Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ধ্বংসযজ্ঞ – ৩১

    একত্রিশ

    তুমুল বেগে সারফেসের দিকে ছুটে চলেছে হ্যামারহেড। ভেতরে বসে নিজের বোকামিতে নিজের ওপরেই ক্ষুব্ধ রানা। সবকিছু না জেনেই নিজেকে আর নেপচুনকে শত্রুপক্ষের টার্গেট ভেবে বসেছিল, অন্য কোনোদিকে মনোযোগ দেয়নি। বাস্তবে লোকগুলো যে মহা-পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে, সেখানে ওদের গুরুত্ব নেই বললেই চলে।

    দেরি হয়ে গেছে কি না কে জানে। যত দ্রুত সম্ভব সারফেসে ভেসে উঠতে হবে, তা হলে শর্টওয়েভ রেডিওতে যোগাযোগ করা যাবে ত্রিশ মাইল দূরে, বন্দরে অপেক্ষমাণ নেপচুনের সঙ্গে। নিশ্চিত করতে হবে বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা।

    খুন হওয়া ফরাসি বিজ্ঞানীদের কথা ভাবল রানা। কেন তাদেরকে জীবিত অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া হলো না? এর একটাই জবাব—বাধা দিয়েছিল তারা। ধরা দিতে চায়নি। বাকি বিজ্ঞানীদের কপালেও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে… হয় ধরা দাও, নয়তো মরো!

    আর লামিয়া? ওকেও কি ধরে নিয়ে যাবে শত্রুরা? না-ও পারতে পারে। সঙ্গে দক্ষ একজন দেহরক্ষী আছে ওর। তা ছাড়া সবকিছু ঠিক থাকলে এতক্ষণে এয়ারপোর্টে গিয়ে বিমানে উঠে পড়ার কথা ওর।

    ‘চল্লিশ ফুট,’ পেছন থেকে ঘোষণা করল মুরল্যাণ্ড।

    থ্রটল একটু কমাল রানা। ফুল স্পিডে সারফেস ভেদ করলে বাতাসে লাফ দেবে সাবমারসিবল, নেমে আসার সময় আছাড় খেয়ে উল্টেও যেতে পারে। হ্যামারহেডকে লেভেলে আনল ও, তারপর সাবধানে পানি ভেঙে ভেসে উঠল।

    ‘ডাকো নেপচুনকে।’

    বলার প্রয়োজন ছিল না, তার আগেই সুইচ টিপতে শুরু করেছে মুরল্যাণ্ড। বাইরে থেকে মৃদু গুঞ্জন ভেসে এল, সাবমারসিবল থেকে বেরিয়ে আসছে একটা অ্যান্টেনা।

    ‘নেপচুন, দিস ইজ হ্যামারহেড,’ ডাকল মুরল্যাণ্ড। ‘সাড়া দিন, প্লিজ। জরুরি কথা আছে।’

    জবাবের প্রতীক্ষায় রইল দু’জনে। কন্ট্রোল নিয়ে কসরত করছে রানা, হ্যামারহেডকে স্থির রাখতে চাইছে। সাবমারসিবলটা পানির নিচে চলাফেরার জন্যে তৈরি, সারফেসে থাকার জন্যে নয়।

    ‘হ্যামারহেড কলিং নেপচুন,’ আবার বলল মুরল্যাণ্ড। ‘শুনতে পাচ্ছেন?’

    খড়খড় করে উঠল স্পিকার। শোনা গেল ক্যাপ্টেন মিচামের উদ্বিগ্ন গলা।

    ‘মি. মুরল্যাণ্ড? ক্যাপ্টেন বলছি। শুনুন, এদিকে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা অনেকক্ষণ থেকেই আপনাদের সঙ্গে…’

    পুরোটা শোনা হলো না, তার আগেই বাইরে থেকে একটা কর্কশ আওয়াজ ভেসে এল। ক্যানোপিতে ফাটল ধরতে দেখল রানা। আরেকবার হলো আওয়াজটা….. শটগানের আওয়াজ, চিনতে পারল ও… এবার হ্যামারহেডের বাম উইঙে তৈরি হলো একটা বিশাল ফুটো।

    থ্রটল ঠেলে দিল রানা, ডানে ঘুরিয়ে নিল হ্যামারহেডকে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল, একটা পাওয়ারবোট ছুটে আসছে ওদের দিকে—ছুরি চালাবার মত ছোট্ট সাবমারসিবলটাকে দু’টুকরো করে দেবার চেষ্টা করছে। কন্ট্রোল স্টিক ঠেলে ডাইভ দিল রানা। হ্যামারহেড পানির নিচে যেতে না যেতে ওপর দিয়ে সগর্জনে চলে গেল পাওয়ারবোট। পানির আলোড়নে টাল- মাটাল হয়ে গেল সাবমারসিবল।

    ডানে তাকাল রানা। উইঙের যে-অংশটা রেডার হিসেবে কাজ করে, সেটা ভেঙে গেছে। ক্যানোপির ফুটো দিয়ে ঝরঝর করে ঢুকছে পানি। ঠিকমত সাড়া দিচ্ছে না হ্যামারহেড।

    আবার কন্ট্রোল স্টিক টানল ও, পানির ওপর তুলে আনল সাবমারসিবল। ঢেউয়ের দোলায় ভীষণভাবে দুলছে পুরো কাঠামো।

    ‘জলদি!’ মুরল্যাণ্ডকে তাড়া দিল রানা।

    মাইক্রোফোনে ডাকল মুরল্যাণ্ড, . ‘ক্যাপ্টেন, শুনতে পাচ্ছেন?’

    পাওয়ারবোটটার দিকে নজর গেল রানার। বাঁক নিতে শুরু করেছে ওটা, ফিরে আসছে। দূরে আরেকটাকে দেখতে পেল, তীব্র বেগে ওটাও ছুটে আসছে হামলায় যোগ দিতে। কীভাবে ওগুলোকে ফাঁকি দেবে… কীভাবে পালাবে, জানে না রানা। শুধু জানে, নেপচুনকে সতর্ক করে দিতে হবে। পেছনে পাগলের মত বোতাম চাপছে মুরল্যাণ্ড, কিন্তু স্পিকারে কিছু শোনা যাচ্ছে না—না ক্যাপ্টেনের কণ্ঠস্বর, না স্ট্যাটিক সিগনালের খড়খড়।

    ‘নেপচুন, দিস ইজ হ্যামারহেড। বিজ্ঞানীদের ওপর হামলা হতে চলেছে। ওঁরাই আসল টার্গেট!’

    এখনও স্পিকার নীরব।

    মুরল্যাণ্ডকে কিছু বলার জন্যে ঘাড় ফেরাল রানা, সঙ্গে সঙ্গে চোখ পড়ল সাবমারসিবলের টেইল-এণ্ডে। গায়েব হয়ে গেছে হাই-ফ্রিকোয়েন্সি অ্যান্টেনাটা। সেখানে, লম্বা লম্বা কতগুলো ফাটল—পাওয়ারবোটের প্রপেলারটা কামড় বসিয়ে গেছে যাবার সময়।

    রানার দৃষ্টি অনুসরণ করে মুরল্যাণ্ডও পেছনে তাকাল। ‘ধুশ্ শালা!’ একটা গালি বেরিয়ে এল তার পবিত্র মুখ থেকে। একযোগে ছুটে আসছে পাওয়ারবোটদুটো। গতির দৌড়ে ওগুলোকে হারাতে পারবে না হ্যামারহেড। রেডিও বলতে আণ্ডারওয়াটার ট্রানসিভারটা কেবল অক্ষত রয়েছে, কিন্তু সেটার রেঞ্জ মাত্র এক মাইল।

    ‘স্পিড টেপ নাও,’ মুরল্যাণ্ডকে বলল রানা। ‘ফুটোগুলো বন্ধ করো।’

    আগুয়ান বোটদুটোর দিক থেকে হ্যামারহেডের মুখ ঘুরিয়ে নিল রানা, মুরল্যাণ্ড ততক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছোট্ট একটা কম্পার্টমেন্ট থেকে বের করে এনেছে ডাক্ট টেপ, ছিঁড়ে ছিঁড়ে লাগাতে শুরু করেছে ক্যানোপির ফুটোগুলোয়।

    ‘তাড়াতাড়ি করো,’ বলল রানা। ‘এই এসে পড়ল।’

    ‘গভীরে গেলে এগুলো টিকবে না, জানো নিশ্চয়ই?’ বলল মুরল্যাণ্ড।

    ‘সারফেসের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করব।’

    ক্রমাগত টেপ ছিঁড়ছে আর লাগাচ্ছে মুরল্যাণ্ড। আবারও শটগানের চাপা আওয়াজ শুনতে পেল রানা। তবে এ-দফা হ্যামারহেডকে মিস করল প্রতিপক্ষ, পানি ছিটকাল ওদের একপাশে।

    ‘ডাইভ,’ বলল মুরল্যাণ্ড।

    হ্যামারহেডের নাক নিচু করে ফেলল রানা। ক্যানোপির ওপর পাক খেল পানি, ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে গেল ওরা। দশ ফুট নিচে নেমে সাবমারসিবলকে আবার লেভেলে আনল ও। এখনও পানি ঢুকছে, তবে আগের মত জোরালোভাবে নয়। কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মুরল্যাণ্ড, আটকে দিচ্ছে সব ফুটো। শেষ ফুটোটা বন্ধ করার পর টুথপেস্টের টিউবের মত একটা টিউব তুলে নিল, ওটার ভেতরে রয়েছে এপোক্সি রেইযিন হার্ডেনার। স্পিড টেপের উপাদানের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে নিরেট একটা প্রলেপ তৈরি করবে জিনিসটা। টিউবের মুখ খুলে টেপের ওপর লাগাতে থাকল ওটা।

    মাথার ওপর দিয়ে পানিতে আলোড়ন তুলে পর পর দুটো ছায়াকে চলে যেতে দেখল রানা। স্টিক নেড়ে বাঁয়ে ঘুরিয়ে নিল হ্যামারহেডকে। ডানদিকে রেডার ভেঙে যাওয়ায় আপাতত বামে নড়তে হচ্ছে ওদেরকে।

    কাজ শেষ হয়েছে মুরল্যাণ্ডের। জানতে চাইল, ‘আর কোনও ফুটো দেখতে পাচ্ছ?’

    ক্যানোপির ভেতরে নজর বোলাল রানা। টেপ আর রেইযিনের প্রলেপ মিলিয়ে মনে হচ্ছে কেউ কাঁচা হাতে গ্রাফিতি এঁকেছে ককপিটে। রেইযিনের বাষ্পে জ্বালাপোড়া করছে চোখ, দপদপ করছে মাথা। তবে খুশির খবর হলো, পানি ঢোকা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রলেপটা জমাট বেঁধে গেলে আর চিন্তা নেই।

    ‘দারুণ কাজ দেখিয়েছ, ববি,’ বলল ও।

    ‘দেখতে সুন্দর হলো না আর কী,’ হালকা গলায় বলল মুরল্যাণ্ড। ‘অবশ্য গোলাগুলির মাঝে, পানির তলায় কিছু করতে গেলে এ-অবস্থাই হয়।’

    ‘এটাও এক ধরনের শিল্প,’ বলল রানা। চোখ ছোট করে সারফেসের দিকে তাকাচ্ছে, বোটদুটো ফিরে আসবে নির্ঘাত।

    ‘শিল্প না ছাই! তুমি একটা কুফা। তোমার সঙ্গে থাকলেই খালি বিপদে পড়ি। আগামী জন্মে তোমার সঙ্গে আর না, অন্য কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করব।’

    ‘এই জন্মটাই একটু লম্বা করা যায় কি না দেখো। নেপচুনের সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প কোনও কায়দা আছে?’

    একটু ভাবল মুরল্যাণ্ড। তারপর বলল, ‘ডেটা লিঙ্ক। ওদেরকে একটা মেইল পাঠাতে পারি।’

    ‘ই-মেইল?’ রানা বিস্মিত।

    ‘ঠিক তা না। ডেটা মেসেজের কথা বলছি। এখান থেকে স্যাটেলাইটে যাবে মেসেজটা, তারপর আবার নিচে রিলে হবে। টেলিমেট্রি ইকুইপমেন্ট যদি অন্ করা থাকে, নিশ্চয়ই রিসিভ করবে।’

    আশাবাদী হতে পারল না রানা। এ-মুহূর্তে নেপচুনের টেলিমেট্রি মনিটরে নজর রাখছে না কেউ। মেসেজ রিসিভ হলেও হয়তো দেখবে না।

    ‘আর কিছু?’

    ‘হয় ওটা, নয়তো বৈঠা মেরে সান্তা মারিয়ায় গিয়ে হাত নাড়তে হবে।’

    ‘হুম,’ মাথা ঝাঁকাল রানা। ‘টেলিমেট্রি সিস্টেম চালু করো। রেডি হলে জানিয়ো আমাকে।’

    ‘সারফেসে গিয়ে ত্রিশ সেকেণ্ড লাগবে আমাদের স্যাটেলাইট কানেকশন পেতে।’

    ‘অত সময় পাব বলে মনে হয় না,’ বলল রানা। ওর কথার সত্যতা প্রমাণের জন্যেই বুঝি আবার দেখা গেল ঢেউয়ের আলোড়ন। ফিরে আসছে বোটদুটো। এবার অবশ্য আগের মত ছোটাছুটি করছে না, দু’দিক থেকে আস্তে-ধীরে এগোচ্ছে।

    বাঁয়ে মোড় নিল রানা, রওনা হলো সাগরতলের গোরস্থানের দিকে। বোটদুটো পিছু নিল।

    ‘ওরা আমাদেরকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে, দোস্ত,’ বলল মুরল্যাণ্ড।

    নিশ্চয়ই সাবমারসিবল থেকে বেরুনো বুদ্বুদের ট্রেইল অনুসরণ করছে, অনুমান করল রানা। মরতে থাকা মাছের দশা হয়েছে ওদের, পেছনে ফেলে যাচ্ছে রক্তের রেখা।

    চাপা কয়েকটা আওয়াজ ভেসে এল ওপর থেকে। পানিতে গুলি করছে শত্রুরা। বড় কোনও বিপদ নয়, তবে পরিস্থিতি যে কতটা গুরুতর, তা বোঝা যাচ্ছে পরিষ্কার।

    আরেকটু গভীরে গেলে হয়তো ফাঁকি দেয়া যাবে ওদের, ভাবল রানা। নাক নিচু করল হ্যামারহেডের। ডেপথ গজের কাঁটা ঘুরতে শুরু করল। পনেরো… বিশ…

    হঠাৎ বিচ্ছিরি একটা শব্দ হলো। টেপ দিয়ে আটকানো একটা অংশ খুলে গেছে পানির চাপে, ঢুকছে অঝোর ধারা। তাড়াতাড়ি ওটা আবার মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুরল্যাণ্ড, হ্যামারহেডকে দশ ফুট গভীরতায় ফিরিয়ে আনল রানা। মুখ ঘুরিয়ে আরেকদিকে ছুটল। লাভ হলো না, বোটদুটোও মুখ ঘোরাল একই সঙ্গে।

    ‘ব্যাটারা মনে হয় মাউয়ি জিম সানগ্লাস পরে এসেছে,’ সখেদে বলল মুরল্যাণ্ড। ‘ওই যে, যেগুলো পরলে পানির তলার মাছ দেখা যায়।’

    তিক্ততা অনুভব করছে রানা। তাড়া খাওয়া তিমির মত লাগছে নিজেদেরকে, ওপর থেকে ওদেরকে যেন ধাওয়া করছে শক্তিশালী হার্পুন বোট। বুঝতে পারছে, বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না নিচে; এক সময় ওপরে উঠতেই হবে, আর তখন তিমির মত ওদেরকে শিকার করবে শত্রুরা।

    টুপ টুপ করে কী যেন পড়ল সামনে আর ডানে। আলোর ঝলকানি দেখতে পেল ও। তারপরেই উন্মুক্ত পানির বিশাল এক গোলক এসে আঘাত হানল সাবমারসিবলের গায়ে।

    ‘গ্রেনেড,’ দাঁতে দাঁত পিষল রানা।

    নতুন করে ফাটল দেখা দিল ক্যানোপিতে। জোড়া দেয়া জায়গাগুলো থেকে সরু সরু সব রেখা মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। যে-কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়বে প্লেক্সিগ্লাস।

    আরেকটা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল হ্যামারহেড। রানা জানতে চাইল, ‘হলো তোমার?’

    ‘ওপরে দশ সেকেণ্ডও টিকব না আমরা,’ বলল মুরল্যাণ্ড।

    ‘টিকব, যদি আত্মসমর্পণ করি,’ বলল রানা। স্রেফ ত্রিশ সেকেণ্ড দরকার ওদের। আশা করছে, হাত তুলে অপেক্ষা করলে ওদেরকে গুলি করবে না শত্রুরা। কাছে আসতে ত্রিশ সেকেণ্ডের বেশিই নেবে।

    মাথা ঝাঁকিয়ে কি-বোর্ডের বাটন টিপতে শুরু করল মুরল্যাণ্ড। একটু পর জানাল, ‘রেডি।’

    হ্যামারহেডের নাক সারফেসের দিকে তাক করল রানা। মনে মনে আওড়াচ্ছে, দেখামাত্র যেন ওদেরকে ঝাঁঝরা করে দেয়া না হয়। দশ ফুট পানি চোখের পলকে পেরিয়ে এল। পানির ওপরে ভেসে উঠেই ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল ও।

    ঢেউয়ের দোলায় দুলছে হ্যামারহেড। দু’পাশ থেকে ওটাকে পেরিয়ে চলে গেল পাওয়ারবোটদুটো।

    ‘শুরু করো!’ চাপা গলায় বলল রানা। ক্যানোপি সরিয়ে দু’হাত তুলে দিল ওপরে, আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে। লক্ষ করল, সামনে ঘুরতে শুরু করেছে বোটদুটো।

    কি-বোর্ডের ওপর ঝুঁকে রয়েছে মুরল্যাণ্ড। ‘কাম অন! জলদি কর্ না রে, ভাই!’

    সিট থেকে উঠে দাঁড়াল রানা। হাত এখনও তুলে রেখেছে ওপরে। বোটদুটো দু’পাশ থেকে এগিয়ে এল ওদের দিকে দূরে বড়-সড় আরেকটা বোট চোখে পড়ল ওর, ওটাও আসছে এদিকেই।

    পাশে এসে থামল দুই পাওয়ারবোট। দু’জন লোক শটগান তাক করল রানার দিকে।

    ‘আত্মসমর্পণ করছি,’ বলল ও।

    নির্বিকার রইল লোকদুটো। পেছনে পাখির ডাকের মত একটা মৃদু আওয়াজ শুনল রানা। এবার দু’হাত তুলে মুরল্যাণ্ডও উঠে দাঁড়াল। ফিসফিসিয়ে জানাল, ‘মেসেজ চলে গেছে।’

    আস্তে করে মাথা ঝাঁকাল রানা। ওর দায়িত্ব শেষ। বাকিটা ভাগ্যের হাতে।

    একটা দড়ি ছুঁড়ে দেয়া হলো ওদের থেকে। সেটা দিয়ে হ্যামারহেডকে বাঁধা হলো একটা পাওয়ারবোটের পাশে। রানা ও মুরল্যাণ্ডকে অস্ত্রের মুখে তোলা হলো বোটে। হাতে পরিয়ে দেয়া হলো হ্যাণ্ডকাফ।

    তৃতীয় বোটটা ততক্ষণে কাছে চলে এসেছে। ষাট ফুট দীর্ঘ একটা মোটর ইয়ট। ওটার চেহারাসুরত বেশ অদ্ভুত। বিলাসিতার ছাপ নেই, ঝগড়াটে চেহারা। রানার মনে হলো, একটা যুদ্ধজাহাজকে যেন ইয়টের ছদ্মবেশ পরানো হয়েছে।

    ভাসতে ভাসতে ওদের পাশে এল ইয়টটা। বো-র কাছে দাঁড়িয়ে আছে জাঙ্গল ফেটিগ পরা একজন মানুষ, তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রানার দিকে। দেহের গড়ন দেখে রানা বুঝল, এ-ই সেই জলদস্যুদলের নেতা… এ-লোকই গত সন্ধ্যায় ধাওয়া করেছিল ওকে আর লামিয়াকে। বিজয়ীর হাসি ফুটে আছে লোকটার মুখে। কাছাকাছি এসেই লাফ দিয়ে নামল পাওয়ারবোটে, ইয়টটা পাশে ভেড়ার অপেক্ষা করল না।

    লম্বা লম্বা পা ফেলে রানার সামনে এসে দাঁড়াল লোকটা। চোখ রাখল রানার চোখে। এই প্রথম তাকে কাছ থেকে দেখছে রানা। একদৃষ্টে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল মুখটার দিকে। তারপরেই তেতো হয়ে গেল রানার মনটা।

    ‘কুচিয়ো,’ দাঁতে দাঁত পিষে বলল ও।

    ‘তোমার পুরনো দোস্ত নাকি?’ পাশ থেকে জানতে চাইল মুরল্যাণ্ড।

    জবাব দেবার সুযোগ পেল না রানা। তার আগেই সর্বশক্তিতে ওর চোয়ালে একটা ঘুসি মারল কর্টেজ। তাল হারিয়ে ডেকের ওপর আছড়ে পড়ল ও। চোখের সামনে তারা দেখছে। ব্যথা সামলে যখন সোজা হয়ে বসল, ঠোঁটের কোণ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে ওর।

    ‘থাক, কিছু বলতে হবে না,’ বলল মুরল্যাণ্ড। ‘জবাব পেয়ে গেছি আমি।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৩ – ছায়াঘাতক
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.