Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ধ্বংসযজ্ঞ – ৪২

    বেয়াল্লিশ

    আটলান্টিক মহাসাগরের চৌত্রিশ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে চলেছে একটা মান্ধাতা আমলের রাশান আইএল-৭৬ ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফট। শব্দমুখর ককপিটে, পাইলটদের পেছনের জাম্পসিটে বসে আছে রানা ও মুরল্যাণ্ড। গায়ে ফ্লাইট সুট, কানে লাগিয়ে রেখেছে হেডসেট। দৃষ্টি উইণ্ডশিল্ড ছাড়িয়ে সামনে—পশ্চিম দিগন্তের কাছে লালিমা এঁকে অস্ত যাচ্ছে সূর্য।

    সিঙ্গাপুর ছাড়ার পরের কয়েকটা দিন দারুণ ব্যস্ততায় কেটেছে ওদের, জোগাড় করতে হয়েছে নানা ধরনের ইকুইপমেন্ট আর সরঞ্জাম। যতটুকু পেরেছে, বিসিআই থেকে নিয়েছে; আর সব কিনতে হয়েছে ব্ল্যাকমার্কেট থেকে। বাকি ছিল ট্রান্স-আটলান্টিক ফ্লাইটের উপযোগী একটা বিমান… স্বাভাবিক অবস্থায় সেটা বড় কোনও সমস্যা হবার কথা নয়, যে-কোনও একটা বিমান চার্টার করে নিলেই রানা ও মুরল্যাণ্ড ওটা উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু যেভাবে প্ল্যান সাজানো হয়েছে, তাতে নিজেরা পাইলট হতে পারবে না ওরা; তাই খুঁজতে হয়েছে এমন লোক, যে বিনা প্রশ্নে ওদেরকে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। মিশরীয় এক বন্ধুকে ধরেছিল মুরল্যাণ্ড, সে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে গ্রিসের আরেক জনের সঙ্গে; সে- লোক আবার ওদেরকে পাঠিয়েছে মরক্কোর এক চার্টার কোম্পানিতে। শেষমেশ তাঞ্জিয়ার্স থেকে দু’জন পাইলট-সহ লক্কড়ঝক্কড়মার্কা বিমানটা ম্যানেজ করতে পেরেছে ওরা।

    বিমানের খবর অন্তত তিনটে পক্ষ জানে, এটা রানাকে যত না ভাবাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে বিমানটার ভগ্নদশা। তৃতীয় বিশ্বের মুড়ির টিন বাসগুলোও বোধহয় এরচেয়ে শক্তপোক্ত থাকে—সারাক্ষণ ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ করছে প্রাচীন আইএল-৭৬, নাকে জ্বলুনি তুলছে জেট ফিউয়েলের ঝাঁঝালো গন্ধ… মনে হচ্ছে ফিউয়েল লাইন ফেটে গেছে ওটার। ড্যাশবোর্ডের গজগুলো ঠিকমত কাজ করছে না, রিডিং নিতে গিয়ে ওগুলোর গায়ে টোকা-থাবড়া দিচ্ছে পাইলটেরা। এক পর্যায়ে ওদেরকে ছেঁড়া দু’টুকরো তারও জোড়া দিতে দেখেছে ও। ব্যাপারটা উদ্বেগ জাগাবার জন্যে যথেষ্ট

    ‘বলিহারি তোমার কানেকশন,’ বন্ধুর দিকে তাকাল রানা। ‘বিমানের নামে মিউজিয়ামের অ্যান্টিক ধরিয়ে দিয়েছে।’

    ‘এখনও তো ডানা ভেঙে পড়েনি,’ আহত গলায় বলল মুরল্যাণ্ড। ‘অভিযোগ করছ কেন?’

    ‘ডানা ভাঙলে তো অভিযোগ জানাবার সময় পাব না। সময় যদি কিছু জোটেও, সেটা তোমার টুটি চেপে ধরার কাজে ব্যয় করব।’

    ‘এ-ই যদি তোমার মনোভাব হয়ে থাকে, বাজেট বাড়িয়ে দিতে পারতে না? তা হলে তো ঝকঝকে একটা জাম্বো জেট জোগাড় করে দিতাম!’

    ‘বাজেটের কথা আর বোলো না। অলরেডি যা খরচ করেছি, তার বিল দেখে আমার বস আর অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনের চোখ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা-ই ভাবছি।’

    ‘তা হলে আর কথা বলে লাভ কী? ভিক্ষের চাল আবার কাঁড়া-না-আকাড়া! যা পেয়েছ, তা-ই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো।’

    আরও কিছু বলতে চাইছিল রানা, বাধা পেল কো-পাইলট ওদের দিকে ঘাড় ফেরানোয়।

    ‘রেডিও কল, অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনের,’ বলল সে। ‘চ্যানেল টু-তে যান।’

    মাথা ঝাঁকিয়ে হেডসেটের চ্যানেল বদলাল রানা। বলল, ‘দিস ইজ রানা।’

    ‘তোমার তো নাগাল পাওয়াই কঠিন, রানা,’ ওপাশ থেকে শোনা গেল অ্যাডমিরালের কণ্ঠ। ‘ভাগ্যিস রাহাত তোমাকে ট্র্যাক করছে, নইলে খুঁজেই পেতাম না।’

    ‘ইমার্জেন্সি ছাড়া যোগাযোগ করব না, এরকমই তো কথা ছিল, স্যর।’

    ‘ইমার্জেন্সিই দেখা দিয়েছে। তোমরা কোথায়?’

    ‘একটা ক্লু পেয়েছি। ল্যারি সম্ভবত আপনাকে বলেছে। ওখানেই যাচ্ছি।’

    ‘জাহাজটাতে? ওটা এখন কোথায়?’

    ‘আটলান্টিকের মাঝখানে।’

    ‘তা হলে বিমানে চড়েছ কেন?’

    ‘এ ছাড়া ওটার কাছাকাছি পৌছুবার আর কোনও উপায় নেই। নরমাল শিপিং লেনের বাইরে, বিজন একটা জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে ওটা। অন্য কোনও জাহাজ বা বোটকে ওখানে উদয় হতে দেখলেই সন্দেহ করে বসবে। এয়ারড্রপের বিকল্প দেখছি না।’

    ‘হুম। রেডারও তো আছে ওদের। তুমি নিশ্চয়ই জাহাজের মাথার ওপর গিয়ে ঝাঁপ দেবার কথা ভাবছ না?’-

    ‘না, স্যর,’ সংক্ষেপে বলল রানা। প্ল্যানটা আর ব্যাখ্যা করতে গেল না। অ্যাডমিরালও কিছু জানতে চাইলেন না। ও জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি আমাদেরকে খুঁজছেন কেন, সেটা জানতে পারি?’

    ‘এ-কথা বলতে যে, জাম্পটা না করলেও চলবে তোমাদের।’

    ‘কেন?’

    ‘আপাতত এটুকু জানো যে, প্রাইমারি টার্গেটের হদিস পেয়ে গেছি আমরা। তুমি যার পেছনে ছুটছ, তাকে আপাতত দরকার নেই। ওয়েস্টলেকের কথাই ঠিক, সে একটা ভাড়াটে গুণ্ডা, বন্দিদের জায়গামত পৌছে দেয়া পর্যন্তই ছিল তার দায়িত্ব। ওকে ধরতে পারলে ভাল, কিন্তু এ-মুহূর্তে সেজন্যে জীবনের ঝুঁকি নেবারও মানে হয় না।’

    ‘তা হলে কী করতে বলছেন আমাদেরকে?’

    ‘কিছুই না। ব্যাপারটা এখন আমরাই সামলাচ্ছি, তাই চাইলে তোমরা এসব থেকে ছুটি নিয়ে নিতে পারো। কেউ কিছু মনে করবে না তাতে।’

    ঠোঁট কামড়াল রানা। ভাবল একটু। তারপর বলল, ‘পারলে সেটা করতাম, স্যর। কিন্তু কী যেন মিলছে না। কুচিয়ো যে ভাড়া খাটে, সেটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই বিশেষ কাজটায় তার সম্পৃক্ততা আরও অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে আমার। এখন পর্যন্ত যা যা করেছে, তাতে শেষটা না দেখে কেটে পড়ার কোনও যুক্তি দেখছি না।’

    একটু নীরবতা। গম্ভীর হয়ে গেছেন অ্যাডমিরাল। রানার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সম্পর্কে জানা আছে তাঁর, গোলমালের আভাস দিচ্ছে মানে সত্যিই গোলমাল আছে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কি শুধুই তোমার ইনস্টিট্, নাকি আর কিছু চোখে পড়েছে?’

    ‘কয়েকটা অসঙ্গতি,’ বলল রানা। ‘তার মধ্যে একটা, জাহাজ নিয়ে যদি ঘুরেই বেড়াবে কুচিয়ো, সুপারট্যাঙ্কার নিয়ে ঘুরছে কেন? ছোট আকারের কোনও জাহাজ ব্যবহার করলেই কি অনেক সহজ হতো না? তা ছাড়া ওই জাহাজটাতেও কিছু অস্বাভাবিকতা আবিষ্কার করেছে ববি।’

    ‘কী রকম?’

    এবার মুখ খুলল মুরল্যাণ্ড। ‘শিপিং রেজিস্টার থেকে ওটার ছবি আর ডেটা জোগাড় করেছি আমরা। ওই আকারের সাধারণ ট্যাঙ্কারের চেয়ে জাহাজটার প্রস্থ চল্লিশ ফুট বেশি। ফরোয়ার্ড অ্যাঙ্করের নিচে বো-র অংশটা বেঢপভাবে বেরিয়ে আছে। মিডশিপের সেকশনটাও বেশ খানিকটা উঁচু। ডিজাইনারের পয়েন্ট অভ ভিউ থেকে বলছি, এসবের কোনও মানে হয় না, যদি না বিশেষ কোনও কারণ থাকে এভাবে জাহাজ তৈরি করার।’

    ‘আপনার যদি আপত্তি না থাকে, জাহাজটা আমি একটু খুঁটিয়ে দেখতে চাই,’ যোগ করল রানা। ‘নইলে ঠিক স্বস্তি পাচ্ছি না।’

    ‘আমাকেও তো অস্বস্তিতে ফেলে দিলে,’ বললেন অ্যাডমিরাল। ‘এখন ঝুঁকি নেবে কি নেবে না, সেটা তোমার ব্যাপার।’

    ‘বেশি ঝুঁকি নেব না,’ কথা দিল রানা। ‘চুপি চুপি দেখে আসব, ব্যাপারটা কী। যদি ইন্টারেস্টিং কিছু না পাই, লাফ দিয়ে নেমে যাব পানিতে। লোকেটর বিকন থাকছে সঙ্গে, ববি পরে আমাকে তুলে নিতে পারবে।’

    ‘বেশ,’ সায় জানালেন অ্যাডমিরাল। ‘এর ভেতরে সত্যিই যদি কিছু থাকে, সেটা এখনই জেনে নেয়া ভাল… দেরি হয়ে যাবার আগেই। তবে যা করতে চাও, সাবধানে কোরো। অযথা প্রাণ হারিয়ো না।’

    হাসল রানা। ‘আচ্ছা, স্যর।’

    ‘শুভকামনা রইল।’

    যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন অ্যাডমিরাল।

    .

    দু’ঘণ্টা পর ককপিট থেকে ফিউযেলাযের মেইন সেকশনে চলে এল রানা ও মুরল্যাণ্ড। ধাতব একটা গুহার মাঝে যেন এখন দাঁড়িয়ে আছে ওরা, চারপাশে নানা ধরনের ইকুইপমেণ্ট, ছোট- বড় কন্টেইনার আর টাই-ডাউন স্ট্র্যাপে বাঁধা জিনিসপত্র। প্রেশার সুট পরে নিল রানা, হাত-পায়ে গলাল গ্লাভস আর বুট, মাথায় পরল ফাইটার পাইলটদের মত হেলমেট-সেটার ভেতরে রয়েছে নয়েজ-ক্যান্সেলিং হেডফোন আর অক্সিজেনের সাপ্লাই। এতকিছুর পরেও পঁয়ত্রিশ হাজার ফুট অলটিচ্যুডের ঠাণ্ডাটা দূর হলো না। প্রাচীন বিমানটার প্রতিটা ঝাঁকি অনুভব করতে পারছে, তবে ইঞ্জিনের গগনবিদারী আওয়াজের কারণে অন্য কোনও শব্দ কানে পৌঁছুচ্ছে না।

    গায়ে একটা পশমি লাইনিঙের পারকা চড়িয়ে রানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মুরল্যাণ্ড। মুখে অক্সিজেন মাস্ক, কানে হেডফোন। কী যেন বলার চেষ্টা করছে।

    ‘কিছু বললে?’

    ‘বলছি যে, তোমার মাথায় ছিট আছে,’ চেঁচাল মুর ‘কত বড় ঝুঁকি নিচ্ছ, নিজেও জানো না।’

    প্রতিবাদ করল না রানা। হয়তো মুরল্যাণ্ডের কথাই ঠিক। মৃদু গুঞ্জন শুনে এয়ারক্র্যাফটের পেছনদিকে তাকাল। র‍্যাম্প খুলে যেতে শুরু করেছে। ‘ঝাঁকুনি বেড়ে গেল বিমানের, র‍্যাম্পের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ল দামাল হাওয়া। ওপর থেকে নেমে আসা স্ট্র্যাপ ধরে তাল সামলাল দু’বন্ধু। আধঘণ্টা আগেই ডিপ্রেশারাইজ করে নেয়া হয়েছে বিমানের অভ্যন্তর, কাজেই বায়ুশূন্যতা দেখা দেবার ভয় নেই। তবে চোখের পলকে তাপমাত্রা নেমে গেল শূন্যের পনেরো ডিগ্রি নিচে। ইঞ্জিনের চিৎকারও শোনা গেল তীব্রভাবে।

    র‍্যাম্পের ফাঁক দিয়ে রাতের কালো আকাশ দেখতে পেল রানা। সিলিণ্ডার থেকে অক্সিজেন নিচ্ছে এখন ও, পিঠে বাঁধা রয়েছে বিশেষ ডিজাইনের একটা প্যারাশুট। দুই শতাধিক প্যারাজাম্পের অভিজ্ঞতা আছে ওর; হাই অলটিচ্যুড-লো ওপেনিং, যেটাকে সংক্ষেপে হ্যালো জাম্প বলে, সেটাও দিয়েছে অন্তত ত্রিশবার। কিন্তু আজ যা করতে চলেছে, সেটা জীবনে এই প্রথম। মুরল্যাণ্ড বার বার ওকে বলছে, এ-নিয়ে আরেকটু ভাবনাচিন্তা করতে।

    ওর কথা শুরু থেকেই হেসে উড়িয়ে দিয়েছে রানা, ঠাট্টাও করেছে এতটা উতলা হতে দেখে। কিন্তু এখন… বিমানের পেছনদিকে তাকিয়ে… ব্যাপারটা অত তুচ্ছ মনে হচ্ছে না ওর কাছে।

    এখন এতকিছু ভেবে লাভ নেই। স্ট্র্যাপ ছেড়ে দিয়ে সাবধানে বিমানের পেছনদিকে এগোল রানা। অদ্ভুত আকৃতির একটা জিনিস শুয়ে আছে মেঝেতে। চ্যাপ্টা টিউবের মত একটা বাহন, দেখতে অনেকটা অলিম্পিকের ববস্লেডের মত, দু’পাশে রয়েছে দুটো ভাঁজ করা ছোট্ট ডানা। ডিজাইনাররা এর নাম দিয়েছে সিঙ্গেল অকুপেন্ট ট্যাকটিক্যাল রেঞ্জ ইনসার্শান ইউনিট, আর যে-লোক ওটাতে প্রথমবার চড়েছে, সে নাম দিয়েছে লিউনাটিক এক্সপ্রেস বা এলএক্স। বলা বাহুল্য, দ্বিতীয় নামটাই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বেশি। সত্যিই এ এক পাগলা বাহন।

    ওয়ান-ম্যান গ্লাইডারের মত কাজ করে জিনিসটা। রিলিজ করা হয় আকাশের সাত মাইল ওপর থেকে। বিশ বাই এক গ্লাইড রেশিওতে বাহনটা তার একমাত্র আরোহীকে একশো চল্লিশ মাইল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। কোনও শব্দ বা হিট ট্রেইল নেই এর, নেই রেডার সিগনেচার। কারণ পুরো দেহটা তৈরি করা হয়েছে স্পেশালাইজড্ প্লাস্টিক দিয়ে, তার ওপরে দেয়া হয়েছে রেডারের সিগনাল শুষে নেবার জন্য এক বিশেষ প্রলেপ।

    উপুড় হয়ে এলএক্স-এ চড়তে হয় আরোহীকে। সাইকেলের হ্যাণ্ডেলের মত দুটো ছোট্ট হ্যাণ্ডেল ধরে দিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। নাকের অংশটা স্বচ্ছ প্লেক্সিগ্লাসে তৈরি, সামনের দৃশ্য দেখবার জন্যে। সেখানে আবার একটা হেডস্- আপ ডিসপ্লে রয়েছে, তাতে ফুটে ওঠে গ্লাইডারের গতি, অলটিচ্যুড, হেডিং, ইত্যাদি তথ্য। ভিজুয়াল একটা গ্লাইড- স্কোপ ইণ্ডিকেটরও আছে ওতে, যাতে সঠিক অ্যাঙ্গেল মেইনটেন করে পাইলট নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে। আজ ওটা রানাকে নর্দার্ন স্টারে নিয়ে যাবে।

    অনন্যোপায় হয়ে এই এক্সপেরিমেন্টাল গ্লাইডারটা জোগাড় করতে হয়েছে রানাকে। কর্টেজের জাহাজ নর্দার্ন স্টার এমন এক এলাকায় রয়েছে, যেখানে দ্বিতীয় কোনও জাহাজ বা বোট উদয় হলেই সন্দেহ করবে ওরা; একই কথা খাটে বিমানের ক্ষেত্রেও, কারণ ওটার ধারেকাছে কোনও এয়ার রুট নেই। সবচেয়ে কাছের এয়ার রুটটা পঁচাত্তর মাইল দক্ষিণে… বেশ ব্যস্ত একটা রুট ওটা। কাজেই ওখান থেকে জাহাজে পৌঁছুবার চেষ্টা করতে হচ্ছে ওকে, আর তাতে সফল হবার জন্যে ব্যবহার করতে হচ্ছে এলএক্স। পঁচাত্তর মাইল দূর থেকে আর কোনও গ্লাইডার ওকে রেডারের চোখ এড়িয়ে অতদূর নিয়ে যেতে পারবে না। আইএল-৭৬ বিমান ব্যবহার করছে, কারণ ওটাকে রেডারে সাধারণ যাত্রীবাহী বিমানের মত দেখাবে। সন্দেহ জাগবে না শত্রুপক্ষের।

    ঘাড় ফিরিয়ে মুরল্যাণ্ডের দিকে তাকাল রানা। ‘ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, নাকি সাহায্য করবে আমাকে?’

    এগিয়ে এল মুরল্যাণ্ড। ‘একা যাচ্ছ, এটাই আসলে পছন্দ হচ্ছে না আমার।’

    ‘কিছু তো আর করার নেই। এক্সপেরিমেন্টাল জিনিস….. একটার বেশি ম্যানেজ করে দিতে পারল না বিসিআই থেকে। আর দুটো পেলেই বা কী লাভ হতো? তোমার হাবভাব দেখে তো মনে হচ্ছে না যেতে রাজি হতে।’

    ‘দোষ দিতে পারো? তোমার এই প্ল্যানে কত রকমের গড়বড় দেখা দিতে পারে, কোনও আইডিয়া আছে?’

    ‘না, নেই। আর আমি চাইও না, সেসব তুমি আমাকে শোনাও।’

    ‘লঞ্চেই ঝামেলা দেখা দিতে পারে—বিমানের ওয়েক টার্বিউলেন্সে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারো। কিংবা ধরো, অক্সিজেন কাজ করল না, তারমানে সেফ অলটিচ্যুডে পৌঁছুবার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে…’

    ভুরু কোঁচকাল রানা। ‘এসব বলতে মানা করেছি না?’

    পাত্তা দিল না মুরল্যাণ্ড, বলে চলল, ‘ঠাণ্ডায় জমে যেতে পারো। অথবা ধরো, গ্লাইডারের কাভার খুলতে পারলে না; প্যারাশুট রিলিজ করতে পারলে না। ভেতরে তোমার পা-ও আটকে যেতে পারে। এয়ারফয়েলগুলো ঠিকমত ওপেন হলো না…’

    রেইল টপকে গ্লাইডারে উঠে পড়ল রানা। বলল, ‘আমাকে তো খুব ভয় দেখাচ্ছ, নিজের কথা ভেবেছ কিছু? উড়ন্ত এই ফাঁদটার ভেতর থেকে যাচ্ছ তুমি। ডানার গোড়ায় জং ধরেছে, দেখেছ? যখন রওনা হলাম, তিন নম্বর ইঞ্জিন থেকে কীভাবে ধোঁয়া বেরুচ্ছিল, লক্ষ করোনি? এই জিনিস যে আকাশে উড়বে, এটাই তো বিশ্বাস হচ্ছিল না।’

    ‘রাশান এয়ারলাইন্সে ওড়ার অভিজ্ঞতার অংশ এগুলো,’ হালকা গলায় বলল মুরল্যাণ্ড। ‘তারপরেও… তুমি যা করতে চলেছ, তার চেয়ে এটা ঢের নিরাপদ।’

    ‘বলেছে তোমাকে!’ হালকা সুরে বলল রানা। ‘বিমান তো বিমান… পাইলটগুলোরও অবস্থা যা-তা। টেকঅফ করার আগে দু’জনকেই গলা পর্যন্ত মদ গিলতে দেখেছি আমি।’

    ‘সেটা তো তোমার সুস্বাস্থ্য কামনা করে! মরতে যাচ্ছ কিনা!’

    হলুদ রঙের একটা বাতি জ্বলে উঠল। জাম্প সাইটে পৌঁছুতে আর এক মিনিট বাকি।

    জায়গামত পা ঢুকিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল রানা। অন্ করল হেডস্-আপ ডিসপ্লে। মুরল্যাণ্ডকে ইশারা করতেই ওপরের কাভারটা আটকে দিল সে। টিউবের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল রানার দেহ।

    হলুদ রঙের আরেকটা বাতি জ্বলে উঠল এবার। তারপর জ্বলতে-নিভতে শুরু করল একটা লাল বাতি। ত্রিশ সেকেণ্ড বাকি। ঘড়িতে চোখ রাখল মুরল্যাণ্ড। কাউন্টডাউন করে পৌছুল তিন, দুই, এক-এ। তারপর টান দিল লঞ্চ কন্ট্রোলের লিভার ধরে।

    একটা ঝাঁকি খেল রানা। টের পেল, জ্যা-মুক্ত তীরের মত র‍্যাম্পের ফাঁক গলে বেরিয়ে এসেছে এলএক্স। বেরিয়েই আছড়ে পড়ল পাঁচশো মাইল বেগের এয়ারস্ট্রিমে। ঝাঁকিতে দম আটকে এল রানার। তবে তা মুহূর্তের জন্যে। ক্ষণকাল পরেই এয়ারস্ট্রিম ভেদ করে নিচে পড়তে শুরু করল গ্লাইডার।

    এলএক্স-এর পেছন থেকে ফানেল আকৃতির একটা ড্রোগ- শুট বেরিয়ে এল এবার-পতনের গতি কমিয়ে আনছে। ভেতরে রানার দেহের গতি একই হারে কমছে না, তাই পিছলে কিছুটা এগিয়ে গেল ও, শোল্ডার স্ট্র্যাপগুলো চেপে বসল কাঁধে। হাত বাঁকা হয়ে গেল, ওজন বইতে পারছে না ওগুলো। রানার মনে হলো, কোটর ছেড়ে বেরিয়ে যাবে ওর চোখদুটো।

    দশ সেকেণ্ড স্থায়ী হলো এই অবস্থা। তারপর গতি কমে এল গ্লাইডারের। চাপ-টাপ কমে গেল, ধাতস্থ হতে পারল রানা। চোখ বোলাল ডিসপ্লেতে। এখনও কমছে পতনের গতি—চারশো… সাড়ে তিনশো… মধ্য আটলান্টিকের কালচে জলের দিকে ছুটে চলেছে এলএক্স বিশাল এক আর্টিলারি শেলের মত।

    স্পিড দু’শো দশ নটে নেমে এলে মেইন শুট রিলিজ করল রানা। বিকট এক আওয়াজ করে খুলে গেল ওটা। ঝাঁকুনি কমে গিয়ে এবার মসৃণভাবে নামতে শুরু করল গ্লাইডার। হেলমেটের কারণে বাতাসের গর্জন আর শুনতে পাচ্ছে না রানা, শান্তিময় এক নীরবতা আচ্ছন্ন করল ওকে। কয়েক মুহূর্ত পর, পতনের বেগ একশো নব্বুই নটে পৌঁছলে, গ্লাইডারের দু’পাশে খুলে গেল ভাঁজ করা ডানাদুটো।

    বিপজ্জনক একটা মুহূর্ত। ডানাগুলো একসঙ্গে ঠিকমত না খুললে ঘটে যাবে দুর্ঘটনা। পাক খেতে শুরু করবে গ্লাইডার, বায়ুচাপ সইতে না পেরে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। রানার পিঠে যদিও একটা প্যারাশুট রয়েছে অমন পরিস্থিতি মোকাবেলার করার জন্যে, তারপরেও গ্লাইডার ভেঙে গেলে কী ঘটবে বলা যায় না। প্যারাশুট খোলার হয়তো সুযোগই পাবে না ও।

    তবে সমস্ত আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হলো। ঠিকমতই খুলল ডানাদুটো। এতক্ষণ নাক নিচু করে নিচে পড়ছিল গ্লাইডার, এবার ডানায় ভর করে সোজা হতে শুরু করল। বুক আর পেটে প্রচণ্ড চাপ পড়ল রানার। সেটা ক্ষণিকের জন্যে। গ্লাইডারটা লেভেলে চলে এলে কন্ট্রোলে হাত দিল ও। ওটাকে ডানে-বাঁয়ে নিল, তারপর আবার নাক উঁচু করে নিয়ে গেল ওপরদিকে। বুঝল, সব ঠিকমতই কাজ করছে।

    স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল রানার মুখ দিয়ে। সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে, তারপরেও অদ্ভুত এক আনন্দ অনুভব করল। পাখির মত লাগছে নিজেকে—উড়ছে আকাশে। ছোট্ট গ্লাইডারটা ওর ছোঁয়ায় সাড়া দিচ্ছে চমৎকারভাবে। শরীরের ভার সরিয়ে ডানে-বাঁয়ে ওটাকে নেয়া যাচ্ছে অনায়াসে।

    চারদিকে ঘন কালো অন্ধকার, হেডস্-আপ ডিসপ্লের মৃদু আভা আর আকাশে মিটমিট করতে থাকা তারা ছাড়া আর কোনও আলো নেই কোথাও। দিনের আলো থাকলে ডাইভটা আরও উপভোগ্য হতো, ভাবল রানা। তবে সেক্ষেত্রে শত্রুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নর্দার্ন স্টারে পৌঁছুতে পারত না। কী আর করা, সে-অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জন্যে তোলা থাক।

    কোর্স ঠিক করে নিল রানা, গ্লাইড স্লোপ অ্যাডজাস্ট করে স্থির হলো। সাতাশ হাজার ফুটে রয়েছে এলএক্স, নিচে নামছে মিনিটে পাঁচশো ফুট হারে। গতি, একশো বিশ নট। ডিসপ্লের টার্গেট আইকন বলছে, আরও সত্তর মাইল পাড়ি দিতে হবে ওকে নর্দার্ন স্টারে পৌঁছুবার জন্যে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৩ – ছায়াঘাতক
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.