Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ধ্বংসযজ্ঞ – ২২

    বাইশ

    পাহাড়ি চাতাল থেকে একটা ঘাসে ছাওয়া জমির ওপরে নেমে পড়েছে রানা আর লামিয়া। শুয়ে পড়েছে উপুড় হয়ে। ধুলো আর অন্ধকারের জন্যে ওদেরকে দেখা যাচ্ছে না। আগুয়ান গাড়িদুটো সতর্ক, পাথরে ছাওয়া রাস্তা ধরে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। দুটোরই ফ্রন্ট-এণ্ড দুমড়ে গেছে, একটা গাড়িতে জ্বলছে মাত্র একটা হেডলাইট। টয়োটার সঙ্গে সংঘর্ষে উপকারই হয়েছে রানা-লামিয়ার, ভড়কে গেছে গাড়ির আরোহীরা।

    ওদের মনে কী চলছে, অনুমান করতে পারছে রানা। নিশ্চয়ই বিস্ময় নিয়ে খুঁজছে অডিটাকে। ছোট্ট একটা গাড়ি নিয়ে শিকার কীভাবে অদৃশ্য হয়ে গেল, সেটা ভেবেও তল পাচ্ছে না।

    গাড়িদুটো ওদেরকে পেরিয়ে চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল দু’জনে, তারপর উঠে দাঁড়াল। ছুটতে শুরু করল দ্রুত পায়ে। একটা সাইক্লোন ফেন্সের কাছে পৌঁছুল।

    ফেন্সের মাঝ দিয়ে ওপারে তাকাল রানা। হ্যাঙারের মত একটা ছোট বিল্ডিং দেখতে পাচ্ছে—সাঁঝের আঁধারে দাঁড়িয়ে আছে নিস্পন্দভাবে। একটা সাইনবোর্ডও দেখল: আল্ট্রালাইট চার্টারস্। ঘণ্টায় পঞ্চাশ ডলার।

    ‘এসো,’ লামিয়াকে বলল ও। ‘ওপারে যেতে হবে।’

    দু’হাত তুলে ফেন্সের মাথা ধরল লামিয়া, ছোট ছোট খোপগুলোয় পা বাধিয়ে উঠে গেল তরতর করে। ওপরে উঠে এক লাফে নামল ওপাশে। তার স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি দেখে খুশি হলো রানা, সঙ্গে অ্যাথলিট থাকার এই সুবিধে।

    কয়েক মুহূর্ত পর ও নিজেও বেড়া ডিঙাল, নামল লামিয়ার পাশে। চোখ পড়ল মেয়েটার পায়ের দিকে।

    ‘তোমার জুতো কোথায়?’ বিস্মিত গলায় জানতে চাইল। ‘জুতো?’

    ভ্রূকুটি করল লামিয়া। ‘মানে, আমার দামি ইটালিয়ান স্টিলেটোগুলো?’

    ‘হ্যাঁ। কোথায়?’

    ‘গাড়ির ভেতরেই রয়ে গেছে,’ ঠাট্টার সুরে বলল লামিয়া। ‘তুমি অমন করে টানলে… জুতো আর নিয়ে আসার সময় পাইনি।’

    এতক্ষণে লক্ষ করল রানা, মেয়েটার জামা ছিঁড়ে গেছে, ঘষা খেয়ে রক্ত বেরুচ্ছে উন্মুক্ত কনুই আর বাহু থেকে। রক্ত বেরুচ্ছে রানার কাঁধ আর হাঁটু থেকেও, হাতের তালুতে লেগে আছে ছোট ছোট পাথরের কণা। শরীরের এখানে-ওখানে ব্যথা, তবে বেঁচে আছে এটাই বড় কথা।

    ‘জান নিয়ে ফিরতে পারলে তোমাকে নতুন জুতো কিনে দেব, বলল ও। ‘চলো।’

    দৌড়ে হ্যাঙারের কাছে চলে গেল দু’জনে, বড় একটা টাঙ্কির পেছনে লুকাল। কড়া গন্ধ ভেসে আসছে টাঙ্কির ভেতর থেকে। রানা বুঝল, ওটা অকটেনে ভরা। আল্ট্রালাইট এয়ারক্র্যাফটের জ্বালানি।

    আড়াল থেকে উঁকি দিল ওরা। দেখল, শত্রুদের গাড়িদুটো পাহাড়ি চাতালের কিনারে গিয়ে থামল। দু’জন করে মানুষ নেমে এল গাড়ি থেকে। একজনের হাতে ফ্ল্যাশলাইট, বাকি তিনজনের হাতে ছোট ব্যারেলের অ্যাসল্ট ওয়েপন।

    ‘বসে আছি কেন?’ অধৈর্য গলায় বলল লামিয়া।

    ‘নোড়ো না,’ ওকে বলল রানা। ‘ওরা দেখে ফেলবে। কোনও শব্দও কোরো না।’

    চাতালের ধারে গিয়ে নিচে উঁকি দিল লোকগুলো। বিধ্বস্ত গাড়িদুটোয় আগুন ধরে গেছে, ধোঁয়া উড়ছে। আলোর আভায় অবয়ব ফুটে উঠেছে লোকগুলোর।

    ‘নিচে পড়ে গেছে,’ বলল একজন।

    জবাবে আরেকজন কিছু একটা বলল, তবে এতদূর থেকে ঠিকমত শোনা গেল না। ফ্ল্যাশলাইটঅলা লোকটা এবার এগিয়ে গেল সামনে।

    ‘একটা নাইট ভিশন স্কোপ আনো,’ বলল সে। সঙ্গীরা ঢিমেতালে নড়াচড়া করছে দেখে খেঁকিয়ে উঠল পরক্ষণে। ‘জলদি! সারারাত দাঁড়িয়ে থাকব নাকি এখানে!’

    গলাটা চিনতে অসুবিধে হলো না রানার। আরাতামা মারুতে শুনেছিল এই কণ্ঠ—জলদস্যুদের সেই লিডারের কণ্ঠ!

    ‘হুম, তা হলে তুমি মরোনি?’ আনমনে বলে উঠল ও। খুব যে অবাক হয়েছে, তা-ও নয়। জলদস্যুদের বোট বিস্ফোরিত হওয়ায় খটকা লেগেছিল আগেই। সন্দেহ হয়েছিল, ব্যাপারটা সাজানো কি না। প্রফেশনাল একদল মার্সেনারি ওভাবে মারা পড়বে, তা মেনে নিতে পারেনি।

    ‘তুমি এদেরকে চেনো?’ বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল লামিয়া।

    ‘আগেও শুনেছি লিডারটার গলা,’ তিক্ত গলায় বলল রানা। ‘সপ্তাহখানেক আগে মোলাকাত হয়েছে ওর সঙ্গে। মাঝসাগরে একটা জাহাজে লড়াই হয়েছিল। সবাই ভেবেছিল, বিস্ফোরণে মারা গেছে সে। এখন বুঝতে পারছি, ওটা ছিল একটা নাটক… আমাদেরকে ধোঁকা দেবার জন্যে।’

    ‘তারমানে, এরা তোমার পেছনে লেগেছে?’

    ঘাড় ফিরিয়ে লামিয়ার দিকে তাকাল রানা। ‘কেন, তুমি কি ভেবেছিলে, ওরা তোমার জন্যে এসেছে?’

    একটু যেন মনঃক্ষুণ্ণ হলো লামিয়া। ‘ভাবতেই পারি। রাশান সায়েন্টিফিক কমিউনিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আমি। মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, আমাকে কিডন্যাপ করলে তোমার চেয়ে বেশি মুক্তিপণ পাওয়া যাবে।’

    একটু হাসল রানা। ‘তা ঠিক। সরি, তোমাকে ছোট করে কিছু বলিনি।’

    মাথা ঝাঁকাল লামিয়া। আবার মুখ ঘুরিয়ে চাতালের দিকে তাকাল রানা। ধোঁয়া আর আলোর আভায় পরিষ্কার ফুটে উঠেছে লোকগুলোর আকৃতি। একটা রাইফেল না থাকায় আফসোস হলো ওর, টার্গেট প্র্যাকটিসের ভঙ্গিতে অনায়াসে ফেলে দিতে পারত সবক’টাকে। এখন অস্ত্র বলতে রয়েছে স্রেফ লোহার পাইপটা। আরেকটা জিনিস রয়েছে—আরাতামা মারুতে দুর্বৃত্তদের লিডারের রেখে যাওয়া সেই ছুরিটা… জিনিসটা সবসময় সঙ্গে রাখছে ও, লোকটার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। তবে ছুরি বা পাইপ, কোনোটাই চারজন সশস্ত্র শত্রুর বিরুদ্ধে কাজে আসবে না।

    লিডারকে নাইট ভিশন স্কোপ পরতে দেখা গেল। চাতালের ধারে গিয়ে নিচে তাকাল সে। একে একে দেখল দুটো গাড়িরই ধ্বংসাবশেষ।

    ‘মরে গেছে,’ পাশ থেকে বলল একজন। ‘কোনও সন্দেহ নেই।’

    ‘অতটা নিশ্চিত হয়ো না,’ বলল লিডার।

    ‘কত ওপর থেকে পড়েছে, দেখেছেন? কারও পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না।’

    চোখ থেকে নাইট ভিশন নামিয়ে উল্টো ঘুরল লিডার। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল সঙ্গীটিকে। তীক্ষ্ণ চোখে দেখল মাটি। বলল, ‘ঠিকই বলেছ, এত ওপর থেকে পড়লে বাঁচার কথা না। সমস্যা হলো, ওরা পড়েনি।’ স্কোপটা গুঁজে দিল সঙ্গীর হাতে। ‘ভাল করে দেখো, নিচে ওদের গাড়ির ভেতরে বা বাইরে কোনও লাশ নেই।’

    ‘ধ্যাত্তেরি!’ সখেদে বলল রানা। ধোঁকাটা ধরা পড়ে গেছে। এবার নিশ্চয়ই ওদেরকে আবার খুঁজতে শুরু করবে লোকগুলো। পুলিশ আসতে অনেক সময় নেবে, ততক্ষণ এদের সঙ্গে লুকোচুরি করে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

    মাঠের দিকে ঘুরে গেছে লিডারের হাতের ফ্ল্যাশলাইট, টাঙ্কির পেছনে নিচু হয়ে গেল রানা। আলোটা অন্যদিকে সরে গেলে লামিয়ার হাত ধরল।

    ‘আশা করছি তোমার উচ্চতাভীতি নেই।’

    ‘কেন?’

    জবাব না দিয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে এল রানা। লামিয়াকে নিয়ে এক ছুটে চলে গেল হ্যাঙারের কাছে। পাইপের বাড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলল দরজার তালা, তারপর ঢুকে পড়ল ভেতরে। কয়েকটা আল্ট্রালাইট এয়ারক্র্যাফট নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে হ্যাঙারে। একটার দিকে এগিয়ে গেল ও।

    ‘কী করতে চাইছ?’ জানতে চাইল লামিয়া।

    ‘সঙ্গে পঞ্চাশ ডলার আছে?’ আল্ট্রালাইটের গ্যাস ক্যাপ খুলছে রানা।

    ‘না। কেন?’

    ‘ভাড়াটা মিটিয়ে দেব ভেবেছিলাম।’

    ‘মানে?’

    জবাব না দিয়ে লামিয়ার দিকে একটা হেলমেট বাড়িয়ে দিল রানা। ওটা হাতে নিয়ে লামিয়া বলল, ‘আল্ট্রালাইটে চেপে পালাতে চাইছ?’

    মাথা ঝাঁকাল রানা।

    নিঃশব্দে হাসল লামিয়া। বলল, ‘অনেকদিনের শখ ছিল এরকম একটা জিনিসে ওঠার।’

    ‘কখন-কীভাবে শখ পূরণ হয়, কেউ বলতে পারে না,’ রানাও হাসল।

    ফিউয়েল আছে কি না দেখে নিল ও। তারপর আবার গ্যাস ক্যাপ লাগিয়ে দিল। চলে গেল হ্যাঙার ডোরের কাছে। ঠেলা দিয়ে খুলতে শুরু করল বিশাল দরজাটা।

    .

    চাতাল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে কর্টেজ ও তার সঙ্গীরা, তল্লাশি চালাচ্ছে। কর্টেজের এক হাতে পিস্তল, আরেক হাতে ফ্ল্যাশলাইট; তীক্ষ্ণ নজর বোলাচ্ছে সে চারদিকে। ধারণা করছে, পাহাড়ি এলাকার ভেতরে ঢুকে পড়েছে দুই শিকার, লুকানোর চেষ্টা করছে। বাঙালি যুবকটিকে চেনা আছে তার, নিশ্চয়ই কোনও মতলব ভাঁজছে। তাতে অসুবিধে নেই, মনে মনে ভাবল সে, শিকারির আসল আনন্দ তাড়া করাতেই। যত ভোগাবে, ততই উপভোগ্য হবে ব্যাপারটা।

    নিশ্চিন্তে এগোচ্ছে কর্টেজ, ফ্ল্যাশলাইটের আলো ঘোরাচ্ছে এদিক-ওদিক। জানে, প্রতিপক্ষের হাতে কোনও অস্ত্র নেই। থাকলে বহু আগেই গুলি ছোঁড়া হতো ওদের দিকে। সামনে __ যেন একটা চকচক করে উঠল। এগিয়ে গিয়ে মেয়েদের একটা লাল রঙের জুতো দেখতে পেল সে, ধুলোমাখা। বোধহয় ছিটকে পড়েছে গাড়ি থেকে। চোখ পিটপিট করে আশপাশে তাকাল। দেখতে পেল সাইক্লোন ফেন্স আর ওপাশের হ্যাঙারটা।

    শিস দিয়ে সঙ্গীদের ডাকল কর্টেজ। ‘হ্যাঙারটা ঘিরে ফেলো,’ বলল সে। ‘ওরা এর ভেতরে ঢুকেছে।’

    ফেন্স বেয়ে উঠতে শুরু করল চারজনে, আর তখুনি ভেতরে জ্যান্ত হয়ে উঠল একটা ইঞ্জিন। খানখান হয়ে গেল রাতের নীরবতা। ওপারে পা ফেলে আলো ঘোরাল কর্টেজ। দেখল, হ্যাঙার থেকে বেরিয়ে এসেছে একটা আল্ট্রালাইট, ঘেসো জমিনের ওপর দিয়ে ছুটতে শুরু করেছে।

    ‘গুলি করো!’ চেঁচিয়ে উঠল সে।

    অস্ত্র তুলে গুলিবৃষ্টি শুরু করল তার সঙ্গীরা। চোখের পলকে আগুন ধরে গেল আল্ট্রালাইটের গায়ে, বিস্ফোরণ ঘটল। জ্বলন্ত কাঠামোটা গতি কমিয়ে থমকে দাঁড়াল।

    ভ্রূকুটি করে ওটার দিকে পা বাড়াল কর্টেজ। ব্যাপারটা বড্ড সহজ হয়ে গেল না?

    .

    খোলা দরজা দিয়ে একটা আল্ট্রালাইটকে রওনা করিয়ে দিয়ে আরেকটায় চড়ে বসেছে রানা আর লামিয়া। পুরোটাই ডাইভারশন—প্রথমটাকে নিয়ে যখন ব্যস্ত থাকবে শত্রুরা, তখন অন্যটা নিয়ে পালিয়ে যাবে ওরা।

    তা-ই ঘটল—আল্ট্রালাইটটা বের হওয়ামাত্র গুলি করল দুর্বৃত্তরা। দূর থেকে চারটে ছায়ামূর্তিকে ওটার দিকে এগোতে দেখল রানা। এবার ইঞ্জিন চালু করে বের হয়ে এল হ্যাঙার থেকে। প্রথমটাকে ডানদিকে পাঠিয়েছিল, নিজেরা ছুটল বামদিকে। সামনে ঘাসে ঢাকা সমতল জমিন—আল্ট্রালাইটের রানওয়ে হিসেবে আদর্শ।

    থ্রটল পুরোপুরি ঠেলে দিল রানা, লুকোচুরির সময় শেষ। মৌমাছির ঝাঁকের মত গুঞ্জন করে উঠল পঞ্চাশ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিনটা। হালকা আকাশযানটা দুরন্ত বেগে ছুটতে শুরু করল মাঠের ওপর দিয়ে। একশো গজ গিয়েই ভেসে উঠল বাতাসে।

    চাতালের দিকে আল্ট্রালাইটের মুখ ঘোরাল রানা। নিজেদের আর শত্রুদের মাঝখানে হ্যাঙারটাকে রাখতে চাইছে যতটা সম্ভব। এলোমেলো কয়েকটা গুলির আওয়াজ শুনতে পেল, কিন্তু ধারেকাছে এল না ওগুলোর একটাও। চোখের পলকে চাতাল পেরিয়ে এল আল্ট্রালাইট, মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।

    .

    ধোঁকাটা ধরতে দেরি করে ফেলেছে কর্টেজ। দ্বিতীয় আল্ট্রালাইটের ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনেই উল্টো ঘুরেছিল বটে, তবে কিছু করার আগেই ওটা উড়ে গেছে আকাশে। নিচ থেকে কয়েকটা গুলি করেছে ওরা, লাগাতে পারেনি। দাঁতে দাঁত পিষে সঙ্গীদের নিয়ে হ্যাঙারের দিকে ছুটল সে। এত সহজে পালাতে দেবে না শিকারকে।

    হ্যাঙারের ভেতরে আরও চারটে আল্ট্রালাইট দাঁড়িয়ে আছে। ইশারা দিতেই একটায় উঠে পড়ল তার দুই সঙ্গী। তৃতীয়জনকে নিয়ে আরেকটার দিকে এগোল সে। কিন্তু ককপিটে উঠতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল।

    সিটের ওপর গেঁথে রাখা হয়েছে একটা ছুরি—তার নিজের ছুরি!

    ছুরিটা চিনতে একটুও অসুবিধে হলো না কর্টেজের। এটাই আরাতামা মারুর ক্রেন অপারেটরের সিটে গেঁথে রেখে এসেছিল সে। বাঙালি যুবক সেটা নিয়ে এসেছে… এবার ওকে বার্তা দেবার জন্যে রেখে গেছে! কিন্তু কী সেই বার্তা?

    সতর্ক ভঙ্গিতে পিছিয়ে এল কর্টেজ। বিপদের আশঙ্কা করছে।

    ‘স্টার্ট দিয়ো না,’ সঙ্গীদের বলল সে। ‘কিছু একটা গোলমাল আছে এখানে।’

    ইঞ্জিনটা দেখল কর্টেজ, চেক করল হাইড্রলিক লাইন আর ফিউয়েল লাইন। টার্গেট হিসেবে দুটোই আদর্শ—মারাত্মকও বটে। লাইনদুটোয় স্যাবোটাজ করা হলে ইঞ্জিন চালু করামাত্র আগুন ধরে যাবে। কিন্তু না, কাটা হয়নি দুটোর একটাও। লিকও নেই, মেঝেতে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে না কোনও তরল।

    ওপরে তাকাল কর্টেজ। এবার ধরতে পারল ঘাপলা।

    উইং কেটে দেয়া হয়েছে। খুব সাবধানে কয়েকটা পৌঁচ দেয়া হয়েছে ফ্যাব্রিকে। হঠাৎ করে তাকালে বোঝার উপায় নেই, তবে এই ডানা নিয়ে আকাশে উঠলে খানিক পরেই বাতাসের অবলম্বন হারাবে আল্ট্রালাইট। খসে পড়বে নিচে।

    ‘বাকিগুলোও দেখা দরকার,’ বলল কর্টেজের সঙ্গী।

    মানা করল না সে, যদিও জানে, না-দেখলেও চলত। সবগুলোর একই দশা করে রেখে গেছে বদমাশটা।

    ঠোঁট কামড়াল কর্টেজ। হতাশা অনুভব করছে, রাগ তো বটেই… তবে বিস্ময়ের সঙ্গে টের পেল, আরেকটা অনুভূতি ভর করছে তার হৃদয়ে-শ্রদ্ধা। সেই শ্রদ্ধা, যেটা টক্কর দেবার মত শিকারের প্রতি সৃষ্টি হয় শিকারির। মন ফুরফুরে হয়ে গেল তার। অদ্ভুত এক উত্তেজনায় কাঁপছে কলজেটা। ওই যুবককে যথাযোগ্য শ্রদ্ধা না দেখিয়ে এতদিন বোকামি করেছে সে; আর করবে না। এবার তার সঙ্গে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।

    ‘আবার প্রমাণ হলো, তুমি যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী, মাসুদ রানা,’ বিড়বিড় করল কর্টেজ। ‘তোমাকে খতম করে সত্যিই আনন্দ পাব আমি।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৩ – ছায়াঘাতক
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.