Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৬ – ধ্বংসযজ্ঞ

    কাজী আনোয়ার হোসেন এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ধ্বংসযজ্ঞ – ৫

    পাঁচ

    আরাতামা মারুর ভেতরে, অন্ধকারে খাবি খাচ্ছে লোরি লারসেন। কানের ভেতর অদ্ভুত একটা আওয়াজ হচ্ছে ওর, দপদপ করছে মাথা। মনে হচ্ছে যেন রাতভর মদ্যপানের ফলে হ্যাঙওভারে আক্রান্ত হয়েছে। মেঝের ওপর পড়ে আছে সে, শরীরের তলায় বেকায়দা ভঙ্গিতে ভাঁজ হয়ে রয়েছে হাতদুটো।

    চেষ্টা করেও মনে করতে পারল না লোরি, এখানে পৌঁছুল কীভাবে… ঘটেছেই বা কী। পাদুটো অসাড় হয়ে আছে; বুঝতে পারছে, অনেকক্ষণ থেকেই এভাবে পড়ে আছে ও। দাঁড়াতে পারছে না, বাল্কহেডে পিঠ ঠেকিয়ে খানিকটা উঁচু হলো, যুঝছে তাল সামলাবার জন্যে।

    ক্রু কোয়ার্টারের গভীরতম অংশে রয়েছে লোরি, আপার ডেক থেকে বেশ কয়েক ডেক নিচে- জাহাজের মিড সেকশনে। এই ডেকেই ক্রুদের মেস, এখানে স্বামীর সঙ্গে ডিনার করবে বলে নিচে নেমেছিল। আবছা আলোয় চারপাশে চোখ বোলাল, ক্যাপ্টেন লারসেনকে দেখতে পেল না কোথাও। চিন্তায় পড়ে গেল। যতটা সময় অজ্ঞান হয়ে ছিল, তার ভেতর তো খোঁজ নিতে আসার কথা ক্যাপ্টেনের। অবশ্য, বিপদের মুহূর্তে স্ত্রীর চেয়ে জাহাজের প্রতি তাঁর দায়িত্ব বেশি। আর বিপদ যে ঘটেছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে পরিষ্কার।

    নাকে ধোঁয়ার গন্ধ পাচ্ছে লোরি। বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেছিল বলে মনে পড়ছে না, তবে নিশ্চিতভাবেই আগুন লেগেছে জাহাজে। টেরোরিস্টরা মাঝে মাঝে সাগরে মাইন পেতে রাখে বলে শুনেছিল স্বামীর মুখে, তবে এবারের ট্রিপে সে-ধরনের কোনও ভয় নেই বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তা হলে ঘটলটা কী?

    আবারও দাঁড়াবার চেষ্টা করল লোরি, তাল হারিয়ে পড়ে গেল কাত হয়ে। সোডা ক্যান রাখা একটা টেবিলের সঙ্গে ধাক্কা লাগল। সশব্দে ক্যানগুলো পড়ে গেল ধাতব মেঝেতে। ওগুলোর গড়ানোর আওয়াজ পেল ও, গড়াতে গড়াতে বাল্কহেডের গায়ে বাড়ি খেয়ে থামল। প্রমাণ হয়ে গেল, লোরি একাই ভারসাম্য হারায়নি, হারিয়েছে জাহাজটাও। কাত হয়ে আছে পুরো কাঠামো। বুক ধুকপুক করে উঠল ভয়ে। লোরি টের পেয়েছে, জাহাজ ডুবতে চলেছে।

    দেয়াল ধরে ধরে হামাগুড়ি দিতে শুরু করল ও। দরজার কাছে পৌঁছুল। পাল্লায় ঠেলা দিল, কয়েক ইঞ্চি ফাঁক হয়ে নরম কিছুতে ধাক্কা খেল ওটা। আবারও ঠেলল লোরি, গায়ের ওজন চাপিয়ে দিল পাল্লায়। ফাঁকটা আরও কয়েক ইঞ্চি প্রশস্ত হলে শরীর গলিয়ে দিল। দেখতে পেল, পাল্লাটা বাড়ি খাচ্ছে মেঝেতে পড়ে থাকা একজন মানুষের গায়ে। দরজার চাপে গুঙিয়ে উঠল মানুষটা, গড়িয়ে সরে গেল কয়েক ইঞ্চি। এবার ফাঁক গলে বেরিয়ে এল লোরি।

    ‘কে তুমি?’ মানুষটাকে জিজ্ঞেস করল ও। ‘কী হয়েছে তোমার?’

    ‘মিসেস লারসেন?’ কোনোমতে উচ্চারণ করল লোকটা। গলাটা চিনতে পারল লোরি। ব্রিজের ক্রু—ওর স্বামীর আস্থাভাজন এক ফিলিপিনো নারিক। ক্যাপ্টেন লারসেন শতমুখে প্রশংসা করেন এর।

    ‘মি. গুইরাদো?’

    উঠে বসল ফিলিপিনো হেলমসম্যান। বলল, ‘জী। আপনি ঠিক আছেন?’

    ‘পায়ে কোনও জোর পাচ্ছি না। জাহাজও কাত হয়ে আছে। আমরা সম্ভবত ডুবে যাচ্ছি। তাই না?’

    ‘খারাপ কিছু ঘটেছে,’ বলল গুইরাদো। ‘জাহাজ থেকে নেমে যেতে হবে আমাদের।’

    ‘ক্যাপ্টেন কোথায়?’

    ‘ব্রিজে। উনিই পাঠিয়েছেন আমাকে। আপনি সিঁড়ি পর্যন্ত যেতে পারবেন?’

    ‘পারব। দরকার হলে হামাগুড়ি দিয়ে যাব।’

    ‘তা হলে আসুন আমার সঙ্গে।’

    গুইরাদোও হামাগুড়ি দিয়ে এগোল স্টেয়ারওয়েলের দিকে। তাকে অনুসরণ করল লোরি।

    ‘দাঁড়াবেন না,’ পেছন থেকে বলল ও। ‘ওপরে ধোঁয়া জমেছে। নিচু হয়ে থাকলে পরিষ্কার বাতাস পাবেন।’

    বিয়ের আগে প্যারামেডিক আর নার্সের চাকরি করেছে লোরি। অসংখ্য অ্যাক্সিডেন্ট, অগ্নিকাণ্ড আর দুর্যোগ-পরবর্তী অভিযানে অংশ নিয়েছে। প্রাথমিক শক কেটে গেছে ওর, মনে পড়ে যাচ্ছে এ-ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হবে।

    আস্তে আস্তে এগোল দু’জনে। পঞ্চাশ ফুট যেতেই পাওয়া গেল আরেক নাবিককে। নিথর হয়ে পড়ে আছে, ডাকাডাকিতে সাড়া দিল না। পালস চেক করল লোরি।

    ‘মারা গেছে, জানাল ও।

    ‘কীভাবে?’ গুইরাদো প্রশ্ন করল।

    জানে না লোরি। কোনও ধরনের ক্ষত বা আঘাতের চিহ্ন নেই লোকটার গায়ে। ঘাড়ও ভাঙেনি।

    ‘ধোঁয়ায় দম আটকে মরেছে বোধহয়,’ বলল ও, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারল না। এখানটায় ধোঁয়া কিছুটা ঘন, তবে মানুষ মরে যাবার মত নয়।

    আবারও হামাগুড়ি দিয়ে এগোল দু’জনে। স্টেয়ারওয়েলের মুখে পৌঁছে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল ভেতরে। স্বস্তি অনুভব করল লোরি, এখানে ধোঁয়ার উৎপাত কম। রেলিং ধরে উঠেও দাঁড়াতে পারল ও।

    সিঁড়ি ভেঙে উঠতে শুরু করল ওরা। সামনে থেকে ভেসে আসা এক চিলতে আলো ওদেরকে পথ দেখাচ্ছে। প্রথমে মনে হলো ইমার্জেন্সি লাইটের আলো, কিন্তু একটু পরেই ভুল ভাঙল। লাইটের আলো এত উজ্জ্বল হয় না। মাঝে মাঝেই কমে যাচ্ছে আলোটা, এরপর আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। ওপরে কাঁচ লাগানো একটা দরজা আছে, আলোটা সম্ভবত ওখান দিয়েই ঢুকছে। বিস্মিত হলো লোরি-রাত দশটায় নিচে নেমেছিল ও, তা হলে সূর্যের আলো আসে কীভাবে?

    গুইরাদোর পিছু পিছু উঠতে থাকল ও। ওপরের ল্যাণ্ডিঙে পৌছে দেখল, যা ভেবেছিল তা-ই ঠিক। সত্যিই সূর্যের আলো আসছে কাঁচ ভেদ করে। মাঝে মাঝে ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে দরজার ওপাশটা, সেজন্যেই আলো কমছে- বাড়ছে।

    ‘ভোর হয়ে গেছে!’ হতভম্বের মত বলল লোরি।

    ‘নিশ্চয়ই আমরা রাতভর অজ্ঞান ছিলাম, বলল গুইরাদো।

    ‘অথচ কেউ আমাদের খোঁজ করতে এল না?’ লোরির গলায় শঙ্কা। কী এমন ঘটতে পারে যে, মেস ডেকে সারারাত পড়ে থাকার পরেও স্ত্রীকে উদ্ধার করতে আসেননি ক্যাপ্টেন লারসেন?

    টলে উঠল ও। পড়েই যেত, গুইরাদো চট করে ধরে ফেলল ওকে। বাল্কহেডে ঠেস দিয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করল।

    ‘বসবেন?’ জিজ্ঞেস করল সে।

    ‘না, আমি ঠিক আছি,’ বিড়বিড় করল লোরি।

    ওকে ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে এগোল গুইরাদো। আঙুল দিয়ে সাবধানে স্পর্শ করল হাতল—গরম কি না পরীক্ষা করছে। লোরি দেখতে পেল, দরজায় গায়ে লাগানো কাঁচটা ঝুলে পড়েছে নিচে, যেন তীব্র উত্তাপে গলে গেছে ওটা।

    ‘খোলা যাবে,’. জানাল গুইরাদো। ‘আগুন নিভে গেছে বোধহয়।’

    হাতল ঘুরিয়ে পাল্লাটা খুলে ফেলল সে। পা দিল ওপাশে। লোরিকে হাতছানি দিয়ে ডাকল। টলমল পায়ে দরজা গলে ডেকের ওপর বেরিয়ে এল লোরি। দু’জনে রেলিঙের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।

    বো-র দিকে তাকিয়ে জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করল গুইরাদো, আর তখুনি… পেছনে পাক খেতে থাকা ধোঁয়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একটা লোক। বিশালদেহী, কাঁধদুটো চওড়া, আপাদমস্তক কালো পোশাকে ঢাকা। অবাক হলো লোরি, জাহাজের ক্রুরা কালো পোশাক পরে না। এক মুহূর্ত পরেই হাত তুলতে দেখল লোকটাকে, সেখানে শোভা পাচ্ছে মেশিনগান জাতীয় একটা আগ্নেয়াস্ত্ৰ।

    চেঁচিয়ে উঠল লোরি। ঝট করে ঘুরে দাঁড়াল গুইরাদো, দেখতে পেল লোকটাকে। ধাক্কা দিয়ে লোরিকে শুইয়ে দিল সে, পরমুহূর্তে গর্জে উঠল কালো পোশাকধারীর অস্ত্র। লাল রঙের অনেকগুলো ক্ষত সৃষ্টি হলো গুইরাদোর বুকে, বুলেটের ধাক্কায় রেইলে গিয়ে ধাক্কা খেল সে, এরপর রেইলের ওপর দিয়ে ডিগবাজি খেয়ে পড়ে গেল পানিতে।

    একটু উঁচু হয়ে দরজার দিকে ছুটল লোরি, হাতল ঘুরিয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করল ভেতরে। কিন্তু সফল হলো না। অস্ত্রধারী লোকটা ছুটে এল ওর দিকে, বুটপরা পায়ের এক লাথিতে বন্ধ করে দিল দরজাটা।

    ‘কোথায় যাচ্ছ, ডার্লিং?’ কুৎসিত হাসি হেসে বলল সে। ‘তুমি তো আমার সঙ্গে যাবে।’

    লোরির চুল মুঠো করে ধরল লোকটা, টান দিয়ে ওকে বাধ্য করল দাঁড়াতে।

    .

    নেপচুনের ব্রিজ উইঙে দাঁড়িয়ে আছে রানা। ত্রিশ নট বেগে সাগর চিরে ছুটছে জাহাজ, পানির ফুলঝুরি তুলছে, পেছনে ফেলে যাচ্ছে সাদা ফেনা। চোখে বিনোকিউলার লাগিয়ে আরাতামা মারুর দিকে তাকিয়ে আছে ও। দেখতে পাচ্ছে,

    অস্ত্রধারী লোকগুলো একের পর এক হ্যাচের কাছে যাচ্ছে, গ্রেনেড বা অন্য কোনও বিস্ফোরক ফেলছে ভেতরে।

    ‘অদ্ভুত ব্যাপার,’ মন্তব্য করল ও। ‘মনে হচ্ছে জাহাজটা ডুবিয়ে দিতে চাইছে ওরা।’

    ‘অন্য কোনও মতলবও থাকতে পারে,’ বললেন ক্যাপ্টেন মিচাম।

    ‘কী সেটা? জলদস্যুদের মেইন টার্গেট হলো টাকা। হয় জাহাজ আটকে মুক্তিপণ আদায় করে, নয়তো জাহাজের কার্গো বিক্রি করে দেয় কালোবাজারে। জাহাজ ডুবে গেলে তার কোনোটাই সম্ভব নয়।’

    ‘ক্রুদের জিম্মি করেও টাকা আদায় করা যায়,‘ মিচাম বললেন।

    ডেকের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত আরেকবার দেখল রানা। অ্যাকোমোডেশন ব্লকটা জাহাজের পেছনে—পাঁচতলা উঁচু একটা বিল্ডিঙের মত কাঠামো, নাবিকদের ভাষায় যাকে বলে কাসল। গর্বিত ভঙ্গিতে এখনও মাথা উঁচু করে রেখেছে কাসলটা, তবে পানির তলায় প্রায় ডুবে গেছে বো। আর দেড়-দু’ফুট ডুবলে পুরোপুরিই তলিয়ে যাবে। আগুন আর ধোঁয়া ভেদ করে এরচেয়ে বেশি কিছু দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।

    ‘অন্তত একজনকে খুন হতে দেখেছি আমি,’ বলল ও। ‘তারপরেও জিম্মির আইডিয়া একেবারে ফেলনা নয়। হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনও প্যাসেঞ্জার আছে জাহাজে, বাকিরা মরে গেলে কিছু যায়-আসে না। তবে ঘটনা যা-ই হোক, মনে হয় না ওদেরকে আত্মসমর্পণ করানো যাবে।’

    ‘তিনটা বোট পাঠাচ্ছি আমি,’ ওকে বললেন মিচাম। ‘আপনি কোনোটায় যেতে চান?’

    বিনোকিউলার নামাল রানা। ‘হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার জন্যে আসিনি আমি। তা ছাড়া এই ঘটনার সঙ্গে হারানো জাহাজগুলোর সম্পর্ক আছে বলে মনে হচ্ছে আমার।’

    ‘তা হলে আমারিতে চলে যান,’ বললেন মিচাম। ‘বোর্ডিং পার্টির জন্যে অস্ত্র দেয়া হচ্ছে ওখানে।’

    চুলের মুঠি ধরে লোরিকে আরাতামা মারুর ডেকের ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে চলেছে দস্যুদলের বিশালদেহী নেতা কুচিয়ো কর্টেজ। কুচিয়ো নামটা সঙ্গী-সাথীদের দেয়া—স্প্যানিশ শব্দটার অর্থ ছুরি, আর কর্টেজ ছুরি দিয়ে মানুষ খুন করতে পছন্দ করে।

    ‘এসব কেন করছ তুমি?’ কাতরে উঠে বলল লোরি। ‘আমার স্বামী কোথায়?’

    ‘কে তোমার স্বামী?’ জানতে চাইল কর্টেজ।

    ‘তিনি এ-জাহাজের ক্যাপ্টেন।’

    ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটল কর্টেজের। ‘সরি, ডার্লিং। এখন নিজেকে ফের অবিবাহিতা ভাবতে পারো তুমি।’

    মাথায় রক্ত উঠে গেল লোরির, অপ্রস্তুত লোকটার মুখে সর্বশক্তিতে আঘাত করল। অবাক ব্যাপার, কিচ্ছু হলো না তার, হাতটা যেন বাড়ি খেল পাথরের দেয়ালে। চুলের মুঠি ছেড়ে লোরির বুকে একটা ধাক্কা দিল কর্টেজ, ডেকের ওপর চিৎ হয়ে পড়ল ও। উঠে বসতেই দেখল, লোকটার হাতে একটা ভাঁজ করা ছুরি বেরিয়ে এসেছে—ঝাঁকি দিতেই খুলে গেল ওটার পাঁচ ইঞ্চি টাইটেনিয়ামের ফলা।

    ঝুঁকে লোরির গলায় ছুরিটা ঠেকাল কর্টেজ, হিসিয়ে বলল, ‘আর একবারও যদি বেয়াদবি করো, এই ছুরি দিয়ে ছাল- চামড়া তুলে নেব তোমার। বুঝেছ?’

    কোনোমতে মাথা ঝাঁকাল লোরি। চোখের তারায় বাসা বেঁধেছে ভয়।

    সোজা হয়ে দাঁড়াল কর্টেজ। মেয়েটাকে ক্ষত-বিক্ষত করার কোনও ইচ্ছে নেই তার, অক্ষত রাখলেই বরং বেশি টাকা আসবে। শিস দিয়ে সঙ্গীদের ডাকল সে। এখানকার কাজ শেষ। এখন এই ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে কেটে পড়ার পালা।

    একে একে হাজির হলো সবাই। ঘিরে দাঁড়াল কর্টেজকে। গালকাটা এক দস্যুর নজর পড়ল লোরির ওপর, লালসায় চকচক করে উঠল তার চোখ। হাঁটু গেড়ে বসল সে, থুতনি ধরে উঁচু করল মেয়েটার মুখ। ভাল করে দেখল।

    ‘দারুণ!’ জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল লোকটা।

    পরক্ষণে মুখের একপাশে বুটের লাথি খেল সে। ব্যথায় ককিয়ে উঠে গড়িয়ে গেল ডেকের ওপর দিয়ে।

    ‘ও আমার,’ কর্কশ গলায় বলল কর্টেজ। ‘ওর দিকে দ্বিতীয়বার হাত বাড়ালে মরবে।’

    কাতরাতে কাতরাতে উঠে দাঁড়াল গালকাটা। এক হাতে আঘাতের জায়গাটা চেপে ধরে চলে গেল চোখের আড়ালে।

    ‘আ…আমাকে নিয়ে কী করবে তুমি? কী মতলব তোমার?’ জানতে চাইল লোরি।

    জবাব না দিয়ে হাসল কর্টেজ। কয়েকদিন ফুর্তি করবে মেয়েটাকে নিয়ে, এরপর বিক্রি করে দেবে কালোবাজারে। সাদা চামড়ার মেয়েরা ভাল দামে বিকোয়। এবারের কাজটায় বাড়তি কিছু ইনকাম হবে ওতে। নিচু হয়ে একটা তামার তার দিয়ে লোরির হাত বাঁধল সে, মুখে গুঁজে দিল কাপড়। ব্যস, চেঁচিয়ে আর বিরক্ত করতে পারবে না।

    কিন্তু রেহাই পাওয়া গেল না। বন্দিনীর বদলে চিৎকার ভেসে এল ওপর থেকে। ব্রিজ উইঙে একজন লুকআউট রেখেছে সে—চেঁচাচ্ছে সে-ই।

    ‘জাহাজ…. জাহাজ! একটা জাহাজ আসছে!’

    ঝট করে সিধে হলো কটেজ, চারদিকে তাকাল। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে দেখতে পেল না কিছুই।

    ‘কোত্থেকে আসছে?’ গর্জে উঠল সে। ‘ডিরেকশন বল, হারামজাদা!’

    ‘উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে।’

    চোখ ছোট করে ছাই আর ধোঁয়ার উড়ন্ত মেঘের ভেতর দিয়ে তাকাল কর্টেজ। হঠাৎ একটা জাহাজ উদয় হওয়াটা দুঃসংবাদ, তবে তার চেয়েও খারাপ কিছু চোখে পড়ল তার। সাদা ফেনার একটা সরু ধারা—আরাতামা মারুর খোলের পাশ দিয়ে বো-র দিকে এগিয়ে গেছে। জাহাজের ডগা ইতিমধ্যে দু’ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে, হঠাৎ সেখানে জমে থাকা ধোঁয়া ভেদ করে বেরিয়ে এল একটা ইনফ্লেটেবল বোট। উপুড় হয়ে একজন অস্ত্রধারী মানুষ শুয়ে আছে সামনে, গুলি ছুঁড়ছে এম-সিক্সটিন রাইফেল থেকে।

    চোখের পলকে দু’জন সঙ্গীকে ঘায়েল হতে দেখল কর্টেজ, আরেকজন গুলির আঘাতে কাতরাতে কাতরাতে বসে পড়ল। সেকেণ্ড কার্গো হ্যাচের কাছে এসে থামল বোটটা, ঝটপট ওটা থেকে নেমে এল অস্ত্রধারী আরও কিছু মানুষ। বোটের সামনে উপুড় হয়ে থাকা যুবক তখনও নড়েনি, নিখুঁত নিশানায় ক্রমাগত গুলি করছে সে।

    কর্টেজের দলের আরও দু’জন অক্কা পেল, এরপর গড়ান দিয়ে বোট থেকে নেমে গেল যুবক। কাভার নিল একটা খোলা হ্যাচের পেছনে।

    খিস্তি করে উঠল কুচিয়ো। কোত্থেকে উদয় হলো এরা?

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৬৩ – ছায়াঘাতক
    Next Article মাসুদ রানা ১৪৪ – অপহরণ-২

    Related Articles

    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৩৮৫-৩৮৬ – হ্যাকার (দুই খণ্ড একত্রে)

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৬ – টপ টেরর

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৪ – নরপশু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৩ – ধর্মগুরু

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫২ – কালো কুয়াশা

    July 22, 2025
    কাজী আনোয়ার হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫১ – মায়া মন্দির

    July 22, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কালিকা পুরাণ (কালিকাপুরাণম্‌) – পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত

    September 9, 2025

    শ্রীশ্রীচণ্ডী – অনুবাদ : পঞ্চানন তর্করত্ন

    September 9, 2025

    পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.