Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ধ্বংসযজ্ঞ – ২০

    বিশ

    তীরবেগে সারফেসের দিকে উঠছে গ্রুপার। ব্যালাস্ট থেকে সমস্ত ওজন ফেলে দেয়া হয়েছে, ফুল পাওয়ারে চলছে ইলেকট্রিক মোটর—নাক উঁচু করে মিনিটে তিনশো ফুট বেগে ছুটে চলেছে সাবমারসিবলটা।

    যত ওপরে উঠছে, ততই বাইরে প্রেশার কমছে পানির, তবে তাতে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। বিশ মিনিট পেরুবার পরেও সাগরের দশ হাজার ফুট গভীরে রয়ে গেছে ওরা, ফাটল দিয়ে ঢুকতে থাকা পানির বেগ বাড়ছে।

    ‘ফ্ল্যাঞ্জের জয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে পানি, তাই না?’ বলল আসিফ। ‘ওটাই সবচেয়ে দুর্বল জায়গা।’

    খোলের দুটো সেকশন যেখানে জোড়া দেয়া হয়, সেটাকেই ফ্ল্যাঞ্জ বলে।

    তানিয়া বলল, ‘আমাদের কাছে ক্ল্যাম্প আছে। লিকটা সিল করে দেয়ার চেষ্টা করতে পারি।’

    ‘গুড আইডিয়া।’

    দেয়ালের দিকে হাত বাড়াল আসিফ, ল্যাচ সরিয়ে একটা প্যানেল খুলল। তলার খোপে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা ধরনের টুল—ইমার্জেন্সি রিপেয়ারের জন্যে। বড় বড় চারটে ক্ল্যাম্প আছে ওখানে, ফ্ল্যাঞ্জে লাগাবার উপযোগী। সাবমারসিবলের ডিজাইনাররা জানত, পানির গভীরে কোনও সমস্যা দেখা দিলে সেটা ফ্ল্যাঞ্জ দিয়েই শুরু হবে। ক্ল্যাম্পগুলো খোপ থেকে বের করে আনল ও। সাধারণ স্ক্রু- ক্ল্যাম্পের মতই দেখতে; পার্থক্য শুধু এ-ই যে, স্ক্রু-ড্রাইভারের বদলে একটা হ্যাণ্ডেল দিয়ে টাইট করতে হয় ওগুলোকে—অনেকটা গাড়ি উঁচু করার জ্যাকের মত।

    একটা ক্ল্যাম্প তানিয়ার হাতে তুলে দিল আসিফ, নিজে রইল কন্ট্রোলে। বলল, ‘ফ্ল্যাঞ্জে খাঁজ কাটা আছে, ক্ল্যাম্প বসানোর জন্যে। জায়গামত বসিয়ে স্ক্রু টাইট করে দাও।’

    মাথা ঝাঁকিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল তানিয়া। আঙুল দিয়ে হাতড়ে খুঁজে বের করল একটা খাঁজ, ক্ল্যাম্পটা সেখানে বসাল।

    ‘পুরো টাইট করব, নাকি একটু ঢিলে রেখে দেব?’

    ‘না, না। যতটা পারো শক্ত করে আটকাও।

    মাথা ঝাঁকাল তানিয়া। গ্রুপার একটু কাত হয়ে গেছে, টের পেল আসিফ। চোখ বোলাল কন্ট্রোল প্যানেলে। এখনও পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উঠছে সাবমারসিবল, তবে ডানে ঘুরে গেছে খানিকটা। অনুমান করল, একটা কন্ট্রোল ফিন নষ্ট হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় কারেকশন দিয়ে সিধে করল নিজেদের। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল স্ত্রীর দিকে।

    ‘কদ্দূর?’ জানতে চাইল।

    হ্যাণ্ডেলে শেষ একটা মোচড় দিল তানিয়া। ‘একটা আটকালাম।’

    পানির ধারার দিকে তাকাল আসিফ-কমেনি, বরং মনে হচ্ছে বেড়েছে। কেবিনের পেছন দিকে তৈরি হচ্ছে ছোট্ট একটা পুকুর। অন্তত দু’গ্যালন পানি জমে গেছে ওখানে। তাড়াতাড়ি আরেকটা ক্ল্যাম্প তুলে দিল তানিয়ার হাতে। গ্রুপার তখন ন’হাজার ফুটে পৌঁছেছে।

    ‘জলদি হাত চালাও,’ বলল ও। ‘উল্টোদিকের দেয়ালে লাগাও এটা।’

    .

    রানার মনে হলো, যেন স্লো-মোশনে ঘটছে সব। চোখের কোণ দিয়ে লোহার পাইপটা ছুটে আসতে দেখেছে ও-গাঁট্টাগোট্টা শরীরের এক লোক নবীশ বেসবল খেলোয়াড়ের মত চালাচ্ছে ওটা। যতটুকু প্রয়োজন, তারচেয়ে বড় একটা অর্ধবৃত্ত রচনা করেছে। তাই আঘাত সামলাবার জন্যে শরীর শক্ত করবার সময় পেয়েছে ও, কিন্তু সেটাকে ফাঁকি দিতে পারেনি।

    হাঁটু গেড়ে যখন বসে পড়ল, চেতনার বেশিরভাগ আচ্ছন্ন হয়ে রইল পেট থেকে ছড়িয়ে পড়া তীব্র ব্যথায়; যতটুকু বাকি রইল, তাতে লামিয়ার তীক্ষ্ণকণ্ঠের চিৎকার শুনতে পেল, সেই সঙ্গে এ-ও বুঝল, পরের আঘাতটা ওর খুলি গুঁড়িয়ে দেবে। উপলব্ধিটা যন্ত্রের মত সচল করে তুলল ওর শরীর, অবচেতনভাবে।

    মাটিতে হাঁটু ঠেকিয়েই ঘুরে গেল ও, হামলাকারীর পাদুটো দেখতে পেয়ে ঝাঁপ দিল, কাঁধ দিয়ে সজোরে গুঁতো মারল লোকটার হাঁটুতে। বেমক্কা সেই গুঁতোয় অদ্ভুত ভঙ্গিতে পেছনে ভাঁজ হয়ে গেল তার পা, বিচ্ছিরি শব্দ তুলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল হাঁটুর জয়েন্ট। কাতর আর্তনাদ করে চিৎ হয়ে পড়ল লোকটা।

    এক লাফে তার বুকের ওপর চড়ে বসল রানা। এক ঘুসিতে সমান করে দিল উঁচু নাক। পরের ঘুসিটা মারল কপালের একপাশে। কেঁপে উঠে নিস্তেজ হয়ে গেল লোকটা। তৃতীয় আঘাতের সুযোগ পেল না রানা, পেছন থেকে আরেকজন উদয় হয়েছে। সাপের মত ছোবল মারল লোকটার হাত, গলা পেঁচিয়ে স্লিপার হোল্ডে আটকে ফেলল ওকে।

    ‘পালাও!’ কোনোমতে লামিয়াকে বলল ও, ব্যাঙের মত ঘরঘর করছে গলা। শ্বাস নিতে পারছে না।

    হাতের বাঁধন আলগা করার চেষ্টা করল রানা, থাবা মারল লোকটার বাহুতে, খামচে ধরে সরাতে চাইল… অযথাই। এই প্যাচ থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। তা ছাড়া পেটের পেশিতে অসহ্য ব্যথা, বাতাসের অভাবে হাঁসফাঁস করছে ফুসফুস, শরীরে কোনও শক্তি পাচ্ছে না ও।

    আরও চেপে বসল হামলাকারীর হাত, মগজে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রানার। পাগল হয়ে উঠল ও, ঝটকা দিয়ে ঘুরে গেল খানিকটা, এরপর হেলে পড়ল পেছনদিকে। পাশেই একটা ভ্যান পার্ক করা আছে, ওটার গায়ে আছড়ে ফেলতে চাইছে লোকটাকে। ধাক্কা একটু লাগল, তবে যথেষ্ট জোরালো নয়। আরেকবার চেষ্টা করল, এবার আরও আস্তে লাগল ধাক্কা। শক্তি নিঃশেষ হয়ে এসেছে রানার।

    মাটিতে আঁচড় কাটল ও-পাথর, লাঠি… যে-কোনও অস্ত্র পেলেই চলে। কিন্তু পেল না কিছুই। চোখের সামনে ধীরে ধীরে নেমে আসছে আঁধার।

    হঠাৎ একটা ভোঁতা আওয়াজ হলো। সঙ্গে সঙ্গে হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেল লোকটার। গাছ থেকে যেন খসে পড়ল একটা মরা লতা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিল, রানা। ঘুরে তাকাবার শক্তি পেল না, দু’হাত মাটিতে রেখে উবু হলো, হাঁপানি রোগীর মত ঘড় ঘড় করে শ্বাস ফেলছে।

    পেলব দুটো হাত এগিয়ে এল, ওকে সাহায্য করল দাঁড়াতে। শোনা গেল মিষ্টি কণ্ঠ।

    ‘আমার কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়াও।’

    চোখ পিট পিট করল রানা। দৃষ্টি পরিষ্কার হয়ে আসছে। লামিয়াকে দেখতে পেল, হাতে প্রথম লোকটার সেই লোহার পাইপ। ওটা দিয়েই বাড়ি মেরেছে দ্বিতীয়জনের মাথায়। দ্বিরুক্তি না করে মেয়েটার কাঁধের ওপর একটা হাত তুলে দিল। খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগোল লামিয়ার গাড়ির দিকে।

    রানাকে প্যাসেঞ্জার সিটে বসাল মেয়েটা। পাইপটা ছুঁড়ে ফেলল পেছনের সিটে। তারপর উঠে বসল স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে। চাবি ঘোরাতেই জ্যান্ত হয়ে উঠল ইঞ্জিন। গিয়ার দিয়ে পার্কিং লট থেকে গাড়ি বের করে আনল লামিয়া। ছুটল আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে।

    লক্ষ করল না, পার্কিং লটে দাঁড়ানো দুটো অডি গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠেছে। ওদের পিছু নিল গাড়িদুটো।

    .

    তৃতীয় ক্ল্যাম্পটা জায়গামত বসিয়ে সর্বশক্তিতে হ্যাণ্ডেল ঘোরাচ্ছে তানিয়া। কপালে ঘাম জমেছে ওর, শ্বাস ফেলছে জোরে জোরে, দু’হাতের পেশিতে অসহ্য জ্বালাপোড়া। পানির ধারা চেক করল। মাঝে অনেকটাই কমে গিয়েছিল, এখন আবার বাড়ছে। দ্রুত বেগে ঢুকছে কেবিনের ভেতরে।

    ‘চার নম্বরটা দাও,’ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল ও। দেখা যাক, ওটায় শেষ পর্যন্ত কাজ হয় কি না।

    শেষ ক্ল্যাম্পটা ওকে এগিয়ে দিল আসিফ। ‘নাও।’

    খাঁজ খুঁজে নিয়ে ক্ল্যাম্পটা বসাল তানিয়া। জানতে চাইল, ‘ডেপথ কত আমাদের?’

    ‘চার হাজার ফুট।’

    হ্যাণ্ডেল ঘোরাতে শুরু করল তানিয়া। ধীরে ধীরে ক্ল্যাম্পের চোয়াল চেপে বসল ফ্ল্যাঞ্জের গায়ে। ঘোঁৎ ঘোঁৎ জাতীয় একটা আওয়াজ করে হ্যাণ্ডেলে শেষ মোচড়টা দিল ও। এরপর নেতিয়ে পড়ল।

    ‘ব্যস, যা পেরেছি করেছি।’

    পিছিয়ে এসে লিকের অবস্থা দেখল। থামেনি, তবে এখন আর কলের পানির মত ঝরঝর করে ঢুকছে না।

    হামাগুড়ি দিয়ে স্বামীর কাছে এগোল তানিয়া। ‘আমাদের রেট অভ ক্লাইম কত এখন?’

    ‘মিনিটে দু’শো ফুট,’ শান্ত গলায় বলল আসিফ।

    ‘বলো কী!’ আঁতকে উঠল তানিয়া। ‘তখন না তিনশো ফুট ছিল? কমে গেল কী করে? মোটরে সমস্যা দেখা দিয়েছে?’

    ‘না। ওজন বেড়েছে আমাদের।’

    সাবমারসিবলের পেছনদিকে ইশারা করল আসিফ। ওদিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে গেল তানিয়া। অন্তত ত্ৰিশ গ্যালন পানি জমেছে গ্রুপারের টেইল এণ্ডে। তারমানে মোটামুটি আড়াইশো পাউণ্ড ওজন বেড়ে গেছে ওদের। বাড়ছে ক্রমাগত।

    ঠোঁট কামড়াল তানিয়া। বুঝতে পারছে, ওদের লড়াই স্রেফ লিকের বিরুদ্ধে নয়, সময়ের বিরুদ্ধেও। ক্রমশ ওজন বাড়ছে সাবমারসিবলের, গতি কমছে। একটা সময় ভারী পাথরের মত তলিয়ে যাবে অতলে। কথা হলো, তার আগেই ওরা সারফেসে পৌঁছুতে পারবে কি না।

    .

    পাহাড়ি রাস্তায় কর্কশ শব্দ তুলছে লামিয়ার টয়োটা গাড়িটার টায়ার। ধীরে ধীরে মাথা পরিষ্কার হয়ে আসছে রানার। চোখ তুলে রিয়ারভিউ মিররে তাকাল। দেখতে পেল পেছনের হেডলাইটগুলো।

    ’বিপদ কাটেনি,’ জানাল ও।

    লামিয়াও চোখ বোলাল আয়নায়। নিচু গলায় গাল দিল ভাগ্যকে। ‘ভুল করেছি,’ বলল ও। ‘রেস্টুরেন্টের ভেতরে ফিরে গেলেই ভাল করতাম।’

    একমত হতে পারল না রানা। কাস্টোমার, ওয়েইটার আর কিচেন স্টাফ মিলে অন্তত বিশজন নিরীহ মানুষ ছিল ওখানে। লড়াই বাধলে আহত-নিহত হতো তারা।

    ‘এগোতে থাকো,’ লামিয়াকে বলল ও। ‘এখানে ধরা পড়লে মরব। তারচেয়ে শহরে পৌঁছুনোর চেষ্টা করা যাক। ওখানে পুলিশ আছে।’

    অ্যাকসেলারেটর চেপে রেখেছে লামিয়া, ওঠার সময় যেভাবে এসেছিল, ঠিক সেভাবেই বিপজ্জনক ভঙ্গিতে পার হচ্ছে একেকটা বাঁক। ক্ষণিকের জন্যে তাতে দূরত্ব বাড়লেও সোজা রাস্তায় খামতি পুষিয়ে নিচ্ছে অডিগুলো—ওদের গাড়ির চেয়ে ওগুলোর স্পিড বেশি।

    পর পর কয়েকটা তীক্ষ্ণ বাঁক পেরিয়ে এল লামিয়া, দম ফেলার সামান্য সুযোগ মিলল। তবে রানার মনে পড়ল, এই রুটের সবচেয়ে দীর্ঘ সরল রাস্তাটা সামনেই।

    ‘অস্ত্ৰ-শস্ত্র কিছু আছে তোমার কাছে?’ জানতে চাইল ও।

    মাথা নাড়ল লামিয়া।

    রানারও হাত খালি। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাপারে সান্তা মারিয়ার নিয়মকানুন খুব কড়া। লাইসেন্স ছাড়া বন্দুক-পিস্তল আনা যায় না দ্বীপে। একদিক থেকে তাতে বোধহয় ভালই হয়েছে। নইলে রেস্টুরেন্টের বাইরে লোহার পাইপের বদলে পিস্তলের গুলি খেতে হতো ওকে। কিন্তু একই সঙ্গে খারাপ দিকটা হলো, এ-মুহূর্তে প্রতিরোধ গড়ার মত কিছু নেই ওদের সঙ্গে।

    ‘আরেকটা সোজা রাস্তায় পৌছুচ্ছি,’ জানাল লামিয়া।

    ব্রেকে হালকা চাপ দিয়ে বনবন করে স্টিয়ারিং ঘোরাল ও। অ্যাসফল্টের ওপর দিয়ে পিছলে গেল টয়োটার চাকা। মোড় পেরিয়ে এল নিমেষে। আবার অ্যাকসেলারেটর চাপল ও। ক্রুদ্ধ পশুর মত আগে বাড়ল গাড়িটা।

    পেছনে ভারী ইঞ্জিনের গর্জন শোনা গেল, রিয়ারভিউ মিররে প্রতিফলিত হলো চোখ ধাঁধানো আলো। কাছে চলে আসছে। মোড় পেরিয়ে প্রবল বিক্রমে ছুটে আসছে অডিদুটো।

    হঠাৎ চিড় ধরল রানার পাশের কাঁচে। কানে ভেসে এল গাড়ির চেসিস, ভেদ করে গুলি ঢোকার শব্দ। সিটের ওপর কুঁজো হয়ে গেল ও। ওর অনুমান ভুল প্রমাণ হয়েছে, বন্দুক নিয়েই এসেছে শত্রুরা। লোহার পাইপটা সম্ভবত অন্য কোনও কারণে ব্যবহার করা হয়েছিল- হয়তো ওকে পিটিয়ে মারার খায়েশ হয়েছিল ওদের।

    গাড়িকে ডানে-বাঁয়ে দোল খাওয়াচ্ছে লামিয়া, যাতে ওদেরকে সহজ নিশানায় না পায় বন্দুকধারী। সিটের ওপর শরীর ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল রানা, ভালমত দেখতে চায় ধাওয়াকারীদের। সোজা হতে গিয়ে চোখে পড়ল লোহার পাইপটা—ব্যাকসিটের ওপর পড়ে আছে। থাবা দিয়ে তুলে নিল ওটা।

    পালা করে সাইডভিউ মিরর আর হাতের পাইপের দিকে তাকাল ও। একটা বুদ্ধি খেলতে চাইছে মাথায়। সামনের অডিটা টয়োটার প্যাসেঞ্জার সাইড বরাবর এগিয়ে আসছে।

    ‘ব্রেক চাপো,’ লামিয়াকে বলল ও।

    ‘কী!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মেয়েটা।

    ‘যা বলছি, করো। হার্ড ব্রেক।’

    সিটের ওপর নড়েচড়ে বসল লামিয়া, দু’হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল স্টিয়ারিং হুইল। তারপর ধাম করে চেপে ধরল ব্রেক পেডাল। একই সঙ্গে নিজের সাইডের দরজা হাট করে খুলে দিল রানা।

    যেন লাগাম টেনে ধরা হয়েছে, অ্যাসফল্টে ঘষা খেল কারের টায়ার, ধোঁয়া তুলল। ঘষটাতে ঘষটাতে থমকে দাঁড়াচ্ছে গাড়ি। অপ্রস্তুত হয়ে গেল অডির ড্রাইভার, সে-ও ব্রেক চাপল, তবে দেরিতে। অডির গুঁতো খেয়ে ছিঁড়ে চলে গেল হাট করে খোলা দরজাটা।

    ‘মুভ!’ চেঁচাল রানা।

    ব্রেক ছেড়ে অ্যাকসেলারেটরে পা দিল লামিয়া। আবারও আগে বাড়ল গাড়ি। পাশে চলে এল অডির। দরজাহীন ফাঁক দিয়ে শরীর বের করে দিল রানা, একহাতে গারমেন্ট হ্যাণ্ডেল ধরে প্রায় দাঁড়িয়ে পড়েছে, আরেক হাতে পাইপ—টেনিস খেলোয়াড়ের মত ব্যাকহ্যাণ্ডে চালাল।

    অডির উইণ্ডশিল্ডে লাগল আঘাত, চোখের পলকে মাকড়সার জালের মত ফাটল ধরল পুরোটায়, ড্রাইভার কিছু দেখতে পাচ্ছে না সামনে। মাতালের মত দোল খেল অডি, ডানে গিয়ে আবার বাঁয়ে ছুটে এল, পাশ থেকে গুঁতো দিতে চলেছে টয়োটাকে। নির্দয়ের মত আবারও পাইপ চালাল রানা—এবার ড্রাইভারের পাশের জানালায়। ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ল কাঁচ, লোকটার মাথায় গিয়ে লাগল বাড়ি।

    এবার আরও ভীষণভাবে দুলে উঠল অডি, ছুটল পথের কিনারের দিকে, ঢালে পড়ে যাবে। শেষ মুহূর্তে উল্টোদিকে পাগলের মত স্টিয়ারিং ঘোরাল ড্রাইভার। পথের কিনার ছেড়ে এবার বামপাশের ঢালু পাহাড়ি প্রাচীরের দিকে ছুটল গাড়ি, কোনাকুনিভাবে উঠে গেল অনেকটা, তারপর উল্টে গেল। থামল না এরপরেও, ট্যাপ খেয়ে যাওয়া ছাতের ওপর ভর করে ছুটল কিনারার দিকে। রাস্তার ওপর ছড়িয়ে পড়ল ভাঙা কাঁচ আর লোহালক্কড়ের টুকরো।

    টয়োটা এগিয়ে গেছে। মাথা বের করে পেছনে তাকাল রানা। ঘষটাতে ঘষটাতে ঢালের কিনারে গিয়ে থেমে গেছে অডি, স্রেফ কপালজোরে বেঁচে গেছে চরম বিপর্যয় থেকে। সোজা হয়ে বসল ও।

    ‘একটা খতম,’ বলে হাসল।

    বিধ্বস্ত গাড়িটাকে পাশ কাটিয়ে এবার দ্বিতীয় অডিটা এগোতে শুরু করেছে, কমিয়ে আনছে দূরত্ব। আগের কৌশলে কাজ হবে না, কী করা যায় ভাবছে রানা। সামনে তাকাতেই দু’জোড়া হেডলাইট এগিয়ে আসতে দেখল। সাধারণ কোনও দ্বীপবাসী বা টুরিস্টের গাড়ি নয়—এক নজরেই বুঝে ফেলল। পাশাপাশি এগোচ্ছে গাড়িদুটো, যেন চেষ্টা করছে পরস্পরকে অতিক্রম করার… আসলে ব্লক করে রেখেছে এগোবার রাস্তা।

    খোলা ডোরওয়ে দিয়ে হু হু করে ঢুকছে পাগলা হাওয়া। গলা চড়িয়ে রানা বলল, ‘আমাদেরকে দু’দিক থেকে আটকাতে চাইছে ওরা।’

    ক্ষণিকের জন্যে শঙ্কা ফুটল লামিয়ার চেহারায়, তারপরেই ভর করল কাঠিন্য। হাত বাড়িয়ে হাই বিম অন্ করে দিল ও, শক্ত করে আঁকড়ে ধরল স্টিয়ারিং হুইল। অ্যাকসেলারেটরে চাপ বাড়িয়ে বলল, ‘থামছি না কিছুতেই।’

    চোয়াল শক্ত হলো রানার। সামনের গাড়িদুটোও থামবে বলে মনে হচ্ছে না ওর। তুমুল বেগে ওদের দিকে ছুটে আসছে ওরা। ঘটতে চলেছে সংঘর্ষ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৩ – ছায়াঘাতক
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.