটা ক্ষমতা কেড়ে নিল আমাদের কাছ থেকে?’

    ‘এর উত্তর শুধু প্রকৃতিই দিতে পারে,’ লিয়ারি বলল। ‘তবে আমরা কিছুটা অনুমান করতে পারি। ওই ক্ষমতা দিয়ে ভালর চেয়ে মন্দ হচ্ছিল বেশি, তাই কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, লক্ষ-কোটি বছর আগে… আধুনিক প্রাইমেটদের পূর্বপুরুষদের মাঝে আলফা ওয়েভ রিড করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল। ওটা ছিল এক ধরনের ডিফেন্সিভ মেকানিজম—প্রাগৈতিহাসিক আমলের শিকারি পশুদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে আদিম একটা অ্যালার্ম সিস্টেম, যেটার মাধ্যমে কেউ একজন বিপদের আভাস পেলে দলের সবাইকে নিঃশব্দে সতর্ক করে দিতে পারত। কিন্তু বিবর্তনের ফলে প্রাইমেটরা যত উন্নত হলো, ওটার মন্দ দিক দেখা দিতে শুরু করল। আদিম প্রাণীদের জীবন ছিল নিম্নস্তরের—খাওয়াদাওয়া আর বেঁচে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আধুনিক বানরের কথাই ধরুন। পশু হলেও এদের মধ্যে রয়েছে সামাজিক বন্ধন, দীর্ঘমেয়াদি স্মরণশক্তি, বন্ধুত্ব-শত্রুতা, আনন্দ-বিষাদ- ঘৃণাসহ নানা ধরনের আবেগ। আবেগপূর্ণ একটা প্রাণীর জন্যে মাইওরিডিঙের ক্ষমতা মোটেই ভাল নয়। কথাটা মানুষের বেলায় আরও বেশি প্রযোজ্য, কারণ আমরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর… অপরের আচরণে আমরা প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত হই। আর আমাদের রয়েছে প্রতিশোধস্পৃহা। কাজেই অন্যেরা আমার সম্পর্কে কী ভাবছে, সেটা না জানাই ভাল। নইলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ।’ ক্লিষ্ট দেখাল লিয়ারির মুখ। ‘অ্যালি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’

    ‘কীসের কথা বলছেন আপনি?’ প্রশ্ন করল রানা।

    ‘একটু ধৈর্য ধরুন। আগে অ্যালির বৈশিষ্ট্যটা জানাই আপনাকে—কেন সে এলিনা, ভেরোনিকা বা ফোর্ট ডেট্রিকের যে-কোনও টেস্ট সাবজেক্টের চেয়ে আলাদা।’ হেঁয়ালি ফুটল লিয়ারির কণ্ঠে। ‘আপনি কিন্তু ওটার কথা জানেন। খানিক আগে যা যা বললেন, তাতে মনে হচ্ছে ওটা আপনি স্বচক্ষে দেখতেও পেয়েছেন।

    ‘কী দেখেছি?’ রানা বিভ্রান্ত। ‘কখন দেখেছি?’

    ‘ফ্রেজনো থেকে বের হবার সময়ে, বলল লিয়ারি। ‘আপনিই তো বললেন, অ্যালিকে নিয়ে আপনি একটা গাড়ির ট্রাঙ্কে লুকিয়েছিলেন। একজন পুলিশ অফিসার ওটা চেক করতে চাইছিল। রীতিমত জোরাজুরি করছিল সে। কিন্তু আচমকা মত পাল্টে সে আপনাদের গাড়িটাকে ছেড়ে দেয়, তাই না?’

    ‘আচরণটা ঠিক স্বাভাবিক মনে হয়নি আমার কাছে,’ রানা স্বীকার করল। ‘কিন্তু এর সঙ্গে অ্যালির কী সম্পর্ক?’

    ‘পুরোটাই,’ অর্থপূর্ণ স্বরে বলল লিয়ারি।

    ‘মানে?’

    ‘অ্যালি মাইণ্ড কন্ট্রোল করতে পারে, রানা,’ বলে উঠল মুরল্যাণ্ড। ‘ওর ক্ষমতা শুধু মাইগুরিডিঙে সীমাবদ্ধ নয়। এ- মুহূর্তে হয়তো মনে করতে পারছে না, কিন্তু দুটো ক্ষমতাই আছে ওর।’

    ‘মাইণ্ডরিডিংটা প্যাসিভ, ব্যাখ্যা করল লিয়ারি। ‘তার জন্যে কিছু করতে হয় না, আপনাআপনিই অন্যের চিন্তা শুনতে পায় অ্যালি। কিন্তু মাইণ্ড কন্ট্রোলের জন্যে চাই সচেতন প্রচেষ্টা। মনোযোগ একত্র করাসহ নানা ধরনের মানসিক কাজ আছে ওতে। বছরের পর বছর সাধনা করে ওই ক্ষমতা শানিয়ে নিয়েছে অ্যালি, তবে এ-মুহূর্তে সেসবের কিছুই মনে নেই বলে কাজে লাগাতে পারছে না।

    ‘একেবারে পারছে না, তাও নয়,’ মুরল্যাণ্ড বলল। ‘যদ্দূর শুনলাম, খুব বেশি ভয় পেয়ে গেলে, কিংবা মানসিক চাপের চূড়ান্ত সীমায় পৌছে গেলে নিজের অজান্তেই মাইণ্ড কন্ট্রোলের ক্ষমতা ব্যবহার করতে শুরু করে অ্যালি। অবচেতনভাবে। নিজেও বোঝে না যে, কাজটা সে-ই করছে।’

    ‘তারমানে, ফ্রেজনোর ওই পুলিশ অফিসারের মাইণ্ড কন্ট্রোল করেছিল ও?’ নিশ্চিত হতে চাইল রানা। ‘তাকে বাধ্য করেছিল আমাদের ছেড়ে দিতে?’

    ‘কোনও সন্দেহ নেই। ‘

    ‘হায় খোদা!’ বিড়বিড় করল রানা।

    ‘ওখানে যা দেখেছেন, তা আসলে কিছুই না,’ বলল লিয়ারি। ‘অ্যালি যখন সচেতনভাবে কাউকে নিয়ন্ত্রণে নেয়, তখন যে তাকে দিয়ে কত কিছু করিয়ে নিতে পারে তা কল্পনা করতে পারবেন না।’

    ‘এটা শুধু ও-ই পারে? আর কেউ না?’

    ‘ওর মত না। ফোর্ট ডেট্রিকে অরিজিনাল যে-ড্রাগটা ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটা শুধু মাইওরিডিঙের ক্ষমতা দিতে পারত সাবজেক্টদের, আর কিছু না। এলিনা আর ভেরোনিকার ক্ষমতাও তাই ওটুকুতেই সীমাবদ্ধ। তবে সাদার্ন অ্যাসোশিয়েটস্ সম্প্রতি ওই ড্রাগের একটা ইম্প্রুভ্‌ড্ ভার্শান তৈরি করেছে—সেটা ঠিক মাইণ্ড কন্ট্রোল নয়, তবে মাইণ্ড ইনফ্লুয়েন্সের খানিকটা ক্ষমতা দিতে পারে। সোজা কথায়, মনকে প্রভাবিত করা আর কী। কাউকে টার্গেট করে তার সঙ্গে টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ স্থাপন করা যায়—টার্গেটের কাছে মনে হবে, তার মাথার ভেতরে বসে কথা বলছে কেউ। টার্গেটের ব্রেইন ওয়েভ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতিও সৃষ্টি করা যায়—রাগ, ক্ষোভ, অনুশোচনা, ব্যথা, আনন্দ, যৌনতা, ইত্যাদি। এর কোনোটাই কিন্তু সরাসরি মাইণ্ড কন্ট্রোল নয়। তবে এসবের মাধ্যমে টার্গেটকে প্ররোচিত করা যায় বিভিন্ন ধরনের কাজ করার জন্যে—প্যাসিভ কন্ট্রোলের মাধ্যমে। অ্যান্টেনা সাইটগুলোর মাধ্যমে তা-ই করছে সাদার্ন। নিজস্ব কিছু অপারেটিভকে নতুন ড্রাগটা দিয়েছে ওরা, অ্যান্টেনার মাধ্যমে তাদের মাইণ্ড ইনফ্লুয়েন্সের রেঞ্জ বাড়িয়ে নিচ্ছে, তারপর সাধারণ কোনও মানুষকে টার্গেট বানিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছে… তাকে বাধ্য করছে ঘৃণ্য সব কাজ করতে। এক ধরনের ট্রেইনিংও বলতে পারেন—এদেরকে তৈরি করা হচ্ছে প্রয়োজনে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে।’

    ‘ইউটার সেই পিকআপ ড্রাইভার…’

    ‘সাদার্নের হতভাগ্য এক শিকার। নিশ্চয়ই বহুদিন থেকে তাকে ট্রেইনিং দেয়া হচ্ছিল। ফাইনালি তাকে মাঠে নামানো হয় আপনাকে খুন করার জন্যে।’

    তরুণটির চেহারা মনে পড়ল রানার। বার বার ক্ষমা চাইছিল সে’। বলেছিল, কাজটা ইচ্ছের বিরুদ্ধে করতে হচ্ছে তাকে।

    ‘সাদার্নের অপারেটিভরা… যারা নতুন ভার্শানের ড্রাগটা পেয়েছে… তাদেরকে খাটো করে দেখার কোনও উপায় নেই,’ বলল লিয়ারি। ‘তবে অ্যালির সামনে ওরা স্রেফ দুগ্ধপোষ্য শিশু। নখেরও যোগ্য নয়…’

    ‘কিন্তু অ্যালি তো নতুন ড্রাগটা পায়নি,’ রানা বলল। ‘ও পেয়েছে পুরনোটা… ওর মায়ের শরীর থেকে। তা হলে ও এত শক্তিশালী হলো কী করে।’

    ‘জবাবটা আপনার কথার মধ্যেই রয়েছে। মায়ের শরীর থেকে ড্রাগটা পেয়েছে অ্যালি, জরায়ুতে থাকা অবস্থায়। আপনার বুঝতে হবে, পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের জিনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা খুবই মুশকিল–কারণ ততদিনে তার ডিএনএ সুগঠিত ও পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠে। কিন্তু অ্যালি যখন ওটা রিসিভ করল, তখন সে এক হিসেবে একটা ভেজা মাটির দলা, কোনও ধরনের আকৃতি পায়নি। তখন থেকেই ড্রাগটা কাজ করতে শুরু করেছে, অ্যালির জিন ও ডিএনএ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়েছে। কাজেই ওর ওপর ড্রাগের প্রভাবটা হয়েছে অন্য সবার চেয়ে আলাদা।’

    চকিতে দেয়ালে ফুটে থাকা লেখাটার দিকে তাকাল সে। তবে প্রজেক্টরে যা দেখাতে চাইছে, সেটা শুরু করল না। তার কথা এখনও শেষ হয়নি।

    ‘আপনি নিশ্চয়ই জানেন, মি. রানা, অ্যালির জন্ম আর বেড়ে ওঠা… দুটোই হয়েছে ফোর্ট ডেট্রিকের বন্দিশালায়। খুব অল্প বয়সেই তার ভেতরে মায়ের মত মাইওরিডিঙের ক্ষমতা আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা—আঠারো মাস বয়সে। দ্বিতীয় ক্ষমতাটার খোঁজ তাঁরা তখন পাননি… ইন ফ্যাক্ট, ওর বয়স সাত হবার আগে তাঁরা কল্পনাও করেননি অমন একটা, ক্ষমতার অস্তিত্ব থাকতে পারে। যখন টের পেলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সে ঘটনা এবার আপনাকে বলব, তবে তার আগে জানাই, এসবের বেশিরভাগই আমরা এতদিন জানতাম না। জেনেছি দু’মাস আগে, অ্যালিকে ইন্টারোগেট করার পর।’

    চুপ করে রইল রানা।

    ‘নিজের ক্ষমতার বিস্তারিত বর্ণনা আমাদের দিয়েছে অ্যালি,’ বলে চলল লিয়ারি। ‘একটা নামও দিয়েছে সেটার : লক করা। ছোটবেলায় ওটা ছিল তার জন্যে এক ধরনের খেলা। কিন্তু প্রথম যেদিন মাকে ক্ষমতাটা দেখাল—একজন ল্যাব টেকনিশিয়ানকে লক করে তাকে মাথা চুলকাতে বাধ্য করল—অ্যাম্বার মিচেল প্রায় অজ্ঞান হতে বসেছিল। অ্যালিকে শপথ করায় সে, কোনোদিন এই ক্ষমতা কোনও ডাক্তার বা বিজ্ঞানীকে দেখাবে না। অ্যাম্বার জানত, ব্যাপারটা যদি ফাঁস হয়ে যায়, অ্যালিকে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেবে বিজ্ঞানীরা, আলাদা কোনও ল্যাবে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। মেয়েকে হারাতে চায়নি সে…’

    সেলফোনের রিংটোনে বাধা পড়ল কথায়। লিয়ারির এক সঙ্গীর ফোন বেজে উঠেছে। ক্ষমা চেয়ে কলটা রিসিভ করল সে, সংক্ষেপে কথা সেরে কেটে দিল লাইন। তারপর রিপোর্ট দেবার ভঙ্গিতে লিয়ারিকে জানাল, ‘উনি ল্যাণ্ড করেছেন। পাঁচ মিনিট লাগবে এখানে পৌঁছুতে।’

    মাথা ঝাঁকিয়ে রানার দিকে ফিরল লিয়ারি। বলতে থাকল, ‘মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে অ্যালি। কারও কাছে ফাঁস করেনি নিজের দ্বিতীয় ক্ষমতার কথা। তবে গোপনে চর্চা চালিয়ে গেছে। সেটা কঠিন কিছু ছিল না, কারণ যাকে ও লক করে, সে-মানুষটা কিছু বুঝতে পারে না। কাজেই যদি কাউকে চশমা খুলে কাঁচ মুছতে বলা হয়,

    কিংবা জগ থেকে পানি ঢেলে খেতে বলা হয়, তার ভেতরে কোনও অস্বাভাবিকতা পাবে না সে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাউকে দিয়ে কিছু করাত না অ্যালি, টার্গেটের মনে শুধু একটা আকাঙ্ক্ষা বা তাড়না সৃষ্টি করত, যাতে সে নিজ থেকে কাজটা করে।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল লিয়ারি। ‘এসব অবশ্য শুরুর দিকের কথা। এখন সামান্য চশমা মোছানোর চেয়ে অনেক বড় বড় কাজ করাতে পারে মেয়েটা।’

    ‘কী কাজ?’ রানা জিজ্ঞেস করল।

    ‘যেমন ধরুন, লোয়ার ম্যানহাটনের একটা হোটেল রুমে বসে দু’ব্লক দূরের একজন পোর্টফোলিয়ো ম্যানেজারকে লক করতে পারবে—তাকে দিয়ে দুনিয়ার আরেক প্রান্তের একটা অ্যাকাউন্টে দশ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করাতে পারবে। এরপর তাকে বাধ্য করবে গলা পর্যন্ত মদ গিলতে… বেহুঁশ হয়ে যেতে। যখন বেচারার জ্ঞান ফিরবে… নেশা কাটবে, ততক্ষণে টাকাটা ডজনখানেক অ্যাকাউন্টে ঘুরপাক খেয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে, ট্রেস করার কোনও উপায় থাকবে না।’

    উদাহরণটা খুবই স্পেসিফিক, ভাবল রানা, বাস্তব থেকে নেয়া নয় তো? হ্যানকক সেন্টারের গোটা একটা ফ্লোর কেনার টাকা কীভাবে এসেছিল, তার একটা ব্যাখ্যা মিলছে এবার।

    ‘মাইওরিডিঙের থেকে লকিং সম্পূর্ণ আলাদা,’ বলল লিয়ারি। ‘প্রচুর পার্থক্য আছে দুটোয়। রেঞ্জের কথাই ধরুন। মাইওরিডিঙের জন্যে কাছাকাছি থাকতে হয়, কিন্তু এক মাইল দূর থেকেই আপনাকে লক করতে পারবে অ্যালি। কিচ্ছু টের পাবেন না আপনি। কপাল ব্যথা করবে না, ঠাণ্ডা কোনও স্পর্শ পাবেন না। লক করা অবস্থায় টার্গেটের মাইগুরিডিং চালিয়ে যেতে পারে ও, তাকে দিয়ে যা-খুশি-তাই করিয়ে নিতে পারে।’

    চুপচাপ তথ্যগুলো হজম করতে থাকল রানা।

    ‘কী নিয়ে সবাই ভয় পাচ্ছে, সেটা এলিনা আর ভেরোনিকা কেন অ্যালিকে বলেনি, জানেন? কারণ ও নিজেই সেই ভয়ের উৎস। প্রথম উৎস।’

    ‘প্রথম?’ কপালে ভাঁজ পড়ল রানার।

    ‘হ্যাঁ,’ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল লিয়ারি। ‘অ্যালির কেসটার ওপর ভিত্তি করে নতুন একদল মাইণ্ড-কন্ট্রোলার তৈরি করেছে সাদার্ন অ্যাসোশিয়েটস্। জরায়ুতে থাকা অবস্থায় ড্রাগটা দেয়া হয়েছে ওদেরকে, সেটা প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। বাচ্চাগুলোর বয়স এখন চার, ইতিমধ্যেই তাদের ভেতর অ্যালির ক্ষমতাগুলোর নিদর্শন পাওয়া গেছে। অ্যান্টেনা সাইটের সাহায্যে ওদেরকে দিয়ে খুব শীঘ্রি ট্রায়াল শুরু করা হবে। প্রথমদিকে বড় ধরনের কিছু হয়তো করানো হবে না… লিয়ারির গলা মনে হলো শুকিয়ে গেছে, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাল সে, ‘…কিন্তু নিশ্চিত থাকুন, কয়েক বছরের ভেতরেই নিজেদেরকে খুবই ভিন্ন একটা পৃথিবীতে আবিষ্কার করব আমরা।’

    কথাটার অর্থ বুঝতে পেরে গা শিরশির করে উঠল রানার। রুমের তাপমাত্রা যেন আচমকা কমে গেছে। ও মুখ খোলার আগেই বাইরে শোনা গেল ইঞ্জিনের আওয়াজ। একটা গাড়ি এসে থামল বিল্ডিঙের সামনে। একজন প্রহরী বেরিয়ে গেল, খানিক পরেই ফিরে এল নতুন একজন মানুষকে নিয়ে।

    ডা. টিফানি ক্যানট্রেল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরিং – কোজি সুজুকি
    Next Article সাবাস অয়ন! সাবাস জিমি!! – ইসমাইল আরমান

    Related Articles

    ইসমাইল আরমান

    দ্য সি-হক – রাফায়েল সাবাতিনি

    July 11, 2025
    ইসমাইল আরমান

    সাবাস অয়ন! সাবাস জিমি!! – ইসমাইল আরমান

    July 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.