Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ধ্বংসযজ্ঞ – ১৮

    আঠারো

    নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে তানিয়া-নিয়ন্ত্রণ করছে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস, ঠেকিয়ে রেখেছে বুকের ভেতর দানা বেঁধে ওঠা আতঙ্ক। ওর পাশে উপুড় হয়ে আণ্ডারওয়াটার ট্রানসিভারে অ্যাডভেঞ্চারারকে ক্রমাগত ডেকে চলেছে আসিফ।

    ‘অ্যাডভেঞ্চারার, দিস ইজ গ্রুপার। ডু ইউ কপি?’ জবাব নেই।

    ‘অ্যাডভেঞ্চারার, দিস ইজ গ্রুপার…’

    গত আধঘণ্টা ধরেই চেষ্টা করছে সে। আর কিছু করারও নেই। মুক্তির উপায় একটাই—ওপর থেকে আরওভি পাঠিয়ে ওদেরকে কাদা খুঁড়ে বের করতে হবে… মানে, যদি ওদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়, আর সাবমারসিবলটা যদি একশো ফুট কাদার নিচে তলিয়ে গিয়ে না থাকে।

    তাই ডাকাডাকি চালিয়ে যাচ্ছে আসিফ। একঘেয়ে ভঙ্গিতে। কিন্তু পাচ্ছে না কোনও জবাব। প্রতিবারের ব্যর্থতা ছুরির মত আঘাত হানছে হৃদয়ে। বুঝতে পারছে, গত ত্রিশ মিনিটে যখন যোগাযোগ করতে পারেনি, আগামী ত্রিশ মিনিট… এমনকী ত্রিশ ঘণ্টাতেও হয়তো পারবে না। হয় ভূমিধসের আঘাতে গ্রুপারের অ্যান্টেনা ধ্বংস হয়ে গেছে, কিংবা ওরা এত গভীরে আটকা পড়েছে যে রেডিও সিগনাল বাইরে পৌঁছুতে পারছে না।

    ঘাড় ফিরিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকাল আসিফ। সান্ত্বনা দেবার ভঙ্গিতে বলল, ‘ভয় পেয়ো না। আমরা ওদের কথা শুনতে না পেলেও ওরা হয়তো আমাদের ট্রান্সমিশন রিসিভ করছে।’

    নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকাল তানিয়া। কাত হয়ে চেক করল এয়ার গজ। আরও উনিশ ঘণ্টার বাতাস রয়েছে সাবমারসিবলে। উনিশ ঘণ্টার মৃত্যুপ্রতীক্ষা। নতুন অভিজ্ঞতা ওর জন্যে। এই প্রথম খেয়াল করল, কেবিনটা কতটা চাপা। ঠিক একটা কফিনের মত। ভাগ্যের পরিহাস বোধহয় একেই বলে। কফিন-সহ কবর হয়েছে ওদের।

    ক্লস্ট্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত হলো তানিয়া। শরীর কাঁপছে। ভাবছে, ভূমিধসেই মারা গেল না কেন। ইচ্ছে করছে হ্যাচ খুলে দিতে, যাতে পানি ঢুকে জ্বালাযন্ত্রণা ঘুচিয়ে দেয় ওদের। ব্যাপারটা পাগলামো, জানে; তারপরেও ক্রমশ প্রবল হচ্ছে ইচ্ছেটা।

    ‘অ্যাডভেঞ্চারার, দিস ইজ গ্রুপার। শুনতে পাচ্ছ?’ আবার ডাকল আসিফ।

    দাঁতে দাঁত পিষে ইচ্ছেটা দমন করল তানিয়া। চোখ বন্ধ করে মাথা ঠেকাল ঠাণ্ডা মেঝেতে। কয়েক মিনিট পেরুলে একটু শান্ত হলো স্নায়ু। আবার চোখ খুলল। দৃষ্টি চলে গেল দেয়ালের দিকে। পানির একটা ফোঁটা ধীরে ধীরে নেমে আসছে। বাষ্প জমেছে ভাবতে চাইল, কিন্তু আরেকটা ফোঁটা নামতে দেখে ভাঙল ভুলটা। না, উনিশ ঘণ্টা টিকবে না ওরা।

    ‘অ্যাডভেঞ্চারার, দিস ইজ গ্রুপার…’

    আসিফকে বলে কোনও লাভ নেই। কিছু করার নেই বেচারার। সাগরের ষোলো হাজার ফিট গভীরে রয়েছে ওরা, বাইরে পানির চাপ প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় সাত হাজার পাউণ্ড। প্রবল শক্তিতে ঠেলছে সাবমারসিবলের শরীর। প্লেটের জয়েন্টগুলো ধীরে ধীরে বড় হবে, ছোট ছোট ফোঁটাগুলো পরিণত হবে বড় ফোঁটায়, এক সময়ে অঝোর ধারায় ঢুকতে শুরু করবে ফাঁক দিয়ে। একটা সময় সে-ধারা এত শক্তিশালী হয়ে উঠবে যে, অনায়াসে ছুরির মত কেটে ফেলৰে ওদের শরীর। এরপর সব শেষ হয়ে যাবে।

    কেবিনের ভেতর চঞ্চল দৃষ্টি বোলাল তানিয়া—আর কোনও লিক আছে কি না দেখার জন্যে। পেল না কিছু, তবে চোখ আটকাল পড়ে থাকা ভাইজরটায়, আলোর আভা বেরুচ্ছে ওটার ভেতর থেকে। হাত বাড়িয়ে তুলে নিল ওটা। স্ক্রিন কাজ করছে এখনও। দেখা যাচ্ছে ধাতব একটা দেয়াল, আর তার সামনে পানিতে ভাসতে থাকা ধুলোমাটির কণা।

    ‘জলকন্যা বেঁচে গেছে,’ নিচু গলায় বলল ও।

    ‘কী বললে?’ মাথা ঘোরাল আসিফ।

    ‘এটা লাইভ শট।’ ভাইজরটা ওর দিকে ঘোরাল তানিয়া। ‘জলকন্যা এখনও কাজ করছে।’

    ভাইজর পরে ফেলল ও। হাতে গলাল ভার্চুয়াল কন্ট্রোলের গ্লাভস। একটু সময় নিল দৃশ্যটার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে। শীঘ্রি বুঝল, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভেসে চলেছে আরওভিটা। মোটর অন করে তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘোরাল জলকন্যাকে। বিশাল বিশাল এক ফোকর দেখতে পেল দেয়ালে-ওখান দিয়েই জাহাজে ঢুকেছিল।

    ‘ওকে বের করে আনছি,’ বলল ও।

    ‘এখনও কীভাবে কানেকশন পাচ্ছ?’ জানতে চাইল আসিফ।

    ‘গ্রুপারের আমবিলিক্যাল কর্ডটা অ্যান্টেনার মত কাজ করে। ওটা আট ফুট লম্বা। ডগাটা নিশ্চয়ই কাদার বাইরে বেরিয়ে আছে।’

    ‘তার মানে আমরা খুব বেশি তলাইনি,’ আশান্বিত হয়ে উঠল আসিফ। ‘জলকন্যাই হয়তো আমাদেরকে খুঁড়ে বের করতে পারবে।’

    জাহাজ থেকে জলকন্যাকে বের করে আনছে তানিয়া। কন্ট্রোল প্যানেলের ছোট্ট মনিটরে মনোযোগ দিল আসিফ।

    ওকে ওপরে নিয়ে যাও,’ বলল সে। ‘ওপর থেকে দেখা দরকার দৃশ্যটা।’

    মাথা ঝাঁকিয়ে জলকন্যাকে ওপরে ওঠাল তানিয়া। থামল একশো ফুট উঠে। এরপর নিচের দিকে তাক করল ‘ক্যামেরা।

    ভূমিধসে পুরোপুরি বদলে গেছে জায়গাটা। একপাশে কাত হয়ে গেছে আরাতামা মারু। বো প্রায় পুরোটাই ঢাকা পড়েছে পলিমাটিতে। শুয়ে আছে সমতল সি-ফ্লোরে। ভূমিধসের ধাক্কায় অন্তত একশো গজ সরে এসেছে জাহাজটা, অনুমান করল তানিয়া।

    ‘আমরা কোথায়, কিছু বুঝতে পারছ?’ জিজ্ঞেস করল ও। ‘ধস নামার আগে বো-র দিকে যাচ্ছিলাম,’ আসিফ বলল। ‘তবে এখন কোথায় ছিটকে পড়েছি বলা মুশকিল।’

    জলকন্যাকে জাহাজের বো পেরিয়ে কাদার মাঠের ওপর নিয়ে গেল তানিয়া। এক ধার থেকে আরেক ধার পর্যন্ত আসা-যাওয়া করল দশ মিনিট, তল্লাশি চালাল। কিন্তু গ্রুপারের কোনও চিহ্ন পাওয়া গেল না কোথাও। অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা—নিজেই নিজেকে খুঁজে বের করার চেষ্টা।

    ‘কিছু দেখতে পাচ্ছ?’ আসিফকে জিজ্ঞেস করল ও। ‘নাহ্।’

    অবাক হবার কিছু নেই। আমবিলিক্যাল কর্ডের খুব সামান্যই হয়তো বেরিয়ে আছে কাদার ওপরে; সি-ফ্লোরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা বালি, পাথর আর জাহাজের ভাঙাচোরা টুকরোর মাঝে সেটাকে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

    কনুইয়ের কাছে শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠল তানিয়া। ভাইজর সরিয়ে তাকাল। পানির একটা ছোট পুকুর তৈরি হচ্ছে ওর শরীরের পাশে। দেয়াল বেয়ে আগের চেয়ে দ্রুত নামছে পানি।

    ভাইজরটা আবার চোখে নামাল ও। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।

    ‘সি-ফ্লোরের কাছাকাছি গেলে হয়তো আরেকটু ভাল করে দেখতে পাব,’ বলল আসিফ।

    প্রস্তাবটা মন্দ নয়। কাছে গেলে ভিজিবিলিটি বাড়বে অনেক, কিন্তু ছোট হয়ে আসবে ফিল্ড অভ ভিউ। ব্যাপারটা অনেকটা মেঝেতে পড়ে থাকা সুঁই খোঁজার মত। দাঁড়িয়ে খোঁজার বদলে হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজতে চাইছে আসিফ, যাতে ভালমত দেখা যায় মেঝে। সমস্যা হলো, তাতে পুরো জায়গাটা কাভার করতে অনেক সময় লাগবে। অত সময় নেই ওদের হাতে।

    ‘আমি আরও ওপরে উঠছি,’ বলল তানিয়া।

    ‘এখনই তো দেখতে পাচ্ছি না,’ প্রতিবাদ করল আসিফ। ‘আরও ওপরে উঠলে….

    ‘কিছুটা বাতাস ছাড়ো। কোত্থেকে বুদ্বুদ বেরুচ্ছে দেখব।’

    দ্বিধা করল আসিফ। ‘বাতাসটাই টিকিয়ে রেখেছে আমাদের। যোগাযোগ হোক বা না-হোক, আমাদের খোঁজে নিশ্চয়ই আরওভি পাঠাবে অ্যাডভেঞ্চারার। ততক্ষণ টিকে থাকতে হবে।’

    ‘লোকেশন জানা না থাকলে আরওভি পাঠিয়েই বা লাভ কী? খুঁজে পাবে না তো।’ পাল্টা যুক্তি দেখাল তানিয়া।

    ‘বেশ,’ হার মানল আসিফ। ‘যতটুকু উঠতে চাও ওঠো। রেডি হয়ে সঙ্কেত দিয়ো। যে-সিলিণ্ডারটা ব্যবহার করছি, ওটা খালি করে দেব। এমনিতেও অর্ধেক খরচ হয়ে গেছে ওটার।’

    আরাতামা মারুর বো-র ওপরে জলকন্যাকে নিয়ে গেল তানিয়া। যতটুকু উঠলে সাগরের তলদেশ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, ততটুকু বাড়াল উচ্চতা।

    ‘রেডি।’

    একটা লিভার টেনে লক করল আসিফ। আরেক হাতে টিপে দিল ইমার্জেন্সি ভেণ্ট সুইচ। পাইপে বাতাসের হিসহিসানি শোনা গেল, বাইরে থেকে ভেসে এল বুদ্‌দ ফাটার শব্দ আর পানির আলোড়ন। পনেরো সেকেণ্ড স্থায়ী হলো শব্দটা, তারপর মিলিয়ে গেল ধীরে ধীরে।

    ‘কিছু দেখতে পাচ্ছ?’

    জলকন্যাকে নিয়ে সামনে এগোল তানিয়া, ক্যামেরা ঘোরাল ডানে-বাঁয়ে, পানি ভেদ করে উঠে আসা বুদ্বুদের স্তম্ভ খুঁজছে। আসিফের চোখও আটকে আছে স্ক্রিনে। কিন্তু দু’জনের কেউই দেখতে পেল না কিছু।

    ‘গেল কোথায়? দেখা তো যাবার কথা,’ বিড়বিড় করল তানিয়া।

    ‘আমিও দেখছি না,’ বলল আসিফ।

    ‘আরেকটা সিলিণ্ডার খালি করো।’

    মাথা নাড়ল আসিফ। ‘দুটো সিলিণ্ডার যাওয়া মানে আমাদের চারভাগের একভাগ বাতাস হারাব।’

    ‘তাতে কিছু যায়-আসে না।’

    ‘যায়-আসে না মানে? আমাদেরকে খুঁড়ে বের করতে সময় লাগবে ওদের। তার আগেই দম আটকে মরতে চাই না।’

    এই প্রথম স্বামীর কণ্ঠে ভয়ের ছাপ পেল তানিয়া। এতক্ষণ শক্ত ছিল সে, হয়তো ওকে সান্ত্বনা দেবার জন্যেই। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, ভয় আসিফও কম পাচ্ছে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলল তানিয়া। সত্যটা জানাতে হবে ওকে।

    ‘এদিকে লিক করছে, আসিফ।’

    ক্ষণিকের নীরবতা। এরপর আসিফ বলল, ‘লিক?’

    মাথা ঝাঁকাল তানিয়া।

    ‘কতটা খারাপ?’

    ‘এখনও ততটা নয়। কিন্তু বাতাস বাঁচানোর কথা ভেবে লাভ নেই। অতক্ষণ টিকব না আমরা।’

    শান্ত ভঙ্গিতে দুঃসংবাদটা হজম করল আসিফ। হাত রাখল লিভারে। ‘কখন ছাড়তে হবে বলো।’

    জলকন্যাকে আবারও বো-র ওপরে নিয়ে এল তানিয়া, এবার মুখ ঘোরাল পোর্ট সাইডে ওদিকটা দেখবে।

    ‘এবার।’

    দু’নম্বর সিলিণ্ডারের বাতাস ছেড়ে দিল আসিফ। আবারও শোনা গেল বুদ্বুদ আর পানির আওয়াজ। জলকন্যাকে তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুরিয়ে আনল তানিয়া। কিছু না পেয়ে ঘুরিয়ে আনল আরেকবার।

    ব্যর্থতা। কোথাও দেখা যাচ্ছে না বুদ্বুদের সারি।

    নতুন করে আতঙ্ক চেপে বসল তানিয়ার মনে। হয়তো বো-র ধারেকাছেই নেই গ্রুপার। ভূমিধসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছে জাহাজ থেকে অনেক দূরে। এমনও হতে পারে, গোটা জাহাজটার তলায় চাপা পড়েছে ওরা।

    ভাবনাটা শেষ হবার আগেই মিটমিট করে উঠল স্ক্রিন। কিছু একটা বাধা দিচ্ছে ভিডিও ফিডকে। চকিতে ঘোলা হয়ে গেল ছবি, তারপর আবার স্বাভাবিক হলো। পুরোপুরি নয়, স্ক্রিনের ওপরের একটা অংশ ঘোলা রয়ে গেল।

    ক্যামেরার লেন্স ফেটে গেছে? ভয় হলো তানিয়ার। তা হলে ফাটল দিয়ে গ্রুপারের মত জলকন্যার ভেতরেও ঢুকবে পানি, ধ্বংস করে দেবে যন্ত্রটাকে। কন্ট্রোল নিয়ে একটু খেলল ও। কোনও সমস্যা পেল না। ক্যামেরাও কাজ করছে ঠিকমত, শুধু ওই ঘোলা জায়গাটা ছাড়া। কী ওটা?

    আচমকা উত্তেজনা অনুভব করল তানিয়া। বুঝতে পেরেছে কী হয়েছে… একটা বুদ্বুদ আটকে গেছে ক্যামেরার লেন্সে। ভিডিওটা রিপ্লে করে দেখল, স্লো-মোশনে। কোনও ভুল নেই। বুদের সারি চলে গেছে ক্যামেরার সামনে দিয়ে, সেজন্যেই বাধা পেয়েছিল আলো।

    তাড়াতাড়ি জলকন্যাকে সরাসরি নিচের দিকে তাক করল ও। ওই তো, পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে গ্রুপারের বেঢপ আকৃতি—পড়ে আছে আরাতামা মারুর বো-র পাশে। নাক গুঁজে রেখেছে কাদায়, ভেঙে পড়া একটা লোহার বিমের তলায়। ওটাই আটকে রেখেছে সাবমারসিবলটাকে।

    আসিফও দেখতে পেয়েছে। হাসি ফুটল তার ঠোঁটে। ‘কখনও কি বলেছি, তোমার তুলনা হয় না?’

    ‘শত-সহস্রবার,’ তানিয়াও হাসল। ভার্চুয়াল কন্ট্রোলের সাহায্যে নিচে নামাচ্ছে জলকন্যাকে।

    ‘জলকন্যায় কাটিং টর্চ আছে?’

    ইতিবাচক ভঙ্গিতে মাথা ঝোঁকাল তানিয়া। নিচে নামার পর অদৃশ্য বাটন টিপে বের করে আনল টর্চটা। চোখ ধাঁধানো আলো ছড়াল অ্যাসিটিলিনের শিখা, সেটার সাহায্যে কাটতে শুরু করল বিমটা। মাত্র দু’মিনিট লাগল, তারপরেই দু’টুকরো হয়ে ওটা খসে পড়ল গ্রুপারের দু’পাশে। বয়ান্সির টানে এক ঝটকায় ওপরে উঠল সাবমারসিবল, কিন্তু কিছুদূর গিয়েই আবারও টান খেয়ে থেমে গেল।

    জলকন্যার মুখ ঘোরাল তানিয়া। স্ক্রিনে দেখা গেল জট পাকানো তারের কুণ্ডলী, পেঁচিয়ে রয়েছে সাবমারসিবলের লেজে।

    ‘ওই যে,’ বলল আসিফ বলল। ‘ওগুলোর জন্যেই তখনও পালাতে পারিনি আমরা।’

    মাথা ঝাঁকাল তানিয়া, ওদিকে নিয়ে গেল জলকন্যাকে। টর্চের সাহায্যে কাটতে থাকল তার। সহজে কাটা যাচ্ছে, কিন্তু সময় লাগছে অনেক। যেন নুডলসের প্যাঁচে আটকা পড়েছে গ্রুপার। একটা কাটে তো আরেকটা এসে দখল করে সে- জায়গা। সময় লাগল অনেক। তবে শেষ তারটা কাটা হতেই ঝাঁপ দিল সাবমারসিবল। শরীর থেকে লোহালক্কড় আর কাদা ঝরিয়ে সবেগে ছুটল ওপরে।

    ‘উঠছি আমরা,’ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আসিফ।

    জলকন্যার অটো-সারফেস মোড অন করল তানিয়া। চোখ থেকে খুলে ফেলল ভাইজর। ভিউপোর্টে বালির বদলে পানি দেখতে পেয়ে অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করল। বড় করে শ্বাস ফেলল একটা।

    পরক্ষণে বিচ্ছিরি একটা শব্দ ভেসে এল গ্রুপারের শরীর থেকে, যেন ধাতব কিছু ভেঙে দু’টুকরো হলো। মাথা ঘোরাল তানিয়া। পানির ক্ষীণ ধারাটা এবার প্রবল স্রোত হয়ে ঢুকতে শুরু করেছে সারমারসিবলের ভেতরে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৩ – ছায়াঘাতক
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.