Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প393 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    স্বর্ণলিপ্সা – ৩৫

    পঁয়ত্রিশ

    ওদের পেছনে একদল পুলিশকে লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে, ঘুণাক্ষরেও জানে না রানা বা জেসিকা। আঁধার রাতে দক্ষিণ দিকে ছুটে চলেছে টয়োটা আরএভি। দূরে জোরালো রশ্মি ফেলেছে শক্তিশালী হেডলাইট। উইণ্ডশিল্ডের ওপর থেকে একরাশ অবাধ্য তুষারকণা সরাবার চেষ্টায় সাঁই-সাঁই চলছে ওয়াইপার। সরু গ্রাম্যপথ পেছনে ফেলে চওড়া রাজপথে উঠে এখন দেখা যাচ্ছে বেশকিছু গাড়ি। বেশিরভাগই যাবে গ্লাসগো অথবা সীমান্তের দিকে। শীতের পরিবেশ যেন ভারী, সাদা চাদরের মত জড়িয়ে ধরেছে গোটা দক্ষিণ স্কটল্যাণ্ডকে। হাইওয়েতে বরফ সরাবার কাজ করে গেছে গ্রিটার ট্রাক। পথের ধারে জমেছে ঝুরঝুরে তুষার। নালার ভেতর দিয়ে ধীরবেগে সরে যাচ্ছে বরফ-পানি। সামনে শহরের মোটরওয়ে দেখে স্পিড আশি কিলোমিটারে নামাল রানা। গতি আরও কমালে বিপদ হবে। সেক্ষেত্রে গাড়ির উইগুস্ক্রিনে বুলেটের গর্ত দেখে হয়তো থামাবে ওদেরকে পুলিশের লোক। স্কটিশ সীমান্তে এম৭৪ সড়ক ‘গিয়ে মিশেছে এম৬-এ। ওই পথে দক্ষিণে গিয়ে উত্তর ইংল্যাণ্ডের ম্যানচেস্টারে পৌছুতে হবে রানাকে।

    খুব একটা কথা হচ্ছে না ওদের। খানিক পর কয়েকটা লম্বা হাই তুলে ঘুমিয়েই পড়ল মেয়েটা। চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে রানা। ওয়াইপার আর রাস্তার সঙ্গে চাকার ঘষার মৃদু শব্দ ছাড়া চারপাশে কোনও শব্দ নেই। কর্নেল হপকিন্সের ওখানে গিয়ে কোনও লাভ হবে কি না, জানা নেই রানার। হয়তো অযথা বুনো হাঁসের পেছনে ছুটছে।

    তিলতিল করে পেরোচ্ছে সময়। বড্ড ক্লান্তি লাগছে রানার। কারও সঙ্গে কথা বললে সহজ হতো জেগে থাকা। কিন্তু জেসিকাকে জাগিয়ে তোলা অনুচিত হবে। ডানকাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। দীর্ঘ চুল ঢেকে দিয়েছে মুখের একপাশ। মাঝে মাঝে গাড়ি চালাবার ফাঁকে ওকে দেখছে রানা। দারুণ মায়াবী এক পরীর মত লাগছে ঘুমন্ত জেসিকাকে। অবাক হয়ে টের পাচ্ছে রানা, মেয়েটা সঙ্গে আছে বলে কেন যেন ভালই লাগছে ওর। তবে একটু পর আবারও মনে পড়ল, ওরা আছে বড় ধরনের বিপদে। জেসিকা এসবে জড়িয়ে না গেলেই হয়তো ভাল হতো। একা লড়তে হলে অনেক বেশি সুবিধে পেত রানা শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে। কিছুক্ষণ ভেবে স্থির করল, প্রথম সুযোগে নিরাপদ কোথাও জেসিকাকে সরিয়ে দেবে।

    পিছনে পড়ছে একের পর এক গ্রাম, শহর।

    লকারবি, কার্লিসল, পেনরিথ…

    লেক ডিস্ট্রিক্ট পাশ কাটিয়ে ওরা ঢুকে পড়ল ইয়র্কশায়ার ডেসের রুক্ষ জঙ্গুলে এলাকায়। পুরো চারঘণ্টা পর জেগে উঠল জেসিকা। বড় একটা হাই তুলে জানাল, ভীষণ খিদে লেগেছে ওর। একটু পর মোটরওয়ের এক সার্ভিস স্টেশনের সাইনবোর্ড দেখে পার্কিং লটে গাড়ি রাখল রানা। উষ্ণ টয়োটা থেকে নেমে আড়মোড়া ভাঙতে গিয়ে হিড়হিড় করে কেঁপে উঠল ওরা। পাহাড়ি অঞ্চল থেকে আসছে কনকনে হাওয়ার স্রোত। যেন ফিসফিস করে বলছে, একটু পর আবারও শুরু হবে হিমেল তুষারপাত… তখন টেরটি পাবে বাছাধনেরা কত ধানে কত ভুট্টা।

    সার্ভিস স্টেশনে আছে ম্যাকডোনাল্ড’স, রোড শেফ আর কোস্টা কফির দোকান। পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে ওদিকে চলল ওরা। ম্যাকডোনাল্ড’স থেকে খাবার কিনে বসল জানালার কাছের এক টেবিলে। খাবার হিসেবে ওরা নিয়েছে চিযবার্গার, পটেটো ফ্রাই, সয়া-বেযড নকল মাংসের সিসেমির রোল, সঙ্গে সালাদ। জেসিকা রাজি না হলেও নিজের জন্যে কাগজের লম্বা গ্লাসে কালো কফি নিল রানা।

    জেসিকা সয়া-বেড নকল মাংসের রোল চিবুচ্ছে দেখে রানা বলল, ‘জানতাম না তুমি ভেজিটারিয়ান।’

    উদাস হয়ে কাঁধ ঝাঁকাল জেসিকা। ‘ভেজিটারিয়ান নই। তবে তাই বলে বাজে জিনিস খেতেও রাজি নই।’

    ‘তা হলে আসলে কী খাও তুমি?’ জানতে চাইল রানা। মাথা নাড়ল জেসিকা। ‘একবার ভেবে দেখো, কী অখাদ্য জিনিসই না খাচ্ছ তুমি? বার্গার? পটেটো ফ্রাই? কফি? তুমি তো আসলে নিজের আয়ু নিজ হাতে জবাই করছ! এরপর হয়তো বলবে, এর চেয়েও খারাপ খাবার তুমি আর্মিতে খেয়েছ।’

    ‘তা বলব না।’ মাথা নাড়ল রানা। ‘তবে একবার কঙ্গোতে ছাগলের হৃৎপিণ্ড খেয়েছিলাম। ওটার স্বাদ সত্যিই ভয়ানক খারাপ ছিল।’

    নাক কুঁচকে ফেলল জেসিকা। ‘ইয়াখ্! কী ধরনের মসলা দিয়ে রান্না করেছিলে?’

    ‘চারপাশে গিজ গিজ করছে শত্রু। রান্নার উপায় ছিল না। স্রেফ বেঁচে থাকার জন্যে ওই কাঁচা জিনিসটা খেতে হয়েছিল।’

    ‘এরপরেও তুমি বেঁচে আছ কীভাবে, বুঝতে পারছি না।’

    ‘মাঝে মাঝে আমিও তাই ভাবি,’ কাঁধ ঝাঁকাল রানা।

    রানার চোখে তাকাল জেসিকা। ‘নিশ্চয়ই তোমার জীবনে আরও বহু কিছুই আছে? যেমন স্ত্রী, গার্লফ্রেণ্ড, বা এমন কেউ যে খুব স্পেশাল? অপেক্ষায় আছে, বাড়িতে বসে প্রার্থনা করছে তোমার জন্যে? তা-ই না?’

    ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল রানা। ‘না, সত্যি বলতে, আমার জন্যে কেউ অপেক্ষা করে না।’

    অবাক চোখে ওকে দেখল জেসিকা। ‘কী বলো?’

    চুপ করে থাকল রানা।

    ‘সত্যিই?’ আবারও ওর চোখে তাকাল জেসিকা।

    মৃদু মাথা দোলাল রানা। ‘তবে এখন বিশেষ একজনকে ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে, ওর সঙ্গে রোমান্টিক কিছুটা সময় কাটাতে পারলে মন্দ হতো না।’

    বিশ্রী স্বাদের রোসে কামড় দিল জেসিকা। ‘কে সেই মেয়ে? আমাকে বলো, ওকে বুঝিয়ে বলব, তুমি মানুষ হিসেবে কিন্তু সত্যিই অসাধারণ।’

    ‘কী করে বুঝলে?’

    ‘নইলে বন্ধুর জন্যে এত ঝুঁকি নিতে না,’ অন্তর থেকে বলল জেসিকা। ‘আসলে এসব ব্যাপারে সব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।’

    ‘একদিন তোমাকে পরীর মত সুন্দরী এক মেয়ের কথা তা হলে বলব,’ বলল রানা।

    ‘এখনই বলতে পারো।’

    ‘না, এখন নয়।’

    ‘কেন নয়?’ একটু লালচে হলো জেসিকার মুখ।

    ‘কারণ… মেয়েটাকে আমি বিয়ে করতে পারব না।’

    অনিশ্চিত চোখে রানাকে দেখল জেসিকা। তারপর নিচু গলায় বলল, ‘তা হলে তুমি তো আমারই মত। আমিও ঠিক করেছি, যাকে ভাল লাগবে, তাকে কখনও বিয়ের বাঁধনে জড়িয়ে নিতে চাইব না।’

    ‘সেই লোক নিশ্চয়ই খুব সৌভাগ্যবান,’ বলল রানা।

    ‘হয়তো,’ মৃদু হাসল জেসিকা।

    ‘আমার চেনা কেউ?’ কফিতে চুমুক দিল রানা।

    ‘হয়তো।’

    ওর কথাই বলা হচ্ছে, আন্দাজ করল রানা। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা এখন অস্পষ্ট থাকাই ভাল। ‘তবে…’

    ‘তার মানে, বলতে চাইছ আমার অনুচিত হচ্ছে এই বিপদের মধ্যে তোমার সঙ্গিনী হওয়া?’

    এবার হাসল রানা, ‘ঠিক ধরেছ। এত ঝুঁকি না নিলেও তুমি পারো।

    কাঁধ ঝাঁকাল জেসিকা। ‘নিজের দেখভাল আমিই করব। তবে তুমি আমাকে ফাঁকি দিয়ে কোথাও পালাবার চেষ্টা না করলেই ভাল করবে, মাসুদ রানা!’

    কথা বাড়াল না রানা।

    ওদের খাওয়া শেষে উঠল টয়োটা আরএভিতে। রাতের আঁধারে আবারও শুরু হলো দীর্ঘ যাত্রা।

    রাত নয়টায় মোটরওয়ে গিয়ে ঢুকল ল্যাংকাস্টার শহরে। পুবে পড়ল বোল্যাণ্ডের জঙ্গল। তুষারপাত থেমে পড়তে লাগল বরফের মত শীতল বৃষ্টি। প্রেস্টন পেরিয়ে ওরা পড়ল এম-৬ মহাসড়কে। পুবে চলল ওরা ম্যানচেস্টারের দিকে।

    রাত সাড়ে বারোটায় পৌঁছুল পিক ডিস্ট্রিক্টে। ওটা পেছনে ফেলে বাক্সটনের উদ্দেশে চলল রানার টয়োটা।

    গন্তব্য বেশি দূরে নেই বলে মোবাইল ফোনে কর্নেলের সঙ্গে যোগাযোগ করল ও।

    ‘তুমি সময় নষ্ট করোনি,’ জানালেন কর্নেল হপকিন্স।

    ‘আশা করি রাত একটায় পৌছব। এবার আপনার ঠিকানা দেবেন, স্যর?’

    কর্নেল জানিয়ে দিলেন বাড়ির ঠিকানা। ‘বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমে সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকাবে। মেজর জেনারেলের কাছ থেকে তোমার ছবি নিয়েছি। চেহারা মিলিয়ে নেব।’ নইলে গেট খোলা হবে না।’

    ‘ঠিক আছে, কর্নেল।’

    .

    সুন্দর বাগান দিয়ে ঘেরা বড় এক সাদা বাড়িতে বাস করেন কর্নেল কার্ল হপকিন্স। গেটের সামনে গাড়ি রেখে নেমে পড়ল রানা। জায়গাটা আলোকিত। সিসি ক্যামেরার কালো লেন্সের দিকে চেয়ে রইল। বেশ কয়েক মুহূর্ত পর নিঃশব্দে একপাশে সরে যেতে লাগল স্টিলের স্বয়ংক্রিয় গেট। গাড়িতে উঠে ড্রাইভওয়ে ধরে এগোল রানা। বাড়ির সামনে থেমে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল জেসিকা আর ও।

    ততক্ষণে খুলে গেছে বাড়ির সদর দরজা। ভারী গাউন পরনে বেরিয়ে এসেছেন কর্নেল হপকিন্স। নরম সুরে বললেন, ‘আশা করি ক্ষমা করবে আমার অপারগতা। আসলে সতর্ক না হয়ে কোনও উপায় নেই, রানা।’

    ‘আমরা কিছু মনে করিনি,’ বলল রানা। জেসিকাকে দেখাল। ‘ওর নাম জেসিকা থমসন। আমার সঙ্গিনী।’

    ‘পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, আমি কার্ল হপকিন্স,’ বললেন কর্নেল।

    মৃদু মাথা দোলাল জেসিকা। .

    ভদ্রলোকের মাথায় চওড়া হ্যাট। কানের কাছে শনের মত সাদা চুল। নাকটা বাজপাখির চঞ্চুর মত বাঁকা। চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। একপাশে সরে দরজার দিকে ইশারা করলেন তিনি জেসিকাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে পা রাখল রানা। চমৎকার আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সামনের বিশাল ঘর। দেয়ালে দেয়ালে কাঁচ দিয়ে ঢাকা ফোটোগ্রাফি। বেশিরভাগই আর্মি জীবনের। তবে সেগুলোর ভেতর সবচেয়ে বড় ছবিটা বয়স্কা এক মহিলার। রানা ছবিটার দিকে চেয়েছে দেখে কর্নেল বললেন, ‘আমার স্ত্রী। গত বছর আমাকে ছেড়ে অন্য জগতে চলে গেছে। …বোসো। তোমরা আসবে বলে আগেই বেশ কিছু ফাইল স্টাডিরুম থেকে নিয়ে এসেছি।’

    কর্নেল চলে গেলেন একদিকের দেয়ালের কাছে। ওখানে আছে মাঝারি বারকাউন্টার। ওটার ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে দামি সব মদের বোতল ও ক্রিস্টালের গ্লাস। ‘রানা, জেসিকা, তোমরা কি ড্রিঙ্ক নেবে?’

    মাথা নাড়ল জেসিকা। মৃদু মাথা দোলাল রানা।

    সিঙ্গল মল্টের নামকরা উইস্কি গ্লেনফিডিচের বোতল থেকে দুটো গ্লাসে মদ ঢাললেন কর্নেল হপকিন্স। রানা ও জেসিকা যে সোফায় বসেছে, ওটার সামনের নিচু টেবিলে রানার গ্লাসটা রাখলেন তিনি। নিজে বসলেন উল্টোদিকের সোফায়। ডানহাতে রেখেছেন সোনালি তরলে ভরা গ্লাস। বামহাতে দেখালেন টেবিলে রাখা ফাইল। ‘গত বেশ কয়েক বছরের ফসল। আশা করি এগুলোর ভেতরে থাকবে তোমার ওই লোকের ডোশিয়ে। সোনালি তরলে চুমুক দিলেন তিনি। ‘তবে ওগুলো দেখতে শুরু করার আগে খুলে বলবে, আসলে কী ঘটেছিল? যে কারণে তুমি এলে, সেই গোটা ব্যাপারটা এখনও আমার কাছে খুব অস্পষ্ট।’

    ‘আগেই দুঃখ-প্রকাশ করছি, বিস্তারিত সব বলার সময় আসলে পাব না,’ বলল রানা, ‘আপাতত সংক্ষেপে কিছু তথ্য দিচ্ছি। অত্যন্ত বাজে একদল লোকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তাদেরই একজন মারা পড়ে আমার হাতে। অন্যজন পালিয়ে যায়। এরা সম্ভবত ডিযঅনারেবল সঙ্ঘের লোক।’

    দ্বিতীয় লোকটা পালিয়ে গেছে শুনে হতাশ হয়েছেন কর্নেল। হাতের গ্লাস টেবিলে রেখে বললেন, ‘বলেছিলে একটা ফোটো দেখাবে?’

    পকেট থেকে স্মার্টফোন নিয়ে স্ক্রল করে লাশটার ছবি বের করল রানা। ডিভাইসটা দিল কর্নেলের হাতে। ‘উল্কির ছবিও পাবেন।

    লাশের ছবির দিকে মন দিলেন না কর্নেল। সোজা চলে গেলেন উল্কির ছবিতে। গভীর মনোযোগে দেখলেন গথিক ডি, খুলি আর ছোরা। কিছুক্ষণ পর মাথা নেড়ে বললেন, ‘ঠিকই ধরেছ। ওই লোক ডিযঅনারেবল দলের সদস্য। এই হারামজাদা আগে ছিল আর্মির প্যারাশ্যুট রেজিমেন্টে।

    লাশের মুখ দেখলেন তিনি। রক্তে ভরা বরফের ভেতর পড়ে আছে মৃতদেহ। ‘বেঁচে নেই, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বললেন হপকিন্স। ‘জানলাম, নোংরা এক শুয়োর পৃথিবী ছেড়ে গেছে। তুমি ভাবতেও পারবে না, রানা, কতটা ভাল লাগছে আমার।’

    কর্নেল সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, বুঝে গেল রানা। জানতে চাইল, ‘আপনি কি এই লোককে আইডেন্টিফাই করতে পারবেন?’

    টেবিলে রাখা সাতটা ফাইল সরিয়ে অষ্টমটা নিলেন কর্নেল। ‘এদের সবার চেহারা মনে রেখেছি।’

    ‘এর নাম কী, স্যর?’ জানতে চাইল রানা।

    আস্তে করে মাথা নাড়লেন কর্নেল। ‘বয়স হয়েছে। সবার নাম এখন আর মনে নেই। তবে তোমার এই লোক আছে এই ডোশিয়েতে।’ রানার হাতে দিলেন তিনি ফাইল।

    ফাইলটা খুলল রানা। প্রথমেই শহুরে পোশাকে এক যুবকের কয়েকটা ছবি। নিচে বড় করে লেখা নাম। ছবি দেখার আগে ওটা পড়ল রানা: সার্জেন্ট হ্যারি অ্যাণ্ডারসন। এবার লাশের মুখ এবং ছবির মানুষটাকে মিলিয়ে দেখল। সন্দেহ নেই যে এ একই লোক।

    ‘এই দলের সেরা বদমাশটার নাম বাক ওয়াকি,’ বললেন কর্নেল হপকিন্স। ‘শুনেছি ডিযঅনারেবলদেরকে দলে নিয়ে নানান দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা আর একের পর এক খুনখারাবি করছে।’

    ‘তাই?’ ছবি থেকে মুখ তুলে তাকাল রানা।

    ‘হ্যাঁ, চাকরি করছে স্টুয়ার্ট করপোরেট এন্টারপ্রাইযেস লিমিটেড নামের এক কোম্পানিতে। ওটার মালিক স্কটিশ বিলিয়নেয়ার রন স্টুয়ার্ট। আমার ধারণা: বাজে কোনও অপরাধ করছে সে। নইলে বাক ওয়াকির মত দুশ্চরিত্র খুনিকে চাকরি দেবে কেন?’ আরেকটা ফাইল থেকে একটা ছবি বের করে দেখালেন তিনি। ছবিটা দেখল রানা। টের পেল ওর দিকে চেয়ে আছে জেসিকা।

    ‘রন স্টুয়ার্ট হাইল্যাণ্ডের লোক?’ কর্নেলের উদ্দেশে বলল রানা। ‘সেক্ষেত্রে তার বাড়ি তো ওদিকেই থাকার কথা?’

    ‘বিশাল দুর্গ তৈরি করেছে,’ বললেন কর্নেল। ‘নিজেকে মনে করে বনি প্রিন্স চার্লির উত্তরপুরুষ।’

    ‘উত্তর হাইল্যাণ্ডে আছে মাত্র তিনটে দুর্গ,’ প্রথমবারের মত মুখ খুলল জেসিকা। ‘পুবে ফোর্ট জর্জ। মাঝে ফোর্ট অগাস্টাস। আর পশ্চিমে ফোর্ট উইলিয়াম। কিন্তু ওগুলো তো কারও কাছে বিক্রি করা হয়নি!’

    ‘ফোর্ট উইলিয়াম,’ হঠাৎ করেই বললেন কর্নেল। ‘হ্যাঁ, ওদিকেই আছে রন স্টুয়ার্টের দুর্গ।’

    স্মার্টফোনে স্টুয়ার্ট করপোরেট সম্বন্ধে তথ্য খুঁজতেই কোম্পানির ওয়েব সাইট পেল রানা। ওটার মালিকের বাড়ি আর হেডকোয়ার্টারের ছবি আছে। হাইল্যাণ্ডে উঁচু এক পাহাড়ের পাদদেশে বিশাল দুর্গ। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে উত্তর দিকে ত্রিশ মাইল দূরে। তবে ওটার মাত্র বারো মাইল দূরে কিনলোকার্ড গ্রাম। কেন যেন রানার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মাল: ওই দুর্গ থেকেই জটিল কোনও জাল ছড়াচ্ছে রন স্টুয়ার্ট। এবং ওখানেই বন্দি করে রেখেছে ওর গুরু বেন হ্যাননকে।

    গ্রামে ফেরার পথে ওদিকে ঢুঁ দেবে, ভাবল রানা। মুখে বলল, ‘কর্নেল, আমার ভুল না হলে স্টুয়ার্টের ওই দুর্গে এখন জড় হয়েছে ডিযঅনারেবলদের একটা দল।’

    ‘তাই?’ চমকে গেলেন হপকিন্স।

    মৃদু মাথা দোলাল রানা। ‘তাদেরকে দিয়ে ব্যক্তিগত কিছু কাজ করিয়ে নিতে চাইছে লোকটা।’

    ‘সেক্ষেত্রে কথা বলব উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে,’ বললেন কর্নেল, ‘প্রথম সুযোগে বদমাশগুলেকে গ্রেফতার করবেন তাঁরা।’

    উইস্কির গ্লাস খালি করে কর্নেলের উদ্দেশে বলল রানা, ‘সময় দেয়ার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ, স্যর।’

    ‘কিছুই করিনি, তাই ধন্যবাদ আমার প্রাপ্য হয়নি, ‘ বললেন কর্নেল। ‘তবে ভাল লাগল, পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছে হারামি এক লোক।’

    রাতটা কর্নেল তাঁর বাড়িতেই রয়ে যেতে বললেও বিনয়ের সঙ্গে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল ওরা। গাড়িতে উঠে ফিরতি পথে রওনা হয়ে জেসিকাকে বলল রানা, ‘ভাবছি দেখা করব রন স্টুয়ার্টের সঙ্গে। তার মতিগতি বুঝতে চাই।’

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন
    Next Article অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }