Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ধ্বংসযজ্ঞ – ২৭

    সাতাশ

    গ্রীষ্মের উষ্ণ সন্ধ্যায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে ম্যানহাটানের রাস্তাগুলো। দলে দলে বেরিয়ে এসেছে মানুষ-পায়ে হেঁটে, বা গাড়িতে চড়ে ছুটছে যে-যার পথে। সেন্ট্রাল পার্কের চারধারে ঘোড়ায় টানা ক্যারিজে চড়ে অভিসারে বেরিয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকারাও। সূর্যাস্তের পর বিশ মিনিট পেরিয়েছে, ঘুমহীন মহানগরীতে রাতের জীবনের এ-ই হলো সূচনা।

    ব্যস্ত রাস্তা ধরে ছুটতে থাকা একটা ট্যাক্সির পেছনের সিটে বসে আছেন অ্যাডমিরাল জর্জ হ্যামিলটন। পার্ক অ্যাভিনিউ পেরোচ্ছেন এ-মুহূর্তে। লক্ষ করছেন, ট্যাক্সির পালিশ করা হলদে শরীরে রেখার মত নড়াচড়া করছে কমলা রঙের স্ট্রিটলাইটের আলো—স্থির, ছন্দোবদ্ধ, নিঃশব্দ… ঠিক হৃৎস্পন্দনের মত। আসিফ রেজার হৃৎপিণ্ডও কি এভাবেই স্পন্দিত হচ্ছে? মনে মনে প্রার্থনা করলেন, তাঁদের মাঝে যেন ফিরে আসে ছেলেটা। তানিয়ার কথাও ভাবলেন, স্বামীর চেতনা ফেরার প্রতীক্ষায় রয়েছে বেচারি।

    শিনজিরো হায়াশির সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন অ্যাডমিরাল। ওর অফিসে যাননি, রিসেপশনেই হয়তো আটকে দেয়া হতো। তাই খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, আজ সন্ধ্যায় সে কোথায় ডিনার করবে। সেখানে গিয়ে তাকে চমকে দিতে চাইছেন, যাতে এড়াতে না পারে।

    মিয়াকো নামে পাঁচ তারকা এক জাপানি রেস্টুরেন্ট বেছে নিয়েছে হায়াশি আজকের নৈশভোজের জন্যে। অভিজাত জায়গা, নামকরা সেলিব্রেটি, খেলোয়াড় আর ধনকুবেররা এখানকার নিয়মিত খদ্দের। সনাতন জাপানি ডিশগুলো অত্যাধুনিক পরিবেশে পরিবেশন করা হয় এখানে। দামি সুরার বন্যা বয়। মেনুতে থাকে কচ্ছপের মাংস, জেলিফিশ আর সি-আর্চিনের মত দুর্লভ সব খাবার। ছোটখাট একটা ভোজসভার আয়োজন করেছে হায়াশি ওখানে। নিজের ছেলে আর মিতসুকি শিপিঙের কয়েকজন সিনিয়র স্টাফ থাকবে তার সঙ্গে। আর থাকবে দু’জন ধনী স্টকব্রোকার—এরা মিতসুকিতে টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী। ডিনারের ছলে আসলে মিটিং করা হবে তাদের সঙ্গে।

    রেস্টুরেন্টের সামনে থামল ক্যাব, দরজা খুলে নেমে পড়লেন অ্যাডমিরাল। ভাড়া মেটালেন, মোটা বখশিশও দিলেন ড্রাইভারকে, তারপর লম্বা পা ফেলে ঢুকে পড়লেন ভেতরে। রিসেপশনে পৌঁছে একটু দাঁড়ালেন তিনি, চোখ বোলালেন ভেতরে। কৃত্রিম একটা জলপ্রপাত বানিয়ে দু’ভাগ করা হয়েছে রেস্টুরেন্টের অভ্যন্তর। সামনের অংশ কমন ডাইনিং এরিয়া, পেছনে প্রাইভেট রুম। সন্দেহ নেই, ওখানেই বসেছে হায়াশি।

    ধোপদুরস্ত পোশাক পরা ম্যানেজার এগিয়ে এল অ্যাডমিরালকে দেখতে পেয়ে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ‘মে আই হেল্প ইউ, স্যর?’

    ‘না, ধন্যবাদ,’ বলে পা বাড়ালেন অ্যাডমিরাল।

    বাধা দিল ম্যানেজার। ‘মাফ করবেন, স্যর। তবে রিজার্ভেশন ছাড়া এখানে খেতে পারবেন না আপনি।’

    ‘খেতে আসিনি আমি।’ এক ধাক্কায় ম্যানেজারকে সরিয়ে দিলেন অ্যাডমিরাল। হাঁটতে শুরু করলেন।

    বোকার মত পেছনে দাঁড়িয়ে রইল ম্যানেজার। নুমা ডিরেক্টরকে চেনে না সে, তবে হাবভাবে বুঝতে পারছে, ইনি সাধারণ কেউ নন।

    জলপ্রপাতের কিনার ঘুরে পেছনের প্রাইভেট এরিয়ায় পৌঁছে গেলেন অ্যাডমিরাল। প্রথম কামরাতেই পাওয়া গেল হায়াশিকে। লম্বা একটা টেবিলের মাথায় বসে আছে সে, ডানপাশে তার ছেলে রিয়ো আর মিতসুকির দু’জন সিনিয়র কর্মকর্তা। বামে বসেছে ব্যবসার প্রস্তাব নিয়ে আসা দু’জন আমেরিকান বিনিয়োগকারী।

    আলাপ চলছিল, দরজা খুলে যেতেই একযোগে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল সবাই। সবার শেষে তাকাল হায়াশি। অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনকে দেখতে পেয়েই ছাই হয়ে গেল তার চেহারা।

    ঝট্ করে উঠে দাঁড়াল এক আমেরিকান। রাগী গলায় বলল, ‘কে আপনি? এভাবে হুট করে এখানে ঢুকে পড়ার মানেটা কী?’

    ‘হায়াশির সঙ্গে কথা আছে আমার,’ শান্ত কণ্ঠে বললেন অ্যাডমিরাল।

    ‘মামাবাড়ি পেয়েছেন নাকি? কথা বলতে চাইলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে অফিসে দেখা করবেন।’ চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে এল লোকটা। ঘাড়ধাক্কা দিতে চলেছে। ‘বেরোন … বেরোন বলছি!’

    ‘গায়ে হাত লাগিয়েই দেখো,’ শীতল গলায় বললেন অ্যাডমিরাল, ‘ওই হাত আর বাকি জীবন ব্যবহার করতে পারবে না।’

    থমকে গেল লোকটা, যেন চড় মারা হয়েছে তার গালে। এবার রিয়ো উঠে দাঁড়াল। ‘আমি সিকিউরিটিকে ডাকছি,’ বলল সে। পকেট থেকে বের করল সেলফোন।

    হায়াশি এখনও নড়ছে না, বজ্রাহতের মত স্থির হয়ে আছে সে। টেবিলের ওপর একটা চাপড় মারলেন অ্যাডমিরাল। ‘জেগে ওঠো, হায়াশি!’ ধমকে উঠলেন তিনি। ‘তোমার সঙ্গে হিসেব মেলাতে এসেছি আমি।’

    সেলফোনে ততক্ষণে লাইন মিলিয়েছে রিয়ো। ‘সিকিউরিটি, এখানে একটা উটকো লোক …

    এবার নড়ল হায়াশি। একটা হাত তুলে ধরল ছেলের বাহু। তাকে থামাল।

    ‘ফোনটা রাখো, রিয়ো,’ বলল সে। ‘কাউকে ডাকার প্রয়োজন নেই।’

    ‘কী বলছ এসব?’ ফুঁসে উঠল রিয়ো। কত বড় সাহস… তোমাকে অসম্মান করে…’

    ‘না,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল হায়াশি। ‘অসম্মান আসলে আমিই ওঁকে করেছি। এখন যা খুশি তাই করার অধিকার আছে ওঁর। লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা নেই আমার।’

    ফ্যালফ্যাল করে পিতার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল রিয়ো। টেলিফোনে তখন সিকিউরিটি ইনচার্জ চেঁচাচ্ছে, ‘কোনও সমস্যা হয়েছে, মি. রিয়ো? আমরা বাইরে আছি, বললেই ভেতরে ঢুকব।’

    ‘অপেক্ষা করো,’ তাকে বলল রিয়ো। এরপর হায়াশিকে জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার, বলো তো? কে ইনি?’

    ‘অ্যাডমিরাল জর্জ হ্যামিলটন, ডিরেক্টর অভ নুমা,’ বলল হায়াশি। ‘ইনি না থাকলে আজ আমি জেলের ঘানি টানতাম, নয়তো আত্মহত্যা করতাম অপমানে। মিতসুকি শিপিং বলেও কোনও কিছুর অস্তিত্ব থাকত না আজ। পথে বসতে তুমি আর তোমার মা।’

    ‘কী যে বলছ, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’

    বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা… বিশাল এক বিপদে পড়েছিল হায়াশি। ফেঁসে গিয়েছিল মিথ্যে এক মামলায়। মিতসুকি শিপিং তখন সবে যাত্রা শুরু করেছে একটামাত্র জাহাজ নিয়ে। ইনশিয়োরেন্স জালিয়াতির মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্যে ওর সেই জাহাজকে বেছে নেয় আমেরিকান সরকারের কয়েকজন দুর্নীতিপরায়ণ উচ্চপদস্থ ব্যক্তি। বিদেশ থেকে কোটি কোটি ডলারের মিনারেল আমদানির নামে জঞ্জাল তোলা হয় জাহাজে, সেগুলো আবার তাদেরই লোক মাঝসাগরে ফেলে দেয় পানিতে। বন্দরে পৌঁছুনোর পর মাল খোয়ানোর কারণে মামলা ঠুকে দেয় মিতসুকি শিপিঙের নামে। অভিযোগ তোলা হয়, ওগুলো আসলে খোয়া যায়নি, জাহাজের মালিক… মানে হায়াশিই গোপনে বিক্রি করে দিয়েছে মিনারেল, এরপর নাটক সাজিয়েছে। আসলে নাটক করছিল ওই লোকগুলোই, এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে চাইছিল—একদিকে ইনশিয়োরেন্স কোম্পানি থেকে খোয়া যাওয়া মিনারেলের ক্ষতিপূরণ আদায় করবে, অন্যদিকে চুরি করা মিনারেল বিক্রি করে দেবে কালোবাজারে। মাঝখান থেকে মিতসুকি শিপিঙের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেরা থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল হায়াশি, ব্যাপারটা আঁচ করতে পারলেও কিচ্ছু করতে পারছিল না প্রভাবশালী ওই লোকগুলোর বিরুদ্ধে। একদিকে চুরির অপবাদ, অন্যদিকে হারানো কার্গোর দাম পরিশোধ করা… ওর কোম্পানি দেউলিয়া হতে বসেছিল, মামলায় হারলে জেলেও যেতে হতো।

    এ-কান ও-কান হয়ে আসল ঘটনার কিছুটা আভাস পান অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন। হায়াশির সঙ্গে পরিচয় ছিল না, তারপরেও অযাচিতভাবে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। নুমার জাহাজ, সাবমারসিবল আর ডাইভার পাঠিয়ে সাগরের তলা থেকে উদ্ধার করে আনেন মিনারেলের বদলে পাঠানো মূল্যহীন জঞ্জালের নমুনা, আদালতে তা দেখিয়ে ভেস্তে দেন দুর্বৃত্তদের পরিকল্পনা। দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন। সে- উপকারের কথা ভোলা সম্ভব নয় কারও পক্ষে।

    এসব রিয়োর জানা নেই। ঘটনাটার সময় সে নিতান্তই শিশু। হায়াশি তাকে বলল, ‘পরে সব তোমাকে খুলে বলব। এখন সিকিউরিটিকে মানা করো আসতে।’

    মাথা ঝাঁকিয়ে সেলফোন কানে ঠেকাল রিয়ো। ‘সব ঠিক আছে। তোমরা বাইরেই থাকো।’

    ‘ইয়েস, মি. রিয়ো।’

    লাইন কেটে হ্যামিলটনের দিকে ফিরল রিয়ো। মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, ‘অভদ্রতা করে থাকলে ক্ষমা চাইছি, অ্যাডমিরাল।’

    ‘পিতার সম্মান রক্ষার চেষ্টা করছিলে। এতে ক্ষমা চাইবার কিছু নেই।’ মৃদু হাসলেন অ্যাডমিরাল।

    চেয়ার ছেড়ে সরে গেল রিয়ো। ‘প্লিজ, আসুন। বসুন এখানে।’

    জাপানি ভাষায় তাকে ধন্যবাদ জানালেন নুমা ডিরেক্টর, ‘আরিগাতো।’ তারপর বসলেন চেয়ারটায়, হায়াশির পাশে।

    বাকিরা এখনও বিভ্রান্ত চোখে তাকাচ্ছে তাঁদের দিকে আমেরিকানদের একজন বলল, ‘এসবের মানে কী, মি. হায়াশি? আমাদের মিটিঙের মাঝে…’

    ‘প্লিজ, আমাদের কিছুক্ষণ একা থাকতে দিন,’ তাকে থামিয়ে দিল হায়াশি। ‘আমাদের বিষয়টা আপনাদের চেয়ে জরুরি।’

    ‘এটা অপমানজনক, মি. হায়াশি। আপনি এভাবে আমাদেরকে…’

    লোকটার দিকে কড়া চোখে তাকাল হায়াশি, সঙ্গে সঙ্গে কুঁকড়ে গেল সে। মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়াল, বেরিয়ে গেল কামরা থেকে। একে একে বাকিরা তার পিছু নিল। যাবার সময় বিড়বিড় করে কী সব যেন বলছে।

    ‘আমি ওদের সঙ্গে কথা বলছি,’ বলে রিয়োও বেরিয়ে গেল। টেবিলে রয়ে গেলেন শুধু অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন আর হায়াশি।

    ‘এভাবে তোমার ডিনার পণ্ড করে দিতে হলো বলে দুঃখিত,’ বললেন অ্যাডমিরাল।

    ‘দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই, অ্যাডমিরাল,’ হায়াশি মাথা নাড়ল।

    ‘তুমি জানো আমি কী চাই।’

    নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকাল হায়াশি।

    ‘তা হলে আমি যখন লোক পাঠালাম, দিলে না কেন?’ অ্যাডমিরালের চোখে চোখ রাখল জাপানি শিপিং ম্যাগনেট। বলল, ‘ওরা আরাতামা মারুর ম্যানিফেস্ট নিতে এসেছিল, রাইট? ইচ্ছে করেই দিইনি, কারণ তাতে ধোঁকা দেয়া হতো আপনাকে।’

    ‘হেঁয়ালি করছ, হায়াশি। যা বলার পরিষ্কার করে বলো।’

    ‘চুপ করে থাকা, আর মিথ্যে বলার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমি আপনাকে কিছুই দিইনি, তারমানে কোনও মিথ্যাচারও করিনি। জানতাম, তাতে আপনার কিছু না কিছু সন্দেহ হবে… ব্যাপারটা ভাল করে তলিয়ে দেখবেন। আমার জন্যে আপনি যা করেছেন, অ্যাডমিরাল, এরপর একটা বানোয়াট ম্যানিফেস্ট আমি আপনার কাছে কী করে পাঠাই, বলুন?’

    ‘আসলটাই পাঠালে না কেন?’

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল হায়াশি। ‘আমার হাত-পা বাঁধা। সত্যি বলতে কী, কোম্পানিটা এখন আর পুরোপুরি আমার নিয়ন্ত্রণেও নেই। আমাকে সরাবার জন্যে সারাক্ষণই ষড়যন্ত্র করছে লোকে… অজুহাত খুঁজছে। আসল ম্যানিফেস্ট দিলে সেটাই ঘটত। ওতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো কোম্পানি, আমেরিকান সরকারের কালো তালিকাতেও নাম উঠে যেতে পারত।’

    ভুরু কোঁচকালেন অ্যাডমিরাল। মিতসুকি শিপিঙের ভাগ্য নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছেন না তিনি, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ক্ষুব্ধ গলায় বললেন, ‘হায়াশি, তোমার জাহাজের হাইজ্যাকিং ঠেকাতে গিয়ে আমার তিনজন লোক আহত হয়েছে। রেকের ইনভেস্টিগেশনে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে আরও দু’জন—তাদের ভেতর একজন এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। এতকিছুর পর তোমার সমস্যার যদি আমি থোড়াই পরোয়া করি, আশা করি কিছু মনে করবে না। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, এখন তোমার মুখ খোলার সময় হয়েছে।’

    স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইল হায়াশি। তারপর ঝুঁকে পাশ থেকে তুলে আনল নিজের ব্রিফকেস। টেবিলের ওপর রেখে ডালা খুলল, ভেতর থেকে বের করে আনল একটা ফোল্ডার। সেটা তুলে দিল নুমা ডিরেক্টরের হাতে।

    ‘যা চাইছেন, তার সবই পাবেন এতে,’ বলল সে।

    ‘কী পাব?’

    ‘সত্যটা।’

    ‘আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই, হায়াশি।’

    ‘ম্যানিফেস্ট বলছে, স্ট্যাণ্ডার্ড বাল্ক মেটেরিয়াল নিয়ে হংকঙে যাচ্ছিল আরাতামা মারু। ওখানে যেটা লেখা নেই, তা হলো, ওই কার্গোর ভেতরে ছিল তিনশো টন ওয়াইবিসিও।’

    ‘ওয়াইবিসিও-টা আবার কী জিনিস?’ বিভ্রান্তি ফুটল অ্যাডমিরালের চেহারায়।

    ‘ইট্রিয়াম, বেরিয়াম, কপার, অক্সাইড,’ ব্যাখ্যা করল হায়াশি। ‘জিনিসটা একটা জটিল সঙ্কর ধাতু—উচ্চ তাপমাত্রায় সুপারকণ্ডাক্টর হিসেবে কাজ করে। জাহাজে যেটা যাচ্ছিল, সেটা নতুন ভার্শান—টাই ভার্শান বলে ওটাকে, টাইটেনিয়াম আর আয়রন পেপটাইডের প্রলেপ দেয়া। আজ পর্যন্ত যত সুপারকণ্ডাক্টর তৈরি হয়েছে, তার ভেতর ওয়াইবিসিও সবচেয়ে শক্তিশালী।’

    ‘শক্তিশালী মানে?’

    ‘দুঃখিত, আমি বিজ্ঞানী নই, তাই ব্যাখ্যা করতে পারব না। তবে আপনার অর্গানাইজেশনে এ-জিনিস বোঝার মত লোক নিশ্চয়ই আছে, তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারবেন। আমার কাছে যত ইনফরমেশন আছে, সব ওই ফোল্ডারে দিয়ে দিয়েছি।’

    অফিসে ফিরেই ফোল্ডারটা ল্যারি কিঙের হাতে তুলে দিতে হবে, ভাবলেন অ্যাডমিরাল। হায়াশিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা নিয়ে এত লুকোচুরি কেন?’

    ‘কারণ, ধাতুটা কোনও খনিতে পাওয়া যায় না, বলল হায়াশি, ‘ল্যাবরেটরিতে বানাতে হয়। টাই ভার্শানের পেটেণ্ট একটা আমেরিকান কর্পোরেশনের…. সবচেয়ে বড় কথা, জিনিসটা রেস্ট্রিক্টেড টেকনোলজি হিসেবে নিবন্ধিত। আমেরিকার বাইরে অনেকগুলো দেশে, বিশেষ করে চীনে, এই ধাতু রপ্তানি করা নিষিদ্ধ। জিনিসটা হংকংগামী জাহাজে তুলে আমেরিকার আইন ভেঙেছি আমরা।’

    এবার হায়াশির উদ্বেগটা বুঝতে পারলেন অ্যাডমিরাল। আমেরিকা আর চীনের ভেতর বেশ কিছুদিন থেকেই শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমেরিকান সরকার খোলাখুলিভাবেই এসপিয়োনাজ আর টেকনোলজি চুরির অভিযোগ এনেছে চীনা সরকার ও তাদের বিভিন্ন কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। কাজেই নিষিদ্ধ একটা মেটেরিয়াল চীনের অধীন হংকঙে নিয়ে যাওয়াটা কেউই ভাল চোখে দেখবে না। দুই পরাশক্তির চাপে বলির পাঁঠা হতে হবে মিতসুকিকে।

    ‘কী ভেবে এসবের সঙ্গে জড়াতে গেলে তুমি?’ তিরস্কারের সুরে বললেন তিনি। ‘আমেরিকার সঙ্গে কি কোনও শত্রুতা আছে তোমার?’

    ‘বিশ্বাস করুন, এসব আমার অজ্ঞাতে ঘটেছে,’ জোর গলায় বলল হায়াশি। ‘জাহাজ ডোবার আগ পর্যন্ত কিচ্ছু জানতাম না আমি। সন্দেহ নেই, মিতসুকির কারও হাত আছে এতে। হয়তো টাকার লোভে করেছে কাজটা; কেলেঙ্কারি বাধিয়ে আমাকে পদচ্যুত করাটাও একটা মোটিভ হতে পারে।’

    লোকটার কথা অবিশ্বাস করলেন না অ্যাডমিরাল। চেহারাতেই ফুটে উঠেছে, পুরো ঘটনায় সে কতটা বিপর্যস্ত।

    ‘তুমি আমার কাছে এলে না কেন?’ নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন তিনি। ‘নিশ্চয়ই জানো, আমার ওপর ভরসা রাখা যায়।’

    ‘এসব আমার ঘরোয়া সমস্যা। তা ছাড়া বিপদে পড়লেই আমি আপনার কাছে ছুটে যেতে পারি না। এখন তো আমি আগের মত অতটা দুর্বল নই। আমার টাকা আছে… লোক আছে…’

    ‘তারপরেও একই ধরনের সমস্যায় দ্বিতীয়বার পড়েছ। তুমি কি জানো, জলদস্যুরা হানা দিয়েছিল আরাতামা মারুতে? আমার তো মনে হচ্ছে, এই ওয়াইবিসিও-ই ছিল ওদের টার্গেট।’

    ‘অবাক হচ্ছি না। জিনিসটা সোনার চেয়ে দামি।’

    ‘এর পেছনে কাদের হাত আছে, কিছু আন্দাজ করতে পারো? কানে এসেছে কিছু?’

    মাথা নাড়ল হায়াশি।

    ঠোঁট কামড়ালেন অ্যাডমিরাল। কোনও না কোনও সূত্র নিশ্চয়ই আছে তার কাছে। জানতে চাইলেন, ‘কার্গোটা কোত্থেকে লোড করা হয়েছিল?’

    ‘ফ্রিটাউন, সিয়েরা লিওন,’ জানাল হায়াশি।

    কয়েক বছর আগে ফ্রিটাউনে যাবার সুযোগ হয়েছিল অ্যাডমিরালের, নুমার একটা প্রজেক্ট পরিদর্শনের জন্যে। দেশটার নাজুক অবস্থা সত্ত্বেও ফ্রিটাউন এখনও পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যস্ত বন্দরগুলোর একটা। শুনেছেন, স্বৈরশাসক জোসেফ আকুম্বা ক্ষমতায় আসার পর বেশ উন্নতি হয়েছে দেশটার, তারপরেও সেটাকে ঠিক প্রযুক্তির উন্নতি বলা যায় না। অন্তত ওয়াইবিসিও ব্যবহারের মত তো নয়ই।

    ‘জিনিসটার উৎসও কি সিয়েরা লিওন?’

    ‘না,’ মাথা নেড়ে বলল হায়াশি। ‘ওখানে প্রচুর খনি আছে বটে, কিন্তু ওয়াইবিসিও তো খনিতে পাওয়া যায় না।’

    ‘তা হলে ফ্রিটাউন একটা ট্রান্সফার পয়েন্ট,’ বললেন অ্যাডমিরাল।

    ‘হ্যাঁ। ব্যাপারটা এরকম—যেখানে ওয়াইবিসিও রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা নেই, অমন একটা দেশে বৈধভাবে প্রথমে নেয়া হয় জিনিসটা। তারপর সে-দেশের আইন মেনে তৃতীয় কোনও পক্ষের কাছে বিক্রি করা হয়। এই তৃতীয় পক্ষ আবার সেটাকে বিক্রি করে চীন, রাশা, বা পাকিস্তানের কাছে।’

    ‘এবারের লট কে কিনেছিল, জানো?’

    ‘ফোল্ডারে পাবেন। তবে ব্যাপারটা অস্বীকার করবে তারা, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তাতে অবশ্য কিছু যায়-আসে না। টাকা খরচ করলেও জিনিস তাদের হাতে পৌঁছায়নি।’

    ঝড়ের বেগে চিন্তা চলছে অ্যাডমিরালের মাথায়। ‘বেশ, ক্রেতাকে বাদ দিলাম। কিন্তু বিক্রেতা? কে বিক্রি করেছিল ওটা?

    ‘আমার জানা নেই।’

    জবাবটা পছন্দ হলো না অ্যাডমিরালের। ‘চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই বের করতে পারবে। তোমার সাহায্য দরকার আমার, হায়াশি।’

    ‘এর বেশি আর কিছু করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।’

    স্থির চোখে হায়াশির দিকে তাকালেন অ্যাডমিরাল। ‘আরাতামা মারুতে তোমার কতজন ক্রু মারা গেছে, সেটাও ভাববে না? নাকি ওদের প্রাণের কোনও মূল্য নেই তোমার কাছে?’

    চোখ বন্ধ করল হায়াশি। বেদনার্ত হয়ে উঠল চেহারা। বিড়বিড় করে কী যেন বলল। তারপর চোখ খুলে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি ওদের খুনিদের খুঁজে বের করবেন?’

    ‘হ্যাঁ। সেটাই আমার উদ্দেশ্য।’

    ‘বেশ, তা হলে যা যা চান, সবই পাবেন আমার কাছ থেকে।’

    উঠে দাঁড়ালেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন। ‘ধন্যবাদ, হায়াশি।’ তুলে নিলেন ফোল্ডারটা। ‘নিশ্চিন্ত থাকো, আমার কাছে নিরাপদে থাকবে ফোল্ডারটা। কিছু ফাঁস হবে না।’

    মলিন হাসি ফুটল হায়াশির ঠোঁটে। ‘আমি তা জানি।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৩ – ছায়াঘাতক
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.