Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প393 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    স্বর্ণলিপ্সা – ৩৪

    চৌত্রিশ

    বিকেল সোয়া পাঁচটায় ডানজন থেকে ওপরতলায় উঠছে, এমনসময় মোবাইল ফোনে কল আসতেই সেটটা বের করে স্ক্রিন দেখল বাক ওয়াকি। ফোন করেছে দলেরই লোক, লিয়ন বেনেট। স্যামন-পোচার ম্যাকগ্রাকে খুন করতে গিয়ে মরতে মরতে ফিরে এসেছে অ্যালান কোয়ার্ট। এরপর দরকারি কিছু নির্দেশ দেয়ার পর ওই দ্রুতগামী পাজেরোতে করেই লিয়ন বেনেট ও গ্রেগরি বেলকে কিনলোকার্ড গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে বাক ওয়াকি। প্রথমেই ম্যাকগ্রার ট্রেইলারে যাবে তারা। যদি দেখে ওখানে পুলিশ নেই, তো দেরি না করে সরিয়ে ফেলবে হ্যারি অ্যাণ্ডারসনের লাশ।

    ওই সমস্যা দূর হলে পরের কাজ পুলিশ সদস্যা জেসিকা থমসনের বাড়িতে ঢুকে পড়া। কাউকে খুন করতে হবে না। মেয়েটাকে জীবিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে আসবে দুর্গে।

    ‘কী?’ জানতে চাইল ওয়াকি। ‘ওদিকে সব ঠিক আছে?’

    ‘হ্যাঁ, হ্যারির ব্যবস্থা করেছি। ওদিকে কোনও পুলিশ ছিল না।’

    ‘গুড। হ্যারি এখন কোথায়?’

    ‘গাড়ির বুটে। বুক ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। বরফের মত জমাট বেঁধে গেছে লাশ। গরম পড়লে বাজে দুর্গন্ধ ছড়াবে।’

    ‘মেয়েলোকটার কী হলো?’

    ‘এখনও দেখা নেই,’ বলল বেনেট। ‘বাড়িতে কেউ নেই। সব বাতি নেভানো। গাড়িও বাড়ির সামনে নেই। ওই মেয়ে বহুক্ষণ হলো বাইরে। উঠানে গাড়ির একাধিক চাকার দাগ।’

    ‘ঠিক বাড়িতে গেছ তো?’

    ‘তুমি কি আমাদেরকে অপমান করছ, ওয়াকি? আমরা তো আর গ্রামের মস্তান নই!’

    ‘ঠিক আছে, এত রাগের কিছু নেই।’

    ‘ভাল একটা খবর আছে। গ্রামের আরেক মাথায় দেখেছি এক কটেজের সামনে মেয়েটার ল্যাণ্ড রোভার গাড়িটা। ছোট গ্রাম। চারপাশ দেখে নিতে সময় লাগেনি আমাদের।’

    ‘এখন ওই কটেজের বাইরে আছ?’ আশা নিয়ে জানতে চাইল ওয়াকি।

    ‘হ্যাঁ। তবে অত খুশি হয়ো না। ভেতরে যারা ছিল, আমরা পৌছানোর আগেই বেরিয়ে গেছে। তুষারে পেয়েছি দুই জোড়া পায়ের চিহ্ন। কটেজের সামনে ছিল আরেকটা গাড়ি। দুই জোড়া পায়ের দাগের ভেতর একজোড়া আমাদের কমব্যাট বুটের মত। অন্য জোড়া জুতোর মালিক বোধহয় ওই মেয়ে। ওরা যে গাড়িতে করে গেছে, ওটার চাকা বেশ চওড়া। বড় গাড়ি।’

    ‘টয়োটা জিএলএস-এর মত?’

    ‘অথবা, ওই ধরনের। অনেক তুষার পড়ছে। একটু পর ঢেকে যাবে সব চিহ্ন। আমার মনে হয় আমরা পৌঁছুবার বিশ মিনিট আগেই কটেজ থেকে বেরিয়ে গেছে ওরা।’

    ‘পিছু নিতে পারবে?’

    ‘সে-উপায় নেই,’ বলল বেনেট। ‘পরিষ্কার বুঝেছি গ্রামের কোন্ দিক দিয়ে কোন্ দিকে গেছে। তবে বড় রাস্তায় পড়ার পর যে-কোনও দিকেই যেতে পারে।’

    সমস্যাটা বুঝতে পেরেছে বাক ওয়াকি। টয়োটা গাড়ির মতই ওই কটেজ ভাড়া করেছে মাসুদ রানা। এখন জরুরি কোনও কাজে মেয়েটাকে নিয়ে কোথাও গেছে। ইন্সপেক্টর মুরের কথা সত্য হলে লোকটা আগে সামরিক বাহিনীতে ছিল। ওটা খুব খারাপ সংবাদ।

    ‘তো এবার কী করব?’ জানতে চাইল বেনেট।

    ‘কটেজে ঢোকো। ওখানে দরকারি কিছু থাকতে পারে। তেমন কিছু পেলে আমাকে ফোন দেবে। আপাতত অপেক্ষা করো। ওরা ফিরে এলে বন্দি করবে।’

    ‘তার মানে খুন করব না?’

    ‘না। মেয়েটাকে জীবিত চায় বস।’

    ‘কাজটা সহজ হবে না।’

    ‘একা একটা লোক আর কী বাধা দেবে! তুমি কি তাকে ভয় পাচ্ছ নাকি?’

    ‘ওই লোক ট্রেইনিং নিয়েছে এসএএস ফোর্স থেকে।’

    নাক দিয়ে তাচ্ছিল্য প্রকাশ করল ওয়াকি। ‘এসএএস ফোর্সের ট্রেইনিং দেয়া অফিসার হলেই বা কী? পাথফাইণ্ডাররা সকালে নাস্তার সঙ্গে ওদেরকে চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারবে।’

    ‘তা হলে এত বড় বড় কথা না বলে নিজেই বরং এখানে এসে কাজটা বুঝে নাও,’ বিরক্ত হয়ে বলল বেনেট। ‘আমরা রিয়ার এচেলন ফোর্সের লোক তো যখন-তখন মারা পড়ি এদের হাতে।’

    ‘কটেজে ঢুকে দেখো কিছু পাও কি না,’ রেগে গিয়ে বলল ওয়াকি। ‘পেলে ফোন দেবে।’ কল কেটে নিজেকে শান্ত করতে চাইল সে। এমনিতেই কোয়ার্টের সঙ্গে দেখা হতেই রাগারাগি করেছে। সে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে দুর্গের কোথায় যেন। তার ওপর এখন বেনেটের এই মেজাজ খারাপ করে দেয়া ফোন। তবে ঠাণ্ডা মাথায় সব জানাতে হবে রন স্টুয়ার্টকে।

    বিলিয়নেয়ারের মোবাইল ফোনের নাম্বারে ডায়াল করল বাক ওয়াকি। তবে ওদিক থেকে কল রিসিভ করল না কেউ। বিরক্তি আরও বাড়ল তার। ব্যাটা গেল কোথায়?

    .

    বাক ওয়াকি যখন ফোনে তাকে পেতে চাইছে, ওই একইসময়ে ইলেকট্রিক টারবাইনের মত মৃদু গুঞ্জন তুলে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে দ্রুতগতি তুলে ছুটে চলেছে রন স্টুয়ার্টের দামি রোলস রয়েস। দুর্গ ছেড়ে বেরোবার সময় মোবাইল ফোন অফ করে দিয়েছে বিলিয়নেয়ার। সে অত্যন্ত হতাশ ও চিন্তিত। রাগ হচ্ছে সবার ওপর। কোনও কিছুই যেন ঠিকভাবে চলছে না। এখনও মুখ খোলানো গেল না বেন হ্যাননের। ওয়াকির দলের লোক ভাড়া করতে গিয়ে খরচ করেছে কয়েক লাখ পাউণ্ড। অথচ, কাজের কিছুই হচ্ছে না। তার ওপর এখন জানা গেছে বুড়ো হ্যাননকে খুঁজতে এসে সবকিছুর ভেতর জড়িয়ে গেছে এক বাঙালি লোক। ওই হারামজাদা নাকি আবার দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। ইন্সপেক্টর মুরের ভায়রার কাছ থেকে তার যে ক্লাসিফায়েড ফাইল পাওয়া গেছে, সেটা পড়ে রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে স্টুয়ার্ট।

    উফ্! মেনে নেয়া যায় এত খরচের পর এমন দুর্ভাগ্য?

    তার চেয়েও খারাপ হচ্ছে, কোনভাবেই জানা যাচ্ছে না কোথায় আছে পূর্বপুরুষদের সেসব সোনার মোহর। ওগুলো শুধু তার। জন্মসূত্রে পাওয়া সম্পদ। পারিবারিক গুপ্তধন। উইলসনকে খুন করে বা পিটার হ্যাননকে আহত করেও কোনও লাভ হয়নি। এত কষ্ট করেও মোহরগুলোর মাত্র কয়েকটা হাতে এসেছে। গুপ্তধন আসলে কোথায় আছে, এখনও সেটা রয়ে গেছে বড় ধরনের রহস্য।

    রাগে-দুঃখে দাঁতে দাঁত পিষল রন স্টুয়ার্ট।

    আজকাল আর রাতে ঘুমাতে পারে না। চোখ বুজলেই হাজির হয় পূর্বপুরুষেরা। নানান ইঙ্গিত দেয় আঙুল তুলে। দেখিয়ে দিতে চায় প্রাচীন পাইনের জঙ্গলে কোথায় আছে তাদের রেখে যাওয়া গুপ্তধন। একটু ঘুমিয়ে পড়লেই স্বপ্নের ভেতর দেখতে পায় রন স্টুয়ার্ট জঙ্গলের ভেতর উদ্ভ্রান্তের মত এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে সে। মাঝে মাঝে পাইন গাছের শেকড়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে। কোথাও থমকে গিয়ে পাগলের মত দু’হাতে খুঁড়ছে মাটি। কিন্তু শেকড় আর কাদা ছাড়া কিছুই নেই!

    স্টুয়ার্ট বুঝে গেছে, ধীরে ধীরে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে সে। রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ একবার চোখ পড়ল প্যাসেঞ্জার সিটে রাখা ব্রিফকেসের ওপর। আরে! ওটার ভেতরেই না আছে দুর্গ-কিচেনের সবচেয়ে বড় ছুরিটা? আজই ওটার সদ্ব্যবহার করে ফেলে না কেন?

    গাড়ি ঘুরিয়ে নিল সে বেলফোর্ড হসপিটালের দিকে। ঠিক তেরো মিনিট পর পার্কিং লটে রোলস রয়েস রেখে ব্রিফকেস হাতে প্রায় দৌড়ে গিয়ে হাসপাতালের মেইন ডেস্কের সামনে হাজির হলো স্টুয়ার্ট। বেসুরো কন্ঠে বলল, ‘আমি আপনাদের রোগী পিটার হ্যাননকে দেখতে এসেছি।’

    ‘সরি, স্যর,’ জবাবে নরম সুরে বলল রিসেপশনিস্ট। ‘রোগী দেখতে হলে আগে থেকে যোগাযোগ করবেন। সেক্ষেত্রে আমি ডক্টর লরেনের সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে সময়টা আপনাকে জানিয়ে দেব।’

    জবাবে বিড়বিড় করে কী যেন বলে ডেস্ক থেকে সরে এল স্টুয়ার্ট। তক্কে তক্কে থাকল। তারপর রিসেপশনিস্টের কাছে ফোন আসতেই ব্যস্ত হয়ে উঠল মেয়েটা। আর তখনই চওড়া এক দরজা পেরিয়ে উজ্জ্বল আলোকিত দীর্ঘ করিডোরে ঢুকে পড়ল বিলিয়নেয়ার। নানান দরজার নেমপ্লেট দেখতে দেখতে উদ্‌ভ্রান্তের মত ঘুরতে লাগল হাসপাতালের ভেতর। খুব বড় নয় বেলফোর্ড হসপিটাল। সঠিক কেবিনের কাছে পৌঁছে যেতে বেশিক্ষণ লাগল না তার। একটা জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখল বেডে পড়ে আছে পিটার হ্যানন। তাকে ঘিরে রেখেছে নানান আকৃতির টিউব এবং বিপ-বিপ আওয়াজ করা আর লাল-নীল বাতি জ্বলা মেশিন। কেবিনের দরজার কাছে থেমে কিছুক্ষণ দ্বিধা করল স্টুয়ার্ট। করিডোর ধরে আসছে- যাচ্ছে নার্স আর আর্দালিরা। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত, তার দিকে চেয়ে দেখার সময় নেই কারও। একটু পর করিডোর ফাঁকা হতেই নিঃশব্দে দরজা খুলে কেবিনে ঢুকল রন স্টুয়ার্ট। আস্তে করে বন্ধ করে দিল দরজা। ইলেকট্রিক সুইচ টিপে নিভিয়ে নিল ঘরের বাতি। নইলে করিডোর থেকে জানালা পথে তাকে দেখতে পাবে হাসপাতালের কর্মচারী।

    নানান মেশিনের টিপ-টিপ করা মৃদু আলোয় রোগীর বেডের দিকে এগোল স্টুয়ার্ট। লাশের মত পড়ে আছে পিটার হ্যানন। মনিটরে দেখা যাচ্ছে তার হৃৎপিণ্ডের ধীরগতির গ্রাফ। বেডের পাশে ব্রিফকেস রেখে ওটার ডালা খুলল স্টুয়ার্ট। ভেতর থেকে নিল করাতের মত খাঁজ কাটা ধারাল ছুরিটা। মারাত্মক অস্ত্র হাতে ঝুঁকে পড়ল রোগীর গলার দিকে। বিড়বিড় করে বলল, ‘আমি জানি, কুত্তার বাচ্চা, তুই আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস!’

    যদিও তার কথায় বিন্দুমাত্র নড়ল না পিটার হ্যানন।

    ‘আমি আরও বহু কিছুই জানি, শুয়োরের বাচ্চা!’ হিসহিস করল স্টুয়ার্ট। ‘রবার্ট উইলসন তোকে বলে গেছে কোথায় পেয়েছে ওই গুপ্তধন! ঠিক কি না, বল্? এবার সব বলবি তুই আমাকে! বল্, শালা, বল্‌!’

    রোগীর তরফ থেকে কোনও জবাব নেই। পিটার হ্যানন হয়তো আছে একাধিক গ্যালাক্সির চেয়েও দূরে কোথাও।

    ‘সত্যি বল্, কুত্তার বাচ্চা; নইলে ঈশ্বরের শপথ, নিজ হাতে তোকে শেষ করে দেব! বল্, হ্যাননের বাচ্চা!’ ধারাল ছুরি উঁচিয়ে পিটারের গলার মসৃণ ত্বকে ঠেকাল রন স্টুয়ার্ট।

    আপত্তি বা প্রতিবাদ করল না রোগী। নিথর পড়ে আছে বেডে। আরও শক্ত হাতে ছুরির হ্যাণ্ডেল ধরল স্টুয়ার্ট। শুকনো কাঠের মত শুকিয়ে গেছে গলা। কানের ভেতর কেমন যেন হড়াশ-হড়াশ ঢেউ ভাঙার শব্দ। এবার এক পোঁচে পিটারের গলা ফাঁক করে দেবে সে!

    কিন্তু মানুষ খুন করতে তোর কেমন লাগবে?—রন স্টুয়ার্টের মনের ভেতর কে যেন জানতে চাইল।

    দাঁতে দাঁত পিষল স্টুয়ার্ট। কেমন আবার লাগবে! কাটা গলা থেকে ছিটকে তার চোখেমুখে লাগবে তাজা রক্ত। কিন্তু কতক্ষণ লাগবে লোকটার মরতে?

    যা করার জলদি কর, নিজেকে ধমক দিল রন স্টুয়ার্ট।

    আর তখনই তার পেছনে হঠাৎ করে খুলে গেল কেবিনের দরজা। করিডোরের আলো এসে পড়ল ঘরে।

    ‘অ্যাই, কে তুমি?’ ধমকে উঠল কে যেন। ‘বাতি নিভিয়েছ কেন?’

    চমকে গিয়ে চরকির মত ঘুরল রন স্টুয়ার্ট। পিঠের কাছে ছুরি লুকিয়ে বড় বড় চোখে তাকাল দরজার দিকে। ভীষণ ভয় পেয়েছে। পরক্ষণে বুঝল, ওই মানুষটা ডাক্তার। এবার নিশ্চয়ই চিৎকার করে উঠবে মহিলা!

    ‘এখানে কী?’ ভুরু কুঁচকে বাতি জ্বেলে দিলেন ডক্টর লরেন। ‘কে তুমি?’

    একমুহূর্ত স্টুয়ার্ট ভাবল, হামলা করবে মহিলার ওপর। কয়েক কোপে নামিয়ে দেবে ঘাড় থেকে কল্লা। কিন্তু তার গলার ঘড়ঘড় আওয়াজ আর লাশ পড়ার শব্দে ছুটে আসবে একদল লোক!

    ‘সরি, ভুল রুমে ঢুকেছি,’ টলমলে পায়ে দরজায় পৌছে ডাক্তার লরেনকে সরিয়ে করিডোরে বেরিয়ে গেল স্টুয়ার্ট। কোটের ল্যাপেলের ওদিকে লুকিয়ে রেখেছে ছুরি। করিডোরে বেরিয়ে এসে আর দেরি করল না, ঝেড়ে দৌড় দিল একটু দূরের দরজার দিকে।

    ‘অ্যাই, দাঁড়াও! থামো! জবাব দাও!’ পেছন থেকে গলা ছাড়লেন ডাক্তার লরেন।

    লেজে যেন আগুন ধরছে, পিছনে না ফিরে তুমুল দৌড় দিল রন স্টুয়ার্ট। করিডোর পার করে পড়ল পরের করিডোরে। সামনেই চওড়া দরজার ওদিকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি। করিডোরে ঢুকেছে আর্দালির পোশাক পরা কমবয়সী এক যুবক। তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল স্টুয়ার্ট। একমুহূর্ত এদিক-ওদিক দেখে নিয়ে ডানদিকে ছুটতে লাগল। পেছনে করিডোরে জোর গলায় কী যেন বলছে আর্দালি। তবে কপাল ভাল স্টুয়ার্টের। সামান্য দূরেই ফায়ার এস্কেপ। আর্দালি ছুটে আসার আগেই ধাতব ধাপ বেয়ে নেমে এল হাসপাতালের নিচতলায়। আরেক দৌড়ে ছিটকে বেরোল হাসপাতাল ভবন থেকে। শীতল হাওয়ায় কেঁপে উঠল তার সারাশরীর। কপাল থেকে ঘাম মুছে দ্রুত পায়ে চলে গেল পাশের পার্কিং লটে। রোলস রয়েসে উঠে বাষ্পচালিত রেলগাড়ির মত হাঁফাতে লাগল সে।

    কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের দিকে মুঠো পাকিয়ে জঘন্য ক’টা গালি দিল, ‘ডাক্তার মাগী, কুত্তীর বাচ্চি, তোকেও ছাড়ব না আমি!’

    কিন্তু এখানে থাকা ঠিক নয়, যখন-তখন বিপদ হবে, কে যেন মনের ভেতর বলল তাকে। গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পড়ল সে।

    ফোর্ট উইলিয়াম থেকে দুই মাইল সরার পর সহজ হলো তার শ্বাস-প্রশ্বাস। পথের ধারে রোলস রয়েস রেখে চালু করল মোবাইল ফোন। কয়েক মুহূর্ত পর দেখল পুরো তিনবার কল করেছে বাক ওয়াকি।

    পাল্টা ডায়াল করল রন স্টুয়ার্ট।

    ‘আপনি কোথায় ছিলেন?’ প্রথমেই জানতে চাইল বাক ওয়াকি।

    নতুন করে রেগে গেল স্টুয়ার্ট। ‘ভুলে গেছ কার সঙ্গে কথা বলছ? আমি তোমাকে চাকরি দিয়েছি! জরুরি মিটিঙে আছি। তোমার আবার হঠাৎ করে আমাকে কীসের দরকার?’

    আজ লিয়ন বেনেট আর গ্রেগরি বেল কিনলোকার্ড গ্রামে যাওয়ার পর কী ঘটেছে, সংক্ষেপে জানাল বাক ওয়াকি। ‘আমরা এখন জানি কোথায় উঠেছে মাসুদ রানা। এরপর আবারও যখন কটেজে ফিরবে, আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে সে।’

    ‘কী যেন ঘোঁট পাকাচ্ছে মাসুদ রানা আর জেসিকা থমসন,’ বলল স্টুয়ার্ট। ‘পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

    ‘আপনি তা হলে এখন কী করতে বলে…’ কথা শেষ করতে পারল না বাক ওয়াকি।

    আগেই লাইন কেটে ইন্সপেক্টর মুরেকে ডায়াল করেছে বিলিয়নেয়ার।

    ‘আমি বাসায়,’ ফোনে আপত্তির সুরে বলল জন মুরে। ‘চা খাচ্ছি।’

    ‘তোমার চায়ের মায়েরে আমি ইয়ে করি! এক্ষুণি দেরি না করে মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করবে তুমি!’

    চেরি পাইয়ে কামড় দিয়ে গালি শুনে বিশ্রীভাবে খাবি খেল ইন্সপেক্টর। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘কোন্ অপরাধে? চাইলেই তো আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারব না। সেজন্যে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে।’

    ‘কিনলোকার্ড গ্রামের বাসিন্দা বিলি ম্যাকগ্রাকে খুনের দায়ে মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করবে,’ বলল স্টুয়ার্ট। ‘ওই নামটা নিশ্চয়ই মনে আছে? ওই একই লোককে বেশ ক’দিন ধরে আমরা খুঁজছি। তারই ব্যাপারে আজ পুলিশের ফাইল। ঘেঁটেছে তোমাদের অফিসার জেসিকা থমসন। এ থেকে হয়তো প্রমাণ করতে পারবে, খুনির সহযোগিনী হিসেবে কাজ করছে সে। আমার মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে, মাসুদ রানা আর ওই মেয়ে একসঙ্গে মিলে ঘোঁট পাকাচ্ছে। এরপর হয়তো আরও খারাপ কিছু করবে।’

    ‘আপনি কোথা থেকে এসব…’

    ‘কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শোনো! একদল পুলিশকে কিনলোকার্ড গ্রামে পাঠিয়ে দিলে তারা ট্রেইলারের ভেতরে পাবে বিলি ম্যাকগ্রার লাশ। এদিকে আগেই সতর্ক করবে আশপাশের পুলিশকে। তারা দেখলেই যেন গ্রেফতার করে মাসুদ রানাকে। সে আছে তার সেই কালো মার্সিডিযে। কোথাও যাচ্ছে। আরেকটা কথা, জেসিকা থমসনকে সব পুলিশি কাজ থেকে সরিয়ে দেবে। মাসুদ রানা আর ওই মেয়েকে ধরে আনবে আমার কাছে। আমার কথা বুঝতে পেরেছ?’

    ‘কী বলছেন এসব!’ প্রতিবাদ করল ইন্সপেক্টর জন মুরে। ‘আমরা এভাবে কাজ করতে পারি না। আইন আছে। বেআইনি কিছু করলে নিজেরাই গ্রেফতার হব।’

    ‘তো নিজেই আইন তৈরি করো,’ ধমকের সুরে বলল স্টুয়ার্ট। ‘যেভাবে হোক আমার হাতে তুলে দেবে মাসুদ রানা আর ওই মেয়েটাকে। আর তা যদি না পারো, নিজেই ফেঁসে যাবে পিটার হ্যাননকে আহত করা, আর রবার্ট উইলসনকে খুনের দায়ে। সেক্ষেত্রে চিরকালের জন্যে শেষ হবে তোমার পুলিশি ক্যারিয়ার। আমার কথা বুঝতে পেরেছ?’

    ‘আমি শুনছি, স্যর। দেখি কী করতে পারি…

    ‘গরমা-গরম চা ফেলে এবার নেমে পড়ো কাজে, মুরে! নইলে পঞ্চাশ বছরের জন্যে আটকা পড়বে জেলখানায়!’

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন
    Next Article অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }