Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ধ্বংসযজ্ঞ – ১৫

    পনেরো

    চব্বিশ ঘণ্টা হলো পূর্ব আটলান্টিকে পৌঁছেছে নুমার জাহাজ অ্যাডভেঞ্চারার, পৌঁছেই শুরু করেছে তল্লাশি। নির্দিষ্ট একটা প্যাটার্নে সার্চ করছে সি-ফ্লোর: লাঙল চালানোর ভঙ্গিতে দশ মাইলের লেগ ধরে এগোচ্ছে-পিছাচ্ছে। আরাতামা মারু ঠিক কোথায় ডুবেছে তা জানা আছে, সাগরের এই অংশের স্রোতের গতি-প্রকৃতিও জানা; ফলে বারো ঘণ্টা না যেতেই পেয়ে গেছে রেকটা।

    ডুবন্ত জাহাজটা পাওয়ার পর এক জোড়া ডিপ ডাইভিং আরওভির সাহায্যে ম্যাপিং করা হয়েছে পুরো ডেব্রি ফিল্ডের। কম্পিউটারে ঢোকানো হয়েছে সব ইনফরমেশন ও ছবি, তৈরি করা হয়েছে থ্রি-ডাইমেনশনাল মডেল। এখন প্ল্যান বানানো হচ্ছে জাহাজের ভেতরে তল্লাশি চালাবার জন্যে।

    মিশনটা জলকন্যার জন্যে আদর্শ। সমস্যা একটাই। জাহাজটা অনেক গভীরে। আমবিলিক্যাল কর্ড অতদূর পৌঁছুবে না।

    ‘আমাদের সঙ্গে কি এক্সটেনশন কর্ড আছে?’ জিজ্ঞেস করল আসিফ।

    ‘জলকন্যাকে এত গভীরে নামাতে হবে ভাবিনি,’ জানাল তানিয়া। ‘নুমা হেডকোয়ার্টার থেকে ডিপওয়াটার কিট আসছে, পরশু পৌছুবে। কিন্তু…

    ‘অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন তার আগেই আমাদেরকে নামতে বলছেন, এই তো?’

    মাথা ঝাঁকাল তানিয়া। ‘একটা ঢালের গায়ে আটকে আছে জাহাজটা, ধীরে ধীরে পিছলে নিচে নেমে যাচ্ছে। বেশি গভীরে যাবার আগেই অ্যাডমিরাল চাইছেন আমরা কিছু স্যাম্পল সংগ্রহ করি।’

    অর্থটা বুঝতে পারছে আসিফ। ডিপওয়াটার সাবমারসিবল নিয়ে পানিতে নামতে হবে তানিয়াকে। জাহাজের বদলে সাবমারসিবলের সঙ্গে আমবিলিক্যাল কর্ড, দিয়ে কানেক্টেড থাকবে জলকন্যা।

    ‘আমিও যাচ্ছি তোমার সঙ্গে,’ বলে দিল ও।

    ‘চাপাচাপি হয়ে যাবে,’ তানিয়া সতর্ক করল।

    ‘অসুবিধে কী? নাকি স্বামীর সঙ্গে চাপাচাপিতে আপত্তি আছে তোমার?’ হাসল আসিফ।

    ‘সাবধান,’ চোখ রাঙাল তানিয়া। ‘কোনও দুষ্টুমি চলবে না, বুঝেছ?’

    তিন ঘণ্টা পর ডিপওয়াটার সাবমারসিবল গ্রুপার-এ চড়ে সাগরে ডুব দিল ওরা। অদ্ভুত আকৃতি ওটার, দেখতে অনেকটা ব্যাথিস্ফিয়ারের মত। আউটার হালের সঙ্গে অ্যাটাচ করা হয়েছে জলকন্যাকে, ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে। ভেতরে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আসিফ-তানিয়া, যেন বাচ্চাদের স্লেডে চড়েছে। পাইলটের

    পাইলটের দায়িত্বে রয়েছে আসিফ, আর জলকন্যাকে অপারেট করার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তানিয়া।

    আটচল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রা সাবমারসিবলের ভেতরে। বাইরে বইছে প্রায় বরফশীতল স্রোত। ঠাণ্ডা লাগছে আসিফের, সাবমারসিবলের সংকীর্ণ অভ্যন্তরে খানিকটা কুঁকড়ে আছে সে।

    ‘কী ঠাণ্ডা রে, বাবা!’ হঠাৎ বলল ও।

    ‘শীত তো ভাল,’ বলল তানিয়া, ‘বৃষ্টি হলেই বিপদ। বুঝতে হবে, সাবমারসিবলের খোলে ফাটল ধরেছে।’ চারদিকে তাকাল আসিফ। নুমার

    ডিপ-সি ভেহিকেলগুলোর মধ্যে গ্রুপার সবচেয়ে টেকসই। চব্বিশ হাজার ফুট পর্যন্ত ডাইভ দেবার উপযোগী, ওরা নেমেছে মাত্র ষোলো হাজার ফুট। কাজেই ভয় পাবার কিছু নেই।

    ‘নিশ্চিন্তে থাকো,’ তানিয়াকে বলল ও।

    ‘নিশ্চিন্তেই আছি,’তানিয়া বলল। ‘আরও নিশ্চিন্ত থাকতাম যদি তুমি ওপরে থেকে যেতে।

    ‘সরি, বিরহ আমার সহ্য হয় না।’

    ‘ফাজলামো হচ্ছে?’

    ‘উঁহুঁ। আমি তোমার প্রেমে পাগল। সত্যি! একটা চুমু দেবে?’

    ‘চুমু না, কিল খাবে!’

    ইন্টারকমে একটা কাশির আওয়াজ ভেসে এল। অপ্রস্তুত হয়ে গেল আসিফ। ভুলেই গিয়েছিল, সম্পূর্ণ একা নয় ওরা; সার্বক্ষণিকভাবে ওদেরকে মনিটর করা হচ্ছে অ্যাডভেঞ্চারার থেকে।

    ‘ড. রেজা, আপনার হার্টবিট বেড়ে গেছে,’ জানানো হলো ওপর থেকে।

    তাড়াতাড়ি ইকুইপমেন্টের দিকে নজর ফেরাল আসিফ। বলল, ‘জাহাজের ওপরে পৌঁছে গেছি আমরা।’

    ‘আমি তা হলে আমার গিয়ার পরে ফেলি,’ বলে একটু পিছিয়ে গেল তানিয়া।

    আরাতামা মারুর ডেকের ওপর গ্রুপারকে নিয়ে এল আসিফ। পোর্টহোল দিয়ে তাকাল বাইরে। বিশাল জাহাজটা ঢালের ওপর কাত হয়ে আছে। হ্যাচগুলো সব খোলা, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সাঁতার কাটছে আশপাশে। দৃশ্যটা একটু অদ্ভুত, কারণ পানির তলায় পুরনো জাহাজ দেখে অভ্যস্ত ও। ভাঙাচোরা অবস্থায় থাকে ওগুলো, সারা গায়ে বাসা বাঁধে জলজ আগাছা আর উদ্ভিদ। কিন্তু আরাতামা মারু সম্পূর্ণ নতুন জাহাজের মত ঝকঝক করছে।

    ‘সবগুলো কার্গো হ্যাচ খোলা,’ বলল ও।

    ‘রানা বলেছে, হোল্ডের ভেতর গ্রেনেড ফেলছিল দস্যুরা,’ জানাল তানিয়া।

    ‘তার জন্যে সবগুলো তো খোলার দরকার নেই।’

    ‘কিছু খুঁজছিল না তো?’

    যুক্তি আছে তানিয়ার কথায়, কিন্তু জলদস্যুদের জন্যে কার্গো হোল্ডে হানা দেবার মত কী থাকতে পারে, বুঝতে পারছে না আসিফ। ছোট আকারের বোট নিয়ে এসেছিল তারা, সেটায় খুব বেশি কিছু নেয়াও সম্ভব নয়।

    ‘আরেকটা সম্ভাবনা আছে,’ বলল ও। ‘সবগুলো হ্যাচ খুলে দিয়েছে, যাতে জাহাজটা তাড়াতাড়ি ডুবে যায়।’

    ‘তারমানে কোনও ধরনের অপকর্মের প্রমাণ লোপাট করতে চেয়েছে। রানারও তা-ই ধারণা।’

    এখন পর্যন্ত জাহাজের মালিকপক্ষ বা ইনশিয়োরেন্স কোম্পানি কোনও রকমের সহযোগিতা করছে না নুমাকে। জাহাজের ম্যানিফেস্ট দেয়নি, কী ধরনের কার্গো বহন করা হচ্ছিল, তা-ও জানায়নি। ব্যাপারটা রহস্যজনক।

    ‘জাপানি কোম্পানিটার খবর কী?’ জিজ্ঞেস করল ও। ‘কিছু কি বলেছে?’

    ‘না,’ ইণ্টারকমে জানাল কন্ট্রোলার। ‘এখনও মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে।’

    ‘হুম। সেক্ষেত্রে জাহাজটা পরিত্যক্ত বলা যেতে পারে। স্যালভিজ করলে সমস্ত কার্গো আমাদের হয়ে যাবে।’

    ‘মনে হয় না অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন অত বড় অপারেশনের খরচ জোগাতে রাজি হবেন,’ তানিয়া বলল। ‘তিনি শুধু আমাদেরকে ভেতরে ঢু মারতে বলেছেন। ঘুরেফিরে দেখো, জলকন্যাকে পাঠাবার মত কোনও ফোকর পাওয়া যায় কি না।’

    জাহাজের পেছনদিকে গ্রুপারকে নিয়ে গেল আসিফ। সুপারস্ট্রাকচারটা হাঁ হয়ে আছে, ঢালের ওপর আছাড় খাওয়ার আঘাতে খসে গেছে এক-তৃতীয়াংশ। যেটুকু খাড়া আছে, সেটাকে ক্রস-সেকশনের মত দেখাচ্ছে।

    ‘পেয়েছি,’ বলল ও। ‘পুরোটাই ফাঁকা। সুপারস্ট্রাকচারের যে-কোনও লেভেলে ঢুকতে পারবে।’

    ‘চমৎকার! কাজ সহজ হয়ে গেল।’

    অটোপাইলট এনগেজ করে তানিয়ার দিকে তাকাল আসিফ। গ্লাভস্ আর বুট পরে ফেলেছে সে, চোখের ওপর টেনে দিয়েছে ভাইজর।

    ‘কেমন লাগছে?’ জানতে চাইল।

    ‘উপুড় হয়ে আছি তো, অদ্ভুত লাগছে,’ জানাল তানিয়া। ‘সবসময় দাঁড়িয়ে অপারেট করি কি না।’

    পোর্টহোল দিয়ে বাইরে তাকাল আসিফ। কর্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জলকন্যা। ধীরে ধীরে এগোচ্ছে আরাতামা মারুর ব্রিজ লক্ষ্য করে। পিছিয়ে এসে এবার ছ’ইঞ্চি চওড়া একটা পোর্টেবল স্ক্রিনে চোখ রাখল—ভাইজরে তানিয়া যা দেখছে, সেটাই ফুটে উঠছে স্ক্রিনটায়।

    ভাঙা দেয়াল পেরিয়ে ব্রিজে ঢুকল জলকন্যা। কোনায় কিছু একটা নড়ে উঠল।

    ‘লাশ নাকি?’ ভুরু কোঁচকাল আসিফ।

    ‘সেরকমই তো লাগল,’ বলল তানিয়া। ‘দাঁড়াও, কাছে যাচ্ছি।’

    এগিয়ে গেল ক্যামেরা। আলোকিত হয়ে উঠল একটা গাঢ় আকৃতি—মানুষই, কিন্তু লাগছে কালো রঙ করা একটা পুতুলের মত। ভাসছে পানিতে।

    ‘আশ্চর্য!’ বিস্মিত গলায় বলল তানিয়া। ‘দেখে তো মনে হচ্ছে পুড়ে মারা গেছে। কিন্তু…’ চারদিকে জলকন্যাকে একপাক ঘুরিয়ে আনল ও, ‘কই, ব্রিজের কোথাও তো আগুন লাগার কোনও চিহ্ন দেখছি না।’

    ঠিকই বলছে ও। ঝকঝক করছে পুরো ব্রিজ, যেন নতুন রঙ চড়ানো হয়েছে। যন্ত্রপাতি সবই অক্ষত। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে শুধু ওই মানুষটা।

    ‘কীভাবে সম্ভব?’ বিড়বিড় করল আসিফ।

    ‘শুনতে খারাপ শোনালেও, বলল তানিয়া, ‘আমি স্যাম্পল নিচ্ছি।’

    লাশের কাছে চলে গেল জলকন্যা। মৃদু আওয়াজ তুলে শরীর থেকে বেরিয়ে এল একটা ছোট্ট ড্রিল, তার সঙ্গে রয়েছে একটা ভ্যাকিয়ুম টিউব। ড্রিলের ডগা লাশটার ঊরুতে ঠেকাল তানিয়া, তুলে আনল দু’ইঞ্চি গভীর এক টুকরো মাংস। ভ্যাকিয়ুম সিস্টেমের সাহায্যে কন্টেইনারে ঢোকাল ওটা।

    ‘হয়ে গেছে,’ জানাল তানিয়া। ‘এবার জাহাজের আরও ভেতরে যাচ্ছি।’

    জলকন্যাকে অপারেট করায় ব্যস্ত ও, গ্রুপারকে পজিশনে রেখেছে অটোপাইলট, ফলে কিছুই করার নেই আসিফের। বিরক্তি ধরে যাচ্ছে। মনে মনে একটা গানের সুর ভাঁজতে শুরু করল।

    হঠাৎ গুঞ্জন শোনা গেল ইন্টারকমে। ‘ড. রেজা, আমরা একটা সোনার কন্ট্যাক্ট পাচ্ছি।’

    ঝট্ করে সিধে হলো আসিফ। ‘কী ধরনের কন্ট্যাক্ট?’

    ‘বোঝা যাচ্ছে না,’ বলল কন্ট্রোলার। ‘সিগনালটা খুব দুর্বল, আপনাদের পশ্চিম থেকে আসছে। তবে আসছে খুব দ্রুত।’

    ‘মেকানিক্যাল, নাকি ন্যাচারাল?’

    ‘বলা’ কঠিন। একটু সময় দিন।’

    নীরবে অপেক্ষায় রইল আসিফ আর তানিয়া। কল্পনার চোখে দেখল, স্ক্রিনের ওপর সেঁটে আছে সোনার অপারেটরের চোখ, কানে ইয়ারফোন-বোঝার চেষ্টা করছে কন্ট্যাক্টের গতি-প্রকৃতি।

    ‘মাই গড!’ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কন্ট্রোলার। ‘ওটা টর্পেডো! একটা না, দুটো! আপনাদের দিকে আসছে!’

    বিদ্যুৎ খেলে গেল আসিফের শরীরে। খপ্ করে আঁকড়ে ধরল গ্রুপারের থ্রাস্ট কন্ট্রোল, অটোপাইলট ডিজএনগেজ করল। স্ত্রীকে বলল, ‘জলকন্যাকে ফিরিয়ে আনো।’

    হাত-পা নাড়াতে শুরু করল তানিয়া। অদৃশ্য কন্ট্রোলের সাহায্যে জলকন্যাকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে।

    ‘মুভ, ড. রেজা!’ ইন্টারকমে চেঁচাল কন্ট্রোলার। ‘টর্পেডোদুটো অনেক কাছে চলে এসেছে!’

    জলকন্যার আশা ছেড়ে দিল আসিফ, থ্রটল টেনে রিভার্সে নিল-জাহাজ থেকে পিছিয়ে এসে মুখ ঘোরাচ্ছে গ্রুপারের।

    ‘একটু দাঁড়াও,’ অনুনয় করল তানিয়া। ‘জলকন্যা বেরিয়ে আসবে এখুনি।’

    ‘সরি, সময় নেই।’

    থ্রটল পুরোপুরি ঠেলে দিল আসিফ, ব্যালাস্ট খালি করল খানিকটা। ওপরদিকে রওনা হলো গ্রুপার, তবে গতি মন্থর। মাত্র সাত নটে ছুটছে— ওটাই সাবমারসিবলটার সর্বোচ্চ স্পিড।

    কন্ট্রোলারের আতঙ্কিত কণ্ঠ ভেসে এল ইন্টারকমে। ‘হায়, ঈশ্বর! কন্ট্রাক্টদুটো আপনাদের ওপরে, ড. রেজা! সরাসরি ওগুলোর দিকে উঠে যাচ্ছেন আপনারা।’

    গ্রুপারকে আবারও ডাইভ দেয়ালো আসিফ। দাঁতে দাঁত পিষে জিজ্ঞেস করল, ‘কোত্থেকে লঞ্চ করেছে টর্পেডোগুলো?’

    ‘বলতে পারছি না। দক্ষিণে যান, জাহাজের বো-র দিকে। তা হলে ওগুলোর ট্র্যাক থেকে সরে যেতে পারবেন।’

    সাবমারসিবলের নাক ঘোরাল আসিফ, টর্পেডোগুলো দেখতে পাচ্ছে না, অন্ধের মত অনুসরণ করছে কন্ট্রোলারের নির্দেশ।

    ‘এগোতে থাকুন,’ বলা হলো ইন্টারকমে। ‘দশ সেকেণ্ড আছে আপনাদের হাতে।

    টর্পেডো যদি গ্রুপারের ওপর টার্গেট লক করে থাকে, ফাঁকি দেবার কোনও উপায় নেই। স্রেফ চেষ্টা করা যেতে পারে ওগুলোকে বিভ্রান্ত করার। আরাতামা মারুর ওপরে উঠে যাবে বলে ঠিক করল আসিফ, ডেকের গায়ে মিশিয়ে দেবে সাবমারসিবলকে, বিশাল জাহাজের থেকে যেন ওদেরকে আলাদা করতে না পারে টর্পেডোর সেন্সর।

    ঠং করে বিকট আওয়াজ হলো। ডেকের ওপর বাড়ি খেয়েছে গ্রুপারের তলা। পরোয়া করল না আসিফ, বরং আরেকটু নিচে নামার চেষ্টা করল—সেঁধিয়ে যেতে চাইছে জাহাজের ভেতরে।

    ‘তিন সেকেণ্ড,’ জানাল কন্ট্রোলার। ‘দুই… এক…’

    ‘আসিফ?’ ডেকে উঠল তানিয়া। গলায় পরিষ্কার ফুটে উঠেছে আতঙ্ক। সান্ত্বনা দেবার ভাষা খুঁজে পেল না আসিফ।

    নিচু লয়ের শোঁ শোঁ আওয়াজ তুলে প্রথম টর্পেডোটা ছুটে গেল মাথার ওপর দিয়ে। দ্বিতীয়টার আওয়াজও শোনা গেল কয়েক সেকেণ্ডের ব্যবধানে। দূরে চলে যাচ্ছে আওয়াজ। অলৌকিক কাণ্ড বলতে হবে, ওদেরকে মিস করেছে ওগুলো। কান পেতে রইল আসিফ, কিন্তু টর্পেডোদুটোর ফিরে আসার কোনও লক্ষণ নেই।

    স্বস্তির শ্বাস ফেলল ও। নিশ্চিত হবার জন্যে ডাকল কন্ট্রোলারকে। ‘ঘুরছে নাকি?’ জানতে চাইল।

    ‘না। সোজা চলে যাচ্ছে। খোলা সাগরের দিকে।’

    ‘আল্লাহ্ বাঁচিয়েছে…’

    কথা শেষ হলো না আসিফের। গুমগুম করে একটা বিস্ফোরণের আওয়াজে কেঁপে উঠল সাগরের তলা। কয়েক মুহূর্ত পর এল শকওয়েভ, প্রবল এক স্রোতের মত আঘাত হানল গ্রুপারের গায়ে। বাল্কহেডে মাথা ঠুকে গেল তানিয়ার; টের পেল, একদিকে কাত হয়ে গেছে সাবমারসিবল। পিছলে স্বামীর গায়ে এসে পড়ল তানিয়া। আরাতামা মারুর একটা ক্রেনের গায়ে গিয়ে ধাক্কা খেল গ্রুপার।

    সামান্য বিরতি দিয়ে শোনা গেল আরেকটা বিস্ফোরণের আওয়াজ। আবারও শকওয়েভের ধাক্কা অনুভব করল ওরা। তবে ক্রেনের গায়ে ঠেস দিয়ে রয়েছে বলে মোটামুটি স্থির রইল সাবমারসিবল।

    ‘সব ঠিক আছে তো?’ আওয়াজ মিলিয়ে গেলে জিজ্ঞেস করল তানিয়া, কণ্ঠে আতঙ্ক। ভাইজর খুলে ফেলেছে ইতিমধ্যে।

    কেবিনের ভেতরটা খুঁটিয়ে দেখল আসিফ—না, লিক হয়নি কোথাও।

    ‘ঘটলটা কী?’ ইন্টারকমে জানতে চাইল ও।

    ‘আরও দুটো টর্পেডো, ড. রেজা, জানাল কন্ট্রোলার। ‘ঢালের গায়ে আঘাত করেছে।’

    ‘কোত্থেকে এল ওগুলো?’

    ‘সরি, প্রথমদুটোর পিছু পিছু এসেছে। আমাদের সোনার আলাদা করতে পারেনি।’

    সেটাই স্বাভাবিক। সি-ফ্লোরের সার্ভে ও ম্যাপিঙের উপযোগী সোনার বসানো হয়েছে অ্যাডভেঞ্চারারে; গভীর পানিতে ছুটন্ত টর্পেডো ট্র্যাক করার জন্যে চাই যুদ্ধজাহাজের সোনার।

    ‘আরও আসছে না তো?’ জিজ্ঞেস করল আসিফ।

    নীরবতা। ইকুইপমেন্টের রিডিং চেক করা হচ্ছে। এরপর কন্ট্রোলার জানাল, ‘জী না। তবে আমরা একটা ভাইব্রেশন পিক করছি। শব্দটা অনেকটা…’ বলতে বলতে থেমে গেল সে।

    কপালে ভাঁজ পড়ল আসিফের। ভাইব্রেশন মানে? কীসের ভাইব্রেশন? চিন্তাটা শেষ হবার আগেই সচকিত হলো। কন্ট্রোল প্যানেলের যেখানে হাত রেখেছে, সেখানে একটা কাঁপুনি অনুভব করছে। প্রথমে মৃদু, তারপর আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করল। গোটা সাবমারসিবলই কাঁপছে এখন। ঝাঁকি খেয়ে ডানে-বাঁয়ে নড়তে শুরু করল, অদৃশ্য কোনও শক্তি যেন ছিটকে ফেলতে চাইছে জলযানটাকে। বাইরে থেকে ভেসে এল চাপা গুমগুম আওয়াজ, মনে হলো সগর্জনে একটা এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটে আসছে ওদের দিকে।

    ‘কী হচ্ছে বাইরে?’ চেঁচিয়ে জানতে চাইল আসিফ।

    ‘ম্যাসিভ একটা সিগনাল পাচ্ছি আমরা,’ কন্ট্রোলার বলল। ‘জীবনে এরকম কিছু দেখিনি। মুভমেন্ট… অসংখ্য মুভমেন্ট!’

    ‘কোথায়?’

    ‘সবখানে,’ আতঙ্কিত শোনাচ্ছে কন্ট্রোলারের গলা।

    গ্রুপারের ভেতরে ততক্ষণে গড়াগড়ি খাচ্ছে আসিফ আর তানিয়া। গুরুগম্ভীর আওয়াজটা বেড়ে গেছে বহুগুণ। কান পাতা দায়।

    ‘গুড লর্ড!’ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কন্ট্রোলার। ‘ড. রেজা, পাহাড়টা ভেঙে পড়ছে আপনাদের মাথার ওপর!’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৩ – ছায়াঘাতক
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.